৭০ শ্লোকের গীতা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 September, 2021

৭০ শ্লোকের গীতা

৭০ শ্লোকী প্রাচীন গীতা
৭০ শ্লোকী প্রাচীন গীতা

PDF
মহাভারতের আদি পর্বে উল্লেখ আছে ব্যাস জী ২০০০ শ্লোকের গ্রন্থ(মহাভারত) রচনা করেন। কিন্তু বর্তমানের যে মহাভারত তাতে ১,০৭,৩৯৯ শ্লোক পাওয়া যায়, বিদ্যানেরা বলেন শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ৭০০ শ্লোক বলেন নি।

মূল ভাগবত গীতা

অথঃ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা

অর্জুন উবাচ

দৃষ্ট্বেমং স্বজনং কৃষ্ণ যুযুৎসুং সমুপস্থিতম্। (গীতা ১।২৮)
ন চ শ্রেয়োSনুপশ্যামি হত্বা স্বজনমাহবে। (গীতা ১।৩২)
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ॥ (গীতা ১।৩২)

অর্থঃ——(অর্জুন বলিলেন) হে কৃষ্ণ! এই সকল স্বজনকে যুদ্ধাৰ্থ সমুপস্থিত দেখিয়া যুদ্ধে স্বজনগণকে হত্যা করিলে আমাদের যে কল্যান হইবে এরূপ বোধ হইতেছেনা। কৃষ্ণ! আমি বিজয় চাই না, রাজ্য চাই না, সুখ ভোগও চাই না

যদি মামপ্রতীকারমশস্ত্রং শস্ত্রপাণয়ঃ। 
ধার্তরাষ্ট্রা রণে হন্যুস্তন্মে ক্ষেমতরং ভবেৎ।।(১।৪৫)

অর্থঃ——যদি আমি অস্ত্র পরিত্যাগ করি এবং প্রতিরোধ না করিয়া ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ যদি অস্ত্র ধারণ পুর্বক আমাকে যুদ্ধে বধ করে, তবে ইহাই আমার পক্ষে অধিকতর কল্যাণপ্রদ

শ্রীভগবানুবাচ

ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ পার্থ নৈতত্ত্বয্যুপপদ্যতে। 
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্তোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।(২।৩)

অর্থঃ——(শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন) হে পার্থ! ক্লীবত্বের বশীভূত হইওনা। ইহা তোমার পক্ষে সাজে না। হে পরন্তপ ! ক্ষুদ্র হৃদয়ের উপযুক্ত এই দৌর্বল্য পরিত্যাগ করিয়া উঠিয়া দাঁড়াও (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৩)

অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।
গতাসূনগতাসূংশ্চ নানুশোচন্তি পন্ডিতাঃ।।(২।১১)

অর্থঃ——যাহাদের জন্য শোক করা উচিৎ নয়, তুমি তাহাদের জন্য শোক করিতেছ। আবার মুখে মুখে বড় বড় জ্ঞানের কথাও বলিতেছ। যাহারা পণ্ডিত তাহারা মৃতের জন্য বা জীবিতের জন্য শোক করেন না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ১১)

দেহিনোহস্মিন্ যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা। 
তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিধীরস্তত্র ন মুহ্যতি।।(২।১৩)

অর্থঃ——দেহীর এই দেহে যেমন বাল্যাবস্থা, যৌবন এবং বার্দ্ধক্য লাভ হয়, ততরূপ দেহান্তর প্রাপ্তিও হয়। এজন্য যিনি ধীর তিনি শোকে মুহ্যমান হন না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ১৩)

নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিত্যতে সতঃ
উভয়োরপি দৃষ্টোহস্ত্বনয়োস্তত্ত্বদর্শিভিঃ।।(২।১৬)

অর্থঃ——যাহার অস্তিত্ব নাই তাহা হওয়া অসম্ভব এবং যাহার অস্তিত্ব [জীবাত্মা বিষয়ে] আছে তাহার নাশ হইতে পারে না- অনিত্য জড় বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্য বস্তু আত্মার কখনও বিনাশ হয় না। এই উভয়ের অন্ত তত্ত্বদর্শিগণই দেখিয়াছেন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ১৬)। অসত্( नेसती Non-Existence) (हस ती Existence या उत्पत्ति )

অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তাঃ শরীরিণঃ
অনাশিনোহপ্রমেয়স্য তস্মাদ্ যুধ্যস্ব ভারত।।(২।১৮) 

অর্থঃ——এই দেহ নাশবন্ত, কিন্তু ইহাতে যাহা বাস করে সেই দেহী অর্থাৎ আত্মা নিত্য, অবিনাশী এবং অপ্রমেয়। অতএব হে ভারত! তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।  (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ১৮)

য এনং বেত্তি হন্তারং যশ্চৈনং মন্যতে হতম্।
উভৌ তৌ ন বিজানীতো নায়ং হন্তি ন হন্যতে।।(২।১৯)

অর্থ——যে এই আত্মাকে হস্তা মনে করে এবং যে ইহাকে হত মনে করে তাহারা উভয়েই প্রকৃত তত্ত্বকে জানে না। কারণ আত্মা কাউকে হত্যা করেন না এবং কারও দ্বারা নিহতও হন না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ১৯)।

