“দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”✍️স্টিফেন উইলিয়াম হকিং
মুমিনরা বিবর্তন মানে না ভাল কথা, কিন্তু আদম হাওয়ার গাঁজাখুরি গপ্পো ঠিকি বিশ্বাস করে। উহারা বলে যে বাবা আদমের সাইজ নাকি ইয়া লম্বা ছিল, সঠিকভাবে বলতে গেলে ৬০ হাত লম্বা, অনেকের মতেআদম ৯০ ফুট লম্বা ছিলেন। বেশকিছু হাদিসে এই কৌতুকপূর্ণ দাবি করা হয়, যেমন
Sahih Bukhari, Volume 4, Book 55, Number 544)"
Sahih Muslim, Book 040, Number 6809
Sahih Bukhari, Volume 4, Book 55, Number 543
Sahih Muslim, Book 040, Number 6796
এই হাদিসগুলর সবকয়টিতেই আদমের উচ্চতা ৬০ হাত বলা আছে। এর মানে কি দাঁড়াল? মানুষের উচ্চতা দিন দিন কমতে কমতে আজকের পর্যায়ে পৌঁছেছে। খুবি ভাল কথা, কিন্তু এই দাবিটি কি বিজ্ঞান সম্মত? বিজ্ঞান কিন্তু বলছে মোটেও না। আসুন দেখে নেই কেন।
এই প্রস্নের উত্তর আসলে খুব সহযেই দেওয়া যায় শুধুমাত্র দুইটি তথ্য জানলে। ইসলাম মতে আদমের কাহিনী আনুমানিক কতদিন আগের, আর বিজ্ঞান মতে আধুনিক মানুষের বিকাশ ঠিক কত বছর আগের। এর পর আপনাকে জানতে হবে যে আধুনিক মানুষের আদি পুরুষদের উচ্চতা সময়ের সাথে ঠিক কতখানি পরিবর্তিত হয়েছে।
উত্তর হল, আধুনিক মানুষের বিকাশ হয় আজ থেকে প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে। আপনি বিবর্তন না মানলেও এই তথ্য আপনাকে মানতেই হবে কেননা বিজ্ঞানিরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত মানব ফসিল গবেষণা করে ও আধুনিক মানুষের DNA টেস্ট সহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে। এসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা বিবর্তনবাদ তত্তের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নয়।
পক্ষান্তরে ইসলাম অনুসারে আদমের কাহিনী বড়োজোর আনুমানিক ১০ হাযার বছর আগের। কই ২ লক্ষ বছর আর কই ১০ হাযার বছর এখন প্রশ্ন হল, আদমই যদি আদি মানব হয় তো এতশত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা কি মিথ্যা? প্রাপ্ত ফসিলগুলো কি মিথ্যা? ছাগুরা এখানে নিশ্চিত ত্যনা পেচাবে, আবার এই ছাগুরাই কুরানে বিজ্ঞান খুজে।
উইকিতে আছেঃ Anatomically modern humans evolved from archaic Homo sapiens in the Middle Paleolithic, about 200,000 years ago. The transition to behavioral modernity with the development of symbolic culture, language, and specialized lithic technology happened around 50,000 years ago according to many anthropologists although some suggest a gradual change in behavior over a longer time span.
যারা বিবর্তন মানতে চান না তাদের অন্তত এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আজ থেকে প্রায় ৫০ হাযার বছর আগেই সভ্য মানুষের বিকাশ ঘটেছিল। এই তথ্য কোন বিবর্তনবাদ তত্ত্ব থেকে আসেনি, এসেছে অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে। এখন আমার প্রশ্ন হল আদমের কাহিনী কি ৫০ হাযার বছরেরও আগের? উত্তর, মোটেও না। তাহলে আল্লাহ কি জানত না এই লক্ষ লক্ষ বছর আগেই মানুষ সৃষ্টি হওয়ার কাহিনী? খুবি দুঃখজনক
মুমিন্দের দাবি যে আদমের উচ্চতা ৬০ হাত ছিল, পরে ধিরে ধিরে মানুষের উচ্চতা কমতে কমতে ৫-৬ ফুটে নেমে এসেছে। অত্যন্ত হাস্যকর, নয় কি? আর মুসলিমদের দাবি যদি মেনেও নেই, তো এটাও তো বিবর্তনবাদকেই সমর্থন করছে, নাকি? মাথায় এক ছটাক ঘিলু থাকলেও মুমিন্দের ইহা বুঝা উচিৎ।
এখন আমার প্রশ্ন হল, সত্যি যদি মানুষের উচ্চতা ৬০ হাত থেকে কমতে কমতে বর্তমানের পর্যায়ে আসে, তবে তো বিভিন্ন সময়ে ৬০ হাত, ৫০ হাত, ৪০ হাত, ৩০ হাত, ২০ হাত, ১০ হাত সহ আরও নানান উচ্চতার মানুষ পাওয়া যাবে। লক্ষ কক্ষ বছর আগের ডাইনসরের ফসিল পাইল কাফের বিজ্ঞানিরা, আর বিভিন্ন উচ্চতার মানুষের ফসিল পাইল না, সো সেড
অথচ বিবর্তন কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টো নিয়মে। মানুষ ধিরে ধিরে অনুন্নত থেকে উন্নত হয়েছে, হয়েছে পুরনাঙ্গ। উইকিতে দেখুনঃ The earliest documented members of the genus Homo are Homo habilis which evolved around 2.3 million years ago; the earliest species for which there is positive evidence of use of stone tools.
