ইসলামে দাসী ও সেক্স - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 July, 2021

ইসলামে দাসী ও সেক্স

মুমিনদের দাসীর সংখ্যা

 ইসলাম মতে একজন পুরুষ একইসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখতে পারে। চারজনকে তালাক দিয়ে আরো চারজনকে আনতে পারে। তবে স্ত্রী সর্বোচ্চ চারজনই রাখা যাবে। আর দাসী রাখা বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। যতখুশি দাসী রাখা যাবে এবং তাদের সাথে যৌনকর্মও করা যাবে। কিন্তু কোন স্ত্রী যদি স্বামীর দাসী সেক্স বিষয়ে আপত্তি জানায়, বাধা দেয়, এই বিষয়ে ইসলামের হুকুম কি? হাদিস কী বলে? তার আগে জেনে নিই, বাঁদী, দাসী, উপপত্নী, রক্ষিতা, এই শব্দগুলোর অন্যান্য সিনোনিমস।[রেফাঃ সুরা নিসা আয়াত ২৪]

ইসলামে দাসী ও সেক্স

কোরআন এবং অসংখ্য সহিহ হাদিসে আল্লাহ পাক এবং তার নবী দাসী সেক্সকে সমস্ত মুমিনদের জন্য হালাল করেছেন। নবী নিজে তার দাসীদের সাথে যৌনকর্ম করেছেন এবং অন্যান্য সাহাবাগণও এটি আল্লাহর নির্দেশে করেছেন। আল্লাহ অনেক সময়ই দাসী সেক্স করতে রীতিমত মুমিন এবং নবীকে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন। অনেকগুলো তাফসীরে এটি ফরজ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিষয়ে বোঝার জন্য শুরুতেই জানা দরকার, একজন স্ত্রী আপত্তি জানাবার মত অবস্থানে থাকে কিনা। আল্লাহ কর্তৃক কোন হালাল বিষয় কেউ হারাম করতে পারে কিনা। কোরআন পরিষ্কারভাবে দাসী সহবতকে হালাল ঘোষণা করেছে। সেখানে কেউ আর দাসী সহবত হারাম করতে পারে না। প্রাসঙ্গিকভাবে এই লেখাটির একদম নিচের লিঙ্ক থেকে পড়ুন সুরা তাহরীমের তাফসীরগুলো। আর কোন স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হলে আল্লাহ সেই স্ত্রীকে প্রহারের নির্দেশও দিয়েছে।

সুরা নিসা আয়াত ৩৪ আর যাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কোন অবাধ্যতা খুঁজে পাও তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।

স্ত্রীকে কেন প্রহার করা হলো সে বিষয়ে শেষ বিচারের দিন তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না। (আবু দাউদ , বই নং- ১১, হাদিস -২১৪২)

ইসলামে দাসীদের সাথে যৌনকর্ম হালাল করা হয়েছেঃ

সুরা আল-মা’আরিজ আয়াত ২৯-৩০
যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে, কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদেরবেলায় তিরস্কৃত হবে না।

 সুরা আল-আহযাব আয়াত ৫০
হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন

দ্বীনের নবী নিজেও দাসী সেক্স করতেন, যা বর্ণিত আছে একদম তাহক্বীককৃত সহিহ হাদিসে। পড়ুন সূনান নাসাঈ (ইফাঃ খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ১০৬ তে।

একজন স্ত্রী তার স্বামীর দাসী সহবত বিষয়টিকে ভালভাবে গ্রহণ না করায় কৌশলে সেই দাসীকে দুধ পান করিয়ে দেয়, যেন তার স্বামী আর সেই দাসীর সাথে সহবত করতে না পারে। এই বিষয়টি হযরত উমর শুনতে পেলে তিনি ঐ স্ত্রীকে শাস্তি দিতে বলেন, এবং ঐ লোককে নিশ্চিন্তে দাসী সহবত করতে নির্দেশ দেন। মুয়াত্তা ইমাম মালিকের এই হাদিস গ্রন্থটির দ্বিতীয় খণ্ড ডাউনলোড করুন এখান থেকে

“ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ” Al Bidaya Wal Nihaya (Download Link) প্রখ্যাত মুফাসসির ও ইতিহাসবেত্তা আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) প্রণীত একটি সুবৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ইসলাম তথা কোরআন এবং হাদিস ও বিভিন্ন বর্ণনাকারীর সূত্র হতে ইসলাম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বিবি আয়েশার সাথে নবির বিবাহ তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার এ নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত কোন মতামত নাই, তবে, এটাকে বৈধতা দিতে গিয়ে ইসলামিস্টরা   যে সব উদ্ভট ও অশ্লীল যুক্তি দেখান সে গুলো অত্যন্ত আপত্তিকর, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই লেখাটি লিখতে হচ্ছে। দ্বিতীয় আপত্তির বিষয়টি হল, এই বাল্য বিবাহকে সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব কর্তৃক করা এক পালনীয় উদাহরন হিসাবে মেনে নেওয়া। এই লেখায় আজ মোটেও অপ্রাপ্ত বয়সের শিশুর সাথে যৌনকর্মের ভয়াবহতা ও অপ্রাপ্ত বয়সের গর্ভধারণের মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করব না। ইদানিং, অন লাইন সামাজিক মাধ্যমে ইসলামিস্টদের কিছু কথা শুনে মনে হয় উনারা নবি মোহাম্মাদ (দঃ) ও বিবি আয়েশার প্রথম বাসর রাতে পাশের তাঁবুতে ছিলেন আর পর দিন সকালে হয় বিবি আয়েশার সাথে উনার প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার বিস্তারিত জেনে নিয়েছিলেন অথবা কোন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা উনার অক্ষত যোনির মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছিলেন। বিবি আয়েশার সেই সময় কি অবস্থা হয়েছিল তা উনি ও সেই সময় তার পরিবাবের লোকজন ভাল বলতে পারবেন। যে পরিমান মিথ্যাচার ও গোঁজামিল দিয়ে ইসলামিস্টরা বিবি আয়েশার নয় বছরে পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্তি প্রমান করতে চান, সে বিষয় নিয়ে যে কেও এক গবেষণা পত্র বা থিসিস লিখে ফেলতে পারবেন। একটি তথ্য দিয়ে, এই বিষয়টির ইতি টানবো, আমি বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী সকল পাঠককে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের যে কোন বড় সরকারী হাসপাতালের যে কোন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে দয়া করে জিজ্ঞাসা করবেন, যে উনার অভিজ্ঞতায় প্রতিনিয়ত কত অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়ে শিশু পাষণ্ড স্বামী বা ধর্ষক দ্বারা যৌনকর্মের ফলে মারাত্মক ক্ষতজনিত রক্তক্ষরণ  নিয়ে অপারেশনের টেবিলে যান। এর ফলে মারা যাওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। এর ফলে একজন মেয়ে শিশু পরবর্তী জীবনে এক দীর্ঘমেয়াদী, অপূরণীয় শারীরিক ও মানসিক ট্রমার সম্মুখীন হন, যে বিষয়টি ধর্মীয় উন্মাদনায় এই সব ইসলামি পণ্ডিতরা কখনও বিবেচনায় নেন না। নবি মোহাম্মাদ (দঃ) এর ১৪০০ বছর আগের এক বাল্য বিবাহকে বর্তমানে জায়েজ করতে মুসলিম পন্ডিতগন আর ওয়ায মাহফিলে মোল্লা মাশায়েখগন যেভাবে এই বর্বরতার পক্ষে সাফাই গান সেটা আমাকে ক্ষুব্ধ করে।

এবার, মুল বিষয়ে আসি, বর্তমানের ইসলামিস্টরা বিবি আয়েশার সাথে নবির নিকাহের ব্যাপারে অনেক কথার মধ্যে দুইটি বিষয়ে বলে থাকেন, প্রথমত, বিবি আয়েশার বিবাহের বয়স নিয়ে সহি বুখারির হাদিস এর সত্যতা বা এর রাবি নিয়ে কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তা।  দ্বিতীয়ত, ইসলাম অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েশিশু বিবাহ ও যৌনকর্ম সমর্থন করে না। বলাই বাহুল্য, এটি সর্বইব মিথ্যা দাবী। দাসী মারিয়ার সাথে নবির বিবাহ বহির্ভূত যৌন সঙ্গম ও দাসী মারিয়ার গর্ভে নবির ঔরসে পুত্র ইব্রাহিমের জন্মলাভ  বর্তমানের পরিবর্তিত সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুস্লিম পণ্ডিতদের অসস্থির  কারন হয়ে দাড়ায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে হালের  ইসলামিস্টরা নানা ভাবে দাসী মারিয়াকে নবির বিবাহিত স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করার জন্য চতুরতার আশ্রয় নেন। উল্লেখিত দুই ক্ষেত্রেই ইসলামিস্টরা নানা বাহানায় সহি বুখারি, সহি মুসলিম, কোরানের তাফসির ও সিরা গ্রন্থের সকল তথ্যসূত্র বা রেফারেন্স সমূহ অস্বীকার করেন।  কাজেই, বর্তমানের ইসলামিস্টদের জবাবে সর্বসময়ের জন্য সবচেয়ে সহি ও অকাট্য ইসলামি দলিল পেশ করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের চুনোপুঁটি কথিত ইসলামি পণ্ডিত তো দুরের কথা, সারা সুন্নি মুসলিম বিশ্বে ইসলামি শারিয়া ও দ্বীনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সৌদি সরকারের ইসলামি গবেষণা ও ইফতা বিভাগ (The General Presidency of Scholarly Research and Ifta, http://www.alifta.net), যার চেয়ারম্যান ছিলেন ইসলামি ফাতওয়ার সর্বোচ্চ মুফতি শাইখ আব্দুল আজিজ ইবনে বায, যার ডিক্রী বা রুলিংকে চ্যালেঞ্জে করার মত কোন কর্তৃপক্ষ সুন্নি বিশ্বে নাই। উপরন্ত, এই গবেষণা ও ইফতা বিভাগ কোরান ও হাদিস বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞানী মুফতিদের সমন্বয়ে গঠিত। কোন যদু মদু যদি দাবী করে যে উনি বা উনারা আরও ভাল হাদিসের বা ইসলামের উসুল জানেন, তবে, উনাদের সন্মান রেখেই বলছি, দয়া করে আপনাদের হাদিস-কোরানের ব্যাখ্যা এই সৌদি গবেষণা ও ইফতা বিভাগের কাছে পেশ করুন আর যদি সেই সৎসাহস না থাকে তবে ইসলামকে দয়া করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে, দুই চামচ চিনি গুলিয়ে পরিবেশন করা থেকে বিরত থাকুন। এই লেখায় আমি সচেতন ভাবেই বিবি আয়েশা ও দাসী মারিয়া সংক্রান্ত হাদিস, কোরান ও সিরা ভিত্তিক রেফারেন্স সমূহ উল্লেখ করা থেকে বিরত থেকেছি বরং এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের গবেষণা লব্ধ রুলিংকেই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করেছি।  এখন দেখা যাক, বিবি আয়েশার বিবাহ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে সৌদি গবেষণা ও ইফতা বিভাগ কি বলে?

নবি পত্নী হযরত আয়েশা ও অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েদের সাথে বিবাহ ও যৌনসঙ্গম করার ব্যাপারে ফাতওয়া

প্রশ্নঃ এটা কি সত্য যে অপ্রাপ্ত বয়সের বিবি আয়েশার সাথে নবির বিবাহ শুধু নবির জন্য প্রযোজ্য? নাকি এটি সকল মুসলিম উম্মার জন্যও সমান ভাবে প্রযোজ্য? অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েদের সাথে যৌনসঙ্গম করা যাবে কি ? তারা কি ৩ মাস ইদ্দত কাল পালন করবে ?

উত্তরঃ ফাতওয়া নং ১৮৭৩৪। বিবি আয়েশা নবির (উনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) সাথে বাগদত্তা হয়েছিলেন ছয় বছর বয়সে। নবি এই বিবাহ পূর্ণ করেন (যৌনসঙ্গম দ্বারা) মদিনায় যখন বিবি আয়েশার বয়স ছিল নয় বছর। এই বিধান শুধুমাত্র নবির জন্য নয়। অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়ে বিবাহ করা ও যৌনসঙ্গম করা সবার জন্য বৈধ, এমনকি মেয়ে সাবালিকা না হলেও, যদি সে যৌনসঙ্গম করতে সক্ষম হয়। অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়ের ইদ্দত কালও ৩ মাস হবে।

বর্তমানের ইসলামিস্টরা দাবী করেন, নবি বিবি আয়েশার নয় বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন, যতদিন না উনার হায়েয হয় (সঙ্গমকালে বিবি আয়েশার হায়েয হয়েছিল এমন কোন দালিল হাদিসে বা সিরায় পাওয়া যায় না)। অর্থাৎ মাসিক হওয়ার বা সাবালিকা হওয়ার পূর্বে ইসলাম যৌনসঙ্গম সমর্থন করে না। কিন্তু উপরের ফাতওয়াতে এটি স্পষ্ট যে, ইসলামে যৌনসঙ্গম করার জন্য সাবালিকা হওয়া বা মাসিক হওয়া কোন পূর্ব শর্ত নয়। এ ক্ষেত্রে “যৌনসঙ্গম করতে সক্ষম” বলতে ইসলামি পণ্ডিতগন স্ত্রী যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ বুঝিয়েছেন, এখানে স্ত্রীর অনুমতি বা consent এর কোন কথা বলা হয় নাই। বিবি আয়েশার ছয় থেকে নয় বছর পর্যন্ত নবির যে মুফাক্ষাতার (উরুমৈথুন্য) হাদিস আছে এই ব্যাপারে মুফতি আল শামারির ফাতওয়া তথ্য সুত্রে উল্লেখ করা হল। আমার জানা মতে এটি ইসলামি ওয়েব সাইট থেকে অপসারন করা হয়েছে। তবে, অতি সংক্ষেপে, ফাতওয়ায় বলা হয়েছে যে, ছয় বছর বয়সে বিবি আয়েশা যৌনসঙ্গম করতে সক্ষম ছিলেন না বিধায় নবি মহাম্মাদ তাঁর লিঙ্গ মোবারক বিবি আয়েশার দুই উরুর মধ্য দিয়ে মৃদু ভাবে ঘর্ষণ করে নিজের কামনা পুরন করতেন। উনি নবি বিধায় উনার নিজের উপরে নিয়ন্ত্রন ছিল তাই মুফাক্ষাতা (উরুমৈথুন্য) সাধারন মুসলমানের জন্য বৈধ নয়।

মারিয়া আল কিবতিয়ার বিষয়ে ফাতওয়া ও উত্তর

প্রশ্নঃ মারিয়া আল কিবতিয়া কি নবির স্ত্রী ছিলেন সেই হিসাবে উনি কি উম্মুল মুমেনিন (মুমিনদের মাতা) ?

উত্তরঃ ফাতওয়া নং ৫৮৪৮। মারিয়া আল কিবতিয়াকে নবী মিশরের শাসন কর্তা (আল মুয়াকিস) থেকে উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন, উনাকে নবির পত্নী বা উম্মুল মুমেনিন (মুমিনদের মাতা) হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। মারিয়া আল কিবতিয়া যুদ্ধ বন্দিনী ছিলেন যা নবির ডান হস্তের অধিগত ছিল (কাজেই বিবাহ ছাড়াই উনি নবির জন্য হালাল ছিলেন)। উনি ইব্রাহিম নামে নবির ঔরসজাত সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, সেই কারনে উম্ম ওয়ালাদ (সন্তানের মাতা) উপাধি পেয়েছিলেন।

মারিয়া আল কিবতিয়া যে নবির যৌনদাসী ছিলেন এবং স্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, উপরের ফাতওয়া তার চূড়ান্ত প্রমান। তথাকথিত মডারেট মুসলিমরা এই নিয়ে অযথাই প্যাচান। দাসী মারিয়া আল কিবতিয়া সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে নাজিল হওয়া সুরা আত তাহারিম এর প্রথম কয়েকটি আয়াতের পরিপ্রেক্ষিত জানতে নাস্তিক্য ডট কমে পূর্বে প্রকাশিত “নবী মোহাম্মদ (দঃ) এর দাসী মারিয়া আল কিবতিয়া ও অতঃপর” লেখাটি পড়তে পারেন। লেখার সাথে সমকালিন বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার ইয়াসির কাদির (PhD) একটি ভিডিওর লিঙ্ক দেওয়া আছে,ইংরাজি জানা আগ্রহি পাঠককে অনুরধ করবো এটি দেখার জন্য। প্রকৃত দালিল ভিত্তিক সত্যকে বর্তমান কালের ইসলামি দাওয়াতি (apologist) ভাইরা কত ভাবে বিকৃত করেন তার পূর্ণ প্রমান আপনারা এতে পেয়ে যাবেন। আশা করি, সৌদি সরকারের ইসলামি গবেষণা ও ইফতা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত দলিল পেশ করার পর বিবি আয়েশা ও নবির দাসী মারিয়া আল কিবতিয়াকে নিয়ে বর্তমানের ইসলামিস্টদের এই সংক্রান্ত সকল মিথ্যাচার ও গোঁজামিলের অবসান হবে।

ইসলামের সমালোচনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয় বরং এক মিথ্যাচার বারবার শোনার বিরক্তি থেকে বিবেকের তাড়নায় সত্য তুলে ধরাই এই লেখার উদ্দেশ্য। ধর্মীয় উন্মাদনায় আমাদের বর্তমানের মুসলিম পন্ডিত ও আধুনিক মুমিনরা সত্যকে গোপন করেন, বিকৃত করেন কিন্তু তার চেয়েও ভয়াবহ ১৪০০ বছর পূর্বের কোন বর্বর প্রথাকে বর্তমান সমাজে জায়েজ করতে চান শুধুমাত্র অন্ধভাবে কোন কথিত পয়গম্বরের সব কাজের বৈধতা দেওয়ার জন্য, এতে ইসলাম ধর্মের কি লাভ হয় সেটা উনারাই ভাল বলতে পারবেন।

তথ্য সুত্র

বিবি আয়েশার সাথে নবির মুফাক্ষাতা (উরুমৈথুন্য)
Thighing” Aisha
Muhammad placed his penis between the thighs of Aisha and he massaged it to orgasm since he could not have sexual intercourse with her until she was nine.
Praise be to Allah and peace be upon the one after whom there is no (further) prophet.
After the permanent committee for the scientific research and fatwahs (religious decrees) reviewed the question presented to the grand Mufti Abu Abdullah Muhammad Al-Shemary, the question forwarded to the committee by the grand scholar of the committee with reference number 1809 issued on 3/8/1421 (Islamic calendar). The inquirer asked the following:
It has become wide spread these days, and especially during weddings, the habit of mufa’khathat of the children (mufa’khathat literally translated means “placing between the thighs” which means placing the male member between the thighs of a child). What is the opinion of scholars knowing full well that the prophet, the peace and prayer of Allah be upon him, also practiced the “thighing” of Aisha – the mother of believers – may Allah be please with her.

After the committee studied the issue, they gave the following reply:

It has not been the practice of the Muslims throughout the centuries to resort to this unlawful practice that has come to our countries from pornographic movies that the kufar (infidels) and enemies of Islam send. As for the prophet, peace and prayer of Allah be upon him, thighing his fiancée Aisha. She was six years of age and he could not have intercourse with her due to her small age. That is why (the prophet) peace and prayer of Allah be upon him placed his (male) member between her thighs and massaged it softly, as the apostle of Allah had control of his (male) member not like other believers.

নবি পত্নী হযরত আয়েশা ও অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়েদের সাথে বিবাহ ও যৌনসঙ্গম করার ব্যাপারে ফাতওয়া

আয়েশা

মারিয়া আল কিবতিয়ার বিষয়ে ফাতওয়া ও উত্তর

আয়েশা
ইসলামে সেক্স শব্দটির অর্থ হলো নারীদেহ ভোগ।
সেক্স নর এবং নারী এই উভয় প্রজাতির দৈহিক তৃপ্তির চরমতম উপায় - এই ধারণা ইসলামে সম্পুর্ণ অনুপস্থিত। এখানে সেক্সকে শুধুমাত্র পুরুষ জাতির দৃষ্টিভঙ্গী হতে বিচার করা হয়, সেক্স যেন শুধুমাত্র একটি সেবা বা পণ্য। এই সেবা আহরণ করতে কিংবা পণ্যটি (স্ত্রীর যৌনাঙ্গ) হতে ফায়দা লুটতে পুরুষ মেয়েটিকে দেনমোহর প্রদান করে। এ যেন একটি ব্যবসায়িক চুক্তি, যে চুক্তির শর্ত মোতাবেক এককালীন কিছু অর্থ মূল্য (মোহরানা) ও পরবর্তীতে প্রদেয় ভরণপোষণের (নাফাক্ক) বিনিময়ে মেয়েটি তার যোনি এবং অন্যান্য প্রজনন যন্ত্র পুরুষটির কাছে বন্ধক রাখে।
পবিত্র কোরানের বিধান মোতাবেক একজন মেয়েকে যে কোন মূল্যে তার পবিত্রতা বজায় রাখতে হয় এবং জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত সব সময় নিজেকে গৃহাভ্যন্তরে গুটিয়ে রাখতে হয়। মেয়েদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবরুদ্ধ করে রাখার পেছনে কী কারণ, তা কখনও ভেবে দেখেছেন কি? যদি কোনো ইসলামপন্থীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেন, সে আপনাকে অনেক চোখা চোখা যুক্তি দেখাবে। বলবে, এতে সমাজে ধর্ষণজাতীয় অপরাধ কমে, যৌননির্যাতনের সম্ভাবনা কমে, ব্যভিচারের আশঙ্কা থাকে না... ইত্যাদি ইত্যাদি।
আত্মপক্ষ সমর্থনবাদীদের মনগড়া যুক্তির প্রতি কান না দিয়ে শরিয়া আইন হতে এর আসল কারণটি খুজে বার করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, মেয়েদেরকে গৃহাভ্যন্তরে বন্দী করে রাখার পেছনের কারণ একটাই - চাহিবামাত্র পুরুষটিকে (স্বামী, মনিব কিংবা বন্দীকর্তা) সেক্স-সার্ভিস প্রদান করা। যদি আপনার বিশ্বাস না হয়, নীচের ইসলামি আইনটি পড়ে দেখুন:
মেয়েদের গৃহভ্যন্তরে থাকার একমাত্র কারণ- সেক্স (রেফারেন্স-১১, পৃ-৫৪) পক্ষান্তরে, ‘মিহ্ মোয়াজিল’ (তরিৎ মোহরানা) সম্পুর্ণ ভাবে আদায় না করা পর্য্যন্ত স্বামীর কোন অধিকার নাই স্ত্রীকে ভ্রমন হতে বিরত রাখা কিংবা বিদেশ গমন হতে বিরত রাখা কিংবা বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করা থেকে বিরত রাখা; কারণ স্ত্রীর দেহভোগ নিশ্চিত করার জন্যেই স্ত্রীকে গৃহাভ্যন্তরে অবরুদ্ধ করে রাখার অধিকার স্বামীকে দেয়া হয়েছে, এবং বিনিময় মুল্য পুরোপুরি পরিশোধ না করা পর্যন্ত ভোগ করার এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না।
পাঠকদের জন্যে আরও কিছু চমক:
হাদিস শরীফে বর্ণিত নবীজির শিক্ষা (মিশকাত, আরবী সঙ্কলন; বাব-উন-নিকাহ): (রেফারেন্স-৬, পৃ-৬৭১)
“স্বামী স্ত্রীকে ডাকলে সে তৎক্ষনাৎ হাজির হবে যদি সে চুল্লীর মধ্যেও থাকে”।
সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার ইমাম গাজ্জালি (রঃ) বিখ্যাত ‘ইয়াহ্ইয়া উলুমেদ্দিন’ গ্রন্থে লিখেছেন (রেফারেন্স-৭, পৃ-২৩৫):
“স্ত্রীর উচিত স্বামীকে তার নিজ সত্ত্বার চেয়েও উপরে স্থান দেয়া, এমনকি তার সকল আত্মীয়স্বজনের উপরে স্থান দেয়া। সে স্বামীর জন্যে নিজকে সদা-সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন (রেডি) করে রাখবে যেন স্বামী যখন ইচ্ছা তাকে ভোগ করতে পারে...।”
এই হলো ইসলামের দৃষ্টিতে সেক্সের নমুনা। পুরুষের যৌনতৃপ্তিই (অরগাজম) এর প্রাথমিক লক্ষ্য। এক্ষেত্রে মেয়েটি একটি যৌন-মেশিনের অতিরিক্ত কিছু নয়। মেশিনটি সবসময় রানিং কন্ডিশনে থাকবে, যেন তার মালিক ইচ্ছে হলেই মেশিনের উপর সওয়ার হতে পারে। যে জগতে পুরুষের যৌনতৃপ্তিলাভই একমাত্র বিবেচ্য, সেখানে মেয়েদের স্পর্শকাতরতা বা তাদের পছন্দ-অপছন্দের মূল্যায়ন একেবারেই অবান্তর। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু মেয়েদের জন্যে নয়, পুরুষদের জন্যেও চরম অবমাননাকর। এতে পুরুষজাতি সেক্স-ম্যানিয়াক (যৌনোন্মাদ) হিসেবে চিত্রায়িত হয়, যেন সে যখন-তখন সঙ্গম করার জন্যে মুখিয়ে আছে। পুরুষের এই কামচিত্র একেবারেই বাজে।
এই প্রথার শেষ পরিণাম কী? অবশ্যই স্ত্রী প্রজাতিটির অবধারিত গর্ভসঞ্চার এবং ইসলামি পুরুষটির বিবেচনাহীন যৌনাচারের প্রায়শ্চিত্ত করা।
স্বামী ভরণপোষণ দিচ্ছে, এমতবস্থায় স্বামী যদি সেক্স করতে চায় এবং স্ত্রীর তাতে সম্মতি না থাকে, তা’হলে অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? আপনার হয়তো বিশ্বাস না-ও হতে পারে, তবে ইসলামী আইন এমন ক্ষেত্রে স্ত্রীর ওপর বলপ্রয়োগের অধিকার দিয়েছে পুরুষকে। একে কি আপনি ‘ইসলামি স্টাইলে ধর্ষণ’ বলবেন না, পাঠক? এ সম্পর্কিত একটি হেদাইয়া (রেফারেন্স -১১, পৃ-১৪১) 
স্ত্রীকে বলপ্রয়োগে ভোগ করা যায় যদি না সে একগুয়ে হয়: 
যদি স্ত্রী অবাধ্য ও একগুয়ে হয় এবং স্বামীর সম্মতি ব্যতিরেকে বিদেশ ভ্রমনে যায়, এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর নিকট হতে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার হারায় যে পর্যন্ত না সে ফিরে আসে এবং স্বামীর নিকট নিজকে সমর্পণ করে, কারণ এ ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্ক সংক্রান্ত বাধা স্ত্রীর তরফ হতে উদ্ভূত হয়েছে; তবে যখন সে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে, তখন পুনরায় পূর্বের ন্যায় ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবে সে। যখন কোনো স্ত্রী স্বামীগৃহে অবস্থান করেও স্বামীর দাম্পত্য আলিঙ্গন অস্বীকার করে, সে যেহেতু ভরণপোষণ ভোগ করছে এবং স্বামীর অধিকারে আছে, সুতরাং স্ত্রীর অসম্মতি সত্ত্বেও স্বামী ইচ্ছে করলে তাকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে উপভোগ করতে পারে।
শিশু বিবাহঃ অপরিণত বয়স্কার সাথে সেক্স

বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই শিশু-বিবাহ আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশু-বিবাহ আজকাল মানবতার প্রতি অভিশাপ হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে প্রাচীন হিন্দু সমাজে এ ধরণের বিয়ের বহুল প্রচলন ছিল। প্রাচীন পুথিপত্র পড়ে আমরা জানতে পারি, এমনকি পাঁচ ছয় বছরের মেয়েকেও পিতামাতা তখন অম্লানচিত্তে বিয়ে দিয়ে ফেলত। এই শিশুরা বড় হয়ে এমন স্বামীর ঘর করতেও বাধ্য হতো, যে ঘর-সংসারকে তারা রীতিমত ঘৃণা করত। এই প্রথাকে নিকৃষ্টতম শিশু নির্যাতন ছাড়া আর কোন্‌ নামে অভিহিত করা যায়? কিছু সংখ্যক মানবতাবাদী কর্মীর দুর্বার আন্দোলনে হিন্দু ধর্মের আমূল সংস্কার সাধিত হয়, শিশুবিবাহ বর্তমানে হিন্দু সমাজে অতীত বিষয় মাত্র। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে অবস্থাটা কী? ইসলামপন্থীরা জোর গলায় দাবী করে থাকেন যে তাদের ধর্মটি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে প্রগতিশীল ধর্ম। সুতরাং মানুষ সঙ্গতভাবেই আশা করবে যে এমন একটি প্রগ্রতিশীল ধর্মে শিশুবিবাহের মতো নোংরা প্রথা নিশ্চয়ই আইনসিদ্ধ নয়। এই প্রত্যাশা অবশ্য প্রচণ্ড এক ধাপ্পাবাজি, আসল সত্য হলো বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কোন সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই। মায়ের বুকে দুগ্ধ পানরত সদ্যোজাত একটি শিশুকেও ইসলামী আইন অনুযায়ী বিয়ে দেয়া যায় এবং সে বিয়ে হান্ড্রেড পারসেন্ট ইসলাম সম্মত!
ইসলামে দাসী ও সেক্স

ইসলামি শিশু-বিবাহের নিষ্ঠুরতম দিকটি হলো– যদি বাপ-মায়ের সম্মতিক্রমে এই বিয়ের চুক্তি হয়ে থাকে, তবে তা কোনভাবেই রদ করা যায় না। অর্থাৎ বড় হওয়ার পর দম্পতিকে অবশ্যই বিয়েটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে।

শিশুবিবাহ সংক্রান্ত শারিয়া আইন নিম্নরূপঃ

হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১, পৃ-৩৬):

শৈশবে চুক্তিকৃত কোন্‌ প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর অবশ্য প্রতিপাল্যঃ

যদি শিশুদের পিতা কিংবা পিতামহ বিয়ের চুক্তি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই চুক্তি বাতিল করার কোন অধিকার তাদের (দম্পতির) নেই; যেহেতু এই বিষয়ে পিতৃপিতামহদের সিদ্ধান্ত কোন অসদুদ্দেশ্য হতে উদ্ভূত হতে পারে না কারণ সন্তানসন্ততিদের প্রতি তাদের স্নেহ সংশয়াতীত; ফলতঃ এই বিবাহ উভয়পক্ষের জন্যে অবশ্য প্রতিপাল্য, ঠিক সেইভাবে যেন তারা বয়ঃপ্রাপ্তির পর নিজেরা স্বেচ্ছায় এই সম্পর্কে প্রবেশ করেছে।

শৈশবে চুক্তিকৃত কোন্‌ প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর বাতিল করা/বহাল রাখার স্বাধীনতা দম্পতির ইচ্ছাধীনঃ

যদি পিতৃপিতামহ ব্যতিরেকে অন্য কোন অভিভাবক চুক্তি করে থাকে, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির পর উভয়ের অধিকার রয়েছে চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার।

ইসলামের নবী মহম্মদ (দঃ) নিজেই ছয় (অথবা সাত) বছরের একটি শিশুকে বিয়ে করেছিলেন। মহম্মদের (দঃ) এই শিশু কনেটিকে নিয়ে ইদানীং বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে, এসম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা এই প্রবন্ধের উপজীব্য নয়। পাঠক-পাঠিকাগণকে আমি অন্য কোথাও হতে সেসব লেখা পড়ে দেখতে অনুরোধ করছি। আমি এখানে দু’একটি হাদিস উদ্ধৃত করব, যেখান থেকে দেখা যাবে যে মহম্মদ (দঃ) যখন তার বালিকা বধুটিকে ঘরে তুলে নেন এবং বিয়ে কনজুমেট করেন, বধুটি তখনও পুতুলখেলা ছাড়ে নি (কনজুমেট শব্দের অর্থ যৌনমিলনের মাধ্যমে বিয়েকে পূর্ণাঙ্গ করণ বা আইনসিদ্ধ করণ)।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩৩১১:

আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) যখন তাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স ছিল সাত বছর, এবং বউ হয়ে তিনি যখন তার (রাসুলের) ঘরে যান তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, এবং তার পুতুলগুলি তার সাথে ছিল; এবং যখন তিনি (রাসুল) ইন্তেকাল করেন তখন তার বয়স ছিল আঠার বছর।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-৫, বুক নং-৫৮, হাদিস নং-২৩৬:

হিশামের পিতা হতে বর্ণিতঃ
নবী মদীনা চলে যাওয়ার তিন বছর পুর্বে খাদিজা ইন্তেকাল করেন। সেখানে বছর দুই কাটানোর পর তিনি আয়েশাকে বিয়ে করেন, আয়েশা তখন ছয় বছরের বালিকা মাত্র, এবং আয়েশার বয়স যখন নয় বছর তখন তিনি বিয়েকে পূর্ণাঙ্গ করেন।

নবী তার বালিকা বধুটির সাথে কীভাবে ক্রীড়াকৌতুক এবং সেক্স করতেন, তার কয়েকটি নমুনা।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-১, বুক নং-৬, হাদিস নং-২৯৮:

আয়েশা হতে বর্ণিতঃ

জুনুব অবস্থায় আমি ও নবী একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম (যৌনসঙ্গমের পরবর্তী নাপাক অবস্থার আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে জুনুব)। ঋতুকালে তিনি আমাকে ইজার (কোমর হতে নীচ পর্যন্ত পরিধেয় বস্ত্রের নাম ইজার) পরিধান করার জন্যে বলতেন এবং আমার সাথে রঙ্গরস করতেন। ইতিক্কাফ করার সময় তিনি তার মস্তক আমার দিকে বাড়িয়ে দিতেন এবং আমি তা ধুইয়ে দিতাম, এমনকি যখন আমার পিরিয়ড (ঋতুস্রাব) চলত তখনও।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬২৯:

আয়েশা হতে বর্ণিতঃ

আমি এবং রাসুল (দঃ) একই পাত্রে গোসল করতাম এবং একজনের পর আরেকজন হাত দিয়ে পানি নিতাম, যৌনসঙ্গমের পর।

