ব্রহ্মা বিষ্ণু মহাদেব - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

26 August, 2021

ব্রহ্মা বিষ্ণু মহাদেব

ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর

 মনুর দশটি পুত্র---

মরীচিমত্র্যঙ্গিরসৌ পুলস্তং পুলহং ক্রতুম্।

প্রচেতসং বসিষ্ঠং চ ভৃগুং নারদমেদ চ।।

এতে মনূংস্তু সপ্তান্যানসৃজন্ভুরিতেজসঃ।

দেবান্ দেবনিকাষাংশ্চ মহর্ষীশ্চামিতৌজসঃ।।[মনুস্মৃতি ৫]


স্বায়ংভুব মনুর পুত্র মরীচি ইনি প্রথম ক্ষত্রিয় রাজা হইয়াছিলেন। ইহার পর হিমালয় প্রদেশে পরপর ছয়জন ক্ষত্রিয় রাজা হন। ইহার পর ইক্ষ্বাকু রাজা রাজ্য় করিতে লাগিলেন। কালাকৌশলের ব্যবস্তাপক বিশ্বকর্মা নামক এক ব্যক্তি হন। বিশ্বকর্মা ইহা পরমেশ্বরেরও নাম এবং এই নামের এক শিল্পকারও ছিলেন।

যাহা হউক, বিশ্বকর্মা বিমানের প্রযুক্তি আবিস্কার করেন। আবার এই বিমানে চড়িয়া আর্য্যরা এধার ওধার ভ্রমাণ করিতে লাগিলেন। 

ব্রহ্মদেবের পুত্র বিরাট্, তাহার পুত্র বিষ্ণ ও সোমসদ্ এবং ঋষি অগ্নিষ্বত্তর পুত্র মহাদেব। ইহারাই বিষ্ণু ও মহাদেব, পরে ব্রহ্মার সহিত ত্রিমূর্ত্তিতে মূখ্য দেব নামে প্রসিদ্ধ হন। মন্দ, সুগন্ধ ও শীতল বায়ু যেখানে বহিতেছে, রমণীয় বনস্পতি সমূহ যেখানে উপ্ত হইয়াছে আর স্ফটিক সদৃশ নির্মল ঝর্ঝরোদক [ঝরনার জল] ঝরিয়া পড়িতেছে, এইরূপ হিমায়ের উচ্ছ প্রদেশে বিষ্ণুবাস করিতে লাগিলেন। উহাকে "বৈকুন্ঠ" বলা হয়।আবার আর এক হিমাচ্ছাদিত ভয়ঙ্কর উচ্ছ প্রদেশে মহাদেব বাস করিতে লাগিলেন, উহাকে 'কৈলাস" বলে। কাশী, হরদ্বার (হরিদ্বার) ও উজ্জৈন প্রভৃতি স্থানে মহাদেবের রাজ্য ছিল [শুদ্ধনাম "হরদ্বার" হর=মহাদেবের স্থান কৈলাসের দ্বার]। কুবেরের নগরীর নাম অলকাপুরী [এই সমস্ত কথা কেদার খন্ডে বর্ণনা করা হইয়াছে]। কাশ্মীর হিতে আরম্ভ করিয়া নেপালের সীমা পর্য্যন্ত হিমালয়ের যে সমস্ত উচ্চ প্রদেশ আছে উহা দেবলোক[কুমার সম্ভব ৫।৪৫]।

ইহার পর বিষ্ণু ও মহাদেব নামে দুটি কুলের নামে প্রসিদ্ধ হইয়া পড়িল। উল্লিখিত বিষ্ণু ও মহাদেব আজও জীবিত আছে, ইহা বলা যথার্থ নহে। এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত যে, মিথিলা দেশের জনকপুরের রাজাকে আজও জনকই বলা হয়। অতএব সীতার পিতা জনক রাজা আজও জীবিত আছে বলা অপ্রশস্ত। এ যুক্তি ব্রহ্মদেব বিষয়েও প্রযুক্ত হয়। যাহা দৃশ্যমান, যাহার উৎপত্তি হইয়াছে সে মরণশীল (যদ্ দৃষ্টং তন্নষ্টম্) ইহাই সিদ্ধান্ত, অতএব এইসকল দেবগণও মরিয়া গিয়াছে। *দেব অর্থাৎ বিদ্বান্ ব্য়ক্তি(শতঃ ৩।৭।৩।১০)

