প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ দ্বিতীয় ভাগ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 July, 2021

প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ দ্বিতীয় ভাগ

পূর্ববর্তী অংশ 

অন্যের দোষ ধরতে হলে এইভাবে শুরু করুন

আমার একজন বন্ধু ক্যালভিন কুলিজের শাসনের সময় সপ্তাহ শেষে কিছুদিন হোয়াইট হাউসে অতিথি ছিলেন। প্রেসিডেন্ট কুলিজের ব্যক্তিগত অফিসে আসতে গিয়ে তিনি একদিন কুলিজকে তাঁর সেক্রেটারিকে বলতে শোনেন, আজ সকালে ভারি সন্দুর পোশাক পরেছ তুমি, তোমাকে খুবই সুন্দর লাগছে।’

অল্পকথার মানুষ ক্যালভিন বোধ হয় এমন প্রশংসা জীবনে আর কাউকে করেন নি। ব্যাপারটা এমনই অভাবিত যে সেক্রেটারি লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। কুলিজ এবার বললেন, ‘ঘাবড়ে যেও না। তোমার ভালো লাগার জন্যেই বললাম কথাটা। এবার থেকে আশা করবো তুমি ব্যাকরণের দিকে একটু নজর দেবে।’

তাঁর পদ্ধতিটা সম্ভবত একটু সোজাসুজি রকমই তবে তাঁর মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান চমঙ্কার। প্রায় সব সময় ভালো কিছু শোনার পরেই খারাপ কথা শোনা বোধহয় ভালো।

নাপিত দাড়ি কামানোর আগে সাবান ঘসে দাড়ি নরম করে নেয়। ১৮৯৬ সালে ম্যানিলে ঠিক এই রকমই করেছিলেন প্রেসিডেন্টপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে। ওই সময়ের একজন বিখ্যাত রিপাবলিকান একটা বক্তৃতার খসড়া এনেছিলেন যেটা তার মনে হল সিনেরো বা প্যাট্রিক হেনরি বা ড্যানিয়েল। ওয়েবন্টারের চেয়ে ভালো আর সকলে এক সঙ্গে জড়ানো। বেশ আনন্দিত হয়ে তিনি সেটা ম্যাকিনলেকে পড়ে শোনাতে লাগলেন। ম্যাক্ৰিলে বললেন, বক্তৃতাটি বেশ ভালো তবে এটা চলবে না কারণ এটায় বেশ সমালোচনার ঝড় উঠতে পারে। ম্যাকিনলে কাউকে আঘাত করতে চাইলেন না। এবার দেখুন কেমন কৌশলে তিনি কাজটা করলেন।

‘প্রিয় বন্ধু, বক্তৃতাটা চমৎকার, দারুণ’ ম্যাকিনলে বললেন। এরচেয়ে ভালো আর কেউ লিখতে পারতো না। অনেক ক্ষেত্রেই এ বক্তৃতা দিলে ভালো হতো, কিন্তু এই ক্ষেত্রে কি এটা যোগ্য হবে? তোমার দিক থেকে এটা যোগ্যতম মনে হলেও আমাকে দলের কথাও ভাবতে হবে। এবার বাড়ি গিয়ে আমি যেমন বললাম ঠিক সেই ভাবে আর একটা বক্তৃতা লিখে আনো।

তিনি ঠিক তাই করলেন। ম্যাকিনলে এ ব্যাপারে লেখককে সাহায্য করলেন। আর ওই নির্বাচনে তিনি হয়ে উঠলেন চমৎকার বক্তৃতাকারী।

এখানে একটা চিঠি দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় এই বিখ্যাত চিঠিটি আব্রাহাম লিঙ্কন লিখেছিলেন। (তাঁর প্রথম বিখ্যাত চিঠিটি তিনি লিখেছিলেন একজন মহিলাকে যুদ্ধে তাঁর পাঁচটি সন্তান হারানোর শোকে সান্ত্বনা জানিয়ে) লিঙ্কন সম্ভবত পাঁচ মিনিটের মধ্যে চিঠিটা লেখেন অথচ ১৯২৬ সালে সেটা সাধারণের কাছে নিলামে প্রায় বারো হাজার ডলারে বিক্রি হয়। সে টাকা লিঙ্কন অর্ধ শতাব্দীর কঠিন পরিশ্রমে যা সঞ্চয় করেন তার চেয়েও বেশি।

চিঠিটি ১৮৬৩ সালের ২৬শে এপ্রিল গৃহযুদ্ধের অন্ধকারময় দিনগুলোয় লেখা। আঠারো মাস ধরে লিঙ্কনের সেনাধ্যক্ষরা ইউনিয়ন বাহিনীকে পরিচালনা করলেও ভাগ্যে জুটছিল শুধু একটার পর একটা বিষাদময় পরাজয়। যা ঘটছিল তা কেবল অর্থহীন মূর্খের মত হত্যাকাণ্ড। সারা দেশ শিহরিত হচ্ছিল। হাজার হাজার সেনা সৈন্যবাহিনী ছেড়ে চলে যায় আর এমনকি রিপাবলিকান সদস্যরাও সিনেটে বিদ্রোহ করে লিঙ্কনকে হোয়াইট হাউস থেকে তাড়াতে চাইছিলেন। লিঙ্কন সে সময় বলেন, আমরা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। আমার মনে হচ্ছে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরও আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আমি কণামাত্র আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। অন্ধকার মাখা এমনই এক দুঃখের আর বিপদের দিনেই চিঠিটা লেখা হয়।

আমি চিঠিটা ছেপে ছিলাম কারণ এটার মধ্য দিয়ে দেখা যাবে লিঙ্কন কি করে একজন দুর্দান্ত সেনানায়ককে পরিবর্তিত করার চেষ্টা করেন যখন সেই জেনারেলের উপরেই নির্ভর করছিল সারা দেশের ভাগ্য।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আব্রাহাম লিঙ্কন বোধহয় এই একটি মাত্র কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছিলেন। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করবেন তিনি জেনারেল হুঁকারকে তার মারাত্মক ভুলের কথা বলার আগে কিভাবে প্রশংসা করেছিলেন।

হ্যাঁ, ভুলগুলো মারাত্মকই ছিল। কিন্তু লিঙ্কন তা বলেন নি। লিঙ্কন ছিলেন ঢের বেশি রক্ষণশীল আর অনেক বেশি কূটনীতিক। লিঙ্কন লেখেন : ‘এমন কিছু ব্যাপার রয়েছে যাতে আপনার সম্বন্ধে আমি সন্তুষ্ট নই। কৌশল কূটনীতি কাকে বলে!’

মেজর জেনারেল হুঁকারকে যে চিঠি লেখা হয় সেটা এই রকম :

‘আমি আপনাকে পটোম্যাকের সেনাবিভাগের প্রধান আসনে বসিয়েছি। অবশ্য আমার একাজ করার মধ্যে উপযুক্ত কারণ ছিল, তা সত্ত্বেও আমার ধারণা, আর সেটা আপনারও জানা দরকার যে অনেক ব্যাপারেই আপনার কাজে আমি সন্তুষ্ট নই।’

‘আমি বিশ্বাস করি আপনি একজন সাহসী আর দক্ষ সৈনিক। সেটা অবশ্যই আমার পছন্দ। আমার আরও বিশ্বাস আপনার কাজের মধ্যে আপনি রাজনীতি মেশান না, যেটা ঠিক পথ। আপনার নিজের উপর বিশ্বাস আছে সেটা অতি দামী গুণ হলেও একান্ত প্রয়োজনীয় নয়।

‘আপনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, যেটা বিশেষ সাধনার মধ্যে মন্দ করার বদলে ভালোই করে থাকে। তকে আমার মনে হয় জেনারেল বার্নসাইডের সেনাপতিত্বের সময় আপনি আপনার ওই উচ্চাকাঙক্ষা উপরেই নির্ভর করেছিলেন আর তার পরিচালনা বানচাল করতে চেয়েছিলেন, এটা করতে গিয়ে আপনি দেশের প্রভূত ক্ষতি করেছেন। আর ক্ষতি করেছেন একজন দক্ষ সম্মানিত সহ-অফিসারেরও।‘

‘আমি শুনেছি আর সেটা বিশ্বাস করার মতই যে আপনি সম্প্রতি বলেছেন সেনাবাহিনী আর সরকারেরও এই দুয়েরই একজন নায়ক দরকার। অবশ্য এর জন্য নয়, এটা জানা সত্ত্বেও আমি আপনাকে সেনাধ্যক্ষ করেছি।’

‘একমাত্র সেইসব জেনারেলরাই একনায়ক হতে পারেন যারা সফল হন। আমি এখন যা চাই ত৷ হলো সামরিক সাফল্য আর তাই আমি ওই একনায়কত্বের ঝুঁকি নেব।’

‘সরকার আপনাকে তার সমস্ত ক্ষমতা দিয়েই সাহায্য করবে, এর আগে সরকার সেনাধ্যক্ষদের যে সাহায্য করেছে সেইরকম সাহায্য। আমার ভয় হচ্ছে যে আপনি আপনার সেনাদলের মধ্যে সেনাপতিকে সমালোচনা করার প্রবৃত্তি জাগিয়েছেন আর তাঁর বিশ্বাস হারিয়েছেন, এবার সেটাই আপনার উপর পরিচালিত হবে। এ রকম ব্যাপার যাতে না ঘটে তার জন্য আমি আপনাকে সাহায্য করবো।’

‘আপনি বা নেপোলিয়ন, তিনি যদি এখন বেঁচে থাকতেন, দুজনের কেউই এ ধরনের মনোভাব থাকলে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কোন ভালো কাজ আদায় করতে পারতেন না। তাই হঠকারিতা করবেন না। হঠকারিতা থেকে সর্তক থাকুন। কিন্তু ক্ষমতা আর দ্রিাবিহীন সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে আমাদের জয় এনে দিন।

আপনি কুলিন, ম্যাকিনলে বা একজন লিঙ্কন নন। আপনি জানতে চাইবেন প্রতিদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দর্শন চলবে কিনা। চলবে কি? দেখা যাক। এবার ফিলাডেলফিয়ার ওয়ার্ক কোম্পানীর ডব্লিউ. পি. গকের ব্যাপারটাই দেখা যাক। মি. গক আমার বা আপনার মতই একজন সাধারণ নাগরিক। তিনি ওখানে আমার ক্লাসের এক ছাত্র থাকার সময় এই ঘটনার কথা বলেছিলেন।

ওয়ার্ক কোম্পানীর ফিলাডেলফিয়ায় একটা বিরাট অফিস বাড়ি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি করার কথা ছিল। বাড়ির কাজ ঠিক মতই হয়ে চলেছিল আর প্রায় শেষও হয়ে এসেছিল। আচমকা একজন সরবরাহকারী জানালো যে সে কারুকাজ করা ব্রোঞ্জের জিনিসগুলো নির্দিষ্ট সময় মত সরবরাহ দিতে পারবেন না। কি! সারা বাড়িটা আটকে যাবে? প্রচুর জরিমানা হবে! প্রচুর ক্ষতিও হবে! আর সেটা মাত্র একজনের জন্য।

