বাইবেল অনুসারে #ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলামে খৎনার বিষয়টি এসেছে হযরত ইবরাহিম আ. এবং তাঁর পুত্রদের করানোর মধ্য দিয়ে। যিশুর খৎনা বাইবেল (Gospel of Luke, 2:21).
তোরেত ও বাইবেলে অগ্রত্বকচ্ছেদনকে ঈশ্বরের সঙ্গে আব্রাহামের একটি চুক্তি হিসাবে উল্লিখিত আছে। ইহুদিদের মধ্যে এই প্রথা চালু থাকলেও খ্রিস্টানরা সম্ভবত ৫০ খ্রিস্টাব্দে চার্চ কাউন্সিল ইন জেরুজালেমে ডিক্রি জারি করে একে ঐচ্ছিক বলে ফরমান দেন। বর্তমানে তা সকল খ্রষ্টানরা করে না কেবল কপটিক খ্রিস্টানরা এটা পালন করে থাকেন।
‘খৎনা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল—পুরুষের লিঙ্গাগ্রচর্মচ্ছেদন। পুরুষের শিশ্নমুণ্ডি আবৃত করে রাখা অগ্রত্বক কেটে বাদ দেওয়া। কেউ কেউ একে ‘মুসলমানি’ বলে থাকেন। যদিও ইহুদি ধর্মে ও খ্রিস্টানদের একটি অংশে খৎনা আবশ্যিক ধর্মীয় রীতি বলে পরিগণিত। ইসলাম ধর্মে এটি ‘সুন্নত’-এর একটি অংশবিশেষ। ইসলাম ধর্মে বহু পালনীয় বা সুন্নতের মধ্যে এটিও একটি। স্বাস্থ্যের কারণে, অগ্রত্বকের বিভিন্ন ব্যাধির কারণে অনেক পুরুষকে খৎনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। অগ্রত্বক লিঙ্গের মুণ্ডিকে ঢেকে রাখে বলে মিউকাস আবরণীতে অবস্থিত অসংখ্য গ্রন্থি থেকে স্মিগমা নামক দুর্গন্ধ বস্তু জন্মে এবং নানা প্রকার অসুখের সূচনা করে। পৃথিবীর প্রায় ৩০ শতাংশ পুরুষের খৎনা হয় এবং তার শতকরা ৬৮ ভাগ মুসলমান।
খৎনা ভাল না খারাপ, সেই আলোচনায় ঢোকার আগে এর উৎপত্তি ও ইতিহাস নিয়ে কিঞ্চিৎ জেনে নেওয়া দরকার। ধর্মীয় পুরাণ ঘাটলে দেখা যায়, সেমীয় ধর্মের আদি পিতা আব্রাহাম খৎনার প্রচলন করেন। যে জন্য তিনটি সেমীয় ধর্ম (রিলিজিয়ন)—ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামে এই প্রথা আজও দেখা যায়। ইহুদি ও মুসলমানেরা এই প্রথা কঠোরভাবে মেনে চললেও খ্রিস্টানদের সকলে মানেন না। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, খৎনার উৎপত্তি প্রাচীন মিশরে, যেখানে ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি।
তবে গ্রিক ও রোমানরা মনে করত লিঙ্গের অগ্রত্বক থাকাটা পুরুষের বীরত্বের পরিচায়ক। তারা খৎনাকে বর্বর প্রথা হিসাবেই দেখত। তাই এসব থেকে শত হস্তে দূরে থাকত তারা। মিশরে এই প্রথা শুরু হওয়ার সপক্ষে অনেকে ইহুদি মতের মোজেসের কথা বলে থাকেন। তিনিই আব্রাহামীয় ধর্ম বলে কথিত আচারব্যবস্থাসমূহকে পৃথিবীতে ঐতিহাসিকভাবে প্রথম প্রচার করেন। তোরাহ ও বাইবেলে অগ্রত্বকচ্ছেদনকে ঈশ্বরের সঙ্গে আব্রাহামের একটি চুক্তি হিসাবে উল্লিখিত আছে। ইহুদিদের মধ্যে এই প্রথা চালু থাকলেও খ্রিস্টানরা সম্ভবত ৫০ খ্রিস্টাব্দে চার্চ কাউন্সিল ইন জেরুজালেমে ডিক্রি জারি করে একে ঐচ্ছিক বলে ফরমান দেন। বর্তমানে কেবল কপটিক খ্রিস্টানরা এটা পালন করে থাকেন।
আদিপুস্তক (বাইবেল)-এ খৎনাকে ঈশ্বরের সাথে আব্রাহাম একটি চুক্তি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে,[Gen 17:10] কিন্তু, অধিকাংশ পণ্ডিতই এই ঐতিহাসিক মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ বিজ্ঞান অনুযায়ী সৃষ্টিতত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং ইতিহাসবিদরাও আব্রাহামের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। আব্রাহাম কেবলই বাইবেলীয় একটি রূপকথার চরিত্র ছাড়া আর কিছু নন। পৃথিবীর প্রথম ইতিহাসবিদ হেরোডেটাস এর ইতিহাস অনুযায়ী, খৎনা প্রথা প্রথম চালু হয় মিশরীয়দের মধ্যে, তাদের দাস প্রথা চালুর সময়ে। ১৯ শতকের একটি নৃতত্ত্ব ও ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে, খৎনা ছিল অনেক সেমিটিক গোত্র সহ ইহুদি, আরব এবং ফিনিশীয় জাতির মধ্যে একটি সাধারণ উপজাতীয় প্রথা।