পঞ্চাশোর্ধ কোন প্রৌঢ় যদি নয়-দশ বছরের বালিকাকে বিয়ে করে, তবে তার সাথে কীভাবে রতিক্রিয়া করতে হবে তার অনুপম আদর্শ বিধৃত আছে উপরের হাদিসগুলিতে।

ছয় বছরের শিশুকে বিয়ে করা এবং নয় বছর বয়সের সময় তার সাথে যৌনসঙ্গমে প্রবৃত্ত হওয়ার ঘটনা হজম করতে যদি কারও অসুবিধা হয়, তবে তার জন্যে আরও একটি চমক আছে।

ইবনে ইসহাক রচিত সিরাতে রাসুলুল্লাহ গ্রন্থটি রাসুলের জীবন চরিত হিসেবে মুসলিম জগতে বহুল পঠিত এবং অত্যন্ত প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। মুসলমান লেখকগণ প্রায়শই এই বই হতে বিভিন্ন বিষয়ে রেফারেন্স কোট করে থাকেন। এই গ্রন্থে রাসুল সম্পর্কে একটি মজাদার তথ্য আছে। ইবনে ইসহাক লিখেছেন, রাসুল নাকি সবেমাত্র হামাগুড়ি দিচ্ছে এমন এক শিশুকে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। আসুন পাঠক, ইবনে ইসহাকের বর্ণনা থেকে আমরা ঘটনাটি জেনে নিই।

(সুহাইলি, মম.৭৯: ইউনুছের রেওয়ায়েত ও.ও কতৃক রেকর্ডকৃতঃ নবী তাকে (উম্‌ আল-ফজলকে) দেখেন যখন সে তার সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। তিনি বলেন – ‘যদি সে বড় হয় এবং আমি তখনও বেঁচে থাকি, আমি তাকে বিয়ে করব’। কিন্তু সে বড় হওয়ার আগেই নবী ইন্তেকাল করেন এবং সুফিয়ান বিন আল-আসওয়াদ বিন আব্দুল আসাদ আল-মাখজুমির সাথে তার বিয়ে হয় এবং সুফিয়ানের ঔরসে তার রিজক ও লুবাবা নাম্নী দু’টি সন্তান জন্মে (রোফারেন্স-১০, পৃ-৩১১)।

আমরা আরও দেখতে পাই, হযরত ওমর (রাঃ) উম্মে কুলসুম নামের চার বছরের এক শিশুকে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুম হচ্ছে আবু বকরের (রা) মেয়ে এবং আয়েশার বৈমাত্রেয় বোন।

ইসলামের সর্বোচ্চ ব্যক্তি মহানবী এবং তার প্রিয় সাহাবিগণ পরবর্তীদের জন্যে এমন মহৎ আদর্শই রেখে গেছেন। রাসুল এবং তার সাহাবিগণ কতৃক প্রতিষ্ঠিত আদর্শের ইসলামি নাম সুন্না। এই সুন্না বা আদর্শ অপরিবর্তনীয়, প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে কেয়ামত পর্যন্ত এই আদর্শ অনুসরণ করতেই হবে, একবিন্দু নড়চড় করা চলবে না। পনের শত বছর ধরে এই অপরিবর্তনীয় আদর্শ অনুসরণ করতে যেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এখনও পেশাবের পর লিঙ্গাগ্র ধারণ করে চল্লিশ কদম হাটতে এবং জোরে জোরে কোথ দিতে দেখা যায়, ঢিলা কুলূখের অত্যাচারে অনেক মসজিদের কমোড জাম হয়ে নারকীয় দুর্গন্ধের সৃষ্টি করেছে দেখা যায়। অনেক সম্পন্ন মুছুল্লির বাড়ীতে ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়া­দাওয়া করতে দেখা যায়, কারণ নবীর সুন্নত। নবী ডাইনিং টেবিলে খেতেন না, মাটিতে বসে খেতেন। তা বেশ, একনিষ্ঠ অনুসারি হিসেবে নবীর প্রতিটি কাজের অনুসরণ তারা করতেই পারেন। কিন্তু আমার খটকা লাগে যে শিশু বিবাহের সুন্নাটি তারা এড়িয়ে যান কেন! ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়াদাওয়া করে কিংবা ঢিলা কুলুখ হাতে নৃত্য করে নবীর সুন্নত পালন করেন, কিন্তু প্রকৃতির ডাকে বাইরে না ছুটে শোভন টয়লেটের দিকে ছুটে যান! ভিলার বাইরে খোলা ড্রেনের উপর খাটা পায়খানা বানিয়ে নেন না কেন? দেড় হাজার বছর পুর্বে নবীজি (এবং তার বিবিরাও) খোলা মরুভুমিতেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেতেন। আশা করি কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমান আমার মনের ধন্দ দূর করতে এগিয়ে আসবেন।

রিযাঃ পালক মা/দুধ মা

আপনি কি কখনও এমন অবস্থার কথা চিন্তা করেছেন যে একজন বয়স্ক পুরুষ একই সাথে একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু (২ বছর কিংবা তার চেয়েও কম) এবং একজন মহিলাকে বিয়ে করল যার বুকে দুধ আছে? এমন যদি হয় যে স্বামীর ঘরে নবপরিণীতা শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর মতো কেউ নেই (ধরা যাক শিশুটি এতিম)। ঘরে অবশ্য একটি দুধেল বউ আছে, কিন্তু সে কি শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে? বর্তমান সময়ে হলে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না, বাজারে হরেক রকম টিনজাত দুধ পাওয়া যায়। তবে বোতলের দুধ খাওয়ানো কোন ইসলামি সলিউশন নয়। দেখা যাক, ইসলাম সমস্যাটিকে কীভাবে হ্যান্ডল করেছে।

হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১, পৃ-৭১):

উদাহরণঃ একজন লোক যার দুইটি বউ আছে এবং এক বউ আরেক বউকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।

যদি কেউ একইসাথে একজন শিশুকে এবং একজন বয়ঃপ্রাপ্তাকে বিয়ে করে এবং বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী শিশুস্ত্রীটিকে বুকের দুধ খাওয়ায়, তবে উভয় স্ত্রীই লোকটির জন্যে অবৈধ হয়ে যাবে, কারণ লোকটির সাথে যদি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক যদি চালু থাকে, এর অর্থ হবে দুধ মা এবং দুধ-মেয়ে উভয়ের সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা যা অবৈধ, ঠিক সেভাবে যেভাবে একজন বায়লজিকাল মা ও তার বায়লজিকাল কন্যার সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা অবৈধ। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে; যদি লোকটি বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে কেনাপ্রকার যৌনসম্পর্ক স্থাপন না করে থাকে তবে সে (বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী) দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে না, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণটি তার কাছ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, বিবাহ পূর্ণাঙ্গকরণের আগে—-কিন্তু শিশুটি অর্ধেক দেনমোহর পাওয়ার অধিকার রাখে, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারণটি উদ্ভূত হয়েছে তার জন্যে শিশুটি দায়বদ্ধ নয়।

এতক্ষন পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করলাম তা একজন বয়স্ক লোক কধক একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিয়ে করা সংক্রান্ত। কিন্তু দৃশ্যপট যদি উল্টো হয়, অর্থাৎ একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর যদি একজন বয়ঃপ্রাপ্তা নারীর (নয় বছর বা তদূর্ধ্ব) সাথে বিয়ে হয়? (পাঠককে এপ্রসঙ্গে আমি জনপ্রিয় লোক-কাহিনী রহিম বাদশাহ ও রূপবান কন্যার ঘটনাটি স্মরণ করতে অনুরোধ করি)। শারিয়া আইন অবশ্য এক্ষেত্রে অনেক উদার, এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া তেমন কোন বিধি­নিষেধ আরোপ করে নি। এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া একটিমাত্র শর্তই আরোপ করেছে, এই আজব শর্তটির ইসলামিক নাম ‘রিযা’ বা ‘রিদা’।

ডিক্সনারি অব ইসলাম হতে রিযার সংজ্ঞা (রেফারেন্স-৬, পৃ-৫৪৬):

রিযাঃ একটি আইনসংক্রান্ত শব্দ। এর অর্থ – নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কোন নারীর বুক হতে স্তন্য পান করা।

রিযার আইনি সংজ্ঞাঃ হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১) অনুসারে রিযার আইনি সংজ্ঞা নিম্নরূপ।

রিযাঃ ধাত্রী/দুধ মা (প্রাগুক্ত, পৃ-৬৭)—-আইনের দৃষ্টিকোন থেকে রিযা বলতে বুঝায় একটি শিশু কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় ব্যপিয়া একজন নারীর বুক হতে স্তন্যপান করা, স্তন্যপান করার মেয়াদকে ‘পিরিয়ড অব ফস্টারেজ’ বা ধাত্রীত্বের মেয়াদ বলা হয়ে থাকে।

ধাত্রী-মায়ের কাছে শিশুর স্তন্যপান করানোর ইসলামী নিয়ম এই। এই নিয়মেই একটি নবজাতককে অপর কোন দুধেল নারীর কাছে প্রতিপালন করতে দেয়া হয়। সম্পন্ন আরবদের মধ্যে এই প্রথা আগে চালু ছিল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আজ পর্যন্তও চালু আছে। মহম্মদের (দঃ) চাচা আবু লাহাবের ক্রীতদাসী তায়েবা নাম্নী এক মহিলা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শিশু মহম্মদকে স্তন্যপান করায়, অতঃপর দুধ মা হালিমার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

ধাত্রী-মাতৃত্বের ক্ষেত্রে পালনীয় বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি হাদিসঃ

জন্মসূত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রে তা হারাম। — ৩০.৩.১৫

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.৩.১৫:
ইয়াহিয়ার কাছ থেকে আমি, মালিকের কাছ থেকে ইয়াহিয়া, আব্দুল্লাহ ইবনে দিনারের কাছ থেকে মালিক, সুলাইমান ইবনে ইয়াছারের কাছ থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার, উরউয়া ইবনে জুবাইরের কাছ থেকে সুলাইমান এবং উম্মুল মোমেনীন আয়েশার কাছ থেকে উরুয়া বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন – “জন্মসূত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রেও তা হারাম”।

এই নিয়মানুযায়ী শিশুটি তার ধাত্রী মায়ের জন্যে হারাম। অর্থাৎ, শিশুটি বড় হলেও বিনাবাধায় তার ধাত্রীমায়ের কাছে যেতে পারবে, যেন ধাত্রী মা এবং জন্মদাত্রী মা সমতুল্য। এই নিয়ম আপাতদৃষ্টিতে মহৎ বলে মনে হচ্ছে, এর মধ্যে আবার কোন সমস্যা লুকিয়ে আছে কি? আরেকটু নিবিড়ভাবে স্টাডি করে দেখা যাক।

ইসলাম ধর্মানুযায়ী একটি মেয়ের যে কোন বয়েসে বিয়ে হতে পারে, এমনকি সদ্যজাত শিশুকেও বাপমা বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। নয় বছর বা এর চেয়ে বেশী বয়েসের যে কেউ ধাত্রী মা হতে পারে। এখন একটি কেস্‌ স্টাডি করা যাক। ছয় মাস বয়েসী একটি ছেলে শিশু, তার দুধ মা নয় বছর বয়েসী এক কিশোরী। মেয়েটি শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াল। শিশুটি আঠারয় পা দিল। ইসলামী আইন অনুযায়ী আঠার বছর বয়েসে একটি পুরুষ শিশু সাবালকত্ব অর্জন করে। তখন দুধ মা’র বয়স সাতাশ বা এর সামান্য উপরে, বলতে গেলে সে তখন যৌবনের মধ্যগগনে। প্রেম, বিয়ে, সন্তান ধারণ ইত্যাদির প্রকৃষ্টতম সময় তার। ইসলামের আইন অনুযায়ী এই দুধ মায়ের সাথে সদ্য যৌবনে পা দেয়া যুবকটির বিয়ে সম্পূর্ণরূপে হারাম, এমনকি এই মায়ের গর্ভজাত যে কোন মেয়ের সাথে (দুধ বোন) তার বিয়েও সম্পূর্ণরূপে হারাম।

রিলায়েন্স অব দ্য ট্রাভেলার নামক প্রামাণ্য শারিয়া গ্রন্থ থেকে এসম্পর্কিত কয়েকটি আইন পেশ করা হলো (রেফারেন্স-৮, পৃ-৫৭৫-৫৭৬।

এন ১২.০- দুগ্ধ পানের কারণে অবিবাহযোগ্য আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠা (রিযা)।

এন ১২.১-কোন মেয়ে যদি কোন পুরুষ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ায়, সে বাচ্চাটির মা হয়ে যায়, (তবে সব ক্ষেত্রে নয়) শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যথা- স্ত্রীলোকটির সাথে তার বিবাহ-সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয়ে যায়, সে স্ত্রীলোকটির পানে তাকাতে পারবে বা তার সাথে নিরিবিলিতে সাক্ষাত করতে পারবে, এবং তাকে স্পর্শ করলে তার অজু ভঙ্গ হবে না; যদিঃ

(এ) উক্ত দুধ নয় বছর বা তদোর্ধµ বয়েসী বালিকার স্তন্য হতে নিঃসৃত হয়ে থাকে, তা সে নিঃসরণ যৌনক্রিয়ার ফলেই হোক কিংবা অন্যকোন কারণেই হোক;

(বি) এবং দুগ্ধপানরত শিশুটির বয়স দুই বছর বা এর চেয়ে কম হয়;

(সি) এরূপ দুধ খাওয়ানোর সংখ্যা পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে পাঁচবার হয় (স্তন্যদান বা ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের সংখ্যা পাঁচ বারের কম হলে উক্ত বিধিনিষেধ কার্যকরী নয়, পৃথক পৃথকভাবে স্তন্যদান করার অর্থ সর্বসাধারণের কাছে যা পৃথক হিসেবে স্বীকৃত)

এন ১২.২-এরূপ অবস্থায়ঃ

(১) এরূপ স্তন্যদায়িনী নার্সের পক্ষে উক্ত শিশু কিংবা তার অধস্তন সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) কারও সাথে বিবাহ বন্ধন স্থাপন করা ‘এক্সক্লুসিভলি’ নিষিদ্ধ (এখানে এক্সক্লুসিভলি বলতে বুঝায় শুধুমাত্র শিশুটি কিংবা তার অধস্তন কেউ, ঊর্ধ্বতন কেউ নয়, অর্থাৎ শিশুটির পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি কেউ নয়)।

(২) সে (স্ত্রীলোকটি) শিশুটির মা হয়ে যায়, এবং শিশুটির জন্যে বিবাহ করা হারাম হয়ে যায় তাকে এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) ঊর্ধ্বতনদেরকে, এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অধস্তনদেরকে (কারণ অধস্তনরা যেন তার নিজের ভাইবোন হয়ে গেছে)।

রিযা সম্পর্কে বেশ কিছু মজাদার হাদিস রয়েছে, যার কিছু নমুনা নিম্নে পেশ করা হলো।

বিবি আয়েশার বোন উম্মে কুলসুম সেলিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে মাত্র তিনবার বুকের দুধ খাওয়ায়; যার দরুন আয়েশার সাথে দেখা করা ইবনে আব্দুল্লাহর জন্যে হারাম ছিল। যদি কুলসুম দশবার খাওয়াত, সেক্ষেত্রে আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ করা তার জন্যে হালাল হয়ে যেতো।

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.৭:

….সেলিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর তাকে (ইয়াহিয়াকে) বলেন যে উম্মে কুলসুম বিন্‌ত আবুবকর আস-সিদ্দিক যখন তাকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন তখন উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তার বোনকে বলেছিলেন – “তাকে দশবার দুধ খাওয়াও, যেন সে আমার সাথে দেখা করার অধিকারী হয়”। সেলিম বলেন – “উম্মে কুলসুম আমাকে তিন বার দুধ খাওয়ানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুতরাং—-আমি আর আয়েশার সাক্ষাৎ পাই নি, কারণ উম্মে কুলসুম দশ বার শেষ করতে পারেন নি”।

অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের সাথে সাক্ষাতযোগ্য হওয়ার উপযুক্ততাঃ তার কাছ থেকে দশ কিস্তি দুগ্ধপান

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.৮:

……উম্মুল মোমেনীন হাফসা আসিম বিন আব্দুল্লাহ বিন সা’দকে তার (হাফসার) বোন ফাতিমা বিন্‌ত উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি তাকে দশবার বুকের দুধ খাওয়ান; তা’হলে সে (আসিম) তার কাছে যেতে পাারবে এবং দেখা করতে পারবে। তিনি (ফাতিমা) তা করেছিলেন, সুতরাং সে (আসিম) তার (হাফসার) সাথে দেখা করতে যেতো।

(লক্ষ্য করুন, দশবার দুধ খাওয়ানোর রীতি পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তীতে পাঁচ বারে নেমে আসে)

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.৩.১৭:

……….আয়েশা বলেন – “কোরানে যা নাজেল হয়েছিল তা এই ‘দশবার বুকের দুধ খাওয়ালে সে হারাম হয়ে যায়’, অতঃপর তা ‘পাঁচবার’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। রাসুলুল্লাহ (দঃ) যখন মারা যান, তখন কোরাণে এখন যেভাবে আছে সেভাবেই ইহা তেলাওয়াত হয়ে আসছিল”।

একথা বলা নিস্প্রয়োজন যে ইসলামি সমাজে রিযা পদ্ধতি শিশুদের জন্যে দুগ্ধ-সরবরাহ সমস্যার এক অনুপম উপায়। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বিয়ের মার্কেটের অবস্থাটা কী দাড়াবে? যদি মায়েরা কিছু সময়ের জন্যেও তার শিশুটিকে ধাত্রী মায়ের হাতে তুলে দেয়, বিয়ের মার্কেট থেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। রিযার কারণে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল বরটিও তার জন্যে একটি কনে যোগাড় করতে হিমশিম খাবেন, এতে কোন সন্দেহ আছে কি?

উপরের মন্তব্য অবশ্য ইসলামি ফস্টারেজ পদ্ধতির চরম দিককে লক্ষ্য করেই। আধুনিক বিশ্ব এখন আদৌ রিযা পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল নয়। যেসব মায়েরা শিশুকে স্বাভাবিক মাতৃদুগ্ধ দিতে অপারগ, বাজারে তাদের জন্যে রয়েছে হরেক রকমের ফর্মুলা মিল্ক। তবে রিযার বিকল্প হিসেবে শিশুকে বোতলজাত দুধ পান করানোর ব্যপারে কোন শারিয়া আইন আছে কিনা, অনেক খুঁজেও আমি তা বের করতে পারি নি। ভেবে দেখুন, সপ্তম শতাব্দীতে মানুষ ফর্মুলা মিল্কের নামও জানত না, বটল-ফিডিংয়ের ধারণাও ছিল না কারও। সুতরাং মরুচারি বেদুঈনরা মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে রিযা পদ্ধতি অনুসরণ করতো। এভাবেই তারা দুগ্ধ সরবরাহের অপ্রতুলতার মোকাবেলা করেছে।

এবার একটি প্রশ্ন । এতক্ষন আমরা ফস্টারেজ পদ্ধতিতে ধাত্রী মায়ের দুধ খাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এখন প্রশ্ন দুগ্ধবতী কোন মেয়ে সাবালক পুরুষকে দুধ খাওয়াতে পারে কি? তৌবা তৌবা। এ কী উদ্ভট প্রশ্ন! ইসলাম এমন জিনিস কখনও অনুমোদন করতে পারে না। ইসলামিস্টরা নিশ্চয়ই বলবেন, শয়তানের প্ররোচনাতেই কেবল এরূপ ধারণা কারও মনে উদয় হতে পারে। বয়ঃপ্রাপ্ত পুরুষ কতৃক নারীদুগ্ধ পানের বৈধতা সংক্রান্ত কোন উল্লেখ আমরা শারিয়া আইনে দেখতে পাই না ঠিক, তবে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলি পড়লে সত্যি সত্যিই হোঁচট খেতে হয়। আসুন, সেরকম কয়েকটি হাদিস নেড়েচেড়ে দেখে নেয়া যাক এখন।

একজন স্ত্রীলোক তরুণ বয়স্ক কোন পুরুষকে তার বুকের দুধ খেতে দিলে তরুণটি তার জন্যে হারাম হয়ে যায়।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩৪২৬:

ইবনে আবু মুলায়েকা বর্ণনা করেছেন যে আল কাশেম বিন মহম্মদ বিন আবু বকর তার কাছে বলেছেন যে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে সাহলা বিন্‌ত সুহাইল বিন আমর আল্লাহর রাসুলের (দঃ) কাছে আসল এবং বলল – রাসুলুল্লাহ। সেলিম (আবু হোজাইফার মুক্তকৃত দাস) আমাদের গৃহে আমাদের সাথে থাকে, এবং একজন পুরুষ যা অর্জন করে তা সে অর্জন করে ফেলেছে (অর্থাৎ সাবালকত্ব), এবং সেই জ্ঞান অর্জন করেছে যে জ্ঞান একজন পুরুষ অর্জন করে (অর্থাৎ যৌনবিষয়ক জ্ঞান)। তদুত্তরে তিনি বললেন – তাকে তোমার বুকের দুধ খাওয়াও, এতে সে তোমার জন্যে মেহরিম হয়ে যাবে। সে (ইবনে মুলায়েকা) বলেন – আমি ভয় বশতঃ এই হাদিসটি বছর খানেকের জন্যে কারও কাছে বলি নি। অতঃপর একদিন কাশেমের সাথে আমার দেখা হলে আমি তাকে বললাম – আপনি আমাকে যে হাদিসটি বলেছিলেন আমি তা কারও কাছে বলি নি। তিনি বললেন – কোন্‌ হাদিস? আমি হাদিসটির কথা উল্লেখ করলে তিনি বললেন – আমার কথা বলে তুমি হাদিসটি বর্ণনা করতে পার যে আয়েশার (রাঃ) কাছ থেকে আমি উহা শুনেছিলাম।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৪, হাদিস নং-৩৪২৮:

জয়নাব বিন্‌ত আবু সালামা হতে বর্ণিতঃ আমি রাসুলুল্লাহর (দঃ) স্ত্রী উম্‌ সালামাকে আয়েশার কাছে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর কসম, আমি এমন তরুণ পুরুষের সামনে যেতে চাই না যে ফস্টারেজ পিরিয়ড পার করেছে (বুকের দুধ খাওয়ার মেয়াদ পার করেছে)। তখন আয়েশা বললেন – ‘কেন? সাহলা বিন্‌ত সুহাইল রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে এসে বলেছিল – ইয়া রাসুলুল্লাহ। আল্লাহর কসম, সেলিম (আমাদের ঘরে) ঢুকে বিধায় আবু হুযাইফার মুখে আমি চরম বিরক্তি দেখেছি। প্রতি উত্তরে আল্লাহর রাসুল (দঃ) বললেন – তাকে তোমার বুকের দুধ খাওয়াও। সে বলল – তার মুখে যে দাড়ি। কিন্তু তিনি (আবারও) বললেন – তাকে বুকের দুধ খাওয়াও, তা’হলেই আবু হুযাইফার মুখে যা আছে দূর হয়ে যাবে (অর্থাৎ বিরক্তি চলে যাবে)। (পরবর্তীতে) সে (সাহলা) বলেছিল – (আমি সেরূপ করেছিলাম) এবং আল্লাহর কসম করে বলছি, এর পরে আর আমি আবু হুযাইফার মুখে (বিরক্তির) চিহ্ন দেখতে পাই নি।

(হুবহু একই ঘটনা নিয়ে আরও দু’টি হাদিস সুনান আবু দাউদঃ ভলিউম-২, হাদিস নং-২০৫৬, পৃ-৫৪৯ এবং মুয়াত্তাঃ সেকশন-৩০, হাদিস নং-১২, পৃ-২৪৫-২৪৬। কলেবর বড় হওয়ায় হাদিসগুলি উল্লেখ করা গেল না)।

এ এক আজব নিয়ম! বক্ষ নারী দেহের সর্বশ্রেষ্ঠ কামকেন্দ্র, পুরুষ তো দূরের কথা যুবতী নারীর উত্তাল বুক দেখে অচেতন গাছপালাও নাকি ভির্মি খায়। রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা কাব্যে পড়েছি, রূপসী চিত্রাঙ্গদা বিজন বনে ফুলগাছের নীচে শুয়ে আছে। পাহাড়ের মতো উচু কিন্তু নবনীর মতো কোমল বস্তু দু’টির মোহনীশক্তি এতই বেশী যে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলগুলিও তা দেখে মুর্ছিত হয়ে পড়ল এবং চিত্রাঙ্গদার বুকে পড়ে আত্মহত্যা করল। “স্তনতটমূলে ফুলগুলি বিছাইল আপনার মরণ শয়ন”। অথচ ইসলামের সমাধান কতোই না সরল। বুক খুলে অনাত্মীয় পুরুষকে এক চুমুক ‘ডুডু’ খাইয়ে দাও, বাস্‌ সে মেহরিম হয়ে গেল। এতে করে হিজাব পড়ার ঝামেলাও অংশত কমে যাবে বলে মনে হয়। কোরাণ-হাদিস যেহেতু আল্লাহপাকের অপরিবর্তনীয় বিধান যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত পালন করে যেতে হবে, সুতরাং সহি হাদিসবর্ণিত এই সুন্দর নিয়মটি আমাদের ইসলামপন্থী ভাইয়েরা তাদের স্ত্রী-কন্যকে পালন করতে উদ্বুদ্ধ করবেন আশা করি।

ক্রীতদাসী কিংবা যুদ্ধবন্দিনী একজন মুসলমান পুরুষের জন্যে পুরোপুরি বৈধ, এদের সাথে যৌনসঙ্গম করায় ইসলামী আইনে কোন বাধা নেই। তবে একজন মুসলিম মেয়ের ক্ষেত্রে নিয়মটা কী? ছেলেদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে একজন মুসলমান মেয়ে কি পারে তার ক্রীতদাসের সাথে সেক্স করতে? না, মেয়েদেরকে এরূপ যৌন-উৎসবে গা ভাসানোর অনুমতি দেয়া হয় নি। সুতরাং সে যখন দেখবে তার স্বামী ক্রীতদাসী কিংবা কোন মালে গনীমত মেয়ের সাথে অবাধে সেক্স করছে, তার মনে ঈর্ষা জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। স্বামীকে এই অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখতে সে কী করতে পারে? সে কি স্বামীকে থামাতে রিযার নিয়ম প্রয়োগ করতে পারে? সে যদি তরুণী ক্রীতদাসীটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ায়, তাহলেই তো ক্রীতদাসীটি তার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে। হঁ্যা পাঠক, ঠিক এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল একবার। একজন ঈর্ষাপরায়ণ স্ত্রী তার তরুণী ক্রীতদাসীকে বুকের দূধ খাইয়ে দিয়েছিল এই আশায় যে তার কামার্ত স্বামীটি আর তার কাছে যেতে পারবে না। কিন্তু হায়, মেয়েটির ফন্দি কাজে লাগে নাই, উল্টো ইসলামী শাস্তির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছিল তাকে। খলীফা উমর মেয়েটিকে প্রহার করার আদেশ দিয়ে মুসলমান পুরুষের জন্যে ক্রীতদাসী ভোগের অপ্রতিহত অধিকার সংরক্ষণ করেছিলেন।

ঘটনাটি আপনার কাছে জন্যে হৃদয়বিদারক বলে মনে হচ্ছে, তাই না? ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ মুয়াত্তা থেকে জেনে নিন। চার মাজহাব সুন্ন্নী মুসলমানদের চারটি স্তম্ভ, এর অন্যতম প্রধান রূপকার হযরত ইমাম মালিক (রঃ) মুয়াত্তা প্রন্থের প্রণেতা। মুয়াত্তা মালেকি মাজহাবের প্রধান আইন বই।

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৩:

আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার বলেন – “লোকদেরকে যেখানে বিচার করা হয় সেখানে একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের সাথে বসা ছিলাম। তখন একজন লোক তার কাছে আসল এবং বয়স্ক লোকদেরকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। উত্তরে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলল-‘একবার এক লোক উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে এসে বলল-‘আমার একটি ক্রীতদাসী আছে, তার সাথে আমি নিয়মিত যৌনসঙ্গম করি। আমার স্ত্রী তার কাছে গিয়ে তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে। এরপর যখন আমি মেয়েটির কাছে গেলাম, আমার স্ত্রী আমাকে বের হয়ে যেতে বলল, কারণ সে নাকি তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে’। উমর লোকটিকে স্ত্রীকে প্রহার করার আদেশ দিলেন এবং (আগের মতোই) সে তার দাসীমেয়েটির কাছে যেতে পারবে বললেন। কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় তা কেবল ছোটদের বেলায়।”

রিযার ধারণা স্বামীস্ত্রীর মধ্যে প্রয়োগ করলে কী হবে? স্বামীর পাকস্থলীতে যদি স্ত্রীর দুধ ঢুকে যায় তখন?

ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ! কোন সুস্থমস্তিষ্কের মুসলমান এরূপ কথা চিন্তাও করতে পারে না। পাঠক, আসুন না একবার চেষ্টা করে দেখি ইসলামের পবিত্র কেতাবগুলিতে এসম্পর্কে কোন বিধান খুজে পাওয়া যায় কিনা।

যদি আপনি আপনার স্ত্রীর বুকের দুধ খান, সেজন্যে স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে না। দুই বছর বা তার চেয়ে কম বয়েসে বুকের দুধ খেলে তবেই কেবল তাদের মধ্যে (দুগ্ধদাত্রী এবং শিশুটি) আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।(৩০.২.১৪)
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৪:

আবু মুসা আল আশারিকে জনৈক লোক জিজ্ঞেস করল – “আমি আমার স্ত্রীর স্তন্য হতে কিছু দুধ খেয়ে ফেলেছি, তা আমার পাকস্থলীতে চলে গেছে”। আবু মুসা বললেন – “আমি তোমাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সে তোমার জন্যে হারাম হয়ে গেছে”। (তখন) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন – “তুমি কী বলছ তা ভেবে দেখ”। আবু মুসা বললেন – “তা’হলে তোমার মত কী”? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন – “দুধ খাওয়ার কারণে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল প্রথম দু’বছরে”। (অর্থাৎ দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশু যখন মা ছাড়া অন্য নারীর দুধ পান করে, তখনই কেবল শিশুটি এবং দুগ্ধদানকারী স্ত্রীলোকটির মধ্যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়)। আবু মুসা বললেন – “এই জ্ঞানী লোকটি যতক্ষণ আমাদের মাঝে থাকবেন, তোমরা আমাকে কোন কিছুর ব্যপারে জিজ্ঞেস করো না”।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ কে ছিলেন? যে দশজন সাহাবি রাসুলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্বেই যাদেরকে বেহেশতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল (আশারা মোবাশ্বেরা সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ জন), আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ তাদের অন্যতম। ইবনে মাসুদ উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, মহম্মদের (দঃ) ঠিক পরেই ছিল তাদের স্থান। এরকম উচ্চমর্যাদাশীল সাহাবির মুখে এ কি কথা, স্ত্রীর দুধ খাওয়ার পরও দাম্পত্যসম্পর্ক টিকে থাকে! আশ্চর্য!

এই রকমই আরেকটি হাদিস দেখুন নীচে।

দুধেল নারীর সাথে সঙ্গম করা হালাল (৮.৩৩৯১)।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৩৯১:

জুদাইমা বিনতে ওয়াহাব আল আসাদিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলকে (দঃ) বলতে শুনেছেনঃ আমি দুধেল স্ত্রীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম যে রোমান এবং পারসিকরা তা করে থাকে এবং শিশুটির তাতে কোন ক্ষতি হয় না। (ইমাম মালিক বলেছেনঃ এই হাদিসের খালাফ বর্ণিত যে ভার্সনটি আছে তাতে যে নামটি আছে তা হচ্ছে জুদামাত আল-আসাদিয়া। তবে ইয়াহিয়া বর্ণিত ভার্সনে যে নামটি আছে সেটিই সঠিক, অর্থাৎ নামটি হবে জুদাইমা আল-আসাদিয়া)।

বয়ঃপ্রাপ্ত স্বামী কর্তৃক দুধেল স্ত্রীর স্তন্য চোষণ করা কিংবা দুধ পান করা কেন অসিদ্ধ নয়, নিম্নে উদ্ধৃত ইমাম মালিকের পংক্তিগুলি হতে তার জবাব মেলে।

যখন কোন বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর দুধ পান করে, সেটা স্বাভাবিক খাদ্য মাত্র, ধাত্রীদুগ্ধ (ফস্টার মিল্ক) নয়!

এ এক আজব আইন! দু’বছরের কম বয়েসী কেউ (শিশু স্বামীও হতে পারে) এক ফোটামাত্র খেলেও তা হলো ফস্টার মিল্ক, দু বছর পার হলেই সেই একই দুধ হয়ে যায় স্বাভাবিক খাদ্য। কী বিচিত্র এই নিয়ম সেলুকেস!

