সাংখ্য দর্শন ১/৬১ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

10 January, 2022

সাংখ্য দর্শন ১/৬১

সত্ত্বরজস্তমসাংসাম্যাবস্থা প্রকৃতিঃ প্রকৃতের্মহানমহতোহহঙ্কারঃ 

অহঙ্কারাৎ পঞ্চতন্মাত্রাণ্যুভয়মিন্দ্রিয়ং-তন্মাত্রেভ্যঃস্হূলভূতানিপুরুষঃ ইতি পঞ্চবিংশতির্গণঃ।। 

পদঃ—সতুরজস্তমসাং। সাম্যাবস্থা। প্রকৃতিঃ। প্ৰকৃতেঃ | মহান্ মহতঃ। অহঙ্কারঃ। অহঙ্কারাৎ। পঞ্চতন্মাত্রাণি। উভয়ম্। ইন্দ্রিয়ং। তন্মরেডায়। স্থূলভূতানি। পুরুষঃ। ইতি। পঞ্চবিংশতিঃ। গণঃ।

 (সত্ত্বঃ) শুদ্ধ, (রজঃ) মধ্যম (তমঃ) জাড্য অর্থাৎ জড়তা-এই তিন বস্তুর মিলনে যে সংঘাত হয়, তাহার নাম প্রকৃতি।

সরলার্থ - সত্ত্বঃরজঃ ও তমঃ স্বরূপ তিন প্রকারের অনাদি নিত্য কারণ সমান সংখ্যক ও সমান শক্তি বিশিষ্ট থাকায় পরস্পর মুক্ত হইতে না পারিয়া পৃথক পৃথক্‌ থাকা অবস্থায় নাম প্রকৃতি যাহা এই সমস্ত সৃষ্ট পদার্থের মূল কারণ। উহা জড় ত্রিগুণাত্মক বলিয়া সংযোগ বিয়োগের উপযোগী। যদি কোন জ্ঞাতা নিজ শক্তি দ্বারা সৃষ্টি ও প্রলয় না করিতেন, তবে এই সমস্ত প্রকৃতি বা মূল কারণ নিজ নিজ কারণ বা স্বরূপ অবস্থায় চিরকাল পড়িয়া থাকিত। এই সমস্ত প্রকৃতি বা পরমাণু হইতে প্রথম যে তত্ত্ব উৎপন্ন হয় অর্থাৎ প্রকৃতির যাহা প্রথম কার্য্য তাহার নাম মহত্তত্ত্ব, মহতত্ত্ব হইতে অহঙ্কার হইতে পঞ্চ তন্মাত্র অর্থাৎ শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ এবং উভয় ইন্দ্রিয়—পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় যথা-চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক এবং পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় যথা—পাণি, পাদ, বাক্ পায়ূ ও উপস্থ। পঞ্চ তন্মাত্র হইতে পঞ্চ স্থূল ভূত অর্থাৎ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও পৃথিবী উৎপন্ন হইয়াছে এবং এতদ্ব্যতীত অন্য একটী তত্ত্ব পুরুষ অর্থাৎ জীবাত্মা এবং পরমাত্মা। এই পঞ্চবিংশতি তত্ব বিদ্যমান আছে এই প্রকৃতি হইতে সমস্ত স্থূল পদার্থ উৎপন্ন হইয়াছে এবং প্রলয় প্রাপ্ত হইলে এই সমস্ত স্থূল পদার্থ মূলতত্ত্ব প্রকৃতিতে পরিণত হইবে। আবার সৃষ্টির সময় ইহা হইতে উৎপন্ন হইবে। যতদিন না প্রলয় হয় স্থূল পদার্থ সমূহ নষ্ট হইয়া নিজ নিজ কারণে লয় প্রাপ্ত হয় এবং পুনরায় তাহাদের হইতে উৎপন্ন হইয়া থাকে। এই তত্ত্ব সমূহের মধ্যে পুরুষ অর্থাৎ জীব ও ব্রহ্ম কোন পদার্থের উপাদান বা কার্য‌্য নহে। জড় প্রকৃতি স্বয়ং কার্যকরী হইয়া সৃষ্টি রচনা করিতে পারে না। সৃষ্টি রচনার প্রয়োজনসিদ্ধি পুরুষ আমার জীবাত্মা ও পরমাথা ভিন্ন হইতে পারে না বলিয়া সৃষ্টিতত্ত্বের মধ্যে পুরুষকে গণনা করিয়াছেন এবং উভয়েই চৈতন্য স্বরূপ বলিয়া এক পুরুষের গণনা করিয়াছেন বা এক পুরুষ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। যেমন উভয় ইন্দ্রিয় বলিলে দুই ইন্দ্রিয় না বুঝাইয়া দশ ইন্দ্রিয় বুঝায় সেইরূপ পুরুষ বলিলে জীব ও ব্রহ্ম দুই পদার্থ বুঝিতে হইবে। 


