সনাতন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

19 August, 2021

সনাতন

 আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম কেন? বেদে কি এই নাম রয়েছে? সনাতন ধর্মের প্রবর্তক কে?

অনেক সনাতন ধর্মালম্বী এবং অন্যান্য রিলিজিয়নের মানুষরাও জিজ্ঞেস করেন যে সনাতন শব্দটা আমাদের কোন ধর্মগ্রন্থে রয়েছে? আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম কেন?
সনাতন

এর উত্তর হলো আমাদের ধর্ম, তোমাদের ধর্ম বলে আদতে কিছু নেই। ধর্ম এই মহাবিশ্বে একটাই আর ধর্ম সবসময় ই সনাতন। সনাতন শব্দের অর্থ চিরন্তন। যা আগে ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তাই সনাতন।
যেমন আগুনের ধর্ম উত্তাপ, কোটি কোটি বছর পূর্বেও আগুনের ধর্ম ছিল উত্তাপ, এখনো আগুনের ধর্ম উত্তাপ, ভবিষ্যতেও আগুনের ধর্ম হলো উত্তাপ, অর্থাৎ আগুনের ধর্ম সনাতন। একজন হিন্দুরও আগুন ধরলে উত্তাপ অনুভাব হবে, একজন মুসলিম বা খ্রিষ্টানেরও তাই হবে। তাই এদের শরীরের ধর্মও আগুনের কাছে একই।
নিরীহ অসহায়কে সাধ্যমতো সাহায্য করাই ধর্ম, কোটি বছর আগেও নিরীহ কাউকে সাহায্য করাই ধর্ম ছিল, এখনো তাই আছে, কোটি বছর পরেও তাই থাকবে। তাই নিরীহকে সাহায্য করা সনাতন ধর্ম।
একটি আপেল গাছে তার বোঁটা থেকে চ্যুত হলে পৃথিবীর আকর্ষণে নিচে এসে পড়ে। কোটি বছর আগেও তাই হতো, এখনো তাই হয়, কোটি বছর পরেও তাই হবে। আমরা এর নাম মানুষের ভাষায় দিয়েছি মধ্যাকর্ষণ শক্তি। বস্তুর ধর্মই একে অপরকে আকর্ষণ করা। তাই বস্তুর এই মধ্যাকর্ষণ শক্তি বস্তুর সনাতন ধর্ম।

