বাণীর চার রূপ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 December, 2020

বাণীর চার রূপ

চত্বারি বাক্ পরিমিতা পদানি তানি বিদুর্ব্রাহ্মণা য়ে মনীষিণঃ। 

গুহা ত্রীণি নিহিতা নেঙ্গযন্তি তুরীয়ং বাচো মনুষ্যা বদন্তি।। (ঋ০ ১/১৬৫/৪৫)

বানীর রূপান্তর

এর ভাষ্যে মহর্ষি দয়ানন্দ জী চার প্রকারের বাণী বৈয়াকরণের দৃষ্টিতে  নাম, আখ্যান, উপসর্গ এবং নিপাতের রূপে বর্গীকৃত হয়। আচার্য সায়ণ ইহার ভাষ্যে বাণীর বর্গীকরণ বৈয়াকরণের দৃষ্টির অতিরিক্ত নৈরুক্ত আদির দৃষ্টিকে নিয়েও করা হয়েছে। ইহাতে এক বর্গীকরণআছে- পরা,

देवता: वाक् ऋषि: दीर्घतमा औचथ्यः छन्द: भुरिक्त्रिष्टुप् स्वर: धैवतः

च॒त्वारि॒ वाक्परि॑मिता प॒दानि॒ तानि॑ विदुर्ब्राह्म॒णा ये म॑नी॒षिण॑:।

गुहा॒ त्रीणि॒ निहि॑ता॒ नेङ्ग॑यन्ति तु॒रीयं॑ वा॒चो म॑नु॒ष्या॑ वदन्ति ॥[ऋग्वेद १.१६४.४५]

চত্বারি বাক্পরিমিতা পদানি তানি বিদুর্ব্রাহ্মণা য়ে মনীষিণ:।
গুহা তৃণি নিহিতা নেঙ্গয়ন্তি তুরীয়ম্ বাচো মনুষ্যা বদন্তি॥

পদার্থঃ (য়ে) যে (মনীষিণঃ) মনকে গতিরোধকারী (ব্রাহ্মণাঃ) ব্যাকরণ, বেদ আর ঈশ্বরকে জ্ঞাতবান বিদ্বান জন (বাক্) বাণীকে (পরিমিতা) পরিমাণ যুক্ত  যে (চত্বারি) নাম, আখ্যাত, উপসর্গ আর নিপাত চার (পদানি) জানার যোগ্য পদ আছে (তানি) তাহাকে (বিদুঃ) জানেন, তাহার মধ্যে থেকে (ত্রীণি) তিন (গুহা) বুদ্ধিতে (নিহিতা) ধরার (ন, ইঙ্গয়ন্তি) চেষ্টা করে না। যে (মনুষ্যাঃ) সাধারণ মনুষ্য আছে, তাঁহারা  (বাচঃ) বাণীকে (তুরীয়ম্) চতুর্থ ভাগ অর্থাৎ নিপাত মাত্রকে  (বদন্তি) বলা হয়।। ১।১৬৪।৪৫।।


ভাবার্থঃ বাক্ রশ্মি চার প্রকার। তথা সাইন্ড চার প্রকার। ১) পরা,২) পশ্যন্তি,৩) মধ্যমা,৪) বৈখরী। ইহার মধ্য একটি বাক্ মনুষ্য জানে যটি বৈখরী আর তিনটি সাধারণ মনুষ্য জানে না। এই তিন বানী হৃদয় গুহা বা অাকাশে বা প্রকৃতিরূপ গুহায় প্রতিষ্ঠিত অাছে। বিদুষী পন্ডিত উচ্চকোটির যোগীগন তাহাকে জানেন। বা বিদ্বান গন তাহাকে জানেন।।৪৫।।

