বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/১৮ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

25 November, 2021

বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/১৮

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিজিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রুষিতাং বাচ্য ভাষিতা জায়েত সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাষৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।।
(বৃহঃ উপঃ ৬।৪।১৮)
.
শব্দার্থঃ (অথ যঃ ইচ্ছেত্ পুত্রঃ মে) এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র (পন্ডিতঃ) বিদ্বান (বিজিগীথঃ) প্রসিদ্ধ (সমিতিয় গমঃ) সভায় গমন যোগ্য (শুশ্রুষিতাম বাচম্ ভাষিতা) আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী (জায়েত) হবে (সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বম্ আয়ু ইয়াত্ ইতি) সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো (মাষৌদনম্) [পাঠভেদ - মাংসৌদম্] মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল (পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তম্ অশ্নীয়াতাম্ ইশ্বরী জনয়িতবৈঃ) পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো (অপেক্ষেত পুত্র) পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে (ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা।
.
সরলার্থঃ এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র বিদ্বান প্রসিদ্ধ সভায় গমন যোগ্য আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা।
.
তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ। এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ।

বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬।৪।১৮ কন্ডিকা নিয়ে একটা শঙ্কা আমাদের সামনে প্রায়শই উঠে। শঙ্কটা এরূপ যে, বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে। প্রায় সব অনুবাদক এমনটাই অনুবাদ করেছে। অর্থাৎ ইহা দ্বারা সনাতন ধর্মে গোমাংস খাওয়ার বিধান সিদ্ধ এমনটা দাবী করে অপপ্রচারকারীরা। মূলত আমাদের ধর্মের মূল স্রোত হলো বেদ। বেদের জ্ঞান দ্বারাই পরবর্তিতে অনেক শাস্ত্র রচিত হয়েছে। সেই বেদে আমরা গোহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাই। গো হত্যা সমন্ধ্যে বেদ বলছে যে, "মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট" (ঋগবেদ ৮।১০১।১৫) অর্থাৎনিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না। শুধু তাই নয় গোহত্যাকারীকে দন্ডের বিধান দিয়ে বেদ বলছে যে -যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব। (অথর্ববেদ ১।১৬।৪)।

নিবর্তেত সর্বমাংসস্য ভক্ষণাৎ (মনুস্মৃতি-৫/৪৯)

অর্থাৎ সর্বপ্রকার মাংস ভক্ষণ থেকে দূরে থাকো [কোন প্রকার মাংস'ই ভক্ষণ করিবে না]।
আরও বলা হয়েছে যে -
অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।
সংস্কর্ত্তা চোপহর্ত্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।। (মনুস্মৃতি- ৫/৫১)
পদার্থঃ- (অনুমন্তা) বধ করার আজ্ঞাকারী (বিশসিতা) মাংস কর্তনকারী (নিহন্তা) পশু বধকারী (ক্রয়-বিক্রয়ী) মাংসের ক্রয়-বিক্রয়কারী (সংস্কর্ত্তা) রন্ধনকারী (চোপহর্ত্তা) পরিবেশনকারী (চ) এবং (খাদকশ্চেতি) ভোজনকারী (ঘাতকাঃ) ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী।
অনুবাদঃ- পশু বধ করার জন্য যিনি আজ্ঞা করেন, যিনি মাংস কর্তন করেন, যিনি পশু বধ তথা হত্যা করেন, যিনি মাংস ক্রয় করেন এবং যিনি বিক্রয় করেন, যিনি মাংস রন্ধন করেন, যিনি মাংস পরিবেশন করেন এবং যিনি ভোজন করেন, তাহারা ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী।

সনাতন ধর্মে গোমাংস ভক্ষণ শাস্ত্রীয়ভাবে ও নীতিগতভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বেদ ও বৈদিক শাস্ত্রসহ  বিভিন্ন পুরাণাদি শাস্ত্রেরও বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট গোহত্যা নিষেধ করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের প্রতিটি শাস্ত্রে গোহত্যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, উপরন্তু গোরক্ষা করতে বলা হয়েছে বারবার। নবজাত মানব শিশু যেমন মায়ের দুগ্ধ পান করে তার জীবন রক্ষা করে, তেমন বিকল্প হিসেবে সে চাহিদা পূরণ করে গোমাতা। জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি গোমাতা আমাদেরকে নিরবিচ্ছিন্ন অমৃতরূপ দুগ্ধ দান করে থাকেন জাতিধর্মনির্বিশেষে। 

বেদ বলা হয়েছে, 

[ঋষি- জমদগ্নি ভার্গব, দেবতা- গৌঃ] 