স্থূলাৎপঞ্চতন্মাত্রস্য।।৬২

সরলার্থ— স্থূল পঞ্চভূত দেখিয়া পঞ্চতন্মাত্রের অনুমান হইয়া থাকে। আকাশ হইতে শব্দের, বায়ু হইতে স্পর্শের, অগ্নি হইতে রূপের, জল হইতে রসের এবং পৃথিবী হইতে গন্ধের অনুমান হইয়া থাকে। ইহা দ্বারা যায় যে পঞ্চতন্মাত্রই পঞ্চ স্থূল ভূতের কারণ।

সং- অহঙ্কারের অনুমান কাহার দ্বারা হইয়া থাকে ?

বাহ্যাভ্যন্তরাভ্যাংতৈশ্চাহঙ্কারস্য।।৬৩

সরলার্থ— জ্ঞানেন্দ্রিয়, কর্মেন্দ্রিয় ও পঞ্চ তন্মাত্র হইতে অহঙ্কারের অনুমান হইয়া থাকে। ভোগ্য পদার্থ যথা তন্মাত্র ও ভোগ করিবার যন্ত্র যথা জ্ঞানেন্দ্রিয় কর্মেন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয় গোলক সমূহের কার্য্য দেখিয়া অহঙ্কারের অনুমান হইয়া থাকে। এই অহঙ্কারই জীবের ভাতৃত্বের ও কর্তৃত্বের মূল। সং— মহত্তত্বের অনুমান কাহার দ্বারা হইয়া থাকে ?

তেনান্তঃকরণস্য।।৬৪

সরলার্থ—অহঙ্কারের কার্য্যের মধ্যে সদসৎ বিচার দেখিয়া মহত্তত্ত্বের অর্থাৎ বুদ্ধির অনুমান হইয়া থাকে।

সং-প্রকৃতির অনুমান কাহার দ্বারা হইয়া থাকে ?

ততঃ প্ৰকৃতেঃ।।৬৫

সরলার্থ বুদ্ধির কার্য্য দেখিয়া প্রকৃতির অনুমান হইয়া থাকে। প্রকৃতি সত্ত্বঃ রজঃ ও তমঃ স্বরূপা। বুদ্ধির কার্য্য জ্ঞান গ্রহণ ও বিচার করা। জ্ঞান ও বিচারের মধ্যে সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাবের লক্ষণ প্রকাশিত হইয়া থাকে। যাহার বুদ্ধি সাত্ত্বিক জ্ঞানের দ্বারা শুদ্ধ হয় তাহার বিচারের মধ্যে সাত্ত্বিক ভাবের ও জ্ঞানে প্রকাশ হইয়া থাকে। সেইরূপ মাহার বৃদ্ধি রাজসিক তাহার বিচারের মধ্যে রাজোভাব অর্থাৎ বিষয়াসক্তি ও ক্রিয়াশীলতা দেখিতে পাওয়া যায় এবং যাহার বুদ্ধি তামসিক তাহার বিচারের মধ্যে তমোভাব জড়িত থাকে। এইরূপে বুদ্ধির বিচিত্র কার্য্য দেখিয়া ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতির অনুমান হইয়া থাকে।

সং-পুরুষের অনুমান কি প্রকারে হইয়া থাকে?

