আসমানী কিতাব ও নবীদের নামঃ
১. তাওরাত- হযরত মুসা (আঃ)।
২. যাবুর- হযরত দাউদ (আঃ)।
৩. ইনজিল- হযরত ঈসা (আঃ)।
৪. কুরআন- হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)।
#নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। তাতে রয়েছে হেদায়েত আর নূর। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৪)
#আর আমি দাউদ (আ.)-কে যাবুর কিতাব দিয়েছি। (সূরা নিসা : আয়াত-১৬৩)।
#তারপরেই আমি ঈসা বিন মারয়ামকে পাঠিয়েছি এবং তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল কিতাব। (সূরা হাদীদ : আয়াত-২৭)।
#আমি আপনার মোহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট সত্যসহকারে কিতাব (কোরআন) নাযিল করেছি, যা তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৮)।
বাকি ১০০ খানা সহীফা বা ছোট কিতাব কোন্ কোন্ নবী ও রাসূলগণের ওপর নাযিল হয়েছিল তৎসম্পর্কে ইমাম আবু মুঈন নাসাফী (রহ.) লিখেছেন যে, হযরত শীষ (আ.)-এর ওপর পঞ্চাশখানা সহীফা নাযিল হয়েছিল। হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর ওপর ত্রিশখানা। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ওপর দশখানা। ফেরাউনের জলমগ্ন হওয়ার পূর্বে মূসা (আ.)-এর ওপর দশখানা সহীফা নাযিল হয়। অতঃপর হযরত মূসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাযিল হয়। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, দশখানা সহীফা হযরত আদম (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়। দশখানা হযরত শীষ (আ.)-এর ওপর। ত্রিশখানা হযরত ইদরীস (আ.)-এর ওপর এবং দশখানা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়।
তাওরাত(তোরাহ) হচ্ছে নবী হযরত মূসা (আ)-এর প্রতি অবতীর্ণ সর্বপ্রথম প্রধান আসমানী কিতাব।
ইসলামের দ্বিতীয় আসমানী কিতাব যা হযরত দাউদ (আ.) এর অবতীর্ন হয়। ইঞ্জিল, ইনজিল বা ইনজিল হ'ল ঈসার সুসমাচারের (ঈশ্বর প্রদত্ত গ্রন্থ Godsplell) আরবি নাম, ঈসা(আ) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। কুরআন নবী হযরত মুহাম্মদ(স.) এর অবতীর্ণ হয়েছে বলে মুসলিমরা বিশ্বাস করে।মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে কুরআন মৌখিকভাবে নবী মুহাম্মদ(স.)-এর নিকট ফেরেশতা গ্যাব্রিয়েল (জিব্রাইল) এর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছিল, যা ধীরে ধীরে সম্পন্ন হতে প্রায় ২৩ বছর সময় লেগেছিলে। কুরআন অবতীর্ণ হবার সময় মুহাম্মদ(স)-এর ৪০ বছর বয়স ছিলো এবং কুরআন সম্পূর্ণ হতে হতে তাঁর বয়স ৬৩ তে এসে পৌছেছিলো। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তাঁরাই মুমিন যারা আপনার ওপর নাযিলকৃত ও আপনার পূর্বে নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস করে এবং তাঁরা আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৪)।
আল্লাহতায়ালা আসমান থেকে যে সকল কিতাব ও সহীফা নাযিল করেছেন, তার সংখ্যা কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী একশত চারখানা। তন্মধ্যে চারখানা হলো বড় কিতাব। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, ও কোরআন। হযরত মূসা (আ:) ওপর তাওরাত অবতীর্ণ হয়। হযরত দাউদ (আ.) এর ওপর যাবুর নাযিল হয়। হযরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল নাযিল হয়। আর হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর কোরআন নাযিল হয়। এই চারখানা কিতাবের মূল বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে। (ক) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। তাতে রয়েছে হেদায়েত আর নূর। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৪) ইরশাদ হয়েছে : আর আমি দাউদ (আ.)-কে যাবুর কিতাব দিয়েছি। (সূরা নিসা : আয়াত-১৬৩)। (গ) ইরশাদ হয়েছে : তারপরেই আমি ঈসা বিন মারয়ামকে পাঠিয়েছি এবং তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল কিতাব। (সূরা হাদীদ : আয়াত-২৭)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : আমি আপনার মোহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট সত্যসহকারে কিতাব (কোরআন) নাযিল করেছি, যা তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৮)।