"মাতা রুদ্রাণাং দুহিতা বসূনাং স্বসাদিত্যানামমৃতস্য নাভিঃ ৷

প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগামমদিতিং মা বধিষ্ট ৷৷"

(ঋঃ সঃ ৮৷১০১৷১৫)

এই গাভী (রুদ্রাণাং মাতা) রুদ্রগণের মাতা, (বসূনাং দুহিতা) বসুগণের দুহিতা, (আদিত্যানাং স্বসা) আদিত্যগণের ভগিনী, (অমৃতস্য নাভিঃ) অমৃতস্বরূপ দুগ্ধের আবাসস্থান ৷ তাই, আমি (চিকিতুষে জনায় নু প্রবোচং) বিবেকবান মনুষ্যের প্রতি এই উপদেশ দেই যে, (অনাগাং) নিরপরাধ (অদিতিং) অসীম গুণে সমৃদ্ধ গো দেবীকে (মা বধিষ্ট) বধ করো না ৷

অর্থাৎ গাভী হলো রুদ্রগণের মাতা, বসুগণের পুত্রী, আদিত্যগণের বোন। এই গাভীতে সকল দেবতা নিবাস করেন। গাভীর মধ্যে দুগ্ধ রূপী অমৃত রয়েছে৷ অতএব, গাভী সর্বপ্রকারে পূজ্য। এই কারণে এটি বধের যোগ্য নয়৷ যে প্রাণিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে অধিক সরল এই গাভীকে হত্যা করে, সে পাপ করে৷ গোজাতীকে সর্বপ্রকারে রক্ষা করা উচিত।

গোহত্যা শাস্তিযোগ্যঃ 

 ঋগ্বেদের ১০/৮৭/১৬ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে,

“যে হত্যা করার অযোগ্য গাভীকে হত্যা করে; হে অগ্নি, নিজ বলে তাদের মস্তক ছেদন করে দাও।”

সম্প্রতি কিছু কান্ড জ্ঞানহীন পাখন্ডি বৈদিক শাস্ত্রের কিছু মন্ত্রের বিকৃত অনুবাদ দিয়ে সনাতন সমাজে গোহত্যা সিদ্ধ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। এই লিখায় আমরা বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/১৮ শ্লোক নিয়ে অপপ্রচারের খন্ডন উপস্থাপন করবো। 

দুইটি অংশে আমরা এর খন্ডন উপস্থাপন করবো। 

১ম অংশঃ মূল সংস্কৃত মন্ত্র থেকে সঠিক অনুবাদ ও তার সপেক্ষে যুক্তি।

২য় অংশঃ মন্ত্রের সঠিক অনুবাদ দাবীর পেছনে সম্পূরক যুক্তি উপস্থাপন ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র হতে তুলনামূলক প্রমাণ।


১ম অংশঃ

বৃহদারণ্যকোপনিষদ্ প্রধান উপনিষদসমূহের মধ্যে অন্যতম। বৃহদারণ্যকোপনিষদের ষষ্ঠ অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাহ্মণের অষ্টাদশ কাণ্ডিকার (৬/৪/১৮) অনুবাদ নিয়ে অনেকের মাঝে শঙ্কা উপস্থিত হয়। শঙ্কা উপস্থিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ বিভিন্ন ভাষ্যকার উক্ত কাণ্ডিকার ভাষ্য ও অনুবাদ করতে গিয়ে মন্ত্রের প্রকরণ ও বৈদিক অভিধান নিরুক্ত অনুযায়ী অর্থ না করে লৌকিক সংস্কৃতানুযায়ী অর্থ ও বৈখারি বাকে ভাষ্য করাতে উপরের মন্ত্রে শঙ্কা উদ্ভব হয়। 




👉মূল সংস্কৃত :