ইক্ষ্বাকু আর্য্যবর্ত্তের প্রথম রাজা। ইক্ষ্বাকু ব্রহ্মার পরের পুরুষ। পুরুষ শব্দের অর্থ পিতার পর পুত্র একথা না। এক অধিকারীর পর দ্বিতীয় অধিকারী এরূপ। প্রথম অধিকারী ছিলেন স্বয়ম্ভূব (মনু)। ইক্ষ্বাকুর সময় হতে মানুষ অক্ষর কালি আদি লিখন রীতির প্রচার করে, এরূপ প্রতীত হয়।  কারন ইক্ষ্বাকুর রাজত্বকালে বেদ কন্ঠস্থ করিবার রীতি স্তিমিত হইতে থাকে। যে লিপিতে বেদ লিখিত হইত, সেই লিপির নাম ছিল দেবনাগরী।[দেবনাগরীর প্রাচীন নাম ব্রাহ্মলিপি] ইহার প্রথম নির্মাণ ব্রহ্মদেব করিয়াছিলেন। লিপি জ্ঞানের সংকেত ঋগ্বেদের "উত ত্বঃ পশ্যন্ন দদর্শ বাচম"(১০।৭১।৪) মন্ত্রে পাওয়া যায়। বানীর-দর্শন (শ্রবণের প্রতিপক্ষে) চক্ষুদ্বারা লিপি রূপেই সম্ভব। 

এই আধারে ব্রহ্মা ব্রাহ্মী লিপি নির্মাণ করেন এবং উহার কার্য্যরূপে প্রচার ইক্ষ্বাকু রাজার রাজত্বকালে হইয়াছিল।ব্রহ্মার উৎপত্তি পর্য্যন্ত দিব্য [অমৈথুনী সৃষ্টি] সৃষ্টি ছিল পরে মৈথুনী সৃষ্টি আরম্ভ হয়। তাহার পর বিরাট্ হইলেন এবং বিরাটের পরে মনু হন। মনু (স্বায়ম্ভূব মনু) ধর্ম ব্যবস্থা গঠন করেন, মনুর দশটি পুত্র (মনুস্মৃতির শেষভাগ) দশটি পুত্রের মধ্যে স্বায়ম্ভূবর [মরীচি] সময় রাজকীয় ও সামাজিক ব্যবস্তা আরম্ভ হয়।

স্বায়ম্ভূব মনুপ্রোক্ত ধর্মশাস্ত্রের যে গ্রন্থ পাওয়া যায় উহা ভৃগু প্রোক্ত। এই ভৃগুপ্রোক্ত মানব সলহিতার প্রতি সঙ্কেত করা হইয়াছে। ইহাও স্মরণ রাখা উচিত যে, মনুপ্রোক্ত ধর্মশাস্ত্রের রাজপ্রকরণটির প্রবক্তা নারদ, উহা নারদীয় মনুস্মৃতি নামে প্রসিদ্ধ। ইক্ষ্বাকু, যিনি রাজা হইয়াছিলেন তিনি কেবল রাজকূলে জন্ম লইয়াছিলেন বলিয়া রাজা হইয়াছিলেন, অথবা তিনি বলপূর্বক রাজ্য লাভ করিয়াছিলেন, উহা নহে। জনসাধারণ তাঁহাকে তাঁহার যোগ্যতার কারণ রাজসভায় অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত করে। সেই সময় জনসাধারণের সকলে বৈদিক ব্যবস্থার অনুকূলে চলিত। মহর্ষি ভৃগু তাঁহার আপন সংহিতার এই সমস্ত ব্যবস্থা প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই গ্রন্থটি শ্লোকাত্মক। ইহার পূর্বে বাল্মীকি শ্লোক রচনা আরম্ভ করেন ইহা বলা মূর্খামী।[বাল্মীকির পূর্বে ভার্গবী মনুসংহিতা শ্লোকাত্মক রূপে বিদ্যমান ছিল]