শুরু হলো দূরগামী টেলিফোন কথাবার্তা। তর্কাতর্কি। বেশ গরম কথাবার্তা। সবই বৃথা। এরপর মিঃ গককে ব্রোঞ্জের সিংহকে তার গুহাতেই রাখবার জন্যে পাঠানো হলো নিউইয়র্কে।

‘আপনি কি জানেন ব্রুকলীনে আপনার নামে একমাত্র আপনিই আছেন?’ প্রেসিডেন্টের অফিসে ঢুকতে ঢুকতে মিঃ গক বললেন। প্রেসিডেন্ট একটু আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘না, এটা তো জানতাম না।’

মিঃ গক এবার বললেন, ‘আজ সকালে যখন ট্রেন থেকে নামলাম, টেলিফোন বইয়ে আপনার ঠিকানা দেখছিলাম। দেখলাম ব্রুকলীনে আপনিই ওই নামের একমাত্র মানুষ।‘

টেলিফোন বইটা দেখে নিয়ে প্রেসিডেন্ট আগ্রহের সঙ্গে বললেন, কই আমার তো জানা ছিল না, হ্যাঁ, নামটা একটু অসাধারণ তা ঠিক। আমাদের পরিবার আসে হল্যাণ্ড থেকে আর নিউইয়র্কে বাস করতে থাকেন প্রায় দুশ বছর আগে। তিনি তাঁর পরিবারের নানা কাহিনী বেশ কিছুক্ষণ ধরে শোনাতে চাইলেন। তাঁর কথা শেষ হলে মিঃ গক তাকে প্রশংসা করে বললেন তাঁর কারখানাটি কত বড় আর যে সব কারখানা দেখেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। মিঃ গক বললেন, আমার দেখা ব্রোঞ্জ কারখানাগুলোর মধ্যে এ কারখানাই সবচেয়ে সুন্দর আর পরিষ্কার।

‘সারা জীবনের প্রচেষ্টায় এ কারখানা গড়ে তুলেছি প্রেসিডেন্ট বললেন, এ নিয়ে তাই আমার গর্ব আছে। একবার কারখানাটা ঘুরে দেখবেন?’

দেখার সময় মিঃ গক জিনিসপত্র তৈরির কৌশল দেখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। তিনি জানালেন অন্যান্য সব কারখানার চেয়ে এটি কত ভালো। মিঃ গক মেশিনগুলি দেখে প্রশংসা করতেই প্রেসিডেন্ট জানালেন এসব তাঁরই আবিষ্কার। তিনি অনেকক্ষণ ধরে মিঃ গককে সব কাজের পদ্ধতিগুলো দেখিয়ে দিলেন। তিনি মিঃ গককে মধ্যাহ্ন ভোজে নিমন্ত্রণ করলেন। এতক্ষণ পর্যন্ত মনে রাখবেন, মিঃ গক তাঁর এখানে আসার কারণ সম্পর্কে একটিও কথা বলেননি।

মধ্যাহ্নে ভোজের পর প্রেসিডেন্ট বললেন, হ্যাঁ, এবার কাজের কথায় আসা যাক। স্বাভাবিক ভাবেই আমি জানি আপনি কেন এসেছেন। আমি ভাবিনি আমাদের সাক্ষাত্তার এত সুন্দর হবে। আপনি ফিলাডেলফিয়ায় আমার এই আশ্বাস নিয়ে ফিরে যেতে পারেন যে সমস্ত জিনিস তৈরি করে ঠিক মতই পাঠিয়ে দেওয়া হবে, আর সেটা অন্য কাজ চেপে দিয়ে।

চাইতেই মিঃ গক যা দরকার সবই পেয়ে গেলেন। সমস্ত জিনিস সময় মত পৌঁছে গেল আর বাড়ি তৈরীর কাজও চুক্তির ঠিক দিনেই শেষ হল।

এটা কি হতে পারতো মিঃ গক যদি এ রকম ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মত তর্কাতর্কি করতেন?

অতএব মানুষের মনে আঘাত না দিয়ে বা দোষ না দিয়ে তাকে বদলাতে হলে এক নম্বর নিয়ম হল : প্রশংসা আর আন্তরিকতা দিয়েই শুরু করুন।

ঘৃণার উদ্রেক না করে কীভাবে সমালোচনা করবেন

চার্লস্ শোয়াব একবার তার ইস্পাতের মিল ঘুরে দেখার সময় লক্ষ্য করলেন কিছু কর্মী ধূমপান করছে। তাদের ঠিক মাথার উপরেই লেখা ছিলো ‘ধূমপান নিষেধ’। শোয়ব কি লেখাটা দেখিয়ে বললেন ‘তোমরা পড়তে জানো?’ ‘ওহ্ না, শোয়ব এরকম ছিলেন না।‘ তিনি কর্মচারিদের কাছে এগিয়ে গেলেন আর প্রত্যেকের হাতে একটা করে চুরুট দিলেন আর বললেন, ‘তোমরা এগুলো বাইরে গিয়ে খেলে ভালো হয়।‘ তারা জানতো শোয়ব বুঝেছেন কাজটা তারা অন্যায় করেছে-তা সত্ত্বেও তারা তাকে প্রশংসা করলো কারণ তিনি দোষটার জন্য কিছুই বলেন নি আর তাদের অহমিকায় আঘাত দেননি! এরকম লোককে আপনি ভালো না বেসে পারবেন না। নয় কি?

জন ওয়ানামেকারও একই পদ্ধতি নিয়েছিলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ায় তার বিরাট দোকানে প্রায় রোজই ঘুরে দেখতেন। একদিন দেখলেন একটি মেয়ে কোন কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ বিক্রেতারা কেউ কোথাও নেই। তারা একপাশে জটলা করে কথাবার্তা আর হাসিঠাট্টায় ব্যস্ত। ওয়ানামেকার একটাও কথা বললেন না। নিঃশব্দে কাউন্টারের পিছনে গিয়ে তিনি মেয়েটির যা দরকার এনে দিয়ে কর্মচারিদের প্যাকিং করতে দিয়ে গেলেন।

১৮৮৭ সালের ৮ই মার্চ সুন্দর বক্তা হেনরি ওয়ার্ড রীচার মারা যান, বা জাপানীদের কথায় নতুন জগতে যান। পরের রবিবার লিম্যান অ্যাবেটকে তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলার জন্য আবেদন জানানো হয়। সব সেরা কথিকা বানাবার জন্য লিম্যান ফ্লবেয়ারের মতই ঘসামাজা করে দারুণ একটা বক্তৃতা লিখে তার স্ত্রীকে পড়ে শোনালেন। বক্তৃতাটা মোটেও ভালো হয়নি ঠিক যেমন বক্তৃতা লেখা হয়। তার স্ত্রীর যদি বুদ্ধি কম থাকতো তিনি বলতেন, ‘লিম্যান, একদম বাজে হয়েছে, এটা চলবে না। শ্রোতারা এটা শুনে ঘুমিয়ে পড়বে। এটা একেবারে বিশ্বকোষের মত হয়েছে। সাধারণ জিনিস লেখ, এসব পড়লে তোমার দর কমে যাবে।’

এটাই হয়তো তিনি বলতেন। আর বললে কি হত নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। তার স্ত্রীও তা জানতেন। তাই তিনি কেবল বললেন যে লেখাটা নর্থ আমেরিকান রিভিউ’র জন্যে চমৎকার হয়েছে। তিনি বেশ প্রশংসা করে নরম করে বললেন লেখাটা বক্তৃতার মত হয়নি। লিম্যান অ্যাবেট ব্যাপারটা বুঝলেন আর যত্ন করে লেখা বক্তৃতাটা ছিঁড়ে ফেললেন আর কিছু না লিখেই টানা বক্তৃতা দিয়ে গেলেন।

অতএব আপত্তি না জানিয়ে বা দোষ না ধরিয়ে মানুষকে বদলাতে ২নং নিয়ম হল : মানুষের দোষ, ঘোরানো পথই দেখান।

আগে নিজের ভুলের কথা বলুন

কয়েক বছর আগে, আমার ভাইঝি জোসেফাইন কার্নেগী কানসাস সিটির বাড়ি থেকে নিউইয়র্কে আমার সেক্রেটরির কাজ করতে আসে। ওর বয়স উনিশ, তিনবছর আগে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ও স্নাতক হয়। তবে ওর ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার ঝুলি ছিলো শূন্য। আজ সে সুয়েজ খালের পশ্চিম এলাকার মধ্যে সবসেরা একজন সেক্রেটারি। তবে গোড়ার দিকে সে অনেক কিছুই জানতো না। একদিন আমি যখন ওকে একটু সমালোচনা করতে গেলাম, আমি নিজেকেই বললাম এক মিনিট দাঁড়াও ডেল কার্নেগী, এক মিনিট দাঁড়াও। তোমার বয়স জোসেফাইনের দুগুণ। তোমার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাও দশহাজার গুণ বেশি। তুমি কেমন করে আশা কর যে তোমার মতই দৃষ্টিকোণ, বিচার বুদ্ধি, আগ্রহ ইত্যাদির অধিকারী হবে-তোমার সে বিচার বুদ্ধি যত সাধারণই হোক? এক মিনিট দাঁড়াও। ডেল, তুমি ঊনিশ বছর বয়সে কি করেছো? মনে পড়ে তোমার সেই ভুলগুলো? বোকার মত তোমার সেই সব ভুল। মনে করে দেখ তুমি এই সব করেছো….তাছাড়া…?’

বেশ কিছুক্ষণ সব ব্যাপারটা ঠাণ্ডা মাথায় আর নিরপেক্ষতার সঙ্গে ভেবে নিয়ে আমি স্থির সিদ্ধান্ত করলাম যে জোসেফাইনের ব্যাটিংয়ের গড় আমার উনিশ বছর বয়সের ব্যাটিং গড়ের চেয়ে ঢের ভালো আর–আর আমি দুঃখিত যে জোসেফাইনকে তার প্রাপ্য প্রশংসা দিতে চাইছি না।

অতএব এরপর থেকে জোসেফাইনের কিছু ভুল ধরিয়ে দেবার আগে আমি বলতাম, একটা ভুল করেছ, জোসেফাইন। তবে ইশ্বর জানেন, আমি যা ভুল করি তার চেয়ে খারাপ নয় এগুলো। তুমি তো বিচার বুদ্ধি নিয়ে জন্মাও নি, এসব আসে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। তোমার বয়সে আমি যা ছিলাম তার চেয়ে তোমার অবস্থা ভালো। তোমার মত বয়সে আমি যেসব বোকার মত ভুল করেছি তাতে তোমাকে আর সমালোচনা করার মত ইচ্ছে নেই। কিন্তু ভেবে দেখ তুমি অন্য রকম হলে আরও ভালো হতো। তাই না?

