ইসলামের সংস্কার একটি অলীক কল্পনা
ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে ধন্যবাদ যে, তার কারণে ইসলামের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় পশ্চিমারা প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, কোথায় মধ্যপন্থী (মডারেট) মুসলমানরা? এটা ঠিক যে, তাদের কারোরই কোন অস্তিত্ব নাই। চিন্তাটাই অবাস্তব। মুসলমানরা বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখে। আপনি হয় একজন সাচ্চা দীনী মুসলমান হবেন, নয় কমজোরী মন্দ মুসলমান হবেন। এই শেষ দলকেই পশ্চিমারা ভুল আখ্যায় মডারেট বা মধ্যপন্থী মুসলমান হিসাবে শনাক্ত করে। মুসলমানরা যখন নিজেদেরকে মধ্যপন্থী হিসাবে দাবী করে তখন বলতে হয় তারা “ভণ্ড”।
আসলেই ইসলাম একটি মন্দ ধর্ম। ইসলামের প্রকৃত সমস্যা কেবলমাত্র তার অনুসারীদের মধ্যে নাই, বরং এটা আছে প্রকৃতপক্ষে তার গ্রন্থের মধ্যে। এই বিষয় নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে তার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর মুসলমান “ইসলামের সংস্কার”-এর ধারণা হাজির করেছে। এই ধরনের অল্প সংখ্যক “সংস্কারক” বা সংস্কারপন্থীরা পশ্চিমাদের কাছ থেকে কিছু স্বীকৃতি লাভ করেছে, যদিও সমধর্মাবলম্বী মুসলমানদের ব্যাপক অংশের মধ্যে তাদের কোন পাত্তা নাই এবং তাদের কাছে তারা তামাশার পাত্র।
ইসলামকে সংস্কার করা যায় কি না এখন এই বিষয়ে এই নিবন্ধে আলোচনা করতে চাই।
আসুন আমরা সংস্কারের ইংরাজী শব্দ reform এর বুৎপত্তিগত অর্থ বিবেচনা করি। ইংরাজী reform শব্দটি লাটিন reformare শব্দ থেকে আগত, যার অর্থ হলো পুনরুদ্ধার করা, পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া, নবায়ন করা। এই সবগুলি শব্দ যা বুঝায় তা হচ্ছে কোন কিছুকে তার মূল রূপে ফিরিয়ে নেওয়া।
ইসলামের সংস্কার সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে খৃষ্টান ধর্মের সংস্কারের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক।
খ্রীষ্টধর্মের সংস্কার
খীষ্টধর্মের সংস্কার প্রচেষ্টা হিসাবে সংস্কার চেষ্টা শুরু হয় নাই। বরং এটা হয়েছিল ক্যাথলিক চার্চের সংস্কার প্রয়াস হিসাবে। অনেক বিশ্বাসী চার্চ এবং তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিরক্ত ছিলেন। যেমন, স্বর্গের জন্য টিকিট বিক্রয় এবং চার্চের পদ কেনাবেচা করা। তারা এগুলিকে চার্চের ভিতরকার ভূয়া বা ভ্রান্ত মতবাদ এবং অপকর্ম হিসাবে বিবেচনা করতেন।
মার্টিন লুথার, উলরীখ জুয়িংলি, জন ক্যালভিন এবং অন্য সংস্কারকগণ এগুলির বিরুদ্ধে এবং চার্চের অন্যান্য কর্মকাণ্ড ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। যেমন, পাপ মোচনের বন্দোবস্ত, মেরীর আরাধনা, সাধু-সন্তদের আরাধনা এবং তাদের মধ্যস্থতা সংক্রান্ত ধারণা, বেশীর ভাগ ধর্মানুষ্ঠান, যাজক মণ্ডলীর জন্য বাধ্যতামূলক ব্রহ্মচর্য (সন্ন্যাসব্রতসহ) এবং পোপের কর্তৃত্ব।
এগুলির কোনটাই খ্রীষ্টধর্মের মতবাদ ছিল না। এগুলি ছিল চার্চের অনুশীলন। সংস্কারকগণ চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তারা বাইবেলের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করেন নাই। তাদের পরামর্শ ছিল বাইবেলকে আক্ষরিকভাবে পাঠ করা হোক। তারা বাইবেলের রূপকল্পমূলক ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বাইবেলের পুরাতন বা এবং নূতন নিয়মকে সংবিধিবদ্ধ আইন হিসাবে গ্রহণ করেন। শব্দগুলোর অর্থ সেটাই যেটা বলা হয়েছে। কোন জটিলতা, দ্বন্দ্ব অথবা দুর্বোধ্য অর্থ যদি ঘটে তবে সেটার জন্য মূল গ্রন্থ দায়ী নয়, তার জন্য দায়ী হবে পাঠক।ধর্মগ্রন্থে সপষ্টভাবে এবং আক্ষরিকভাবে যেটা বলা নাই সেটাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং ধর্মগ্রন্থে যেটা সপষ্টভাবে এবং আক্ষরিকভাবে বলা হয়েছে সেটাকে অটলভাবে অনুসরণ করতে হবে।এটাই হচ্ছে প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কারের মূল কথা।