ইহুদী ও ইসলামী ঐতিহ্য উভয়ই খৎনাকে অন্য গোষ্ঠী থেকে নিজেদের আলাদা করে চেনার উপায় হিসেবে দেখত।[See the story of Dina & Shechem in Genesis. Also the mass circumcision during the exodus from Egypt.] বাইবেলে খৎনা না করাকে বিরোধী পক্ষের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।[1Sam 17:26] এবং ইহুদিরা যেসব যুদ্ধে বিজয়ী হত, যুদ্ধ শেষে তারা শত্রুদের মৃতদেহের খৎনা করত যাতে করে কি পরিমাণ শত্রু পক্ষের সৈন্য নিহত হয়েছে তার হিসেব রাখা যায়।[1Sam 18:27]. ইহুদীরা পরিবারের সকলের খৎনা করত, এমনকি দাসদেরও খৎনা করত।[Gen 17:12-14] – এই অনুশীলন পরবর্তীতে রোমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আইনের সাথে বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (নিচে দেখুন)।
হেলেনীয় সভ্যতার মানুষেরা খৎনা-কে বীভৎস আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে দেখত।
রোমান সাম্রাজ্য-এ, সুন্নত বা খৎনাকে একটি বর্বর ও ঘৃণ্য প্রথা হিসেবে গণ্য করা হত। রোমান বাণিজ্যদূত টিটাস ফ্লাভিউস ক্লিমেন্স-কে নিজের খৎনা করে ইহুদী ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার অপরাধে রোমান সিনেট মৃত্যুদণ্ড দেয়।
পল খৎনা সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন যে, এই খৎনা কারও ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। [1Cor 7:18] গবেষকরা বলেন যে, ২য় শতকের মাঝামঝি ইহুদীরা এমন এক খৎনা পদ্ধতি আবিষ্কার করে( পদ্ধতিটির নাম পেরিয়াহ) যে শিশ্নমুণ্ডের বাম পাশের চামড়া সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয় যাতে করে পরবর্তীতে আর লিঙ্গত্বক পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পারে। প্রায় ৫০ ইসি সালে প্রথম খ্রিস্টান চার্চ কাউন্সিল ইন জেরুজালেম এক সভায় ডিক্রি জারী করে যে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য খৎনার কোন প্রয়োজন নেই। এর ফলে রাব্বানিক ইহুদি ধর্ম থেকে খ্রিষ্টান ধর্মের লোকদের আলাদা করা সহজ হয়ে যায়।
কলাম্বিয়া এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী, "খ্রিষ্টানদের খৎনা পালনের কোন দরকার নেই এই আইনটি ধারা-১৫ তে লিপিবদ্ধ করা হয়;এরপর থেকে কপটিক খ্রিস্টানরাই কেবল খৎনা করত।"
সপ্তম শতকের শুরুর দিকে নবী মুহাম্মদ বহু সেমেটিক জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করেন। একটি বিষয়ে ইতিহাসবিদরা সুনিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন যে, মহানবীর জন্মের বহু পূর্বেই নারী ও পুরুষদের খৎনা প্রথা এই সেমেটিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চালু ছিল। কিছু গল্প চালু আছে যে, নবী মুহাম্মদ নারী খৎনাকেও অনুমোদন দিয়েছিলেন, কিন্তু পণ্ডিতদের মতে, এর বর্ণনাসূত্র দুর্বল এবং ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
খৎনার চর্চাকে অনেকসময় হাদিসের উদ্ধৃতি অনুসারে ফিতরাত বা সহজাত স্বভাবের অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।[
খৎনার নৈতিকতা বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন। আমেরিকায় খৎনার হার অনেক বেশি, এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এর বিরোধিতা করেছেন।[সহীহ বুখারী, ৭:৭২:৭৭৭ (ইংরেজি)]
যেসব দেশে খৎনার হার কম যেমন ডেনমার্ক এবং সুইডেন, পুরুষ এবং নারী খৎনাকে তুলনা করেছেন এবং দুই খৎনার মধ্যেই অনেক বেশি সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। তারা নারী ও পুরুষ উভয়ের খৎনা করার ক্ষতিকারক দিক উল্লেখ করেছেন। খৎনা শারীরিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণ করে বলে এসব দেশ মনে করেন। ডেনমার্ক ও সুইডেন ২০১৪ ও ২০১৬ সালে মেডিক্যাল কারণ ব্যতীত খৎনা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