নেটেই আপ্নারা বিভিন্ন সময়ে আদিম মানুষের প্রাপ্ত ফসিল সম্পর্কে সচিত্র তথ্য পাবেন। সেখানে কোথাও মানুষের উচ্চতা ৬০ হাত থাকার মত চরমতম আজগুবি দাবি করা হয়নি, বরং তাদের সবার আক্রিতিই কম বেশী আধুনিক মানুষের কাছাকাছিই ছিল, তবে বুদ্ধিতে তারা ছিল হাযার গুণ পিছিয়ে। হোমো হিবিলস দিয়েই সার্চ শুরু করতে পারেন।
Skhul/Qafzeh hominids এর তথ্য দেখুন। এদের ৮০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ বছর আগেকার ফসিল পাওয়া গেছে, আর এদের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে electron spin resonance এবং thermoluminescence dating techniques এর মাধ্যমে। এদের খুলির সাইজ দেখুন, ঠিক আমাদেরি মত। এখন আপনি বিবর্তন না মানলেও এইসব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? তাহলে আপনার সাথে তর্কই বৃথা। শিশু শ্রেণীর বাচ্চাকে তো আর উচ্চ মাধ্যমিকের গেয়ান দিয়া লাভ নাই
এই ছবিতে ৩০ হাযার বছর আগেকার নিয়ান্ডারথাল যুগের মানুষের খুলির সাথে বর্তমান মানুষের খুলির তুলনা দেওয়া আছে, যা খুবি কাছাকাছি। তাহলে মাত্র ১০ হাযার বছর আগেকার আদমের সাইজ কেম্নে ৬০ হাত হয়? আর এই ফসিল, ছবি, সময় গননা, এসব তো আর মিথ্যা না। আর ২ লক্ষ বছর আগের মানুষের পূর্বপুরুষের প্রাপ্ত ফসিল তো বলে যে তাদের সাইজ কম বেশী আমাদের মতই ছিল, আর যাই হোক অন্তত ৬০ হাত বা এমন কি ১০ হাতও ছিল না, বরং আমাদের মতই ছিল। তাহলে কি আদমের কাহিনী আরও আগের, মানে ২ লক্ষ বছরেরও আগের? ইসলামের ইতিহাস কিন্তু বলে খুব জোর ১০ হাযার বছর আগের হতে পারে।
এখন মুমিনরা নিজেদের বৈজ্ঞানিক ধর্মকে বাচাতে যা করতে পারে তা হল বিবর্তনবাদের পাশাপাশি ফসিল গবেষণা, ডি এন এ টেস্ট, electron spin resonance, thermoluminescence dating techniques সহ এই সংশ্লিষ্ট সব গবেষণা অস্বীকার করা।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ) কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হলো ষাট হাত। সৃষ্টির পর তিনি তাকে বললেন, যাও এদেরকে সালাম করো। সেখানে একদল ফেরেশতারা বসা ছিলেন। সালামের জবাবে তারা কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শুনো। কেননা তোমার এবং তোমার বংশধরদের অভিবাদন হবে এ-ই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন ও বললেন, "আসসালামু আলাইকুম"। জবাবে তারা বললেন, "আসসালামু ‘আলাইকা ওয়ারহমাতুল্লাহ"। তারা ওয়ারহমাতুল্লাহ বাড়িয়ে বলেছেন। অবশেষে তিনি বললেন, যে লোক জান্নাতে যাবে সে আদম (আঃ) এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তারপর আদম (আঃ) এর পর থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ ক্রমশই খাটো হয়ে আসছে।
এখানে,খাটো হবার ক্ষেত্রে কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।সেই অনুবাদটি দেখি,
"then the people who followed him يَنْقُصُ (continued to diminish) in size up to this day"
এখন এটা পড়ে আপনার মনে হতেই পারে যে,
আদম(আঃ) এর পরে হয়ত মানুষের বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ খাটো হয়ে গিয়েছে।এর পক্ষে-বিপক্ষে এখন অনেক বড় বিতর্কও হতে পারে কিন্তু,এতে করে মানুষের মধ্যে একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে যাবে।