ইসলামী সংস্কার
ইসলামেও অনুরূপ সংস্কার ঘটেছিল। এই সংস্কারের নাম হচ্ছে “সালাফীবাদ”।অনেক পশ্চিমা ভুল করে বিশ্বাস করেন যে, মোহাম্মদ ইব্ন আব্দ-আল-ওয়াহাব (১৭০৩-১৭৯২) হচ্ছেন ইসলামের একটি চরমপন্থী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা। এটা সত্য নয়। আব্দুল ওয়াহাব কোন নূতন সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন নাই। লুথার যেমন খ্রীষ্টান ধর্মের একজন সংস্কারক ছিলেন একইভাবে তিনিও তেমন ইসলাম ধর্মের একজন সংস্কারক ছিলেন।
আব্দুল ওয়াহাবের চিন্তার মূল জায়গাটা হচ্ছে এই যে, মোহাম্মদ এবং তার সাহাবীগণের সময়ে ইসলাম ছিল বিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ। ইসলামের পতনের কারণ হলো ইসলামের বিশুদ্ধ ধারা থেকে বিচ্যুতি (বিদাহ্)। ইসলামের প্রাথমিক যুগের তিন প্রজন্মের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে এবং অনৈসলামিক প্রভাব বহিষকারের মাধ্যমে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটবে।
ইসলাম যে তার প্রাথমিক পর্যায়ে বিশুদ্ধ ছিল সে কথা কুরআনে (৫:৩) বলা হয়েছে,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
আব্দুল ওয়াহাব বললেন যে, যে কোন পরিবর্তন কিংবা নূতন কিছু প্রবর্তন করা থেকে মুসলমানদের বিরত থাকা উচিত। এবং তাদের উচিত সালাফ (পূর্বপুরুষগণ কিংবা আদিপুরুষগণ)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করা। আর এভাবেই সালাফী নামের উদ্ভব হয়।সালাফীর দৃষ্টান্তমূলক আদর্শ হচ্ছে ইসলামের প্রথম পর্যায়ের ধার্মিক পূর্বপুরুষগণ।
এই বিশ্বাস আব্দুল ওয়াহাবের উদ্ভাবন নয়, বরং এটার ভিত্তি হচ্ছে একটা হাদীস, যেখানে মোহাম্মদ বলছেন,“আমার প্রজন্মের লোকরা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ, এর পরে যারা আসবে তাদের স্থান তার পরে, এবং তার পরের স্থানে থাকবে তারা যারা তাদের পরে আসবে (অর্থাৎ মুসলমানদের তিনটি প্রথম প্রজন্ম)” (বুখারী ৩:৪৮; ৮১৯ এবং ৮২০ এবং মুসলিম ৩১:৬১৫০ এবং ৬১৫১।) [তাবিঈন এবং তাবা আৎ-তাবিঈন]
আব্দুল ওয়াহাব সালাফীবাদের প্রতিষ্ঠাতা পাশ্চাত্যের এই অতিকথা বা মিথ ধ্বংস করার জন্য এ কথা উল্লেখ করা দরকার যে, ইব্ন তাইমিয়াহ্ও (১২৬৩-১৩২৮) ছিলেন একজন সালাফী। ইব্ন তাইমিয়াহ মোহাম্মদের জন্মদিন উদযাপনের বিরোধিতা করতেন এবং সুফী সাধুদের মাজার-দরগা নির্মাণের বিরোধিতা করতেন। তার মতে, “তাদের অনেকে (মুসলমানরা) এমনকি এ কথাও জানে না যে, এই সব আচার-অনুষ্ঠান এসেছে খ্রীষ্টান (ক্যাথলিক) ধর্ম থেকে। খ্রীষ্টধর্ম এবং তার অনুসারীরা অভিশপ্ত হোক।”
সালাফ শব্দটিকে প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায়, আবু সাদ্ আব্দ আল করীম আল সামানী-এর বই “আল-আন্সাব”-এ। আল করীম মৃত্যু বরণ করেন ১১৬৬ খ্রীষ্টাব্দে (ইসলামী পঞ্জিকা অনুসারে ৫৬২ হিজরী)। আল সালাফী শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এটা সালাফ বা পূর্ববর্তীগণ থেকে এসেছে। আমি যা শুনেছি সে অনুযায়ী এটা হচ্ছে তাদের চিন্তাধারার অভিযোজন।” এর পর তিনি আরও কিছু সংখ্যক লোকের দৃষ্টান্ত দেন যারা এই ধারণাকে ব্যবহার করে।
সালাফীরা নিজেদের আইনসমমত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মোহাম্মদের একটি হাদীস উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি বলছেন,“আমি তোমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সালাফ” (সহীহ্ মুসলিম : ২৪৫০)।