স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি। 
ধর্ম্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছ্রেয়োহন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে।।(২।৩১)

অর্থঃ——স্বধর্মের বিবেচনায়ও তোমার বিকম্পিত হওয়া চলিতে পারে না। কারণ ক্ষত্রিয়ের পক্ষে ধর্মযুদ্ধ অপেক্ষা শ্রেয়তর আর কিছুই নাই। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৩১)।

হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম্। 
তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কুতনিশ্চয়ঃ।।(২।৩৭)

অর্থঃ——যদি তুমি যুদ্ধে নিহত হও, তবে স্বর্গ [অর্থাৎ, সুখ] লাভ করিবে, আর যদি বিজয় লাভ কর, তবে ধরিত্রী ভোগ করিবে। অতএব হে কুন্তীপুত্র! যুদ্ধার্থে কৃত নিশ্চয় হইয়া উঠিয়া দাঁড়াও। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৩৭)।।

কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। 
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বাকর্মণি।।(২।৪৭)

অর্থঃ——কর্ম করিতেই তোমার অধিকার, ফলে কখনও নয়। কর্মফলের প্রাপ্তিকে উদ্দেশ্য করিওনা এবং নিষ্কর্মা হইয়াও থাকিও না (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৪৭)।।

সিদ্ধ্যাসিদ্ধ্যোং সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে। (গীতা ২।৪৮)
শ্রুতিবিপ্রতিপন্না তে যদা স্থাস্যতি নিশ্চলা। (গীতা২।৫৩)
সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদা যোগমবাস্প্যসি॥ (গীতা২।৫৩)

অর্থঃ——সাফল্য ও নিষ্ফলতা উভয়কেই সমান ভাবিয়া কৰ্ম কর। এই সমজ্ঞানই যোগ বলিয়া কথিত হয়। বেদের নামে নানা প্রকারের কর্মে বিক্ষিপ্ত তোমার বুদ্ধি যখন সমাধিবৃত্তিতে স্থির ও নিশ্চল হইবে তখন তুমি যোগ লাভ করিবে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৪৮, ৫৩)।।

অর্জুন উবাচ

প্রজহাতি যদা কামান্ সর্বান্ পার্থ মেনোগতান্। 
আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে।।(২।৫৫)

অর্থঃ——হে পার্থ! যখন যোগী মানসিক সকল কামনাকে বিসর্জন দিয়া আত্মা দ্বারা আত্মাতেই তুষ্ট থাকেন তখন তাহাকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৫৫)।।

 দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।
বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে।।(২।৫৬)

অর্থঃ——যাহাদের মন দুঃখে উদ্বিগ্ন হয় না, সুখে যাহার স্পৃহা নাই, যিনি রাগ, ভয় ও ক্রোধের অতীত হইয়াছেন তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ মুনি বলিয়া কথিত হন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৫৬)।।

 বিষয়া বিনিবর্তস্তে নিরাহারস্য দেহিনঃ।
রসবর্জং রসোহপস্য পরং দৃষ্ট্বা নিবর্ততে।।(২।৫৯)

অর্থঃ——যিনি পান ভোজন সুখাদি লাভের সুযোগ পান না সেই, নিরাহারী মনুষ্যও বিষয় ত্যাগ করে, কিন্তু বিষয় তাহার নিকট, হইতে দূরে থাকিলেও তাহার বিষয় ভোগের বাসনা বিদ্যমান থাকে। তবে ব্রহ্ম সাক্ষাৎকার লাভ হইলে বাসনা নষ্ট হয়। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৫৯)।।

    যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্তি সংযমী। 
যস্যাং জাগ্রতি ভুতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ।।(২।৬৯)

অর্থঃ——যাহা সর্বজীবের রাত্রি তাহাতে সংযমী জাগ্রত থাকেন এবং যাহাতে সর্বজীব জাগ্রত, পরমাত্মার স্বরূপ দ্রষ্টা মুনির পক্ষে তাহা রাত্রি। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ২ শ্লোক ৬৯)।।

শ্রীভগবানুবাচ

দেবান্ ভাবয়তানেন তে দেবা ভাবয়স্তু বঃ।
পরস্পরং ভাবয়ন্তঃ শ্রেয়ঃ পরমাবাস্প্যথ।।(৩।১১)

অর্থঃ——যদি দেবতাদিগকে যজ্ঞ কর্ম দ্বারা প্রসন্ন কর তবে তাহারা খুশী হইয়া তোমার কল্যাণ করিবে। এই প্রকার একে অন্যের সন্তুষ্ট করিলে পরম কল্যাণকে লাভ করিবে। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৩ শ্লোক ১১)।।

যজ্ঞশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাৎ।।(৩।১৩)

অর্থঃ——যজ্ঞাদিবশিষ্ট ভাগ যিনি ভোজন করেন সেই সাধু পুরুষ সর্বপাপ হইতে মুক্ত হন কিন্তু যাহারা কেবল নিজের নিমিত্তই অন্ন পাক করে সেই সব পাপী পাপই ভক্ষণ করে।।
(ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৩ শ্লোক ১৩)।।