এই ভুল বুঝা-বুঝি দূর হয়ে যায় যদি আমরা আরও কয়েকটা হাদিস এবং কুরআনের কিছু আয়াত একসাথে তুলে ধরি এবং সেই অনুযায়ী অনুবাদটা পরিবর্তন করি তবে সেই হাদিসটা বুঝতে আমাদের কোন সমস্যা হবেনা।
প্রথমেই ফলাফলটা দিয়ে দিচ্ছি,
"the creation is still يَنْقُصُ (lacking, cut off) after him until now"
এবার এর অর্থ দাড়ালোঃ
তার পর থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের উচ্চতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে
আমার এই ফলাফলের পক্ষে কি আমি কোন যুক্তি দিবনা নাকি? অবশ্যই দিব!
যুক্তি দেয়ার জন্য আমাদের
The Final Verdict of Our LORD GOD (আমাদের প্রভু আমাদের আল্লাহ্র শেষ রায়) অর্থাৎ, কুরআনে যেতে হবে।
কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা আদম এবং ইভ(আঃ) কে সৃষ্টি করার পর তাদের জান্নাতে থাকতে দিলেন।কিন্তু,তাদের একটি নিষিদ্ধ ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন।
(Quran 2:35–36)
We cautioned, “O Adam! Live with your wife in Paradise and eat as freely as you please, but do not approach this tree, or else you will be wrongdoers.”
But Satan deceived them—leading to their fall from the ˹blissful˺ state they were in, and
We said, “Descend from the heavens ˹to the earth˺ as enemies to each other.You will find in the earth a residence and provision for your appointed stay.”
এখানে, Blissful State জিনিসটা কি?
আসলে তারা সেখানে মানুষের মত দেখতে হলেও সাধারণ মানুষরা যেমন হয় সেরকম ছিলেন না। কিন্তু, স্যেটান এর প্ররোচনায় তাদের সেই মর্যাদা হারাতে হয়। এবং যখন তাদের দ্যা গারডেন অফ ইডেন থেকে বের করে পৃথিবীতে আনা হয় এর মধ্যে হয়ত তাদের উচ্চতা কমানো হয়েছিল।
অবশ্যই এটা একটা সম্ভাবনা হতে পারে।
আর আদম(আঃ) [ এবং by extension সমগ্র মানবজাতি] যেই মর্যাদা হারিয়েছিল তা জান্নাতে গেলে ফিরে পাবে তার মধ্যে থাকবে সেই উচ্চতাও।
এর একটা উদাহরণ আমরা সহিহ বুখারির একটা হাদিসেও পাই,
অর্থাৎ,জান্নাতে গেলে সমগ্র মানবজাতির উচ্চতা তাদের আদিপিতা আদমের মত হবে যার কিনা জান্নাতে উচ্চতা (60 cubits) ৯০ ফুট ছিল।
সারাংশঃ
প্রথমে দেয়া হাদিসটি দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে আদম(আঃ) এর উচ্চতা যখন ৯০ ফুট ছিল তখনও তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয় নি।
কুরআন এবং হাদিসের কিছু অংশ থেকে আদম(আঃ) যে পৃথিবীতে ৯০ ফুট ছিলেন না তার কিছুটা আভাস দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
৯০ ফুট হওয়া কোন বৈজ্ঞানিক ভুল না,এটা জান্নাতিদের একটি জন্য প্রিজারভড বৈশিষ্ট্য;তাই হেটারসরা দূরে থাকুন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ, এই পোস্টটি একটি ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে।অনুবাদ,সম্পাদনা এবং অতিরিক্ত সংযোজন আমি করেছি।
" The more I study science, the more I believe in God."
" I want to know how God created this world. I am not interested in this or that phenomenon, in the spectrum of this or that element. I want to know his thoughts." ✍Albert Einstein
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