সংহতপরার্থত্বাৎ পুরুষস্য।।৬৬ 

সরলার্থ—প্রকৃতির সংযোগে এই সৃষ্টির রচনা এবং বিবিধ ভোগ্যপদার্থের রচনার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টিকর্তা ও ভোক্তা উভয় পুরুষেরই অনুমান করাইতেছে। ভোগ্য ও ভোক্তা এক পদার্থ হইতে পারে না। প্রকৃতি জড় বলিয়া সৃষ্টিকর্তা কিংবা ভোক্তা হইতে পারে না এবং তাহার নিজেরও কোন ভোগের প্রয়োজন থাকিতে পারে না। এই বিচিত্র ভোগ্য পদার্থ পরার্থে রচিত হইয়াছে, তাহাতেই ভোক্তাপুরুষের অর্থাৎ জীবাত্মার অনুমান হইতেছে এবং ভোক্তা পুরুষের ভোগের উপযোগী বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়াদি করণ, এবং ভোগ্য পদার্থ সমূহের রচনা ও কর্মফলের বিধান দেখিয়া সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা পরম পুরুষের অনুমান হইয়া থাকে।

নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবে। বিদ্যতে সতঃ।

 উভয়োরপি দৃষ্টোঽস্তস্ত্বনয়োস্তত্ত্বদশিভিঃ ॥-ভগবদ্গীতা (অ ২।১৬) ॥


অসম্ভের ভাগ অর্থাৎ বিশ্বমানত। এবং অভাব অর্থাৎ অর্জমানতা কখনও হয় না। তদশিগণ এই উভয়ের তত্ত্ব নির্ণয় করিয়াছেন। পক্ষপাতী, দুরা গ্রহী, মলি এবং বিস্তাহীন লোকেরা কিরূপে ইতা সহজে জানিতে পারে ? যে বিদ্বান ও সৎসঙ্গপরায়ণ হইয়া সম্পূর্ণরূপে বিচার করে না, সে সর্বদা ভ্রমগালে জড়িত থাকে। যাঁহারা সকল বিভার সিদ্ধান্ত জানেন, জানিবার পরিশ্রম করেন এবং জানিয়া অগট ভাবে অপরকে জানান, তাঁহারা ধন্য। সুতরাং সে কারণ বাঙ্গীত স্বষ্টি মানে, সে কিছুই জানে না।