নিজের ত্রুটির কথা বক্তা আগেই শোনাতে চাইলে শ্রোতার পক্ষে তার সমালোচনা শোনা সহজই হয়।

১৯০১ সালে প্রিন্স ফন বুলো এরকম ব্যবহার করার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করেন। ফন বুলো তখন জার্মানীর ইম্পিরিয়াল চ্যান্সেলর ছিলেন। সিংহাসনে তখন ছিলেন দ্বিতীয় উইলহেলম-উইলহেল্ম অত্যন্ত বদমেজাজী আর অহঙ্কারী ছিলেন। এই উইলহেলম ছিলেন জার্মান কাইজারদের মধ্যে শেষ যিনি মহাশক্তিশালী সেনাদল আর নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। এই সেনাবাহিনী নিয়ে তার অত্যন্ত অহঙ্কারও ছিলো। ঐ বাহিনী দিয়ে তিনি নাকি যা ইচ্ছে তাই করতে পারতেন।

একবার একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে গেল। কাইজার এমন সব কথা বলতে লাগলেন আর অস্বাভাবিক রকম করতে লাগলেন যে সারা ইউরোপ কেঁপে উঠে একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেল। যার রেশও ছড়িয়ে পড়লো পৃথিবী জুড়ে। ব্যাপারটা আরও খারাপ করে তুলতে কাইজার স্বয়ং আত্মম্ভরিতাপূর্ণ, বোকামি ভরা অদ্ভুত সব ঘোষণা করতে লাগলেন জনসাধারণের কাছে। তিনি এসব করলেন ইল্যাণ্ডে যখন তিনি অতিথি হিসেবে ছিলেন। আরও মজার কথা হল রাজকীয় বদান্যতায় এসব তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশ করতেও দিলেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, জার্মান হিসেবে তিনিই একমাত্র মানুষ যে ইংল্যাণ্ডের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন। তিনি জাপানের বিরুদ্ধে এক নৌবাহিনী গড়ে তুলছেন এবং তিনিই একমাত্র লোক যিনি রাশিয়ার আর ফ্রান্সের হাতে ইংল্যাণ্ডের হেনস্থা আটকান। একমাত্র তারই পরিকল্পনায় ইংল্যাণ্ডের মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় বুয়র যুদ্ধে জয়লাভ করে…ইত্যাদি।

একশ বছরের মধ্যে শান্তির সময় কোন ইউরোপীয় রাজার মুখ থেকে এ ধরনের অদ্ভুত কথা বেরোয়নি। সারা মহাদেশে এ নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেল। ইংল্যাণ্ডে সকলে ক্ষেপে আগুন। জার্মানীর রাজনীতিকরা শিউরে উঠলেন। এই রকম হৈ হট্টগোলে কাইজার ভয় পেয়ে গেলেন আর ইম্পিরিয়াল চ্যান্সেলর ফন বুলোকে বললেন যে, তিনি যেন সকলকে জানিয়ে দেন এসব কিছুর দায়িত্ব তারই। তিনিই সম্রাটকে এই অদ্ভুত কথাগুলো বলার জন্যে উপদেশ দেন।

ফন বুলো প্রতিবাদ করে বললেন, ‘কিন্তু মহান সম্রাট, জার্মানী বা ইংল্যাণ্ডের কেউ বিশ্বাসই করবেন আমি আপনাকে এমন উপদেশ দিতে পারি।’

যে মুহূর্তে কথাগুলো ফন বুলোর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো তিনি বুঝতে পারলেন যে মারাত্মক একটা ভুল করেছেন। কাইজার ক্ষেপে উঠলেন।

‘তুমি আমায় গাধা মনে করো? তিনি চিৎকার করে উঠলেন। তুমি যে ভুল করতে পারো না ভাবো আমি তাই করতে পারি।’

ফন বুলো বুঝলেন সমালোচনার আগে তার প্রশংসা করা উচিত ছিল। তবে দেরী হয়ে গেছে, তখন সেই অবস্থায় সবচেয়ে যা ভালো তিনি তাই করলেন। সমালোচনার পর তিনি প্রশংসা করলেন। আর তাতে অলৌকিক কাণ্ড ঘঠে গেল–প্রশংসায় যা হয়।

তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে বললেন ‘আমি কখনই তা বলছি না’, ‘অনেক ব্যাপারেই সম্রাট আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, শুধু নৌবাহিনী বা সামরিক ব্যাপারেই নয়। তারচেয়েও আপনার গভীর জ্ঞান আছে বিজ্ঞানে। আমি বহুবার অবাক হয়ে শুনেছি সম্রাট কি চমৎকার ভাবে ব্যারোমিটার, বেতার টেলিগ্রাফ বা রঞ্জন রশ্মি সম্পর্কে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। রসায়ন বা পদার্থ বিদ্যায় আমার কোনই জ্ঞান নেই, স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনার সম্বন্ধে ও আমার কোন ধারণাই নেই। ফন বুলো বলে চললেন, এর ক্ষতিপূরণ স্বরূপ যেহেতু আমার কিছু ঐতিহাসিক জ্ঞান আছে’ এটা বিশেষ করেই কাজে লাগে কূটনীতিতে।

কাইজার খুশি হয়ে উঠলেন। ফন বুলো তার প্রশংসা করেছে। ফন বুলো তাঁকে উঁচুতে তুলে নিজের সমালোচনা করেছে। এসবের পর কাইজার ওর সব অপরাধই ক্ষমা করলেন। তিনি তাই উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘তোমাকে বলিনি যে আমরা দুজনে দুজনের পরিপূরক? আমাদের দুজনে একসাথে থাকা উচিত আর তা থাকবোও।‘

তিনি ফন বুলোর সঙ্গে একবার নয় বেশ কয়েকবার করমর্দন করলেন। শুধু তাই নয় ওইদিনই একসময় তিনি বেশ উৎসাহের সঙ্গে ঘুসি পাকিয়ে বললেন, কেউ যদি প্রিন্স ফন বুলোর বিরুদ্ধে কিছু বলে তাহলে তার নাকে ঘুসি মারবো।’

ফন বুলো সময় মতই নিজেকে বাঁচাতে পেরেছিলেন–কিন্তু কৌশলী কূটনীতিক হয়েও তিনি একটা ভুল করেন। তার উচিত ছিল সম্রাটকে প্রশংসা করে নিজের সমালোচনা করে শুরু করা। তার মোটেই উচিত হয়নি। সম্রাটকে বুদ্ধিহীন বলা কিংবা তাঁর একজন অভিভাবক দরকার ইত্যাদি ইঙ্গিত করা।

যুদ্ধ কাইজারকে যদি কিছু আত্মসমালোচনার কথা শান্ত করতে পারে আর তাকে বন্ধু করে তুলতে সক্ষম হয়, তাহলে ভেবে দেখুন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই রকম কাজ মানুষকে কি করতে পারে: মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে ব্যবহার করলে এতে ভোজবাজীর মতই কাজ হয়।

অতএব কারও মধ্যে ক্রোধ বা অসন্তোষ না জাগিয়ে তাকে পরিবর্তিত করতে তিন নম্বর নিয়ম হল : অপরের সমালোচনা করার আগে নিজেকে সমালোচনা করুন।

কেউই হুকুম পছন্দ করে না

সম্প্রতি আমি আমেরিকার মানুষের জীবনী লেখিকাঁদের ডীন মিস ইডা টারবেলের সঙ্গে ডিনারে অংশ নিয়েছিলাম। আমি তাঁকে যখন বললাম আমি এই বইটা লিখছি, তখন মানুষের সঙ্গে চলার বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়। আমায় জানালেন তিনি যখন ওয়েন ডি. ইয়ংয়ের জীবনী রচনা করেছিলেন তখন ইয়ংয়ের সঙ্গে তিন বছর একই অফিসে বসেছেন, এমন একজন মানুষের তিন ঘন্টা ধরে সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন। লোকটি জানিয়েছিল সারা জীবনে তিনি কখনও দেখেননি ইয়ং কাউকে সরাসরি কোন হুকুম করেন। তিনি সব সময়ই উপদেশ দান করতেন। উদাহরণ হিসেবে ওয়েন ডি ইয়ং কখনই বলেন নি, ‘এটা কর, ওটা কর’ বা ‘এটা কোরো না, ওটা কোরো না। বরং প্রায়ই তিনি বলতেন, এটা ভেবে দেখতে পারেন বা আপনার কি মনে হয় এতে কাজ হবে? কোন চিঠি লিখতে দিয়ে শেষ হলে তিনি বলতেন, ‘এটা তোমার কি রকম মনে হয়?’ বা চিঠির ভাষার একটু বদলে দিলে কেমন হয়? তিনি প্রায় সব সময়েই লোককে কাজ করার সুযোগ দিতেন। তিনি তাদের কাজের মধ্য দিয়েই ভুল সংশোধন করতে দিতেন।

এরকম কৌশলের ফলে ভুল সংশোধনের সুবিধাই করে দিতেন তিনি। এইরকম কৌশলে মানুষের অহঙ্কারবোধ বজায় থাকে আর নিজের গুরুত্ববোধও থাকে। তাকে বিদ্রোহ না করে সহযোগিতা করতে উদ্বুদ্ধ করে।

অতএব অপরকে ক্রুদ্ধ বা অসন্তুষ্ট না করে বদলাতে হলে ৪ নম্বর নিয়ম হল :

সরাসরি হুকুম না করে প্রশ্ন রাখুন।‘

অপরকে মুখ রক্ষা করতে দিন

বেশ কবছর আগে চার্লস্ স্টাইনমেজকে কোন ডিপার্টমেন্টের প্রধানের পদ থেকে সরানোর ব্যাপারে জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানী মহা সমস্যায় পড়ে। হিসাবরক্ষা দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি অচল হলেও বিদ্যুতের ব্যাপারে তাঁর প্রতিভা ছিল অনন্যসাধারণ। তাই কোম্পানি তাকে কোন ভাবেই আঘাত দিতে, চাননি। তিনি ছিলেন অপরিহার্য-আর অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই তাঁরা তাঁকে একটা পদবী দিলেন। তারা তাঁকে করে দিলেন জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানীর কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার–এই নতুন পদবী নিয়েই তিনি কাজ করছিলেন। এর ফলে অন্য একজন ডিপার্টমেন্টের ভার নিলেন।

স্টাইনমেজ খুশি হলেন।

জেনারেল ইলেকট্রিকের অফিসাররাও খুশি হলেন কারণ তাঁদের সব সেরা তারকাকে নিয়ে কোনরকম ঝড় না তুলেই কাজটা তারা সমাধা করলেন–এটা করা হল তাঁকে মুখ রক্ষা করতে দিয়েই।

তাঁকে মুখ রক্ষা করতে দিয়ে! কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা! অথচ আমরা ব্যাপারটা নিয়ে প্রায় চিন্তাই করি না! আমরা অপরের অনুভূতিকে চিন্তা না করেই আঘাত করি, অন্যের দোষ খুঁজি, ভয় দেখাই, কোন শিশুকে অন্যের সামনে বকাবকি করি। এটা করতে গিয়ে অপরের মনকে আমল দিতে চাই না। অথচ সামান্য একটু চিন্তা, দুটো সহৃদয়তা মাখা কথা, অপরের মনকে বোঝার চেষ্টা করলে কি চমৎকার ভাবে সব সমস্যা মিটে যেতে পারে। তাতে আঘাত দূর হয়ে যায়।

