বেদে ব্যক্তি বিশেষের নাম - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

25 August, 2021

বেদে ব্যক্তি বিশেষের নাম

 অর্বাচী সুভগে ভব সীতে বন্দামহে ত্বা।

যথা নঃ সুভগাসসি যথা নঃ সুফলাসসি।।ঋগ্বেদ ৪.৫৭.৬
অনুবাদ- হে সৌভাগ্যদাতা, যেভাবে লাঙ্গলের হল দিয়ে টানা,নিচে চলমান রেখা ( সীতা) ও যেভাবে ভূমি আমাদের জন্য সৌভাগ্যদায়ী ও সুফলা হয়, ঠিক তেমনি তুমিও আমাদের জন্য সৌভাগ্যদায়ী ও ফলপ্রদা হও,এই কামনা করি।
পরের মন্ত্রটি বলছে-
ইন্দ্রঃ সীতাং নি গৃহ্নাতু তাং পুষানু যচ্ছতু।
সা নঃ পযস্বতী দুহমুত্তরামুত্তরাং সমাম্।।ঋগ্বেদ ৪.৫৭.৭
খেয়াল করুন এখানেও সীতা শব্দটি আছে। এই মন্ত্রের অর্থ হলো হে কৃষিজ্ঞানে দক্ষ, তুমি জল দ্বারা সমৃদ্ধ, এই আমাদেরও তাই করো, ভূমি কর্ষণকৃত বস্তুকে( সীতাং) হে ভূমি চাষকারী গ্রহণ করো। প্রকৃতির এই উর্বরতা সমৃদ্ধ হোক, বারেবার উত্তরোত্তর আমাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য উৎপন্ন হোক।
অর্থাৎ সীতা শব্দটির অর্থ হলো চাষের ভূমিতে ভূমিকর্ষক বা সহজ ভাষায় লাঙল দিয়ে তৈরী গভীর রেখা যাতে জল দেয়া হয়। এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে পবিত্র বেদে। পরবর্তীতে রামায়ণের যুগে রাজা জনক তার রাজ্যে কৃষিখেতের এই লাঙল দিয়ে করা খাদে এক কন্যা সন্তানকে কুড়িয়ে পান, আর তিনি তাই সেই কন্যার নাম রাখেন সীতা। অর্থাৎ বেদে সীতার কথা নেই, বেদে উৎপন্ন সীতা শব্দ থেকেই রাজা জনক তার কুড়িয়ে পাওয়া কন্যা সন্তানের নাম রেখেছেন সীতা যিনি পরে শ্রীরামের ধর্মপত্নীরূপে খ্যাত হন।
আবার ধরুন রাম শব্দটির কথা। ঋগ্বেদ ১০.১১১.০৭ নং মন্ত্রে আছে-
সচন্তু যদুষসঃ সূর্যেন চিত্রামস্য কেতবো রামবিন্দন্।
আ যন্নক্ষত্রং দদৃশে দিবো ন পুর্নযতো নকিরদ্ধা নু বেদ।।
অনুবাদ- যখন উষা সূর্যের আলো সংযুক্ত হয়, তা সৃষ্টি করে অপূর্ব রমণীয় শোভা। এরপর দিবাভাগে আর দৃশ্যমান হয়না কোন নক্ষত্র, কেন? তা কেউ জানেনা।
অর্থাৎ রাম শব্দের অর্থ অতি রমণীয়, অতি সুন্দর।
আবার রাম শব্দের আরও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ আছে যা হলো অন্ধকার। এটি রাত্রির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন ঋগ্বেদ ১০.৩.৩ নং মন্ত্রে এর প্রয়োগ আছে-
শভির্বর্ণৈরভি রামমস্থাৎ
অর্থাৎ সূর্য উষাকালে তার অগ্নি দিয়ে রাত্রির অন্ধকারকে দূর করে।
এখানে রামম্ শব্দের অর্থ রাতের অন্ধকার।
প্রফেসর মুনির উইলিয়ামস তার সংস্কৃত টু ইংলিশ ডিকশনারিতেও রাম শব্দের এই অন্ধকার অর্থের কথা উল্লেখ করেছেন।
আর বেদে এবং বৈদিক কালেই এই সুন্দর শব্দটি সন্তানের নামকরণে ব্যবহার করতেন পিতামাতারা। যেমন পবিত্র ঋগ্বেদের ১০.১১০ নং সূক্তের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি হলেন ঋষি জমদগ্নির পুত্র রাম যাঁর নাম রাম জামদগ্ন্য অর্থাৎ জমদগ্নি থেকে উৎপন্ন পুত্র যার নাম রাম। তাঁকে জামদগ্নি ভার্গব নামেও ডাকা হতো কেননা তিনি ঋষি ভৃগুর বংশজ বলে ভার্গব এবং জমদগ্নির পুত্র বলে তার নাম জামদগ্নি।