অখণ্ড ভারতবর্ষে ইসলাম প্রবর্তনের আগে কোন অঞ্চলের মানুষ খৎনা পালন করত না। পাকিস্তানীরা ইসলাম প্রবর্তনের পর থেকেই খৎনা প্রথা পালন করে আসছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল পাকিস্তানের পশ্চিম অঞ্চলের উপজাতীয়রা খৎনা প্রথা পালন করা না।
খৎনা-বিরোধী পক্ষ ইসরাইল-এর ইহুদিদের মধ্যেও বিদ্যমান। শিশু-অধিকার সংরক্ষনের জন্য অনেক খৎনা বিরোধী প্রতিবাদ এখানে হয়ে থাকে। যদিও পরিবার থেকে খৎনা করার জন্য অনেক চাপ প্রয়োগ করা হয়, তারপর অনেক পরিবারই শিশুদের খৎনা করানো থেকে ইদানীং বিরত থাকছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জসা প্রদেশে খৎনা করানোর সময় প্রচুর পরিমাণ শিশু মৃত্যু হয়ে থাকে। ২০০৯ সালে পূর্ব কেপ প্রদেশ , ৮০ জন ছেলে শিশু মারা গেছে এবং শত শত শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই বিতর্ক আবার দেখা দেয় জুলু প্রদেশেও, যেখানে ১৯ শতকে রাজা শাকা খৎনা নিষিদ্ধ করার পর আবার রাজা গুডউইল জএলথিনি খৎনা প্রথা প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেন। অনুরূপ সমস্যা, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী অঞ্চলগুলির মধ্যেও হয়ে থাকে।
ইতিহাস বলে, প্রাচীন মিশর থেকে এ সংস্কৃতির উৎপত্তি। (কারো মতে, ইরাকে সুমেরীয়দের সময় থেকে)। প্রায় ৬ হাজার বছরের পুরোনো সংস্কৃতি এটা। পরবর্তীতে আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপে এর বিকাশ ঘটে।
ইহুদী, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মে খৎনার বিষয়টি এসেছে হযরত ইবরাহিম আ. এবং তাঁর পুত্রদের করানোর মধ্য দিয়ে। যেমন বাইবেলে আছে :
"(10) This is my covenant with you and your descendants after you, the covenant you are to keep: Every male among you shall be circumcised.
(11) You are to undergo circumcision, and it will be the sign of the covenant between me and you.
(12) For the generations to come every male among you who is eight days old must be circumcised, including those born in your household or bought with money from a foreigner—those who are not your offspring.
(13) Whether born in your household or bought with your money, they must be circumcised. My covenant in your flesh is to be an everlasting covenant.
(14) Any uncircumcised male, who has not been circumcised in the flesh, will be cut off from his people; he has broken my covenant.”
[The Bible, New International Version (NIV), (Genesis 17:10-14)]
যিশু খ্রিস্টের খৎনা (Circumcision of Jesus)
"On the eighth day, when it was time to circumcise the child, he was named Jesus, the name the angel had given him before he was conceived."
(The Bible, New International Version, Gospel of Luke, 2:21)
ইসলামে খৎনাকে "ফিতরাত"(Fitra) বলা হয়েছে
.
fitra = acts considered to be
of a refined person.
Abu Hurayra (RA.), a companion of Muhammad (PBUH) was quoted saying, "Five things are fitra: circumcision, shaving pubic hair with a razor, trimming the mustache, paring one's nails and plucking the hair from one's armpits."
[reported in the hadiths of Sahih al- Bukhari and Sahih Muslim]
ইবরাহিম আ. নিজেই খৎনা করেছিলেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
Prophet Abraham performed his own circumcision at the age of eighty.
[ Sahih Bukhari Hadith No. 575, and Muslim's anthology of authentic hadith, IV, Hadith 2370.]