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ। 
স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।।(৩।৩৫)

অর্থঃ——স্বকীয় কঠিন ধর্মও পরকীয় সহজ ধর্ম অপেক্ষা হিতকর। স্বকীয় ধর্মে মরণও কল্যাণ জনক, কিন্তু পরকীয় ধর্ম ভয়ানক। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৩ শ্লোক ৩৫)।।

বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।
তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরন্তপ।।(৪।৫)

অর্থঃ——হে অর্জুন ! আমার এবং তোমার বহু জন্ম অতীত হইয়াছে। আমার সে সব মনে আছে কিন্তু তুমি তাহা ভুলিয়া গিয়াছে। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৪ শ্লোক ৫)।।

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মনং সৃজামহ্যম্।।(৪।৭)
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।(৪।৮)

অর্থঃ——হে ভারত (অর্জুন), যদা যদা হি (যে যে সময়ে) ধর্মস্য গ্লানিঃ (ধর্মের হানি, ক্ষীণতা), অধর্মস্য অভ্যুত্থানম্ (অধর্মের উদ্ভব) ভবতি (হয়), তদা (তখন) অহম্ (আমি, অর্থাৎ পুন্য-আত্মা / জীবাত্মা) আত্মানং সৃজামি (আপনাকে সৃজন করি, অর্থাৎ শরীর ধারণ পূর্বক অবতীর্ণ হই)।[৭]
সাধুনাং পরিত্রাণায় (সাধুদিগের রক্ষার জন্য), দুস্কৃতাং বিনাশায় (দুষ্টদিগের বিনাশের জন্য) ধর্মসংস্থাপনার্তায় চ (এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য) [আমি / জীবাত্মা] যুগে যুগে সম্ভবামি (যুগে যুগে অবতীর্ণ হই)।[৮]

সরলার্থঃ হে ভারত (অর্জুন), যখনই ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, আমি (জীবাত্মা) সেই সময়ে দেহ ধারণপূর্বক অবতীর্ণ হই।  (মুক্ত পুরুষ ঈশ্বরের সান্নিধ্যে তাহা পারেন, শ্রীকৃষ্ণ যখনই উচিৎ মনে করেন তখনই মানুষী শরীর ধারণ করিবেন ইহা তাহার ইচ্ছা)।।

জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।
ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন।।(৪।৯)
ন মাং কর্মাণি লিম্পন্তি ন মে কর্মফলে স্পৃহা।(৪।১৪)

অর্থঃ——যে মৎসদৃশ যোগীদের দিব্য জন্ম ও কর্মের প্রকৃত তত্ত্ব অবগত হইয়াছে সে দেহত্যাগের পর পুনর্জন্মের বন্ধন প্রাপ্ত হয় না, সে আমাকে প্রাপ্ত হয়। কর্ম আমাকে লিপ্ত করিতে পারে না। আমার কর্ম ফলের স্পৃহাও নাই। (শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ যোগী ছিলেন এবং নিজেকে পরমাত্মায় এতই লীন মনে করিতেন যে পরমাত্মার ভূমিকার কথা বলিতেছেন)। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৪ শ্লোক ৯, ১৪)।।

কর্মণ্যকর্ম যঃ পশ্যেদকর্মণি চ কর্ম যঃ।
স বুদ্ধিমানন্মনুষ্যেষু স যুক্তঃ কৃৎস্নকর্মকৃৎ।।(৪।১৮)

অর্থঃ——যিনি কর্মের মধ্যে অকর্মকে অর্থাৎ জ্ঞানকে এবং জ্ঞানের মধ্যে কর্মকে সন্দর্শন করেন মনুষ্যের মধ্যে কর্মকে সন্দর্শন করেন মনুষ্যের মধ্যে তিনিই বুদ্ধি মান্, তিনিই যোগী এবং তিনিই যথার্থ কর্মী। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায়-৪ শ্লোক ১৮)।।

যদৃচ্ছালাভসন্তুষ্টো দন্দ্বাতীতো বিমঃসরঃ।
সমঃ সিদ্ধাবসিদ্ধৌ চ কৃত্বাপি ন নিবধ্যতে।।(৪।২২)

অর্থঃ——দৈবযোগে যাহা কিছু প্রাপ্তি হয় তাহাতেই যিনি সন্তুষ্ট, (শীত-ঊষ্ণ, হর্ষ শোক, সুখ-দুঃখ আদি দ্বন্দ্ব হইতে মুক্ত এবং সফলতা ও বিফলতাকে যিনি সমভাবাপন্ন তিনি কর্ম করিলেও পাপ পুণ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হন না। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৪ শ্লোক ২২)।।

দ্রব্যযজ্ঞাস্তপোযজ্ঞা যোগযজ্ঞাস্তথাপরে।
স্বাধ্যায়জ্ঞানযজ্ঞাশ্চ যতয়ঃ সংশিতব্রতাঃ।।(৪।২৮)

অর্থঃ——তীক্ষ্ণ ব্রতধারী য়তিদের মধ্যে কেহ দ্রব্যযজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, কেহ তপযজ্ঞের কেহ যোগ যজ্ঞের এবং অপরে অধ্যায় বা জ্ঞান যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। (ভগবদ্ গীতা অধায় ৪ শ্লোক ২৮)।।

