যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি কাজ করার বা হওয়ার ভাব প্রকাশ করে এবং উপযুক্ত বিভক্তি প্রত্যয় ইত্যাদি গ্রহণ ক'রে বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদে পরিণত হয়, তাকে ধাতু বলে।
কয়েকটি ধাতুর উদাহরণ : খা, দেখ্, চল্, হ, পা, যা, বাঁচ্, হাঁট্, ঘুমা, বলা(বলানো অর্থে) ইত্যাদি।
ধাতু থেকে ক্রিয়াপদের জন্ম হয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা একটি কাজ নিচ্ছি-- খেলা। খেলা কাজটি ধরে কয়েকটি ক্রিয়া পদ গঠন করে দেখি:
খেলি, খেলিতেছি, খেলো, খেলেন, খেলিব, খেলে, খেলিয়াছিল, খেলিতে থাকিব, খেলিয়া, খেলিতে** ইত্যাদি।
ধাতু সম্পর্কে ভালো ভাবে জানর জন্য ভিডিওটি অবশ্যই দেখুন।
উপরের উদাহরণগুলি ভাঙলে দেখা যাবে প্রত্যেকটির মধ্যে একটিই অংশ আছে যেটি বদলায়নি, তা হল 'খেল্'। এটি বদলাতে পারে, কিন্তু বদলালে ক্রিয়ার কাজটিই বদলে যাবে। সুতরাং, একটি কাজের ক্ষেত্রে সমস্ত ক্রিয়ার একটি মূল ও অপরিবর্তনীয় অংশ থাকে। ওই অংশটিই ধাতু।
ধাতুর এই সংজ্ঞাটি ছোটোদের জন্য আদর্শ এবং এটির মধ্যে কোনো ভুল নেই।
যে পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া বলে। অথবা ধাতুর উত্তর বিভক্তি যোগে ধাতু ক্রিয়াপদে পরিনিত হয়।
ক্রিয়াপদের মূল অংশকে ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য অংশই ধাতু। ক্রিয়াপদকে ভাঙতে ভাঙতে যখন আর ভাঙা যায় না, তখন সেই অবিভাজ্য অংশটি হচ্ছে ধাতু। ক্রিয়াপদকে ভাঙলে দুটো অংশ পাওয়া যায়। যথা-
ধাতু বা ক্রিয়ামূল
ক্রিয়া বিভক্তি
ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া বিভক্তি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই ধাতু। যেমন – করে একটি ক্রিয়াপদ। এর দুটো অংশ রয়েছে- কর + এ। এখানে, কর হলো ধাতু এবং এ হলো ক্রিয়া বিভক্তি।
ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়াপদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- সমাপিকা ক্রিয়া
- অসমাপিকা ক্রিয়া
সাধারণ ভাবে ক্রিয়াপদ ৬ প্রকার। যথাঃ
- কর্মের উপর ভিত্তি করেঃ
- অকর্মক ক্রিয়া
- সকর্মক ক্রিয়া
- দ্বিকর্মক ক্রিয়া
- সমধাতুজ কর্মপদের ক্রিয়া
- প্রযোজক ক্রিয়া
- যৌগিক ক্রিয়া
- মিশ্র ক্রিয়া
- আমি বাড়ি যাব।
- আমরা সন্ধ্যায় পড়তে বসব।
যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
- আমরা হাত-মুখ ধুয়ে............
- প্রভাতে সূর্য উঠলে..............
