সহজ কথায় গ্যাংগ্রিন মানে হলো পঁচন। শরীরের কোন স্থানে ঠিক মতো রক্ত সাপ্লাই না হলে সেখানকার টিস্যু বা মাংস পচেঁ যায়। জীবনী শক্তির অভাব, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে যাওয়ায় ক্ষত সহজে আরোগ্য হতে চায়না। ইহা যদিও শরীরের যে-কোন স্থানে দেখা দিতে পারে, তথাপি গ্যাংগ্রিন সবচেয়ে বেশী দেখা দেয় হাতের এবং পায়ের আঙুলে। রক্তনালীর রোগ, বড় ধরণের এক্সিডেন্ট, মাত্রাতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি কারণে গ্যাংগ্রিন হয়ে থাকে। ইদানীং ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাংগ্রিনের রোগীও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাস্তব উদাহরণঃ
আমার দেখা একজন হোমিও বিশেষজ্ঞ কোন এক কারণে গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়।পায়ে ক্ষত পুঁজ ঝড়ে। প্রথম দিকে কিছু হোমিও ঔষধ খাওয়ার পরও গ্যাংগ্রিন ভাল হচ্ছিলনা।তখন ডায়াবেটিস চেক করা হল। চেকে ডায়াবেটিস ধরা পড়ল ১৭ পরিমান। তারপরও তিনি হোমিও ঔষধ খেয়ে চলছেন অবলীলায়। কিছুতেই আরোগ্য হচ্ছিলনা। অবশেষে তিনি বাংলাদেশের আরোও কিছু হোমিও বিশেশজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেন। সবাই তাকে ডায়াবেটিস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলেন। তিনি একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে আলোচনা করে পেস্ক্রিশন করালেন। তারপর তিনি এলোপ্যাথিক ওষধ না খেয়ে Insulinum Lycopodium, Arsenic Albam, Tarantula ইত্যাদি হোমিও ঔষধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেন।
এলোপ্যাথিক চিকিৎসার কুফলঃ
এলোপ্যাথিতে এই রোগের কোন চিকিৎসা নাই বিধায় গ্যাংগ্রিনের রোগীরা সাধারণত অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা গ্যাংগ্রিন হলে প্রথমে আঙ্গুল কেটে ফেলে দেয়, তারপর গ্যাংগ্রিন আরেকটু অগ্রসর হলে পায়ের গোড়ালী পযর্ন্ত কেটে ফেলে, তারপর হাটু পযর্ন্ত কাটে এবং শেষে কোমর পযর্ন্ত কেটে ফেলে। এভাবে বারবার অপারেশনের ধাক্কায় রোগীরা অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
হোমিও চিকিৎসাঃ
Arsenicum Album: গ্যাংগ্রিনে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ঔষধ হলো আর্সেনিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো ছুরি মারার মতো ভয়ঙ্কর ব্যথা, আক্রান্ত স্থান কালচে রঙ ধারণ করে, ভীষণ জ্বালাপোড়া ভাব, অস্থিরতা, ওজন কমে যাওয়া, ভীষণ দুর্বলতা ইত্যাদি। ব্যথা সাধারণত মধ্যরাতে বৃদ্ধি পায় এবং গরম শেক দিলে কমে । রোগী মৃত্যুর ভয়ে কাতর হয়ে পড়ে। সাধারণত উচ্চ শক্তিতে খাওয়া উচিত এবং বিনা প্রয়োজনে ঘনঘন খাওয়া উচিত নয়।
Echincea: দূর্গন্ধযুক্ত গ্যাংরিণে Q শক্তি বাহ্যিক ব্যবহার এবং 3X শক্তি সেব্য।
