‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি (الإعلام) পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে সালাতের আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়। ১ম হিজরী সনে আযানের প্রচলন[মিরআত-২/৩৩৪ পৃষ্ঠা।]।
ʾআযান শব্দের মূল অর্থ দাড়ায় أَذِنَ ডাকা,আহবান করা। যার মূল উদ্দেশ্য হল অবগত করানো। এই শব্দের আরেকটি বুৎপত্তিগত অর্থ হল ʾআজুন। (أُذُن), যার অর্থ হল "শোনা"। কুরআনে মোট পাঁচ স্থানে আজুন শব্দটি এসেছে।
প্রতি দিন-রাতে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ বার আযান দেওয়া হয়। আর আযান তখনই দেওয়া হয় যখন নামাযের সময় হয়। নিচে আযানের সময় দেওয়া হল:
১। ফজর:সবহে সাদিক উদিত হলে। সূর্য পূর্ব আকাশে উদিত হওয়ার আগ মুহূর্তে ।
২। যোহর: সূর্য পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে গেলে ।
৩। আছর:সূর্যের প্রখরতা থাকতে ।
৪। মাগরিব:সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে ।
৫। এশা: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতেরএক তৃতীয়াংশে-[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম]
আযানের বাক্যসমূহঃ
আল্লাহু আকবার [৪ বার]-আল্লাহ সর্বশক্তিমান [সুন্নী এবং শিয়া]
আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ [২ বার]-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই [সুন্নী এবং শিয়া]
শঙ্কাঃ কোরআন যদি আল্লার বানী হয় তবে কে কার কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছে..? সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ কি ?
আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ [২ বার]-আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত দূত [সুন্নী এবং শিয়া]
প্রশ্নঃ একজন মানুষ কার কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে মুহাম্মদ আল্লার প্রেরিত দূত ? সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কি ?
হাইয়া আলাস সালাহ [২ বার]-নামাজের জন্য এসো [সুন্নী এবং শিয়া]
হাইয়া আলাল ফালাহ [২ বার]-সাফল্যের জন্য এসো [সুন্নী এবং শিয়া]
আস সলাতু খাইরুম মিনান নাউম [২ বার]-ঘুম হতে নামাজ উত্তম** (Fajr prayer only) [সুন্নী]
Hayya 'alā khayril-'amal [২ বার]-Make haste towards the best deed [শিয়া]
আল্লাহু আকবার [২ বার] -আল্লাহ্ মহান [সুন্নী এবং শিয়া]
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ [১ বার]-আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই [সুন্নী এবং শিয়া]
শঙ্কাঃ আল্লা ছাড়া কোন উপাস্য নেই তো, বাকী উপাস্য গুলো কোথাথেকে এলো..? অথবা কেউ যখন জিজ্ঞাসা করছে না অন্য কোন উপাস্য আছে কিনা, তা সকালে মাইক বাজিয়ে বলার কি আছে ?
