পরমাত্মার জ্ঞান - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

06 September, 2021

পরমাত্মার জ্ঞান

 পরমাত্মা তিনটি ধারায় জ্ঞান প্রদান করেন

পরমাত্মার জ্ঞান

  (১) সৃষ্টির আদিকালে , তপঃপূত শুদ্ধান্তঃকরণ যুক্ত ঋষিগণের হৃদয়ে বেদবাণীর জ্ঞান প্রকাশ করেন । 

শ্রাব্য কাব্য রূপে । 

(২) বিচিত্রময় সৃষ্টি রচনা দ্বারা জ্ঞান , বিজ্ঞান প্রদান করেন ।

     দৃশ্য কাব্য রূপে।

(৩) সম্প্রজ্ঞাত অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিস্থ যােগীগণের আত্মার মধ্যে জ্ঞানের ধারা প্রবাহিত করেন ।    

পরমার্থ কাব্য রূপে ।

   এই সৃষ্টিতে মানব সর্বাপেক্ষা অধিক সৌভাগ্যশালী । কেননা পরমাত্মা দ্বারা প্রদত্তজ্ঞান তিনটি ধারার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং কল্যাণ কে মানবই প্রাপ্ত করিতে সক্ষম । বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সমস্ত পশু পক্ষী-কীট-পতঙ্গ মিলিত হইয়াও বেদাধ্যয়ন করিতে পারিবে না এবং সৃষ্টির মুখ্য প্রয়ােজনও ইহা নয় - বিমুক্ত মােক্ষার্থং স্বার্থং বা প্রধানস্য ।। (সংখ্য ২/১) আত্মার মােক্ষ প্রাপ্তির জন্য এবং ভােগের প্রধান অব্যক্ত প্রকৃতির কর্তৃত্ব এবং প্রবৃত্তি শাস্ত্রকারগণ মােক্ষকেই সৃষ্টির মুখ্য প্রয়ােজন স্বীকার করিয়াছেন । ব্যাকরণের স্পষ্ট মান্যতা এই যে - “মুখ্যগৌণয়ােঃ মুখ্যে কার্য সম্প্রত্যয়ঃ” অর্থাৎ যেখানে মুখ্য এবং গৌণ কার্যের কথা আসে মুখ্যতে কার্য নিষ্পন্ন মান্য করা হয় । অস্ত-স্পষ্টতই সর্বত্র ব্যক্ত অব্যক্ত রূপে , সৃষ্টিতে স্বীকৃত হয় যে মনুষ্যই পরমাত্মার অমৃত পুত্র (অমৃতস্য পুত্রাঃ) যােগ্যতম পুত্র তিনটি ধারায় পরমাত্মা দ্বারা প্রদত্ত জ্ঞান প্রাপ্ত করিতে সক্ষম হয় তথা মােক্ষানন্দও প্রাপ্ত করিতে সক্ষম হয় । যজুর্বেদে পরমাত্মাকে কবি সংজ্ঞা দেওয়া হইয়াছে । কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভুঃ (যজু০ ৪০/৮) ইহা কিরূপে হইতে পারে যে পরমাত্মার কোন কাব্য হয়না । তাঁহার কাব্য তাে অজর এবং অমর যখন পরমাত্মা অজর-অমর হইয়া রহিয়াছেন , তবে তাঁহার কাব্য – যাহা বেদ (শব্দ , অর্থ-সম্বন্ধ রূপ) অজর এবং অমর কেন হইবে না । এই কাব্য শব্দময় , যাহাকে আমরা শ্রাব্য কাব্য বলিয়া থাকি , কানের সাহায্যে আমরা শ্রবণ করি এবং “প্রয়ােগেণ অভিজ্বলিতঃ” প্রয়ােগের দ্বারা প্রকাশিত হইয়া থাকে , বােধ হইয়া থাকে । দ্বিতীয় পরমাত্মার কাব্য যাহা অনিত্য যাহা আজ বর্ত্তমান , আগামীতে থাকিবে না (তবে তাহার মূল কারণ সত্ত্ব , রজ , তম গুণাত্মক কখনাে বিনাশ প্রাপ্ত হইবে না) । এই দৃশ্যমান কাব্যকে অর্থময় বলা হইয়াছে । অর্থাৎ পশ্য দেবস্য কাব্যং মহিত্ত্বাsদ্যামমার স হ্যঃ সমান । (ঋগ্বেদ ১০/৫৫/৫) ইহা শব্দময় এবং অর্থময় এই মহাকাব্যেরই দুইটি পৃষ্ঠা এক পৃষ্ঠাতে যাহা কিছু অঙ্কিত আছে অন্যপৃষ্ঠাতে তাহারই অর্থ অঙ্কিত রহিয়াছে । অধ্যয়ন কর্ত্তার কর্ত্তব্য এই যে— দুইয়ের ভিতর সঙ্গতি বজায় রাখিয়া অধ্যয়ন করিবেন । পরম কবি সৃষ্টির আরম্ভে বেদ মহাকাব্যকে মানবমাত্রের জন্য প্রদান করিয়া যেখানে তাঁহার কৃপার পরিচয় দিয়াছেন সেখানে সাথে-সাথেই তাহার অর্থ উপলব্ধী করাইবার জন্য সৃষ্টিতে অর্থময় মহাকাব্য প্রদান করিয়া করুণার পরিচয় দিয়াছেন । যদিও মূল সংহিতা বেদরূপী মহাকাব্যে লিখিত হইয়াছে ।