আমাদের মনে রাখা দরকার যখন ভবিষ্যতে কোন চাকর বা কর্মচারিকে বরখাস্ত করার প্রয়োজন হবে তখন আমাদের এটা চিন্তা করে দেখা উচিত।

‘মানুষকে কর্মচ্যুত করা তামাশার ব্যাপার নয়। বরখাস্ত হওয়া তো আরও নয়।’ কথাটা অবশ্য আমার নয় আমার এক বন্ধু এ. গ্রেঞ্জারের। তিনি একজন পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তাঁর একটা চিঠি উল্লেখ করছি :

আমাদের ব্যবসা হলো প্রধানতঃ মরসুমী। তাই অনেককেই মার্চ মাসে ছেড়ে দিতে হয়। আমাদের ব্যবসাতে একটা চলতি কথা আছে কেউই কুল চালিয়ে আনন্দ পায় না। আর তার ফলে একটা রীতি গড়ে উঠেছে যে কাজটা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শেষ করলেই ভালো। সেটা এই ভাবে বলুন, মিঃ স্মিথ; মরসুম কেটে গেছে তাই আপনার জন্য আর কোন কাজ দেখছি না। অবশ্য আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কাজের মরসুম প্রায় শেষ, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

যাদের কথাগুলো বলা হতো তাদের অবশ্যই এগুলো শ্রুতিমধুর লাগত না, তারা ভাবতো তাদের ঠকানো হয়েছে। তাদের অনেকেই হিসেবপত্র রক্ষার কাজে কাটিয়েছেন তাই যে প্রতিষ্ঠান তাদের এভাবে পথে বসিয়েছে তার জন্য তাদের কোন ভালবাসা থাকে না।

‘আমি সম্প্রতি ঠিক করি বাড়তি কর্মচারীদের আমি একটু কৌশলে আর অনুভূতির সঙ্গেই বিবেচনা করবো। তাই আমি প্রত্যেকের শীতকালের কাজ ভালো করে বিবেচনা করবো ভাবলাম। আমি এই রকম কিছু বললাম : মিঃ স্মিথ, আপনি চমৎকার কাজ করেছেন (যদি করে থাকেন)। সেবার আপনাকে যখন নেওয়ার্কে পাঠাই কাজটা বেশ কঠিন ছিল। আপনার বেশ কষ্ট হয়েছিল অথচ আপনি চমৎকার ভাবে সামাল দিয়ে আসেন। আমরা আপনার জন্য গর্বিত। আপনি জানেন কাজ কেমন করে করতে হয় তা যেখানেই কাজ করুন না কেন। এই প্রতিষ্ঠান আপনাকে বিশ্বাস করে। যখনই প্রয়োজন হবে আপনাকে নেওয়া হবে। আমরা চাই আপনি এটা ভুলে যাবেন না!’

‘এল ফল কেমন হল? কর্মচারিরা একটু ভালো মন নিয়েই বিদায় নেয়। তারা তাদের পথে বসানো’ হয়েছে ভাবে না। ওরা জানে কোন কাজ থাকলে ওদের আবার ডাকা হবে। আমরা তাদের চাইলে তারা ব্যক্তিগত ভালোবাসা নিয়ে আসে।

ভূতপূর্ব ডোয়াইট মরো দুই ঘোরতর শত্রুর মধ্যে বন্ধুত্ব চালু করার কাজে দারুণ সিদ্ধহস্ত ছিলেন। কি ভাবে? তিনি বেশ কায়দা করে দুজনের মধ্যে কোনগুলো ঠিক সেগুলো প্রশংসা করে প্রকাশ করতেন। আর তাতে মিটমাট যেভাবেই হোকনা কেন উভয়পক্ষ যাতে সমান বিচার পায় তার চেষ্টা করতেন। এবং তিনি কখনও কোন লোককে ভুল প্রমাণ করতেন না।

আর এটাই প্রত্যেক বিচারকরা জানতেন–অপরকে তাদের মুখ রক্ষা করতে দিন।

সত্যিকারের বড় যারা, সারা দুনিয়াতেই, নিজেদের ব্যক্তিগত জয়ের ব্যাপার নিয়ে সময় নষ্ট করার অবসর তাদের থাকে না। যেমন–

দীর্ঘ তিক্ততাময় শত্রুতার শত শত বছরের পর ১৯২২ সালে তুর্কিরা গ্রীকদের তুর্কিস্থান থেকে চিরকালের মত তাড়াতে বদ্ধপরিকর হয়।

মুস্তাফা কামাল নেপোলিয়নের মতই একবার তার সেনাদলের সামনে বক্তৃতা দিয়ে বললেন : ‘আপনাদের লক্ষ্য হলো ভূমধ্যসাগর। সে সময় এই আধুনিককালের সবচেয়ে তিক্ততাময় যুদ্ধই তখন হচ্ছিল। তুর্কিরাই জেতে আর এরপর দুজন গ্রীক সেনাপতি ত্ৰিকুপিস আর ডিয়োনিস যখন কামালের সদর দপ্তরের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যান তখন তুর্কিরা পরাজিত শত্রুদের ভীষণভাবে অভিশাপ দিচ্ছিল।‘

কিন্তু কামালের ব্যবহারে বিজয়ীর অহঙ্কার ছিল না।

‘বসুন, ভদ্রমহোদয়গণ,’ তাদের করমর্দন করে তিনি বললেন। ‘আপনারা অবশ্যই ক্লান্ত।‘ তিনি এরপর যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনার পর তাদের পরাজয়ের বেদনা কিছুটা লাঘব করে বললেন এক সেনার অন্য সেনাকে বলার মতই : ‘যুদ্ধ হলো একটা খেলার মত, এতে শ্রেষ্ঠ সেনাদল সবসময় নাও জিততে পারে।‘

জয়ের চরম সন্ধিক্ষণেও কামাল এই গুরুত্বপূর্ণ নীতিটি মনে রেখেছিলেন : এখানে আমাদের ৫ নম্বর নিয়ম :

‘অপরকে মুখ রক্ষা করতে দিন।‘

মানুষকে সাফল্যের পথে নেওয়া

আমি পিট বার্লোকে চিনতাম। পিট কুকুর আর ঘোড়ার খেলা দেখাত। সার্কাস নিয়ে তিনি সারাজীবন দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পিট নতুন নতুন কুকুরকে যেমন করে শিক্ষা দিতেন আমার দেখতে ভালো লাগতো। আমি লক্ষ্য করতাম কোন কুকুর একটু উন্নতি করলেই পিট তাকে প্রশংসা আর আদর করে মাংস খেতে দিয়ে আরও ভালো করার আগ্রহ জাগিয়ে তুলত।

ব্যাপারটা নতুন নয়। পশুদের শিক্ষা দেবার কাজে এটা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেই চলেছিল।

আমি অবাক হচ্ছি, কুকুরদের শিক্ষার কাছে আমরা যে নীতি কাজে লাগাই মানুষের বেলা তা লাগানই না কেন? চাবুকের বদলে মাংস দিতে চাই না কেন? সমালোচনার বদলে কেনই বা প্রশংসা করি না? সামান্য উন্নতি করলেও আসুন প্রশংসা করি এতে অপর লোকটির আরও উন্নতি করার আগ্রহ জাগে।

ওয়ার্ডেন লুইস ই. লজ দেখেছেন সামান্য প্রশংসাতেও কাজ হয়। তিনি ছিলেন সিংসিং কারাগারের জাঁদরেল একজন রক্ষী। এই পরিচ্ছেদ লেখার সময় তাঁর কাছ থেকে এই চিঠিটা পাই : ‘আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অপরাধীদের দোষের জন্য সব সময় সমালোচনা আর নিন্দা করার বদলে তাদের কোন কোন সময় প্রশংসা করলে ঢের বেশি সহযোগিতা পাওয়া যায়।‘

‘আমাকে এখনও সিংসিং-এ ভর্তি করা হয়নি–অন্তত এখনও নয়–তবু নিজের জীবনের অতীতকে যখন মনের পর্দায় দেখি তখন বুঝি একটা মাত্র কথায় কেমন ভাবে আমার ভবিষ্যণ্টা দ্রুত বদলে যায়। আপনার নিজের সম্পর্কে একথা বলতে পারেন না! ইতিহাসে প্রশংসার অসামান্য যাদুকরী ক্ষমতার অসংখ্য প্রমাণ আছে।‘

উদাহরণ হিসেবে, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে নেপলসে ১২ বছরের একটি ছেলে কোন কারখানায় কাজ করতো। সে চাইতো গায়ক হতে, কিন্তু তার প্রথম শিক্ষক তাকে উৎসাহ দিতেন না। তিনি বলতেন, ‘তুমি গাইতে পারো না। তোমার গানের গলা নেই। গলার স্বর জানালার খড়খড়ির শব্দের মতো।

কিন্তু ছেলেটির মা, এক গরিব চাষীর মেয়ে, ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলতো তার গলায় গান অদ্ভুত চমৎকার। সে ছেলেকে খুবই প্রশংসা করতো। শুধু তাই নয় তার মা বহু কষ্ট সহ্য করে ছেলের গান গাইবার ব্যবস্থা করে। গরীব চাষী মার উৎসাহ আর প্রশংসা ফলে ছেলেটির জীবনধারাই বদলে গেল। আপনারা হয়তো তার নাম শুনে থাকবেন। তার নাম কারুসো।

বেশ কয়েক বছর আগে লণ্ডনে এক তরুণ লেখক হতে চাইছিল। কিন্তু সব কিছু তার বিরুদ্ধে বলেই মনে হতো। সে চার বছরের বেশি স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি। তার বাবার জেল হয় কারণ তিনি দেনা শোধ করতে পারেন নি। ছেলেটিও দারিদ্র্যের জ্বালা মর্মে মর্মে টের পেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে ইঁদুর ভরা একটা গুদামে লেবেল আটকানোর চাকরি পেল। রাতের বেলায় সে আরও দুটো ছেলের সঙ্গে নীচু একটা চিলে কোঠায় ঘুমোত-জায়গাটা লণ্ডনের বস্তি এলাকার কোথাও ছিল। নিজের লেখার ক্ষমতার উপর তার বিশ্বাস এতই কম ছিল যে, অন্য কেউ যাতে টের না পায় আর না হাসে তাই গভীর রাতে ডাকে সে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে দিত। গল্পের পর গল্প অমনোনীত হতে লাগল। এটা সত্যি যে এর জন্য সে এক শিলিংও পেল না, তবু একজন সম্পাদক তার প্রশংসা করেছিল। একজন সম্পাদক তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ছেলেটি এতই বিচলিত বোধ করল যে সারা রাস্তায় সে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ালো আর অশ্রুধারায় তার বুক ভেসে গেল।

ওই প্রশংসা, গল্প ছাপা হওয়ায় যে স্বীকৃতি সে পেল সেটা তার সমস্ত জীবনই একদম পালটে দিল। এই উৎসাহ সে না পেলে সারা জীবনই সে হয়তো ইঁদুর ভর্তি কারখানাতেই কাটাতে বাধ্য হতো। এ ছেলেটির নামও আপনারা জানেন। তিনি আর কেউ নন, চার্লস্ ডিকেন্স।

