ভূমিকা
ইসলামী সমাজে কাম বা যৌনতা (সেক্স) বিষয়টি একেবারেই অপ্রকাশিত। সাধারণ মুসলিম সমাজে যৌনতা শব্দটি কদাচিৎ উচ্চারিত হয়ে থাকে। হলেও হয় গোপনে, ভয়ে ভয়ে। দৈব-দুর্বিপাকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে কিংবা কাফেরদের দেশে নারীসম্ভোগের জন্যে গমন করা ছাড়া অন্য সময়ে যৌনবিষয়ক আলাপ আলোচনা ইসলামী সমাজে নিষিদ্ধই বলা যায়। ইসলাম ভান করে, যেন পুরুষ বা নারীর দেহে যৌনাঙ্গ বলতে কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। একজন মুসলিম রমণীকে তার মাথা হতে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হয় আজীবন, তার “আওরাকে” সে এভাবেই আবরণ নিয়ে রক্ষা করে। ইসলামী পরিভাষায় আওরা বলতে নারীর সেই অঙ্গকে বোঝায়, যা দেখলে পুরুষ কামোত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং যা নারীর জন্যে লজ্জাস্বরূপ। অর্থাৎ যৌনাঙ্গ হচ্ছে নারীদেহের একটি অতিশয় লজ্জাজনক অংশ। তার সমস্ত দেহটিই একটি লজ্জাজনক বস্তু—এই অনুভূতি নিশ্চয়ই নারীদের জন্যে সম্মানের বিষয় নয়।
পুরুষের জন্যও এই ধারণা চরম অবমাননাকর। কারণ এতে এই প্রমাণ হয় যে, পুরুষজাতি রাস্তায় বিচরণরত বেওয়ারিস ষাঁড়ের চেয়ে বেশি কিছু নয়, সামনে মেয়ে দেখলেই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নেয়ার জন্যে সর্বক্ষণ মুখিয়ে আছে সে। একেবারেই অর্থহীন বাজে একটি ধারণা এটি। আমি কাফেরদের দেশে যুগের পর যুগ বাস করছি। নানা বর্ণের, নানা বয়সের লাখ লাখ মেয়ে এখানে অহোরাত্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে দিনে এবং রাতে। তাদের কারও বেশভূষা শালীন, কারও বেশভুষা প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে চরম উত্তেজনাকর বা ‘সেক্সি’, কিন্তু কখনও দেখিনি যে, কোনো পুরুষ কামতাড়িত হয়ে এমনকি চরম যৌনাবেদনময়ী বা সেক্সি মেয়েটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নিল।
ইসলামী আইনসমূহে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। এত ছিদ্র আছে যে, ইচ্ছে করলে যে কোনো মুসলমান পুরুষ, তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যা‑ই হোক না কেন, আইনের কানাগলির সুযোগ নিয়ে অপরিমিত যৌনসম্ভোগ করতে পারে। তাকে যা করতে হবে, তা হলো - খেলাটি ভালভাবে রপ্ত করা। না জেনে খেলতে গেলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। রতিলীলা করার জন্য ইসলামে এত গুপ্ত উপায়, না-বলা এতসব আইনকানুন আছে যে, মোল্লারা সে সম্পর্কে মুখ খুলবে না।
পাঠক, শীতকালে গরম লেপের উষ্ণতা কতোই না আরামদায়ক। তাই না? শেক্সপিয়ারের সনেট, রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, অজন্তার গুহাচিত্র কিংবা প্রাচীন গ্রিসের ভাস্কর্য—সর্বযুগের সংস্কৃতিপ্রেমী মানবসন্তানের মনে সন্তোষের জন্ম দেয়। কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে, কিছু বিরল উপাদান আছে, যার মাঝে মানুষ তার শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তি একসাথে খুঁজে পায়? তা হচ্ছে যৌনতৃপ্তি। হ্যাঁ, সেক্স [বা যৌনক্রিয়া] হচ্ছে সেই বিরল উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান যা মানবজাতির (নারী পুরুষ উভয়ের) চালিকা শক্তি (ড্রাইভিং ফোর্স) হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এই শক্তিশালী উপাদানটিকে কোন সমাজ কীভাবে দেখাশোনা করে, তার ওপরেই সে সমাজের প্রসারতা কিংবা পরিপক্কতার পরিচয় নির্ভর করে।
এই নিরিখে ইসলাম কীভাবে যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তার পর্যালোচনা করা যাক। ইসলাম মানব‑প্রজাতির যৌনাচারকে স্ত্রীজাতির মর্যাদার সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। অথচ মানুষের স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াকলাপ আর নারীর মর্যাদা সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি বিষয়। পৃথিবীতে প্রচলিত আর সব ধর্ম বা সামাজিক প্রক্রিয়াগুলির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, ইসলাম যৌনতার পবিত্রতার উপর অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করে, অথচ এর মাঝে এত বেশি স্ববিরোধিতা রয়েছে, যা দেখে মনে হয় নর-নারীর স্বাভাবিক সম্পর্কে ইসলাম বড় বেশি স্পর্শকাতর, বড় বেশি উৎকণ্ঠিত। সেক্সুয়ালিটি বা যৌনাচার সম্পর্কে ইসলামের কপটতা, দ্বিমুখী ও পক্ষপাতদুষ্ট নীতি এবং উদ্ভট ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধের স্বরূপ উন্মোচন করাই বক্ষ্যমান প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য। সেই সাথে এটাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো যে, যৌথ সম্মতির ভিত্তিতে নরনারীর যৌনতৃপ্তি মেটানোর প্রাকৃতিক অধিকারের ওপর কিছু অন্যায় ও অযৌক্তিক বাধানিষেধ আরোপ করে মানুষের ওপর অপরিসীম নির্যাতন চালানোর বিধান দেয়া হয়েছে ইসলামে। নর-নারীর যৌনসম্পর্ক মানবজীবনের পরম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরাপৃষ্ঠে জীবকুলের বিকাশ যৌনপ্রক্রিয়ারই অবধারিত ফসল। এটি ছাড়া ডারউইনের বিবর্তন বহু আগেই বন্ধ হয়ে যেতো।
যে সমাজে নারীর ওপরে যত কম অত্যাচার হয়, সে সমাজ তত সভ্য। সে হিসেবে এখনো পৃথিবীতে মা-বোনের সামনে আমাদের লজ্জা রাখার জায়গা নেই। সৃষ্টির শুরু থেকে পুরুষ যত রকমে সম্ভব নারীর ওপরে অত্যাচার করেছে। এবং সেজন্য রাষ্ট্র, সাহিত্য, আঞ্চলিক সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক কাঠামো এমনকি ধর্ম পর্যন্ত কাজে লাগিয়েছে। নারীর ওপরে অত্যাচারকে হালাল করার ব্যাপারে ধর্মের ব্যবহারটা খুবই মোক্ষম। ইসলামের অবস্থাও তাই। সে অত্যাচার ঠেকাবে কি, ওটাকে অত্যাচার বলে মনে করতেই সাহস পায় না কেউ। ইমান নষ্ট হবে তাহলে। এ ব্যাপারে লেখালেখি হয়েছে বিস্তর। ভক্ত মুসলমানরা আর মওলানারা লক্ষ লক্ষ কেতাবে, প্রবন্ধ‑নিবন্ধে, মিলাদ‑মজলিসে, আর বক্তৃতায় কোরআন-হাদিসের নানারকম উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছেন, ইসলামে নারীর জায়গা বড়ই চমৎকার। ইসলাম মেয়েদের একেবারে দুধে-মধুতে রেখেছে। কথাটা যে একবারে মিথ্যে; তা কিন্তু নয়। মেয়েদের ব্যাপারে মিষ্টি-মধুর অনেক কথাই আছে ইসলামে। আছে মনোহরণ বর্ণনা, আছে চমৎকার উপদেশ, উপরোধ আর অনুরোধ। সেটা হল মুদ্রার একটা দিক। চাঁদের যেমন একটা দিকই পৃথিবীর দিকে সব সময় মুখ করা থাকে, তেমনি মেয়েদের ব্যাপারে ইসলমের ওই মিষ্টি সুন্দর মুখটাই মওলানারা সব জায়গায় দেখিয়ে বেড়ান। অন্য কুৎসিত দিকটা তাঁরা জানেন নিশ্চয়ই, কিন্তু ভুলেও দেখান না। কিংবা, বোধহয়, ইমানের কঠিন দেয়াল ভেঙে মানবতাটা মাথায় ঢুকতেই পারে না। যদি ইসলাম মেয়েদের এতই মাথায় তুলে রাখবে, তাহলে মুসলমান সমাজের ইতিহাসে আর বর্তমানে মেয়েদের এত আর্তনাদ, এত গোঙানির অন্য কারণগুলোর সাথে সাথে ইসলামী আইনের নিষ্ঠুরতাটা লুকিয়ে রাখেন বিলকুল। ইসলামকে যদি ঠিকমত জানতে হয়, তবে দু’টো দিকই দেখতে হবে আমাদের।
দলিল থেকে নারীর প্রতি ইসলামের আদর দেখিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মওলানা। আর নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন মুষ্টিমেয় মাত্র কিছু পণ্ডিত। দু’একটা বইও আছে ইংরেজিতে এর ওপর। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে বিস্তারিত বলেছেন আবুল কাশেম। ইন্টারনেটের অনেক সাইট তাঁর পুরো গবেষণা ধরে রেখেছে, বিশেষ করে মুক্তমনা। এ বইয়ের অন্য জায়গায় মুক্তমনার ঠিকানা দেয়া আছে। কোরআন-হাদিস আর ইসলামের আদি কেতাবগুলো থেকে তিনি একের পর এক অজস্র দলিল এভাবে তুলে ধরেছেন যে, তা থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়, মুসলমান মেয়েদের প্রতি যত অত্যাচার হয়েছে, তার একটা বড় অংশের জন্য দায়ী ইসলাম নিজেই। বাংলায় এতবড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একটি বইও নেই, এটাই প্রথম। আপনাদের সামনে দেবার আগে বছরের পর বছর ধরে এর প্রতিটি বক্তব্যের সত্যতা সম্বন্ধে সমুদ্র-মন্থন করা হয়েছে কোরআন-হাদিস এবং ইসলামের আদি ইতিহাস থেকে। কারণ আমরা হাড়ে হাড়ে জানি মওলানারা কি চীজ। একটা ভুল পেলেই চিৎকার করে আকাশপাতাল একাকার করে ফেলবেন। ভুল না পেলেও মুরতাদ-টুরতাদ বলে টাকা-পয়সার ঘোষণা দিয়ে তাঁরা আমার মাথাকাটার চেষ্টা করবেন। যাহোক, কোনো মওলানা যদি এর মূল উদ্ধৃতিতে ভুল দেখাতে পারেন, তা হলে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে এ বই আমি বাজার থেকে উঠিয়ে নেব, এ ওয়াদা থাকল।
এবারে কাজে নামা যাক। আমাদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যাকে ইসলাম কী চোখে দেখছে, মুখের কথায় কী বলছে, আর কাজে কী করছে? আমি আবুল কাশেমের গবেষণা থেকে আলোচনা করব, আমার সিদ্ধান্ত আপনাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেব না। মাথার মধ্যে মগজ সবারই আছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। পাঠক! অবাক এবং ক্রুদ্ধ হবার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
ধন্যবাদ।
একজন পাঠক
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ।
লেখকের সামান্য কথা
প্রায় এক যুগ ধরে ‘উইমেন ইন ইসলাম’ এবং সেটার বাংলা অনুবাদ বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং ই-বুক হিসেবে পাঠকেরা পড়ে আসছেন। বহু সংখ্যক পাঠক আরও জানার জন্য আমাকে অনেক দিন ধরেই তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁদের অনুরোধে এই দ্বিতীয় সংস্করণ তৈরি করা হলো। এখানে অনেক নতুন তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং কলেবর বৃদ্ধি হয়েছে। তবুও এই সংস্করণের ভিত্তি হচ্ছে প্রথম সংস্করণের বাংলা অনুবাদ। সেই অনুবাদকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
জানুয়ারি ১২, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ
সূচিপত্র
সূচনা
অধ্যায় ১: প্রথম পাঠ
অধ্যায় ২: নারীরা হচ্ছে নিকৃষ্টতম প্রাণী
অধ্যায় ৩: ইসলামে বহুগামিতা
অধ্যায় ৪: ইসলামী দেনমোহর
অধ্যায় ৫: ইসলামী নারীদের জীবিকা
অধ্যায় ৬: ইসলামী তালাক
অধ্যায় ৭: হিলা এবং মুসলিম নারীদের অধিকার
অধ্যায় ৮: খৎনা এবং জিহাদ করা
অধ্যায় ৯: ইসলামের নারী শিকার
উপসংহার
সূচনা
সব বাংলাদেশীর মত আমিও ইসলামকে খুবই শান্তির ধর্ম মনে করতাম, সবার মতই আসল ইসলাম সম্বন্ধে জানতাম অল্পই। ইরানে ইসলামী হুকুমত কায়েমে দুনিয়া তার দিকে ফিরে তাকাল। পরে আমিও কৌতূহলী হয়ে ঢুকে পড়লাম অন্তর্জালে। ইউরোপ-আমেরিকার শত শত ইসলামী মনীষীর অসংখ্য লেখা পড়ে মনটা খুব খুশি হয়ে গেল। সব সৎ পাঠকের মত আমিও তাদের প্রতিটি কথাই বিশ্বাস করলাম। ইসলামে আমাদের মা-বোনদের জন্য এত ভালো ভালো কথা আছে যে, তা দেখে মনটা আমার বড়ই মোহিত হয়ে গেল।
কিন্তু তারপর পৃথিবীর মুসলিম দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে কেমন যেন সন্দেহ হল। ইসলামী মনীষীরা এত জোর দিয়ে যা কিছু বলছেন, তার দেখি কিছুই মিলছে না। উল্টো বরং মেয়েদের আর্তনাদে সেখানে কান পাতা দায়। পাকিস্তানে, নাইজিরিয়াতে, আফগানিস্তানে তো মোটামুটি ইসলামী আইন (শরিয়া) চালু আছে, কিন্তু তাহলে সে সব দেশে মেয়েদের অবস্থা এত করুণ কেন? আফগানিস্তানের রাস্তায় পুলিশ লাঠি দিয়ে মেয়েদের পেটাচ্ছে, নাইজিরিয়ায় ধর্ষিতা মেয়ে পুলিশের কাছে নালিশ জানাতে এসে শরিয়া কোর্টে মৃত্যুদণ্ড পেল, দুবাই কোর্ট স্বামীদেরকে বৌ-পেটানোর অধিকার দিল, পত্রিকায় এই সব দেখে মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল, আতংকে ত্রাসে শিরশির করে উঠল বুকের ভেতর। সর্বনাশ! অন্য কেতাবে যা-ই লেখা থাকুক, শরিয়ার কেতাবে তো এগুলোই আছে। বাংলাদেশেও শরিয়া চালু করার চেষ্টা চলছে, এমন ঘটলে আমাদের যে কী সর্বনাশ হয়ে যাবে, তা ভেবে ভয়ে হিম হয়ে গেল বুক। তারপর বাধ্য হয়েই ঢুকে পড়লাম ইসলামের ভেতর। ওখানে কী আছে, দেখতে হবে, শেকড় খুঁজে বের করতে হবে নারীর ওপর ইসলামী অন্যায়-অত্যাচারের। অত্যাচারগুলো আসলে কি কেতাবেই আছে, না কি পুরুষরা আইনগুলোকে বিকৃত করেছে?
যা দেখলাম, তাতে দম বন্ধ হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য, এ যে অবিশ্বাস্য! এ কী চেহারা আসল ইসলামের? এ যে প্রকাণ্ড এক দানব ছাড়া আর কিছু নয়! আবার সব কিছু দেখলাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। না, কোনো ভুল নেই, মানুষকে হাজার বছর ধরে নির্লজ্জ মিথ্যে কথায় কঠিন প্রতারণা করেছেন মওলানারা। আমি উচ্চ বিদ্যায়তনে ছাত্র পড়াই, জীবনে অনেক পরীক্ষাই দিয়েছি ও পাশ করেছি। এবার যেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, এ কথা মনে রেখে আবার পড়া শুরু করলাম ইসলামের মূল বইগুলো, যেখান থেকে উঠে এসেছে ইসলামের আইন কানুন। খাটাতে শুরু করলাম নিজের বিবেক-বুদ্ধি আর কল্যাণ-বোধ। তখন ধীরে ধীরে ইসলামের এই লুকিয়ে রাখা না-বলা দানবীয় দিকটা স্পষ্ট হয়ে এল চোখের সামনে। না, কোনো ভুল নেই। নারীর প্রতি ইসলামের আদর-সম্মান শুধু লোক-দেখানো, মন-ভোলানো। ওগুলো শুধু গজদন্তের মত হাতির বাইরের সুন্দর দাঁতটা। আসলে ইসলামের মুখের ভেতরে লুকোনো আছে মেয়েদের চিবিয়ে খাওয়ার জন্য আরও এক পাটি শক্তিশালী বিষাক্ত দাঁত। তারই নাম শরিয়া বা শারিয়া।
কিন্তু এটা আমি একা দেখলে তো চলবে না। অবশ্যই এ লুকোনো দলিল দেখতে হবে পৃথিবীর সব মানুষকে। যত অবিশ্বাস্যই হোক, যত বেদনাদায়কই হোক, সবাইকে জানতেই হবে ইসলামী শরিয়া আইন কী শকুনের চোখে তাদের দেখে। খাল কেটে এ রক্তপিপাসু কুমিরকে ডেকে আনবার আগে অবশ্যই সমস্ত শান্তিপ্রিয় মুসলমানকে দেখতে হবে ইসলামের এই ভয়াবহ লুকোনো চেহারা।
তাই হাতে তুলে নিয়েছি কলম, খুব আস্তে-ধীরে ইসলামের আসল চেহারাটা ফুটিয়ে তুলব আপনাদের সামনে। আপনারা পড়ুন, খুঁটিয়ে দেখুন, এবং চিন্তা করুন। এবং দেখান মওলানাদের। তাঁদের কী বলার আছে, জানান আমাকে। যদিও জানি, তাঁরা টুঁ শব্দটি করবেন না। কারণ তাঁদের ভালোই জানা আছে যে, লড়াইটা তাঁদের করতে হবে আমার বিরুদ্ধে নয়, বরং তাঁদের নিজেদের কেতাবের বিরুদ্ধেই। এটাও তাঁরা ভালোই জানেন যে, এ ব্যাপারে বেশি নাড়াচাড়া করলে তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের চোরাবালির গর্তে ঢুকে মারা পড়বেন।
ধন্যবাদ।
আবুল কাশেম।
অধ্যায়-১ : প্রথম পাঠ
প্রথমে কোরআন দিয়েই শুরু করা যাক, সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত মওলানা মুহিউদ্দিন খানের অনুবাদ। কোরআনের যে-কথাগুলো পুরুষের মন-মানসিকতায় ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে গেঁথে রয়েছে, সেগুলো একটু দেখে নেয়া যাক, তারপরে বিস্তারিত তথ্যে যাব আমরা।
আল্লাহ্র পছন্দ হচ্ছে পুরুষ—তা কি বলার দরকার রাখে?
কী আছে সুরা নাহল- আয়াত ৪৩ (১৬:৪৩), সুরা হজ্ব আয়াত ৭৫ (২২:৭৫) এ?
নারীকে কোনোদিন নবী-রসুল করা হবে না।
সুরা ইউসুফ, আয়াত ১০৯-(১২:১০৯) তেও একই কথা:
আপনার পূর্বে আমি যতজনকে রসুল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষই ছিল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে, আমি তাঁদের কাছে ওহী প্রেরণ করতাম।
এবং সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুরা আল্ আনাম আয়াত ৯ (৬:৯):
যদি আমি কোনো ফেরেশতাকে রসুল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হত। এতেও ঐ সন্দেহই করত, যা এখন করছে।
কোনো কোনো অনুবাদে দেখবেন আরবির ‘পুরুষের আকারে’ শব্দটাকে অনুবাদে ‘মানুষের আকারে’ বলে সমস্যাটাকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছেন চালাক মওলানারা।
আরবিতে মানুষ হল ইনসান আর পুরুষ হল রাজাল। মওলানাদের জিজ্ঞাসা করুন তো, কোরানে কোন শব্দটা আছে?
এবারে একটু হাদিস ঘেঁটে দেখা যাক। হাদিস হল নবী (সঃ)-এর কথাবার্তা, আচার-বিচার, ধ্যান-ধারণা, ব্যবহার-ব্যক্তিত্ব, মতামত-সিদ্ধান্ত, এ সবের বিস্তারিত প্রতিবেদন বা বিবরণী, যা তাঁর সহচরেরা দিয়ে গেছেন। হাদিস ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, কোরানের পরেই এর স্থান। হাদিস বাদ দিলে ইসলামের সাংঘাতিক অঙ্গহানী হয়ে যায়। বিখ্যাত মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম তাঁর বিখ্যাত ‘‘হাদিস সংকলনের ইতিহাস’’ বইয়ের ৯৪ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন বুলন্দ ইমামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘হাদিস অমান্যকারী কাফির।’
ছয়টি হাদিসের বই সর্বকালে সর্ব দেশে সুন্নী মুসলমানেরা ‘‘সহি’’ বা ‘‘সত্য’’ বলে গণনা করেন, সেগুলো হল সহি বুখারি, সহি মুসলিম, সহি নাসাঈ, সহি তিরমিযী, সহি আবু দাউদ এবং সহি ইবনে মাজাহ। অনেকে মালিকের মুয়াত্তাকেও অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। আমরা মোটামুটি সেগুলো থেকেই উদ্ধৃতি দেব।
দুনিয়ার একশো বিশ কোটি মুসলমানের মধ্যে সুন্নীরাই একশো কোটি। হাদিসে মেয়েদের সম্মন্ধে অনেক ভালো কথাও আছে। কিন্তু তার পাশাপাশি যা আছে, তাতে লজ্জায় মুসলমান পুরুষদের স্রেফ আত্মহত্যা করা ছাড়া অথবা ওই শত শত দলিলগুলোকে খুন করা ছাড়া উপায় নেই। বাড়িয়ে বলছি না একটুও, সবই দেখাব একটা একটা করে।
সহি মুসলিম; বই ৩১, হাদিস নম্বর ৫৯৬৬:
আবু মূসার বর্ণনা মতে নবী (সা) বলেছেন: “পুরুষদের মধ্যে অনেকেই ত্রুটিমুক্ত কিন্তু নারীদের মধ্যে কেউ-ই ত্রুটিমুক্ত নয়, কেবল ইমরানের কন্যা মেরী এবং ফারাওয়ের স্ত্রী আয়েশা ছাড়া।” (সূত্র ৩)
হল? একেবারে সাফ কথা। এ কথার পর কি আর কিছু বলার থাকতে পারে, না বলা উচিত? এর পরেও আবার যদি গোদের ওপর বিষফোঁড়া গজায়, ইসলাম যদি পতিদেবতাকে ওপরে তুলতে তুলতে একেবারে আসমানি পাতি-দেবতা করে তোলে, তবে নারী তো পুরুষের পায়ের তলায় পিষে যাবেই, তার জন্মগত মানবাধিকার তো লেজ তুলে পালাবেই।
প্রমাণ দেখাচ্ছি সুনান আবু দাউদ হাদিস থেকে; বই ১১ হাদিস নম্বর ২১৩৫:
কায়েস ইবনে সা’দ বলছেন, ‘‘নবী (সা) বললেন: “আমি যদি কাউকে কারো সামনে সেজদা করতে বলতাম, তবে মেয়েদের বলতাম তাদের স্বামীদের সেজদা করতে। কারণ আল্লাহ স্বামীদের বিশেষ অধিকার দিয়েছেন তাদের স্ত্রীদের ওপরে।” (সূত্র ৪)
গ্রাম-গঞ্জের কোটি কোটি অশিক্ষিত মুসলিম পুরুষ আর কিছু না বুঝুক, আল্লার দেয়া এই ‘‘বিশেষ অধিকার’’ ঠিকই বুঝেছে, আর তার ঠ্যালায় মেয়েদের যে কী অপমান আর নৃশংস অত্যাচার সইতে হয়েছে শতাব্দী ধরে, তা ঠিকমত উপলব্ধি করলে অশ্রু সামলানো যায় না।
এ ঘটনাটা ঘটেছিল হিন্দুধর্মের বইতেও। হিন্দুরা তো তাদের মহাপুরুষদের অক্লান্ত চেষ্টায় সে নরক থেকে বেরিয়ে এসেছে, শুধু আমরা মুসলমানরাই এখনো চোখে সর্ষে ফুল দেখে দেখে ভিরমি আর খাবি খেয়ে চলেছি এ অন্ধকূপের ভেতর। মেয়েদের আর্তনাদ শুনছি আর সাম্যের বক্তৃতা শুনছি। অবশ্যই, অবশ্যই!
সে কথাগুলো হল: পুরুষ নারীর ওপরে কর্তা, উত্তরাধিকারে পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পাবে, আর্থিক লেনদেনে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক, ইত্যাদি ইত্যাদি।
নারীরা হল ভূমি এবং ক্রীতদাসী সদৃশ - এ-ও কি বলে দিতে হবে?
দেখুন কোরআন শরীফ
সুরা বাকারা, আয়াত ২২৩ (২:২২৩):
তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।
এ কথার মানে কি? ‘শষ্যক্ষেত্র’ কথাটার মানেই হল, মেয়েদের বিছানায় টেনে নিয়ে যাও, আর ‘চাষ কর’, ‘শষ্য’ অর্থাৎ বাচ্চা পয়দা করার জন্য। ছিঃ! কোনো ধর্মগ্রন্থ যে নারীদের নিয়ে এমন অবমাননাকর শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, তা কল্পনাই করা যায় না। আর ‘ব্যবহার কর’ কথাটার মানেই বা কী? মেয়েরা কাপড়, না জুতো যে ব্যবহার করতে হবে? এর পরেও কোরানে পুরুষের জন্য মেয়েদের ‘উপভোগ কর’, ‘সম্ভোগ কর’ এ ধরণের কামুক কথাবার্তা প্রচুর আছে। আর বেহেশতের তো কথাই নেই। [এই আয়াত নিয়ে দীর্ঘ লেখা আছে ‘ইসলামে যৌনতা’ পর্বে পড়ে নিন।]
সুরা আল-ওয়াক্বিয়াতে (সূরা ৫৬: ৩৫-৩৭) মেয়েদের নানারকম উত্তেজক বর্ণনার পর বলা হল:
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী, কামিণী, সমবয়স্কা।
এদিকে বেচারা অনুবাদকের হয়ে গেল মহা মুশকিল। রমণীর সাথে রমণের লোভটাই সবচেয়ে আকর্ষনীয়, কিন্তু একবার রমণ হয়ে গেলে রমণীর পক্ষে চিরকুমারী থাকাটাও অসম্ভব। কী করা যায়! অনেক ভেবে-চিন্তে মাথা চুলকে তিনি ব্যাখ্যার অংশে লিখলেন: জান্নাতের নারীদের এমনভাবে সৃষ্টি করা হবে যে, প্রত্যেক সঙ্গম-সহবাসের পর তারা আবার কুমারী হয়ে যাবে (পৃ-১৩২৭, কোরানের বাংলা অনুবাদ মওলানা মুহিউদ্দীইন খান)। শুধু তাই নয়, ঐ একই পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে: এছাড়া শয্যা, বিছানা ইত্যাদি ভোগবিলাসের বস্তু উল্লেখ করায় নারীও তার অন্তর্ভুক্ত আছে বলা যায়। অর্থাৎ নারী শুধু শয্যা ও লাঙ্গল চালানোর ভূমি মাত্র।
শাব্বাশ!
এইসব কথা বলার পরে প্রচুর মিষ্টি মিষ্টি কথা কিংবা ‘আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক’ এসব বলে কোনোই লাভ হয়নি, মুসলমান মেয়েরা চিরকাল পিষ্ট হয়েছে পুরুষের পায়ের নিচে।
এগুলোই হল প্রথম পাঠ। এবার আসা যাক দীর্ঘ আলোচনায়।
অধ্যায়-২ : নারীরা হচ্ছে নিকৃষ্টতম প্রাণী
নারীরা যে একেবারেই নিকৃষ্ট, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে?
এবার শুরু করা যাক বিস্তারিত আলোচনা।
সুরা বাকারা, আয়াত ২২৮ (২:২২৮):
আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর, নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
এই হল শুরু। পরস্পরের ওপর এই ‘অধিকারটা’ যে কত প্রকার ও কী কী, তা পরিষ্কার করে পুরো কোরানের কোথাও কিচ্ছু বলা হল না বটে, কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বটা ঠিকই খামচে ধরল পুরুষ, একেবারে চিরকালের জন্য। যাহোক, মেয়েদের যে অধিকার বলে একটা কিছু আছে, তার স্বীকৃতি একটুখানি হলেও পাওয়া গেল এখানে। পয়গম্বর হয়ত চেষ্টা করেছিলেন মেয়েদের কিছুটা হলেও অধিকার দিতে, কিন্তু সম্ভবত, সেই বেদুঈন পুরুষদের শত শত বছরের প্রতিষ্ঠিত একচেটিয়া ক্ষমতার সমাজে উল্টো প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনায় তিনি এ ব্যাপারে ধুমধাড়াক্কার কোনো বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিতে চাননি।
এবারে সুরা নিসা, আয়াত ৩৪ (৪:৩৪):
পুরুষরা নারীর উপর কর্তৃত্বশীল। এ জন্য যে আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।
না, আর কোন রাখা-ঢাকা নেই, পুরুষের কর্তৃত্বশীলতা বলেই দেয়া হল এখানে। যে কর্তৃত্ব করে, আর যার ওপরে কর্তৃত্ব করা হয়, এ দু’জন কখনো সমান হয় না, হতে পারে না। পুরুষকে কোরআন এ-কর্তৃত্ব দিল স্পষ্টভাষায়, সম্ভবত, টাকা-পয়সার এবং শারীরিক শক্তির কারণেই। কিন্তু শারীরিক শক্তি কোনো যুক্তিই হতে পারে না। তাহলে আফ্রিকার জঙ্গলের গরিলাই হত মহান আশরাফুল মাখলুকাত, সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কিংবা হাতি বা তিমি মাছ। টাকা-পয়সার ব্যাপারটা তখনকার সমাজে হয়ত ঠিকই ছিল, কিন্তু আজকে?
আজকের পৃথিবীতে বহু মেয়েই উপার্জনক্ষম, বহু মেয়ের উপার্জনেই সংসারে বাপ-ভাইয়ের মুখে অন্ন জুটছে, বহু স্ত্রীর উপার্জন স্বামীর চেয়ে বেশি, পিতৃহারা বহু সন্তানই মানুষ হচ্ছে শুধুমাত্র মায়ের উপার্জনেই। তা ছাড়া ‘‘প্রহার করা’’ তো সাংঘাতিক একটা মানসিক অপমানও বটে। যে-অধিকার একটা ভালো লোককেও রাগের মুহূর্তে পশু বানিয়ে দিতে পারে, কোনো বেহেশতি ধর্ম তেমন একটা বিপদজ্জনক অধিকার কাউকে কেন দেবে? বউ বেচারাদের টাকা-পয়সা উপার্জনের সুযোগই দেয়া হয়নি, তাদের খাওয়া-পরার জন্য স্বামীর ওপরে চিরকাল নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে, সেজন্য? তাহলে যেসব স্বামী বউয়ের উপার্জনে খায়, তারা কি বউয়ের হাতে মার খাবে? এ অন্যায়টা কিন্তু কোনো কোনো মওলানার মাথায় ঠিকই ঢুকেছে। তাই কোরানের কোনো কোনো অনুবাদে আপনি দেখবেন ‘‘প্রহার কর’’ কথাটার সাথে ব্র্যাকেটের ভেতর ‘‘আস্তে করে’’ কথাটা ঢোকানো আছে। মানেটা কী? ‘আস্তে করে প্রহার কর’ – কথাটার মানেটাই বা কী? এ কি সেই ছোটবেলার পাঠশালার পণ্ডিতমশাইয়ের ধমক: অ্যাই! বেশি জোরে গণ্ডগোল করবি না! গণ্ডগোলের আবার আস্তে-জোরে কী?
আসলে ওটা হল অনুবাদকের কথা, কোরানের নয়। প্রায় সবগুলো অনুবাদেই আল্লাহর কথার সাথে সুপ্রচুর ব্র্যাকেটের মধ্যে অনুবাদকের অবারিত লম্বা নাকটা ঢুকে আছে। এদিকে প্রত্যেকটি অনুবাদ বইতেই কিন্তু মস্ত একটা তফসির অর্থাৎ ব্যাখ্যার অংশ আছে। তোমার যা বলার, সেটা ব্যাখ্যার অংশে বল না কেন, বাপু! অনুবাদের মধ্যে নিজের কথা ঢোকানোর অধিকার তোমাকে কে দিল? তা নয়, ভাবখানা এই যে, “আস্তে করে” কথাটা যেন কোরানেরই কথা। কিন্তু মানুষ কি গাধা? আস্তে করে ‘ছোট্ট কলমি শাক দিয়ে প্রহার কর’ বলে বিরাট কুমীরটা কি ঢাকা যায়? যায় না। এ প্রহার সকাল-বিকাল দিন-রাত চললেও কোনো অসুবিধে নেই, কারণ সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। আর বউকে পিটিয়ে স্বামী যাতে মনে মনে অপরাধবোধে না ভোগে, তার ব্যবস্থাও স্পষ্টভাবে দেয়া আছে হাদিসে।
সুনান আবু দাউদ, বই ১১ হাদিস নম্বর ২১৪২:
উমর বিন খাত্তাব বলেছেন: নবী (সা) বলেছেন, “কোনো স্বামীকে (পরকালে) প্রশ্ন করা হবে না, কেন সে বউকে পিটিয়েছিল”।
আরও দেখুন, ইসলামের শ্রেষ্ঠ খলিফা হযরত উমর কেমন করে তাঁর স্ত্রীদেরকে পেটাতেন।
বাংলা মুসনাদে আহমদ; খণ্ড ২, পৃ ১৪৮, হাদিস নম্বর ১০৫৫
আশ’আছ্ ইব্ন কায়স (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি অতিথি হিসেবে উমর (রা)-এর নিকট উপস্থিত হই। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রহার করলেন, তারপর বললেন, হে আশ’আছ, তুমি আমার নিকট থেকে তিনটি জিনিস সংরক্ষণ কর, যেগুলো আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট থেকে সংরক্ষণ করেছি। (প্রথম) কোনো ব্যক্তিকে তার স্ত্রীর প্রহার করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। (দ্বিতীয়ত) বিতর না পড়ে ঘুমাবে না।
[আবু দাউদ তায়ালিসী তার মুসনাদে। এর সনদে দাউদ আওদী নামক এক দুর্বল রাবী আছেন।] (সূত্র ২৪)
আচ্ছা, আমদের প্রিয় নবী (সা) কি কোনো মেয়েকে শারীরিক আঘাত করেছেন? এ কথা মুখ আনাও যে পাপ! অনেকে বলে থাকেন নবী (সা) কখনই কোনো বেগানা নারীকে স্পর্শ করেননি। এমনকি নবী তাঁর কোনো স্ত্রীর গায়ে মৃদুভাবে হলেও হাত দেননি।
দেখুন, এই সব হাদিসে কী লেখা আছে।
দ্রষ্টব্য: এই হাদিসটি অনেক লম্বা। তাই এখানে সারাংশ দেয়া হ’ল। অনুরাগী পাঠকেরা পূর্ণ হাদিসটা পড়ে নিতে পারেন। (সূত্র ৩)
সহি মুসলিম; বই ৪, হাদিস নম্বর ২১২৭: মুহাম্মদ বিন কায়স বর্ণিত:
Anchorএকবার নবী (সা) এবং আয়েশা একই বিছানায় শায়িত ছিলেন। অনেক রাত্রিতে নবী (সা) উঠে পড়লেন এবং চলতে শুরু করলেন। নবী (সা) ভেবেছিলেন আয়েশা ঘুমন্ত। কিন্তু নবী (সা) শয়ন ঘর হতে বের হবার অল্পক্ষণ পরেই আয়েশা বিছানা থেকে উঠে চুপিসারে নবীকে (সা) অনুসরণ করতে থাকেন। নবী ‘বাকি’ নামক কবরস্থানে গিয়ে বেশ কিছু সময় কাটালেন এবং মৃতদের উদ্দেশে অনেক কিছু বললেন। এরপর নবী (সা) ঘুরে দাঁড়ালেন এবং হাঁটতে শুরু করলেন। বিবি আয়েশা খুব দ্রুতপদে শয়ন ঘরে চলে আসলেন এবং ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকলেন। কিন্তু তিনি (আয়েশা) হাঁপচ্ছিলেন এবং ঘন ঘন নিশ্বাস নিতে থাকলেন। এই ভাবে বিবি আয়েশা ধরা পড়ে গেলেন। তখন নবী আয়েশার বুকে এমন জোরে আঘাত করেলেন যে আয়েশা নিজেই বলছেন, “তিনি আমার বুকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, আমি প্রচুর ব্যথা পেলাম।” (সূত্র ৩)
বাংলা বুখারী শরীফ; খণ্ড ৯, হাদিস নম্বর ৪৮৭৮:
আবু নুয়ায়ম (র)…আবু উসায়দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমরা নবী (সা)‑এর সঙ্গে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌঁছলাম এবং দু’টির মাঝখানে বসে পড়লাম। তখন নবী (সা) বললেন: তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি (ভেতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নু’মান ইব্ন শারাহীলের কন্য জুয়াইনাকে উমাইমার খেজুর বাগানস্থিত ঘরে পৌঁছান হয়। আর তাঁর সাথে তাঁর সেবার জন্য ধাত্রীও ছিল। নবী (সা) যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর, তখন সে বলল: কোনো রাজকুমারী কি কোনো বাজারি (নীচ) ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেন: এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বলল: আমি তোমার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাই। তিনি বললেন: তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন: হে আবু উসমান! তাকে দু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।
হুসাইন ইব্ন ওয়ালীদ নিশাপুরী (র)…সাহল ইবন সা’দ ও আবু উসায়দ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নবী (সা) উমাইমা বিন্ত শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তার কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করল। এরপর তিনি আবু উসায়দকে নির্দেশ দিলেন, তার জিনিস গুটিয়ে এবং দু’খানা কাতান বস্ত্র পরিয়ে তাকে তার পরিবারে পৌঁছে দিতে। (সূত্র ১৭)
(লক্ষণীয়, ইংরেজি অনুবাদে আছে যে, নবী (স) জুয়াইনার পিঠ চাপড়ে দিলেন)
কী সাংঘাতিক ধর্মীয় সমর্থন, কল্পনা করা যায়? এ-ই হল সেই নির্লজ্জ সমর্থন, যা শুধু বইয়ের লেখাতে সীমাবদ্ধ থাকে না, কেয়ামতের মত যা নারীর মাথায় ভেঙে পড়ে। এরই শক্তিতে এই ২০০২ সালে দুবাই আদালত বিধান দিয়েছে, স্বামীরা বউকে পেটাতে পারবে। এই সভ্য যুগে পৃথিবীর কোনো দেশের আদালত এই বিধান দিতে পারে, কল্পনা করা যায়? উদ্ধৃতি দিচ্ছি:
দুবাই, ১লা এপ্রিল। দুবাইয়ের একটি আদালত রবিবার এক রায়ে স্বামীদের বৌ পেটানোর অধিকার দিয়েছে। দুবাই কোর্ট অফ ক্যাসেশনের রায়ে বলা হয়, ‘‘স্ত্রীদের নিয়ন্ত্রন’’ (নিয়ন্ত্রনে?) রাখতে স্বামীরা তাদের মারধর করতে পারবে। তবে মারধরের মাধ্যমে স্ত্রীদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন বা ক্ষত সৃষ্টি করা যাবে না’’। সূত্র: দুবাই থেকে প্রকাশিত দৈনিক গাল্ফ নিউজের বরাতে টরন্টো থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশে বিদেশে, ৪ এপ্রিল, ২০০২। টরন্টোর “নমস্তে ক্যানাডা” পত্রিকাতেও এ খবর ছাপা হয়েছে।
এখন বলুন, ইসলামে নারীর এ কেমন মর্যাদা? এর পরে আপনি বউ পেটালে আপনাকে ঠেকিয়ে রাখার মত বাপের ব্যাটা দুনিয়ায় পয়দা হয়নি, হবেও না। সাধারণ মুসলমানেরা বউ পেটায় না, সে শুধু মানুষের স্বাভাবিক মানবতা। কিন্তু তাহলে মেয়েদের বানানোই বা হল কেন? ‘‘শষ্যক্ষেত্রে’’ শুধু ‘‘চাষ করে শষ্য ফলানো” ছাড়াও এ ব্যাপারে হাদিস কেতাবে কী বলছে তা পরীক্ষা করার আগে খোদ কোরআন শরীফ কী বলছে, তা দেখা যাক।
সুরা আল্‑আরাফ আয়াত ১৮৯ (৭:১৮৯), এবং সুরা আর রূম আয়াত ২১ (৩০:২১):
যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে। আর তার থেকেই তৈরি করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। ‘‘তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক।
হাওয়ার আগে যে আদম সৃষ্টি হয়েছে, তা সবাই জানে। ওপরের আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল কে কার জন্য সৃষ্টি হয়েছে এবং কী জন্য সৃষ্টি হয়েছে। পুরুষের শরীরের সাথে ‘ম্যাচ’ করেই যে নারীর শরীর বানানো হয়েছে, সেটাও কোনো কোনো পুরুষপন্থী ইসলামী চিন্তাবিদ বলতে ছাড়েন না। জব্বর বিশ্লেষণ বটে! এ বিশ্লেষণে নারী এ জীবনে শুধু বিছানার যৌবন আর বেহেশতে অতি অপূর্ব বাহাত্তর হুরীর শরীরের উত্তপ্ত প্রলোভন। সেখানে নারী মমতার সাগর মা নয়, স্নেহময়ী বোন নয়, প্রেমময়ী স্ত্রী নয়, জ্ঞানী শিক্ষয়িত্রী নয়, সক্ষম নেত্রী নয়, সে শুধু যৌবনের কামুক উন্মাদনা ছাড়া আর কোনো কিছুই নয়।
সাধারণ মেয়েরা স্বামীর ইসলামী-পিট্টি খাবে, তা না হয় হল। কিন্তু অসাধারণ নারীরা?
এক নির্ভুল সত্য: শরিয়া হয়েছে পুরুষদের স্বার্থে—
ইসলামে শরিয়া (বা শারিয়া) বলে একটা কথা আছে, যা কিনা হল ইসলামী আইন। এ আইন মেয়েদের আর অমুসলমানের জন্য এতই বে-আইন যে, তা দু-এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। অমুসলমান খুন করলে মুসলমানের মৃত্যুদণ্ড হবে না। সাত-সাতটা বিষয়ে মেয়েদের চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। যারা নিজের চোখে ধর্ষণ দেখেছে, এমন চার জন বয়স্ক মুসলমান পুরুষের সাক্ষ্য আদালতে পেশ না করতে পারলে ধর্ষিতার কপালে জুটবে পাথরের আঘাতে মৃত্যুদণ্ড (বিবাহিতা হলে) অথবা চাবুকের আঘাত (অবিবাহিতা হলে)। এইসব হলো শারিয়ার আইন‑কানুন, যা এতই উদ্ভট যে, বিশ্বাস করাই মুশকিল। এ বইয়ের অন্য জায়গায় বিস্তারিত বলা আছে এ ব্যাপারে, প্রমাণসহ।
এমনিতে কলমা-নামাজ-রোজা-হজ্ব-জাকাত, ইসলামের এই হল পাঁচটা স্তম্ভ, নবীজির দিয়ে যাওয়া। এর পরেও শরিয়া কী করে যেন ইসলামের অঘোষিত ছয় নম্বর স্তম্ভ হয়ে, ইসলামের অংশ হয়ে বসে আছে!
উত্তরাধিকারে মেয়েরা তো পুরুষের অর্ধেক বটেই, টাকা-পয়সার লেনদেনেও শরিয়াতে মেয়েদের সাক্ষী হল পুরুষের অর্ধেক। সাক্ষীতে কেন অর্ধেক? কারণ তারা ভুলে যেতে পারে। আর পুরুষ? না, পুরুষ হল যেন কম্পিউটার, কোনোদিন কোনোই ভুল সে করতেই পারে না!
চলুন দেখি এবার কোরআন শরীফ, সুরা বাকারা, আয়াত ২৮২ (২:২৮২):
যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋণের আদান প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ
করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গত ভাবে তা লিখে দেবে;
..... দু’জন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে। যদি দু’জন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর - যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ
করিয়ে দেয়।
ব্যস, হয়ে গেল। উত্তরাধিকারে বোন ভাইয়ের অর্ধেক পাবে, এটা তো আছেই, তার ওপরে দু’জন নারীকে সাক্ষী হবার ব্যাপারে এই যে এক পুরুষের সমান করা হল, এটা হাদিসে আইনে পড়ে বাড়তে বাড়তে একেবারে এমন স্বর্গে পৌঁছে গেল যে, এখন ইউনিভার্সিটি-কলেজের পছন্দসই কোনো আসরার (একজন পাকিস্তানি ধর্ষিতা মহিলা) সর্বনাশ করে আসতে পারেন, এবং কোর্টকে কাঁচকলা দেখিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যেতে পারেন।
কারণ? কারণ ইসলামী আইন অনুযায়ী চারজন মুসলমান পুরুষের চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া যাবে না। আর, মেয়েদের সাক্ষী তো নৈব নৈব চ’, তা তিনি ইন্দিরা-হাসিনা-খালেদা হলেও। কী সাংঘাতিক কথা! মেয়েদের কী সাংঘাতিক অপমান, তাই না? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? জানি। দেখতে চান দলিল? এ বইয়েরই ‘ইসলামী আইন’ অধ্যায়ে দেখানো আছে সব, দলিলের আতাপাতাও দেয়া আছে। বটতলার মোল্লা-মুন্সীর নয়, একেবারে বাঘের ঘরের ইসলামী দলিল, পোকায় খেয়ে যাবে, তার বাপের সাধ্যি নেই। তার পরেও যদি কোনো কাঠমোল্লা তেড়ে আসে, শুধু জিজ্ঞাসা করবেন, পাকিস্তানের জাফরান বিবি, নাইজিরিয়ার আমিনা লাওয়াল কুরামীর কেইস্টা কী, বলুন তো? এগুলো তো মধ্যযুগের নয়, এসব এই ২০০১ সালের ইসলামী কোর্টের ঘটনা। দেখবেন, জোঁকের মুখে নুন আর হুঁকোর পানি দু’টোই একসাথে পড়েছে, কাঠমোল্লা বাবাজী প্রচণ্ড গোস্সায় দ্বিগুণ বেগে তসবিহ্ ঘোরাতে ঘোরাতে অতিবিলম্বে সবেগে উল্টোপথে হাঁটা ধরেছেন।
দেখুন, বিখ্যাত কোরআন ব্যাখ্যাকারী (তাফসীরকারী) ইবনে কাসীর ওপরের আয়াত প্রসঙ্গে কী লিখেছেন:
অতঃপর বলা হচ্ছে যে, লেখার সাথে সাথে সাক্ষ্যও হতে হবে, যেন এই আদান-প্রদানের ব্যাপারটি খুবই শক্ত ও পরিষ্কার হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: ‘তোমরা দু’জন পুরুষ লোককে সাক্ষী করবে। যদি দু’জন পুরুষ পাওয়া না যায়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রী হলেও চলবে। এই নির্দেশ ধন-সম্পদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে রয়েছে। স্ত্রীলোকের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণেই দু’জন স্ত্রীলোককে একজন পুরুষের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। (সূত্র ৩১, খণ্ড ১, ২, ৩, পৃ ৭৬৫)
আরেক বিখ্যাত কোরআন ব্যাখ্যাকারী তাফসীরে মাযহারী গ্রন্থে আয়াত ২৩:৫, ৬ সম্পর্কে কী লেখা আছে, দেখা যাক:
স্বল্পজ্ঞানের কারণে নারীজাতিকে সাধারণত বিবেকহীন সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত মনে করা হয়। অর্থাৎ তাদেরকে গণ্য করা হয় স্ত্রীলিঙ্গবাচক প্রাণীকুলের সঙ্গে। (সূত্র ৩৫, খণ্ড ৮, পৃ ২০১)
জ্বী, হাঁ স্ত্রীলোক, মানে আমাদের মা, বোন, প্রেয়সী, স্ত্রী, উচ্চ আদালতের নারী বিচারক, উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা… ইত্যদি সবারই জ্ঞানগরিমার অভাব—স্বয়ং আল্লাহই তাই বলে দিয়েছেন। শুধু তাই‑ই নয়, সমস্ত স্ত্রী-প্রজাতি হচ্ছে স্ত্রী-পশুদের সমতুল্য।
একটু মস্করাই হয়তো করছি, কিন্তু বড় দুঃখেই করছি। হাজার হলেও ধর্মটা আমারই, এর মধ্যে এত অন্যায়ের, এত নিষ্ঠুরতার লজ্জা আমি রাখব কোথায়? নবী করীমের হাদিসেই দেখুন:
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, হাদিস নম্বর ৩০:
আবদুল্লা বিন উমর বলেছেন, আল্লাহর নবী বলেছেন যে, তিন জিনিসের মধ্যে অশুভ আছে - নারী, বাড়ি আর ঘোড়া। (সূত্র ২)
সহি বুখারি খণ্ড ৭, হাদিস নম্বর ৩৩:
উসামা বিন যায়েদ বলেছেন, নবী বলেছেন যে, আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর আর কিছু রইল না। (সূত্র ২)
দেখলেন? আরও দেখাচ্ছি। এক সহি হাদিসই যথেষ্ট, তবু এ হাদিস আছে সহি মুসলিম বই ১, হাদিস ১৪২ নম্বরেও। বর্ণনা দিচ্ছি:
সহি বুখারি; খণ্ড ১, হাদিস নম্বর ৩০১:
আবু সাঈদ আল খুদরী বলেছেন:- একদিন নবী (সা) ঈদের নামাজের জন্য মাসাল্লাতে গিয়েছিলেন। সেখানে কিছু নারীর সামনে দিয়ে যাবার সময় তিনি বললেন, “তোমরা সদকা দাও, কেননা আমি দোজখের আগুনে বেশির ভাগ নারীকেই পুড়তে দেখেছি”। তারা বলল: “এর কারণ কী, ইয়া রসুলুল্লাহ?” তিনি বললেন: “তোমরা অভিশাপ দাও এবং তোমাদের স্বামীদের প্রতি তোমরা অকৃতজ্ঞ। ধর্মে আর বুদ্ধিতে তোমাদের চেয়ে খাটো আমি আর কাউকে দেখিনি। একজন বুদ্ধিমান সংযমী পুরুষকে তোমাদের কেউ কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে।” তারা বলল: “ইয়া রসুল্লুল্লাহ! ধর্মে আর বুদ্ধিতে আমরা খাটো কেন?” তিনি বললেন: “দু’জন নারীর সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সমান নয়?” তারা হ্যাঁ-বাচক জবাব দিল। তিনি বললেন: “এটাই হল বুদ্ধির ঘাটতি। এটা কি সত্যি নয় যে, মাসিক-এর সময় নারীরা নামাজ এবং রোজা করতে পারে না?” তারা হ্যাঁ-বাচক জবাব দিল। তিনি বললেন: “এটাই হল ধর্মে ঘাটতি”। (সূত্র ২)
অবাক হচ্ছেন, পাঠক? এ তো সবে শুরু। নারী আর উটের মধ্যে তফাতটাই বা কী?
দেখা যাক, এ ব্যাপারে সুনান আবু দাউদ কী বলছে।
সুনান আবু দাউদ; বই ১১, হাদিস নম্বর ২১৫৫:
আবদুল্লাহ, বিন আম’র বিন আ’স বলছেন: ‘নবী (সা) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ দাস-দাসী কিনলে বা বিয়ে করলে তাকে বলতে হবে, ও আল্লাহ! আমি এর স্বভাব-চরিত্রে ভালো কিছুর জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করি। আর এর চরিত্রের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। কেউ উট কিনলেও তাকে উটের কুজঁ ধরে এ কথা বলতে হবে”’।’ (সূত্র ৪)
মাতৃত্ব হল মানবজীবনের সর্বপ্রধান সম্পদ। এর চেয়ে বড় আশীর্বাদ মানুষ কল্পনাই করতে পারে না। এই মাতৃত্বের জন্যই স্বাভাবিকভাবে মাসিকের আয়োজন করেছে প্রকৃতি। অথচ এই একান্ত স্বাভাবিক ব্যাপারটাকে সমস্ত পুরুষতন্ত্র চিরটা কাল এত নিষ্ঠুরভাবে মেয়েদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে যে, ভাবলে অবাক হতে হয়।
হিন্দু (সনাতন) ধর্মে তো কথাই নেই, ইসলামেও মাসিককে ‘রোগ’ বা ‘নোংরামি’ হিসেবে দেখিয়ে মেয়েদের একেবারে অপবিত্র এবং খুঁতযুক্ত বানিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই সময়টায় তারা যে ‘নোংরা’, তা বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হয়েছে। কোরানের সুরা বাকারা, আয়াত ২২২ (২:২২২) এবং সহি বুখারি খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ১৭২-এ কথা স্পষ্ট লেখা আছে। তাই মুসলমান মেয়েদের ওই অবস্থায় ইসলাম নামাজ-রোজা করতে বা কোরআন পড়তে দেয় না। মাতৃত্বের জন্য মেয়েদের কেন এ রকম কঠিন মূল্য দিতে হবে? মাসিকের অবস্থায় কী এমন তাদের মানসিক ঘাটতি হবে যে, তারা বিরাট জটিল ব্যবসা চালাতে পারবে, বিচারক হয়ে কয়েদীদের জেল দিতে পারবে, খুনীকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবে, কিন্তু উপাসনা-আরাধনা করতে পারবে না? মেয়েদের বিরুদ্ধে এটা একটা হীন চক্রান্ত ছাড়া আর কী?
এহেন নারীকে ইসলাম কি কোনো দেশের রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী হতে দেবে?
পাগল আর কী! তাই কি হয়?
সহি বুখারি; খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ৭০৯
সাহাবী আবু বাক্রা বলছেন, নবী (সা) বলেছেন যে, যে-জাতি নারীর ওপরে নেতৃত্ব দেবে, সে-জাতি কখনো সফলকাম হবে না। (সূত্র ২)
মাঝে মাঝে মনে হয়, মেয়েরা কি এমন অন্যায়-অপরাধ করেছে যে, জীবনের প্রতি পদে তাদের এত অপমান, অবজ্ঞা আর অত্যাচার সহ্য করতে হবে? পৃথিবীর যত দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক-মহাপুরুষ এমনকি নবী-রসুলকে পেটে ধরেনি তারা? মৃত্যুযন্ত্রণা সহ্য করে জন্ম দেয়নি তারা? পৃথিবীর যত খুন-জখম দাঙ্গা-হাঙ্গামা সব তো পুরুষই করেছে। আশ্চর্য! যত শিক্ষিতাই হোক, যত আলোকিত উদারমনাই হোক, যত মেধাবী-বুদ্ধিমতীই হোক, জ্ঞান-বিজ্ঞানে যত প্রাজ্ঞই হোক, মেয়ে হলেই তার আর রক্ষা নেই, সর্বগ্রাসী পুরুষতন্ত্র ইসলামের অন্ধকার কারাগারে তাকে আবদ্ধ করে রাখবেই। আর তার মাথাটা এমন মোহনভাবে ধোলাই করে দেবে যে, সে মেয়ে নিজেই সেই কারাগারে বসে বেহেশতের স্বপ্ন দেখবে, বেরোতেই চাইবে না সেখান থেকে, যেখানে তাদের অপমান করতে করতে একেবারে শয়তান বলা হয়েছে।
অসহ্য! দেখুন:
সহি মুসলিম; বই ৮, হাদিস নম্বর ৩২৪০:
জাবির বলেছেন: আল্লাহ’র নবী (সা) একদিন এক স্ত্রীলোক দেখে তাঁর স্ত্রী জয়নাবের কাছে এলেন, সে তখন একটা চামড়া পাকা করছিল। তিনি তার সাথে সহবাস করলেন। তারপর তিনি তাঁর সাহাবীদের কাছে গিয়ে বললেন, নারী শয়তানের রূপে আসে যায়। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো নারীকে দেখলে নিজের স্ত্রীর কাছে যাবে, তাতে তার মনের অনুভূতি দুর হবে। [হাদিসটি ‘ইসলামে যৌনতা’ পর্বেও আছে—এখানে সুবিধার জন্যে দেয়া হলো—লেখক] (সূত্র ৩)
আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে, ইসলাম পুরুষদের ভেবেছে কী? ইসলাম ধরেই নিয়েছে আমাদের পুরুষদের শিক্ষা-দীক্ষা নৈতিক বোধ বলতে কিছুই নেই, আমরা, পুরুষেরা, নারী দেখামাত্র একেবারে উন্মাদ বামাক্ষ্যাপা হয়ে কাপড়-চোপড় খুলে তার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ব। নারীর সাথে সাথে আমাদের পুরুষদেরই বা এভাবে অপমান করার অধিকার ইসলামকে কে দিল? [এ প্রসঙ্গে আরও জানার জন্য ‘ইসলামে যৌনতা’ পর্ব পড়ে নিন]
ইমাম গাজ্জালীর মত বুলন্দ সুউচ্চ ধর্মনেতা ইসলামের ইতিহাসে বেশী নাই। তিনি যে শুধু ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক তা-ই নয়, বহু বহু মওলানার মতে তাঁর স্থান স্বয়ং নবী (সা) এর পরেই। এ হেন শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের লেখা ‘এহইয়াউ’ বা ‘এহিয়া’ উলুম আল দীন বইতে তাঁর যে উগ্র নারী-বিদ্বেষী চেহারা আছে, তা সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দু’একটা দেখাচ্ছি।
এহিয়া উলুম আল দীন, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৩৬৭:
শয়তান নারীকে বলে: তোমরা আমার সৈন্যদলের অর্ধেক। তোমরা আমার অব্যর্থ তীর। তোমরা আমার বিশ্বস্ত। আমি যা চাই তা তোমাদের মাধ্যমে হাসিল করি। আমার অর্ধেক সৈন্য হল কামনা, বাকি অর্ধেক হল ক্রোধ। (সূত্র ৭)
একই বই; খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ৩৭০-৩৭১ থেকে:
সাইদ ইবনে জুবায়ের বলেছেন, শুধুমাত্র দেখেই দাউদ (সা) এর মনে বাসনার উদ্রেক হয়েছিল। তাই তিনি তাঁর পুত্রকে (সুলায়মান দঃ) বললেন:- হে পুত্র! সিংহ বা কালো-কোবরা সাপের পেছনে হাঁটাও ভাল, তবু কোন নারীর পেছনে হাঁটবে না। নবী (সা) বলেছেন:-“নারীর প্রতি কামনার চেয়ে পুরুষের জন্য বেশী ক্ষতিকর কিছু আমি রেখে যাচ্ছি না”।
একই বই; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৩:
স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর চারটি বিষয় কম থাকতে হবে নতুবা সে তাকে অবজ্ঞা করবে: বয়স,শারীরিক উচ্চতা, ধণ‑সম্পদ, এবং বংশগৌরব। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর চারটি বিষয় বেশী থাকতে হবেঃ- সৌন্দর্য, চরিত্র, আদব-কায়দা, এবং ধর্মে মতি।
কী লজ্জা, কী লজ্জা! মা-বোনদের সামনে আমাদের লজ্জার আর অবধি রইলনা। ওহ! পাঠক! আমাদের মা-বোন কন্যা-স্ত্রীরা যে আমাদের জন্য এত বড় অভিশাপ আমরা তো তা জানতামই না! এখন তাদের নিয়ে কি করা যায় বলুন তো? সবগুলো মেয়েদের ধরে ধরে নিয়ে জেলখানায় পুরে দেব? সে জন্যই বোধ হয় পর্দার নামে আপাদমস্তক ঢাকা বোরখার জেলখানা চালু হয়েছে। পৃথিবীর আর কোন ধর্মে এ উন্মাদনা নেই। তাই বুঝি মোল্লানন্দ কবি বলেছেন:- “মাথা থেকে পা ঢাকা কাপড়ের বস্তায়, ঘুলঘুলি চোখে ভুত চলছে যে রাস্তায়”।
নারীরা এতই নিকৃষ্ট যে তদের উচিৎ হবে স্বামীর দেহ হতে নিঃসৃত পুঁজ চেটে নেওয়া। বিশ্বাস না হবারই কথা। বিশ্বের কোন্ প্রাণী এ ধরণের কাজ করবে? দেখা যাক, ইবন ইসহাকের লিখিত নবীর (সা) জীবনি থেকে।
ইবনে ইসহাক, পৃ ৬৪৪:
...মুয়ায চলে গেলেন ইয়ামানে যেভাবে তাঁকে আদেশ দেয়া হয়েছিল। এক স্ত্রীলোক তাঁর নিকটে গেল এবং জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহ্র রসুলের অনুসারীরা! এক স্বামীর কী অধিকার আছে তার স্ত্রীর উপর?’ তিনি (অর্থাৎ মুয়ায) বললেন, ‘তোমার কপাল পুড়ুক! এক স্ত্রীলোক কক্ষনই তার স্বামীর যে অধিকার আছে তা পরিপূর্ণ করতে পারবে না। তাই তুমি তোমার সর্বাত্ম দিয়ে তোমার স্বামীর অধিকার মিটিয়ে যাবে—যতটুকু সম্ভব তোমার পক্ষে।’ সে (স্ত্রীলোকটি) বলল, ‘আপনি যদি সত্যই আল্লাহ্র রাসুলের (সা) অনুসারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশচয়ই জানবেন একজন স্বামীর কী অধিকার আছে তার স্ত্রীর উপর।’ তিনি বললেন, ‘তুমি যদি দেখ যে তোমার স্বামীর নাক দিয়ে পুঁজ এবং রক্ত ঝরছে এবং তুমি তা যদি সম্পূর্ণ শুষেও নাও তাহলেও তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।’ (সূত্র ১০)
জেনে রাখা ভাল নারীরা হচ্ছে পশু এবং ত্রীতদাসীর পর্য্যায়
যাক, মোল্লানন্দ কবি ছেড়ে আবার ইসলামে নারীর প্রচন্ড মর্যাদার দিকে তাকানো যাক।
সহি মুসলিম; বই ২৬, হাদিস ৫৫২৩:
আবদুল্লা বিন উমর বর্ণনা করছেন:আল্লাহর নবী (সা) বলেছেন, দুর্ভাগ্য যদি কিছুতে থাকে, তবে তা হল বাড়ি, ঘোড়া আর নারী’’। (সূত্র ৩)
শাব্বাশ!
