বেদে মাংসাহার ভ্রম - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 November, 2021

বেদে মাংসাহার ভ্রম

 বেদে মাংসাহার খাবারের ভ্রম -

এতদ্বা উ স্বাদীয়ো য়দধিগবং ক্ষীরং বা ।

মাংসং বা তদেব নাশ্নীয়াত্ ।।৯।। (অথর্ববেদ কান্ড ৯ পর্যায় ৩ সূক্ত ৬ মন্ত্র ৯)

এই মন্ত্রে আচার্য সায়ণ ভাষ্য করেনি।

পণ্ডিত শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর ভাষ্য -

পদার্থঃ (এতত্ বৈ উ স্বাদীয়ঃ) সে যে স্বাদযুক্ত আছে (য়ত্ অধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) যে গাভী থেকে প্রাপ্তকারী দুধ অথবা অন্য মাংসাদি পদার্থ আছে (তত্ এব ন আশ্নীয়াত্) তাহার মধ্যে থেকে কোন পদার্থ অতিথির পূর্বেও খাবে না ।।৯।।

এই মন্ত্রের উপর আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর মত -

   ইনাদের ভাষ্যতে আর বিদ্বান প্রো০ বিশ্বনাথ বিদ্যালংকারই এই মাংসের অর্থ পনীর করেছেন, তবে পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীই মনন সাধক (বুদ্ধিবর্ক) পদার্থকে মাংস বলেছেন । সবাই এই মন্ত্র তথা সূক্তের অন্য মন্ত্রের বিষয় অতিথি সৎকার বলেছেন । এই মন্ত্রের দেবতা পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীর দৃষ্টিতে অতিথি বা অতিথিপতি, যখন পণ্ডিত সাতবলেকরই অতিথি বিদ্যা মেনেছেন । পণ্ডিত সাতবলেকরই ইহার ঋষি ব্রহ্মা মেনেছেন । ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী । {ব্রহ্মা=মনো বৈ য়জ্ঞস্য ব্রহ্মা (শ০ ১৪/৬/১/৭); প্রজাপতিবৈ ব্রহ্মা (গো০ উ০ ৫/৮)। অতিথিঃ=য়ো বৈ ভবতি য়ঃ শ্রেষ্ঠতামশ্নুতে স বা অতিথির্ভবতি (ঐ০ আ০ ১/১/১)। অতিথিঃ= অতিথিপতির্বাবাতিথেরীশে (ক০ ৪৬/৪-ব্রা০ উ০ কো০ থেকে উদ্ধৃত)। পিপীলিকা=পিপীলিকা পেলতের্তিকর্ণঃ (দৈ০ ৩.৯)। স্বাদু=প্রজা স্বাদু (ঐ০আ০ ১.৩.৪); প্রজা বৈ স্বাদুঃ (জৈ০ ব্রা০ ২/১৪৪); মিথুনং বৈ স্বাদু (ঐ০ আ০ ১/৩/৪)। ক্ষীরম্=য়দত্যক্ষরত্ তত্ ক্ষীরস্য ক্ষীরত্বম্ (জৈ০ ব্রা০ ২/২২৮)। মাংসম্=মাংসং বৈ পুরীষম্ (শ০ ৮/৬/২/১৪); মাংসং বা মানসং বা মনোহস্মিন্ সীদতীতি বা (নি০ ৪/৩); মাংসং সাদনম্ (শ০৮/১/৪/৫)} 

অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিদৈবিক ভাষ্য -

পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) যে অতিথি অর্থাৎ সতত গমনশীলা প্রাণ, ব্যান রশ্মির এবং অতিথিপতি অর্থাৎ প্রাণোপান রশ্মির নিয়ন্ত্রক সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির স্বাদুযুক্ত হয়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মিকে মিথুন বানিয়ে নানা পদার্থের উৎপন্ন করাতে সহায়ক হয় । (য়ত্) যে প্রাণব্যান বা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির (অধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) গমনকারী অর্থাৎ ‘ও৩ম্’ ছন্দ রশ্মি রূপী সূক্ষ্মতম বাক্ তত্বে আশ্রিত হয়, সাথেই নিজের পুরীষ=পূর্ণ সংযোজন বল {পুরীষম্=পূর্ণং বলম্ (ম০ দ০ য়০ ভা০ ১২/৪৬); ঐন্দ্রং হি পুরীষম্ (শ০ ৮/৭/৩.৭); অন্নং পুরীষম্ (শ০ ৮/১/৪/৫)} এর সাথে নিরন্তর নানা রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের উপর ঝড়তে থাকে। এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির ঝড়নাই ক্ষীরত্ব তথা পূর্ণ সংযোতাই মাংসত্ব বলা হয় । এখানে ‘মাংস’ শব্দ এই সংকেত দেয়, যে এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির মনস্তত্ব এখানে সর্বাধিক মাত্রাতে বসে থাকেন । এই ‘ও৩ম্’ রশ্মির প্রাণব্যান এবং সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির উপর ঝড়ে অন্য স্থুল পদার্থের উপর পড়তে থাকে । (তত্ এব ন অশ্নুয়াত্) এই কারণ দ্বারা বিভিন্ন রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের মিথুন বানানোর প্রক্রিয়া নষ্ট হয় না । ইহা প্রক্রিয়া অতিথিরূপ প্রাণব্যানকে মিথুন বানানো কিংবা ইহার দ্বারা বিভিন্ন মরুদাদি রশ্মির আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়া শান্ত হওয়াতে পূর্বে নষ্ট হয় না, বরং তাহার পশ্চাৎ অর্থাৎ  দুই কণের সংযুক্ত হওয়ার পশ্চাৎ আর মিথুন বানানোর প্রক্রিয়া নষ্ট বা  বন্ধ হয়ে যায়, ইহা জানা উচিত ।।৯।।

এই ঋচার সৃষ্টির উপর প্রভাব -

আর্ষ বা দৈবত প্রভাব- ইহার ঋষি ব্রহ্মা হওয়াতে সংকেত পাওয়া যায় যে ইহার উৎপত্তি মন এবং ‘ও৩ম্’ রশ্মির মিথুন দ্বারাই হয় । এই মিথুন এই ছন্দ রশ্মির নিরন্তর বা নিকটতা থেকে প্রেরিত করতে থাকে । ইহাকে দৈবত প্রভাব দ্বারা প্রাণ, ব্যান তথা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ সক্রিয় হয়ে নানা সংযোগ কর্মের সমৃদ্ধ করেন ।

ছান্দস প্রভাব - ইহার ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী হওয়াতে এই ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থের সংযোগের সময় তাহার মধ্যে তীব্র তেজ বা বলের সাথে সতত সঞ্চারিত হয় । ইহা থেকে ঐ পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ তেজ এবং বলের প্রাপ্ত হতে থাকে ।

ঋচার প্রভাব - যখন কণার সংযোগ হয়, তখন তাহার মধ্যে প্রাণ, ব্যান বা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ যোগদান হতে থাকে । এই রশ্মির বিভিন্ন মরুদ্ রশ্মির দ্বারা আকুঞ্চিত আকাশ তত্বকে ব্যাপ্ত করে নেয় । ইহা সময় এই রশ্মির উপর সূক্ষ্ম ‘ও৩ম্’ রশ্মির নিজের সেচন করে ইহাতে অধিক বল দ্বার যুক্ত করেন। ইহা থেকে উভয় কণার মধ্যে ফীল্ড নিরন্তর প্রভাবী হয়ে ঐ উভয়  কনার পরস্পর সংযুক্ত করে দেয় ।

আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিভৌতিক ভাষ্য -

পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) এই যে স্বাদিষ্ট ভোজ্য পদার্থ আছে। (য়দধিগবং ক্ষীরং বা) যে গাভী দ্বারা প্রাপ্তকারী দুধ, ঘৃত, মাখন, দই আদি পদার্থ আছে অথবা (মাংসম্ বা) মনন, চিন্তন আদি কার্যে উপযোগী ফল, শুকনো ফল আদি পদার্থ। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) ঐ পদার্থকে অতিথির খাওয়ানোর  পূর্বে খাবে না অর্থাৎ অতিথির খাওয়ানোর পশ্চাৎই খাওয়া উচিত । এখানে অতিথি থেকে পূর্বে না খাওয়ার প্রসংগত ইহার পূর্ব মন্ত্র থেকে সিদ্ধ হয়, যেখানে লেখা আছে - “অশিতাবত্যতিথাবশ্নীয়াত্”= অশিতাবতি অতিথৌ অশ্নীয়াত্ । এই প্রকরণের পূর্ব আধিদৈবিক ভাষ্যেও উপলব্দি করবেন।

....................................................................................