সর্বং কর্মাখিলং পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে।(৪।৩৩)
তদ্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।।(৪।৩৪)

অর্থঃ——হে পার্থ। জ্ঞানে গিয়া সর্ব প্রকার কর্মেরই পরিসমাপ্তি হয়। জ্ঞানী পুরুষকে প্রণাম করিয়া, বার বার প্রশ্ন করিয়া এবং সেবা করিয়া সেই জ্ঞানকে প্রাপ্ত হও। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৪ শ্লোক ৩৩, ৩৪)।।

অর্জুন উবাচ

সন্ন্যাসঃ কর্মযোগশ্চ নিঃশ্রেয়সকরাবুভৌ। 
তয়োস্ত কর্মসন্ন্যাসাৎ কর্মযোগো বিশিষ্যতে।।(৫।২)

অর্থঃ——সন্ন্যাস ও কর্মযোগ উভয়ই মোক্ষপ্রদ, কিন্তু এই উভয়ের মধ্যে কর্মসন্ন্যাস অপেক্ষা কর্মযোগই শ্রেষ্ঠ। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৫ শ্লোক ২)।।

যোগযুক্তো মুনির্ব্রহ্ম ন চিরেণাধিগচ্ছতি।(৫।৬)
সর্বভুতাত্মভূতাত্মা কুর্বন্নপি ন লিপ্যতে।।(৫।৭)

অর্থঃ——যোগযুক্ত মুনি শীঘ্রই ব্রহ্মলাভ করেন, জীব মাত্রকে তিনি আত্মতুল্য অবলোকন করেন এবং কর্মে বিরত থাকিয়াও তিনি কর্মে লিপ্ত হন না। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৫ শ্লোক ৬,৭)।।

শ্রীভগবানুবাচ

উদ্ধরেদাত্মনাত্মনং নাত্মনমবসাদয়েৎ। 
আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ।।(৬।৫)

অর্থঃ——নিজেই নিজের উন্নতি সাধন করিবে, অবনতি রোধ করিতে হয়। কারণ মনুষ্য নিজেই নিজের বন্ধু এবং নিজেই নিজের শত্রু। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৬ শ্লোক ৫)।।

যোগী যুঞ্জীত সততমাত্মনং রহসি স্থিতঃ। 
একাকাী যতচিত্তাত্মা নিরাশীরপরিগ্রহঃ।।(৬।১০)

অর্থঃ——যোগী একাকী থাকিয়া, গুপ্তস্থানে বাস করিয়া, বিষয় বাসনা হইতে নিবৃত্ত হইয়া এবং কাহারও সাহায্য না লইয়া পরমাত্মার সহিত আত্মার সংযোগ করিবে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৬ শ্লোক ১০)।।

সমং কায়শিরোগ্রীবং ধারয়ন্নচলং স্থিরঃ।
সংপ্রেক্ষ্য নাসিকাগ্রং স্বং দিশশ্চানবলোকয়ন্।(৬।১৩)
যথা দীপো নিবাতস্থো নেঙ্গতে সোপমা স্মৃতা।।(৬।১৯)

অর্থঃ——যোগী শরীর, মস্তক ও গ্রীবা স্বাভাবিক রূপে স্থির রাখিয়া, অচঞ্চল হইয়া এবং অন্য কোনও দিকে না চাহিয়া স্বীয় নাসিকাগ্রে উত্তমরূপে দৃষ্টি স্থাপন করিয়া শরীরকে এমন অচল করিয়া রাখিবে, যেমন দীপ নির্বাত স্থলে নিশ্চল থাকে। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৬ শ্লোক ১৩, ১৯)।।

আত্মৌপম্যেন সর্বত্র সমং পশ্যতি যোহর্জুন। 
সুখং বা যদি বা দুঃখং স যোগী পরমো মতঃ।।(৬।৩২)

অর্থঃ——হে অর্জুন ! যে কেহ তুলনায়, সর্বত্র প্রাণীকে নিজের সমান সুখী বা দুঃখী দেখে তাহাকেই পরমযোগী বলিয়া মানা যায়। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৬ শ্লোক ৩২)।

যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি। 
তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি।।(৬।৩০)

অর্থঃ——যিনি আমাকে (পরমাত্মাকে) সর্বত্র এবং সবকে আমাতে (পরমাত্মাতে) অবলোকন করেন পরমাত্মা তাহাকে নাশ করেন না বা পরমাত্মাকে তিনি নাশ করেন না অর্থাৎ ভুলিয়া যান না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৬ শ্লোক ৩০) ।।

ভূমিরাপোহনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ। 
অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।(৭।৪)
অহং কৃৎস্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথা।।(৭।৬)

অর্থঃ——আমার (পরমাত্মার) ভিন্ন ভিন্ন আট প্রকারের শক্তি আছে যথা ভূমি, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার। (পরমাত্মা) সমস্ত জগতের রচনা ও প্রলয় সাধন করি। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ৪, ৬)।।