ইসলামের সংস্কার এবং তার আদি বিশুদ্ধ পর্যায়ে ফিরে যাবার আকাঙ্ক্ষা আব্দুল ওয়াহাবকে দিয়ে শুরু হয় নাই। এটা প্রকৃতপক্ষে একটা পুরাতন চিন্তা। অবশ্য আব্দুল ওয়াহাব এই আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দেবার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন। সৌদী রাজাদের বদৌলতে তার এই সাফল্য এসেছিল, যারা ছিল তার এক কন্যার মাধ্যমে তার বংশধর।
খ্রীষ্টান সংস্কার এবং ইসলামী সংস্কারের মধ্যে সাদৃশ্যপ্রটেস্ট্যান্টবাদ এবং সালাফীবাদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। প্রথমটা মেরী এবং সাধুদের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য এবং তাদের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীটা মোহাম্মদের প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য এবং সেই সঙ্গে ইসলামী পবিত্র পুরুষদের বিশেষ ক্ষমতা সংক্রান্ত ধারণাকে (শিয়াবাদের মধ্যে যে আচার-অনুষ্ঠান আছে) প্রত্যাখ্যান করে। দুই সংস্কার আন্দোলনই তাদের নিজ নিজ বিশ্বাসকে আদি বিশুদ্ধতায় ফিরিয়ে নিতে চায় এবং এই ধর্ম দুইটির প্রতিষ্ঠাতাদের মৃত্যুর পরে যে সব পরিবর্তন সংযোজিত হয়েছিল সেগুলিকে পরিহার করতে চায়।
ডেমোক্র্যোটদের প্রেসিডেনশিয়াল কনভেনশনে যে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ডঃ ইনগ্রিড ম্যাট্সন নামে এক মহিলাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি উত্তর আমেরিকার ইসলামী সমাজ (আইএসএনএ)-এর সভাপতি। তাকে যখন ওয়াহাবী মতবাদ ইসলামের চরম দক্ষিণপন্থী সম্প্রদায় কি-না এ কথা জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি উত্তরে বলেন,“না, ওয়াহাবী মতবাদকে এইভাবে চিহ্নিত করা ঠিক না। এটা এই ধরনের কোন সংকীর্ণ সম্প্রদায় নয়। শত শত বৎসর ধরে যেসব সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং কঠোর ব্যাখ্যা ইসলামের উপর চেপে বসেছিল সেগুলি থেকে ইসলামকে মুক্ত করার জন্য দুইশত বৎসর আগে যে সংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এটা হচ্ছে সেই আন্দোলনের নাম। এটা সত্যিই ইউরোপীয় প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কারের অনুরূপ।http:/www.thewahabimyth.com/intellectuals.htm
খ্রীষ্টধর্ম সংস্কারের ফল
পরিধিগত এবং পদ্ধতিগত ভাবে খ্রীষ্টান ধর্ম-সংস্কার এবং ইসলামী ধর্ম-সংস্কার প্রায় একই রকম হলেও দু’টির ফল হয়েছে খুব বেশী রকম ভিন্ন। বাইবেলের আক্ষরিক পাঠ প্রটেস্ট্যান্ট সমাজসমূহের সামাজিক তত্ত্ব ও সংগঠনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে। উপরন্তু তা আমেরিকার বৃটিশ উপনিবেশসমূহে সামাজিক সংগঠনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে।
এই সংস্কারকগণ আক্ষরিক অর্থে ইউরোপের দার্শনিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক পটভূমিকে বদলে দিয়েছেন। আমরা যে সমাজে বসবাস করি সেখানে এখনও সমাজ সংগঠনের প্রটেস্ট্যান্ট তত্ত্ব প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।
আমেরিকার রাজনৈতিক চিন্তাধারা মূলত ক্যালভিনবাদী। অন্য কথায় এর সামাজিক সংগঠন খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থের আক্ষরিক অর্থের উপর প্রতিষ্ঠিত।ক্যালভিন এবং জুইংলির মত অনুযায়ী শুধু যে ধর্মগ্রন্থের আক্ষরিক পাঠের উপর সমগ্র ধর্মীয় বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত তাই নয়, বরং চার্চ সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন এবং সমাজের নিজেরও প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত এই আক্ষরিক পাঠের উপর।