অর্ধশতাব্দী আগে লণ্ডনের এক শুকনো জিনিসের গুদামে আর একটি ছেলে কাজ করত। তাকে ভোর পাঁচটায় উঠে গুদাম ঝাড় দিতে হতো আর সারাদিন চৌদ্দ ঘন্টা কাজ করতে হতো। দুঃখময় এই জীবনকে সে ঘৃণা করত। দুবছর পর এটা আর তার সহ্য হলো না, তাই একদিন ভোরবেলা প্রাতরাশের জন্য অপেক্ষায় না থেকে পনেরো মাইল হেঁটে মার সঙ্গে কথা বলতে গেল। মা কোন বাড়িতে দেখাশোনার কাজ করতেন।

ছেলেটি প্রায় পাগলের মতই হয়ে গিয়েছিল। সে কেঁদে মাকে নানাভাবে সব বোঝাতে চাইল। ওই দোকানে থাকতে হলে সে আত্মহত্যা করবে বলে ভয় দেখাল। তারপর সে তার আগেকার স্কুল শিক্ষককে লম্বা একটা বেদনা ভারাক্রান্ত চিঠি লিখে জানাল, আর সে বাঁচতে চায় না। তার পুরনো শিক্ষক তাকে একটু প্রশংসা করে লিখলেন সে বুদ্ধিমান ছেলে, তার অনেক ভালো কাজ করার আছে। তিনি তাকে একটা স্কুলে শিক্ষকের চাকরিও দিতে চাইলেন।

এই প্রশংসা ছেলেটির ভবিষ্যতটাই বদলে দিল, আর ছেলেটি ইংরেজী সাহিত্যের জগতে একটা অমরত্বের ছাপ রেখে দিয়েছিল। কারণ ছেলেটি শেষ পর্যন্ত সাতাত্তরটি বই লেখে আর কলমের জোরে দশ লক্ষ ডলার আয় করে। এই পরিচিত নামটিও আপনাদের জানা। তিনি এইচ. জি. ওয়েলস্।

১৯২২ সাল নাগাত এক তরুণ ক্যালিফোর্নিয়ায় তার স্ত্রীকে নিয়ে প্রচণ্ড কষ্টে বাস করতো। সে গীর্জায় রবিবারে গান গেয়ে পাঁচ ডলারের মতো আর বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে কিছু রোজগার করতো। তার এতই টানাটানি ছিল যে শহরে থাকার উপায় না থাকায় আঙুর খেতের মাঝখানে একটা নড়বড়ে বাড়িতে থাকতো। এতে মাসে তার সাড়ে বারো ডলার খরচ হতো। কিন্তু ভাড়া কম হলেও সে তা দিতে পারতো না, ভাড়া বাকি পড়েছিল দশমাসের। ও আমায় বলেছিল এমন সময়ও গেছে যখন ওর শুধু আঙুর ছাড়া অন্য কিছু খাদ্য জোটেনি। সে এমনই হতাশায় ভেঙে পড়েছিল যে শেষ পর্যন্ত গানের জীবিকা ছেড়ে লরী বিক্রির কাজে যোগ দেবে বলেই ঠিক করল। ঠিক তখনই রিউপার্ট হিউজেসের এক ছোট্ট প্রশংসা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। রিউপার্ট হিউজেস বলেছিলেন, ‘তোমার গানের গলা চমৎকার। তোমার নিউ ইয়র্কে গিয়ে গান শেখা উচিত।’

ওই তরুণ সম্প্রতি আমায় বলেছে যে ওই সামান্য প্রশংসাই তার জীবনের মোড় ঘোরানোর দাবী রাখে। কারণ এতে উৎসাহ হয়ে সে আড়াই হাজার ডলার ধার করে পূর্ব দিকে রওয়ানা হয়। ওর নামও আপনারা শুনেছেন–তিনি হলেন লরেন্স টিবেট।

লোকেদের পরিবর্তন করে দেবার কথাই ধরুন। যদি আমি বা আপনি রোজ যাদের সংস্পর্শে আসি তাদের ভিতর সম্পদের কথা প্রকাশ করি, তাহলে মানুষকে আমরা কেবল বদলে দেব না, তাদের আমুল পরিবর্তিত করতে পারি।

বাড়িয়ে বলছি? তাহলে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর উইলিয়াম জেমসের জ্ঞানগর্ভ কথাগুলো শুনে নিন। আমেরিকার তিনি হলেন সবসেরা মনস্তাত্ত্বিক আর দার্শনিক। তিনি বলেছিলেন :

‘আমাদের কি রকম হওয়া উচিত তার তুলনা করলে বলতে হয়, আমরা কেবল অর্ধেকটা সম্বন্ধেই সচেতন। আমরা আমাদের শারীরিক আর মানসিক সম্পদের সামান্যই মাত্র কাজে লাগাই। সোজাসুজি বলতে গেলে বলতে হয় একজন মানুষ তার সীমার মধ্যেই কেবল বাস করে। তার মধ্যে নানা ধরনের শক্তি থাকলেও সাধারণতঃ সে তা ব্যবহার করে না।’

হ্যাঁ, আপনারা যারা এই লাইনগুলো পড়ছেন তারা তাদের ক্ষমতার বেশ কিছু সাধারণতঃ কাজে লাগান না। আর আপনার যে ক্ষমতায় অন্য লোকদের প্রশংসা করতে পারেন তাও আপনি করছেন না। তা করলে তারা তাদের সুপ্ত শক্তি সম্বন্ধে অবহিত হতে পারে।

অতএব অপরকে কুদ্ধ বা বিরক্ত না করে বদলাতে হলে ৬ নম্বর নিয়ম হল :

‘সামান্য উন্নতিতেই প্রশংসা করুন–যেটুকু উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন তারই প্রশংসা করুন। আর সেটা আন্তরিকতায় সঙ্গেই করুন।‘

প্রশংসা করুন

আমার জনৈক বান্ধবী মিসেস আর্নেস্ট জেন্ট নিউইয়র্কে তার বাড়িতে এক পরিচারিকাকে পরের সোমবার থেকে কাজ করতে বলেন। ইতিমধ্যে মিসেস জেন্ট তার আগেকার নিয়োগকর্তার কাছে ফোন করে তার সম্বন্ধে জানতে চাইলেন, যে তাকে আগে রেখেছিল। তিনি পূর্ণ প্রশংসাপত্র পেলেন না। মেয়েটি কাজ করতে এলে মিসেস জেন্ট বললেন : ‘নেলী, তুমি আগে যে বাড়িতে কাজ করতে সেখানে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছেন তুমি সৎ এবং বিশ্বাসী, ভালো রান্নাও কর আর বাচ্চাদের যত্ন করো। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন তুমি ভালো করে পোশাক পর না আর বাড়িঘর সাফ রাখো না। আমার মনে হয় তিনি মিথ্যে বলেছেন। তুমি যে সন্দুর পোশাক পর, যে কেউ দেখলে তা বুঝবে। আমি বাজি ধরতে পারি পোশাকের মতই তুমি বাড়ি সাফ রাখবে। আমরা সুন্দর মানিয়ে চলতে পারবো।’

তার তাই পরে সম্পর্কও বেশ ভাল হয়। নেলী তার খ্যাতি বজায় রাখার চেষ্টাই করত। বিশ্বাস করুন তাই হয়। সে বাড়ি ঝকমকে রাখতো। বরং সে কয়েক ঘন্টা বেশি খেটে মিসেস জেন্টের ধারণা বজায় রাখতে চাইত।

বলডুইন মোটর কোম্পানীর প্রেসিডেন্ট স্যামুয়েল ভাউক্লেইন বলেন, সাধারণ মানুষকে সহজেই চালানো যায় শুধু আপনি যদি দেখান যে তার কোন গুণের জন্য তাকে আপনি প্রশংসা করেন।

ছোট্ট করে বললে আপনি যদি কোন মানুষকে কোন গুণের জন্য উন্নত করতে চান তাহলে এমন ব্যবহার করতে হবে যেন তার সেই গুণটি বর্তমান রয়েছে আর সেটা দারুণ কিছু। শেক্সপীয়ার বলেছিলেন : কোন গুণ না থাকলে সেটা যে তার মধ্যে রয়েছে এমন ভাব দেখান। যে লোকের ওই বিশেষ গুণ নেই সেটা যদি তার আছে ধরা যায় তাহলে সে তার খ্যাতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাই করে। তাকে প্রশংসা করুন, তাহলে সে আপ্রাণ চেষ্টায় আপনার কাছে নিজেকে জাহির করতে চাইবে।

.

জর্জেট শেবল্যাঙ্ক তার ‘সুভেনিরস, মাই লাইফ উইথ মেটারলিঙ্ক’ বইতে কোন এক সামান্য বেলজিয়ান মেয়ের অদ্ভুত পরিবর্তনের কাহিনী লিখেছেন। সেটা এই রকম :

কাছাকাছি এক হোটেলের একটি পরিচারিকা মেয়ে আমার খাবার আনতো। তাকে ‘ডিম ধোওয়া মেরী’ বলে ডাকতো সবাই যেহেতু সে ডিম ধুয়ে জীবিকা আরম্ভ করে। মেয়েটি অদ্ভুত ধরনের, ট্যারা চোখ, পায়েও দোষ। বেচারি নানা দিক থেকেই প্রতিবন্ধী ছিল।

একদিন সে যখন হাতে করে আমার জন্য ম্যাকরোনির প্লেট নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমি সোজাসুজি বললাম, ‘মেরী, তুমি জানো না তোমার মধ্যে কত গুণ আছে।‘

নিজের আবেগ চেপে রাখতে অভ্যস্ত মেরী কয়েক মিনিট অপেক্ষা করল কারণ যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাই। তারপর ও ডিমটা টেবিলে নামিয়ে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশ বুদ্ধিমতীর মতই জবাব দিলো; মাদাম, কথাটা বিশ্বাসই করতাম না। ও কোন প্রশ্ন করেনি কারণ ওর কোন সন্দেহ ছিলো না। ও শুধু রান্নাঘরে গিয়ে কথাটা আমায় বললো। আর বিশ্বাসের জোর এমন যে কেউ ওকে ঠাট্টাও করতে পারল না। সেইদিন থেকে ওকে সবাই একটু সম্মানও জানাতে লাগল। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত পরিবর্তন ঘটে গেল মেরীর নিজেরই মধ্যে। নিজে যে দারুণ কিছু এই বিশ্বাসের ফলে ও নিজের মুখ আর শরীরের এমন যত্ন নিতে আরম্ভ করল যে ওর উপোসী যৌবন প্রস্ফুটিত হয়ে উঠল।

দুমাস পরে আমি যখন চলে যাচ্ছিলাম মেরী শেফের ভাইপোর সঙ্গে ওর বিয়ের কথাটা আমায় জানাল। আমি একজন লেডি হব,’ বলে ও আমায় ধন্যবাদ জানাল। একটা ছোট্ট কথায় ওর জীবনটাই বদলে গেল।

জর্জেট শেবল্যাঙ্ক ‘ডিম দেওয়া মেরীকে’ সম্মানের সঙ্গে বাঁচার পথ করে দিয়েছেন–আর সেই সম্মানবোধ ওর জীবনধারাই বদলে দিল।

হেনরি ক্লে বিসনারও ফ্রান্সের আমেরিকান সেনাদলের চরিত্র সংশোধন করতে একই পথ নিয়েছিলেন। আমেরিকার সেনাপতিদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় জেনারেল জেমস জি হার্ড বিসনারকে বলেন যে তাঁর মতে ফ্রান্সে থাকা বিশ লক্ষ আমেরিকার সৈন্যরা অত্যন্ত ভালো আর আদর্শবাদী। এদের মত জীবনে আর কাউকেই তিনি দেখেন নি।

এটা কি অতিরিক্ত প্রশংসা? হয়তো তাই। কিন্তু বিসনার এটা কিভাবে কাজে লাগান দেখুন।

‘আমি কখনই সৈন্যদের বিসনার তাদের সম্বন্ধে কি বলেছেন শোনাতে ভুল করেনি, বিসনার লিখেছেন। এক মুহূর্তের জন্যেও আমি কথাটার সত্যমিথ্যা যাচাই করিনি। তবে আমি জানতাম এটা সত্যি না হলেও জেনারেল হার্বর্ডের প্রশংসা ওদের উদ্বুদ্ধ করবে ওই অবস্থায় পৌঁছতে।’

একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে-’কোন কুকুরকে বদনাম দিয়ে তাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে পারা যায়। কিন্তু তার প্রশংসা করে দেখুন কি হয়!’

