শিব পুরাণ |
এই পুরাণের বারোটি খন্ড রয়েছে। এগুলি হলো -
২। রুদ্র সংহিতা ১'ম খণ্ড সতী খণ্ড পার্বতী কাণ্ড কুমার কাণ্ড
৩। বিনায়ক সংহিতা
৪। উমা সংহিতা
৫। সহস্রকোটিরুদ্র সংহিতা
৬। একাদশরুদ্র সংহিতা
৭। কৈলাস সংহিতা
১০। মাতৃ সংহিতা
১১। বায়বীয় সংহিতা পূর্ব এবং উত্তর
১২। ধর্ম সংহিতা ।
বিদ্যেশ্বর সংহিতায় দশ হাজার শ্লোক রয়েছে।
রুদ্র সংহিতা, বিনায়ক সংহিতা, উমা সংহিতা এবং মাতৃ সংহিতায় আট - আট হাজার শ্লোক রয়েছে।
একাদশ রুদ্র সংহিতায় তের হাজার শ্লোক রয়েছে,
কৈলাস সংহিতায় ছয় হাজার,
শতরুদ্র সংহিতায় তিন হাজার,
কোটিরুদ্র সংহিতায় নয় হাজার,
সহস্রকোটিরুদ্র সংহিতায় এগারো হাজার,
বায়বীয় সংহিতায় চার হাজার এবং
বারো হাজার শ্লোক রয়েছে ধর্ম সংহিতা।
মূল শিব পুরাণে মোট এক লক্ষ শ্লোক রয়েছে, তবে ব্যাস ঋষিএটিকে কমিয়ে চব্বিশ হাজার শ্লোকে রেখেছেন।
পুরাণের ক্রমিক সংখ্যায় শিব পুরাণের চতুর্থ স্থান যেখানে সাতটি সংহিতা রয়েছে।
অতীতে, ভগবান শিব শত কোটি শ্লোকের পুরাণ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সৃষ্টির শুরুতে রচিত এই পুরাণ সাহিত্যটি আরও বিস্তৃত ছিল।
দ্বাপর যুগে দ্বৈপায়ণ মহর্ষিগণ পুরাণকে আঠার অংশে বিভক্ত করেছিলেন এবং এটিকে কমিয়ে দিয়েছিলেন চার লক্ষ শ্লোকে। এর পরে ব্যাস ঋষি এটিকে চব্বিশ হাজার শ্লোকে রচনা করেছিলেন।
ভারতের সবচেয়ে বড়ো, তথাকথিত হিন্দু ধর্মগ্ৰন্থ ছাপানোর সংস্থা হলো,গীতা প্রেস।গীতা প্রেসের দ্বারা প্রকাশিত, হিন্দী শিবপুরাণের রেফারেন্স :---
শিব পুরাণ, কোটিরুদ্রসংহিতা_12 অধ্যায়ের_5 থেকে 47 শ্লোক।
•নবভারত পাবলিশার্সের প্রকাশিত শিব পুরাণের রেফারেন্স:---
শিব পুরাণ_জ্ঞানসংহিতা_42 অধ্যায়ের_5 থেকে 47 শ্লোক।
•••সূত উবাচ:----
পুরা দারুবনে যাতং যদরত্তন্ত দ্বিজন্মনাম্।
তদেব শ্রূয়তাং সম্যক্ কথয়ামি যথাশ্রুতম্ ॥ (5)
দারুনাম বনং শ্রেষ্ঠং তত্রাসন্ ঋষিসত্তমাঃ।
শিবভক্তাঃ সদা নিত্যং শিষধ্যানপরায়ণাঃ ।।(6)
ত্রিকালং শিবপূজাঞ্চ কুৰ্ব্বন্তি স্ম নিরন্তরম্।
স্তোতৈর্নানাবিধৈর্দেবং মন্ত্রৈর্বা ঋষিসত্তমাঃ।।(7)