লুথার পোপ লিওকে একটি চিঠি লেখেন (যেটা তাকে চার্চ থেকে বহিষকারের কারণ হয়) যেখানে তিনি তার ধারণার সারবস্তু ব্যাখ্যা করেন। চিঠির শিরোনাম ছিল “খ্রীষ্টানদের স্বাধীনতা সম্পর্কে”। এই চিঠিটি লুথারের চিন্তার নির্যাসকে তুলে ধরেছে। লুথারের মত অনুযায়ী খ্রীষ্টধর্মের মর্মকথা হচ্ছে “স্বাধীনতা” অথবা “মুক্তি”।
এটা হচ্ছে সেই ধারণা যেটা পরিণামে “ব্যক্তি স্বাধীনতা”, “রাজনৈতিক স্বাধীনতা” এবং “অর্থনীতির স্বাধীনতা” ধারণার উত্থান ঘটায়।ইউরোপীয় আলোকপ্রাপ্তির বেশীরভাগ জুড়েই আছে স্বাধীনতা এবং মানুষের মুক্তির জন্য আকাঙ্ক্ষা। এই মুক্তি হচ্ছে মানুষকে মিথ্যা বিশ্বাস থেকে, মিথ্যা ধর্ম থেকে, স্বৈরাচারী কর্তৃত্ব ইত্যাদি থেকে মুক্তিদান যেটাকে বলা হয় “মুক্তির ভাবনা।” পাশ্চাত্যবাসীরা আজ অবধি এই আলোকপ্রাপ্তির প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রেখেছে।
এই কারণে আমেরিকা প্রথমে কুয়েতকে এবং তার এক দশক পরে ইরাকীদের মুক্তির জন্য ইরাকে আগ্রাসন চালায়। এই কারণেই আমেরিকা বিদেশে প্রায় চল্লিশটি যুদ্ধ করেছে; জাপান থেকে জার্মানী এবং ইতালী, পানামা থেকে নিকারাগুয়া, ভিয়েতনাম থেকে সোমালিয়া পর্যন্ত তাকে এইসব যুদ্ধ করতে হয়েছে। আপনি এইসব যুদ্ধ সমর্থন করেন বা না করেন উদ্দেশ্য সব সময় এক থেকেছে, সেটা হচ্ছে জনগণকে মুক্ত করা। গণতন্ত্রের এই ধারণা যা আমেরিকার আন্তর্জাতিক কর্মনীতিতে এতটা বদ্ধমূল হয়ে আছে সেটা এসেছে লুথারের “স্বাধীনতার” ধারণা থেকে।
ইসলামে সংস্কারের ফল
ইসলামের সংস্কারের মর্মবস্তু কী? ওয়াহাবীদের বিশ্বাসের মর্মবস্তু হচ্ছে এই যে, মানুষ স্বাধীন নয়, বরং আল্লাহর দাস; জনগণ হচ্ছে “ইবাদ” (দাসসমূহ)। এই ধরনের ভাবনা প্রটেস্ট্যান্টবাদের ভাবনা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিপরীত। এবং এইখানেই রয়েছে খ্রীষ্টধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যকার মৌল পার্থক্য।
খ্রীষ্টান এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যে দৃশ্যমানভাবে অনেক সাদৃশ্য আছে। উভয় ধর্মই এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, উভয় ধর্মেই মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যখানে নবী রয়েছে, উভয় ধর্মই মুক্তির পথ সন্ধানী, এবং উভয় ধর্মেই নরক, স্বর্গ এবং পরজীবন ইত্যাদি আছে। তবে মর্মগতভাবে উভয় ধর্মই যে খুব বেশী রকমভাবে পরসপর থেকে ভিন্ন শুধু তাই নয়, বরং তারা পরসপর বিরোধী। মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদের অনুসারীরা যেভাবে দাবী করেন সেভাবে ইসলাম মোটেই খ্রীষ্টধর্মের ধারাবাহিকতা নয়। বরং এটার মর্মবস্তু খ্রীষ্টধর্ম বিরোধী। এই ধর্মবিশ্বাস দুইটির প্রথমটি মানুষের স্বাধীনতার প্রবক্তা এবং অন্যটি মানুষের দাসত্বের প্রবক্তা। একটা মুক্তির বাণী নিয়ে আসে, অন্যটি আত্মসমর্পণের।
স্বাধীনতার ভাবনা যেটা খ্রীষ্টধর্মে এত গুরুত্বপূর্ণ সেটা ইসলামের ধারণার বিপরীত। যখন মুসলমানরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে যেখানে দেখতে পান লেখা আছে “গণতন্ত্র হচ্ছে ভণ্ডামি” এবং “স্বাধীনতা নিপাত যাক” তখন বুঝবেন তারা ইসলামের প্রকৃত মর্মবস্তুকেই তুলে ধরছে, যা হল স্বাধীনতা বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী, দাসত্বপন্থী এবং আত্মসমর্পণবাদী।