প্রায় প্রত্যেকেই–ধনী, দরিদ্র, ভিখারি, চোর–সবাইকেই একবার সৎ বললে তারা সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করে।

সিংসিং কারাগারের ওয়ার্ডেন লজ বলেন, কোন দুবৃত্তের সঙ্গে ব্যবহার করতে হলে একটা মাত্র উপায় আছে তাকে কজা করার। তার সঙ্গে এমন ব্যবহার করুন যেন সে কোন সম্মানিত ভদ্রলোক। ধরে নিন সে আপনার সমান। এমন ব্যবহারে সে এমনই বিগলিত হবে যে, সে এই ভেবে গর্বিত হবে যেকেউ তাকে বিশ্বাস করে। লজের কথা বিশ্বাস করতেই হবে কারণ এমন দক্ষ লোক আর হয়নি। কথাটা বারবার বলার মতই।

অতএব কাউকে যদি আঘাত বা অসম্মান না করে বদলাতে চান তবে ৭ নম্বর নিয়ম হল :

‘লোককে ভালো করে প্রশংসা করুন। সে তা হলে ভালো হতে চাইবে।‘

ভুল সংশোধন সহজ করুন

অল্প কিছুদিন আগে আমার বছর চল্লিশের এক অবিবাহিত বন্ধু বিয়ে করবে স্থির করে। ওর প্রেমিকা ওকে নাচ শিখতে বলে। বন্ধু আমায় বলেছিল তার নাচ শেখার দরকার ছিল। কুড়ি বছর আগে সে যেমন নাচতো আর এখনও তার কোন পরিবর্তন দেখা যায় নি। সে লিখেছিল, প্রথম শিক্ষকই আমায় বোধহয় জানান নাচ শেখা আমার কিছুই হয় নি। সে বলে সবটাই ভুল। আমাকে সবই ভুলে নতুন করে শুরু করতে হবে। আমার সেটা করার ইচ্ছে ছিল না তাই তার কাছ থেকে চলে আসি।‘

‘পরের শিক্ষক হয়তো মিথ্যা বলতেন, তবে সেটা আমার পছন্দ ছিল। সে আমায় জানায় আমার কায়দাগুলো একটু পুরনো ধরনের হলেও আমি চেষ্টা করলে শিখতে পারব। প্রথম শিক্ষক আমায় হতাশ করে দেন। নতুন শিক্ষক ঠিক তার উলটোই করেন। সে আমার প্রশংসা করে আর ভুল ধরার চেষ্টা করেনি। তোমার স্বাভাবিক ছন্দ আছে। তুমি নাচিয়ে হয়েই জন্মেছে। অথচ আমি জানতাম আমি একদম চতুর্থ শ্রেণীর নাচিয়ে, তা সত্ত্বেও মনে মনে পোষণ করতে লাগলাম তিনি ঠিক কথাই বলছেন। আসলে তাকে এটা বলাবার জন্যেই টাকা দিচ্ছি। সেকথা কেন উল্লেখ করলাম?’

‘যাই হোক আমি এটা জানতাম তিনি আমার প্রশংসা না করলে আজ যা নাচতে পারি তাও পারতাম। তিনি বলেন আমি স্বাভাবিক নাচিয়ে। এটাই আমায় উৎসাহী করে তোলে। আমায় আশা জোগায়। তাতেই আমি উন্নতি করতে চাই।’

কোন শিশু, স্বামী বা কোন কর্মচারিকে বলুন কোন কাজে সে বোকা বা অপদার্থ, তার কোন দক্ষতা নেই! সে সব ভুল করছে, তাহলে তার উন্নতি করার সমস্ত ইচ্ছাই বিলুপ্ত হবে। কিন্তু উল্টো কৌশলটা কাজে লাগান, আন্তরিক প্রশংসা করুন, কাজটা করা সহজ বুঝিয়ে বলুন, লোকটিকে বুঝতে দিন সে কাজটা করতে পারে এ বিশ্বাস আপনার আছে। তাহলে দেখবেন সে সারারাত জেগেই তা করতে চাইবে।

ঠিক এই কৌশল লাওয়েল টমাস কাজে লাগিয়েছিলেন। বিশ্বাস করুন তিনি মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন যাদুকর। তিনি আপনাকে তৈরি করতে পারেন, তিনি আপনার মধ্যে বিশ্বাস জাগাতে পারেন। আপনার সুপ্ত প্রতিভা তিনি জাগিয়ে তুলতে পারেন। যেমন ধরুন, আমি সম্প্রতি মিঃ আর মিসেস টমাসের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটাই। আর শনিবার রাতে চুল্লীর সামনে বসে আমায় একটা ব্রিজ খেলায় যোগ দিতে ডাকা হয়। ব্রিজ? না, না। আমি ব্রিজ খেলতে পারি না। খেলাটা চিরদিনই আমার কাছে রহস্যময় রয়ে গেছে। কিছুতেই তা পারব না।

‘কেন, কেন, এতে কোন কৌশল নেই।’ লাওয়েল বললেন। ‘ব্রিজে শুধু স্মরণ আর বিচারবুদ্ধি ছাড়া আর কিছুই লাগে না। তুমি তো একবার স্মৃতিশক্তির উপর একটা পরিচ্ছেদ লিখেছো। ব্রিজ তোমার কাজে লাগবে। তোমার লাইনে পড়ে এটা।’

আর আশ্চর্য ব্যাপার! কিছু বোঝার আগেই আমি ব্রিজ খেলার টেবিলে বসে গেলাম। তার কারণ হলো আমায় বলা হয় ব্রিজ খেলায় আমার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। তাই ব্যাপারই আমার কাছে সহজ হয়ে গেল।

ব্রিজের কথা বলতে গিয়ে আমার এলি কালবার্টসনের কথা মনে পড়ছে। কালবার্টসনের নাম তো ঘরে ঘরে। যেখানেই ব্রিজ খেলা সেখানেই তাঁর নাম। তাঁর লেখা ব্রিজ সম্পর্কে বই অন্ততঃ বারোটা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে আর বিক্রয় হয়েছে লক্ষ লক্ষ কপি। অথচ তিনিই আমায় বলেন তিনি কোনকালেই ব্রিজ খেলাকে জীবিকা বলে গ্রহণ করতে পারতেন না যদি না একজন তরুণী তাঁকে জানাতে তার মধ্যে খেলার স্বাভাবিক ক্ষমতা আছে।

১৯২২ সালে তিনি আমেরিকায় এসে দর্শন আর সমাজবিদ্যা শেখানোর কাজ খুঁজে ব্যর্থ হন। তা

রপর তিনি কয়লা বিক্রির চেষ্টা করেন আর তাতেও ব্যর্থ হন।

তারপর চেষ্টা করেন কফি বিক্রি করতে আর তাতেও ব্যর্থ হন।

সে সময় তার মনে একেবারেই খেলেনি ব্রিজ খেলা শেখানোর ব্যবস্থা করতে। তিনি যে শুধু এক বাজে ব্রিজ খেলোয়াড় ছিলেন তাই নয়, তা ছাড়া বড় একগুঁয়ে ছিলেন। তিনি এত সব প্রশ্ন করতেন আর খেলার জন্য তর্ক করতেন যে, কেউ তাঁর সঙ্গে খেলতে চাইত না।

তারপরেই তিনি পরিচিতি হলেন এক সুন্দরী ব্রিজ খেলোয়াড়ের সঙ্গে তার নাম ডিলন। তিনি তাঁর সঙ্গে প্রেমে পড়ে তাকেই বিয়ে করলেন। ডিলন দেখলেন কালবার্টসন কত সতর্কভঙ্গীতে তাস বিশ্লেষণ করতে থাকেন। ডিলন তাই বললেন তিনি তাসের টেবিলে একজন দারুণ খেলোয়াড়। তার প্রশংসাতেই তিনি ব্রিজ খেলাকে তার জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করেন। কথাটা কালবার্টসন স্বয়ং আমায় বলেছিলেন।

অতএব লোককে না চটিয়ে তাঁদের পরিবর্তিত করতে হলে ৮ নম্বর নিময় হল: প্রশংসা করুন আর উৎসাহ দিন। ত্রুটি সংশোধন করা যে কঠিন নয় এটা বুঝিয়ে দিন।

আনন্দে যা চান অন্যকে দিয়ে তাই করার পথ

১৯১৫ সালে আমেরিকা প্রায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। কারণ এক বছর ধরে ইউরোপের দেশগুলো মানুষের ইতিহাসে যা হয়নি সেইভাবে পরস্পর হত্যার রক্তাক্ত তাণ্ডবে মেতে ওঠে। স্বপ্নেও এ ঘটনা কেউ ভাবেনি। শান্তি কি আর আনা যাবে? কেউ তা জানতো না। কিন্তু উড্রো উইলসন একবার চেষ্টা করে দেখবেন ভাবলেন। তিনি ঠিক করলেন ইউরোপের যুদ্ধোন্মাদ সব মানুষের কাছে তার ব্যক্তিগত শান্তির দূত পাঠাবেন।

সেক্রেটারি অব স্টেট উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান, যিনি শান্তির প্রবক্তা ছিলেন, ব্রায়ানের যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। তিনি দেখলেন মানুষের সেবায় বিরাট একটা কাজ করে নিজেকে অমর করে তোলা যাবে। কিন্তু উইলসন অন্য একজনকে কাছে ডাকলেন তিনি হলেন তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু কর্ণেল হাউস। কর্ণেল হাউসকেই দায়িত্ব দেয়া হলো ব্রায়ানকে অসন্তুষ্ট না করে অপ্রিয় সংবাদটা তাঁকে জানাবার জন্য।