"...কিতাবগণ নিজ হাতে কিতাব লিখে ঘোষণা দেয় যে, এই কিতাব আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৭৯)। "
নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিতাবধারীগণ আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন করেছে, নিজ হাতে কিতাব রচনা করেছে আর বলেছে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ। (সহীহ বুখারী : ২/১০৯৪)। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই কোরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি। আর আমিই এর সংরক্ষণকারী। (সূরা হিজর : আয়াত-৯)।
সূরা নিসা ১৬৪ তে তফসীরকার আহসানুল বায়ন হতে বর্নিতঃ
নিশ্চয় আমি অনেক রসূলের কথা পূর্বে তোমার নিকট বর্ণনা করেছি[১] এবং অনেক রসূলের কথা তোমার নিকট বর্ণনা করিনি। [২] আর মূসার সাথে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছেন।[৩] [১] যে সকল নবী ও রসূলগণের নাম ও তাঁদের ঘটনাবলী কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে ,তাঁদের সংখ্যা ২৪ অথবা ২৫ যথাঃ (১) আদম (আঃ) (২) ইদরীস (আঃ) (৩) নূহ (আঃ) (৪) হূদ (আঃ) (৫) সালেহ (আঃ) (৬) ইবরাহীম (আঃ) (৭) লূত (আঃ) (৮) ইসমাঈল (আঃ) (৯) ইসহাক (আঃ) (১০) ইয়াক্বূব (আঃ) (১১) ইউসুফ (আঃ) (১২) আইউব (আঃ) (১৩) শুআইব (আঃ) (১৪) মূসা (আঃ) (১৫) হারূন (আঃ) (১৬) ইউনুস (আঃ) (১৭) দাউদ (আঃ) (১৮) সুলাইমান (আঃ) (১৯) ইলয়্যাস (আঃ) (২০) আল-য়্যাসা' (আঃ) (২১) যাকারিয়া (আঃ) (২২) ইয়াহইয়া (আঃ) (২৩) ঈসা (আঃ) (২৪) যুল কিফল (আঃ) (অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকটে) (২৫) মুহাম্মাদ (সাঃ)। [২] যে সকল নবী ও রসূলগণের নাম ও ঘটনাবলী কুরআনে উল্লেখ হয়নি তাঁদের সংখ্যা কত? এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। তবে একটি হাদীস পাওয়া যায় যেটা আম জনতার নিকট খুবই প্রসিদ্ধ, তাতে নবী ও রসূলগণের সংখ্যা এক লাখ চব্বিশ হাজার এবং অন্য এক হাদীসে আট হাজার উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু এই হাদীসগুলি অত্যন্ত দুর্বল। অথচ কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে শুধু এতটুকু বুঝা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলায় যুগে যুগে মহান আল্লাহ নবী ও রসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছেন। অতঃপর নবুঅতের সেই ধারাবাহিকতা শেষ হয় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে। কিন্তু শেষনবী (সাঃ)-এর পূর্বে নবী ও রসূলের সংখ্যা কত? এর সঠিক উত্তর আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। পক্ষান্তরে শেষনবী (সাঃ)-এর পরে যত নবুঅতের দাবী করেছে বা করবে, তারা সকলেই দাজ্জাল ও মিথ্যুক। আর তাদের মিথ্যা নবুঅতের অনুসারীগণ ইসলামের গন্ডি হতে খারিজ। যারা উম্মতে মুহাম্মাদিয়া হতে পৃথক এক প্রতিদ্বন্দ্বী উম্মত। যেমন, বাবিয়াহ, বাহাইয়াহ, মীর্যাইয়াহ বা ক্বাদিয়ানী ফির্কা প্রভৃতি। অনুরূপভাবে মির্যা ক্বাদিয়ানীকে প্রতিশ্রুত 'মাসীহ' বলে বিশ্বাসী লাহোরী মির্যায়ী ফির্কাও। [৩] (অদৃশ্য থেকে গায়বীভাবে অথবা স্পষ্টভাবে।) এটি মূসা (আঃ)-এর পৃথক বৈশিষ্ট্য; যার ফলে তিনি অন্যান্য নবীদের তুলনায় পৃথক মর্যাদার অধিকারী। সহীহ ইবনে হিব্বানের এক বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম ইবনে কাসীর আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথনে আদম (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কেও মূসা (আঃ)-এর শরীক বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাক্বারার ২:২৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