ইসলামী বিশ্বকোষ; (ডিকশনারী অব ইসলাম) থেকে‑পৃষ্ঠা ৬৭৮-৬৭৯:
সমগ্র মানব জাতির জন্য নারীর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছুই আমি রেখে যাচ্ছি না। দুনিয়া এবং নারী থেকে দূরে থাকবে। কারণ নারীর কারণেই ইসরাইলের পুত্ররা প্রথম পাপ করেছিল। (সূত্র ৬)
শাব্বাশ!
সহি মুসলিম, বই ৩৬ হাদিস ৬৬০৩:
উসামা বিন যায়েদ বলেছেন: আল্লাহ’র নবী (সা) বলেছেন, আমার পরে পুরুষের জন্য নারীর কারণে ক্ষতির চেয়ে বেশী ক্ষতিকর আর কিছুর সম্ভাবনা আমি রেখে যাচ্ছি না। (সূত্র ৩)
শাব্বাশ!
বটে! তারপর? আজকাল মেয়েরা মন দিয়ে পড়াশুনা করে অফিসগুলোতে বড় বড় বস হচ্ছে। তাহলে সে সব অফিসে আমরা কি চাকরী করব না? দেখুন ইমাম শাফি’র বক্তব্য, স্বয়ং পয়গম্বর কি বলেছেন।স
শাফী শরিয়া (রিলায়েন্স অফ দি ট্রাভেলার বা উমদাত আল‑সালিক), পৃষ্ঠা ৬৭২, নম্বর p 28. 1:
নবী (সা) বলেছেন: পুরুষরা ধ্বংস হয়ে গেছে যখনি তারা মেয়েদের অনুগত হয়েছে। (সূত্র 8)
মারহাবা, মারহাবা!
ইসলামে আরও একটা অতি চমৎকার খেল আছে, পারিবারিক ব্যাপারে। সেটা হল, স্ত্রী যদি কিছু উপার্জন করে, তাতে তার একচ্ছত্র অধিকার। সে উপার্জন সে নিজের পরিবারে খরচ করতেও পারে, না-ও পারে, স্বামীর অধিকার নেই তার ওপরে। হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই, স্ত্রীর খুবই একটা অধিকার এটা, তাই না? কিন্তু গোপন ব্যাপারটা হল, নিজের পরিবারে বাচ্চা কাচ্চার ওপর খরচ না করে সে স্ত্রী, সে মা সেই পয়সা খরচটা করবে কোথায়? অবশ্যই তার উপার্জন তার পরিবারেই খরচ হবে। তবে কিনা, এই ‘অধিকার’ দিয়ে তাকে কানে কানে বলে দেয়া হল, এ পরিবারে কিন্তু তোমার দায়িত্ব ঐ পর্যন্তই, স্বামীর সমান নয়। কাজেই তোমার অধিকারও ঐ পর্যন্তই, স্বামীর সমান নয়।
যেমন অন্য একটা হাদিসে আছে, হাট-বাজার করে এলে থলিটা পুত্রের হাতে না দিয়ে কন্যার হাতে তুলে দেবে, নবীর (সা) আদেশ। বড়ই মধুর আদেশ, একেবারে বেহেশ্তি আদর মেশানো। কিন্তু এতে করে কানে কানে সেই কন্যাকে বলে দেয়া হল, এবার আলু-পটলগুলো নিয়ে সটান রান্নাঘরে গিয়ে ঢোক।
স্বর্ণালী শৈশবের কথা মনে আছে, যখন আমরা আমাদের বাবা-মায়ের স্নেহে যত্নে আমরা ভাইবোনেরা বড় হচ্ছিলাম? পরিবারের শান্তি-সংহতি নির্ভরই করে পারস্পরিক সন্মানের ও বিশ্বাসের ওপর। কি হত যদি আমাদের বাব আর মা পরস্পরকে সম্মান না করতেন? বিশ্বাস না করতেন? ইসলাম বড়ই বড় গলায় চীৎকার করে, পারিবারিক মূল্যবোধের সে খুবই যত্ন নেয়। অবশ্যই, অবশ্যই, যত্নটা সে বড়ই নেয়। কিন্তু কিভাবে?
খুলে দেখা যাক খোদ সহি মুসলিম হাদিস থেকে, বই ৮ হাদিস নম্বর ৩৪৭১:
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, নবী (সা) বলেছেন, বিবি হাওয়া না হলে স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের প্রতি কখনো অবিশ্বাসের কাজ করত না। অর্থাৎ স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের প্রতি অবিশ্বাসের কাজ করে থাকে। (সূত্র ৩)
চমৎকার সম্মানের কথা।
বিশ্বাস করুন নারীরা হচ্ছে ক্ষতিকর, শয়তান, এবং বক্র
এভাবেই ইসলাম চিরকালের জন্য মুসলমান মেয়েদের কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে। শত পড়াশুনা করলেও, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পন্ডিত হলেও, সহস্র আরাধনা করলেও, সারা জীবন চেষ্টা করলেও মেয়েদের উপায় নেই এ কঠিন লক্ষ্মণরেখা পার হবার, পুরুষের সমান হবার। এবং তা শুধুমাত্র, শুধুমাত্র, এবং শুধুমাত্র মেয়ে হবার কারণেই। সাধারণতঃ সাধারণ লোকেরা তাদের স্ত্রীদের ওপর অত্যাচার করেনা, সেটা তারা ভালো মানুষ বলেই। কিন্তু প্রতি পদে ইসলামের হুকুম মেনে চললে কুরুক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে দুনিয়া অচল হয়ে যেত, মেয়েদের আর্তনাদ-হাহাকারে সমাজ অচল হয়ে যেত।
ইসলামী বিশ্বকোষ থেকেই দেখা যাক এবারে। সংসার সুখের হবার জন্য স্বামীদের কানে ফিস ফিস করে কিছু তোগলকি উপদেশ দেয়া আছে সেখানে। সে অমূল্য উপদেশগুলো মেনে চললে সুখ তো দুরের কথা, বিভিন্ন রকম হুড়হাঙ্গামায় সংসার শিকেয় উঠতে বাধ্য।
এবারে শুনুন ইসলামী বিশ্বকোষ তার ৬৭৫ পৃষ্ঠায় স্বামীদের কি বলছে:
১। কস্মিন কালেও স্ত্রীকে বেশী পিরীত দেখাবে না হে, তা হলেই সে কিন্তু লাই পেয়ে মাথায় উঠে সর্বদিকে বিশৃংখলা করে দেবে। চিত্ত যদি অতি প্রেমে গদগদ হয়ে ওঠেই, তবে অন্ততঃ স্ত্রীর কাছে সেটা চেপে রেখো বাপু!
২। বিষয়-সম্পত্তির পরিমাণ তো স্ত্রীকে বলবেই না, অন্যান্য গোপন কথাও লুকিয়ে রেখো সযত্নে। না হলেই কিন্তু সে তার দুর্বুদ্ধির কারণে সর্বনাশ করে দেবে সবকিছু।
৩। ও হ্যাঁ, তাকে কখনো কোন বাদ্যি-বাজনা করতে দেবে না, আর যেতে দেবে না বাইরেও। পুরুষদের কথা বার্তা তো কিছুতেই শুনতে দেবে না। (সূত্র ৬)
হ্যাঁ, এই হল ইসলামে পতিদেবতা, একেবারে পাতি-দেবতা। আগেই দেখিয়েছি স্বামীকে কোরআন অনুমতি দিয়েছে ‘বেত্তমিজ’ স্ত্রীকে প্রহার করার। কিন্তু এই শক্তিমান পাতিদেবতা নিজেই যদি ব্রক্ষ্মাস্ত্র হাতে হয়ে ওঠেন একেবারে ‘পরশুরামের কঠোর কুঠার’ বা ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, তবে বেচারী স্ত্রী কি করবেন?
উপদেশ আছে সুরা নিসাতে, আয়াত ১২৮ (৪:১২৮)
যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরন কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পরের কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গুনাহ নাই।
মীমাংসা উত্তম।
ঐ সুরার ৩৪ নম্বর আয়াতে স্বামীকে কিন্তু মীমাংসার চেয়ে বৌকে ধরে বেদম পিট্টি দেয়াটাকেই আরো উত্তম করে দেয়া আছে।
হাদিসে আছে আরও বিস্তারিত।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, হাদিস নম্বর ১৩৪:
সুরা নিসা আয়াত ১২৮ পড়ে অয়েশা বর্ণনা করেছেন: এতে সেই স্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে যার স্বামী তাকে রাখতে চায় না, তাকে তালাক দিয়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। সে বলে - অন্য মেয়েকে বিয়ে করো, কিন্তু আমাকে তালাক দিয়ো না, আমার ওপরে খরচও করতে হবে না, আমার সাথে শুতেও হবেনা। (সূত্র ২)
এটাই নাকি হল সেই ‘পরস্পরের মীমাংসা উত্তম’। চমৎকার মীমাংসা-ই বটে।
অধ্যায়‑৩ : ইসলামী বহুগামিতা
আপনি কি জানেন না, পুরুষদের জন্যে বহুগামিতা সম্পূর্ণ ঐশ্বরিক?
ইসলামে চার বিয়ের কথা সবাই জানে। এটা একটা মারাত্মক নারীবিরোধী প্রথা।
সুরা নিসা আয়াত নম্বর তিন (৪:৩) বলছে:
আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের হক্ আদায় করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত।
বিরাট ফাঁকি লুকিয়ে আছে এর ভেতর। মুসলমান পুরুষের জন্য ‘সর্বোচ্চ চার স্ত্রী’ কথাটা কিন্তু ঘোর মিথ্যে। গোপন সত্যটা হল, একসাথে এক সময়ে সর্বোচ্চ চার স্ত্রী। তারপরে যে কোনো স্ত্রীকে বা চারজনকেই এক মুহুর্তে একসাথে তালাক দিয়ে আবার চার মেয়েকে বিয়ে করতে কোনোই অসুবিধে নেই। নবীর (সা) নাতি ইমাম হাসান এটা করেছেনও। তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ছিল আশী থেকে তিন’শ, বিভিন্ন বই অনুযায়ী। সাধারণ মুসলমানেরা এটা করেন না, সেটা অন্য কথা। কারণ সব ধর্মের সাধারণ মানুষেরাই ভাল মানুষ। আশ্চর্য কথা হল, যখন এই আয়াত নাজিল হল, তখন অনেক লোকের চারের বেশি স্ত্রী ছিল। আল্লার নির্দেশ এসে গেছে সর্বোচ্চ চার, এদিকে ঘরে আছে চারের বেশি। কী করা যায় এখন! নবী (সা) কে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন, পছন্দসই চার জন রেখে বাকি বউগুলোকে তালাক দিয়ে দিতে। ব্যস। ইসলামী বিয়ে-আইনের প্রথম বলি হল সেই নাম-না-জানা কাব্যে উপেক্ষিতাদের দল, যাদের কোনোই অপরাধ ছিল না। অথচ তারা এক নিমেষে ঘর হারাল, স্বামী হারাল, আশ্রয় হারাল, সন্তান হারাল।
দেড় হাজার বছর পার হয়ে গেছে, সেই নিরপরাধ হতভাগিনীদের নিঃশব্দ আর্তনাদের জবাব আজও পাওয়া যায়নি। আজও হয়তো সেই ধু ধু মরুভূমির বালুতে কান পাতলে অস্ফুটে শোনা যাবে তাদের চাপা দীর্ঘশ্বাস, ভালো করে খুঁজলে আজও হয়তো বালুতে দেখা যাবে শুকিয়ে যাওয়া ক’ফোঁটা অশ্রুবিন্দু। আর্ত হাহাকারে তারা শোনাতে চাইবে না-বলা সেই করুণ কাহিনী। অথচ কী সহজেই না সমস্যাটার সমাধান হতে পারত!
কেন, সুরা নিসার ২৩ নম্বর আয়াতেই (৪:২৩) দুই বোনের এক স্বামীর সাথে বিয়ে হওয়া বাতিল করা হয়নি? বলা হয়েছে, যেন দুই আপন বোন একই লোককে বিয়ে না করে। এবং পরক্ষণেই বলা হয়েছে: ‘কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে।’’ অর্থাৎ এ পর্যন্ত যাদের সে-রকম বিয়ে হয়েছে, তারা সতীন হয়ে থাকতে পারবে, কিন্তু এর পর থেকে আর ও রকম বিয়ে চলবে না।
এক নতুন বউ ঘরে আনলে অন্য কোনো স্ত্রী তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে পারবে না। স্বামীর এই অধিকার কোনো স্ত্রীই খর্ব করতে পারবে না। এমনকি কোনো স্ত্রী যদি চায় যে, স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিক যদি সে অন্য স্ত্রীকে ঘরে আনে—সেটাও আল্লাহ্র নির্দেশের বিরুদ্ধে যাবে। এখানে স্বামীর স্ত্রীদেরকে পরস্পরের বোন বলা হয়েছে!
দেখা যাক, সহি বুখারিতে কী বলা হয়েছে ইসলামী বহুগামিতা সম্পর্কে।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, বই ৬২, হাদিস নম্বর ৭: সাঈদ বিন জুবায়ের হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: ইবন আব্বাস আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি বিবাহিত?” আমি উত্তর দিলাম, “না।” তিনি বললেন, “বিয়ে করে নাও, কারণ এই উম্মার সবচাইতে উত্তম ব্যক্তির [অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা)] সর্বাধিক স্ত্রী ছিল।” (সূত্র ২)
উপরের হাদিসে নবী (স) যে-উদাহরণ রেখে গেছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
আরও দেখুন:
সুনান দাউদ; খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২১৭১: আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: আল্লাহর রসুল (সা) বলেছেন কোনো স্ত্রী তার বোনকে (অর্থাৎ অন্য স্ত্রীকে) প্ররোচিত করতে পারবে না যে, স্বামী তাকে (বোনকে) তালাক দেয় যাতে করে স্বামী তার শূন্যস্থানে অন্য নারীকে বিবাহ করে নেয়। তার (বর্তমান স্ত্রীর) জন্য যা নির্ধারিত হয়েছে, তাই হবে। (সূত্র ১৯)
স্বামী যে অল্পদিনের মেহমান, কোনো স্ত্রীর উচিত হবে না বহুগামিতার জন্য স্বামীকে বিরক্ত বা উত্যক্ত করা। দেখা যাক এই হাদিস।
বাংলা সুনান ইবন মাজাহ্, খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২০১৪:
আব্দুল ওয়াহ্হাব ইবন যাহ্হাক (র)…মুআয ইবন জাবাল (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: যখন কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতে তার হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকে: ‘ওহে আল্লাহ্ তোমার সর্বনাশ করুন। ওকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার কাছে অল্পদিনের মেহ্মান। অতি সত্বর সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।” (সূত্র ২৫)
না, চারের বেশি বউদের বেলায় তা বলা হয়নি, করা হয়নি। তালাক হয়ে গেছে, তারা কেউ জানে না, নীরবে নিঃশব্দে কতটা কেঁদেছে বিচারের বাণী। হায়রে মানবতার ধর্ম, সাম্যের ধর্ম!
এর পরেও আছে। পরিবারিক মূল্যবোধের ওপর প্রচণ্ড বক্তৃতার পরে স্বামীর অবাধ অফুরন্ত যৌবনের ব্যবস্থা আছে। শুধু একই কুয়োর বাঁধা পানিতে সারাজীবন নাইতে কি ভালো লাগে কারো? পুরুষের খাসলতটাই যে তা নয়। মেয়েমানুষের শরীর যে তার চাই-ই চাই। সে জন্য সে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল মন্থন করবে, হাজারটা আইন বানাবে, হাজারটা আইন ভাঙবে, দরকার হলে ধর্মগ্রন্থের ওপরে পা রেখে দাঁড়াবে। আর তার অনেকটাই সে করবে আল্লার নামেই। হিন্দুধর্মেরও একই অবস্থা ছিল। ইসলামে আল্লার বিধানে মুসলমানদের উত্তপ্ত বিছানার জন্য আছে অফুরন্ত ক্রীতদাসীর ব্যবস্থা, এ বইয়ের ‘ক্রীতদাস’ অধ্যায়ে (ইসলামে যৌনতা পর্বে) দেখুন। শুধু তা-ই নয়, সেই সাথে আরও আছে অগণিত যুদ্ধবন্দিনীর ব্যবস্থা। একের পর এক যুদ্ধ জয় করে পরাজিতদের শত-লক্ষ নারীদের নিয়ে তারা কী নৃশংস অপকর্ম করেছে, ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সেই সব লক্ষ হতভাগিনীর মর্মান্তিক অভিশাপে চির-কলংকিত হয়ে আছে ইসলামের ইতিহাস। অস্বীকার করতে পারবেন কোনো মওলানা?
এর পরেও আমাদের শুনতে হয় ইসলাম মানবতার ধর্ম। পরিহাস আর কাকে বলে!
কখনো ভেবেছেন, মওলানারা চিরকাল জন্মনিয়ন্ত্রনের বিরোধী কেন? একেই তো আমাদের গরীব দেশ, মানুষে মানুষে সয়লাব। আফ্রিকার মুসলমান দেশগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। অন্ন-বস্ত্র-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-চিকিৎসা সবকিছুরই এত টানাটানি। সম্পদের তুলনায় মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে, কিছুদিন পরে মানুষে মানুষ খাবে। কিন্তু তবু জন্মনিয়ন্ত্রন শব্দটা শুনলেই মওলানাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। আল্লাই নাকি মানুষকে খাওয়াবেন। অথচ আমরা ইতিহাসে দেখেছি, ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে কোটি কোটি লোক স্রেফ না খেয়ে মরে গেছে। সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন। আমাদের বাংলার বেয়াল্লিশ-তেতাল্লিশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কথা মনে নেই? আর সেই ছিয়াত্তরের মন্বন্তর? পর পর আট বছর বৃষ্টি হয়নি বাংলায়, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মোট তিন কোটি লোকের এক-তৃতীয়াংশ, এক কোটি লোক মরে গিয়েছিল খেতে না পেয়ে।
অতি সম্প্রতি চারদিক দেখে-শুনে যদিও তাঁরা এ ব্যাপারে তর্জন-গর্জন করাটা বাধ্য হয়েই বাদ দিয়েছেন, কিন্তু চিরটা কাল এটা ছিল তাঁদের একটা কৌশল। কিসের কৌশল? আমরা যারা পশ্চিম দেশগুলোতে থাকি, তারা এটা ভালই জানি। এসব দেশের সরকারগুলোর দয়া-দাক্ষিণ্যে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ‘ছুটির দিনের ইসলামী স্কুল আর মাদ্রাসা’। সেগুলোতে বাচ্চাগুলোর মাথায় এই আসল মতবলবটা একটু একটু করে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। বিশ্বাস হচ্ছে না? পড়ে দেখুন যে কোনো জায়গার খবরের কাগজগুলো, টরন্টো স্টার-এর ২রা ডিসেম্বর, ২০০১ এর সংখ্যা। এই মতলবটা হল দুনিয়া জুড়ে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করা। তা করতে হলে দুনিয়া জুড়ে অন্য সবাইকে সমূলে উচ্ছেদ করে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া উপায় নেই।
কীভাবে সেটা সম্ভব?
হাতে প্রচুর অ্যাটম বোমা থাকলে কাজটা সহজ হত। কিন্তু সেটা যখন ‘শত্রুর’ হাতেই বেশি, তখন ভোটাভুটি-ই হল একমাত্র পথ। আর ভোট মানেই হল জনসংখ্যা। মিলছে এবার হিসেবটা? আসলে এটাই হল জামাত-এ ইসলামী ধরনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য। বুকে হাত দিয়ে বলুক কোনো মওলানা, আমার কথাটা ভুল।
বিবাহের জন্যে বেছে নিন সর্বোৎকৃষ্ট মাল—ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী
জনসংখ্যার চাপে মানুষ মরে যাক না খেয়ে, তবু শরিয়া প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রন বে-ইসলামী, তাই জনসংখ্যা বাড়াতেই হবে। কথাটা কি আমার? মোটেই নয়, কথাটা সহি হাদিসের।
দেখুন।
সুনান আবু দাউদ; বই ১১ হাদিস নম্বর ২০৪৫:
মাকিল ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবীকে (সা) বলল “একটা উচ্চবংশের সুন্দরী মেয়ে আছে, কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিয়ে করতে পারি?” নবী (সা) বললেন,”না।” সে তাঁর কাছে আবার এল। নবী (সা) আবার তাকে নিষেধ করলেন। সে তৃতীয়বার তাঁর কাছে এলে নবী (সা) বললেন: “সেই মেয়েদের বিয়ে কর, যারা প্রেমময়ী এবং উৎপাদনশীল। কারণ আমি তোমাদের দিয়ে সংখ্যায় অন্যদের পরাস্ত করব”। (সূত্র ৪)
এটাই হল আসল ব্যাপার। সবাই মিলে-মিশে শান্তিতে থাকার কথাটা ইসলামের শুধু মুখ-মিষ্টি বুলি, আসলে যত দিক দিয়ে সম্ভব অন্যদের “পরাস্ত” করাটাই দুনিয়াভর বহু মওলানাদের মাথায় সর্বদাই নড়চড়া করছে।
আরও দেখুন।
এহিয়া উলুম আল দীন; খণ্ড ১, পৃ ২২৮:
নবী (সা) বলেছেন, উর্বর এবং বাধ্য মেয়েদের বিয়ে কর। যদি সে অবিবাহিতা হয় এবং অনান্য অবস্থা জানা না থাকে, তবে তার স্বাস্থ্য এবং যৌবন খেয়াল করবে, যাতে সে উর্বর হয়। (সূত্র ৭)
ইসলামে ‘নারী’ কথাটার মানে কি? উপরের হাদিসগুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে, তারা হচ্ছে বাচ্চা বানানোর যন্ত্র বা মাল মাত্র। সম্মান, অধিকার, মর্যাদা সমস্ত কিছুই ওই একটা না-বলা কথায় বন্দী।
এটাই স্পষ্ট হয়েছে ইমাম গাজ্জালীর বইতে, এহিয়া উলুম আল দীন, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা ২২৬- ২২৮-এ। দেখুন, কাকে বিয়ে করতে হবে, সে-ব্যাপারে কী রকম উদ্ভট পরামর্শ দেয়া আছে:
তাকে অসুন্দরী হলে চলবে না, হতে হবে সুন্দরী। তার স্বভাবটাও হতে হবে সুন্দর। এবং আরও: নবী বলেছেন: সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী হল সে, যার দিকে তাকালে স্বামী তৃপ্ত হয়, স্বামীর যে বাধ্য, এবং স্বামীর অবর্তমানে যে নিজের এবং তার সম্পদ রক্ষা করে। যে সব মেয়েকে বিয়ে করা যাবে না, তারা হল, বিবাহিতা, ধর্মত্যাগিনী, নাস্তিক, নারীবাদী, স্বাধীনচেতা, অগ্নিপূজক, মূর্তিপূজক, অশ্লীল যৌনাচারে অভিযুক্তা, তা সে প্রমাণিত হোক বা না-ই হোক, এবং এ ছাড়া কোরানে যাদের নিষেধ করা হয়েছে আত্মীয়তার কারণে।
আরও শুনবেন?
ওই একই পৃষ্ঠায়:
নবী বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হল সে-ই, যার চেহারা সুন্দর আর বিয়েতে স্ত্রীধন কম। অর্থাৎ যে কিনা দামে সস্তা।
আরও শুনুন:
নবী বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী হল সে, যার দিকে তাকালে স্বামী তৃপ্ত হয়, স্বামীর যে বাধ্য, এবং স্বামীর অবর্তমানে যে নিজের এবং তার সম্পদ রক্ষা করে।
বটেই তো, বটেই তো! সুন্দর মুখের তো জয় সর্বকালে সর্বত্র, এমনকি ইসলামেও। আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, মওলানা ইমামেরা কি একবারও ভেবে দেখেননি যে, সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে এভাবে কথা বললে অসুন্দরীদের অপমান করা হয়? অসুন্দর কিংবা কম সুন্দর মেয়েদের বানালো কে? চেহারার সৌন্দর্য কি এতই গুরুত্বপুর্ণ?
অসুন্দরী হওয়া কি ইসলামে পাপ? এসব কথা ধর্মের বইতে কেন, সেটাও প্রশ্ন। তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হল: দুনিয়ার সব পুরুষ কি উত্তমকুমার (ভারতীয় বাঙালি ভীষণ জনপ্রিয় চিত্রতারকা, এখন প্রয়াত) আর দেবানন্দ (এক কালে হিন্দু ছায়াছবির মহানায়ক)? তাহলে অসুন্দর পুরুষদের কী হবে?
সেটাও বলেছেন ইমাম গাজ্জালী, একই বইতে, পৃষ্ঠা ২৩৫:
আমি তাকে (এক মেয়েকে) জিজ্ঞাসা করলাম, এমন একটা লোককে (অসুন্দর লোককে) তুমি বিয়ে করলে কেন? সে বলল: ‘চুপ কর, বাজে কথা বলো না! স্রষ্টার কাছে সে হয়ত সর্বশ্রেষ্ঠ, তাই তার জন্য আমি হয়ত স্রষ্টার পুরস্কার। আর আমি হয়ত স্রষ্টার কাছে সর্বনিকৃষ্ট, তাই সে আমার জন্য স্রষ্টার শাস্তি।’
দেখুন, মেয়েদের কী রকম মাথা খাওয়া হয়েছে? এরই নাম ইসলামী ইমান! এখনও অনেক মেয়ে আছেন, যাঁরা ইসলামে মেয়েদের অত্যাচারের সাংঘাতিক সমর্থক। ওটাই নাকি তাঁদের জন্য ভালো।
আশ্চর্য! আরও শুনবেন?
ঐ বই। খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২২৯:
জাবের যখন এক পূর্ব-বিবাহিতাকে বিয়ে করল, তখন নবী (সা) বললেন: “কোনো কুমারীকে বিয়ে করলে আরও ভালো হত, কারণ তাহলে তোমরা পরস্পরের সাথে আরও উপভোগ করতে পারতে।”
ওটাই কথা, উপভোগই হল ইসলামে নারীর সর্বপ্রধান পরিচয়। বিদ্যাসাগর মশাই এত যে চেষ্টা-চরিত্র করে বিধবা-বিয়ের আইন চালু করলেন, বিধবা হতভাগিনীগুলো তাদের ছিনিয়ে নেয়া মানবাধিকার ফিরে পেল, এই ইসলামী কথা শুনলে তিনি কী ভির্মিই না খাবেন!
ইসলামে নারীরা যে মালামাল ছাড়া আর কিছু নয়, তার আরও উদাহরণ নিম্নের হাদিসে দেখুন। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, এক স্বামী যার দুই স্ত্রী বা মাল ছিল, সে তার অতিথিকে তার এক স্ত্রীকে দান‑খয়রাত করতে কোন কুণ্ঠা করছে না।
বাংলা বুখারি শরীফ; খণ্ড ৪, হাদিস নম্বর ১৯২০:
আবদুল আযীয ইব্ন আবদুল্লাহ্ (র.)…আবদুর রাহমান ইব্ন আওফ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনায় আসি, তখন রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আমার এবং সা’দ ইব্ন রাবী’ (রা.) এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দেন। পরে সা’দ ইবন রাবী’ বললেন, আমি আনসারদের মাঝে অধিক ধন‑সম্পত্তির অধিকারী। আমার অর্ধেক সম্পত্তি তোমাকে ভাগ করে দিচ্ছি এবং আমার উভয় স্ত্রীকে দেখে যাকে তোমার পছন্দ হয়, বল, আমি তাকে তোমার জন্য পরিত্যাগ করব। যখন সে (ইদ্দত পূর্ণ করবে) তখন তুমি তাকে বিবাহ করে নেবে। আবদুর রাহমান (রা.) বললেন, এ সবে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং (আপনি বলুন) ব্যবসা‑বাণিজ্য করার মত কোনো বাজার আছে কি? তিনি বললেন, বানু কায়নুকার বাজার আছে। পরের দিন আবদুর রাহমান (রা.) সে বাজারে গিয়ে পনীর ও ঘি (খরিদ করে) নিয়ে এলেন। এরপর ক্রমাগত যাওয়া‑আসা করতে থাকেন। কিছুকাল পরে আবদুর রাহমান (রা.)‑এর কাপড়ে বিয়ের মেহেদি দেখা গেল। এতে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে? তিনি বললেন, জনৈকা আনসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। কী পরিমাণ মাহর দিয়েছ? আবদুর রাহমান (রা.) বললেন, খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম (সা.) তাঁকে বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর। (সূত্র ১৭)
অধ্যায়‑৪ : ইসলামী দেনমোহর
ইসলামী দেনমোহর (মোহরানা) কী জন্যে?
দেনমোহর ছাড়া আইনত ইসলামী বিয়ে হতে পারে না। এটা হল কিছু টাকা বা সম্পত্তি যা বর কনেকে দেবে।
কোরানে আছে,
সুরা নিসা আয়াত নম্বর ৪ (৪:৪)-এ:
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশী মনে।
ভালো কথা! কিন্তু মোহরটা আসলে কী? এটা কি দান? মোটেই নয়। উপহার? তৌবা তৌবা! না, এটা আসলে মূল্যশোধ ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। কিসের মূল্য? নারীর শরীরের মূল্য। শুধু শরীরের মূল্যই নয়, একেবারে শরীরের গোপন অঙ্গের মূল্য। শুনতে খারাপ লাগছে? মা-বোন নিয়ে কথা, খারাপ লাগারই কথা। কথাটা আমি-আপনি বললে সবাই দূর-দূর করবে, পাত্তাই দেবে না। কিন্তু সেই একই কথা যদি ইসলামী আইনের বিশ্ববিখ্যাত লেখক মওলানা আবদুর রহমান ডোই তাঁর ‘শরিয়া দি ইসলামিক ল’ বইতে ১৬২ পৃষ্ঠায় স্পষ্টই বলেন, তবে? পাঠক, দয়া করে বইটা খুলে দেখুন, মওলানা সাহেবের মতে, মোহর অবশ্যই মূল্যশোধ ছাড়া আর কিছু নয়। কিসের মূল্যশোধ, মওলানা সাহেব? মুখ ফুটে বলেন না কেন কথাটা? কিঞ্চিৎ অসুবিধে লাগে? আচ্ছা, আপনি না বলুন, ওদিকে সহি বুখারি ঠিকই হাটে হাঁড়ি ভেঙে সব গোমর ফাঁস করে দিয়েছে। কেতাবে লেখা আছে বলে বাধ্য হয়েই হোক, আর যে কোনো কারণেই হোক, কোনো মওলানা বেকায়দা অস্বস্তিকর কথা বললেই তার কথাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করাটা আজকাল মুসলমানদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই অনুবাদক আর আবুল কাশেমের মত গঠনমূলক সমালোচকের দল তো বাদই, ডোই সাহেবও বাদ দেয়া যাক। কিন্তু সহি বুখারি তো বাদ দেবার কোনো উপায়ই নেই। ওগুলো তো ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ!
দেখুন।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, হাদিস নম্বর ৮১:
উকবার বর্ণনামতে নবী (সা) বলেছেন: (বিয়ের) যে সব বিধানের মাধ্যমে তোমাদের অধিকার দেয়া হয়েছে (নারীদের) গোপন অঙ্গ উপভোগ করবার, সেগুলো মেনে চলতেই হবে। (সূত্র ২)
ব্যস্। গোপন অঙ্গও বলা হল, উপভোগও বলা হল, দাম দেবার কথাও বলা হল। আর তা কিন্তু বলা হল শুধু পুরুষদেরকেই, নারীদের নয়। আর কী বাকী থাকল তাহলে বুঝতে? কাজেই ‘নারীর আর্থিক নিরাপত্তার’ বক্তৃতা যত লম্বা গলাতেই যত চিৎকার করেই বলা হোক না কেন, মূল্যটা কেন যে শুধু Anchorপুরুষকেই শোধ করতে হচ্ছে এবং কোন বস্তুর জন্য শোধ করতে হচ্ছে, তা এখন গাধাও বুঝবে।
ইসলামী বিশ্বকোষের ৯১ পৃষ্ঠাতেও কথাটা আছে।
দেখুন আরও একটি হাদিস:
সুনান সবু দাউদ; বই ১১, হাদিস নম্বর ২১২৬:
বাসরাহ্ নামে এক আনসারি বর্ণনা করলেন:
আমি পর্দায় আবৃত থাকা এক কুমারীকে বিবাহ করলাম। আমি যখন তার নিকটে আসলাম, তখন তাকে দেখলাম গর্ভবতী। (আমি ব্যাপারাটা নবীকে জানালাম।) নবী (সাঃ) বললেন: ‘মেয়েটি মোহরানা পাবে। কেননা তুমি যখন তাকে মোহরানা দিলে, তখন তার যোনি তোমার জন্য আইনসিদ্ধ হয়ে গেল। শিশুটি তোমার ক্রীতদাস হবে এবং শিশুর জন্মের পর মেয়েটিকে প্রহার করবে (এই মত ছিল হাসানের মত)।‘ ইবনে আবুস সারী বলেছেন: ‘তোমার লোকেরা তাকে প্রহার করবে—খুব কঠোরভাবে।‘ (সূত্র ৪)
এবং এই হাদিস।
সুনান আবু দাউদ; বই ১১ হাদিস ২১২১
মোহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে সওবান নবীর (সা) এক সাহাবি থেকে বর্ণনা করলেন: আলী নবীর (সা) কন্যা ফাতেমাকে বিবাহ করে তাঁর সাথে সহবাস করতে চাইলেন। আল্লাহ্র নবী (সা) আলীকে নিষেধ করলেন তাঁর কন্যার সাথে সহবাস করতে, যতক্ষণ না আলী ফাতেমাকে কিছু দিয়ে দেন। আলী বলেলেন: ‘আমার কাছে কিছুই নেই’। আল্লাহ্র রসুল (সা) বললেন: ‘তোমার যুদ্ধের পোশাক তাকে দিয়ে দও।‘ আলী তাই করলেন এবং ফাতেমার সাথে সহবাস করলেন। (সূত্র ৪)
যাহোক, এখন দেখা যাক নারীর ‘গোপন অঙ্গ’-কে ‘উপভোগ’-এর যে-মালিকানা, তার মূল্য কত হতে পারে। নারীর জন্য তা যতই অমূল্য সম্পদ হোক, শরীরটা হোক তার নিজেরই, কিন্তু তার দাম ধরবার বেলায় নারীকে কি জিজ্ঞাসা করা হয়েছে? পাগল! ‘বিক্রেতা’ নারী, দাম ধরবার মালিক কিন্তু ক্রেতা, অর্থাৎ পুরুষ! ক্রেতা ইচ্ছে করলেই সে বাজারে প্রচুর ‘মুল্যহ্রাস’ও করে ফেলতে পারে। করে ফেলেছেও। কী চমৎকার উদ্ভট বাজার, তাই না? মুল্যহ্রাসের উদাহরণ চান? নারী রাজি হলে ব্যাপারটা একেবারে মুফত, ফ্রী, পয়সা-কড়ি না হলেও চলবে। লক্ষ লক্ষ গরীব হতভাগ্য বাপ-মায়ের হতভাগিনী মেয়ে রাজি না হয়ে যাবে কোথায়? অদৃশ্য অর্থনৈতিক দড়ির শৃঙ্খল পরানো আছে না তাদের গলায়? বাপ-বাপ বলে রাজি হবে তারা।
আবার খুলে দেখুন মওলানা ডোই-এর ইসলামী আইনের বই, পৃষ্ঠা ১৬৩ আর ১৬৪, কোরআন থেকে পুরুষ দু’চারটা আরবি উচ্চারণ করলেই মূল্যশোধ হয়ে গেল। কিংবা একজোড়া জুতো হলেও চলবে। নতুন না পুরোন জুতো, তা অবশ্য বলা হয়নি। আমরা ভালো করেই জানি, আমাদের স্ত্রীরা কত অমূল্য, কত স্বর্গীয়। তাদের মূল্য শুধুমাত্র একান্ত আবেগ দিয়ে, পরম ভালোবাসা দিয়ে এবং চরম সহানুভূতি দিয়েই শোধ দিতে হবে। তাকে এত অবমাননা করবার, এত সস্তা করার অধিকার ইসলামকে কে দিল?
দেখুন, এই হাদিসে বলা হয়েছে যে ‘কিছু’ একটা দিয়ে একটি মেয়েকে বিবাহ [সত্যি অর্থে সহবাস] করা যাবে। এই ‘কিছু’ ‘কিছু নাও’ হতে পারে।
সুনান আবু দাউদ খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২১২৩: আয়েশা বর্ণিত:
তিনি বললেন, আল্লাহর রসুল (সা) আমাকে আদেশ দিলেন এক মেয়েকে তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দিতে—তাকে (মেয়েকে) কোনো কিছু দেবার আগেই [অর্থাৎ কোনো দেনমোহর না দিয়েই] (সূত্র ১৯)
পাদটীকা নম্বর ১৪৪৮‑এ ব্যাপারটাকে পরিষ্কার করেছেন সুনান আবু দাউদের ইংরেজি অনুবাদক অধ্যাপক আহমদ হাসান। তিনি লিখেছেন: এই থেকে দেখা যাচ্ছে যে, সহবাসের আগেই কোনো কিছু উপহার [অনেক ইসলামী পণ্ডিতই মোহরানাকে উপহার বলে থাকেন—লেখক] দেবার দরকার নাই।
এ ছাড়াও নবী (সা) নিজেই বলেছেন যে, বেশি মোহরানা দেবে না।
দেখুন এই সব হাদিস।
বাংলা সুনান আবু দাউদ; খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ২১০১: আবু সালামা হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন; আমি আয়েশা (রা)‑কে নবী করীম (সা)‑এর স্ত্রীদের মাহর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এর পরিমাণ হ’ল বারো উকিয়া এবং এক নশ। আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘নশ’ কী? তিনি বলেন, এর পরিমাণ হল অর্ধ‑উকিয়া (পাদটীকা ১)। (সূত্র ১৯)
(পাদটিকা ১: এক উকিয়ার পরিমাণ হল চল্লিশ দিরহাম। কাজেই বারো উকিয়া এক নশের সর্বমোট পরিমান হল: ৪০X১২+২০ = ৫০০ শত দিরহাম)
নবী আরও বলেছেন মোহরানা একটি লৌহের আংটিও হতে পারে।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, বই ৬২, হাদিস নম্বর ৮০: সাহল ইবন সা’দ হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: নবী এক ব্যক্তিকে বললেন, “একটি লোহার আংটি (মোহরানা হিসেবে) দিয়েও বিবাহ করে নেবে। (সূত্র ২)
মোহরানা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
বাংলা সুনান আবু দাউদ; খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ২১০২: আবু আল‑আজফা আস‑সালামী হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন, উমার (রা) খুতবা প্রদানের সময় বলেন, তোমরা (স্ত্রীদের) মাহর নির্ধারণের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি তা দুনিয়াতে সম্মানের বস্তু হত অথবা আল্লাহর নিকট তাকওয়ার বস্তু হত, তবে তা পাওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি হতেন নবী করীম (সা)। রাসুলুল্লাহ্ (সা) তাঁর স্ত্রীদের এবং তাঁর কোনো কন্যার জন্য বারো উকীয়ার অধিক পরিমাণ মাহর ধার্য করেননি। (সূত্র ২৬)
পাঠক! এখানেই শেষ নয়, এ তো সবে শুরু। এর পরে আছে স্ত্রীকে শত-সহস্র হাতে জড়িয়ে ধরা। আবেগে নয়, ভালোবাসায় নয়, মানবতায় তো নয়ই। জড়িয়ে ধরা শৃঙ্খলে শৃঙ্খলে, আদেশে নির্দেশে, অজস্র তর্জনী-সংকেতে, ইহকাল পরকালের শাস্তিতে শাস্তিতে। ক্ষমাহীন স্পর্ধায় দলিত-মথিত করা তার চলন-বলন, আচার-বিচার, মন-মানস, ব্যবহার-ব্যক্তিত্ব, ধ্যান-ধারণা, জীবন-মরণ।
দেখুন।
১। সহি মুসলিম; বই ৮ হাদিস নম্বর ৩৩৬৬:
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, নবী দঃ) বলেছেন, যে-স্ত্রী স্বামীর বিছানা থেকে অন্যত্র রাত্রি যাপন করে, ফেরেশতারা তাকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে। (সূত্র ৩)
২। সহি মুসলিম; বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৩৬৭:
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, নবী দঃ) বলেছেন: যাঁর হাতে আমার জীবন (আল্লাহ) তাঁর নামে বলছি, যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে, আর সে স্ত্রী সাড়া না দেয়, তবে সে স্বামী খুশি না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। (সূত্র ৩)
৩। ইমাম গাজ্জালী; বই এহিয়া উলুম আল দীন, খণ্ড ১, পৃ ২৩৫:
নিজের সমস্ত আত্মীয়, এমনকি নিজের থেকেও স্বামীকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। যখনই স্বামীর ইচ্ছে হবে তখনই সে যাতে স্ত্রীকে উপভোগ করতে পারে, সে জন্য স্ত্রী নিজেকে সর্বদা পরিস্কার এবং তৈরি রাখবে। (সূত্র ৭)
৪। ইমাম শাফি শরিয়া আইন (উমদাত আল সালিক) থেকে, পৃষ্ঠা ৫২৫ আইন নম্বর m 5. 1:
স্বামীর যৌন-আহ্বানে স্ত্রীকে অনতিবিলম্বে সাড়া দিতে হবে যখনই সে ডাকবে, যদি শারীরিকভাবে সে স্ত্রী সক্ষম হয়। স্বামীর আহ্বানকে স্ত্রী তিনদিনের বেশি দেরি করাতে পারবে না। (সূত্র ৮)
৫। শরিয়া আইন থেকে, পৃষ্ঠা ৫২৬ আইন নম্বর m-5. 6
মিলনের জন্য শরীর পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে স্ত্রীকে চাপ দেবার অধিকার স্বামীর আছে’’।
৬। শরিয়া আইন থেকে। পৃষ্ঠা ৯৪ আইন নম্বর e 13. 5:
স্ত্রী যদি বলে তার মাসিক হয়েছে আর স্বামী যদি তা বিশ্বাস না করে, তাহলে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য আইনত সিদ্ধ।
মানেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না বটে, কিন্তু ওই কথাগুলোই লেখা আছে বইতে।
৭। শরিয়া আইন ত্থেকে, পৃষ্ঠা ৫৩৮ আইন নম্বর m-10-4:
নবী (সা) বলেছেন, আল্লাহ এবং কেয়ামতে যে-স্ত্রী বিশ্বাস করে, সে স্বামীর অনিচ্ছায় কাউকে বাসায় ঢুকতে দিতে বা বাসার বাইরে যেতে পারবে না।’’
কেন? বাসার বাইরে যেতে পারবে না কেন? স্ত্রী কি গরু-ছাগল, না গাধা? যে-স্ত্রী সারা জীবনের সাথী, তাকে বিশ্বাসও করা যাবে না, স্বামীর উত্তেজনার সময়? খুলে খুলে দেখতে হবে তার শরীর? উহ!! সহবাস, সহবাস আর সহবাস! মিলন, মিলন আর মিলন! শরীর, শরীর আর শরীর! যৌবন, যৌবন আর যৌবন! বেহেশতে হুরী, হুরী, আর হুরীর শরীরের বর্ণনা আর যৌন-প্রলোভন! আইন, আইন আর আইন! চাপ, চাপ আর চাপ! বাঁধন, বাঁধন আর বাঁধন! আইনের-বিধানের এই দম বন্ধ করা বজ্র-আঁটুনিই হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলামের স্বখাত-সলিল, হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকাণ্ড একটা ফস্কা গেরো। আজ যে পৃথিবীর বেশির ভাগ মুসলমান হয়ে গেছেন ‘নন-প্র্যাকটিসিং’, অর্থাৎ নামাজ-রোজা-হজ্ব-জাকাত না করা মুসলমান, তার প্রধান কারণটাই এটা। পৃথিবীতে আর কোনো ধর্ম উঠতে বসতে প্রতিটি দিন মানুষের এত বেশি সময় নেয় না, দশদিক দিয়ে অক্টোপাশের মত এত চেপে ধরে না। ধর্মের নামে অত্যাচার-অনাচার ছাড়াও উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, খেতে-পরতে, ব্যবহারে-ব্যক্তিতে, ধ্যানে-ধারণায়, হাঁচ্চি-কাশিতে, ঘরের বাইরে এমনকি বাথরুমে পর্যন্ত যেতে আসতে ইসলামের কিছু না কিছু বিধান আছেই। তা হলে আর মগজ দিয়ে করবটা কী? মানুষ কি প্রোগ্রাম করা রবোট নাকি? এ কথাই বলেছিলেন কাজী ওদুদ আর আবুল হুসেন, সেই উনিশ’শো তিরিশ-চল্লিশ সালেই, ‘আদেশের নিগ্রহ’ ইত্যাদি লিখে। এবং এর ফলে মহা ঝামেলায় পড়েছিলেন মওলানাদের হাতে।
“এভাবে চললে বাংলার মুসলমানের সর্বনাশ হয়ে যাবে, ধর্ম বলছে: ‘চোখ বুঁজে মেনে চল, দর্শন বলছে চোখ খুলে চেয়ে দেখ’,- বলে গেছেন আবুল হুসেন সেই আশি বছর আগেই। কেউ কথা শোনেনি, সর্বনাশটা ঘটেই যাচ্ছে প্রায়।
তাহলে আমরা দেখলাম, মুখে ইসলাম যা-ই বলুক, আসলে যৌবনের কামুক উন্মাদনা এবং বাচ্চা বানানোর যন্ত্র হল স্ত্রীর অন্য সবচেয়ে বড় পরিচয়। ইসলাম তো ধরেই নিয়েছে যে, স্ত্রীরা ‘তোমাদের পয়সা খরচ করে’ এবং চিরকাল করেই চলবে। তারা কোনোদিনই নিজেরা উপার্জন করবে না। কাজেই স্বামীর কর্তব্য হল স্ত্রীর খরচ চালানো।
ভালো! তা সে খরচটা কত? সেটাও আমার-আপনার বুদ্ধি-বিবেকের ওপর, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসার সম্পর্কের ওপর ছেড়ে দিতে ভরসা পায়নি ইসলাম, খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে।
ভেবেই পাই না ইসলাম আর কতোকাল মানুষকে বাচ্চা ছেলের মত আঙুল ধরে ধরে হাঁটানো স্পর্ধা দেখাবে। পাহাড়ের গুহা থেকে উঠে এসে মানুষ এখন চাঁদের পাথর কুড়িয়ে আনছে, তার কি কোনো সম্মান নেই? এই যে মানুষকে যুগ যুগ ধরে এত প্রচণ্ড পরিশ্রম করে, রাতদিন নাওয়া-খাওয়া-ঘুম হারাম করে এত গবেষণা করে নানা রকম রোগের ওষুধ বানাতে হল, তখন ইসলাম কোথায় ছিল? হাসপাতালের অসংখ্য রকম মেশিনের অকল্পনীয় সূক্ষ্ম কর্মকাণ্ড দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। একটা জাহাজ বা এরোপ্লেনেই বা কত শত কারিগরী! সুপারসনিক প্লেন, আকাশছোঁয়া বিল্ডিং বা টাওয়ার বা সেতু দেখলে, মহাশূন্যগামী রকেট বা সাগরতলের গবেষণার কথা ভাবলে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনায় মানুষ হিসেবে বুক গর্বে ফুলে ওঠে। সেই মানুষকে বলে দিতে হবে, কার কত খরচ? আইন বানিয়ে লিখে দিতে হবে, চুরি-ডাকাতির শাস্তি কী? আশ্চর্য!
এই ব্যাপারে আমরা আরও পড়ব পরবর্তী অনুচ্ছেদে এবং ‘ইসলামে যৌনতা’ পর্বে।
এবার আসি খরপোষের কথায়। খরপোষ হল স্বামী তালাকের পরে তার স্ত্রীকে যে-ভরণপোষণ দেবে সেটা। এ ভারটা স্বামীকে বইতেই হবে। ভালো! কিন্তু ভালোটা ঐ পর্যন্তই। আসলে এ ব্যাপারে ইসলামের শরিয়া মেনে চললে মানবতা জবাই হতে বাধ্য। বিশ্বাস হচ্ছে না? হবে। হতেই হবে। এর ভেতরে যে কী সাংঘাতিক চালাকি আর নিষ্ঠুরতা আছে, তা-ই আমরা দেখব এবার।
সেই খরচে যাবার আগে একটু কোরআন ঘেঁটে দেখা যাক, স্বামী তার স্ত্রীকে কী কী দিতে বাধ্য থাকবে। এটা বাধ্যগত, কেননা স্বামী মোহরানা দিয়ে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ উপভোগ করেছে—এখন সেই স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার আগে তার হাতে কিছু দিয়ে দেয়া।
বাংলা কোরআন, পৃষ্ঠা ৮৬৭, তফসির:
স্ত্রীর যে প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর যিম্মায় ওয়াজিব (বাধ্য), তা চারটি বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ: আহার, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান। স্বামী এর বেশি কিছু স্ত্রীকে দিলে অথবা ব্যয় করলে তা হবে অনুগ্রহ, অপরিহার্য নয়।’’
বোঝা গেল ব্যাপারটা? শিক্ষা নয়, চিকিৎসা নয়, শুধু আহার, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান। তা-ও ভালোবেসে দেয়া-নেয়া নয়, শুধু বাধ্য হয়ে দেয়া, অথবা অনুগ্রহ করে দেয়া। এই কি স্বামী-স্ত্রীর অনুপম ভালোবাসার বেহেশ্তি সম্পর্ক হল, না মস্ত একটা ঘোড়ার ডিম হল, বলুন আপনারা?
যাক, দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর লাভ নেই। এবারে স্ত্রীর ওপরে খরচ দেখা যাক, সে খরচটা কতো? বলে গেছেন ইমাম শাফি-ই তাঁর বিশাল শরিয়া আইন (উমদাত আল সালিক) বইতে। আসুন, এই সব আমরা এখন তন্ন তন্ন করে দেখি।
অধ্যায়-৫ : ইসলামী নারীদের জীবিকা
স্ত্রীর ভরণপোষণ
এই ব্যাপারে শরিয়া আইন একেবারে জলবৎতরলং। দেখুন:
শরিয়া আইন m 11. 2 (ঐ বই পৃঃ ৫৪২)
স্বামীকে স্ত্রীর দৈনিক ভরণপোষণের ব্যয় বহন করতে হবে। স্বামী সচ্ছল হলে তাকে প্রতিদিন এক লিটার শস্য দিতে হবে যা কিনা ঐ অঞ্চলের প্রধান খাদ্য। (O. এখানে প্রধান খাদ্য বলতে বোঝান হচ্ছে যা ঐ অঞ্চলের লোকেরা সর্বদা খায়, এমনকি তা যদি শক্ত, সাদা পনিরও হয়। স্ত্রী যদি তা না গ্রহণ করে অন্য কিছু খেতে চায়, তবে স্বামী তা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে না। স্বামী যদি প্রধান খাদ্য ছাড়াও স্ত্রীকে অন্য কিছু খেতে দেয়, তা স্ত্রী গ্রহণ না করলেও করতে পারে।) অসচ্ছল স্বামী প্রতিদিন তার স্ত্রীকে ০.৫১ লিটার খাদ্যশস্য দেবে। আর যদি স্বামীর সামর্থ্য এর মাঝামাঝি হয়, তবে স্বামী তার স্ত্রীকে প্রতিদিন ০.৭৭ লিটার খাদ্যশস্য দিতে বাধ্য থাকবে।
এছাড়াও স্বামীকে শস্য পেষণের খরচ দিতে হবে, যাতে ঐ শস্য আটা করে রুটি বানানো হয়। (O. স্ত্রী এ কাজ নিজে করলেও স্বামীকে খরচটা দিতে হবে স্ত্রীকে।) রুটি খাওয়ার জন্য অন্য সে সব সামগ্রী দরকার, যেমন, মাংস, তেল, লবণ খেজুর, সির্কা, পনির ইত্যাদি। এসবের পরিমাণ নির্ভর করবে মরশুমের ওপর। ফলের মরশুমে তাই হবে প্রধান। ঐ শহরের লোকেরা যে পরিমাণ মাংস খায়, স্ত্রীকেও সেই পরিমাণ মাংস দিতে হবে।
স্বামী স্ত্রী উভয়ে রাজি থাকলে স্বামী-স্ত্রীর দৈনিক খোরপোষের খরচ টাকায় অথবা কাপড়ে দিতে পারবে। (সূত্র ৮)
শরিয়া আইন 11. 3 (ঐ বই, পৃঃ ৫৪৩) স্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি বস্তু সমূহ:
স্ত্রী তার কেশবিন্যাসের জন্য তেল, শ্যাম্পু, সাবান, চিরুনি পাবে। (যা সেই সহরে সচরাচর ব্যবহার হয়।) স্বামীকে তার স্ত্রীর বগলের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য যে সুগন্ধির প্রয়োজন, তা দিতে হবে। যৌনসঙ্গমের পূর্বে ও পরে স্ত্রীর গোসলের যে পানি দরকার, তা স্বামীকে দিতে হবে। সন্তান প্রসবের পরে রক্ত ধৌত করার জন্য যে পানির প্রয়োজন, তাও স্বামীকে দিতে হবে। এই দু’টি কারণ ছাড়া স্বামী তার স্ত্রীকে সাধারণ গোসল অথবা ধৌতের জন্যে যে পানির প্রয়োজন, তার খরচ দিতে বাধ্য থাকবে না। (সূত্র ৮)
শরিয়া আইন m 11. 5 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৪) কাপড়চোপড়ের খরচ:
স্ত্রী যে অঞ্চলে থাকবে, ঐ অঞ্চলের যা প্রধান, পোশাক স্ত্রী তা পাবে। (O. পোশাক নির্ভর করবে স্ত্রী লম্বা না বেঁটে, খর্ব না স্থূল এবং মরশুম গ্রীষ্ম না শীত কাল।) গ্রীষ্ম কালে স্বামী বাধ্য থাকবে স্ত্রীকে মাথা ঢাকার কাপড় দিতে। এছাড়া গায়ের লম্বা জামা, অন্তর্বাস, জুতা ও একটা গায়ের চাদর দিতে, কেননা স্ত্রীকে হয়ত বাইরে যেতে হতে পারে। শীতের মরশুমে ঐ একই পোশাক দিতে হবে এবং অতিরিক্ত হিসেবে একটা লেপের মত সূতি বস্ত্রও দিতে হবে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য। শীতের সময় প্রয়োজন পড়লে গরম করার তেল অথবা লাকড়ি যা দরকার, তাও দিতে হবে। এ ছাড়াও সামর্থ্য মত স্বামীকে দিতে হবে কম্বল, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি। (O. খাওয়াদাওয়া ও পান করার জন্য যেসব সামগ্রী দরকার, তাও স্ত্রীকে দেওয়া দরকার।) (সূত্র ৮)
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই সব কাপড়-পোশাক স্ত্রী পাবে এক মরশুমের জন্য। অর্থাৎ এক মরশুমে যদি কাপড় পোশাক ছিঁড়ে যায় বা অকেজো হয়ে যায়, তবে স্বামী আবার তা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে না। তাই শীতের পোশাক যদি শীত শেষ হবার আগেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, তবে স্বামী আবার শীতের পোশাক সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে না। এই আইনটিই বলা হয়েছে m 11. 7 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৪)‑এ।
অনেকে ভাববেন, এ তো মন্দ নয়। ইসলাম স্ত্রীকে কিছু না কিছু অধিকার দিয়েছে তার স্বামীর কাছ থেকে পাওনার জন্য। কিন্তু এর মাঝে যথেষ্ট হেরফের আছে। দেখুন এই আইনটি।
শরিয়া আইন m 11. 9 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৫): স্বামীর ভরণপোষণ শর্তযুক্ত:
স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণ সে পর্যন্তই বহন করবে, যে পর্যন্ত চাহিবা মাত্র স্ত্রী তার স্বামীকে দেহদান করে অথবা দেহদানের প্রস্তুতি দেখায়। এর অর্থ হচ্ছে - স্ত্রী স্বামীকে পূর্ণ যৌন উপভোগ করতে দেবে এবং কোনো অবস্থাতেই স্বামীর যৌনচাহিদার প্রত্যাখ্যান করবে না। স্ত্রী স্বামীর ভরণপোষণ পাবে না যখন:
স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হবে, তার মানে যখন স্ত্রী স্বামীর আদেশ অমান্য করবে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও।
স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে ভ্রমণে যায় অথবা স্বামীর অনুমতি নেয়, কিন্তু ভ্রমণ করে নিজের প্রয়োজনে।
স্ত্রী হজ্জ অথবা ওমরা করার উদ্দেশে এহরাম করে।
স্ত্রী যদি স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে নফল রোজা রাখে।
এখানে একটা প্রশ্ন এসে যায়, কোনো সময় যদি স্ত্রী অসুখে পড়ে যায়, তবে তার কী হবে? কেই বা তার অসুখবিসুখের খরচা চালাবে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটা সত্যি যে, শরিয়া আইন বলছে, স্ত্রীর অসুখবিসুখ, ঔষধপত্র অথবা চিকিৎসকের খরচ স্বামী বহন করতে বাধ্য নয়। যদি স্ত্রীর মেডিকেল খরচ স্বামী বহন করে, তবে সেটা তার মানবিকতা—ইসলামী পুণ্য নয়।
এবার দেখা যাক আরও কতকগুলো ইসলামী আইন, যেগুলো আমাদের মহিলাদেরকে বানিয়ে রেখেছে ক্রীতদাসী হিসাবে।
আইন m 11. 4 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৪)
স্বামী স্ত্রীর প্রসাধন সামগ্রী, চিকিৎসকের খরচ, ঔষধের খরচ অথবা এই ধরনের অন্যান্য খরচ বহন করতে বাধ্য থাকবে না, যদিও স্বামী চাইলে তা করতে পারে। এটা শুধু সুপারিশ, বাধ্যবাধকতা নয়। কিন্তু শিশু জন্মের সাথে জড়িত খরচ স্বামীকে বহন করতে হবে।
আরও একটি অমানুষিক ব্যাপার হচ্ছে যে, স্ত্রী তার ভরণপোষণ পাবে দৈনিক ভাবে—মানে দিনকে দিন। তার অর্থ হল, স্ত্রীর খাওয়া দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থার নিরাপত্তা মাত্র এক দিনের জন্য। স্বামী চাইলে যে কোনো সময় তুচ্ছ অজুহাত তুলে স্ত্রীর ভরণপোষণ বন্ধ করে দিতে পারে।
আইন m 11. 6 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৪)
দৈনিক ভাতা শুরু হবে দিনের শুরুতে। স্বামী তার স্ত্রীকে দিনের প্রথমে স্ত্রীর দৈনিক ভাতা দিতে বাধ্য থাকবে। মরশুমের শুরুতেই স্বামী তার স্ত্রীকে পোশাকের কাপড় দিয়ে দিবে।
তালাকপ্রাপ্ত ও গর্ভবতী স্ত্রীদের কী অবস্থা?