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পণ্ডিতো বিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রূষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বান্ বেদাননুব্রুবীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাংসৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবৈ ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।। (বৃহদারণ্যকোপনিষদ- ৬/৪/১৮)
পদার্থঃ- (অথ যঃ ইচ্ছেত্ ) আর- যে এই ইচ্ছা করে যে ; (পুত্রঃ মে) আমার পুত্র ; (পণ্ডিতঃ) পণ্ডিত [বিদ্যা-বুদ্ধি সম্পন্ন, চতুর] ; (বিগীতঃ) প্রশংসিত, প্রখ্যাত, যশস্বী ; (সমিতিম গমঃ) সভায় গমনকারী [সভা কার্য্যে কুশল] ; (শুশ্রূষিতাম) শ্রবণ যোগ্য, যাহার সব শ্রবণ করার মতো এমন ; (বাচম্) বাণীর ; (ভাষিতা) ভাষন প্রদানকারী [অপূর্ব রমণীয় বচনের বক্তা] ; (জায়েত) উৎপন্ন হোক ; (সর্বান্) সর্ব [চার] ; (বেদান্ অনুব্রুবীত) বেদের ব্যাখাতা [জ্ঞাতা] হোক ; (সর্বম্ আয়ুঃ ইয়াত্) পূর্ণ আয়ু প্রাপ্তকারী হোক; (ইতি) এমন [চায়, তাহারা] ; (মাংস+ঔদনম্) ঔষদের সার [কোমল ভাগ] এবং চাউল কে, [এইস্থানে উচিৎ পাঠ ভেদে] (মাষ+ঔদনম্) মাষকলাইয়ের সহিত চাউলকে ; (পাচয়িত্বা) রন্ধন করে ; (সর্পিষ্মন্তম্) ঘী মিশ্রিত করে ; (অশ্নীয়াতাম্) [পতি-পত্নী উভয়ে] আহার করে ; (ঈশ্বরৌ জনয়িতবৈ) [তারা এমন পুত্র] উৎপন্ন করতে সমর্থ হয় ; (ঔক্ষেণ বা) [সেই সার ভাগ] বা 'উক্ষা' [জীবক] নামক ঔষধির হোক; (আর্ষভেণ বা) বা 'ঋষভ'-নামক ঔষধিরই হোক।
সরলার্থঃ- আর- যে এই ইচ্ছা করে যে, আমার পুত্র পণ্ডিত [বিদ্যা-বুদ্ধি সম্পন্ন, চতুর] ; প্রশংসিত, প্রখ্যাত, যশস্বী, সভায় গমনকারী ; শ্রবণ যোগ্য, যাহার সব শ্রবণ করার মতো এমন বাণীর ভাষন প্রদানকারী [অপূর্ব রমণীয় বচনের বক্তা] ; উৎপন্ন হোক, সর্ব - ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ এই চার বেদের ব্যাখাতা [জ্ঞাতা] হোক ; পূর্ণ আয়ু প্রাপ্তকারী হোক, এমন চায়, তাহারা ; মাষকলাইয়ের সহিত চাউলকে রন্ধন করে ; ইহার সহিত ঘী মিশ্রিত করে ; [পতি-পত্নী উভয়ে] আহার করে ; তারা এমন পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হয় ; ঔক্ষেণ বা 'উক্ষা' [জীবক] নামক ঔষধির হোক বা 'ঋষভ'-নামক ঔষধিরই হোক।
ভাষ্যকার :"অখিল-ভারতীয়-মঙ্গলাপ্রসাদ-পারিতৌষিক-বিজেতা (ভূতপূর্ব) সংসদ-সদস্য তথা গুরুকুল কাংড়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকুলপতি - বিদ্যামার্তণ্ড ডা: সত্যব্রত সিদ্ধান্তলঙ্কার"।

🗙 শঙ্কাযুক্ত অনুবাদ : যদি কেউ ইচ্ছা করে  তার এমন পুত্র হোক যে পণ্ডিত, প্রখ্যাত ও সভায় বিচার করতে সমর্থ হবে, প্রিয়ভাষী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা হবে ও পূর্ণায়ু প্রাপ্ত হবে, তাহলে তারা উভয়ে ঘৃতসংযোগে মাংসমিশ্রিত অন্ন রেঁধে ভোজন করবে। এই মাংস তরুণ বলশালী বা অধিক বয়স্ক বৃষের হলে তারা সেরকম সন্তান উৎপন্ন করতে পারবে।

নিম্নে অন্বয় এবং ব্যাখ্যাসহ শঙ্কাটি সমাধান করা হল।

📌অন্বয়:- অথ যঃ ইচ্ছেৎ (যদি কেউ ইচ্ছা করে), পুত্রঃ মে বিগীতঃ (বিশেষরূপে গীত, বিখ্যাত), সমিতিম্+গমঃ (সভায় গিয়ে বিচার করতে সমর্থ), শুশ্রূষিতাম্ বাচম্ (রমণীয় বাক্য), ভাষিতা (বক্তা), জায়েত( উৎপন্ন হবে), সর্ব্বান্ বেদান্ অনুব্রুবীত (সকল বেদের ব্যাখ্যাতা, জ্ঞাতা হবে), সর্ব্বম্ আয়ুঃ ইয়াৎ ইতি( পূর্ণ আয়ুঃ প্রাপ্ত হোক), মাংস* (কোমল অংশ), ঔদনম্(অন্নের সহিত), পাচয়িত্বা (পাক করে) সর্পিষ্মন্তম্(ঘৃতের সাথে যুক্ত করে), অশ্নীয়তাম্ 