সহৃদয়ং সামনস্যমবিদ্বেষং কৃণােমি বঃ ।

অন্যো অন্যমভিহর্য়ত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা ।। (অর্থব বেদ)


   যখনই ব্যক্তি পাঠ করিল— পরস্পর তোমরা এরূপ প্রেম করিবে যেরূপে গাভি তাহার নবজাত বৎসকে প্রেম করে । তৎক্ষণে , সৃষ্টির মহাকাব্যের পৃষ্ঠার অর্থময় সৃষ্টিতে গাভি বাছুরকে চাটিতেছে , গাভিকে প্রত্যক্ষ করিল , এই হইল বেদরূপী শব্দময় কাব্যের এবং সৃষ্টিরূপী দৃশ্যময় কাব্যের মধ্যে অর্থের সঙ্গতি । যিনি এইভাবে অধ্যয়ন করেন তাঁহাকেই বেদবিদ্ , আত্মবিদ , ব্রহ্মবিদ , বলা হইবে । ব্যাকরণ মহাভাষ্যকারের কথন এই যে—


দ্বে ব্ৰহ্মণী বেদিতব্যে শব্দ ব্রহ্ম পরং চয়ৎ । 

শব্দ ব্ৰহ্মণি নিষ্ণাতঃ পরং ব্রহ্মাধি গচ্ছতি ।।


  অর্থাৎ দুই প্রকার ব্রহ্মই জ্ঞাতব্য— শব্দ ব্ৰহ্ম এবং পর ব্রহ্ম । শব্দ ব্রহ্মের মধ্যে নিষ্পাত ব্যক্তিই পর ব্রহ্মের জ্ঞান করিতে পারিবে । এখানে শব্দ ব্রহ্মের মাধ্যমে বেদ চতুষ্টয় এবং পরব্রহ্ম ঈশ্বরের গ্রহণের সাথে-সাথে অর্থময় প্রত্যক্ষ জগতেরও গ্রহণ করানাে উচিত । অস্তু—