মহর্ষি যাস্কজী নিরুক্ত ১৩/৯ তে এই মন্ত্রের ব্যাখ্যা করে স্পষ্ট করেছেন। তিনি ধ্বনির প্রকারে ছয় ধরনের মতামত উদ্ধৃত করেন। তাদের শ্রেণীবিভাগ নিম্নরূপ -
১. আর্ষ মত:
আর্ষ মত অনুসারে ধ্বনি চার প্রকার যথা ও৩ম্, ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ এই হলো চার প্রকার ধ্বনি।
মহর্ষি মনুও মনুস্মৃতিতে এটি নিশ্চিত করেছেন -
অকারম্ চাপ্যুকারম্ চ মকারম্ চ প্রজাপতিঃ।
বেদত্রয়ান্নিরদুহদ্ভূর্ভুবঃ স্বরিতীতি চ।
(প্রজাপতিঃ) পরমাত্মা অকারম্ উকারম্ চ মকারম্ ও৩ম্ শব্দের ‘অ’ ‘উ’ এবং ‘ম্’ অক্ষরকে (অ+উ+ম্=ওম্) (চ) তথা (ভূঃ ভুবঃ স্বঃ ইতি) ‘ভূঃ’ ‘ভুবঃ’ ‘স্বঃ’ গায়েত্রী মন্ত্রের এই তিন ব্যাহৃতিকে বেদত্রয়াত্ নিরদুহত্ তিন বেদ থেকে ছেকে সাররূপে বের করেন।
২. বৈয়াকরণ মত:
ব্যাকরণের বিদ্বানগণের অনুসারে ধ্বনি চার প্রকার যথা নাম, অখ্যাত, উপসর্গ এবং নিপাত এই মতকে মহর্ষি দয়ানন্দজী লিখেছেন।
৩. য়াজ্ঞীক মত:
যজ্ঞকারগণ ধ্বনি চার প্রকার যথা মন্ত্র, কল্প, ব্রাহ্মণ এবং ব্যবহারিকী লোক ভাষা এই চার প্রকার মানেন।
মন্ত্র যাহা বেদ সংহিতায় আছে
কল্প শ্রউৎ সূত্রাদি গ্রন্থে
ব্রাহ্মণ ঐতরেয়, শতপথ আদি গ্রন্থে
আর চতুর্থ যা লোক মানুষের মধ্যে প্রচলিত।
৪. নৈরুক্ত মত:
নৈরুক্তগণ ধ্বনিকে মানেন যথা ঋক্, যজু, সাম আর লোক ভাষা।
শৈলীর দৃষ্টিতে বেদ তিন প্রকার যথা ঋক্, যজু, সাম আর চতুর্থ যা লোক মধ্যে প্রচলিত।
৫. আত্মবাদী মত:
আত্মবাদী মত অনুসারে পশুর ধ্বনি, বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি, সিংহ আদি মাংসাহারী পশুদের ধ্বনি আর মানুষের ব্যবহারিক ধ্বনি।
৬. মৈত্রায়ণী সংহিতার মত:
মৈত্রায়ণী সংহিতায় ধ্বনি চার প্রকার বলা হয়েছে যথা ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ ইহা ধ্বনি এবং পশু অর্থাৎ বিভিন্ন মরুৎ এবং ছন্দ রশ্মিদের রূপে ব্রহ্মান্ডে ব্যাপ্ত ধ্বনি।
যে ধ্বনি পৃথ্বীতে আছে সেই ধ্বনি অগ্নিতে আছে, আর সেই ধ্বনি রথান্তর সাম-এ আছে। যে ধ্বনি মহাকাশে হয় তাহাই সূক্ষ্ম বায়ুতে বিদ্যমান থাকে। যে ধ্বনি সূর্যাদি লোকে হয় তাহাই তার কিরণেও হয় আর তীব্র বজ্রপাত বিদ্যুতে এই ধরনের ধ্বনি পাওয়া যায়। অন্য ধ্বনি পশু প্রাণী অথবা মানুষ্যতে লোকভাষা হয়ে থাকে। এছাড়া যা রয়েছে তা ঈশ্বর ব্রাহ্মণদের মধ্যে ধারণ করেন। এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ড হলো ধ্বনির সংঘনিত রূপ।
অন্য মত:
এক অন্য মত আছে, ভূমিতে বিচরণকারী জীব যে ধ্বনি করে সে এক ধ্বনি, উড়ন্ত পক্ষী যে ধ্বনি করে সে এক ধ্বনি, ছোটো ছোটো কীটপতঙ্গ যে ধ্বনি করে সে এক ধ্বনি আর মানুষ্য যা বলে সে এক ধ্বনি। এই মত অনুসারে এই হলো চার প্রকারের ধ্বনি।
ইহারই মন্ত্রের ভাষ্যতে আচার্য সায়ন যিনি ধ্বনির বর্গীকরণ করেন যথা পরা, পশ্যন্তি, মধ্যমা এবং বৈখরী।
এই মত নিরুক্ত হতে ভিন্ন। এই মতই ভগবান শ্রীকৃষ্ণজী মহারাজ ‘সাম্বপঞ্চাশিকা’র তৃতীয় শ্লোকে বলেছেন।
ধ্বনির এই চার রূপের চর্চা ব্যাকরণ মহাভাষ্যের ভাষ্য প্রদীপে আচার্য কয়্যট নাগেশ ভট্ট-ও করেন, তিনি ‘বাক্য পদীয়ম্’ এর অনেক শ্লোককে উদ্ধৃত করেন। ‘বাক্য পদীয়ম্’ যা মহাবিদ্বান ভৃতহরিজী মহারাজ লিখেছেন তার ব্যাখ্যা পণ্ডিত ক্ষেমরাজজী করেন, উনার এই ব্যাখ্যাতে টিকা লিখেছেন ডাক্তার শিবশঙ্কর অরস্থিজী। এই টিকাতে তিনি এক অজ্ঞাত রচিত শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন -
বৈখরী শব্দ নিষ্পত্তিরর্মধ্যমা শ্রুতিগোচরঃ ।