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.১১:

মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া বলেন যে ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ বলেছেন যে তিনি সাইদ আল মুসাবকে বলতে শুনেছেন – “শিশুটি যখন দোলনায় থাকে, তখনই কেবল দুধপান সংক্রান্ত নিয়মকানুন প্রযোজ্য। অন্য সময়ে এ থেকে (বুকের দুগ্ধপান থেকে) কোন রক্তের সম্পর্ক জন্মায় না”।

মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া আমাকে বলেন (ইবনে শিহাবের সূত্রে) যে তিনি বলেছিলেন –

“বুকের দুধ পান, তা সে যত অল্প কিংবা যত বেশীই হোক না কেন, (সম্পর্ককে) হারাম করে ফেলে। দুগ্ধপানের মধ্য দিয়ে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়, তা পুরুষকে মাহরিম করে”।

ইয়াহিয়া বলেন যে তিনি মালিককে বলতে শুনেছেন –

“দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুগ্ধপান, তা সে যত অল্প বা বেশী হোক না কেন, হারাম (সম্পর্কের) সৃষ্টি করে। দুই বছর বয়েসের পরে যদি তা করা হয়, তা সে কম-বেশী যাই হোক না কেন, সেজন্যে কোন কিছু হারাম হয়ে যায় না। এ নেহায়েতই খাদ্যের মতো”।

এবং সর্বশেষে মুক্তাসদৃশ্য নিম্নোক্ত হাদিসটি।

সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-৩৪, হাদিস নং-৪২১০:

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ হতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (দঃ) দশটি জিনিস অপছন্দ করতেনঃ হলুদ রং করা, শাদা চুল কলপ করা, পোষাকের প্রান্তভাগ মাটি ছুয়ে যাওয়া, স্বর্ণের তৈরী আংটি পড়া, সাজ-সজ্জা করে গায়ের মেহরাম পুরুষের সামনে যাওয়া (বাপ, ছেলে, ভাই ইত্যাদি চৌদ্দপ্রকার সম্পর্ক আছে যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম, এরূপ সম্পর্কের ইসলামি নাম মেহরাম; এর বাইরে যাবতীয় সম্পর্ক গায়ের মাহরাম, যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ), পাশা খেলা, যাদু বা ইন্দ্রজাল করা, তাবিজ/কবজ ব্যবহার করা, বীর্যপাতের ঠিক আগ মুহুর্তে যোনির ভেতর হতে লিঙ্গ বের করে আনা – তা সে নিজের স্ত্রী হোক বা অন্য মেয়েলোক হোক (অর্থাৎ উপপত্নী বা যৌনদাসী) এবং এমন মেয়েলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করা যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। তবে তিনি এগুলিকে হারাম বলে ঘোষণা করেন নি।

ইসলামে স্ত্রী স্বামীর দাসী সহবতে বাধা দিতে পারবে নাঃ
 ‘আবদুল্লাহ ইবন দীনার (রহঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলিয়াছেনঃ বয়স্কদের দুধ পানের বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য “দারুল কাযা” (বিচারালয় ইহা ছিল উমর ফারুক (রাঃ)-এর ঘর, তাহার শাহাদতের পর তাহার ঋণ পরিশোধ করার জন্য এই ঘর বিক্রি করা হয়, তাই ইহাকে দারুল কাযা বলা হয়)-এর নিকট এক ব্যক্তি আসিল। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)-এর নিকট তখন আমি উপস্থিত ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) বলিলেনঃ এক ব্যক্তি উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট আসিয়া বলিলেন, আমার এক দাসী ছিল। আমি উহার সহিত সঙ্গম করিতাম – আমার স্ত্রী ইচ্ছাপূর্বক উহাকে দুধ খাওয়াইয়া দেয়, তারপর আমি সেই দাসীর নিকট (সঙ্গমের উদ্দেশ্যে) প্রবেশ করিলাম। আমার স্ত্রী বলিল থাম। উহার সাথে সংগত হইও না আল্লাহর কসম, আমি উহাকে দুধ পান করাইয়াছি। উমর (রাঃ) বলিলেন তোমার স্ত্রীকে শাস্তি দাও, তারপর দাসীর নিকট গমন কর, দুধ পান করানো ছোটদের বেলায় গ্রহণযোগ্য হইয়া থাকে।[মুয়াত্তা মালিক হাদিস নম্বরঃ (1280) অধ্যায়ঃ ৩০]


ইসলামে রঙ্গরস ও কামকেলির জন্যে কুমারী সর্বশ্রেষ্ঠ

ইসলাম মনে করে- কুমারিত্ব স্ত্রীজাতির শ্রেষ্ঠ ভূষণ। বিয়ের আগে কুমারিত্ব খোয়ানোর সমতুল্য আর কোন পাপ নাই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে! ইসলামি সমাজে যথেষ্ট সাবালিকা মেয়েরাও প্রাক-বৈবাহিক সেক্সের কথা চিন্তা করতে পারে না (পুরুষদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্বতন্ত্র নিয়ম। পরবর্তীতে আমরা দেখবো বিয়ের আগেই একজন মুসলমান পুরুষ ক্রীতদাসী অথবা যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যথেচ্ছ যৌনবিহার করতে পারে। তবে মুক্ত নারীদের সাথে বিবাহ-বহির্ভূত সেক্স সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ)। পাঠক মনে রাখবেন, বিবাহ-বহির্ভূত সেক্স ইসলামে একটি গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য, অপরাধীকে এর জন্যে গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হয়। অপরাধী অবিবাহিত/অবিবাহিতা হলে শাস্তি একশত দোররা বা বেত্রাঘাত। অপরাধী বিবাহিত (বিবাহিতা) হলে তার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড। এই বিধান পবিত্র ‘হদুদ‘ আইন নামে পরিচিত; এর অর্থ অপরাধ করে ফেললে এই বর্বর আইনের হাত এড়ানোর কোন উপায় নেই। একবার রায় হয়ে গেলে একে রদ করার ক্ষমতা কারও নেই, যে কোনভাবে তা কার্যকর করতেই হবে। ইসলামি ক্ষমা আর সহিষ্ণুতার কী অপূর্ব নমুনা! আমার বক্তব্য যদি কারও নিকট অতিরিক্ত বিদ্বেষমূলক প্রতীয়মান হয়, তবে তাকে একটি বিষয় স্মরণ করতে বলি। ইসলামের বিধান অনুযায়ী অননুমোদিত সেক্স নরহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। কারণ হত্যাকারী ‘কিয়াস’ (বদলা) বা ‘দিয়া’র (রক্তপণ) বিনিময়ে অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে এরূপ কোন ক্ষমার সুযোগ নেই! ভালোবাসা খুন করার চেয়েও জঘন্য অপরাধ ইসলামে (বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে)! কতো বড় ঘৃণ্য ও অদূরদর্শী আইন, ভাবা যায়!

আমাদের যৌন অঙ্গগুলির ‘প্রকৃত মালিক’ কে? আমরা? না পাঠক, এগুলির প্রকৃত মালিক আমরা নই, এর প্রকৃত মালিক ইসলাম। বিশ্বাস করুন আর না করুন, পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রতিটি মুসলমান নরনারীর যৌন প্রত্যঙ্গের মালিক ইসলাম। এর সবকিছুর, এমনকী এর চারপাশে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ যৌনকেশ গজায় তারও একমেবাদ্বিতীয়ম মালিক ইসলাম! নীচের হাদিসটি পড়ুন। পবিত্র সহিহ হাদিস। মেয়েদের যৌনাঙ্গে উদ্‌গত লোমরাশিকে কীভাবে সামলাতে হবে তার নির্দেশনামা।

দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে স্বামী রাত্রে ঘরে ফিরলে স্ত্রী তার যৌনকেশ উত্তমরুপে শেভ করে রাখবে… [সহিহ বোখারি ৭.৬২.১৭৩]

 

সহি বোখারি: ভলিউম-৭, বুক নং-৬২, হাদিস নং-১৭৩

জাবির বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিতঃ নবী বলেছেন – “যদি তুমি রাত্রিতে (তোমার শহরে) প্রবেশ কর (দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে), সাথে সাথে গৃহে প্রবেশ করো না যে পর্যন্ত না প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রী তার যৌনকেশ শেভ করে এবং আলুলায়িতকুন্তলা তার কেশগুলিকে ভালভাবে বিন্যস্ত করে।” আল্লাহর রসুল আরও বলেন – “হে জাবের, সন্তান লাভের চেষ্টা করো, সন্তান লাভের চেষ্টা করো”।

 

ফিতরার (সৎকাজ) পাঁচটি অনুশীলন-

১) খৎনা করা

২) যৌনকেশ শেভ করা

৩) নখ কাটা

৪) গোঁফকে ছোট করে ছেটে রাখা

৫) বগলের লোম পরিষ্কার করা…..৭.৭২.৭৭৭

 

সহিহ বোখারি: ভলিউম-৭, বুক নং-৭২, হাদিস নং-৭৭৭

আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত:

আল্লাহর রাসুল বলেছেন –

“ফিতরার পাঁচটি নিদর্শনঃ খৎনা করা, যৌনকেশ শেভ করা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছোট করে ছেটে রাখা”।

এখন কেউ হয়তো ভাবতে পারেন নর-নারীর উরুদ্বয়ের মাঝখানে কী আছে তার প্রতি আল্লাহর এত ইন্টারেস্ট কেন? তার তো জরুরী বহুৎ কাজ থাকার কথা! যদি মনে করে থাকেন যে আল্লাহ আপনাকে যৌনাঙ্গ দিয়েছে আপনার ইচ্ছেমতো সেগুলি ব্যবহার করার জন্যে, তা’হলে সে চিন্তা বাদ দিন। আপনার একান্ত নিজস্ব একান্ত গোপন অঙ্গটি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণের ভার আপনার উপর নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, গৃহের নিভৃত কন্দর থেকে সুবিশাল মরুপ্রান্তর পর্যন্ত সর্বত্র তা নির্ধারণ করবে তথাকথিত আল্লাহর আইন নামক একসেট শরিয়া আইন। বিবেকহীন, নিষ্ঠুর, ঘৃণ্য, নিষ্প্রাণ কতগুলো বিধান! এ প্রসঙ্গে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন এসে যায় শরিয়া যদি আল্লাহর আইনই হয় তবে কেন তা মানুষ ছাড়া অন্য জীবজন্তুর যৌনাঙ্গকে কন্ট্রোল করে না? কেন গরু, ছাগল, ঘোড়া, শুয়োর, বাঘ, সিংহ, পাখি, সাপ, কচ্ছপ এক কথায় সমস্ত প্রাণীকুল সম্ভোগ কিংবা প্রজননের জন্যে ইচ্ছেমতো রতিক্রিয়া করতে পারে? দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে পশুদের যতটুকু স্বাধীনতা আছে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের ততোটুকু নেই! ভাবুন একবার! আমার প্রাইভেট পার্টটি আমার একান্ত নিজস্ব, অথচ আমার এই মৌলিক অধিকারটিও ইসলাম কুক্ষিগত করে নিয়েছে। ইসলামের এই চরম বর্বরতার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য একটাই কৌমার্য রক্ষার অজুহাতে প্রাণীর সহজাত এবং প্রাকৃতিক কাম প্রবণতা ও তজ্জনিত তৃপ্তি থেকে বিশেষভাবে মেয়ে প্রজাতিকে জোর করে বঞ্চিত রাখা। যেভাবেই হোক, একজন মুসলমান নারীকে তার কুমারিত্ব বজায় রাখতেই হবে। বিবাহ-বহির্ভূত কোন অনৈসলামিক উপায়ে একজন মুসলমান নারী যৌনতৃপ্তি মেটাবে তা কখনও হতে পারে না। এজন্যে যদি তাকে হত্যা করতে হয় – তব্‌ ভি আচ্ছা।

অক্ষতযোনী কুমারীর প্রতি ইসলামের এই অবসেশন কেন? কাফেরদের দেশে আসার পর এ নিয়ে বিস্তর ভেবেছি আমি। পাপীতাপীদের এই দেশে বারবনিতা, বেশ্যারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরস্পর সম্মতিতে সেক্স এদেশে কোন অপরাধ না, যদিও জোর করে কাউকে ধর্ষণ একটি সিরিয়াস অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এজন্যে এমনকী যাবজ্জীবনও হয়ে যেতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামি প্যারাডাইজগুলিতে বিপরীত লিঙ্গবিশিষ্ট দু’জন নর­নারীর (কিংবা সমলিঙ্গ বিশিষ্ট) মধ্যে যৌনসম্পর্ক পুরোপুরি হারাম, তা সে পরস্পরের সম্মতিক্রমেই হোক কিংবা একজনের অসম্মতিক্রমেই হোক। সবচেয়ে ইম্পর্টান্ট যা তা এই যে একজন মুসলিম নারীর বিবাহ বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক একেবারেই নিষিদ্ধ। মুসলিম দেশগুলি হতে যে সমস্ত মুসলমান পাশ্চাত্যে বাস করতে আসে তারা এদেশের নরনারীর স্বচ্ছন্দ ও অবাধ মেলামেশা দেখে তাই বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। তারা এদেশের জীবনবোধ তথা মূল্যবোধ সঠিকভাবে বুঝতে করতে পারে না। তারা দেখে মেয়েরা বিয়ের আগেই অবাধে ছেলে বন্ধুদের সাথে সেক্স করছে। তারা ভাবে এদেশে সব মেয়েই গণিকা, সস্তা পণ্য। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে যে সেক্স বহির্ভূত সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, তারা তা ভাবতে পারে না। ফলে চারপাশে বিচরণরত কাফের মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক ও প্রফেশনাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে সংকোচ বোধ করে তারা। বিয়ে করার উপযুক্ত হিসেবে যে মেয়েটি একজন খাটি মুসলমানের মন-মানসে ভাসে, সে এক অক্ষতযোনী কুমারী। এইসব কাফের মেয়েদের সাথে এক রাত্রির খেল্‌ চলতে পারে, তাই বলে বিয়ে? নৈব চ নৈব চ। ইসলামের বিধান অনুসারে একজন অবিবাহিত মেয়ে তার প্রজনন যন্ত্রটিকে অবশ্যই তালাচাবি দিয়ে রাখবে। চাবির মালিক একমাত্র স্বামী, আর কেউ নয়।

আল্লাহ ও ধর্মের নামে মেয়েদেরকে যৌনসুখ বঞ্চিত রাখার কেন এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা তা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। অবশেষে মুসলিম সমাজে সবচেয়ে খাঁটি এবং অথেনটিক বলে পরিচিত সহি বুখারি ও সহি মুসলিম শরীফের কিছু অমুল্য হাদিস হস্তগত হয় আমার। এগুলি পড়ে বুঝতে পারলাম কেন আল্লাহপাক বিয়ের আগ পর্যন্ত মুসলমান মেয়েটির যোনীপ্রদেশ অক্ষত রাখতে এত আগ্রহী। পাঠক, আসুন হাদিস কয়টির উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিই-

সহিহ বুখারি: ভলিউম-৭, বুক নং-৬২, হাদিস নং-১৬

জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত- আমরা একবার নবীর সাথে একটি ‘গাজওয়া’ (বিধর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানকে গাজওয়া বলা হয়) হতে ফিরছিলাম। আমি আমার উটটিকে খুব দ্রুত চলনা করতে চাইলাম। এটি ছিল অত্যন্ত অলস একটি উট। সুতরাং আমার পেছন হতে একজন আরোহী এসে তার হস্তস্থিত বর্শা দ্বারা খোঁচা মারতেই আমার উটটি এত দ্রুত ছুটতে শুরু করলো যে মনে হবে এর চেয়ে দ্রুতগামী উট আর নেই। দেখ! আরোহীটি ছিলেন স্বয়ং নবী। তিনি বললেন – ‘এত তাড়া কীসের তোমার’? আমি বললাম – আমি নূূতন বিয়ে করেছি। তিনি বললেন – ‘তোমার বউ কুমারী না মেট্রন (বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা)’? আমি বললাম – সে একজন মেট্রন। তিনি বললেন – ‘কচি মেয়ে বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তুমি তার সাথে খেলতে পারতে এবং সে তোমার সাথে খেলতে পারত’। যখন আমরা (মদীনায়) প্রবেশ করতে যাচ্ছি, নবী বললেন – ‘অপেক্ষা করো যেন তুমি রাত্রিবেলা (মদীনায়) প্রবেশ করতে পার। তাহলে মহিলা তার অবিন্যস্ত চুল আঁচড়িয়ে নেয়ার অবকাশ পাবে এবং যে নারীর স্বামী অনেকদিন অনুপস্থিত ছিল সে তার যৌনকেশ শেভ করার অবকাশ পাবে’।

সহিহ বুখারি: ভলিউম-৩, বুক নং-৩৮, হাদিস নং-৫০৪

জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত- আমি নবীর সাথে এক অভিযান থেকে ফিরছিলাম। আমার সওয়ারি উটটি ছিল মন্থর গতিসম্পন্ন এবং সবার পেছনে। […] যখন আমরা মদীনার সমীপবর্তী হলাম, আমি (দ্রুত) আমার (বাড়ীর) পথ ধরলাম। নবী বললেন – ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ’? আমি বললাম – ‘আমি একজন বিধবাকে বিয়ে করেছি’। তিনি বললেন – ‘তুমি কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তোমরা একে অপরের সাথে রঙ্গরস করতে পারতে’। […..]

সহিহ মুসলিম: বুক নং- ০০৮, হাদিস নং-৩৫৪৯:

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত- …..আল্লাহর রসুল (দঃ) আমাকে বললেন – ‘তুমি কি বিয়ে করেছো’? আমি বললাম – হ্যাঁ । তিনি বললেন – ‘সে কি কুমারী না পূর্ব-বিবাহিতা (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)’? আমি বললাম – পূর্ব-বিবাহিতা। তখন তিনি বললেন – ‘কুমারীর সাথে মজা করার স্বাদ থেকে বঞ্চিত রইলে কেন’? শু’বা বলেন – এই ঘটনার কথা আমি আমর বিন দিনারের কাছে উল্লেখ করলে আমর বলেছিলেন – আমিও জাবেরের মুখে বর্ণনাটি শুনেছি। (আল্লাহর রসুল) তাকে বলেছেন – তুমি একজন বালিকা বিয়ে করলে না কেন? তা’হলে তুমিও তার সাথে খেলতে পারতে, সেও তোমার সাথে খেলতে পারত।

পাঠক, উপরের হাদিস তিনটি ভালভাবে পাঠ করুন। কী মনে হয় আপনার? কেউ একজন দয়া পরবশ হয়ে বিধবা বিয়ে করলো, মুহাম্মদের (দঃ) প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তার অবস্থাটা কী দাড়ালো তা’হলে? তার বিধানকে ফলো করে কেউ যদি অতি অল্পবয়েসী মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে ক্ষেপে উঠে, তাকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় কী? যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে গণ্য করাও মুশকিল, কারণ সে আল্লাহর রসুলের (দঃ) নির্দেশ পালন করেছে মাত্র। স্বয়ং রসুলের (দঃ) হেরেমে এরূপ একজন কুমারী ছিল। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন যে কম বয়েসী কুমারীর সাথে সহবাসে মজাই আলাদা। বালিকা শিশুদের সাথে সহবাসে আল্লাহপাকেরও নিশ্চয়ই সম্মতি রয়েছে। কোরানে আছে – আল্লাহ তার বিশ্বাসী বান্দাদের মনোরঞ্জনের জন্যে অক্ষতযোনী কুমারীদের অক্ষয় ভাণ্ডার প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রমাণ স্বরূপ পবিত্র কোরানের গোটাকয়েক আয়াত এখানে উদ্ধৃতি দেয়া হলো। মেয়েদের কুমারিত্বের প্রতি আল্লাহপাকের কতোটুকু মোহ এ থেকে মোটামোটি তার একটি চিত্র পাওয়া যাবে।

সুরা দুখান (৪৪) ৫১-৫৪

“নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে, উদ্যানরাজি ও নির্ঝরিণী সমূহে। তারা ব্যবহার করবে পাতলা ও কিংখাবখচিত রেশমী বস্ত্র, পরস্পর মুখোমুখী হয়ে বসবে। এরূপই হবে এবং তাদের জন্যে রয়েছে আয়তলোচনা স্ত্রীগণ”।

সুরা আর-রহমান (৫৫)৫৪-৫৮

“তারা সেথায় রেশমের আবরণবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। উভয় জান্নাতের ফল ঝুলবে তাদের সামনে। অতএব তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? তথায় থাকবে আয়তলোচনা রমণীগণ, কোন মানব ও জ্বিন পুর্বে তাদেরকে ব্যবহার করে নাই।….প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ”।

৭০-৭৪

“সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ। অতএব তোমাদের পলনকর্তার কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? তাবুতে উপবেশকারী হুরগণ।….কোন মানব ও জ্বিন পুর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি”।

সুরা ওয়াক্কিয়া (৫৬): ৩৫-৩৮

“আমি জান্নাতের রমণীদিগকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা। ডান দিকের লোকদের জন্যে”।

সুরা আন্‌-নাবা (৭৮): ৩১-৩৪

“পরহেজগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুরবীথি। সমবয়স্কা, ইন্দ্রিয়তৃপ্তিকারী তরুণী এবং পূর্ণ পানপাত্র”।

(কোরানুল করিমঃ মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন কর্তৃক অনূদিত)

উপরের আয়াতগুলি পড়লে বুঝা যায়, কেন অল্পবয়স্কা কুমারী বিয়ে করা উত্তম। কারণ আল্লাহপাক অল্পবয়েসী কুমারী মেয়ে পছন্দ করেন, তাই তিনি তার প্রিয় বান্দাদের মনোরঞ্জনের জন্যে বেহেশতে তার অঢেল সরাবরাহ নিশ্চিত করেছেন। এজন্যেই বোধ হয় পরস্যের দার্শনিক-কবি উমর খৈয়াম গেয়েছিলেন-

“স্বর্গপুরের হর্মে নাকি দেদার হুরি বসত করে, সেথায় দেখ অঢেল সুরার ঊর্মিমুখর ঝর্ণা ঝরে”।

আল্লাহর পাক কালামেও ঠিক অনুরূপ বিবরণই রয়েছে।

 

একরাত্রির খেলা

কথায় আছে, লাখ কথা খরচ করে একটি বিয়ে হয়। বিয়েতে শুধু যে লাখো কথা আর সুদীর্ঘ সময় লাগে তাই নয়, দেন মোহরের বোঝাটাও কম ভারী নয়। এতসব ঝামেলা এড়াতে অনেককে তাই ‘কুইক সেক্সের’ শরণ নিতে দেখা যায়। পৃথিবীর প্রাচীনতম এই পেশাটিতে রমণীর অভাব কোনকালে ছিল না। একরাত্রির অতিথিদের আনন্দ দিতে তারা এক পায়ে খাড়া। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এই সেক্সের নাম ‘এক রাত্রির খেল্‌‘ – ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই সহজ উপায়টির সমতূল্য বিধান পবিত্র ইসলামেও আছে!

এক রাত্রির খেলার ইসলামি পারিভাষিক নাম – ‘মু’তা’। মু’তা ম্যারেজ। এই বিয়ের নিয়মানুযায়ী একজন পুরুষ কোন মেয়ের সাথে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে বিয়ের চুক্তি করে অনায়াসে তার সাথে সহবাস করতে পারে। যদিও সুন্নি সমাজে এই ধরনের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, শিয়াদের মাঝে এখনও তা চালু আছে। মু’তা বিয়ের মাধ্যমে সন্ধ্যেবেলায় একটি মেয়েকে বিয়ে করে সকালবেলায় কিকআউট করা খুবই সম্ভব। তালাক-ফালাকের কোন ঝামেলা নাই। মু’তা বিয়ে একসাথে ঘুমানোর একটি চুক্তিমাত্র, এর বেশি কিছু নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, একসাথে চার জনের বেশি বউ রাখা যদিও শরিয়তে নিষিদ্ধ, তবে মু’তা বা টেম্পোরারি বিয়ের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য নয়। কোন বিশেষ সময়ে একজন মুসলমান কতোজন অস্থায়ী বউ রাখতে পারবে, তার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নাই। আধুনিক ভাষায় এরই নাম ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’। মু’তা বিয়ের কোন টাইম লিমিট নাই। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ‘এক রাত্রির খেল্‌’ প্রথাটি পুরোপুরি ইসলাম সম্মত। মু’তা বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমান ইচ্ছে করলে যে কোন সংখ্যক নারীর সাথে দিনরাত সঙ্গমসুখ উপভোগ করতে পারে। কথিত আছে যে নবীর (দঃ) দৌহিত্র হযরত হাসানের (রাঃ) বৈধ স্ত্রীদের অতিরিক্ত তিন শ’ জন সেক্স পার্টনার ছিল (ইসলামী পরিভাষায় অস্থায়ী স্ত্রী)। এদিক বিবেচনা করলে হযরত হাসানকে সে যুগের ইসলামি প্লেবয় আখ্যা দেয়া যেতে পারে। আমার বর্ণনায় আপনার সন্দেহ হচ্ছে? তাহলে নীচের সহি হাদিসটি লক্ষ করুন, দেখুন একরাত্রির খেলের জন্যে সঙ্গিনী বা উপপত্নী জোগাড় করার ইসলামি নিয়ম কী?

সহিহ মুসলিম: বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩২৫৩

রাবি বিন ছাবরা হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের সময় তার পিতা রাসুলুল্লাহর (দঃ) সাথে এক যুদ্ধে শরীক হয়। ‘আমরা সেখানে পনের দিন অবস্থান করি। আল্লাহর রসুল (দঃ) আমাদিগকে অস্থায়ী বিয়ের অনুমতি দেন। সুতরাং আমি আমার গোত্রেরই এক লোকের সাথে (মেয়ে খুঁজতে) বেরিয়ে পড়ি। আমার সঙ্গীর চেয়ে আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম, পক্ষান্তরে সে দেখতে ছিল প্রায় কদাকার। আমাদের উভয়েরই পরণে ছিল একটি করে উত্তরীয় (cloak)। আমার উত্তরীয়টি ছিল একেবারেই জীর্ণ, আমার সঙ্গীরটি ছিল আনকোরা নূতন ।..শহরের একপ্রান্তে একটি মেয়ে দৃষ্টিগোচর হলো আমাদের। অল্পবয়েসী চমৎকার একটি মেয়ে, ঠিক যেন মরাল গ্রীবা চটপটে এক মাদী উট। আমরা বললাম – আমাদের মধ্যে একজন তোমার সাথে অস্থায়ী বিয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই, তা কি সম্ভব? সে বলল – দেনমোহর বাবদ তোমরা আমাকে কী দিতে পার? আমরা উভয়েই তার সামনে আমাদের স্ব স্ব উত্তরীয় মেলে ধরলাম। সে আমাদের উভয়ের উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিল। আমার সঙ্গীও মেয়েটির উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিল এবং বলল – ওর উত্তরীয় ছিড়ে গেছে, পক্ষান্তরে আমার উত্তরীয়টি একেবারে নূতন । মেয়েটি অবশ্য বলল – এই উত্তরীয়টি (পুরাতনটি) গ্রহন করায় ক্ষতি নাই। কথাটি সে দু’তিনবার বলল। সুতরাং আমি তার সাথে অস্থায়ী বিয়ে সম্পন্ন করে ফেললাম এবং যে পর্যন্ত আল্লাহর রসুল প্রথাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা না করেন, সে পর্যন্ত এই সম্পর্ক আমি ছিন্ন করিনি।

মু’তা’র শাব্দিক অর্থ উপভোগ। (ডিকশনারি অব ইসলাম – টি.পি.হাফস্‌, পৃঃ-৪২৪)। প্রায়োগিক অর্থ – কিছু অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যে অস্থায়ী বিবাহ। এই ধরনের বিয়ে ইরানে শিয়াদের মাঝে এখনও প্রচলিত আছে (ম্যালকম’স পারশিয়া, ভলিউম-মম, পৃঃ-৫৯১), তবে সুন্নিরা এই ধরনের বিয়েকে অবৈধ বলে থাকে। আওতাস (Autas) নামক স্থানে নবী এই ধরনের বিয়ে করতে অনুমতি দিয়েছিলেন যা নাকী মুসলিম সম্প্রদায়ের নৈতিক মর্যাদার ওপর নিঃসন্দেহে এক গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সুন্নিদের দাবি পরবর্তীতে খায়বার নামক স্থানে প্রথাটি বাতিল করে দেন নবী। (মেশকাত, বুক নং-xii, চ্যাপ্টার-iν৯৫৭;) ।

 

যৌন বিকৃতি/ অন্ধ–মোহগ্রস্থতা

ধরুন রাস্তায় আপনি একটি মেয়ে দেখলেন। অপরূপ সুন্দরী, পুর্ণ যৌবনবতী, সেক্সি। মেয়েটিকে দেখে আপনি দারুণভাবে কামোত্তেজিত হয়ে পড়লেন। কী করবেন আপনি? এই অবস্থায় ইসলামি সমাধান চটপট ঘরে ফিরে গিয়ে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করুন। বর্তমান যুগে রাস্তা-ঘাট অফিস-আদালত সর্বত্র পর্নোগ্রাফি তথা কামোত্তেজক জিনিশের ছড়াছড়ি। ম্যাগাজিনের শোভন মলাটে নগ্ন নারীমূর্তি দেখে কতোবার যে আপনাকে ঘরে দৌড়াতে হয় কে জানে? এ প্রসঙ্গে যে হাদিসটি আছে তার বিবরণ-

সহিহ মুসলিম: বুক নং-৮, হাদিস নং-৩২৪০

জাবির হতে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসুল (দঃ) একবার একজন স্ত্রীলোক দেখতে পেলেন। সুতরাং তিনি তাড়াতাড়ি তার স্ত্রী জয়নবের নিকট গেলেন এবং তার সাথে সঙ্গমে মিলিত হলেন। জয়নব তখন একটি চামড়া ট্যান করছিলেন। সঙ্গম শেষে রাসুল সাহাবীদের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন – সাক্ষাৎ শয়তান মেয়ের রূপ ধরে আমার কাছে আসল। সুতরাং তোমরা কেউ যদি এরূপ মেয়ের মুখোমুখী হও, তৎক্ষনাৎ নিজের স্ত্রীর নিকট চলে যাবে। এভাবেই কেবল অন্তরের কু-বাসনার নিবৃত্তি সম্ভব।

 

ফরজ গোসল

যদি কোন ব্যক্তি যৌন বিষয়ক চিন্তার প্রকোপে অত্যাধিক কামোত্তেজিত হয়ে পড়ে তাকে ফরজ গোসল করে পাক-পবিত্র হতে হবে (যৌন সঙ্গমের পর বাধ্যতামুলকভাবে সর্বাঙ্গ ধৌত করার ইসলামি নাম ফরজ গোসল)। একবার ভাবুন, এই নিয়ম ফলো করতে হলে দিনে কতোবার আপনাকে ঘরে দৌড়াতে হবে এবং স্ত্রীর যৌনাঙ্গর সাথে আপনার খৎনা করা প্রত্যঙ্গটিকে মিলাতে হবে? যৌনমিলনের পর কীভাবে নিজেকে পাক-পবিত্র করতে হয়, সে সম্পর্কে একটি হাদিস-

সহিহ মুসলিম: বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬৮৪

আবু মুসা হতে বর্ণিতঃ এক দল মুহাজির এবং এক দল আনসারের মধ্যে একবার মতবিরোধ দেখা দেয়। (মতবিরোধের কারণ ছিল এই যে) জনৈক আনসার বলেছিল – গোসল ফরজ হবে কেবলমাত্র তখনই যদি (যৌন সঙ্গমের ফলে) বীর্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু মুহজিরগণ বলেন যে মেয়েলোকের সাথে সঙ্গমে মিলিত হলেই গোসল ফরজ হয়ে যায় (বীর্যপাত ঘটুক আর নাই ঘটুক, তাতে কিছু এসে যায় না)। আবু মুসা বললেন – ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক নিয়ম বাৎলে দেব। তিনি (আবু মুসা) বলেন – আমি সেখান থেকে উঠে আয়েশার নিকট গেলাম এবং তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থণা করলাম। অনুমতি মিলল এবং আমি তাকে প্রশ্ন করলাম – উম্মুল মোমেনীন, আমি আপনাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই যা বলতে আমারই লজ্জা লাগছে। তিনি বললেন – যে কথা তুমি তোমার জন্মদাত্রী মাকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেতে না, আমাকেও তুমি তা জিজ্ঞেস করতে পার, আমি তোমার মায়ের মতোই। এ কথার পর আমি তাকে বললাম – একজন পুরুষের উপর গোসল ফরজ হয় কখন? উত্তরে তিনি বললেন – তুমি ঠিক জায়গায়ই এসেছ। রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন – কোন ব্যক্তি যদি (স্ত্রীলোকের) চারটি প্রতঙ্গের উপর সওয়ার হয় এবং খৎনা করা অঙ্গগুলি পরস্পর স্পর্শ করে, তখনই গোসল করা ফরজ হয়ে দাঁড়ায়।

পুরুষটির চরম তৃপ্তি হলো কিন্তু সঙ্গিনীর হলো না (কিংবা বিপরীত ঘটলো– মেয়েটির অর্গাজম হলো, পুরুষটির হলো না)।

অসমাপ্ত যৌনতৃপ্তির ক্ষেত্রে ইসলামি সমাধান কী, নীচের হাদিস দু’টি হতে তার উত্তর পাওয়া যেতে পারে। পাঠক, হাদিস দু’টি পাঠ করুন এবং আপনার বেডরুমেও কোনদিন এরূপ সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকলে তার সাথে মিলিয়ে নিন।

সহি মুসলিম: বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬৭৭

উবেই ইবনে ক্কাব হতে বর্ণিতঃ আমি একজন লোক সম্পর্কে রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে জিজ্ঞেস করি। লোকটি স্ত্রীর চরম তৃপ্তির আগেই উঠে পড়তো। এ কথা শুনে তিনি (নবী) বললেন – তার উচিত স্ত্রীর (যৌনাঙ্গ হতে নিঃসৃত) ক্ষরণ ধুয়ে ফেলা, অতঃপর অজু করে নেয়া ও নামাজ পড়া।

সহি মুসলিম: বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬৮০

জায়িদ বিন খালিদ বলেছেন যে তিনি উসমান ইবনে আফফানকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেছিলেন – একজন লোক স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হলো, কিন্তু স্ত্রী চরম তৃপ্তি পর্যন্ত পৌছুতে পারল না। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? উসমান বললেন – নামাজের জন্যে সে যেভাবে অজু করে এক্ষেত্রেও তার তাই করা উচিত, এবং নিজের যৌনাঙ্গটিও ধুয়ে ফেলা উচিত। উসমান আরও বলেন – আমি এ কথা রসুলুল্লাহর (দঃ) মুখ থেকে শুনেছি।
ইসলাম যুদ্ধে অধিকৃত নারীদের সাথে অবাধ সেক্স করার অনুমতি দেয়। এই নিয়ম ইসলামের সোনালি যুগে প্রচলিত ছিল (এবং অন্ততঃ তাত্ত্বিকভাবে সে আইন এখনও বহাল আছে)। স্বয়ং রাসুলে করিম এই নিয়ম পালন করেছেন। কোরানের যে সমস্ত আয়াতে এই ধরণের সেক্স করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তার গোটাকয়েক নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো।

 ৪.২৪ (সুরা নিসা):

এবং তোমাদের জন্যে অবৈধ করা হয়েছে নারীদের মধ্যে সধবাগণকে (অন্যের বিবাহিত স্ত্রীগণকেও); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন, এতদ্ব্যতীত তোমাদের জন্যে বৈধ করা হয়েছে যে, তোমরা স্বীয় ধনসম্পদের দ্বারা বিবাহবদ্ধ করার জন্যে তাদেরকে অনুসন্ধান কর ব্যভিচারের জন্যে নয়, অনন্তর তাদের জন্যে যে ফলভোগ করেছ তজ্জন্য তাদেরকে তাদের নির্ধারিত পাওনা প্রদান কর এবং কোন অপরাধ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পর সম্মত হও, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী বিজ্ঞানময়।

০২৩.০০১–০০৫ (সুরা মুমেনুন):

০১- অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ।

০২- যারা বিনয়নম্র নিজেদের নামাজে।

০৩- যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে।

০৪- যারা যাকাত দানে সক্রিয়।

০৫- যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।

০৬- নিজের স্ত্রীগণ ও অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।

৭০.২৫-৩৫ (সুরা মা’আরিজ):

০২৫- প্রার্থী ও বঞ্চিতের,

০২৬- এবং (যারা) কর্মফল দিবসকে সত্য বলে জানে,

০২৭- আর যারা তাদের প্রতিপালকের শাস্তি সম্পর্কে ভীত সন্ত্রস্ত

০২৮- নিশ্চয়ই তাদের প্রতিপালকের শাস্তি হতে নিঃশঙ্ক থাকা যায় না

০২৯- এবং যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে,

০৩০- তাদের পত্নীগণ এবং অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না

০৩১- তবে কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমা লঙ্ঘনকারী,

০৩২- এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে,

০৩৩- আর যারা তাদের সাক্ষ্য দানে অটল,

০৩৪- এবং নিজেদের নামাজে যত্নববান

০৩৫- তারা সম্মানিত হবে জান্নাতে;

উপরোক্ত আয়াত অনুসারে একজন মুসলমান পুরুষ, সে বিবাহিত হোক আর অবিবাহিত হোক, ক্রীতদাসী কিংবা যুদ্ধে বন্দীকৃত নারীদের সাথে অবাধ যৌনসঙ্গম করতে পারে। আয়াতে বর্ণিত ‘তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী’ (আরবী ‘মালাকুল ইয়ামিন’, ইংরেজী ‘your right hand possesses‘) – এই কথার অর্থ হচ্ছে অধিকারভুক্ত দাসী বা যুদ্ধবন্দিনী। এটি একটি আরবী বাগধারা। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্যযোগ্য। পবিত্র কোরানের অধিকাংশ বাংলা তরজমায় দেখা যায় তরজমাকারীরা এভাবে তরজমা করেছেন-‘তোমাদের পত্নী এবং অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত’। তারা পত্নী বলে একবচনে অনুবাদ করেছেন, পত্নীগণ বলেন নি। মুল আরবী আয়াতে আছে ‘আজওয়াজ’ শব্দটি যা জাওজ শব্দের বহুবচন। জাওজ হলো পত্নী আর আজওয়াজ হলো পত্নীগণ। বাংলা তরজমাকারীরা কেন পবিত্র গ্রন্থের তরজমায় এরূপ করেছেন তা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে ইংরেজি অনুবাদকারীরা তা করেন নি, স্পষ্টভাবে ওয়াইভস (wives) বলে অনুবাদ করেছেন। পাঠকরা যাতে বাজারে প্রচলিত বাংলা অনুবাদ গ্রন্থগুলি পড়ে কোনপ্রকার ধন্দে না পড়েন, তাই এতো কথা বলা।

সে যাহোক, বর্তমান জমানায় যুদ্ধবন্দী কারা?