   এখন বিচার করা কর্তব্য— ঈশ্বরীয় জ্ঞান বেদ মনুষ্যদিগকে কিসের মাধ্যমে প্রাপ্ত হইয়াছে । বৈদিক পরম্পরানুসারে সৃষ্টির আদিতে পরমাত্মা তপঃপূত চারজন ঋষি—অগ্নি , বায়ু , আদিত্য ও অঙ্গিরা এঁদের অন্তঃকরণে ক্রমশঃ ঋগ্বেদ , যজুর্বেদ , সামবেদ ও অথর্ববেদের প্রকাশ করিয়া ছিলেন । যাস্কেরমতে মন্ত্রের দ্রষ্টা হওয়া বা স্বয়ংয়ের বিমল মানসে মন্ত্র সমূহের রহস্যকে দেখিবার সামর্থ হইবার কারণেই ব্যক্তিকে , ঋষি বলা হয় । সর্বদ্রষ্টা তথা সর্বজ্ঞ এবং সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় তিন অবস্থার মধ্যে আধার রূপে বেদের অস্তিত্ব হইবার কারণে পরমাত্মাই ঋষি । এখন ইহা দেখিতে হইবে যে— বৈদিক সূক্ত গুলির অনেকানেক ঋষি কাহারা ছিলেন ? এই বিষয়ে আচার্য্য যাস্কের কথন এই যে—ঋষিগণ ধর্মের সাক্ষাৎকার করিয়া ছিলেন । তাঁহারা তাহাদের পরবর্তী ঋষিগণকে যাঁহারা ধর্মের সাক্ষাৎকার করেন নাই তাঁহাদের উপদেশ দ্বারা মন্ত্র সমূহ প্রদান করিয়া ছিলেন । এখানে স্পষ্টরূপে দুই প্রকারের ঋষিগণের উল্লেখ পাওয়া যাইতেছে । এক - সেই সকল ঋষিগণ তাঁহারা ধর্মের সাক্ষাৎকার করিয়া ছিলেন যাঁহাদেরকে “দিব্য ঋষি” বলা হইয়াছে । দুই—যাঁহারা তাঁহাদের পূর্বের ঋষিগণের নিকট হইতে উপদেশ দ্বারা মন্ত্র সমূহ এবং সূক্ত সমূহের জ্ঞান প্রাপ্ত করিয়াছিলেন । এঁদের কে “শ্রুত ঋষি” বলা হইয়াছে ।  এই দৃষ্টিতে বেদের শ্রুতি নাম স্বয়ং স্বয়ংয়ের সার্থকতা বহন করিয়াছে ।  এই দুই প্রকার ঋষিগণকে বেদে প্রবীণ ঋষি এবং নবীন ঋষি নামে অভিহিত করা হইয়াছে ।  এই রূপে গুরু শিষ্য রীতি রেওয়াজ পরম্পরার মাধ্যমে বেদ জ্ঞানের প্রকাশ এখনাে পর্যন্ত প্রচলিত হইয়া আসিতেছে এবং পরবর্তীকালেও এই রূপে প্রচলিত থাকিবে । ঋষি রীতি রেওয়াজ পরম্পরা কে আমরা ঋষি তর্পণ বলিয়া থাকি ।


