নান্তঃপ্রজ্ঞাং ন বহিস্প্রজ্ঞং নোভংতঃপ্রজ্ঞং ন প্রজ্ঞানঘনং ন প্রজ্ঞং নাপ্রজ্ঞম্। অদৃষ্টমব্যবহার্যমগ্রাহ্যমলক্ষণম্ চিন্ত্যমব্যপদেশ্য-মেকাত্মপ্রত্যয়সারং প্রপঞ্চোপশম্ শান্তং শিবমদ্বৈতং চতুর্থং মন্যন্তে স আত্মা স বিজ্ঞেয়ঃ।। মাণ্ডূক্যোপনিষদ-১/৭
পদার্থ-( নান্তঃ প্রজ্ঞম্) না অন্তরে জ্ঞান যায়, না বুদ্ধি যায়,( নোয়তঃ প্রজ্ঞম্) না উভয় দিকে বুদ্ধিও ভিতরে বাহিরে যায়,( ন প্রজ্ঞানঘনম্) না অন্ধাকার দিকে শুধুমাত্র এই জ্ঞান হয়,( ন) না ( প্রজ্ঞম্) প্রাপ্ত হয় জ্ঞান,( ন) না ( অপ্রজ্ঞম্) জ্ঞানের জড়তা,( অদৃষ্টম্) না চোখে দেখা যায়, ( অব্যবহার্য়্যম্) ব্যবহার দশা হতে বর্জিত,( অগ্রাহ্যম্) না ধরার যোগ্য,( অলক্ষণম্) না যার লক্সণ ইন্দ্রিয় দ্বারা জানা যায়,( অচিত্যম্) না মনের কল্পনা শক্তি তাঁর সীমায় পৌঁছাতে পারে,( অব্যপদেশ্যম্) না যে কোনো নামের মাধ্যমে ধ্যানে আসে,( একাত্মপ্রত্যয়সারম্) যাঁর একমাত্র আত্মাকে জানার অধিকার আছে ( প্রপঞ্চোপসম্) বাহিরে পঞ্চভৌতিক জ্ঞান দ্বারা এক মাধ্যম ( শান্তম্) যিনি শান্ত অর্থাৎ বিক্ষেপ বর্জিত হয় ( শিবম্) যিনি কল্যাণময় এবং দেহ,মন ও আত্মার ধর্ম হতে বর্জিত (অদ্বৈতম্) অনুপম ( চতুর্থম্) চতর্থ ( মন্যন্তে) বিচার করে যা মানা হয় ( স আত্মা) সেই জীবাত্মা ( সঃ) সে ( বিজ্ঞেয়ঃ) জানার যোগ্য।
ভাবার্থ-পরমাত্মা সবচেয়ে সূক্ষ্ম,কারণ তাঁর মধ্য কোন পদার্থ নেই। অতএব তিনি কার ভিতরে তাকাবেন,যাতে তিনি অন্তর্নিহিত জ্ঞান লাভ করেন?
এবং পরমাত্মা সর্বব্যাপি থেকে,তাঁর বাহিরে এমন কিছু নেই যা তিনি বাহ্যিক জ্ঞানের মাধ্যমে দেখতে পারেন এবং বাহ্যিক বুদ্ধি অর্জন করতে পারেন। আর যখন ভিতরে-বাহিরে কিছুই থাকে না, তখন উভয় দিকে যাওয়া বুদ্ধিও তাঁর হতে পারে না। কিংবা অন্ধকারে কেবল তাঁর অন্ধকার দেখা যায়, যাকে কেবল এক প্রকার জ্ঞান বলা যায়,নৈমিত্তিক জ্ঞানও এমন কিছু নেই যা তিনি জানে না। কেননা তা আগেই বলে দিয়েছেন সর্বজ্ঞ। তাহলে ইন্দ্রিয় দ্বারা যা জানা যায় না তা কি? নাম ও রূপের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক দ্বারা তাঁর মধ্যে আচরণের অবস্থা থাকতে পারে না। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে দেখা যায় এমন কোন উপসর্গ থাকতে পারে না। মন দিয়ে যতই চিন্তা করা হোক না কেন, তাঁর অসীম গুণের কোন সীমা নেই। এটি এমন একটি আকৃতি নয় যে শুধু মাত্র নাম উল্লেখ করলে এর রূপটি স্বরণ করা যায়। একমাত্র আত্মাই তা জানতে পারে। যেখানে মন ইন্দ্রিয়ের দ্বারা উপলব্ধি করা এবং বাহ্যিক বস্তু থেকে মন পৃথক করলে এবং উপাসনার দ্বারা চঞ্চল মনকে শান্ত এবং স্থির করে সেই কল্যাণকর ক্ষুধা,তৃষ্ণা,শোক,আসক্তি বার্ধক্য,মুত্যু রহিত। তাঁর মতো কেউ নেই এবং তাঁর মতো কেউ হবে না। তাঁকে চতুর্থ পাদ বলে মনে করা হয়,এই জীবের মধ্যে যে আত্মা থাকে তিনিই জানার যোগ্য। যে এটা জানেনা, সে তার জন্ম নষ্ট করে। প্রশ্ন-বেদ বলছে যে মনুষ্য সমস্ত ভূতকে অত্মার দেখে এবং সকলের ভিতর আত্মাকে দেখে। এ স্পষ্ট বিদিত হয় যে,সমস্ত আত্মার মধ্যই আছেন, তাই তাঁর জন্য অন্তর্জ্ঞান আবশ্যক। আর তিনি যখন সবার মধ্যে থাকেন,তখন সবাই তাঁর বাহিরে। এই জন্য বাহিরের জ্ঞানও প্রয়োজন। তাহলে শ্রুতি কেন বললেন যে তিনি অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক জ্ঞান বর্জিত? উত্তর - ভিতরে বলে, ঈশ্বরের চেয়ে সূক্ষ্ম আর কেউ নেই, যাকে অতিক্রম করে দেখতে হবে এবং আত্মার ভিতরে গিয়ে ঈশ্বরকে স্বরূপ বুঝতে হবে। বাহিরে বলার অর্থ হল সে দেশীয় নয়,যেমন বাহিরের বস্তু দেখতে ইন্দ্রিয়ের দরকার। প্রশ্ন-ব্রহ্ম যখন অদৃশ্য অর্থাৎ দৃশ্যমান নয,তখন বৃহদারণ্যক উপনিষদে লেখা আছে যে,হে মৈত্রয়ী!