এবং সেবাং প্রকুর্ব্বন্তো ধ্যানমার্গপরায়ণাঃ ।
তে কদাচিদ্বনে যাতাঃ সমিদাহরণায় চ।।(
এতস্মিন্নস্তরে সাক্ষাৎ শঙ্করো নীললোহিতঃ ।
বিরূপঞ্চম সমাস্থায় পরীক্ষার্থং সমাগতঃ ।।( 9)
দিগম্বরোহতিতেজস্বী
ভূতিভূষণভূষিতঃ ।
চেষ্টাঞ্চৈব কটাক্ষঞ্চ হস্তে লিঙ্গঞ্চ ধারয়ন্।।(10)
মনাংসি মোহয়ন্ স্ত্রীনামাজগাম হরো স্বয়ম্ ।
তং দৃষ্টা ঋষিপত্ন্যস্তাঃ পরং ত্রাসমুপাগতাঃ।।(11)
বিহ্বলা বিস্মিতাশ্চৈব সমাজগ্মু স্তথা পুনঃ।
আলিলিঙ্গুস্তথা চাস্যা করং ধৃত্বা তথাপরাঃ।।(12)
পরস্পরন্তু সংহর্ষাদগতঞ্চৈব দ্বিজন্মনাম্ ।
এতস্মিন্নেব সময়ে ঋষিবৰ্যাঃ সমাগমন্।। (13)
বিরুদ্ধং বৃত্তকং দৃষ্টা দুঃখিতাঃ ক্রোধমূৰ্চ্ছিতাঃ ।
তদা দুঃখমনুপ্রাপ্তাঃ কোহয়ং কোহয়ং তথাব্রুবন্ ।।(14)
যদা চ নোক্তবান্ কিঞ্চিৎ তদা তে পরমর্ষয়ঃ ।
উচুস্তং পরুষং তে বৈ বিরুদ্ধং ক্রিয়তে ত্বয়া।।(15)
ত্বদীয়ঞ্চৈব লিঙ্গঞ্চ পততাং পৃথিবীতলে।
ইত্যুক্তে তু তদা তৈস্তু লিঙ্গঞ্চ পাতিতং ক্ষণাৎ ।।(16)
তল্লিঙ্গঞ্চাগ্নিবৎ সৰ্ব্বং দদাহ যৎ পুরঃস্থিতম্ ।
যত্র যত্র চ তদ্যাতি তত্র তত্র দহেৎ পুনঃ।।(17)
পাতালে চ গতং তচ্চ স্বর্গে চাপি তথৈব চ।
ভূমৌ সৰ্ব্বত্র তদভ্রান্তং কুত্রাপি তৎ স্থিতং ন হি ।। (18)
লোকাশ্চ ব্যাকুলা জাতা ঋষয়স্তেহপি দুঃখিতাঃ।
ন শর্ম্ম লেভিরে কাপি দেবাশ্চ ঋষয়স্তথা ।। (19)
তে সর্ব্বে চ তদা দেবা ঋষয়ো যে চ দুঃখিতাঃ।
ন জ্ঞাতত্ত্ব শিবো যৈস্তু ব্রহ্মাণং শরণং যযুঃ ।।(20)
তত্র গত্বা তু তৎ সৰ্ব্বং কথিতং ব্রহ্মণে তদা।
ব্ৰহ্মা তদ্বচনং শ্ৰুত্বা প্রোবাচ ঋষিসত্তমান্ ।।(21)
••••ব্রহ্মোবাচ:---
জ্ঞাতারশ্চ ভবন্তো বৈ কুৰ্ব্বন্তি গর্হিতং পুনঃ।
অজ্ঞাতারো যথা কুর্য্যঃ কিং পুনঃ কথ্যতে তদা।।(22)
বিরুধ্যৈবং শিবং দেবাঃ কুশলং কঃ সমীহতে।
গৃহে সমাগতং দূরাতিথিং পরামৃষেৎ ॥ (23)
তস্যৈব সুকৃতং নাত্বা স্বীয়ঞ্চ দুষ্কৃতং পুনঃ।
সংস্থাপ্য চাতিথির্যাতি কিং পুনঃ শিবমেব চ।।(24)
যাবাল্লঙ্গং স্থিরং নৈব জগতাং ত্রিতয়ে শুভম্।
জায়তে ন তদা ক্বাপি সত্যমেতদ্বদাম্যহম্।।(25)
ভবদ্ভিশ্চ তথা কার্য্যং যথা স্বাস্থং ভবেদিহ।
