স্ট্রোক - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

07 October, 2021

স্ট্রোক

 

স্ট্রোক

স্ট্রোক নিয়ে আদ্যোপান্ত
ভূমিকা
হঠাৎ ফোনকল আপনার বন্ধু মীর লোকমান হোসেন স্ট্রোক করেছেন। তাকে দ্রুত হাসপালে নেয়ার পথে তিনি এ জগতের মায়াত্যাগ করে আমাদের কাঁদিয়ে চলে যান নাফেরার দেশে । তার ঠিক পনের দিন পর স্ট্রোক করেন আমার মামা নিতাই দাস। শুধু আমার মামা বা বন্ধু নয় এভাবে আমাদের চারপাশে স্ট্রোকের জন্য অকালে ঝড়ছে হাজারো প্রাণ। তাই আমার আজকের আয়োজন স্ট্রোক কি ও কেন হয়; স্ট্রোক নিয়ে আদ্যোপান্ত ।
আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে, স্ট্রোক একটি “হৃৎপিন্ডের” রোগ। যা মোটেই সত্য নয়। আসলে স্ট্রোক “মস্তিষ্কের” রোগ। মস্তিুষ্কের রক্তবাহী নালীর দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা হয। এ দুর্ঘটনায় রক্তনালী বন্ধও হতে পারে, আবার ফেটেও যেতে পারে। এর ফলে মস্তিুষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ ভাগ মারা যায়, আর ৩০ ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারা বেঁচে থেকেও দুর্বিষহ জীবন যাপন করেন। গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বছরে আক্রান্ত হচ্ছে ৬ কোটি এবং মারা যাচ্ছে ২ কোটি মানুষ। স্ট্রোকের কারণে দেড়কোটি লোক পঙ্গু হচ্ছে। মস্তিষ্কে রক্ষক্ষরণ বা স্ট্রোক যেমন ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা, একই সঙ্গে অনেক মানুষ হারাচ্ছে তাদের কর্মদক্ষতা, হচ্ছে প্রচুর অর্থ ব্যয়। অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ লক্ষ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে। প্রতি হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ করা গেলেও যে কোন বয়সেই তা হতে পারে। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। মহিলাদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার কম। ফাস্টফুডে আসক্তদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। শিশু ও তরুণদের অনেকে খাদ্যাভাসের কারণে স্ট্রোক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।
স্ট্রোক
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্ট্রোক হল প্রকট স্নায়ু রোগ। মস্তিষ্কের কোষগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মস্তিষ্কই পুরো দেহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং গ্লুকোজের সরবরাহ পায়। কোন কারণে এই সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে সে অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওই কোষগুলো শরীরের যেই অংশ নিয়ন্ত্রণ করত ওই অংশ গুলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
স্ট্রোকের টাইপ
স্ট্রোক দু’প্রকার। একটি ইসচেমিক (Ischemic) স্ট্রোক এবং অন্যটি হেমারোজিক (Hemorrhagic) স্ট্রোক। ইসচেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় আর হেমারোজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষণ ঘটে।
স্ট্রোকের লক্ষণ
দু’ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই একই ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। মস্তিষ্কের কোন এলাকায় রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলো, কতটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হল ইত্যাদি বিষয়ের ওপর লক্ষণগুলো পরিবর্তিত হয়। যে কোন ধরনের স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই দ্রুত চিকিৎসককে দেখানো উচিত। দেরি করলে নতুন নতুন লক্ষণ দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে সেটি সারিয়ে তোলা কঠিন হতে পারে।
• কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হওয়া।
• হঠাৎ মুখ, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া।
• হঠাৎ কথা বলতে ও বুঝতে সমস্যা হওয়া।
• প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া।
• ঘুম ঘুম ভাব হওয়া।
• হঠাৎ করেই এক বা দুই চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া ।
স্ট্রোকের কারণ
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকির কারণ গুলো মোটামুটি একই রকম
• উচ্চ রক্তচাপ
• বেশি কোলেস্টেরল, চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রন করতে হবে। ফাস্টফুড, বাদাম, সন্দেশ, রসগোল্লা, দুধ, বিরিয়ানি, পোলাও, ঘি, পাঙ্গাশ, চিংরি কাকড়া গরু বা খাশির মাংস, নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার, ডিমের কুসুম ইত্যাদি খাওয়া উচিৎ নয়।
• ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ
• ধুমপান, মদ্যপান, মাদক দ্রব্য, তামাক পাতা ও জর্দা খাওয়া, গুল লাগানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
• স্থূলতা (অতিরিক্ত মোটা হওয়ার প্রবনতা)
• পারিবারিক ইতিহাস
• বয়স সাধারণত ৫৫ বছরের বেশি হলে (যেকোন বয়সে হতে পারে)
স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যা
• শরীরের এক পাশ অথবা দুই পাশ অবশ হয়ে যাওয়া ।
• মাংসপেশীর টান প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যাওয়া,পরে আস্তে আস্তে টান বেড়ে যায় ।
• হাত ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা থাকতে পারে ।