বিঃদ্রঃ কাব্যে অনুষ্টুপ ছন্দের প্রয়োগ সর্বপ্রথম বাল্মীকিই প্রবর্তন করিয়াছিলেন।

বহু বংশ পরম্পরার পর সগর রাজা রাজত্ব করিতে লাগিলেন। সগর রাজা সুশীল ও নীতিমান্ ছিলেন। এই সগর রাজার সম্বন্ধে নানা প্রকার ব্যর্থ কাহিনী প্রসিদ্ধ আছে, যাহা হউক এই সগর রাজার পর উপরিচর (অগ্রীচর/অপ্রীচর) নামক রাজা হন। তিনি বিমান বিদ্যায় অত্যন্ত নিপুন ছিলেন। কৌষীতকি ব্রাহ্মণ (কোরষ্টিকানী/কোদিষ্টকী ব্রাহ্মণ) গ্রন্থে বহু সম্রাট্ আদি রাজার বর্ণনা আছে। ইহার পর ভরত-কূলে বহু রাজা হইয়াছেন, এই কারনে আর্য্যাবর্ত্তের ভারতবর্ষ এইরূপ নাম প্রসিদ্ধ হয়। ইহার পর রঘু রাজা হইলেন। তিনি ও প্রসিদ্ধ মহাত্মা রাজা ছিলেন।

রাজা রামের অপেক্ষা রাজা রঘু অধিকগুণ সম্পন্ন ছিলেন। রামায়ণের সময় হতে বন্দুক ও বারুদ আদির বর্ণনা সংস্কৃত প্রাচীন গ্রন্থ সমূহে বহুধা পাওয়া যায়। ["শুক্রনীতিসার" গ্রন্থে প্রমাণ আছে , শুকনীতিঃ অঃ৪।১৯৫] রঘুর পর পর রাম রাজা হন। অতঃপর রাজা শান্তনুর অপরিমিত ঐশ্বর্য্যের করাণ মহা অভিমান উৎপন্ন হেতু দেশে গ্রাম্যধর্ম (ব্যভিচার) বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

ন্যায় দর্শনের প্রনেতা গৌতমাচার্য় সত্যবাদী সাক্ষাৎকৃতধর্মা, বিদ্যান্ ব্যক্তির উপদেশকেই শব্দ প্রমাণ বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন এবং যাহা শব্দপ্রমানযুক্ত, তাহাকেই ঐতিহ্য বা ঐতিহাসিকপ্রমাণ বলা যায়।

বাৎসায়ন মুনি ন্যায়ভাষ্যে আপ্তের লক্ষণ লিখিয়াছেন যে, যিনি সাক্ষাৎ সমস্ত পদার্থ বিদ্যার জ্ঞাতা, কপটতাদি রহিত ও ধর্মাত্মা, যিনি সত্যবাদী, সত্যমানী ও সত্যকারী এবং যিনি পূর্ণ বিদ্যাযুক্ত ও দয়াপরবশ হইয়া স্বেচ্ছায় পরোপকার্থে ও সকলের সুখ বৃদ্ধদির জন্য নিজ নিভ্রান্ত জ্ঞান অপরকে প্রদান করেন এবং যিনি পৃথিবী হইতে পরমাত্মা পর্যন্ত সমস্ত পদার্থের যথাবৎ করিয়াছেন ও যিনি তদনুযায়ী নিজ আচরণের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন, এরূপ শুভ গুনকেই আপ্তি বলা হয়। এইরূপ আপ্তি অর্থাৎ শ্রেষ্ঠগুণ যুক্ত মনুষ্যকেই "আপ্ত" বলা হয়। এইরূপে আপ্তের বচন বা উপদেশই শব্দপ্রমাণ বলা হইয়া থাকে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