বেদ মন্ত্রের দেবতা ও ছন্দের প্রভাবে অগ্নি বলবান, তেজস্বী হয় তা সৃষ্টি যোজ্ঞের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যজ্ঞ অর্থাৎ দেবপূজা সঙ্গতিকরণ দান "যজ্ঞ দেবপূজাসঙ্গতিকরণদানেষু"-যজ্ঞে বিভিন্ন দেব-পদার্থ, প্রকাশিত কোনা, প্রান ছন্দাদি রশ্মি সবের পূজা হয় অর্থাৎ এসবের উচিৎ উপযোগ হয়। সঙ্গতিকরণ, দান-বিসর্জন, সংযোগ বিয়োগাদি হয়। পারস্পরিক সঙ্গতিকরণ, গ্রহণ ও বিসর্জন আদি কর্ম্ম হয় তা যজ্ঞেও হয়ে থাকে।
যজ্ঞ শব্দ "যজ" ধাতু দিয়ে তৈরী, যার অর্থ ১) দেবপূজা ২) সঙ্গতিকরণ ৩) দান। মিলন ও বিচ্ছেদ ক্রিয়াই যজ্ঞ। সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে এইরদপ ক্রিয়া সর্বত্র প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এরূপ ক্রিয়া অর্থাৎ যোজ্ঞ না হলে সৃষ্টি উৎপত্তি হবেনা, ইহা না হলে প্রাণ ছন্দাদির সংযোগ-বিয়োগ না হলে সংসারে কোন পার্টিক্যাল, কয়োন্ট্রা তৈরী হবেও না, আকাশ (space) তৈরী হবে না। পার্টিক্যাল ও কন্ট্রার মধ্যে ক্রিয়ার ফলে লোক-লোকান্তরের নির্মান হয়, তাই এই সম্পূর্ণ সৃষ্টি-নির্মান কে যোজ্ঞ বলা হয়, ইহা সৃষ্টিযোজ্ঞ।
হোম করার সমস্ত সামগ্রী যজ্ঞে দান করার পর তা অন্য পদার্থে রূপান্তরিত হয়। যজ্ঞকর্মের সঙ্গে অগ্নির অবস্থান অপরিহার্য। অগ্নিকে বলা হয় দেবতাদের মুখ; তার মাধ্যমেই সকল দেবতা আহুতি দ্রব্য লাভ করে থাকেন। অর্থাৎ কোনো দেবতাকে উদ্দেশ্য করে সমন্ত্রক অগ্নিতে আহুতি প্রদান করলে অদিক্ষ্ম তা উদ্দিষ্ট দেবতার নিকট পৌঁছে দেয়। যজ্ঞ থেকে উত্থিত সুগন্ধিত পদার্থ অন্তরিক্ষে পৌঁছায়। "মাতা ভূমিঃ অহং পৃথিব্যাঃ। পর্জন্য পিতা স উনঃ পিপর্তু।।"
"যজ্ঞ" শব্দটি ঋগ্বেদে ৫৮০ বার, যজুর্বেদে ২৪৩ বার, সামবেদে ৬৩ বার এবং অথর্ব বেদে ২৯৮ বার এসেছে। অগ্নি সৃষ্টির বিভিন্ন পদার্থের নাম প্রমানঃ অগ্নিঃ কস্মাদগ্রণীর্ভবতি (নিরুক্ত ৭।১৪), অগ্নির্বৈ দেবানাং বসিষ্টঃ (ঐঃ ১।২৮), অগ্নির্বৈ দেবানাং মুখং (শঃ৩।৯।১।৬), বাগৈবাগ্নিঃ (শঃ৩।২।২।১৩), মন এবাগ্নিঃ (শঃ১০।১।২।৩ ), অগ্নির্বৈ ব্রহ্মা (শঃ ১০।৪।১।৫)।
অগ্নি পদের অর্থ আত্মা অর্থাৎ সূত্রাত্মা বায়ু যা পদার্থকে সংঘনিত করা শুরু করে। যজ্ঞ দ্বারা প্রাণের শুদ্ধি হয়। এই জন্য যজুর্বেদে (৯।১২) যজ্ঞকে অমৃত বলা হয়েছে। "যজ্ঞ ইন্দ্রমবর্ধয়দ্" (অথর্বঃ ২০।১৭।৫)- যজ্ঞ করায় ঐশ্বর্য ও সুখের বৃদ্ধি হয়। "অধ্বর ইতি য়জ্ঞনাম-ধ্বরতির্হিসাকর্মা তৎপ্রতিষধঃ" অর্থাৎঃ যজ্ঞের নাম অধ্বর (হিংসারহিত কর্ম)।
তথ্যঃ ঋগ্বেদ ১।১।১, ১।১৩।৩, নিঘঃ৩।১৮, নিরুক্ত ৬।১৩
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