• হাত ও পায়ের নড়াচড়া সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কমে যেতে পারে।
• হাটা-চলা, উঠা-বসা, বিছানায় নড়াচড়া কমে যেতে পারে।
• নড়াচড়া কমে যাওয়ার ফলে চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে।
• চোখে দেখতে অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে।
• দৈনন্দিন কাজ করতে সমস্যা হতে পারে।
• উৎপাদনশীল কাজ করতে সমস্যা হতে পারে।
• স্মৃতি শক্তি লোপ পেতে পারে।
• মনোযোগ এবং বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পেতে পারে।
স্ট্রোকের রোগ নির্ণয়
মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণজনিত স্ট্রোক একটি ভয়ানক Critical condition এবং তা যদি মস্তিষ্কের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ঘটে, তবে তা দ্রুত রোগীর জীবনাবসানের কারণ হয়। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র (Diabetes), মাথায় তীব্র আঘাত (severe Head injury) ছাড়াও কতিপয় জন্মগত কারণ, যেমন ধমনীর দেয়ালের দুর্বল অংশ ফেটে যাওয়া (Ruptured Aneurysm), ধমণী-শিরার ভেতর অস্বাভাবিক সংমিশ্রণ, ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ (bleeding from Arteriovenous malformation) সচরাচর ঘটে থাকে। রোগ নির্ণয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা অতীব জরুরী। মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত ৩ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করতে না পারলে অনেক সময় স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়। রোগী স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগস্ত হয়ে পড়তে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে।
স্ট্রোক হয়েছে কিনা বোঝার উপায়
• ব্লাড প্রেসার মাপা, রক্তে কোলস্টেরল মাপা, ডায়াবেটিস মাপা, এমিনো এসিড মাপা
• ঘাড়ের আর্টারির ছবি নিয়ে দেখা যে কোথাও রক্তনালী সরু কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে কিনা
• আর্টরীয়গ্রাফি (Arteriography) : রক্তনালীতে এক ধরনের রং প্রবেশ করিয়ে x-ray করানো, এতে রক্ত চলাচলের একটা ছবি পাওয়া যায়
• CT scan (Computerized Tomography scan) : করে মস্তিস্কের 3D স্ক্যান করা যায়
• MRI (Magnetic Resonance Imaging) : চুম্বকক্ষেত্র তৈরী করে দেখার চেষ্টা করা হয় যে মস্তিষ্ককলার কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা
• ইকোকার্ডইওগ্রাফি: Echocardiography তে আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে হৃদপিন্ডের একটা ছবি তুলে দেখা হয় কোনো জমাট রক্ত, বুদ বুদ কিংবা অন্যকিছু রক্ত চলা চল বন্ধ করছে কিনা
স্ট্রোকের ঝুকি কমানোর উপায়
• ব্লাড প্রেসার জানা এবং কন্ট্রোল করা
• ধুমপান না করা
• কোলেসটেরল এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া
• নিয়ম মাফিক খাবার খাওয়া
• সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা
• নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো
• দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা
• মাদক না নেয়া, মদ্য পান না করা
হোমিও চিকিৎসা :
স্ট্রোক হলে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় বা স্ট্রোক হওয়ার যে সকল কারণ আছে সেই সকল লক্ষণ গুলির হোমিও চিকিৎসা করা উচিৎ। তাছাড়া নিচের ঔষধ দুটি সবসময় সাথে রাখুন।
Arnica Mont: যাদের ঘন ঘন বুকে ব্যথা উঠে বা একবার স্ট্রোক হয়েছে তাদের এই ঔষধটি কিনে পকেটে রাখা উচিৎ। এই ঔষধটি আপনাকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়া বা অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবে।
Ferrum Phos: এই ঔষধটি জমাটবাধা রক্ত দূর করে রক্তে অক্সিজেনের পরিমান বাড়িয়ে আপনাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবে।
পরামর্শ
স্ট্রোকের কারণে শরীরের কোন একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঐ অংশ শরীরের যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে চালিত করত তা অবশ হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের ডান অংশ শরীরের বাম অংশকে পরিচালিত করে, আর বাম অংশ শরীরের ডান অংশকে পরিচালিত করে। কাজেই স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কোন একটি অংশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরের বিপরীত অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে।
তবে শরীরের কোন অংশ স্ট্রোকের কারণে অচল হয়ে গেলেও তা আবার ধীরে ধীরে সেরে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ নিউরোলজিস্টের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপীও নেবার প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজনে হোমিও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা যেতে পারে।

পরামর্শকঃ
ডাঃ অঞ্জন কুমার দাস

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

ব্রহ্মচর্যের সাধনা ভোজন

  নবম ভাগ ভোজন ভূমিকা - "ধর্মার্থকামমোক্ষাণামারোগ্যম্ মূলমুত্তমম্" . ধর্ম-অর্থ-কাম আর মোক্ষ এই পুরুষার্থচতুষ্টয় হল মানব জীবনের উ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