(পতি-পত্নী ভোজন করবে),  ঈশ্বরো জনয়িতবা (এরকম পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ), ঔক্ষেণ* বা (উক্ষা নামক ঔষধির নরম অংশ), আর্ষভেণ* বা (ঋষভ নামক ঔষধির নরম অংশ)। 


📌শঙ্কা নিবারণ: উক্ত কণ্ডিকাটি গর্ভাধান সম্পর্কিত। উপরের অন্বয়ে তারকাচিহ্নিত শব্দত্রয় তথা মাংস, উক্ষা এবং ঋষভ শব্দত্রয়ের লৌকিক সংস্কৃত অনুযায়ী অনুবাদ করাতে উপরের কণ্ডিকায় শঙ্কার উদ্ভব হয়। কিন্তু বৈদিক শব্দসমূহ অনুবাদের ক্ষেত্রে বৈদিক অভিধান 'নিরুক্ত' অনুযায়ী হওয়া অাবশ্যক।


যদি বৃষ মাংসকে অন্নের সাথে ভক্ষণের ফলে সর্ববেদপারঙ্গম সন্তান উৎপন্ন হত তাহলে পৃথিবীর সকল গোমাংসভোজী ম্লেচ্ছ জাতিই সর্ববেদপারদর্শী হত এবং মোক্ষলাভের পথে অগ্রসর হতো। ভারতবর্ষের বাইরেও  শতশত বেদজ্ঞ তৈরী হত। বাস্তবে কি কোন মুসলিম বা খ্রিস্টান কখনো বেদজ্ঞ হতে পেরেছে? না পারেনি। কারণ গোমাংসভোজনের কারণে কেউ বেদপারদর্শী হওয়া তো দূরে থাক, বেদ পড়ারও যোগ্য হয় না। 

যেহেতু অধ্যায়টি গর্ভাধান সংক্রান্ত এবং আয়ুর্বেদের সাথে জড়িত, তাই শব্দগুলোর অর্থ নিরূপণ করতে হলে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের জ্ঞান ও মন্ত্র প্রকরণের ধারণা  থাকা আবশ্যক। যেসকল ওষধি সুপ্রজননে সাহায্য করত সেসকল উদ্ভিদের বর্ণনা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রয়েছে।

আমরা এখন নিরুক্ত এবং অায়ুর্বেদিক গ্রন্থের সাহায্যে উক্ত শব্দগুলো বিশ্লেষণ করব।

📌মাংস: যদি মাংস শব্দ বিবেচনা করা হয় তাহলে মাংস শব্দের অর্থ যে শুধুমাত্র পশুর মাংস হবে তা কিন্তু নয়। কেননা বৈদিক অভিধান নিরুক্ত অনুযায়ী মাংস শব্দ ভিন্ন অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। নিরুক্ত ৪/৩ এ বলা হয়েছে- " মাংসং মাননং বা মানসং বা  মনোঽস্মিন্ত্সীদতীতি বা।" অর্থাৎ যা মানের যোগ্য  কিংবা যা দ্বারা মনের রুচি বৃদ্ধি পায়। মাংস দিয়ে শুধু পশুর মাংস(meat) বুঝাবে তা নয়, মাংস দিয়ে ফলের নরম অংশ তথা শাঁসকে (flesh)ও বুঝানো হয়। 


📌উক্ষা: উক্ষা শব্দ দিয়ে বিভিন্ন অনুবাদক বৃষ অনুবাদ করেছেন। কিন্তু অনুবাদটি বৈদিক অভিধান সম্মত নয়। বৈদিক অভিধান নিরুক্তে উক্ষ শব্দের অর্থ করা হয়েছে- উক্ষণ উক্ষতের্বৃদ্ধিকর্মণঃ (নিরুক্ত ১২/৯) অর্থাৎ যা বৃদ্ধি করতে সমর্থ এমন বস্তুকে বোঝায়। যেহেতু উক্ত কাণ্ডিকা গর্ভাধান সম্পর্কিত, তাই এখানে ”উক্ষা” শব্দ দ্বারা বীর্য্যবর্ধক ঔষধিকে বুঝানো হয়েছে।