    বিচিত্রময় সৃষ্টিকে অধ্যয়ন করিলে স্রষ্টার অনন্ত মহিমা মণ্ডিত স্বরূপ , ক্রিয়া করিবার বিচিত্রতা , দক্ষতা , যােগ্যতা সম্পূর্ণ নয়ন যুগলের সম্মুখে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে । এই জন্য আয়ুর্বেদে বলা হইয়াছে— কৃৎস্নো হি লােকো বুদ্ধিমতাং আচার্যঃ ।  অর্থাৎ সম্পূর্ণ সৃষ্টি মানব মাত্রের জন্য আচার্য্যের সমান কার্য করিতেছে ।  আচরণ প্রদর্শন করিতেছে , পাঠ্য বিষয়ের পাঠদান করিতেছে । শিক্ষা প্রদান করিতেছে । কেননা পরমাত্মার এই দৃশ্য কাব্য নেত্র সহযােগে । দর্শনান্ত । এখানে আমরা পাঠ্য বিষয় শিক্ষা করি , সন্দেহ রহিত হইয়া শিক্ষা গ্রহণ করি । পঞ্চ ভূতাত্মক সৃষ্টির মধ্যে অবস্থান করিয়া সর্বাঙ্গীন উন্নতিও করিয়া থাকি । মহর্ষি দয়ানন্দ ‘গাে করূণানিধি’ নামক লঘু পুস্তিকার মধ্যে লিখিয়াছেন— পরমাত্মার সৃষ্টির মধ্যে কোন বস্তুও নিষ্প্রয়ােজন নয় , কিন্তু এক-একটি বস্তু অনেকানেক প্রয়ােজন কে সিদ্ধ করে , পূর্তি করে । কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তাহার সম্বন্ধে যথা যােগ্য বােধ জ্ঞান হয় না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাহার দ্বারা বিশেষ কোন লাভ গ্রহণ করিতে পারিব না । আয়ুর্বেদ পাঠক ব্যক্তিগণের অবশ্যই পরমাত্মা প্রদত্ত অর্থময় জগৎকে অধ্যয়ন করিয়া “কিম্ আশ্চর্যম্ অতাে পরম্ ইহার অবধারনা জন্মায় । নিত্য প্রতি সন্ধ্যোপাসনা কারী সাধক মনসা পরিক্রমা মন্ত্রাবলীর মধ্যে পরমাত্মার রহস্যময়ী সৃষ্টির অধ্যয়ন অবশ্যই করিয়া থাকেন । আজকাল বৈজ্ঞানিকগণ তাে দিবারাত্রি শ্রম করিয়া প্রকৃতির মধ্যে অবস্থিত লুকোনাে শক্তি সমূহের দ্বারা জগৎকে বিশাল ভৌতিক সমৃদ্ধি প্রদান করিতেছেন । বাস্তবে যেপরিমাণে সৃষ্টিতত্ত্বসমূহের রহস্য ঋষিগণ , বৈজ্ঞানিকগণের দ্বারা উদ্ঘাটিত হইতেছে সেই মানে পরমাত্মা তথা সৃষ্টি মহিমামণ্ডিত হইয়া চলিতেছে ।


   মনুষ্য জীবনের , সংসার যাত্রার অবতরণ জ্যোতি স্বরূপ ব্রহ্মপদের প্রাপ্তির নিমিত্ত হয় তাহার সেই আকাঙ্খা সদা অটুট রাখা


উচিত । তাহার প্রাপ্তির জন্য দুটি উপায় আছে— (১) জ্ঞান বৃদ্ধি এবং (২) আচরণ সিদ্ধি । জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে যদি আচরণের সিদ্ধি না হইবে তাহা জ্ঞান বৃদ্ধি করিয়া আমরা কি করিব , বশিষ্ঠ ধর্ম সূত্রে লিখিত আছে ।—


আচারহীনং ন পুনন্তি বেদা যদ্যপ্যধীতাঃ সহ ষড্ভিরঙ্গৈঃ । ছন্দাস্যেনং মৃত্যুকালেত্যজন্তিনীড়ং শকুন্তাইবজাত পক্ষাঃ ।।


(বশিষ্ঠ ধর্মসূত্র ৬/৩)


     অর্থাৎ— ষড় অঙ্গ সহিত বেদ সকলের জ্ঞানী হইলে তখনও বেদ তাহাকে পবিত্র করে না যেরূপ পাখা গজাইলে পক্ষী নিজ নীড় ত্যাগ করিয়া যায় । এইজন্য আচরণবান হইয়া জীবন যাত্রাকে সফল করিবেন ।