সৃষ্টির সময় উপস্থিত হইলে পরমাত্মা পূর্বোক্ত পরমশূক্ষ্ম পদার্থ সমৃতকে সম্মিলিত করেন। ঐ সকলের প্রথম অবস্থায় পরমসূক্ষ্ম প্রকৃতিরূপ কারণ অপেক্ষা বাহা কিঞ্চিৎ স্কুল হয়, তাহার নাম মহত্ত যাহা মহত্ত্ব অপেক্ষ। তিল হয়, তাহার নাম অহঙ্কার। অতঙ্কার হইতে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচ শৃখনভূত শ্ৰোত্র, হক্, নেত্র, জিহ্বা এবং ঘ্রাণ-এই পঞ্চ জ্ঞানেষ্ক্রিয় এবং বাক্, হস্ত, পাদ, উপস্থ ও মলদ্বার – এই পথ কর্ম্মেন্দ্রিয় এবং একাদশ মন, অপেক্ষাকৃত স্থূলরূপে উৎপন্ন হয়। উক্ত পঞ্চতন্মাত্রা হইতে অনেক স্থূলাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া ক্রমে ক্রমে যে পঞ্চ স্থূলভূত উৎপন্ন হয়, আমরা ঐ সকলকে প্রত্যক্ষ করি। স্কুলভূত হইতে নানাবিধ ওষুধি এবং বৃক্ষাদি উৎপন্ন হয়। ওযধি এবং বৃক্ষাদি হইতে অম্ল, অন্ন হইতে বীৰ্য্য এবং বীধ্য হইতে শরীর উৎপন্ন হয়। কিন্তু আদিতে মৈথুনী সৃষ্টি হয় না। পরমাত্মা স্ত্রীপুরুষের শরীর সৃষ্টি করিয়া তাহাতে জীবসংযোগ করিয়া দিলে মৈথুনী সৃষ্টি চলিতে থাকে। দেখ। শরীর রচনার মধ্যে কিরূপ সৃষ্টিবিজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়। পণ্ডিতগণ তাহা দেখিয়া আশ্চর্যান্বিত হইয়া থাকেন। ভিতরে অগ্নিযোজনা, নাড়ীবন্ধন, মাংসলেপন, করিয়া তাঁহাতে জীবসংযোগ করিয়া দিলে মৈথুনী সৃষ্টি চলিতে থাকে। দেখ। শরীর রচনার মধ্যে কিরূপ সৃষ্টিবিস্তার পরিচয় পাওয়া যায়। পণ্ডিতগণ তাহা দেখিয়া আশ্চর্যান্বিত হইয়া থাকেন। ভিতরে অশ্বিযোজনা, নাড়ীবন্ধন, মাংসলেপন, চাচ্ছাদন, মীহা, যৎ ক্ষুদ্র পাখার ন্যায় ফুসফুস স্থাপন, জীব সংযোজন, শিরোরূপ মূলরচনা, লোম-নখাদি স্থাপন, তারের ন্যায় চক্ষুর অতীব সূক্ষ্ম শিরা রচনা, ইন্দ্রিয়মার্গ প্রকাশ, জীবের জাগ্রং-স্বপ্ন-সুষুপ্তি অবস্থায় ভোগের জন্য বিশেষ বিশেষ স্থানের নির্মাণ, সকল ধাতুর বিভাগ, কলা-কৌশল স্থাপন প্রভৃতি অদ্ভুত সৃষ্টি পরমেশ্বর ব্যতীত অপর কে করিতে পারে? এই সকল ব্যতীত নানাবিধ রত্ন ধাতুপূর্ণ ভূমি, বট প্রভৃতি বৃক্ষাদির বীজের মধ্যে অতি সুক্ষ্ম রচনা, অসংখ্য হরিৎ, শ্বেত, পীত, কৃষ্ণ, চিত্রবিচিত্র ও মিশ্রিত বর্ণের পত্র, পুষ্প এবং ফল-মূল, মিষ্ট, স্কার, কটু, কথায়, তিক্ত অম্ল প্রভৃতি বিধি স সুগন্ধাঙ্গিযুক্ত পত্র, পুষ্প, ফল, অম্ল এবং কন্দ-মূল প্রভৃতি রচনা, কোটি কোটি পৃথিবী ও চন্দ্র সূর্য্যাদি লোকের স্বস্তি, ধারণ, ভ্রমণ করান এবং নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি পরমেশ্বর বাতীত কেহই করিতে পারে না। যান কেহ কোন পদার্থ দেশে তখন তাহার দ্বিবিধ জ্ঞান উৎপন্ন হয় প্রথমতঃ পদার্থের জ্ঞান, দ্বিতীয়তঃ পদার্থের রচনা দেখিয়া সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান। উদাহরণ স্বরূপ কোন ব্যক্তি বনে একখানি সুন্দর অলঙ্কার পাইয়া মনে করিল যে, উচ্চ বর্ণ নির্ম্মিত এবং কোন চতুর বর্ণকার উল নির্মাণ করিয়াছে। সেইরূপ নানাবিধ সৃষ্টির রচনা দ্বারা সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বরের প্রতিপাদন হইয়া থাকে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