📌ঋষভ: 'ঋষভ' শব্দ দেখে শঙ্কা উৎপন্ন হওয়ার কারণ হল 'ঋষভ' শব্দের অনুবাদ অনেকে বৃষ বা ষাঁড় করেছেন যা আদৌ সঠিক নয়। কারণ 'ঋষভ' শব্দ দিয়ে বৃষ বা ষাঁড় বোঝানো হয়নি। উপরের কণ্ডিকাটি হল প্রজনন বিষয়ক। প্রজননের সহায়ক হেতু বিভিন্ন গুল্ম, বীরুৎ ইত্যাদি ঔষধি হিসাবে ব্যবহৃত হত। ঠিক তেমনি 'ঋষভ' হল সেধরনের শুক্রবর্ধক ঔষধি গাছের নাম যা আমরা প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে সন্ধান পাই। 


চরক সংহিতার সূত্রস্থানের চতুর্থ অধ্যায়ের চতুর্থ চতুষ্কঃ কষায়বর্গে বলা হয়েছে -


চড়ক সং হিতা ১২৩ -১২৫ শ্লোক 



জীবক, ঋষভক, কাকোলী, ক্ষীরকাকোলী, মুগানী, মাষানী, মেদ, বৃক্ষরুহা, জটামাংসী এবং কাঁকড়াশৃঙ্গী - এই দশটি শুক্রজনক।


এছাড়া, ভাবপ্রকাশ নির্ঘন্টু নামক আয়ুর্বেদিক গ্রন্থের ১২৩, ১২৪, ১২৫ শ্লোকে ”ঋষভ” নিয়ে বিস্তারিত বলা আছে-

আদিগুরু শংকরাচার্য ভাষ্য 



শ্রী রাম শর্মা অনুবাদকৃত


জীবকর্ষভকৌ জ্ঞেয়ৌ হিমাদ্রিশিখরোদ্ভবৌ। রসোনকন্দবৎকন্দৌ নিস্সারৌ সূক্ষ্মপত্রকৌ।। ১২৩

জীবকঃ কূর্চিকাকারঃ ঋষভো বৃষশৃঙ্গবৎ। জীবকো মধুরঃ শৃঙ্গী হ্রস্বাংগো কূর্চশীর্ষকঃ।।১২৪

ঋষভো বৃষভো ধীরো বিষাণীদ্রাক্ষ ইত্যপি। জীবকর্ষভকৌ বল্যৌ শীতৌ শুক্রকফপ্রদৌ।।১২৫


এখানে উক্ত শ্লোকগুলোতে বলা হয়েছে ঋষভ নামক ঔষধি উদ্ভিদ হিমালয়ের শিখরে জন্মে এবং ঋষভ দেখতে বৃষের শৃঙ্গের মত। ঋষভ নামক ঔষধি উদ্ভিদটি শুক্রবর্ধক। 


অর্থাৎ ঋষভ হল শুক্রবর্ধক ঔষধি উদ্ভিদ যা হিমালয়ের শিখরে জন্মায় এবং দেখতে বৃষের শিংয়ের মত এবং শুক্রবর্ধক। সেজন্যই বা হয়ত অনেকে একে বৃষ ভেবে ভুল করেছেন। যেহেতু উপরের কণ্ডিকাটি পুত্রোৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট তাই সেখানে শুক্রবর্ধক ঋষভের নরম অংশ (মাংসল অংশ মানে সবসময় প্রণির মাংস নয়) মিশিয়ে খাবার কথা বলা হয়েছে, কোন ষাঁড়ের মাংস নয়।


অতএব, উক্ত আলোচনায় স্পষ্ট বুঝা যায়, এই কাণ্ডিকায় কোন বৃষমাংস নয়, বরং শুক্রবর্ধক ঔষধির কথা বলা হয়েছে। 


বৈদিক গ্রন্থানুসারে উক্ত কণ্ডিকাটির সঠিক অনুবাদ নিম্নে দেয়া হল,


অনুবাদ(১): যদি কেউ চায় যে তার এমন পুত্র হোক যে পণ্ডিত, প্রখ্যাত ও সভায় বিচার সমর্থ হবে, প্রিয়ভাষী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা হবে ও পূর্ণায়ু প্রাপ্ত হবে, তাহলে সেই দম্পতি উক্ষা ও ঋষভ নামক ওষধির নরম অংশের সাথে অন্নপাক করে ঘৃত সংযোগে ভক্ষণ করবে। তবে তারা উক্তগুণসম্পন্ন পুত্র উৎপাদনে সমর্থ হবে।


অনুবাদকঃ শ্রীরাম শর্ম্মা (গায়ত্রী পরিবার)। 


অনুবাদ(২): যিনি ইচ্ছা করেন যে তার পুত্র প্রখ্যাত পণ্ডিত, বিদ্বানদের সভায় নির্ভয়ে প্রবেশ করার যোগ্য এবং শ্রবণসুখকর বাণী প্রদানকারী হবে, সম্পূর্ণ বেদের স্বাধ্যায় করবে এবং শতবর্ষ জীবিত থাকবে, তাহলে তিনি পত্নীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ওষধির নরম অংশ(শাঁস) ও চাল রান্না করে ঘৃত মিশ্রিত করে ভক্ষণ করবে। এতে উক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন পুত্র জন্মদানে সমর্থ হবে। সে শাঁস উক্ষা কিংবা ঋষভ নামক ওষধির হতে হবে।