আইন m 11. 10 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৬)
যে স্ত্রী ইদ্দতে থাকবে, সে তালাক (অস্থায়ী) অথবা বিধবার জন্যই হোক, তার অধিকার থাকবে স্বামীর গৃহে থাকার ইদ্দতের সময় পর্যন্ত। এরপর ভরণপোষণের ব্যাপারটা এই রকম:
১। তিন তালাক (স্থায়ী তালাক) হয়ে গেলে স্ত্রী ইদ্দতের সময় ভরণপোষণ অথবা ইদ্দতের পর কোনো প্রকার ভরণপোষণ পাবে না। বিধবা নারীও কোনো দৈনিক ভাতা পাবে না।
২। ভরণপোষণ হবে একমাত্র ইদ্দতের সময়, তাও যদি তালাক অস্থায়ী হয়, যথা - এক তালাক অথবা দুই তালাক, যেখানে সম্ভাবনা আছে যে, স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফেরত চাইবে।
৩। তিন তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে, সে দৈনিক ভাতা পাবে (A. শিশু ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত। এর পর শিশুর দেখাশোনা ও লালনপালনের জন্যে।)। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা না থাকলে সে কোনো ভাতাই পাবে না।
স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
আসুন, এবার আমরা দেখি, স্বামী কী চায় স্ত্রীর কাছ হতে। শরিয়া আইন অনুযায়ী, যে মুহূর্তে স্বামী স্ত্রীকে মোহরানার টাকা দিয়ে দেবে অথবা পরে দেবার অঙ্গীকার করবে, সেই মুহূর্তে স্বামী নারীটির দেহবল্লরী কিনে নিলো—অথবা নারীটির আপাদমস্তক, দেহের পূর্ণ মালিকানা পেয়ে গেল। অবশ্যই এ বলতে নারীটির যৌনাঙ্গ বলা হচ্ছে। শরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, নারীটির শরীরের অস্থি, মজ্জা, মাংস, পেশী, রক্ত, চুল, চামড়া... ইত্যাদি সহ সন্তানধারণের যন্ত্রটি স্বামীর এখতিয়ারে চলে আসবে। নারীর অন্যতম কর্তব্য হবে তার যৌনাঙ্গ ও গর্ভকে সর্বদা ক্রিয়াশীল করে রাখা—যেমনভাবে এক কারিগর তার কাজের যন্ত্রপাতি তেল, ঘষামাজা ইত্যাদি দিয়ে প্রস্তুত রাখে। এসবের জন্যে মুসলমানদের দরকার স্ত্রীকে ব্যাবহারের নিয়মাবলী। দেখ যাক, এই সব নিয়মাবলী কী রকম।
শরিয়া আইন (উমদাত আল-সালিক) নম্বর m 5. 4 (পৃঃ ৫২৬):
স্ত্রীর দেহকে উপভোগ করার পূর্ণ অধিকার থাকবে স্বামীর। (A: আপাদমস্তক, তথা পায়ের পাতা পর্যন্ত। কিন্তু পায়ুপথে সঙ্গম করা যাবে না—এটা বে-আইনি)। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন যৌনসঙ্গম কালে স্ত্রী যেন ব্যথা না পায়। স্বামী তার স্ত্রীকে যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারবে।
শরিয়া আইন (ঐ বই) নম্বর m 5. 6:
স্ত্রী তার যৌনাঙ্গকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বাধ্য থাকবে—এটা স্বামীর অন্যতম অধিকার। এই জন্য স্ত্রীকে মাসিক স্রাবের পর গোসল নিতে হবে এবং স্বামীর পূর্ণ যৌন উপভোগ করার জন্য যা যা দরকার, তা তাকে করতে হবে। এর মাঝে থাকছে নিয়মিত যৌনাঙ্গের কেশ কামানো এবং যৌনাঙ্গের ভেতরে জমে যাওয়া ময়লা দূর করা।
স্ত্রীর করণীয় কী?
এক মুসলিম নারীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও মূখ্য কর্তব্য হবে তার স্বামীর যৌনক্ষুধা নিবৃত করা। আপনার তা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই না? কিন্তু একটু চিন্তা করলেই আমরা বুঝব যে, মোহরানার উদ্দেশ্যই হচ্ছে নারীর জননেদ্রিয়ের মালিকানা স্বামীর আয়ত্তে আনা, যাতে সে স্ত্রীর দেহকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারে। শরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো মুসলিম নারী কস্মিনকালেও তার স্বামীর যৌনক্ষুধা মেটাতে ‘না’ বলতে পারবে না। অবশ্য স্ত্রী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা কোনো কারণে তার যৌনাঙ্গে গোলযোগ দেখা যায়, তখন তা আলাদা।
এখন আমরা দেখব, এ ব্যাপারে হাদিস কী বলছে।
সহি মুসলিম; বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৩৬৬:
আবু হুরায়রা বললেন: আল্লার রসুল (সঃ) বলেছেন, যদি কোন রমণী তার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাত্রি যাপন করে, তবে ফেরেশতারা সেই নারীকে অভিশাপ দেয় ভোরবেলা পর্যন্ত। এই হাদিসটা অন্যের ভাষ্য দিয়েও বলা হয়েছে—যাতে বলা হয়েছে: যতক্ষণ না স্ত্রী স্বামীর বিছানায় ফিরে আসে। (সূত্র ৩)
এ সম্পর্কে সহি মুসলিম বই ৮, হাদিস ৩৩৬৭ ও দেখা যেতে পারে।
দেখা যাক ইমাম গাজ্জালী কি বলেছেন এ প্রসঙ্গে।
এহিয়া উলুম আল-দীন; খণ্ড ১ পৃঃ ২৩৫
স্ত্রী তার স্বামীকে নিজের এবং তার আত্মীয়ের চাইতেও বেশী ভালবাসবে। স্ত্রীকে সদা সর্বদা পরিষ্কার ছিমছাম থাকতে হবে, যাতে করে স্বামী যখন খুশী তাকে উপভোগ করতে পারে। (সূত্র ৭)
ঐ বই পৃঃ ২৩৬
স্ত্রীকে সর্বদা ন্যায়পরায়ণতা মেনে চলতে হবে। স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রীকে দুঃখিত হতে হবে। যখন স্বামী ফিরে আসবে, তখন স্ত্রী হাসিখুশি দেখাবে এবং নিজের দেহকে প্রস্তুত রাখবে স্বামীর আনন্দের জন্যে।
শরিয়া আইন m 10. 4 (উমদাত আল-সালিক, পৃঃ ৫৩৮)
স্ত্রীর গৃহ ত্যাগ করা যাবে না। স্বামীর অধিকার থাকবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে না যেতে দেওয়া। (O. এটা এ কারণে যে বাইহাকী বলেছেন যে রসুলুল্লাহ বলেছেন: যে রমণী আল্লাহ ও কেয়ামতে বিশ্বাস করে, সে কখনো তার স্বামীর অবর্তমানে কোনো অজানা লোককে তার গৃহে প্রকাশের অনুমতি দেবে না। অথবা সেই রমণী গৃহের বাইরে যাবে না, যখন তার স্বামী বিক্ষুব্ধ হবে।
কিন্তু স্ত্রীর কোনো আত্মীয় মারা গেলে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে গৃহ ত্যাগের অনুমতি দিতে পারে। (সূত্র ৮)
এখানে হানাফি শরিয়ার একটি নিয়ম ইমাম শাফী দিয়েছেন। সেই আইনটি পড়ে নিন।
শরিয়া আইন (হানাফি) w 45. 2 (ঐ বই পৃঃ ৯৪৯):
স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর সেবা পরিচর্যা করা। এই কর্তব্য স্ত্রীর কাছে ধর্মের অঙ্গ। সেবা বলতে ধরা হচ্ছে রান্না করা, গৃহ পরিষ্কার করা, রুটি বানানো... ইত্যাদি। স্ত্রীর এসব কাজে বিমুখতা পাপ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু আদালত স্ত্রীকে জোরপূর্বক এই সব কাজ করতে হুকুম দিতে পারবে না। (সূত্র ৮)
অধ্যায়‑৬ : ইসলামী তালাক
স্বামী দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেওয়া (বিবাহবিচ্ছেদ)
ইসলামে বিবাহবিচ্ছেদ খুবই মামুলী ব্যাপার—বিশেষত: বিবাহবিচ্ছেদ যদি স্বামী দ্বারা হয়। দু’জন সাক্ষীর সামনে স্বামীকে শুধু বলতে হবে ‘তোমাকে তালাক দিয়ে দিলাম।’ ব্যস, সেই মুহূর্ত থেকেই স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। এই তালাক মৌখিক অথবা লিখিতভাবেও হতে পারে। আজকাল মুঠোফোনেও ইসলামী তালাক দেওয়া জায়েজ হচ্ছে—অনেক ইসলামী দেশেই—হয়ত বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ভাবেই, অতি সহজে, অতি অল্প পয়সা খরচ করে এক নিমেষের মাঝে একজন স্বামী পারবে তার স্ত্রীকে দূর করে দিতে। শুধু শর্ত হল এই যে, ইদ্দতের (তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী গর্ভবতী কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য) সময় পর্যন্ত তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে ঘরে ভরণপোষণ দিয়ে রাখতে হবে—তাও যদি তালাক এক অথবা দুই হয়। তার মানে হল এই - ইদ্দতের সময় স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারে। কী মারাত্মক ব্যাপার! এক নারীর জীবনের ভার আল্লাহ পাক সম্পূর্ণভাবে তুলে দিয়েছেন এক পাষণ্ড স্বামীর হাতে। স্বামীর দয়া, ইচ্ছা, করুণার ওপর নির্ভর করছে এক নারীর অস্তিত্ব। এ চিন্তা করলে যে ইসলামী সভ্যতা নিয়ে যারা বড়াই করেন, তাদের মুখে থুথু দিতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারে আমি আগেই লিখেছি যে, স্বামী যদি স্থায়ী তালাক দেয় (অর্থাৎ তিন তালাক), তবে স্ত্রীকে এক কাপড়ে ঐ মুহূর্তে স্বামীর ঘর ত্যাগ করতে হবে। কী নিষ্ঠুর! কী অমানবিক! কী অসভ্য এই ইসলামী আইন, যা আল্লার আইন হিসাবে পরিচিত।
দেখা যাক, আল্লাহ পাক কী বলেছেন তালাকের ব্যাপারে।
কোরআন সুরা বাকারা আয়াত ২২৮ (২:২২৮):
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন দিন পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহ্র প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন সস্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
ইসলামের এহেন বর্বরোচিত নিয়ম ঢাকার জন্য অনেক ইসলামী পণ্ডিত বলে থাকেন যে, আল্লাহ পাকের নিকট তালাক নাকি সবচাইতে অপ্রীতিকর শব্দ। তাই স্বামীর উচিত হবে তালাক একেবারে শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা। অর্থাৎ স্ত্রী একান্তই অবাধ্য ও অপ্রীতিকর কর্ম না করলে তাকে তালাক না দেওয়া ভাল। কিন্তু এই ধরনের কথা কোরানের কোথাও লেখা নেই অথবা তেমন কোনো শক্ত হাদিসও দেখা যায় না। সত্যি বলতে কি, ইমাম গাজ্জালী লিখেছেন, কোনো কারণ ছাড়াই স্বামী পারবে স্ত্রীকে তালাক দিতে।
এহিয়া উলুম আল দীন; খণ্ড ১, পৃঃ ২৩৪):
স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপার সাপার কারও কাছে ফাঁস করবে না—তা বিবাহ অবস্থায় হউক অথবা বিবাহ বিচ্ছেদই হউক। এই ব্যাপারে বেশ কিছু বর্ণনা আছে যে স্ত্রীর গোপন ব্যাপারে কারও সাথে আলাপ আলোচনা বিপদজনক হতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে একদা এক ব্যক্তি জানালো যে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়। প্রশ্ন করা হল কি কারণ। সে বলল: “একজন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি তার স্ত্রী সংক্রান্ত গোপন ব্যাপার কাউকে বলে না.” সে যখন তালাকের কাজ সম্পন্ন করল তখন জিজ্ঞাসা করা হল: “তুমি কি কারণে স্ত্রীকে তালাক দিলে?” সে উত্তর দিল: “আমার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী অথবা অন্য কোন নারীর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার অধিকার আমার নাই.” (সূত্র ৭)
এ ব্যাপারে শরিয়া বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান ডোইয়ের বক্তব্য হল, হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেবার জন্য কোনো কারণের দরকার নেই (ডোই, পৃঃ ১৭৩)।
মালিকের মুয়াত্তা হাদিসে লিখা হয়েছে যে, তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে আর মেয়েদের জন্য আছে ইদ্দত।
দেখুন মালিক মুয়াত্তা, হাদিস নম্বর ২৯. ২৪. ৭০:
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ—ইয়াজিদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুসায়ত আল‑লাইথ থেকে বললেন যে সা’দ ইবনে আল‑মুসায়েব থেকে বর্ণনা করেছেন: উমর আল‑খাত্তাব বলেছেন: ‘কোন স্ত্রীর তালাক হল। তার পর সেই মহিলার দুই অথবা তিন স্রাব হল। এর পর স্রাব বন্ধ থাকল। এমন অবস্থা হলে সেই মহিলাকে নয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। এর থেকে বুঝে নিতে হবে যে স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী। নয় মাস পার হয়ে যাবার পর আবার তাকে তিন মাসের ইদ্দত করতে হবে। এর পর সে পুনরায় বিবাহে বসতে পারবে’।
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ ইবনে মুসায়েব থেকে বলেছেন: “তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে, আর স্ত্রীর জন্যে রয়েছে ইদ্দত”। (সূত্র ৫)
মালিকের মুয়াত্তাতে আরও লেখা হয়েছে যে, স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে যে, সে (স্ত্রী) তার জন্য হারাম, তখন তা তিন তালাক (অর্থাৎ স্থায়ী তালাক) হিসাবে গণ্য হবে।
পড়া যাক মালিকের মুয়াত্তা হাদিস ২৯. ১. ৬:
মালিক ইয়াহিয়া থেকে বললেন তিনি শুনেছেন যে আলী বলতেন যে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে যদি বলে: “তুমি আমার জন্যে হারাম”, তবে সেটাকে তিন তালাকের ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে। (সূত্র ৫)
এই সব কিছুর অর্থ হচ্ছে এক মুসলিম পুরুষ যে কোনো মুহূর্তে তার খেয়ালখুশি মত তার হারেমের রদবদল করতে পারবে। সে এক অধিবেশনেই তার চার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারবে এবং একই সাথে আরও নতুন চারজন স্ত্রী দ্বারা তার হারেম পূর্ণ করে নিতে পারবে।
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ভাতার ব্যাপারে অনেকেই ইসলামের মাহাত্ম্য দেখাতে চান। এ বিষয়ে আগেই বেশ কিছু লেখা হয়েছে। মোদ্দা কথা হল, অস্থায়ী তালাককে ইদ্দতের সময় ছাড়া অন্য কোনো স্থায়ী তালাকে স্ত্রী স্বামীর কাছ হতে এক কড়ি কণাও পাবে না। এ ব্যাপারে আরও কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করছি।
সহি মুসলিম; বই ৯, হাদিস নম্বর ৩৫১৪
ফাতেমা বিনত কায়েস অভিযোগ করলেন যে তার স্বামী আল‑মাখযুলমী তাকে তালাক দিয়েছে কিন্তু কোন খোরপোষ দিতে অস্বীকার করেছে। ফাতেমা আল্লাহর রসুলের কাছে এ বিষয়ে বলল। আল্লাহর রসুল বললেন, “তোমার জন্য কোন ভাতা নাই। তোমার জন্যে ভাল হবে ইবন আল‑মাখতুমের ঘরে থাকা। সে অন্ধ, তাই তার অবস্থিতিতে তুমি তোমার পোশাক খুলতে পারবে। (অর্থাৎ তার সামনে পর্দা অবলম্বনে তোমার কোন অসুবিধা হবে না।) (সূত্র ৩)
সহি মুসলিম; বই ৯, হাদিস নম্বর ৩৫৩০:
ফাতেমা বিনত কায়েস বললেন: আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিল। আল্লাহর রসুল আমার জন্য কোন প্রকার থাকা খাওয়ার ভাতার ব্যবস্থা করলেন না। (সূত্র ৩)
এর পরেও কি আমরা বলতে পারি যে, ইসলামে তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের ওপর ন্যায়বিচার করা হচ্ছে?
স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেবার অধিকার
ইসলামীরা প্রায়শ গলা ফাটিয়ে বলেন যে, ইসলাম নারীকে দিয়েছে তালাকের অধিকার। কী নিদারুণ মিথ্যাই না তাঁরা প্রচার করে যাচ্ছেন। কথা হচ্ছে, এক মুসলিম স্ত্রী কোনোভাবেই তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না, যেভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। অর্থাৎ একজন স্ত্রী ইচ্ছে করলেই তার স্বামীর হাত থেকে উদ্ধার পাবে না। তার মুক্তি নির্ভর করবে তার স্বামীর মেজাজের ওপর। একজন স্ত্রী তার কুলাঙ্গার স্বামীকে হাতে পায়ে ধরে অথবা ইসলামী আদালতে গিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। এই ব্যবস্থাকে খুল বলা হয়, তালাক নয়। অন্যায় হচ্ছে এই যে, যে স্থানে স্বামীর অবাধ অধিকার আছে, স্ত্রীকে কোনো কারণ ছাড়াই যে কোনো মুহূর্তে তালাক দিতে পারে। স্ত্রী তা পারবে না। এখন কোনো স্বামী যদি স্ত্রীকে বেদম পেটায়, তবুও স্ত্রী পারবে না ঐ অত্যাচারী, বদমেজাজি স্বামীর হাত থেকে মুক্তি পেতে। এমতাবস্থায় পীড়িত স্ত্রীকে ইসলামী আদালতে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তার স্বামী তাকে যেমনভাবে পিটিয়েছে, তা ইসলামী পিট্টির বাইরে পড়ে। অর্থাৎ পেটানো হয়েছে এমনভাবে যে, মহিলাটির হাড় ভেঙে গেছে অথবা প্রচুর রক্তপাত ঘটেছে। এমতাবস্থায় আদালত চাইলে তাদের বিবাহ ভেঙে দিতে পারে, কিন্তু শর্ত হবে এই যে, মহিলাকে তার স্বামী যা দিয়েছে (মোহরানা), তা ফেরত দিতে হবে।
মারহাবা! এরই নাম হচ্ছে ইসলামী ন্যায় বিচার। যে ভুক্তভোগী, তাকেই জরিমানা দিতে হবে। আর অপরাধী সম্পূর্ণ খালাস। শুধু তাই নয়, সে পুরস্কৃত হচ্ছে। কী অপূর্ব বিচার। এখন এর সাথে তুলনা করুন আধুনিক বিচার ব্যবস্থার।
দেখা যাক কিছু হাদিস এই খুল সম্পর্কে।
মালিকের মুয়াত্তা; হাদিস নম্বর ২৯. ১০. ৩২:
ইয়াহিয়া—মালিক—নাফী—সাফিয়া বিনত আবি ওবায়দের মাওলা থেকে। ইয়াহিয়া বললেন সাফিয়া বিনতে ওবায়েদ তাঁর যা কিছু ছিল সবই তাঁর স্বামীকে দিয়ে দিলেন। এ ছিল তাঁর স্বামী থেকে তালাক পাবার জন্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর এতে কোন আপত্তি জানালেন না।
মালিক বলেছেন যে স্ত্রী নিজেকে স্বামীর কাছে জিম্মি করে রাখে সেই স্ত্রীর খুল অনুমোদন করা হয়। এ ব্যবস্থা তখনই নেওয়া হয় যখন প্রমাণিত হয় যে স্ত্রীর স্বামী তার জন্যে ক্ষতিকর এবং সে স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালায়। এই সব ব্যাপার প্রমাণ হলেই স্বামীকে তার স্ত্রীর সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে।
মালিক বললেন: এমতাবস্থায় স্ত্রী নিজেকে জিম্মি রেখে (অর্থাৎ স্বামীকে টাকা পয়সা দিয়ে) খুল করে নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী স্বামীর কাছে যা পেয়েছে তার চাইতেও বেশী দিতে পারবে। (সূত্র ৫)
সহজ কথায়, ইসলামী আইনে বলা হচ্ছে যে, স্ত্রী তার বেয়াড়া স্বামী হতে মুক্তি পেতে চাইলে সবচাইতে সহজ পথ হচ্ছে স্বামীকে প্রচুর টাকা পয়সা উৎকোচ দিয়ে তার থেকে তালাক দাবি করা।
এখন পড়া যাক আরও একটি হাদিস।
সুনান আবু দাঊদ; বই ১২, হাদিস নম্বর ২২২০:
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা বললেন:
সাহলের কন্যা হাবিবার স্বামী ছিল সাবিত ইবনে কায়েস শিম্মা। সে হাবিবাকে মারধোর করে তার হাড়গোড় ভেঙ্গে দিল। হাবিবা নবীজির (সাঃ) কাছে এ ব্যাপারে স্বামীর বিরুদ্ধে নালিশ করল। নবীজি সাবিত ইবনে কায়েসকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন: তুমি তোমার স্ত্রীর কিছু জমি জায়গা নিয়ে নাও এবং তার থেকে দূরে থাক। সাবিত বলল: এটা কি ন্যায় সঙ্গত হবে, আল্লাহর রসুল? নবীজি বললেন: হ্যাঁ, তা হবে। তখন সাবিত বলল: আমি স্ত্রীকে দু’টি বাগান দিয়েছি মোহরানা হিসাবে। এই দুই বাগান এখন তার অধিকারে। নবীজি (সা:) বললেন: তুমি ঐ বাগান দু’টি নিয়ে নাও ও তোমার স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও।
কী অপূর্ব ন্যায় বিচারই না করলেন নবীজি! এর থেকে আমরা বুঝলাম যে, স্বামীর অবাধ অধিকার থাকছে স্ত্রীকে তালাক দেবার। স্ত্রীর স্বামীকে তালাক দেবার কোনো অবাধ অধিকার নাই—খুল কোনো অধিকার নয়, খুল হচ্ছে একটি বিশেষ সুবিধা। (সূত্র ৪)
এই ব্যাপারে দেখা যাক কিছু শরিয়া আইন।
শরিয়া আইন m 11. 3 (উমদাত আল‑সালিক, পৃ ৫৪৬):
বিবাহবিচ্ছেদের জন্যে স্ত্রীকে আদালতের বিচারকের শরণাপন্ন হতে হবে।
স্বামী স্ত্রীর বাধ্য ভরণপোষণ বহন করতে না পারলে, স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় স্ত্রী চাইলে স্বামীর সাথে থাকতে পারে (স্ত্রী নিজের খরচ নিজেই বহন করবে)। স্ত্রী যা খরচ করবে, তা স্বামীর দেনা হয়ে থাকবে। স্ত্রী যদি স্বামীর অসচ্ছলতা সইতে না পারে, তখনও সে নিজেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না। স্ত্রীকে ইসলামী আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে, তার স্বামী তার ভরণপোষণ দেয় না। ইসলামী বিচারক যদি স্ত্রীর প্রমাণ গ্রহণ করেন, তখনই উনি বিবাহবিচ্ছেদ (খুল) দিতে পারেন—কেননা এ ব্যাপারে বিচারকই একমাত্র সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। ইসলামী বিচারক না পাওয়া গেলে স্ত্রী তার বিষয়টা দু’জন লোকের (অবশ্যই পুরুষ) হাতে তুলে দিতে পারে। (সূত্র ৮)
এখানে অনেক কিন্তু আছে—স্বামী যদি স্ত্রীকে তার মৌলিক খাবার, বাসস্থানের ব্যবস্থা দেয়, তবে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে না। এই আইনটি লেখা হয়েছে এই ভাবে।
শরিয়া আইন m 11. 4 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৭):
স্বামী স্ত্রীকে মৌলিক খাবারের ব্যবস্থা দিয়ে থাকলে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের পথ নিতে পারবে না। স্বামী যদি প্রধান খাবার দিতে পারে, কিন্তু অন্য অনুসাঙ্গিক খাবার দেয় না, অথবা চাকর-বাকর দেয় না, তখনও স্ত্রী পারবে না বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে স্বামীর সচ্ছলতার ওপর। (সূত্র ৮)
মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলামী আদালতে গেলে স্ত্রীর সাথে যৌনকর্মের ব্যাপারে আদালত স্বামীর ভাষ্য গ্রহণ করবে, স্ত্রীর ভাষ্য নয়।
শরিয়া আইন m 11. 11 (ঐ বই পৃঃ ৫৪৬):
আদালত যৌনসঙ্গম উপভোগের ব্যাপারে স্বামীর সাক্ষ্য, প্রমাণ গ্রহণ করবে।
আদালতে যদি প্রমাণ না করা যায় যে, স্বামী স্ত্রীর ভাতা দিতে ব্যর্থ—তখন স্ত্রী যা বলবে এই ব্যাপারে, তাই গ্রহণ করা হবে। স্বামী‑স্ত্রী যদি যৌন উপভোগের ব্যাপারে একমত না হয়, তখন স্বামী এ ব্যাপারে যা-ই বলবে, আদালত তাই সত্য বলে মেনে নেবে। অর্থাৎ স্বামী যদি বলে যে, স্ত্রী তার দেহদান করতে অপারগ, তখন স্বামীর ভাষ্যই সত্যি বলে গৃহীত হবে। এমন যদি হয়, স্বামী স্বীকার করে নিল যে, প্রথমে স্ত্রী তার দেহদান করতে রাজি হল, কিন্তু পরে তার দেহ সমর্পণ করল না, তখন স্বামীর ভাষ্য আদালত অগ্রাহ্য করতে পারে। (সূত্র ৮)
ওপরের ঐ সব আজগুবি ইসলামী আইন থেকে আমরা সত্যি বলতে পারি যে, একজন স্বামী বিবাহের মাধ্যমে কত সহজেই না নারীদের আর্থিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। বিয়ে করার পর স্বামী স্ত্রীর ওপর অত্যাচার শুরু করল, মারধোর করল। যখন এসব অসহ্য হয়ে উঠলো, তখন স্ত্রী স্বামীর পায়ে ধরল তালাকের জন্য—টাকা-পয়সার বিনিময়ে। স্বামী টাকা নিলো এবং স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল। কী চমৎকার ইসলামী ব্যবস্থা। এইভাবে সেই স্বামী চালাতে থাকবে তার ব্যবসা। নারী দেহও উপভোগ হচ্ছে, আবার টাকাও পাওয়া যাচ্ছে—এর চাইতে আর ভাল কী হতে পারে?
অধ্যায়‑৭ : হিলা এবং মুসলিম নারীদের অধিকার
হিলা বিবাহ
এবার আমরা দৃষ্টি দেব ইসলামের আরও একটি বর্বর বিবাহ‑নিয়মের ওপর। অনেকেই হয়ত এ ব্যাপারে কিছু না কিছু জেনে থাকবেন—কারণ গ্রাম বাংলায় এই নির্মম ইসলামী প্রথাটি এখনও এই একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল তবিয়তে আছে এবং অনেক পরিবারে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে এই প্রকার:
যখন স্বামী তার স্ত্রীকে ইসলামী পন্থায় স্থায়ী (অর্থাৎ তিন তালাক) দিয়ে দিলো, তারপর সেই স্ত্রী তার ভূতপূর্ব স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে। স্বামী আর কিছুতেই সেই স্ত্রীর সাথে পুনরায় স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না, এমনকি সেই স্ত্রীকে বিবাহও করতে পারবে না। তবে এর মাঝে হেরফের আছে। তা হচ্ছে এই যে, ঐ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহে বসতে হবে। তারপর তাদের মাঝে যৌনসঙ্গম হতে হবে। এরপর এই দ্বিতীয় অস্থায়ী স্বামী মহিলাটিকে তিন তালাক দেবে। মহিলাটি তিন মাসের ইদ্দত করবে এবং যদি সে গর্ভবতী না হয়, তখনই তার ভূতপূর্ব স্বামী তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। যদি মহিলাটি অস্থায়ী স্বামী দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তবে এ ব্যাপারে ইসলামী কায়দা পালন করতে হবে—যা আগেই লেখা হয়েছে। অনেক ইসলামীই এ ব্যাপারে খুব উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন এই বলে যে: দেখুন, ইসলাম কত না ন্যায় বিচার করছে: এই হিলা প্রথা মহিলাকে আরও একটি সুযোগ দিল অন্য স্বামীর ঘর করার। ইসলামীরা এও বলেন যে, এই হিলা প্রথার জন্যই পুরুষেরা যত্রতত্র তালাক দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
কিন্তু ইসলামীদের এই সব আবোলতাবোল কতই না হাস্যকর! স্বামী দিল স্ত্রীকে তালাক, কিন্তু তার ভুক্তভোগী স্ত্রীকে কেন আবার বিবাহ করতে হবে এক বেগানা পুরুষকে, যদি তার ভূতপূর্ব স্বামী চায় তার পূর্বের স্ত্রীর সাথে একটা সমঝোতা করে নিতে? কিসের বাধা এতে? কেনই বা ভূতপূর্ব স্ত্রীকে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে অন্য এক পুরুষের সাথে? এটা কি স্ত্রীকে সাজা দেওয়া হল না? এই সাজা তো স্বামীরই পাওয়া উচিত ছিল—কারণ সে-ই তো তালাক দিয়েছিল।
যাই হোক, আমরা এখন দেখব কোরআন ও হাদিস কী বলছে হিলা বিবাহ সম্পর্কে।
কোরআন সুরা বাকারা আয়াত ২৩০ (২:২৩০):
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হল আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে, হিলা বিবাহে অস্থায়ী স্বামীর সাথে মহিলাকে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতেই হবে। তা না হলে এই হিলা বিবাহ সহি হবে না। যদি নামকা ওয়াস্তে এই হিলা বিবাহ, সাধারণত: মসজিদের ইমাম অথবা কর্মচারীর সাথে হয়ে থাকে—তবে তা মোটেই সিদ্ধ হবে না। এই আইন যেহেতু কোরানে লিখিত, তাই বিশ্বের কারও সাধ্য নেই যে, এই আইনের রদবদল করে। এর রদের জন্য দুনিয়ার সমগ্র মুসলিম নারী জীবন দিয়ে ফেললেও কারও কিছু করার নেই। এটা হচ্ছে এমনই পরিস্থিতি, যেমন হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকারী আইন—যথা মেয়ে পাবে ছেলের অর্ধেক। এই আইনও চিরকালের—বিশ্বের কোনো শক্তি নেই আল্লাহ্র এই আইনের পরিবর্তন করতে পারে।
হিলা বিবাহের ব্যাপারে দেখা যাক একটি হাদিস।
মালিকের মুয়াত্তা; হাদিস নম্বর ২৮. ৭. ১৮
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ—আল‑কাশিম ইবনে মুহাম্মদ থেকে। ইয়াহিয়া বললেন রসুলুল্লাহর স্ত্রী আয়েশা (রঃ) কে বলা হল: এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করল। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কি না? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে। (সূত্র ৫)
এই হচ্ছে হিলা বিবাহের মর্মকথা।
মুসলিম নারীদের যৌনসঙ্গম উপভোগ করার অধিকার আছে কি?
আশ্চর্যের ব্যাপার হল ইসলাম স্বীকার করে নিয়েছে যে, অন্যান্য নারীদের মত মুসলিম নারীদেরও যৌনক্ষুধা রয়েছে এবং সেই ক্ষুধার নিবৃত্তির প্রয়োজন। কিন্তু এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বড়ই সজাগ এবং অতিশয় কৃপণ। ইসলাম কোনোমতেই চায় না যে, মুসলিম নারীদের দমিত রাখা যৌনক্ষুধা বিস্ফোরিত হোক। তাই না মুসলিম নারীদের যৌনাঙ্গ ও শরীরের প্রতি এত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে হচ্ছে। এই জন্যই মুসলিম নারীর যৌনতার ব্যাপারে এত ঢাক ঢাক গুড় গুড়—যেন কোনোক্রমেই মুসলিম নারী তার ইচ্ছেমত তার যৌনতা উপভোগ করতে না পারে। সেই জন্যেই না করা হয়েছে কত অমানুষিক বর্বর শরিয়া আইন কানুন, যার একমাত্র কারণ—যেমন করেই হোক নারীর এই দুর্নিবার ক্ষুধাকে চেপে রাখতেই হবে।
কিন্তু অন্যায় যে আরও ব্যাপক। আমরা দেখেছি শরিয়া আইন বলছে চাহিবা মাত্র স্ত্রীকে তার দেহদান করতে হবে স্বামীকে। কিন্তু এই নিয়মটা স্ত্রীর ওপর প্রযোজ্য নয়। একজন মুসলিম স্ত্রীকে অপেক্ষা করতে হবে, কখন তার স্বামী তার (স্ত্রীর) যৌনক্ষুধা মেটাতে প্রস্তুত—অর্থাৎ স্ত্রী চাইলেই স্বামীর কাছে যৌনসঙ্গম আশা করতে পারবে না। স্ত্রীর তীব্র যৌনক্ষুধা জাগলেও সে তা মুখ ফুটে স্বামীকে জানাতে পারবে না। যৌন উপভোগের একমাত্র নায়ক ও পরিচালক হচ্ছে স্বামী। স্ত্রী হচ্ছে মেঝেতে পড়ে থাকা চাটাই। স্বামী সেই চাটাইয়ে বীর্যপাত করলেই যৌনসঙ্গম সমাপ্ত হয়ে গেল। মোটামুটি এই‑ই হল ইসলামী যৌনসঙ্গম। এখানে নারীর ভূমিকা নিতান্তই নগণ্য—একেবারেই নেই বলা চলে। যেখানে স্বামীকে যৌনসঙ্গমের কত ব্যবস্থাই ইসলাম দিয়েছে, যথা এক সাথে চার স্ত্রী, অসংখ্য যৌনদাসী, অগণিত যুদ্ধবন্দিনী... ইত্যাদি; সেখানে স্ত্রীকে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হচ্ছে মাত্র একজন পুরুষের ওপর—তার স্বামী—আর কেউ নয়। কোনো মুসলিম নারীর কি এমন বুকের পাটা আছে যে শারীয়া আইন অমান্য করে তার ইচ্ছামত যৌনক্ষুধা মেটাবে? এই কাজ করলে যে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে!
আসুন, আমরা এখন দেখি শরিয়া আইন কী বলছে মুসলিম নারীদের যৌনক্ষুধা নিয়ে।
শরিয়া আইন m 5. 2 (উমদাত আল‑সালিক, পৃঃ ৫২৫, ইমাম গাজ্জালী হতে):
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করবে চার রাতে এক বার। কেননা স্বামীর হয়ত চার বিবি থাকতে পারে। স্ত্রীকে এর জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা করতেই হবে। যদি সম্ভব হয়, তবে স্বামী এর চাইতে অধিক অথবা কম সঙ্গমও করতে পারে। এমনভাবে স্ত্রীর সঙ্গমের চাহিদা মেটাতে হবে, যেন স্ত্রী চরিত্রবতী থাকে, তার যৌনক্ষুধা আর না জাগে। এর কারণ এই যে, স্বামীর জন্য এটা বাধ্যতামূলক যে, তার স্ত্রী যেন সর্বদা চরিত্রবতী থাকে। (সূত্র ৮)
মুসলিম নারীরা কি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে?
বিশ্বের প্রতিটি জীবের স্বাধীনভাবে যত্রতত্র চলার অধিকার রয়েছে। জন্ম থেকেই আমরা সেই স্বাধীনতা ভোগ করে আসছি—ব্যতিক্রম শুধু মুসলিম নারীরা। বিশ্বাস না হলে ঘুরে আসুন কোনো এক ইসলামী স্বর্গ থেকে—যেমন সৌদি আরব, ইরান, আজকের ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান... এই সব দেশ। আপনি দেখবেন, আমরা যে-অধিকারকে জন্ম অধিকার হিসেবে মনে করি, এই সব ইসলামী স্বর্গগুলোতে বসবাসকারী মহিলাদের এই ন্যূনতম অধিকারটুকুও নেই। এ কী বর্বরতা! আল্লাহ্ কেন এত নিষ্ঠুরভাবে তারই সৃষ্ট নারীদের বন্দী করে রেখেছেন চার দেওয়ালের মাঝে? আল্লাহ্ কেন এই সব বিদঘুটে নিয়ম-কানুন পুরুষদের বেলায় প্রযোজ্য করেননি? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সমস্ত মুসলিম বিশ্ব এই বর্বরতা নীরবে মেনে নিচ্ছে—এর বিরুদ্ধে কোনো টুঁ শব্দটি আমরা শুনি না। আরও অবাকের ব্যাপার হচ্ছে, মুসলিম নারীরা এই সব অসভ্য, বেদুঈন, বর্বরতাকে জোরদার সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। কী পরিহাস! মুসলিম নারীরাই এই জংলী সভ্যতার ভুক্তভোগী, অথচ তারাই নীরবে এই বর্বরতা স্বচ্ছন্দে মেনে নিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে। কেমন করে একজন মুসলিম নারী পেশাদার কিছু হতে পারবে? ইসলাম যে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, পায়ে বেড়ি লাগিয়ে, সমস্ত শরীরকে কারাগারে পুরে এবং তার নারীত্বের সমস্ত মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে।
অনেক ইসলামী জ্ঞানীগুণী অনেক যুক্তি দেখান এই বর্বরতার—যেমন এ সবই করা হচ্ছে মুসলিম নারীদের মর্যাদা, সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য। এই প্রসঙ্গে সর্বদাই বলা হয়ে থাকে—দেখুন, পাশ্চাত্ত্যের নারীরা কী রকম অসভ্য, বেলেল্লাপনা করে বেড়াচ্ছে। তাদের পরনে নামে মাত্র পোশাক, তাদের যৌনাঙ্গ প্রায় উন্মুক্ত। এই সব পাশ্চাত্য বেশ্যাদের তুলনায় আমাদের ইসলামী নারীরা অনেক সুখী, সৌভাগ্যবতী, এবং ধর্মানুরাগী। এই সব কত গালভরা কথাই না আমরা অহরহ শুনছি! কী উত্তর দেওয়া যায় ঐ সব অযুক্তি ও কুযুক্তির?
দেখা যাক নারীর প্রতি ইসলামের মর্যাদা দেখানোর কিছু নমুনা।
ইবনে ওয়ারাকের, আমি কেন মুসলিম নই বই, পৃঃ ৩২১:
১৯৯০ সালে পাকিস্তানী এক নারীকে হোটেলের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়, যেহেতু মহিলাটি এক পুরুষের সাথে করমর্দন করেছিল। তারপর পাকিস্তানী মহিলাটি বললেন:
“পাকিস্তানে নারী হয়ে বাস করা খুবই বিপদজনক”। (সূত্র ৩২)
এখন আমরা দেখি কোরআন ও হাদিস কী বলছে এই প্রসঙ্গে।
কোরআন সূরা আন‑নুর, আয়াত ৩১ (২৪: ৩১):
ইমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি-পুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামমুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ‑সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগন, তোমরা সবাই আল্লাহ্র সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
কোরআন সূরা আল‑আহযাব, আয়াত ৩৩ (৩৩:৩৩)
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে—মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ্ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত‑পবিত্র রাখতে।
সহি মুসলিম; বই ৭ হাদিস নম্বর ৩১০৫:
আবু হুরায়রা বললেন: “রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে নারী আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে সে কখনই তার মাহরাম ছাড়া এক দিনের ভ্রমণে যাবে না”। (সূত্র ৩)
মালিকের মুয়াত্তা, হাদিস ৫৪. ১৪. ৩৭:
মালিক—সাইদ ইবনে আবি সাইদ আল‑মাকবুরি—আবু হুরায়রা থেকে। মালিক বললেন: আল্লাহ্র রসুল (সাঃ) বলেছেন: যে নারী আল্লাহ ও আখেরতে বিশ্বাস করে তার জন্যে তার পুরুষ মাহরাম ছাড়া একদিনের রাস্তা ভ্রমণ করা হালাল নয়। (সূত্র ৫)
সর্বশেষে এই হাদিস।
বাংলা মুসনাদে আহমদ; খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ১৩৩৮, পৃ ২৪০
উম্মু সালামা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূল (সা) বলেন, নারীদের সর্বোত্তম মসজিদ হচ্ছে, তাদের গৃহের কুঠরী।
[তাবারানী, ইব্নে হুযাইমা ও হাসেম। তিনি এবং সাহাবী কোন মন্তব্য করেন নি, সুতরাং হাদীসটি সহীহ্ বলে প্রতীয়মান হয়।] (সূত্র ২৪)
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, এমনকি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মহিলা শ্রমিক বিভিন্ন কল কারখানায় প্রতিদিন কাজ করতে যায়। এ না করলে তাদের সংসার চলবে না। আমরা ইসলামীদের প্রশ্ন করব, কী হবে ঐ সব মহিলা শ্রমিকদের, যদি তারা শরিয়া আইন বলবত করে? অনেক মহিলা শ্রমিক রাত্রের বেলাতেও ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। তাদের কী হবে ইসলামী আইন চালু হলে? শরিয়া আইনের ফলে এই সব মহিলা শ্রমিক ও তাদের পরিবার যে অনাহারে থাকবে, তা আর বোঝার অপেক্ষা থাকে না। আমরা কি চিন্তা করতে পারি, শরিয়া আইনের ফলে কেমন করে মেঘবতী সুকার্ণপুত্রী (ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি), বেগম খালেদা জিয়া কেমন করে বিদেশে যেতে পারবেন এবং বিদেশের পুরুষ রাষ্ট্রনায়কদের সাথে এক সাথে বসে আলাপ আলোচনা করবেন? সৌজন্য স্বরূপ পুরুষ রাষ্ট্রনায়কদের সাথে করমর্দনের কোন কথাই উঠতে পারে না। ইসলামে তা একেবারেই হারাম—ঐ দেখুন ওপরে—এক পাকিস্তানী মহিলার ভাগ্যে কী জুটেছিল। আজকের দিনে আমরা এই বিশুদ্ধ ইসলামী আইনের ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি তালিবানি শাসিত আফগানিস্তানে, উত্তর সুদানে ও নাইজেরিয়ার কিছু প্রদেশে।
একবার ইসলামী আইন চালু হলে মুসলিম নারীদের কপালে যে কী আছে, তা আর বিশেষভাবে লেখার দরকার পড়েনা। শরিয়া আইন নারীদেরকে বেঁধে ফেলবে চতুর্দিক থেকে। মোল্লা, ইমাম, মৌলানা, ইসলামী মাদ্রাসার ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়বে হিংস্র, খ্যাপা কুকুরের মত। দলিত মথিত করে, জবাই করে, টুকরো টুকরো করে এরা খাবে আমাদের মাতা, ভগ্নি, স্ত্রী, প্রেয়সীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। পাথর ছুঁড়ে এই পাগলা কুকুরগুলো হত্যা করবে আমাদের নারী স্বাধীনতার অগ্রগামীদেরকে। তাকিয়ে দেখুন কী হচ্ছে আজ ইরানে, ইসলাম শাসিত সুদানে, আফগানিস্তানে, নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ও অন্যান্য শরিয়া শাসিত ইসলামী স্বর্গগুলিতে।
এখন শুনুন এক পাকিস্তানী মোল্লা কী বলছে রাওয়ালপিন্ডির মহিলা নেতাদের প্রতি।
ইবনে ওয়ারাকের বই, আমি কেন মুসলিম নই, পৃ: ৩২১:
আমরা এই মহিলাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমরা তাদেরকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলব। আমরা ওদেরকে এমন সাজা দেব যে, কস্মিনকালে ওরা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারবে না। (সূত্র ৩২)
বেশ কিছু শিক্ষিত ইসলামী প্রায়শ: বলে থাকেন যে, ইসলাম নাকি মহিলাদেরকে উচ্চশিক্ষার জন্য আহবান জানায়। ইসলামের লজ্জা ঢাকার জন্যই যে এই সব শিক্ষিত মুসলিম পুরুষেরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের মিথ্যার মুখোশ উন্মোচনের জন্যে আমরা দেখব কিছু শরিয়া আইন। কী বলছে শরিয়া মুসলিম নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে?
শরিয়া সাফ সাফ বলছে যে মহিলাদের জন্য একমাত্র শিক্ষা হচ্ছে ধর্মীয়, তথা ইসলামী দীনিয়াত।
শরিয়া আইন m 10. 3 (উমদাত আল‑সালিক, পৃঃ ৫৩৮):
স্বামী তার স্ত্রীকে পবিত্র আইন শিক্ষার জন্য গৃহের বাইরে যাবার অনুমতি দিতে পারবে। সেটা এই কারণে যে, যাতে করে স্ত্রী জিকির করতে পারে এবং আল্লাহ্র বন্দনা করতে পারে। এই সব ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য স্ত্রী প্রয়োজনে তার বান্ধবীর গৃহে অথবা শহরের অন্য স্থানে যেতে পারে। এ ছাড়া স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোনো ক্রমেই তার মাহরাম (যে পুরুষের সাথে তার বিবাহ সম্ভব নয়, যেমন পিতা, ভ্রাতা, পুত্র...ইত্যাদি) ছাড়া গৃহের বাইরে পা রাখতে পারবে না। শুধু ব্যতিক্রম হবে হজ্জের ক্ষেত্রে, যেখানে এই ভ্রমণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া অন্য কোনো প্রকার ভ্রমণ স্ত্রীর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং স্বামীও অনুমতি দিতে পারবে না। হানাফি আইন অনুযায়ী, স্ত্রী স্বামী অথবা তার মাহরাম ছাড়া শহরের বাইরে যেতে পারবে যতক্ষণ না এই দূরত্ব ৭৭ কি: মি: (৪৮ মাইল)‑এর অধিক না হয়। (সূত্র ৮)
শরিয়া আইন m 10. 4 (ঐ বই, পৃঃ ৫৩৮):
স্ত্রীর ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা।
স্বামীর কর্তব্য হবে স্ত্রীকে গৃহের বাইরে পা না দেবার আদেশ দেওয়া। (O. কারণ হচ্ছে বাইহাকি এক হাদিসে দেখিয়েছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন:
যে মহিলা আল্লাহ্ ও কিয়ামতে বিশ্বাস করে, সে পারবে না কোনো ব্যক্তির গৃহে ঢোকার, যদি তার স্বামী সেই ব্যক্তির ওপর নারাজ থাকে। আর স্বামী না চাইলে স্ত্রী গৃহের বাইরে যেতে পারবে না।)
কিন্তু স্ত্রীর কোনো আত্মীয় মারা গেলে স্বামী স্ত্রীকে অনুমতি দিতে পারে গৃহের বাইরে যাবার। (সূত্র ৮)
নারীদের উপাসনা করা ও নিজের শ্রী বৃদ্ধির এবং শোক-বিলাপের কতটুকু অধিকার আছে?
পাশ্চাত্যে অবস্থানরত ও পাশ্চাত্যে শিক্ষিত কিছু ইসলামী পণ্ডিত আমাদেরকে সর্বদা শোনাচ্ছেন যে, মুসলিম নারীরা মসজিদে স্বাগতম। আপাতভাবে মনে হবে, এ তো খুব চমৎকার—ইসলাম কতই না মহৎ নারীদের প্রতি! যে কথাটি এই সব পাশ্চাত্য শিক্ষিত ইসলামীরা চেপে যান, তা হচ্ছে যে, ইসলাম সব মুসলিম নারীকেই মসজিদে স্বাগতম জানায় না। এ ব্যাপারে কিছু শরিয়া আইন দেখা যাক।
শরিয়া আইন f 12. 4 (ঐ বই, পৃ: ১৭১):
...নারীদের জন্যে গৃহে উপাসনা (অর্থাৎ নামাজ) করাই উত্তম। (A. তারা তরুণীই অথবা বৃদ্ধাই হোক)। একজন তরুণী, সুন্দরী, আকর্ষণীয় মহিলার মসজিদে পা রাখা অপরাধমূলক।(O এমনকি তার স্বামী অনুমতি দিলেও)। যদি তরুণীটি আকর্ষণীয় না হয়, তবে তার মসজিদে আসা অন্যায় হবে না। আসল কথা হল, তরুণী যেন মসজিদের নামাযীদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে। এই জন্যেই আয়েশা (রঃ) বলেছেন: “নবী (সাঃ) যদি দেখে যেতেন, আজকালকার মহিলারা কী সব কার্যকলাপ করে, তবে উনি নিশ্চয়ই মহিলাদের মসজিদে আসা নিষিদ্ধ করে দিতেন; যেমন করা হয়েছিল বনী ইসরাইলের মহিলাদের.” এই হাদিসটা বুখারি ও মুসলিম দিয়েছেন।
শরিয়া আইন f 20. 3 (ঐ বই পৃঃ ২১৪):
গ্রহণের সময় নামায। এই সময় নামাযটা দলবদ্ধভাবে মসজিদে পড়া উচিত। যেসব মহিলার দেহ আকর্ষণীয় নয়, অথবা যারা বৃদ্ধা, সেই মহিলারাও মসজিদে এই নামায পড়তে পারে। আকর্ষণীয় দেহের মহিলাদের উচিত গৃহের ভেতরে নামায পড়া।
শরিয়া আইন p 42. 2 (3) (ঐ বই পৃঃ ৬৮২):
আল্লাহ ঐ মহিলার প্রতি নযর দেবেন না।
নবী (সাঃ) বলেছেন যে, মহিলার স্বামী গৃহে বর্তমান তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর উপবাস (রোজা) রাখা বে‑আইনি। স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোনো ব্যক্তিকে গৃহে ঢুকতে দিতে পারবে না।
সুন্দরী, তরুণীদের মসজিদে ঢোকা উচিত নয়—নাহয় মেনে নিলাম, এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে অন্যান্য নামাযীদের মনোযোগ নষ্ট না করার জন্য। অন্যায়টা হচ্ছে--এই আইন কেন প্রযোজ্য হবে না সুদর্শন দেহের তরুণদের ওপরে? এই সুদর্শন পুরুষদের প্রতি মহিলারাও যে আকর্ষিত হয়ে পড়তে পারে। এর কারণ কি এই নয় যে, আল্লাহ্ সর্বদাই পুরুষ পছন্দ করেন—কারণ তিনিও যে পুরুষ!
সত্যি কথা হচ্ছে, মোহাম্মদ (সা) নিজেই ছিলেন অত্যন্ত যৌনবৈষম্যবাদী (sexist) মানুষ যা তখনকার আরব সমাজে বিদ্যমান ছিল। যদিও উনি চাইছিলেন তৎকালীন আরব মহিলাদের ভাগ্যের কিছুটা উন্নতি হোক, তথাপি খুব সতর্ক ছিলেন, যাতে আরব সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতায় তেমন বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন না আনেন। তাই উনি কোনোক্রমেই পুরুষ ও মহিলাদের সমান অধিকারের পক্ষপাতী ছিলেন না। আল্লাহ্পাকও এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলেননি। যত বড় বড় কথাই নবীজি (সা) বলুন না কেন, উনার মনের গভীরে বাস করত এক অশিক্ষিত, অমার্জিত, বর্বর বেদুঈন আরব। এবং উনি ভালভাবেই জানতেন, বেদুঈন সমাজে মহিলাদের কীভাবে দেখা হয়। বেদুঈনদের কাছে নারীরা হচ্ছে ‘মাল’ অথবা যৌন সম্ভোগের উপকরণ মাত্র। আমরা এই মনোভাবেরই প্রতিফলন দেখি শরিয়া আইনগুলিতে। নবীজি চাইলেও পারতেন না বেদুঈনদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে। আমরা বিভিন্ন হাদিসে দেখি যে, যখনই পুরুষ এবং মহিলার ব্যাপারে নবীজিকে (সা) সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে—তিনি প্রায় সর্বদাই পুরুষের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এটাই তাঁর বেদুঈন মনের পরিচয়। কারণ মরুভূমির বেদুঈনদের কাছে পুরুষই হচ্ছে সবার ওপরে। নবীজি (সা) তার ব্যতিক্রম হলেন না।
এখানে আরও কিছু হাদিস উদ্ধৃতি দেওয়া হল, যা থেকে আমরা দেখতে পাব, একজন বেদুঈন পুরুষকে তৃপ্ত করতে একজন মহিলার কতদূর পর্যন্ত যেতে হবে।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭, বই ৬২, হাদিস নম্বর ১৭৩:
জাবির বিন আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, নবী (সা) বলেছেন—যদি তুমি রাত্রে বাড়ী পৌঁছ তবে তৎক্ষণাৎ স্ত্রীর নিকট চলে যাবে না। যাবত না সে যৌনাঙ্গের কেশে ক্ষুর ব্যাবহারে পরিচ্ছন্ন হয় এবং মাথার কেশ বিন্যাস করে নেয়। নবী (সাঃ) আরও বললেন: “হে জাবির সন্তান উৎপাদন কর, সন্তান উৎপাদন কর!” (সূত্র ২)
মুসলিম নারীদের জন্য প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করা, তথা তাদের মুখমণ্ডল সুশ্রী করা একেবারেই হারাম। সত্যি বলতে কি, যে সব মুসলিম মহিলা নিজেদের সৌন্দর্য বিকাশে ব্যস্ত, তাঁদেরকে মুসলিম নারী বলা যাবে না। তাই বলা যায়, যেসব মুসলিমাহ্ ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে, চক্ষুতে মাসকারা দিয়ে, গালে কুমকুম... ইত্যাদি লাগিয়ে গৃহের বাইরে যান, তাঁদের উচিত হবে ঐ সব হারাম প্রসাধন সামগ্রী ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। তা না করলে এই সব মুসলিমরা যে ইসলামী নরকের আগুনে চিরকাল পুড়তে থাকবেন।
এই ব্যাপারে কিছু হাদিস দেখা যাক।
সহি মুসলিম; বই ১, হাদিস নম্বর ১৮৭:
আবু বুরদা বলেছেন যে আবু মুসা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে আসল ও উচ্চরবে বিলাপ আরম্ভ করল। যখন আবু মুসা ধাতস্থ হলেন তখন বললেন: তুমি কি জান না? আমি হলপ করে বলছি যে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “যে কেউ কারও অসুস্থতায় মস্তক মুণ্ডন করবে, উচ্চরবে কান্নাকাটি করবে ও পোশাক ছিঁড়ে ফেলবে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই।“ (সূত্র ৩)
সুনান আবু দাঊদ; বই ১, হাদিস নম্বর ১৮৮:
আবু হুরায়রা বর্ণনা করলেন:
আল্লাহর সৃষ্ট মহিলাদেরকে মসজিদ যেতে বাধা দিবে না। তবে তাদেরকে মসজিদে যেতে হবে সুগন্ধি না মেখে। (সূত্র ৪)
মজার ব্যাপার হচ্ছে, নবীজি পুরুষদেরকে সুপারিশ করেছেন, তারা মসজিদে যাবার সময় যেন সুগন্ধি মেখে নেয়। দেখা যাচ্ছে, একজন সুন্দরী তরুণী যার আছে আকর্ষণীয় দেহ, সে ইসলামে এক বিষম বিড়ম্বনার পাত্র। তাকে নিয়ে কী করা? মহিলা যদি বৃদ্ধা, অসুন্দর, ও কুৎসিত দেহের অধিকারী হয়, তবে ইসলামে তার স্থান অনেক উঁচুতে।
দেখা যাক আরও দুই একটি হাদিস।
মালিকের মুয়াত্তা; হাদিস ৫৩. ১. ২:
ইয়াহিয়া—মালিক—ওহাব ইবনে কায়সান থেকে। ইয়াহিয়া বর্ণনা করলেন:
মোহাম্মদ ইবনে আমর বলেছেন: “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের সাথে বসেছিলাম। এক ইয়ামানি ব্যক্তি এসে গেল। সে বলল: ‘ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু। এরপর ব্যক্তিটি আরও কিছু বলল। ইবনে আব্বাস (তখন তিনি অন্ধ ছিলেন) জিজ্ঞাসা করলেন: “ব্যক্তিটি কে?” উপস্থিত যারা ছিল তারা বলল: “এ হচ্ছে এক ইয়ামানি ব্যক্তি”। এরপর তারা তার পরিচয় জানিয়ে দিল। ইবনে আব্বাস বললেন: শুভেচ্ছার শেষ শব্দ হচ্ছে—আশীর্বাদ”।
ইয়াহিয়া তখন মালিককে জিজ্ঞাসা করলেন: “আমরা কি মহিলাদেরকে শুভেচ্ছা বা সম্ভাষণ জানাতে পারি?” তিনি উত্তর দিলেন: “এক বৃদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানাতে অসুবিধা নাই। তবে এক তরুণীকে আমি শুভেচ্ছা জানাই না।”
অধ্যায়‑৮ : খৎনা এবং জিহাদ করা
মহিলাদের খৎনা করা
এ কেমন কথা! মহিলাদের খৎনা হয় কেমন করে। তাদের যৌনাঙ্গে এমন কিছু কি আছে, যা কেটে ফেলা দরকার?—অনেকেই এই প্রশ্ন করবেন। এর সোজা উত্তর হল: হ্যাঁ, মহিলাদেরও খৎনা করতে হবে—এটাই ইসলামী আইন। ঘুরে আসুন মিশর—জানবেন, প্রায় সমস্ত মহিলাই সেখানে খৎনা করা। ঘুরে আসুন ইন্দোনেশিয়া, পৃথিবীর সর্ববৃহত্তম ইসলামিক রাষ্ট্র—সেখানে শতকরা নব্বই মহিলা খৎনার শিকার। এই একই অবস্থা মালয়েশিয়াতে। তা হলে বাংলাদেশে কী হচ্ছে? খুব সম্ভবত: বাংলাদেশে এই বর্বর বেদুঈন প্রথা নেই। অথবা থাকলেও অত্যন্ত গোপনে তা করা হয়। আর এও হতে পারে যে বাংলাদেশে যে-শরিয়া আইন চালু আছে, তা হানাফি আইন। সুন্নিদের মধ্যে হানাফি আইনই একটু কম বর্বরোচিত। হানাফি আইন মতে, মেয়েদের খৎনা করা বাধ্যতামূলক নয়। তাই আমাদের মহিলাদের কিছু রক্ষা।
প্রশ্ন হতে পারে, কেন মেয়েদের খৎনা করা হবে—ইসলামী আইন অনুযায়ী? এর সরাসরি উত্তর হবে - মেয়েদের যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করার জন্য। তাদের যৌনকামনার কেন্দ্রভূমিকে কেটে ফেলতে হবে। তা না করলে যে পুরুষদের সর্বনাশ হয়ে যাবে! পুরুষরা যে পারবে না মেয়েদের অদম্য যৌনক্ষুধার চাহিদা মেটাতে। এই বর্বর প্রথাকে সভ্যতার প্রলেপ দিতে অনেক ইসলামী জ্ঞানীরা বলে বেড়াচ্ছেন যে, মেয়েদের খৎনা নাকি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল। কী ডাহা মিথ্যা কথা! অস্ট্রেলিয়ার প্রধান মুফতিকে (উনার নাম খুব সম্ভবত: ফেহমী) একবার এক মহিলা সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করল: কেন মুসলিম মেয়েদের খৎনা করা হয়, ফেহমি সৎ উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, সাধারণত উষ্ণ দেশের মেয়েদের যৌনতাড়না থাকে অনেক বেশি। তারপর ফেহমি ঐ মহিলা সাংবাদিকের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন: “তোমার হয়ত এর (মহিলা খৎনা) প্রয়োজন নেই; কিন্তু ঐ মহিলাদের আছে।” আমি স্মৃতি থেকে এই ঘটনাটি বললাম। কেউ সূত্র চাইলে গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন।
এখন দেখা যাক মহিলাদের খৎনা সম্পর্কে ইসলামী আইন কানুন কী বলে।
শরিয়া আইন e 4. 3 (উমদাত আল‑সালিক, পৃঃ ৮৫৯):
খৎনা একেবারে বাধ্যতামূলক। (O. পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যে। পুরুষদের জন্যে খৎনা হবে পুং‑জননেন্দ্রিয়ের আবরক ত্বক কর্তন করা। মহিলাদের খৎনা হবে ভগাঙ্কুরের আবরক ত্বক ছেদন দ্বারা। এর মানে নয় যে, সম্পূর্ণ ভগাঙ্কুর কেটে ফেলা, যেটা অনেকেই ভুলবশত বলে থাকেন।) (হানবালিরা বলেন যে, মহিলাদের খৎনা বাধ্যতা নয়—সুন্না। হানাফিরা বলে যে, মহিলাদের খৎনা শুধুমাত্র স্বামীকে সম্মান দেখানোর জন্যে।) (সূত্র ৮)
সুনান আবু দাউদ; বই ৪১ হাদিস নম্বর ৫২৫১:
উম আতিয়া আল‑আনসারিয়া বর্ণনা করেন:
মদিনার এক মহিলা মেয়েদের খৎনা করত। নবী (সাঃ) তাকে বললেন: “খুব বেশী কেটে দিবে না। কেননা এতে স্ত্রীর ভাল হবে এবং স্বামীও বেশী মজা পাবে”। (সূত্র ৪)
ওপরের আইনগুলো থেকে বোঝা গেল, বাঙালি মহিলারা যদি তাঁদের স্বামীকে সত্যিই ভালবাসেন এবং সম্মান করেন, তবে প্রমাণ স্বরূপ নিজেদের যৌনাঙ্গের খৎনা করে নিতে পারেন, উপড়ে ফেলতে হবে তাঁদের যৌনকামনার কেন্দ্রকে। এখানে আমি কিছু বাড়াবাড়ি বলছি না—ইসলামী আইনে যা লেখা আছে, তারই ব্যাখ্যা দিচ্ছি বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে।
মুসলিম মহিলাদের কী ধরনের মৌলিক অধিকার আছে?