ইত্যুক্তাস্তে প্রণম্যোচুঃ কিং কার্য্যং তৎ সমাদিশ।।(26)
ইত্যুক্তশ্চ তদা ব্রহ্মা তান্ প্রোবাচ তদা স্বয়ম্।
আরাধ্য গিরিজাং দেবীং প্রার্থয়ধ্বং শুভাং তদা।।(27)
যোনিরূপং ভবেচ্চেদ্বৈ তদা তৎ স্থিরতাং ভজেৎ।
তদা প্রসন্নাং তাং দৃষ্টা তদেবং কুরুতে পুনঃ।।(28)
শিবস্য শরণং গত্বা প্রার্থিতঃ শঙ্করস্তদা।
পূজিতঃ পরয়া ভক্ত্যা প্রসন্নঃ শঙ্করস্তদা।।(38)
পার্ব্বতীঞ্চ বিনা নান্যা লিঙ্গং ধারয়িতুং ক্ষমা।
তয়া ধৃতঞ্চ শান্তিঞ্চ গমিষ্যতি ন সংশয়ঃ।।(39)
গৃহীত্বা চৈব ব্রহ্মাণং গিরিজা প্রার্থিতা তদা।
প্রসন্নাং গিরিজাং কৃত্বা বৃষভধ্বজমেব চ।।(40)
পূর্ব্বোক্তঞ্চ বিধিং কৃত্বা স্থাপিতং লিঙ্গমুত্তমম্।
মন্ত্রোক্তেন বিধানেন দেবৈশ্চ ঋষিভিস্তদা।(41)
স্তবনৈঃ পূজনৈর্মন্ত্রৈঃ সন্তোষ্য বৃষভধ্বজম্।
স্থিতাঃ সম্যক্ পরং কৃত্বা সর্ব্বেষাং ধর্ম্মহেতবে।।(42)
শিবোহপি কৃপয়া যুত্তো হ্যব্রবীং পরমং বচঃ।
প্রসন্নং মাঞ্চ জানীত সুখং স্যাৎ সর্ব্বদা নৃণাম্।।(43)
ইত্যুক্তে চ তদা তেন প্রসন্নাঃ সর্ব্বদেবতাঃ।
ঋষয়শ্চ প্রণম্যৈব স্তুতা স্তুতা পুনঃপুনঃ।।(44)
ব্রহ্মণা বিষ্ণুনা চাপি রুদ্রেনৈব পুনস্তথা।
কৃতং সর্ব্বং সুখঞ্চাত্র তৈস্তদা চ দয়ালুভিঃ।।(45)
লোকানাং স্থাপিতে লিঙ্গে। কল্যাণঞ্চাভবৎ তদা।।(46)
বিশেষোহত্র কথং লভ্যেং শ্রূয়তামৃষিসত্তমাঃ।
রুদ্রেণ স্থাপিতং যচ্চ তল্লিঙ্গমিদমেব চ।।(47)
অর্থ_সূতমুনি বললেন,
পূর্বে দেবদারু বনে,ঋষিদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছিলো তা আমি বর্ণনা করছি, মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
দেবদারু বনে,ঋষিরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে বাস করতেন,তাঁরা সবাই শিব ভক্ত ছিলেন।একদিন ঋষিরা,স্ত্রীদের রেখে,জঙ্গলে গেছিলেন কাঠ আদি আনতে।
তখন সেই সময়েই স্বয়ং মহাদেব,বিরূপ ধারণ করে, পরীক্ষা করার জন্য দেবদারু বনে চলে এলেন।অত্যন্ত তেজস্বী,সারা গায়ে ছাই মাখা, ল্যাংটো দেহধারী মহাদেব,তাঁর লিঙ্গ হাতে নিয়ে নানা ধরণের চোখের ইশারা ও ভাবভঙ্গী প্রদর্শন করছিলেন!