দ্য়োতিতার্থঃ চ পশ্যন্তি সূক্ষ্মা বাগ ন পায়নী ।।
এই বিভাজনকে আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিকজী ‘বেদ বিজ্ঞান আলোক’ গ্রন্থে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছেন।
বাক্ রশ্মির (বাণী) চার রূপঃ
বৈখরী>মধ্যমা>পশ্যন্তী>পরা-এই চারটি স্তর অতিক্রম করে বাগধ্বনি শ্রবণগ্রাহ্য হয়। এর মধ্যে বৈখরী-ই হল ধ্বনির শ্রবণস্তর, এই স্তরে বাগধ্বনি স্পষ্ট এবং শ্রবণগ্রাহ্য। পাণিণীয় শিক্ষাতে ধ্বনি উৎপাদনের পূর্বে যে জটিল মানসিক প্রক্রিয়া কাজ করে, এবং বক্তাকে ধ্বনি উচ্চারণে অনুপ্রেরণা দেয়, সে সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বর্ণের উচ্চারণ স্থান আটটি-হৃদয়, কন্ঠা, মূর্ধা, জিহ্বামূল, দন্ত, নাসিকা, ওষ্ঠ এবং তালু। মূলাধার চক্র থেকে উৎক্ষিপ্ত বাক্ উচ্চারণ স্থলগুলিতে অভিহিত হয়ে ধ্বনিরূপতা প্রাপ্ত হয়। মহর্ষি পতঞ্জলির মতে বক্তার জ্ঞানই শব্দরূপতা প্রাপ্ত হয়।
আত্মা (soul) জ্ঞান (বুদ্ধি) দ্বারা ঘটপট প্রভৃতি জাগতিক বিষয় উপলব্ধি করে এবং মনকে (মনঃ) ইন্দ্রিয়দ্বারা জ্ঞানলভ্য বিষয়কে ব্যক্ত করতে বাধ্য করে। মন তখন কায়ারূপ অগ্নিকে (কায়াগ্নিম্) উত্তেজিত করে এবং সেই
কায়াগ্নি প্রাণবায়ু বা শ্বাসবায়ুকে (মারুত) নির্গত করে। এবং সেই নির্গত প্রাণবায়ু বক্ষদেশ (উরুঃ), কন্ঠদেশ (কন্ঠ) এবং শীর্ষদেশে (শীর্ষ) পরিব্যাপ্ত হয়ে যথাক্রমে মধ্যম এবং তার (shrill) স্বরের সৃষ্টি করে। ধ্বনি উচ্চারণার্থে বায়ু যখন মুখবিবরের কন্ঠা, তালু প্রভৃতি স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখনই বাগধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই উৎপন্ন বাগধ্বনি-ই বৈখরী। যেহেতু মুখবিবরের বা মুখান্তবর্ত্তী আকাশের (খ) সাহায্য বিশেষভাবে (বি) গ্রহণ করে (বা) তা উৎপন্ন হয় সেজন্য এই বৈখরী নাম হয়েছে।
বৈখরী বানী যখন কানকে স্পর্শ করে তখন বৈখরী বানী ইলেকট্রিক সিগনালে কনভার্ট হয়ে কর্ণ তন্ত্র দ্বারা ব্রেন পর্যন্ত পৌছায়। এই বানী বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রূপে গমন করে থাকে। এই বানীকে মানুষ শ্রবন করে মন দ্বারা জানতে পারে।
পশ্যন্তী বাক্ মনের মাঝে উৎপন্ন হয়। এক মন যাহা আমাদের অধীন অপর এক মন যাহা সর্বত্র সৃষ্টি ব্যাপ্ত। মন এই পশ্যন্তী বানী বুঝতে পারে। মনস্তত্ব দ্বারা এই বানী সৃষ্টি হয়। জীবাত্মা মনস্তত্বে এই বানী বুঝে থাকে। পশ্যন্তী, যা কানে শোনা যায় না, যা মস্তিষ্কের মাধ্যমে মনের দ্বারা অনুভূত হয়। পশ্যন্তী বানীকে যোগীগণ বুঝতে পারে এবং দর্শন করতে যারে।
পরা এমন এক বানী যেটি সর্বাপেক্ষা সূক্ষ্ম এবং মৌলিক। পরা অবস্থায় শব্দ অব্যক্ত ব্যবস্থায় বিদ্যমান থাকে। পরা বানী প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়। ওম্ রূপ পরা বানী প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়। বাকি অন্য সকল বানী মহতত্বে উৎপন্ন হয়ে থাকে। পরা বানী প্রকৃতির সহিত সর্বদা বিদ্যমান আছে। পরা এমন একটি সূক্ষ্ম বাণী, যা সবচেয়ে সূক্ষ্ম, ব্যাপক, সর্বাধিক পরিমাণে এবং সবচেয়ে সুপ্ত আকারে উপস্থিত, সমস্ত কিছুকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে, কিন্তু নিজেই সবচেয়ে মুক্ত এবং সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। শুধুমাত্র সবচেয়ে নিখুঁত যোগীরা এটি অনুভব করতে পারেন। বর্তমান কোন বৈজ্ঞানিক কৌশল দ্বারা তা জানা যায় না।