   উপনিষদে বর্ণিত আছে— যাজ্ঞবল্কের দুই পত্নী ছিল কাত্যায়নী এবং মৈত্রেয়ী । 

যাজ্ঞবল্কের গৃহস্থাশ্রমে থাকিয়া যখন বিবেক বৈরাগ্য উৎপন্ন হইয়াছিল , সেই সময় দুই দেবীগণকে ডাকিয়া বলিলেন— হে দেবীগণ , আমি গৃহস্থাশ্রম ত্যাগ করিতে চাহিতেছি ,  এসাে তােমাদের দুজনকে আমি ধন-সম্পত্তি বন্টন করিয়া দিতে চাহি । মৈত্রেয়ী দেবী ছিলেন বিবেকশীলা এবং আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীলা ।  মৈত্রেয়ী যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করিলেন— প্রভু যে ধন সম্পত্তিকে অর্জন করিবার জন্য আপনাকে অত্যন্ত পুরুষার্থ করিতে হইয়াছে , আপনি এই সকল ধন সম্পত্তিকে পরিত্যাগ করিয়া কাহাকে প্রাপ্ত করিতে চাহেন ? বর্ণিত হইয়াছে যে উভয়ের মধ্যে দীর্ঘকাল পর্যন্ত কথােপকথন চলিয়া ছিল অবশেষে যাজ্ঞবল্ক্য 

, মৈত্রেয়ীকে নিজ লক্ষ্যকে স্পষ্ট রূপে তাহার সম্মুখে উপস্থান  করেন । আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো , মন্তব্যো নিদিধ্যাসিতব্যো মৈত্রেয়্যাত্মনাে বা অরে দর্শনেন শ্রবণেন মত্যা বিজ্ঞানেনেদং সবং বিদিতম্ । (বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ ২/৪/৫) ।  অর্থাৎ আত্মার দর্শন করা উচিত এতদর্থে— শ্রবণ করা কর্তব্য , মনন করা কর্তব্য এবং নিদিধ্যাসন করা কর্তব্য । শ্রবণ অর্থাৎ শােনার দ্বারা , মনন অর্থাৎ বিচার পূর্বক , নিদিধ্যাসন অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ যত্নশীল বা অভ্যাসের মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে আত্মা বিদিত হইয়া থাকে । ইহা পষ্ট যে— মনুষ্য জীবন মােক্ষ প্রাপ্ত করিবার জন্য প্রাপ্ত হইয়াছে । যােগী গণ অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি দ্বারা ঈশ্বরের সাক্ষাৎ করিয়া থাকেন । অষ্টাঙ্গ যােগের অনুষ্ঠানের দ্বারা অর্থাৎ যম , নিয়ম , আসন , প্রাণায়াম্ , প্রত্যাহার , ধারণা , ধ্যান এবং সমাধি দ্বারা অশুদ্ধির নাশ হইলে উত্তরােত্তর জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৃদ্ধি হইতে থাকে , যতক্ষণ না পর্যন্ত বিবেক জ্ঞানের প্রাপ্তি হয় । ইহার অভিপ্রায় এই হয় যে— মােক্ষ প্রাপ্তিতে বিবেক জ্ঞান অনিবার্য হয় । সাংখ্য দর্শনে সকল দুঃখের নিবৃত্তির জন্য বিবেক জ্ঞান অনিবার্য বলা হইয়াছে । কেননা বিবেক জ্ঞানের অতিরিক্ত মুক্তির কোন বিকল্প নাই । ভক্ত বলেন—


কথং জ্ঞানং অবাপ্নোমি কথং মুক্তির্ভবিষ্যতি । বৈরাগ্যঞ্চ কথং প্রাপ্তং এতদ্ ব্রুহি মম প্রভাে ।।


    আমি কিরূপে জ্ঞান প্রাপ্ত করিব আমার মুক্তি কিরূপে হইবে , এবং আমার বৈরাগ্য কি প্রকারে হইবে প্রভু আপনিই বলিয়া দিন ।


  বাস্তবে ইহাই জীবনের মূল সিদ্ধান্ত , যদিও বা এই কথাটি এখনি হৃদয়ঙ্গম হয় অথবা দশ বৎসর পরে আত্মস্থ হয় । আসিতে তো এখানেই হইবে । শ্রাবণী পর্বের অন্তঃ সাক্ষী ইহাকেই সিদ্ধ করিয়া থাকে যে—বেদাদি সত্য শাস্ত্র সমূহ শিক্ষা করিয়া আমরা ঋষি জীবনে প্রবেশ করিব ।  ঋষি জীবন কিরূপ ?