সনাতন বা Sanatana একটি সংস্কৃত শব্দ। যদি এক কথায় এর অর্থ প্রকাশ করা যায় তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে “Eternal” বা “চিরস্থায়ী”। সনাতন শব্দের অর্থ চিরন্তন, শাশ্বত, নিত্য, চিরস্থায়ী; অপরিবর্তনীয়, সার্বজনীন, যার শুরু নেই শেষ নেই।। এটা কেবল মাত্র অভিধান বা Dictionary গত অর্থ। কিন্ত যদি আসলে “সনাতন বা Sanatana” শব্দটিকে যদি ইংরেজি তে অনুবাদ করা হয় তাহলে যে অর্থগুলি আমরা পাবো সেগুলি নিম্নরূপ- Eternal বা চিরস্থায়ী, Perennial বা বহুবর্ষজীবি, Never beginning nor ending বা যার শুরু নেই শেষ নেই, Abide বা সুস্থায়ী, Universal বা সার্বজনীন, Ever present বা সর্বদা বর্তমান, Unceasing বা অবিরত Nature বা প্রকৃতি, Harmony বা সুসামজ্ঞস্য, Way of truth বা সত্যের দিক, Righteous বা ন্যায়পরায়ণ Compassion বা করুণাময়, Natural law বা প্রাকৃতিক নিয়মাবলী, Light of Wisdom বা জ্ঞানের আলো, Tradition বা ঐতিহ্য, Philosophy বা দর্শনশাস্ত্র, Orderly বা সুবিন্যস্ত, Inherent Nature বা সহজাত প্রকৃতির Law of being and Duty বা অস্তিত্ব ও দায়িত্বের নিয়ম, Divinity বা ঈশ্বরত্ব, Enduring বা সুদূর অতীত থেকে বিরাজমান।
ধর্ম শব্দটি সংস্কৃত ধৃ ধাতু থেকে উৎপন্ন। যার অর্থ হলো ধারণ করা।
যেমন— জলের ধর্ম তরলতা, আগুনের ধর্ম উত্তাপ দেওয়া ইত্যাদি সেইরুপ মানুষের ধর্মও মানবতা।
মনুর্ভব জনয়া দৈবং জনম্
➢ ঋগ্বেদ, ১০/৫৩/৬।
অর্থাৎ, প্রকৃত মানুষ হও এবং অন্যকেও মানুষ হিসেবে গড়ে তোল।
তাই ধর্ম মানেই সনাতন। ধর্মের কখনো পরিবর্তন হয়না। মানুষের ধর্ম সর্বদাই মানবতা, আগুনের ধর্ম সর্বদাই উত্তাপ, জলের ধর্ম সর্বদাই তরলতা। এগুলো চিরন্তন বা সনাতন সত্য। আর তাই ধর্ম সবসময় সনাতন। পৃথিবীতে আমরা যে সব প্রচলিত Religion দেখি সেগুলো ধর্ম নয়। সেগুলো নির্দিষ্ট কিছু আচার অনুষ্ঠান নিয়ম কানুনের সমষ্টিগত সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ। Religion শব্দের সংস্কৃত অর্থ ধর্ম নয়, Religion শব্দের সংস্কৃত অর্থ মার্গ। ধর্ম শব্দটা Religion এর বাংলা হিসেবে আমরা প্রচলিত ভুল অর্থে বা Misnomer হিসেবে ব্যবহার করি।
আবার যেহেতু মানুষ সৃষ্টির থেকেই বস্তুসমূহের, প্রকৃতির চিরন্তন সনাতন এই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যগুলো উপস্থিত ছিল তাই কোন মানুষ ই ধর্মের প্রবর্তক হতে পারেনা। ধর্মের প্রবর্তক একমাত্র ঈশ্বর ই কারণ তিনিই এই সবকিছুর সনাতন নিয়ম সৃষ্টি করেছেন। অগ্নিতে উত্তাপ, জলে তরলতা, মানুষে মনুষ্য, সকল বস্তুতে মহাকর্ষ, অভিকর্ষ শক্তি তিনিই দিয়েছেন, কোন মানুষ দেয়নি, তাই মানুষ কখনো ধর্মের প্রবর্তক হতে পারেনা।
এই যে ধর্ম সবসময় সনাতন হয়, এই জ্ঞানটি ঈশ্বর আমাদেরকে প্রেরণ করেছিলেন যে আদি গ্রন্থের মাধ্যমে তার নাম হলো বেদ।
বেদ জ্ঞান হল অনাদি এবং দেশ, কালের বন্ধনের দ্বারা বাঁধা নয়। সবার জন্য এবং সব যুগের জন্য। আর তাই বেদে যে ধর্মের বিবৃতি করা হয়েছে তাকেই সনাতন ধর্ম বলে।
পবিত্র অর্থববেদের ১০/৮/২৩ মন্ত্রে এই কথাটিই বেদ বলছে-
ওম্ ভোগ্য ভবদথো অন্নমদদ্ বহু ।
যে দেবমুতরাবন্তমুপাসতৈ সনাতনম্ ।।
➢ অথর্ববেদ, ১০/৮/২২।
পদার্থঃ— (যঃ) যে ব্যক্তি (দেবম্) ঐ প্রকাশময় (উতারাবন্তম্) শ্রেষ্ঠ গুণের চরমসীমারূপ (সনাতনম্) সনাতন পরমেশ্বরকে (উপাসাতৈ) উপসনা করে, সে (ভোগ্যঃ) উত্তমভোগকারী (ভবত) হয়, (অয়ো) এবং (বহু অন্নম অদত্) দীর্ঘ সময়কাল পর্যন্ত সুখপ্রাপ্ত হয় অর্থাৎ জীবকে প্রচুর অন্ন প্রদান পূর্বক সুদীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত করে।