বৈখরী বানীঃ বৈখরী শব্দকে উৎপন্ন করে। বৈখরী কন্ঠ থেকে উৎপন্ন হয়। অথবা কোন পদার্থ দ্বারা উৎপন্ন হয়। এটি স্থূল বানী। এই বানী বক্তা ও শ্রতার নিকট গমন করে। কান পর্যন্ত গমন করে সমাপ্ত হয়। বৈখরী বানী বাযূর কম্পন দ্বারা কান পর্যন্ত পৌছায়। ধ্বনির সে অবস্থা যা বক্তার মুখ থেকে শ্রোতার কানের পর্দা পর্যন্ত যায়, তাকে বৈখরী বলে। বৈখরীর অর্থ হলো যা বিশেষ রূপে আকাশে ব্যাপ্ত হয়। ‘সাম্বপঞ্চাশিকা’ শ্লোকের ব্যাখ্যাতে পণ্ডিত ক্ষেমরাজ লিখেছেন –

‘‘স্থূল প্রাণ সম্ঘাত, বৈখর্যাম্ বর্ণ: জায়ন্তে’’
অর্থাৎ স্থূল প্রাণের সহযোগিতায় বৈখরী বর্ণের উৎপত্তি হয়।
যখন কোনো ব্যক্তি কথা বলে তো কণ্ঠে বায়ুকে তাড়ন দ্বারা এবং জিহ্বা, দাঁত, ঠোঁট আদির প্রচেষ্টা দ্বারা শব্দ উৎপন্ন হয় তাকে বৈখরী বলা হয়। এর মাধ্যম হলো স্থূল পদার্থ (কঠিন, তরল, গ্যাস)।
এটি লোকভাষা যা সাধারণভাবে লোকমুখে শোনা যায়।