অনুবাদকঃ শ্রী ঘনশ্যামদাস জালান প্রকাশিত গীতাপ্রেস কর্তৃক শঙ্করভাষ্য অনুবাদ।


২য় অংশঃ 


সুশ্রুত সংহিতায় ঋষভঃ 

মহর্ষি সুশ্রুত রচিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনন্য সৃষ্টি সুশ্রুত সংহিতায়ও "ঋষভ" অর্থ ঔষধি করা হয়েছে। 

সুশ্রুত সংহিতার ১ খন্ডের তথা সূত্রস্থানের ৩৮তম অধ্যায়ে (দ্রব্যসংগ্রহোধ্যায়) বিভিন্ন প্রকার ওষধি হিসেবে ঋষভক-এর নামও আছে।  




Ayurveda is the science of eternal life. It is an important part of our prosperous and glorious history. Astavarga is a name of a group of eight vitality promoting and anti-aging medicinal plants (Jivaka, Rishabhaka, Meda, Mahameda, Kakoli, Ksirkakoli, Riddhi and Vriddhi) mentioned in Ayurveda. It is an important ingredient of “Cyavanaprasa". 

এই অষ্টবর্গের মধ্যে ঋষভ একটি গুরুত্বপূর্ণ ওষধি উপাদান যা যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং বীর্যকে পুষ্ট করে। 

এখানে ঋষভ শব্দ পেয়েছি এবং যেহেতু ঋষভ শব্দের একটা অর্থ গরু তাই প্রাসঙ্গিকতা বিচার না করেই কিছু বৈখারি অনুবাদক অর্থ বদলে গোমাংস ঢুকিয়ে দিলো। গোমাংস কি যৌনবর্ধক? অন্যদিকে অষ্টবর্গ তথা ঋষব তথা Malaxis Muciefera এসব আয়ুর্বেদিক বিরুৎ, গুল্ম বৈজ্ঞাণিকভাবেই যৌনবর্ধক। 




শব্দের অর্থগত তারতম্য নিয়ে আরেকটা উদাহরণ দেই। 

★ বৃষাকপিঃ

ঋগবেদে বৃষাকপি লেখা আছে। এর অর্থ অনেকেই ষাড় তথা গরু করে ফেলে। বৃষা মানে হল মুষিকপর্ণী তথা ইদুরের কানের মত দেখতে পাতাবিশেষ যা কপি মানে কম্পিত থাকা  অর্থাৎ এই ঔষধ খেলে শরীরের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও বীর্যবৃদ্ধি করে কম্পিনশাল মানে গতিবৃদ্ধি করে ৷

কপিকচ্ছু বা বৃষাকপি একই অর্থ সমপর্যায় ৷

कापीकाचू

शुक्राणुओं की संख्या और इसकी गतिशीलता में सुधार करने में मदद करता है। यह सेलुलर ऑक्सीडेटिव तनाव को रोकने, शुक्राणु उत्पादन को बढ़ावा देने और स्वस्थ वीर्य संतुलन बनाए रख कर वीर्य की गुणवत्ता में सुधार करता है।




Cowage লিখে গুগল করলেই চলে আসবে সেই ঔষধি (বৃষাকপি/কপিগুচ্ছ) গাছের ডিটেইলস।  এখন কেউ "কাউ" লিখে দেখেই যদি এখানে গোমাংস নিয়ে আসে তবে বলতে হবে তার সংস্কৃতজ্ঞান শূণ্যের কোঠায়।। 

আবার বৃষা শব্দের অর্থ হল বর্ষতীতি বৃষা ৷ যিনি বর্ষাপ্রদান করেন তিনি বৃষা। এখানেও বৃষা শব্দের অর্থ গরু নয়।

এখানে আরেকটি বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে যে মন্ত্রে (বৃহদারণ্যক ৬/৪/১৮) হরফসহ অন্যান্য বস্তাপঁচা বাংলা অনুবাদে গোমাংসের প্রসঙ্গ ইচ্ছেকৃতভাবে ও অজ্ঞতাবশত ঢুকানো হয়েছে তারাই পূর্ববর্তী মন্ত্রসমুহেই ভিন্ন অনুবাদ করেছে। তারা ইচ্ছেকৃতভাবে অথবা অজ্ঞতাবশত ১৮ নং মন্ত্রে এসে মন্ত্রসমূহের মূলধারা থেকে সড়ে গেছে।