   ‘মাংসম্’ পদের বিবেচনাঃ- এই বিষয়ে সর্বপ্রথম আর্য বিদ্বান পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা কৃত “বৈদিক সম্পত্তি” নামক গ্রন্থতে আয়ুর্বেদের কিছু গ্রন্থের উদ্ধৃত করে বলেন -

''সুশ্রুতে'' আমের ফলের বর্ণন করে লিখেছেন -

অপক্বে চূতফলে স্নায়্যস্থিমজ্জানঃ সূক্ষ্মত্বান্নোপলভ্যন্তে পক্বে ত্বাহবির্ভূতা উপলভ্যন্তে।

অর্থাৎ আমের কাচা ফলের আশে, হাড্ডির আর মজ্জা আদি প্রতীত হয় না, কিন্তু পাকার পরে সব আবির্ভূত হয়ে যায় ।

   এখানে আটির তন্তু সর্বাঙ্গে, আটি হাড্ডির, আশে আর চিকন ভাগ মজ্জা বলা হয়েছে । এই প্রকারে বর্ণন ভাবপ্রকাশেও এসেছে। সেখানে লেখা আছে যে - 

आम्रास्यानुफले भवन्ति युगपन्मांसास्थिमज्जादयो लक्ष्यन्ते न पृथक् पृथक् तनुतया पुष्टास्त एव स्फुटाः। 

एवं गर्भसमु˜वे त्ववयवाः सर्वे भवन्त्येकदा लक्ष्याः सूक्ष्मतया न ते प्र्रकटतामायान्ति वृद्धिग्ताः।

অর্থাৎ যে প্রকার কাচা আমের ফলে মাংস, অস্থি আর মজ্জাদি পৃথক-পৃথক দেখা যায় না, কিন্তু পাকার পরেই জ্ঞাত হয় ওই প্রকার গর্ভের আরম্ভে মনুষ্যের অঙ্গ জ্ঞাতহয় না, কিন্তু যখন তাহার বৃদ্ধি হয়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়।

   এই দুই প্রমাণের দ্বারা প্রকট হয়ে থাকে যে ফলের মধ্যেও মাংস, অস্তি, নাড়ী আর মজ্জা আদি ইহা প্রকার বলা হয়েছে, যে প্রকার প্রাণির শরীরে ।

 বৈদ্যকের এক গ্রন্থে লেখা আছে যে - 

प्रस्थं कुमारिकामांसम् ।

অর্থাৎ- এক কিলো কুমারিকার মাংস। এখানে ঘীকুমারকে কুমারিকা আর তাহার মজ্জাকে মাংস বলা হয়েছে।

   বলার তাৎপর্য এই যে, যে প্রকার ঔষধির আর পশুদের নাম একই শব্দ দ্বারা রাখা হয়েছে ওই প্রকার ঔষধির আর পশুদের শরীরাবয়বও একই শব্দ দ্বারা বলা হয়েছে । এই ধরনের বর্ণনা আয়ুর্বেদের গ্রন্থে ভরা আছে । 

   শ্রীবেনকটেশ্বর প্রেস, বুম্বাইতে ছাপানো ‘ঔষধিকোষ’ এ নীচে লেখা সমস্ত পশুসংজ্ঞক নাম আর অবয়ব বনস্পতির জন্যও এসেছে দেখে নিন। আমরা উদাহরণের জন্য কিছু শব্দ উদ্ধৃত করেছি -

বৃষভ - ঋষভকন্দ

সিংহী - কটেলী, বাসা

হস্তি - হস্তিকন্দ

শ্বান - কৃত্তাঘাস, গ্রন্থিপর্ণ

খর - খরপর্ণিনী

বপা - ঝিল্লী=বক্কল ওষুধ ব্যবহারের জালা

মার্জার - বল্লীঘাস, চিত্ত

কাক - কাকমাচী অস্থি-গুঠলী

ময়ুর - ময়ুরশিখা

বারাহ - বারাহীকন্দ

মাংস - গুদা, জটাংমাসী

বীছূ - বীছূবূটী

মহিষ - মহিষাক্ষ, গুগ্গুল

চর্ম - বক্কল

সর্প - মর্পিণীবূটী

শ্যেন - শ্যেনঘন্টী (দন্তী)

স্নায়ু - রেশা

অশ্ব - অশ্বগন্ধা, অজমোদা

মেষ - জীবনাশক

নখ - নখবূটী

নকুল - নাকুলীবূটী

কুক্কুট (টী) - শালামলীবৃক্ষ

মেদ - মেদা

হংস - হংসপদী

নর - সৌগন্থিক তৃণ

লোম (শা) - জটামাসী

মৎস্য - ঘমরা

হৃদ - দারচীনী

মূষক - মূষাকর্ণী

মৃগ - সহদেবী, ইন্দ্রায়ণ, জটামসী, কপুর

পেশী - জটামসী

গো - গৌলোমী পশু-অম্বাড়া, মোথা

রুধির - কেসর

মহাজ - বড়ী অজবায়ন

কুমারী - ঘীকুমার

আলম্ভন - স্পর্শ

   এই সূচীতে সমস্ত পশু পক্ষীর আর তাহার অঙ্গের নাম তথা সমস্ত বনস্পতির আর তাহার অঙ্গের নাম একই শব্দ দ্বারা সূচিত করা হয়েছে । এরূপ অবস্থায় কিছু শব্দ দ্বারা পশু আর তাহার অঙ্গকেই গ্রহণ করা উচিত নয় ।

   বিজ্ঞ পাঠক এখানে বিচার করুন ঐরূপ স্থিতিতে এখানে ‘মাংসম্’ পদ দ্বারা গৌ আদি পশুর বা পক্ষির মাংস গ্রহণ করা কি মুর্খতা নয় ? এখানে কোন পাশ্চাত্য শিক্ষা দ্বারা অভিভূত তথা বৈদিক বা ভারতীয় সংস্কৃতি বা ইতিহাসের উপহাসকর্তা কথিত প্রবুদ্ধ কিংবা মাংসাহারের পোষক সংস্কৃত ভাষার ঐরূপ নামের উপর ব্যঙ্গ্য যেন না করেন, এই কারণে আমরা তাহাদের ইংরেজি ভাষারও কিছু উদাহরণ দিচ্ছি -

1. Lady Finger ভেণ্ডী বলা হয়। যদি ভোজন বিষয়ে কেউ ইহার অর্থ কোন মহিলার আঙ্গুল করে, তখন কি তাহার অপরাধ হবে না ?

2. Vegetable কোন শাক বা বনস্পতিকে বলা হয়। এদিকে Chamber dictonary মধ্যে ইহার অর্থ dull understanding person ও দেওয়া আছে । যদি Vegetable খেতে বসা কোন ব্যক্তিকে দেখে কেউ তাহাকে মন্দবুদ্ধি মানুষের খাদ্য পদার্থ বলে, তখন কি ইহা মূর্খতা হবে না ?