মধ্যমাঃ বৈখরী বানী যখন কানকে স্পর্শ করে তখন বৈখরী বানী ইলেকট্রিক সিগনালে কনভার্ট হয়ে কর্ণ তন্ত্র দ্বারা ব্রেন পর্যন্ত পৌছায়। এই বানী বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রূপে গমন করে থাকে। এই বানীকে মানুষ শ্রবন করে মন দ্বারা জানতে পারে। কিন্তু সূর্য অাদি রশ্মি বা বিদ্যুৎ সিগনাল কর্নের সাথে সম্বন্ধ না থাকায় মানুষ তাহাকে বুঝতে পারে না। এই মধ্যমা বানী বৈখরী হতে স্থূল। মানুষ এই বানীকে শ্রবন করতে পারে যাহা বৈখরী হতে জাত হয়। শ্রোতার কানের পর্দা ধ্বনিকে শোনে না, এটি ধ্বনিকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, ধ্বনি যেরূপে কানের পর্দা থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত যায়, তাকে মধ্যমা বলে।

এই ধ্বনির অবস্থায় চিত্ত জ্যোতি (মন এবং আত্মার জ্যোতি) গৌণ হয়ে থাকে, সূক্ষ্ম প্রাণ প্রধান হয়ে থাকে। এর মাধ্যম হলো আকাশ তত্ব (Space)।
এই ধ্বনিতে শব্দ এবং বর্ণ সূক্ষ্ম রূপে বিদ্যমান থাকে।

পশ্যন্তী বানীঃ পশ্যন্তী বাক্ মনের মাঝে উৎপন্ন হয়।  এক মন যাহা অামাদের অধীন অপর এক মন যাহা সর্বত্র  সৃষ্টি ব্যাপ্ত। মন এই পশ্যন্তী বানী বুঝতে পারে। মনস্তত্ব দ্বারা এই বানী সৃষ্টি হয়। জীবাত্মা মনস্তত্বে এই বানী বুঝে থাকে। পশ্যন্তী বানীকে যোগী বুঝতে পারে এবং দর্শন করতে যারে। মস্তিষ্কও জড় হওয়ার কারণে এটি ধ্বনিকে স্বয়ং শুনতে পারে না, এটি ধ্বনিকে মনস্তত্ব পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়, ধ্বনি যেরূপে মস্তিষ্ক থেকে মনস্তত্ব পর্যন্ত যায়, তাকে পশ্যন্তি বলে। এই অবস্থায় চিত্ত জ্যোতি (মন এবং আত্মার জ্যোতি) প্রধান হয়ে থাকে। ৬৩ প্রকারের বর্ণ এই পশ্যন্তি অবস্থায় উৎপন্ন হয়। এর মাধ্যম হলো মনস্তত্ব (মিত্রাবরুণ)।

পরা বানীঃ এটি এমন এক বানী যেটি সর্বাপেক্ষা সূক্ষ। পরা অবস্থায় শব্দ অব্যক্ত ব্যবস্থায় বিদ্যমান থাকে। পরা বানী প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়। ওম্ রূপ পরা বানী প্রকৃতিতে উৎপন্ন হয়। বাকি অন্য সকল বানী মহতত্বে উৎপন্ন হয়ে থাকে। পরা বানী প্রকৃতির সহিত সর্বদা বিদ্যমান অাছে। সৃষ্টির সময় এই বানী প্রকৃতির মাঝে প্রথম কার্য করে থাকে।  সর্বপ্রথম হালচাল পরা বানী কতৃক হয়ে থাকে। পরা বানীর প্রভাবে সৃষ্টি হয় মহতত্ব। মহতত্বের মাঝে পরা বানীর প্রভাবে সৃষ্টি হয় পশ্যন্তী বানী। মনস্তত্বও ধ্বনিকে শোনে না, এটি ধ্বনিকে আত্মা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয় আর ধ্বনির এইরূপকে আত্মা শোনে, ধ্বনির এই অবস্থাকে পরা অবস্থা বলে। এর মাধ্যম হলো মনস্তত্ব এবং মূল প্রকৃতি। এটি ধ্বনির সূক্ষ্মতম রূপ যা সর্বত্র ব্যাপ্ত থাকে। এটি ধ্বনির সবথেকে উচ্চতম অবস্থা।