ইসলামী আইন অনুযায়ী, একজন মুসলিম পুরুষ একজন ইহুদি অথবা খ্রিষ্টান মহিলাকে বিবাহ করতে পারবে। এ জন্যে মহিলাটির ইসলাম গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়—যদিও মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে ভাল হয়। অনেকে এর সাথে সাবি ও জরথুস্তদের মহিলাদেরও অন্তর্গত করেন। কিন্তু মুসলিম নারীদেরকে ইসলাম কিছুতেই অন্য ধর্মের পুরুষকে বিবাহ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই বিধর্মী পুরুষ ইসলামে দীক্ষিত হয়। এই‑ই হচ্ছে মুসলিম নারীদের প্রতি ইসলামী ন্যায়বিচার! ইসলামী পণ্ডিতেরা তাই প্রচার করছেন—ইসলাম মহিলাদেরকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে!
দেখা যাক, কোরআন কী বলে এই ব্যাপারে।
কোরআন সূরা আল‑বাকারা, আয়াত ২২১ (২:২২১):
আর তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করনা, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরেকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ্ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
আচ্ছা, মুসলিম মহিলাদের কি অধিকার আছে মিহি ও একটু স্বচ্ছ পোশাক পরার—যেমন নাইটি অথবা নাইলনের সূক্ষ্ম গাউন? ইসলামী আইন অনুযায়ী, একজন মুসলিম মহিলা এমন পোশাক পরতে পারবে না, যাতে তার অন্তর্বাস দেখা যেতে পারে, এমনকি তা যদি শোবার ঘরে একান্ত নিভৃতেও হয়। এরকম করলে আল্লাহ্ নাকি নারাজ থাকেন। ভালো কথা—এখানে মহিলাদের একটু সম্ভ্রম-ভাবে রাত্রের পোশাক পরতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আপত্তি হচ্ছে, এ ব্যাপারে মুসলিম পুরুষদেরকে কিছুই বলা হয়নি। তারা চাইলে শুধুমাত্র জাঙ্গিয়া পরেও ঘুমাতে পারে—আল্লাহ্ তাতে নারাজ হবেন না।
দেখুন, হাদিস কী বলছে।
সহি মুসলিম; বই ২৪ হাদিস নম্বর ৫৩১০:
আবু হুরায়রা বর্ণনা করলেন:
আল্লাহ্র রসুল (সাঃ) বলেছেন: “নরকের দুই অধিবাসী আমি যাদেরকে দেখিনি—তারা হল সেই সব ব্যক্তি যারা ষাঁড়ের লেজের মত চাবুক দিয়ে ঢোল পিটায় ও সেই সব মহিলারা যারা এমন পোশাক পরিধান করে যে তাদেরকে উলঙ্গই দেখা যায়। এই সব মহিলারা অশুভের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং তাদের স্বামীকেও অশুভের দিকে নিয়ে যাবে। এদের মাথা বখত উটের কুব্জের মত এক দিকে কাত হয়ে থাকবে। এরা স্বর্গে প্রবেশ করবে না বা স্বর্গের সুবাসও গ্রহণ করবে না যদিও স্বর্গের সুবাস অনেক দূর থেকেই পাওয়া যাবে। এরা তা থেকে বঞ্চিত হবে। (সূত্র ৩)
আজকের বিশ্বে আমরা এর উদাহরণ সর্বদাই দেখছি। টেলিভিশন খুললেই দেখছি, কীভাবে তালিবানরা ইসলাম কায়েম করছে, কীভাবে সুদানে ইসলামী স্বর্গ তৈরি করা হচ্ছে। কীভাবে সোমালিয়ায়, ইরানে, পাকিস্তানে নারীদের প্রতি আচরণ করা হচ্ছে। চিন্তা করা যায় কি, বোরখার ভেতরে কেমন আরাম আছে? তার ওপর গ্রীষ্মের উত্তাপে? আমরা ১৯৭০‑এর দিকে দেখেছিলাম, কেমন করে মাওবাদীরা জোরপূর্বক তাদের নির্দেশিত পোশাক মাও-কোট পরিয়ে দিচ্ছে ছেলে-মেয়ে সবাইকে। এই ব্যাপারে মনে হচ্ছে ইসলামের সাথে কম্যুনিজমের বেশ মিল পাওয়া যাচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই স্বেচ্ছাচার ও একনায়কত্ব। [পাঠকেরা এখন সিরিয়া‑ইরাকের আইএস-দের উদাহরণ দেখতে পারেন এরাই হচ্ছে সত্যিকার ইসলাম কায়েমকারী—যারা আল্লাহ্-রসুলের দেয়া প্রত্যকেটি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। লক্ষ্য করবেন যে, এই প্রবন্ধে যেসব শরিয়া আইন এবং হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো আইএস-এর কর্মকাণ্ডের সাথে শতকরা ১০০ ভাগ মানানসই—লেখক।]
এখন আমরা দেখব, মহিলাদের পর্দার ব্যাপারে ইসলামী আইন কী রকম।
শরিয়া আইন f 5. 6 (উমদাত আল‑সালিক, পৃঃ ১২২):
একজন মহিলাকে তার মাথা ঢেকে রাখতে হবে (খিমার দ্বারা)। এছাড়াও শরীরের ওপরে ভারী আচ্ছাদন পরতে হবে, যা মহিলার সম্পূর্ণ দেহকে ঢেকে রাখবে। (O.কিন্তু এমনভাবে গায়ে জড়াবে না, যাতে করে তার দাঁড়ান, ওঠা-বসা করতে বাধা আসে অথবা নামায পড়তে অসুবিধা হয়। মহিলাটি নামায পড়ার সময় তিন পোশাক পরবে)। (সূত্র ৮)
শরিয়া আইন f 2. 3 (ঐ বই, পৃ ৫১২):
অধিকাংশ আলেমের মতে (n. হানাফিরা বাদে যার বৃত্তান্ত রয়েছে নিম্নের ২.৮‑এ) কোনো মহিলার পক্ষে মুখমণ্ডল অনাবৃত রেখে গৃহের বাইরে যাওয়া বেআইনি—কোনো প্রলোভন থাকুক আর না থাকুক। যখন প্রলোভন থাকে (মহিলার ওপর কোন পুরুষের), তখন আলেমরা একমত যে, মহিলার মুখমণ্ডল আবৃত থাকতেই হবে। এখানে প্রলোভন বলতে বোঝানো হচ্ছে যৌনসঙ্গমের ইচ্ছা অথবা তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। তবে অগত্যায় পড়লে যদি মহিলার প্রয়োজন হয়, তবে সে দৃষ্টি দিতে পারে, যদি প্রলোভনের সম্ভাবনা না থাকে। (সূত্র ৮)
শরিয়া আইন w 52. 1 (১০৮) (ঐ বই পৃ ৯৭৩):
মহিলা পাতলা পোশাক পরতে পারবে না।
মহিলাদের পাতলা পোশাক পরা অপরাধতুল্য। যে মহিলা পাতলা পোশাক পরে তার দেহের বৈশিষ্ট্য দেখাবে অথবা অন্যের প্রতি হেলে পড়বে অথবা অন্যকে তার দিকে হেলে পড়তে দেবে, সেও এই পর্যায়ে পড়বে।
শরিয়া আইন w 52. 1 (272) (ঐ বই পৃ ৯৯‑৯৯):
মহিলাদের সুগন্ধি মেখে গৃহের বাইরে যাওয়া অপরাধ, এমনকি তাতে স্বামীর অনুমতি থাকলেও।
শরিয়া আইন m 2. 3 (A) (ঐ বই, পৃঃ ৫১২):
কোনো মহিলার বিবাহযোগ্য কোনো পুরুষের নিকটে থাকা বেআইনি। (A.নিজের স্ত্রী অথবা অ-বিবাহযোগ্য আত্মীয় ছাড়া কোনো পুরুষের জন্যে অন্য কোনো নারীর সাথে একাকী থাকা একেবারেই বেআইনি। তবে যদি দুই নারীর সাথে পুরুষ একা থাকে, তবে তা বেআইনি হবে না।
মহিলাদের জিহাদে যোগদান
ইসলাম বিশারদরা প্রায়শ বলেন যে, মহিলাদের জন্য প্রধান জিহাদ হচ্ছে হজ্জ। এটা সত্যি যে, এ ব্যাপারে কিছু হাদিস আছে (যেমন সাহিহ বুখারি খণ্ড ২, বই ২৬, হাদিস ৫৯৫)। যে বিষয়টা ইসলামী বিশারদরা চেপে যান, তা হচ্ছে ঐ হাদিস অর্ধসত্য। এই হাদিসের প্রসঙ্গ হচ্ছে এই যে, যখন বিবি আয়েশা জিহাদে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন নবীজি (সা) আয়েশাকে বলেছিলেন যে, তাঁর (আয়েশার) জন্যে সবচাইতে ভাল জিহাদ হবে হজ্জ মাবরুর (সিদ্ধ হজ্জ)। এখন দেখা যায়, অনুবাদকরা তাঁদের ইচ্ছামত ব্র্যাকেটে (নারীদের জন্যে) জুড়ে দিয়েছেন। বিবি আয়েশা যখন জিহাদে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তখন তিনি নিতান্তই নাবালিকা ছিলেন—তাই নবীজি হয়ত চাননি ঐ অল্প বয়সী মেয়েটা জিহাদে যোগদান করে অঘোরে প্রাণ হারায়।
আমরা আরও দেখি, কেমন করে এইসব ইসলামী পণ্ডিতেরা, যাঁদের বেশিরভাগই পাশ্চাত্য দেশে বাস করেন, তাঁদের দ্বৈত ভূমিকা দেখান—অর্থাৎ দুই-মুখে কথা বলেন। যখন পাশ্চাত্যে থাকেন, তখন বলেন, জিহাদ মানে মানসিক যুদ্ধ করা, নিজেকে উন্নত করার জন্যে, নিজের বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধ করা। কী সুন্দর কথা! এ কথায় কার না মন ভিজবে! কিন্তু এই ইসলামী পণ্ডিতেরাই যখন ইসলামী স্বর্গে যাবেন, তখন বলবেন, জিহাদ মানে ইসলাম প্রচারের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করা—কাফেরদের মেরে বিশ্বব্যাপী ইসলাম কায়েম করা।
এই ব্যাপারেও আমরা লক্ষ্য করি, ইসলামের অন্যায় আচরণ—মহিলাদের ওপর। শরিয়া আইন বলে মহিলাদের জন্যে জিহাদে যোগদান করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু যখন জিহাদে লব্ধ লুটের মাল ভাগ হবে, তখন মহিলা জিহাদিরা কোনো নির্দিষ্ট ভাগ পাবে না। তারা শুধু পাবে একটুমাত্র পুরস্কার—এই আর কি।
দেখা যাক, শরিয়া আইন এ ব্যাপারে কী বলে।
শরিয়া আইন o 9. 3 (ঐ বই পৃঃ ৬০১)
জিহাদ বাধ্যতামূলক (O.ব্যক্তিগতভাবে) সবার জন্য (O.যারা সমর্থ, পুরুষ এবং মহিলা, বৃদ্ধ ও তরুণ), যখন শত্রু মুসলিমদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে।
... একজন মহিলা যে জিহাদে যোগদান করবে, যখন শত্রু চারিদিকে ঘিরে ফেলবে, তখন তার কাছে দু’টি সিদ্ধান্ত থাকবে ‑ যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করা অথবা শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করা, যদি মহিলা মনে করে যে, আত্মসমর্পণ করলে তার প্রতি কোনো অসদাচরণ করা হবে না। কিন্তু যদি মহিলা মনে করে যে, আত্মসমর্পণের পরেও সে নিরাপদে থাকবে না, তখন তাকে লড়াই করতেই হবে, সে মহিলা কোনোক্রমেই শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। (সূত্র ৮)
তা’হলে আমরা দেখছি যে, মহিলারা জিহাদে যোগদান করতে বাধ্যগত, এমনকি জিহাদে তারা মৃত্যুবরণও করে নিতে পারে। লক্ষ্য করবেন, আজকাল বেশ কিছু ইসলামী আত্মঘাতী বোমারুরা হচ্ছে মহিলা। এই সকল মহিলারা যে অক্ষরে অক্ষরে শরিয়া আইন মেনে চলেছে, তাতে আমাদের কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
এখন আমরা পড়ব নিচের হাদিস, যেখানে মহিলা জিহাদিদের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। এই হাদিস বেশ লম্বা, তাই প্রাসঙ্গিক অংশটুকুই উদ্ধৃত করা হবে।
সহি মুসলিম; বই ১৯, হাদিস নম্বর ৪৪৫৬
ইয়াজিদ বিন হুরমু্য বর্ণনা করলেন যে নাজদা একটা পত্র লিখলেন আব্বাসকে পাঁচটা ব্যাপারে।
... আমাকে বলুন আল্লাহ্র রসুল (সাঃ) যখন মহিলাদেরকে জিহাদে নিলেন তখন কি রসুলুল্লাহ মহিলাদের জন্য যুদ্ধে-লব্ধ মালের (খুমুস) জন্যে কোন নিয়মিত অংশীদার করেছিলেন? ... ইবনে আব্বাস উত্তরে লিখলেন: ...কখনও কখনও রসুলুল্লাহ মহিলা জিহাদিদের সাথে মিলে যুদ্ধ করেছেন। এছাড়া মহিলা জিহাদিরা আহত যোদ্ধাদের সেবা করত। জিহাদে লব্ধ মালের মহিলারা কিছু পুরষ্কার পেত। কিন্তু রসুলুল্লাহ মহিলাদের জন্য কোন নিয়মিত অংশভাগ রাখেননি।...(সূত্র ৩)
অধ্যায়‑৯ : ইসলামের নারী শিকার
যুদ্ধবন্দিনীদের কী অবস্থা?
এই প্রসঙ্গে ‘ইসলামে যৌনতা’ পর্বে বিশদ আলোচনা হয়েছে। ইচ্ছা করলে পাঠকেরা সরাসরি ‘ইসলামে যৌনতা’ পর্বে অধ্যায় ১৭‑১৮‑তে চলে যেতে পারেন। তবে এখানে কিছু বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে, যা পাঠকদের জন্য দরকারি হতে পারে।
ইসলামী আইন অনুযায়ী, যে সব কাফের যুদ্ধবন্দিনী ইসলামী সৈন্যদের হাতে ধরা পড়বে, তাদের সাথে ইসলামী সৈন্যরা অবাধ যৌনসঙ্গম করতে পারবে। নবীজির সময় থেকেই এই ব্যবস্থা চলে আসছে। নবীজি নিজেও এই কর্ম করেছেন এবং তাঁর সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকেও এই কর্ম করতে আদেশ দিয়েছেন। উদাহরণ দেওয়া যাক এক সুন্দরী ইহুদি তরুণী রিহানার (অথবা রায়হানা)। সে অন্য এক ইহুদি ছেলের সাথে বিবাহিতা ছিল। রসুলুল্লাহ বনি কুরায়যা ইহুদীদের আবাসস্থল আক্রমণ করে তাদের ওপর লুটতরাজ চালান এবং তাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। এই আত্মসমর্পিত ইহুদিদের প্রতি তিনি তাঁর সুহৃদ সা’দ বিন মুয়াযের বিচারের রায় অনুযায়ী আদেশ দেন যে, সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ইহুদি পুরুষকে গলা কেটে হত্যা করার আর ইহুদি মহিলা ও শিশুদের ক্রীতদাসের বাজারে বিক্রি করার। নবীজির আদেশ যথাযথ পালন করা হল, কিন্তু এই বন্দিনীদের মাঝে তিনি অপূর্ব সুন্দরী যৌনাবেদনময়ী তরুণী রিহানাকে দেখে তার সাথে সহবাস করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। তাই রিহানাকে ক্রীতদাসের বাজারে না পাঠিয়ে নবীজি তাকে তুলে নেন আপন বিছানায়। পরে নবিজী রিহানাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিতা হয়ে তাঁকে বিবাহের পরামর্শ দিলে রিহানা তা করতে অস্বীকার করে। তাই রিহানা তার জীবন কাটায় রসুলুল্লাহর বিছানায় তাঁর যৌনদাসী হিসেবে। এছাড়াও ইসলামের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, নবীজি নিজে তাঁর দুই জামাতা, আলী ও উসমানকে উপহার দিয়েছেন সুন্দরী যুদ্ধবন্দিনীদের, যেন তারা ঐ বন্দিনীদেরকে অতিরিক্ত যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এই হলো নবীজির নৈতিক চরিত্রের উদাহরণ—যার উদাহরণ ইসলামী চিন্তাবিদরা আমাদেরকে বলেন অনুসরণ করতে।
এরপরেও জুরাইরার কথা এসে যায়। নবীজি এই অপূর্ব সুন্দরী, বিবাহিতা, অল্প বয়স্কা ইহুদি মেয়েটিকে বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে পেয়ে যান যুদ্ধবন্দিনী হিসাবে। আরও পেয়েছেন সফিয়াকে খাইবারের যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে। এইসব বিষয়ে বেশ কিছু লেখা পড়া যেতে পারে বিভিন্ন জায়গায় (যথা ‘ইসলামে যৌনতা প্রবন্ধে)। ইসলামী পণ্ডিতেরা এই সব ঘটনায় শুধু দেখেন নবীজির (সা) মাহাত্ম্য। তাঁরা বলেন যে, দেখুন, রসুলুল্লাহ কত মহান, উদার এবং করুণাময় ছিলেন। তিনি ঐ সব অসহায় যুদ্ধবন্দিনীদের বিবাহ করে তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা দিয়েছেন। অনেক ইসলামী বিশারদ এই বলেন যে, ঐ সব মহিলা, যাদের স্বামী, ভ্রাতা ও পিতাদের নবীজি হত্যা করেছেন, তারা নাকি নবীজিকে দেখা মাত্র তাঁর প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। তাই ঐ যুদ্ধবন্দিনীদের অনুরোধেই রসুলুল্লাহ তাদেরকে বিবাহ করেন।
কী অপূর্ব কথা আমার শুনছি এই সব ইসলামী মিথ্যাচারীদের কাছ থেকে!
নবীজির এহেন আচরণকে নোংরা, জঘন্য ও বর্বরোচিত ছাড়া বলার আর কোনো ভাষা আমরা পাই না।
এই যুগে অনেক উচ্চশিক্ষিত মুসলিম পণ্ডিত বলেন যে, যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সহবাসের নিয়ম নবীজির (সা) সময় ছিল—এখন তা করা যাবে না। কী মিথ্যা কথায়ই না তাঁরা বলে যাচ্ছেন। কারণ কোরআন, হাদিস মুসলিমদেরকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, মোহাম্মদের উদাহরণ প্রত্যেক মুসলিমের অনুসরণ করা বাধ্যবাধকতামূলক। উনি যেমনভাবে গোসল করেছেন, যেমনভাবে পানি পান করেছেন, যেমনভাবে মলমূত্র ত্যাগ করেছেন, যেমনভাবে নারী দেহ উপভোগ করেছেন—এই সব কিছুই মুসলিমদের অনুকরণ করতে হবে। তাই নবীজি যেমনভাবে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সহবাস করেছেন, আজকের সমস্ত মুসলিমদের জন্যও তা অবশ্যকরণীয়।
রসুলুল্লাহর উদাহরণ থেকে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যে আজও ফরজ, তার সব চাইতে প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাই আমরা বাংলাদেশেই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি ইসলামী সৈন্যরা বাংলাদেশে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় প্রায় তিরিশ লাখ নিরীহ বাঙালি প্রাণ হারায়। এছাড়াও পাকিস্তানি জাওয়ান আমাদের দেশের অগণিত মহিলাদের (তার সংখ্যা হবে আড়াই লক্ষের মত) যুদ্ধবন্দিনী হিসাবে (গনিমতের মাল) ধরে নিয়ে যায়, যৌন উৎপীড়ন চালায় এবং অনেককে যৌনসঙ্গমের পর হত্যা করে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনমালা অনুযায়ী, এ এক বিশাল অপরাধ এবং এর বিচারে দোষীরা মৃত্যুদণ্ড পেতে পারে। কিন্তু হায়! ইসলামী আইন কী বলছে? ঐ সব ইসলামী সৈন্যরা কোনো অপরাধই করেনি। ওরা যে নবীজির উদাহরণ পালন করেছে মাত্র।
এখন দেখুন, হাদিস কী বলেছে এ ব্যাপারে।
সুনান আবু দাউদ; বই ১১ হাদিস ২১৫০:
আবু সাইদ আল‑খুদরি বর্ণনা করলেন: হুনাইন যুদ্ধের সময় আল্লাহ্র রসুল আওতাসে এক অভিযান চালালেন। মুসলিম সৈন্যরা তাদের শত্রুকে মোকাবেলা করল এবং তাদেরকে পরাজিত করল। তারা অনেক যুদ্ধ-বন্দিনী পেল। যুদ্ধ-বন্দিনীদের কাফের স্বামীরা একই স্থানে থাকার দরুন রসুলুল্লাহর অনেক সাহাবি তাদের বন্দিনী স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতে বিব্রত বোধ করলেন। এই সময় আল্লাহ্ নাজেল করলেন কোরানের আয়াত ৪:২৪:
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়—এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্র হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য—ব্যভিচারের জন্যে নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ্ হবে না। যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ্ সু-বিজ্ঞ, রহস্য-বিদ। (সূত্র ৪)
এই আয়াতের মানে পরিষ্কার—মুসলিম সৈন্যরা তাদের হাতে পাওয়া গনিমতের মাল তথা যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে অবাধ সহবাস করতে পারবে—এমনকি যখন ঐ সব ‘মালের’ কাফের স্বামীরাও আশেপাশে থাকবে।
দেখা যাক এই হাদিসটা।
সহি মুসলিম; বই ৮, হাদিস ৩৪৩২
আবু সাইদ আল‑খুদরি বর্ণনা করলেন:
হুনায়েন যুদ্ধের সময় আল্লাহ্র রসুল আওতাসে এক সৈন্যদল পাঠালেন। তারা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করল। এরপর মুসলিম সৈন্যরা যুদ্ধবন্দি নিলো। মহিলা বন্দিদের সাথে তাদের মূর্তিপূজক স্বামীরাও ছিল। নবীজির সাহাবিরা ঐ মহিলাদের সাথে তাদের স্বামীর সামনে সহবাস করতে নারাজ থাকলেন। এই সময় আল্লাহ পাঠিয়ে দিলেন এই আয়াত: “এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়—এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্র হুকুম। (৪:২৪) (সূত্র ৩)
অনেকেই হয়ত ভাববেন এই ধরণের যৌনক্রিয়া হয়ত শুধুমাত্র সাধারণ ইসলামী সৈনিকদের মাঝেই সীমিত ছিল। কেননা এরা অনেক দিন যুদ্ধে থাকার কারণে সহবাসের জন্য অধীর হয়ে উঠেছিল। ইসলামের যেসব বড় বড় রত্ন আছেন, তাঁরা কোনোভাবেই এই ধরণের বর্বরোচিত কর্ম করতে পারেন না। কিন্তু দেখুন নিচের হাদিসটা। এই হাদিসে আমরা জানতে পারছি যে, রসুলুল্লাহ তাঁর জামাতা আলীকে যুদ্ধবন্দিনী উপহার দিলেন যৌন-উপভোগ করার জন্যে। এই সময় আলী রসুলুল্লাহর কন্যা ফাতেমার সাথে বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু তাতে কী আসে যায়? কেউ যখন এই নোংরা ব্যাপারটি নিয়ে প্রশ্ন তুলল, তখন নবীজি এমনও বললেন যে, আলী আর চাইতেও বেশি (অর্থাৎ যৌনসম্ভোগ) পাবার অধিকার রাখে। এই হচ্ছে রসুলুল্লাহর নৈতিক চরিত্রের উদাহরণ।
সহি বুখারি; খণ্ড ৫ বই ৫৯ হাদিস ৬৩৭:
বুরায়দা বর্ণনা করলেন:
রসুলুল্লাহ আলীকে খালেদের কাছে পাঠালেন খুমুস (যুদ্ধে‑লব্ধ মাল) নিয়ে আসার জন্যে। আমি আলীকে ঘৃণা করতাম। সে সময় আলী গোসলে ছিলেন (এক যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে সহবাস করার পর)। আমি খালেদকে বললাম: আপনি কি তাকে দেখলেন (অর্থাৎ আলীকে)? আমরা নবীজির কাছে পৌঁছিলে তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করলাম। তিনি বললেন: “হে বুরায়দা, তুমি কি আলীকে ঘৃণা কর?” আমি বললাম: “জী হ্যাঁ”। তিনি বললেন: “তুমি তাকে ঘৃণা করছ, তবে সে তো ঐ খুমুস থেকে আরও বেশী পাবার যোগ্য”। (সূত্র ২)
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, কোনো যুদ্ধবন্দিনী যদি গর্ভবতী থাকে কিংবা জিহাদিদের সাথে সহবাস করার ফলে গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তবে তার কী হবে? এ ব্যাপারে ইসলামের উত্তর আছে। নবীজি যুদ্ধবন্দিনী ধরার পর সেগুলো তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে বিতরণ করে দিতেন—নিজের জন্যে খাসা ‘মাল’টি রেখে। জিহাদিরা সাধারণত তাদের স্ব-স্ব ভাগে পড়া ‘মালের’ সাথে সহবাস করে ঐ ‘মাল’টি মদিনার অথবা নিকটবর্তী ক্রীতদাসের বাজারে বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে নিত। ‘মাল’ কুৎসিত, মোটা, রুগ্ন থাকলে অনেক কম দাম পেত। আর ‘মাল’ যদি গর্ভবতী হত, তো সেই মালের প্রায় কোনো মূল্যই থাকত না। তাই জিহাদিরা এমনভাবে তাদের স্ব স্ব ‘মালের’ সাথে যৌনসংযোগ করতো যেন ‘মাল’ গর্ভবতী না হয়ে যায়। সেই যুগে তো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল না। তাই জিহাদিদের জন্যে একটি পথই খোলা ছিল—তা ছিল ‘আজল’। এই আরবি শব্দের সঠিক বাংলা কী, জানা নেই। তবে এর সরাসরি মানে হচ্ছে - যোনির বাইরে বীর্যপাত করা। অর্থাৎ চরম পুলকের (orgasm) মুহূর্তে পুংলিঙ্গ যোনির বাইরে এনে বীর্যপাত ঘটান। অনেক জিহাদি আবার এইভাবে অতীব যৌনসুখ উপভোগ করতে পছন্দ করত। কেননা তারা সহজে তাদের স্ত্রীর সাথে এইভাবে যৌন-উপভোগ করতে পারত না—ইসলামী আইন বলে যে, স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ‘আজল’ করা যাবে না। শুধুমাত্র ক্রীতদাসী অথবা যুদ্ধবন্দিনীর সাথে ‘আজল’ করা যাবে কোনো অনুমতি ছাড়াই। আজকের দিনেও এই ইসলামী আইন বলবত থাকছে।
এ ব্যাপারে দেখা যাক কিছু হাদিস।
সহি বুখারি; খণ্ড ৭ বই ৬২ হাদিস ১৩৭:
আবু সাইদ আল‑খুদরি বর্ণনা করলেন:
এক জিহাদে আমরা শত্রুপক্ষের নারী বন্দি পেলাম। তারা আমাদের হাতে আসলে আমরা তাদের সাথে আজল করে সহবাস করলাম। এরপর আমরা রসুলুল্লাহকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: “তাই নাকি! তোমরা কি এরূপ করে থাক?” রসুলুল্লাহ তিনবার এই প্রশ্ন করলেন, এবং বললেন: “আখেরাত পর্যন্ত যত লোক সৃষ্টি হবে তাদের প্রত্যেকটি অবশ্য জন্মলাভ করবে”। (সূত্র ২)
বলা বাহুল্য, ইসলামের এহেন নৈতিক নিম্নতায় অনেক শিক্ষিত ইসলামী বিশারদরা লজ্জিত হয়ে থাকেন। তাই ইসলামের লজ্জা চাপা দেবার জন্যে অনেককিছুও বলে থাকেন—যেমন: আমাদের এসব দেখতে হবে স্থান, কাল, ও প্রসঙ্গ ভেদে। অনেকেই বলেন, ইসলামকে ভুল বোঝা হচ্ছে, ইসলাম বুঝতে হলে প্রচুর পড়াশোনা করা দরকার, এই ব্যাপারে ইসলামের পণ্ডিতদের সাথে আলোচনা করা দরকার... এই সব কত বিচিত্র যুক্তি! অনেকে এমনও যুক্তি দেখান যে, ঐ সব বন্দিনীদেরও যৌনক্ষুধার নিবৃত্তি হচ্ছে—তাই মন্দ কী? যখন প্রশ্ন করা হয়—আজকের দিনেও কি ঐ ইসলামী প্রথা মানা যাবে কি না, তখন উনারা প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া পছন্দ করেন—হয়ত বা বলবেন: “দেখুন এ ব্যাপারে ইসলামে ন্যায়সঙ্গত নিয়মকানুন আছে। তাই ইসলাম যা করবে, তা ভালোর জন্যেই করবে।”
এ ব্যাপারে এক ইসলামী মওলানাকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর পরিষ্কার উত্তর হল আজকের দিনেও ঐ ইসলামী নিয়ম প্রযোজ্য এবং আজকেও যদি ইসলামী জিহাদিরা কাফের রমণী লাভ করে যুদ্ধবন্দী হিসেবে, তবে তারা বিনা বাধায় ঐ রমণীদের সাথে সহবাস করতে পারবে।
এই প্রশ্নের উত্তর যে ওয়েব সাইটে দেওয়া হয়েছিল, সেই ওয়েব সাইট, বোধ করি, এখন অচল। তবুও আগ্রহী পাঠকেরা চেষ্টা করতে পারেন:
http://www.binoria.org/q&a/miscellaneous.html#possessions
এখন আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেল, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যেরা কেন তাদের বাঙালি নারী যুদ্ধবন্দীদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি, বিন্দুমাত্র তাদের বিবেক বিচলিত হয়নি—এ সব তো ইসলামে সিদ্ধ। আর তা ছাড়াও বেশিরভাগ বাঙালি তো আসল মুসলমান নয়। তাই তাদের রমণীদের সাথে যদি পকিস্তানি ইসলামী সৈন্যরা সহবাস করে, তবে তো ঐ সৈন্যরা এক বিশেষ অনুগ্রহ করছে। আর এর ফলে যদি কোনো বাচ্চা পয়দা হয়, তা তো আল্লাহ্ পাকের অশেষ অবদান। সেই শিশু হবে খাঁটি মুসলিম।
ক্রীতদাসীদের সাথে সহবাস করা
এই বিষয়টাও আলোচনা করা দরকার। এর আগে আমরা দেখেছি মুসলিমরা কেমন স্বাচ্ছন্দ্যে যুদ্ধে‑লব্ধ বন্দিনীদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এই ‘হালাল’ পদ্ধতিতে মুসলিমদের অগাধ যৌনক্ষুধার নিবৃত্তি না হলে তার ব্যবস্থাও ইসলামে আছে। দাসপ্রথা ইসলামে সর্বদাই আছে এবং থাকবে। আপনি গুগল ঘেঁটে দেখবেন যে, অনেক বিশাল বিশাল ইসলামী আলেমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, আজও ইসলামে দাস‑দাসীর বেচাকেনা চলতে পারে। এই রকম ভাবে কোনো ক্রীতদাসী কিনে তার সাথে সহবাস করা একেবারে ‘হালাল’।
আসুন, এবার আমরা ইসলামী বই ঘেঁটে কিছু মজার ব্যাপার জেনে নিই।
মালিকের মুয়াত্তা হাদিস ২. ২৩. ৯০:
ইয়াহিয়া—মালিক—নাফি থেকে। ইয়াহিয়া বললেন যে আবদুল্লাহ ইবনে উমরের ক্রীতদাসীরা তাঁর পা ধৌত করতো এবং তাঁর কাছে খেজুর পাতার তৈরি এক মাদুর নিয়ে আসত। সে সময় তারা ঋতুমতী ছিল।
মালিককে জিজ্ঞাসা করা হল কোন এক ব্যক্তি গোসল করার আগেই কি তার সব ক্রীতদাসীদের সাথে যুগপৎ সহবাস করতে পারবে? তিনি (অর্থাৎ মালিক) উত্তর দিলেন যে গোসল ছাড়াই পরপর দুইজন ক্রীতদাসীর সাথে সহবাসে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু যখন কোন স্বাধীন স্ত্রীর সাথে সহবাসের দিন থাকবে সেদিন অন্য আর এক স্বাধীন স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করা যাবে না। কিন্তু এক ক্রীতদাসীর সাথে যৌন সঙ্গমের পর সাথে সাথে অন্য ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করা আপত্তিকর নয়—যদিও তখন লোকটি জুনুব (সহবাসের পর তার কাপড়ে অথবা দেহে বীর্য ও অন্যান্য কিছু লেগে থাকা)।
এরপর মালিককে জিজ্ঞাসা করা হল। এক ব্যক্তি সঙ্গম করল এবং জুনুব হয়ে গেল। তার কাছে পানি আনা হল গোসলের জন্য। সে ভুলে গেল গোসল করতে। পানি উত্তপ্ত না শীতল তা জনার জন্যে সে তার আঙ্গুল ডুবিয়ে দিল পানির মাঝে”। মালিক উত্তর দিলেন: “তার আঙ্গুলে যদি কোন ময়লা না থাকে তবে আমার মনে হয় না ঐ পানিকে দুষিত বলা যাবে।” (সূত্র ৫)
মালিকের মুয়াত্তা হাদিস ২৯. ১৭. ৫১:
ইয়াহিয়া—মালিক—নাফি থেকে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর বললেন:
কোন ব্যক্তি যদি তার ক্রীতদাসকে বিবাহ করার অনুমতি দেয়, তবে তালাকের ভার থাকে ক্রীতদাসের হাতে। এ ব্যাপারে কারো কোন কিছু বলার অধিকার থাকবে না। এক ব্যক্তি যদি তার ক্রীতদাসের কন্যা অথবা তার ক্রীতদাসীর কন্যা নিয়ে নেয় তবে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। (সূত্র ৫)
মালিকের মুয়াত্তা হাদিস ২৯.৩২.৯৯:
ইয়াহিয়া—মালিক—দামরা ইবনে সাইদ আল‑মাজনি—আল‑হাজ্জাজ ইবনে আমর ইবনে গাজিয়া থেকে:
উনি (অর্থাৎ আল‑হাজ্জাজ) জায়েদ ইবনে সাবিতের সাথে বসে ছিলেন। এই সময় ইয়ামান থেকে ইবনে ফাহদ আসলেন। ইবনে ফাহদ বললেন: “আবু সাইদ! আমার কাছে ক্রীতদাসী আছে। আমার কোন স্ত্রীই এই ক্রীতদাসীদের মত উপভোগ্য নয়। আমার স্ত্রীর কেউই এমন তৃপ্তিদায়ক নয় যে আমি তাদের সাথে সন্তান উৎপাদন করতে চাই। তা হলে কি আমি আমার স্ত্রীদের সাথে আজল করতে পারি?” জায়েদ ইবনে সাবিত উত্তর দিলেন: “হে হাজ্জাজ, আপনি আপনার অভিমত জানান”। আমি (অর্থাৎ হাজ্জাজ) বললাম: “আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করুন। আমরা আপনার সাথে বসি আপনার কাছে কিছু শিক্ষার জন্যে”। তিনি (অর্থাৎ জায়েদ) বললেন: “আপনার মতামত জানান”। আমি বললাম: “ঐ ক্রীতদাসী হচ্ছে তোমার ময়দান। তুমি চাইলে সেখানে পানি ঢাল অথবা তৃষ্ণার্ত রাখ। আমি এইই শুনেছি জায়েদের কাছ থেকে”। জায়েদ বললেন; “উনি সত্যি বলেছেন”। (সূত্র ৫)
ইসলামের সবচাইতে গোপন ব্যাপার—চুক্তি করা বিবাহ (মুতা বিবাহ) বা ইসলামী বেশ্যাবৃত্তি
আমরা আগেই দেখেছি, কেমন করে ইমাম হাসান অগণিত স্ত্রী নিয়েছেন। অনেকে বলেন, হাসান নাকি ৩০০-এর বেশি স্ত্রী জোগাড় করেছিলেন। কেমন করে তা সম্ভব হলো? কোনো এক ওয়েব সাইটে পড়েছিলাম: “হাসান এক বসাতেই চার স্ত্রীকে বিবাহ করতেন”। (http://www.al-islam.org/al-serat/imamhasan.htm)। এই সাইট থেকে এই তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে অনেক দিন। তবে পাঠকেরা চাইলে অন্য ইসলামী সাইট দেখতে পারেন। এরপর এই চার বিবির সাথে সহবাস করার পর হযরত হাসান আবার এক বসাতেই চারজনকে তালাক দিয়ে দিতেন। এই ভাবেই চলত তাঁর যৌনলীলাখেলা। এই ধরনের অস্থায়ী, স্বল্পমেয়াদী বিবাহকে মুতা বিবাহ বলা হয়। সুন্নিরা এই বিবাহের ঘোর বিরুদ্ধে। কিন্তু শিয়ারা ধুমসে এই বিবাহ করে যাচ্ছে আজকেও। কিছুদিন আগে সংবাদপত্রে পড়েছিলাম যে, ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই খারাপ যে, তথাকার ইসলামী সরকার সরকারিভাবে কিছু কিছু ‘উপভোগ’ কেন্দ্র (Decency House) স্থাপন করছে, যেখানে একজন পুরুষ (বিবাহিত অথবা অবিবাহিত) কয়েক মিনিটের জন্য একজন মহিলার সাথে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে স্বল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে। এরপর যৌনকর্ম সমাধা হলে ঐ বিবাহচুক্তি শেষ হয়ে যাবে। টেলিভিশনে একটা প্রামাণ্য চিত্রেও দেখিয়েছে কেমন করে ইসলামী বিবাহ-আদালতের মোল্লারা টাকার বিনিময়ে এই ধরণের বিবাহ লিখছে। যাই হোক, এর নাম হচ্ছে মুতা বিবাহ। এর স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট থেকে কয়েক বছর হতে পারে।
একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে, এই ব্যবস্থা ইসলামী বেশ্যাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু নয়; এবং ইরানের ন্যায় যে সব ‘উপভোগ’ কেন্দ্রে এই ধরণের বিবাহ হয়, তা ইসলামী গণিকালয় ছাড়া আর কিছু নয়। হাদিস থেকে আমরা জানি যে, রসুলুল্লাহ এই ধরনের বিবাহের ব্যবস্থা করেছিলেন উনার সৈন্যদের জন্য যারা জিহাদ করতে গিয়ে যৌনক্ষুধায় কাতর ছিল। পরে খলীফা উমর এই বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু এই ব্যাপারে অনেক মত ভেদাভেদ আছে। কে সঠিক, আর কে বেঠিক, তা নির্ণয় অতিশয় দুরূহ। তাই ইসলামী বিশ্ব আজও এই ব্যাপারে দুই ভাগে বিভক্ত।
দেখা যাক, কোরনে কীভাবে মুতা বিবাহ লিখা হয়েছে।
কোরআন সূরা আন‑নিসা, আয়াত ২৪:৪
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়—এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্র হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য—ব্যভিচারের জন্যে নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ্ হবে না। যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ্ সু-বিজ্ঞ, রহস্য-বিদ।
প্রশ্ন উঠতে পারে, মুতা বিবাহের জন্য কী পরিমাণ অর্থ লাগতে পারে?
উত্তর পাওয়া যায় এই হাদিসে।
সহি মুসলিম, বই ৮ হাদিস ২৩৪৯:
জাবির বিন আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন:
আমরা চুক্তি করে (মুতা) বিয়ে করতাম কয়েক মুঠো আটার বিনিময়ে। ঐ সময় আল্লাহ্র রসুল আমাদের মাঝে জীবিত ছিলেন। এই ব্যবস্থা চলতে থাকে আবু বকরের সময় পর্যন্ত। কিন্তু হারিসের ঘটনা শোনার পর উমর এই ধরণের বিবাহ নিষিদ্ধ করে দেন। (সূত্র ৩)
নারীরা কি অবলা পশু?
আমাদের দেশে অনেক সময়ই আমরা নারীদের অবলা বলে থাকি। অবলা বলতে আমরা কী বুঝি? গৃহপালিত গবাদি পশুদের বেলায়ও এই শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। তাহলে আমরা কি নারীদের গবাদি পশুর মত মনে করি না? আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, নবীজি ঠিক এই শব্দটিই ব্যবহার করেছেন মুসলিম নারীদের উপর। এইই ছিল নবীজির শেষ ভাষ্য। বিদায় হজ্জে নবীজি যে-ভাষণ দেন, তা অনেক ইসলামী পণ্ডিত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ, অলৌকিক, বিস্ময়কর বলে থাকেন। এখন দেখা যাক নবীজি এই ভাষণে কী বলেছেন। ভাষণ অনেক বড় হওয়ার জন্যে শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশটুকু এখানে বাংলায় অনুবাদ করা হলো।
এই উদ্ধৃতি নেওয়া হয়েছে আল‑তাবারির ইতিহাস বই থেকে (খণ্ড ৯, পৃঃ ১১২‑১১৪):
হে মানবজাতি, এখন তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের স্ত্রীর ওপর তোমাদের যেমন অধিকার আছে, তেমনি তাদেরও অধিকার আছে তোমাদের উপর। তোমাদের স্ত্রীর ওপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে যে, তারা যেন তোমাদের অপছন্দ কোনো ব্যক্তিকে তোমাদের বিছানায় না নেয়। আর তোমাদের স্ত্রীরা যেন প্রকাশ্যে কোন কুকর্ম না করে। যদি তোমাদের স্ত্রীরা এইসব করে, তবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন তাদেরকে প্রহার করার। তবে এই প্রহার যেন তীব্র না হয়। নারীদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে, কেননা ওরা হচ্ছে গৃহপালিত পশুদের মত। গৃহপালিত পশুদের মতই ওরা নিঃস্ব—নিজের বলে কিছুই নেই। তোমরা নারীদের নিয়েছ আল্লাহ্র কাছ হতে আমানত হিসেবে। এরপর তোমরা তাদের দেহ উপভোগ করেছ—যা আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে আইনসিদ্ধ করেছেন। হে মানবকুল, তোমরা আমার কথা শোন এবং উপলব্ধি কর। আমি আমার বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের জন্যে যা রেখে গেলাম, তা যদি তোমরা আঁকড়ে থাক, তবে কোনদিন বিপথে যাবে না। তোমাদের জন্যে যা রেখে গেলাম, তা হোল আল্লাহ্র কিতাব আর তাঁর নবীর সুন্নাহ্। (সূত্র ৩৩)
ওপরের বক্তব্যে রসুলুল্লাহ ইসলামে নারীদের অবস্থান ধার্য করে গেছেন পাকাপোক্তভাবে—তা হচ্ছে: নারীরা গবাদি পশুর মত এবং তাদেরকে মুসলিম পুরুষেরা ঐ ভাবেই ব্যবহার করবে।
পাঠক, আসুন এবার আমরা ইসলামী সেক্সের [যৌনতার] ওপর আলোচনা শুরু করি।
অধ্যায়‑১ : রঙরস ও কামকেলির জন্য কুমারী সর্বশ্রেষ্ঠ
ইসলাম মনে করে কুমারীত্ব স্ত্রীজাতির শ্রেষ্ঠ ভূষণ। বিয়ের আগে কুমারীত্ব খোয়ানোর সমতূল্য আর কোনো অপরাধ বা পাপ নেই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। ইসলামী সমাজে যথেষ্ট সাবালিকা মেয়েরাও প্রাক‑বৈবাহিক সেক্সের [যৌনসম্ভোগের] কথা চিন্তা করতে পারে না। পুরষদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্বতন্ত্র নিয়ম। পরবর্তীতে আমরা দেখবো—বিয়ের আগেই একজন মুসলমান পুরুষ ক্রীতদাসীদের অথবা যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যথেচ্ছ যৌনবিহার করতে পারে। তবে মুক্ত নারীদের সাথে বিবাহ‑বহির্ভূত যৌনসম্ভোগ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এই নিয়মের লঙ্ঘন হলে কঠোর ইসলামী শাস্তির ব্যবস্থা আছে।
পাঠক, মনে রাখবেন, বিবাহবহির্ভূত যৌনসঙ্গম ইসলামে একটি গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য হয়।
অপরাধীকে এর জন্য গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হয়। অপরাধী অবিবাহিত অথবা অবিবাহিতা হলে শাস্তি একশত দোররা বা বেত্রাঘাত। অপরাধী বিবাহিত অথবা বিবাহিতা হলে তার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে মৃত্যু। এই বিধান পবিত্র ‘হুদুদ’ আইন নামে পরিচিত। এর অর্থ হচ্ছে—অপরাধ করে ফেললে এই বর্বর আইনের হাত এড়ানোর কোনো উপায় নেই। একবার রায় হয়ে গেলে তা রদ করার ক্ষমতা কারও নেই। যে কোনোভাবে রায়কে কার্যকর করতেই হবে। ইসলামী ক্ষমা আর সহিষ্ণুতার কী অপূর্ব নমুনা। আমার বক্তব্যগুলি যদি কারও কাছে অতিরিক্ত বিদ্বেষমূলক মনে হয়, তবে তাকে একটি বিষয় স্মরণ করতে বলি। ইসলামের বিধান অনুযায়ী অননুমোদিত যৌনসঙ্গম নরহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। কারণ, হত্যাকারী ‘কিয়াস’ (বদলা) বা ‘দিয়া’র (রক্তপণ) বিনিময়ে অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু যৌন-অপরাধের ক্ষেত্রে এরূপ কোনো ক্ষমার সুযোগ নেই। ইসলামে ভালোবাসা হত্যা করার চাইতেও জঘন্য অপরাধ—বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এই ইসলামী আইন কতো বড় অমানবিক ও অদূরদর্শী, চিন্তা করে দেখুন। আমাদের যৌনাঙ্গের প্রকৃত মালিক কে? আমরা নিজেরা? না, তা নয়। আমাদের যৌনাঙ্গের মালিক আমরা নই—এর আসল মালিক হচ্ছে ইসলাম—বিশ্বাস করুন আর না‑ই করুন, পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর যৌনাঙ্গের মালিক হচ্ছে ইসলাম। আমাদের যৌনাঙ্গের সবকিছুর, এমনকি এর চারপাশে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ যৌনকেশ গজায়, তারও এক্মেবাদ্বিতীয়ম মালিক হচ্ছে ইসলাম। নিচের হাদিসটি পড়ুন। পবিত্র সহি হাদিস। মেয়েদের যৌনাঙ্গে উদগত লোমরাশিকে কীভাবে সামলাতে হবে, তার নির্দেশনামা।
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে স্বামী রাত্রে ঘরে ফিরলে স্ত্রী তার যৌনকেশ উত্তমরূপে কামিয়ে ফেলবে
সহি বুখারি খণ্ড-৭, বই ৬২, হাদিস নম্বর ১৭৩: জাবির বিন আবদুল্লাহ্ হতে বর্ণিত:
নবী বলেছেন; যদি তুমি রাত্রিতে (তোমার) শহরে প্রবেশ করো (দীর্ঘ ভ্রমন শেষে),
সাথে সাথে গৃহে প্রবেশ করো না যে পর্যন্ত না প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রী তার যৌনকেশ কামিয়ে ফেলে এবং আলুলায়িত কুন্তলা তারকেশগুলিকে ভালোভাবে বিন্যস্ত করে।’ আল্লার রসুল আরও বলেন: ‘হে জাবির, সন্তান লাভের চেষ্টা করো, সন্তান লাভের চেষ্টা করো।’
ফিতরার (সৎকাজ) পাঁচটি অনুশীলন: ১. খৎনা করা, ২. যৌনকেশ মুণ্ডণ করা, ৩. নখ কাটা, ৪. গোঁফ ছেঁটে রাখা, ৫. বগলের কেশ পরিষ্কার করা।
সহি বুখারি খণ্ড-৭, বই ৭২, হাদিস নম্বর ৭৭৭: আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত:
আল্লাহর রসুল বলেছেন: “ফিতরার পাঁচটি নিদর্শন: খৎনা করা, যৌনকেশ কামিয়ে ফেলা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছোট করে ছেঁটে রাখা।”
এখন কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, নর-নারীর উরুদ্বয়ের মাঝখানে কী আছে, তাতে আল্লাহর এত আগ্রহ কেন? আল্লাহর তো জরুরি অনেক কাজ থাকার কথা। যদি মনে করেন যে, আল্লাহ্ আপনাকে যৌনাঙ্গ দিয়েছেন--আপনার ইচ্ছামতো ব্যবহার করার জন্য, তাহলে সে চিন্তা বাদ দিন। আপনার একান্ত—একান্ত নিজস্ব গোপন অঙ্গটি কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারণের ভার আপনার ওপর নেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, গৃহের নিভৃত কন্দর থেকে সুবিশাল মরুপ্রান্তর পর্যন্ত—সর্বত্র তা নির্ধারণ করবে তথাকথিত আল্লাহর আইন নামক এক গুচ্ছ শরিয়া আইন।
শরিয়া হচ্ছে বিবেকহীন, নিষ্ঠুর, ঘৃণ্য, নিষ্প্রাণ কতগুলো বিধান। এ প্রসঙ্গে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন এসে যায়—শরিয়া যদি আল্লাহর আইনই হয়, তবে তা মানুষ ছাড়া জীবজন্তুর যৌনাঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে না কেন? কেন গরু ছাগল, শুকর, বাঘ, সিংহ, পাখী, সাপ, কচ্ছপ—এক কথায় সমস্ত প্রাণীকুল—যৌনসম্ভোগ কিংবা প্রজননের জন্য ইচ্ছেমতো রতিক্রিয়া করতে পারে? দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে পশুদের যতটুকু স্বাধীনতা আছে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের ততোটুকু নেই। ভেবে দেখুন একবার! আমার ব্যক্তিগত দেহাঙ্গটি আমার একান্তই নিজস্ব। অথচ আমার এই মৌলিক অধিকারটিও ইসলাম কুক্ষিগত করে নিয়েছে। ইসলামের এই চরম বর্বরতার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য একটাই—কৌমার্য রক্ষার অজুহাতে প্রাণীর সহজাত এবং প্রাকৃতিক কামপ্রবণতা ও তজ্জনিত তৃপ্তি থেকে—বিশেষভাবে নারী প্রজাতিকে জোর করে বঞ্চিত রাখা। যেভাবেই হোক, একজন মুসলমান নারীকে তার কুমারীত্ব বজায় রাখতেই হবে। বিবাহবহির্ভূত কোনো অনৈসলামিক উপায়ে একজন মুসলমান নারী তার যৌনতৃপ্তি মেটাবে, তা কখনও হতে পারে না। এ জন্যে যদি তাকে হত্যা করতে হয়—তাও করতে হবে। কোনোক্রমেই একজন মুসলিম নারী তার ইচ্ছামতো তার যৌনাঙ্গ ব্যাবহার করতে পারবে না।
অক্ষতযোনী কুমারীর প্রতি ইসলামের এই আবিষ্টতা কেন? কাফেরদের দেশে আসার পর এ নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি।
পাপী-তাপী, হারামখোর, বারবনিতা, বেশ্যাসমৃদ্ধ কাফেরদের এই দেশে এই সব বেশ্যারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে—অনেক সময় একা একাই, দিন-রাত্রির কোনো বালাই নেই। পরস্পরের সম্মতিতে যৌনসম্ভোগ করা এ দেশে কোনো অপরাধ নয়—যদিও জোর করে কাউকে ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের জন্য এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামী স্বর্গগুলিতে বিপরীত লিঙ্গবিশিষ্ট দু’জন নর-নারীর (কিংবা সম লিঙ্গবিশিষ্ট) মধ্যে যৌনসম্পর্ক পুরোপুরি হারাম বা নিষিদ্ধ—তা সে পরস্পরের সম্মতিক্রমেই হোক কিংবা একজনের অসম্মতিক্রমেই হোক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, একজন মুসলিম নারীর বিবাহবহির্ভূত যৌনসম্পর্ক একেবারেই নিষিদ্ধ। মুসলিম দেশগুলি হতে যে সমস্ত মুসলমান পাশ্চাত্যে কাফেরদের দেশে বাস করতে আসেন, তারা এসব দেশের নর-নারীর স্বাচ্ছন্দ ও অবাধ মেলামেশা দেখে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এই মুসলমানেরা তাদের ইসলামী মানদণ্ডে এই সব কাফেরের সামাজিক আচার-আচরণের মূল্যায়ন করতে চায়। তারা এই কাফেরদের দেশের জীবনবোধ তথা মূল্যবোধ সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। তারা দেখে, মেয়েরা বিবাহের আগেই অবাধে ছেলেবন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা করছে, অনেকে রতিক্রিয়াও করছে। এই মুসলিমরা ভাবেন, এই সব দেশের সব মেয়েরাই গণিকা—সস্তা পণ্য। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে যে যৌনবহির্ভূত সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, তা তারা অনেকেই ভাবতেই পারেন না। ফলে চারপাশে বিচরণরত কাফের মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক ও পেশাদারী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সংকোচ বোধ করেন। বিবাহ করার উপযুক্ত হিসেবে যে মেয়েটি একজন খাঁটি মুসলমানের মন‑মানসে ভাসে, সে এক অক্ষতযোনি কুমারী। এই সব কাফের মেয়েদের সাথে এক রাত্রির খেল চলতে পারে, তাই বলে বিয়ে? চ নৈব চ। ইসলামের বিধান অনুসারে, একজন অবিবাহিত মেয়ে তার প্রজনন যন্ত্রটিকে অবশ্যই তালা মেরে রাখবে। চাবির একমাত্র মালিক তার স্বামী—আর কেউ নয়। আল্লাহ্ ও ধর্মের নামে মেয়েদেরকে যৌনসুখ থেকে বঞ্চিত রাখার কেন এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, তা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি।
অবশেষে মুসলিম সমাজে সবচেয়ে খাঁটি এবং প্রামাণিক বলে পরিচিত সহি বুখারি ও সহি মুসলিম শরীফের কিছু অমূল্য হাদিস হস্তগত হয় আমার। এগুলি পড়ে বুঝতে পারলাম, কেন আল্লাহপাক বিবাহের আগে পর্যন্ত মুসলমান মেয়েটির যোনীপ্রদেশ অক্ষত রাখতে এত আগ্রহী। পাঠক, আসুন হাদিস কয়টির উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিইঃ
সহি বুখারি, খণ্ড ৭, বই ৬২, হাদিস নম্বর ১৬ জাবির বিন আবদুল্লাহ্ হতে বর্ণিত:
আমরা একবার নবীর সাথে একটি গাজওয়া (বিধর্মীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে গাজওয়া বলা হয়) হতে ফিরছিলাম। আমি আমার ঊটটিকে খুব দ্রুত চালনা করতে চাইলাম। এটি ছিল অত্যান্ত অলস একটি উট। সুতরাং আমার পেছন হতে একজন আরোহী এসে তার হস্তস্থিত বর্শা দ্বারা খোঁচা মারতেই আমার উটটি এতো দ্রুত ছুটতে শুরু করলো যে মনে হবে এর চেয়ে দ্রুতগামী উট আর নেই। দেখ! আরোহীটি ছিলেন স্বয়ং নবী। তিনি বললেন, ‘এত তাড়া কিসের তোমার?’ আমি বললাম, ‘আমি নুতন বিয়ে করেছি।’ তিনি বললেন, ‘তোমার বঊ কুমারী না বিধবা (বা তালাকপ্রাপ্তা)?’ আমি বললাম সে একজন বয়স্কা। তিনি বললেন, ‘কচি মেয়ে বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তুমি তার সাথে খেলতে পারতে এবং সে তোমার সাথে খেলতে পারত।’ যখন আমরা (মদীনায়) প্রবেশ করতে যাচ্ছি, নবী বললেন, ‘অপেক্ষা করো যেন তুমি রাত্রিবেলা (মদীনায়) প্রবেশ করতে পার। তাহলে মহিলা তার অবিন্যাস্ত চুল আঁচড়িয়ে নেয়ার অবকাশ পাবে এবং যে নারীর স্বামী অনেকদিন অনুপস্থিত ছিল সে তার যৌনকেশ মুণ্ডিত করার অবকাশ পাবে।’
সহিহ্ বুখারি, খণ্ড ৩, বই ৩৮, হাদিস নম্বর ৫০৪ জাবির বিন আবদুল্লাহ্ হতে বর্ণিত:
আমি নবীর সাথে এক অভিযান থেকে ফিরছিলাম। আমার সওয়ারি ঊটটি ছিল মন্থর গতিসম্পন্ন এবং সবার পেছনে। যখন আমরা মদীনার সমীপবর্তী হলাম, আমি (দ্রুত) আমার (বাড়ীর) পথ দরলাম। নবী বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ আমি বললাম, ‘আমি একজন বিধবাকে বিয়ে করেছি।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তোমরা একে অপরের সাথে রঙ্গরস করতে পারতে।’
সহি মুসলিম: বই ০০৮, হাদিস নম্বর ৩৫৪৯: জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত:
আল্লাহর রসুল (সা) আমাকে বললেন, ‘তুমি কি বিয়ে করেছো?’ আমি বললাম, হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘সে কী কুমারী না পুর্ব‑বিবাহিতা (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)?’ আমি বললাম, ‘পূর্ব‑বিবাহিতা।’ তখন তিনি বললেন, ‘কুমারীর সাথে মজা করার স্বাদ থেকে বঞ্চিত রইলে কেন?’ শু’বা বলেন—এই ঘটনার কথা আমি আমর বিন দিনারের কাছে উল্লেখ করলে আমর বলেছিলেন, আমিও জাবেরের মুখে বর্ণনাটি শুনেছি। (আল্লাহর রসুল) তাকে বলেছেন—তুমি একজন বালিকা বিয়ে করলে না কেন? তা’হলে তুমিও তার সাথে খেলতে পারতে, সেও তোমার সাথে খেলতে পারত।
পূর্বোক্ত হাদিস তিনটি ভালোভাবে পাঠ করুন। কী মনে হয় আপনার? কেউ একজন দয়া পরবেশ হয়ে এক বিধবা বিয়ে করল, নবী মুহাম্মদের (সা) বিধান‑নির্দেশ অনুযায়ী তার অবস্থাটা কী দাঁড়ালো। তাঁর বিধানকে অনুসরণ করে কেউ যদি অতি অল্পবয়েসী মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তাকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় কি? যৌন‑নির্যাতনকারী হিসেবে গণ্য করাও মুশকিল, কারণ সে আল্লাহর রসুলের (সা) নির্দেশ পালন করেছে মাত্র। স্বয়ং রসুলের (সা) হেরেমে এরূপ একজন (বিবি আয়েশা—বয়সে মাত্র নয় বছর) কুমারী ছিল। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন যে, কম বয়েসী কুমারীর সাথে সহবাসের মজাই আলাদা। বালিকা শিশুদের সাথে সহবাসে আল্লাহপাকেরও নিশ্চয় সম্মতি রয়েছে। কোরআন শরীফে আছে—আল্লাহ তার বিশ্বাসী বান্দাদের মনোরঞ্জনের জন্যে অক্ষতযোনী কুমারীদের অক্ষয় ভাণ্ডার প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রমাণস্বরূপ কোরানপাকের গোটাকয়েক আয়াত এখানে উদ্ধৃতি দেয়া গেল। মেয়েদের কুমারীত্বের প্রতি আল্লাহপাকের কতটুকু মোহ, এ থেকে মোটামুটি তার একটি চিত্র পাওয়া যাবে।
সুরা আদ দোখান (৪৪) ৫১‑৫৪
৪৪:৫১নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে—
৪৪:৫২ উদ্যানরাজি ও নির্ঝরিণীসমূহে।
৪৪:৫৩তারা পরিধান করবে চিকন ও পুরু রেশমীবস্ত্র, , মুখোমুখি হয়ে বসবে।
৪৪:৫৪ এরূপই হবে এবং আমি তাদেরকে আনতলোচনা স্ত্রী দেব।
৪৪:৫৫ তারা সেখানে শান্ত মনে বিভিন্ন ফলমূল আনতে বলবে।
সুরা আর্‑রহমান (৫৫) ৫৪‑৫৮
৫৫:৫৪ তারা তথায় রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। উভয় উদ্যানের ফল তাদের নিকটে ঝুলবে।
৫৫:৫৫ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে?