ফযরের নামাজের আযানে একটু ব্যতিক্রম আছে। আর তা হলো এই যে, আযানের শেষভাগে "হাইয়া আলাল ফালাহ" দুই বার বলার পরে "আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম (الصلوۃ خیر من النوم)" বাক্যটি দুই বার বলতে হয়। এর পর যথারীতি "আল্লাহু আকবার", "আল্লাহু আকবার", "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলে আজান শেষ হয়। এছাড়া ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ও ইমামের সম্মুখে দেয়া হয়।
আযান শেষ হওয়ার পর দুরুদ শরীফ পাঠ করে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হয়-
“ | اَللّھُمَّ رَبَّ ھٰذِہٖ الدَّعوَۃِ التَّامَّةِ وَ الصَّلوٰۃِ القَائِمَةِ اٰتِ سَیِّدَنَا مُحَمَّدَن الوَسِیلَةَ وَالفَضِیلَةَ وَالدَّرَجَةَ الرَّفِیعَةَ وَابعَثهُ مَقَامًا مَّحمُودَنِ الَّذِی وَعَدتَّهُ وَارزُقنَا شَفَاعَتَةُ یَومَ القِیَامَةِ انَّکَ لَا تُخلِفُ المِیعَادَ۔ | ” |
“ | আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দা'ওয়াতিত্তা-ম্মাতি ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাতি আ-তি সায়্যেদানা মুহাম্মাদানিল ওয়াসী-লাতা ওয়াল ফাদ্বী-লাতা ওয়াদ দারাজাতার রাফী-'আতা ওয়াবআসহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া'আদতাহূ ওয়ারযুক্বনা শাফা-'আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাতি ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী-'আদ | ” |
কোরআন হলো আল্লাহর কালাম, কালাম অর্থ কথা। কোরআন তিলাওয়াত করা মানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা। নামাজে কোরআন তিলাওয়াত হলো আল্লাহর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলা। আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রত্যেক প্রশ্নের জবাব দেন, প্রতিটি আহ্বানে সাড়া দেন, সকল আবেদন মঞ্জুর করেন, সব দোয়া কবুল করেন। (মিশকাত শরিফ)। সালাত কায়েম করার অর্থ হলোঃ আল্লাহ পাকের বিধান অর্থাৎ কোরআনের সুন্নত বা বিধান বা নির্দেশকে প্রতিষ্ঠিত করাই হচ্ছে সালাত কায়েম করা । ‘কায়েম করা’ কথাটির অর্থই হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা করা।
ঈমান (বিশ্বাসের) পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, মতান্তরে দৃঢ় বিশ্বাস করা।
ঈমানের সাতটিি স্তম্ভ বা বিশ্বাসসমূহঃ(কুরআন ৯৫:৬, কুরআন ২:২৮৫) / সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ০২, পর্বঃ ঈমান, হাদিস নাম্বারঃ ৪৮
এক. একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
দুই. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
তিন. সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস।
চার. সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
পাঁচ.তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
ছয়. আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
সাত. মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস।
কোরআনের সূরা-বাকারা এর দুই হতে চার আয়াতে ঈমান সম্পর্কে এই বিষয় গুলি উল্লেখ করা হয়েছে।
* এই বিশ্বাস গুলি অর্থাৎ যারা ইমানদার নয় তাঁরাই ইসলাম বা আল্লার দৃষ্টিতে কাফের।
ইহা ঐ গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই; ধর্ম-ভীরুদের জন্য এ গ্রন্থ পথনির্দেশ।[কুরআন ২।২]
এ গ্রন্থ; (কুরআন) এতে কোন সন্দেহ নেই, সাবধানীদের জন্য এ (গ্রন্থ) পথ-নির্দেশক। এ কিতাবের অবতরণ যে আল্লাহর নিকট থেকে এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, "এ কিতাবের অবতরণ বিশ্বপালনকর্তার নিকট থেকে এতে কোন সন্দেহ নেই।" (সূরা সাজদা ৩২:২) কোন কোন আলেমগণ বলেছেন, বাক্যটি ঘোষণামূলক হলেও তার অর্থ নিষেধমূলক। অর্থাৎ, لاَ تَرتَابُوا فِيهِ (এতে সন্দেহ করো না)।
যারা অদৃশ্য বিষয়গুলিতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে উপজীবিকা প্রদান করেছি তা হতে দান করে থাকে ।[কুরআন ২।৩]
যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, যথাযথভাবে নামায পড়ে ও তাদেরকে যা দান করেছি তা হতে ব্যয় করে। গায়বী, অদৃশ্য তথা অদেখা বিষয়সমূহ হল এমন সব জিনিস যার উপলব্ধি জ্ঞান ও ইন্দ্রিয় দ্বারা সম্ভব নয়। যেমন মহান আল্লাহর সত্তা, তাঁর অহী (প্রত্যাদেশ), জান্নাত ও জাহান্নাম, ফিরিশতা, কবরের আযাব এবং মৃত দেহের পুনরুত্থান ইত্যাদি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এমন কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করাও ঈমানের অংশ যা জ্ঞান ও ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। আর তা অস্বীকার করা কুফরী ও ভ্রষ্টতা।
এবং তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল, যারা তদ্বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আখিরাতের প্রতি যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।[কুরআন ২।৪]
