মনুস্মৃতিতে নারী - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

27 December, 2021

মনুস্মৃতিতে নারী

ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারী

অনেকে অভিযোগ করেন, মনুসংহিতা সামগ্রিকরূপে একটি নারীবিরোধী শাস্ত্র। এতে মাতৃশক্তি বা নারীকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। একথা বহুজন বিদিত যে, মনুসংহিতা নামক শাস্ত্রটিতে বহু প্রক্ষিপ্ত অংশ রয়েছে। এর মানে এই যে- জাতিগত বা সময়গত কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই পবিত্র গ্রন্থটিতে অনেকে কাঁটাছেড়াঁ করা হয়েছে। তা যাই হোক, এই জাল শ্লোকগুলো আলাদা করা খুব কঠিন কিছু নয়। কেউ যদি আসল মনুসংহিতা শাস্ত্রটি অধ্যয়ন করেন তবে তিনি গর্বভরে দাবি করতে পারবেন যে, পৃথিবীতে বেদব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থে নারীদের প্রতি এত সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। আর দেয়া হয়নি এত অধিকারও। এমনকি মনুসংহিতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হলে আধুনিক নারীবাদী বইগুলোর চিন্তাধারারও উন্নয়নের প্রয়োজন।
আমরা এখন এমন একটি শ্লোক পড়ব যার অর্থ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে যে নারীরাই হচ্ছে কোন উন্নত সমাজের ভিত্তিস্বরূপ। এটি মনুসংহিতার তৃতীয় অধ্যায়ের (ধর্মসংস্কার প্রকরণ) ৫৬তম শ্লোকঃ
“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, দুর্দশা আর ব্যর্থতার গ্লানি তাদের বয়ে বেড়াতে হয়”।
এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। মহর্ষি মনুর এই উপদেশ অবহেলা করে আজ আমরা আমাদের সকল মহত্ত্ব সত্ত্বেও দাসে পরিণত হয়েছি।
বহিরাক্রমনের পর শত শত বছর আমরা তাঁর কথায় কর্ণপাত না করায় আমাদের অবস্থা বাজে থেকে নিকৃষ্ট পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মত মহান সমাজ সংস্কারকদের কল্যাণমুখী পদক্ষেপের কারণে আজ আমরা ধীরে ধীরে অতীতের গৌরবময় স্থানে ফিরে যাচ্ছি, যেখানে নারীদের দেবতার ন্যায় সম্মান করা হতো।
আজকের দিনেও অনেক রক্ষণশীল ইসলামিক দেশ নারীদের অর্ধ-বুদ্ধিমান, দুইজন নারী একজন পুরুষের সমান এবং নারীকে পুরুষের সমতুল্য সম্মান পাওয়ার অযোগ্য বলে মনে করা হয়। সেসব স্থান নরকের চেয়েও জঘণ্য। ইউরোপীয়রাও বহুকাল যাবত্ নারীদের হেয়কারী বাইবেলের মতবাদ গ্রহণ করে আসছিল এবং এতকাল ইউরোপ ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন স্থানগুলোর একটি। এজন্যই বোধ হয় ভারতীয়দের বিদেশযাত্রা নিষেধ করা হয়েছিল।
কিন্তু খ্রীস্টিয় সংস্কারযুগে ঘটনাচক্র পাল্টে যায়। বাইবেলকে গুরুতরভাবে গ্রহণ করা বন্ধ হয়। ফলে সেখানে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। এখন আবার নারীদের অবস্থান ইন্দ্রিয়ভোগের উপকরণের ন্যায়; সম্মানীয় মাতৃশক্তির মর্যাদা সেখানে নারীদের নেই। আর তাই আজও বিবিধ জাগতিক উন্নতিলাভের পরেও পাশ্চাত্য সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক শান্তির অভাব খুবই প্রবল।
চলুন, মনুসংহিতা থেকে আরও কিছু শ্লোক দেখা যাক। আর পাশাপাশি তা আমরা সমাজে প্রয়োগের চেষ্টা করি।