প্রকৃত মুসলমানদের বাছাইয়ের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়, বরং তাদের উচিত মোহাম্মদকে অনুসরণ করা। কুরআনের ৩৩ঃ৩৬-এ বলা হয়েছেঃوَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا“আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকিবে না। কেহ আল্লাহ্ এবং তাঁহার রাসূলকে অমান্য করিলে সে তো সপষ্টই পথভ্রষ্ট হইবে।”(কুরআন – ৩৩:৩৬)মুসলমানদের জন্য কোনটা ভালো এটা তাদের উপর নির্ভর করে না। তাদের জন্য সিদ্ধান্ত ঠিক করাই আছে, তারা পছন্দ করুক বা না করুক তাদেরকে যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে নির্দেশ মান্য করা।كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْوَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ“তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হইল যদিও তোমাদের নিকট ইহা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যাহা অপছন্দ কর সম্ভবত তাহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যাহা ভালবাস সম্ভবত তাহা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।”(কুরআন – ২: ২১৬)
নিজ নাম অনুযায়ী ইসলামের নির্যাস হচ্ছে বশ্যতা স্বীকার তথা আত্মসমর্পণ। আল্লাহ্ই সব চেয়ে ভাল জানেন। সুতরাং তার শেষ দূত মহাম্মদের মাধ্যমে তিনি যে নির্দেশ পাঠিয়েছেন সকল মানুষকে তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
গণতন্ত্র মানে, জনগণের দ্বারা জনগণের শাসন ব্যবস্থা। গণতন্ত্রে মানুষ আইন তৈরী করে। ইসলামে আপনি সেটা করতে পারেন না। ইসলামে আইন আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে। এইসব আইনকে যদিও যুক্তিবিরোধী এবং নিপীড়ক মনে হয় তবু মানুষ সেগুলিকে মানতে বাধ্য।এই কারণেই মুসলমানরা ব্যভিচারীদেরকে প্রস্তর নিক্ষেপ কিংবা ইসলাম ধর্মত্যাগীদেরকে হত্যার বিরোধিতা করতে পারে না।
খ্রীষ্টান এবং ইসলাম উভয় ধর্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। দুই ধর্মই অভিন্ন পথ এবং পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। কিন্তু তাদের সমাপ্তি হয়েছে সম্পূর্ণ দুই বিপরীত মেরুতে। যেখানে খ্রীষ্টান ধর্মের সংস্কার এনেছে স্বাধীনতা, আলোক প্রাপ্তি এবং গণতন্ত্রকে সেখানে ইসলামী সংস্কারের পরিণতি ঘটেছে অজ্ঞতা, মানুষের দাসত্ব এবং জিহাদে।
ইব্ন তাইমিয়াহ্ এবং ই্ব্ন আব্দুল ওয়াহাব ইসলামের সংস্কারক ছিলেন। সমকালীন ইসলামী সংস্কারকদের মধ্যে আমরা যাদের নাম উল্লেখ করতে পারি তারা হচ্ছেন মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯) যিনি কুরআনের একটি ব্যাখ্যা লিখেছিলেন এবং সাঈদ কুত্ব (১৯০৬-১৯৬৬) যিনি ছিলেন পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে মুসলিম ভ্রাতৃসংঘের নেতৃত্বকারী বুদ্ধিজীবী এবং যিনি কি না আবার ছিলেন আয়াতুল্লাহ খোমেনী এবং বিন লাদেনসহ সকল ইসলামী সন্ত্রাসবাদীর আদর্শিক প্রেরণাদাতা ।
সংস্কার বনাম রূপান্তর
আজকের দিনে যে সকল তথাকথিত ইসলামী সংস্কারক ইসলামের সংস্কারের কথা বলছেন তারা যেটা চাইছেন সেটা আসলে সংস্কার নয়, বরং রূপান্তর। উপরে উল্লিখিত সংস্কারকদের বিপরীতে এইসব নূতন সংস্কারকগণ ইসলামের উৎসে যেতে চান না, বরং তারা কুরআনের অংশ এবং গোটা শরীয়াকে পরিহার করে একটা সম্পূর্ণরূপে নূতন ধর্ম প্রবর্তন করতে চান, অথচ এটাকে তারা নাম দিতে চান ইসলাম।
এটা একটা বিভ্রান্ত চিন্তা এবং যৌক্তিক ও ব্যবহারিক উভয়ভাবেই এটা অবাস্তব। কুরআনেও এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই নয়া সংস্কারকদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামকে একটা ভিন্ন রূপ দান করা। অন্য কথায়, তারা ইসলামে “বিদা”(পরিবর্তন) আনতে চায়। এটা কি সম্ভব? কুরআন যে কথা বলেছে, একজন বিশ্বাসী কি তার বিপরীত কোন মত ধারণ করতে পারে? আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি যে, কুরআন ৩:৩৬ দ্বারা এ কথা সপষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, যে সব বিষয়ে আল্লাহ এবং তার নবী তাদের মতামত জানিয়েছেন সেগুলি সম্পর্কে ভিন্ন কোন ধরনের মত পোষণের অধিকার বিশ্বাসীদের নাই। ধর্মের জন্য কোনটা ভালো সেটা তারা কীভাবে ঠিক করবে?