৫৫:৫৬ তথায় থাকবে আনতনয়না রমণীগণ, কোন জিন ও মানব পূর্বে যাদেরকে ব্যবহার করেনি।
৫৫:৫৭ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে?
৫৫:৫৮ প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগন।
সুরা আর্‑রহমান (৫৫) ৭০‑৭৪
৫৫:৭০ সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ।
৫৫:৭১ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে?
৫৫:৭২ তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ।
৫৫:৭৩ অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন্ অবদানকে অস্বীকার করবে?
৫৫:৭৪ কোন জিন ও মানব পূর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি।
সুরা আল‑ওয়াক্বিয়া (৫৬) ৩৫‑৩৮
৫৬:৩৫ আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।
৫৬:৩৬ অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী,
৫৬:৩৭ কামিণী, সমবয়স্কা
(সূত্র ১৬: কোরানুল করিম মাওলানা মহিউদ্দিন খান কর্তৃক অনুদিত)
ওপরের আয়াতগুলি পড়লে বোঝা যায়, কেন অল্পবয়স্কা কুমারী বিয়ে করা উত্তম। কারণ, আল্লাহপাক অল্পবয়েসী কুমারী মেয়ে পছন্দ করেন। তাই তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের মনোরঞ্জনের জন্য স্বর্গ বা বেহেশতে তার অঢেল সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন।
এজন্যেই, বোধহয়, পারস্যের দার্শনিক কবি উমর খৈয়াম গেয়েছিলেন—
অধ্যায়‑১৫ : শিশুকাম বা শিশুবিবাহ তথা অপরিণতবয়স্কার সাথে সঙ্গম
বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশেই শিশুবিবাহ আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুবিবাহ বা শিশুকাম (ইংরেজিতে পেডোফিলিয়া) আজকাল মানবতার প্রতি অভিশাপ হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। সংবাদপত্রে প্রায়শঃ খ্রিষ্টান পাদ্রী বা ফাদারদের এই কুকর্মের বিবরণ পাওয়া যায়। ভারতবর্ষে প্রাচীন হিন্দু সমাজে এ ধরনের বিবাহের বহুল প্রচলন ছিল। সেকালের পুঁথিপত্র পড়ে আমরা জানতে পারি, এমনকি পাঁচ-ছয় বছরের মেয়েকেও পিতামাতা তখন অম্লানচিত্তে বিয়ে দিয়ে ফেলত। এই শিশুরা বড় হয়ে এমন স্বামীর ঘর করতে ব্যস্ত হতো, যে ঘর‑সংসারকে তারা রীতিমত ঘৃণা করত। এই প্রথাকে নিকৃষ্টতম শিশুনির্যাতন ছাড়া আর কোন নামে কি অভিহিত করা যায়? কিছু সংখ্যক মানবতাবাদী কর্মীর দুর্বার আন্দোলনের ফলে হিন্দুধর্মের আমূল সংস্কার সাধিত হয়, শিশুবিবাহ বর্তমানে হিন্দু সমাজে অতীত বিষয়মাত্র। কিন্তু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে অবস্থাটা কী?
ইসলামপন্থীরা জোর গলায় দাবি করে থাকেন যে, তাদের ধর্মটি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধুনিক এবং সবচাইতে প্রগতিশীল ধর্ম। সুতরাং মানুষ সঙ্গতভাবেই আশা করবে যে, এমন একটি প্রগতিশীল ধর্মে শিশুবিবাহ বা শিশুকামের মতো নোংরা প্রথা নিশ্চয়ই আইনসিদ্ধ নয়। এই প্রত্যাশা অবশ্য প্রচণ্ড এক ধাপ্পাবাজি। আসল সত্য হলো—বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে কোনো সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই। মায়ের বুকের দুধপানরত সদ্যোজাত একটি শিশুকেও ইসলামী আইন অনুযায়ী বিয়ে দেয়া যায় এক বুড়োর সাথে এবং সে বিয়ে শতভাগ ইসলামসম্মত।
ইসলামী শিশুবিবাহের নিষ্ঠুরতম দিকটি হলো—যদি বাপ‑মায়ের সম্মতিক্রমে এই বিয়ের চুক্তি হয়ে থাকে, তবে তা কোনোভাবেই রদ করা যায় না। অর্থাৎ বড় হওয়ার পর দম্পতিকে অবশ্য বিয়েটি পূর্ণাঙ্গ করতে হাবে। শিশুবিবাহ সংক্রান্ত শরিয়া আইন নিম্নরূপ।
হেদাইয়া (সূত্র ১১, পৃ-৩৬)
শৈশবে চুক্তিকৃত কোন প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর অবশ্য প্রতিপাল্য:
যদি শিশুদের পিতা কিংবা পিতামহ বিয়ের চুক্তি করে থাকেন, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই চুক্তি বাতিল করার কোনো অধিকার তাদের (দম্পতির) নেই; যেহেতু এই বিষয়ে পিতৃ‑পিতামহদের সিদ্ধান্ত কোনো অসদুদ্দেশ্য হতে উদ্ভূত হতে পারে না, কারণ সন্তানসন্ততিদের প্রতি তাদের স্নেহ সংশয়াতীত; ফলতঃ এই বিবাহ উভয় পক্ষের জন্য অবশ্য পালনীয়, ঠিক সেইভাবে যেন তারা বয়ঃপ্রাপ্তির পর নিজেরা স্বেচ্ছায় এই সম্পর্কে প্রবেশ করেছে। শৈশবে চুক্তিকৃত কোনো প্রকারের বিবাহ বয়ঃপ্রাপ্তির পর বাতিল করা বা বহাল রাখার স্বাধীনতা দম্পতির ইচ্ছাধীন।
যদি পিতৃ-পিতামহ ব্যতিরেকে অন্য কোনো অভিভাবক চুক্তি করে থাকে, সেক্ষেত্রে বয়ঃপ্রাপ্তির পর উভয়ের অধিকার রয়েছে চুক্তি রাখার অথবা বাতিল করার।
ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা) নিজেই ছয় (অন্যমতে সাত) বছরের শিশু আয়েশাকে বিবাহ করেছিলেন। তখন নবীর বয়স ছিল ৫২ বছর বা তার কিছু বেশী। আয়েশা ছিলেন নবীর সবচাইতে ঘনিষ্ঠ সাগরিদ বা বন্ধু আবু বকরের কন্যা। আবু বকর ছিলেন নবীর ধর্ম ভাই। মুহাম্মদের (সা) এই শিশু কনে আয়েশাকে নিয়ে ইদানীং বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। এ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা এই প্রবন্ধের উপজীব্য নয়। পাঠকেরা এই বিষয়ে অন্য কোথাও হতে পড়ে নিতে পারেন। এখানে কয়েকটি হাদিস উদ্ধৃত করব, যেখান থেকে দেখা যাবে যে, নবী মুহাম্মদ (সা) যখন তার বালিকা বধুটিকে ঘরে তুলে নেন এবং বিবাহ সম্পূর্ণ (অর্থাৎ যৌনসঙ্গম) করেন আয়েশা তখনও পুতুলখেলা ছাড়েনি। এই সময় আয়েশার বয়স ছিল নয় বছর মাত্র—এবং নবী নয় বছরের শিশু আয়েশার সাথে বিবাহ পূর্ণাঙ্গ করেন মদীনায় হিজরত করার পর—আবু বকরের গৃহে—বাসর ঘরে।
সহি মুসলিম, বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৩১১:
আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রসুলুল্লাহ (সা) যখন তাকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স ছিল সাত বছর এবং বউ হয়ে তিনি যখন তাঁর (রসুলের) ঘরে যান তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, এবং তার পুতুলগুলি তার সাথে ছিল এবং যখন তিনি (রসুল) ইন্তেকাল করেন তখন তার বয়স ছিল আঠারো বছর। (সূত্র ৩)
সহি বুখারি, খণ্ড ৫, বই ৫৮, হাদিস নম্বর ২৩৬: হিশামের পিতা হতে বর্ণিত:
নবী মদীনা চলে যাওয়ার তিন বছর পূর্বে খাদিজা ইন্তেকাল (মৃত্যু) করেন। সেখানে বছর দুই কাটানোর পর তিনি আয়েশাকে বিয়ে করেন। আয়েশা তখন ছয় বছরের বালিকা মাত্র, এবং আয়েশার বয়স যখন নয় বছর তখন তিনি বিয়েকে পূর্ণাঙ্গ করেন। (সূত্র ২)
নবী তাঁর বালিকা বধূটির সাথে কীভাবে ক্রীড়াকৌতুক এবং যৌনক্রিয়া করতেন, তার কিছু নমুনা এখানে দেয়া হলো।
সহি বুখারি, খণ্ড ১, বই ৬, হাদিস নম্বর ২৯৮: আয়েশা হতে বর্ণিত:
জুনুব অবস্থায় আমি এবং নবী একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম (যৌনসঙ্গমের পরবর্তী নাপাক বা অপবিত্র অবস্থার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে জুনুব); ঋতুকালে তিনি আমাকে ইজার (কোমর হতে নিচ পর্যন্ত পরিধেয় বস্ত্রের নাম ইজার—পেটিকোটও বলা যেতে পারে) পরিধান করার জন্যে বলতেন এবং আমার সাথে রঙ্গরস করতেন। ইতিক্কাফ করার সময় তিনি তাঁর মস্তক আমার দিকে বাড়িয়ে দিতেন এবং আমি তা ধুইয়ে দিতাম, এমনকি যখন আমার ঋতুস্রাব চলতো তখনও। (সূত্র ২)
সহি মুসলিম, বই ৩, হাদিস নম্বর ০৬২৯: আয়েশা হতে বর্ণিত:
আমি এবং রসুল (সা) একই পাত্রে গোসল করতাম এবং একজনের পর আরেকজন হাত দিয়ে পানি নিতাম যৌনসঙ্গমের পর। (সূত্র ৩)
পঞ্চাশোর্ধ কোনো প্রৌঢ় যদি নয়-দশ বছরের বালিকাকে বিয়ে করে, তার সাথে কীভাবে রতিক্রিয়া করতে হবে, তার অনুপম আদর্শ আছে উপরের হদিসগুলিতে। ছয় বছরের শিশুকে বিয়ে করা এবং নয় বছর বয়সের সময় তার সাথে যৌনসঙ্গমে প্রবৃত্ত হওয়ার ঘটনা হজম করতে যদি কারও অসুবিধা হয়, তবে তার জন্য আরও একটি চমক আছে।
ইবনে ইসহাক রচিত সিরাতে রসুলুল্লাহ গ্রন্থটি রসুলের জীবন-চরিত হিসেবে মুসলিম জগতে বহুল পঠিত এবং অত্যন্ত প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। মুসলমান লেখকগণ প্রায়শই এই বই হতে উল্লেখ করে থাকেন। এই গ্রন্থে রসুল (সা) সম্পর্কে একটি মজাদার তথ্য আছে। ইবনে ইসহাক লিখেছেন, রসুল (সা) নাকি সবেমাত্র হামাগুড়ি দিচ্ছে, এমন এক কন্যা শিশুকে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। এখন আমরা ইবনে ইসহাকের বর্ণনা থেকে ঘটনাটি জেনে নেব।
সুহাইলি, ii. ৭৯: ইউনুছের রেওয়ায়েত I. I. কর্তৃক ধারণকৃত:
নবী তাকে (উম্মে আল‑ফজলকে) দেখেন, যখন সে তাঁর সামনে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। তিনি বলেন, “যদি সে বড় হয় এবং আমি তখনও বেঁচে থাকি, আমি তাকে বিয়ে করব।” কিন্তু সে বড় হওয়ার আগেই নবী ইন্তেকাল করেন এবং সুফিয়ান বিন আল‑আসওয়াদ বিন আবদুল আসাদ আল‑মাখজুমির সাথে তার বিয়ে হয় এবং সুফিয়ানের ঔরসে তার রিজক ও লুবাবা নাম্নী দু’টি সন্তান জন্মে। (সূত্র ১০, পৃ ৩১১)।
আমরা আরও জানতে পারি যে, খলীফা হযরত উমর (রাঃ) উম্মে কুলসুম নামের চার‑পাঁচ বছরের এক শিশুকে বিয়ে করেন। এক ভাষ্য মতে, এই উম্মে কুলসুম হচ্ছেন খলীফা আবু বকরের (রাঃ) কন্যা এবং আয়েশার বৈমাত্রেয় বোন। হিসেব মতে, তখন খলীফা উমরের বয়স হবে প্রায় ৫৬ বছর।
অন্য ভাষ্যমতে (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ, সূত্র ২২), এই উম্মে কুলসুম ছিলেন নবীর কনিষ্ঠ কন্যা ফাতিমার শিশু কন্যা। হযরত আলী ছিলেন ফাতিমার স্বামী। হযরত আলী আবার নবী মুহাম্মদের চাচাত ভাইও ছিলেন। যাই হোক, ফাতিমা জন্ম দেন দুই ছেলে: হযরত হাসান, হযরত হুসেন (অনেকে বলেন, হুসেনকে মহসিনও বলা হতো) এবং এক কন্যা উম্মে কুলসুম। তাই এই উম্মে কুলসুম হলেন নবী মুহাম্মদের নাতনি। ফাতিমা মারা যাবার পর হযরত উমর এই উম্মে কুলসুমকে বিবাহ করেন অর্থাৎ হযরত উমর নবী মুহাম্মদের নাতনিকে বিবাহ করেন। (সূত্র ২২, পৃ ৫০৬)
আরও একটা মজার ঘটনা জানা দরকার। নবী মুহাম্মদের জেষ্ঠ কন্যা ছিলেন জয়নব। মুহাম্মদ জয়নবের বিবাহ দিয়েছিলেন পৌত্তলিক আল-আ’সের সাথে। নবী মদিনায় চলে গেলেন। কিন্তু জয়নব রয়ে গেলেন মক্কায়। বদরের যুদ্ধে আল‑আ’স বন্দী হয়ে পড়েন মুসলমানদের হাতে। নবীর জামাতা জেনে মুসলিমরা আল‑আ’সকে ছেড়ে দেয় এবং আল‑আ’স মক্কায় গিয়ে জয়নবের সাথে মিলিত হন। পরে নবী প্রহরী পাঠিয়ে জয়নবকে মদিনায় নিয়ে আসেন। সেই সময় জয়নব ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। শোনা যায় যে যাত্রাকালে জয়নব উট থেকে পড়ে গেলে তাঁর ভ্রূণপাত বা গর্ভস্রাব ঘটে। পরে আল‑আ’স মদিনায় আসেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে আবার জয়নবের সাথে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। মদিনায় জয়নব এক কন্যার জন্ম দেন যার নাম ছিল উমামা। এই কন্যার জন্মের অল্প সময়ের মাঝে জয়নব মারা যান। ফাতিমা ছিলেন হযরত আলীর স্ত্রী। ফাতিমা মারা যাবার পর আলী বিবাহ করেন এই উমামাকে। অর্থাৎ হযরত আলী শুধুমাত্র মুহাম্মদের (দ) কন্যাকেই (ফাতিমা) বিবাহ করেননি, তিনি মুহাম্মদের নাতনিকেও (উমামা) বিবাহ করেন। (সূত্র ২২, পৃ ৪৭৯‑৪৮১)
ইসলামের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব মহানবী এবং তাঁর প্রিয় সাহাবিগণ পরবর্তীদের জন্যে এমন মহৎ আদর্শই রেখে গেছেন। রসুল এবং তাঁর সাহাবিগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আদর্শের ইসলামী নাম সুন্না। এই সুন্না বা আদর্শ অপরিবর্তনীয়। প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে কেয়ামত পর্যন্ত এই আদর্শ অনুসরণ করতেই হবে, একবিন্দু নড়চড় করা চলবে না। পনেরো শত বছর ধরে এই অপরিবর্তনীয় আদর্শ অনুসরণ করতে যেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এখনো পেশাবের পর লিঙ্গাগ্র ধারণ করে চল্লিশ কদম হাঁটতে এবং জোরে জোরে কোঁথ দিতে দেখা যায়। অনেক সম্পন্ন মুছুল্লির বাড়িতে ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়দাওয়া করতে দেখা যায়, কারণ নবীর সুন্নত মেনে চলা। নবী ডাইনিং টেবিলে খেতেন না, মাটিতে বসে খেতেন। তা, বেশ। একনিষ্ট অনুসারী হিসেবে নবীর প্রতিটি কাজে অনুসরণ তারা করতেই পারেন। কিন্তু আমাদের খটকা লাগতে পারে—শিশুকাম বা শিশুবিবাহ সুন্নতটি তারা এড়িয়ে যান কেন? ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মাটিতে বসে খাওয়দাওয়া করে কিংবা ঢিলা কুলুখ হাতে নৃত্য করে নবীর সুন্নত পালন করেন, কিন্তু প্রকৃতির ডাকে বাইরে না ছুটে শোভন টয়লেটের দিকে ছুটে যান। ভিলার বাইরে খোলা ড্রেনের ওপর খাটা পায়খানা বানিয়ে নেন না কেন? দেড় হাজার বছর পূর্বে নবীজি (এবং তাঁর বিবিরাও) খোলা মরুভুমিতেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেতেন। আশা করি, কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই দ্বন্দ্ব দূর করতে এগিয়ে আসবেন।
অধ্যায়‑১৬ : রিযা: পালক বা দুধ-মাতা আর দুগ্ধপোষ্য স্ত্রী
আমরা কি কখনও এই অবস্থার কথা চিন্তা করতে পারি যে, একজন বয়স্ক পুরুষ একই সাথে একজন দুগ্ধপোষ্য শিশু (২ বছরের কিংবা তার চেয়েও কম) এবং একজন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাকে বিয়ে করলো, যার বুকে দুধ আছে? এমন যদি হয় যে, স্বামীর ঘরে নবপরিণীতা শিশুটিকে স্তন্যদান করার মতো কেউ নেই (ধরা যাক, শিশুটি এতিম)। ঘরে অবশ্য একজন দুধ‑দানক্ষম বউ আছে, কিন্তু সে বউ কি শিশু বউটিকে তার স্তন্যপান করাতে পারবে? বর্তমান সময়ে অবশ্য এটা কোনো সমস্যা নয়। বাজারে হরেক রকমের টিনজাত ফর্মুলা গুড়া দুধ পাওয়া যায়। তবে বোতলের দুধ খাওয়ানো কোনো ইসলামি সমাধান নয়। দেখা যাক, ইসলাম সমস্যাটিকে কী ভাবে সমাধান করেছে।
হেদাইয়া (সূত্র ১১, পৃ ৭১)
উদাহরণ: একজন লোক যার দু’টি বউ আছে এবং এক বউ আরেক বউকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। যদি কেউ একইসাথে একজন শিশুকে এবং একজন বয়ঃপ্রাপ্তকে বিয়ে করে এবং বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী শিশুস্ত্রীটিকে বুকের দুধ খাওয়ায়, তবে উভয় স্ত্রীই লোকটির জন্য অবৈধ হয়ে যাবে, কারণ লোকটির সাথে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক যদি চালু থাকে, এর অর্থ হবে দুধ-মা এবং দুধ‑মেয়ে উভয়ের সাথে যুগপৎভাবে সহবাস করা অবৈধ, ঠিক যেভাবে একজন নিজস্ব (বায়োলজিকাল) মা ও তার নিজস্ব (বায়োলজিকাল) কন্যার সাথে যুগপৎভাবে সহবাস অবৈধ। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে, যদি লোকটি বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রীর সাথে কোনোপ্রকার যৌনসম্পর্ক স্থাপন না করে থাকে তবে সে (বয়ঃপ্রাপ্তা স্ত্রী) দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে না, কারণ বিবাহবিচ্ছেদের কারণটি তার কাছ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, বিবাহ পূর্ণাঙ্গকরণের আগে। কিন্তু শিশুটি অর্ধেক দেনমোহর পাওয়ার অধিকার রাখে, কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের যে কারণটি উদ্ভূত হয়েছে, তার জন্যে শিশুটি দায়বদ্ধ নয়।
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করলাম, তা একজন বয়স্ক ব্যক্তি কর্তৃক হয়েছে একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিয়ে করা সংক্রান্ত। কিন্তু দৃশ্যপট যদি উল্টো হয়, অর্থাৎ একজন দুগ্ধপোষ্য শিশুর যদি একজন বয়ঃপ্রাপ্তা নারীর (নয় বছর বা তদুর্ধ) সাথে বিয়ে হয়? এ প্রসঙ্গে আমরা জনপ্রিয় লোককাহিনী রহিম বাদশাহ্ ও রূপবান কন্যার ঘটনাটি স্মরণ করতে পারি। শরিয়া আইন অবশ্য এক্ষেত্রে অনেক উদার, এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শরিয়া আইন তেমন কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
এরূপ বিয়ের ক্ষেত্রে শরিয়া একটিমাত্র শর্তই আরোপ করেছে, এই আজব শর্তটির নাম রিযা বা রিদা।
ডিশনারি অব ইসলাম থেকে রিযার সংজ্ঞা এখানে দেয়া হলো (সূত্র ৬, পৃ-৫৪৬)
রিযা: একটি আইনসংক্রান্ত শব্দ। এর অর্থ—নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কোনো নারীর বুক হতে স্তন পান করা।
রিযার আইন সংজ্ঞা: (হেদাইয়া (সূত্র ১১) অনুসারে রিযার আইনি সংজ্ঞা নিম্নরূপ:
রিযা: পাত্রী বা দুধ-মা (প্রাগুক্ত, পৃ-৬৭)—আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে রিযা বলতে বোঝায় একটি শিশু কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় ব্যাপী একজন নারীর স্তন্যপান করা, স্তন্যপান করার মেয়াদকে ‘পিরিয়ড অব ফস্টারেজ’ বা ধাত্রীত্বের মেয়াদ বলা হয়ে থাকে।
ধাত্রী মায়ের কাছে শিশুর স্তন্যপান করানোর ইসলামি নিয়ম এই। এই নিয়মেই একটি নবজাতককে অপর কোন দুধেল নারীর কাছে প্রতিপালন করতে দেয়া হয়। সম্পন্ন আরবদের মধ্যে এই প্রথা আগে চালু ছিল এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত চালু আছে। নবী মুহাম্মদের (সা) চাচা আবু লাহাবের তায়েবা নাম্নী এক ক্রীতদাসী খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে শিশু মুহাম্মদ (সা)-কে স্তন্যপান করায়, অতঃপর দুধ-মা হালিমার কাছে তাঁকে হস্তান্তর করা হয়।
ধাত্রী‑মাতৃত্বের ক্ষেত্রে পালনীয় বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি হাদিস:
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস ৩০. ৩. ১৫:
ইয়াহিয়ার কাছ থেকে আমি, মালিকের কাছ থেকে ইয়াহিয়া, আবদুল্লাহ্ ইবনে দিনারের কাছ থেকে সুলাইমান ইবনে ইয়ছারের কাছ থেকে আবদুল্লাহ্ ইবনে দিনার, উরউয়া ইবনে জুবাইরের কাছ থেকে সুলাইমান এবং উম্মুল মোমেনীন আয়েশার কাছ থেকে উরউয়া বলেছেন যে রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “জন্মসূত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ‑মায়ের ক্ষেত্রেও তা হারাম।” (সূত্র ৫, পৃ ২৪৬)
এই নিয়মানুযায়ী—একটি মেয়ের যে কোনো বয়সে বিয়ে হতে পারে, এমনকি সদ্যজাত শিশুকেও বাপ‑মা বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। নয় বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সের যে কেউ ধাত্রী-মা হতে পারে। এখন একটি ঘটনা পর্যালোচনা করা যাক। ছয় মাস বয়সী একটি ছেলে শিশু, তার দুধ‑মা নয় বছর বয়সী এক কিশোরী। মেয়েটি শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়ালো। শিশুটি আঠারোয় পা দিল। ইসলামী আইন অনুযায়ী, আঠার বছর বয়েসে একটি পুরুষ শিশু বালকত্ব অর্জন করে। তখন দুধ‑মা’র বয়স সাতাশ বা এর সামান্য ওপরে, বলতে গেলে সে তখন যৌবনের মধ্যগগনে। প্রেম, বিয়ে, সন্তানধারণ ইত্যাদির প্রকৃষ্টতম সময় তার। ইসলামের আইন অনুযায়ী, এই দুধ-মায়ের সাথে সদ্য যৌবনে পা দেয়া যুবকটির বিয়ে সম্পূর্ণরূপে হারাম; এমনকি এই মায়ের গর্ভজাত যে কোনো মেয়ের সাথে (দুধ-বোন) তার বিয়েও সম্পূর্ণরূপে হারাম।
‘রিলায়েন্স অব দ্যা ট্রাভেলার’ বা ‘উমদাত আল সালিক’ (সূত্র ৮) নামক প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে এ সম্পর্কিত কয়েকটি আইন পেশ করা হলো এখানে।
সূত্র ৮ পৃ-৫৭৫‑৫৭৬: আইন n 12. 0। দুগ্ধ পানের কারণে অবিবাহযোগ্য আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠা (রিযা)।
n 12. 1—কোনো মেয়ে যদি কোনো পুরুষ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ায়, সে বাচ্চাটির মা হয়ে যায়, (তবে সব ক্ষেত্রে নয়) শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যথা স্ত্রীলোকটির সাথে তার বিবাহ সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম হয়ে যায়; সে স্ত্রীলোকটির পানে তাকাতে পারবে বা তার সাথে নিরিবিলিতে সাক্ষাৎ করতে পারবে, এবং তাকে স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হবে না, যদি
(a) উক্ত দুধ নয় বছর বা তদুর্ধ বয়েসী বালিকার স্তন হতে নিঃসৃত হয়ে থাকে; তা সে নিঃস্বরণ যৌনক্রিয়ার ফলেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক;
(b) এবং দুগ্ধপানরত শিশুটির বয়স দুই বছর বা এর চেয়ে কম হয়;
(c) এরূপ দুধ খাওয়ানোর সংখ্যা পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে পাঁচবার হয় (স্তন্যদান বা ব্রেস্ট ফিডিংয়ের সংখ্যা পাঁচ বারের কম হলে উক্ত বিধিনিষেধ কার্যকর নয়। পৃথক পৃথকভাবে স্তন্যদান করার অর্থ—সর্বসাধারণের কাছে যা পৃথক হিসেবে স্বীকৃত).
n 12.2 এরূপ অবস্থায়;
(1) এরূপ স্তন্যদায়িনী সেবিকার পক্ষে উক্ত শিশু কিংবা তার অধঃস্তন সম্পর্কযুক্ত পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক কারও সাথে বিবাহবন্ধন স্থাপন করা ‘বিশেষভাবে’ নিষিদ্ধ। (এখানে ‘বিশেষভাবে’ বলতে বোঝায় শুধুমাত্র শিশুটি কিংবা তার অধঃস্তন কেউ, ঊর্ধ্বতন কেউ নয়, অর্থাৎ শিশুটির পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি কেউ নয়।)
(2) সে (স্ত্রীলোকটি) শিশুটির মা হয়ে যায়, এবং শিশুটির জন্যে বিবাহ করা হারাম হয়ে যায় তাকে এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) ঊর্ধ্বতনদেরকে, এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অধঃস্তনদেরকে (কারণ অধঃস্তনরা যেন তার ভাইবোন হয়ে গেছে)।
রিযা সম্পর্কে বেশ কিছু মজাদার হাদিস রয়েছে, যার কিছু নমুনা নিচে দেয়া হলো।
বিবি আয়েশার বোন উম্মে কুলসুম সেলিম ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরকে মাত্র তিনবার তার বুকের দুধ খাওয়ায়, যার দরুন আয়েশার সাথে দেখা করা ইবনে আবদুল্লাহর জন্যে হারাম ছিল। যদি উম্মে কুলসুম দশবার পৃথকভাবে স্তন্যপান করাতো, সেক্ষেত্রে আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ করা তার জন্যে হালাল হয়ে যেতো।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস নম্বর ৩০. ১. ৭:
…সেলিম ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর তাকে (ইয়াহিয়াকে) বলেন যে উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর আস সিদ্দিক যখন তাকে স্তন্যপান করাচ্ছিলেন তখন উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তার বোনকে বলেছিলেন, “তাকে দশবার দুধ খাওয়াও, যেন সে আমার সাথে দেখা করার অধিকারী হয়।” সেলিম বলেন, “উম্মে কুলসুম আমাকে তিন বার দুধ খাওয়ানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুতরাং—আমি আর আয়েশার সাক্ষাৎ পাইনি কারণ উম্মে কুলসুম দশবার শেষ করতে পারেননি। (সূত্র ৫, পৃ ২৪৪)
অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের সাথে সাক্ষাৎযোগ্য হওয়ার উপযুক্ততা: তার কাছ থেকে দশ কিস্তি দুগ্ধপান।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস নম্বর ৩০. ১. ৮:
…উম্মুল মোমেনীন হাফসা আসিম বিন আবদুল্লাহ্ বিন সা’দকে তার (হাফসার) বোন ফাতিমা বিনতে উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি তাকে দশবার তাঁর স্তনের দুধ খাওয়ান, তা’হলে সে (আসিম) তার (হাফসার) কাছে যেতে পারবে এবং দেখা করতে পারবে। তিনি (ফাতিমা) তা’ করেছিলেন। সুতরাং সে (আসিম) তার (হাফসার) সাথে দেখা করতে যেতো। (সূত্র ৫, পৃ ২৪৫)
নিচে লক্ষ্য করুন—দশ কিস্তি স্তন্যপান করানোর রীতি পরবর্তীতে পাঁচ কিস্তিতে নেমে আসে।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস ৩০. ৩. ১৭:
…আয়েশা বলেন “কোরানে যা নাজেল হয়েছিল তা এই, ‘দশবার বুকের দুধ খাওয়ালে সে হারাম হয়ে যায়’, অতঃপর তা পাঁচবার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। রসুলুল্লাহ্ (সা) যখন মারা যান, তখন কোরআনে এখন যেভাবে আছে সেভাবেই তেলাওয়াত হয়ে আসছিলো।” (সূত্র ৫, পৃ ২৪৬)
একথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ইসলামী সমাজে রিযা পদ্ধতি শিশুদের জন্যে দুগ্ধ সরবরাহ সমস্যার এক অনুপম উপায়। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে বিয়ের বাজারের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? যদি মায়েরা কিছু সময়ের জন্যেও তার শিশুটিকে ধাত্রী মায়ের হাতে তুলে দেয়, বিয়ের বাজার থেমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। রিযার কারণে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল বরটিও তার জন্যে একটি কনে যোগাড় করতে হিমশিম খাবেন, এতে কোনো সন্দেহ আছে কি?
এখানে আরও একটি মজার ব্যাপার উল্লেখ করা যায়।
একজন স্ত্রীলোক দাড়িধারি যুবক বয়স্ক কোনো পুরুষকে তার স্তনের দুধ দিলে যুবকটি তার জন্যে হারাম।
সহি মুসলিম, বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৪২৬;
ইবনে আবু মুলায়েকা বর্ণনা করেছেন যে, আল কাশেম বিন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর তার কাছে বলেছেন যে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে সাহলা বিনতে সুহাইল বিন আমর আল্লাহর রসুলের (সা) কাছে আসলো এবং বলল—রসুলুল্লাহ্! সেলিম (আবু হুজাইফার মুক্ত ক্রীতদাস) আমাদের গৃহে আমাদের সাথে থাকে, এবং একজন পুরুষ যা অর্জন করে তা সে অর্জন করে ফেলেছে (অর্থাৎ সাবালকত্ব) এবং সেই জ্ঞান অর্জন করেছে যে জ্ঞান একজন পুরুষ অর্জন করে (অর্থাৎ যৌনবিষয়ক জ্ঞান)। তদুত্তরে তিনি বললেন—তাকে তুমি তোমার বুকের দুধ খাওয়াও এতে সে তোমার জন্যে মেহরিম হয়ে যাবে। (ইবনে মুলায়েকা) সে (ইবনে মুলায়েকা) বলেন—আমি ভয় বশতঃ এই হাদিসটি বছর খানেকের জন্যে কারও কাছে বলিনি। অতঃপর একদিন কাশেমের সাথে আমার দেখা হলে আমি তাকে বললাম—আপনি আমাকে যে হাদিসটি বলেছিলেন আমি তা কারও কাছে বলিনি। তিনি বললেন—কোন্ হাদিস? আমি হাদিসটির কথা উল্লেখ করলে তিনি বললেন, আমার কথা বলে তুমি হাদিসটি বর্ণনা করতে পার যে আয়েশের (রাঃ) কাছ থেকে আমি উহা শুনেছিলাম। (সূত্র ৩)
সহি মুসলিম, বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৪২৮;
জয়নাব বিনতে আবু সালাম হতে বর্ণিত: আমি রসুলুল্লাহর (সা) স্ত্রী উম্মে সালামাকে আয়েশার কাছে বলতে শুনেছি: আল্লাহর কসম, আমি এমন তরুণ পুরুষের সামনে যেতে চাই না যে লালন‑পালনের সময় (বুকের দুধ খাওয়ার মেয়াদ) পার করেছে। তখন আয়েশা বললেন, “কেন? সাহলা বিন্ত সুহাইল রসুলুল্লাহর (সা) কাছে এসে বলেছিল, ইয়া রসুলুল্লাহ্। আল্লাহর কসম! সেলিম (আমাদের ঘরে) ঢুকে বিধায় আবু হুজায়ফার মুখে আমি চরম বিরক্তি দেখেছি। প্রতিউত্তরে রসুল (সা) বললেন: ‘তাকে তোমার স্তনের দুধ পান করাও।’ সে বলল: তার মুখে যে দাড়ি। কিন্তু তিনি (আবারও) বললেন তাকে বুকের দুধ খাওয়াও, তাহলেই হুজায়ফার মুখে যা আছে তার দূর হয়ে যাবে (অর্থাৎ বিরক্তি চলে যাবে) (পরবর্তীতে) সে (সাহলা) বলেছিল (আমি সেরূপ করেছিলাম) এবং আল্লাহর কসম, সেলিম (আমাদের ঘরে) ঢুকে বিধায় আবু হুজায়ফার মুখে (বিরক্তির) চিহ্ন দেখতে পাইনি।” (সূত্র ৩)
[হুবুহু একই ঘটনা নিয়ে আরও কয়েকটি হাদিস—সুনান আবু দাউদ: খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২০৫৬, পৃ: ৫৪৯ এবং মুয়াত্তা: পরিচ্ছেদ ৩০, হাদিস নম্বর ১২, পৃ: ২৪৫‑২৪৬ পাওয়া যাবে। কলেবর বড় হওয়ায় হাদিসগুলি উল্লেখ করা হলো না।]
এই রিযা পদ্ধতি অবলম্বন করে বিবি আয়েশা তাঁর চাচা, আফলাহ‑কে তাঁর সাথে মুখোমুখি দেখা করার অনুমতি লাভ করেন। এখানে স্তন্য আফলাহর ভায়ের স্ত্রী আয়েশাকে স্তন্যপান করিয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলামী প্রথামতে, স্ত্রী প্রাকৃতিক নিয়মানুযায়ী তার স্তন দ্বারা যে দুধ প্রস্তুত করে তার মালিক হচ্ছে স্বামী—অর্থাৎ স্ত্রীর দুধকে স্বামীর দুধ বলা হয়।
বাংলা সহি বুখারি; খণ্ড ৪, হাদিস নম্বর ২৪৬৮:
আদম (র)…’আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আফলাহ্ আমার সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন। আমি অনুমতি না দেওয়ায় তিনি বললেন, আমি তোমার চাচা, অথচ তুমি আমার সাথে পর্দা করছ? আমি বললাম, তা কিভাবে? তিনি বললেন, আমার ভাইয়ের স্ত্রী, আমার ভাইয়ের দুধ (ভাইয়ের কারণে তার স্তনে হওয়া দুধ) তোমাকে পান করিয়েছে। ‘আয়িশা (রা) বলেন, এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা)‑কে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আফলাহ্ (রা) ঠিক কথাই বলেছে। তাকে (সাক্ষাতের) অনুমতি দিও (সূত্র ১৭)
বাংলা জামি আত তিরমিযী; খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ১১৪৯:
হাসান ইবন আলী খাললাল (র.)…আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার দুগ্ধ সম্পর্কীয় চাচা আমার কাছে আসতে অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা না করে তাকে আমার কাছে আসতে অনুমতি দিতে আমি অস্বীকৃতি জানালাম। অনন্তর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইনি অবশ্যই তোমার কাছে আসতে পারেন। কারণ, তিনি তো তোমার চাচা।
আয়েশা (রা.) বললেন, আমাকে তো এক মহিলা দুগ্ধপান করিয়েছেন। কোন পুরুষ তো আমাকে দুগ্ধ পান করান নি? তিনি বললেন, ইনি তো তোমার চাচা। সুতরাং ইনি তোমার কাছে এসে ঘরে প্রবেশ করতে পারেন
ইমাম আবু ঈসা (র.) [ইমাম তিরমিযী] বলেন, এই হাদীছটি হাসান-সহিহ।
কোন কোন সাহাবী ও অপরাপর আলিমের এই হাদীছ অনুসারে আমল রয়েছে। তাঁরা যার মাধ্যমে মহিলা দুগ্ধবতী হয়েছে, তার সম্বদ্ধেও নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়ে মূল ভিত্তি হলো আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিছটি। কোন কোন আলিম এই বিষয়ে অবকাশ রেখেছেন। কিন্তু প্রথমোক্ত অভিমতটি অধিক সহি। (সূত্র ১৮)
এছাড়াও বিবি আয়েশা কাউকে তাঁর সাথে মুখোমুখি দেখা করতে চাইলে তিনি তাঁর বোনের মেয়েদেরকে অনুরোধ করতেন, তারা যেন সেই পুরুষকে তাদের স্তনের দুধ পান করিয়ে দেয়, যাতে করে তিনি তাদের সাথে দেখা করতে পারেন (সুনান আবু দাউদ খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২০৫৬)।
নবী মুহাম্মদের এক চাচা, হামযা, প্রায় নবীর বয়স্ক ছিলেন—কারণ নবীর (সা) পিতামহ আবদুল মুতালিব এবং নবীর (সা) পিতা আবদুল্লাহ্ একই সময়ে বিবাহ করেন। আবদুল্লাহ্ বিবাহ করেন আমিনাকে, আর আবদুল মুতালিব বিবাহ করেন হালাকে, যার বয়স ছিল আমিনার মত। এর পরে হালার গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেন হামযা এবং আমিনার গর্ভে জন্মগহণ করেন নবী (সা)। হামযার ঘরে জন্মগ্রহণ করে এক কন্যা, উমারা। ওহুদের যুদ্ধে নবী মুহাম্মদের (সা) চাচা হামযা নিহত হন—তখন নবীকে প্রস্তাব দেয়া হয় হামযার কন্যাকে বিবাহ করার। কিন্তু নবী (সা) সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন—রিযার অযুহাত দেখিয়ে—যেহেতু হামযা এবং নবী (সা) উভয়েই এক দুধমাতার দুধ পান করেছিলেন।
সহি বুখারি, খণ্ড ৩, বই ৪৮, হাদিস নম্বর ৮১৩: ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন, হামযার কন্যা সম্বন্ধে নবী বললেন, “আইনগতভাবে আমি তাকে (হামযার কন্যাকে) বিবাহ করতে পারি না। কারণ দুধপান দিয়ে যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় সে সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের মতোই (বৈবাহিক ব্যাপারে)। সে (হামযার কন্যা) আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। (সূত্র ২)
এ এক আজব নিয়ম। বক্ষ এবং স্তন নারীদেহের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ কামকেন্দ্র। পুরুষ তো দূরের কথা, যুবতী নারীর উত্তাল স্তন দেখে অচেতন গাছপালাও নাকি ভিরমি খায়। রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা কাব্যে আছে, রূপসী চিত্রাঙ্গদা বিজন বনে ফুলগাছের নিচে শুয়ে আছে। পাহাড়ের মতো উঁচু কিন্তু নবনীর মতো কোমল স্তন দুটির মোহনীশক্তি এতই বেশি, যে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলগুলিও তা দেখে মুর্ছিত হয়ে পড়ল এবং চিত্রাঙ্গদার বুকে পড়ে আত্মহত্যা করল!
“স্তনতটমূলে ফুলগুলি বিছাইল আপনার মরণ শয়ন”; অথচ ইসলামের সমাধান কতোই না সরল। বুক খুলে অনাত্মীয় পুরুষকে এক চুমুক দুধ খাইয়ে দাও। ব্যস, সে মেহরিম হয়ে গেল। এতে করে হিজাব‑নিকাব পরার ঝামেলাও অংশত কমে যাবে বলে মনে হয়। কোরআান‑হাদিস যেহেতু আল্লাহপাকের অপরিবর্তনীয় বিধান, যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত পালন করে যেতে হবে, সুতরাং সহি হাদিস বর্ণিত এই সহজ নিয়মটি আমাদের ইসলামপন্থী ভাইয়েরা তাদের স্ত্রী‑কন্যাকে পালন করতে উদ্বুদ্ধ করবেন, আশা করি।
এই প্রবন্ধ প্রকাশের অনেক দিন পরে: সম্প্রতি মিশরে এই ধরনের স্তন্যপান নিয়ে বেশ হৈ চৈ হয়েছিল। এক আলেম ফতোয়া দিয়েছিলেন যে, অফিসে কর্মরত পুরুষ-মহিলার পাশাপাশি অবস্থান হালাল করার জন্য মহিলা তার পুরুষ কর্ম‑সাথীকে তার স্তনের দুধ পান করিয়ে দিতে পারে। তুমুল বিতর্কের মুখে আল-আজহার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এই ইসলামী পণ্ডিতকে বিদায় দিতে বাধ্য হয়। বলা নিস্প্রয়োজন যে, সেই ইসলামী আলেম ওপরের হাদিস দিয়ে তার মতামতের যথার্থতা প্রমাণ করেছিলেন। কিন্তু হায় আপামর জনসাধারণ! শতকরা নিরানব্বই জন এই হাদিস যে আছে, তা জানত না। তাই এই সব হাদিস তাদের কাছে অবিশ্বাস্য—তাদের চিন্তারও বাইরে ছিল।
ক্রীতদাসী কিংবা যুদ্ধবন্দিনী (যৌনসঙ্গমের জন্য) একজন মুসলমান পুরুষের জন্যে পুরোপুরি বৈধ। এদের সাথে যৌন কামকেলী করায় ইসলামী আইনে কোনো বাধা নেই [সাম্প্রতিক কালে আই এস তাই প্রমাণ করেছে ইয়াজিদি যুদ্ধ-বন্দিনীদের সাথে সথেচ্ছ যৌনাচারের দ্বারা—যা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখছে—ইসলামের মাহাত্ম্য।] তবে একজন মুসলিম মেয়ের ক্ষেত্রে নিয়মটা কী? পুরুষদের পদাংক অনুসরণ করে মুসলমান মেয়েরা কি পারে তাদের ক্রীতদাসদের সাথে যৌনসঙ্গম করতে? না, ইসলামে মেয়েদের এরূপ যৌন‑উৎসবে গা ভাসানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। কোনো মুসলমান নারী ভুলেও যদি এই কর্মে নিয়োজিত হয়, তবে তার জন্য কঠোর সাজা আছে—শতশত চাবুকের আঘাত।
সুতরাং সে (স্ত্রী) যখন দেখবে, তার স্বামী ক্রীতদাসী কিংবা কোনো মালে গনিমত মেয়ের সাথে অবাধে রতিক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে, তার মনে ঈর্ষা জাগাটা খুবই স্বাভাবিক। স্বামীকে এই অশ্লীল বা নোংরা কর্ম থেকে বিরত রাখতে স্ত্রী কী করতে পারে? সে কি স্বামীকে থামাতে রিযার নিয়ম প্রয়োগ করতে পারে? স্ত্রী যদি তরুণী ক্রীতদাসীটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ায়, তা হলেই তো ক্রীতদাসীটি তার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে। হ্যাঁ, ঠিক এমনই একটা ঘটনা ঘটেছিল একবার। একজন ঈর্ষাপরায়ণ স্ত্রী তার তরুণী ক্রীতদাসীকে তার স্তনের দুধ খাইয়েছিল এই আশায় যে, তার কামার্ত স্বামীটি আর সেই ক্রীতদাসীটির সাথে যৌন‑মিলনে যেতে পারবে না। কিন্তু হায়! স্ত্রীর ফন্দি কাজে লাগেনি। উল্টো ইসলামী শাস্তির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছিল স্ত্রীকে। খলীফা উমর মেয়েটিকে প্রহার করার আদেশ দিয়ে মুসলমান পুরুষের জন্যে ক্রীতদাসী ভোগের অপ্রতিহত অধিকার সংরক্ষণ করেছিলেন। ঘটনাটি অনেকের কাছেই হৃদয়বিদারক মনে হবে। ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ মুয়াত্তা থেকে জেনে নেয়া যাক। চার মাজহার সুন্নি মুসলমানদের চারটি স্তম্ভ, এর অন্যতম প্রধান রূপকার হজরত ইমাম মালিক (রা:) মুয়াত্তা গ্রন্থের প্রণেতা—মুয়াত্তা মালেকি মাজহাবের প্রধান আইন বই।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস নম্বর ৩০. ২. ১৩:
আবদুল্লাহ্ ইবনে দিনার বলেন: লোকদেরকে যেখানে বিচার করা হয় সেখানে একদিন আমি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের সাথে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার কাছে আসলো এবং বয়স্ক লোকদেরেকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। উত্তরে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বলল: “একবার এক লোক উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে এসে বলল, ‘আমার একটি ক্রীতদাসী আছে, তার সাথে আমি নিয়মিত যৌনসঙ্গম করি। আমার স্ত্রী তার কাছে গিয়ে তাকে তার স্তনের দুধ খাইয়েছে। এরপর যখন আমি ক্রীতদাসীটির কাছে গেলাম, আমার স্ত্রী আমাকে বের হয়ে যেতে বলল, কারণ সে নাকি তাকে (ক্রীতদাসীটিকে) তার বুকের দুধ খাইয়েছে।’
উমর লোকটিকে আদেশ দিলেন তার স্ত্রীকে প্রহার করার এবং (আগের মতোই) সে তার দাসী মেয়েটির কাছে যেতে পারবে বললেন। কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় তা কেবল ছোটদের বেলায়।” (সূত্র ৫, পৃ ২৪৬)
রিযার ধারণা স্বামী‑স্ত্রীর মধ্যে প্রয়োগ করলে কী হবে? স্বামীর পাকস্থলীতে যদি স্ত্রীর দুধ ঢুকে যায়, তখন? ওয়স্তাগফিরুল্লাহ্ নাউজুবিল্লাহ্! কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমান এরূপ কথা চিন্তাও করতে পারে না। এখন দেখা যাক, ইসলামের পবিত্র কেতাবগুলিতে এ সম্পর্কে কোনো বিধান খুঁজে পাওয়া যায় কি না। কোনোক্রমে কেউ যদি তার স্ত্রীর দুধ খেয়ে ফেলেন, সেজন্যে স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে না। দুই বছর বা তার চেয়ে কম বয়সে বুকের দুধ খেলে তবেই কেবল তাদের মধ্যে (দুগ্ধদাত্রী এবং শিশুটি) আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস নম্বর ৩০. ২. ১৪:
আবু মূসা আল‑আশারিকে জনৈক লোক জিজ্ঞেস করল: আমি আমার স্ত্রীর স্তন হতে কিছু দুধ খেয়ে ফেলেছি, তা আমার পাকস্থলীতে চলে গেছে। আবু মূসা বললেন, “আমি আপনাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সে তোমার জন্যে হারাম হয়ে গেছে।” আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ বললেন, “তুমি কী বলছ তা ভেবে দেখ।” আবু মূসা বললেন, “তাহলে তোমার মত কী?” আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ বললেন, “দুধ খাওয়ার কারণে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল প্রথম দু’বছরে।” (ইবনে মাসুদের মত ছিলো যে বয়েসী শিশু যখন মা ছাড়া অন্য নারীর দুধ পান করে, তখনই কেবল শিশুটি এবং দুগ্ধদানকারী স্ত্রীলোকটির মধ্যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়।)
আবু মুসা বললেন, “এই জ্ঞানী লোকটি যতক্ষণ আমাদের মাঝে থাকবেন, তোমরা আমাকে কোনো কিছুর ব্যপারে জিজ্ঞেস করো না।” (সূত্র ৫, পৃ ২৪৫)
কে ছিলেন এই আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ? যে দশজন সাগরিদ (সাহাবি বা মুহাম্মাদের সহচরগণ) রসুলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং মৃত্যুর পূর্বেই যাদেরকে ইসলামী স্বর্গের (বেহেশতের) সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল (আশারা মোবাশ্বের—সুসংবাদের দশজন) আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদ তাদের অন্যতম।
ইবনে মাসুদ উচ্চারিত প্রতিটি বাক্যকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, নবী মুহাম্মদের (সা) ঠিক পরেই ছিল তাঁর স্থান। এ রকম উচ্চমর্যাদাশীল সাহাবির মুখে এ কী কথা! স্ত্রীর বুকের দুধ খাওয়ার পরও দাম্পত্য সম্পর্ক টিকে থাকে। আশ্চর্য!
এ রকমই আরেকটি হাদিস নিচে দেয়া হলো—দুধেল নারীর সাথে সঙ্গম করা হালাল।
সহি মুসলিম, বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৩৯১:
জুদাইমা বিনতে ওয়াহাব আল আসাদিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি আল্লাহর রসুল (সা) কে বলতে শুনেছেন: আমি দুধেল স্ত্রীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম যে, রোমান এবং পারসিকরা তা করে থাকে এবং শিশুটির তাতে কোন ক্ষতি হয় না। (ইমাম মালিক বলেছেন: এই হাদিসের খালাফ বর্ণিত বর্ণনায় যে নামটি আছে তা হচ্ছে জুদামাত আল-আসাদিয়া। তবে ইয়াহিয়ার বর্ণনায় যে নামটি আছে সেটিই সঠিক, অর্থাৎ নামটি হবে জুদাইমা আল‑আসাদিয়া)। (সূত্র ৩)
বয়ঃপ্রাপ্ত স্বামী কর্তৃক দুধেল স্ত্রীর স্তন্য চোষণ করা কিংবা দুধ পান করা অসিদ্ধ নয়, নিম্নে উদ্ধৃত ইমাম মালিকের পংক্তিগুলি হতে তার জবাব মেলে।
যখন কোন বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্ত্রীর দুধ পান করে, সেটা স্বাভাবিক খাদ্য মাত্র, ধাত্রীদুগ্ধ নয়।
এ এক বিচিত্র আইন। দু’বছরের কম বয়েসী কেউ (শিশু স্বামীও হতে পারে) এক ফোঁটামাত্র দুধ খেলেও তা হলো ধাত্রী দুধ (ফস্টার মিল্ক); আর দুবছর পার হলেই সেই একই দুধ হয়ে যায় খাদ্য। এর সোজাসুজি অর্থ হচ্ছে একজন স্বামী প্রয়োজনে তার দুধেল স্ত্রীর দুধ পান করে নিতে পারে—খাদ্য হিসেবে!