3. আয়ুর্বেদে একটি চারা গাছ আছে - গোবিষ, যাহাকে হিন্দীতে কাকমারী তথা ইংরেজিতে Fish berry  বলা হয় । যদি কেউ ইহার অর্থ মাছের রস লাগায়, তখন তাহাকে কি বলবেন? 

4. potato আলুকে বলা হয়, এদিকে ইহার অর্থ A mentally handicaped person ও হয়, তখন কি আলু খাওয়া ব্যক্তিকে মানসিক রোগী মনুষ্যকে ভক্ষণকারী মানা হয় ?

5. Hag ইহা এক প্রকারের ফল আছে, এদিকে  An ugly old woman কেও hag বলা হয়, তখন কি এটাও কোন hag ফলের অর্থ উল্টো লাগানোর প্রয়াস করবেন ?

   এখন আমরা ইহার উপর বিচার করি দেখি যে ফলের মজ্জাকে মাংস কেন বলা হয় ? যেমনটি আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধিদৈবিক ভাষ্যে জেনে এসেছি যে পূর্ণবলযুক্ত বা পূর্ণবলপ্রদ পদার্থকে মাংস বলা হয়। সংসারে সব মনুষ্য ফলের মজ্জাকেই প্রয়োগ করেন, অন্য ভাগকে নয়, কেননা ফলের সার ভাগ সেই হয়। সেই ভাগ বল-বীর্যের ভাণ্ডার অর্থাৎ তাহার ভক্ষণ দ্বারা বল-বীর্য-বুদ্ধি আদির বুদ্ধি হয়। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে প্রাণিদের শরীরের মাংসকে মাংস বলে? ইহার উত্তর এই যে কোন প্রাণির শরীরের বল তাহার মাংসপেশীর অন্তর্গতই নিহিত থাকে, ইহার কারণে ইহাও মাংস বলা হয়। যেরূপ শাকাহারী প্রাণী ফলের মজ্জাকেই বিশেষ ভক্ষণ করেন, ঐরূই সিংহাদি মাংসাহারী প্রাণী, প্রাণীর মাংস ভাগকেই বিশেষ রূপে খেয়ে থাকে। এই উভয়ের মধ্যে সমানতা আছে। যে স্থান ফলের মধ্যে মজ্জার হয়, সেই স্থান প্রাণিদের শরীরে মাংস হয় । মনুষ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক রূপে কেবল শাকাহারী বা দুগ্ধাহারী প্রাণী, এই কারণে বেদাদি শাস্ত্রে প্রাণিদের মাংস খাওয়ার চর্চা বেদাদি শাস্ত্রের ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার লক্ষণ । এরূপ চর্চাকারী কথিত বেদজ্ঞ, তা সে বিদেশী হোক বা স্বদেশী, আমাদের দৃষ্টিতে তাহারা বেদাদি শাস্ত্রের বর্ণমালাও জানে না, যদিও বা তাহারা ব্যাকারণাদি শাস্ত্রের যত বড় অধ্যেতা- অধ্যাপক হোন না কেন । মাংসাহারের বিষয়ে আমরা অন্য কোনো এক সময় একটি পৃথক গ্রন্থ লেখার বিবেচনা করব, যার মধ্যে সারা বিশ্বের মাংসাহার ভোগীদের সমস্ত সংশয় দূর হবে।

       ত্রিষ্টুপ মাংসম্ প্রাণস্য (ঐ০ আ০ ২/১/৬) ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মিই মাংস।

   সাধারন বাংলায় পশু Animal বোঝালেও বৈদিক সংস্কৃততে তা অন্যকিছুও বোঝায়। নিরুক্ত তে পাওয়া যায় পশু অর্থ কণাজাতীয় জিনিস। এটা ' পশ্ ' মুল থেকে এসেছে যার অর্থ হল যা দেখা সম্ভব । পশু শব্দের ধাতু হলো √পশ্ আর এই ধাতুগত অর্থ অনুসারে  যাকে পশ্য অর্থাৎ দেখা হয় তাই পশু ।

প্রশ্ন - বেদে ‘মাংসম’ পদের অর্থ প্রাণিদের মাংস কখনো হয় না, ইহা আপনার পূর্বাগ্রহও তো ধরে নেওয়া যেতে পারে, যা শুধুমাত্র শাকাহারের আগ্রহবশেই করেছেন ?

উত্তর - যে সংস্কারেতে সামান্য যোগসাধকের জন্য অহিংসাকে প্রথম সোপান বলা হয়, যেখানে মন, বচন, কর্ম দ্বারা কোথাও কখনো সমস্ত প্রাণীর প্রতি ঘৃণা ত্যাগ অর্থাৎ প্রীতির সন্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সিদ্ধ পুরুষ যোগিদের এবং সেই ক্রমে নিজের যোগসাধনা দ্বারা ঈশ্বর বা মন্ত্রের সাক্ষাৎকৃতধর্মা মহর্ষিরা, তাহার গ্রন্থে এবং বেদরূপ ঈশ্বরীয় গ্রন্থের দ্বারা হিংসার সন্দেশ দেওয়া মূর্খতা বা দুষ্টতা নয়, তো কি? যে বিদ্বান বৈদিক অহিংসার স্বরূপ দেখতে চান, তিনি পতঞ্জল যোগদর্শনের ব্যাসভাষ্য স্বয়ং পড়ে দেখুন । ইহা ঐতরেয় ব্রাহ্মণে যাহা প্রায়ঃ সব ভাষ্যকারই পশুর নৃশংস বধ এবং তাহার অঙ্গকে ভক্ষণের বিধান করেছেন, সেখানে আমরা তাহার কেমন গূঢ় বিজ্ঞান প্রকাশিত করেছি, ইহা পাঠক এই বেদ-বিজ্ঞান আলোক গ্রন্থের সম্পূর্ণ অধ্যয়ন দ্বারা জেনে যাবে। পাঠকদের জানার জন্য আমরা বেদের কিছু প্রমাণ দিচ্ছি -

          য়দি নো গাং হংসি য়দ্যশ্চং য়দি পূরুষম।

          তং ত্বা সীসেন বিধ্যামঃ।।    অথর্ব০ ১/১৬/৪

অর্থাৎ - তুমি যদি আমাদের গাভী, ঘোড়া বা মনুষ্যকে হত্যা করো, তবে আমরা তোমাকে সীসা দিয়ে ছেদ করে দেবো ।

মা নো হিংসিষ্ট দ্বিপদো মা চতুষ্পদঃ ।। (অথর্বঃ ১১/২/১)

অর্থাৎ আমাদের মনুষ্য আর পশুদের নষ্ট করো না । অন্যত্র বেদে দেখুন -

ইমং মা হিংসীদ্রবিপাদ পশুম্ । (যজুঃ ১৩/৪৭)

অর্থাৎ এই দুই খুরবান পশুকে হিংসা করো না ।

ইমং মা হিংসীরেকশফং পশুম্ । (যজুঃ ১৩/৪৮)

অর্থাৎ এই এক খুরবান পশুদের হিংসা করো না ।

য়জমানস্য পশুন্ পাহি । (যজুঃ ১/১)

অর্থাৎ যজমানের পশুদের রক্ষা করো ।

   আপনারা বলতে পারেন যে এই কথা যজমান বা কোন মনুষ্য বিশেষের পালিত পশুর কথাই বলেছে নাকি সমস্ত প্রাণির ? এই ভ্রমের নিবারণার্থ অন্য প্রমাণ -

মিত্রস্যাহং চক্ষুসা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে । (যজুঃ ৩৬/১৮) 

অর্থাৎ আমি সব প্রাণিদের মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি ।