আরো আছে
The Prophet Muhammad (peace be upon him) said: "The Prophet Ibrahim circumcised himself when he was eighty years old and he circumcised himself with an axe."
(Related by Bukhari, Muslim & Ahmad)
ইসলাম প্রকৃত অর্থে ইবরাহিম আ. এরই ধর্ম। কুরআন বলে :
“… it is the religion of your father Ibraaheem…”
[al-Hajj 22:78]
সুতরাং ইবরাহিম আ. এর সন্তানদের মাধ্যমে এ প্রথা আরব এবং ইসরাঈলে বিস্তৃতি লাভ করেছে বলে বোঝা যায়।
কুরআনে আল্লাহ বলেন :
"Then We inspired you: 'Follow the religion of Ibrahim, the upright in Faith'."
(Qur'an 16:123)
ইসলাম বিদ্বেষীরা একটি প্রশ্ন করে যে, রাসূল সা. এর খৎনা হয়েছিল কিনা? Was the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) born circumcised?
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) এ বিষয়ে তাঁর বইয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তিনটি মত তুলে ধরেছেন।
১. জন্মগতভাবেই খৎনা করা ছিল
২. ফিরেশতা হযরত জিবরিল আ. যখন রাসূল সা. এর ওপেন হার্ট সার্জারি করেছিলেন, তখন খৎনা করে দিয়েছিলেন।
৩. রাসূল সা. এর দাদা আবদুল মুত্তালিব রাসূলের সা. জন্মের পরই আরবের রীতিমত খৎনা করিয়েছিলেন।
(ইবনুল কাইয়্যিম, তুহফাত আল-মাউলুদ, পৃষ্ঠা ২০১)
তিনি যা ব্যাখ্যা করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো, প্রথম মত গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা হাদিস যয়ীফ এবং খৎনা সহ জন্মলাভ করা একটি ত্রুটি। রাসূল সা. এর কোনো ত্রুটি ছিল না। দ্বিতীয় মতটিও আশ্চর্যজনক। কেননা, এমন কোনো রেওয়ায়েত পাওয়া যায় না, যেখানে বক্ষ ব্যাবচ্ছেদের সাথে খৎনার কথা বর্ণিত হয়েছে। তৃতীয় মত বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে।
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন : ইবনুল কাইয়্যিম, তুহফাত আল-মাউলুদ, পৃষ্ঠা ২০৫-২০৬)
হানাফি এবং মালেকী মাযহাবে খৎনা করা "সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ"! হাম্বলী এবং শাফেয়ী মাযহাবে এটি ফরজ।
মুসলমান দাবীকৃত (বাতিল ফিরকা) হাদিস অস্বীকারকারী Quranist দের দাবী খৎনা করা হারাম। তাদের যুক্তি হলো, পবিত্র কুরআনের ৪ নম্বর সূরার ১১৯ নম্বর আয়াত আর পবিত্র কুরআনের ৯৫ নম্বর সূরার ৪ নম্বর আয়াত (যেখানে আল্লাহ বলেছেন, "মানুষকে সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছি।") সুতরাং তারা বলতে চায়, মানুষকে আল্লাহ যেহেতু সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন এবং অঙ্গহানি করে পরিবর্তন করতে নিষেধ করেছেন, সেহেতু লিঙ্গের বর্ধিত অংশ কর্তন হারাম। এসব হাদিস বিরোধীরা নিজের মন মতো ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্টদের দলে ভেড়াতে চায়। এতে কোনোভাবেই অঙ্গহানি হয় না। যেমন মানুষের গোপনাঙ্গের এবং মাথার বর্ধিত চুল আমরা কেটে ফেলি, নখ কাটি, তেমনি লিঙ্গের অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলাতে কোনো ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়।
হাদিসে রয়েছে যে, রাসূল সা. হাসান রা. এবং হুসাইন রা. এর জন্মের সপ্তম দিনে খৎনা করিয়েছিলেন।
Abdullah Ibn Jabir (r.a.) and Aisha (r.a.) said:
"The Prophet (peace be upon him) performed the Aqiqah of al-Hasan and al-Hussein (the prophets grandsons) and circumcised them on the 7th. Day."
(Related in al-Bayhaq & Tabarani)
Imam Nawawi says:
"circumcision is recommended to be performed on the seventh day of infancy-the day of Aqiqah.
(Al-Majmu 1/303)
সাহাবীর আমলেও পাওয়া যায় :
Ibn Abbas (r.a.) was asked "How old were you when the Prophet Muhammad (peace be upon him) died?" He replied, "At that time I had been circumcised. At that time people did not circumcise the boys till they attained the age of puberty (Baligh )."