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেহেতু কাফেরদের সাথে চিরস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে বলে ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সুতরাং কাফেরদের দেশের সমস্ত রমণীই অন্তত তাত্ত্বিকভাবে এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে কাফেরদের দেশে বসবাসরত একজন মুসলমান (তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক না কেন) যে কোন সংখ্যক কাফের রমণীর সাথে ঘুমাতে পারে (অর্থাৎ সেক্স করতে পারে)। এই কাজের জন্যে জিনা বা ব্যভিচারের দায়ে লজ্জিত বা দণ্ডিত হওয়ার বিন্দুমাত্রও শঙ্কার কারণ নাই তার। অনেক ইসলামপন্থী হয়তো গর্ব করে বলেই বসবেন যে এইসব কাফের নারীরা মুসলমান পুরুষের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে এটা তাদের চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য।

একবার থাইল্যান্ডের এক মেসাজ পার্লারে কয়েকজন পাক্কা মুসলমানের সাথে দেখা হয় আমার। থাই যৌনকর্মীদের সাথে তারা কী করছে আমার এই প্রশ্নের জবাবে তারা অম্লানবদনে বলল যে থাই রমণীদের সাথে সেক্স করা দোষের কিছু না। কারণ থাইল্যান্ড কাফেরদের দেশ আর কাফের রমণীদের সাথে সেক্স করা পুরোপুরি ইসলামসম্মত।

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে মুসলমানরা কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, বিশ্বের সমস্ত অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে মুসলমানরা। যুদ্ধাবস্থায় সমস্ত কাফের রমণীরাই গণিমতের মাল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য, তা সে যেখানেই থাকুক না কেন। তারা আমাকে আরও বলে যে, কোন মুসলমান যদি অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করতে যায়, অমুসলিম রমণী ভোগ করায় তার কোন দোষ নেই, একাজ পুরোপুরি শরিয়ত সম্মত। তাদের কথাকে তখন মোটেও আমলে নেই নি আমি। ভেবেছিলাম এইসব মোল্লারা ইসলামের কিছুই জানে না, নিজেদের ভোগবাসনা চরিতার্থ করতে যা তা বানিয়ে বলছে। এর কয়েকবছর পর আমি ইসলাম সম্পর্কে স্টাডি করতে মনস্থ করি। গভীরভাবে অধ্যয়নের পর বিস্ময়ে যেন বোবা হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম, থাইল্যান্ডে যাদেরকে আমি কাঠমোল্লা ভেবে মনে মনে গালি দিয়েছিলাম, তারা ঠিক কথাটিই বলেছিল সেদিন। জীবন্ত ইসলাম হিসেবে মুসলমানরা যা মান্য করে থাকে, সেই শারিয়ার বাইরে কিছুই করে নি তারা! বিশ্বাস হচ্ছেনা তো? তা’হলে শারিয়া বর্ণিত নীচের আইনটি পড়ে দেখুন।

বিদেশের মাটিতে জিনা বা ব্যভিচার করলে কোন শাস্তি নাই (রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৫)

বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটন (Committing whoredom) শাস্তিযোগ্য নয়, যদি কোন মুসলমান বিদেশের মাটিতে কিংবা বিদ্রোহী অধুøষিত অঞ্চলে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়, এবং অতঃপর মুলিম রাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তন করে, তার উপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না, এই কারণে যে একজন ব্যক্তি, সে যেখানেই থাকুক না কেন, মুসলিম ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ করার কারণে, সেখানকার (অর্থাৎ মুসলিম রাষ্ট্রের) সমস্ত বাধ্যবাধকতা পালন করে চলতে নিজেকে দায়বদ্ধ করেছে। এর পক্ষে আমাদের পণ্ডিতজনদের (doctors) দ্বিবিধ যুক্তি রয়েছেঃ

প্রথমত: নবী বলেছেন যে, “বিদেশের মাটিতে শাস্তি প্রদান করা যায় না”

এবং দ্বিতীয়ত: শাস্তিপ্রদানের বিধানগুলির অভিপ্রায় হচ্ছে (অপরাধ) রোধ করা কিংবা সতর্ক করা;

এক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে একজন মুসলমান ম্যাজিস্ট্রেটের কোন কর্তৃত্ব নাই, সুতরাং বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের দায়ে যদি কোন ব্যক্তির ওপর শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা হয়, তা’হলে উক্ত বিধান অর্থহীন, কারণ বিধানের উদেশ্যই হচ্ছে যেন শাস্তি কার্যকরী হতে পারে; এবং যেহেতু বিদেশের মাটিতে ম্যাজিস্ট্রেটের কর্তৃত্ব নাই, শাস্তি কার্যকর করা অসম্ভব; যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের দায়ে সেখানে শাস্তিপ্রয়োগযোগ্য নয়; এবং উক্ত ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে বিদেশের মাটি হতে মুসলমান রাষ্ট্রে আগমন করে, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না; কারণ বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সময় যেহেতু শাস্তি প্রদান করা হয় নাই, পরবর্তীতে তা প্রদান করা যাবে না।

উপপত্নীপ্রথা (Concubinage):

‘ডিকশনারি অব ইসলাম’ (রেফারেন্স-৬, পৃষ্ঠা-৫৯) গ্রন্থ অনুসারে উপপত্নী বা ‘কঙ্কুবাইন’ শব্দের আরবী প্রতিশব্দ সুরিইয়া, বহুবচনে সারারি। ইসলাম ধর্ম উপপত্নী প্রথা পালন করার পক্ষে খোলা লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে। একটিমাত্র শর্ত আছে, উপপত্নীটির স্ট্যাটাস হতে হবে দাসী। স্বাধীন নারীকে উপপত্নী করা চলবে না।

দাসী ৩ ধরনের-

(১) যুদ্ধবন্দিনী

(২) বাজার হতে নগদ মূল্যে ক্রয় করা দাসী এবং

(৩) দাসীর সন্তানসন্ততি (দাসীর সন্তানসন্ততিও পুরুষানুক্রমিকভাবে দাস বা দাসী)।

যুদ্ধবন্দিনী যদি বিবাহিতাও হয়, কোরানের নিয়মানুযায়ী (৪:২৮) তাদের ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে বিজয়ী মুসলমানদের হাতে সমর্পিত।

“তোমাদের জন্যে অবৈধ করা হয়েছে নারীদের মধ্যে সধবাগণকে (অন্যের বিবাহিত স্ত্রীগণকেও); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণহস্ত যাদের অধিকারী আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন”।

এই উপপত্নী প্রথা স্বয়ং মহম্মদ (দঃ) কর্তৃক স্বীকৃত এবং নিজের জীবনে তিনি তা পালনও করে গেছেন। বানু কুরাইজা নামক ইহুদি গোত্রের সাথে যুদ্ধান্তে (৫ হিজরি সালে) তিনি রায়হানা নাম্নী এক সুন্দরী ইহুদিনীকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করেন। মিশরের শাসনকর্তা কর্তৃক উপহার হিসেবে প্রদত্ত এক খ্রিস্টান ক্রীতদাসীও তার উপপত্নী ছিল যার নাম ছিল মারিয়া কিবতি।

জালালানের (কোরানের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাখ্যাকারক) উদ্ধৃতি দিয়ে ডিকশনারি অব ইসলাম লিখেছে (রেফারেন্স-৬, পৃ-৫৯৫-৬০০):

(১) দাসী যদি বিবাহিতাও হয়, তাকেও অধিকারে নেয়ার ক্ষমতা আছে মনিবের। সুরা ৪:২৮;

“তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন”।

এই আয়াতের ব্যখ্যায় জালালান বলেন-

“অর্থাৎ, যাদেরকে তারা যুদ্ধের ময়দানে আটক করেছে, তাদের সাথে সহবাস করা তাদের জন্যে বৈধ, যদি তাদের স্বামীগণ দারুল হরবে জীবিতও থাকে”

(দারুল হরব অর্থ- অমুসলিম রাষ্ট্র বা দেশ)।

(পাঠক-পাঠিকাবর্গ। ডিকশনারি অব ইসলাম গ্রন্থটিতে ৪:২৮ নং আয়াত হিসেবে যে আয়াতটির উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, আসলে সেটি কোরানের ৪:২৪ নং আয়াত (সুরা নিসা)। মাওলানা ইউসুফ আলী, পিকথল এবং যে কোন বাংলা তরজমায় একে ৪:২৪ আয়াত হিসেবেই পাওয়া যাবে। এই অধ্যায়ের প্রথমেই উক্ত আয়াতটির বর্ণনা রয়েছে।)

ইসলামপন্থীরা বয়ান করে থাকেন যে আদি ইসলামের স্বর্গীয় ও আধ্যাত্মিক রূপে মুগ্ধ হয়েই জিহাদিরা মহম্মদের (দঃ) সঙ্গে গাজওয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল (গাজওয়া শব্দের অর্থ নারী ও ধনসম্পত্তি লুটপাট করার জন্যে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান)। কিন্তু মহম্মদের (দঃ) জীবনী পাঠ করলে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ভেসে উঠে আমাদের সামনে। এইসব লুণ্ঠনকারী দস্যুদের মূল আকর্ষণ ছিল কাফের রমণীদের সাথে অপরিমিত সেক্স করা এবং তাদের ধনসম্পত্তি লুটপাট করা।

আমরা দেখতে পাই, যখনই মুসলমানরা কোন অমুসলিম গোত্রকে আক্রমণ করেছে, তারা তাদের নারীদিগকে এক জায়গায় জড়ো করে বন্দী করেছে। বৃদ্ধা এবং শিশুদিগকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হত্যা করা হতো, কারণ এই প্রজাতিগুলি জিহাদিদের কোন কাজে আসবে না, ভার বাড়াবে মাত্র। তরুণী এবং সেক্সি কাফের রমণীদের বাছাই করা হতো এবং জিহাদিদের মধ্যে বন্টন করা হতো। যুদ্ধের ময়দানেই তাদের উপর সওয়ার হয়ে অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নিত জিহাদিরা। অতঃপর হয় তাদেরকে দাসী হিসেবে অন্য কারও কাছে বিক্রি করা হতো নয়তো মুক্তিপণের বিনিময়ে আত্মীয়দের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হতো (যদি মুক্তিপণ দিয়ে স্ত্রীকন্যাকে ফিরিয়ে নেয়ার মতো কোন আত্মীয় অবশিষ্ট থাকতো)।

নিম্নে তাবুক যুদ্ধের একটি বর্ণনা পেশ করা হলো। ইবনে ইসহাক রচিত মুহাম্মদের জীবন চরিত গ্রন্থ হতে বিবরণটি নেয়া হয়েছে। (রেফারেন্স-১০, পৃ-৬০২-৬০৩)।

তায়েফ ও হোনায়েন যুদ্ধের পর মুহাম্মদ কয়েকমাস মদীনায় অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি বাইজেন্টাইনদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিতে আদেশ দিলেন। তখন ছিল ঘোর গ্রীষ্মকাল। আরব উপদ্বীপে সে বৎসর প্রচণ্ড খরা চলছিল, সূর্যের তাপ ছিল অসহনীয়। এইসময়ে অভিযানে বের হতে অনেকেরই ঘোরতর অনিচ্ছা ছিল। অভিযান থেকে রেহাই পেতে কেউ কেউ নবীর কাছে প্রার্থনা জানাল। তদসত্বেও অভিযানের আয়োজন চলল জোর কদমে। জা’দ বিন কায়েস নামক জনৈক মুসলমানকে নবী জিজ্ঞেস করলেন – সে জিহাদে যেতে প্রস্তুত কীনা। উত্তরে জা’দ এই বলে অস্বীকৃতি জানাল যে, সে খুব স্ত্রীলোক পছন্দ করে। বাইজেন্টাইন রমণীরা অপূর্ব সুন্দরী, তাদের দেখলে সে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না। সুতরাং তাকে যেন রেহাই দেয়া হয়। মুহাম্মদ (দঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন, অতঃপর জা’দকে উদ্দেশ্য করেই পবিত্র কোরানের অত্র আয়াত নাজেল হলো-

“তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে যে আমাকে (যুদ্ধে না যেতে) অনুমতি দিন…”

(৯:৪৯, সুরা তাওবা)।

গাজওয়ায় যেসব নারীদের বন্দী হতো, তাদের মধ্য থেকে মুহাম্মদ (দঃ) স্বয়ং বেশ কয়েকজনকে নিজের স্ত্রী কিংবা উপপত্নী হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। সবচেয়ে সুন্দরী এবং সবচেয়ে সেক্সি মেয়েটিকেই তিনি নিজের জন্যে রাখতেন। নিজের জামাইদেরকেও তিনি যুদ্ধবন্দিনীদের ভাগ দিতে কসুর করেন নি। হযরত আলী এবং হযরত ওসমানকেও তিনি উদারভাবে মালে গণিমত বণ্টন করেছেন। নীচের হাদিসটিতে দেখা যাবে, কীভাবে মা ফাতেমার স্বামী নবী জামাতা শেরে খোদা হযরত আলী বন্দিনীর সাথে সেক্স করছেন, যে বন্দিনীকে তিনি শশুরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন। একদিক বিবেচনা করলে মুহাম্মদকে (দঃ) বরং বেশ উদারই মনে হয় এক্ষেত্রে। এই অধুনিক যুগেও কয়টা শশুর আছে যে নিজের মেয়ের জামাইকে অন্য মেয়ের সাথে সেক্স করতে দেখেও সহ্য করবে কিংবা তার জন্যে একটি সেক্স-পার্টনার জুটিয়ে দেবে?

সহি বুখারিঃ ভলিউম–৫, বুক নং–৫৯, হাদিস নং–৬৩৭:

বুরাইদা কতৃক বর্ণিতঃ

নবী আলীকে ‘খুমুস’ আনতে খালিদের নিকট পাঠালেন (যুদ্ধলব্ধ মালের নাম খুমুস)। আলীর ওপর আমার খুব হিংসা হচ্ছিল, সে (খুমুসের ভাগ হিসেবে প্রাপ্ত একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গমের পর) গোসল সেরে নিয়েছে। আমি খালিদকে বললাম- “তুমি এসব দেখ না”? নবীর কাছে পৌঁছুলে বিষয়টি আমি তাকে জানালাম। তিনি বললেন- “বুরাইদা, আলীর ওপর কী তোমার হিংসা হচ্ছে?” আমি বললাম- “হ্যাঁ, হচ্ছে”। তিনি বললেন- “তুমি অহেতুক ঈর্ষা করছো, কারণ খুমুসের যেটুকু ভাগ সে পেয়েছে তারচেয়ে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য সে”।

যুদ্ধজয়ের পর শত্রুদের সুন্দর ও সেক্সি মেয়েগুলি তাদের হাতে আসবে, এই বিবেচনাই ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের জিহাদিদের অন্যতম প্রধান ড্রাইভিং ফোর্স। অন্তত ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলুল্লাহ গ্রন্থ পাঠ করলে এই চিত্রই পাঠকের মনে সুস্পষ্ট হবে। বৃদ্ধা, কুৎসিৎ এবং খুব সেক্সি নয় এমন নারী জিহাদিদের কাম্য ছিল না। এদেরকে বোঝা হিসেবেই গণ্য করত তারা। মুহাম্মদের (দঃ) সবচেয়ে প্রামাণ্য এই জীবনচরিত পাঠ করে আমরা জানতে পারি, হুনায়েনের যুদ্ধে এক বৃদ্ধাকে ছেড়ে দেওয়া হলো, কারণ তার মুখমণ্ডল ছিল শীতল, বক্ষদেশ সমতল, সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ছিল না তার এবং বুকে দুধের ধারা শুকিয়ে গেছে। সুতরাং ছয়টি উটের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হলো (রেফারেন্স-১০, পৃ-৫৯৩)। এ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটাই ছিল রীতি। কদাকার হাসের ছানাটিকে ছেড়ে দাও, বুড়ি দিদিমাই বা কোন্‌ কাজে আসবে। তার বিনিময়ে বরং কয়েকটি উট-দুম্বা পেলেও লাভ।

নারীমাংসের প্রতি জিহাদিদের লোভের আরও প্রমাণ মেলে তায়েফ অবরোধের বিবরণ থেকে। তায়েফে ছিল তাফিক গোত্রের বাস। সুন্দরী এবং সেক্সি হিসেবে তাফিক মেয়েদের নাম-ডাক ছিল প্রচুর। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই যোগ দিয়েছিল লুটতরাজ ও সুন্দরী তায়েফ নন্দিনীদের সাথে সেক্স করার লোভে। জনৈক জিহাদির বিবরণ হতে দেখা যায় যে সে অকপটে স্বীকার করছে- সে যুদ্ধ করার জন্যে এই অভিযানে শরিক হয় নি, বরং একটি সুন্দরী তাফিক রমণী কব্জা করা এবং তাকে গর্ভবতী করার উদ্দেশ্যেই সে অভিযানে এসেছে, কারণ সে জানে যে তাফিক নারীরা বুদ্ধিমান সন্তানের জন্ম দেয়।

বানু কুরাইজা নামক ইহুদি গোত্রটির সমস্ত পুরুষ সদস্যদের হত্যা করার পর তাদের ধনসম্পত্তি ও নারীগণ মুসলমানদের দখলে আসে। রায়হানা নাম্নী এক সুন্দরী ইহুদিনীকে নবী নিজের জন্যে নির্বাচিত করেন। তিনি রায়হানাকে বিয়ে করতে চাইলে রায়হানা সে প্রস্তাব অস্বীকার করে; বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার পরিবর্তে তার নিজ ধর্মে (ইহুদি ধর্মে) অটল থেকে নবীর একজন উপপত্নী হিসেবে থাকতেই পছন্দ করে সে। এমতাবস্থায় উপপত্নী হিসেবেই রাসুলের হারেমে ঠাই হয় রায়হানার। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা হতে আমরা জানতে পারি, মুসলমানগণ যখন বানু হাওয়াজিন গোত্রকে পরাজিত করে, প্রায় ৬ হাজার নারী ও শিশু বন্দী হয় মুসলমানদের হাতে। নারীমাংসের এতবড় চালান ইতিপূর্বে জিহাদিদের হাতে আর আসে নি। নারীদেরকে জিহাদিদের মধ্যে যথারীতি বণ্টন করে দেয়া হয়। রায়তা নাম্নী সুন্দরী বন্দিনীটি হযরত আলীর ভাগে পড়ে, জয়নাব নাম্নী আরেক হতভাগী পড়ে হযরত ওসমানের ভাগে। নারী-মাংসের এক ভাগ হযরত ওমরের ভাগ্যেও জুটেছিল, তবে ভাগটি তিনি নিজে না নিয়ে ভোগ করার জন্যে তা প্রিয় পুত্র আব্দুল্লাহর হাতে তুলে দেন। (প্রাগুক্ত, পৃ-৫৯২-৫৯৩)।

নৈতিকতা এবং ন্যায়বিচারের কথা ভাবছেন আপনি? হ্যাঁ, অসহায় নিরপরাধ বন্দিনীদের সাথে দয়াল নবীর ন্যায়বিচারের এই হলো নমুনা। শুধু রায়হানা নয়, জাওয়াহিরা এবং সাফিয়া নাম্নী আরও দুইজন রক্ষিতা ছিল নবীর। জওয়াহিরা তার হাতে আসে বানু আল-মুস্তালিক অভিযান থেকে, সাফিয়া আসে খায়বারের বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান থেকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে মুহাম্মদের উপত্নীদের অধিকাংশই ছিল হয় ইহুদি নয়তো খ্রিস্টান। (রায়হান, জওয়াহিরা ও সাফিয়া ছিল ইহুদি, মারিয়া কিবতি ছিল খ্রিস্টান)।

মুখ বাঁচাতে ইসলামপন্থীরা এখনই সমস্বরে কোরাস গেয়ে উঠবেন যে মুহাম্মদ বড়ই দয়ালু ছিলেন, ওইসব অসহায় তরুণীদের দুঃখ দেখে তাঁর কোমল প্রাণ কেঁদে উঠল। তাই তিনি তাদের গ্রহণ করে দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়ার হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছেন। তারা আমাদেরকে আরও বিশ্বাস করতে বলবেন যে ওইসব বন্দিনীরা মুহাম্মদকে বিয়ে করে খুবই সুখি হয়েছিল, কারণ মুহাম্মদকে দেখামাত্র তারা নবীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছিল। কী অবিশ্বাস্য অপূর্ব যুক্তি, লিখিতভাবে মানুষের ইতিহাস শুরু হওয়ার পর থেকে এমন অকাট্য যুক্তি কেউ আবিষ্কার করতে পেরেছে বলে অন্তত আমার জানা নেই। মাত্র ঘণ্টাকয়েক আগে যার হাতে তার স্নেহময় পিতা প্রাণ দিয়েছে, বড় আদরের ভাইটি অকালে ঝরে গেছে, প্রেমময় স্বামীর প্রিয়মুখটি অশ্বের খুরাঘাতে দলিতমথিত হয়েছে সেই হত্যাকারীর প্রেমে সে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাগল হয়ে গেল! মুহাম্মদ যা করেছেন, সে যুগে তাই ছিল রীতি। একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় এসে কতগুলি খোঁড়া যুক্তি দিয়ে সেই বন্য রীতিকে জাস্টিফাই করা অমানবিক। মানবতার প্রতি চরম অবমাননাকর।

এর আগেও বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর পরিচালিত অভিযানের পেছনে ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে কাফের রমণীদের রসালো শরীরের প্রতি জিহাদিদের অপরিমিত লোভ। এতই প্রচণ্ড ছিল সেই লোভ যে কাঙ্খিত নারীটি করায়ত্ত হওয়ার পর বিন্দুমাত্র বিলম্ব সইতো না জিহাদিদের। বন্দিনীদের ঋতুস্রাবও নিবৃত্ত করতে পারতো না তাদের, তার মাঝেই বন্দিনীদের ওপর চড়ে বসতো তারা। এমতাবস্থায় স্বয়ং আল্লাহপাককে বাণী নিয়ে এগিয়ে আসতে হলো, ডিক্রি জারী করতে হলো যে পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরেই কেবল বন্দিনীদের ধর্ষণ করা যাবে। ওইসব ইসলামি সৈনিকদের যৌনতাড়না এতোটাই বর্বর ও ঘৃণ্য ছিল যে তারা এমনকী কোনপ্রকার গোপনীয়তা অবলম্বনেরও ধার ধারত না। এমনও হয়েছে যে স্বামীদের সামনেই বন্দিনীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জিহাদিরা। স্ত্রীকে এক নরপশু খাবলে খাচ্ছে, বন্দী স্বামী চোখ মেলে তাই দেখছে। মানবতার এত বড় অপমান বিশ্বসংসারে আর কখনও ঘটেছে কী?

নীচের হাদিস দু’টি পড়ুন এবং যুদ্ধবন্দীদের মর্যাদার প্রশ্নে জেনেভা কনভেনশনে রচিত আইনের সাথে ঈশ্বর প্রদত্ত ইসলামি আইনের তুলনা করুন।

প্রথম হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে কিছু কিছু বন্দিনী ছিল যারা ছিল বিবাহিতা এবং তাদের স্বামী তখনও বেঁচে, যদিও স্বামীরা ছিল অমুসলিম কাফের। এই ধরনের বন্দিনীদের সাথে সেক্স করতে কোন কোন জিহাদি সঙ্কোচ বোধ করত। কেউ কেউ আবার পরাজিত শত্রুটির সামনেই তার স্ত্রীকে ভোগ করতে বেশী পছন্দ করত। এ এক ধরনের যৌনবিকৃতি, যার কিছু নমুনা আমরা দেখেছি একাত্তরে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। পাঞ্জাবি এবং পাঠান সৈন্যরা একাত্তরে বাঙালি রমণীদের ওপর যা করেছে, তার পূর্ণ সমর্থন মেলে এই হাদিসগুলি হতে। ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী একাত্তরে যা কিছুই করে থাকুক, ইসলামি শাস্ত্রের বাইরে কিছু করে নি। ইসলামের প্রাথমিক গাজওয়াগুলিতে নবীর বাহিনী ঠিক এমনটিই করতো।

দ্বিতীয় হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে অনেক জিহাদিই পৌত্তলিক স্বামীটির সামনে তার স্ত্রীর ওপর বলাৎকার করতে দ্বিধান্বিত ছিল। কিন্তু মহম্মদ এখানে বিপদের গন্ধ পেয়েছিলেন, তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে জিহাদিরা যা করতে চায় তা করতে না দিলে বিপদের সম্ভাবনা আছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে আল্লাহ যদি এই আনন্দোৎসবের অনুমতি না দেন, জিহাদিরা বেঁকে বসতে পারে, তাদের সমর্থন শূন্যে মিলিয়ে যেতে খুব বেশি দেরি হবে না। সুতরাং নবী মহামহিম আল্লাহর মধ্যস্থতায় সমাধান করলেন, তরিৎগতিতে আরশ-মোয়াল্লা থেকে মঞ্জুরি নেমে এলো। মহান আল্লাহ কাফের রমণীদের (বিবাহিতা হলেও) ভোগ করার অনুমতি প্রদান করে ধন্য করলেন জিহাদিদের।

কিছু কিছু জিহাদি স্বামী বর্তমান থাকতেও বন্দিনীদের সাথে সেক্স করে এবং কেউ কেউ তা করতে দ্বিধাগস্ত হয়। (সুনান আবু দাউদ: ১১:২১৫০)।

সুনান আবু দাউদ, বুক নং-১১, হাদিস নং-২১৫০:

“আবু সাইদ আল খুদরি বলেন- “হুনায়েন যুদ্ধের সময় আল্লাহর রাসুল (দ:) আওতাসে এক অভিযান পাঠান। তাদের সাথে শত্রুদের মোকাবেলা হলো এবং যুদ্ধ হলো। তারা তাদের পরাজিত করল এবং বন্দী করল। রাসুলুল্লাহর (দ:) কয়েকজন অনুচর বন্দিনীদের স্বামীদের সামনে তাদের সাথে যৌনসঙ্গম করতে অপছন্দ করলেন। তারা (স্বামীরা) ছিল অবিশ্বাসী কাফের)। সুতরাং মহান আল্লাহ কোরানের আয়াত নাজিল করলেন,

“সমস্ত বিবাহিত স্ত্রীগণ (তোমাদের জন্যে অবৈধ); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণহস্ত যাদের অধিকারী (যুদ্ধবন্দিনী), আল্লাহ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন”।

[কোরান, ৪:২৪]

অর্থাৎ পিরিয়ড শেষ হলে তারা তাদের জন্যে বৈধ।

যুদ্ধবন্দিনীর সাথে সহবাস বৈধ, তবে শর্ত থাকে যে তার মাসিক স্রাব শেষ গেছে কিংবা গর্ভবতী হলে তার গর্ভ খালাস হয়ে গেছে। তার যদি স্বামী থেকে থাকে, বন্দী হওয়ার পর সে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। (কোরাণ-৪:২৪, সহি মুসলিম-৮:৩৪৩২)।

সহি মুসলিম, বুক নং–৮, হাদিস নং–৩৪৩২:

আবু সাইদ আল খুদরি (রা:) বলেছেন যে, হুনায়েনের যুদ্ধকালে আল্লাহর রাসুল (দ:) আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠান। তারা তাদের মুখোমুখি হলো এবং তাদর সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। যুদ্ধে পরাজিত করার পর কিছু বন্দী তাদের হাতে আসল। রাসুলুল্লাহর (দ:) কিছু সাহাবি ছিলেন যারা বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইলেন, কারণ তাদের স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী। তখন মহান আল্লাহ এ সম্পর্কিত আয়াতটি নাজেল করলেন- “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিণ হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া”।

এখানে একটি প্রশ্ন এসে যায়। জিহাদিদের উন্মত্ত ধর্ষণপ্রক্রিয়ার ফলে যদি বন্দিনীটির গর্ভসঞ্চার হয় তাহলে কী হবে? অনেক জিহাদিই চাইত না যে তাদের সেক্স-মেশিনটি তাড়াতাড়ি গর্ভসঞ্চার করে বসুক, সুতরাং তারা বীর্যপাতের ঠিক পূর্বমুহূর্ত লিঙ্গটি বের করে নিয়ে আসত।  এই প্রথা সম্পর্কে মহম্মদের (দ:) মনোভাব ছিল ঘোলাটে, কখনও তাকে এই প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়, কখনওবা তাকে নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করতে দেখা যায়। এসম্পর্কে গোটাকয়েক সুন্দর হাদিস উল্লেখ করা হলো। (কয়টাস ইন্টারাপশন বা যোনির বাইরে বীর্যপাত সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে এই সিরিজের ৩ নং পর্বে)।

বানু আল-মুস্তালিক গোত্রের বন্দিনীদের ক্ষেত্রে কয়টাস ইন্টারাপশন পালন করতে মহম্মদ অনুমতি দেন নি, তবে বন্দিনীদের ধর্ষণ করার ক্ষেত্রে তার কোন নিষেধ ছিল না (৫:৫৯:৪৫৯)।

সহি বুখারি, ভলিউম–৫, বুক নং–৫৯, হাদিস নং–৪৫৯:

ইবনে মুহাইরিজ হতে বর্ণিত:

আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং আবু সাইদ আল-খুদরিকে দেখতে পেলাম। আমি তার পাশে উপবেশন করে তার কাছে আজল (কয়টাস ইন্টারাপশন) সম্পর্কে জানতে চাইলাম। আবু সাইদ বলল- “আমরা রাসুলুল্লাহর সাথে বানু মুস্তালিকদের বিরুদ্ধে এক অভিযানে যাই। কিছু আরব বন্দিনী আমাদের হস্তগত হয়। আমরা প্রবলভাবে নারীসঙ্গ কামনা করছিলাম; নারীসঙ্গবিবর্জিত জীবন আমাদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং আমরা আজল করতে চাইলাম। আমরা বললাম- আল্লাহর রাসুল আমাদের মাঝে হাজির থাকতে তার কাছে জিজ্ঞেস না করে কী করে একাজ করি? আমরা এ সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এটা না করাই বরং তোমাদের জন্যে ভাল। কারণ কোন আত্মা জন্ম নেওয়ার হলে তা জন্মাবেই, পুনরুথানের দিন পর্যন্ত”।

যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সেক্স করার ঢালাও অনুমতি আছে ইসলামে এই সত্যটা মেনে নিতে অনেক ইসলামপন্থীর বড় কষ্ট হয়। এই বর্বর প্রথার মধ্যে লুক্কায়িত অমানবিকতাকে ঢাকা দিতে তারা নানারূপ যুক্তি খাড়া করেন। তারা আমতা আমতা করে বলেন-

“দেখ, কোনকিছুর ভালমন্দ যাচাই করতে হলে তোমাকে অবশ্যই পারিপার্শিকতা বা স্থানকাল বিবেচনায় রাখতে হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সেক্স করার যে প্রথা চালু ছিল, তার অনেক ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে এখন। সেইসময়ে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সেক্স করা দোষের কিছু ছিল না। মুসলমান সৈনিকদেরকে তাদের গৃহ হতে বহু দূরে যুদ্ধ এলাকায় পাঠানো হতো। বহুদিন যাবৎ স্ত্রীসঙ্গ হতে বিরত থাকতে হতো তাদের। সুতরাং তাদের যৌনক্ষুধা মেটাতে আল্লাহ এর অনুমতি দিয়েছিলেন। তাছাড়া বন্দিনীদেরও যৌনক্ষুধা ছিল, পুরুষের ছোঁয়া ছাড়া তারা বাকী জীবনটা কাটাবেইবা কী করে? সুতরাং এ ছিল নেহায়েতই সমানে সমান খেলা। ইসলামি আইন আপাত কঠোর মনে হলেও এর পেছনে অবশ্যই কোন সুন্দর ও জোরালো যুক্তি থাকতেই হবে”।

যদি তাদের প্রশ্ন করা হয় ‘ভাল কথা। এটা ছিল সে যুগের রীতি, তবে আইনটি কী এখনও চালু আছে? হ্যাঁ কিংবা না স্পষ্ট করে বলুন’। এই সহজ প্রশ্নের কোন সরাসরি জবাব অবশ্য মিলবে না। প্রশ্নটিকে সুকৌশলে পাশ কাটাবেন তারা, হয়তো বলবেন-

“আমাদেরকে অবশ্যই কন্টেক্সট বিচার করে কোন প্রথার ভালমন্দ যাচাই করতে হবে। কোন মুসলমান শক্তি যদি অন্য কোন দেশ জয় করে নেয়, ইসলামিক আইন অনুসারে তারা পরাজিতদের প্রতি সবসময়ই ন্যায়বিচার করে থাকে। ইসলাম অবশ্যই বিজিত নারী ও শিশুদিগকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে… ইত্যাদি, ইত্যাদি”। কখনও সোজাসাপটা জবাব দেবেন না তারা।

মুসলমানরা আমেরিকাকে গ্রেট শয়তান বলে অভিহিত করে থাকে। আচ্ছা, যদি এমন হয় যে মুসলমান জিহাদিরা আমেরিকা দখল করে নিল। এই অবস্থায় আমেরিকার কাফের রমণীদের ভাগ্যে কোন্ পরিণতি অপেক্ষা করে আছে? দেখা যাক এই অবস্থায় প্রকৃত ইসলামের কাছথেকে কী সমাধান মেলে। জনৈক সুপণ্ডিত ইসলামি মোল্লা বন্দিনী মার্কিন নন্দিনীদের সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিধান দিয়েছেন।

ইসলাম ধর্ম-সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরের একটি ওয়েবসাইট:

দক্ষিণ হস্তের অধিকার (right hand possessions)

প্রশ্ন: দক্ষিণহস্তের অধিকার বলতে কী বুঝায়, তা পাওয়ার উদ্দেশ্যই বা কী? কোন কোন ভাই মনে করেন যে এই আমেরিকায়ও দক্ষিণহস্তের অধিকারে কোন কিছু আসলে তাতে দোষের কিছু নেই।

উত্তর: দক্ষিণ হস্তের অধিকার বা ‘মালাকুল ইয়ামিন’ বলতে বুঝায় ক্রীতদাস বা দাসী (স্লেভস কিংবা মেইডস), যা যুদ্ধবন্দী হিসেবে কিংবা বাজার হতে ক্রয়সূত্রে মুসলমানদের দখলে আসে। ক্রীতদাসী মুসলমানদের দখলে আসলে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ এবং সঠিক। বর্তমান যুগেও যদি কোন কাফেরদের দেশ মুসলমানদের অধিকারে আসে, এই নিয়ম পালন করা বৈধ এবং সঠিক।

উপরের উত্তরটি একটু ভালভাবে অনুধাবন করুন পাঠক। উক্ত মোল্লা যে সিদ্ধান্তটি দিলেন, তার নিগলিতার্থ কী দাঁড়ায়! কোনপ্রকার রাখঢাক না করে খাঁটি ইসলাম সম্পর্কে অকপট মতামত দেয়ার জন্যে এই মোল্লাকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়। তথাকথিত ইসলামপন্থীদের মতো ঝোপের আড়ালে মুখ ঢেকে আসল  প্রশ্নটিকে পাশ কাটাননি এই মোল্লা। তিনি কোরান-হাদিস বর্ণিত নিয়মটিকে সহজ, অবিকৃত, খাঁটি এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। পাশ্চাত্য শিক্ষিত আধুনিক ইসলামপন্থীদের প্রতি আমার বিনীত আরজ, ইসলামি মোল্লাটির উপরোক্ত অকপট মতামতের জবাবে তারা কোন্ কৈফিয়ৎ পেশ করবেন এখন?