"যদি কেহ চায়-আমার গৌরবর্ণ পুত্র হউক, এক বেদ অধ্যয়ন করুক এবং পূর্ণায়ু লাভ করুক –তবে তাহারা দুইজন (স্বামী-স্ত্রী) পায়েস রাঁধিয়া তাহাতে ঘী দিয়া খাইবে ।( তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম সন্তান উৎপাদন পারিবে)"১৪

"যদি কেহ চায় আমার পিংগল চক্ষুযুক্ত ও কপিলবর্ণ সন্তান হউক,সে দুই বেদ অধ্যয়ন করুকএবং পূর্ণায়ু লাভ করুক তবে তাহারা ( স্বামী-স্ত্রী) দুই জন দধি দিয়া চরু রাঁধিয়া তাহাতে ঘি মিশাইয়া খাইবে। (তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম সন্তান) উৎপাদন করিতে পারিবে।"১৫

"যদি কেহ চায় আমার রক্তচক্ষু ও শ্যামবর্ণ পুত্র হউক সে তিন বেদ অধ্যয়ন করুক এবং পূর্ণায়ু লাভ করুক তবে তাহারা (স্বামী-স্ত্রী ) দুইজন জলে  সিদ্ধ অন্ন ঘি মিশাইয়া খাইবে। (তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম সস্তান) উৎপাদন করিতে পারিবে।"১৬

"যদি কেহ চায়-আমার বিদুষী কন্যা জন্মলাভ করুক এবং সে পুর্ণায়ু হউক – তবে তাহারা (স্বামী-স্ত্রী) দুই জন তিলমিশ্রিত অন্ন রন্ধন করিয়া তাহাতে ঘি মিশাইয়া খাইবে। ( তাহা হইলে তাহারা ঐরকম কন্যা) উৎপাদন করিতে পারিবে ।"১৭

স্বাভাবিকভাবেই ১৮ নং মন্ত্রে কোন ভেষজ ওষুধিই আসবে এবং সেক্ষেত্রে ঋষভ অর্থ হবে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে উল্লেখিত অষ্টবর্গের অন্যতম উপাদান ঋষভ। আধুনিক বিজ্ঞানেও যৌন উদ্দীপক হিসেবে অষ্টবর্গের গ্রহণযোগ্যতা সিদ্ধ।


* নিকৃষ্ট বাংলা অনুবাদে বলা হচ্ছে তরুণ বৃষ এবং বৃদ্ধ বৃষ। এটা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও স্ববিরোধী বক্তব্যের অবতারণা। এই ত্রুটিটুকুও অনুবাদটির গ্রহণযোগ্যতাকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করে।


সংস্কৃত শব্দের বিবিধার্থ হয় তাই বেদ, উপনিষদের মন্ত্রের অর্থ বিশ্লেষণ করতে হলে সমস্ত মান্য শাস্ত্রের সমন্বয়ে মন্ত্রের মূল অর্থ নিরূপণ করতে হয়। সংস্কৃত ভাষা শিখলাম আর মন্ত্র নিয়ে অনুবাদ করতে বসে গেলাম । তারপর "about 15 km to go" কে "১৫ কিমি সম্পর্ক যেতে হবে" বানিয়ে দিলে সেটা অর্থ নয় অনর্থ হবে।

