দীক্ষা কি - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

04 September, 2019

দীক্ষা কি

 দীক্ষা পৌরাণিক সংস্কারবিশেষ, গুরুর কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, উপদেশ কে দীক্ষা বলে গুরু কর্তৃক শিষ্যকে বিশেষ কোনো দেবতার মন্ত্র দান অর্থাৎ সেই দেবতার উপাসনায় উপদেশ দানের নামই দীক্ষা, আর দীক্ষাদানকারী গুরুকে বলা হয় দীক্ষাগুরু। শক্তি,  শিব বিষ্ণু প্রভৃতির উদ্দেশ্যে যথাক্রমে শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব প্রভৃতি দীক্ষা প্রচলিত আছে। দীক্ষাকে জৈন মতে চরিত্র বা মহাবিভস্ক্রমনও বলা হয়।

দীক্ষা শব্দের অর্থ এমন জ্ঞান যার দ্বারা দীক্ষাগ্রহণকারীর পাপক্ষয় হয়। দীক্ষা প্রধানত দ্বিবিধ বহির্দীক্ষা ও অন্তর্দীক্ষা। দীক্ষা কথাটার প্রধান অর্থ হলো কাউকে প্রস্তুত করা, বা তাকে সংস্কৃত করা কোন কারন বিশেষের জন্য। তাই যদি আপনি দীক্ষা নিচ্ছেন, তাহলে তা আপনার সংস্কৃত হওয়ার সুত্রপাত, একটি নির্দিষ্ট পথে চলার। নানান রকমের দীক্ষা দেওয়ার প্রথা আছে, প্রায় ৬৪ রকমে দীক্ষা দেওয়া বা নেওয়া যেতে পারে।

দীক্ষা নিলে, আপনি আপনার গুরুর দেখানো পথে চলতে বাধ্যতাকে স্বীকার করেন ও তার শক্তি ক্ষেত্রে সুরক্ষিত থাকেন। প্রকৃত অর্থে যখন গুরু এবং শিষ্যের মন এক হয়ে যায়, তখন আমরা বলি যে শিষ্য গুরু দ্বারা দীক্ষা করেছিলেন। শিক্ষাগুরু ও দীক্ষাগুরু। শিক্ষাগুরু তিনি ই হন যিনি আমাদের পার্থিব ঞ্জান দান করেন। আমাদের মা বাবা, সমাজ, সংসার, পরিবেশ, প্রকৃতি, বন্ধুবান্ধব এদের থেকে আমরা কিছু না কিছু শিখেই থাকি। এরা হলেন শিক্ষা গুরু। দীক্ষাগুরু হলেন তিনিই যিনি আমাদের অধ্যাত্মঞ্জান তথা ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। বহির্দীক্ষায় পূজা, হোম প্রভৃতি বাহ্যিক অনুষ্ঠান বিহিত; আর অন্তর্দীক্ষায় মানুষের কুন্ডলিনীশক্তির (আত্মশক্তি) জাগরণ ঘটে। কোনো কোনো তন্ত্রে ত্রিবিধ দীক্ষার কথা বলা হয়েছে, যথা শাম্ভবী, শাক্তী ও মান্ত্রী। তন্ত্রোক্ত আরও নানাবিধ দীক্ষা আছে।

সব বর্ণের হিন্দুরাই দীক্ষা গ্রহণের অধিকারী। কোনো কোনো তন্ত্রমতে দীক্ষাদানে নিজের মা সর্বোত্তম গুরু। দীক্ষাদানকারী গুরুকে কেন্দ্র করে কালক্রমে একেকটি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। সম্প্রদায়গুলির নিজস্ব কিছু আচার-আচরণ থাকে যা একটি থেকে অপরটি ভিন্ন। বাংলাদেশে এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায়: অনুকূল সম্প্রদায়, মানিক সম্প্রদায়, মতুয়া সম্প্রদায়, জগদ্বন্ধু সম্প্রদায় প্রভৃতি। স্মৃতিনিবন্ধকার  রঘুনন্দন বঙ্গদেশে তান্ত্রিক দীক্ষার প্রবর্তন করেন।