মত্তঃ পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয়। 
ময়ি সর্বমিদং প্রোতং সূত্রে মণিগণা ইব।।(৭।৭)

অর্থঃ——হে ধনঞ্জয়! আমার (পরমাত্মা) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নাই, সূত্রে যেমন মণি সকল গ্রথিত থাকে তদ্রুপ আমাতেই সর্ব জগৎ গ্রথিত। (ভগবদ্ গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ৭)।।

রসোহহমপ্সু কৌন্তেয় প্রভাস্মি শশিসূর্যয়োঃ।
প্রণবঃ সর্ববেদেষু শব্দঃ খে পৌরুষং নৃষু।।(৭।৮)

অর্থঃ——হে কৌন্তেয় ! জলে আমিই রস। আমিই চন্দ্র ও সূর্যের প্রভা। সমুদয় বেদের আমিই প্রণব। আকাশে আমিই শব্দ । আমিই পুরুষের পৌরুষ। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ৮)।। 

পুণ্যো গন্ধঃ পৃথিব্যাং চ তেজশ্চাস্মি বিভাবসৌ। 
জীবনং সর্বভূতেষু তপশ্চাস্মি তপস্বিষু।।(৭।৯)

অর্থঃ——পৃথিবীতে আমিই পুণ্য সুগন্ধ। আমিই অগ্নির তেজ। আমিই সমুদয় ভূতের জীবন। আমিই তপস্বী দিগের তপ। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ৯)।।

বুদ্ধির্বুদ্ধিমতামস্মি তেজস্তেজস্বিনামহম্।(৭।১০)
বলং বলবতাং চাহং কামরাগবিবর্জিতম্।।(৭।১১)

অর্থঃ——আমিই বুদ্ধিমানের বুদ্ধি। তেজস্বীদিগের আমিই তেজ। আমিই বলবান্ দিগের কামরাগবর্জিত বল। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ১০, ১১)।।

চতুর্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সৃকৃতিনোহর্জুন।
আর্তো জিজ্ঞাসুরর্থাথী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।(৭।১৬)
বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ।।(৭।১৯)

অর্থঃ——হে ভরতষর্ভ অর্জুন ! চারি প্রকারের পুণ্যবান্ ব্যক্তিরা আমার (পরমাত্মার) ভজনা করেন (১) আর্ত(২) জিজ্ঞাসু (৩) ভোগার্থী এবং (৪) জ্ঞানী। ইহাদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠতম যিনি পূর্ণ জ্ঞানী মহাত্মা, যিনি মনে করেন যাহা কিছু সকলের মধ্যেই বাসুদেব পরমাত্মা বিদ্যমান। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ১৬, ১৯)।।

জরামরণমোক্ষায় মামাশ্রিত্য যতন্তি যে। 
তে ব্রক্ষ তদ্ বিদুঃ কৃৎস্নমধ্যাত্নং কর্ম চাখিলম্।।(৭।২৯)

অর্থঃ——বার্দ্ধক্য ও মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য যে আমার (পরমাত্মার) আশ্রয় গ্রহণ করিয়া যত্ন করে, সে সেই বহ্মকে, সম্পূর্ণ অধ্যাত্ম বিদ্যাকে এবং সবকর্মকে অবগত হয়। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৭ শ্লোক ২৯)।।

অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্তা কলেবরম্।
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ।।(৮।৫)

অর্থঃ——যে কেহ অন্তিম সময় আমাকে (পরমাত্মাকে) স্মরণ করিয়া শরীর ছাড়িয়া যায় সে আমার মুক্তি প্রাপ্ত হয় তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৮ শ্লোক ৫)।।

তস্মাৎ সর্বেষু কালেষু মামনুষ্মর যুধ্য চ।
ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্মামেবৈষ্যস্যসংশয়ঃ।।(৮।৭)

অর্থঃ——অতএব সব সময় আমাতে (পরমাত্মাতে) মন ও বুদ্ধিকে অর্পণ করিয়া আমাকেই (পরমাত্মাকেই) স্মরণ করিতে করিতে যুদ্ধ করিলে নিশ্চিত তুমি আমাকেই প্রাপ্ত হইবে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৮ শ্লোক ৭)।।

সর্বদ্বারাণি সংযম্য মনো হৃদি নিরুধ্য চ।
মূর্ধ্ন্যাধায়াত্মনঃ প্রাণমাস্থিতো যোগধারণাম্।।(৮।১২)

অর্থঃ——চক্ষু, কর্ণ, নাসিকাদি সব দ্বারকে সংযত করিয়া মনকে হৃদয়ে নিরোধ করিয়া নিজ প্রাণকে শিরোদেশে উঠাইয়া যোগাভ্যাসে রত হইবে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৮ শ্লোক ১২)।।

ইদং তু তে গুহ্যতমং প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে। 
জ্ঞানং বিজ্ঞানসহিতং যজজ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেহশুভাৎ।।(৯।১)

অর্থঃ——হে নিষ্পাপ অর্জুন! তোমাকে আমি এখন ইহার চেয়েও উৎকৃষ্ট বিজ্ঞান সহিত জ্ঞানকে শুনাইব। ইহা জানিলে তুমি অশুভ ভাব হইতে মুক্ত হইবে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৯ শ্লোক ১)।।