সুখী নারীর গুরুত্বঃ
“একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন”। (মনুসংহিতা ৩/৫৫)
“যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭)
“যে বংশকে উদ্দেশ্য করে স্ত্রীলোকেরা অপমানিত বা বৈষম্যের শিকার হয়ে অভিশাপ করেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়”। (মনুসংহিতা ৩/৫৮)
“যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন দ্বারা খুশী রাখবে এবং উত্তম অলংকার, পোশাক ও খাদ্যদ্বারা প্রীত রাখবে। স্ত্রীজাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৯)
“যে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে তার সমগ্র পরিবারের জন্য দুর্দশা বয়ে আনে। আর যদি স্ত্রী পরিবারের প্রতি সুখী থাকেন, তবে সমগ্র পরিবার শোভাময় হয়ে থাকে”। (মনুসংহিতা ৩/৬২)
“স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে থাকে। তারা নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ হয়। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তারাই গৃহের শ্রী”। (মনুসংহিতা ৯/২৬)
আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ‘ঘরের লক্ষ্মী’ বা ‘গৃহলক্ষ্মী’ বলা হয়।
“প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে স্ত্রীরাই সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উত্পাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়”। (মনুসংহিতা ৯/২৮)
অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উত্স।
“নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ৯/৯৬)
তাই যারা বেদ ও বৈদিক আচার অনুষ্ঠানে মহিলাদের অংশগ্রহণ অস্বীকার করেন তারা বৈদিক হিন্দু ধর্ম তথা মানবধর্ম বিরোধী।
“জ্ঞানী ব্যক্তিগণ কখনো মাতা-পিতা, ভগিনী, পুত্রবধূ, পুত্র, স্ত্রী, কন্যা ও ভৃত্যবর্গ –এদের সাথে বিবাদ করবেন না। (মনুসংহিতা ৪/১৮০)
“যে পিতা কন্যাকে বিবাহযোগ্য সময়ে কন্যাকে পাত্রস্থ না করেন, যে স্বামী স্ত্রীর ন্যায্য দাবী পূরণ না করেন এবং যে সন্তান তার বিধবা মাতার রক্ষণাবেক্ষণ করেন না, তারা সকলেই নিন্দার পাত্র হন”। (মনুসংহিতা ৯/৪)
বহুবিবাহ পাপঃ
“পতি ও পত্নী মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে থাকবেন। তারা অন্য কোন জীবনসঙ্গী গ্রহণ করবেন না বা ব্যাভিচার করবেন না। এই হলো নারী-পুরুষের পরম ধর্ম”। (৯/১০১)
তাই যে সব সমাজ বহুবিবাহ অথবা যৌন-দাসত্ব ও সাময়িক বিবাহের মতো জঘণ্য আচারকে অনুমোদন করে তারা ধর্মসূত্র লঙ্ঘনের দায়ে দুর্দশা ভোগ করতে বাধ্য।
স্ত্রীলোকের স্বাতন্ত্র্যঃ
“নারীদের টাকা-পয়সা ঠিকমত হিসাব করে জমা রাখা এবং খরচ করা, গৃহ ও গৃহস্থালী শুদ্ধ রাখা, ধর্ম-কর্ম সমূহের আয়োজন করা, অন্ন প্রস্তুত করা ও শয্যাসনাদির তত্ত্বাবধান করা –এসব কাজে স্ত্রীলোকদের স্বাতন্ত্র্য ও নেতৃত্ব দানে স্বাধীনতা প্রদান করবে। (মনুসংহিতা ৯/১১)