রঘুনন্দন ভট্টাচার্য (১৫শ-১৬শ)  স্মার্ত ও সংস্কৃত পন্ডিত। নদীয়ায় তাঁর জন্ম। পিতা হরিহর ভট্টাচার্যও ছিলেন একজন পন্ডিত ব্যক্তি। বঙ্গে নব্যস্মৃতি চর্চার ক্ষেত্রে রঘুনন্দনকে মধ্যসীমা ধরে তিনটি যুগবিভাগ করা হয়: প্রাক্রঘুনন্দন, রঘুনন্দন এবং রঘুনন্দনোত্তর যুগ। তবে বঙ্গীয় নব্যস্মৃতি বলতে সাধারণত রঘুনন্দনকেই বোঝায়। এর কারণ তাঁর অসাধারণ প্রতিভা এবং বহুল প্রচারিত ও পঠিত গ্রন্থরাজি। সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ, অগাধ শাস্ত্রজ্ঞান এবং গভীর পান্ডিত্যের দ্বারা তিনি তৎকালীন হিন্দু সমাজের বিধি-বিধানগুলি যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে তাঁর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী স্মার্ত পন্ডিতগণ নিষ্প্রভ হয়ে গেছেন।


রঘুনন্দনের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি কেবল শাস্ত্রশৃঙ্খলে আবদ্ধ থেকে সমাজের বিধান দেননি, বরং সমকালীন সমাজের বাস্তবতা বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শাস্ত্রের বাইরে এসেও তান্ত্রিক ধর্মের অনেক বিধিব্যবস্থা সমাজের জন্য গ্রহণ করেছেন। তাই দেখা যায় রঘুনন্দনের স্মৃতিগ্রন্থগুলিতে তন্ত্রের গভীর প্রভাব পড়েছে। বাংলায় বৌদ্ধধর্মের প্রসার এবং মুসলমানদের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে ব্রাহ্মণ্যধর্ম যখন সঙ্কটের মুখে, তখন এর ত্রাণকর্তা হিসেবেই যেন রঘুনন্দনের আবির্ভাব ঘটেছিল। সে সময় বৌদ্ধ তন্ত্রের অনুকরণে অনেক বৈষ্ণব তন্ত্র রচিত হয় এবং বৌদ্ধ সহজিয়ামতের অনুকরণে উদ্ভব ঘটে  বৈষ্ণব সহজিয়া মতের। এর দ্বারা সমাজ দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। এমতাবস্থায় সনাতন ব্রাহ্মণ্য ধর্মের রক্ষাকল্পে রঘুনন্দন সমাজ-বাস্তবতাকে অস্বীকার না করে এবং তান্ত্রিক ধর্মের সঙ্গে আপোষ করেও ব্রাহ্মণ্যধর্মকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন স্মৃতিগ্রন্থে সময়োপযোগী বিধি-ব্যবস্থা প্রদান করেন। এ কারণেই তাঁর গ্রন্থগুলি তৎকালীন সমাজে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং বঙ্গীয় স্মৃতিশাস্ত্রে তিনি হয়ে ওঠেন এক অতুলনীয় পন্ডিত।


রঘুনন্দন স্মৃতিশাস্ত্রের ওপর আটাশখানি গ্রন্থ রচনা করেন। অষ্টাবিংশতিতত্ত্ব তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। এতে স্মৃতিশাস্ত্রের প্রায় যাবতীয় বিষয় আলোচিত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শ্রাদ্ধতত্ত্ব, তিথিতত্ত্ব, শুদ্ধিতত্ত্ব, স্মৃতিতত্ত্ব, দুর্গাপূজাতত্ত্ব, তীর্থতত্ত্ব, যাত্রাতত্ত্ব, দায়তত্ত্ব ইত্যাদি প্রয়োগগ্রন্থ। তিনি বঙ্গের অন্যতম স্মার্ত পন্ডিত জীমূতবাহনের দায়ভাগেরও টীকা রচনা করেছেন। স্মৃতিশাস্ত্রে পান্ডিত্যের জন্য রঘুনন্দন সমগ্র ভারতে ‘স্মার্ত ভট্টাচার্য’ নামে পরিচিত ছিলেন। বঙ্গীয় হিন্দুসমাজ আজও তাঁর নির্দেশ অনুসারেই চলে।


রঘুনন্দন শুধু স্মৃতিশাস্ত্রই নয়, ব্যাকরণ (কলাপতত্ত্বার্ণব, শব্দশাস্ত্রবিবৃতি), তন্ত্র (মহিম্নঃস্তোত্রটীকা), জ্যোতিষ ইত্যাদি বিষয়েও অভিজ্ঞ ছিলেন। বাংলায় জ্যোতিষশাস্ত্র সম্বন্ধে রঘুনন্দনের জ্যোতিস্তত্ত্ব সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। [দুলাল ভৌমিক]

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