অহং ক্রতুরহং যজ্ঞঃ স্বধাহমহমৌষধম্। 
মন্ত্রোহহমেহমেবাজ্যমহমগ্নিরহং হুতম্।(৯।১৬)
বেদ্যং পবিত্রম্ ওঙ্কার ঋক্ সাম যজুরেব চ।।(৯।১৭)

অর্থঃ——আমিই (পরমাত্মা) ক্রতু (বৃহত্যজ্ঞ) আমিই স্বধা (পিতৃযজ্ঞ), আমিই ঔষধ, আমিই যজ্ঞ, আমিই মন্ত্ৰ, আমিই আজ্য (ঘৃত), আমিই যজ্ঞাগ্নি এবং আমিই আহুত দ্রব্য। আমিই জানিবার যোগ্য পবিত্র ওঙ্কার, আমিই ঋক্‌-যজু-সামবেদ। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৯ শ্লোক ১৬, ১৭)।।

যৎকরোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ।
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎকুরুষ্ব মদর্পণম্।।(৯।২৭)

অর্থঃ——হে কৌন্তেয় ! তুমি যাহা কর, যাহা খাও, যাহা হোম কর, যাহা তপস্যা কর, তাহা সবই আমাতে (পরমাত্মাতে) অর্পণ কর। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ৯ শ্লোক ২৭)।

র্জ্যোতিষাং রবিরংশুমান্, নক্ষত্রাণামহং শশী।।(১০।২১)-অংশ

অর্থঃ——জ্যোতিষ্ক মণ্ডলীর মধ্যে আমি সূর্য এবং নক্ষত্রের মধ্যে আমি চন্দ্রমা (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ২১)।

রুদ্রাণাং শঙ্করশ্চাস্মি বিত্তেশো যক্ষরক্ষসাম্। (গীতা ১০।২৩)
মহর্ষীণাং ভৃগুরহং, মেরু শিখরিণামহম্॥ (গীতা ১০।২৫)

অর্থঃ——রুদ্রদের মধ্যে আমি শঙ্কর, যক্ষ ও রাক্ষসদের মধ্যে অমি কুবের, মহর্ষিদের মধ্যে আমি ভৃগু এবং পর্বত সমুহের মধ্যে আমি মেরু ৷ (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ২৩, ২৫)।

অশ্বত্থঃ সর্ববৃক্ষাণাং দেবষীণাং চ নারদঃ। 
উচ্ছৈঃশ্রবসমশ্বানাং সিদ্ধানাং কপিলো মুনিঃ॥ (গীতা ১০।২৬, ২৭)

অর্থঃ——সব বৃক্ষের মধ্যে আমি অশ্বত্থ, দেবর্ষিদের মধ্যে আমি নারদ, অশ্ব সমূহের মধ্যে আমি উচ্চৈঃশ্রবা জানিও এবং সিদ্ধ পুরুষদের মধ্যে আমি কপিল। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ২৬, ২৭)।

ঐরাবতং গেজেন্দ্রাণাং নরাণাং চ নরাধিপম্। (গীতা ১০।২৭)
আয়ুধানামহং বজ্রং সর্পাণামস্মি বাসুকিঃ॥ (গীতা ১০।২৮)

অর্থঃ——গজেন্দ্রগণের মধ্যে আমি ঐরাবত, নরগণের মধ্যে আমি রাজা, অস্ত্র সমূহের মধ্যে আমি বজ্র এবং সর্পগণের মধ্যে আমি বাসুকি। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ২৭, ২৮)।

বরুণো যাদসামহম্, যমঃ সংযমতামহম্।(১০।২৯)/part
প্রহ্লাদশ্চাস্মি দৈত্যানাং কালঃ কলয়তামহম্।(১০।৩০)/1

অর্থঃ——জলচরগণের মধ্যে আমি বরুণ, শাসকদের মধ্যে আমি যম, দৈত্যদের মধ্যে আমি প্রহল্লাদ এবং গণণাকারীদের মধ্যে আমি কাল। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ২৯, ৩০)।

মৃগাণাং চ মৃগেন্দ্রোহহং বৈনতেয়শ্চ পক্ষিণাম্।(১০।৩০)/2
অক্ষরাণামকারেহস্মি (১০।৩৩) রামঃ শস্ত্রভৃতামহম্। (গীতা ১০।৩১)/part
মাসানাং মার্গশীর্ষোহহমৃতূনাং কুসুমাকরঃ।।(১০।৩৫)/2

অর্থঃ——পশুগণের মধ্যে আমি সিংহ, পক্ষীদের মধ্যে আমি গরুড়, অক্ষর সমূহের মধ্যে আমি ‘অ’কার, শস্ত্রধারীদের মধ্যে আমি রাম, মাস সমূহের মধ্যে আমি মার্গশীর্ষ (অগ্রহায়ণ) এবং ঋতুগণের মধ্যে আমি বসন্ত। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ৩০, ৩২, ৩৩, ৩৫)।

বৃষ্ণীনাং বাসুদেবোহস্মি পান্ডবানাং ধনঞ্জয়ঃ। 
মুনীনামপ্যহং ব্যাসঃ কবীনামুশনাঃ কবিঃ।।(১০।৩৭)