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩০, হাদিস নম্বর ৩০. ১. ১১:
মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া বলেন যে ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ বলেছেন যে, তিনি আল‑মুসাবকে বলতে শুনেছেন—শিশুটি যখন দোলনায় থাকে, তখনই কেবল দুধপান সংক্রান্ত নিয়মকানুন প্রযোজ্য। অন্য সময়ে এ থেকে (বুকের দুগ্ধ পান থেকে) কোন রক্তের সম্পর্ক জন্মায় না।
মালিকের সূত্র উল্লেখ করে ইয়াহিয়া আমাকে বলেন (ইবনে শিহাবের সূত্রে) যে, তিনি বলেছিলেন, “বুকের দুধ পান, তা সে যত অল্প কিংবা যত বেশীই হক না কেন, (সম্পর্ককে) হারাম করে ফেলে। দুগ্ধপানের মধ্য দিয়ে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় তা পুরুষকে মাহরিম করে।”
ইয়াহিয়া বলেন যে, তিনি মালিককে বলতে শুনেছেণ, “দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের দুগ্ধপান, তা সে যত অল্প বা বেশী হোক না কেন, হারাম (সম্পর্কের) সৃষ্টি করে। দুই বছরের পরে যদি তা করা হয়, তা সে কম‑বেশী যাই হোক না কেন, সেজন্যে কোন কিছু হারাম হয়ে যায় না। এ নেহায়েতই খাদ্যের মতো।” (সূত্র ৫, পৃ ২৪৫)
অধ্যায়‑১৭ : যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌনসঙ্গম
যুদ্ধে অধিকৃত নারীদের সাথে অবাধ যৌনক্রিয়া করার অনুমতি ইসলাম দেয়। এই নিয়ম ইসলামের সোনালি যুগে প্রচলিত ছিল এবং অন্তত তাত্ত্বিকভাবে সে আইন এখনও বহাল আছে—আজকের আই এস জিহাদীরা অক্ষরে অক্ষরে ইসলামের এই বিধান কার্যকর করেছে তাদের ইসলামী স্বর্গে।
স্বয়ং রসুলে করীম (সা) এই নিয়ম পালন করেছেন। কোরআনের যে সমস্ত আয়াতে এই ধরণের যৌনসঙ্গম করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, তার গোটাকয়েক নিচে উদ্ধৃত করা হলো।
সূরা নিসা আয়াত ৪:২৪
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়—এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্র হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য—ব্যাভিচারের জন্যে নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ্ হবে না। যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।
সূরা মুমেনুন আয়াত ২৩:১‑৫
২৩:১ মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,
২৩:২ যারা নিজেদের নামাজে বিনয়‑নম্র;
২৩:৩ যারা অনর্থক কথা‑বার্তায় নির্লিপ্ত,
২৩:৪ যারা যাকাত দান করে থাকে
২৩:৫ এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
২৩:৬ তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভূক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
ওপরে লক্ষ্য করুন আয়াত ২৩:৫‑৬ এখানে দাসীদের সাথে সহবাস হালাল করা হয়েছে। এই সম্পর্কে ইবনে কাসীরের তাফসির থেকে জানা যাক। ইবনে কাসীর লিখেছেন:
ইবনে কাসীর; খণ্ড ১৫, পৃ ১৩‑১৪
অতঃপর মুমিনদের আর একটি বিশেষণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত। অর্থাৎ যারা ব্যভিচার, লাওয়াতাত ইত্যাদি দুষ্কর্ম হতে বেঁচে থাকে। তবে যে স্ত্রীদেরকে আল্লাহ্ তাআলা তাদের জন্য বৈধ করেছেন এবং জিহাদে যেসব দাসী লাভ করা হয়েছে, যা মহান আল্লাহ্ তাদের জন্যে হালাল করেছেন, তাদের সাথে মিলনে কোন দোষ নেই।
এরপর ঘোষণা করা হচ্ছেঃ যারা এদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে কামনা করে তারা হবে সীমালংঘনকারী।
হযরত কাতাদা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন স্ত্রীলোক তার গোলামকে গ্রহণ করে (অর্থাৎ গোলামের সাথে সহবাস করে) এবং দলীল হিসেবে এই আয়াতটিই পেশ করে। হযরত উমার (রাঃ) এটা জানতে পেরে সাহাবীদের (রাঃ) সামনে এটা পেশ করেন। সাহাবীগণ বলেনঃ “সে এ আয়াতের অর্থ ভুল বুঝেছে।” তখন হযরত উমার ফারূক (রাঃ) গোলামটিকে প্রহার করেন এবং তার মাথা মুণ্ডন করেন। আর ঐ স্ত্রীলোকটিকে তিনি বলেনঃ “এরপরে তুমি প্রত্যেক মুসলমানের উপর হারাম।” [পাদটীকা ১: এ ‘আসার’টি মুনাকাত’ এবং গারীব বা দুর্বলও বটে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটা সূরায়ে মায়েদার তাফসীরের শুরুতে আনয়ন করেছেন। কিন্তূ এখানে আনয়ন করাই উচিত ছিল ঐ স্ত্রীলোকটিকে সাধারণ মুসলমানদের উপর হারাম করার কারণ হলো তার ইচ্ছার বিপরীত তার সাথে মু’আমালা করা। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।] (সূত্র ৩১)
সূরা মা’রিজ আয়াত ৭০:২৫‑৩৫
৭০:২৫ যাঞ্ছাকারী ও বঞ্চিতের
৭০:২৬ এবং যারা প্রতিফল দিবসকে সত্য বলে বিশ্বাস করে।
৭০:২৭ এবং যারা তাদের পালনকর্তার শাস্তির সম্পর্কে ভীত‑কম্পিত।
৭০:২৮ নিশ্চয় তাদের পালনকর্তার শাস্তি নিঃশঙ্ক থাকা যায় না।
৭০:২৯ এবং যারা তাদের যৌন‑অঙ্গকে সংযত রাখে,
৭০:৩০ কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না,
৭০:৩১ অতএব, যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে, তারাই সীমালংঘণকারী।
৭০:৩২ এবং যারা তাদের আমানত ও অস্বীকার রক্ষা করে।
৭০:৩৩ এবং যারা তাদের সাক্ষ্যদানে সরল‑নিষ্ঠাবান
৭০:৩৪ এবং যারা তাদের নামাযে যত্নবান,উপরোক্ত
৭০:৩৫ তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে।
ওপরোক্ত আয়াত অনুসারে একজন মুসলমান পুরুষ, সে বিবাহিত হোক আর অবিবাহিতই হোক, ক্রীতদাসী কিংবা যুদ্ধে বন্দীকৃত নারীদের সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারে। আয়াতে বর্ণিত ‘তোমাদের দক্ষিণহস্ত যাদের অধিকারী’ (আরবি ‘মালাকুল ইয়ামিন’, ইংরেজি ‘your right hands’ possession’, এই কথার অর্থ হচ্ছে অধিকারভুক্ত দাসী বা যুদ্ধবন্দিনী।
এটি একটি আরবি বাগধারা। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য। পবিত্র কোরআনের অধিকাংশ বাংলা অনুবাদে দেখা যায়—অনুবাদকেরা এভাবে অনুবাদ করেছেন—‘তোমাদের পত্নী এবং অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত’।
তারা পত্নী বলে একবচনে অনুবাদ করেছেন পত্নীগণ। বাংলা তরজমাকারীরা কেন পবিত্র গ্রন্থের তরজমা এরূপ করেছেন, তা তারাই ভাল বলতে পারবেন। তবে ইংরেজি অনুবাদকেরা তা করেননি, স্পষ্টভাবে ‘ওয়াইভস’ (wives) বলে অনুবাদ করেছেন। পাঠকেরা যাতে বাজারে প্রচলিত কোরআনের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থগুলি পড়ে কোনোপ্রকার ধন্দে না পড়েন, তাই এত কথা বলা।
সে যা হোক, বর্তমান জমানায় যুদ্ধবন্দী কারা? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বেশিদূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যেহেতু কাফেরদের সাথে চিরস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে বলে ইসলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সুতরাং কাফেরদের দেশের সমস্ত রমণীই অন্ততঃ তাত্ত্বিকভাবে এই শ্রেণীতে পড়ে। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কাফেরদের দেশে বসবাসরত একজন মুসলমান (তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যা-ই হোক না কেন) যে কোনো সংখ্যক কাফের রমণীদের সাথে ঘুমাতে পারবে (অর্থাৎ যৌনকর্ম করতে পারবে)। বিবেক তাকে দংশন করবে না—কারণ আল্লাহপাক তাকে এই অনুমতি দিয়েছেন।
এই কাজের জন্যে জিনা বা ব্যভিচারের দায়ে লজ্জিত বা দণ্ডিত হওয়ার বিন্দুমাত্র শঙ্কার কারণ নেই তার। অনেক ইসলামপন্থী হয়তো গর্ব করে বলেই বসবেন যে, এইসব কাফের নারী মুসলমান পুরুষের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে—এটা তাদের চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য। এ প্রসঙ্গে আমার এক অভিজ্ঞতার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়।
একবার থাইল্যান্ডের এক ম্যাসাজ পার্লারে আমার পরিচিত কয়েকজন পাক্কা পাকিস্তানি মুসলমানের সাথে দেখা হয় আমার। তাদের বেশ কয়েকজন ইসলামী দাড়িতে ভূষিত ছিল। থাই যৌনকর্মীদের সাথে তারা কী করছে—আমার এই প্রশ্নের জবাবে তারা অম্লানবদনে বলল যে, থাই রমণীদের সাথে যৌনসঙ্গম করা দোষের কিছু না। কারণ থাইল্যাণ্ড কাফেরদের দেশ, আর কাফের রমণীদের সাথে যৌনকর্ম করা পুরোপুরি ইসলামসম্মত। তারা আরও জোর দিয়ে বলল যে, বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে মুসলমানরা কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, বিশ্বের সমস্ত অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় আছে মুসলমানরা। যুদ্ধাবস্থায় সমস্ত কাফের রমণীই গনিমতের মাল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য, তা সে যেখানেই থাকুক না কেন। তারা আমাকে আরও বলে যে, কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করতে যায়, সেখানে অমুসলিম রমণী ভোগ করায় কোনো দোষ নেই, এ কাজ পুরোপুরি শরিয়তসম্মত।
এইসব ইসলামপন্থীদের কথাকে তখন মোটেই আমলে নেইনি। ভেবেছিলাম এইসব মোল্লা ইসলামের কিছুই জানে না, নিজেদের ভোগবাসনা চরিতার্থ করতে যা-তা বানিয়ে ফেলেছে। ইসলাম কক্ষণই এই ধরনের পাপ সমর্থন করতে পারে না। কয়েক বছর পর আমি ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে মনস্থ করি। গভীরভাবে অধ্যয়নের পর বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম, থাইল্যাণ্ডে যাদেরকে আমি কাঠমোল্লা ভেবে মেনে মনে মনে গালি দিয়েছিলাম, তারা ঠিক কথাই বলেছিল সেদিন। জীবন্ত ইসলাম হিসেবে মুসলমানরা যা মানা করে থাকে, শরিয়ার বাইরে কিছুই করেনি তারা। অনেকেরই হয়ত বিশ্বাস হবে না—তা’হলে শরিয়া বর্ণিত নিচের আইনটি পড়ে দেখা যাক।
বিদেশের মাটিতে জিনা বা ব্যভিচার করলে কোনো শাস্তি নেই (সূত্র ১১, হেদাইয়া, পৃ ১৮৫)
বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটন (committing whoredom) শাস্তিযোগ্য নয়:
যদি কোন মুসলমান বিদেশের মাটিতে কিংবা বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়, এবং অতঃপর মুসলিম রাষ্ট্রে প্রত্যাবর্তন করে, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না এই কারণে যে, একজন ব্যক্তি সে যেখানেই থাকুক না কেন, মুসলিম ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ করার কারণে, সেখানকার (অর্থাৎ মুসলিম রাষ্ট্রের) সমস্ত বাধ্যবাধকতা পালন করে চলতে নিজেকে দায়বদ্ধ করেছে। এর পক্ষে আমাদের পণ্ডিতজনদের (Doctors) দ্বিবিধ যুক্তি রয়েছে।
প্রথমত, নবী বলেছেন যে, “বিদেশের মাটিতে শাস্তি প্রদান করা যায় না।”
এক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে একজন মুসলমান ম্যাজিষ্ট্রেটের কোনো কর্তৃত্ব নেই, সুতরাং বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের দায়ে যদি কোনো ব্যক্তির ওপর শাস্তির বিধান প্রয়োগ করা হয়, তাহলে উক্ত বিধান অর্থহীন, কারণ বিধানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যেন শাস্তি কার্যকরী হতে পারে, যেহেতু বিদেশের মাটিতে ম্যাজিষ্ট্রেটের কর্তৃত্ব নেই, শাস্তি কার্যকর করা অসম্ভব, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিদেশের মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের দায়ে সেখানে শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়, এবং উক্ত ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে বিদেশের মাটি হতে মুসলমান রাষ্ট্রে আগমন করে, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না; কারণ বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সময় যেহেতু শাস্তি করা হয়নি, পরবর্তীতে তা প্রদান করা যাবে না।
এবার আমরা ইসলামের যুদ্ধবন্দিনী নিয়ে একটু বিশদ আলোচনা করব।
অধ্যায়‑১৮ : ইসলামের যুদ্ধবন্দিনীরা
‘ডিকশনারী অব ইসলাম’ (সূত্র ৬, পৃ ৫৯) গ্রন্থ অনুসারে উপপত্নী বা concubine শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে সুরিইয়া, বহুবচনে সারারি। ইসলাম ধর্ম উপপত্নী প্রথা পালন করার পক্ষে অবাধ অনুমতি দিয়েছে। একটিমাত্র শর্ত আছে, উপপত্নীটির মর্যাদা হতে হবে দাসী। স্বাধীন নারীকে উপপত্নী করা চলবে না।
দাসী তিন ধরণের হতে পারে—১. যুদ্ধবন্দিনী, ২. বাজার হতে নগদ মূল্যে ক্রয় করা দাসী, এবং ৩. দাসীর সন্তানসন্ততি (দাসীর সন্তানসন্ততিও পুরুষানুক্রমিকভাবে দাস বা দাসী)।
যুদ্ধবন্দিনী যদি বিবাহিতাও হয়, কোরআনের বিধান অনুযায়ী (৪:২৪) তাদের ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে বিজয়ী মুসলমানদের হাতে সমর্পিত।
এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়—এটা তোমাদের জন্য আল্লাহ্র হুকুম।
এই উপপত্নীপ্রথা স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা) কর্তৃক স্বীকৃত এবং নিজের জীবনে তিনি তা পালনও করে গেছেন। বানু কুরায়জা নামক ইহুদী গোত্রের সাথে যুদ্ধান্তে (৫ হিজরি সালে) তিনি রায়হানা নাম্নী এক ইহুদি মেয়েকে উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করেন। মিশরের শাসন শাসনকর্তা কর্তৃক উপহার হিসেবে প্রদত্ত এক খ্রিষ্টান ক্রীতদাসী তাঁর উপপত্নী ছিল, যার নাম ছিল মারিয়া কিবতি। জালালানের (কোরআনের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাখ্যাকারক) উদ্ধৃতি দিয়ে ‘ডিকশনারি অব ইসলাম’ লিখেছে (সূত্র ৬, পৃ ৫৯৫-৬০০):
(১) দাসী যদি বিবাহিতাও হয়, তাকেও অধিকারে নেয়ার ক্ষমতা আছে মনিবের। আয়াত ৪:২৮, “তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী—আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন।”
এই আয়াতের ব্যখ্যায় জালালান বলেন, “অর্থাৎ যাদেরকে তারা যুদ্ধের ময়দানে আটক করেছে, তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ, যদি তাদের স্বামীগণ দারুল হরবে জীবিতও থাকে।” (দারুল হরব অর্থ—যুদ্ধরত অমুসলিম রাষ্ট্র বা দেশ)।
পাঠকদের জন্য জ্ঞাতব্য: ‘ডিকশনারি অব ইসলাম’ গ্রন্থটিতে ৪:২৮ আয়াত হিসেবে যে আয়াতটির উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, আসলে সেটি কোরআনের ৪:২৪ আয়াত (সূরা নিসা)। মাওলানা ইউসুফ আলী, পিকথল এবং যে কোনো বাংলা তরজমায় একে ৪:২৪ আয়াত হিসেবেই পাওয়া যাবে। এই অধ্যায়ের প্রথমেই উক্ত আয়াতটির বর্ণনা রয়েছে।
ইসলামপন্থীরা বয়ান করেছেন যে, আদি ইসলামের স্বর্গীয় ও আধ্যাত্মিক রূপে মুগ্ধ হয়েই জিহাদিরা নবী মুহাম্মাদের (সা) সঙ্গে গাজওয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। গাজওয়া শব্দের অর্থ নারী ও ধনসম্পত্তি লুটপাট করার জন্যে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান।
কিন্তু নবীর জীবনী পাঠ করলে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ভেসে ওঠে আমাদের সামনে। এইসব দস্যুদের মূল আকর্ষণ ছিল—কাফের রমণীদের সাথে অপরিমিত যৌনসঙ্গম করা এবং তাদের ধনসম্পত্তি লুটপাট করা। আমরা দেখতে পাই, যখনই মুসলমানরা কোনো অমুসলিম গোত্রকে আক্রমণ করেছে, তারা তাদের নারীদেরকে এক জায়গায় জড়ো করে বন্দী করেছে। বৃদ্ধা এবং শিশুদেরকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হত্যা করা হতো, কারণ এই প্রজাতিগুলি জিহাদিদের কোনো কাজে আসবে না, ভার বাড়াবে মাত্র। তরুণী এবং যৌবনবতী কাফের রমণীদের বাছাই করা হতো এবং জিহাদীদের মধ্যে বণ্টন করা হতো। যুদ্ধের ময়দানেই তাদের ওপর সওয়ার হয়ে অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নিত জিহাদীরা। অতঃপর হয় তাদেরকে দাসী হিসেবে অন্য কারও কাছে বিক্রি করা হতো, নয়তো মুক্তিপণের বিনিময়ে আত্মীয়দের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হতো (যদি মুক্তিপণ দিয়ে স্ত্রীকন্যাকে ফিরিয়ে নেয়ার মতো কোনো আত্মীয় অবশিষ্ট থাকত)।
নিচে তাবুক যুদ্ধের একটি বর্ণনা পেশ করা হলো। ইবনে ইসহাক রচিত মুহাম্মদের জীবন চরিত গ্রন্থ থেকে বিবরণটি নেয়া হয়েছে। (সূত্র ১০, পৃ ৬০২-৬০৩)।
তায়েফ ও হোনায়েন যুদ্ধের পর মুহাম্মদ (সা) কয়েক মাস মদীনায় অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি বাইজেন্টাইনদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিতে আদেশ দিলেন। তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। আরব উপদ্বীপে সে বৎসর প্রচণ্ড খরা চলছিল, সুর্যের তাপ ছিল অসহনীয় এই সময়ে অভিযানে বের হতে অনেকেরই ঘোরতর অনিচ্ছা ছিল। অভিযান থেকে রেহাই পেতে কেউ কেউ নবীর কাছে প্রার্থনা জানাল। তদসত্ত্বেও অভিযানের আয়োজন চলল জোর কদমে। জা’দ বিন কায়েস নামক জনৈক মুসলমানকে নবী জিজ্ঞেস করলেন, সে জিহাদে যেতে প্রস্তুত কি না। উত্তরে জা’দ এই বলে অস্বীকৃতি জানাল যে, সে স্ত্রীলোক খুব পছন্দ করে। বাইজেন্টাইন রমণীরা অপূর্ব সুন্দরী, তাদের দেখলে সে নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারবে না। সুতরাং তাকে যেন রেহাই দেয়া হয়, মুহাম্মদ (সা) তাকে ছেড়ে দিলেন। অতঃপর জা’দকে উদ্দেশ্য করেই পবিত্র কোরআনের অত্র আয়াত অবতীর্ণ হলো—“তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে যে, আমাকে (যুদ্ধে না যেতে) অনুমতি দিন…” (সুরা তাওবা ৯:৪৯)।
গাজওয়ার যেসব নারী বন্দী হতো, তাদের মধ্য থেকে নবী মুহাম্মাদ (সা) স্বয়ং বেশ কয়েকজনকে নিজের স্ত্রী কিংবা উপপত্নী হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। সবচেয়ে সুন্দরী এবং সবচেয়ে যৌনাবেদনময়ী মেয়েটিকেই তিনি নিজের জন্যে রাখতেন। নিজের জামাইদেরকেও তিনি যুদ্ধবন্দিনীদের ভাগ দিতে কসুর করেননি। হযরত আলী এবং হযরত ওসমান ছিলেন নবীর জামাই। তাদেরকেও তিনি উদারভাবে গনিমতের মাল বা যুদ্ধবন্দিনী বণ্টন করেছেন। নিচের হাদিসটিতে দেখা যাবে, কীভাবে মা ফাতেমার স্বামী নবী জামাই শেরে খোদা হযরত আলী যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যে বন্দিনীকে তিনি শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন। এদিক বিবেচনা করলে যৌনতার ব্যাপারে নবীকে বরং বেশ উদারই বলতে হয়। এই আধুনিক যুগেও কয়টা শ্বশুর আছে, যে নিজের মেয়ের জামাইকে অন্য মেয়ের সাথে যৌনসঙ্গম করতে দেখেও সহ্য করবে কিংবা তার জন্যে একটি যৌনসঙ্গী জুড়িয়ে দিবে?
সহি বুখারি; খণ্ড ৫, বই ৫৯, হাদিস নম্বর ৬৩৭: বুরাইদা কর্তৃক বর্ণিত:
নবী আলীকে খুমুস আনতে খালিদের নিকট পাঠালেন (যুদ্ধলব্ধ মালের ইসলামী নাম হচ্ছে খুমুস)। আলীর উপর আমার খুব হিংসা হচ্ছিল, সে (খুমুসের ভাগ হিসেবে প্রাপ্ত একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গমের পর) গোসল সেরে নিয়েছে। আমি খালিদকে বললাম, “তুমি এসব দেখ না?” নবীর কাছে পৌঁছলে বিষয়টি আমি তাঁকে জানালাম। তিনি বললেন, “বুরাইদা, আলীর উপর কি তোমার হিংসা হচ্ছে?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, হচ্ছে।” তিনি বললেন, “তুমি অহেতুক ঈর্ষা করছ, কারণ খুমুসের যেটুকু ভাগ সে পেয়েছে, তার চেয়ে আরও বেশী পাওয়ার যোগ্য সে।” (সূত্র ২)
যুদ্ধজয়ের পর শত্রুদের সুন্দরী ও যৌনাবেদনময়ী মেয়েগুলি তাদের হাতে আসবে, এই বিবেচনাই ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের জিহাদিদের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। অন্তত ইবনে ইসহাকের সিরাতে (জীবন চরিত) রসুলুল্লাহ্ গ্রন্থ পাঠ করলে এই চিত্রই পাঠকের মনে সুস্পষ্ট হবে। বৃদ্ধা, কুৎসিত এবং যৌনাবেদনময়ী নয়—এমন নারী জিহাদিদের কাম্য ছিল না। এদেরকে বোঝা হিসেবেই গণ্য করত তারা। নবীর সবচেয়ে প্রামাণ্য এই জীবনচরিত পাঠ করে আমরা জানতে পারি যে, হুনায়েনের যুদ্ধে এক বৃদ্ধাকে ছেড়ে দেওয়া হলো, কারণ তার মুখমণ্ডল ছিল শীতল, বক্ষদেশ সমতল, সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা ছিল না; তার বুকে দুধের ধারা শুকিয়ে গেছে। সুতরাং ছয়টি উটের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হলো (সূত্র ১০, পৃ ৫৯৩)।
এ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটাই ছিল রীতি। কদাকার হাঁসের ছানাটিকে ছেড়ে দাও, বুড়ি দিদিমাই বা কোন কাজে আসবে। তার বিনিময়ে বরং কয়েকটি উট বা দুম্বা পেলেও লাভ।
এখানে সম্প্রতি আমাদের সময় পত্রিকায় (৩১-১২-২০১৫) প্রকাশিত নিচের সংবাদটি লক্ষ্য করুন—আই এস কেমন নিখুঁতভাবে ইসলামী নিয়ম পালন করে চলেছে একেবারে নবীজির কায়দায়।
‘ধর্ষণের আগে প্রার্থনায় বাধ্য করত আমাদের’
ইমরুল শাহেদ : ২১ বছর বয়সী একজন তরুণী জানালো আইএস জঙ্গি গোষ্ঠী তাকে কিভাবে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেল এবং কিভাবে তাকে ধর্ষণ করা হলো এবং বিক্রি করে দেওয়া হলো যৌনদাসী হিসেবে। ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মেয়ে নাদিয়া মুরাদকে আইএস জঙ্গিরা উত্তর ইরাকের সিনজারে তার নিজের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। আইএস যে হাজার হাজার নারীকে ধরে নিয়ে যৌনদাসী বানিয়েছে নাদিয়া তাদেরই একজন। নাদিয়া জানায়, জঙ্গিরা তাদের গ্রামে ঢুকে শিশু, বৃদ্ধ এবং তরুণদের হত্যা করে।
পরদিন তারা বৃদ্ধ নারীদেরও হত্যা করে এবং আমার মতো তরুণীদের নিয়ে যায় মশুলে। সেখানে গিয়ে দেখলাম হাজার হাজার ইয়াজিদি নারী। তাদেরকে লুটের মালের মত বিভিন্ন জনের কাছে ভাগযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো জঙ্গিকে দেখতে পেলাম যারা আমাকে নিতে চায়। ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত দৈনিক মিররকে নাদিয়া বলেন, ‘আমাকে এমন একজন নিতে চাইলো যে আমার চাইতে বয়সে অনেক ছোট। তার পরিবর্তে আমি অন্য একজনের কথা বললাম। কিন্তু পরে সেই কম বয়সী ছেলেটির খারাপ মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনি।’ নাদিয়া বলেন, ‘জঙ্গিরা আটক রাখা নারীদের ও আমাকে প্রার্থনা করতে বাধ্য করত এবং তারপর শুরু হতো ধর্ষণের পালা। আমাদের সঙ্গে আচরণ করা হতো পশুর মতো। কখনো কখনো নিজেদের মনে হতো পশুর চাইতেও অধম। তারা দল বেধে মেয়েদের ধর্ষণ করত। ভাবা যায় না এমন আচরণই তারা করত। তাদের তথাকথিত শরীয়া আদালতে আমাদের নাম ও যাদের কাছে আমাদের সোপর্দ করা হয়েছে তাদের ফোন নাম্বার সংরক্ষিত থাকত। সে সুবাদে যখনই প্রয়োজন হতো তারা আমাদের ডেকে পাঠাত এবং আমাদের বিক্রি করে দিত।’ শেষ পর্যন্ত নাদিয়া তার মালিকের কব্জা থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। নাদিয়া বলেন, ‘আমি ইসলামের নামে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি। এসব অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে ইসলামের নামে।’
http://www.amadershomoys.com/unicode/2015/12/31/49410.htm#.VooZRY9OJaV
নারীমাংসের প্রতি জিহাদিদের লোভের আরও প্রমাণ মেলে তায়েফ অবরোধের বিবরণ থেকে। তায়েফে ছিল সাকিফ গোত্রের বসবাস। সুন্দরী এবং যৌনাবেদনময়ী হিসেবে সাকিফ মায়েদের নামডাক ছিল প্রচুর। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই যোগ দিয়েছিল লুটতরাজ ও সুন্দরী তায়েফ বন্দিনীদের সাথে যৌনমিলন করার লোভে। জনৈক জিহাদির বিবরণ হতে দেখা যায় যে, সে অকপটে স্বীকার করছে, সে যুদ্ধ করার জন্যে এই অভিযানে শরিক হয়নি, বরং একটি সুন্দরী সাকিফ রমণী কব্জা করা এবং তাকে গর্ভবতী করার উদ্দেশ্যেই সে অভিযানে এসেছে, কারণ সে জানে যে, সাকিফ নারীরা বুদ্ধিমান সন্তানের জন্ম দেয়।
বানু কুরাইজা নামক ইহুদী গোত্রটির সমস্ত পুরুষ সদস্যকে হত্যা করার পর তাদের ধনসম্পত্তি ও নারীগণ মুসলমানদের দখলে আসে। রায়হানা নামে (আগেই তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে) এক সুন্দরী ইহুদী তরুণীকে নবী নিজের জন্যে নির্বাচিত করেন। তিনি রায়হানাকে বিয়ে করতে চাইলে রায়হানা সে প্রস্তাব অস্বীকার করে। বিবাহিত স্ত্রী হওয়ার পরিবর্তে তার নিজ ধর্মে (ইহুদী ধর্মে) অটল থেকে নবীর একজন উপপত্নী (বা যৌনদাসী) থাকতেই পছন্দ করে সে। এমতাবস্থায় যৌনদাসী হিসেবেই রসুলের (সা) হেরেমে ঠাঁই হয় রায়হানার। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা হতে আমরা জানতে পারি যে, মুসলমানগণ যখন বানু হাওয়াজিন গোত্রকে পরাজিত করে, তখন তাদের হাতে আসে প্রায় ছয় হাজার নারী ও শিশু-বন্দী। নারীমাংসের এতবড় চালান ইতিপূর্বে জিহাদিদের হাতে আসেনি। নারীদেরকে জিহাদিদের মধ্যে যথারীতি বণ্টন করে দেয়া হয়। রায়তা নাম্নী সুন্দরী বন্দিনীটি নবীর জামাতা হযরত আলীর ভাগে পড়ে। জয়নাব নাম্নী আরেক হতভাগী পড়ে নবীর আরেক জামাই হযরত ওসমানের ভাগে। নারী মাংসের এক ভাগ নবীর এক শ্বশুর এবং ইসলামের খলীফা হযরত উমরের ভাগ্যেও জুটেছিল। তবে ভাগটি উমর নিজে না নিয়ে ভোগ করার জন্য তা তাঁর (উমরের) প্রিয় পুত্র আবদুল্লাহর হাতে তুলে দেন। (প্রাগুক্ত, পৃ ৫৯২‑৫৯৩)।
নৈতিকতা এবং ন্যায়বিচারের কথা কি আমরা ভাবছি? হ্যাঁ, নিরপরাধ বন্দিনীদের সাথে দয়াল নবীর ন্যায় বিচারের এই হচ্ছে নমুনা। শধু রায়হানা নয়, জুরাইরা এবং সাফিয়া নাম্নী আরও দুই রক্ষিতা ছিল নবীর। জুরাইরা তাঁর হাতে আসে বানু আল‑মুস্তালিক থেকে, সাফিয়া আসে খয়বারের বানু নাজির গোত্রের বিরুদ্ধে পরচালিত অভিযান থেকে। নবী (সা) কেমন করে সাফিয়াকে তাঁর হাতের কব্জাগত করেন, সে প্রসঙ্গে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদিস এখানে উদ্ধৃত করা হোল। অনেক ইসলামপন্থী বলে থাকেন যে, সাফিয়াকে বিবাহ করেই নবী মুহাম্মদ (সা) তার সাথে সহবাস করেছিলেন। আহা! কী উক্তি! যেন সাফিয়ার কোনো বিকল্প ছিল! তাছাড়াও হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, যুদ্ধের ময়দানেই নবী সাফিয়াকে তাঁর তাবুর ভিতরে নিয়ে যান এবং সাফিয়ার ওপর উপগত হন। আর তাঁবুর বাইরেই পড়ে ছিল সাফিয়ার পিতা, স্বামী ও অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের লাশ।
বাংলা বুখারি; খণ্ড ৭, হাদিস নম্বর ৩৮৮৬:
সুলায়মান ইবন হার্ব (র)…আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা) খায়বারের নিকটবর্তী এক স্থানে প্রত্যুষে সামান্য অন্ধকার থাকতেই ফজরের নামায আদায় করলেন। তারপর আল্লাহু আকবর ধ্বনি উচ্চারণ করে বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়েছে। আমরা যখনই কোন গোত্রের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছি তখনই সেই গোত্রের সকাল হয় অশুভ রূপ নিয়ে। এ সময়ে খায়বার অধিবাসীরা (ভয়ে) বিভিন্ন অলি‑গলিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে আরম্ভ করলো। নবী (সা) তাদের মধ্যকার যুদ্ধে সক্ষম লোকদেরকে হত্যা করলেন। আর শিশু (ও মহিলা)‑দেরকে বন্দী করলেন। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন সাফিয়া [বিন্ত হুইয়াই (রা)]। প্রথমে তিনি দাহইয়াতুল কালবীর অংশে এবং পরে নবী (সা)‑এর অংশে বণ্টিত হন। নবী (সা) তাঁকে আযাদ করত এই আযাদীর মোহর ধার্য করেন (এবং বিবাহ করে নেন)। আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (র) সাবিত (র)‑কে বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! আপনি কি আনাস (রা)‑কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, নবী (সা) তাঁর [সাফিয়া (রা)‑এর] মোহর কি ধার্য করেছিলেন? তখন সাবিত (র) ‘হ্যাঁ‑সূচক ইঙ্গিত করে মাথা নাড়লেন। (সূত্র ১৭)
নবীর (সা) যৌনদাসী হবার আগে সাফিয়া বিবাহিতা ছিলেন। নবী সাফিয়ার পিতা এবং স্বামীকে হত্যা করে সাফিয়াকে নিয়ে আসেন নিজের তাঁবুতে এবং সেই রাত্রেই সাফিয়ার সাথে মিলিত হন। এই বিষয়টা নবীর (সা) জীবনী থেকে জানা যায়। এই ভয়ঙ্কর লজ্জা এবং অসভ্যতা থেকে নবীকে (সা) বাঁচানোর অনেক চেষ্টাই ইসলামী চিন্তাবিদরা করে থাকেন। অল্পপরিসর বিধায় এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা সম্ভব নয়। কৌতূহলী পাঠকেরা নবীর জীবনীর ওপর লেখা বইগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
আরেকটা ব্যাপার। আগেই লেখা হয়েছিল যে, নবী (সা) তাঁর হারেমের নারীদের সাথে সহবাসের জন্য নিয়ম করেছিলেন—তিন রাত্রি অকুমারী (পূর্ব‑বিবাহিতা বা তালাকপ্রাপ্তা) মেয়েদের সাথে, আর সাত রাত্রি কুমারী (অক্ষতযোনি বিশিষ্ট) মেয়েদের সাথে। এই নিয়মটা তিনি মেনে চললেন সাফিয়ার ব্যাপারে—তাকে তথাকথিত বিবাহের পরে।
সুনান আবু দাউদ; খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২১১৮: আনাস বিন মালিক হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: যখন রসুলুল্লাহ্ (সা) সাফিয়াকে বিবাহ করলেন, তখন তিনি তার সাথে তিন রাত্রি যাপন করলেন। বর্ণনাকারী উসমান আরও বললেন: সে (অর্থাৎ সাফিয়া) অক্ষতযোনি (কুমারী) বিশিষ্ট ছিল না। (সাফিয়া আগে থেকেই বিবাহিতা ছিল)। সে (অর্থাৎ উসমান) বললেন: এই হাদিস তাঁকে জানিয়েছেন হুশায়েম যা প্রচারিত করেছেন হুমায়েদ এবং পরে আনাস বর্ণনা করেছেন। (সূত্র ১৯)
অনেক হাদিস থেকে জানা যায় যে, যখন যৌনদাসীদের ভাগ করা হয়, তখন সাফিয়া পড়েছিল দাহইয়াতুল কালবীর ভাগে। অতীব সুন্দরী এবং যৌবনাবতী একমাত্র নবীরই (সা) প্রাপ্য - এই ব্যাপারটা যখন এক জিহাদী নবীজিকে জানাল, তখন নবী সাফিয়াকে দেখলেন এবং তৎক্ষনাৎ দাহইয়াতুল কালবীকে নির্দেশ দিলেন সাফিয়াকে তাঁর হাতে সমর্পণ করে অন্য এক যৌনদাসী (সাফিয়ার এক চাচাত বোন) নিয়ে নিতে। কিন্তু দাহইয়াতুল কালবী এত সহজে এই দামী গনিমতের মালকে হাতছাড়া করতে চাইল না। তখন নবী (সা) বাধ্য হলেন সাফিয়াকে কিনে নিতে—দশজন দাসের বিনিময়ে। এখানে এই বিষয়ে একটা ছোট হাদিস দেয়া হল।
সুনান ইবনে মাজাহ; খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ২২৭২: আনাস হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: আল্লাহর নবী (সা) সাফিয়াকে খরিদ করলেন সাতজন দাসের বিনিময়ে।আবদুর রহমান বলেন: তিনি তাকে (সাফিয়াকে) খরিদ করেন দাহইয়াতুল আল‑কালবী্র কাছে থেকে।
আল‑জায়ায়িদের অভিমত হচ্ছে যে এই হাদিসের ধারাবাহিক বর্ণনা সহি এবং এর বর্ণনাকারীরা বিশ্বাসযোগ্য। (সূত্র ২০)
উক্ত হাদিস থেকে এটাও বোঝা যায় যে, নবী (সা) নিজেও ছিলেন একজন দাস ব্যবসায়ী।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, নবী মুহাম্মদের (সা) উপপত্নীদের অধিকাংশই ছিল হয় ইহুদি নয়তো খ্রিষ্টান। রায়হানা, জুরায়রা ও সাফিয়া ছিল ইহুদী; মারিয়া কিবতি ছিল খ্রিষ্টান। মুখ বাঁচাতে ইসলামপন্থীরা এখনি সমস্বরে কোরাস গেয়ে উঠবেন যে, নবী বড়োই দয়ালু ছিলেন। ওইসব অসহায় তরুণীদের দুঃখ দেখে তাঁর কোমল প্রাণ কেঁদে উঠল। তাই তিনি তাদের গ্রহণ করে দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়ার হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছেন। তাঁরা আমাদেরকে আরও বিশ্বাস করতে বলবেন যে, ওইসব বন্দিনী তাঁকে বিয়ে করে খুবই সুখী হয়েছিল, কারণ নবী মুহাম্মদ (সা)-কে দেখা মাত্র তাঁর প্রেমে মাতোয়ার হয়ে পড়েছিল তারা।
এ কী অবিশ্বাস্য, অপূর্ব যুক্তি! লিখিতভাবে মানুষের ইতিহাস শুরু হওয়ার পর থেকে এমন অকাট্য যুক্তি কেউ আবিষ্কার করতে পেরেছে বলে অন্তত আমাদের জানা নেই। মাত্র ঘন্টাকয়েক আগে যার হাতে স্নেহময় পিতা প্রাণ দিয়েছে, বড় আদরের ভাইটি অকালে ঝরে গেছে, প্রেমময় স্বামীর প্রিয় মুখটি অশ্বের খুরাঘাতে দলিতমথিত হয়েছে সেই হত্যাকারীর প্রেমে যুদ্ধবন্দিনীটি রাতারাতি পাগল হয়ে গেল! নবী মুহাম্মদ (সা) যা করেছেন, সে যুগে তা-ই হয়ত ছিল রীতি; কিন্তু ওপরের হাস্যকর যুক্তি দিয়ে আজ এই বর্বরতাকে সমর্থন দেওয়া কেমন করে সম্ভব? বর্তমান যুগে এইসব খোঁড়া যুক্তি দিয়ে সেযুগের বন্য রীতিকে ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা অমানবিক—মানবতার প্রতি চরম অবমাননাকর।
এর আগেও বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর পরিচালিত অভিযানের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে কাফের রমণীদের রসালো শরীরের প্রতি জিহাদিদের অপরিমিত লোভ। এতই প্রচণ্ড ছিল সেই লোভ যে, কাঙ্খিত নারীটি করায়ত্ত হওয়ার পর বিন্দুমাত্র বিলম্ব সইত না জিহাদিদের। বন্দিনীদের ঋতুস্রাব নিবৃত্ত হওয়ার অপেক্ষাও করতে পারত না জিহাদিদের, তার মাঝেই বন্দিনীদের উপর চড়ে বসতো জিহাদিরা। এমতাবস্থায় স্বয়ং আল্লাহপাককে বাণী নিয়ে এগিয়ে আসতে হয় এই সব বর্বর জিহাদিদেরকে শান্ত করার জন্য। আল্লাহ্ আদেশ দিলেন যে, ওইসব নারীদের ঋতুকাল শেষ হওয়ার পরেই কেবল তাদেরকে ধর্ষণ করা যাবে। ওইসব ইসলামী সৈনিকদের যৌনতাড়না এতটাই বর্বর এবং ঘৃণ্য ছিল যে, তারা এমনকি কোনো প্রকার গোপনীয়তা অবলম্বনের ধার ধারত না। এমনও হয়েছে যে, বন্দিনী নারীদের স্বামীদের সামনেই বন্দিনীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে জিহাদিরা। স্ত্রীকে এক ইসলামী জিহাদি খাবলে খাচ্ছে, বন্দী স্বামী চোখ মেলে তাই দেখছে। ধর্মপ্রচারের নামে মানবতার এত বড় অপমান আর কখনও ঘটেছে কি?
নিচের হাদিস দু’টি পড়ে দেখা যাক যুদ্ধবন্দীদের মর্যাদার প্রশ্নে জেনেভা ধারা রচিত আইনের সাথে আল্লাহ্ প্রদত্ত আইনের তুলনা কী রকম।
প্রথম হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে, কিছু কিছু বন্দিনী ছিল, যারা ছিল বিবাহিতা এবং তাদের স্বামীরা তখনও বেঁচে, যদিও স্বামীরা ছিল অমুসলিম কাফের। এই ধরনের বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে কোনো কোনো জিহাদি সঙ্কোচ বোধ করত। কেউ কেউ আবার পরাজিত শত্রুটির (স্বামীর) সামনেই তার স্ত্রীকে ভোগ করতে বেশি পছন্দ করত। এ এক ধরণের যৌনবিকৃতি, যার নমুনা আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। পাঞ্জাবি এবং পাঠান সৈন্যরা একাত্তরে বাঙালি রমণীদের ওপর যা করেছে, তার পূর্ণ সমর্থন মেলে এই হাদিসগুলোয়। ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী একাত্তরে যা কিছুই করে থাকুক, ইসলামী শাস্ত্রের বাইরে কিছু করেনি। সেই সময় সমস্ত বাঙালি রমণীই ছিল পাকিস্তান ইসলামী সৈনিকদের হাতে গনিমতের মাল। ইসলামের প্রাথমিক গাজওয়াগুলিতে নবীর বাহিনী ঠিক এমনটিই করত।
দ্বিতীয় হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে, অনেক জিহাদিই পৌত্তলিক স্বামীটির সামনেই তার স্ত্রীর ওপর বলাৎকার করতে দ্বিধান্বিত ছিল, কিন্তু নবী মুহাম্মাদ (সা) এখানে বিপদের গন্ধ পেয়েছিলেন যে, আল্লাহ্ যদি এই যৌন আনন্দোৎসবের অনুমতি না দেন, জিহাদিরা বেঁকে বসতে পারে, তাদের সমর্থন শূন্যে মিলিয়ে যেতে খুব বেশি দেরি হবে না। সুতরাং নবী মহামহিম আল্লাহর মধ্যস্থাতা যাঞ্চা করলেন। তড়িৎগতিতে আরশ মোয়াল্লা থেকে মঞ্জুরি নেমে এলো। মহান আল্লাহ্ কাফের রমণীদের (বিবাহিতা হলেও) ভোগ করার অনুমতি প্রদান করলেন জিহাদিদের। কিছুকিছু জিহাদি স্বামী বর্তমান থাকতেও বন্দিনীদের সাথে সহবাস করে, আর কেউ কেউ তা করতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়।
সুনান আবু দাউদ; বই ১১, হাদিন নম্বর ২১৫০:
আবু সাঈদ আল খুদরি বলেন, “হুনায়েন যুদ্ধের সময় আল্লাহর রসুল (সা) আওতাসে এক অভিযান পাঠান। তাদের সাথে শ্ত্রুদের মোকাবেলা হলো এবং যুদ্ধ হলো। তারা (অর্থাৎ মুসলিমরা) তাদের পরাজিত করল এবং বন্দী করল। রসুলুল্লাহ্র (সা) কয়েকজন অনুচর বন্দিনীদের স্বামীর সামনে তাদের সাথে যৌনসঙ্গম করতে অপছন্দ করলেন। তারা (স্বামীরা) ছিল অবিশ্বাসী কাফের সুতরাং মহান আল্লাহ্ কোরআনের আয়াত নাজেল করলেন, “সমস্ত বিবাহিত স্ত্রীগণ (তোমাদের জন্য অবৈধ), কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী (যুদ্ধবন্দিনী) আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে তাদেরকে বৈধ করেছেন।” অর্থাৎ তাদের রজঃস্রাব শেষ হলে তারা তোমাদের জন্য বৈধ (সূরা নিসা ৪:২৪) (সূত্র ৪)
আল্লাহপাকের নির্দেশ হলো: যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সহবাস বৈধ, তবে বন্দিনীর যে মাসিক স্রাব শেষ হয়ে গেছে কিংবা তার গর্ভ খালাস হয়ে গেছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তার যদি স্বামী থাকে, বন্দী হওয়ার সাথে সাথে সে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।
সহি মুসলিম; বই ৮, হাদিস নম্বর ৩৪৩২:
আবু সাঈদ আল খুদরি (রাঃ) বলেছেন যে হুনায়েনের যুদ্ধকালে আল্লাহর রসুল (সা) আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠান। তারা তাদের মুখোমুখি হলো এবং তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো। যুদ্ধে পরাজিত করার পর কিছু বন্দিনী তাদের (মুসলমানদের) হাতে আসল। রসুলুল্লাহর (সা) কিছু সাহাবি ছিলেন যারা বন্দিনীদের সাথে সহবাস করতে বিরত থাকতে চাইলেন, কারণ তাদের (বন্দিনীদের) স্বামীরা ছিল জীবিত, কিন্তু বহু ঈশ্বরবাদী। তখন আল্লাহ্ এ সম্পর্কিত আয়াতটি নাজেল করলেন, “এবং বিবাহিত নারীগণ তোমাদের জন্যে অবৈধ, তবে যারা তোমাদের দক্ষিণ হস্তের অধিকারে আছে তাদের ছাড়া।” (সূরা নিসা ৪:২৪) (সূত্র ৩)
এখানে একটি প্রশ্ন এসে যায়। জিহাদিদের উন্মত্ত ধর্ষণপ্রক্রিয়ার ফলে যদি বন্দিনীটির গর্ভসঞ্চার হয়, তাহলে কী হবে? অনেক জিহাদিই চাইত না যে, তাদের যৌন‑মেশিনটি গর্ভসঞ্চার করে বসুক। সুতরাং তারা আজল প্রথা বা বীর্যপাতের ঠিক পূর্বমূহূর্তে লিঙ্গটি বের করে নিয়ে আসত। এই প্রথা সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের (সা) মনোভাব ছিল ঘোলাটে। কখনও তাঁকে এই প্রথার বিরুদ্ধে কথা কথা বলতে দেখা যায়, কখনও বা তাঁকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ সম্পর্কে আগে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আরও গোটাকয়েক উপজীব্য হাদিস উল্লেখ করা হলো।
বানু আল-মুস্তালিক গোত্রের বন্দিনীদের ক্ষেত্রে আজল প্রথা পালন করতে নবী মুহাম্মদ (সা) অনুমতি দেননি, তবে বন্দিনীদের ধর্ষণ করার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো নিষেধ ছিল না।
সহি বুখারি; খণ্ড ৫, বই ৫৯, হাদিস নম্বর ৪৫৯:
ইবনে মুহাইরিজ হতে বর্ণিত: আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং আবু সাঈদ আল খুদরিকে দেখতে পেলাম। আমি তার পাশে উপবেশন করে তার কাছে আজল প্রথা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। আবু সাঈদ বলল, “আমরা রসুলুল্লাহর সাথে বানু আল মুস্তালিকদের বিরুদ্ধে এক অভিযানে যাই। কিছু আরব বন্দিনী আমাদের হস্তগত হয়। আমরা প্রবলভাবে নারীসঙ্গ কামনা করছিলাম, নারীসঙ্গবিবর্জিত জীবন আমাদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়েছিল এবং আমরা আজল করতে চাইলাম। আমরা বললাম—আল্লাহর রসুল (সা) আমাদের মাঝে হাজির থাকতে তাঁর কাছে জিজ্ঞেস না করে কী করে এ কাজ করি? আমরা এ সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা না করাই বরং তোমাদের জন্যে ভাল। কারণ কোন আত্মা জন্ম নেওয়ার হলে তা জন্মাবেই, পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত।” (সূত্র ২)
যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যৌনসঙ্গম করার ঢালাও অনুমতি আছে ইসলামে। এই সত্যটি মেনে নিতে অনেক ইসলমপন্থীদের বড় কষ্ট হয়। এই বর্বর প্রথার মধ্যে লুক্কায়িত অমানবিকতাকে ঢাকা দিতে তাঁরা নানা যুক্তি দাঁড় করান। তাঁরা আমতা আমতা করে বলেন, “দেখ, কোনো কিছুর ভালমন্দ যাচাই করতে হলে তোমাকে অবশ্যই পারপার্শিকতা বা স্থানকাল বিবেচনায় রাখতে হবে। ইসলামের প্রথমিক যুগে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সহবাস করার যে-প্রথা চালু ছিল, তার অনেক ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে এখন। সেই সময়ে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে সঙ্গম করা দোষের কিছু ছিল না। মুসলমান সৈনিকদেরকে তাদের গৃহে হতে বহু দূরে যুদ্ধ এলাকায় পাঠানো হতো। বহুদিন যাবত স্ত্রীসঙ্গ হতে বিরত থাকতে হতো তাদের। সুতরাং তাদের যৌনক্ষুধা মেটাতে আল্লাহ্ এর অনুমতি দিয়েছিলেন। তাছাড়া বন্দিনীদেরও তো যৌনক্ষুধা ছিল, পুরুষের ছোঁয়া ছাড়া তারা বাকী জীবনটা কাটাবেই বা কী করে? সুতরাং এ ছিল নেহায়েতই সমান সমান খেল। ইসলামী আইন আপাত কঠোর মনে হলেও এর পেছনে অবশ্যই কোনো সুন্দর ও জোরালো যুক্তি থাকতেই হবে।”
যদি তাদের প্রশ্ন করা হয়, ‘ভাল কথা। এটা ছিল সে যুগের রীতি, তবে আইনটি কি এখনো চালু আছে? হ্যাঁ কিংবা না স্পষ্ট করে বলুন।’ এই সহজ প্রশ্নের কোনো সরাসরি জবাব অবশ্য মিলবে না।
প্রশ্নটিকে সুকৌশলে পাশ কাটাবেন তারা। হয়তো বলবেন, “আমাদেরকে অবশ্যই পরিস্থিতি বিচার করে কোনো প্রথার ভালমন্দ যাচাই করতে হবে। কোনো মুসলমান শক্তি যদি অন্য কোনো দেশ জয় করে নেয়, ইসলামিক আইন অনুসারে তারা পরাজিতদের প্রতি সবসময়ই ন্যায়বিচার করে থাকে। ইসলাম অবশ্যই বিজিত নারী ও শিশুদিগকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে…।” ইত্যাদি, ইত্যাদি। কখনও সোজাসাপটা জবাব দেবেন না তারা।
মুসলমানরা আমেরিকাকে একটি প্রকাণ্ড শয়তান বলে অভিহিত করে থাকেন। আচ্ছা, যদি এমন হয় যে, মুসলমান জিহাদিরা আমেরিকা দখল করে নিল। এই অবস্থায় আমেরিকার কাফের রমণীদের ভাগ্যে কোন পরিণতি অপেক্ষা করছে, দেখা যাক। এই অবস্থায় সত্যিকার ইসলামের কাছ থেকে কী সমাধান মেলে? জনৈক সুপণ্ডিত ইসলামী মোল্লা বন্দিনী মার্কিন বন্দিনীদের সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিধান দিয়েছেন। [বর্তমানে আই এস একই বিবৃতি দিচ্ছে]।
প্রশ্ন: দক্ষিণ হস্তের অধিকার বলতে কী বোঝায়, তা পাওয়ার উদ্দেশ্যই বা কী? কোনো কোনো ভাই মনে করেন যে, এই আমেরিকাতেও দক্ষিণ হস্তের অধিকারে কোনো কিছু এলে তাতে দোষের কিছু নেই।
উত্তর: দক্ষিণ হস্তের অধিকার বা ‘মালাকুল ইয়ামিন’ বলতে বোঝায় ক্রীতদাস বা দাসী (স্লেভস কিংবা মেইডস) যা যুদ্ধবন্দী হিসেবে কিংবা বাজার হতে ক্রয়সূত্রে মুসলমানদের দখলে আসে। ক্রীতদাসী মুসলমানদের দখলে এলে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ এবং সঠিক। বর্তমান যুগেও যদি কোনো কাফেরদের দেশ মুসলমানদের অধিকারে আসে, এই নিয়ম পালন করা বৈধ এবং সঠিক।
উপরের প্রশ্ন-উত্তর প্রতিবেদনটি একটি ইসলামী ওয়েব সাইট থেকে নেওয়া হয়েছিল বহুদিন আগে—ইন্টারনেটের প্রাথমিক যুগে। ওয়েবসাইটটি আর চালু নাও থাকতে পারে। তবে আজকাল গুগুল দিয়ে অনুসন্ধান করলে এই ধরণের অনেক প্রতিবেদন পেয়ে যাবেন।
উপরের উত্তরটি একটু ভালভাবে অনুধাবন করা যাক। উক্ত মোল্লা যে-সিদ্ধান্তটি দিলেন, তার নিগলিতার্থ কী দাঁড়ায়? কোনো প্রকার রাখঢাক না করে খাঁটি ইসলাম সম্পর্কে অকপট মতামত দেয়ার জন্যে এই মোল্লাকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়।
তথাকথিত ইসলামপন্থীদের মতো ঝোপের আড়ালে মুখ ঢেকে আসল প্রশ্নটিকে পাশ কাটাননি এই মোল্লা। তিনি কোরআন হাদিস বর্ণিত নিয়মটিকে সহজ, অবিকৃত, খাঁটি এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। পাশ্চাত্যশিক্ষিত আধুনিক ইসলামপন্থীদের প্রতি বিনীত আরজ, ইসলামী মোল্লাটির ওপরোক্ত মতামতের জবাবে কোন কৈফিয়ত পেশ করবেন এখন?
আসুন, ওপরোক্ত ইসলামী নিয়মটিকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে দেখি। ধরে নেওয়া যাক, কোনো ক্ষমতাবলে ইসলামী সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অন্যসমস্ত কাফের মুলুকগুলি দখল করে নিল। পরাজিত কাফের পুরুষদের প্রতি মুসলমানরা কী আচরণ করবে? যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে যেসব সুন্দরী তরুণী তাদের অধিকারে আসবে, তাদের সাথেই বা ইসলামের সৈনিকেরা কোন আচরণ করবে? আমরা কি মনে করতে পারি যে, তারা বন্দী এবং বন্দিনীদের সাথে জেনেভা নিয়ম অনুযায়ী আচরণ করবে? অর্থাৎ ইসলামীরা কি জেনেভা সমঝোতার প্রতি কোন সম্মান দেখাবে? না, এই ধরনের আচরণ তাদের কাছে প্রত্যাশা করা নিতান্তই বৃথা। ওপরোক্ত মোল্লা যা বলেছেন, ইসলামী সৈন্যরা ঠিক তেমনটিই করবে। সমস্ত পুরুষ বন্দীদেরকে তারা দাস হিসেবে বেচে দেবে; মেয়েদেরকে যৌনদাসী হিসেবে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেবে। বৃদ্ধ ও শিশু বন্দিনীদেরকে খুব সম্ভবত মেরে ফেলা হবে, কারণ অনর্থক বোঝা বাড়ানো কোনো কাজের কথা বলে বিবেচনা করা হয় না। আরেকটি কাজ করতে পারে ইসলামের সৈনিকেরা। বিশাল শয়তানটিকে আরেকটু শায়েস্তা করতে জিহাদিরা বন্দী পুরুষদের সামনেই তাদের স্ত্রীর উপর সওয়ার হতে পারে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মজাও আলাদা—এর চাইতে বড় প্রতিশোধ আর কী হতে পারে?
আমরা হয়ত ভাবতে পারি যে—এ এক আকাশকুসুম কল্পনা—এই ধরনের পরিস্থিতি কেমন করে হয়? উত্তরে বলা যায় যে, হ্যাঁ, এখনও তা হয়। আপনার আমার জন্য না হলেও ইসলামপন্থীদের জন্যে হয়। মানসিকভাবে তারা এখনও দেড়হাজার বছর আগেকার ইসলামের সেই সোনালি যুগেই পড়ে আছে। সেই যুগকেই ফিরিয়ে আনতে দেশে দেশে অজস্র জিহাদির জন্ম দিচ্ছে তারা—জিহাদের কারখানায়—অর্থাৎ বিপুল সংখ্যক মসজিদে। মাত্র চল্লিশ বছর আগের কথা স্মরণ করুন, একাত্তরের বাংলাদেশের কথা। পাকিস্তানের ইসলামী সেনাবহিনী বাংলাদেশে ঠিক নিয়মটিই চালু করেছিল সেদিন। তারা প্রায় তিরিশ লক্ষ বাঙালি পুরুষকে হত্যা করেছিল, কারণ তাদের ভাষায় এইসব বাঙালিরা ছিল কাফের অথবা নিম্ন-মুসলমান। আড়াই লক্ষ বাঙালি নারীকে তারা উপপত্নী হিসেবে বন্দী করেছিল। মালে গণিমত টাইটেল দিয়ে তাদেরকে ধর্ষণ করেছিল, ঘরের ভেতর হতে ধর্ষিতার আকুল ক্রন্দন যখন আকাশ‑বাতাস পরিপ্লাবিত করে দিচ্ছিল, পাশের ঝোপে লুকিয়ে থাকা তার অসহায় পুরুষটির কর্ণে সে ক্রন্দনধ্বনি যে পৌঁছায়নি, তা আমরা কী করে ভাবতে পারি? সাম্প্রতিকালে তালেবান [এবং ইদানিং আই এস বা ইসলামীক স্টেট] জর্জরিত আফগানিস্তানেও ঠিক একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে বলে অনেক প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছে। যারাই এই সব জিহাদিদের বিরোধিতা করছে, তাদের মেয়েদের ওপর নেমে এসেছে ইসলামীক ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন। যদি প্রশ্ন করা হয় যে এই জিহাদিরা কি ইসলামের নিয়মের বাইরে কোনকিছু করেছে? ইসলামের বিধান মোতাবেক ধর্ষণকারী এইসব জিহাদিদের কি কোনো শাস্তির আওতায় আনা যায়? এই প্রশ্নের একটিমাত্র জবাব—‘না’। সুতরাং এরূপ সিদ্ধান্ত টানা কি অন্যায় হবে যে, দেশকাল নির্বিশেষে যুদ্ধবন্দিনীদের ওপর যৌননির্যাতনের এই যে রীতিনীতি জিহাদিরা প্রতিপালন করে আসছে, এর পেছনে যে প্রেরণাদায়ী শক্তি, তার নাম হচ্ছে ইসলাম? কিছুদিন আগেও ইরানে কী ঘটল? ব্যভিচার ও ধর্মোদ্রোহিতার অপরাধে এক মেয়েকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তার জেল কুঠরিতে এক ইসলামী প্রহরী ঢুকিয়ে দেয়া হলো মেয়েটিকে পুনঃপৌনিকভাবে ধর্ষণ করারা জন্য। আহা! একজন কাফের বন্দিনীর সাথে কী মহান ইসলামী আচরণ। মেয়েটি তো দোজখেই যাবে, যাওয়ার আগে একটু ইসলামী সঙ্গমের স্বাদ শরীরে বহন করে নিয়ে যাক। পাঠক ভুলে যাবেন না, ইরানে এখন ইসলামের রক্ষকরা ক্ষমতায় আসীন। সেখানে যা কিছু ঘটে, মহান ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করতেই ঘটে। সুতরাং কীভাবে বলবেন যে দেড় হাজার বছরের পুরোনো যুদ্ধবন্দীদের আইনগুলো এখন আর কার্যকরী নয়?
অধ্যায়‑১৯ : ক্রীতদাসীদের সাথে সহবাস
আলোচনার জন্য এ একটা চটকদার বিষয় । এতক্ষণ আমরা যে-বিষয়ে আলোচনা করেছি, তা হচ্ছে যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে ইসলামসম্মত যৌনসঙ্গম। তবে হালালভাবে যৌনক্ষুধা মেটাবার জন্য মুসলিম পুরুষদের সামনে এই একটিমাত্র পথই খোলা, তা কিন্তু নয়। যুদ্ধ করা আর যা‑ই হোক, মুখের কথা নয়, পৈতৃক প্রাণটা বাজি ধরতে হয়। পয়সা থাকলে হালালভাবে যৌনসঙ্গম করার জন্য আরও একটি সহজ উপায় আছে মুসলমান পুরুষদের জন্যে। নগদ পয়সা দিয়ে বাজার হতে পছন্দসই একটি দাসী কিনে নেয়া, যৌনদাসী, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় সেক্স স্লেভ। ইসলামী ভাষায় এদেরকে বলা হয় বাঁদী। যৌনদাসী বা বাঁদী ক্রয়‑বিক্রয় পরিপূর্ণভাবে ইসলামসম্মত। পয়সা থাকলে আপনি যত খুশি যৌনদাসী কিনতে পারেন। একসঙ্গে কতজন যৌনদাসী কিনতে পারবেন, তা নিয়ে মোটেও ভাবতে হবে না আপনাকে।
শরিয়া আপনার জন্যে যৌনদাসীর কোন সীমা বেঁধে দেয়নি। যতক্ষণ দেহে শক্তি আছে আর পকেটে পয়সা আছে, চালিয়ে যান। এর জন্য আপনার বিবেকেও আঘাত লাগবে না এবং পরকালেও আপনাকে ব্যভিচার বা জিনার দায়ে জবাবদিহি করতে হবে না। কেউ কেউ হয়ত যুক্তি দেখাবেন যে, নারী-মাংসের এই ব্যবসাটি যেহেতু আর চালু নেই, সুতরাং এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা অনর্থক। এই যুক্তির সাথে আমিও একমত। তবে কথা হচ্ছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে ইদানীংকালে জিহাদিরা বিশ্বজুড়ে জিহাদের ডাক দিয়েছে। আটলান্টিকের পশ্চিম তীর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব তীর পর্যন্ত সর্বত্র জিহাদি বোমায় কাফের মরছে। তাদের এই জিহাদ যদি সফল হয়, যদি জিহাদিরা পৃথিবী দখল করে নেয়, তবে কোরান-হাদিস সমর্থিত সে রসালো প্রথাটি যে মানবসমাজে পুনঃপ্রবর্তিত হবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কোরান-হাদিসে যে-নিয়ম আছে, তা চিরন্তর, একেবারেই গ্র্যানাইট পাথরে খোদাই করা আছে। স্বয়ং আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্যে এই নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। এই ঐশী নিয়মের এক চুলও ব্যতায় ঘটানো কি কোনো মানবের পক্ষে সম্ভব? না, তা হবার নায়। আর তাই যদি ইসলামী জিহাদিদের হাতে পৃথিবীর পতন ঘটে, তবে অমুসলিম নারী-মাংস বেচাকেনার পুরোনো প্রথাটি আবার সগৌরবে ফিরে আসবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। যদি ইসলামপন্থিরা তাদের শাসিত রাষ্ট্রে শরিয়া আইন প্রবর্তিত করে সামান্য চুরির দায়ে হাত‑পা কেটে ফেলতে পারে, ব্যভিচারের দায়ে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে পারে, আন্তর্জাতিক মানব অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, মুরতাদ ঘোষণা করে মানুষের শিরশ্ছেদ করতে পারে, তবে শরিয়ার বিধান মোতাবেক দাসপ্রথার পুনঃপ্রবর্তন থেকে কে তাদের নিবৃত্ত করবে? এখন এ বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।
[এই প্রবন্ধের প্রথম সংস্করণ এক যুগেরও অনেক আগে লেখা হয়েছিল। ফেসবুক, গুগল তখন ছিল না। অন্তর্জাল ছিল শৈশবে। বাংলায় ওয়েব সাইট বলতে তেমন কিছুই ছিল না। এরপর অনেক কিছু ঘটে গেছে—জিহদিরা অনেক শক্তিশালী হয়েছে। সমস্ত বিশ্বজুড়ে তাদের সন্ত্রাসে সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ইদানীং সংবাদ আছে যে, আই এস তাদের ইসলামী স্বর্গে যৌনদাসী ক্রয়‑বিক্রয়ের বাজার প্রতিষ্ঠিত করেছে—যেখানে ইয়াজিদি সহ আরও অনেক বিধর্মী যৌনদাসী মাত্র কয়েক মার্কিনী ডলারের বিনিময়ে ক্রয় করা যায়। এই ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে ইসলামী কায়দায় নিয়ন্ত্রিত করা হয় ইসলামী সরকারের অনুমোদনে।]
আমরা এর আগে দেখেছি যে, নবী মুহাম্মদের মারিয়া কিবতি নামক এক যৌনদাসী ছিল। নবী যখন তাঁর এক দূতকে মিশরে পাঠান, তখন আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান শাসক মুকাকিস এই দাসী এবং তার আরেক বোনকে উপঢৌকন হিসেবে নবীকে দিয়াছিলেন। সেই সাথে এক খোজাকেও তাদের প্রহরী হিসেবে দেন। মুহাম্মদের (সা) কাছ থেকে ইসলাম গ্রহণ করার বার্তা নিয়ে একটি প্রতিনিধি দল যায় মুকাকিসের দরবারে। মুকাকিস ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তবে এই অস্বীকৃতির পরিণাম কী হতে পারে, তা ভেবে মুকাকিস খুব শঙ্কিত ছিলেন। নবীর চরিত্র সম্বন্ধে মুকাকিস খুবই অবগত ছিলেন। সুতরাং নবী মুহাম্মদকে (সা) তুষ্ট করতে তিনি এই দু’জন সুন্দরী দাসী পাঠান মদীনায়। দু’জনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশি সুন্দরী (মারিয়া) দাসীটিকে নবী নিজে ব্যবহারের জন্যে রাখেন। অপর দাসী, শিরিনকে (মারিয়ার বোন) নবী তাঁর কবি বন্ধু হাসান সাবিতকে উপহার দেন। মারিয়ার গর্ভে নবী মুহাম্মদের (সা) এক পুত্র জন্মে, যার নাম ছিল ইবরাহিম। শিশু বয়সেই ইবরাহিম মারা যায়। শিরিনের গর্ভে হাসান সাবিতের যে-পুত্রসন্তান হয় তার নাম ছিল আবদুর রহমান। (সূত্র ১০, পৃ ৪৯৮‑৪৯৯)।
এই সমস্ত ঐতিহাসিক দলিল থেকে প্রমাণিত হয় যে, যৌনদাসী ভোগ করা পুরোপুরিভাবে হালাল এবং ইসলামসম্মত।
নিচে মুক্তোসদৃশ আরও কিছু হদিস বর্ণনা করা হলো। হাদিসগুলি পড়লে অনেক চিন্তাই মাথায় আসে—যৌনতার ক্ষেত্রে মেয়েদের ওপর ইসলাম কতই না দয়া, বেহেশতি দোয়া, সহানুভুতি এবং ন্যায়বিচার প্রদর্শন করেছে!