এবং তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে ও পরলোকে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। 'পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে বিশ্বাস করা'র অর্থ হল এই যে, যে গ্রন্থসমূহ পূর্ববর্তী নবীগণের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তা সবই সত্য। যদিও সেই কিতাব বা গ্রন্থাবলী বর্তমানে আসল (অপরিবর্তিত) অবস্থায় পাওয়া যায় না। তাই সেগুলির উপর আমল করাও যাবে না। এখন শুধু ক্বুরআন ও তার ব্যাখ্যা হাদীসের উপরেই আমল করতে হবে। এ থেকে এ কথাও জানা গেল যে আল্লার জ্ঞান সম্পূর্ণ নয়, তাই তিনি পূর্বের কিতাবে কিছু ভুল থাকায় পূনঃ অন্য কিতাব সৃষ্টি করেছেন, করে তিনি বলছেন এই কিতাবে বিশ্বাস করতে এতে কিছু ভুল নেই। তবে বাস্তবে আমরা দেখতে পাই কুরআন ভুলেভরা এক কিতাব, যা ওসমান দ্বারা সংকলন করে তৈরী করা হয়েছে। ওসমানের কিতাব কে আসমানী কিতাব নাম দেওয়া হয়েছে।
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সা.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন-এর ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময় যুহর, আসর ও ইশা ২ রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকায়াত বিশিষ্ট যুহর, আসর ও ইশাকে ৪ রাকায়াতে উন্নীত করার আদেশ দেয়া হয়।
প্রথম ওয়াক্ত হল "ফজর নামাজ" সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর ব্যপ্তিকাল। এরপর "যুহর ওয়াক্ত" বেলা দ্বিপ্রহর হতে "আসর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত যার ব্যপ্তি। তৃতীয় ওয়াক্ত "আসর ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে "মাগরিব ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। "মাগরিব ওয়াক্ত" এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় "ইশা ওয়াক্ত" এবং এর ব্যপ্তি প্রায় "ফজর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত।
উপর্যুক্ত ৫ টি ফরজ নামাজ ছাড়াও ইশা'র নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলিমরা আদায় করে থাকে (নফল নামাজ,সুন্নাত নামাজ,ওয়াজিব নামাজ,জানাযার নামাজ)।
ফজরের সালাতের কথা সূরা নূরের ৫৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নামাজের ধাপ বা অংশ গুলো কে 'রাকাত' বলা হয়। তারপর তাকবীরে তাহরীমা বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে পরতে হয়। তারপর দুআ সানা পড়ে নামাজ শুরু করতে হয়। প্রতি রাকাতের শুরুতে সুরা ফাতিহা ও অপর একটি সুরা পাঠের পর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ছোটো একটা বিরতি দিয়ে সিজদা করতে হয়, সিজদা দুুইবার করতে হয়,আর দুটি সিজদার মাঝে ছোট্ট একটা বৈঠক করতে হয়। ঠিক একই ভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত সম্পূর্ণ করতে হয়।
[ সূরা ফাতিহা অন্যান্য সূরার ন্যায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু হয়েছে। আল ফাতিহা সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় মক্কী সূরা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। সূরা ফাতিহাকে ভেঙে ভেঙে পড়া যায় না বলে একে অখণ্ড সূরা নামেও ডাকা হয়। সূরা ফাতিহাকে ভেঙে পড়ার বিধান নেই।]
সিজদার এর সময় পিঠ যেনো সোজাসুজি ঢালু হয়। তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু(তাশাহুদ)" দোয়া পড়তে হয়। নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু(তাশাহুদ)" দোয়ার সাথে "দরূদ শরীফ" পড়তে হয় তারপরে দুআ মাসুুরাহ্(১ ও ২) পড়তে হয়। দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়। তারপরে জিকির করতে হয়। এর পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত বা প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। নামাজের কিছু নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
সূরা আল ফাতিহাঃ
ফাতিহা শব্দটি আরবি "ফাতহুন" শব্দজাত যার অর্থ "উন্মুক্তকরণ"
[কুরআনের প্রথম সূরা]
আয়াতসমূহ ও অর্থ
- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
- ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ
আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন।
সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। - ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
আর রাহমা-নির রাহীম।
অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু। - مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।
প্রতিফল দিবসের মালিক। - إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন।
আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি। - ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।
আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন। - صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম।
তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। - غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص
গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। (আমিন )
এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট । ( কবুল করুন )
নামাজের সুরা ও তাসবীহ সমূহের অর্থ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ !
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অধিকাংশ মানুষই নামাজে যে সুরা সমুহ ও তাসবিহ গুলো পড়ছে তার অর্থ জানেনা।যার কারনে নামাজে অমনযোগী হয়। তোতা পাখির মত শুধু বলেই যাচ্ছে, কিন্তু কি বলছে কিছুই জানে না,তাহলে নামাজের মাঝে আল্লাহর প্রতি বিনয়,শ্রদ্ধা,ভয়,আত্ম-সমর্পন আসবে কিভাবে?অথচ আল্লাহ সুবহানাতা’আলা বলেছেন “ধবংস ওই নামাজি যে তার নামাজ সম্পর্কে বেখবর।”
নামাজে মনোযোগ আনতে হলে অবশ্যই নামাজে কি কি করছি তার অর্থ ভাল ভাবে জানতে হবে বুঝতে হবে।অর্থ যদি জানা থাকে এবন তা লক্ষ্য করে নামায আদায় করি, তাহলে আমাদের নামায আরো সুন্দর হবে।
নামাজের নিয়াত ও তাক্ বীরে তাহঃরীমা
নামাজের ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা। মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়, তবে মুস্তাহাব।
সমস্ত নামাজেই ,নাওয়াইঃতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা
(২ রাকাত হলে) রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
(৩ রাকাত হলে) ছালাছা রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
(৪ রাকাত হলে) আর্ বায় রাক্ ‘য়াতাই ছালাতিল
(ওয়াক্তের নাম) ফাজ্ রি/ জ্জুহরি/আ’ছরি/মাগরিবি/ইশাই/জুমুয়া’তি
(কি নামাজ তার নাম) ফারদ্বুল্ল-হি/ওয়াজিবুল্ল-হি/সুন্নাতু রসূলিল্লাহি/নাফলি।
(সমস্ত নামাজেই) তায়া’লা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ শারীফাতি আল্ল-হু আক্ বার।
বাংলায় নিয়াত করতে চাইলে বলতে হবে,
আমি আল্লা-হ্’র উদ্দেশ্যে ক্কেবলা মুখী হয়ে, ফজরের/জোহরের/আসরের/মাফরিবের/ঈশার/জুময়ার/বি’তরের/তারঅবি/তাহাজ্জুদের (অথবা যে নামাজ হয় তার নাম)
২ র’কাত/৩র’কাত/৪ র’কাত (যে কয় রাকাত নামাজ তার নাম)
ফরজ/ওয়াজিব/সুন্নাত/নফল নামাজ পড়ার নিয়াত করলাম, আল্ল-হু আকবার ।
তাকবীরে তাহরীমা- আল্লাহু আক্ বার, অর্থ-আল্লাহ মহান ।
সানাঃ–(হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়)
উচ্চারণ :-সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা’ আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক।
অর্থ- হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয় ।
তাআ’উজঃ
উচ্চারণ-আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম ।
অর্থ-বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।
তাসমিয়াঃ- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।
অর্থ-পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।
এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হয়, সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের পর পবিত্র কোরআনের যে কোন জায়গা থেকে তিলাওয়াত করতে হয় ।
রুকুর তাসবীহঃ
উচ্চারণ-সুবহা-না রব্ বি ইঃয়াল্ আ’জ্বীম। অর্থ-মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।
তাসমীঃ-(রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়)
উচ্চারণ-সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ,
অর্থ-প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।
তাহমীদঃ-(রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়)
উচ্চারণ-রাব্বানা লাকাল হামদ ।অর্থ-হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই ।
সিজদার তাসবীহঃ
উচ্চারণ-সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা।অর্থ-আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি ।
দু’সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়াঃ
উচ্চারণ-আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী ।
অর্থ-হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন ।
[হানীফি মাযহাবে এই দোয়া পড়া হয় না, কেউ যদি হানীফি মাযহাব এর হয়ে থাকেন তাহলে এই সময এক তসবী পড়তে যে সময় লাগে , সেই সময় পর্যন্ত বিরতি দিয়ে পুনঃরায় সেজদায় যাওয়া।]