অর্থঃ——বৃষ্ণীবংশে আমি বাসুদেব, পাণ্ডবগণের মধ্যে আমি অর্জুন, মুনিদের মধ্যে আমি ব্যাস এবং কবিদের মধ্যে আমি উশনা। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ৩৭)।

“ঔষধিণাম্”। (বর্ত্তমান গীতায় এই শব্দ পাওয়া যায় না)
নাস্তোহস্তি মম দিব্যানাং বিভূতীনাং পরন্তপ।।(১০।৪০)

অর্থঃ——হে পরন্তপ ! আমার (পরমাত্মার) দিব্য বিভূতি সকলের অন্ত নাই। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ৪০)।

পশ্য মে পার্থ রূপাণি শতশোহথ সহস্রশঃ।
নানাবিধানি দিব্যানি নানাবর্ণাকৃতীনি চ।।(১১।৫)

অর্থঃ——হে পার্থ ! তুমি আমার (পরমাত্মার) শত-শত, সহস্ৰ সহস্র প্রকারের নানাবিধ, নানাবর্ণের ও নানা আকৃতির দিব্য রূপ সকল দর্শন কর। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ৫।

ন তু মাং শক্যসে দ্রষ্টুমনেনৈব স্বচক্ষুষা। 
দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্।।(১১।৮)

অর্থঃ——পরন্তু আমাকে (পরমাত্মাকে) তুমি এই চর্ম চক্ষু দ্বারা দেখিতে পারিবে না। এজন্য তোমাকে আমি জ্ঞান চক্ষু দিতেছি। এখন আমার যোগের ঐশ্বর্যকে দর্শন কর। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ৮)। 


অনেকবক্ত্রনয়নমনেকাদ্ভুতর্শনম্।
অনেকদিব্যাভরণং দিব্যানেকোদ্যতায়ুধম্।।(১১।১০)

অর্থঃ——তাহার অনেক মুখ, অনেক নয়ন এবং দেখিতে অদ্ভূত প্রকার । তাহার অনেক দিব্য আভরণ ও অনেক উদ্যত দিব্য আয়ুধ সকল বিদ্যমান। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ১০)।


অর্জুন উবাচ

যথা নদীনাং বহবোহম্বুবেগাঃ
সমুদ্রমেবাভিমুখা দ্রবন্তি।
তথা তবামী নরলোকবীরা
বিশন্তি বক্ত্রাণ্যভিবিজ্বলন্তি।।(১১।২৮)

অর্থঃ——(অর্জুন স্তব করিতেছেন) যেমন নদী সকলের জল প্রবাহ একমাত্র সমুদ্রের অভিমুখেই ধাবিত হয় তদ্রুপ এই নরলোকের বীরগণ জ্বলিতে, জ্বলিতে তোমারই বদনবিবর সমূহে প্রবেশ করিতেছেন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ২৮)। 

যথা প্রদীপ্তং জ্বলনং পতঙ্গা
বিশন্তি নাশায় সমৃদ্ধবেগাঃ।
তথৈব নাশায় বিশন্তি লোকা-
স্তবাপি বক্ত্রাণি সমৃদ্ধবেগাঃ।।(১১।২৯)

অর্থঃ——যেমন পতঙ্গকুল মরিবার নিমিত্ত প্রদীপ্ত অগ্নিতে অতিবেগে প্রবেশ করে। তদ্রুপই লোকসকল মরিবার নিমিত্ত দ্রুতগতিতে তোমারই মুখে নিশ্চয়ে প্রবিষ্ট হইতেছে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ২৯)।


আখ্যাহি মে কো ভবানুগ্ররূপো, (গীতা ১১।৩১)
লোকান্ সমাহর্তুমিহ প্রবৃত্তঃ। (গীতা ১১।৩২)
নমো নমস্তেহস্তু সহস্রকৃত্বঃ। (গীতা ১১।৩৯)
নমঃ পুরস্তাদধ পৃষ্ঠতস্তে॥ (গীতা ১১।৪০)

অর্থঃ——তুমি এইরূপ উগ্ররূপযুক্ত কে তাহা আমাকে বল; মনে হয় লোক সমূহকে ধ্বংস করিতেপ্রবৃত্ত হইয়াছে। তোমাকে নমস্কার! সহস্রবার নমস্কার! তোমার সম্মুখে নমস্কার! তোমার পশ্চাতেও নমস্কার। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ৩১, ৩২, ৩৯, ৪০)।

শ্রীভগবানুবাচ

নাহং বেদৈর্ন তপসা ন দানেন ন চেজ্যয়া। 
শক্য এবংবিধো দ্রষ্ট্রুং দৃষ্টবানসি মাং যথা।।(১১।৫৩) 

অর্থঃ——(হে অর্জুন!) আমার (পরমাত্মার) যে অদ্ভূত রূপকে তুমি দেখিলে তাহা এমন যে শুধু বেদপাঠে, তপ দ্বারা, দান দ্বারা বা যজ্ঞ দ্বারা দেখা যায় না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ৫৩)।

