মানব কণ্ঠস্বর বলতে মানুষের দ্বারা ভোকাল ট্র্যাক্ট ব্যবহার করে সৃষ্ট শব্দ বা শব্দগুচ্ছকে বুঝায়। এটি হতে পারে কথা বলা, গান গাওয়া, হাসা, কান্না করা, চিৎকার করা ইত্যাদি এমনকি কানকথাও। মানব কণ্ঠস্বর ফ্রিকোয়েন্সি বিশেষত মানব শব্দ উৎপাদনের একটি অংশ যেখানে ভোকাল কর্ড হলো প্রাথমিক শব্দোৎস। সাধারণভাবে বলতে গেলে, মানুষের কণ্ঠস্বর উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াটি তিন ভাগে বিভক্ত হতে পারে-
ফুসফুস
স্বরযন্ত্রীয় (ভয়েস বাক্স) কণ্ঠ্যভাঁজ (Vocal Folds)
বাগ্মী
যুগ্ম শব্দ বা জোড়া শব্দ হলে দুটো আলাদা শব্দ একসঙ্গে পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় বিশেষ অর্থ বোঝাবার জন্যে অথবা কোনো অর্থের ওপরে জোর দেবার জন্যে। শুক-সারি হলো যুগ্ম শব্দ বা জোড়া শব্দ। এখানে দুটো শব্দেরই আলাদা অর্থ বর্তমান থেকে পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় বিশেষ অর্থে। শুক ও সারি হলো শুক-সারি, কিন্তু এরা সমাসবদ্ধ নয়।
আকাশ পাতাল, আপদ বিপদ, আসমান জমিন, আসা যাওয়া, উত্থান পতন, কচি কাঁচা, কথা বার্তা, কাঁচা মিঠে, কামিনী কাঞ্চন, গ্রহ তারা , চন্দ্র - সূর্য , জোয়ার ভাটা, জীবন মরণ, জীবন মৃত্যু, ঝড়-বৃষ্টি, টাকা পয়সা, ডাকিনি যোগিনী, তাল তমাল, নদী নালা, নন্দী ভৃঙ্গী, নয় ছয়, নাওয়া খাওয়া , বাদ প্রতিবাদ, বিকি কিনি, বেলা অবেলা, ভাঙ্গা গড়া, মান অপমান, মেরে কেটে, মৌন মুখর, রাক্ষস খোক্ষস, রাগ অনুরাগ, রাগ রাগিনী, রাত দিন, লাফ ঝাপ, হংস মিথুন, শাল পিয়াল, শুক সারি , সাঁঝ সকাল, সুখ দুক্ষ, সুর অসুর।
অনেকেই ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দকে এক করে ফেলেন। ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দ আলাদা জিনিস। আসুন আমরা ভালো ভাবে জেনে নিই অনুকার শব্দ কী এবং ধ্বন্যাত্মক শব্দের সঙ্গে অনুকার শব্দের পার্থক্য কী।
অনুকার শব্দ কাকে বলে
একটি শব্দের সাথে ধ্বনিগত মিল রেখে(অর্থাৎ ধ্বনিগত অনুকরণে) যে সব অর্থহীন শব্দ তৈরি করা হয়, তাদের অনুকার শব্দ বলে।
যেমন : 'জল-টল' শব্দের 'টল' অংশটি অনুকার শব্দ। মনে রাখতে হবে 'জল-টল' পুরোটা অনুকার শব্দের উদাহরণ নয়। এ রকম আরও অনুকার শব্দের উদাহরণ হলো: খাবার-দাবার (দাবার), কাপড়-চোপড় (চোপড়), বই-টই (টই), চা-টা (টা)। অনুকার শব্দগুলি যে শব্দের অনুকরণে তৈরি হয়, সাধারণত সেই মূল শব্দটির অর্থকেই অনুসরণ করে, এদের নিজস্ব আলাদা অর্থ নেই। 'বই-টই' কথাটির মধ্যে অনুকার শব্দ 'টই'-এর আলাদা অর্থ নেই, টই মানে বইয়ের মতোই অন্য কিছু। আচার্য সুকুমার সেনের মতে ফ্ ধ্বনিকে গোড়ায় রেখে যে সব অনুকার শব্দ তৈরি হয়, সেগুলির দ্বারা তাচ্ছিল্যের ভাব প্রকাশ পায়। যেমন: 'বই-ফই' বললে বইকে তাচ্ছিল্য করা হয়।অনুকার শব্দকে অব্যয় বলার কোনো যুক্তি নেই।
স্বরধ্বনি হচ্ছে এমন কিছু ধ্বনি অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে। যেসব ধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় মুখের কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হয় না তাদের বলা হয় স্বরধ্বনি। স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারিত হতে অন্য বর্ণের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না বরং অন্য বর্ণকে উচ্চারিত হতে সাহায্য করে। আন্তর্জাতিকভাবে এধরনের বর্ণের মৌলিক সংখ্যা ৭টি - ই, এ, এ্যা, আ, অ, ও ও উ ৷ বাংলা বর্ণমালায় স্বরধ্বনির প্রচলিত সংখ্যা ১১টি ।
উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ গুলিকে সাধারণত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়।
১) স্পর্শ বর্ণ ২) উষ্মবর্ণ ৩) অন্তঃস্থ বর্ণ ৪) অযোগবাহ বর্ণ/ আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ
১) স্পর্শ বর্ণ- ক থেকে ম পর্যন্ত ২৫ টি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিভের কোনো না কোনো অংশের সঙ্গে কণ্ঠ,তালু,মূর্ধা,দন্ত,ওষ্ঠের কারোর না কারোর সাথে স্পর্শ ঘটে।তাই এদের স্পর্শ বর্ণ বলা হয়।
উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী এই ২৫ টি বর্ণকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়।প্রতিটি ভাগকে বলা হয় বর্গ।তাই এদের অপর নাম বর্গীয় বর্ণ।প্রতিটি বর্গে আছে ৫ টি করে বর্ণ, এদের মধ্যে প্রথম বর্ণের নাম দিয়ে প্রতিটি বর্গের নামকরণ করা হয়।যেমন - ক - বর্গ, চ - বর্গ, ট - বর্গ, ত-বর্গ, প- বর্গ।
২) উষ্মবর্ণ - উষ্ম শব্দের অর্থ গরম। উচ্চাারণের সময় বাগযন্ত্রের মধ্যে দিয়ে গরম বায়ু নির্গত হয় বলে শ,ষ,স,হ এই ৪টি বর্ণকে উষ্মবর্ণ বলে।
৩) অন্তস্থঃবর্ণ -অন্তস্থঃ শব্দটির অর্থ মাঝে অবস্থিত।য,র,ল,ব ৪টি বর্ণ স্পর্শবর্ণ ও উষ্মবর্ণের মাঝে অবস্থিত বলে এদের অন্তস্থঃ বর্ণ বলে। অন্তঃস্থ বর্ণে যে ব আছে তার উচ্চারণ উঅ৷ বন শব্দের ব-এর মতো নয়৷ বাংলাবর্ণমালা থেকে অন্তঃস্থ ব বিলুপ্ত হয়েছে আবার অন্তঃস্থ বর্ণ রূপে ব-কে দেখানো হয়েছে —এটা বর্গীয় ব সম্পর্কে ভুল তথ্যের উৎস ৷
৪) আশ্রয়স্থানভাগী বা অযোগবাহবর্ণ - \° ও ঃ এর নিজস্ব কোনো উচ্চারণ নেই এরা সবসময় এদের আগে যে বর্ণটি থাকে তাকে আশ্রয় করে উচ্চারিত হয় তাই এদের আশ্রয়স্থানভাগী বা অযোগবাহবর্ণ বলে।
উচ্চারণ রীতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ গুলিকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়।১) মহাপ্রাণবর্ণ ২) অল্পপ্রাণবর্ণ ৩) ঘোষবর্ণ ৪) অঘোষবর্ণ ৫) অনুনাসিক বা নাসিক্যবর্ণ
১) মহাপ্রাণবর্ণ- প্রাণ শব্দের অর্থ নিঃশ্বাস বায়ু, প্রতিটি বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ উচ্চারণের সময় হ জাতীয় নিঃশ্বাসবায়ু জোরে বেরিয়ে আসে। তাই এদের মহাপ্রাণবর্ণ বলে। যেমন খ -( ক+হ), ঘ- (গ+হ) ইত্যাদি।
২) অল্পপ্রাণবর্ণ - প্রতিটি বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণগুলি উচ্চারণের সময় হ জাতীয় নিঃশ্বাস বায়ু বেরিয়ে আসে না তাই এদের অল্পপ্রাণবর্ণ বলে। যেমন - ক, খ ইত্যাদি।
৩) ঘোষবর্ণ- ঘোষ শব্দের অর্থ গাম্ভীর্য। প্রতি বর্গের তৃতীয়, চতুর্থবর্ণের উচ্চারণ গাম্ভীর্যপূর্ণ তাই এদের ঘোষবর্ণ বলে।যেমন-গ,ঘ,ইত্যাদি।
৪) অঘোষবর্ণ - প্রতিটি বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণের উচ্চারণ মৃদু ও গাম্ভীর্যহীন তাই এদের অঘোষবর্ণ বলা হয়।যেমন- ক,খ ইত্যাদি।
৫) অনুনাসিক বা নাসিক্যবর্ণ- প্রতিবর্গের শেষবর্ণ এবং \° এর উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসবায়ু আংশিকভাবে নাসিকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং এর ফলে উচ্চারণ কিছুটা নাকিসুরের হয়।তাই এদের অনুনাসিক বা নাসিক্যবর্ণ বলে। যেমন-ঙ,ঞ ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