কুরআনের যখন বলা হয় তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে তখন এটা পছন্দ না হলেও বার্তাটা সপষ্ট। এটা ঈশ্বর বলছেন । ঈশ্বরের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপনি কীভাবে যাবেন? একবার আপনি ঈশ্বরের বাণী হিসাবে কুরআনকে মেনে নিলে তারপর আপনি আপনার ইচ্ছামত যেখান থেকে ইচ্ছা নিবেন অথবা বাদ দিবেন সেটা তো চলবে না। এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ“তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যাহারা এরূপ করে তাহাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তাহারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হইবে। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অনবহিত নহেন।”(কুরআন – ২ : ৮৫)
أَفَغَيْرَ اللّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنَزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلاً“বল, ’তবে কি আমি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে সালিস মানিব – যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুসপষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন!”(কুরআন – ৬ :১১৪)
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أُولَـئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ“যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহত্ম পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তাহারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।”(কুরআন – ৬:১১৬)
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أُولَـئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلاَّ النَّارَ وَلاَ يُكَلِّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ“আল্লাহ্ যে কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যাহারা তাহা গোপন রাখে ও বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তাহারা নিজেদের জঠরে অগ্নি ব্যতীত আর কিছু পুরে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাহাদের সাথে কথা বলিবেন না এবং তাহাদিগকে পবিত্র করিবেন না। তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।”(কুরআন – ২:১৭৪)
এ ছাড়াও দেখুন:
“সেই দিন আমি উত্থিত করিব প্রত্যেক সম্প্রদায়ে তাহাদেরই মধ্য হইতে তাহাদের বিষয়ে একজন সাক্ষী এবং তোমাকে (মোহাম্মদকে) আমি আনিব সাক্ষীরূপে ইহাদের বিষয়ে। আমি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে সপষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করিলাম।” (কুরআন – ১৬:৮৯)
“আল্লাহ্ অবতীর্ণ করিয়াছেন উত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব যাহা সুসমঞ্জস এবং যাহা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়। ইহাতে, যাহারা তাহাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাহাদের গাত্র রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাহাদের দেহমন বিনম্র হইয়া আল্লাহ্র স্মরণে ঝুঁকিয়া পড়ে। ইহাই আল্লাহ্র পথনির্দেশ, তিনি উহা দ্বারা যাহাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ্ যাহাকে বিভ্রান্ত করেন তাহার কোন পথপ্রদর্শক নাই।”(কুরআন – ৩৯:২৩)
كَمَا أَنزَلْنَا عَلَى المُقْتَسِمِينَ الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِين فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ : “যেভাবে আমি অবতীর্ণ করিয়াছিলাম বিভক্তকারীদের উপর; যাহারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করিয়াছে (অর্থাৎ কুরআনের কিছু অর্থ গ্রহণ করা, কিছু অর্থ বর্জন করা।)। সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি উহাদিগের সকলকে প্রশ্ন করিবই।(কুরআন – ১৫:৯০-৯২)
وَلاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِআল্লাহ্র আদেশ কেহ পরিবর্তন করিতে পারে না।(কুরআন – ৬:৩৪)
لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ“তাহাদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখিরাতে, আল্লাহ্র বাণীর কোন পরিবর্তন নাই; উহাই মহাসাফল্য।”(কুরআন – ১০:৬৪)وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا“তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব হইতে পাঠ করিয়া শুনাও। তাঁহার বাক্য পরিবর্তন করিবার কেহই নাই। তুমি কখনই তাঁহাকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় পাইবে না।”(কুরআন – ১৮:২৭)
কীভাবে একজন মুসলমান কুরআনে বিশ্বাস আছে এ কথা দাবী করার পর এই সতর্কবাণীগুলিকে অস্বীকার করতে পারে?ইসলামের তথাকথিত সংস্কারকরা সবচেয়ে ভালো হলে ভ্রান্ত পথচারী আর সবচেয়ে খারাপ হলে কপট। তাদের প্রচেষ্টাকে খুব ভালোভাবে নেওয়া উচিত নয়। তাদের উদ্দেশ্য ভালো অথবা মন্দ যাই-ই থাক তারা মানুষকে প্রতারিত করছে আর এইভাবে একটি অত্যন্ত অশুভ এবং বিপজ্জনক বিশ্বাসকে বৈধতা দিচ্ছে।
একমাত্র সত্য আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারে। সুমিষ্ট আবরণ দিয়ে ইসলামের প্রকৃতির পরিবর্তন সম্ভব নয়। আপনি কোন পানিকে বিশুদ্ধ করতে পারেন। আপনি এমনকি আপনার প্রস্রাবকে পানীয় জলে পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু আপনি গ্যাসোলিনকে (পেট্রল) যতই বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করেন এটাকে কি আদৌ পানযোগ্য করতে পারবেন? ইসলামের মর্মবস্তু হচ্ছে অশুভ। আপনি যতই সংস্কারের চেষ্টা করেন না কেন, আপনি এটাকে মানবিক বিশ্বাসে পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনি কি নাৎসিবাদকে সংস্কার করতে পারবেন? গোটা ধারণাটাই হচ্ছে বিভ্রান্ত এবং অবাস্তব। এটা (সংস্কার) জগাখিচুড়ি অথবা ছলনা। জিহাদ দুইটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই স্তম্ভ দুইটি হচ্ছে যুদ্ধ এবং প্রতারণা। আমি চাই না মুসলমান সংস্কারকদের মিথ্যা আশ্বাসে কেউ বোকা বনুক। মধ্যপন্থী বা নম্র ইসলামের কোন অস্তিত্ব নাই। এটা একটা মিথ বা অতিকথা মাত্র।
শরীয়া বিরোধী এই মুসলমানদের তুলনায় আমি বরং জিহাদী মুসলমানদেরকে বেশী সম্মান করি। জিহাদীদের বেলায় আমি আমার শত্রুকে চিনতে পারি। শরীয়া বিরোধী মুসলমানদেরকে আমি বিশ্বাস করি না। আমি তাদেরকে বুঝি না। তাদের কথা অর্থহীন। তাদের উদ্দেশ্য কী তা আমি জানি না। আমি সেই সব লোকদেরকে বিশ্বাস করি না যারা বলে আমি মোহাম্মদের অনুসারী, কিন্তু আমি মোহাম্মদকে অনুসরণ করি না। তাদের দাবী সন্দেহজনক, অসৎ এবং প্রতারণামূলক। আপনি মুসলমান হলে মুসলমানই হোন। আমি আপনার সঙ্গে একমত হব না। কিন্তু আমি অন্তত জানব যে আপনি কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন এবং নিজ নিরাপত্তার জন্য আমাকে কোন জায়গায় দাঁড়াতে হবে। কিন্তু আপনি যদি এখন একজন মুসলমান হন এবং এখন ইসলাম এবং শরীয়া বিরুদ্ধ হন তবে আপনাকে আমি বিশ্বাস করব না। আপনি হয় মূর্খ, নয়ত বদমাইশ। আপনি উষ্ণ বা শীতল কোনটাই না। আমার সাফ কথাটাই আপনাকে বলব।
কিছু সংখ্যক তথাকথিক সংস্কারক জিহাদীদের থেকে তাদের ভয়ের কথা শুনিয়ে নিজেদের পরিচিতি এবং চেহারা গোপন করে। তারা আমেরিকানদেরকে ধাপ্পা দিতে চাচ্ছে। গোটা ব্যাপারটাই ধাপ্পাবাজী।
ইসলামের সংস্কার সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। কিন্তু এটাকে পরিবর্তন বা রূপান্তর করতে গেলে আপনাকে স্বর্গীয় কর্তৃত্ব পেতে হবে। একমাত্র ঈশ্বরই তার কথার পরিবর্তন করতে পারেন। সেই স্বর্গীয় কর্তৃত্ব কোথায়? ইসলামের একমাত্র সৎ সংস্কারক ছিলেন বাহাউল্লাহ্। তিনি বুঝেছিলেন ইসলামের সংস্কার সম্ভব নয়। সুতরাং তিনি নিজেকে ঈশ্বরের নূতন অবতাররূপে ঘোষণা করেন। এবং ঘোষণা করেন যে তার মাধ্যমে ঈশ্বর নূতন বাণী পাঠিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে কুরআনে প্রদত্ত তার পূর্ববর্তী সকল অনুশাসনকে বাতিল করেছেন।