অর্থাৎ সেই সনাতন পরমেশ্বরকে স্মরণকারী ব্যক্তি উত্তম ভোক্তা ও সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত অন্নঅাদিকে প্রাপ্ত করে পুষ্ট হয়ে থাকে।
পরের মন্ত্রে বলা হচ্ছে-
ওম্ সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাপ্তুনর্ণবঃ ।।
অহোরাত্রো প্রজায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো ।।
➢ অথর্ববেদ, ১০/৮/২৩।
পদার্থঃ— (এনম) এই পরমাত্মাকে (সনাতনং অাহুঃ) সনাতন বলা হয়, পরন্ত (উত অদ্য) তা তো আজও (পুনর্ণবঃ) পুনঃ নতুনের নতুন হয়। যে ভাবে (অহোরাত্রো) দিন ও রাত (অন্যঃ অন্যস্য রূপয়োঃ) এক রূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়ে (প্রজায়েতে) উৎপন্ন হয়। দিনের পর রাত এবং রাতের পর দিন হয় এ জন্য রাত দিন নতুন নতুন লাগে,সেই প্রকারে সনাতন হয়েও ঈশ্বর নবীন হতেও নবীন। তিনি কখনও জীর্ণ হন না।
অর্থাৎ রাত দিনের এই চক্র সেই সৃষ্টির আদি হতেই চলছে। তারপরেও প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত আমাদের কাছে নতুনের মতো লাগে। ঠিক তেমনি অনাদি অনন্ত সনাতন হয়েও ঈশ্বর সবসময় নবীন।
আর সেই সনাতন পরমব্রহ্মের দেয়া সনাতন জ্ঞানবাণী হলো পবিত্র বেদ। এই উপলক্ষে কয়েকটি মন্ত্র পড়েই বেদে আবার বলা হচ্ছে -
অংতি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।
দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি।।
➢ অথর্ববেদ, ১০/৮/৩২।
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্য সমীপবর্ত্তী পরমাত্মাকে দেখেও না, তাঁহাকে ছাড়িতেও পারে না। পরমাত্মার কাব্য বেদকে দেখ; তাহা মরেও না, জীর্ণও হয় না।
অর্থাৎ পরমাত্মা যেমন সনাতন, তার বেদবাণীও সনাতন, বেদ কখনো জীর্ণ হয়না।
আর এই বেদোক্ত ধর্মকেই তাই সনাতন ধর্ম বলা হয়। মনুসংহিতা সেজন্য বলছে-
সত্যং ব্রুয়াৎ প্রিয়ং ব্রুয়ান্নব্রুয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম্।
প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রুয়াদেষ ধর্ম্মঃ সনাতনঃ।।
➢ মনুস্মৃতি, ৪/১৩৮।
অনুবাদ- অপরের হিতকর প্রিয় সত্য কথা বলিবে, অপ্রিয় সত্য কথা কখনো বলিবেনা যাহা লোকের মর্মভেদ করে, অপরকে প্রসন্ন করার নিমিত্তেও আবার মিথ্যা বলিবে না, ইহাই বেদবিহিত সনাতন ধর্ম।
এই সনাতন ধর্মের লক্ষণ কী কী?
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং
শৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকম্ ধর্মলক্ষণম্॥
➢ মনুসংহিতা, ৬.৯২।
অর্থাত্ সহিষ্ণুতা,ক্ষমা ,চুরি না করা ,শুচিতা ,ইন্দ্রিয়সংযম,শুদ্ধ বুদ্ধি,জ্ঞান,সত্য এবং ক্রোধহীনতা-এইটি দশটি মনুষ্যের সনাতন ধর্মের লক্ষণ।
আর এই সনাতন ধর্মকে আমরা যেন জানতে পারি, চোখ দিয়ে দেখতে পারি সেজন্য আমাদের জন্য প্রেরিত মানবজাতির দিক নির্দেশনা হলো পবিত্র বেদ।
মনুসংহিতা ২নং অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে এটিই বলা হচ্ছে-
পিতৃদেব মনুষ্যাণাং বেদশ্চক্ষুঃ সনাতনম্
পিতৃমাতৃ,সকল মনুষ্য, দেবতুল্য ঋষিগণ সকলের জন্যই বেদ ই সনাতন পথ দর্শনের চক্ষুস্বরূপ।
আর তাই সনাতন পরমব্রহ্ম প্রেরিত সনাতন বেদবাণীর দ্বারা বিধৃত ও দৃষ্ট যে ধর্ম তাই সনাতন ধর্ম। ধর্ম মানেই সনাতন কারণ সৃষ্টির আদি থেকেই ধর্ম বিদ্যমান। আর তাই কোন মানুষ ধর্মের প্রবর্তক হতে পারেনা কারণ মানুষ সৃষ্টির আগে থেকেই ধর্ম মহাজগতে উপস্থিত। সনাতন ধর্মের প্রবর্তক স্বয়ং ঈশ্বর ই যিনি বেদের মাধ্যমে মনুষ্যকে এই সনাতন ধর্মের প্রবচন দিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