আপনি একই সাথে দুইজন যৌনদাসীর সাথে গোসল না করেই সহবাস করতে পারেন, তবে স্বাধীন নারীর ক্ষেত্রে তা পারবেন না।
মালিকের মুয়াত্তা; বই ২, হাদিস নম্বর ২. ২২. ৯০
… নাফির বরাতে মালিক কর্তৃক বর্ণিত: আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের যৌনদাসীগণ তার পা ধুইয়ে দিত এবং তার জন্যে তালপাতার চাটাই এনে দিত, যখন তাদের মাসিক হচ্ছিল।
মালিককে জিজ্ঞেস করা হয় যে, যদি কোন ব্যক্তির স্ত্রী এবং কয়েকজন যৌনদাসী থাকে, তবে সে গোসল না করেই সবার সাথে সহবাস করতে পারে কি না। তিনি বলেন, “গোসল না করেও দু’জন যৌনদাসীর সাথে সহবাস করায় দোষের কিছু নেই। তবে স্বাধীন নারীদের ক্ষেত্রে একজনের বরাদ্দের দিন অন্যের কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই। প্রথমে একজন যৌনদাসীর সাথে প্রেম করে (অর্থাৎ সহবাস করে) অতঃপর দ্বিতীয় জনের কাছে যাওয়ায় দোষের কিছু নাই, যদি সে জুনুব অবস্থায়ও থাকে।”
মালিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, একজন লোক জুনুব অবস্থায় আছে। তার গোসলের জন্যে পাত্রে পানি ঢেলে দেয়া হলো। পানি গরম না ঠাণ্ডা তা পরখ করতে লোকটি পানিতে আঙ্গুল ছোয়াল। মালিক বলেন, “যদি তার আঙ্গুলে কোন নাপাকি না লেগে থাকে, তাহলে আমি মনে করি না যে এজন্যে পানি অপবিত্র হয়ে গেছে।” (সূত্র ৫, পৃ ১৮)
নিচের হাদিসটি পড়লে আমাদের অনেকের বিবেক একেবারেই স্তব্ধ হয়ে যাবে। এমন যে লৌহহৃদয় হজরত উমর (রাঃ), তিনি পর্যন্ত এই ঘটনা সহ্য করতে পারেননি। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, উমর কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একজন যৌনদাসী এবং তার গর্ভজাত কন্যার সাথে একই সঙ্গে সহবাস করা হালাল ছিল।
মালিকের মুয়াত্তা; বই ২৮, হাদিস নম্বর ২৮. ১৪. ৩৩
…আবদুল্লাহ্ ইবনে উতাবা ইবনে মাসুদ তাঁর পিতার বরাত দিয়ে বলেন যে ঊমরকে একজন ব্যক্তির কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যার দক্ষিণ হস্তের অধিকারে ছিল একজন দাসী ও তার গর্ভজাত কন্যা। এই অবস্থায় লোকটি তাদের একজনের সাথে যৌনসঙ্গম করার পর অপর জনের সাথে করতে পারে কি না? উমর বলেছিলেন, “উভয়ের সাথে একই সাথে (সহবাস) করা আমি অপছন্দ করি।” অতঃপর তিনি উহা নিষিদ্ধ করেন। (সূত্র ৫, পৃ ২১৫)
যদি এমন হয় যে, যৌনদাসীগণ (কিংবা যুদ্ধবন্দিনীগণ) একে অপরের সহোদর বোন, তাদের সাথে একই সাথে সহবাস করা কি বৈধ? নিচের হাদিসে আছে যে, আপনি তাও করতে পারেন, আবার নাও করতে পারে। যেভাবে সুবিধা হবে, সেভাবেই গ্রহণ করুন হাদিসটিকে।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ২৮, হাদিস নম্বর ২৮. ১৪. ৩৪
…ক্কাবিসা ইবনে জুওয়াইব এর সূত্রে বর্ণিত: এক ব্যক্তি ওসমান ইবনে আফফানকে জিজ্ঞেস করল যে কারও অধিকারে দুই সহোদর বোন যৌনদাসী থাকলে তাদের উভয়ের সাথে সহবাস বৈধ কি না? ওসমান বললেন, “এক আয়াত অনুসারে এটি হালাল, আরেক আয়াত অনুসারে এটি হারাম। আমার ক্ষেত্রে হলে আমি এরূপ করতাম না।” লোকটি তার কাছ থেকে চলে গেল এবং রসুলুল্লাহর (সা) আরেক সাহাবির কাছে যেয়ে প্রশ্নটি রাখল। তিনি বললেন, “যদি আমার কাছে ক্ষমতা থাকত এবং কাউকে এমন করতে দেখতাম, আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতাম।”
ইবনে শিহাব যোগ করেন, “আমার মনে হয় লোকটি আলী ইবনে আবি তালেব।” (সূত্র ৫, পৃ ২১৫)
ইসলামী ভাইয়েরা গলাবাজি করে যতোই বলুন না কেন যে, দাসী এবং স্ত্রী ভিন্ন কিছু নয়, কারণ বিয়ে না করে দাসীর সাথে সহবাস করা জায়েজ নয়, তাদের জন্য ওপরের দু’টি হাদিস এক মারাত্মক আঘাত। প্রকৃত সত্য হলো এই যে, ইসলামী দৃষ্টিতে ক্রীতদাসী এবং বিবাহিতা স্বাধীন নারী সম্পূর্ণ দুই প্রজাতির স্ত্রীলোক। কারণ বিবাহিতা স্ত্রী ও গর্ভজাত কন্যার সাথে সহবাস করার কথা কোনো উন্মাদও চিন্তা করবে না। কিংবা দুই সহোদর বোনের ওপর উপগত হওয়ার বিধান বিবাহিতা স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অথচ ওপরের হাদিস দু’টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, উমর কর্তৃক নিষিদ্ধ করার পূর্বে দাসী মা ও তার কন্যার ওপর সওয়ার হওয়ার প্রথা দিব্বি প্রচলিত ছিল। দুই ক্রীতদাসী সহোদর বোনের সাথে যুগপৎ সহবাস করার প্রথা তাত্ত্বিকভাবে এখনও চালু আছে ধরে নেয়া যায়। সুতরাং ক্রীতদাসী ও স্ত্রী এক জিনিস—ইসলমপন্থীদের দাবির পেছনে কতটুকু সত্য লুকিয়ে আছে, পাঠক-পাঠিকারাই তা বিচার করুন।
ক্রীতদাসীদের সাথে সহবাসকালে যৌনবিকৃতি প্রদর্শন করা পুরোপুরি হালাল। হেদাইয়া থেকে আমরা জানতে পারি যে, কোনো ব্যক্তি তার যৌনদাসীর সাথে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সঙ্গম করতে পারে, যদিও নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাস করার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে। যৌনসঙ্গিনীটি যদি ক্রীতদাসী হয়, তবে তার সাথে মনিব যেভাবে খুশি, সেভাবে যৌনলীলা করতে পারে। (সূত্র ১১, পৃ ৬০০)।
যৌনসঙ্গিনী ক্রীতদাসী হলে তার মনিব যেভাবে খুশি তার সাথে কাম-লালসার পরিতৃপ্তি ঘটাতে পারে। যৌনদাসীর সাথে সঙ্গমকালে তার সম্মতির তোয়াক্কা না করেই মনিব আজল প্রথা (যোনির বাইরে বীর্যনিক্ষেপ) অবলম্বন করতে পারে, কিন্তু স্ত্রীর সাথে সহবাসকালে তার সম্মতি ব্যতিরেকে স্বামী তা করতে পারে না। এর কারণ এই যে, নবী স্বাধীন নারীর সাথে সঙ্গমকালে তার অনুমতি ব্যতিরেকে আজল প্রথা অবলম্বন করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু যৌনদাসীর ক্ষেত্রে মনিবের জন্যে তা বৈধ করেছেন।
এতদ্ব্যতীত যৌন‑লালসা পরিতৃপ্তির জন্যে এবং সন্তানসন্ততি সৃষ্টির জন্য যৌনসম্পর্ক স্থাপন স্বাধীন নারীর অধিকার যে কারণে স্বামী খোজা বা নপুংসক হলে স্ত্রীর স্বাধীনতা রয়েছে তাকে প্রত্যাখ্যান করার। কিন্তু দাসীর এরূপ কোনো অধিকার নেই। সুতরাং স্ত্রীর অধিকারকে আহত করার স্বাধীনতা স্বামীর নেই; পক্ষান্তরে দাসীর ওপর মনিবের অধিকার সার্বভৌম। এমনকি যদি এমন হয় যে, কোনো ব্যক্তি অপরের ক্রীতদাসীকে বিয়ে করল, সে দাসীটির মনিবের অনুমতি ব্যতিরেকে তার সাথে আজল প্রথা করতে পারবে না (অর্থাৎ বিয়ের পরও দাসীটি তার মনিবের সম্পত্তিই থেকে যায়)।
বিশেষ বিশেষ শর্তসাপেক্ষে পিতা তার ক্রীতদাসীটিকে তার ছেলের কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ২৮, হাদিস নম্বর ২৮. ১৫. ৩৮
…আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের বরাত দিয়ে ইবরাহিম ইবনে আবি আবলা বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আবদুল মালিক) জনৈক বন্ধুকে তার এক ক্রীতদাসী (ধার) দিয়েছিলেন, এবং পরবর্তীতে একদিন দাসীটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, “আমি তাকে আমার ছেলের কাছে দিতে চেয়েছিলাম, সে দাসীটির সাথে এই এই করতে পারবে, এই এই করতে পারবে না।” আবদুল মালিক বললেন, “মারওয়ান তোমার চাইতেও বেশী খুঁতখুঁতে ছিল। সে তার ছেলেকে নিজের দাসী দিল, তারপর বলল, “তার কাছে যেও না, কারণ আমি উন্মোচিত অবস্থায় তার উরু দেখেছি।” (সূত্র ৫, পৃ ২১৬)
মনিব তার মহিলা দাসীকে কিংবা পুরুষ দাসের ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করতে পারবে।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ২৯, হাদিস নম্বর ২৯. ১৮. ৫১
…আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বলেছেন, “যদি কোন ব্যক্তি তার দাসকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়, তাহলে স্ত্রীকে দেয়ার ক্ষমতা উক্ত দাসের হাতে, এবং তার এই তালাক দেয়ার ক্ষমতার উপর কারও কোন হাত নেই। মনিব ইচ্ছে করলে তার পুরুষ দাসের ক্রীতদাসী কিংবা মেয়ে দাসীর ক্রীতদাসীকে (নিজের অধিকারে) নিয়ে নিতে পারে, এরূপ করতে চাইলে কেউ তাকে বিরত রাখতে পারবে না।” (সূত্র ৫, পৃ ২৩২)
এক স্বামী তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করলে স্বামীর ওপর কোন হুদুদ শাস্তি আরোপ করা যাবে না। কেউ যদি উপহার স্বরূপ একটি যৌনদাসী পায় এবং তার সাথে সহবাস করে, তবে তার ওপরও কোনো হুদুদ আরোপিত হবে না।
সুনান ইবনে মাজাহ; খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ২৫৫২: সালাম বিন মুহাব্বিক হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন: আল্লাহর রসুলের কাছে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানানো হলো যে, তার স্ত্রীর বাঁদীর সাথে যৌনসঙ্গম করেছে। কিন্তু ওই ব্যক্তিটির ওপর কোনো হুদ আরোপিত হলো না। (সূত্র ২০)
কেউ যদি একজন বাঁদী উপহার পায় এবং তার সাথে সহবাস করে, তার ওপর কোনো হুদ শাস্তি হবে না।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৪১, হাদিস নম্বর ৪১. ৬. ২০
…আবদ আর‑রহমান বলেছেন যে, উমর বিন আল‑খাত্তাব এক ব্যক্তি সম্পর্কে বললেন। ব্যক্তিটি তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীকে নিয়ে এক ভ্রমণে বের হলো, এবং সে ক্রীতদাসীটির সাথে সহবাস করল। তার স্ত্রী ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ল এবং ব্যাপারটি উমর আল‑খাত্তাবকে জানাল। উমর ব্যক্তিটিকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলেন। ব্যক্তিটি উত্তর দিল, “সে (তার স্ত্রী) তাকে (ক্রতীদাসীটিকে) আমাকে দিয়েছিল।” উমর আদেশ দিলেন, “আমাকে পরিষ্কার প্রমাণ দেখাও, আর তা না করলে আমি তোমার উপর পাথর নিক্ষেপ করব।”
রা’বী যোগ করলেন, “স্ত্রী স্বীকার করে নিল যে সে স্বামীকে ক্রীতদাসীটি দিয়েছিল।” (সূত্র ৫, পৃ ৩৪৯)
যৌনদাসী ক্রয়‑বিক্রয়ের জন্য বেশ নিয়মকানুন মেনে চলা হতো। পছন্দ না হলে অথবা যৌনদাসীর মধ্যে কোনো খুঁত থাকলে তিনদিনের মধ্যে যৌনদাসীকে বিক্রেতা ফেরত নিতে বাধ্য থাকত। এছাড়াও বিক্রেতাকে এক বছরের লিখিত জামিন বা গ্যারান্টি দিতে হতো।
হাদিসটি অনেক দীর্ঘ তাই এখানে সূত্রটি দেয়া হলো।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ৩১, হাদিস নম্বর ৩১. ৩. ৩ এবং ৩১. ৪. ৪ পৃ ২৪৮‑২৫০।
এ এক সুকঠিন শৃঙ্খল, ঠিকমত অনুধাবন করতে পাঠকের কষ্ট হতে পারে। ধরুন, আপনার একজন ক্রীতদাস বা একজন ক্রীতদাসী আছে। সেই ক্রীতদাসের বা ক্রীতদাসীর আবার একজন ক্রীতদাসী আছে। এই হাদিস অনুসারে আপনি আপনার ক্রীতদাসের ক্রীতদাসী অথবা ক্রীতদাসীর ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করতে পারবেন। এই এক বিচিত্র ব্যবস্তা, বুঝুন ঠেলা।
দাসীরা আপনার চাষবাদ করার ক্ষেত্র, আপনার ইচ্ছে হলে আপনি ক্ষেত্রের ভেতরে জল ঢালতে পারেন, ইচ্ছে হলে তাকে তৃষ্ণার্তও রাখতে পারেন। অর্থাৎ দাসীর সাথে আজল বা যোনির বাইরে বীর্যপাত করা আপনার ইচ্ছাধীন।
মালিকের মুয়াত্তা, বই ২৯, হাদিস নম্বর ২৯. ৩৪. ৯৯:
…আল হাজ্জাজ ইবনে আমর ইবনে ঘাজিইয়ার বরাতে দামরা ইবনে সাঈদ আল‑মাজিনি কর্তৃক বর্ণিত: তিনি (হাজ্জাজ) জয়িদ ইবনে সাবিতের নিকট বসেছিলেন, এমন সময় ইবনে ফাহদ তার কাছে আসল। সে ইয়েমেন থেকে এসেছিল। সে বলল, “আবু সাঈদ, আমার কয়েকটি ক্রীতদাসী আছে। আমার যে কয়জন স্ত্রী আছে তারা কেউ আমাকে তাদের মতো (দাসীদের মতো) তৃপ্তি দিতে পারে না; (তবে) সবাই যে আমাকে এমন তৃপ্তি দেয় যে তাদের দ্বারা সন্তান উৎপাদন করতে হবে—তাও নয়। এমতাবস্থায় আমি কি আজল অবলম্বন কারতে পারি?” জায়িদ ইবনে সাবিত বললেন, “তোমার কী মত হাজ্জাজ?”
আমি বললাম, ‘আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনার কাছ থেকে জানার জন্যেই আপনার কাছে আসি। তিনি (আবারও) বললেন, ‘তোমার মত কী?’ আমি বললাম, ‘সে তোমার মর্জি, যদি তুমি ইচ্ছে করো পানি দাও; যদি ইচ্ছে করো তৃষ্ণার্ত রাখ। জায়িদের কাছে আমি এমনটিই শিখেছি। জায়িদ বললেন, ‘সে ঠিক কথাটিই বলেছে।’” (সূত্র ৫, পৃ ২৪১)
যৌনক্রিয়ার উদ্দেশ্যে পরস্পরের মধ্যে ক্রীতদাসী ভাগাভাগি করা চলে। পুত্র কিংবা পৌত্রের ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করা শস্তিযোগ্য নয়।
এই নিয়মে পিতা তার পুত্রের, এমনকি পৌত্রের অধিকারভুক্ত ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করতে পারবে। পুত্র স্বীয় পিতার অথবা মাতার, এমনকি স্ত্রী অধিকারভুক্ত দাসীকেও ধার নিতে পারে এবং তার সাথে যৌনক্রিয়া করতে পারবে। ঠিক যেমন: আপনার কোন দুধেল গাভী নেই, আপনার ভাইয়ের বেশ কয়েকটি আছে। এমতাবস্থায় আপনি দু’চার দিনের জন্যে ভাইয়ের কাছ থেকে একটি গাভী ধার নিতেই পারেন এবং দুধ খেতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই, কারণ শরিয়ার আইন মোতাবেক একজন ক্রীতদাসীর সামাজিক বা পেশাগত অবস্থান হচ্ছে দুধেল গাভীর চেয়ে বেশি কিছু নয়। এই অপূর্ব নিয়মটির সপক্ষে যে-যুক্তি আছে, হেদাইয়া থেকে তা পেশ করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে যে, হেদাইয়া মুসলিম সমাজের অন্যতম প্রধান আইন গ্রন্থ। ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত জটিল আইনী বিশ্লেষক আইনবিদগণ প্রায়শঃ এই বইয়ের সাহায্য নিয়ে থাকেন এবং সেই মোতাবেক সমাধান দিয়ে থাকেন।
হেদাইয়া, সূত্র ১১, পৃ ১৮৩:
পিতা কর্তৃক পুত্রের ক্রীতদাসী অথবা পৌত্রের ক্রীতদাসীদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা শাস্তিযোগ্য নয়, যদিও এই ধরনের ক্রীতদাসী যে তার জন্য বৈধ নয়, সে সম্পর্কে তার জানা থাকা প্রয়োজন, কারণ এ ক্ষেত্রে যে ত্রুটি সংঘটিত হয়েছে, তা ফলাফল সঞ্জাত (by effect), যেহেতু তা এমন যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা নবীর বাণী দ্বারা সমর্থিত—“তুমি এবং তোমরা সবকিছু তোমার পিতার” (Thou and thine are thy father’s)…এবং পিতার ক্ষেত্রে যে নিয়ম পিতামহের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম, যেন সেও একজন পিতা। এই ধরনের যৌনক্রিয়ার ফলে যে সন্তানের জন্ম হয়, তার পিতৃত্ব আরোপিত হয় ওপরোক্ত পিতার ওপর, যে ক্রীতদাসীটির মূল্যের জন্যে পুত্রের নিকট দায়ী থাকে।
অথবা কোনো ব্যক্তি যদি তার পিতার ক্রীতদাসী অথবা তার মাতার ক্রীতদাসী অথবা তার স্ত্রীর ক্রীতদাসীর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে, এবং এই আরজি পেশ করে যে, উক্ত ক্রীতদাসী তার জন্যে অবৈধ নয়, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না; এবং অভিযোগকারীর ওপরও শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে না, (কিন্তু যদি সে এরূপ সম্পর্কের অবৈধতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে, তবে তার ওপর শাস্তি প্রয়োগযোগ্য হবে, এবং ঐ একই নিয়ম প্রযোজ্য, যখন কোনো ক্রীতদাস তার মনিবের সঙ্গে দাসীবৃত্তিতে আবদ্ধ মেয়ের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে)। কারণ এদের মধ্য হতে লাভ অর্জন করার স্বার্থ বিরাজিত; সুতরাং যে-ব্যক্তি এরূপ কাজ করেছে, হয়ত সে ধারণা করেছে যে, এ ধরনের উপভোগ তার জন্যে বৈধ, যে-কারণে তার ক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণার ত্রুটি আরোপযোগ্য, যদিও তা সুস্পষ্ট বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সমতূল্য। (জাহির রেওয়ায়েতেও) ঐ একই আইন, যদি উপরে বর্ণিত যে কোন ঘটনায় ক্রীতদাসীটি এই আরজি পেশ করে যে, সে উক্ত কাজ বৈধ জেনে করেছে, এবং পুরুষটির তরফ থেকে এই মর্মে কোনো আরজি পেশ করা হয়নি, এবং যেহেতু একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে সংঘটিত যৌনক্রিয়া একটিমাত্র কাজ হিসেবে বিবেচিত, এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কোনো পক্ষ হতে পেশকৃত বৈধতাসংক্রান্ত আরজি ভ্রান্ত ধারণারূপ ত্রুটির সৃষ্টি করে, যা উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সুতরাং উভয়ের প্রতি শাস্তি প্রয়োগ বাতিলযোগ্য।
আচ্ছা, স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গসমূহের ওপর দৃষ্টিপাত সম্পর্কে ইসলামী শাস্ত্রের বিধান কী? আমরা সবাই জানি যে, গোপনে এই রসালো কাজটি করতে পুরুষের লোভের অন্ত নেই। এই কারণেই ‘প্লেবয়’ মার্কা অশ্লীল (পর্নো) পত্রপত্রিকাগুলির রমরমা ব্যবসা। ঝকঝকে মলাটের ওপর নগ্ন নারীচিত্র নিয়ে বিচিত্র সব ম্যাগাজিন প্রতিনিয়ত ডাকছে আমাদেরকে, লুকিয়ে লুকিয়ে এক ঝলক দেখে চোখের সুখ মিটিয়ে নিই আমরা (অর্থাৎ পুরুষেরা—মেয়েরাও হয়ত তা-ই করে, তবে আমি নিশ্চিত নই)। তবে কোনো ইসলামী ভাই কখনও তা স্বীকার করবে না। স্ত্রী যৌনাঙ্গের কথা বাদ দিন। তাদের মতে স্ত্রীজাতির নাভির নিচে দৃষ্টিপাত করা সরাসরি হারাম। এ করলে কবিরা গুনাহ হয়। এমনকি মেয়েদের খোলা হাতের দিকে তাকালেও পাপ, কারণ কে জানে, কখন সেই ‘মৃণালসদৃশ্য ভুজযুগল হতে মদনশর’ বের হয়ে ইসলামী ভাইয়ের নরম বুক বিদ্ধ করে বসে। ইসলামী ভাইদের নৈতিকতা এতটাই উঁচু ও ভঙ্গুর যে, সুরক্ষিত দুর্গে আবদ্ধ করে না রাখলে যে কোন সময়ে তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতে পারে। স্ত্রী অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত না করার এই ইসলামী বিধান কি সকলের বেলায় সমভাবে প্রযোজ্য? বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এই বিধান সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য নয়।
নারীটি যদি দুর্ভাগ্যক্রমে বাঁদী হয়, তবে তার সর্বাঙ্গ দর্শন করা শতকরা একশভাগ জায়েয বা বৈধ। আবারও বলতে হয় যে, দাসীটির সর্বাঙ্গ; অর্থাৎ তার মুখাবয়ব, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক; তার বক্ষ, স্তন, স্তনের বোঁটা, উরুদেশ, নিতম্ব; তার যৌনকেশ, যোনি গহ্বর, তার ভগাঙ্কুর, পায়ুপথ, নাভি, তলপেট… সবকিছুকেই আপনি আপনার দৃষ্টি দিয়ে ইচ্ছেমত লেহন করতে পারবেন। এতে কোনো পাপ হবে না। চাইতো আপনি এগুলি স্পর্শ করেও পরীক্ষা করতে পারেন, যেমন কোনো বস্তু কেনার আগে আমরা খুঁটিনাটি সব যাচাই করে দেখি। আল্লাহকে ধন্যবাদ—কী অপূর্ব নেয়ামত তিনি আমাদের জন্যে সৃষ্টি করে রেখেছেন।
এসব বিশ্বাস না হলে দেখুন নিচের ইসলামী নিয়ম। এখানে লেখা হয়েছে—ক্রীতদাসীদের জননেন্দ্রিয়ের প্রতি তাকানো জায়েজ বা বৈধ।
হেদাইয়া, সূত্র ১১, পৃ ৫৯৯:
কোনো লোক তার ক্রীতদাসীর শরীরের যে কোনো অংশের দিকে তাকাতে পারবে, এমনকি তার জননেন্দ্রিয়ের প্রতিও, যদি সে ইচ্ছে করে, তবে শর্ত থাকে যে, সে নিষিদ্ধ সম্পর্কের আওতায় পড়ে না, এবং সে তার স্ত্রীর সর্বাঙ্গের প্রতিও তাকাতে পারবে, কারণ নবী বলেছেন, “তোমার স্ত্রী এবং ক্রীতদাসী ছাড়া আর সকলের প্রতি দৃষ্টিকে সংযত রাখ।” তবে স্বামী‑স্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত সঙ্গমাদিতে একে অপরের যৌনাঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত না করাই উত্তম, কারণ নবী বলেছেন, “তোমরা যখন স্বগোত্রীয় স্ত্রীলোকের সাথে সঙ্গম করবে, তখন যত দূর পার, নিজেদেরকে ঢেকে রাখবে, এবং ততটা উলঙ্গ হয়ো না, কারণ গর্দভ প্রজাতি এরূপ করে থাকে।”
উপরোক্ত নির্দেশে স্ত্রীর সাথে যৌনসঙ্গমকালে সংযত আচরণ করতে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে দাসীদের সাথে যথেচ্ছ আচরণ করা থেকে বিরত রাখতে কে তাকে নিষেধ করবে? বস্তুতঃ ইসলামের দৃষ্টিতে দাসী বাজার থেকে কিনে আনা একটি যৌনযন্ত্র বা যৌন মেশিন ছাড়া আর কিছু নয়; তার প্রভু বা মালিক মেশিনটিকে যেভাবে খুশি সেভাবে চালাতে পারে, যা সে স্ত্রীর ক্ষেত্রে পারে না। কেন ইবনে ফাহদ তার স্ত্রীদের চেয়ে দাসীদের কাছে বেশি তৃপ্তি পায়, তার নিগুঢ় রহস্যটি বোধ হয় এখানেই নিহিত (দ্রষ্টব্যঃ ওপরে বর্ণিত মুয়াত্তা বই ২৯, হাদিস নম্বর ২৯. ৩৪. ৯৯)। এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন: ইসলামের দৃষ্টিতে কাফের নারীরা সবাই হচ্ছে গনিমতের মাল—সোজা কথায় দাসী। তাই কাফের নারীদের যৌনাঙ্গের প্রতি কাম-দৃষ্টিতে তাকানো বৈধ হবে। অনেক ইসলামী বলেন থাকেন যে, পাশ্চাত্যের নারীরা বেশ্যা অথবা প্রমোদবালা ছাড়া আর কিছু নয়।
ইসলামপন্থীরা ওপরের সত্য স্বীকার করতে চান না। তাঁরা খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে প্রমাণ করতে চান যে, ইসলাম দাসীদের সাথে সহবাসের অনুমতি দিয়েছে ঠিকই, তবে সহবাসের আগে দাসীটিকে বিয়ে করে নিতে হবে। তাদের এই যুক্তি যে নেহায়েতই ভঙ্গুর এবং আসল সত্যকে আড়াল করার অপপ্রয়াস, তা ইসলামী শাস্ত্র থেকে অতি সহজেই প্রমাণ করা যায়।
ক্রীতদাসী এবং স্ত্রী যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন দুটি প্রজাতি, আশা করি, এখন তা সবাই ভালভাবে অনুধাবন করতে পারবেন। এখন শেষ তথ্যটি পেশ করে প্রসঙ্গটির ইতি টানা হবে। আসল সত্য এই যে, একজন মুসলমান বাজার থেকে ক্রীতদাসী ক্রয় করে তার সাথে যৌনমিলন ঘটাতে পারে, তবে তাকে বিয়ে করতে পারে না। নিজের ক্রীতদাসীকে বিয়ে করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। হয়ত অনেকের বিশ্বাস হবে না। তাহলে হেদাইয়া থেকে নিচের আইনটি জেনে নেওয়া যাক।
নিজের ক্রীতদাসীর সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে তার সাথে সহবাস করা জায়েজ (বৈধ): (প্রাগুক্ত পৃ ৩১৭)
আইনের দৃষ্টিতে বিবাহের অযোগ্যতা
বিবাহের ক্ষেত্রে নয়টি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যথা—
…
(৮) এমন স্ত্রীলোক, যে সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত (prohibited by reason of property), তার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ। যথা ক্রীতদাসীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অবৈধ (অপরের মালিকানাধীন দাসীকে বিবাহ করা বৈধ)।
[লক্ষণীয়: এই উদ্ধৃতিতে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে]
এই লেখার বর্তমান সংস্করণ সম্পাদনা করার সময় এই সংবাদ হাতে এলো। দৈনিক ঢাকা রিপোর্টে প্রকাশিত আই এস-এর ফতোয়া যৌন দাসীদের সাথে কেমন করে সহবাস করা যাবে তার নিয়ম নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫: http://www.dainikdhakareport.com/international/2015/12/30/38866
ধর্ষণের নিয়ম ব্যাখ্যা করে আইএসের ফতোয়া জারি
ঢাকা রিপোর্ট অনলাইন:
কোন অবস্থায়, কীভাবে দাসীদের ধর্ষণ করবে সদস্যরা, রীতিমতো ফতোয়া জারি করে জানিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। তাদের এ ফতোয়ায় মালিকরা কে, কখন এবং কীভাবে তাদের অধীনস্থ যৌনদাসীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে- তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা আছে। মে মাসে সিরিয়ায় আইএসএর এক শীর্ষ নেতার ডেরায় তল্লাশি চালিয়েছিল মার্কিন সেনা। তখনই এই ফতোয়া হাতে আসে তাদের। তাদের ফতোয়া অনুসারে, একই যৌনদাসীর সাথে পিতা এবং পুত্র উভয়েই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। তবে মা এবং মেয়ে দু’জনেই একজনের যৌনদাসী হলে মালিক তাদের উভয়ের সাথেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। এছাড়া, দাসীদের যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে উভয়েই সমান সুযোগ ভোগ করবে। এক্ষেত্রে বন্দি ওই নারীকে দুইজনের যৌথ সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু বাবা এবং ছেলে একই নারীর সঙ্গে যৌন সংসর্গ করতে পারবে না। একই ভাবে ‘মালিক’ মা ও মেয়ে- দু’জনকে ভোগ করতে পারবে না। যৌন দাসত্বের পক্ষে অসংখ্য যুক্তি দেখানো হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে আইএসের যৌন দাসত্বের কারাগার থেকে পালিয়ে আসার পর ২০ জন নারীর সাাক্ষাৎকার নিয়েছিল মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিও)। তারা এইচআরডব্লিওকে জানায়, কীভাবে আইএসের সদস্যরা তাদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করতো। প্রথমে বন্দি মেয়েদের ছেলেদের থেকে আলাদা করে ফেলা হতো। এরপর ইরাক এবং সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রদর্শন করা হতো। তারপর তাদের হয় বিক্রি করে দেয়া হতো অথবা উপহার হিসেবে প্রদান করা হতো বিভিন্ন আইএস সদস্যদের।
এই ফতোয়ায় কিছুই বিস্ময়কর নয়—পাঠকেরা তা এতক্ষণে জানবেন। এই ফতোয়া সম্পূর্ণভাবে ইসলামসম্মত—ওপরে উদ্ধৃত হেদাইয়া এবং মালিকের মুয়াত্তা থেকে তা পরিষ্কার।
অধ্যায়‑২০ : হস্তমৈথুন বা স্বমেহন
কী? আস্তাগফিরুল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক। এমন নাপাক কথা কোন ইমানদার বান্দা কি মুখেও আনতে পারে? হস্তমৈথুনের কথা শুনলে ইসলামপন্থীরা ঠিক এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। তবে আমি-আপনি তো ইসলামপন্থী নই (সেই জন্যেই তো আপনি এই লেখে পড়ছেন)। আমরা যে হস্তমৈথুনে গড়া সাধারণ মানুষ। সত্য বলতে কী আপত্তি আছে? আমাদের অতীত অথবা বর্তমান জীবনে কি কখনও এই শয়তানি নাপাক কাজ করিনি? কিংবা এখনও মাঝে মাঝে করি না? যদি আপনার উত্তর ‘না’ হয়, তবে আপনি মানব প্রজাতির সেই বিরল শতকরা দুই-একজন ভাগ্যবান লোকদের অন্যতম, যারা জীবনেও হস্তমৈথুন (Masturbation) করেনি। বাদবাকি আটানব্বই-নিরানব্বই শতাংশ মানব প্রজাতি তাদের স্বীয় হস্তযুগলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং ব্যাভিচার করেছে নিজের সাথে। আল্লাহপাক সেইসব নাফরমান বান্দাদের জন্যে কঠিন শস্তির ব্যাবস্থা করে রেখেছেন।
এখানে মানবদেহের এই সহজাত প্রবৃত্তির ওপর একটু আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করছি।
প্রকৃতিতে আমরা দেখতে পাই, প্রজননক্ষম প্রায় প্রতিটি প্রাণী হস্তমৈথুন বা স্বমেহনের মাধ্যমে যৌন-আবেগের উপশম ঘটিয়ে থাকে। এ এমন এক সহজ, নিরাপদ, প্রাকৃতিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে প্রাণীকুলের প্রতিটি প্রজাতি যৌনতৃপ্তি লাভ করতে পারে। এ এক অতি সাধারণ যৌন-আচরণ, যা প্রকৃতি বা বিধাতা (যদি কেউ থেকে থাকেন) যেদিন থেকে প্রাণীজগত সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকেই এই তাগিদ প্রাণীদেহে সঙ্কেতের মাধ্যমে আবদ্ধ (encoded) করে দিয়েছেন—এ আবদ্ধ অবস্থা থেকে পালাবার কোনো পথ নেই। বিশ্বের সমস্ত প্রাণী সহজাতভাবে প্রকৃতির এই নিয়মটি প্রতিপালান করে আসছে। বিশ্বাস না হলে যে কোনো চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে দেখা যেতে পারে। তারা সাক্ষ্য দেবে যে, এই প্রথা নেহায়েতই নির্দোষ একটি জৈব আচরণ, যা মানবদেহের উপকারে আসতে পারে। মানুষ যখন অত্যাধিক মানসিক পীড়নের মধ্যে অতিবাহিত করে এবং আবেগ প্রশমনের আর কোনো সহজ পদ্ধতি তার সামনে খোলা থাকে না, এই সহজলভ্য নির্দোষ পদ্ধতির মাধ্যমে সে দেহমনের প্রশান্তি লাভ করতে পারে। পাশ্চাত্য সমাজে অতি নিরীহ এই যৌনপদ্ধতিটি সাধারণের কাছে ‘নিজের আপনা করা’ বা DIY Sex (Do it yourself sex) নামে পরিচিত। বংলায় আমরা একে স্বমেহন বলতে পারি। আজকাল অনেক চিকিৎসালয়ে শুক্রাণু বা স্পার্ম সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এই পদ্ধতির দ্বারাই।
অথচ শরিয়ার বিধান অনুযায়ী নিরীহ এ যৌনকর্মটিকে হারাম করা হয়েছে। আপনি যদি কখনও গোপনে গোপনে এই ভয়ঙ্কর কাজে নিয়োজিত থাকেন, মনে রাখবেন যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর গুপ্ত পুলিশবাহিনী অর্থাৎ ফেরেশতাগণ আপনার প্রতিটি আচরণ লিপিবদ্ধ করে রেখেছে। আপনি নিজের সাথে নিজেই ব্যভিচার করেছেন, নিজেকে নিজেই বিবাহ করেছেন। তার প্রতিটি ঘটনা ভিডিও করে রাখছে ফেরেশতারা। রোজ-হাশরের দিনে তা আপনার সামনে প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপিত করা হবে এবং এই জঘন্য কাজের জন্যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে আপনাকে। তবে শরিয়া‑দারোগা ইহকালে কীভাবে আপনাকে সাজা দেবে, সেই বিষয়ে আমি কিঞ্চিৎ দ্বন্দ্বে আছি। লোকে অপকর্মটি করে থাকে অত্যন্ত গোপনে—একান্ত নির্জনে ব্যক্তিগতভাবে। শরিয়ার দৃষ্টিশক্তি যদি শকুনের মতো প্রবলও হয়, তথাপি প্রতিটি লোকের টয়লেটে কিংবা স্নানঘরে অথবা শোবার ঘরে নৈতিক পুলিশবাহিনী (moral police) পাঠানো কোনোমতেই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় ভূপৃষ্ঠে হস্তমৈথুনজনিত পাপের শাস্তি কার্যকর করার মতো শক্তি শরিয়ার আছে বলে মনে হয় না। তাই বলে আপনার নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। স্বমেহন বা DIY sex পালনরত যৌনপাগলদের জন্যে পরকালে অপেক্ষা করে আছেন সংক্ষুব্ধ আল্লাহ্ স্বয়ং। কঠিন শাস্তি দেবেন তিনি। সেই শাস্তির ধরন কী হবে, তা কি আমরা জানতে চাই? ইসলামের দিকপালরা কঠিন গবেষণা করে আবিষ্কার করেছেন যে, এই জঘন্য ব্যভিচারের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ পুনুরুত্থানের দিন প্রতিটি মৈথুনকারীর হাত গর্ভবতী হয়ে কবর থেকে বেরুবে! মাশায়াল্লাহ! কী অসীম কুদরত তাঁর।
এতদিন আমরা জেনে এসেছি যে শুধুমাত্র স্ত্রী‑প্রজাতিই গর্ভধারণ করতে পারে। পুরুষ‑প্রজাতি, বিশেষ করে তার হাত গর্ভবতী হয়—এই তত্ত্ব আমাদের কাছে অত্যন্ত অভিনব মনে হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, আল্লাহপাক সর্বশক্তিমান, তাঁর পক্ষে সবই সম্ভব। কেন? তিনি কি পুরুষ মানুষের ছোঁয়া ছাড়া কুমারীকে মা বানাননি (বিবি মরিয়ম)? তিনি কি রজোনিবৃত্ত অশীতিপর বৃদ্ধাকে গর্ভবতী করেননি (নবী জাকারিয়ার স্ত্রী)? হাত কেন, তিনি ইচ্ছা করলে আপনার গায়ের লোমের মধ্যেও গর্ভসঞ্চার ঘটিয়ে দিতে পারেন।
মনে করা যাক এই তত্ত্বে আমি বিশ্বাস করলাম। কিন্তু একটি হিসেব আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। পুরুষ মৈথুনকারীদের হাত গর্ভবতী হলো—ঠিক আছে। কিন্তু হস্তমৈথুনকারী যদি স্ত্রীলোক হয়? তার বেলায় কী হয়? তলপেটের মতো তার হাত‑দুটিও কি ফুলে উঠবে? এ যে বড় বিশ্রী ব্যাপার হবে। হয়ত ভাবছেন—এ কোন ধরণের অশ্লীল প্রশ্ন? স্ত্রীলোক আবার হস্তমৈথুনকারী হয় কীভাবে? তারা কেমন করে হস্তমৈথুন বা স্বমেহন করতে পারে? হস্তমৈথুনের জন্যে সম্মুখভাগে যে দণ্ডটি প্রয়োজনীয়, মেয়েদের তো তা নেই। এই সন্দেহের উত্তরে জেনে নেয়া যাক যে, হ্যাঁ, মেয়েরাও হস্তমৈথুন করে এবং যদিও তাদের পদ্ধতি পুরুষদের চাইতে ভিন্নতর—হাতকে বা আঙুলকেই ব্যবহার করা হয়।
শেরি হাইট নামে এক বিখাত যৌনগবেষক আমেরিকায় মেয়েদের যৌনতার উপরে এক বিশাল জরিপ চালিয়ে ছিলেন। মেয়েদের হস্তমৈথুন বা স্বমেহন নিয়ে এক বিশাল পরিচ্ছেদ লিখেছেন। এই সমীক্ষা থেকে যে তথ্য বেরিয়ে আসে, তাতে দেখা যায় যে, জরিপকৃত মেয়েদের শতকরা ৮২ ভাগ স্বীকার করেছে যে, তারা কোনো না কোনো সময়ে হস্তমৈথুন করেছে কিংবা এখনও করে (সূত্র ১২ পৃ ৫৯)। বিরাশী শতাংশের সাথে আরও আট-দশ শতাংশ যোগ করা বোধ করি অন্যায় হবে না, কারণ নিশ্চিতভাবেই কিছু মেয়ে আছে, যারা এই বিব্রতকর প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়নি কিংবা মিথ্যা জবাব দিয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের মধ্যেও শতকরা নব্বইজন হস্তমৈথুন করে। এখানে উল্লেখ্য যে, শেরি হাইটও একজন মহিলা। তাই তাঁর কাছে সাধারণ মেয়েরা যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, তা নিশ্চিত।
Anchorশেরি হাইট তাঁর জরিপ চালান ৭০ দশকের মাঝামাঝি এবং এর ফলাফল বই আকারে প্রথম প্রকাশ করেন ১৯৭৭ সালে। এই সময় নারী অধিকার আন্দোলন মাত্র শুরু হয়েছিল। অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়নি—ফেসবুক, গুগুল বলে কিছুই ছিল না। মেয়েরা তাদের যৌনতার ব্যাপার তাদের মনের কথা সহজে বলতে চাইত না—কারণ তাদের যৌনতার ব্যাপারে তাদের মনের কথা একান্তভাবে প্রকাশ করার মাধ্যম ছিল না। সবই ছিল ঢাক‑ঢাক গুড়‑গুড়।
ওপরে উল্লেখিত আমার ধারণা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মেলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে। ব্রিটেনের এক জরিপ সংস্থা মেয়েদের হস্তমৈথুনের ওপর নুতন এক জরিপ চালায় ২০০৮ সালে। এই জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হয় ব্রিটেনের দ্যা সান (The Sun) পত্রিকায়। এতে বলা হয় যে, দেখা গেছে শতকরা ৯২ ভাগ মেয়ে নিয়মিত হস্তমৈথুন করে তাদের যৌনক্ষুধার অবসান ঘটায়। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে যে, এদের দুই-তৃতীয়াংশ সপ্তাহে তিন বার এই কাজে লিপ্ত হয় (সূত্র, ১৩)। অতি সাম্প্রতিক আরেক সমীক্ষায় (২০১৩ সালে) দেখা যায় যে, শতকরা ৯৬ ভাগ মেয়ে নিয়মিত হস্তমৈথুন করে।
মেয়েরা কীভাবে হস্তমৈথুন করে থাকে, তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে শেরি হাইট লিখেছেন, “মেয়েদের যৌনতা বোঝার জন্যে তারা কীভাবে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে চরম পুলক (orgasm) লাভ করে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু কাজটি ঘটে থাকে অত্যন্ত গোপনে এবং কীভাবে কাজটি করতে হবে, তা কেউ কাউকে শিখিয়ে দেয়নি, সুতরাং হস্তমৈথুন বা স্বমেহন একটি নিখাদ জৈব [খাওয়াদাওয়া করার মতো, বা হাসিকান্নার মতো] আচরণ হিসেবে বিবেচনা করাই সঙ্গত। প্রাণীকুল যে-কয়টি সহজাত আচরণ (instinctive behaviour) প্রদর্শন করে থাকে, হস্তমৈথুন নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম।”
শেরি হাইট আরও লিখেছেন, “হস্তমৈথুনের মাধ্যমে মেয়েরা অতি সহজেই যখন খুশি তখন চরম পুলক আহরণ করতে পারে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কীভাবে নিজের দেহটিকে উপভোগ করতে হয়, নারীরা তা ভাল করেই জানে। কীভাবে (হস্তমৈথুন) করতে হবে, তা জানার জন্যে কাউকে জিজ্ঞেস করারও দরকার নেই তাদের। নারীজাতির এই যৌনতার আচরণ নেহায়েতই প্রাকৃতিক, কোনো সমস্যা নেই এতে। সমস্যা যদি কোথাও থেকে থাকে, তা আছে যৌনতা সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত সংজ্ঞায়, যে-সংজ্ঞা সমাজই নির্ধারণ করেছে এবং নারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের সুগুপ্ত যৌনতা শেয়ার করে আমরা কীভাবে হস্তমৈথুন করি, সেকথা প্রকাশ করলে নারী‑যৌনতা সম্পর্কে সমাজের ধারণার এক ধাপ অগ্রগতি হবে। যৌনতা এবং শারীরিক সম্পর্ক সমন্ধে আমাদের জানা প্রথাগত ধারণার পরিবর্তন ঘটবে।” (সূত্র ১২, পৃ ৫৯‑৬০)
এখন কথা হচ্ছে, আল্লাহপাক কি তাঁরই সৃষ্ট নারীকুলদের যৌনতা সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছেন? মেয়েরাও যে পুরুষদের মত নিয়মিত হস্তমৈথুনের দ্বারা তাদের দেহের চাহিদা মেটাচ্ছে, তা কি আল্লাহ্ জানেন? সমস্ত কোরআন এবং সহস্র হাদিস পড়ে মেয়েদের হস্তমৈথুনের কোনো উল্লেখ আমি পাইনি। কেউ পেয়ে থাকলে জানিয়ে বাধিত করবেন।
শেরির গবেষণা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অপরপক্ষে ইসলামী শাস্ত্রবিধান জারি করে রেখেছে DIY যৌনকারীরা যৌন-ম্যানিয়াক বা যৌনপাগলা। রোজ হাশরের দিন তারা গর্ভিনী দু’খান হাত নিয়ে কবর থেকে বেরুবে। মেয়েদের কী হবে, দুই গর্ভধারী বা ডাবল প্রেগন্যান্সির ভার নিয়ে তারা কবর থেকে বেরুবে কি না, সে সম্পর্কে ইসলামী শাস্ত্রবিদরা নীরব। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক মশহুর মুফতির ফতোয়া উপভোগ করা যাক (সূত্র ১৫)।
ইসলামিক কোয়েশ্চেন এন্ড এ্যানসার অনলাইন, মুফতি ইবরাহীম দেশাই
দারুল ইফতাহ, মাদ্রাসা ই ‘নামিয়াহ
কেপ টাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যে-ব্যক্তি স্বীয় হাতের সহিত বিবানবন্ধনে আবদ্ধ হয় (অর্থাৎ হস্তমৈথুন করে), সে অভিশপ্ত। (তফসির মাজহারি, খণ্ড ১২, পৃ ১৪)।
সাঈদ বিন জুবায়ের বর্ণনা করেছেন যে রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আল্লাহতায়ালা একদল লোককে শাস্তি দেবেন, কারণ তারা নিজেদের যৌনাঙ্গের সাথে খেলা করত।”
আতা (রাঃ) বলেন, “কিছুসংখ্যক লোক এমনভাবে পুনরুত্থিত হবে, যেন তাদের হস্তদ্বয় গর্ভবতী, আমার মনে হয়, তারা সেই সব লোক যারা হস্তমৈথুন করে।”
উপরোক্ত শাস্তির কথা বিবেচনা করে আমাদের মোমেন বা মোমেনা বান্দাদের কি উচিত নয় এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকা? যদিও এটা প্রায় নিশ্চিত যে, শরিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমাদের অধিকাংশই এই সহজ আনন্দদায়ক অভ্যাসটি আগের মতোই চালিয়ে যাব। জীবন সংগ্রামে নিরন্তর ডুবে থাকা একজন আদম সন্তানের কাছে আনন্দ আহরণের এমন সহজ পদ্ধতি আর কী আছে, যা বছরের প্রতিটি দিন ইচ্ছে হলেই আপনার হাতের মুঠোয় ধরা দেয় এবং কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না? শরিয়া এই অভ্যাসকে ভয়ঙ্কর ও ঘৃণ্য বলে চিহ্নিত করেছে। আমার মনে হয়, মোমেনদের কলব্ থেকে এই শয়তানি ওয়াছওয়াছা মুছে ফেলে শরিয়ার জয়ধ্বজা ওড়াতে হুজুরদের উচিত ‘কুইট স্মোকিং’ বা ‘ধুমাপান বন্ধ করুন’ এর অনুরূপ একটি প্রচারাভিযান বা ক্যামপেইন চালু করা, ‘কুইট মাস্টারবেশন’ বা ‘হস্তমৈথুন বন্ধ করুন’। ‘কুইট মাস্টারবেশন’ আন্দোলনও নিদারুণভাবে ব্যর্থ হবে। কারণ জীবদেহে আদিম উত্তেজনাটি জেগে উঠলে তা দীর্ঘ সময় ব্যাপী অবদমিত করে রাখা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। এক মোল্লা, হযরত কাইয়াস বলেন: যখন মানুষের পুরুষাঙ্গ উত্তেজিত হয়, তখন তার দুই তৃতীয়াংশ বুদ্ধি লোপ পায় (সূত্র ২৩, খণ্ড ২, পৃ ২৪৯)। সাধে কি অনেকে বলে—a standing prick and/or a wet vagina has no conscscince—উত্থিত লিঙ্গ আর ভেজা যোনি বিবেকের ধার ধারে না। মাফ করবেন, পাঠক, এরূপ অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কী করা! প্রাণীর সহজাত ও প্রবলতম এই জৈবতাড়নার স্বরূপ সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্যে এর চেয়ে ভাল কোনো বাক্য আমি আর খুঁজে পেলাম না। এ এমন এক তাড়না, যার সামনে পৃথিবীর কোনো যুক্তি, কোনো শক্তিই দাঁড়াতে পারে না। এমন যে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, ঘর-সংসার ত্যাগ করে জঙ্গলে পলায়ন করেছে, সেও এই কালভূজঙ্গের হাত থেকে নিষ্কৃতি পায় না। কম দুঃখে কি আর লালন বলেছেন, ‘ঘর ছেড়ে সে বনেতে যায়, স্বপ্নদোষ কি হয় না তথায়?’ ধূমপান করলে ক্যান্সারের ভয় থাকে - এটি জেনেও যেমন লোকে ধূমপান করে, ঠিক তেমনিভাবে পরকালে আল্লাহ্ হস্তমৈথুনকারীদের জন্যে ভয়ঙ্কর শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন, সেটা জেনেও মানবজাতি হস্তমৈথুন করে যাবেই। খাদ্য সংগ্রহের জন্যে প্রাণী সবকিছুই করতে পারে। খাদ্যের পর প্রাণীর দ্বিতীয় প্রধান তাড়না—তা হচ্ছে যৌনক্ষুধা নিবারণ। শত ভয় দেখিয়েও মানব জাতিকে এই জৈবিক প্রেরণা থেকে দূরে রাখা যাবে না—আল্লাহ্ বা ইসলাম যত চেষ্টাই করুন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, হস্তমৈথুন সম্পর্কে ইসালামী বিধিনিষেধ পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।
সহজ ভাষায় আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রায় একশতভাগ বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত নারী‑পুরুষ কোনো না কোনোভাবে হস্তমৈথুনে লিপ্ত আছে বা ছিল এবং থাকবে। এ এক বিপুল জনসংখা—বিশ্বের সব মানুষই এই যৌনকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে নিভৃতে নীরবে—আল্লাহপাক কি তা জানেন? তারা কি সবাই হাতে গর্ভবতী হয়ে কবর থেকে উঠে আসবে?
মোল্লাদের শত চোখ রাঙানি সত্ত্বেও যেসব মুসলামান এই ঘৃণ্য অভ্যাসটি এখনও পরিত্যাগ করতে পারেননি, তাদের জন্য গোটাকয়েক শরিয়া আইন নিচে পেশ করা হলো। ভালভাবে এগুলো পড়ে দেখুন, আপনার সবকিছু মনে হয় শেষ হয়ে যায়নি। নিয়মগুলি অনুসরণ করলে কোনো ফাঁকফোঁকড় দিয়ে আপনি রেহাই পেয়েও যেতেও পারেন, আপনার হস্তযুগল গর্ভবতী অবস্থায় সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হবে—সেই নিদারুণ লজ্জার হাত থেকে আপনি বেঁচে যেতেও পারেন। তাই চেষ্টা করতে দোষ কি?
হস্তমৈথুন (মাস্টারবেশন)
গোসল ফরজ (সূত্র ৮, পৃ ৭৯)
e10. 1—নাপাকি দূর করার জন্যে পুরুষের জন্যে গোসল ফরজ হয় যখন…
(1)—তার শরীর হতে বীর্য নির্গত হয়;
(2)—অথবা তার লিঙ্গাগ্র যোনির ভেতরে প্রবেশ করে;
এবং স্ত্রীলোকের জন্যে গোসল ফরজ হয়, যখন…
(1)—তার যোনি হতে যৌনসঙ্গমকালীন তরল পদার্থ (সেক্সুয়াল ফ্লুইড) নির্গত হয়। সেক্সুয়াল ফ্লুইডের সংজ্ঞা নিচে প্রদত্ত হলো;
(2)—তার যোনির ভেতর লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করে;
(3)—তার ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যায়;
(4)—সন্তানপ্রসবের পর যে বিশেষ ধরণের স্রাব বন্ধ হয়, কিংবা (শুকানো প্রসবের ক্ষেত্রে) সন্তান ভুমিষ্ট হয়।
(n): পুরুষের বীর্য বা স্পার্ম এবং মেয়েদের যৌনরস (সেক্সুয়াল ফ্লুইড) প্রতিশব্দ হিসেবে আরবিতে ‘মানিইয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ যৌনসঙ্গমকালে চরম পুলক লাভের সময় উভয়ের যৌনাঙ্গ হতে যাই নির্গত হোক, আরবি ভাষায় তার সাধারণ নাম ‘মানিইয়া’।)
রোজা বা উপবাস ভঙ্গ… (প্রাগুক্ত, পৃ ২৮৪‑২৮৬)
i1. 1. 18 (9)—যৌনসঙ্গম। (ইচ্ছাকৃত সঙ্গমের ক্ষেত্রে যদি চরম পুলক (অর্গাজম) নাও হয় তবুও), অথবা অযৌন স্থানের সাথে ঘর্ষণজনিত কারণে কিংবা হস্তমৈথুনজনিত কারণে চরম পুলক লাভ তা অবৈধ উপায়েই হোক—যেমন নিজ হস্তে কৃত, কিংবা বৈধ উপায়ে হোক—যেমন কোন ব্যক্তির স্ত্রীর হস্তে কৃত, তাতে কিছু আসে যায় না, রোজা ভঙ্গ হবেই।
i1. 19 (৩)—অথবা চরম পুলক, তাহা স্পর্শজনিত কারণে হোক (যথা—চুম্বন, আলিঙ্গন, একে অপরের উরুর ওপরে শুয়ে থাকা কিংবা অন্য কোনো উপায়। অথবা হস্তমৈথুনের কারণে হোক।
অনেকবারই সমগ্র কোরআন তন্ন তন্ন করে খুঁজে আমি হস্তমৈথুন (মাস্টারবেশন) শব্দটি পাইনি। সুতরাং হস্তমৈথুন পুরোপুরি হারাম—সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোল্লারা নিম্নে বর্ণিত সুরা মুমেনুনের (২৩:৫‑৭) নম্বর আয়াত উল্লেখ করে হস্তমৈথুনকে হারাম বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। তাদের এই ব্যাখ্যা সঠিক কি না, তার সিদ্ধান্ত আমি হস্তমৈথুনকারীদের হাতে ছেড়ে দিলাম। তারাই বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, কাজটি তারা চালিয়ে যাবেন, না হারাম ভেবে এ থকে বিরত থাকবেন?
সূরা মুমেনুন (সূরা ২৩)
২৩:৫ এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
২৩:৬ তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভূক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
২৩:৭ অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘণকারী হবে।
উপরোক্ত আয়াত নিয়ে প্রসিদ্ধ কোরআন ব্যখ্যাকারী ইবনে কাসীর কী লিখেছেন পড়া যাক:
ইবনে কাসীর; খণ্ড ১৫, পৃ ১৩‑১৪
ইমাম শাফিয়ী (রঃ) এবং তাঁর অনুসরণকারীরা এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, স্বীয় হস্ত দ্বারা স্বীয় বিশেষ পানি (শুক্র বা বীর্য) বের করা হারাম। কেননা, এটাও উক্ত দু’টি হালাল পন্থার বাইরের ব্যবস্থা। সুতরাং হস্তমৈথুনকারী ব্যক্তি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভূক্ত।
ইমাম হাসান ইবনে আরাফা (রঃ) তাঁর বিখ্যাত জু’যএ একটি হাদীস আনয়ন করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন “সাত প্রকারের লোক রয়েছে যাদের দিকে আল্লাহ্ তা’আলা করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে (পাপ হতে) পবিত্র করবেন না এবং সর্বপ্রথম জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে তাদের জাহান্নামে প্রবিষ্ট করবেন, তবে সদি তারা তাওবা করে তবে সেটা অন্য কথা।
তারা হলো স্বীয় হস্তের মাধ্যমে বিবাহকারী অর্থাৎ হস্তমৈথুনাকারী, সমমৈথুনকারী, সমমৈথুনকৃত, মদ্যপানকারী, পিতামাতাকে প্রহারকারী, যার ফলে পিতামাতা চীৎকার শুরু করে দেয়, প্রতিবেশীকে কষ্টদাতা, যার ফলে সে তার উপর লা’নত করে এবং প্রতিবেশিনীর সাথে ব্যভিচারকারী।” [পাদটিকে ২: এ হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী জ্ঞাত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলাই ভাল জানেন।] (সূত্র ৩১)
এই আয়াত আগেও উল্লেখ করা হয়েছে ক্রীতদাস বা যুদ্ধবন্দীদের সাথে সহবাসের অধ্যায়ে। কেউ কি এই আয়াতগুলিতে হস্তমৈথুন বা এই ধরনের কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছেন?
যাক, কোরআন ছেড়ে এবার শরিয়াবিধি পর্যালোচনা করা যাক। শরিয়া বিষেষজ্ঞ ইসলামী আইনবিশারদদের মতে DIY sex হস্তমৈথুন পুরোপুরি হারাম—দেখুন—
অবৈধ…w৩৭. ১ (সূত্র ৮, পৃ ৯৩২)
w37. 1 (N)—নিজের হাতের সাথে মৈথুন করা অবৈধ। ইমাম শাফেয়িকে হস্তমৈথুনের প্রেক্ষিতে উপরে বর্ণিত আল্লাহপাকের বাণী (২৩:৫‑৭) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন—ওপরোক্ত আয়াতগুলিতে যার যার সাথে সহবাস করার বৈধ করা হয়েছে, তার বাইরে যে কোনো ধরনের যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ; এদের বাইরে আর কারো সাথে যৌনসঙ্গম বৈধ, এই ধারণা শেষের আয়াতদ্বারা পরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
অধ্যায়‑২১ : সমকামিতা এবং পায়ুগমন বা সডোমি
হস্তমৈথুনের ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা থাকলেও সমকামিতার ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশ বেশ সুস্পষ্ট বা দ্ব্যর্থহীন। কোরআনে পায়ুকাম বা সডোমিকে সমকামিতার (homosexuality) প্রতিশব্দ হিসেবে বিবেচনা করে হয়েছে, যদিও সঠিক অর্থে পায়ুকাম এবং সমকামিতা এক জিনিস নয়। পায়ুকাম স্ত্রী বা মেয়েদের সাথেও হতে পারে—যা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। সডোমি ছাড়াও সমকামিতা হতে পারে যেমন পরস্পরের দ্বারা হস্তমৈথুন অথবা সমকামি স্ত্রীলোক বা লেসবিয়ানদের ব্যাপারে। সে যা হোক, এই প্রবন্ধে আমরা সডোমি এবং সমকামিতাকে একই অর্থে ব্যবহার করব—সুবিধার জন্য। কোরআনে সমকামিতা বলতে প্রধানতঃ পুরুষ সমকামিতা যা পাশ্চাত্যে গে (gay)-দের বলা হয়, তাই-ই বোঝানো হয়েছে। নারী সমকামিতা বা লেসবিয়ানদের ব্যাপারে কোরআনের কোথাও আমি সুস্পষ্ট কোনো আয়াত দেখিনি। তবে অনেক কোরআন বিশারদ সূরা নিসার আয়াত ১৫ (৪:১৫) দেখান। এই নিয়ে যথাসময়ে আরও আলোচনা হবে।
বর্তমান বিশ্বে সমকামিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে। গে এবং লেসবিয়ানরা তাদের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্বার সংগ্রাম করে চলছে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে। সমকামী সম্প্রদায় বা কমুনিটি কর্তৃক পরিচালিত এই আন্দোলনের ফলে মানবপ্রজাতির এই যৌন-আচরণের প্রতি আমাদের ধারণা ক্রমে পাল্টিয়ে যাচ্ছে। আজকাল অনেক দেশেই এই সম্প্রদায়গুলি তাদের দাবি আদায়ে খুবই উচ্চকণ্ঠ। তাদের দাবি, তারাও সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক সম্প্রদায়ের মতোই, আর সব নাগরিকদের মতো তাদেরকেও সমান আইনি অধিকার দিতে হবে। ইদানীং আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে, যার ফলে একই লিঙ্গের মাঝে বিবাহ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে। এই আন্দোলনের ফলে অস্ট্রেলিয়ায়ও সমকামিদেরকে অন্যান্য স্বাভাবিক নাগরিকদের মতোই সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আইন করা হয়েছে—ব্যক্তির যৌন-ক্রিয়াকলাপ একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়, এর জন্যে ব্যক্তির ওপর রাষ্ট্র কোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সিডনিতে এক জাঁকজমক মেলা এবং প্যারেড (গ্রান্ড মার্দি ফেস্টিভ্যাল) আয়োজন করা হয়, যেখানে গে এবং লেসবিয়ানদের সম্পর্কে জনচেতনা বাড়াতে নানাবিধ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে, সমকামিরা মানবপ্রজাতিরই বিশেষ এক গোষ্ঠি, ব্যক্তিগত যৌন-আচরণের দায়ে কাউকে ঘৃণা কিংবা নির্যাতন করা উচিত নয়। আইনের দৃষ্টিতে তারা আর দশজন সাধারণ আস্ট্রেলিয়াবাসীর সমতুল্য।
ইসলামীক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমকামীদের জন্যে সম‑অধিকারী দাবি নিতান্তই হাস্যকর। সমকামী নারীপুরুষ ইসলামের চোখে পশুর চেয়েও ইতর বা জঘন্য। যারা আল্লাহর দুনিয়াতে সমকামের মতো অপরাধ করে থাকে, তাদের জন্যে নির্ধারিত আছে কঠিন শাস্তি। ইসলামী ভাষায় সমকাম প্রকৃতিবিরুদ্ধ, সুতরাং পরম করুণাময় আল্লাহর বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়ার গ্রান্ড মার্দি উৎসবে যারা সমকামের অধিকারের জন্যে চেঁচায়, দৈবাৎ যদি কোনো ইসলামী স্বর্গে ধরা খায় তারা, কঠিন মৃত্যুদণ্ড অপেক্ষা করছে তাদের জন্যে। হ্যাঁ, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন উপযুক্ত শাস্তি নির্ধারিত নেই সমকামী “পশুদের” জন্য।
সমকামিতার বিপক্ষে ইসলামের যে যুক্তি, তা হলো—সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ আচরণ। শুধুমাত্র বিপরীত লিঙ্গবিশিষ্ট প্রাণী একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হবে, প্রকৃতির এরকমই বিধান। তা ছাড়া সমকামিতা বেড়ে গেলে মানুষ প্রজাতি ক্রমে কমে যাবে—অর্থাৎ প্রজনন প্রথা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইসলামীদের এই যুক্তি কতটা বস্তুনিষ্ঠ—বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তা যাচাই করা যাক এবার। প্রাণীর বিভিন্নমুখী যৌনাচরণ নিয়ে ইদানীং বহু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এইসব গবেষণা থেকে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে দেখা যায় যে, পশুজগতেও সমকামিতা বিরল ঘটনা নয়। গবেষকরা আশ্চর্য হয়ে আবিষ্কার করেছেন যে, বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, বেবুন ইত্যাদি প্রজাতির প্রাণীরাও মাঝে মাঝে সমলিঙ্গবিশিষ্ট সাথীটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এমনকি মাছ এবং পাখীদের মতো নিম্নস্তরের প্রাণীদের মধ্যেও সমকামিতার অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়। এইসব গবেষণা হতে জীববিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, বহুল প্রচলিত না হলেও সমলিঙ্গবিশিষ্ট প্রাণীকুলের মধ্যে যৌন-আকর্ষণ প্রকৃতিবিরুদ্ধ কোনো বিষয় নয়। মনুষ্যতর প্রাণীদের মধ্যেও যেহেতু অভ্যাসটি বিরাজমান, সুতরাং সমকামিতাকে একটি ব্যতিক্রমী জৈব আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়, অপ্রাকৃতিক কিংবা অতিপ্রাকৃতিক আচরণ হিসেবে নয়।
মানুষ যেহেতু জীবজগতেরই একটি অংশ, সুতরাং মানুষের মাঝেও এরূপ আচরণ পরিলক্ষিত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মধ্যেও একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ প্রাকৃতিক নিয়ামানুযায়ী সমলিঙ্গবিশিষ্ট সঙ্গীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক প্রথাবিচ্যুত এই অতি ক্ষুদ্র অংশটির প্রতি সমাজ কোন ধরনের আচরণ করবে? সমাজ কি তাদেরকে অপরাধী, খুনী, ধর্ষণকারী হিসেবে বিবেচনা করে গুরুতর শাস্তি দেবে? সভ্য সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক সমকামিতাকে সমর্থন করে না ঠিকই, তাই বলে তারা সমকামি নারীপুরুষকে খুনী বা ধর্ষণকারীর সমান অপরাধী গণ্য করে তাদের ওপর মৃত্যুদণ্ড চাপিয়ে দেবে, তাও কেউ প্রত্যাশা করে না। সভ্য সমাজ বড় জোর বলবে—সমকামীরা তাদের নিজেদের মতো করে থাকুক। যতক্ষণ না তারা সমাজের সংখ্যাগুরুর অংশটির অধিকারের ওপর ক্ষতিকর কোনোকিছু করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে যাওয়া কেন?