কর্ণেল হাউস তাঁর ডায়েরীতে লিখেছিলেন, ‘ব্রায়ান দৃশ্যতই হতাশ হয়েছিলেন যখন তিনি শুনলেন শান্তির দূত হিসেবে আমি ইউরোপে যাবো, তিনি ভেবেছিলেন কাজটা তিনি করবেন …।‘

‘আমি উত্তর দিলাম যে প্রেসিডেন্ট মনে করছেন কারও পক্ষে সরকারীভাবে যাওয়াটা সমীচীন হবে না, আর তিনি গেলে লোকের কৌতূহল জাগবে এবং লোকে ভাববে তিনি কেন গেলেন …।

ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন? হাউস যা বললেন তার অর্থহলো ব্রায়ান বিরাট ব্যক্তি, তার পক্ষে কাজটা যোগ্য হবে না–আর ব্রায়ান তাতে খুশি হলেন।

কর্ণেল হাউস দুনিয়ার হালচাল সম্পর্কে অভিজ্ঞ মানুষ তাই তিনি মানবিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মই মেনে চলেছিলেন : ‘অপরকে দিয়ে যা করাতে চান সেটা তাকে খুশি হয়ে করতে দিন।

উড্রো উইলসন, উইলিয়াম গিবন ম্যাকাডুকে তার ক্যাবিনেটের সদস্য হওয়ার সময়েও এই নীতি মেনে চলেছিলেন। এটাই ছিল কাউকে তিনি যা দিতে পারতেন সেই সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান। অথচ উইলসন এমনভাবেই কাজটা করলেন যাতে অন্যজন দ্বিগুণভাবে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। ম্যাকাডুর নিজের কথাতেই ব্যাপারটা শুনুন : তিনি (উইলসন বললেন যে তিনি খুবই খুশি হবেন আমি যদি তার মন্ত্রিসভায় অর্থদপ্তরের সেক্রেটারির পদ গ্রহণ করি। সব ব্যাপার চমৎকারভাবে উপস্থাপিত করার সুন্দর দক্ষতা তাঁর ছিল। তিনি এমনভাবে কথাটা উপস্থাপন করতেন মনে হতো তিনি কাজটা করলে যেন তাঁকে অনুগ্রহ করা হচ্ছে।’

দুর্ভাগ্যবশত উইলসন সব সময়েই এই কৌশল কাজে লাগান নি। তা যদি করতেন, তাহলে ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো। যেমন, উইলসন আমেরিকাকে লীগ অব নেশনসে নেবার ব্যাপারে সেনেট আর রিপাবলিকান দলকে খুশী করতে পারেন নি। উইলসন ইলিহুরুট বা হিউজেস বা হেনরি ক্যাবট লজকে বা অন্য কোন রিপাবলিকানকে তার সঙ্গে শান্তির সভায় নিয়ে যাননি। বদলে তিনি নিয়ে যান তাঁরই দলের অখ্যাত লোকদের। তিনি রিপাবলিকান সদস্যদের পাত্তা না দিয়ে এটা স্বীকার করতে রাজিও হন না যে লীগ তৈরির কাজে তাঁর মত তাদেরও দান আছে, তাদের কোন ভাবেই অংশদানে তিনি রাজি হন না। আর এইরকম মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার ভুল কাজের ফলে উইলসন নিজের কর্মজীবন নষ্ট করেন, স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেন, জীবনসীমা কমিয়ে আনেন, আমেরিকাকে লীগের বাইরে থাকতে বাধ্য করেন আর বিশ্ব ইতিহাসের ধারাও বদলে দেন।

বিখ্যাত প্রকাশন প্রতিষ্ঠান ডবলিউ পেজ এই নীতি অনুসরণ করতেন। অপরকে আপনার ইচ্ছামত কাজে উদ্বুদ্ধ করুন। প্রতিষ্ঠানটি এতই দক্ষ ছিল যে ও হেনরি জানিয়ে ছিলেন, ডবলিউ পেজ তার কোন গল্প প্রকাশে অনিচ্ছা এমনভাবে প্রকাশ করতেন এবং তাতে এমন মহত্ব আর প্রশংসা থাকতো যে অন্য প্রকাশক গল্পটি প্রকাশনার জন্য গ্রহণ করলে তিনি এতে বেশি আনন্দ লাভ করতেন। কিন্তু ডবলিউ পেজ প্রত্যাখ্যান করলে তিনি সব চাইতে বেশী খুশী হতেন।

.

আমি একজন লোককে জানি যিনি বক্তৃতা দানের বহু আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতেন। এসব আমন্ত্রণ আসত এমন সব বন্ধুদের কাছ থেকে যাদের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। অথচ তিনি তা এমন কৌশলে প্রত্যাখ্যান করতেন যে তাঁরা প্রত্যাখ্যানে দুঃখ পেতেন না। তিনি কি করে এটা করতেন? শুধু তিনি দারুণ ব্যস্ত একথা বা অন্য কোন কারণ দেখিয়ে নয়। না, বরং আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আর একজন বক্তার নাম প্রস্তাব করতেন। আসলে তিনি অন্যকে আঘাত দিতেন না। বরং আর একজনের নাম করে সুযোগ দিতেন। আর এতে কাজ হতো চমৎকার। অন্য ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ পেতেন না।

জে. এ ওয়ান্ট প্রতিষ্ঠানের একজন মেকানিকের মনোভাব বদলের ব্যাপারে উদগ্রীব হন। প্রতিষ্ঠানটি ছিল বিখ্যাত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। মেকানিকের কাজ ছিল সারাদিন রাতে কাজ করা টাইপ রাইটার আর অন্যান্য মেশিন কর্মক্ষম রাখা। সে বারবার অভিযোগ করত কাজের সময় বড় বেশি, কাজও প্রচুর, তার একজন সহকারী চাই।

জে. এ. ওয়ান্ট তাকে সহকারী না দিয়েই তাকে সুখী করেন। কিভাবে? এই মেকানিকের ব্যবহারের জন্য একটা ব্যক্তিগত অফিস দেওয়া হয়। তার নাম দরজার উপর সেঁটে দেওয়া হয় এইভাবে ম্যানেজার, সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট।

সে আর সামান্য মিস্ত্রী রইলো না, যাকে রাম, শ্যাম, যদুরা হুকুম করতে পারে। এখন সে একজন ম্যানেজার। সে পেল সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ববোধ। এরপর থেকে সে বেশ আনন্দেই অভিযোগ ছাড়া কাজ করে চলেছিল।

ছেলেমানুষী ভাবছেন এটাকে? হয়তো ভাই। কিন্তু সবাই নেপোলিয়নকেও একথা বলেছিল তিনি যখন লিজিয়ন অব অনার সৃষ্টি করে সেটা তার সৈন্যদলের মধ্যে ১৫০০ জনকে পদক বানিয়ে বিতরণ করেন আর ১৮ জন সেনাপতিকে ‘ফ্রান্সের বীর’ আখ্যা দেন এবং সৈন্যবাহিনীকে ঘোষণা করেন গ্র্যাণ্ড আর্মি বলে। এই যুদ্ধে ওস্তাদ সেনাদের তিনি খেলনা দিচ্ছেন বলে নেপোলিয়ানের সমালোচনা করা হতে থাকে। জবাবে নেপোলিয়ন বলেন, মানুষ খেলনার দাস।

নেপোলিয়ন যে কৌশল নিয়েছিলেন সেটা আপনার ব্যাপারেও কাজে লাগাতে পারে। আমার একজন বান্ধবী মিসেস জেন্ট, যার নাম আগেও উল্লেখ করেছি, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। ছেলেরা দৌড়োড়ৌড়ি করে তাঁর বাড়ির বাগান নষ্ট করছিল। তিনি সমালোচনা, বকাবকি, অনেক কিছু করলেও তাতে কাজ হলো না। এরপর তিনি ছেলের দলের সবচেয়ে দুষ্টু নেতাকে একটা পদবী দিয়ে তাকে তার ‘গোয়েন্দা’ হিসেবে কাজে লাগালেন এইসব বন্ধ করতে। এতেই সমস্যার সমাধান হলো। সেই ‘গোয়েন্দা বাগানে আগুন জ্বালিয়ে একটা লোহার শিক গরম করে ভয় দেখাতে লাগল, যে বাগানে পা দেবে তাকে ছ্যাঁকা লাগানো হবে।

এই হলো মানুষের চরিত্র। অতএব অপরকে অসন্তুষ্ট না করে যদি স্বমতে আনতে চান ৯ নম্বর নিয়ম হল :

‘অপরকে দিয়ে যা করাতে চান তা তাকে খুশি মনে করতে দিন।‘

.

অল্প কথায়

অপরের অসন্তোষ না জাগিয়ে তাকে পরিবর্তনের নটি উপায়।

১: প্রশংসা আর আন্তরিক তারিফ দিয়ে শুরু করুন।

২: অপরের ভুল ঘুরিয়ে দেখান।

৩ : অন্যকে সমালোচনার আগে নিজের ভুলের কথা বলুন।

৪ : সরাসরি আদেশ না দিয়ে প্রশ্ন করুন।

৫: অপরকে মুখ রক্ষা করতে দিন।

৬ : সামান্য উন্নতিতেই প্রশংসা করুন আর প্রত্যেকটা উন্নতিতেও প্রশংসা করুন এবং সেটা আন্তরিক ভাবেই করুন।

৭ : অন্যকে প্রশংসা করুন তাতে সে ভালো হবার চেষ্টা করবে।

৮ : প্রশংসা করুন, ত্রুটি সংশোধন যে কঠিন নয় সেটা বুঝিয়ে দিন।

৯ : অপরকে খুশি মনে আপনার কাজ করতে দিন।

যে চিঠিতে জাদু জাগে

বাজি ধরতে পারি আপনি এখন কি ভাবছেন। আপনি সম্ভবত এখন ভাবছেন এই রকম কিছু : যে চিঠিতে যাদু জাগে! অসম্ভব ব্যাপার! এ রকম শুধু বিজ্ঞাপনই দেখা যায়।

অবশ্য এমন ভাবনার জন্য আপনাকে দোষ দিচ্ছি না। পনেরো বছর আগে এরকম একটা বই আমার হাতে পড়লে আমিও তাই ভাবতাম।

আসুন খোলাখুলি কথা বলা যাক। ‘যে চিঠিতে যাদু জাগে’ কথাটা কি সঠিক? না, সত্যি কথা বলতে গেলে তা হয় না।