মা হিংসীস্তন্বা প্রজাঃ । (যজুঃ ১২/৩২) 

অর্থাৎ এই শরীর দ্বারা প্রাণিদের মেরো না ।

মা স্রেধত । (ঋ০৭/৩২/৯) অর্থাৎ হিংসা করো না ।

মহর্ষি জৈমিনীর পশ্চাৎ সব থেকে মহান বেদবেত্তা মহর্ষি দয়ানন্দের মাংসাহারের বিষয়ে বিচারও পাঠক পড়ুন -

“মদ্যমাংসাহারী অনার্য জাতির যাহার শরীর মদ্যমাংসে পরমাণুর দ্বারাই পরিপূর্ণ আছে, তাহার হাতে খাবে না ।” 

“এই পশুদের হত্যাকারীরা সব মানুষ্যের হত্যাকারী জানবে ।”

“যখন থেকে বিদেশী মাংসাহারী এই দেশে এসে গরু আদি পশুদের হত্যাকারী মদ্যপায়ী রাজ্যাধিকারী হয়, তখন থেকে ক্রমশঃ আর্যের দুঃখের সীমা বাড়তে থাকে ।” 

- সত্যার্থ প্রকাশ; দশম সমুল্লাস

দেখুন দয়ার সাগর ঋষি দয়ানন্দজী কি বলছেন -

“যাহারা পশুর গলা কেটে নিজেদের পেট ভরে তাহারা সারা পৃথিবীর ক্ষতি করে । সংসারে তাহাদের থেকেও অধিক কোন বিশ্বাসঘাতক, অনুপকারী, দুঃখ দানকারী পাপীজন আর আছে কি”?

“হে মাংসহারীরা ! যখন তোমরা কিছু সময় পর পশু পাবে না তখন মনুষ্যের মাংসকেও ছাড়বে কি ?”

“হে ধার্মিক লোকেরা ! আপনারা এই পশুদের রক্ষা তন, মন আর ধন দ্বারা কেন করেন না?” (গোকরুণানিধি)

আশা করি বুদ্ধিমান এবং নিষ্পক্ষ পাঠকদের মাংসাহারের ভ্রান্তি নির্মুল হয়ে গিয়েছে ।

....................................................................................

আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধ্যাত্মিক ভাষ্য -

{মাংসম্=মন্যতে জ্ঞয়তেহনেন তত্ মাংসম্ (উ০ কো০ ৩/৬৪); মাংসং পুরীষম্ (শ০ ৮/৭/৪/১৯); (পুরীষম্=পুরীষং পুণাতেঃ পূরয়তের্বা-নিরু০ ২/২২); সর্বত্রাহভিব্যাপ্তম্-ম০ দ০ য়০ ভা০ ৩৮/২১; য়ত্ পুরীষং স ইন্দ্রঃ-শ০১০/৪/১/৭; স এষ প্রাণ এব য়ত্ পুরীষম্-শ০৮/৭/৩/৬)}

পদার্থঃ (এতত্ বা উ স্বাদীয়ঃ) যোগী পুরুষের সামনে পরমানন্দের আস্বাদনকারী এই পদার্থ বিদ্যমান থাকে, যাহার কারণে জীব পরমাত্মার সাথে সহযোগে থাকে, (য়দধিগবং ক্ষীরং বা মাংসং বা) সেই পদার্থ যোগীর মন আদি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐ পদার্থ কি, ইহার উত্তর এই যে সর্বব্যাপী পরমৈশ্বর্য সম্পন্ন ইন্দ্ররূপ পরমাত্মা থেকে ঝড়তে থাকা ‘ও৩ম্’ বা গায়ত্রী আদি বেদের ঋচাই হলো সেই পদার্থ, যা যোগীর ইন্দ্রিয় বা অন্তঃকরণে নিরন্তর স্রবিত হতে থাকে । যোগী ঐ আনন্দময়ী ঋচার রসস্বাদন করতে থাকে, তখন সে পরমাত্মার অনুভব করতে থাকে। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) যোগী ঐ ঋচার আনন্দকে ওই সময় পর্যন্ত অনুভব করতে পারে না, যতক্ষন পর্যন্ত না অতিথিরূপ প্রাণ তত্ব, তা যোগীর মস্তিক্য বা শরীরে সতত সঞ্চরিত না হয়, ওই ঋচার সাথে সংগত হয় না । এখানে অতিথি দ্বারা পূর্বের প্রকরণ পূর্ববৎ অভিপ্রায় হবে ।।৯।।

ভাবার্থঃ যখন কোন যোগী যোগসাধনা করেন আর এই অর্থে প্রণব বা গায়ত্রী আদির যথাবিধ জপ করেন, তখন সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্যবান ইন্দ্ররূপ ঈশ্বর থেকে নিরন্তর প্রবাহিত ‘ও৩ম্’ রশ্মি ওই যোগীর অন্তঃকরণ তথা প্রাণের অন্তর স্রবিত হতে থাকে । ইহা থেকে সে যোগী ওই রশ্মির রসস্বাদন করে আনন্দে নিমগ্ন হয়ে যায় ।।৯।।

                 বেদবিজ্ঞান-আলোকঃ দ্বারা উদ্ধৃত

              (পূর্বপীঠিকা-বেদের যথার্থ স্বরূপ, নবমোধ্যায়)

   বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬।৪।১৮ কন্ডিকা নিয়ে একটা শঙ্কা আমাদের সামনে প্রায়শই উঠে। শঙ্কটা এরূপ যে, বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য  স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস  দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে ।  প্রায় সব অনুবাদক এমনটাই অনুবাদ করেছে ।  

   অর্থাৎ ইহা দ্বারা সনাতন ধর্মে গোমাংস খাওয়ার বিধান সিদ্ধ এমনটা দাবী করে অপপ্রচারকারীরা। মূলত আমাদের ধর্মের মূল স্রোত হলো বেদ। 

   বেদের জ্ঞান দ্বারাই পরবর্তিতে অনেক শাস্ত্র রচিত হয়েছে । সেই বেদে আমরা গোহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাই ।

গো হত্যা সমন্ধ্যে বেদ বলছে যে -

"মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"

(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫) 

অর্থাৎ নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না ।

শুধু তাই নয় গোহত্যাকারীকে দন্ডের বিধান দিয়ে বেদ বলছে যে -

যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব । (অথর্ববেদ ১।১৬।৪)

   উপনিষদ বেদেরই ব্যাখ্যা হওয়ার হেতু উপনিষদে গোমাংস আহারের নির্দেশ কদাপি থাকতে পারে না । আমাদের স্থুল বিচার বিবেচনার জন্যই মূলত এরূপ শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে । আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু  বিস্তারিত বিশ্লেষন করা যাক -

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিজিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রুষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বাণ বেদাননুব্রুবিত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাষৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বাSSর্ষভেণ বা ।।  (বৃহঃ উপঃ ৬।৪।১৮) 

শব্দার্থঃ (অথ যঃ ইচ্ছেত্ পুত্রঃ মে) এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র (পন্ডিতঃ) বিদ্বান (বিজিগীথঃ) প্রসিদ্ধ (সমিতিয় গমঃ) সভায় গমন যোগ্য (শুশ্রুষিতাম বাচম্ ভাষিতা) আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী (জায়েত) হবে (সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বম্ আয়ু ইয়াত্ ইতি) সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো (মাষৌদনম্) [পাঠভেদ - মাংসৌদম্] মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল (পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তম্ অশ্নীয়াতাম্ ইশ্বরী জনয়িতবৈঃ) পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো (অপেক্ষেত পুত্র) পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে (ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা । 

সরলার্থঃ এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র বিদ্বান প্রসিদ্ধ সভায় গমন যোগ্য আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা । 

   তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ ।  এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ । 