আর অযোধ্যার রাজা দশরথও অতি প্রচলিত সুন্দর এই শব্দটি দিয়ে নিজ পুত্রের নামকরণ করেছিলেন। আর নামকরণটি অত্যন্ত যথাযথ ও স্বার্থক ছিল। ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের ন্যায় রমণীয়, শোভনীয় আর কে হতে পারে!
এমনকি রঘুবংশের রাজধানী অযোধ্যার নামটিও নেয়া হয়েছে পবিত্র বেদ হতে। অযোধ্যা শব্দের অর্থ হলো যাকে যুদ্ধে জয় করা যায় না, অজেয়। আর পবিত্র অথর্ববেদের বিখ্যাত একটি মন্ত্রে ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট মানবদেহকে পুরী বা দূর্গ বা নগরীর সাথে তুলনা দিয়ে এর দৈবগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে-
অষ্টাচক্রা নবদ্বারা দেবানাং পূরযোধ্যা।
তস্যাং হিরণ্যযঃ কোশাঃ স্বর্গো জ্যোতিষাবৃতঃ।।
(অথর্ববেদ, ১০.২.৩১)
অনুবাদ- অষ্টচক্র ও নবদ্বার বিশিষ্ট মানবদেহ নামক এই দেবপুরী। এই হিরণ্যগুহা জ্যোতির্ময়,
সুখের সোপান, অজেয় এই পুরী।
উল্লেখ্য যে মানবদেহের ৮ টি চক্র- রস, রক্ত, মেদ, মাংস, অস্থি, মজ্জা, শুক্র, ওজস( কিছু কিছু ভাষ্যকার ওজস এর স্থানে ত্বকের কথা বলেছেন যেমন সায়ণ ও ভট্টভাস্কর)।
এবং ৯ টি দ্বার বা পথ-
দুই চোখ,দুই কান,দুই নাক,মুখ,পায়ুপথ,যোনীপথ।
আর এই অযোধ্যা শব্দ থেকেই রঘুবংশীয় পূর্বপুরুষগণ নিজেদের রাজধানীর শক্তিমত্তার গৌরব হিসেবে নগরীর নাম রেখেছিলেন অযোধ্যা।
আপনারাও নিজের নাম তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ হলে বেদের ডক বা পিডিএফ ফাইলে সার্চ দিয়ে দেখবেন, নিজেই দেখবেন অনেকের নাম ই বেদে পাওয়া যাচ্ছে! এই কারণেই বেদকে ভাষার জননী বলা হয়। কিন্তু পুত্র হতে যেমন পিতার জন্ম হয়না, পিতা হতেই পুত্রের জন্ম হয়, ঠিক তেমনি বেদ থেকেই ব্যক্তির নাম এসেছে, কোন ব্যক্তির নাম বেদে উল্লেখিত হয়নি।
ঠিক এই কথাটাই পূর্ব মীমাংসা ১.১.৩১ এ বলা হয়েছে। এই সূত্রের শাবরভাষ্যে বলা হয়েছে-
বেদে ববর,প্রাবাহণি আদি নাম মনুষ্যবাচক প্রতীত হলেও তা মূলতঃ বায়ু নির্দেশক কেননা ' ববরেতি শব্দ কুর্বন্ বায়ুরভিধীয়তে ' - অর্থাৎ বায়ুর নাম ববর। অর্থাৎ বেদে যেসব নাম দেখলে মনে হয় এগুলো কোন মানুষের নাম তা আসলে কোন মানুষের নাম নয়।
বেদ মন্ত্রে ইতিহাস নেই এই নিয়ে পৌরাণিক পরম্পরার ভাষ্যকার সায়ণাচার্য পূর্ব মীমাংসার এই ১.১.৩১ সূত্রটি ব্যবহার করে তার ঋগ্বেদ ভাষ্যের ভূমিকাতে বলেছেন -
"জৈমিনি সূত্র বা পূর্ব মীমাংসার ১.১.৩১ ' পরন্তু শ্রুতিসামান্যভাবম্' অর্থাৎ শ্রুতিতে যেকল নামের উল্লেখ রয়েছে তা ঐতিহাসিক বা ব্যক্তিবাচক নয় বরং ত শব্দানুকৃতি তথা অন্যাদি অর্থ বাচক ।"
(যদিও পরবর্তীকালে তার নিজের বলা এই কথা নিজেই ভঙ্গ করে বেদভাষ্যের শুরুতেই ঋগ্বেদে ইতিহাস,মনুষ্যের নাম ইত্যাদি দেখিয়ে এক সুবিশাল ভুল অনুবাদের কুকীর্তির রচনা করেছিলেন সায়ণাচার্য)
আর এভাবেই বেদের সকল প্রখ্যাত ভাষ্যকার ই একযোগে বলে গেছেন যে বেদে কোন ইতিহাস নেই। আমরাও সবাই জানি যে যেহেতু বেদ ঐশ্বরিক গ্রন্থ এতে কোন ব্যক্তির জীবনী, যুদ্ধের বর্ণনা এসব নেই, থাকার কথাও নয়, এটি ঐশ্বরিক গ্রন্থ, cosmolgy book। এখানে রয়েছে মানবজীবনের,সমাজের, বিশ্বসভ্যতার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ঈশ্বরের প্রদত্ত ঐশ্বরিক বিধিবিধান।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