এই শ্লোকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, স্ত্রীলোকের ধর্মকার্যে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। স্ত্রীলোকেরা বরং তাতে নেতৃত্ব দেবেন। তাই যারা বলে স্ত্রীলোকদের বেদ অভ্যাস কোন প্রয়োজন নেই তারা অবশ্যই বেদ ও মনুস্মৃতির বিরোধী। এসব সংকীর্ণ মূর্খ ব্যক্তিরাই জাতির দূর্দশার কারণ। এরকম স্ত্রীজাতির মানহানিকর মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিরা অসহনীয়।
“যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে ‘অরক্ষিতা’ থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা-আপনি আত্মরক্ষায় তত্পর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা ‘সুরক্ষিতা’ হয়ে থাকে। তাই স্ত্রীলোকদের আটকে রাখা নিষ্ফল। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব সামর্থ্য ও মনোভাবের উপর নির্ভরশীল”। (মনুসংহিতা ৯/১২)
এই শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নিরাপত্তার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখা নিষ্ফলতার সামিল। বিপরীতক্রমে তাকে নিরাপদ রাখতে হলে তাকে অধিকার দিতে হবে এবং সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে নিজেদের তারা সুরক্ষিত রাখতে পারে আর কুসঙ্গ যেন তাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে। মেয়েদের চারদেয়ালে আবদ্ধ করে রাখা মনুর মতাদর্শের বিরোধী।
নারীর নিরাপত্তা বিধান:
“স্ত্রীলোককে রক্ষণরূপ ধর্ম সকল বর্ণের পক্ষে শ্রেষ্ঠ ধর্ম, অর্থাত্ শ্রেষ্ঠ কর্তব্য। তাই অন্ধ, পঙ্গু ও দুর্বল স্বামীরাও নিজ নিজ স্ত্রীকে যত্নপূর্বক রক্ষা করবে”। (মনুসংহিতা ৯/৬)
“স্ত্রী জাতি সবসময় নিজেদের অনাচার ও অধর্ম বা পাপ থেকে দূরে রাখবেন। কারণ স্ত্রীর চরিত্র নষ্ট হলে সমাজ নষ্ট হবার উপক্রম হয়”। (মনুসংহিতা ৯/৫)
“স্ত্রীলোক কখনো পিতা, স্বামী বা পুত্রের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন না। কারণ তা পিতৃকুল ও পতিকুল উভয়কুলকেই কলঙ্কিত করে তোলে”। (মনুসংহিতা ৫/১৪৯)
একথা দ্রষ্টব্য যে, ৯/১২ নং শ্লোক হতে বোঝা যায় এই সুরক্ষা কখনোই কোন সংকীর্ণতা বা বাধানিষেধ বোঝায় না। যে জাতি বিপথগামী ব্যক্তিদের আক্রমন হতে স্ত্রীলোকদের রক্ষা করে না, তারা তাদের সর্বনাশের ভাগ্য নিজেরাই লিখে থাকে।
এই কারনেই যখন পশ্চিমা ও মধ্য এশিয়া থেকে বর্বর দস্যুরা ভারতবর্ষে হানা দিয়েছিল, আমাদের বীর যোদ্ধারা আমাদের নারীদের সম্মান রক্ষার্থে নিজেদের জীবন পর্যন্ত উত্সর্গ করে গেছেন ।
কন্যাদের বিবাহ:
“কন্যা বিবাহ উপযুক্ত কাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পিতৃগৃহেই অবস্থান করবে সেও ভাল, তবুও গুণহীন বরের (অর্থাত্ বিদ্যা, শৌর্য, সুন্দর চেহারা, উপযুক্ত বয়স, মহত্ত্ব, লোক ও শাস্ত্রনিষিদ্ধ দ্রব্যাদি বর্জন এবং কন্যার প্রতি অনুরাগ –এইগুলি নেই যে পাত্রের) হাতে কন্যাকে দান করবে না”। (মনুসংহিতা ৯/৮৯)
“কুমারী কন্যা ঋতুমতী হলেও তিন বত্সর পর্যন্ত গুণবান বরের অপেক্ষা করবে; ঐ সময়ের পরও যদি পিতা তার বিবাহ না দেন তাহলে এ পরিমাণ কাল অপেক্ষার পর কন্যা নিজসদৃশ পতি নিজেই বেছে নেবেন”। (মনুসংহিতা ৯/৯০)
“ঋতুমতী হওয়ার তিন বত্সর পরেও যদি ঐ কন্যা পাত্রস্থ করা না হয়, তাহলে সে যদি নিজেই পতি বরণ করে নেয়, তার জন্য সে কোন পাপের ভাগী হবে না। কিংবা সেই পতিরও কোন পাপ হবে না”। (মনুসংহিতা ৯/৯১)
নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার:
“কন্যা পুত্রের সমান। তার উপস্থিতিতে কেউ তার সম্পত্তিতে অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারেন না”। (মনুসংহিতা ৯/১৩০)
“মাতার যা স্ত্রীধন থাকবে, তা কুমারী কন্যারই থাকবে”। (মনুসংহিতা ৯/১৩১)
তাই মনুর মতে, পিতার সম্পত্তিতে কন্যার পুত্রের সমান অধিকার থাকার কারণে, মায়ের সম্পত্তিতে তাদের একক অধিকার থাকবে। এটি করার কারণ মেয়েদের যাতে গলগ্রহ হয়ে থাকতে না হয়। কারণ, একজন মর্যাদাপূর্ণ নারীই সুখী পরিবার তথা সমাজ গঠনের মূল স্তম্ভ।
“যদি কোন ব্যক্তির রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় বা স্ত্রী না থাকে, তাহলে তার সম্পত্তি তার ভাই-বোনদের মধ্যে সমানভাগে বণ্টিত হবে। যদি জ্যেষ্ঠভ্রাতা ভগ্নিদের ধনদানে অস্বীকার করে তাহলে রাজা তাদের শাস্তি দেবেন”। (মনুসংহিতা ৯/২১২-২১৩)
“যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন”। (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯)
যৌতুক দানে নিষেধ:
“কন্যার আত্মীয়রা যদি কন্যার স্ত্রীধন (সম্পত্তি, ধনাদি, স্ত্রীযান বা বস্ত্রাদি) অপহরন করে তবে তারা অধোগতি প্রাপ্ত হয়। (মনুসংহিতা ৩/৫২)
তাই মনুস্মৃতিতে যে কোন যৌতুক নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই মেয়েদের সম্পত্তিতে কেউ হাত দিতে পারবে না।
পরবর্তী শ্লোকে এই বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যে কোন স্পর্শযোগ্য (tangible) সম্পত্তির সামান্যতম আদান-প্রদান মহতী বিবাহের নীতির বিরোধী। প্রকৃতপক্ষে মনু বলেন যে, যৌতুকযুক্ত কোন বিবাহ হচ্ছে ‘আসুরী বিবাহ’।
নারীদের ক্ষতিকারীদের কঠোর শাস্তি:
“নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে”। (মনুসংহিতা ৮/৩২৩)
“যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে”। (মনুসংহিতা ৯/২৩২)
“যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়”। (মনুসংহিতা ৮/৩৫২)
মজার হলেও আজকাল অনেক বিচারক নপুংসকরণকেই ধর্ষণের উপযুক্ত শাস্তি বলে রায় দিচ্ছেন। তারা মনে করেন এতে করে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যাওয়া ধর্ষণের হার কমানো সম্ভব।
“যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে”। (মনুসংহিতা ৮/২৭৫)
“যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে”। (মনুসংহিতা ৮/৩৮৯)
নারীর অগ্রাধিকার:
নারীর অগ্রস্থান দেবার প্রবাদবাক্যটিও মনে হয় মনুস্মৃতি থেকে উদ্ভব হয়েছে।
“বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ২/১৩৮)
“নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে”। (মনুসংহিতা ৩/১১৪)
আমরা কি এবার মাতৃশক্তির প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক এই সত্য মনুবাদ সমাজে প্রয়োগ করতে একসাথে কাজ করতে পারি না? এছাড়া আর কিভাবে সমাজ, জাতি ও বিশ্বে উন্নতি ধরে রাখা সম্ভব?
তথ্যসূত্র: ড. সুরেন্দ্র কুমার, পি.টি গঙ্গাপ্রসাদ উপাধ্যায় এবং স্বামী দয়ানন্দ সারস্বত রচনাবলী

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