   ঔক্ষ বিধি - ঔক্ষ শব্দ উক্ষ (সেচনে) ধাতু হতে এসেছে ।  উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধি বর্ণনাকারী শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলে ।  কোন মিশ্রিত ঔষধি পাক আদি তৈরীতে কোন কোন ঔষধি কি কি মাত্রায় পড়া উচিৎ তাহা বর্ণনাকারী শাস্ত্রের নাম ঔক্ষ শাস্ত্র। অভিপ্রায় এই যে, উপরিউক্ত মাষের অথবা তিলৌদন আদির প্রস্তুতে এই (ঔক্ষ শাস্ত্র) র মর্যাদা কে লক্ষ্য রেখে কাজ করা উচিৎ ।

   আর্ষভ বিধি - আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষন। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক।  আর্ষভের অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের বানানো কিছু ।  ঔক্ষ শাস্ত্রের সাথে এই আর্ষভ শব্দের ভাব এই যে, ঋষিদের বানানো বিধি (পদ্ধতি) র নামই ঔক্ষ শাস্ত্র । অর্থাৎ কোন অনভিজ্ঞর বানানো বিধিকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয় না ।  ঋষিকৃত পদ্ধতিই ঔক্ষ শাস্ত্র । 

   মাষৌদন -  নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থে মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মনকে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)।  বলা হয়েছিল যে মাষৌদনের পাঠভেদ অনেক গ্রন্থে মাংসৌদন আছে। কেবল এই অর্থে যদি ধরে নেওয়া হয় (মনঃ সীদত্যাস্মিন্ স মাংস:) যাহাতে মন প্রসন্ন থাকে তাহাই মাংস এবং এই দৃষ্টি দ্বারা মাষৌদন কে মাংসৌদন বলা যায় ।  এই জন্য কোন প্রকরণে গো মাংস অর্থে মাংসের প্রয়োগ  যা  এই প্রকরনে নেই। এইজন্য যে দশ ঔষধিকে দ্বারা মাষ এবং ঔদন বর্ননার বিধান রয়েছে তাহার নাম স্বয়ং উপনিষদই উল্লেখ করেছে- 

(১)ধান্য (২)যব (৩)তিল (৪)মাষ (৫)বাজরা (৬)প্রিয়জু (৭)গোধূম (৮)মসুর (৯)খল্ব (১০) থলকুল । 

(বৃহঃ উপঃ ৬।৩।১৩) 

   এখানে একটা বিষয়ে গভীর ভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ যে, এই ঔষধির গণনা করে  দেখা যাচ্ছে তিলের পরেই মাষের উল্লেখ রয়েছে । এইজন্য সতেরো কন্ডিকায় তিলৌদন এবং তাহার পরে আঠারো কন্ডিকায় মাষৌদনের উল্লেখ রয়েছে । অন্যথা মাংসের তো এখানে যেমন বলা হলো তার কোন প্রকরনই নেই ।

"য আমং মাংস মদন্তি পৌরুষেয়ং চ যে করিঃ ।

গর্ভান্ খাদন্তি কেশবাস্তানিতো নাশয়ামসি।" - অথর্ববেদে (৮।৬।২৩)

যে কাঁচা বা রন্ধন করা মাংস খায়, যে গর্ভনাশ করে, এখানে আমি তাদের বিনাশ করি ।

य आ॒मं मां॒समदन्ति॒ पौरु॑षेयं च॒ ये क्र॒विः। 

गर्भा॒न्खाद॑न्ति केश॒वास्तानि॒तो ना॑शयामसि ॥

टिप्पणी -

२३−(ये) क्रमयः (आमम्) अपक्वम् (मांसम्) आमिषम् (अदन्ति) (पौरुषेयम्) अ० ७।१२५।१। पुरुषस्य सम्बन्धि (च) (ये) (क्रविः) अ० ८।३।१५। मांसम् (गर्भान्) उदरस्थबालकान् (खादन्ति) भक्षयन्ति। नाशयन्ति (केशवाः) क्लिशेरन् लो लोपश्च। उ० ५।३३। क्लिशू विबाधने अन्, ललोपः+वह प्रापणे-ड। क्लेशस्य वाहकाः प्रापकाः क्रमयो रोगा वा (तान्) सर्वान् (इतः) अस्मात् (नाशयामसि) ॥

   মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশে বলেছেন যে, মাংসাহার করলে মানুষের স্বভাব হিংস্র হয়ে যায় ।। যারা মাংসাহার করে বা মদ্য পান করে, তাদের শরীর ও বীর্য দূষিত হয় ।।

সহৃদয়ং সাংসন স্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ অন্যে অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা ।। - অথর্ববেদ ৩/৩০/১ মন্ত্র

ভাবার্থ : (হে মনুষ্যগন) আমি তোমাদের সম মনষ্ক ও অবিদ্বিষ্ট করছি । যেমন - অবধ্য গাভী (অঘ্ন্যা) তার জাত বৎসকে নিজের অভিমুখে কামনা করে,তেমনি তোমরা পরস্পরকে কামনা কর।

যঃ পৌরুষেয়েন ক্রবিষা সং মংক্তে যো অশ্ব্যেন পশুনা যাতুধানঃ যো অঘ্ন্যায়া ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষানি হরসাপি বৃশ্চ ।। - ঋগ্বেদ ১০/৮৭/১৬ মন্ত্র 

ভাবার্থ : যে রাক্ষস নরমাংস সংগ্রহ করে অথবা অশ্ব প্রভৃতি পশুদিগের মাংস সংগ্রহ করে, যে হত্যা করিবার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরন করে, হে অগ্নি ! নিজ বলে তাহাদিকের মস্তক ছেদন করিয়া দাও ।

অথর্ববেদ ১৯/১/২৯ মন্ত্রে বলা হয়েছে -

অনা গোহত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং পুরুষং বধীঃ।

যত্র যত্রাসি নিহিতা ততসত্বোতথাপ যামসি পর্ণাল্লঘীযসী ভব।।

ভাবার্থ : নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ । কখনো মানুষ, গো, অশ্বাদিদের হত্যা করো না ।

           রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ।

           অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ ।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭)

রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ । যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা ।

   এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন । যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ । তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই ।

वेदो में मांसाहार का भ्रम

एतद्वा उ स्वादीयो यदधिगवं क्षीरं वा मांसं वा तदेव नाश्नीयात्।। 9।। (अथर्व.का. 9, पर्याय-3, सूक्त 6 मं.9)

इस मंत्र पर आचार्य सायण ने भाष्य नहीं किया है।

पं. श्रीपाद दामोदर सातवलेकर भाष्य
#पदार्थ- एतत् वै उ स्वादीयः = वह जो स्वादयुक्त है यत् अधिगवं क्षीरं वा मांसं वा= जो गौ से प्राप्त होने वाले दूध या अन्य मांसादि पदार्थ हैं तत् एव न आश्नीयात्= उसमें से कोई पदार्थ अतिथि के पूर्व भी न खावे।।9।।