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুঃ
উচ্চারণঃ-আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি, ওয়াছ ছালা-ওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবা তু, আচ্ছালা মু আ’লাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আচ্ছালামু আলাইনা, ওয়া আ’লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু ।
অর্থঃ-আমাদের সব সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামাজ এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক । আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল ।
দরুদ শরীফ
উচ্চারণ:-আল্লহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ্ ।আল্লাহুম্মা বারিক্ আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ’লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ’লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।
অর্থ-হে আল্লাহ, দয়া ও রহমত করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন রহমত করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি উত্তম গুনের আধার এবং মহান। হে আল্লাহ, বরকত নাযিল করুন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রতি এবং তার বংশধরদের প্রতি, যেমন করেছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও তার বংশধরদের উপর। নিশ্চই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও সম্মানের অধিকারী ।
দোয়ায়ে মাসূরাঃ
উচ্চারন:-আল্লা-হুম্মা ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগ্ ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।
অর্থ-হে মহান আল্লাহ, আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি (অর্থাৎ অনেক গুনাহ/পাপ করেছি) কিন্তু আপনি ব্যতীত অন্য কেহ গুনাহ মাফ করতে পারে না। অতএব হে আল্লাহ অনুগ্রহ পূর্বক আমার গুনাহ মাফ করে দিন এবং আমার প্রতি সদয় হোন; নিশ্চই আপনি অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।
দোয়ায়ে কুনুতঃ
(বিতরের নামাজের পর ৩য় রাকায়াতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কিরআত পড়ার পর এই দোয়া পড়তে হয় )।
উচ্চারণ-“আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা’ঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া না তা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখ লা, ওয়া নাত রুকু মাইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ, ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখ’শা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা বিল কুফফা-রি মুল হিক ।”
অর্থ-হে আল্লাহ, আমারা আপনার নিকট সাহায্য চাই। আপনার নিকট গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি। আমরা কেবল মাত্র আপনার উপরেই ভরসা করি। সর্বপ্রকার কল্যান ও মংগলের সাথে আপনার প্রশংসা করি। আমরা আপনার শোকর আদায় করি, আপনার দানকে অস্বীকার করি না।আপনার নিকট ওয়াদা করছি যা, আপনার অবাধ্য লোকদের সাথে আমরা কোন সম্পর্ক রাখব না-তাদেরকে পরিত্যাগ করব । হে আল্লাহ, আমরা আপনারই দাসত্ব স্বীকার করি। কেবলমাত্র আপনার জন্যই নামাজ পড়ি, কেবল আপনাকেই সিজদা করি এবং আমাদের সকল প্রকার চেষ্টা-সাধনা ও কষ্ট স্বীকার কেবল আপনার সন্ততুষ্টির জন্যই । আমরা কেবল আপনার ই রহমত লাভের আশা করি, আপনার আযাবকে আমাওরা ভয় করি। নিশ্চই আপনার আযাবে কেবল কাফেরগনই নিক্ষিপ্ত হবে।
রেফারেন্সঃ
সহীহ বুখারী, ৬:৬১:৫২৯
সহীহ বুখারী, ৭:৭১:৬৪৫
সহীহ বুখারী, ৭:৭১:৬৩৩
সহীহ বুখারী, ৭:৭১:৬৩২
সহীহ মুসলিম, ৪:৭৭৩
সহীহ বুখারী, ১:১২:৭২৩
সহীহ মুসলিম, ৪:১৭৬০
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