(Bukhari)
বাইজেনটিয়ামের অধিপতি সম্রাট হিরাক্লিয়াস (Heraclius) রাসূল সা. কে "খৎনাকারীদের সর্দার" বা "leader of the circumcised people" বলে অবিহিত করেছিলেন।
[দেখুন - Sahih Bukhari, vol.1, book 1, Hadith no. 6]
মুসলিম বিজেতাদের হাত ধরে অনেক জাতি খৎনার সাথে পরিচিতিপ্রাপ্ত হয়েছে। যেমন - পারস্যদেশ বা বর্তমান ইরান।
জুন ২৬, ২০১২ তারিখে, জার্মানির একটি আদালত রায় দেয় যে, খৎনা কম বয়সী বালকদের জন্য পীড়াদায়ক ও তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আদালত আরও বলে যে, খৎনা-প্রথা শিশুদের পরবর্তীতে তাদের ব্যক্তিজীবনে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে। এই সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে নিবন্ধ আদালত খৎনা-কে কোন মেডিক্যাল কারণ ব্যতীত করার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করেন।
যৌনাঙ্গের অখণ্ডতা হচ্ছে সম্পূর্ণ ও অপরিবর্তনীয় যৌনাঙ্গ থাকা। ইউরোপীয় চিকিৎসকরা বলেন যে, খৎনা করার ফলে যৌনাঙ্গের সবচাইতে সংবেদনশীল অংশ কেটে ফেলে দেয়া হয়, যা মানুষকে যৌন-জীবনে পঙ্গু করে ফেলে। পরিপূর্ণ যৌন-জীবনের জন্য খৎনা বর্জন করে যৌনাঙ্গের অখণ্ডতা বজায় রাখা উচিত। যৌনাঙ্গের অখণ্ডতা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আমেরিকায় খৎনার হার সবচেয়ে বেশি হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ খৎনার বিরুদ্ধে। নেহাত শারীরিক প্রয়োজন ছাড়া ডেনমার্ক ও সুইডেনে খৎনা নিষিদ্ধ। তবে আফ্রিকার কিছু অংশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খৎনার পক্ষে প্রচার চালায়। মহাত্মা লালন বলছেন, দেশ সমস্যা অনুসারে ভিন্ন বিধান হতে পারে/সুক্ষ্মজ্ঞানে বিচার করলে পাপ পুণ্যের আর নাই বালাই। গরমের দেশে খৎনা করলে ফাইমোসিস নামক রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। এইচআইভি ইত্যাদি সংক্রমণ এড়াতে খৎনা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন এটাকে ধর্মীয় বাধ্যতার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন ওঠে ব্যক্তির ইচ্ছে-অনিচ্ছের প্রশ্ন। ওঠে শরীরের অধিকারের কথা। কেন ধর্মের নামে শরীরের একটি খুব ছোটো অংশ বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। অবাঞ্ছিত হলেও তা বাদ দেওয়া উচিত ব্যক্তির সম্মতি নিয়ে। কিন্তু কৈশোর বা প্রাক-কৈশোর অবস্থায় খৎনা আবশ্যিক হলে তাকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। অবশ্য এর বিরুদ্ধেও অনেক যুক্তি আছে। কারণ অপ্রাপ্তবয়স্কের অসুখ-বিসুখ করলে বা কোনও অঙ্গ কর্তন করতে হলে তার অভিভাবক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিনা সেই প্রশ্ন গুরুতর। পরবর্তী জীবনে এই প্রথা মানুষের যৌনজীবনে কোনও প্রভাব ফেলে কিনা সেই প্রশ্নটিও গুরুতর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লিঙ্গের অগ্রভাগের ত্বক কেটে দিলে যৌন সংবেদনশীলতা খানিকটা কমে যায় বলে পুরুষ অধিক সময় রমণ করতে পারে।
সাম্প্রতিক কালে দিল্লির হিংসায় যে পুরুষ সাংবাদিককে প্যান্ট খুলে লিঙ্গ দেখাতে বলা হয়েছিল তিনি মুসলমান, ইহুদি হতে পারেন কিংবা কপটিক খ্রিস্টান। অথবা, রোগজনিত কারণে তাঁর ত্বকচ্ছেদন হয়েছিল এবং তিনি হিন্দুও হতে পারেন। শুধু তাই নয়, বহু পুরুষ জন্মগতভাবে লিঙ্গের অগ্রত্বক ছাড়াই জন্মান। ঘাতকের দলের অবশ্য সে সব শুনতে বয়ে গেছে!
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