আত্মা নিজেই দেখার,শ্রবণ এবং চিন্তা করার যোগ্য। উত্তর-ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আত্মা অনুভব হয় না, তাই বলা হয় অদৃশ্য। কিন্তু মন থেকে প্রতীয়মান হয় সেজন্যই বলা হয় পালনীয়। উভয়ই শ্রুতির মধ্যে বিরুদ্ধ নেই। প্রশ্ন-কিন্তু উপনিষদে বলা আছে যে মন দিয়ে চিন্তা না করলে সরাসরি মন দিয়ে বিশ্বাস করা যুক্তিযক্ত বলে মনে হয় না কারণ শ্রুতি তা খণ্ডন করেছেন। উত্তর-কঠোপনিষদে স্পষ্ট লেখা আছে যে, ঈশ্বরকে চিনতে পারে মনের দ্বারা। আসলে মনের দুটি অবস্থা আছে। এক মন মল বিশেষ ও অবরণ ত্রুটিমুক্ত,অন্য মন এই ত্রুটিযুক্ত। যেমন স্রুতি বলে ঈশ্বরকে মনের দ্বারা জানা যায় না, তার অর্থ ত্রুটিপূর্ণ মন দ্বারা। যদি কোনোভাবেই ঈশ্বরের জ্ঞান না থাকে,তাহলে তাঁর অস্থিত্ব কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? প্রশ্ন-বিকৃত কারা? উত্তর-মনের মধ্যে অন্যের ক্ষতি করার চিন্তাও একই ত্রুটি যতক্ষণ এই ত্রুটি থাকে ততক্ষণ মন ঈশ্বরকে জানার সাধ্যম হতে পারে না। উদাহরণ স্বরূপ,আয়নার মাধ্যমে চোখ এবং তার মধ্যে অবস্থানরত সুরমা ( অঞ্জন) দেখতে পাওয়া যায়। নোংরা আয়না চোখ এবং অঞ্জন দেখতে পারে না। এই কারণে চোখ এবং যারা প্রথম অঞ্জন দেখতে পান তারা আয়নাকে বিশুদ্ধ করে। সেই মানুষ মূর্খ যে মনকে শুদ্ধ না করেই আত্মা ও পরমাত্মাকে জানতে চায়,আর সেই গুরু একজন ভণ্ড যিনি পরমাত্মাকে দেখানোর জন্য মনকে শুদ্ধ করা ছাড়া অন্য উপায়ে পরামর্শ দেন। প্রশ্ন-বিচ্যুতি ত্রুটি কি? উত্তর-মনের অস্থিরতার নাম বিচ্যুতি ত্রুটি। মন এমন গতিতে সিদ্ধান্ত নেয় যে তার গতি বিদ্যুতের চেয়েও বেশি। এমন বেগে চলমান আয়নার ভিতর দিয়ে যদি কেউ চোখ ও অঞ্জন সত্তাকে দর্শন করতে চায় তবে কেনো সফল হতে পারে? প্রশ্ন-আবরণ ত্রুটি কি? উত্তর-আয়নার উপর কাগজ পরে থাকলে তাতে চোখ ও চোখের মধ্যে থাকা অঞ্জন দেখা যায় না। এই আবরণ ত্রুটি। প্রশ্ন-এই তিন ত্রুটি ছাড়া ঈশ্বরকে জানার ক্ষত্রে আর কোন বাধা আছে কি? উত্তর-সবচেয়ে বড় ত্রুটি যার দ্বারা আমরা আত্মা ও পরমাত্মাকে জানতে পারি না তা হল অজ্ঞতা। যতক্ণ অজ্ঞান থাকবে,কোন আত্মা পরমাত্মাকে জানতে পারবে না। প্রশ্ন-এই ত্রুটি গুলি দূর করার প্রতিকার কী,যাতে মানুষ ঈশ্বরকে জানার যোগ্য হতে পারে? উত্তর-ব্রহ্মচর্যাশ্রমের মাধ্যমে বেদ-বেদাঙ্গ ও উপাঙ্গ পাঠ করা। অতঃপর বেদ নির্দেশিত নিস্কাম কর্ম করে মনের মলিনতা দূর করা। সেই সাথে অন্য কারো ক্ষতি করার বিচার এলে সাথে সাথে অন্যের দান করার চিন্তা ঠিক করুন। অতঃপর বিষয় ত্রুটি দূর করতে, বানপ্রস্থাশ্রম করে,অষ্টাঙ্গ যোগের অভ্যাস বা বৈরাগ্য দ্বারা চঞ্চলতা দূর করতে হবে। পুনঃরায় সন্ন্যাসশ্রমের মনের উপর যে অহংকারের আবরণ আছে,তা দূর করতে হবে। তাই এই চারটি আশ্রমকে নিয়মানুযায়ী অনুসরণ করাই পরমাত্মাকে জানার একমাত্র উপায়। যারা এর বিরুদ্ধে যায় তারা কখনই ব্রহ্ম জ্ঞান অর্জন করতে পারে না।।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