১. বৈখরী অবস্থা
ধ্বনির সে অবস্থা যা বক্তার মুখ থেকে শ্রোতার কানের পর্দা পর্যন্ত যায়, তাকে বৈখরী বলে। বৈখরীর অর্থ হলো যা বিশেষ রূপে আকাশে ব্যাপ্ত হয়। ‘সাম্বপঞ্চাশিকা’ শ্লোকের ব্যাখ্যাতে পণ্ডিত ক্ষেমরাজ লিখেছেন –
‘‘স্থূল প্রাণ সম্ঘাত, বৈখর্যাম্ বর্ণ: জায়ন্তে’’
অর্থাৎ স্থূল প্রাণের সহযোগিতায় বৈখরী বর্ণের উৎপত্তি হয়।
যখন কোনো ব্যক্তি কথা বলে তো কণ্ঠে বায়ুকে তাড়ন দ্বারা এবং জিহ্বা, দাঁত, ঠোঁট আদির প্রচেষ্টা দ্বারা শব্দ উৎপন্ন হয় তাকে বৈখরী বলা হয়। এর মাধ্যম হলো স্থূল পদার্থ (কঠিন, তরল, গ্যাস)।
এটি লোকভাষা যা সাধারণভাবে লোকমুখে শোনা যায়।

২. মধ্যমা অবস্থা
শ্রোতার কানের পর্দা ধ্বনিকে শোনে না, এটি ধ্বনিকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, ধ্বনি যেরূপে কানের পর্দা থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত যায়, তাকে মধ্যমা বলে।
এই ধ্বনির অবস্থায় চিত্ত জ্যোতি (মন এবং আত্মার জ্যোতি) গৌণ হয়ে থাকে, সূক্ষ্ম প্রাণ প্রধান হয়ে থাকে। এর মাধ্যম হলো আকাশ তত্ব (Space)।
এই ধ্বনিতে শব্দ এবং বর্ণ সূক্ষ্ম রূপে বিদ্যমান থাকে।

৩. পশ্যন্তি অবস্থা
মস্তিষ্কও জড় হওয়ার কারণে এটি ধ্বনিকে স্বয়ং শুনতে পারে না, এটি ধ্বনিকে মনস্তত্ব পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়, ধ্বনি যেরূপে মস্তিষ্ক থেকে মনস্তত্ব পর্যন্ত যায়, তাকে পশ্যন্তি বলে। এই অবস্থায় চিত্ত জ্যোতি (মন এবং আত্মার জ্যোতি) প্রধান হয়ে থাকে। ৬৩ প্রকারের বর্ণ এই পশ্যন্তি অবস্থায় উৎপন্ন হয়। এর মাধ্যম হলো মনস্তত্ব (মিত্রাবরুণ)।

৪. পরা অবস্থা
মনস্তত্বও ধ্বনিকে শোনে না, এটি ধ্বনিকে আত্মা পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয় আর ধ্বনির এইরূপকে আত্মা শোনে, ধ্বনির এই অবস্থাকে পরা অবস্থা বলে। এর মাধ্যম হলো মনস্তত্ব এবং মূল প্রকৃতি। এটি ধ্বনির সূক্ষ্মতম রূপ যা সর্বত্র ব্যাপ্ত থাকে। এটি ধ্বনির সবথেকে উচ্চতম অবস্থা।

২) ঋগ্বেদঃ ১/১৬৪/৪৫, বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য কৃত বঙ্গানুবাদসহ, বাকাপদীয় (ভর্তৃহরি প্রণীত) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত, পৃষ্ঠা ১৬৬।
देवता: वाक् ऋषि: दीर्घतमा औचथ्यः छन्द: भुरिक्त्रिष्टुप् स्वर: धैवतः
च॒त्वारि॒ वाक्परि॑मिता प॒दानि॒ तानि॑ विदुर्ब्राह्म॒णा ये म॑नी॒षिण॑:।
गुहा॒ त्रीणि॒ निहि॑ता॒ नेङ्ग॑यन्ति तु॒रीयं॑ वा॒चो म॑नु॒ष्या॑ वदन्ति ॥[ऋग्वेद १.१६४.४५]
निरु० १३। ९
৩) শব্দতত্ত্ব, রবীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, পৃষ্ঠা ১৪৪



No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