তাই দেখে, ঋষিদের স্ত্রীরা প্রথমে অত্যন্ত ভয় পেয়ে যান। এরপর তাঁরা অত্যন্ত কামার্ত হয়ে মহাদেবের কাছে আসেন।ঋষিদের স্ত্রীরা,কেউ মহাদেবকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন, কেউ তাঁর হাত ধরেন, এইভাবে পরম আনন্দে তাঁরা শিবের সাথে মিলিত হলেন।
ঠিক এই সময়ে,ঋষিরা জঙ্গল থেকে চলে আসেন,তাঁরা এই সমস্ত অসভ্যতা দেখে অত্যন্ত দুঃখে আর রাগে অত্যন্ত অধৈর্য হয়ে পড়েন। খুব দুঃখিত হৃদয়ে ঋষিরা বললেন,"এ কে,এ কে !! ?" কিন্তু মহাদেব কোনো উত্তর দিলেন না।
তখন ঋষিরা,সেই ল্যাংটো শিবকে বললেন, "রে দুরাচার !তুই ন্যায়-বিরুদ্ধ ও ধর্ম বিরুদ্ধ কর্ম করছিস!
তোর ওই লিঙ্গ এখনই ছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে যাক!"
এই অভিশাপের ফলে,ওই ল্যাংটো শিবের লিঙ্গ,ছিন্ন হয়ে মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে পড়ে।
তারপর,শিবের সেই ছিন্ন লিঙ্গটি আগুনের মতো জ্বলতে শুরু করে।ওই জ্বলন্ত লিঙ্গ,তার গতিপথের সমস্ত স্থান জ্বালাতে জ্বালাতে স্বর্গ,মর্ত্য,পাতালে দৌড়াতে শুরু করে।কোনো ভাবেই সেই লিঙ্গ শান্ত হতে চাইছিলো না।
এই জগৎ সংসার,যখন ভয়ে ব্যাকুল হয়ে যায় তখন দুঃখী হয়ে দেবতাদের সাথে ঋষিরা, ব্রহ্মার কাছে যান পরামর্শ করার জন্য।
ব্রহ্মাকে, প্রণাম করে তাঁরা সমস্ত ঘটনা বলেন।তাঁদের কথা শুনে ব্রহ্মা বলেন, মহাদেবের মতো, অতিথির সৎকার না করে,তোমরা খুব ভুল করে ফেলেছো। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই লিঙ্গ স্থাপিত হচ্ছে ততক্ষণ ত্রিলোকে শান্তি স্থাপিত হবে না।তারপর ব্রহ্মা,লিঙ্গ কে স্থাপিত করার উপায় বের করলেন।তখন ব্রহ্মা বললেন হে দেবতাগণ! তোমরা পার্বতী কে প্রসন্ন করে শিবের প্রার্থনা করো , যদি পার্বতী যোনীরূপ ধারণ করে তাহলেই একমাত্র এই লিঙ্গ স্থির হবে।
••(5 থেকে 28 নং শ্লোক।)••
এই কথা শুনে ঋষি ও দেবতারা ব্রহ্মাকে প্রণাম করে,সারা বিশ্ব সংসারের সুখের যিনি কারণ,সেই শিবের শরণ গ্ৰহণ করেন।
তখন পরম ভক্তি ও প্রার্থনার দ্বারা পূজিত মহাদেব,প্রসন্ন হয়ে বললেন - হে দেবতাগণ! হে ঋষিগণ!তোমরা আমার কথা শোন!যদি আমার এই লিঙ্গ যোনিতে স্থাপিত হয় তাহলেই একমাত্র ত্রিলোকে সুখ হতে পারে।পার্বতী ছাড়া আর কোনো স্ত্রী, আমার এই লিঙ্গকে ধারণ করতে পারবে না।পার্বতীর যোনীতে যদি আমার লিঙ্গ ধারণ করানো হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি,সবাই শান্তি প্রাপ্ত হবেন।
এই কথা শুনে, ঋষি ও দেবতাগণ প্রসন্ন হয়ে ব্রহ্মাকে সাথে নিয়ে পার্বতীর প্রার্থনা শুরু করলেন।পার্বতীকে প্রসন্ন করে,মহাদেবকেও প্রসন্ন করলেন তারপর সেই লিঙ্গ, যোনীতে স্থাপিত হলো।
তখন থেকেই এই জগতে শিবের লিঙ্গ ও তার সাথে ,পার্বতীর যোনী পূজার প্রচলন হয়।
(38-47 নং শ্লোক।)
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