আসুন, উপরোক্ত ইসলামি নিয়মটিকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে দেখি। ধরে নিন, অলৌকিক কোন ক্ষমতাবলে ইসলামি সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অন্যসমস্ত কাফের মুলুকগুলি দখল করে নিল। পরাজিত কাফের পুরুষদের প্রতি মুসলমানরা কী আচরণ করবে? যুদ্ধবন্দী হিসেবে যেসব সুন্দরী তরুণী তাদের অধিকারে আসল, তাদের সাথেই বা ইসলামের সৈনিকেরা কোন্ আচরণ করবে? আপনি কী মনে করেন যে তারা বন্দী/বন্দিনীদের সাথে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আচরণ করবে? যদি সেরকম ভেবে থাকেন, তবে আপনি একটি বদ্ধ উন্মাদ। উপরোক্ত মোল্লা যা বলেছেন, ইসলামি সৈনিকেরা ঠিক তেমনটিই করবে। সমস্ত পুরুষ বন্দীদেরকে তারা দাস হিসেবে বেচে দেবে, মেয়েগুলিকে যৌনদাসী হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেবে। বৃদ্ধা বন্দিনীদেরকে খুব সম্ভবত হত্যা করা হবে, কারণ অনর্থক বোঝা বাড়ানো কোনকালেই কাজের কথা বলে বিবেচনা করা হয় না। আরেকটি কাজ করতে পারে ইসলামের সৈনিকেরা। গ্রেট শয়তানটিকে আরেকটু শায়েস্তা করতে জিহাদিরা বন্দী পুরুষদের সামনেই তাদের স্ত্রীদের ওপর সওয়ার হতে পারে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মজাই আলাদা!

আপনি হয়তো ভাবছেন, এ আমার আকাশ কুসুম কল্পনা, একবিংশ শতাব্দীতে এরকম কী করে হয়? হয় পাঠক, এখনও তা হয়। আপনার আমার জন্যে না হলেও ইসলামপন্থীদের জন্যে হয়। ইরাক-সিরিয়ার আইএস-এর কর্মকাণ্ডগুলো এতো সহজেই ভুলে যাবেন না। সেসব একটু ঝালাই করে নিন। মানসিকভাবে তারা এখনও দেড়হাজার বছর আগেকার সেই সোনালি যুগেই পড়ে আছে। সেই যুগকে ফিরিয়ে আনতে দেশে দেশে অজস্র জিহাদির জন্ম দিচ্ছে তারা। মাত্র তিরিশ বছর আগের কথা স্মরণ করুন, একাত্তরের বাংলাদেশের কথা। পাকিস্তানের ইসলামি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ঠিক ইসলামি নিয়মটিই চালু করেছিল সেদিন। তারা প্রায় তিরিশ লক্ষ বাঙালি পুরুষকে হত্যা করেছিল, কারণ তাদের ভাষায় তারা ছিল কাফের অথবা নিম্ন-মুসলমান। আড়াই লক্ষ বাঙালি নারীকে তারা উপপত্নী হিসেবে বন্দী করেছিল। মালে গণিমত টাইটেল দিয়ে তাদেরকে ধর্ষণ করেছিল, ঘরের ভেতর হতে ধর্ষিতার আকুল ক্রন্দন যখন আকাশ বাতাস পরিপ্লাবিত করে দিচ্ছিল, পাশের ঝোপে পালিয়ে থাকা তার অসহায় পুরুষটির কর্ণে সেই ক্রন্দনধ্বনি যে পৌছয় নি, তা আপনি কী করে ভাবলেন? ইরাক*-সিরিয়ায় আইএস এবং তালেবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানেও ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে বহু রিপোর্ট আমরা টিভি-পত্রিকায় দেখেছি। যারাই আইএস বা তালেবানদের বিরোধীতা করেছে, তাদের মেয়েদের ওপর নেমে এসেছে ধর্ষণ ও নির্যাতন।

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এইসব জিহাদীরা কী ইসলামের নিয়মের বাইরে কোনকিছু করেছে? ইসলামের বিধান মোতাবেক ধর্ষণকারী এইসব জিহাদিদের কী কোন শাস্তির আওতায় আনা যায়? এই প্রশ্নের একটিমাত্র জবাব ‘না’। সুতরাং এরূপ সিদ্ধান্ত টানা কী অন্যায় হবে যে দেশ-কাল নির্বিশেষে যুদ্ধবন্দিনীদের ওপর যৌননির্যাতনের এই যে কালচার জিহাদিরা প্রতিপালন করে আসছে, এর পেছনে যে প্রেরণাদায়ী শক্তি তার নাম হচ্ছে ইসলাম? এই কিছুদিন আগেও ইরানে কী ঘটল? ব্যভিচার ও ধর্মদ্রোহীতার অপরাধে এক মেয়েকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তার সেলে এক ইসলামী গার্ডকে ঢুকিয়ে দেয়া হলো মেয়েটিকে পুনঃপৌনিকভাবে ধর্ষণ করার জন্যে! আহ্। একজন কাফের বন্দিনীর সাথে কী মহান ইসলামী আচরণ! বেটি তো নরকেই যাবে, যাওয়ার আগে একটু ইসলামি সেক্সের স্বাদ শরীরে বহন করে নিয়ে যাক!

পাঠক, ভুলে যাবেন না ইরানে এখন ইসলামের রক্ষকরা ক্ষমতায়। সেখানে যাকিছু ঘটে, মহান ইসলামি আইন বাস্তবায়ন করতেই ঘটে। সুতরাং কীভাবে বলবেন যে দেড়হাজার বছরের পুরোনো যুদ্ধবন্দীসংক্রান্ত আইনগুলো এখন আর কার্যকরী নয়?

ক্রীতদাসীর সাথে সেক্স

আলোচনার জন্যে এ এক হট টপিকস। এতোক্ষণ আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করলাম, তা হচ্ছে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে ইসলামসম্মত যৌন-আচরণ। তবে হালালভাবে সেক্স করতে মুসলিম পুরুষদের সামনে এই একটিমাত্র পথ খোলা, তা কিন্তু নয়। যুদ্ধ করা আর যাই হোক মুখের কথা নয়, পৈতৃক প্রাণটা বাজী ধরতে হয়। পয়সা থাকলে হালালভাবে সেক্স করার জন্যে আরও একটি সহজ উপায় আছে মুসলমান পুরুষদের। নগদ পয়সা দিয়ে বাজার হতে মোটাতাজা দেখে একটি দাসী কিনে নেয়া। যৌনদাসী, ইংরেজী নাম সেক্স স্লেভ। যৌনদাসী ক্রয়বিক্রয় পরিপূর্ণভাবে ইসলামসম্মত, পয়সা থাকলে আপনি যতখুশী দাসী কিনতে পারেন। একসঙ্গে কতজন যৌনদাসী কিনতে পারবেন, তা নিয়ে মোটেও ভাবতে হবে না আপনাকে। শরিয়ত আপনার জন্যে কোন লিমিট বেধে দেয়নি। যতক্ষণ দেহে শক্তি আছে আর পকেটে পয়সা আছে চালিয়ে যান। এরজন্যে পরকালে আপনাকে জিনা বা ব্যভিচারের দায়ে জবাবদিহিও করতে হবে না। কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দেখাবেন যে নারীমাংসের এই বিজনেসটি যেহেতু আর চালু নেই, সুতরাং এ নিয়ে আলোচনা করা অনর্থক। এই যুক্তির সাথে আমিও একমত। তবে কথা হচ্ছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে ইদানীংকালে জিহাদিরা বিশ্বজুড়ে জিহাদের ডাক দিয়েছে। আটলান্টিকের পশ্চিম তীর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব তীর পর্যন্ত সর্বত্র জিহাদি বোমায় কাফের মরছে। তাদের এই জিহাদ যদি সফল হয়, যদি জিহাদিরা পৃথিবীকে দখল করে নেয়, তবে কোরান-হাদিস সমর্থিত সেই রসালো প্রথাটি যে মানবসমাজে পুনঃপ্রবর্তিত হবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কোরান-হাদিসে যে নিয়ম আছে তা চিরকালীন, একেবারে গ্র্যানাইট পাথরে খোদাই করা। স্বয়ং আল্লাহপাক তার প্রিয় বান্দাদের জন্যে এই নিয়ম বেধে দিয়েছেন। সেই ঐশী নিয়মের এক চুল ব্যত্যয় ঘটানো কী কোন মানবের পক্ষে সম্ভব? সম্ভব নয়। আর তাই যদি ইসলামী জিহাদিদের হাতে পৃথিবীর পতন ঘটে, তবে অমুসলিম নারীদের নধর মাংসে ভূপৃষ্ঠ পুনরায় সয়লাব হয়ে যাবে, নারীমাংস কেনাবেচার পুরনো প্রথাটি আবার সগৌরবে ফিরে আসবে তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। যদি ইসলামপন্থীরা তাদের শাসিত রাষ্ট্রে শারিয়া আইন প্রবর্তিত করে চুরির দায়ে হাত-পা কাটতে পারে, ব্যভিচারের দায়ে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে পারে, মুরতাদ ঘোষণা করে মানুষের গলা কাটতে পারে, তবে শরিয়ার বিধান মোতাবেক দাসপ্রথার পুনঃপ্রবর্তন থেকে কে তাদের নিবৃত্ত করবে? অতি সম্প্রতি ইরাক-সিরিয়ায় আইএস এর দখলীকৃত এলাকায় ইরাকী ও কুর্দি নারীদের বেচাকেনার দৃশ্য এতো দ্রুত ভুলে গেলেন? পাঠক, বিষয়টি নিয়ে ভাবুন একবার।

আমরা এর আগে বলেছি, নবী মুহাম্মদের মারিয়া কিবতি নামক একজন যৌনদাসী ছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিস্টান শাসক মুকাকিস এই দাসীটিকে উপঢৌকন হিসেবে তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। মুহাম্মদের কাছ থেকে ইসলাম গ্রহণ করার বার্তা নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল যায় মুকাকিসের দরবারে। মুকাকিস ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তবে এই অস্বীকৃতির পরিণাম কী হতে পারে তা ভেবে তিনি খুব শঙ্কিত ছিলেন। সুতরাং মুহাম্মদকে (দ:) তুষ্ট করতে তিনি দু’জন সুন্দরী দাসী পাঠান মদীনায়। দু’জনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত সুন্দরী দাসীটিকে (মারিয়া) মহম্মদ নিজের ব্যবহারের জন্যে রাখেন, অপর দাসী শিরিনকে তিনি কবি বন্ধু হাসান ছাবিতকে উপহার দেন। মারিয়ার গর্ভে মহম্মদের এক পুত্র জন্মে যার নাম ছিল ইব্রাহিম। শিশু বয়েসেই মারা যায় ইব্রাহিম। শিরিনের গর্ভে হাসান ছাবিতের যে পুত্রসন্তান হয় তার নাম ছিল আব্দুর রহমান। (রেফারেন্স-১০, পৃ-৪৯৮-৪৯৯)। এই সমস্ত ঐতিহাসিক রেকর্ড থেকে প্রমাণিত হয় যে ইসলামে যৌনদাসী ভোগ করা পুরোপুরিভাবে হালাল এবং ইসলামসম্মত।

নিম্নে মুক্তোসদৃশ আরও কিছু হাদিস বর্ণনা করা হলো। হাদিসগুলি পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে সেক্সের ক্ষেত্রে মেয়েদের ওপর ইসলাম কতোই না দয়া, স্বর্গীয় আশীর্বাদ, সহানুভুতি এবং ন্যায়বিচার প্রদর্শন করেছে।

আপনি একইসাথে দুইজন যৌনদাসীর সাথে গোসল না করে সঙ্গম করতে পারেন; তবে স্বাধীন নারীর ক্ষেত্রে তা পারেন না। (মুয়াত্তা: ২.২৩.৯০)

মুয়াত্তা: বুক নং–২, হাদিস নং–২.২৩.৯০:

“…নাফি’র বরাতে মালিক কতৃক বর্ণিত: আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের যৌনদাসীগণ তার পা ধুইয়ে দিত এবং তার জন্যে তালপাতার চাটাই এনে দিত, যখন তাদের মাসিক হচ্ছিল।

মালিককে জিজ্ঞেস করা হয় যে যদি কোন ব্যক্তির স্ত্রী এবং কয়েকজন যৌনদাসী থাকে, তবে সে গোসল না করেই সবার সাথে সহবাস করতে পারে কীনা। তিনি বলেন- “গোসল না করেও দু’জন যৌনদাসীর সাথে সহবাস করায় দোষের কিছু নেই। তবে স্বাধীন নারীদের ক্ষেত্রে একজনের বরাদ্দের দিন অন্যের কাছে যাওয়ার অনুমতি নাই। প্রথমে একজন যৌনদাসীর সাথে প্রেম করে অতঃপর দ্বিতীয় জনের কাছে যাওয়ায় দোষের কিছু নাই, যদি সে জুনুব অবস্থায়ও থাকে”।

মালিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে একজন লোক জুনুব অবস্থায় আছে। তার গোসলের জন্যে পাত্রে পানি ঢেলে দেয়া হলো। পানি গরম না ঠাণ্ডা তা পরখ করতে লোকটি পানিতে আঙ্গুল ছোয়াল।

মালিক বলেন- “যদি তার আঙ্গুলে কোন নাপাকি না লেগে থাকে, তাহলে আমি মনে করি না যে এজন্য পানি অপবিত্র হয়ে গেছে।”

নীচের হাদিসটি পড়লে আপনার বিবেক একেবারেই স্তব্ধ হয়ে যাবে পাঠক। এমন যে লৌহহৃদয় হযরত ওমর, তিনি পর্যন্ত এই ঘটনা সহ্য করতে পারেন নি। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে যে ওমর কতৃক নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দাসী এবং তার গর্ভজাত কন্যার সাথে একইসঙ্গে যৌনসঙ্গম করা হালাল ছিল! কতো বড় অমানবিক প্রথা, ভাবা যায়?

ক্রীতদাসী (অথবা যুদ্ধবন্দিনী) এবং তার গর্ভজাত কন্যার সাথে একজনের পর আরেকজনের সাথে সহবাস করা উচিত নয়, উমর এই প্রথা নিষিদ্ধ করে গেছেন। (মুয়াত্তা: ২৮.১৪.৩৩)।

মুয়াত্তা: বুক নং–২৮, হাদিস নং–২৮.১৪.৩৩ :

“…আবদুল্লাহ ইবনে উতাবা ইবনে মাসুদ তার পিতার বরাত দিয়ে বলেন যে ওমরকে একজন ব্যক্তির কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যার দক্ষিণহস্তের অধিকারে ছিল একজন দাসী ও তার গর্ভজাত কন্যা, এই অবস্থায় লোকটি তাদের একজনের সাথে যৌনসঙ্গম করার পর অপরজনের সাথে করতে পারে কীনা? উমর বলেছিলেন- “উভয়ের সাথে একইসাথে (সহবাস) করা আমি অপছন্দ করি”। অতঃপর তিনি উহা নিষিদ্ধ করেন।

যদি এমন হয় যে যৌনদাসীগণ (কিংবা যুদ্ধবন্দিনীগণ) একে অপরের সহোদর বোন, তাদের সাথে একইসাথে সহবাস করা কী বৈধ? নীচের হাদিসটি পড়ুন। আপনি তাদের সাথে একইসঙ্গে সহবাস করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন, যেভাবে আপনার সুবিধা হবে সেভাবেই গ্রহণ করুন হাদিসটিকে। (মুয়াত্তা: ২৮.১৪.৩৪)।

মুয়াত্তা: বুক নং–২৮, হাদিস নং–২৮.১৪.৩৪:

“…ক্কাবিসা ইবনে জুওয়াইব এর সূত্রে বর্ণিত- এক ব্যক্তি ওসমান ইবনে আফফানকে জিজ্ঞেস করল যে কারও অধিকারে দুই সহোদর বোন যৌনদাসী থাকলে তাদের উভয়ের সাথে সহবাস করা বৈধ কীনা? ওসমান বলেলেন- “এক আয়াত অনুসারে এটি হালাল, আরেক আয়াত অনুসারে এটি হারাম। আমার ক্ষেত্রে হলে আমি এরূপ করতাম না”। লোকটি তার কাছে থেকে চলে গেল এবং রাসুলুল্লাহর (দ:) আরেক সাহাবির কাছে যেয়ে প্রশ্নটি রাখল। তিনি বললেন- “যদি আমার কাছে ক্ষমতা থাকত এবং কাউকে এমন করতে দেখতাম, আমি তাকে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতাম”।

ইবনে শিহাব যোগ করেন- “আমার মনে হয় লোকটি আলী ইবনে আবি তালেব”।

(ইসলামী ভাইয়েরা গলাবাজি করে যতোই বলুন না কেন যে দাসী এবং স্ত্রী ভিন্ন কিছু নয়, কারণ বিয়ে না করে দাসীর সাথে সহবাস করা জায়েজ নয়, তাদের জন্যে ওপরের হাদিস দু’টি এক মারাত্মক আঘাত। প্রকৃত সত্য হলো এই যে ইসলামি দৃষ্টিতে ক্রীতদাসী এবং বিবাহিতা স্বাধীন নারী সম্পূর্ণ দুই প্রজাতির মেয়ে মানুষ। কারণ স্ত্রী ও গর্ভজাত কন্যার সাথে সহবাস করার কথা কোন উন্মাদও চিন্তা করবে না। কিংবা দুই সহোদর বোনের ওপর উপগত হওয়ার বিধান বিবাহিতা স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অথচ ওপরের হাদিস দুটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে উমর কতৃক নিষিদ্ধ করার পূর্বে দাসী মা ও তার মেয়ের উপর সওয়ার হওয়ার প্রথা দিব্বি প্রচলিত ছিল। দুই সহোদর বোনের সাথে সহবাস করার প্রথা থিওরেটিকালি এখনও চালু আছে ধরে নেয়া যায়। সুতরাং ক্রীতদাসী ও স্ত্রী এক জিনিশ ইসলামপন্থীদের এই দাবীর পেছনে কতটুকু সত্য লুকিয়ে আছে পাঠক পাঠিকারাই তা বিচার করুন।)

ক্রীতদাসীদের সাথে সহবাসকালে যৌনবিকৃতি বা সেক্সুয়াল পারভার্সন প্রদর্শন করা পুরোপুরি হালাল। হেদাইয়া থেকে আমরা জানতে পারি যে কোন ব্যক্তি তার যৌনদাসীর সাথে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সঙ্গম করতে পারে, যদিও নিজের স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিধি-নিষেধ রয়েছে।

যৌনসঙ্গিনীটি যদি ক্রীতদাসী হয়, তবে তার সাথে মনিব যেভাবে খুশি সেভাবে যৌনসঙ্গম করতে পারে। (রেফারেন্স-১১, পৃ-৬০০)।

যৌনসঙ্গিনী ক্রীতদাসী হলে মনিব যেভাবে খুশি সেভাবে তার লালসার পরিতৃপ্তি ঘটাতে পারে:

যৌনদাসীর সাথে সঙ্গমকালে তার সম্মতির তোয়াক্কা না করেই মনিব আজল প্রথা (কয়টাস ইন্টারাপশন) অবলম্বন করতে পারে, কিন্তু স্ত্রীর সাথে সঙ্গমকালে তার সম্মতি ব্যতিরেকে স্বামী তা পারে না। এর কারণ এই যে নবী স্বাধীন নারীর সাথে সঙ্গমকালে তার অনুমতি ব্যতিরেকে আজল প্রথা অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু দাসীর ক্ষেত্রে মনিবের জন্যে তা বৈধ করেছেন। এতদ্ব্যতীত, লালসা পরিতৃপ্তির জন্যে এবং সন্তানসন্ততি সৃষ্টির জন্য যৌনসম্পর্ক স্থাপন স্বাধীন নারীর অধিকার (যে কারণে স্বামী খোজা বা নপুংসক হলে স্ত্রীর স্বাধীনতা রয়েছে তাকে প্রত্যাখ্যান করার); কিন্তু দাসীর এরূপ কোন অধিকার নাই। সুতরাং স্ত্রীর অধিকারকে আহত করার স্বাধীনতা স্বামীর নাই, পক্ষান্তরে দাসীর ওপর মনিবের অধিকার সার্বভৌম। এমনকী যদি এমন হয় যে কোন ব্যক্তি অপরের ক্রীতদাসীকে বিয়ে করল, সে দাসীটির মনিবের অনুমতি ব্যতিরেকে তার সাথে আজল প্রথা পালন করতে পারবে না (অর্থাৎ বিয়ের পরও দাসীটি তার মনিবের সম্পত্তিই থেকে যায়)।

ইসলামের আরও কিছু মণিমুক্তা:

বিশেষ বিশেষ শর্তসাপেক্ষে পিতা তার ক্রীতদাসীটিকে ছেলের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। (মুয়াত্তা: ২৮.১৫.৩৮)।

মুয়াত্তা: বুক নং–২৮, হাদিস নং–২৮.১৫.৩৮:

“…আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের বরাত দিয়ে ইবরাহিম ইবনে আবি আবলা বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আব্দুল মালিক) জনৈক বন্ধুকে তার এক ক্রীতদাসী (ধার) দিয়েছিলেন, এবং পরবর্তীতে একদিন দাসীটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন- “আমি তাকে আমার ছেলেকে দিতে চেয়েছিলাম, সে দাসীটির সাথে এই এই করতে পারবে, এই এই করতে পারবে না”। আব্দুল মালিক বললেন- “মারওয়ান তোমার চাইতেও বেশী খুতখুতে ছিল। সে তার ছেলেকে নিজের দাসী দিল, তারপর বলল- ‘তার কাছে যেও না, কারণ আমি উন্মোচিত অবস্খায় তার পা দেখেছি’।”

মনিব তার মহিলা স্লেভ কিংবা পুরুষ স্লেভের ক্রীতদাসীর সাথে সেক্স করতে পারে। (মুয়াত্তা : ২৯.১৭.৫১)।

(এ এক সুকঠিন চেইন, ঠিকমতো অনুধাবন করতে পাঠকের কষ্ট হতে পারে। ধরুন আপনার একজন ক্রীতদাস বা একজন ক্রীতদাসী আছে। সেই ক্রীতদাস বা ক্রীতদাসীর আবার একজন ক্রীতদাসী আছে। এই হাদিস অনুসারে আপনি আপনার ক্রীতদাসের ক্রীতদাসী অথবা ক্রীতদাসীর ক্রীতদাসীর সাথে সেক্স করতে পারবেন। এবার বুঝুন ঠেলা)।

মুয়াত্তা: বুক নং–২৯, হাদিস নং–২৯.১৭.৫১:

“…আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন- “যদি কোন ব্যক্তি তদীয় দাসকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়, তাহলে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা উক্ত দাসের হাতে, এবং তার এই তালাক দেয়ার ক্ষমতার ওপর কারও কোন হাত নেই। মনিব ইচ্ছে করলে তার পুরুষ দাসের স্লেভ-গার্ল কিংবা মেয়ে-দাসীর স্লেভ গার্লকে (নিজের অধিকারে) নিয়ে নিতে পারে, এরূপ করতে চাইলে কেউ তাকে বিরত রাখতে পারে না”।

দাসীরা আপনার চাষাবাদ করার ক্ষেত্র, আপনার ইচ্ছে হলে আপনি ক্ষেত্রের ভেতরে জল ঢালতে পারেন, ইচ্ছে হলে তাকে তৃষ্ণার্তও রাখতে পারেন। অর্থাৎ দাসীর সাথে কয়টাস ইন্টারাপশন বা যোনির বাইরে বীর্যপাত করা আপনার ইচ্ছাধীন। (মুয়াত্তা: ২৯.৩২.৯৯)।

মুয়াত্তা: বুক নং–২৯, হাদিস নং–২৯.৩২.৯৯:

“…আল হাজ্জাজ ইবনে আমর ইবনে ঘাজিইয়া’র বরাতে দামরা ইবনে সাইদ আল-মাজিনি কতৃক বর্ণিত: তিনি (হাজ্জাজ) জায়িদ ইবনে ছাবিতের নিকট বসেছিলেন, এমনসময় ইবনে ফাহদ তার কাছে আসল। সে ইয়েমেন থেকে এসেছিল। বলল- “আবু সাইদ, আমার কয়েকটি ক্রীতদাসী আছে। আমার যে কয়জন স্ত্রী আছে তারা কেউ আমাকে তাদের মতো (দাসীদের মতো) তৃপ্তি দিতে পারে না; (তবে) সবাই যে আমাকে এমন তৃপ্তি দেয় যে তাদের দ্বারা সন্তান উৎপাদন করতে হবে তাও নয়। (এমতবস্থায়) আমি কি আজল অবলম্বন করতে পারি?” জায়িদ ইবনে ছাবিত বললেন- “তোমার কী মত, হাজ্জাজ”! “আমি বললাম- ‘আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! আপনার কাছ থেকে জানার জন্যেই আমরা আপনার কাছে আসি’। তিনি (আবারও) বললেন- ‘তোমার মত কী’! ‘আমি বললাম- ‘সে তোমার জমি। যদি তুমি ইচ্ছে করো জল দাও, যদি ইচ্ছে করো তৃষ্ণার্ত রাখ। জায়িদের কাছে আমি এমনটিই শিখেছি’। জায়িদ বললেন- ‘সে ঠিক কথাটিই বলেছে।”

যৌনক্রিয়ার উদ্দেশ্যে পরস্পরের মধ্যে ক্রীতদাসী ভাগাভাগি করা চলে।

এই নিয়মে পিতা তার পুত্রের, এমনকী পৌত্রের অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসীর সাথেও সেক্স করতে পারে। পুত্র স্বীয় পিতার অথবা মাতার, এমনকী স্ত্রীর অধিকারভুক্ত দাসীকেও ধার নিতে পারে এবং তার সাথে সেক্স করতে পারে। ঠিক যেমন আপনার নিজের কোন দুধেল গাভী নাই, আপনার ভাইয়ের বেশ কয়েকটি আছে। এমতবস্থায় আপনি দু’চার দিনের জন্যে ভাইয়ের কাছ থেকে একটি গাভী ধার নিতেই পারেন এবং দুধ খেতে পারেন। এতে দোষের কিছু নাই, কারণ শরিয়ার আইন মোতাবেক একজন ক্রীতদাসীর স্ট্যাটাস দুধেল গাভীর চেয়ে বেশি কিছু নয়। এই চমৎকার নিয়মটির সপক্ষে যে যুক্তি আছে, হেদাইয়া থেকে তা পেশ করা হলো। মনে রাখবেন, হেদাইয়া মুসলিম সমাজের অন্যতম প্রধান আইন গ্রন্থ, ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত জটিল আইনী বিশ্লেষণে আইনবিদগণ প্রায়শই এই বইয়ের সাহায্য নিয়ে থাকেন এবং সেই মোতাবেক সমাধান দিয়ে থাকেন।

পুত্র কিংবা পৌত্রের ক্রীতদাসীর সাথে সেক্স করা শাস্তিযোগ্য নয় (রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৩)।

পিতা কতৃক পুত্রের ক্রীতদাসী অথবা পৌত্রের ক্রীতদাসীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা শাস্তিযোগ্য নয়, যদিও এই ধরনের ক্রীতদাসী যে তার জন্যে বৈধ নয় সে সম্পর্কে তার জানা থাকা প্রয়োজন; কারণ এক্ষেত্রে যে ত্রুটি সংঘটিত হয়েছে তা ফলাফল-সঞ্জাত (by effect), যেহেতু ইহা এমন যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত যা নবীর বাণী দ্বারা সমর্থিত- “তুমি এবং তোমার সবকিছু তোমার পিতার” (Thou and thine are thy Father’s)…এবং পিতার ক্ষেত্রে যে নিয়ম পিতামহের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম, যেন সেও একজন পিতা। এই ধরনের যৌনক্রিয়ার ফলে যে সন্তানের জন্ম হয়, তার পিতৃত্ব আরোপিত হয় উপরোক্ত পিতার ওপর, যে ক্রীতদাসীটির মূল্যের জন্যে পুত্রের নিকট দায়ী থাকে।

অথবা কোন ব্যক্তি যদি তার পিতার ক্রীতদাসী, অথবা তার মাতার ক্রীতদাসী অথবা তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে, এবং এই আরজি পেশ করে যে উক্ত ক্রীতদাসী তার জন্যে অবৈধ নয়, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না; এবং অভিযোগকারীর ওপরও শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না (কিন্তু যদি সে এরূপ সম্পর্কের অবৈধতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে, …এবং ওই একই নিয়ম প্রযোজ্য যখন কোন ক্রীতদাস তার মনিবের সঙ্গে দাসীবৃত্তিতে আবদ্ধ মেয়ের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে। …কারণ এদের মধ্য হতে লাভ অর্জন করার স্বার্থ বিরাজিত; সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করেছে হয়তো সে ধারণা করেছে যে এ ধরনের উপভোগ তার জন্যে বৈধ, …যে কারণে তার ক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণার ত্রুটি আরোপযোগ্য; যদিও ইহা সুস্পষ্ট বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সমতুল্য। (জাহির রেওয়ায়েতেও) ওই একই আইন, যদি ওপরে বর্ণিত যে কোন ঘটনায় ক্রীতদাসীটি এই আরজি পেশ করে যে সে উক্ত কাজ বৈধ জেনে করেছে, এবং পুরুষটির তরফ হতে এই মর্মে কোন আরজি পেশ করা হয় নাই, …এবং যেহেতু একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে সংঘটিত যৌনক্রিয়া একটিমাত্র কাজ হিসেবে বিবেচিত, এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে যেকোন পক্ষ হতে পেশকৃত বৈধতা সংক্রান্ত আরজি ভ্রান্ত ধারণারূপ ত্রুটির সৃষ্টি করে যা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সুতরাং উভয়ের প্রতি শাস্তিপ্রয়োগ বাতিলযোগ্য।