  মনু মহারাজ বলিয়াছেন—

ঋষয়াে দীর্ঘসন্ধ্যাত্বাৎ দীর্ঘমায়ুমবাপুয়ুঃ । প্রজ্ঞাং যশশ্চ কীর্তিঞ্চ ব্রহ্মবর্চসমেব চ ।। 


    ঋষিগণ দীর্ঘকাল পর্যন্ত সন্ধ্যোপাসনা করিয়া— (১) দীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত করিয়াছেন । (২) ঋতম্ভরাপ্রজ্ঞার প্রাপ্তি করিয়াছেন । (৩) যশস্বী জীবন । (৪) কীর্তিমান প্রতিষ্ঠা । (৫) ব্রহ্মতেজের প্রাপ্তি করিয়া ছিলেন । বাস্তবে ইহাই হইল ঋষি তর্পণ । আমরাও নিজ জীবনে ঋষি তর্পণ করিয়া এই সকল আধ্যাত্মিক সম্পদ সমূহকে প্রাপ্ত করিব ।  বাস্তবে ব্রহ্মযজ্ঞের দ্বারাই অন্তঃকরণের মধ্যে প্রভুদেবের সাক্ষাৎ হইয়া থাকে । পরমাত্মার সাক্ষাৎ দ্বারাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৃদ্ধি , নির্ভয়তা , স্বাধীনতা , আনন্দের প্রাপ্তি হইয়া থাকে ।  সকল প্রকার ক্লেশ হইতে সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত হইয়া জীবন কৃত-কৃত্যতার অনুভব করিতে থাকে । এইরূপে আমরা দেখিয়া থাকি যে পরমাত্মা জীবাত্মাদিগের কল্যাণের নিমিত্ত বেদের মাধ্যমে সৃষ্টির মাধ্যমে এবং উপাসনার মাধ্যমে জ্ঞান বিতরন করিয়া থাকেন । যাহার দ্বারা জীবাত্মা অভ্যুদয়ের সাথে-সাথে নিঃশ্রেয়স্ পথের পথিক হইতে পারে । ঋষি তর্পণ বলুন অথবা শ্রাবণী উপাকর্ম বলুন , এই মহাপর্বে ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় , বৈশ্য এবং সেবক পরম্পর সহযােগী হইয়া জ্ঞান পর্বের , স্বাধ্যায় পর্বের আয়ােজন করিয়া বিবেকের উৎপত্তি করিয়া প্রজ্ঞাদোষ হইতে উৎপন্ন অপরাধ হইতে রক্ষাপ্রাপ্ত হইয়া সৃষ্টির মধ্যে মহােৎসবের ক্রমকে সম্মুখে অগ্রসর করাইবেন । এই সৃষ্টি যজ্ঞে পরমাত্মা আমাদের হস্তদ্বয়ের মধ্যে মহান্ ক্ষমতা প্রদান করিয়াছেন । ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করা অথবা দুর্ব্যবহার করা ব্যক্তির নিজ হস্তের ব্যাপার । বেদ মন্থন , সৃষ্টি মন্থন , এবং আত্ম মন্থনের দ্বারা সৃষ্টির রহস্য সেই রূপে বােধগম্য হয়—যে রূপে সহস্র বর্ষ হইতে অন্ধকার কক্ষে আবদ্ধ বহুমূল্য বস্তু ভাণ্ডারের সন্ধান প্রকাশ প্রজ্বলিত করিলে হইয়া থাকে ।

✍🏻ডঃ আচার্য ব্রহ্মদত্ত আর্য্য (বেদ মনীষী)

   ও৩ম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