মৎকর্মকৃন্মৎপরমো মদ্ভক্তঃ সঙ্গবর্জিতঃ। 
নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু যঃ স মামেতি পান্ডব।।(১১।৫৫)

অর্থঃ——হে পাণ্ডব! যিনি শুধু আমার (পরমাত্মার) জন্যই কর্ম করে, আমাকেই (পরমাত্মাকেই) সার মনে করে, সাংসারিক পদার্থে অনাসক্ত, সর্বভূতে যিনি বৈরভাব বিসর্জন করেন, তিনিই আমাকে (পরমাত্মার) প্রাপ্ত হন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ৫৫) ।

যথা সর্বগতং সৌক্ষ্ম্যাদাকাশং নোপলিপ্যতে। 
সর্বত্রাবস্থিতো দেহে তথাত্মা নোপলিপ্যতে।।(১৩।৩৩)

অর্থঃ——যেমন সর্বান্তৰ্গত আকাশ সূক্ষ্মাত্ব বশতঃ কিছুর সহিতই লিপ্ত হয় না, তদ্রুপ দেহের সর্বত্র অবস্থিত আত্মা (পরমাত্মা) দেহের সহিত লিপ্ত হয় না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৩ শ্লোক ৩৩)।

যথা প্রকাশয়ত্যেকঃ কৃৎস্নং লোকমিমং রবিঃ। 
ক্ষেত্রং ক্ষেত্রী তথা কৃৎস্নং প্রকাশয়তি ভারত।।(১৩।৩৪)

অর্থঃ——হে ভারত! যেমন একই সূর্য সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড আলোকিত করেন তদ্রুপ একই ক্ষেত্রী (পরমাত্মা) সমস্ত ক্ষেত্রকে (ব্রহ্মাণ্ডকে) উজ্জ্বল করিয়া রাখেন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৩ শ্লোক ৩৩)।

সত্ত্বং সুখে সঞ্জয়তি রজঃ কর্মণি ভারত। 
জ্ঞানমাবৃত্য তু তমঃ প্রমাদে সঞ্জয়ত্যুত।।(১৪।৯)

অর্থঃ——হে ভারত! সত্বগুণ সুখানুসন্ধানে প্রবৃত্ত করে, রজোগুণ কর্মানুসন্ধানে প্রবৃত্ত করে এবং তমোগুণ জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করিয়া আলস্যে প্রবৃত্ত করে। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৪ শ্লোক ৯)।

ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ। 
জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।।(১৪।১৮)

অর্থঃ——সত্ব গুণাবস্থিত ব্যক্তিগণ ঊর্দ্ধগতি লাভ করেন, রজোগুণাবস্থিতগণ মধ্য গতিলাভ করেন এবং তমো গুণাবস্থিত গুণের অধোগতি লাভ হয়। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৪/১৮)।

অর্জুন উবাচ

সমদুঃখসুখঃ স্বস্থঃ সমলোষ্ট্রাশ্মকাঞ্চনঃ। 
তুল্যপ্রিয়াপ্রিয়ো ধীরস্তুল্যনিন্দাত্মসংস্তুতিঃ।।(১৪।২৪)
মানাপমানয়োস্তুল্যস্তুল্যো মিত্রারিপক্ষয়োঃ। 
সর্বারম্ভপরিত্যাগী গুণাতীতঃ স উচ্যতে।।(১৪।২৫)

অর্থঃ——যাহার পক্ষে সুখ ও দুঃখ উভয়ই সমান, লোষ্ট্র কাঞ্চনে কোন ভেদ নাই, প্রিয় ও অপ্রিয় সমতুল্য, যিনি চির আত্মস্থ, ধীর এবং স্বীয়ং নিন্দা ও স্তুতিতে সমভাব, যিনি মান ও  অপমান সমান ভাবেন, মিত্র এবং স্বপক্ষীয় গণকে অভিন্ন দেখেন এবং কোনও বিষয়ের কর্তৃত্বাভিমান রাখেন না, তিনিই ত্রিগুণাতীত বলিয়া কথিত হন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৪ শ্লোক ২৪, ২৫)।

মাং চ যোহব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে। 
ম গুণান্ সমতীতৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।।(১৪।২৬)

অর্থঃ——যিনি অবিচলিত ভাবে ভক্তিযোগ দ্বারা আমাকে (পরমাত্মাকে) উপাসনা করেন, তিনি সম্যক্সকার এই গুণত্রয়কে অতিক্রম করিয়া মুক্তি লাভ করেন। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৪ শ্লোক ২৬)।
শ্রীকৃষ্ণ উবাচ

সর্বsধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ। 
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।(১৮।৬৬)

অর্থঃ——(যাহা তুমি ধর্ম বলিয়া ভাবিতেছ এরূপ) সমস্ত অধর্মকে পরিত্যাগ করিয়া একমাত্র আমার শরণ লও। আমি তোমাকে সর্বপ্রকার পাপ হইতে মুক্তি করিয়া, মোক্ষের পথ দেখাবো। তুমি চিন্তা করিও না। (ভগবদ্গীতা অধ্যায় ১৮ শ্লোক ৬৬)।

৭০ শ্লোকী প্রাচীন গীতা pdf


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