Lachesis: ল্যাকেসিস গ্যাংগ্রিনের আরেকটি শ্রেষ্ট ঔষধ। এই ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো আক্রান্ত স্থান নীলচে অথবা বেগুনি রঙ ধারণ করে, অল্প একটু কাটা থেকে প্রচুর রক্ত যায়, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে রোগ প্রথমে শরীরের বাম পাশে আক্রমণ করে এবং সেখান থেকে ডান পাশে চলে যায়, সাংঘাতিক ব্যথার কারণে আক্রান্ত স্থান স্পর্শই করা যায় না, ঘুমের মধ্যে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, বেশী বেশী কথা বলে, হিংসুটে স্বভাবের ইত্যাদি ইত্যাদি।
Crotalus Horridus: এটি শরীরের ভিজা অংশের গ্যাংগ্রিনে প্রায়ই কাজে লাগে; যেমন জিহ্বা, টনসিল ইত্যাদিতে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো দাঁতের মাড়ি-নাক-পাকস্থলী-ফুসফুস-মুত্রনালী-জরায়ু ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ, এমনকি পশমের গোড়া থেকেও রক্ত ক্ষরণ হয়, ঘনঘন জন্ডিসে ভোগে, মুখমন্ডল ফোলাফোলা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, রোগ প্রথমে শরীরের ডান পাশে আক্রমণ করে ইত্যাদি।
Secale Cornutum: বৃদ্ধ বয়সের গ্যাংগ্রিনে এটি বেশী ফলপ্রদ। মৌমাছির হুল ফোটানোর মতো ব্যথা এবং গরমে সব সমস্যা বৃদ্ধি পায় আর ঠান্ডা প্রয়োগে আরাম লাগে। চামড়া থাকে কুচঁকানো এবং শুকনো। আক্রান্ত অঙ্গ থাকে ঠান্ডা কিন্তু কাপড়-চোপড় দিয়ে আবৃত করা সহ্য হয় না। ক্ষুধা থাকে খুবই বেশী এবং সামান্য একটি ক্ষত থেকে পাঁচ-সাত দিন পযর্ন্ত রক্ত ঝরতে থাকে।
Carbo Vegetabilis: বার্ধক্যজনিত গ্যাংগ্রিন, লালচে-বেগুনি রঙের, আক্রান্ত অঙ্গ বরফের মতো ঠান্ডা। দীর্ঘদিন রোগ ভোগার কারণে দুর্বল-অবসন্ন হওয়া রোগী, পেটে প্রচুর গ্যাস হয়, জীবনীশক্তি ক্ষয় পাওয়া কংকালসার ব্যক্তি, খোলা বাতাসের জন্য পাগল ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণে কার্বো ভেজ প্রযোজ্য।
Arnica Montana: সাধারণত আঘাত পাওয়ার পরে সেই স্থানে গ্যাংগ্রিন দেখা দিলে তাতে আর্নিকা সেবন করা উচিত।
Silicea: সিলিসিয়া ঔষধটি যাদের হাড়ের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা আছে অর্থাৎ রিকেটগ্রস্থ লোকদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। এই ঔষধে মেরুদন্ডের সাথে সম্পর্কিত কোন না কোন রোগ লক্ষণ থাকবেই। সিলিসিয়ার রোগীরা হয় শীতকাতর, রিকেটগ্রস্থ, এদের জন্মগত হাড়ের সমস্যা থাকে, মারাত্মক ধরণের বাতের সমস্যা থাকে, অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় রোগের মাত্রা বেড়ে যায়, মনের জোর বা আত্মবিশ্বাস কমে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সিলিশিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো শরীর বা মনের জোর কমে যাওয়া, আঙুলের মাথায় শুকনা শুকনা লাগা, আলো অসহ্য লাগা, কোষ্টকাঠিন্য,ঘনঘন মাথা ব্যথা হওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া, মুখের স্বাদ নষ্ট হওয়া, মাংস-চর্বি জাতীয় খাবার অপছন্দ করা, আঙুলের মাথা অথবা গলায় আলপিন দিয়ে খোচা দেওয়ার মতো ব্যথা, পাতলা চুল, অপুষ্টি ইত্যাদি। সিলিসিয়ার পুঁজ থাকে পানির মতো পাতলা।
Tarantula: ক্ষতস্থানে হুল ফোটানো যন্ত্রণা, জ্বলাময় থাকলে ৩০-২০০শক্তি সেব্য।
Writer: Dr. Anjan Das
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