আচ্ছা, স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গসমূহের ওপর দৃষ্টিপাত সম্পর্কে ইসলামি শাস্ত্রের বিধান কী? সবাই জানেন, গোপনে গোপনে এই রসালো কাজটি করতে পুরুষের লোভের অন্ত নাই। এই কারণেই প্লেবয় মার্কা পর্নো ম্যাগাজিনের রমরমা ব্যবসা বাজারে। ঝকঝকে মলাটের ওপর নগ্ন নারীমুর্তি নিয়ে বিচিত্র সব ম্যাগাজিন প্রতিনিয়ত ডাকছে আপনাকে, লুকিয়ে লুকিয়ে এক ঝলক দেখে চোখের সুখ মিটিয়ে নিচ্ছেন আপনি। তবে কোন ইসলামি ভাই কখনও তা স্বীকার করবে না। যৌনাঙ্গের কথা বাদ দিন, তাদের মতে স্ত্রীজাতির নাভির নীচে দৃষ্টিপাত করা সরাসরি হারাম। এতে কবিরা গুনাহ হয়। এমনকী মেয়েদের খোলা হাতের দিকে তাকানোও পাপ, কারণ কেজানে কখন সেই ‘মৃণালসদৃশ্য ভুজযুগল’ হতে মদনশর বের হয়ে ইসলামি ভাইয়ের নরম বুক বিদ্ধ করে বসে। ইসলামি ভাইদের নৈতিকতা এতটাই উঁচু আর ভঙ্গুর যে সুরক্ষিত দূর্গে আবদ্ধ করে না রাখলে যেকোন সময়ে তা ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে। স্ত্রী অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত না করার এই ইসলামি বিধান কী সকলের বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য? আপনি বিশ্বাস করুন আর না করুন, এই বিধান সকলের বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য নয়। নারীটি যদি দূর্ভাগ্যক্রমে দাসী হয়, তবে তার সর্বাঙ্গ ডিসপ্লে করা হার্ন্ড্রেড পারসেন্ট জায়েজ। আমি আবার বলছি তার সর্বাঙ্গ; অর্থাৎ তার বক্ষ, তার যোনি, তার ভগাঙ্কুর, তার পায়ুপথ সবকিছুকেই আপনি আপনার দৃষ্টি দিয়ে ইচ্ছেমত লেহন করতে পারেন। এতে কোন পাপ হবে না আপনার। মাশাল্লাহ, কী অপূর্ব নেয়ামত আল্লাহপাক আপনার জন্যে সৃষ্টি করে রেখেছেন। আমার কথা যদি আপনার বিশ্বাস না হয়, নীচের হাদিসটি পড়ুন।

স্লেভ-উয়োম্যানের (ক্রীতদাসী) জননেন্দ্রিয়ের প্রতি তাকানো জায়েজ (রেফারেন্স-১১, পৃ-৫৯৯)।

স্ত্রী অথবা ক্রীতদাসীর শরীরের যেকোন অংশের দিকে তাকানো জায়েজ:

কোন লোক তার ক্রীতদাসীর শরীরের যে কোন অংশের দিকে তাকাতে পারবে, এমনকী জননেন্দ্রিয়ের প্রতিও, যদি সে ইচ্ছে করে, তবে শর্ত থাকে যে সে নিষিদ্ধ সম্পর্কের আওতায় পড়ে না; এবং সে তার স্ত্রীর সর্বাঙ্গের প্রতিও তাকাতে পারবে, কারণ নবী বলেছেন-

“তোমার স্ত্রী এবং ক্রীতদাসী ছাড়া আর সকলের প্রতি দৃষ্টিকে সংযত রাখ”।

তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত সঙ্গমাদিতে একে অপরের যৌনাঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত না করাই উত্তম, কারণ নবী বলেছেন-

“তোমরা যখন স্বগোত্রীয় স্ত্রীলোকের সাথে সঙ্গম করবে, তখন যতদুর পার নিজেদেরকে ঢেকে রাখবে; এবং ততটা উলঙ্গ হয়ো না, কারণ গর্দভ প্রজাতি এরূপ করে থাকে”।

উপরোক্ত নির্দেশে স্ত্রীর সাথে যৌনসঙ্গমকালে সংযত আচরণ অনুসরণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে দাসী-প্রজাতির সাথে যথেচ্ছ আচরণ করা থেকে বিরত রাখতে কে তাকে নিষেধ করবে? বস্তুত: ইসলামের দৃষ্টিতে দাসী বাজার থেকে কিনে আনা একটি সেক্স মেশিন ছাড়া আর কিছু না, তার প্রভু বা মাস্টার মেশিনটিকে যেভাবে খুশি সেভাবে চালাতে পারে, যা সে স্ত্রীর ক্ষেত্রে পারে না। কেন ইবনে ফাহদ স্ত্রীদের চেয়ে দাসীদের কাছে বেশি তৃপ্তি পায় তার নিগুঢ় রহস্যটি বোধ হয় এখানেই নিহিত (দ্রষ্টব্য: ওপরে বর্ণিত মুয়াত্তা: বুক নং-২৯, হাদিস নং-২৯.৩২.৯৯)।

ইসলামপূর্ব এবং ইসলাম পরবর্তী আমলে অমানবিক যৌন-দাসত্ব প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথাকে ইসলাম সমর্থন করে এবং ইসলামের মহা-মনিষীরা তাদের জীবনে তা নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন। কিন্তু মুশকিল হলো এই যে আধুনিক ইসলামপন্থীরা এই সত্যটা স্বীকার করতে চান না। তারা খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে প্রমাণ করতে চান যে, ইসলাম দাসীদের সাথে সহবাসের অনুমতি দিয়েছে ঠিকই, তবে সহবাসের আগে দাসীটিকে বিয়ে করে নিতে হবে। তাদের এই যুক্তি যে নেহায়েতই খোঁড়া যুক্তি এবং আসল সত্যকে আড়াল করার অপপ্রয়াস, আশাকরি ইসলামি শাস্ত্র ঘেঁটে আমি এতোক্ষণে তা প্রমাণ করতে পেরেছি। ক্রীতদাসী এবং স্ত্রী যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন দু’টি প্রজাতি, আশাকরি পাঠক-পাঠিকরা তা ভালভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। আমি এখন শেষ তথ্যটি পেশ করে প্রসঙ্গটির এখানেই ইতি টানতে চাই। আসল সত্য এই যে, একজন মুসলমান বাজার থেকে ক্রীতদাসী ক্রয় করে তার সাথে সেক্স করতে পারে, তবে তাকে বিয়ে করতে পারে না! নিজের ক্রীতদাসীকে বিয়ে করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ! বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তাহলে হেদাইয়া বর্ণিত নীচের আইনটি পড়ে নিন।

নিজের ক্রীতদাসীর সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে সেক্স করা জায়েজ (প্রাগুক্ত–পৃ–৩১৭)।

আইনের দৃষ্টিতে বিবাহের অযোগ্যতা:

বিবাহের ক্ষেত্রে নয়টি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যেমন-

(৮)- এমন স্ত্রীলোক যে সম্পত্তি (prohibited by reason of property), তার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ। যথা- নিজের ক্রীতদাসীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অবৈধ (অপরের মালিকানাধীন দাসীকে বিবাহ করা বৈধ)।

 হস্তমৈথুন (Masturbation)


কী? আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। এমন নাপাক কথা কোন ইমানদার বান্দা মুখেও আনতে পারে না। হস্তমৈথুনের নাম শুনলে ইসলামপন্থীরা ঠিক এভাবেই রিঅ্যাক্ট করে উঠবেন। তবে আপনি তো আর ইসলামপন্থী নন, আমাদের মতোই দোষেগুণে গড়া সাধারণ মানুষ। সত্যি করে বলুন তো, আপনার অতীত জীবনে আপনি কি কখনও এই ‘শয়তানি’ কাজটি করেন নি? কিংবা এখনও মাঝে মধ্যে করেন না? যদি আপনার উত্তর না বাচক হয়, তবে আপনি মানব প্রজাতির সেই বিরল দুই/এক পারসেন্ট ভাগ্যবান লোকদের অন্যতম যারা জীবনেও হস্তমৈথুন করে নি। বাদবাকী আটানব্বুই/নিরানব্বুই শতাংশ মানবসন্তান তাদের স্বীয় হস্তযুগলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং ব্যাভিচার করেছে। আল্লাহপাক সেই সব নাফরমান বান্দাদের জন্যে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।


প্রকৃতিতে আমরা দেখতে পাই, প্রজননক্ষম প্রতিটি প্রাণী মাস্টারবেশনের মাধ্যমে যৌন আবেগের উপশম ঘটিয়ে থাকে। এ এমন এক সহজ, নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে প্রাণীকুলের প্রতিটি প্রজাতি যৌনতৃপ্তি লাভ করতে পারে। এ এক অতি সাধারণ যৌন আচরণ, বিধাতা যেদিন থেকে প্রাণীজগত সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই এই তাগিদ প্রাণীদেহে এনকোড করে দিয়েছেন এবং প্রাণীগণ বিশ্বস্তভাবে প্রকৃতির এই নিয়মটি প্রতিপালন করে আসছে। আপনার বিশ্বাস না হলে যে কোন চিকিৎসাবিদ কিংবা সেক্স থেরাপিস্টের কাছে জেনে নিতে পারেন। তারা সাক্ষ্য দেবে যে এটি নেহায়েতই নির্দোষ একটি জৈব আচরণ, যা কখনও কখনও মানবদেহের উপকারেও আসতে পারে। মানুষ যখন অত্যধিক মানসিক পীড়নের মধ্যে অতিবাহিত করে এবং আবেগ প্রশমনের আর কোন সহজ পদ্ধতি তার সামনে খোলা থাকে না, এই সহজলভ্য নির্দোষ পদ্ধতির মাধ্যম সে দেহমনের প্রশান্তি লাভ করতে পারে। পাশ্চাত্য সমাজে আতি নিরীহ এই যৌন পদ্ধতিটি সাধারণের কাছে DIY সেক্স (Do It Yourself) নামে পরিচিত। আজকাল অনেক চিকিৎসালয়ে স্পার্ম-ব্যাংক থাকে; হস্তমৈথুনের মাধ্যমেই সেখানে রোগীর শরীর থেকে স্পার্ম কালেকশন করা হয়ে থাকে। অথচ শরিয়ার বিধান অনুযায়ী নিরীহ এই সেক্সটি একবারে হারাম।


আপনি যদি কখনও গোপনে গোপনে এই ভয়ঙ্কর কাজে নিয়োজিত থাকেন, মনে রাখবেন যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সিক্রেট পুলিসবাহিনী অর্থাৎ ফেরেশতাগণ আপনার প্রতিটি আচরণ রেকর্ড করে রাখছে। আপনি নিজের সাথে নিজে ব্যাভিচার করছেন, তার প্রতিটি ইভেন্ট ভিডিও করে রাখছে ফেরেশতারা। রোজ হাশরের দিন তা আপনার সামনে উপস্থাপিত করা হবে এবং এই জঘন্য কাজের জন্যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে আপনাকে। পরকালে আপনি যে শাস্তি পাবেন তা নিশ্চিত, কারণ ফেরেশতাদের ভিডিওচিত্রে আপনার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে। তবে শরিয়া-দারোগা ইহকালে কীভাবে আপনাকে শাস্তি দিবে সেই বিষয়ে আমি কিঞ্চিৎ ধন্দে আছি। লোকে অপকর্মটি করে থাকে অত্যন্ত গোপনে। শরিয়ার দৃষ্টিশক্তি যদি শকুনের মতো প্রবলও হয়, তথাপী প্রতিটি লোকের টয়লেট কিংবা বাথরুমে তার মরাল পুলিসবাহিনী পাঠানো কোনমতেই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় ভূপৃষ্ঠে হস্তমৈথুনজনিত পাপের শাস্তি কার্যকর করার মতো শক্তি শরিয়ার আছে বলে মনে হয় না। তাই বলে আপনার নিশ্চিন্ত হওয়ার কোন কারণ নাই, DIY সেক্স পালনরত সেক্স-ম্যানিয়াকদের জন্যে পরকালে অপেক্ষা করে আছেন সংক্ষুব্ধ স্বয়ং আল্লাহ। কঠিন শাস্তি দিবেন তিনি। সেই শাস্তির ধরন কী হবে তা কী আপনি জানতে চান? ইসলামের দিকপালরা কঠিন গবেষণা করে আবিস্কার করেছেন যে এই জঘন্য ব্যাভিচারের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ পুনরুত্থানের দিন প্রতিটি মৈথুনকারীর হাত গর্ভবতী হয়ে কবর থেকে বেরুবে! মাশায়াল্লাহ! কী অসীম কুদরত তার!!


আপনার সংকীর্ণ জ্ঞানে আপনি এতদিন জেনে এসেছেন যে শুধুমাত্র স্ত্রী-প্রজাতিই গর্ভধারণ করতে পারে। পুরুষ মানুষ, বিশেষ করে তার হাত গর্ভবতী হয়, এই থিওরী আপনার কাছে অভিনব বলে মনে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আল্লাহপাক সর্বশক্তিমান, তার পক্ষে সবই সম্ভব। কেন, তিনি কি পুরুষ মানুষের ছোঁয়া ছাড়া কুমারীকে মা বানান নি (বিবি মরিয়ম)? তিনি কি মেনোপজে যাওয়া অশীতিপর বৃদ্ধাকে গর্ভবতী করেননি (জাকারিয়া নবীর স্ত্রী)? হাত কেন, তিনি ইচ্ছে করলে আপনার গায়ের লোমের মধ্যেও গর্ভসঞ্চার ঘটিয়ে দিতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে এই থিওরি আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি। কিন্তু একটি হিসেব আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। পুরুষ মৈথুনকারীদের হাত গর্ভবতী হলো ঠিক আছে। কিন্তু মৈথুনকারী যদি স্ত্রীলোক হয়? তার বেলায় কী হবে? তলপেটের মতো তার হাতটিও কী ফুলে উঠবে? ছ্যা ছ্যা, সে বড় বিশ্রী ব্যপার হবে। আপনি হয়তো ভাবছেন, এ কোন ধরনের অপঅশ্লীল প্রশ্ন? স্ত্রীলোক আবার মৈথুনকারী হয় কীভাবে? স্ত্রীলোক কী কখনও হস্তমৈথুন করতে পারে? হস্তমৈথুনের জন্যে সন্মুখভাগে যে দণ্ডটি প্রয়োজনীয়, স্ত্রীদেহে তো তা নাই? আপনার সন্দেহের জবাবে জেনে নিন যে স্ত্রীলোকেরাও হস্তমৈথুন করে, যদিও তার প্রক্রিয়া পুরুষের চেয়ে ভিন্নতর।


শেরি হাইট নাম্নী এক বিখ্যাত যৌনগবেষক মহিলাদের মাস্টারবেশনের ওপর এক নিবিড় জরীপ পরিচালনা করেন। এই জরিপ থেকে যে তথ্য বেরিয়ে আসে তাতে দেখা যায় যে জরিপকৃত মহিলাদের মধ্যে ৮২% ভাগ স্বীকার করেছে যে তারা কোন না কোন সময়ে মাস্টারবেশন করেছে কিংবা এখনও করে। ৮২ শতাংশের এই ফিগারের সাথে আরও আট/দশ শতাংশ যোগ করা বোধ হয় অন্যায় হবে না, কারণ নিশ্চিতভাবেই কিছু মেয়ে আছে যারা এই বিব্রতকর প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয় নি কিংবা মিথ্যা জবাব দিয়েছে। তা’হলে দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের মধ্যেও শতকরা নব্বুই জন মাস্টারবেশন করে যৌনতৃপ্তি ঘটায়। (পৃ-৫৯, শেরি হাইট, দ্য হাইট রিপোর্ট: আ ন্যাশনওয়াইড ষ্টাডি অব ফিমেল সেক্সুয়ালিটি, ১৯৭৭, প্রকাশক-সুমিট বুকস, নিউ ইয়র্ক)। (উল্লেখ্য, গবেষক শেরি হাইট নিজেও একজন মহিলা)।


মেয়েরা কীভাবে মাস্টারবেশন করে থাকে তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে শেরি লিখেছেন


“মেয়েদের সেক্সুয়ালিটি বুঝার জন্যে তারা কীভাবে মাস্টারবেশনের মাধ্যমে চরম পুলক (অরগাজম) লাভ করে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু কাজটি ঘটে থাকে অত্যন্ত গোপনে এবং কীভাবে কাজটি করতে হবে তা কেউ তাকে শিখিয়ে দেয় নি, সুতরাং মাস্টারবেশনকে একটি নিখাদ জৈব আচরণ হিসেবে বিবেচনা করাই সঙ্গত। প্রাণীকুল যে কয়টি সহজাত আচরণ (instinctive behavior)প্রদর্শন করে থাকে, মাস্টারবেশন নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম”।


তিনি আরও লিখেছেন


“মাস্টারবেশনের মাধ্যমে মেয়েরা অতি সহজে যখন খুশী তখন চরম পুলক আহরণ করতে পারে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কীভাবে নিজের দেহটিকে উপভোগ করতে হয় নারীরা তা জানে, কীভাবে করতে হবে তা জানার জন্যে কাউকে জিজ্ঞেস করারও দরকার নেই তাদের। নারীজাতির এই সেক্সুয়াল আচরণ নেহায়েতই প্রাকৃতিক, কোন প্রব্লেম নেই এতে। প্রব্লেম যদি কোথাও থেকে থাকে তা আছে সেক্সসম্পর্কিত সমাজের প্রচলিত সংজ্ঞায়, যে সংজ্ঞা সমাজই নির্ধারণ করেছে এবং নারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের সুগুপ্ত সেক্সুয়ালিটিকে শেয়ার করে আমরা কীভাবে মাস্টারবেশন করি সেকথা প্রকাশ করলে ফিমেল-সেক্সুয়ালিটি সম্পর্কে সমাজের ধারণার একধাপ অগ্রগতি হবে; সেক্স এবং শারীরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে আমাদের জানা প্রথাগত ধারণার পরিবর্তন ঘটবে”।


(পৃ-৫৯-৬০)।


উপর্যুক্ত সমীক্ষা থেকে মাস্টারবেশনের ভালমন্দ সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা পাওয়া যায। শেরির উপরোক্ত গবেষণাপত্র অত্যন্ত সঠিক ও বিশ্বস্ত হিসেবে বিজ্ঞানমহলে সমাদৃত, মাস্টারবেশনের ওপর এত প্রামাণ্য গবেষণাপত্র আজ পর্যন্তও কেউ রচনা করতে পারেন নি, এমনকী মাস্টার অ্যান্ড জনসনও নন। পরীক্ষিত এইসব বৈজ্ঞানিক সত্য-উপাত্তকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়ে ইসলাম কীভাবে ঘোষণা করে যে মাস্টারবেশন একটি জঘন্য ক্রাইম, এর জন্যে মহাশাস্তি নির্ধারিত হয়ে আছে?


শেরির গবেষণা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অপরপক্ষে ইসলামী শাস্ত্র বিধান দিয়ে রেখেছে উওন সেক্সকারীরা ম্যানিয়াক, রোজ হাশরের দিন তারা গর্ভিনী দু’খান হাত নিয়ে কবর থেকে বেরুবে। মেয়েদের কী হবে, ডাবল প্রেগনান্সির ভার নিয়ে তারা কবর থেকে বেরুবে কীনা, সে সম্পর্কে ইসলামী শাস্ত্রবিদরা নীরব। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক মশহুর মুফতির ফতোয়া উপভোগ করুন পাঠক।


ইসলামিক কোয়েশ্চেন অ্যান্ড অ্যানসার অনলাইন, মুফতি ইব্রাহিম দেশাই


দারুল ইফতাহ, মাদ্রাসা ই’নামিয়াহ


কেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা।


http://www.islam.tc/cgi-bin/askimam/ask.pl?q=165&act=view


হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন


‘যে ব্যক্তি স্বীয় হস্তের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় (অর্থাৎ মাস্টারবেশন করে), সে অভিশপ্ত’।


(তফসির মাজহারি, ভলিউম–১২, পৃ–৯৪)


সাইদ বিন জুবায়ের বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন ‘আল্লাহতায়ালা এক দল লোককে শাস্তি দিবেন, কারণ তারা নিজেদের যৌনাঙ্গের সাথে খেলা করত’।


আতা (রা:) বলেন – ‘কিছুসংখ্যক লোক এমন ভাবে পুনরুথিত হবে যেন তাদের হস্তদ্বয় গর্ভবতী, আমার মনে হয় তারা সেই সব লোক যারা হস্তমৈথুন করে’।


উপরোক্ত শাস্তির কথা বিবেচনা করে আমাদের মোমেন ও মোমেনা বান্দাদের কী উচিত নয় এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকা? যদিও আমি প্রায় নিশ্চিত যে শারিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও তাদের অধিকাংশ এই সহজ অনন্দদায়ক অভ্যাসটি আগের মতোই চালিয়ে যাবেন। জীবন সংগ্রামে নিরন্তর ডুবে থাকা একজন আদম সন্তানের কাছে আনন্দ আহরণের এমন সহজ পদ্ধতি আর কী আছে, যা বছরের প্রতিটি দিন ইচ্ছে হলেই আপনার হাতের মুঠোয় ধরা দেয় এবং কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না? শরিয়া এই অভ্যাসকে ভয়ঙ্কর ও ঘৃণ্য বলে চিহ্নিত করেছে, আমার মনে হয় মোমেনদের ক্কালব হতে এই শয়তানি ওয়াছওয়াছা মুছে ফেলে শরিয়ার জয়ধ্বজা ওড়াতে হুজুরদের উচিত ‘কুইট স্মোকিং’ এর অনুরূপ একটি ক্যম্পেইন চালু করা। ‘কুইট মাস্টারবেশন’। তারপরেও আমি বলব, কুইট স্মোকিং ক্যাম্পেনের মতোই ‘কুইট মাস্টারবেশন’ আন্দোলনও নিদারুণভাবে ব্যর্থ হবে। কারণ জীবদেহে আদিম উত্তেজনাটি একবার জেগে উঠলে তা অবদমিত করে রাখা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। সাধে কী লোকে বলে- a standing prick and/or a wet vagina has no conscience- উথিত লিঙ্গ আর ভেজা যোনি বিবেকের ধার ধারে না।


মাপ করবেন পাঠক, এরূপ অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করার জন্যে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কী করব, প্রাণীর সহজাত ও প্রবলতম এই জৈবতাড়নার স্বরূপ সঠিকভাবে প্রকাশ করার এরচেয়ে ভাল কোন শব্দ আমি আর খুঁজে পেলাম না। এ এমন এক তাড়না, যার সামনে পৃথিবীর কোন যুক্তি কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারে না। এমন যে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, ঘরসংসার ত্যাগ করে জঙ্গলে পলায়ন করেছে, সেও এই কালভূজঙ্গের হাত থেকে নিস্কৃতি পায় না। কম দুঃখে কী আর লালন বলেছেন-


‘ঘর ছেড়ে সে বনেতে যায়, স্বপ্নদোষ কী হয় না তথায়?’


ধুমপান করলে ক্যান্সারের ভয় আছে এটি জেনেও যেমন লোকে ধুমপান করে, ঠিক তেমনিভাবে পরকালে আল্লাহ তাদের জন্যে ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন সেটা জেনেও লোকে মাস্টারবেট করবেই। খাদ্য সংগ্রহের জন্যে প্রাণী সবকিছুই করতে পারে। খাদ্যের পর প্রাণীর দ্বিতীয় প্রধান যে তাড়না তা সেক্স। সেক্সের তাড়না। শত ভয় দেখিয়েও মানুষকে এই জৈবিক প্রেরণা থেকে দূরে রাখা যাবে না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মাস্টারবেশন সম্পর্কে ইসলামি বিধি-নিষেধ পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।


মোল্লাদের শত চোখ রাঙানি সত্বেও যেসব মুসলমান এই ঘৃণ্য অভ্যাসটি এখনও পরিত্যাগ করতে পারেন নি, তাদের জন্যে গোটাকয়েক শরিয়া আইন নিম্নে পেশ করা হলো। ভালভাবে পড়ে দেখুন, আপনার সবকিছু মনে হয় একেবারে শেষ হয়ে যায় নি। নিয়মগুলি ফলো করলে কোন ফাঁক-ফোকর দিয়ে আপনি রেহাই পেয়েও যেতে পারেন; আপনার হস্তযুগল গর্ভবতী অবস্থায় সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হবে, সেই নিদারুণ লজ্জার হাত থেকে আপনি বেঁচে যেতেও পারেন। চেষ্টা করতে দোষ কী!


মাষ্টারেবেশন:


গোসল ফরজ…(রেফারেন্স-৮, পৃ-৭৯)।


ই-১০.১- নাপাকি দুর করার জন্যে পুরুষের জন্যে গোসল ফরজ হয়, যখন..


১) তার শরীর হতে বীর্য নির্গত হয়;


২) অথবা তার লিঙ্গাগ্র যোনির ভেতর প্রবেশ করে;


এবং স্ত্রীলোকের জন্যে ফরজ হয়, যখন…


১) তার যোনি হতে সেক্সুয়াল ফ্লুইড নির্গত হয় (সেক্সুয়াল ফ্লুইডের সংজ্ঞা নিম্নে প্রদত্ত হলো);


২) তার যোনির ভেতর লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করে;


৩) এবং তার ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যায়;


৪) সন্তানপ্রসবের পর ‘পোস্টন্যাটাল লকিয়া’ (বিশেষ ধরনের স্রাব) বন্ধ হয়, কিংবা (শুকনো প্রসবের ক্ষেত্রে) সন্তান ভূমিষ্ট হয়।


(এন: পুরুষের বীর্য বা স্পার্ম এবং মেয়েদের সেক্সুয়াল ফ্লুইডের প্রতিশব্দ হিসেবে আরবীতে ‘মানিইয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যৌনসঙ্গমকালে চরম পুলক লাভের সময় উভয়ের যৌনাঙ্গ হতে স্পার্ম বা সেক্সুয়াল ফ্লুইড যাই-ই নির্গত হোক, আরবী ভাষায় তার সাধারণ নাম মানিইয়া)।


 


উপবাস ভঙ্গ..(প্রাগুক্ত, পৃ–২৮৪–২৮৬):


ম.১.১৮(৯) যৌনসঙ্গম (ইচ্ছাকৃত সঙ্গমের ক্ষেত্রে যদি অর্গাজম নাও হয় তবুও), অথবা অযৌনস্থানের সাথে ঘর্ষণজনিত কারণে কিংবা মাস্টারবেশনজনিত কারণে অর্গাজম (এই ধরনের অর্গাজম অবৈধ উপায়ে হোক, যেমন নিজ হস্তে কৃত, কিংবা বৈধ উপায়ে হোক, যেমন কোন ব্যক্তির স্ত্রীর হস্তে কৃত, তাতে কিছু আসে যায় না, রোজা ভঙ্গ হবেই)।


১১.১৯(৩) অর্গাজম, তাহা স্পর্শজনিত কারণে হোক (যথা-চুম্বন, আলিঙ্গন, একে অপরের উরুর ওপর শুয়ে থাকা কিংবা অন্য কোন উপায়) অথবা মাস্টারবেশনের কারণে হোক;


সমগ্র কোরান অনুসন্ধান করেও আমি মাস্টারবেশন শব্দটি কোথাও খুঁজে পাইনি। সুতরাং মাস্টারবেশন পুরোপুরি হারাম, সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তবে কোন কোন মোল্লা নিম্নে বর্ণিত সুরা মুমেনুনের (২৩:৫-৭) নং আয়াতের উল্লেখ করে মাস্টারবেশনকে হারাম বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। তাদের এই ব্যখ্যা সঠিক কীনা তার ভার আমি মৈথুনকারীদের হাতে ছেড়ে দিলাম। তারাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, কাজটি তারা চালিয়ে যাবেন, না হারাম ভেবে এ থেকে বিরত থাকবেন?


০২৩.০০৫- যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।


০২৩.০০৬- নিজেদের পত্নীগণ এবং অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।


০২৩.০০৭- সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী।


কোরান ছেড়ে শরিয়া বিধি পর্যালোচনা করি এবার। শরিয়াবিশেষজ্ঞ ইসলামি জুরিস্টদের মতে DIY সেক্স পুরোপুরি হারাম।


অবৈধ…ডব্লিও৩৭.১ (রেফারেন্স–৮, পৃ–৯৩২)


ডব্লি−ও৩৭.১ (এন): নিজের হাতের সাথে মৈথুন করা অবৈধ। ইমাম শাফেয়িকে হস্তমৈথুনের প্রেক্ষিতে উপরে বর্ণিত আল্লাহপাকের বাণী (২৩:৫-৭) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- উপরোক্ত আয়াতগুলিতে যার যার সাথে সেক্স বৈধ করা হয়েছে, তার বাইরে যে কোন ধরনের সেক্স নিষিদ্ধ; এদের বাইরে আর কারও সাথে সেক্স বৈধ এই ধারণা শেষের আয়াতদ্বারা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।


সমকামীতা/সডোমি:


মাস্টারবেশনের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা থাকলেও সমকামীতার ব্যাপারে কোরানের নির্দেশ সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। কোরানে সডোমিকে সমকামীতার (হোমোসেক্সুয়ালিটি) প্রতিশব্দ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যদিও সঠিক অর্থে সডোমি এবং সমকামীতা এক জিনিশ নয়। সে যাহোক, এই প্রবন্ধে আমরা সডোমি এবং সমকামীতাকে একই অর্থে ব্যবহার করবো।


বর্তমান বিশ্বে সমকামীতা একটি গুরুতর ইস্যু হিসেবে বিবেচিত। গে এবং লেসবিয়ান সম্প্রদায় সমাজে নিজেদের ন্যয্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুনিয়াজোড়া আন্দোলন করে আসছে। (ইংরেজি ভাষায় পুরুষ সমকামীরা গে এবং মেয়ে সমকামীরা লেসবিয়ান নামে অভিহিত)। হোমোসেক্সুয়াল কমিউনিটিগুলি কর্তৃক পরিচালিত এই আন্দোলনের ফলে মানব প্রজাতির এই যৌন আচরণের প্রতি সমাজের ধারণা ক্রমে ক্রমে পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কোন কোন দেশে এই কমিউনিটিগুলি তাদের দাবী আদায়ে খুবই উচ্চকণ্ঠ। তাদের দাবী, তারাও সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক সম্প্রদায়ের মতোই, আর সব নাগরিকদের মতো তাদেরকেও সমান আইনি অধিকার দিতে হবে। তাদের অব্যাহত আন্দোলনের ফলে অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের নানান দেশে সমকামীদেরকে অন্যান্য স্বাভাবিক নাগরিকদের মতোই সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আইন করা হয়েছে, ব্যক্তির যৌন ক্রিয়াকলাপ একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়, এর জন্যে ব্যক্তির ওপর রাষ্ট্র কোনপ্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। প্রতিবছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিডনিতে এক জাঁকজমকপূর্ণ মেলার আয়োজন করা হয় (গ্র্যান্ড মার্দি ফেস্টিভাল) যেখানে গে এবং লেসবিয়ানদের সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে নানাবিধ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয় যে গে এবং লেসবিয়ান সম্প্রদায় মানব প্রজাতিরই বিশেষ এক গোষ্ঠি, ব্যক্তিগত যৌন আচরণের দায়ে কাউকে ঘৃণা কিংবা নির্যাতন করা উচিত নয়। আইনের দৃষ্টিতে তারা আর দশজন সাধারণ জনগণের সমতুল্য।


ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গীতে সমকামীদের জন্যে সমঅধিকারের দাবী নিতান্তই হাস্যকর একটি দাবী। সমকামী নারী-পুরুষ ইসলামের চোখে পশুর চেয়েও জঘন্য; যারা আল্লাহর দুনিয়ায় সমকামের মতো ক্রাইম অনুষ্ঠান করে থাকে তাদের জন্যে নির্ধারিত আছে সুকঠিন শাস্তি। এ কাজ প্রকৃতি বিরুদ্ধ, সুতরাং পরম করুনাময় আল্লাহরও বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মার্দি ফেস্টিভালে যারা সমকামের অধিকারের জন্যে চেঁচায়, দৈবাৎ যদি কোন ইসলামি প্যারাডাইজে ধরা খায় তারা, কঠিন মৃত্যুদণ্ড অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্যে। হ্যাঁ, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন উপযুক্ত শাস্তি নির্ধারিত নেই সমকামী পশুদের জন্যে।


সমকামীতার বিপক্ষে ইসলামের যে যুক্তি তা হলো, সমকামীতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ আচরণ। শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গবিশিষ্ট প্রাণী একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবে, প্রকৃতির এরকমই বিধান। ইসলামিস্টদের এই যুক্তি কতটা বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তা যাচাই করা যাক এবার। প্রাণীর বিভিন্নমুখী যৌনাচরণ নিয়ে সম্প্রতি বহু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এইসব গবেষণা থেকে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তাতে দেখা যায় যে পশু-জগতেও সমকামীতা বিরল ঘটনা নয়।


গবেষকরা আশ্চর্য হয়ে আবিস্কার করেছেন যে বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বেবুন ইত্যাদি প্রজাতির প্রাণীরাও মাঝে মাঝে সমলিঙ্গবিশিষ্ট সাথীটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমনকী মাছ এবং পাখীদের মতো নিম্নস্তরের প্রাণীদের মধ্যেও সমকামীতার অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়। এইসব গবেষণা হতে জীববিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে, বহুল প্রচলিত না হলেও সমলিঙ্গবিশিষ্ট প্রাণীকুলের মধ্যে যৌনাকর্ষণ প্রকৃতিবিরুদ্ধ কোন বিষয় নয়। মনুষ্যেতর প্রাণীদের মধ্যেও যেহেতু অভ্যাসটি বিরাজমান, সুতরাং সমকামীতাকে একটি ব্যতিক্রমী জৈব আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, অপ্রাকৃতিক কিংবা অতিপ্রাকৃতিক আচরণ হিসেবে নয়।


মানুষ যেহেতু জীবজগতেরই একটি অংশ, সুতরাং মানুষের মাঝেও এইরূপ আচরণ পরিলক্ষিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মধ্যেও একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী সমলিঙ্গবিশিষ্ট সঙ্গীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক প্রথাবিচ্যুত এই ক্ষুদ্র অংশটির প্রতি সমাজ কোন্ আচরণ করবে? সমাজ কী তাদেরকে অপরাধী, খুনী, ধর্ষণকারী হিসেবে বিবেচনা করে গুরুতর শাস্তি দেবে? সভ্য সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক সমকামীতাকে সমর্থন করে না ঠিকই, তাই বলে তারা সমকামী নারী-পুরুষকে খুনী বা ধর্ষণকারীর সমান আসনে বসিয়ে তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড চাপিয়ে দেবে, তাও কেউ প্রত্যাশা করে না। সভ্য মানুষ বড় জোর বলবে, সমকামীরা তাদের নিজেদের মতো করে থাকুক। যতক্ষণ না তারা সমাজের সংখ্যাগুরু অংশটির অধিকারের ওপর ক্ষতিকর কোনকিছু করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে যাওয়া কেন?