সুতরাং তিনি মুসলমানদেরকে বললেন, ইতিপূর্বে তোমাদেরকে অবিশ্বাসীদেরকে যেখানে পাবে সেখানে তাদেরকে হত্যা করতে বলা হয়েছিল, এখন ঈশ্বর চান যে ধর্মবিশ্বাস নিরপেক্ষভাবে তোমরা সকল মানুষকে ভালোবাস। ইতিপূর্বে যেখানে তিনি বলেছিলেন মেয়েরা বুদ্ধিতে খাটো এবং যদি তারা তোমাদের অবাধ্য হবে বলে ভয় কর তাহলে তাদেরকে প্রহার কর এখন সেখানে তিনি তার মত পরিবর্তন করে বলছেন, নারী এবং পুরুষ সকল বিষয়ে সমান। এবং কাউকেই নারীর প্রতি দুর্ব্যবহার করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। আগে যেখানে ঈশ্বর বলেছিলেন অবিশ্বাসীরা নরকবাসী হবে এবং সেখানে অনন্তকাল ধরে অগ্নিদগ্ধ হবে সেখানে এখন তিনি বলছেন, তোমাদের কর্মই হবে তোমাদের বিচারের মানদণ্ড। এবং ভাল কাজ ছাড়া তার নিকট তোমাদের বিশ্বাসের কোন মূল্য নাই। এবং তিনি বিশ্বাসের কারণে কারো প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করবেন না। এখন তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, তিনি তোমাদের হৃদয়ের বিশুদ্ধতার দিকে দৃষ্টি দিবেন, মুখের কথার দিকে নয়। তিনি যেখানে ইতিপূর্বে মানুষদের অগ্নিদগ্ধ করার উদ্দেশ্যে নরক তৈরীর জন্য অগণিত স্বর্গীয় মুদ্রা ব্যয় করেছিলেন এখন তিনি সেই নরক প্রকৃতপক্ষে বন্ধ করে দিয়েছেন এবং পাপীসহ সবাইকে ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তিনি চান যে, তোমরা তাকে মেনে চলবে, এবং তার প্রতি ভয়ের কারণে নয়, কেবলমাত্র তার প্রতি ভালোবাসার কারণে মানুষকে ভালোবাসো। পরিণত মানুষের ন্যায় আচরণ করো। ইতিপূর্বে তিনি তোমাদের জন্য যুদ্ধ করাকে ভালো বলেছিলেন, এখন তিনি তার মত পরিবর্তন করে বলছেন যুদ্ধ করাটা বর্বর পশুদের জন্য শোভন, মানুষের জন্য শোভন নয়।
এর জন্য প্রয়োজন সাহসের। এটা ছিল মধ্য পারস্যের উনবিংশ শতাব্দীর ঘটনা। অবশ্য তিনি কারারুদ্ধ হয়েছিলেন এবং তার বাকী জীবন নির্বাসনে অতিবাহিত হয়েছিল। তার অনেক অনুসারীকে হত্যা করা হয়েছিল। এটা ঠিক যে বাহাউল্লাহ্র বক্তব্যে কিছু যৌক্তিকতা ছিল। যুক্তিটা হচ্ছে এই যে, একমাত্র ঈশ্বরই তার নিজের আইন বাতিলের ক্ষমতা রাখেন। অবশ্য এই যুক্তি ধোপে টিকে না। তাহলে কি ঈশ্বর যখন মোহাম্মদকে পাঠিয়েছিলেন তখন তিনি গাঁজায় দম দিচ্ছিলেন? এবং তার কথার এত নড়চড় হয় কেন? অনুগ্রহপূর্বক এই সব চালবাজী বন্ধ করুন! হয় আপনি মুসলমান হোন এবং মোহাম্মদ যা বলেছেন তা-ই করুন, নতুবা এই ধর্ম পরিত্যাগ করুন। এবং আসুন আমরা জানি কে আমাদের শত্রু ।
ইসলামের সংস্কার সম্ভব নয়। যত রকম উপায়ে সম্ভব, তত রকম ভাবেই অনেকে সে চেষ্টা করেছে। মুতাজিলারা চেষ্টা করেছে, সুফীরা চেষ্টা করেছে, শত শত পুরাতন এবং নূতন ধারার অনুসারীরা (সম্প্রদায়) চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা সবাই ব্যর্থ হয়েছে। ইসলাম ইতিহাসের বর্জ্যস্থানে স্থান পাবার যোগ্য। দয়া করে এটাকে সেখানেই নিক্ষেপ করুন। এটা থেকে মুক্ত হোন এবং এই বাজে জিনিস দিয়ে নিজেকে আর বোকা বানাবেন না। সত্যের মুখোমুখি হোন। হাঁ, সত্যের মূল্য আছে। ইসলাম একটা মিথ্যা, মোহাম্মদ মানসিকভাবে অসুস্থ প্রতারক। এটার পাট চুকিয়ে দিন এবং এর সংস্কারের নামে হাস্যকর তামাশা বন্ধ করুন।
(নিবন্ধটি Ali Sina-এরThe Illusion of Reforming Islam -এর বাংলায় ভাষান্তর। আলী সিনা www.faithfreedom.org-এর সম্পাদক। তিনি Beyond Jihad – Critical Voices from Inside Islam’-এ লিখেছেন। তার সর্বশেষ গ্রন্থ Understanding Muhammad: The Psychobiography of Allah’s Prophet নিবন্ধটি www.islam-watch.org থেকে সংগৃহীত)বি: দ্র: কুরআনের আয়াতগুলির বঙ্গানুবাদ লেখকের ইংরেজি থেকে না করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কৃত বঙ্গানুবাদ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
লেখক: আলী সিনা
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