#इस_पर_मेरा_मत
इसके भाष्य में आर्य विद्वान् प्रो. विश्वनाथ विद्यालंकार ने यहा मांस का अर्थ पनीर किया है, तो पं. क्षेमकरणदास त्रिवेदी ने मनन साधक (बुद्धिवर्धक) पदार्थ को मांस कहा है। सभी ने इस मंत्र तथा सूक्त के अन्य मंत्रों का विषय अतिथि सत्कार बताया है। इस मंत्र का देवता पं. क्षेमकरणदास त्रिवेदी की दृष्टि में अतिथि व अतिथिपति है, जबकि पं. सातवलेकर ने अतिथि विद्या माना है। पं. सातवलेकर ने इसका ऋषि ब्रह्मा माना है। छन्द पिपीलिका मध्या गायत्री है। {ब्रह्मा = मनो वै यज्ञस्य ब्रह्मा (श.14.6.1.7), प्रजापतिर्वै ब्रह्मा (गो.उ.5.8)। अतिथिः = यो वै भवति यः श्रेष्ठतामश्नुते स वा अतिथिर्भवति (ऐ.आ.1.1.1)। अतिथिपतिः = अतिथिपतिर्वावातिथेरीशे (क.46.4 - ब्रा.उ.को. से उद्धृत)। पिपीलिका = पिपीलिका पेलतेर्गतिकर्मणः (दै.3.9)। स्वादु = प्रजा स्वादु (ऐ.आ.1.3.4), प्रजा वै स्वादुः (जै.ब्रा.2.144), मिथुनं वै स्वादु (ऐ.आ.1.3.4)। क्षीरम् = यदत्यक्षरत् तत् क्षीरस्य क्षीरत्वम् (जै.ब्रा.2.228)। मांसम् = मांसं वै पुरीषम् (श.8.6.2.14), मांसं माननं वा मानसं वा मनोऽस्मिन् सीदतीति वा (नि.4.3), मांसं सादनम् (श.8.1.4.5)}

#मेरा_आधिदैविक_भाष्य
(एतत् वा स्वादीयः) ये अतिथि अर्थात् सतत गन्त्री प्राण, व्यान रश्मियां एवं अतिथिपति अर्थात् प्राणोपान रश्मियों की नियन्त्रक सूत्रात्मा वायु रश्मियां स्वादुयुक्त होती हैं अर्थात् ये विभिन्न छन्दादि रश्मियों के मिथुन बनाकर नाना पदार्थों को उत्पन्न करने में सहायक होती हैं। (यत्) जो प्राणव्यान व सूत्रात्मा वायु रश्मियां (अधिगवं क्षीरं वा मांसं वा) गो अर्थात् ‘ओम्’ छन्द रश्मि रूपी सूक्ष्मतम वाक् तत्व में आश्रित होती हैं, साथ ही अपने पुरीष= पूर्ण संयोज्य बल {पुरीषम्= पूर्णं बलम् (म.द.य.भा.12.46), ऐन्द्रं हि पुरीषम् (श.8.7.3.7), अन्नं पुरीषम् (श.8.1.4.5)} के साथ निरन्तर नाना रश्मि वा परमाणु आदि पदार्थों के ऊपर झरती रहती हैं। इन ‘ओम्’ रश्मियों का झरना ही क्षीरत्व तथा पूर्ण संयोज्यता ही मांसत्व कहलाता है। यहाँ ‘मांस’ शब्द यह संकेत देता है, कि ये ‘ओम्’ रश्मियां मनस्तत्व से सर्वाधिक रूप से निकटता से सम्बद्ध होती हैं किंवा मनस्तत्व इनमें सर्वाधिक मात्रा में बसा हुआ रहता है। ये ‘ओम्’ रश्मियां प्राणव्यान एवं सूत्रात्मा वायु रश्मियों के ऊपर झरती हुई अन्य स्थूल पदार्थों पर गिरती रहती हैं। (तत् एव न अश्नीयात्) इस कारण से विभिन्न रश्मि वा परमाणु आदि पदार्थों के मिथुन बनने की प्रक्रिया नष्ट नहीं होती। यह प्रक्रिया अतिथिरूप प्राणव्यान के मिथुन बनने किंवा इनके द्वारा विभिन्न मरुदादि रश्मियों को आकृष्ट करने की प्रक्रिया शान्त होने से पूर्व नष्ट नहीं होती है, बल्कि उसके पश्चात् अर्थात् दो कणों के संयुक्त होने के पश्चात् और मिथुन बनने की प्रक्रिया नष्ट वा बन्द हो सकती है, यह जानना चाहिए।

#इस_ऋचा_का_सृष्टि_पर_प्रभाव-
आर्ष व दैवत प्रभाव- इसका ऋषि ब्रह्मा होने से संकेत मिलता है कि इसकी उत्पत्ति मन एवं ‘ओम्’ रश्मियों के मिथुन से ही होती है। यह मिथुन इस छन्द रश्मि को निरन्तर व निकटता से प्रेरित करता रहता है। इसके दैवत प्रभाव से प्राण, व्यान तथा सूत्रात्मा वायु रश्मियां विशेष सक्रिय होकर नाना संयोग कर्मों को समृद्ध करती हैं।

#छान्दस_प्रभाव- इसका छन्द पिपीलिका मध्या गायत्री होने से यह छन्द रश्मि विभिन्न पदार्थों के संयोग के समय उनके मध्य तीव्र तेज व बल के साथ सतत संचरित होती है। इससे उन पदार्थों के मध्य विभिन्न पदार्थ तेज एवं बल को प्राप्त होते रहते हैं।

#ऋचा_का_प्रभाव- जब दो कणों का संयोग होता है, तब उनके मध्य प्राण, व्यान व सूत्रात्मा वायु रश्मियों का विशेष योगदान होता है। ये रश्मियां विभिन्न मरुद् रश्मियों द्वारा आकुंचित आकाश तत्व को व्याप्त कर लेती हैं। इसी समय इन रश्मियों के ऊपर सूक्ष्म ‘ओम्’ रश्मियां अपना सेचन करके इन्हें अधिक बल से युक्त करती हैं। इससे दोनों कणों के मध्य फील्ड निरन्तर प्रभावी होता हुआ उन दोनों कणों को परस्पर संयुक्त कर देता है।

#मेरा_आधिभौतिक_भाष्य
(एतत् वा स्वादीयः) ये जो स्वादिष्ट भोज्य पदार्थ होते हैं। (यदधिगवं क्षीरं वा) जो गाय से प्राप्त होने वाले दूध, घृत, मक्खन, दही आदि पदार्थ हैं अथवा (मांसम् वा) मनन, चिन्तन आदि कार्यों में उपयोगी फल, मेवे आदि पदार्थ। *(तदेव न अश्नीयात्) उन पदार्थों को अतिथि के खिलाने से पूर्व न खावे अर्थात् अतिथि को खिलाने के पश्चात् ही खाना चाहिए। यहाँ अतिथि से पूर्व न खाने का प्रसंग इसके पूर्व मंत्र से सिद्ध होता है, जहाँ लिखा है- ‘‘अशितावत्यतिथावश्नीयात्’’ = अशितावति अतिथौ अश्नीयात्। इस प्रकरण को पूर्व आधिदैविक भाष्य में भी समझें।
..................................................................

*{‘मांसम्’ पद की विवेचनाः- इस विषय में सर्वप्रथम आर्य विद्वान् पं. रघुनन्दन शर्मा कृत ‘‘वैदिक सम्पत्ति’’ नामक ग्रन्थ से आयुर्वेद के कुछ ग्रन्थों को उद्धृत करते हुए कहते हैं-

‘‘सुश्रुत में आम के फल का वर्णन करते हुए लिखा है कि-
अपक्वे चूतफले स्नाय्वस्थिमज्जानः सूक्ष्मत्वान्नोपलभ्यन्ते पक्वे त्वाऽविर्भूता उपलभ्यन्ते।
अर्थात् आम के कच्चे फल में नसें, हड्डियाँ और मज्जा आदि प्रतीत नहीं होती, किन्तु पकने पर सब आविर्भूत हो जाती हैं।