তবে ইসলামের কথা আলাদা। হাজার হলেও সাক্ষাৎ বেহেশত্ থেকে নেমে আসা এই ধর্ম, ভূপৃষ্ঠ হতে সমস্ত পাপীতাপী কাফের-মোশরেকদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইসলামী মোল্লাতন্ত্র কায়েম করাই এই স্বর্গীয় ধর্মের একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং সমকামীতাকে ইসলাম জ্বিনা বা ব্যভিচারের মতোই জঘন্য অপরাধ হিসেবে ট্রিট করে। সমকামীদের জন্যে কঠোরতম শাস্তির বিধান রয়েছে ইসলামে। কোরান, হাদিস এবং শরিয়ায় সমকামীতার যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, নিম্নে তা পর্যালোচনা করা হলো।


কোরান অনুসারে সডোমী হচ্ছে হযরত লুতের (আঃ) সম্প্রদায় কতৃক আচরিত একটি প্রথা। লুত ছিলেন ইসলামের আদি পুরুষ হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) ভ্রাতুষ্পুত্র। লুতের সম্প্রদায়ের বাসস্থান কোথায় ছিল কোরানে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ নাই। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে যা বুঝা যায় তাতে মনে হয় যে প্রাচীন সডোম বা গুমুরাহ নগরীতে ছিল তাদের বাস (রেফারেন্স-৬, পৃ-১৪৯)। বাইবেল বর্ণিত প্রাচীন এই শহর দু’টি যৌনবিচ্যুতির জন্যে কুখ্যাত ছিল। কোরানের নিম্নবর্ণিত আয়াতদৃষ্টে জানা যায়, এই শহর দু’টির সমকামী অধিবাসীগণ আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আসমান হতে নিক্ষিপ্ত ব্রাইমস্টোনের (গন্ধক বা সালফারনির্মিত প্রস্তরখণ্ড) আঘাতে অক্কা পায় সডোমবাসীরা। নিহতদের মধ্যে লুতের স্ত্রীও ছিলেন। তিনি কোন্ অপরাধে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তার পরিষ্কার কোন বিবরণ অবশ্য কোরানে নেই। লুত-সম্প্রদায়ের ধ্বংস বিষয়ক বর্ণনা কোরানে বহু সুরায় আছে (৭:৮০-৮৪, ২১:৭৪-৭৫, ২৬:১৬০-১৬৫, ২৭:৫৪-৫৮, ২৯:২৮-৩৫), তবে আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার জন্যে আমি একটিমাত্র সুরার উল্লেখ করব এখানে (৭:৮০-৮৪)।


৭:৮০- আর আমি লুতকে নবুয়ত দান করে পাঠিয়েছিলাম, যখন সে তার কওমকে বলেছিল: তোমরা এমন অশ্লীল ও কুকর্ম করেছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ আর করে নি।


৭:৮১- তোমরা স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা তোমাদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছ সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।


৭:৮২- কিন্তু তার জাতির লোকদের এটা ছাড়া আর কোন জওয়াবই ছিল না যে, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র লোক বলে প্রকাশ করছে।


৭:৮৩- পরিশেষে আমি লুতকে এবং তার পরিবারের লোকদেরকে শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম তার স্ত্রী ছাড়া, তার স্ত্রী ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত।


৭:৮৪- অতঃপর আমি তাদের ওপর মুষলধারায় বারিপাত করেছিলাম, সুতরাং অপরাধী লোকদের পরিণাম কী হয়েছিল লক্ষ কর।


আব্দুর রহমান ড’ই বায়হাকির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে সডোমী এমন একটি কাজ যা আল্লাহর মনে প্রচণ্ড ক্রোধের উদ্রেক করে (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪১)।


আল্লাহর ক্রোধ – বায়হাকি


আল-তিবরানি এবং আল-বায়হাকির বর্ণনায় দেখা যায়, প্রফেট মহম্মদ (দঃ) বলেছেন-


“চার ধরনের লোক আছে যারা আল্লাহর তীব্র ক্রোধ মাথায় নিয়ে সকালে ঘুম হতে জাগে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি মাথায় নিয়েই রাতে ঘুমাতে যায়”। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো- “তারা কে, হে আল্লাহর রাসুল”? নবী বলেন- “সেই সমস্ত পুরুষ যারা মেয়ে সাজতে চেষ্টা করে এবং সেই সমস্ত মেয়ে যারা পুরুষ সাজতে চেষ্টা করে (পোষাক-পরিচ্ছেদ এবং আচার আচরণ দ্বারা) এবং সেই সমস্ত লোক যারা পশুর সাথে সেক্স করে এবং সেই সমস্ত পুরুষ যারা পুরুষের সাথে সেক্স করে”।


বিভিন্ন ইসলামি সোর্সের উল্লেখ করে উক্ত বইয়ে (রেফারেন্স-৯) সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে সমকামীতা কবিরা গুনাহ্ বা মহাপাপ। ২৪২ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত কিছু অংশ এ-স্থলে উদ্ধৃত করা হলো।


“কোন ব্যক্তি যদি লালসাভরে কোন বালককে চুমো দেয়, মহান আল্লাহ তাকে এক হাজার বছর দোজখের আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেবেন।”


আরও বলা হয়েছে যে নবী বলেছেন-


“কোন ব্যক্তি যদি লালসাভরে কোন বালককে স্পর্শ করে, তার ওপর আল্লাহ, তার ফেরেশতাবর্গ ও সমস্ত মানবজাতির অভিশাপ বর্ষিত হয়”।


আব্দুর রহমান ড’ইয়ের উপরোক্ত মন্তব্য অবশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক বালককে চুম্বন করা কিংবা তার সাথে সেক্স করা সম্পর্কিত। সঠিকভাবে বলতে গেলে এ ধরনের সেক্সকে সমকামীতা না বলে শিশু নির্যাতন বলাই সঙ্গত যা নাকী সব ধরনের আইনেই দণ্ডনীয় অপরাধ বলে স্বীকৃত। সে যাহোক, আমরা যদি এ বিষয়ে কোরানের প্রতি দৃষ্টি ফেরাই দেখতে পাই যে সেখানে যে বর্ণনা রয়েছে তা হিপোক্রেসিতে পরিপূর্ণ। একদিকে তিনি সমকামীতার দোষে গোটা একটা গোত্রকে ধ্বংস করে ফেলছেন, আরেকদিকে তিনি তার পবিত্র গ্রন্থ মারফৎ আশ্বাস দিচ্ছেন যে প্রিয় বান্দাদের জন্যে তিনি যে বেহেশতের বাগানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা প্রচুর পরিমাণে মুক্তাসদৃশ্য তরুণ বালকে পরিপূর্ণ। পরকালে এইসব মুক্তাসদৃশ্য আসমানি বালকদের সেবা খাওয়ার লোভে কোন কোন সমকামী জিহাদি যদি শহীদ হওয়ার জন্যে উন্মাদ হয়ে উঠে তাহলে তাকে খুব বেশী দোষ দেয়া যায় কী?


কোরানিক বালকদের বর্ণনা সম্বলিত কিছু আয়াত নিম্নে সন্নিবেশিত করা হলো।


সুরা তুর (৫২):


০৫২.০২০- তারা বসবে শ্রেণীবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে, আমি তাদের মিলন ঘটাবো আয়তলোচনা হুরদের সঙ্গে।


০৫২.০২১- এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তানসন্ততি তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করবো তাদের সন্তানসন্ততিদেরকে এবং তাদের কর্মফল আমি কিছুমাত্র হন্সাস করবো না, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।


০৫২.০২২- আমি তাদেরকে দেব ফলমূল এবং মাংস যা তারা পছন্দ করে।


০৫২.০২৩- সেখানে তারা একে অন্যের নিকট হতে গ্রহণ করবে পানপাত্র, যা হতে পান করলে কেউ অসার কথা বলবে না এবং পাপকর্মেও লিপ্ত হবে না।


০৫২.০২৪- সেখানে তাদের জন্যে নিয়োজিত থাকবে সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ্য কিশোরগণ।


০৫২.০২৫- তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে,


০৫২.০২৬- এবং বলবে: আমরা পূর্বে পরিবার পরিজনের মধ্যে শঙ্কিত অবস্থায় ছিলাম।


০৫২.০২৭- অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে অগ্নি-শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। সুরা- দাহর (৭৬)


০৭৬.০১৭- সেখানে তাদের পান করতে দেয়া হবে জানজাবিল মিশ্রিত পানীয়,


০৭৬.০১৮- জান্নাতের এমন এক প্রস্রবণের, যার নাম সালসাবিল।


০৭৬.০১৯- তাদেরকে পরিবেশন করবে চির কিশোরগণ, তাদেরকে দেখে মনে হবে যেন তারা বিক্ষিপ্ত মুক্তা,


০৭৬.০২০- তুমি যখন সেখানে দেখবে, দেখতে পাবে ভোগবিলাসের উপকরণ এবং বিশাল রাজ্য।


ভালভাবে সমগ্র কোরান সার্চ করলে আপনি এমন আরও অনেক ঐশ্বরিক ওয়াদা পেয়ে যেতে পারেন। আয়তলোচন হুর আর সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোর বেহেশতি বালকের টোপ ছাড়া কামার্ত বেদুঈনদেরকে ইসলামের পতাকাতলে নিয়ে আসার আর কোন উপায় রাব্বুল আলামিনের হাতে অবশিষ্ট ছিল!


ইসলামপন্থীরা হয়তো এই বলে কৈফিয়ৎ দেবেন যে মুক্তাসদৃশ্য এইসব বালকরা বেহেশতের পরিচারক মাত্র; বেহেশতবাসীদের হাতে পানপাত্র যুগিয়ে দেয়াই তাদের কাজ, সেক্স করা নয়। তাদের এই যুক্তি নেহায়েতই খোড়া যুক্তি মুখ রক্ষা করার প্রয়াসমাত্র। বেহেশতবাসীর হাতে সুরাপাত্র সার্ভ করার জন্যে আল্লাহপাক প্রচুর পরিমাণে আয়তলোচনা ‘সাকি’র ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যারা এতই লোভনীয়া যে দৈবাৎ তাদের মুখবিবর হতে একবিন্দু থুথু পৃথিবীতে ছিটকে পড়লে সমস্ত ভূপৃষ্ঠ নাকি মেশক-আম্বরের গন্ধে আমোদিত হয়ে যাবে। এইসব হুরদের সাথে বেহেশতি পুরুষরা যখন সেক্স করবে, প্রতিবার সেক্স করার পর আল্লাহর কুদরতে হুরটি সাথে সাথে আবার কুমারি হয়ে যাবে! চিরকুমারি, চির অক্ষতযোনি। সোবাহানাল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। এখন প্রশ্ন, এতসব হুরের পাশাপাশি মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোর বালকদের নিয়োজিত করার কী দরকার ছিল আল্লাহর? কেন মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোরের পরিবর্তে হাবসী পরিচারক নিযুক্ত করলেন না তিনি? আরবদেশের তৎকালীন নিয়মানুযায়ী হাবসী ক্রীতদাসরাই প্রভুর হাতে পানপাত্রটি এগিয়ে দিত। সেদিকে না গিয়ে চিরকিশোর মুক্তার মতো জ্যোতিষ্মান বালকদেরকে নিয়োজিত করতে গেলেন আল্লাহ। কেন? প্রকৃত সত্য এই যে জিহাদিদের মাঝে একটি অংশ ছিল বিষমলৈঙ্গিক সেক্সে যাদের পরিতৃপ্তি হতো না। সমলৈঙ্গিক সেক্স, বিশেষ করে কিশোর বালকদের সাথে সেক্সের মধ্যেই চরম পরিতৃপ্তি খুঁজে পেতো তারা। নবী জানতেন যে শুধু শুকনো নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে না, এরূপ সেক্স হতে বিরত রাখতে হলে পরকালে সুন্দর কিশোরদের অফুরন্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে তাকে। আর সেজন্যেই আয়তলোচনা হুরদের পাশাপাশি মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোরদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে পবিত্র শ্লোকে। পাশাপাশি বলা হয়েছে যে সমলৈঙ্গিক সেক্স বিধাতার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, এধরনের কাজ জিনা কিংবা ব্যভিচারের ন্যায় দণ্ডনীয় অপরাধ।


গ্রুপ সেক্স/ উন্মাতাল সেক্স


ব্লু ফিল্মে আমরা দেখতে পাই, একদঙ্গল নারী পুরুষ বিভিন্ন ভঙ্গিমায় সেক্স করছে । একই সময়ে কিংবা সামান্য সময়ের ব্যবধানে একজন পুরুষ একাধিক নারীর সাথে সেক্স করছে কিংবা একজন নারী একাধিক পুরুষের সাথে সেক্স করছে। এইসব অশ্লীল ছবির অন্যতম প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে এই গ্রুপ সেক্স. কিংবা দু'জনেরই সেক্স - তবে একটু পর পর সেক্স পার্টনারটি বদলিয়ে নেয়া। পর্ণো ছবির এ এক সাধারণ বৈশিষ্ট, এভাবেই ছবিগুলি দর্শক টানে কারণ অধিকাংশ দর্শকের মনের গোপনে এ ধরণের উন্মাতাল সেক্সের জোয়ারে গা ভাসানোর ইচ্ছা সুপ্ত থাকে, কিন্তু বাস্তবে কখনও তা হয়ে উঠে না। সুতরাং এইসব ছবির মাধ্যমে দর্শকরা মনের অতৃপ্ত কামনার কিছুটা হলেও প্রশমন ঘটায়। ছবি দেখতে দেখতে তাদের হয়তো মনে হয়- আহ্, আমিও যদি এরুপ একটি দৃশ্যে অভিনয় করার সুযোগ পেতাম। আচ্ছা- এই ধরণের ইচ্ছা কি আমাদের নবীর (দঃ) মনেও জেগেছিল কোনদিন? তৌবা, নাউজুবিল্লাহ। এধরণের চিন্তাও পাপ, গার্ডেন ভ্যারাইটির জিহাদিরা শুনেলে নির্ঘাৎ কিরিচ হাতে কল্লা কাটতে বেরুবে। এখন নীচের হাদিসটি পড়ুন এবং হলি ষ্টাইলের উন্মাতাল সেক্স সম্পর্কে কল্পনা করুন। কল্পনা করুন, আপনার প্রায় ডজন খানেক বউ এবং উপপত্নী আছে। আরও কল্পনা করুন, আপনার সবচেয়ে প্রিয় বউটি আপনাকে নিজ হাতে সাজিয়ে অন্য নারীর সাথে সেক্স করতে পাঠাচ্ছে। যদি একে উন্মাতাল সেক্স (sex orgy) না বলা যায় তা'হলে সে জিনিসটি কী? অনুগ্রহপুর্বক স্মরণ রাখবেন, এই উন্মাতাল সময়ে নবীর (দঃ) হেরেমে কমপক্ষে গোটা ন'য়েক বিবি ছিলেন।




সহি বুখারিঃ ভলিউম-1, বুক নং-5, হাদিস নং-270:


মহম্মদ বিন আল-মুনতাছির হতে বর্ণিতঃ


তার পিতার সুত্র উল্লেখ করে (তিনি বর্ণনা করেন) যে তিনি আয়েশাকে ইবনে উমরের বর্ণনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন (ইবনে উমরের বর্ণনা এরুপ- যতক্ষন পর্য্যন্ত তার শরীর হতে আতরের গন্ধ বেরুচ্ছে, ততক্ষন পর্য্যন্ত তিনি মাহরিম হতে ইচ্ছুক নন্)। আয়েশা বলেন- "আমি আল্লাহর রাসুলকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম এবং তিনি পর্য্যায়ক্রমে সকল স্ত্রীর কাছে যেতেন এবং সকলের সাথে (যৌনসঙ্গম করতেন)), এবং সকালবেলায় (গোসলের পর) তিনি ছিলেন মাহরিম"।




সহি মুসলিমঃ বুক নং-8, হাদিস নং-3445:


আবু বকর বিন আব্দুর রহমান বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) উম্মে সালমাকে বিয়ে করলেন এবং তার ঘরে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, তখন তিনি (উম্মে সালমা) তার কাপড় আকড়িয়ে ধরলেন। রাসুলুল্লাহ (দঃ) এতে বললেন- যদি তুমি ইচ্ছে করো, আমি তোমার সাথে আরও বেশী সময় থাকতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাকে সময় গননা করতে হবে (অর্থাৎ যে সময়টুকু আমি তোমার সাথে কাটাব, অন্য স্ত্রীদের সাথেও আমাকে ঠিক সেই পরিমান সময় কাটাতে হবে)। কুমারি বউয়ের জন্যে এক সপ্তাহ, পুর্ব-বিবাহিতার জন্যে তিন দিন।




এই উন্মাতাল সেক্সের পক্ষে স্বর্গীয় অনুমতি ছিল; ইমাম গাজ্জালির লেখা হতে তার প্রমান মেলে। একাধিক পার্টনারের সাথে সেক্সের নিয়মকানুন সম্পর্কে তিনি লিখেছেন (রেফারেন্স-7, পৃ-368):-


গারিব হাদিসে বর্ণিত আছে যে আল্লাহর রাসুল বলেছেন- "আমি জিব্রাইলের কাছে অভিযোগ করেছিলাম যে স্ত্রীদের সাথে সঙ্গমের জন্যে আমি আরও অধিক পরিমান (যৌন) শক্তি লাভ করার ইচ্ছে করি, এবং তিনি (জিবরাইল) আমাকে হারিসা খাওয়ার জন্যে উপদেশ দেন"।




একটি অসাধারণ হাদিস কোট করে বর্তমান প্রসঙ্গের ইতি টানব আমি। অনুমান করুন, একটিমাত্র রাত্রিতে কী পরিমান বীজ প্রবাহিত হওয়ার প্রয়োজন হতো !




সহি বুখারিঃ ভলিউম-7, বুক নং-62, হাদিস নং-6:


আনাছ হতে বর্ণিতঃ


নবী পর্য্যায়ক্রমে সকল স্ত্রীর ঘরে যেতেন এবং একই রাত্রিতে তাদের সকলের সাথে (সহবাস) করতেন। এবং তার স্ত্রীর সংখ্যা ছিল নয় জন। স্ত্রীলোকের বীর্য্যের রং হলুদ !




যৌবনকালে অধিকাংশ মেয়েপুরুষই যৌনসম্পর্কিত স্বপ্ন দেখে। ছেলেদের বীর্য্যপাত হয় (স্বাভাবিক সঙ্গমকালে যেরুপ বীর্য়্যপাত হয় ঠিক তদ্রুপ), বাংলা ভাষায় এর নাম স্বপ্নদোষ (nocturnal emission)। মেয়েরাও যৌন বিষয়ক স্বপ্ন দেখতে পারে এবং চরম পুলক (অর্গাজম) হতে পারে, তবে পুরুষের মতো তাদের কোন স্খলন হয় না, কারণ যোনিদেশে সিমেন বা বীর্য্য উৎপন্ন হয় না। নবীর প্রিয় স্ত্রী আয়েশাও বিষয়টি জানতেন, কারণ তিনি ছিলেন একজন নারী। তবে মহম্মদ (দঃ) এই বৈজ্ঞানিক সত্য সম্পর্কে সম্পুর্ণ অজ্ঞ ছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে পুরুষদের মতো মেয়েদেরও বোধ হয় বীর্য্যপাত ঘটে। তিনি সম্ভবত কোন স্ত্রীলোকের কাপড়ে হলুদ দাগ দেখে থাকবেন যা সাধারনত ঋতুস্রাবের পরে ঘটে। তা দেখেই তিনি মনে করেছিলেন যে এটিই স্ত্রীলোকের স্পার্ম বা বীর্য়্যের দাগ। যখন আয়েশা তার ভুল শুধরে দিতে চাইলেন, তিনি তাকে ধমক মেরে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের ভ্রান্ত ধারণা তার উপর চাপিয়ে দিলেন। যদি কোন স্ত্রীলোক নীচের হাদিসগুলি পড়েন, তিনি যেন আবার যেন ভেবে না বসেন যে তার স্ত্রী অঙ্গটিতে কোন রোগ বাসা বেধেছে।




সহি মুসলিমঃ বুক নং-3, হাদিস নং-0608:


আনাছ বিন মালিক বর্ণনা করেছেন যে উম্ সুলাইম (সুলাইমের মা) বলেছিলেন যে তিনি একবার রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে একজন মেয়ে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে পুরুষদের মতোই স্বপ্ন দেখত (যৌনস্বপ্ন)। আল্লাহর রাসুল (দঃ) বললেন- যদি কোন মেয়ে এরুপ দেখে, তাকে অবশ্যই গোসল করতে হবে। উম সালমা বলেন- আমি এ বিষয়ে (কথা বলতে) খুবই লজ্জা পাচ্ছিলাম এবং বললাম- ইহা কি ঘটে? তখন রাসুলুল্লাহ (দঃ) বললেন- হ্যা (ইহা ঘটে)। নইলে একটি শিশু কীভাবে তার মা'র মতো হয়? পুরুষের স্খলন (বীর্য্য) ঘন ও শাদা, স্ত্রীলোকের স্খলন পাতলা এবং হলুদ। সুতরাং দু'জনের মধ্যে যার জিন বেশী প্রবল হবে, বাচ্চা তার মতো হবে।




সহি মুসলিমঃ বুক নং-3, হাদিস নং-0610:


উম্মে ছালামা বর্ণনা করেছেনঃ


উম্ সুলাইম রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন- হে রাসুলুল্লাহ (দঃ)। আল্লাহ সত্য হতে লজ্জিত নন। একজন মেয়ে যদি যৌনবিষয়ক স্বপ্ন দেখে, তার কি গোসল করার প্রয়োজন আছে? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (দঃ) বললেন- হা, যদি তার পানি বের হয়। উম্মে ছালামা বললেন- রাসুলুল্লাহ, মেয়েরা কি যৌনবিষয়ক স্বপ্ন দেখে? তিনি বললেন- তোমার হাত ধুলিধুসরিত হোক। তার শিশু তবে কীভাবে তার মতো হয়?




পেছন হতে/ পায়ুপথে সেক্স




আমি একথা গোপন করব না যে হাদিস পাঠ করা ছিল আমার সময় কাটানোর সবচেয়ে প্রিয় উপায়। হাদিস পড়তে আমি ভালবাসতাম, যেখানে যত হাদিস আছে। আমি যত বেশী হাদিস পড়তে থাকলাম, তত বেশী করে ইসলাম ও তার নবী মহম্মদকে (দঃ) বুঝতে পারলাম। আমি মনে করি হাদিসগুলিতে একজন ভাল ও খাটি মুসলমানের চিত্র সংরক্ষিত আছে। শুরুতে ভেবেছিলাম- হাদিসে বোধ হয় শুধুমাত্র ধর্মীয় নিয়মকানুন, আধ্যাত্মিক নিয়মকানুন কিংবা ধর্মযুদ্ধ (জিহাদ) সংক্রান্ত বিষয়াদিই আছে। কিন্তু ইসলামের মুল লিপিগুলিতে যৌনকামনা উদ্রেককারী এতসব বর্ণনা পেয়ে আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম। এরুপ মন্তব্য করা বোধ হয় অসমীচিন হবে না যে কোন কোন হাদিসকে যৌনাচারের সারগ্রন্থ (ম্যানুয়াল অব সেক্স) বলে অভিহিত করা যায়। সেক্স করতে গেলে কী কী করতে হবে এবং কী কী করা যাবে না- তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে সেখানে। কোন কোন হাদিস এমনকি বিশ্বের প্রাচীনতম পর্ণোগ্রন্থ কামসুত্রকেও লজ্জা দিতে পারে। এগুলিকে "সহি পর্ণোগ্রাফি- লা বেদুঈন ষ্টাইল" কিংবা লা ইসলামিক ষ্টাইল বলে অভিহিত করলে অন্যায় হবে না। এখানে আমি মাত্র গোটাকয়েক নমুনা পেশ করছি। পাঠক পাঠিকাদেরকে অনুরোধ করব- দয়া করে সিহা সিত্তা গ্রন্থ ছয়টি ভালভাবে পাঠ করুন। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ঠকবেন না। এত নুতন নুতন জিনিস আবিস্কার করতে পারবেন যে আপনাদেরকে মোটেই আফশোস করতে হবে না।




সে যুগের আরব বেদুঈনরা কী ধরণের সেক্সুয়াল প্র্যাক্টিস অনুসরণ করতো, হাদিগুলিতে তার বিশ্বস্ত বর্ণনা রয়েছে। আমরা দেখতে পাই যে বিভিন্ন গোত্রগুলি সহবাসের সময় যে পদ্ধতি বা ষ্টাইল অনুসরণ করতো, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল। একজন ইহুদি তার স্ত্রীর সাথে যে ষ্টাইলে সেক্স করতো, তা তার বেদুঈন প্রতিবেশীর চেয়ে ভিন্নতর ছিল। শহরে এবং মরুভুমিতে প্রচলিত পদ্ধতিগুলিও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। আমরা আরও দেখতে পাই যে সেক্সের ব্যপারে মরুচারি বেদুঈনরা বেশ এগিয়ে ছিল। সেক্সের আসন, সেক্সের ষ্টাইল ইত্যাদি কেলিগুলিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল তারা। আনসার এবং মোহাজেরদের মধ্যেও এই ষ্টাইলের বিস্তর পার্থক্য ছিল। ইহুদিরা সাধারণত শাস্ত্রীয় আসন অনুসরণ করতো। পক্ষান্তরে মক্কা হতে আগত মোহাজেররা স্ত্রীদের সাথে বিভিন্ন আসনে সেক্স করতে অভ্যস্ত ছিল। এইসব আসনের মধ্যে তাদের সবচেয়ে প্রিয় ছিল পেছন দিক হতে সঙ্গম করা। আনসার কিংবা ইহুদি রমনীরা এই ষ্টাইলে অভ্যস্ত ছিল না। মোহাজেরগণ এই ষ্টাইল আনসার রমনীদের উপর প্রয়োগ করতে শুরু করলে রমনীরা অসন্তুষ্টি ও বিরক্তি প্রকাশ করে। কারণ কোন কোন মোহাজের ষন্ড এই সুযোগে মেয়েদের পায়ুপথে লিঙ্গ প্রবিষ্ট করাতেও দ্বিধাবোধ করত না। এইসব মোহজেররা ছিল যৌন দুর্ভিক্ষের শিকার, নবীর সাথে মদীনায় হিজরতের কারণে অধিকাংশ মোহাজেরই তাদের বউ মক্কায় ফেলে এসেছিল। সুতরাং মেয়ে দেখলেই ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো হয়ে যেতো তারা। কোন মেয়ের সাথে ঘুমানোর সুযোগ পেলে এমন আচরণ করতো যে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েটির কাছে তা বলাৎকার এবং গর্হিত বলে মনে হতো। মোহজেরদের এই অনাকাঙ্খিত আচরণের কথা আনসারি মেয়েরা রাসুলের কানে তুলে। অবিলম্বে আল্লাহর তরফ থেকে অহি নেমে আসল এবং পায়ুপথে সঙ্গম নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হলো। কুকুরের ষ্টাইলটি (পেছনের দিক হতে সঙ্গম) অবশ্য বহাল রইল, যদিও আনসারি মেয়েরা এই পদ্ধতিটির উপর খুব একটা সন্তুষ্ট ছিল না।




এপ্রসঙ্গে গোটাকয়েক হাদিস বর্ণনা করা হলো নীচে। নিশ্চয়তা দিচ্ছি, হাদিসগুলি আপনাদের বিস্তর মজার খোরাক জোগাবে।




সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-11, হাদিস নং-2159:


আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিতঃ


ইবনে উমর ভুল বুঝেছিল ("তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের শস্যক্ষেত্র, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তা চাষ কর"- কোরাণের এই আয়াতটির ভুল অর্থ বুঝেছিলেন ইবনে উমর), আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। আসল ঘটনা এই যে আনসারদের এই গোত্রটি ছিল পৌত্তলিক। তারা ইহুদিদের পাশে বসবাস করত যারা ছিল কেতাবধারী সমপ্রদায়। জ্ঞানের ক্ষেত্রে তারা (আনসাররা) ইহুদিদেরকে শ্রেষ্ঠতর বলে গন্য করতো এবং তাদের রীতিনীতি অনুসরণ করত। কেতাবধারী সমপ্রদায়রা (অর্থাৎ ইহুদীরা) স্ত্রী-সঙ্গমকালে শুধুমাত্র একটি আসন ব্যবহার করত (চিৎ করে শায়িত অবস্থায়)। এই আসনটিতে মেয়েরা (অর্থাৎ তাদের যোনি) সবচেয়ে লুক্কায়িত অবস্থায় থাকে। আনসারদের এই গোত্রটি ইহিিদদের কাছ থেকে এই আসন শিখে নেয়। কিন্তু কোরেশরা মেয়েদেরকে সম্পুর্ণভাবে উলংগ করে নিত, এবং পেছন থেকে ও সামনে থেকে = উভয় দিক থেকেই আনন্দ পেতে চেষ্টা করত। মোহজেরগণ যখন মদীনায় এলো, তাদের মধ্যে জনৈক ব্যক্তি একজন আনসার রমনীকে বিয়ে করে। সে যখন তার সাথে এই ভাবে সঙ্গম করতে শুরু করল (অর্থাৎ মক্কা ষ্টাইলে), মেয়েটি তা পছন্দ করল না এবং তাকে বলল- একটিমাত্র আসনেই আমরা অভ্যস্ত । সেইভাবে কর, নচেৎ আমার কাছ থেকে দুর হয়ে যাও। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং রাসুলের (দঃ) কানে পৌছল। সুতরাং মহান আল্লাহ কোরাণের আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন- "তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের শস্যক্ষেত্র, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তা চাষ কর"। অর্থাৎ- সামনের দিক হতে, পেছনের দিক হতে কিংবা চিৎ করে শায়িত অবস্থায়। তবে এই আয়াত (শুধুমাত্র) সন্তান প্রসবের ছিদ্রকে অর্থাৎ স্ত্রীযোনিকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।



সহি মুসলিমঃ বুক নং-008, হাদিস নং-3364:


জাবির (বিন আব্দুল্লাহ) (রাঃ) বর্ণনা করেন যে ইহুদিরা বলত যে যদি কেউ পেছনের দিক হতে স্ত্রীযোনিতে যায় এবং স্ত্রী গর্ভবতী হয়, তবে সন্তান হবে টেরা চোখবিশিষ্ট। সুতরা এই আয়াত নাজেল হলো- "তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের শস্যক্ষেত্র, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তা চাষ কর"।




সহি বুখারিঃ ভলিউম-6, বুক নং-60, হাদিস নং-51:


জাবির হতে বর্ণিতঃ


ইহুদিরা বলত: "যদি কেউ পেছনের দিক হতে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে, তবে সে টেরা চোখবিশিষ্ট সন্তানের জন্ম দেবে"। সুতরাং এই আয়াতটি নাজেল হলো- "তোমাদের স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের শস্যক্ষেত্র, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তা চাষ কর"।




সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-12, হাদিস নং-2212:


উরুয়া হতে বর্ণিতঃ


খাওলা ছিল আউস ইবনে আস-সামিতের স্ত্রী; সে এমন একজন পুরুষ যার যৌনক্ষমতা ছিল অসাধারণ। যখন তার সঙ্গম-বাসনা খুব প্রবল হলো, সে স্ত্রীকে তার মায়ের পাছা বলে কল্পনা করে নিলো। সুতরাং জিহারের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ মহান আল্লাহ কোরানের আয়াত নাজেল করলেন (জিহার শব্দের অর্থ হচ্ছে স্ত্রীর কোন অঙ্গকে মা, খালা ইত্যাদি মাহরিম মেয়েলোকের অঙ্গের সাথে তুলনা করা বা কল্পনা করা)।




সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-12, নাম্বার-2214:


ইকরিমা হতে বর্ণিতঃ


জনৈক লোক তার স্ত্রীকে তার মায়ের পাছা হিসেবে তুলনা করেছিল। অতঃপর কোনরুপ প্রায়শ্চিত্ত করার পুর্বেই সে তার সাথে সঙ্গম করল। সে রাসুলের (দঃ) নিকট গেল এবং তাকে বিষয়টি জানাল। তিনি (তাকে) জিজ্ঞেস করলেন- এ কাজ করতে তোমাকে প্রেরণা জোগাল কে? সে বলল- আমি চাঁদের আলোতে তার শুভ্র জঙ্ঘা দেখতে পাই। তিনি বললেন- যে পর্য্যন্ত তুমি তোমার কাজের প্রায়শ্চিত্ত না করেছ, সে পর্য্যন্ত তার (স্ত্রীর) কাছ থেকে দুরে থাক।




সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-11, নাম্বার-2157:


আবু হুরাইরা হতে বর্ণিতঃ


রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন: যে স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, সে অভিশপ্ত।




সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-29, নাম্বার-3895:


আবু হুরাইরা হতে বর্ণিতঃ


যদি কেউ ঐশী কেতাবধারীকে অবলম্বন করে এবং সে যা বলে তাই বিশ্বাস করে (অর্থাৎ ইহুদি), অথবা ঋতুকালে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে, অথবা স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করে, -তবে মহম্মদের (দঃ) নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।


ইসলামের দৃষ্টিতে সডোমি বা সমকামীতার সংজ্ঞা কী?