আসল সত্য হলো কথাটা বড় বেশি কম করেই বলা হয়েছে। এই পরিচ্ছদে যে সব চিঠি ছাপা হয়েছে সেগুলো দ্বিগুণ ভোজবাজি দেখিয়েছে। এটা কার আবিষ্কার জানেন? আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন সেল্স ম্যানেজার কেন. আর. ডাইকের। তিনি বর্তমানে কলগেট পামলিভ কোম্পানীর বিজ্ঞাপন ম্যানেজার আর অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজারের ডাইরেক্টর বোর্ডের সভাপতি। মিঃ ডাইক বলেন ডিলারদের কাছ থেকে খবরাখবর চেয়ে তিনি যে সব চিঠি লিখতেন তাতে শতকরা ৫ থেকে ৮ এর বেশি জবাব কিন্তু পেতেন না। তিনি আমায় বলেছেন শতকরা ১৫ ভাগ পেলেই সেটা তিনি যথেষ্ট ভাবতেন আর ২০ হলে তো সেটা অলৌকিক ভাবতে পারতেন। মিঃ ডাইকের একটা চিঠির জবাব এলো শতকরা ৪২.১২ ভাগ। তিনি এটা কিভাবে করলেন? মিঃ ডাইকের নিজের কথাতেই সেটা শুনুন : চিঠি আসা অস্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায় মিঃ কার্নেগির সঠিক কথা বলা আর মানবিক সম্পর্ক নামের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমি যোগ দেবার পর। আমি দেখলাম আমি যেভাবে চিঠি লিখতাম সেটার সবই ভুল। পাঠক্রম অনুযায়ী চিঠি লেখার পরেই সব বদলে গেল।

চিঠিটা এখানে দিচ্ছি। এটা অন্য একজন লেখককে সামান্য উপকারের অনুরোধে খুশি হতে হয়। এই কারণে নিজের দাম সম্পর্কে তার ধারণা বাড়ে।

মিঃ জন ব্ল্যাঙ্ক,
ব্ল্যাঙ্কভিল, আরিজোনা।

প্রিয় মিঃ ব্ল্যাঙ্ক,

‘একটু অসুবিধা পড়ায় আপনি সাহায্য করতে পারেন কি না ভাবছি?..’ এই ধরনের শুরুতে ভোজবাজী ঘটে যায়। মানুষের চরিত্রই এই।

আর একটা উদাহরণ দেখুন।

আমি আর হোমার একবার ফ্রান্সের অভ্যন্তরে মোটরে চড়ে যাওয়ার সময় পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমাদের পুরনো মডেলের ফোর্ড গাড়িটা থামিয়ে আমরা একদল কৃষককে কাছাকাছি বড় শহরে কিভাবে পৌঁছতে পারি জানতে চাইলাম।

প্রশ্নের ফল হলো একেবারে বিদ্যুৎ স্পর্শের মত। এই সব গ্রাম্য কৃষক মোটর গাড়ি খুব কমই দেখেছে। আমেরিকানরা যখন ফ্রান্সে গাড়ি চড়ে যাচ্ছেন তখন তারা নিশ্চয়ই লক্ষপতি। হয়তো হেনরি ফোর্ডেরই আত্মীয় হবেন! এরকমই বোধ হয় ওরা ভাবছিল। তবু ওরা এমন কিছু জানতো যা আমরা জানতাম না। তাই আমরা যখন কাছের শহরে যাওয়ার রাস্তা জানতে চাইলাম তখন তাদের গুরুত্ববোধ বাড়িয়ে দিলাম। তারা একসঙ্গে কথা বলা শুরু করল। একজন নিজেকে জাহির করার দারুণ সুযোগ পেয়ে সে অন্যদের থামিয়ে বলা আরম্ভ করল।

সুতরাং আপনি নিজে এটা একবার চেষ্টা করে দেখুন। অচেনা জায়গায় গেলে এটা করে দেখতে পারেন। এইভাবে বলতে পারেন : দয়া করে অমুক রাস্তায় কিভাবে যেতে পারি একটু দেখিয়ে দেবেন? বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন একজন শত্রুকে এইভাবেই সারা জীবনের মত বন্ধু করে তোলেন। সে সময় ফ্রাঙ্কলিন মাঝবয়সী যুবক ছিলেন, তিনি তার জমানো সব টাকায় একটা ছোট ছাপাখানা খোলেন। তিনি ফিলাডেলফিয়ার জেনারেল অ্যাসেম্বলীতে কেরানি নির্বাচিত হন। এটা পাওয়ায় তিনি সরকারী ছাপার কাজ করতে পারতেন। তাতে ভালোই লাভ হতো, বেন তাই বজায় রাখতে চাইছিলেন। কিন্তু একটা বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিল। অ্যাসেম্বলীর একজন বিরাট ধনী আর ক্ষমতাবান মানুষ ফ্রাঙ্কলিনকে খুবই অপছন্দ করতেন। তিনি শুধু যে তাঁকে অপছন্দই করতেন তাই নয়, খোলাখুলি সকলের সামনে নিন্দাও করতেন।

এটা খুবই মারাত্মক ব্যাপার। আতএব ফ্রাঙ্কলিন ঠিক করলেন তার শত্রুকে বশ করতেই হবে।

কিন্তু কেমন করে? এটা একটা সমস্যাই ছিলো। শত্রুকে কোন সহায়তা করে? না, তাতে তার সন্দেহ জাগতে পারে-ঘৃণা জাগাও অসম্ভব নয়। ফ্রাঙ্কলিন খুবই বুদ্ধিমান মানুষ, তাই এরকম ফাঁদে পা দিলেন না। তিনি তাই এর উল্টোই করলেন। তিনি শত্রুর কাছে কিছু সুবিধা প্রার্থনা করলেন।

ফ্রাঙ্কলিন দশ ডলার ধার চাননি। না, না, এরকম কিছুই না। ফ্রাঙ্কলিন এমন কিছু চাইলেন যাতে অন্য লোকটি খুশি হলেন-এমন কিছু ফ্রাঙ্কলিন চাইলেন যাতে তার সম্মানবোধ জেগে উঠল, এমন সুবিধা যাতে তার অহমিকা আর গুরুত্ব দুই-ই বাড়লো। এমন কিছু যাতে ফ্রাঙ্কলিনের যে শ্রদ্ধা আছে সেটা বোঝা গেল।

বাকিটা ফ্রাঙ্কলিন নিজের কথাতেই শুনুন :

যখন শুনতে পেলাম ভদ্রলোকের বিশেষ দুষ্প্রাপ্য আর ভালো বইয়ের পাঠাগার আছে, আমি তাঁকে অনুরোধ করে চিঠি লিখলাম যদি তাঁর একখানা বই আমাকে কয়েক দিনের জন্যে দেন তাহলে বাধিত হব।

তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সেটা পাঠিয়ে দিলেন, আমিও কদিন পরে সেটা ফেরত দিই। সঙ্গে একটা চিরকুটে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও জানালাম।

‘এরপরে আমাদের যখন দেখা হলো তিনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে আমার সঙ্গে কথা বললেন (যা তিনি আগে কখনই করেন নি), আর ভবিষ্যতে আমাকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিলেন। তাই এরপর আমরা দারুণ বন্ধু হয়ে উঠলাম আর সে বন্ধুত্ব তাঁর মৃত্যুকাল পর্যন্তই ছিল।’

বেন ফ্রাঙ্কলিন প্রায় দেড়’শ বছরেরও বেশি হলো মারা গেছেন কিন্তু তিনি যে মনস্তত্ত্ব কাজে লাগিয়েছিলেন তা আজও অম্লান। সেটা অপরকে কিছু সাহায্যের অনুরোধ।

আমার একজন ছাত্রও এইভাবে উপকার পান। আমার সেই ছাত্রের নাম অ্যালবার্ট বি অ্যামনেল। অ্যামনেল বেশ কবছর ধরে জলের পাইপ আর ঘর গরম রাখার যন্ত্রপাতি বিক্রি করতেন। তিনি ব্রুকলীনের একজন লোকের কাছে কিছুতেই তার যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে পারেন নি। ভদ্রলোকের অফিসে গেলেই তিনি ডেস্কের পিছনে বসে চুরুট খেতে খেতেই গম্ভীর স্বরে অ্যামনেলকে বলতেন, আমার আজ কিছুই দরকার নেই। আমার সময় নষ্ট করবেন না। পথ দেখুন।

এরপর অ্যামনেল নতুন কৌশল ধরলেন। তারপরে সব বদলে গিয়ে তারা পরস্পর বন্ধু হয়ে উঠলেন আর বহু ভালো ভালো অর্ডারও পেলেন।

অ্যামনেলের প্রতিষ্ঠান লং আইল্যাণ্ডের ভিলেজে একটা নতুন শাখা খোলার কথাবার্তারও বলছিলেন। এ এলাকাটা সম্পর্কে ওই প্লাম্বার ভদ্রলোকের ভালো জ্ঞান ছিল। তাই মিঃ অ্যামনেল একদিন তাঁর অফিসে গিয়ে বললেন : মিঃ সি আমি আজ আপনাকে কোন কিছু বিক্রি করতে আসিনি। আপনার কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে এসেছিলাম। কয়েক মিনিট সময় দিতে পারবেন?

‘হুম্’! ভদ্রলোক চুরুটে টান মেরে বললেন, কি বলার আছে বলে ফেলুন।

‘আমাদের প্রতিষ্ঠান লং আইল্যাণ্ডে একটা শাখা খোলার ব্যবস্থা করেছে’–মিঃ অ্যামনেল বললেন। স্থানীয় মানুষদের মধ্যে এলাকাটা সম্বন্ধে সবচেয়ে ভালো আপনি জানেন তাই আপনার কাছে জানতে এসেছি কাজটা কি বুদ্ধিমানের হবে?’

এবার নতুন ব্যাপার! কারণ ভদ্রলোক এতদিন সেলসম্যানদের বকাবকি করে নিজের গুরুত্ব দেখাতেন আর তাদের পথ দেখতে বলতেন।

কিন্তু এবার একজন সেলসম্যান তাঁর কাছে পরামর্শ চেয়ে অনুরোধ করেছে। হা বিরাট কোন প্রতিষ্ঠানের সেলসম্যান তার মতামত চাইছে।

.

‘বসুন’ চেয়ার টেনে তিনি বসলেন। এরপর লং আইল্যাণ্ডে দোকান কেনা উচিত কিনা সে সম্বন্ধে অনেক কথা বললেন। তিনি শুধু যে জায়গাটা অনুসন্ধান করলেন তাই নয় বরং ওটা কেনা আর মালপত্র সরবরাহ ইত্যাদির বিষয়েও ঢের উপদেশ দিলেন। একটা বিরাট কোম্পানীর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তাঁর গুরুত্ববোধে বেড়ে উঠল। তিনি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে উঠলেন, তিনি এরপর তাঁর পারিবারিক অশান্তির বিষয়েও অনেক কথা বললেন।

এরপর সন্ধ্যেবেলায় যখন ফিরে এলাম’, মিঃ অ্যামনেল বললেন, আমি যে বেশ ভালো মত কিছু অর্ডারই নিয়ে এলাম তাই নয় বরং চিরকালের মতই তাঁর বন্ধুত্ব অর্জন করলাম। বর্তমানে আমি তার সঙ্গে গল্ব খেলি। এই পরিবর্তন আসে তাকে কিছু সুবিধার অনুরোধ করাতেই।

মনে রাখবেন আমরা সকলেই প্রশংসা আর সুনাম চাই, আর এটা পেতে সব কিছুই করতে পারি। তবে কেউই আন্তরিকার অভাব সহ্য করে না। কেউ তোষামোদও চায় না।

দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ


প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ 

ডেল কার্নেগি

सृष्टि संवत्  - - १,९६,०८,५३,१२२

विक्रम संवत्  - - २०७८


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