তবে ইসলামের কথা আলাদা। হাজার হলেও সাক্ষাৎ বেহেশ্ত (স্বর্গ) থেকে নেমে আসা এই ধর্ম। ভূপৃষ্ঠ হতে সমস্ত পাপীতাপী কাফের মুশরিকদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইসলামী মোল্লাতন্ত্র কায়েম করাই এই স্বর্গীয় ধর্মের একমাত্র লক্ষ্য। সুতরাং সমকামীদের ইসলাম জ্বিনা বা ব্যভিচারের মতোই জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। কোরআন, হাদিস এবং শরিয়ায় সমকামিতার যে-শাস্তির কথা বলা হয়েছে, নিম্নে তা পর্যালোচনা করা হলো।
কোরআন আনুসারে সডোমি হচ্ছে হযরত লুতের (আঃ) সম্প্রদায় কর্তৃক আচরিত একটি প্রথা। লুত ছিলেন ইসলামের আদি পুরুষ হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) ভ্রাতুষ্পুত্র। লুতের সম্প্রদায়ের বাসস্থান কোথায় ছিল, কোরআনে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন সূত্র থেকে মনে হয় যে, প্রাচীন সডোম বা গুমরাহ নগরীতে ছিল তাদের বাস (সুত্র ৬, পৃ ১৪১)। বাইবেলে বর্ণিত প্রাচীন এই শহর দু’টি যৌনবিচ্যুতির জন্যে কুখ্যাত ছিল। কোরআনের নিম্নবর্ণিত আয়াতদৃষ্টে জানা যায় যে, এই শহর দু’টির সমকামী অধিবাসীগণ আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আসমান হতে নিক্ষিপ্ত গন্ধক নির্মিত প্রস্তরখণ্ডের আঘাতে অক্কা পায় সডোমবাসীরা। নিহতদের মধ্যে লুতের স্ত্রীও ছিলেন। তিনি কোন অপরাধে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তার পরিষ্কার কোনো বিবরণ অবশ্য কোরআনে নেই। লুত সম্প্রদায়ের ধ্বংসবিষয়ক বর্ণনা কোরআনের বহু সুরায় আছে (৭:৮০‑৮১; ২১:৭৪‑৭৫; ২৬:১৬০‑১৬৫; ২৭:৫৪‑৫৮; ২১:২৮‑৩৫)। তবে আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখার জন্যে এখানে একটিমাত্র সুরার উল্লেখ করা হচ্ছে এখানে (৭:৮০‑৮৪)।
৭:৮০ এবং আমি লুতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল: তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি?
৭:৮১ তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমণ কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।
৭:৮২ তাঁর সম্প্রদায় এ ছাড়া কোন উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়।
৭:৮৩ অতঃপর আমি তাকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম।
৭:৮৪ অতএব দেখ, গোনাহ্গারদের পরিণতি কেমন হয়েছে।
আবদুর রহমান আই ডোই বায়হাকির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, সডোমি এমন একটি কাজ, যা আল্লাহর মনে প্রচণ্ড ক্রোধের উদ্রেক করে (সূত্র ৯, পৃ: ২৪১)।
আল্লাহর ক্রোধ---বায়হাকি
আল‑তিবরানি এবং আল‑বায়হাকির বর্ণনায় দেখা যায়, নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, “চার ধরনের লোক আছে, যারা আল্লাহর ক্রোধ মাথায় নিয়ে সকালে ঘুম হতে জাগে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি মাথায় নিয়েই রাতে ঘুমাতে যায়।” তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, “তারা কে, হে আল্লাহর রসুল?” নবী বলেন, “সেই সমস্ত পুরুষ, যারা মেয়ে সাজতে চেষ্টা করে এবং সেই সমস্ত মেয়ে, যারা পুরুষ সাজতে চেষ্টা করে পোষাক‑পরিচ্ছেদ এবং আচার আচরণ দ্বারা এবং সেই সমস্ত লোক, যারা পশুর সাথে সহবাস করে এবং সেই সমস্ত পুরুষ, যারা পুরুষের সাথে সঙ্গম করে।”
ইসলামের বিভিন্ন মূল নথিপত্র অনুসন্ধান করে উক্ত বইয়ে (সূত্র ৯) সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে, সমকামিতা এক কবিরা (অমার্জনীয় প্রচণ্ড অপরাধ)। এই বইয়ের ২৮২ পৃষ্টায় বর্ণিত কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হলো।
“কোনো ব্যক্তি যদি লালসা ভরে কোনো বালককে চুমা দেয়, মহান আল্লাহ্ তাকে এক হাজার বছর দোজখের (নরকের) আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেবেন।”
আরও বলা হয়েছে যে, নবী বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি যদি লালসাভরে কোন বালককে স্পর্শ করে, তার ওপর আল্লাহ্ আর ফেরেশতাগণ (দেবদুতেরা) ও সমস্ত মানবজাতির অভিশাপ বর্ষিত হয়।”
ইমাম গাজ্জালি লিখিত এহিয়াউ উলুমিদ্দিন বই পড়ে বোঝা যায় যে, সেই যুগেও অনেক মোল্লা সুন্দর বালক দেখলে কামাসক্ত হয়ে পড়তেন। এই কারণেই এই বইতে লেখা আছে:
জনৈক তাবেয়ী বলেন: যুবক সাধকের সাথে শ্মশ্রুবিহীন বালকের উঠাবসা আমি হিংস্র জন্তুর চেয়েও অধিক ভয় করি। হযরত সুফিয়ান সওরী বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি খাহেশবশতঃ কোন বালকের পায়ের অঙ্গুলিতেও সুড়সুড়ি দেয় তবুও সে সমকামী হবে। জনৈক বুযুর্গ বলেনঃ এই উম্মতে তিন প্রকার সমকামী হবে। কেউ তো কেবল দেখবে, কেউ করমর্দন করবে এবং কেউ কুকর্মই করবে। (সূত্র ২৩, খণ্ড ৩, পৃ ৩০৮)
এত বাধা নিষেধ সত্ত্বেও অনেক মোল্লা সুন্দর বালকদের সাথে সহবাস করতে চাইতেন। এখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত উপরের বই থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলো।
জনৈক সূফী বর্ণনা করেন—আমি সিরিয়ায় একজন অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী খৃস্টান বালককে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং অপলক দৃষ্টিতে তার সৌন্দর্য সুধা পান করতে লাগলাম। ইতিমধ্যে আমার কাছে ইবনে জালা দামেশকী আগমন করলেন এবং আমার হাত ধরলেন। আমি এভাবে ধরা পড়ে যাওয়ায় ভীষণ লজ্জিত হলাম। অতঃপর কথা বানিয়ে বললামঃ এই বালকের মুখাবয়ব দেখে আমি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম, এমন অনিন্দ্য সুন্দর মুখও জাহান্নামের অগ্নিতে প্রজ্বলিত হবে? জানি না, এর পেছনে আল্লাহ্র কি হেকমত। একথা শুনে ইবনে জালা আমার হাতে চিমটি কেটে বললেনঃ কয়েকদিন পর তুমি এর শাস্তি পেয়ে যাবে। সূফী বলেনঃ ত্রিশ বছর পর আমি এর শাস্তি পেয়েছি। আবূ সোলায়মান দারানী (রহঃ) বলেনঃ স্বপ্নদোষ হওয়াও গোনাহের একটি শাস্তি। তিনি আরও বলেনঃ নামাযে জামাত না পাওয়ার বিষয়টিও কোন গোনাহ করার কারণে প্রকাশ পায়। এক হাদীসে আছে--
অর্থাৎ, যামানার যে বিষয় তোমাদের খারাপ লাগে, তাকে তোমাদের আমল বিকৃত করারই ফল মনে কর। (সূত্র ২৩, খণ্ড ৪, পৃ ২১৩‑২১৪)
অনেক মোল্লা যে সমকামিতার জন্য লালায়িত থাকতেন তা নিচের বিবরণ থেকে বোঝা যায়:
আবু আমর ইবনে হুলওয়ান তার কাহিনীতে লিখেনঃ একদিন আমি নামায পড়ছিলাম, এমন সময় আমার অন্তরে কামভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আমি এ সম্পর্কে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম এবং শেষ পর্যন্ত তা সমকামিতার খাহেশে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আমি তৎক্ষণাত মাটিতে পড়ে গেলাম এবং সমস্ত শরীর কাল হয়ে গেল। লোকলজ্জার ভয়ে আমি তিনদিন পর্যন্ত ভেতরে গা-ঢাকা দিয়ে রইলাম এবং হাম্মামে গিয়ে সাবান শরীর ধৌত করলাম। কিছু কালো রঙ বাড়তেই থাকল। তিনদিন পর রঙ পরিষ্কার হল এবং আমি তলব পেয়ে রিক্কা থেকে হযরত জুনায়দ বাগদাদির খেদমতে বাগদাদ গেলাম, তিনি আমাকে দেখেই বললেনঃ ছিঃ ছিঃ তোমার লজ্জা হল না। আল্লাহ্র সামনে দাঁড়িয়ে তুমি কামভাবে মত্ত হলে, যা তোমাকে আল্লাহ্র সম্মুখে উপস্থিতি থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে। যদি আমি দোয়া না করতাম এবং তোমার পক্ষ থেকে তওবা না করতাম, তবে এই কালো রঙ নিয়েই তুমি আল্লাহ্র কাছে যেতে। আমি বিস্মিত হলাম যে, হযরত জুনায়দ আমার অবস্থা কিরূপে জানলেন! আমি তো রিক্কায় ছিলাম আর তিনি ছিলেন বাগদাদে। (সূত্র ২৩, খণ্ড ৪, ২১৪)
আবদুর রহমান ডোইয়ের উদ্ধৃতি অবশ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক বালককে চুম্বন করা কিংবা তার সাথে সঙ্গম করা সম্পর্কিত। সঠিকভাবে বলতে গেলে এ ধরনের যৌনতাকে সমকামিতা না বলে শিশুকাম বা শিশু-নির্যাতন বলাই সঙ্গত, যা নাকি সব ধরনের আইনেই দণ্ডনীয় অপরাধ বলে স্বীকৃত। সে যাহোক, আমরা যদি এ বিষয়ে কোরআনের প্রতি দৃষ্টি ফেরাই, তাহলে দেখতে পাই যে, সেখানে যে-ইসলামী স্বর্গের যে বর্ণনা রয়েছে তা ভণ্ডামিতে পরিপূর্ণ। আল্লাহপাক একদিকে সমকামিতার দোষে গোটা একটা গোত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছেন, আরেকদিকে তিনি তাঁর পবিত্র গ্রন্থে আশ্বাস দিচ্ছেন যে, প্রিয় বান্দাদের জন্যে তিনি যে-বেহেশতের বাগানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তা প্রচুর পরিমাণে মুক্তাসদৃশ্য তরুণ বালকে পরিপূর্ণ। পরকালে এইসব মুক্তাসদৃশ্য কোরানিক আসমানি বালকদের সেবা খাওয়ার লোভে কোনো কোনো সমকামী জিহাদি যদি শহীদ হওয়ার জন্যে উন্মাদ হয়ে উঠে—তাহলে তাকে খুব বেশি দোষ দেয়া যায় কি?
কোরানিক বালকদের বর্ণনা সম্বলিত কিছু আয়াত এখানে উদ্ধৃত করা হলো।
সূরা আত তূর (সূরা ৫২)
৫২:২০ তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।
৫২:২১ যারা ঈমানদার এবং তাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী।
৫২:২২ আমি তাদেরকে দেব ফল‑মূল এবং মাংস যা তারা চাইবে।
৫২:২৩ সেখানে তারা একে অপরকে পানপাত্র দেবে, যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপকর্মও নেই।
৫২:২৪ সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে।
৫২:২৫ তারা একে অপরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
৫২:২৬ তারা বলবে: আমরা ইতিপূর্বে নিজেদের বাসগৃহে ভীত‑কম্পিত ছিলাম।
৫২:২৭ অতঃপর আল্লাহ্ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।
সুরা আল দাহর (সূরা ৭৬)
৭৬:১৭ তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পান পাত্রে।
৭৬:১৮ এটা জান্নাতস্থিত ‘সালসাবিল’ নামক একটি ঝরণা।
৭৬:১৯ তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মণি‑মুক্তা।
৭৬:২০ আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নেয়ামতরাজী ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন।
ভালভাবে সমগ্র কোরআন সন্ধান করলে এমন অনেক ঐশ্বরিক ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে। আয়তলোচনা হুর আর সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ চিরকিশোর, যাদেরকে গেলমান বলা হয়, বেহেশতি বালকদের টোপ ছাড়া কামার্ত অসভ্য বেদুঈনদেরকে ইসলামের পতাকাতলে নিয়ে আসার আর কোনো উপায় রাব্বুল আলামিনের হাতে অবশিষ্ট ছিল না।
ইসলামপন্থীরা হয়ত এই বলে কৈফিয়ত দেবেন যে, মুক্তাসদৃশ্য এই সব বালক বেহেশতের পরিচারক মাত্র; বেহেশতবাসীদের হাতে পানপাত্র (মদের পান পাত্র) যুগিয়ে দেয়াই তাদের কাজ, যৌনসেবা করা নয়। তাদের এই যুক্তি নেহায়েতই খোঁড়া যুক্তি—মুখ রক্ষা করার প্রয়াস মাত্র। বেহেশতবাসীদের হাতে মদের সুরাপাত্র পরিবেশন করার জন্য আল্লাহপাক প্রচুর ‘সাকির’ ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যারা এতই লোভনীয় যে দৈবাৎ তাদের মুখবিবর হতে একবিন্দু থুথু পৃথিবীতে ছিটকে পড়লে সমস্ত ভূপৃষ্ঠ নাকি মেশক আম্বরের সুগন্ধে আমোদিত হয়ে যাবে। এই সব হুরদের সাথে বেহেশতি পুরুষেরা যখন যৌনমিলন ঘটাবে, প্রতিবার সঙ্গম করার পর আল্লাহর কুদরতে হুরটি সাথে‑সাথে আবার কুমারী হয়ে যাবে। চিরকুমারী, চির অক্ষতযোনি—এ যে আল্লাহর অসীম কৃপা। এখন প্রশ্ন, এতসব হুরের পাশাপাশি মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোর বালকদের নিয়োজিত করার কী দরকার? কেন মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোরের পরিবর্তে হাবশি পরিচারক নিযুক্ত করলেন না আল্লাহপাক? আরবদেশের তৎকালীন নিয়মানুযায়ী হাবশি ক্রীতদাসরাই প্রভুর হাতে পানপাত্রটি এগিয়ে দিত। সেদিকে না গিয়ে চিরকিশোর মুক্তার মত জ্যোতিমান বালকদেরকে কেন নিয়োজিত করলেন আল্লাহপাক? এ বিষয়ে আরবজাতীর ইতিহাসের বিখ্যাত রচয়িতা অধ্যাপক ফিলিপ হিত্তি লিখেছেন যে, গেলমানদেরকে ব্যবহার করা হয় প্রকৃতিবিরুদ্ধ (unnatural) যৌনতৃপ্তির জন্য। তিনি আরও লিখেছেন যে, ইসলামের আগে এবং তার পরেও অনেকেই এই সুখ উপভোগ করতেন, এমনকি ইসলামের অনেক খলীফাও গেলমান রাখতেন। (সূত্র ৩৪, পৃ ৩৪১)
প্রকৃত সত্য এই যে, জিহাদিদের মাঝে একটি অংশ ছিল বিষমলৈঙ্গিক যৌনতাকামি, যাদের পরিতৃপ্তি ঘটত না শুধুমাত্র বিপরীতলিঙ্গ যৌনসঙ্গম দ্বারা। সমলৈঙ্গিক সঙ্গম, বিশেষ করে কিশোর বালকদের সাথে সহবাসের মাধ্যমেই চরম পরিতৃপ্তি খুঁজে পেত তারা। নবী ভাল করেই জানতেন যে, শুধু শুকনো নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে না। এরূপ বালক বা কিশোর কাম থেকে বিরত রাখতে হলে পরকালে সুন্দর কিশোরদের অফুরন্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর সেজন্যেই আয়তলোচনা হুরদের পাশাপাশি মুক্তাসদৃশ্য চিরকিশোরের সরবরাহের আশ্বাস দেয়া হয়েছে পবিত্র আয়াত বা শ্লোকগুলিতে। সাথে সাথে বলা হয়েছে যে, ইহজগতে সমলৈঙ্গিক সঙ্গম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরণের কাজ জিনা কিংবা ব্যভিচারের ন্যায় দণ্ডনীয় অপরাধ।
ইসলামের দৃষ্টিতে সডোমি বা সমকামিতার সংজ্ঞা কী? ইসলামের মূল উৎস অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে ইসলামের দৃষ্টিতে সমকামিতার সংজ্ঞা হচ্ছে পায়ুপথে সঙ্গম করা, তা সে পুরুষেরই হোক কিংবা স্ত্রীলোকেরই হোক। সুতরাং যদি কোন পুরুষ কোনো অপরিচিতা মেয়ের সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, সে সডোমি করার দায়ে অভিযুক্ত এবং তার উপর হুদুদ (আল্লাহ্ নির্দেশিত শাস্তি) প্রয়োগযোগ্য। যদি সে নিজের স্ত্রীর সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে, তাহলেও সে সডোমি করার দায়ে অভিযুক্ত, তবে তার উপর হুদুদ শাস্তির পরিবর্তে তা’জির (স্বেচ্ছাধীন বা মর্জিমাফিক) শাস্তি প্রয়োগযোগ্য (সূত্র ৯, পৃ ২৪৩)। তবে হুদুদ শাস্তির ধরন কীরূপ হবে—শিরোশ্ছেদ, পাথর নিক্ষেপে হত্যা, দেয়াল ফেলে হত্যা, নাকি ইসলামী দোররা (চাবুক মারা) —এ সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলা নেই।
ইসলামে মেয়েলি পুরুষদেরকে (হিজড়া হতে পারে) কঠোরভাবে নিন্দা করা হয়েছে। তাদেরকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে সহবাস করতে বারণ করা হয়েছে। এদেরকে মুহাম্মাদ (সা) সমকামীদের পর্যায়ে ফেলেছেন। এ প্রসঙ্গে এই হাদিস দেখা যাক।
বাংলা বুখারি; খণ্ড ৭, হাদিস নম্বর ৩৯৮৮:
হুমাইদী (র)…উম্মে সালাম (রা) থেকে বর্ণিত যে, আমার কাছে এক হিজড়া ব্যক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে নবী (সা) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি শুনলাম, সে (হিজড়া ব্যক্তি) আবদুল্লাহ্ ইবন আবু উমাইয়া (রা)‑কে বলছে, হে আবদুল্লাহ্! কি বলো, আগামীকাল যদি আল্লাহ্ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তা হলে গায়লানের কন্যাকে অবশ্যই তুমি লুফে নিবে। কেননা সে (এতই স্থুলদেহ ও কোমল যে), সামনের দিকে আসার সময়ে তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। [উম্মে সালামা (রা) বলেন] তখন নবী (সা) বললেনঃ এদেরকে (হিজড়াদেরকে) তোমাদের কাছে প্রবেশ করতে দিও না। ইবন উয়াইনা (রা) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন জুরায়জ (রা) বলেছেন, হিজড়া লোকটির নাম ছিলো হীত। (সূত্র ১৭)
এখানে আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়। যদি কোনো পুরুষ আরেকজন পুরুষকে লালসাভরে চুম্বন করে কিংবা প্রেমালিঙ্গন করে কিংবা এমন কোনো শারীরিক কাজ করে, যা পায়ুপথে সঙ্গম নয়, অর্থাৎ পায়ুপথে বীর্যপাত না ঘটিয়ে অন্য কোনোভাবে—পরস্পর হস্তমৈথুন ইত্যাদি দ্বারা বীর্যপাত ঘটায়, সেক্ষেত্রে বিধান কী? এই ধরনের যৌনতৃপ্তি কি সডোমির পর্যায়ে পড়ে? নারী সমকামীদের বা লেসবিয়ানদের ক্ষেত্রেই বা ইসলামের বিধান কী? দুই জন লেসবিয়ান মহিলার মধ্যে অনুষ্ঠিত কার্যকলাপকেও কি সডোমির সমতুল্য বলে গণ্য করা যায়? লেসবিয়ানদের পক্ষে পায়ুপথে সঙ্গম সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় লেসবিয়ানদেরকে ইসলাম কোন শাস্তি দেবে? বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবার পরও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, দুই পুরুষ বা দুই মেয়ে একত্রে শয়ন করতে পারবে না। নিচের হাদিসটি অতিশয় লম্বা বিধায় শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক অংশটুকু এখানে দেয়া হলো
সুনান আবু দাউদ; বই ১১, হাদিন নম্বর ২১৬৯:
...আবু দাউদ বললেন: এই হাদিস আমি মুয়াম্মিল এবং মূসা থেকে স্মরণে রেখেছি। সাবধান! কোন পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে একসাথে শয়ন করবে না। কোন মেয়েলোক অন্য মেয়েলোকের সাথে একত্রে শয়ন করবে না। ব্যতিক্রম হবে নিজের শিশুর পিতা বা মাতা। সে আরও কিছু বলেছিল যার সঠিক বিবরণ আমি ভুলে গেছি।
এই হাদিসের বর্ণনাকারী মূসা বলেছেন: হাম্মাদ এই হদিসটি বর্ণনা করেছেন আল‑জারির থেকে তিনি বলেছেন আবু নাদরাহ্ থেকে, তিনি পেয়েছেন আল‑তুফায়ী থেকে। (সূত্র ৪)
আগেই বলা হয়েছে যে, ইসলামের সংজ্ঞা অনুযায়ী - পায়ুপথ দিয়ে লিঙ্গ প্রবিষ্ট করিয়ে বীর্যপাত ঘটানোর নাম সডোমি। এই কাজের শাস্তিপ্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামী পণ্ডিতেরা একমত হতে পারেননি। বিভিন্নজন বিভিন্ন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবি রাখে; কারণ এর সাথে মানুষের জীবন‑মরণের প্রশ্ন জড়িত। অনেক ইসলামী আইনবিদদের মতে, এই অপরাধের জন্যে কোনোপ্রকার নির্ধারিত (হুদুদ) শাস্তি নেই, বরং তা’জির বা গুরুত্ব বিবেচনা করে শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে, ক্ষেত্রবিশেষে যা মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
আবদুর রহমান ডোইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী সডোমির শাস্তি নিম্নরূপ।
উভয়কে হত্যা করা (সূত্র ৯, পৃ ২৪৩)
সমস্ত মুসলিম আইনবিদরা এ বিষয়ে একমত যে, সডোমি একটি যৌনাপরাধ, তবে এ কাজের শাস্তির ব্যাপারে সকলে একমত হতে পারেননি। ইমাম আবু হানিফার মতে সডোমি ব্যভিচারের সমতূল্য নয়। সুতরাং সডোমির জন্যে কারও ওপর হুদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়; এক্ষেত্রে অপরাধীদের ওপর তা’জিরের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করতে হবে। ইমাম মালিকের মতে সডোমির জন্যে অপরাধীকে হুদুদ আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করতে হবে, অপরাধী বিবাহিত না অবিবাহিত, তা বিচার করা চলবে না। যে হাদিসের সূত্র ধরে ইমাম মালিক এই ঊর্ধ্বতম শাস্তি (ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট) প্রদানের পক্ষপাতী, সে হাদিসটি নিম্নরূপ:
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত যে রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যদি তোমরা এমন কাউকে পাও, যারা লুতের গোত্রের কাজ করেছে [অর্থাৎ সমকামিতা], তাদের ওপরের জন এবং নিচের জন উভয়কেই হত্যা করবে।” আরেক বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “যে করছে এবং যার সাথে করছে, উভয়কে হত্যা কর।”
আবু ইউসুফ, ইমাম শাফেয়ী এবং মুহাম্মদের মতানুযায়ী অপরাধী যদি বিবাহিত হয়, তার শাস্তি হবে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যু, তবে অবিবাহিত হলে তা’জির প্রয়োগযোগ্য।
পিছনের দিকে দিয়ে সঙ্গম করা চলবে না (সূত্র ৯, পৃ ২৪৩)
স্ত্রীর সাথে অস্বাভাবিক উপায়ে অর্থাৎ পেছনের দিক হতে পায়ুপথে সঙ্গম করা অপরাধ। অধিকাংশ আইনবিদ মনে করেন যে, এই অপরাধে হুদুদের পরিবর্তে তা’জির শাস্তি প্রয়োগযোগ্য, কারণ এক্ষেত্রে একপ্রকার সন্দেহ (সুবুহাত) বিরাজিত, এবং সন্দেহের অবকাশ থাকলে হুদুদ প্রয়োগযোগ্য নয়।
উভয়কে হত্যা কর (সূত্র ৮, পৃ ৬৬৫)
p17. 3 আল্লাহর নবী (সা) বলেছেন
যে সডোমি করে এবং যে তা করতে দেয়, তাদের উভয়কে হত্যা কর।
যে ব্যক্তি লুতের গোত্র যা করতো তা করে, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত।
মেয়েদের মধ্যে সংঘটিত সমকামিতা ব্যভিচারের সমতুল্য।
লক্ষণীয় যে, ওপরে স্ত্রী সমকামিতার জন্য কোনো শাস্তি পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত হয়নি।
সমকামীদের জন্যে আরও কিছু দুঃসংবাদ (হেদাইয়া, সূত্র ১১, পৃ ১৮৫)
যদি কোনো ব্যক্তি আগন্তুক কোনো মহিলার সঙ্গে পায়ুপথে সঙ্গম করে (অর্থাৎ সডোমিজনিত অপরাধ করে), হানাফি বিধান অনুযায়ী তার জন্যে শাস্তি নির্ধারিত নেই, তবে তাকে তা’জিরের মাধ্যমে সংশোধন করতে হবে। এক্ষেত্রে তা’জির বা সংশোধন প্রসঙ্গে জামা সাঘিরের নির্দেশ এই যে, অপরাধীকে অন্তরীনাবস্থায় রাখতে হবে যে পর্যন্ত না সে অনুশোচনার উপলদ্ধি ঘোষণা করে। দু’জন সাহাবি (disciple) বলেছেন যে, যেহেতু এই কাজে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সমতুল্য, সুতরাং যে-ব্যক্তি এই কাজ করে তার ওপর বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের জন্যে নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগযোগ্য; এবং এ বিষয়ে শাফেয়ির একটি মতামত রয়েছে; এবং তার আরেক মতানুসারে, অত্র কাজে জড়িত উভয় ব্যক্তিই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য, তা তারা যা-ই হোক না কেন—অর্থাৎ তারা বিবাহিত অবিবাহিত যা-ই হোক না কেন। কারণ নবী বলেছেন, ‘সকর্মক (active) এবং অকর্মক (passive) উভয়কে হত্যা কর” (অথবা আরেক হাদিস অনুসারে, “কারক (agent) এবং কৃত (subject) উভয়কে পাথর নিক্ষেপে হত্যা কর।” সাহাবিদ্বয়ের যুক্তি এই যে, অত্র কাজটিতেও বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের সমস্ত গুণাগুণ বর্তমান, যা এভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে যে, “এ এমন লালসাপূর্ণ কর্ম, যা সংঘটিত হয় ইন্দ্রিয়তৃপ্তিকারী একটি বস্তুর উপর, এমন অবস্থায় যা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত, কর্মের উদ্দেশ্যে হয় বীর্য নিক্ষেপকরণ।” অপরপক্ষে হানিফার যুক্তি এই যে, কর্মটিকে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না, কারণ নবীর সাহাবিদের মধ্যে এ প্রসঙ্গে মতদ্বৈধতা বিদ্যমান ছিল। কারণ তাদের কেউ কেউ বলেছেন যে, এ ধরণের অপরাধীকে পুড়িয়ে মারা উচিত, কেউ আবার বলেছেন যে, তাকে কোন উঁচুস্থানে যেমন কোনো গৃহের ছাদ হতে ঝুলিয়ে রেখে পাথর নিক্ষেপ করা উচিত এবং এই ধরণের আরও মতামত; অধিকন্তু প্রশ্নবিদ্ধ এই কর্মটিতে বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের গুণাগুণ নেই, কারণ এতে বেশ্যাবৃত্তির ন্যায় সন্তান উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই যে, সন্তানের পিতৃপরিচয়ের বিভ্রমের সৃষ্টি হতে পারে। অধিকন্ত, এই প্রজাতির যৌনসম্পর্ক বেশ্যাবৃত্তি সংঘটনের তুলনায় অত্যন্ত কম, কারণ এই ধরনের কাজের আকাঙ্খা শুধুমাত্র সকর্মক সঙ্গীটির মনেই উদ্রেক হয়, অকর্মক সঙ্গীর মনে হয় না, পক্ষান্তরে বেশ্যাবৃত্তির ক্ষেত্রে উক্ত উভয়তঃ। শাফেয়ি উল্লেখিত হাদিসটি সম্ভবত এমন ক্ষেত্রকে নির্দেশ করে, যেখানে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান জরুরি; অথবা যেখানে উক্ত কর্ম সম্পাদনকারীরা কাজটি বৈধ এবং সঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস মাত্র।
এতদ নিষেধ সত্ত্বেও মনে হয় সেই যুগে সমকামীদের কোন অভাব ছিল না। নিষ্প্রাণ, উত্তপ্ত, রুক্ষ যৌনঅভুক্ত মরুভুমির বেদুইনদের জন্য সমকামিতা হয়ত একটা সহজলভ্য যৌনক্ষুধা নিবারণের উপায় ছিল। সেই জন্যেই হয়ত নবী (সা) সমকামীদের ওপর এত কঠোর হয়েছিলেন, কেননা তিনি ভয় করতেন যে, মুসলিমরা সমকামিতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে। নিচের হাদিস থেকে তাই বোঝা যায়।
সুনান ইবনে মাজাহ; খণ্ড ৪, হাদিস নম্বর ২৫৬৩: জাবির বিন আবদুল্লাহ্ হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন আল্লাহর রসুল বলেছেন, “আমার উম্মতের ব্যাপারে আমার সবচাইতে বড় আশঙ্কা এই যে, তারা লুতের কাজ করবে (অর্থাৎ সমকামী হয়ে যাবে)। (সূত্র ২০)
ওপরের আলোচনা হতে এটি স্পষ্ট যে, সডোমি বা সমকামিতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। ব্যাখ্যার অস্পষ্টতার কারণে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ইসলামী সমাজে। সমলিঙ্গবিশিষ্ট দু’জন মানুষ, (তা তারা দু’জন নারী অথবা দু’জন পুরুষ যা-ই হোক) যদি স্বেচ্ছায় একটি পরিবার তৈরি করে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়, ইসলামী আইনের বিভ্রান্তি ও মতভেদের সুযোগ নিয়ে তাদের উপর ঊর্ধ্বতম (capital punishment) সাজা নেমে আসতে পারে। সমকামিতার বিষয়ে ইসলামী আইন মোটেও মানবিক এবং যুগোপযোগী নয়। গে এবং লেসবিয়াদেরকে পছন্দ-অপছন্দ করার অধিকার সবার রয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে দু’জন সমকামী নারীর কিংবা দু’জন সমকামী পুরুষেরও অধিকার রয়েছে নিজের পছন্দমত জীবনটা বেছে নেয়ার। তাদের জীবন একান্তভাবেই তাদের নিজস্ব। জীবনটা তারা কীভাবে কাটাবে, সেটা বেছে নেয়ার অধিকারও তাদের জন্মগত। তাদের জীবনধারা যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজের অপর অংশের প্রতি ক্ষতিকর না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অধিকারকে পদদলিত করা কিংবা কিছু আজগুবি ধর্মীয় অনুশাসনের নামে তাদেরকে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। আধুনিক সভ্য সমাজ তাদেরকে হত্যা করার অধিকার দেয়নি।
অধ্যায়‑২২ : পশুমেহন (Bestiality)
পশুমেহন শব্দটির সাথে আপনাদের পরিচয় আছে কি? আমরা স্ত্রী‑পুরুষে সহবাসের কথা শুনেছি, পুরুষে-পুরুষে সহবাসের কথা শুনেছি, মেয়েতে-মেয়েতে সহবাসের কথা শুনেছি, এমনকি নিজের সাথে নিজের সহবাসের কথাও শুনেছি। এইসবই কি যথেষ্ট ছিল না? বিধাতার সৃষ্ট এই সুন্দর পৃথিবীতে বিচিত্র প্রাণীকুলের যৌন-আচরণের বিষয় পড়ে আপনি যদি এখনও তিতিবিরক্ত না হয়ে থাকেন তবে সর্বশেষ এই পরিচ্ছেদের (পশুমেহন) নাম শুনে আপনি যে আঁতকে উঠবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেকে হয়তো ভাবতেই পারবেন না যে, মানুষ কীভাবে একটি পশুর সাথে সঙ্গম করতে পারে? তাদের কাছে এ ধরনের কাজ খুন কিংবা আত্মহত্যার সমতূল্য বলে প্রতীয়মান হতে পারে। একজন মানুষ (নারী অথবা পুরুষ) কীভাবে অপরকে খুন কিংবা নিজেই নিজের জীবনকে শেষ করা দেয়, সাধারণ মানুষের কাছে তাও আশ্চর্যের বিষয়। তদসত্ত্বেও সমাজে খুনী আছে, আছে আত্মহননকারী। ঠিক সেইভাবে সাধারণ বুদ্ধির অগম্য হলেও মনুষ্য সমাজে বিরল কিছু লোক থাকে, যাদের মধ্যে পশুমেহনের মত বিরল যৌনবিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায়। সডোমি, শবমেহন (necrophilia) বা মৃতদেহের সাথে সহবাসের মতই পশুমেহনও একটি অস্বাভাবিক যৌন-আচরণ। পশুমেহনে অভ্যস্ত লোকদেরকেও সংশোধনযোগ্য চিকিৎসার সাহায্যে নিরাময় করা সম্ভব, শাস্তি প্রয়োগ করে নয়। তবে ইসলামের কথা আলাদা। আর সব যৌনবিচ্যুতির মতো পশুমেহনকারীদের জন্যেও কঠোর শাস্তির বিধান আছে ইসলামে, কোনোপ্রকার সংশোধনকারী পদ্ধতির কথা নেই।
আমরা এখন দেখব পশুমেহনকে ইসলাম কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং কীভাবে এই জঘন্য কাজের কাজীকে বিবেচনা করে।
পশুমেহন সম্পর্কে ইসলামী আইনকানুন ভালভাবে পর্যালোচনা করতে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে, তা হলো - শাস্তির প্রকারভেদ নিয়ে ইসলামী পণ্ডিতদের মতদ্বৈধতা। পশুমেহনের দায়ে কেউ মৃত্যুদণ্ডও পেতে পারে, আবার কেউ কোনোপ্রকার দণ্ডভোগ না করে দিব্বি বহাল তবিয়তে থাকতে পারে। এই ভেবে অনেকের আশ্চর্য লাগে যে, কেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ জানলেন না যে, তাঁর সৃষ্ট দু’চারজন বান্দা থাকবে, যারা ভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের সাথেও প্রেমে পড়তে পারে? নারীপুরুষের মনে প্রেমানুভূতি সৃষ্টি করার সময় তাঁর আরেকটু সচেতন থাকা উচিত ছিল; তাঁর সৃষ্ট জীবদের মনে সাধারণ ভালবাসার বাইরেও যে কোনো প্রকার বিচ্যুতির জন্ম হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি একেবারেই চোখ বুঁজে ছিলেন। তাঁর এই চোখ বুঁজে থাকার সুযোগে মোল্লাদের পোয়াবারো এখন। বিষয়টাকে সামলাতে তারা ইচ্ছেমতো ফতোয়া নিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল। খুবই উদ্বেগের বিষয় এটি, কারণ এর সাথে অপরাধীর জীবনমরণের প্রশ্ন জড়িত। অনুগ্রহ করে হেদাইয়া বর্ণিত নিম্নের অংশটুকু পাঠ করুন। চিন্তা করে দেখুন, খোদা নাখাস্তা যদি আপনি কখনো ইসলামী আইনের হাতে ধরা খেয়ে যেতেন, তাহলে আপনার পরিণতি কী হতো! আরও লক্ষ করুন, যদিও পশুটি কোনো অপরাধ করেনি, ইসলামী শাস্তির হাত হতে তার নিস্তার নাই। পশুটিকে হত্যা করতে হবেই। বন্য প্রাণীর প্রতি ইসলামী আইনের কী আচরণ!
পশুমেহনের শাস্তি
পশুর সাথে সঙ্গম করার অপরাধে নির্ধারিত শাস্তির বিষয়ে বিস্তর বিভ্রান্তি ও মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ইসলামে। শাস্তির পরিমাণ খুব লঘু শাস্তি হতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা পর্যন্ত হতে পারে।
বিখ্যাত শরিয়া বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান ডোই লিখেছেন যে, ইমাম মালিক, আবু হানিফা এবং জহিরের মতানুযায়ী পশুমেহনের শাস্তিস্বরূপ হুদুদ প্রয়োগযোগ্য নয়, তা’জির অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি দিতে হবে, পশুটিকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে, তবে পশুটির মাংস খাওয়া হালাল। (সূত্র ৯, পৃ ২৪৩)।
তবে হাম্বল এবং শাফেয়ির মতে এক্ষেত্রে হুদুদ আইন প্রয়োগ করে অপরাধীকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলতে হবে। পশুটিকেও বধ করতে হবে এবং পশুটির মাংস খাওয়া হালাল নয়। (সূত্র ৯, পৃ ২৪৩)
হেদাইয়া অনুযায়ী পশুমেহনের শাস্তি (সূত্র ১১, পৃ ১৮৫)
যদি কোনো ব্যক্তি পশুমেহন করে তবে তার ওপর হুদুদ প্রয়োগযোগ্য নয় কিংবা শাস্তি প্রদানযোগ্য নয়, কারণ এই কাজ বেশ্যাবৃত্তির সমতূল্য নয়, যেহেতু বেশ্যাবৃত্তি একটি জঘন্য অপরাধ যা সম্পূর্ণভাবে লালসা হতে উদ্ভূত এবং যা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হতে উৎপন্ন হয়; কিন্তু এই সংজ্ঞা পশুকামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এই কাজ সুস্থ রুচির মানুষের কাছে চরম ঘৃণার্হ। যে কারণে পশুদের যৌনাঙ্গ ঢেকে রাখা কিংবা গোপন করে রাখা প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় না, এবং মানুষের মনে পশুর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করার ইচ্ছা জাগার কোনো কারণ থাকতে পারে না, তবে প্রবলতম দূষিত ক্ষুধা এবং প্রবৃত্তির চরম বিকৃতি ব্যতীত। সুতরাং এক্ষেত্রে তাই হুদুদ শাস্তি প্রয়োগযোগ্য নয়, তবে ব্যক্তিটির ওপর সংশোধন তা’জির শাস্তি প্রয়োগযোগ্য, যার কারণগুলি পূর্বেই বিবৃত করা হয়েছে। আরও রেকর্ড করা হয়েছে যে, পশুটিকে হত্যা করে ফেলতে হবে এবং পুড়িয়ে ফেলতে হবে; যদি পশুটি খাওয়ার যোগ্য কোনো প্রজাতিভুক্ত না হয়; তবে পশুটি যদি খাওয়ার যোগ্য কোন প্রজাতিভুক্ত হয়, তবে তা খাওয়া বৈধ এবং পুড়িয়ে ফেলা যাবে না (আবু হানিফার মতানুযায়ী)। আবু ইউসুফ বলেন যে, উভয় ক্ষেত্রেই পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, অপরাধী যদি পশুটির মালিক না হয়, তবে অপরাধীকে পশুর মালিককে মূল্য পরিশোধ করতে হবে, তবে পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলা অতীব আবশ্যিক, পশুটিকে পুড়িয়ে ফেলার সপক্ষে এত বড় কারণ হতে পারে না যে, পশুটি জীবিত থাকলে এই জঘন্য পাপকাজের স্মৃতি মুছে ফেলা যেত না এবং অপরাধীর অঙ্গে এই অভিশাপ চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
পশুমেহনের জন্য হাদিসে নিম্নরূপ শাস্তির বিধান দেয়া আছে।
সুনান ইবনে মাজাহ; খণ্ড ৪, হাদিস নম্বর ২৫৬৪: ইব্ন আব্বাস হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন যে আল্লাহর রসুল (সা) বলেছেন, “কেউ যদি তার মেহরাম (বিবাহের জন্য নিষিদ্ধ) নারীর সাথে সহবাস করে, তাকে হত্যা করবে। আর কেউ যদি পশুর সাথে সঙ্গম করে, তবে তাকেও হত্যা করবে এবং পশুটিকেও হত্যা করবে।”.(সূত্র ২০)
এখানে বাংলা সুনান আবূ দাউদ থেকে একটি হাদিস উল্লেখ করা হচ্ছে:
আবূ দাউদ শরীফ পঞ্চম খণ্ড হাদিস নম্বর ৪৪০৬:
আহমদ ইব্ন ইউনুস (র)…ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
পশুর সাথে সংগমকারীর কোন শাস্তি নেই।
ইমাম আবূ দাউদ (র) বলেনঃ আতা (রা)ও এরূপ বর্ণনা করেছেন। আর হাকাম (র) বলেনঃ আমার মতে তাকে চাবুক মারতে হবে, তবে সমকামীদের চাইতে বেত্রাদণ্ডের সাজা কিছু কম হতে হবে। রাবী হাসান (র) বলেনঃ সে ব্যক্তির শাস্তি যিনাকারীর ন্যায়। আবূ দাউদ (র) বলেনঃ আসিম (র) বর্ণিত হাদীছ, আমর ইব্ন আবূ আমর (র)-এর হাদীছকে দূর্বল করে দেয়। (সূত্র ২৬)
এছাড়া নিচের লিংকে পশুমেহন সম্পর্কিত কিছু অতি কৌতূহলোদ্দীপক হাদিস আছে।
http://www.wikiislam.net/wiki/Islam_and_Bestiality
অধ্যায়‑২৩ : সারসংক্ষেপ এবং উপসংহার
নর-নারীর যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদিতে ইসলামের আপাতধার্মিক ভাবমূর্তির পেছনে যে আসল চেহারা লুকিয়ে আছে, তার স্বরূপ উন্মোচন করা কোনো সহজ কাজ ছিল না। ইসলাম এই ধারণা দিতে চেষ্টা করে যে, যৌনতা এবং যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদিতে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেয়ার একমাত্র মালিক সে‑ই। ইসলামই পৃথিবীর তাবৎ নর-নারীর একমাত্র নৈতিক পুলিশ তথা নৈতিক অভিভাবক। এ একেবারেই একটি মিথ্যা ধারণা। যৌনসংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর নীতিনিষ্ঠতার এবং ধর্মপরায়ণতার একটি কৃত্রিম মুখোশ জোর করে চাপিয়ে রাখা হয়েছে ইসলামে। সেই কালো হিজাবটি খুলে ফেললে ইসলামের যে-চেহারা ভেসে ওঠে, তা ইসলাম সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণার সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ। নরনারীর যৌনাচার সম্পর্কে ইসলামী ধারণার সারসংক্ষেপ করলে তা নিম্নরূপ দাঁড়ায়।
১. ইসলামের দৃষ্টিতে যৌনতার প্রকৃত সংজ্ঞা হলো নারীজাতির যৌনাঙ্গটিকে নিজের দখলে নিয়ে আসা—বিয়ের ক্ষেত্রে মোহরানা প্রদান করা কিংবা শত্রু অথবা অমুসলিম নারীদেরকে যুদ্ধবন্দিনী করে।
২. ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যৌনতার অর্থ হচ্ছে প্রাথমিকভাবে পুরুষের যৌনতৃপ্তি, যা পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় নারীযোনির অভ্যন্তরে বীর্য নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে।
৩. ইসলামী কামকেলিতে পুরুষটি হচ্ছে একমাত্র অভিনেতা বা নায়ক, স্ত্রী সেই অভিনয় লীলার একটি আবশ্যকীয় উপকরণমাত্র।
৪. ইসলামী যৌনতায় স্ত্রীজাতির ভূমিকা অতিশয় নগণ্য—নেই বললেই চলে। স্ত্রীর স্পর্শকাতরতা, তার পছন্দ অপছন্দ, তার চরম পুলক ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামের কোনো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। একজন মুসলমান রমণীর পক্ষে তার যৌনচাহিদার কথা মুখ ফুটে ব্যক্ত করা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। এ বিষয়ে সে সামান্যতম প্রকাশমুখী হলে বেশ্যা বা পতিতা তকমা জুটতে পারে তার কপালে।
৫. ইসলামী আইনশাস্ত্র এমনভাবে রচিত, যার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারী কর্তৃক মুসলমান পুরুষটিকে যৌন-আনন্দ যোগান দেয়া। এখানে প্রেম, ভালবাসা, আবেগ, সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবীয় বিবেচনা একেবারেই অনুপস্থিত। এই সমাজে যৌন-কর্মকাণ্ড একেবারেই পুরুষের কামনাসঞ্জাত একটি বিষয়। এর নিবৃত্তির প্রয়োজনে দরকার হলে সে নারীদের ওপর বলপ্রয়োগেরও অধিকার রাখে। যৌনলীলা পুরুষের দ্বারাই উপস্থাপিত হয় এবং পুরুষের দ্বারাই তার নিবৃত্তি হয়।
৬. সমকামীরা এবং অন্যান্য যৌনবিচ্যুতির শিকারগণ ইসলামের দৃষ্টিতে খুনীর চেয়েও জঘন্য। তাদের জন্যে কোনো প্রকার ক্ষমা বা লঘু শাস্তির ব্যাবস্থা ইসলামে নেই।
৭. ইসলাম মুসলমান পুরুষদেরকে মেয়েদের সাথে যথেচ্ছ সহবাস করার খোলা অনুমতি বা লাইসেন্স দিয়েছে, যদি মেয়েটি অমুসলিম হয় কিংবা মুসলমান পুরুষটি কোনো কাফেরের দেশে বসবাস করে।
যৌনতা সম্পর্কে ইসলামের ধারণা সম্পূর্ণভাবে না হলেও যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। মধ্যযুগের অমার্জিত, অসভ্য আরব বেদুঈন সমাজের সাথে সঙ্গতি রেখে এই সংস্কৃতি বা কালচার গড়ে উঠেছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুরুষটির চরম তৃপ্তি লাভ। এরূপ সেকেলে ধারণা নিয়ে নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক তৃপ্তিদায়ক যৌনসম্পর্ক গড়ে তোলা একেবারই অসম্ভব। এরূপ সম্পর্কের কানাগলি বেয়ে যে-জিনিষটি হাতে আসে, তা দিয়ে বড়জোর নিজের ইন্দ্রিয়ক্ষুধা মেটানো যেতে পারে, এর বেশি কিছু নয়।
সূত্র:
নিচে উল্লেখিত কোরআন এবং হাদিস বইগুলির ইংরেজি অনুবাদ অনেক আগে থেকেই অন্তর্জালে পাওয়া যাচ্ছে। পাঠকেরা অনুসন্ধান করলে এগুলো অতি সহজেই পেয়ে যাবেন।
১. দ্যা হলি কোরআন; ইংরেজি অনুবাদ—আঃ ইউসুফ আলী, পিকথল, শাকির।
২. সহি বুখারি; ইংরেজি অনুবাদ—ডঃ মুহাম্মাদ মহসিন খান।
৩. সহি মুসলিম, ইংরেজি অনুবাদ—আবদুর রহমান সিদ্দিকী।
৪. সুনান আবু দাউদ; ইংরেজি অনুবাদ—অধ্যাপক আহম্মদ হাসান।
৫. ইমাম মালিক রচিত মুয়াত্তা; ইংরেজি অনুবাদ—আয়েশা আবদুর রহমান এবং ইয়াকুব জনসন। মুদ্রিত কপি: Al-Muwatta of Imam Malik ibn Anas. Translated in English by Aisha Abdurrahman Bewley. Madinah Press Inverness, Paper Edition 2004. ISBN 0710303610.
৬. Hughes, Patrick Thomas. A Dictionary of Islam. First published in 1886. Latest reprint by Kazi Publications Inc, Chicago, 1994.
৭. al-Ghazali, Abu Hamid al-Tulsi. Ihya’ Ulum al-Din. Abridged by Abd al- Salam Haroun and translated in English by Dr. Ahmad Zidan. Islamic Inc., 8 Alssayeda Zainab Sq., Cairo, Egypt, 1997.
৮. al-Misri, Ahmed ibn Naqib. Reliance of the Traveller (‘Umdat al-Salik), revised edition. Translated by Nuh Ha Mim Keller. Amana Publications, Bettsville, Maryland, 1999.
৯. Doi, Abdur Rahman I. Shari’ah: The Islamic Law. First published in London, in1984. Malaysia reprint by A.S. Noordin, G.P.O. Box No. 10066, 50704, Kuala Lumpur, 1998.
১০. Ibn Ishaq, Muhammad b. Yasr. Sirat Rasul Allah. Translated in English by A. Guillaume. First published by Oxford University Press, London in 1955. Fifteenth reprint by Oxford University Press, Karachi, Pakistan, 2001.
১১. Hamilton, Charles. Hedaya. Translated in English in 1870 from the Persian version. Reprinted by Kitab Bhavan, 1784 Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi, 1994.
১২. Shere Hite, The Hite Report, A Nationwide Study of Female Sexulity, Summit Books, Publsihed by Paul Hamlyn Pty. Limited, 176 South Creek Road, Dee Why West NSW Australia, 2009. Reprinted by arrangement with Dell Publishing Co. (1977) Inc. ISBN 0 7271 0226 5
১৩.. http://www.thesun.co.uk/sol/homepage/news/article2024529.ece#OTC-RSS&ATTR=News
১৪. https://blog.ashleymadison.com/the-down-and-dirty-on-female-masturbation-statistics/
১৫. http://www.islam.tc/cgi-bin/askimam/ask.pl?q=165&act=view
১৬. কোরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর) অনুবাদ ও সম্পাদনা মাওলানা মুহিউদ্দীন খান; মদীনা পাবলিকেশান্স; ৩৮/২ বাংলা বাজার, ঢাকা‑১১০০।
১৭. বুখারী শরীফ; সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; তৃতীয় সংস্করণ, জুন ২০০৩।
১৮. তিরমিযী শরীফ; মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ অনূদিত; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; দ্বিতীয় সংস্করণ; মার্চ ২০০৭।
১৯. Abu Dawud, Sulayman b. al-Ash’ath. Al-Sunaan, a collection of Hadith,vol. i‑iii. Translated in English by Prof. Ahmad Hasan, Kitab Bhavan, 1784 Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi-110002 (India), 2001.
২০. Imam Abu Abdullah Muhammad b. Yazid ibn-i-Maza Al-Qazwani (with Arabic Text), Sunaan Ibn-i-Majah, Vol. I‑5. Translated in English by Muhammad Tufail Ansari. Kitab Bhavan, 1784 Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi-110002, India.1994.
২১. Ibn Musa al-Yahsubi, Qadi ‘Iyad. Ash-Shifa. Tr. Aisha Abdarrahman Bewley. Medina Press, P.O. Box 5531, Inverness IV5 7YA, Scotland, UK, fifth print 2004.
২২. আল‑বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মূল: আবুল ফিদা হাফিজ ইব্ন কাসীর আদ‑দামেশকী (র); অনুবাদ: হাফিজ মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত; খণ্ড ৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; অক্টোবর ২০০৪।
২৩. এহইয়াউ উলুমিদ্দীন; মূল ইমাম গাযযালী (রাহঃ); অনুবাদ মুহিউদ্দীন খান (৫ খণ্ডে); প্রকাশক মদীনা পাব্লিকেশান্স ৩৮/২ বাংলা বাজার, ঢাকা‑১১০০
২৪. মুসনাদে আহমদ; মূল: ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল; অনুবাদ ও সংকলন বিভাগ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (২ খণ্ডে), মে ২০০৮।
২৫. সুনানু ইবনে মাজাহ্; মূল; আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াজীদ ইবনে মাজাহ্ আল‑কাযবীনী; অনুবাদ ও সম্পাদনা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (তিন খণ্ডে); ফেব্রুয়ারি ২০০৬।
২৬. আবু দাউদ শরীফ; মূল ইমাম আবু দাউদ সুলায়মান ইবনুল আশ’আছ আস‑সিজিস্তানী (র); অনুবাদ ডঃ আ. ফ. ম. আবু বকর সিদ্দীক; সম্পাদনা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইয়াকুব শরীফ; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। আগস্ট ২০০৬।
২৭. Imam Hafiz Abu ‘Eisa Mohammad Ibn ‘Eisa At‑Tirmidhi; Jami’ At‑Tirmidhi (vol. 1-6), Tr. Abu Khaliyl, Final review by Islamic Research Section Darussalam, Darussalam, P.O. Box 22743, Riyadh 11416, Saudi Arabia, First Ed. November 2007
২৮. Imam Abu ‘Abdur Rahman Ahmad Nasa’i (with Arabic Text). Sunaan Nasa’I, Translated in English by Muhammad Iqbal Siddiqi. Kitab Bhavan, 1784 Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi-110002. Improved Indian edition 2006. ISBN: 81‑7151‑368‑9 (Vol. I-II).
২৯. Muslim, Abu al-Hussain b. al-Hajjaj al-Qushairi. Sahih Muslim, vol. I‑4. Translated in English by Abdul Hamid Siddiqui, Kitab Bhavan, 1784 Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi-110002, India. 2004.
৩০. মুসলিম শরীফ (৬ খণ্ডে); মূল ইমাম আবুল হুসায়ন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল‑কুশায়রী আন‑নিশাপুরী, সম্পাদনা পরিষদের তত্ত্বাবধানে অনুদিত ও সম্পাদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন। পঞ্চম সংস্করণ এপ্রিল ২০১০।
৩১. তাফসীর ইবনে কাসীর; মুলঃ হাফেজ ইমাদুদ্দিন ইব্ন কাসীর (রঃ); অনুবাদঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান। প্রকাশকঃ তাফসীর পাব্লিকেশন কমিটি (পক্ষে ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান), বাসা নং ৫৮, সড়ক নং ২৮, গুলশান, ঢাকা ১২১২। অষ্টম সংস্করণ মে ২০০৬।
৩২. Ibn Warraq. Why I am not a Muslim. Prometheus Books, Amherst, New York, 1995.
৩৩. al-Tabari, Abu Ja’far Muhammad b. Jarir. The Last Years of the Prophet, vol. ix. Translated by Ismail K. Poonwala. State University of New York Press, Albany, 1990. ISBN 0-88706-692-5.
৩৪. Hitti, Philip K. History of the Arabs, revised 10th edition. First published in 1937, PALGRAVE MACMILLAN, Houndmills, Basingstoke RG21 6X5, UK, 2002.
৩৫. তাফসীরে মাযহারী; মূল কাযী ছানাউল্লাহ্ পানিপথী (রহঃ); অনুবাদ; মাওলানা নাজিমুদ্দীন; প্রকাশক: হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া; পরিবেশক: সেরহিন্দ প্রকাশন, ৮৯ যোগীনগর রোদ, উয়ারী, ঢাকা‑১২০৬।
ইসলামে যৌনতা পর্ব সমাপ্ত
পুরোটা পড়িনি
ReplyDeleteপ্রথম শ - খানেক শব্দেই বুঝে গিয়েছি।
• ইচ্ছামত অপব্যাখ্যা করেছেন লেখক
• যৌথ সম্মতির ভিত্তিতে যদি মিলনের এত শখ?
আপনি কি চান যৌথ সম্মতির ভিত্তিতে
• আপনার মায়ের,মেয়ের, বোনের, বউয়ের সাথে কেউ মিলন করুক?
আমি ও। 🐕 বাচ্চা রে সামনে পাইলে বুঝিয়ে দিতাম হাড়ে হাড়ে 😡
Delete১/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজ মেয়ের সাথে S__x করেছে
ReplyDeleteকে?
উত্তরঃ ব্রম্মা।
২/ পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার নিজ মেয়ের সাথে S__x করেছে
কে?
উত্তরঃ প্রজাপতি দক্ষ।
৩/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজ মায়ের সাথে S__x করে কে?
উত্তরঃ গণেশ।
৪/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজের গুরুর স্ত্রীর সাথে S__x
করে কে?
উত্তরঃ দেবরাজ ইন্দ্র।
৫/ পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নিজ মামির সাথে S__x (লীলা)
করেছে কে?
উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ।
৬/ জলন্ধর এর স্ত্রী বিন্দা ও শঙ্কচুরের স্ত্রী তুলসী'কে
প্রতারিত করে S__x করেছিল কে?
উত্তরঃ বিষ্ণু।
৭/ সপ্তর্ষীর সাত স্ত্রীকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েছিল
কে?
উত্তরঃ অগ্নি।
৮/ পৃথিবীতে প্রথম একসাথে ৫ জনের সাথে S__x (Group
S__x) করেছিলো কোন নারী?
উত্তরঃ দ্রৌপদী।
৯/ পৃথিবীতে প্রথম Anal S__x করতে রাজী হয়েছিলো
কোন নারী?
উত্তরঃ পার্বতী।
১০/ পুথিবীতে একাধারে ১০০ বছর S__x করেছিল কে?
উত্তরঃ ব্রম্মা এবং সরস্বতী (বাবা-মেয়ে)।
এমন যেন আর না হয় সেজন্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বলা
হয়েছে----
"পুরুষের উচিত নয় তার মা, বোন, অথবা কন্যার সাথে
একাকী বসা, পাছে কী হতে কী হয়"। (মনুসংহিতা ২:২১৫)