কতিপয় ইসলামী সোর্স অনুসন্ধান করার পর আমার মনে হয়েছে যে ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামীতার সংজ্ঞা হচ্ছে পায়ুপথে সঙ্গম, তা সে পুরুষের হোক কিংবা স্ত্রীলোকের হোক। সুতরাং যদি কোন পুরুষ কোন অপরিচিতা মেয়ের সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, সে সডোমি করার দায়ে অভিযুক্ত এবং তার ওপর হুদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য। যদি সে নিজের স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, তাহলেও সে সডোমি করার দায়ে অভিযুক্ত; তবে এক্ষেত্রে তার ওপর হুদুদ শাস্তির পরিবর্তে তা’জির (স্বেচ্ছাধীন বা মর্জিমাফিক) শাস্তি প্রয়োগযোগ্য (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)। তবে এই শাস্তির ধরন কীরূপ হবে, শিরোচ্ছেদ, পাথর নিক্ষেপে হত্যা নাকী ইসলামিক দোররা, সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই।


আরেকটি প্রশ্ন এখন। যদি একজন পুরুষ আরেকজন পুরুষকে লালসাভরে চুম্বন করে কিংবা আলিঙ্গন করে কিংবা এমন কোন শারীরিক কাজ করে যা পায়ুপথে সঙ্গম নয় (অর্থাৎ পায়ুপথে বীর্যপাত না ঘটিয়ে অন্যকোনভাবে বীর্যপাত ঘটায়), সেক্ষেত্রে তার বিধান কী? এই ধরনের সেক্সকে কী সডোমির পর্যায়ভুক্ত করা যায়? লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রেই বা ইসলামের বিধান কী? দুইজন লেসবিয়ান মহিলার মধ্যে অনুষ্ঠিত কার্যকলাপকেও কী সডোমির সমতুল্য বলে গণ্য করা যায়? দু’জন মেয়েলোকের পক্ষে পায়ুপথে সঙ্গম কোনভাবেই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় লেসবিয়ানদেরকে ইসলাম কোন শাস্তি দেবে? বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি, কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পাই নি। কেউ যদি এব্যাপারে ইসলামি সমাধান সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারেন, আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।


আগেই বলা হয়েছে ইসলামের সংজ্ঞা অনুযায়ী পায়ুপথ দিয়ে লিঙ্গ প্রবিষ্ট করিয়ে বীর্যপাত ঘটানোর নাম সডোমি। এই কাজের শাস্তিপ্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামি পণ্ডিতগণ একমত হতে পারেন নি, বিভিন্নজন বিভিন্নরূপ শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে, কারণ এর সাথে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত। কোন কোন আইনবিদের মতে ইসলামি আইনানুযায়ী এই অপরাধের জন্যে কোনপ্রকার নির্ধারিত শাস্তি (হুদুদ) নেই, বরং তা’জির বা গুরুত্ব বিবেচনা করে শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে যা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।


আব্দুর রহমান ড’ইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী সডোমীর শাস্তি নিম্নরূপ।


উভয়কে হত্যা করা (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)


সমস্ত মুসলিম জুরিস্ট এবিষয়ে একমত যে সডোমি একটি যৌনাপরাধ, তবে এ কাজের শাস্তির ব্যাপারে সকলে একমত হতে পারেন নি। ইমাম আবু হানিফার মতে সডোমি ব্যভিচারের সমতুল্য নয়, সুতরাং সডোমির জন্যে কারও ওপর হুদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়, এক্ষেত্রে অপরাধীদের ওপর তা’জিরের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করতে হবে। ইমাম মালিকের মতে সডোমির জন্যে অপরাধীকে হুদুদ আইনানুযায়ী শাস্তি প্রদান করতে হবে, অপরাধী বিবাহিত না অবিবাহিত তা বিচার করা চলবে না। যে হাদিসের সূত্র ধরে ইমাম মালিক এই ক্যাপিটাল শাস্তি প্রদানের পক্ষপাতি, সে হাদিসটি নিম্নরূপ:


আবু হুরাইরা হতে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন: “যদি তোমরা এমন কাউকে পাও যারা লুতের গোত্রের কাজ করেছে (সমকামীতা), তাদের ওপরেরজন এবং নীচেরজন উভয়কেই হত্যা করো”। আরেক বর্ণনায় তিনি বলেছেন যে: “যে করছে এবং যার সাথে করছে- উভয়কে হত্যা কর”।


আবু ইউসুফ, ইমাম শাফেয়ি এবং মহম্মদের মতানুযায়ী অপরাধী যদি বিবাহিত হয়, তার শাস্তি হবে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যু, তবে অবিবাহিত হলে তা’জির প্রয়োগযোগ্য।


নো ব্যাকসাইড – (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)।


স্ত্রীর সাথে অস্বাভাবিক উপায়ে (অর্থাৎ- পেছনের দিক হতে পায়ুপথে) সঙ্গম করা অপরাধ। অধিকাংশ জুরিস্ট মনে করেন যে এই অপরাধে হুদুদের পরিবর্তে তা’জির শাস্তি প্রয়োগযোগ্য, কারণ এক্ষেত্রে একপ্রকার সন্দেহ (সুবুহাত) বিরাজিত, এবং সন্দেহের অবকাশ থাকলে হুদুদ প্রয়োগযোগ্য নয়।


উভয়কে হত্যা করা (রেফারেন্স-৮, পৃ-৬৬৫)


পি১৭.৩ – আল্লাহর নবী (দ:) বলেছেন:


(১) যে সডোমি করে এবং যে তা করতে দেয়, তাদের উভয়কে হত্যা কর।


(২) যে ব্যক্তি লুতের গোত্র যা করতো তা করে, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।


(৩) মেয়েদের মধ্যে সংঘটিত সমকামীতা ব্যভিচারের সমতুল্য।


সমকামীদের জন্যে আরও কিছু দুঃসংবাদ (হেদাইয়া- রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৫)


যদি কোন ব্যক্তি আগন্তুক কোন মহিলার সঙ্গে পায়ুপথে সঙ্গম করে (অর্থাৎ সডোমিজনিত অপরাধ সংঘটন করে), হানিফার বিধানুযায়ী তার জন্যে কোন শাস্তি নির্ধারিত নাই; তবে তাকে তা’জিরের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে তা’জির বা সংশোধন প্রসঙ্গে জামা সাঘিরের নির্দেশ এই যে অপরাধীকে অন্তরীণাবস্থায় রাখতে হবে যে পর্যন্ত না সে অনুশোচনার উপলব্ধি ঘোষণা করে। দু’জন সাহাবি (disciple) বলেছেন যে যেহেতু এই কাজ বেশ্যাবৃত্তি (whoredom) সংঘটনের সমতৃল্য, সুতরাং যে ব্যক্তি এই কাজ করে তার ওপর বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের জন্যে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগযোগ্য; এবং এ বিষয়ে শাফেয়ির একটি মতামত রয়েছে; এবং তার আরেক মতানুসারে অত্র কাজে জড়িত উভয় ব্যক্তিই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য, তা তারা যাই হোক না কেন – অর্থাৎ তারা বিবাহিত অবিবাহিত যাই হোক না কেন – কারণ নবী বলেছেন যে “সকর্মক (active) এবং অকর্মক (passive) উভয়কে হত্যা কর” (অথবা আরেক হাদিস অনুসারে-“কারক (agent) এবং কৃত (subject) উভয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর”। সাহাবিদ্বয়ের যুক্তি এই যে অত্র কাজটিতেও বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সমস্ত গুণাগুণ বর্তমান, যা এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যে,


“এ এমন এক লালসাপূর্ণ কর্ম যা সংঘটিত হয় ঈন্দ্রিয়তৃপ্তিকারী একটি বস্তুর ওপর, এমন অবস্থায় যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত, কর্মের উদ্দেশ্য হয় বীর্য নিক্ষেপকরণ”।


অপরপক্ষে হানিফার যুক্তি এই যে কর্মটিকে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না, কারণ নবীর সাহাবিদের মধ্যে এ প্রসঙ্গে মতদ্বৈধতা বিদ্যমান ছিল, কারণ তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন যে এ ধরনের অপরাধীকে পুড়িয়ে মারা উচিত, কেউ আবার বলেছেন যে তাকে কোন উচুস্থানে যেমন কোন গৃহের ছাদ হতে ঝুলিয়ে রেখে পাথর নিক্ষেপ করা উচিত এবং এই ধরনের আরও মতামত; অধিকন্তু প্রশ্নবিদ্ধ এই কর্মটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের গুণাগুণ নাই, কারণ এতে বেশ্যাবৃত্তির ন্যায় সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা নাই যে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের বিভ্রমের সৃষ্টি হতে পারে;  …অধিকন্তু, এই প্রজাতির যৌনসম্পর্ক বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের তুলনায় অত্যন্ত কম, কারণ এই ধরনের কাজের আকাঙ্খা শুধুমাত্র সকর্মক সঙ্গীটির মনেই উদ্রেক হয়, অকর্মক সঙ্গীর মনে হয় না, পক্ষান্তরে বেশ্যাবৃত্তির ক্ষেত্রে উক্ত আকাঙ্খা উভয়ত। শাফেয়ি উল্লেখিত হাদিসটি সম্ভবত এমন ক্ষেত্রকে নির্দেশ করে যেখানে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিপ্রদান জরুরি; অথবা যেখানে উক্ত কর্ম সম্পাদনকারীরা কাজটি বৈধ এবং সঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পায়।


উপরের আলোচনা হতে এটি স্পষ্ট যে সডোমি বা সমকামীতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। ব্যাখ্যার অস্পষ্টতার কারণে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ইসলামি সমাজে। সমলিঙ্গবিশিষ্ট দু’জন মানুষ (তা সে হোক দু’জন নারী অথবা দু’জন পুরুষ) যদি স্বেচ্ছায় একটি পরিবার তৈরি করে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামি আইনের বিভ্রান্তি ও মতভেদের সুযোগ নিয়ে তাদের ওপর ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নেমে আসতে পারে। হোমোসেক্সুয়ালিটি বিষয়ে ইসলামি আইন মোটেও মানবিক এবং যুগোপযোগী নয়। গে এবং লেসবিয়ানদেরকে পছন্দ না করার অধিকার সবার রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে দু’জন লেসবিয়ান নারীর কিংবা দু’জন গে পুরুষেরও অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দমত জীবনটা বেছে নেয়ার। তাদের জীবন একান্তভাবেই তাদের নিজস্ব, জীবনটা তারা কীভাবে কাটাবে সেটা বেছে নেয়ার অধিকারও তাদের জন্মগত। তাদের জীবনধারা যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজের অপর অংশের প্রতি ক্ষতিকর না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকারকে পদদলিত করা কিংবা কিছু আজগুবি ধর্মীয় অনুশাসনের নামে তাদেরকে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। আধুনিক সভ্য সমাজ সে অধিকার কাউকে দেয় নি।


বেস্টিয়ালিটি বা পশুমেহন


পশুমেহন শব্দটির সাথে আপনাদের পরিচয় আছে কী? আপনারা স্ত্রীপুরুষে সেক্সের কথা শুনেছেন, পুরুষে পুরুষে সেক্সের কথা শুনেছেন, মেয়েতে মেয়েতে সেক্সের কথা শুনেছেন, এমনকী নিজের সাথে নিজের সেক্সের কথাও শুনেছেন। তাই কী যথেষ্ট ছিল না পাঠক? ঈশ্বরের সৃষ্ট এই সুন্দর পৃথিবীতে বিচিত্র প্রাণীকুলের বিচিত্রতর যৌন আচরণের বিষয় পড়ে আপনি যদি এখনও তেতো-বিরক্ত না হয়ে থাকেন তবে সিরিজের সর্বশেষ এই টপিকসটির নাম শুনে (পশুমেহন) আপনি যে আঁতকে উঠবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেকে হয়তো ভাবতেই পারবেন না যে মানুষ কীভাবে একটি পশুর সাথে সেক্স করতে পারে? তাদের কাছে এ ধরনের কাজ খুন কিংবা আত্মহত্যার সমতুল্য বলে প্রতীয়মান হতে পারে। একজন মানুষ কীভাবে অপরকে খুন করে কিংবা নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়, সাধারণ মানুষের কাছে তাও এক আশ্চর্যের বিষয়। তদসত্ত্বেও সমাজে খুনী আছে, আছে আত্মহননকারী। ঠিক সেইভাবে সাধারণ বুদ্ধির অগম্য হলেও মনুষ্যসমাজে বিরল কিছু লোক থাকে যাদের মধ্যে পশুমেহনের মতো বিরল যৌনবিচ্যুতি লক্ষ করা যায়। সডোমি বা নেক্রোফিলিয়ার মতোই অস্বাভাবিক যৌন-আচরণ এটি। এটি একটি রোগবিশেষ, অন্যান্য রোগীদের যেভাবে ঔষধের সাহায্যে নিরাময় করা হয়, পশুমেহনে অভ্যস্ত লোকদিগকেও সংশোধনযোগ্য চিকিৎসার সাহায্যে নিরাময় করা সম্ভব, শাস্তি প্রয়োগ করে নয়। তবে ইসলামের কথা আলাদা। আর সব যৌনবিচ্যুতির মতো পশুমেহনকারীদের জন্যেও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা আছে ইসলামে, কোনপ্রকার সংশোধনকারী পদ্ধতির কথা নাই। আমরা এখন দেখবো পশুমেহনকে ইসলাম কীভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং এই জঘন্য কাজের কাজীকে কীভাবে হ্যান্ডল করে।


পশুমেহন সম্পর্কে ইসলামি আইনকানুন ভালভাবে স্টাডি করতে গেলে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে তা হলো শাস্তির প্রকারভেদ নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মতদ্বৈধতা। পশুমেহনের দায়ে কেউ মৃত্যুদণ্ডও পেতে পারে, আবার কেউ কোনপ্রকার দণ্ডভোগ না করে দিব্বি বহাল তবিয়তে থাকতে পারে! এই ভেবে আমার আশ্চর্য লাগে যে কেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ জানলেন না যে তার সৃষ্ট বান্দাদের সবাই শুধু নিজ প্রজাতির সদস্যের সাথে প্রেমে পড়বে তা নয়, তাদের মধ্যে ব্যতিক্রমী দু’চারজন বান্দা থাকবে যারা ভিন্ন প্রজাতির সদস্যের সাথেও প্রেমে পড়তে পারে? নারীপুরুষের মনে প্রেমানুভূতি সৃষ্টি করার সময় তার আরেকটু সচেতন থাকা উচিত ছিল; তার সৃষ্ট জীবদের মনে স্ট্যান্ডার্ড ভালবাসার বাইরেও যে কোনপ্রকার বিচ্যুতির জন্ম হতে পারে সে বিষয়ে তিনি একেবারেই চোখ বুঁজে ছিলেন। তার এই চোখ বুঁজে থাকার সুযোগে মোল্লাদের পোয়া বারো এখন, বিষয়টাকে মিট করতে তারা ইচ্ছেমতো ফতোয়া নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। খুবই উদ্বেগের বিষয় এটি, কারণ এর সাথে অপরাধীর জীবনমরণের প্রশ্ন জড়িত। অনুগ্রহ করে হেদাইয়া বর্ণিত নিম্নের অংশটুকু পাঠ করুন। চিন্তা করে দেখুন, খোদা নাখাস্তা যদি আপনি কখনও ইসলামি আইনের হাতে ধরা খেয়ে যেতেন, তাহলে আপনার পরিণতি কী হতো। আরও লক্ষ করুন, যদিও পশুটি কোন দোষ করে নি, শাস্তির হাত হতে তার নিস্তার নাই। তাকে হত্যা করতেই হবে। ওয়াইল্ড লাইফের প্রতি ইসলামি আইনের কী অপূর্ব দয়া!


পশুমেহনের শাস্তি


পশুর সাথে সেক্স করার অপরাধে নির্ধারিত শাস্তির বিষয়ে বিস্তর বিভ্রান্তি ও মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ইসলামে। শাস্তির পরিমাণ খুব লঘু শাস্তি হতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা পর্যন্ত হতে পারে। বিখ্যাত শারিয়া বিশেষজ্ঞ আব্দুর রহমান ড’ই লিখেছেন যে ইমাম মালিক, আবু হানিফা এবং জহিরের মতানুযায়ী পশুমেহনের শাস্তিস্বরূপ হদুদ প্রয়োগযোগ্য নয়, তা’জির অনুযায়ী এই অপরাধের শাস্তি দিতে হবে। পশুটিকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে, তবে সেটির মাংস খাওয়া হালাল। (রেফারেন্স-৯, পৃ-২৪৩)


তবে হাম্বল এবং শাফেয়ির মতে এক্ষেত্রে হদুদ আইন প্রয়োগ করে অপরাধীকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে হবে। পশুটিকেও বধ করতে হবে এবং পশুটির মাংস খাওয়া হালাল নয়।


হেদাইয়া অনুসারে পশুমেহনের শাস্তি (রেফারেন্স-১১, পৃ-১৮৫)


যদি কোন ব্যক্তি পশুমেহন করে, তার ওপর হদুদ প্রয়োগযোগ্য নয় কিংবা শাস্তি প্রদানযোগ্য নয়, কারণ এই কাজ বেশ্যাবৃত্তির সমতুল্য নয়, যেহেতু বেশ্যাবৃত্তি একটি জঘন্য অপরাধ যা সম্পূর্ণভাবে লালসা হতে উদ্ভূত এবং যা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হতে উৎপন্ন হয়; কিন্তু এই সংজ্ঞা পশুসঙ্গমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এই কাজ সুস্থ রুচির মানুষের কাছে চরম ঘৃণার্হ (যে কারণে পশুদের যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখা কিংবা গোপন করে রাখা প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় না); এবং মানুষের মনে পশুর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার ইচ্ছা জাগার কোন কারণ থাকতে পারে না, তবে প্রবলতম দুষিত ক্ষুধা এবং প্রবৃত্তির চরম বিকৃতি ব্যতিত; …সুতরাং এক্ষেত্রে তাই হদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়, তবে ব্যক্তিটির ওপর সংশোধনযোগ্য তা’জির শাস্তি প্রয়োগযোগ্য, যার কারণগুলি পূর্বেই বিবৃত করা হয়েছে। আরও রেকর্ড করা হয়েছে যে পশুটিকে হত্যা করে ফেলতে হবে এবং পুড়িয়ে ফেলতে হবে; যদি পশুটি খাওয়ার যোগ্য কোন প্রজাতিভুক্ত না হয়, তবে পশুটি যদি খাওয়ার যোগ্য কোন প্রজাতিভুক্ত হয়, তবে তা খাওয়া বৈধ এবং পুড়িয়ে ফেলা যাবে না (আবু হানিফার মতানুযায়ী)। আবু ইউসুফ বলেন যে, উভয় ক্ষেত্রেই পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, অপরাধী যদি পশুটির মালিক না হয় তবে অপরাধীকে পশুর মালিককে মূল্য পরিশোধ করতে হবে; তবে পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলা অতীব আবশ্যিক, কারণ পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলার সপক্ষে এত বড় কারণ আর হতে পারে না যে পশুটি জীবিত থাকলে এই জঘন্য পাপকাজের স্মৃতি মুছে ফেলা যেতো না এবং অপরাধীর অঙ্গে এই অভিশাপ চিরস্থায়ী হয়ে থাকতো।


পালক মা / দুধ মা


আপনি কি কখনও এমন অবস্থার কথা চিন্তা করেছেন যে, একজন বয়স্ক পুরুষ একই সাথে একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু (২ বছর কিংবা তার চেয়েও কম) এবং একজন মহিলাকে বিয়ে করল যার বুকে দুধ আছে? এমন যদি হয় যে, স্বামীর ঘরে নবপরিণীতা শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর মতো কেউ নেই (ধরা যাক শিশুটি এতিম); ঘরে অবশ্য একটি দুধ-দানক্ষম বউ আছে, কিন্তু সে কি শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে? বর্তমান সময়ে হলে অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না, বাজারে হরেকরকম টিনজাত দুধ পাওয়া যায়। তবে বোতলের দুধ খাওয়ানো কোন ইসলামি সমাধান নয়। দেখা যাক, ইসলাম সমস্যাটিকে কীভাবে হ্যান্ডল করেছে।


হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১, পৃ-৭১):

উদাহরণ: একজন লোক যার দুইটি বউ আছে এবং এক বউ আরেক বউকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। যদি কেউ একইসাথে একজন শিশুকে এবং একজন বয়ঃপ্রাপ্তাকে বিয়ে করে এবং বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী শিশুস্ত্রীটিকে বুকের দুধ খাওয়ায়, তবে উভয় স্ত্রীই লোকটির জন্যে অবৈধ হয়ে যাবে, কারণ লোকটির সাথে যদি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক যদি চালু থাকে, এর অর্থ হবে দুধ মা এবং দুধ-মেয়ে উভয়ের সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা যা অবৈধ, ঠিক সেভাবে যেভাবে একজন বায়লজিকাল মা ও তার বায়লজিকাল কন্যার সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা অবৈধ। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে; যদি লোকটি বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে কোনপ্রকার যৌনসম্পর্ক স্থাপন না করে থাকে তবে সে (বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী) দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে না, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের কারণটি তার কাছ থেকে উদ্ভুত হয়েছে, বিবাহ পুর্ণাঙ্গকরণের আগে:----কিন্তু শিশুটি অর্ধেক দেনমোহর পাওয়ার অধিকার রাখে, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারণটি উদ্ভুত হয়েছে তার জন্যে শিশুটি দায়বদ্ধ নয়। এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করলাম- তা একজন বয়স্ক লোক কর্তৃক একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিয়ে করা সংক্রান্ত। কিন্তু দৃশ্যপট যদি উল্টো হয়, অর্থাৎ একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর যদি একজন বয়ঃপ্রাপ্তা নারীর (নয় বছর বা তদুর্ধ) সাথে বিয়ে হয়? পাঠককে এ প্রসঙ্গে আমি জনপ্রিয় লোক-কাহিনী রহিম বাদশাহ ও রূপবান কন্যার ঘটনাটি স্মরণ করতে অনুরোধ করি। শারিয়া আইন অবশ্য এক্ষেত্রে অনেক উদার, এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া তেমন কোন বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।

এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শারিয়া একটিমাত্র শর্তই আরোপ করেছে, এই আজব শর্তটির ইসলামিক নাম ‘রিযা’ বা ‘রিদা’।


ডিকশনারি অব ইসলাম হতে রিযার সংজ্ঞা (রেফারেন্স-৬, পৃ-৫৪৬):


রিযা: একটি আইনসংক্রান্ত শব্দ। এর অর্থ- নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কোন নারীর বুক হতে স্তন্য পান করা।


রিযার আইনি সংজ্ঞা:- হেদাইয়া (রেফারেন্স-১১) অনুসারে রিযার আইনি সংজ্ঞা নিম্নরূপ।


রিযা: ধাত্রী/দুধ মা (প্রাগুক্ত, পৃ-৬৭)----আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে রিযা বলতে বুঝায় একটি শিশু কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় ব্যাপিয়া একজন নারীর বুক হতে স্তন্যপান করা, স্তন্যপান করার মেয়াদকে ‘পিরিয়ড অব ফষ্টারেজ’ বা ধাত্রীত্বের মেয়াদ বলা হয়ে থাকে।


ধাত্রী-মায়ের কাছে শিশুর স্তন্যপান করানোর ইসলামী নিয়ম এই। এই নিয়মেই একটি নবজাতককে অপর কোন দুধেল নারীর কাছে প্রতিপালন করতে দেয়া হয়। সম্পন্ন আরবদের মধ্যে এই প্রথা আগে চালু ছিল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত চালু আছে। মহম্মদের (দঃ) চাচা আবু লাহাবের ক্রীতদাসী তায়েবা নাম্নী এক মহিলা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শিশু মহম্মদকে স্তন্যপান করায়, অতঃপর দুধ মা হালিমার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।


সারসংক্ষেপ এবং উপসংহার


নরনারীর যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদিতে ইসলামের আপাতধার্মিক ভাবমূর্তির পেছনে যে আসল চেহারা লুকিয়ে আছে, তার স্বরূপ উন্মোচন করা কোন সহজ কাজ ছিল না। ইসলাম এই ধারণা দিতে চেষ্টা করে যে সেক্স এবং সেক্সসংক্রান্ত বিষয়াদিতে চরম সিদ্ধান্তটি দেয়ার একমাত্র মালিক সেই, সে হচ্ছে পৃথিবীর তাবৎ নরনারীর একমাত্র মরাল পুলিশ তথা নৈতিক গার্জিয়ান। একেবারেই মিথ্যা একটি ধারণা। যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর নৈতিকতা এবং ধর্মপরায়ণতার একটি কৃত্রিম মুখোশ জোর করে চাপিয়ে রাখা হয়েছে ইসলামে, সেই কালো হিজাবটি খুলে ফেললে ইসলামের যে চেহারা ভেসে উঠে তা ইসলাম সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণার সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ। নরনারীর যৌনাচার সম্পর্কে ইসলামি ধারণার সারসংক্ষেপ করলে তা নিম্নরূপ দাড়ায়-


১) ইসলামের দৃষ্টিতে সেক্সের প্রকৃত সংজ্ঞা হলো স্ত্রীজাতির সেক্স-অর্গানটিকে নিজের দখলে নিয়ে আসা, বিয়ের ক্ষেত্রে মোহরানা প্রদান করে কিংবা শত্রু/অমুসলিম নারীদেরকে যুদ্ধবন্দিনী করে।


২) ইসলামি ভার্সন মোতাবেক সেক্সের অর্থ হচ্ছে প্রাথমিকভাবে পুরুষ প্রজাতিটির যৌনতৃপ্তি, যা পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় স্ত্রীযোনির অভ্যন্তরে বীর্য নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে।


৩) কামকেলিতে পুরুষটি হচ্ছে একমাত্র অভিনেতা, স্ত্রী সেই অভিনয় লীলার একটি অবশ্যকীয় উপকরণমাত্র।


৪) ইসলামি সেক্সে স্ত্রীজাতির ভূমিকা নাই বললেই চলে। স্ত্রীর স্পর্শকাতরতা, তার পছন্দ-অপছন্দ, তার চরম পুলক ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। একজন মুসলমান রমণীর পক্ষে তার যৌন আকাঙ্খার কথা মুখ ফুটে ব্যক্ত করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। এ বিষয়ে সে সামান্যতম প্রকাশমুখী হলে বেশ্যার তকমা জুটতে পারে তার কপালে।


৫) ইসলামি আইনশাস্ত্র এমনভাবে রচিত যার মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারী কর্তৃক মুসলমান পুরুষটিকে সেক্সুয়াল প্লেজার যোগান দেয়া, এখানে প্রেম, ভালবাসা, আবেগ, সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবীয় বিবেচনা একেবারেই অনুপস্থিত। এই সমাজে সেক্স একান্তভাবেই পুরুষের কামনাসঞ্জাত একটি বিষয়, এর নিবৃত্তির জন্যে দরকার হলে সে স্ত্রীপ্রজাতিটির ওপর বলপ্রয়োগেরও ক্ষমতা রাখে।


৬) হোমোসেক্সুয়াল এবং অন্যান্য যৌনবিচ্যুতির শিকারগণ ইসলামের চোখে খুনীর চেয়েও জঘন্য, তাদের জন্যে কোনপ্রকার ক্ষমার সুযোগ নেই ইসলামে।


৭) ইসলাম মুসলমান পুরুষদেরকে মেয়েদের সাথে যথেচ্ছ সেক্স করার খোলা লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে, যদি মেয়েটি অমুসলিম হয় কিংবা মুসলমান পুরুষটি কোন কাফেরদের দেশে বসবাস করে।


সেক্স সম্পর্কে ইসলামের কনসেপ্ট সম্পূর্ণভাবে না হলেও যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। মধ্যযুগের আরব বেদুঈন সমাজের সাথে সঙ্গতি রেখে এই কালচার গড়ে উঠেছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুরুষটির চরম তৃপ্তিলাভ। এরূপ সেকেলে ধারণা নিয়ে নারীপুরুষের মধ্যে পারস্পরিক তৃপ্তিদায়ক সেক্সুয়াল সম্পর্ক গড়ে তোলা একেবারেই অসম্ভব। এরূপ সম্পর্কের কানাগলি বেয়ে যে জিনিশটি হাতে আসে তা দিয়ে বড়জোর নিজের ইন্দ্রিয়ক্ষুধাটি মেটানো যেতে পারে, এর বেশী কিছু নয়।


মুমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা সূরা মুমিনুনে ইরশাদ করেন।


# মুমিনরা সফলকাম হয়ে গেছে

# যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত

# যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত 

# যারা জাকাত দান করে থাকে

# যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে 

# তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না

# অতঃপর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমা লঙ্ঘনকারী হবে

# এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে

# যারা তাদের নামাজসমূহের খবর রাখে

# তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে

# তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানে চিরকাল থাকবে।


উপরের আয়াতগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে যাবতীয় প্রকার আল্লাহর হক ও বান্দার হক এবং এতদসংশ্লিষ্ট সব বিধিবিধান প্রবিষ্ট হয়ে গেছে। যে ব্যক্তি এসব গুণে গুণান্বিত হয়ে যায় এবং এতে অটল থাকে, সে কামেল মুমিন এবং ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের হকদার!


এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মুমিনের বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন। সেগুলো তুলে ধরা হলো।


১) প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোন সন্দেহ পোষণ করেনি। তারপর প্রাণ ও অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তারাই সত্যবাদী। -(সূরা আল হুজুরাতঃ ১৫)


২) প্রকৃত ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয়, তাদের বিশ্বাস বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে। তারা নামায কায়েম করে এবং যা কিছু আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে (আমার পথে) খরচ করে। এ ধরনের লোকেরাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য তাদের রবের (আল্লাহর)  কাছে রয়েছে বিরাট মর্যাদা, ভুল-ত্রুটির ক্ষমা ও উত্তম রিযিক। - (সূরা আল আনফালঃ ২-৪)


৩) মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মোকদ্দমার ফায়সালা করেন, তখন তারা বলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। এ ধরনের লোকেরাই সফলকাম হবে। -(সূরা আন্ নূরঃ ৫১)


৪) তারাই এ ধরনের লোক যারা (এ নবীর দাওয়াত) গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। -(সূরা আর্ রাদঃ ২৮ )


৫) মু’মিনরা যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করে। যে এমনটি করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এ নীতি অবলম্বন করো তাহলে তা মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্ত্বার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। - (সূরা আলে-ইমরানঃ ২৮ )


৬) মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের প্রতি মেহেরবানী করা হবে। -( সূরা আল-হুজুরাতঃ ১০ )


৭) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, এরা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। এরা ভাল কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবেই। অবশ্যই আল্লাহ সবার ওপর পরাক্রমশালী এবং জ্ঞানী ও বিজ্ঞ। -(সূরা আতত তাওবাঃ ৭১)


৮) এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে। এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।- (আত তাওবাঃ ৭২)


 ৯) সুসংবাদ দাও তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে (তোমার প্রতি) যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে বিরাট অনুগ্রহ। -(আল-আহযাবঃ ৪৭)


  ১০) আমি তোমার পূর্বে রসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং তারা তাদের কাছে আসে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে। তারপর যারা অপরাধ করে তাদের থেকে আমি প্রতিশোধ নিই আর মুমিনদেরকে সাহায্য করা ছিল আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। -(সূরা-আররূমঃ ৪৭)


১১) মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। -(সূরা-আলে ইমরানঃ ১৩৯)


১২)  হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দেবেন। (সূরা -মুহাম্মদঃ ৭)


 ১৩) যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত। সে তাদের আলোক থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা আগুনের অধিবাসী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য। -(সূরা আল-বাকারাহঃ ২৫৭)


১৪) পুরুষ বা নারী যে-ই সৎকাজ করবে, সে যদি মু’মিন হয়, তাহলে তাকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবো এবং (আখেরাতে) তাদের প্রতিদান দেবো তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে।-(সূরা আন্ন নহলঃ ৯৭)


১৫) আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে। আর যারা এরপর কুফরী করবে তারাই ফাসেক। (সূরা আন্ নূরঃ ৫৫)


১৬) নিঃসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে শীঘ্রই রহমান তাদের জন্য অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। (সূরা মারয়ামঃ ৯৬)


১৭) ঈমানদারদেরকে আল্লাহ একটি শাশ্বত বাণীর ভিত্তিতে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে প্রতিষ্ঠা দান করেন। আর জালেমদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা চান তাই করেন।-(সূরা ইবরাহীমঃ ২৭)


১৮) তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত, যেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এ হচ্ছে আল্লাহর অকাট্য প্রতিশ্রুতি এবং তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়।-(সূরা-লোকমানঃ৮-9)


২০) লোকেরা বললোঃ তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে। তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছেঃ আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী। -(আলে ইমরানঃ ১৭৩)


– সমাপ্ত –


রেফারেন্সসমূহঃ


১) দ্য হলি কোরান; অনুবাদ – আঃ ইউসুফ আলী, পিক্‌থল, শাকির।


২) সহি বুখারি; অনুবাদ – ডঃ মোহম্মদ মহসিন খান।


৩) সহি মুসলিম; অনুবাদ – আব্দুর রহমান সিদ্দিকী।


৪) সুনান আবু দাউদ; অনুবাদ – প্রফেসর আহম্মদ হাসান।


৫) মালিক’স মুয়াত্তা; অনুবাদ – আ’শা আব্দুর রহমান এবং ইয়াকুব জনসন।


৬) ডিকসনারি অব ইসলাম-১৯৯৪, গ্রন্থকার- টি.পি.হাফস।


৭) ইমাম গাজ্জালির ইয়াহ্‌ আল উলুমেদ্দিন (আব্দেল সালাম হারুন কতৃক সংক্ষেপিত-১৯৯৭); ডঃ আহম্মদ এ. জিদান কতৃক সংশোধিত এবং অনুদিত।


৮) রিলাইয়ান্স অব দ্য ট্র্যাভেলার (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ)-১৯৯৯, গ্রন্থকার- আহম্মদ ইবনে নাগিব আল মিস্‌রি, সংকলক- নুহ হা মিম কেলার।


৯) শারিয়া দ্য ইসলামিক ল’-১৯৯৮, গ্রন্থকার-আব্দুর রহমান ই. ডই।


১০) ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসুলুল্লাহ, অনুবাদ- এ. গুইলম, ১৫তম সংস্করণ।


১১) দ্য হেদাইয়া কমেন্টারি অন দ্য ইসলামিক ল’স-(পুণর্মুদ্রন-১৯৯৪); অনুবাদ- চার্লস হ্যামিল্টন।

১২) https://www.faithfreedom.org/Articles/abulkazem/SexualityinIslam.htm



3 comments:

  1. পরিচ্ছেদঃ ৪২. স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার

    হাদিস নম্বর ২১৪২। হাকীম ইবনু মু‘আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমন্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে।[1]

    ReplyDelete
  2. প্রথমের যে বিষয় গুলো পড়লাম সেগুলো ভুল। আয়াত এ বিয়ের কথা বলা হয়েছে। আর এখানে ১৮+ ছবি দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা হয়েছে।

    ReplyDelete
  3. এসব বলার আগে নিজের মন- মানসিকতা ঠিক করুন। নিজের মন গড়া কিছু বললেই কি ইসলাম তা মেনে নিবে নাকি ফালতু কোথাকার।

    ReplyDelete

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