"মাংস শব্দের অর্থ"
১. মাংস = (ক). উত্তম অন্ন (খ).উত্তম রস (গ). সাদন (ঘ). রসালো পদার্থ, (ঙ). মাংস (চ).পুরীষ (ছ).শুদ্ধ..........ইত্যাদি ইত্যাদি।(বৈদিক কোষ [চন্দ্রশেখর উপাধ্যায় এবং শ্রী অনিল কুমার উপাধ্যায় I.A.S])
২. মাংসম্=ফলের মূল অংশ (অথর্ববেদ-৬/৭০/১.[
পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার] )
৩.(মাংসম্ মাননং বা মানসং বা মনঃ অস্মিন সীদতী ইতি [নিরুক্ত-৪/৩]) অর্থাদি যা মাননীয় , চিন্তনীয়......।
৪.মাংসম্ = মনন চিন্তন আদি কার্য্যে উপযোগী ফল.. আদি পদার্থ। (অথর্ববেদ-৯/৬/৯ - আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক)
৫.মাংসম্ = মন্যতে জ্ঞায়তেऽনেন তত্ মাংসম্ (উণাদিকোষ-৩/৬৪)
৬.মাংসম্ = জ্ঞান (অথর্ববেদ-৬/৭০/১ [ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী])
৭.মাংসম্ = দুধ হইতে উৎপন্ন ক্ষীর, দধি, মালাই, ঘি... ইত্যাদি পদার্থ। (অথর্ববেদ-৯/৬/৯ [পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কার])
৮. " (মাংসৌদনম্) ঔষধি অথবা ফলের মূল অংশ"
(গীতাপ্রেস থেকে প্রকাশিত বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/৪/১৮ [শঙ্করাচার্য])
৯. মাংসম্ পুরীষম্ = পুরীষই মাংস (শ০ ব্রা০-৮/৭/৪/১৬) পুরীষ কি? উ: পুরীষম্ = পূর্ণ বল (যজুর্বেদ-১২/৪৬ [ঋষি দয়ানন্দ])
১০. মাংসম্ = উত্তম অন্ন (অথর্ববেদ-৬/৭০/১ [পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কার])
"ঔক্ষেণ বা আর্ষভেন শব্দের অর্থ"
১.পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্মাজী লিখেছেন - (ঔক্ষেণ+বা+আর্ষভেন+বা) ঔক্ষ বিধি বা ঋষভ বিধি {ঔষধি} [বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/৪/১৮]
২. ঔক্ষেণ বা আর্ষভেন = উক্ষা বা ঋষভ নামক ঔষধির নরম অংশ। (গীতাপ্রেস থেকে প্রকাশিত বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/৪/১৮ [শঙ্করাচার্য])
৩.প্রোফেসর রাজারাম -(ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ দ্বারা অথবা ঋষভ দ্বারা। [বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/৪/১৮]
৪.শ্রী মহাত্মা নারায়ণ স্বামী জী মহারাজ লিখেছেন- ঔক্ষ দ্বারা বা ঋষভ বিধি দ্বারা।( অর্থাৎ ঔক্ষ বা ঋষভ বিধিতে ঔষধ তৈরি করে আহার করতে বলা হয়েছে।) তিনি এ নিয়ে ব্যখাও দিয়েছেন যেমন-
(ক)ঔক্ষ :- ঔক্ষ শব্দ উক্ষ সেচনে ধাতু হতে এসেছে। উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধিসমূহ উল্লেখিত শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয়। কোন মিশ্রিত ঔষধি, পাক আদি দ্বারা তৈরি করতে কোন কোন ঔষধি কতটুকু দেওয়া উচিত এমন বিধি উল্লেখিত শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয়। অভিপ্রায় এই যে উপযুক্ত তিলৌদনম্, [মাষৌদনম্] তৈরি করতে ঔক্ষ শাস্ত্রকে লক্ষ্য করা উচিত্।...
(খ)আর্ষভ :- আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষণ। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক একার্থক শব্দ। আর্ষভ অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের তৈরি করা বিধি শাস্ত্র।......... [বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/৪/১৮]
৫.শ্রীরাম শর্মা আচার্য - উক্ষা বা ঋষভ = উক্ষা বা ঋষভ নামক ঔষধি [বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/৪/১৮]
৬.পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী - (ঋষভাণাম্, ঔষধীনাম্) শ্রেষ্ঠ ঔষধি। (অথর্ববেদ-৪/৪/৪)
৭.পণ্ডিত হরিশরন সিদ্ধান্তলঙ্কার - (ঋষভাণাম্) শক্তিসেচন্-সমর্থ ঔষধি।(অথর্ববেদ-৪/৪/৪)
৮.চিকিৎসা শাস্ত্র, ভাবপ্রকাশ নিঘণ্টু ১২৩+... - (জীবকর্ষভকৌ) জীবক এবং ঋষভক ঔষধি।
৯.নিরুক্ত ১২/৯ (উক্ষণঃ) বৃদ্ধিকারক উক্ষ।
১০. উণাদিকোষ ১/১৫৯ (উক্ষা) উক্ষতি সিঞ্চনীতি উক্ষা বলিবর্দো বা।
১১. পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী- (ঔক্ষঃ)..ঔষধ। (অথর্ববেদ-২/৩৬/৭)
১২. স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক - ঋষভাঃ = ঋষভক ঔষধি (অথর্ববেদ-৩/২৩/৪)

বৈদিক সাহিত্যে গোমাংস ভোজন প্রমাণের অপচেষ্টার দ্বারা সনাতনীদের বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কুচক্র বিদ্যমান। সকলকে তাদের থেকে সাবধান হবার অনুরোধ জানানো হল।

সনাতনের জয় হোক। গোজাতি সুরক্ষিত হোক।



No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