যে বাক্যে একটিও কর্ম থাকে না তাকে অকর্মক বলে। যেমন:
- আমি খাচ্ছি।
- সে পড়ছে।
এখানে কী খাচ্ছি আর কী পড়ছে' তা অনুক্ত রয়েছে। কাজেই বাক্য দুটিতে খাচ্ছি এবং পড়ছে অকর্মক ক্রিয়া।
যে বাক্যে একটি কর্ম থাকে তাকে সকর্মক বলে।যেমন:
- আমি ভাত খাচ্ছি।
- সে বই পড়ছে।
এখানে কী খাচ্ছি আর কী পড়ছে' তা বলা রয়েছে। কাজেই বাক্য দুটিতে খাচ্ছি এবং পড়ছে সকর্মক ক্রিয়া।
যে বাক্যে দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক বলা হয়।
এক্ষেত্রে, ববস্তুবাচক কর্মপদটি মুখ্যকর্ম, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদটি গৌণ কর্ম।
- শিক্ষক ছাত্রদের(গৌণ কর্ম) বাংলা(মুখ্যকর্ম) পড়াচ্ছেন।
- বাবা আমাকে(গৌণ কর্ম) একটি কলম(মুখ্যকর্ম) কিনে দিয়েছেন
বাংলা ভাষার সমস্ত ধাতুকে ২০টি গণে ভাগ করা হয়েছে। যথা:-
ক্রমিক নং | ধাতুগণ | উদাহরণ |
---|---|---|
১ | হ-আদিগণ | হ (হওয়া), ল (লওয়া) ইত্যাদি। |
২ | খা-আদিগণ | খা (খাওয়া), ধা (ধাওয়া), পা (পাওয়া), যা (যাওয়া) ইত্যাদি। |
৩ | দি-আদিগণ | দি (দেওয়া), নি (নেওয়া) ইত্যাদি। |
৪ | শু-আদিগণ | চু (চোঁয়ানো), নু (নোয়ানো), ছু (ছোঁয়া) ইত্যাদি। |
৫ | কর্-আদিগণ | কর্ ( করা), কম্ (কমা), গড় (গড়া), চল (চলা) ইত্যাদি। |
৬ | কহ্-আদিগণ | কহ্ (কহা), সহ্ (সহা), বহ্ (বহা) ইত্যাদি। |
৭ | কাট্-আদিগণ | গাঁথ্, চাল্, আক্, বাঁধ্, কাঁদ্ ইত্যাদি। |
৮ | গাহ্-আদিগণ | চাহ্, বাহ্, নাহ্ (নাহান>স্নান) ইত্যাদি। |
৯ | লিখ্-আদিগণ | কিন্, ঘির্, জিত্, ফির্, ভিড়্, চিন্ ইত্যাদি। |
১০ | উঠ্-আদিগণ | উড়্, শুন্, ফুট্, খুঁজ্, খুল্, ডুব্, তুল্ ইত্যাদি। |
১১ | লাফা-আদিগণ | কাটা, ডাকা, বাজা, আগা (অগ্রসর হওয়া) ইত্যাদি। |
১২ | নাহা-আদিগণ | গাহা ইত্যাদি। |
১৩ | ফিরা-আদিগণ | ছিটা, শিখা, ঝিমা, চিরা ইত্যাদি। |
১৪ | ঘুরা-আদিগণ | উঁচা, লুকা, কুড়া (কুড়াচ্ছে) ইত্যাদি। |
১৫ | ধোয়া-আদিগণ | শোয়া, খোঁচা, খোয়া, গোছা, যোগা ইত্যাদি। |
১৬ | দৌড়া-আদিগণ | পৌঁছা, দৌড়া ইত্যাদি। |
১৭ | চটকা-আদিগণ | সমঝা, ধমকা, কচলা ইত্যাদি। |
১৮ | বিগড়া-আদিগণ | হিচড়া, ছিটকা, সিটকা ইত্যাদি। |
১৯ | উলটা-আদিগণ | দুমড়া, মুচড়া, উপচা ইত্যাদি। |
২০ | ছোবলা-আদিগণ | কোঁচকা, কোঁকড়া, কোদলা ইত্যাদি। |
#বাংলা ব্যাকরণে, ধাতুর গণ বলতে ধাতু বা ক্রিয়ামূলগুলোর বানানের ধরনকে বোঝায়। এক্ষেত্রে "গণ" শব্দের অর্থ হলো শ্রেণি।
ধাতুর গণ নির্ধারণ করতে দুইটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা হয়-
(ক) ধাতুর অক্ষর সংখ্যা। এবং
(খ) ধাতুর প্রথম বর্ণে সংযুক্ত স্বরবর্ণ।
উদাহরণ: 'লওয়া' ক্রিয়ার ধাতু ল (ল + অ)। 'ল' একাক্ষর ধাতু অবং প্রথম বর্ণ ল্-এর সাথে স্বরবর্ণ 'অ' সংযুক্ত আছে। সুতরাং, হ-আদিগণের মধ্যে ল্-ধাতু (ক্রিয়াপদ- লওয়া) পড়বে।
ক্রিয়ামূল বা ধাতু প্রধানত তিন প্রকার। যথা :
- মৌলিক ধাতু
- বাংলা ধাতু
- সংস্কৃত ধাতু
- বিদেশি ধাতু
- সাধিত ধাতু
- নাম ধাতু
- প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু
- কর্মবাচ্যের ধাতু
- যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
- বিশেষ্যের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
- বিশেষণের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
- ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে যুক্ত হওয়া ধাতু
মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
যে সকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। √কর্, √চল, √দেখ্, √খেল,√পড়, √খা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু।
উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: (ক)বাংলা ধাতু (খ)সংস্কৃত ধাতু এবং (গ)বিদেশি ধাতু
সাধিত ধাতু
কোন মৌলিক ধাতু কিংবা নাম শব্দের সাথে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। √কর + আ = √করা, √দেখ্ + আ = √দেখা, √পড়্+আ= √পড়া ইত্যাদি সাধিত ধাতুর উদাহরণ √নাচ্ + আ=নাচা
সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু
বিশেষ্য ও বিশেষণের সাথে √কর্, √দে, √হ, √পা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠন করে তাকে সংযোগমূলক বা যৌগিক ধাতু বলে। উদাহরণ: পূজা কর্, রাজি হ, কষ্ট পা, শাস্তি দে। যেমন – যোগ (বিশেষ্য পদ) + কর্ (ধাতু) = যোগ কর (যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু) , সাবধান (বিশেষ্য পদ) + হ(ধাতু) = সাবধান হ (যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু) ইত্যাদি।
যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু আবার ২ প্রকার। যথাঃ-
যুক্ত ধাতু
যৌগিক ধাতু
যুক্ত ধাতুঃ- বিশেষ্য বা বিশেষণের সাথে কর, খা, দে, হ যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে যুক্ত ধাতু বলে। যেমন – শুরু কর, টাকা দে ইত্যাদি।
যৌগিক ধাতুঃ অসমাপিকা ক্রিয়ার সাথে মৌলিক ধাতু যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয়, সেগুলোকে যৌগিক ধাতু বলে। যেমন – উঠে বস, কেটে ফেল ইত্যাদি।
অন্যান্য ধাতুসমূহ
নাম ধাতু
নাম শব্দ অথ্যাৎ বিশেষ্য, বিশেষণ, অব্যয় প্রভৃতি শব্দ কখনও কখনও প্রত্যয়যোগে, কখনওবা প্রত্যয় যুক্ত না হয়ে ক্রিয়ারূপে ব্যবহৃত হয়, এ ধরনের ক্রিয়ার মূলকে নাম ধাতু বলে। যেমন- জুতা > জুতানো, বেত > বেতানো, হাত > হাতানো, বাঁকা>বাঁকানো।
ণিজন্ত বা প্রযোজক ধাতু
মৌলিক ধাতুর সাথে 'আ' বা 'ওয়া' যুক্ত হয়ে ণিজন্ত বা প্রযোজন ধাতু গঠিত হয়। এটা এক ধরনের সাধিত ধাতু। যেমন- _/কর + আ =করা। ''যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর।'', এখানে ''হারায়'' হল প্রযোজক ধাতু।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু
ধাতুরূপে ব্যবহৃত অনুকার (অনুকার = সাদৃশ্যকরণ, অনুকরণ) ধ্বনিকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে। যেমন- ফোঁসা, হাঁপা, মচ্মচা, টল্টলা।
নঞ্র্থক ধাতু
'অস্তি' বাচক 'হ' ধাতুর পূর্বে নঞ্র্থক 'ন' শব্দের যোগে গঠিত 'নহ্' ধাতুকে নঞ্র্থক ধাতু বলে। যেমন- নহি, নই, নহ, নও, নহে, নয়।
শব্দ বা ধাতুর মূলকে প্রকৃতি বলে। সাধারণ অর্থে শব্দের মূল বলতে মৌলিক শব্দকে এবং ধাতুর মূল বলতে সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতুকেই বুঝায়। যেমন- 'দোকান' শব্দের মূল 'দোকান', 'ঢাকা' শব্দের মূল 'ঢাকা' এবং √লিখ ধাতুর মূল 'লিখ্', √কর ধাতুর মূল 'কর,'।
প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা-
১. নাম-প্রকৃতি:
শব্দের মূলকে নাম-প্রকৃতি বলে। নাম-প্রকৃতির আগে বা পরে কিছু যোগ না করলেও এইগুলো "শব্দ" বলে গণ্য হয়। তবুও বাক্যে ব্যবহার করতে গেলে এ নাম-প্রকৃতির সাথে বিভক্তি চিহ্ন যোগ করতে হয়।
২. ক্রিয়া-প্রকৃতি:
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর মূলকে ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি বলে। ধাতু-প্রকৃতি বা ক্রিয়া-প্রকৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হয়ে শব্দরূপে ব্যবহৃত হয় না । যে সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ,সেগুলোতে একটি "শূন্য প্রত্যয় (০)" যুক্ত আছে বলে ধরে নেওয়া হয় । যেমন: লিখ্, কর্ ।
প্রতিপাদিক হলো বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দ এবং বিভক্তিহীন তবে প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়া-প্রকৃতি। সংক্ষেপে বল্লে, প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ ও ক্রিয়ামূল গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক।
বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দকে এবং বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত ধাতু বা ক্রিয়া-প্রকৃতিকে প্রাতিপাদিক বলে।
সংক্ষেপে বল্লে, প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ বা ধাতু গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক। ‘প্রাতিপাদিক’ মানে যা দিয়ে শুরু করা হয়।
নাম-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়হীন কংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে।
যেমন- দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে
ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। যেমন- কর্ + অ = করা + কে = করাকে
নাম-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়হীন কিংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে। যেমন- দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে
ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। যেমন- কর্ + অ = করা + কে = করাকে
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