यहाँ गुठली के तन्तु रोम, गुठली हड्डियाँ, रेशे नसें और चिकना भाग मज्जा कहा गया है। इसी प्रकार का वर्णन भावप्रकाश में भी आया है। वहाँ लिखा है कि-
आम्रास्यानुफले भवन्ति युगपन्मांसास्थिमज्जादयो लक्ष्यन्ते न पृथक् पृथक् तनुतया पुष्टास्त एव स्फुटाः।
एवं गर्भसमु˜वे त्ववयवाः सर्वे भवन्त्येकदा लक्ष्याः सूक्ष्मतया न ते प्र्रकटतामायान्ति वृद्धिग्ताः।
अर्थात् जिस प्रकार कच्चे आम के फल में मांस, अस्थि और मज्जादि पृथक्-पृथक् नहीं दिखलाई पड़ते, किन्तु पकने पर ही ज्ञात होते हैं उसी प्रकार गर्भ के आरम्भ में मनुष्य के अंग भी ज्ञात नहीं होते, किन्तु जब उनकी वृद्धि होती है, तब स्पष्ट हो जाते हैं।

इन दोनों प्रमाणों से प्र्रकट हो रहा है कि फलों में भी मांस, अस्थि, नाड़ी और मज्जा आदि उसी प्रकार कहे गये हैं, जिस प्रकार प्राणियों के शरीर में। वैद्यक के एक ग्रन्थ में लिखा है कि-
प्रस्थं कुमारिकामांसम्।
अर्थात् एक सेर कुमारिका का मांस। यहाँ घीकुवार को कुमारिका और उसके गूदे को मांस कहा गया है।

कहने का तात्पर्य यह कि जिस प्रकार औषधियों और पशुओं के नाम एक ही शब्द से रखे गये हैं उसी प्रकार औषधियों और पशुओं के शरीरावयव भी एक ही शब्द से कहे गये हैं। इस प्रकार का वर्णन आयुर्वेद के ग्रन्थों में भरा पड़ा है। श्रीवेंकटेश्वर प्रेस, मुम्बई में छपे हुए ‘औषधिकोष’ में नीचे लिखे समस्त पशुसंज्ञक नाम और अवयव वनस्पतियों के लिए भी आये हुए दिखलाये गये हैं। हम नमूने के लिए कुछ शब्द उद्धृत करते हैं-
वृषभ- ऋषभकन्द
सिंही- कटेली, वासा
हस्ति- हस्तिकन्द
श्वान- कुत्ताघास, ग्रन्थिपर्ण
खर- खरपर्णिनी
वपा-झिल्ली= बक्कल के भीतर का जाला
मार्जार- बिल्लीघास, चित्ता
काक- काकमाची अस्थि- गुठली
मयूर- मयूरशिखा
वाराह- वाराहीकन्द
मांस- गूदा, जटांमासी
बीछू- बीछूबूटी
महिष- महिषाक्ष, गुग्गुल
चर्म- बक्कल
सर्प- सर्पिणीबूटी
श्येन- श्येनघंटी (दन्ती)
स्नायु- रेशा
अश्व- अश्वगन्धा, अजमोदा
मेष- जीवशाक
नख- नखबूटी
नकुल- नाकुलीबूटी
कुक्कुट (टी) शाल्मलीवृक्ष
मेद-मेदा
हंस- हंसपदी
नर- सौगन्धिक तृण
लोम(शा)- जटामासी
मत्स्य- मत्स्याक्षी
मातुल- घमरा
हृद- दारचीनी
मूषक- मूषाकर्णी
मृग- सहदेवी, इन्द्रायण, जटामासी, कपूर
पेशी- जटामासी
गो- गौलोमी पशु- अम्बाड़ा, मोथा
रुधिर- केसर
महाज- बड़ी अजवायन
कुमारी- घीकुमार
आलम्भन- स्पर्श

इस सूची में समस्त पशु पक्षियों और उनके अवयवों के नाम तथा समस्त वनस्पतियों और उनके अवयवों के नाम एक ही शब्द से सूचित किये गये हैं। ऐसी दशा में किसी शब्द से पशु और उसका अवयव ही ग्रहण नहीं किया जा सकता।

विज्ञ पाठक यहाँ विचारें कि ऐसी स्थिति में यहाँ ‘मांसम्’ पद से गौ आदि पशुओं वा पक्षियों का मांस ग्रहण करना क्या मूर्खता नहीं है? यहाँ कोई पाश्चात्य शिक्षा से अभिभूत तथा वैदिक वा भारतीय संस्कृति व इतिहास का उपहासकर्ता कथित प्रबुद्ध किंवा मांसाहार का पोषक संस्कृत भाषा के ऐसे नामों पर व्यंग्य न करें, इस कारण हम उन्हें अंग्रेजी भाषा के भी कुछ उदाहरण देते हैं-
1. Lady Finger भिण्डी को कहते हैं। यदि भोजन विषय में कोई इसका अर्थ किसी महिला की अंगुली करे, तब क्या उसका अपराध नहीं होगा?
2. Vegetable किसी भी शाक वा वनस्पति को कहते हैं। उधर Chamber dictionary में इसका अर्थ dull understanding person भी दिया है। यदि Vegetable खाते हुए किसी व्यक्ति को देखकर कोई उसे मन्दबुद्धि मनुष्य को खाद्य पदार्थ कहे, तब क्या यह मूर्खता नहीं होगी।
3. आयुर्वेद में एक पौधा है, गोविष, जिसे हिन्दी में काकमारी तथा अंग्रेजी में Fish berry कहा जाता है। यदि कोई इसका अर्थ मछली का रस लगाये, तो उसे क्या कहा जाए?
4. Potato आलू को कहते हैं, उधर इसका अर्थ A mentally handicaped person भी होता है, तब क्या आलू खाने वाले को मानसिक रोगी मनुष्य को खाने वाला माना जाये?
5. Hag यह एक प्रकार का फल है, उधर An ugly old woman को भी hag कहा जाता है, तब क्या यहाँ भी कोई hag फल का अर्थ उलटा ही लगाने का प्रयास करेगा?

अब हम इस पर विचार करते हैं कि फलों के गूदे को मांस क्यों कहा? जैसा कि अपने आधिदैविक भाष्य में लिख चुके हैं कि पूर्णबलयुक्त वा पूर्णबलप्रद पदार्थ को मांस कहा जाता है। संसार में सभी मनुष्य फलों के गूदे का ही प्रयोग करते हैं, अन्य भागों का नहीं, क्योंकि फल का सार भाग वही है। वही भाग बल-वीर्य का भण्डार है अर्थात् उसके भक्षण से बल-वीर्य-बुद्धि आदि की वृद्धि होती है। अब कोई प्रश्न करे कि प्राणियों के शरीर का मांस क्यों मांस कहलाया? इसका उत्तर यह है कि किसी भी प्राणी के शरीर का बल उसकी मांसपेशियों के अन्तर्गत ही निहित है, इस कारण से यह भी मांस कहलाया जाता है। जैसे शाकाहारी प्राणी फलों के गूदे का ही विशेष भक्षण करते हैं, वैसे ही सिंहादि मांसाहारी प्राणी, प्राणी के मांस भाग को ही विशेष रूप से खाते हैं। यह दोनों में समानता है। जो स्थान फलों में गूदे का है, वही स्थान प्राणियों के शरीर में मांस का है। मनुष्य प्राकृतिक रूप से केवल शाकाहारी व दुग्धाहारी प्राणी है, इस कारण वेदादि शास्त्रों में प्राणियों के मांस खाने की चर्चा वेदादि शास्त्रों की परम्परा से सर्वथा अनभिज्ञता का परिचायक है। ऐसी चर्चा करने वाले कथित वेदज्ञ, चाहे विदेशी हों वा स्वदेशी, हमारी दृष्टि में वे वेदादि शास्त्रों की वर्णमाला भी नहीं जानते, भले वे व्याकरणादि शास्त्रों के कितने ही बड़े अध्येता-अध्यापक क्यों न हों। मांसाहार के विषय में हम पृथक् से एक ग्रन्थ लिखने पर फिर कभी विचार करेंगे, जिसमें विश्वभर के मांसाहारियों की सभी शंकाओं का समाधान होगा।

#प्रश्न- वेद में ‘मांसम्’ पद का अर्थ प्राणियों का मांस कदापि नहीं हो सकता, इसे आपका पूर्वाग्रह क्यों न माना जाये; जो केवल शाकाहार के आग्रहवश ही किया गया है?

#उत्तर- जिस परम्परा में सामान्य योगसाधक के लिए अहिंसा को प्रथम सोपान कहा गया हो, जहाँ मन, वचन, कर्म से कहीं भी व कभी भी सभी प्राणियों के प्रति वैर त्याग अर्थात् प्रीति का संदेश दिया गया हो, वहाँ सिद्धपुरुष योगियों एवं उसी क्रम में अपनी योगसाधना द्वारा ईश्वर व मंत्रों के साक्षात्कृतधर्मा महर्षियों, उनके ग्रन्थों एवं वेदरूप ईश्वरीय ग्रन्थों से हिंसा का संदेश देना मूर्खता व दुष्टता नहीं है, तो क्या है? जो विद्वान् वैदिक अहिंसा का स्वरूप देखना चाहे, वे पातंजल योगदर्शन के व्यासर्षि भाष्य को स्वयं पढ़ कर देखें। इस ऐतरेय ब्राह्मण में जहाँ प्रायः सभी भाष्यकारों ने पशुओं का नृशंस वध एवं उसके अंगों के भक्षण का विधान किया है, वहाँ हमने उसका कैसा गूढ़ विज्ञान प्रकाषित किया है, यह पाठक इस ग्रन्थ के सम्पूर्ण अध्ययन से जान सकते हैं। पाठकों की जानकारी के लिए हम वेद से ही कुछ प्रमाण देते हैं-

यदि नो गां हंसि यद्यश्वं यदि पूरुषम। तं त्वा सीसेन विध्यामः।। (अथर्व.1.16.4)
अर्थात् तू यदि हमारी गाय, घोड़ा वा मनुष्य को मारेगा, तो हम तुझे सीसे से बेध देंगे।

मा नो हिंसिष्ट द्विपदो मा चतुष्पदः।। (अथर्व.11.2.1)
अर्थात् हमारे मनुष्यों और पशुओं को नष्ट मत कर। अन्यत्र वेद में देखें-
इमं मा हिंसीद्र्विपाद पशुम्। (यजु.13.47)
अर्थात् इस दो खुर वाले पशु की हिंसा मत करो।
इमं मा हिंसीरेकशफं पशुम्। (यजु.13.48)
अर्थात् इस एक खुर वाले पशु की हिंसा मत करो।
यजमानस्य पशुन् पाहि। (यजु.1.1)
यजमान के पशुओं की रक्षा कर।
आप कहेंगे यह बात यजमान वा किसी मनुष्य विशेष के पालतू पशुओं की हो रही है, न कि हर प्राणी की।
इस भ्रम के निवारणार्थ अन्य प्रमाण-
मित्रस्याहं चक्षुषा सर्वाणि भूतानि समीक्षे। (यजु.36.18)
अर्थात् मैं सब प्राणियों को मित्र की भांति देखता हूँ।
मा हिंसीस्तन्वा प्रजाः। (यजु.12.32)
इस शरीर से प्राणियों को मत मार।
मा स्रेधत। (ऋ.7.32.9) अर्थात् हिंसा मत करो।
महर्षि जैमिनी के पश्चात् सबसे महान् वेदवेत्ता महर्षि दयानन्द के मांसाहार के विषय में विचारों को भी पाठक पढ़ें-
‘‘मद्यमांसाहारी म्लेच्छ कि जिनका शरीर मद्यमांस के परमाणुओं से ही पूरित है, उनके हाथ का न खावें।’’
‘‘इन पशुओं को मारने वाले को सब मनुष्यों की हत्या करने वाले जानियेगा।’’
‘‘जब से विदेशी मांसाहारी इस देश में आकर गो आदि पशुओं को मारने वाले मद्यपायी राज्याधिकारी हुए हैं, तब से क्रमशः आर्यों के दुःख की सीमा बढ़ती जाती है। -सत्यार्थ प्रकाश, दशम समुल्लास

देखिये दया के सागर ऋषि दयानन्द क्या कहते हैं-
‘‘पशुओं के गले छुरे से काटकर जो अपना पेट भरते हैं, सब संसार की हानि करते हैं। क्या संसार में उनसे भी अधिक कोई विश्वासघाती, अनुपकारी, दुःख देने वाले पापीजन होंगे?’’
‘‘हे मांसाहारियो! तुम लोग जब कुछ काल के पश्चात् पशु न मिलेंगे, तब मनुष्यों का मांस भी छोड़ोगे वा नहीं?’’
‘‘हे धार्मिक लोगो! आप इन पशुओं की रक्षा तन, मन और धन से क्यों नहीं करते?’’ (गोकरुणानिधि)
आशा है बुद्धिमान् एवं निष्पक्ष पाठकों की मांसाहार की भ्रांति निर्मूल हो चुकी होगी।
...................................................................

#मेरा_आध्यात्मिक_भाष्य
{मांसम् = मन्यते ज्ञायतेऽनेन तत् मांसम् (उ.को.3.64), मांसं पुरीषम् (श.8.7.4.19), (पुरीषम् = पुरीषं पृणातेः पूरयतेर्वा - नि.2.22; सर्वत्राऽभिव्याप्तम् - म.द.य.भा.38.21; यत् पुरीषं स इन्द्रः - श.10.4.1.7; स एष प्राण एव यत् पुरीषम् - श.8.7.3.6)}

(एतत् वा उ स्वादीयः) योगी पुरुष के समक्ष परमानन्द का आस्वादन कराने वाले ये पदार्थ विद्यमान रहते हैं, जिनके कारण जीव का परमात्मा के साथ सायुज्य रहता है, (यदधिगवं क्षीरं वा मांसं वा) वे पदार्थ योगी की मन आदि इन्द्रियों में प्रतिष्ठित होते हैं। वे पदार्थ क्या हैं, इसका उत्तर यह है कि सर्वत्र अभिव्याप्त परमैश्वर्य सम्पन्न इन्द्ररूप परमात्मा से झरने वाली ‘ओम्’ वा गायत्री आदि वेदों की ऋचाएं ही वे पदार्थ हैं, जो योगी की इन्द्रियों व अन्तःकरण में निरन्तर स्रवित होती रहती हैं। योगी उन आनन्दमयी ऋचाओं का रसास्वादन करने लगता है, तब वह परमानन्द का अनुभव करने लगता है। (तदेव न अश्नीयात्) योगी उन ऋचाओं के आनन्द को उस समय तक अनुभव नहीं कर पाता, जब तक कि अतिथिरूप प्राण तत्व, जो योगी के मस्तिष्क व शरीर में सतत संचरित होते हैं, उन ऋचाओं के साथ संगत नहीं होते हैं। यहाँ अतिथि से पूर्व का प्रकरण पूर्ववत् समझें।

#भावार्थ- जब कोई योगी योगसाधना करता है और एतदर्थ प्रणव वा गायत्री आदि का यथाविध जप करता है, तब सर्वत्र अभिव्याप्त परमैश्वर्यवान् इन्द्ररूप ईश्वर से निरन्तर प्रवाहित ‘ओम्’ रश्मियां उस योगी के अन्तःकरण तथा प्राणों के अन्दर स्रवित होती रहती है। इससे वह योगी उन रश्मियों का रसास्वादन करता हुआ आनन्द में निमग्न हो जाता है।

वेदविज्ञान-आलोकः से उद्घृत (पूर्वपीठिका - वेद का यर्थाथ स्वरूप, नवमोध्याय)

✍ आचार्य अग्निव्रत नैष्ठिक

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