মছুলমান ভাইরা গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে বেদ হতে কিছু মন্ত্র দেখিয়ে হিন্দু ভাইদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, এখানে সেইরকম কিছু মন্ত্র অর্থ সহ দেখানো হলঃ
[ঋগ্বেদ (৬/৩৯/১) ২.ঋগ্বেদ (৬/১৬/৪৭) ৩.ঋগ্বেদ (১০/১৬/৭) ৪.ঋগ্বেদ (১০/৮৭/১৬)৫.ঋগ্বেদ (১০/৯১/১৪) ৬.ঋগ্বেদ (১০/৮৯/১৪) ৭.ঋগ্বেদ (১০/৮৬/১৩) ৮.ঋগ্বেদ (১০/৮৬/১৪) ৯.ঋগ্বেদ (১০/৭৯/৬) ১০.ঋগ্বেদ (১০/২৭/২). ১১.ঋগ্বেদ (১০/২৮/৩) ১২.যর্জুবেদ (১৩/৪৯)।।]
🔵 প্রাচীন ঋষিগণ এভাবেই বেদ মন্ত্রের অর্থ ও বেদকে বোঝার জন্য বেদাঙ্গের তৈরি করেছিলেন। এই বেদাঙ্গের মাধ্যমে বেদমন্ত্রের ছন্দ,ব্যাকরণ বিধি, বেদ মন্ত্রে ব্যবহৃত শব্দের অর্থ,বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, বিধিনিষেধ বেদ অনুসারে এসব শেখানো হয়।।
বেদাঙ্গের রয়েছে মোট ৬ টি শাখাঃ-
১. শিক্ষা ২.কল্প ৩.ছন্দ ৪.ব্যাকরণ ৫.নিরুক্ত ও ৬.জ্যোতিষ।।
আর বেদের বিশুদ্ধ ভাষ্য করতে বেদাঙ্গ চতুর্থ শাখা ব্যাকরণ ও ৫ম শাখা নিরুক্তের এবং চারবেদের অসংখ্য ব্রাহ্মণ গ্রন্থের সাহায্য নিতে হয়।
এখানে বেদাঙ্গের ৪র্থ শাখা ব্যাকরণের রচয়িতা হলেন মহামুনি পাণিণি। এই মহামুনি পাণিণি তিনি তারও আগে ১০ জন ব্যাকরণবিদের নাম উল্লেখ করেছেন। যারা ঋষি পরম্পরায় বেদের সংস্কৃতির ব্যাকরণ শৈলী রচনা করেছিলেন।আর মহামুনি পাণিণি হলেন বেদের সর্বশেষ ব্যাকরণবিদ।তার মোট চারটি গ্রন্থ রয়েছে ব্যাকরণের জন্য
১. পাণিণি অষ্টাধ্যায়ী ২. ধাতুপাঠ ৩.উণাদিপাঠ ৪.গণপাঠ।।এগুলো সব বেদের সংস্কৃতির অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বেদাঙ্গের ৫ম শাখার রচয়িতা হলে মহর্ষি যাস্কাচার্য যিনি বেদে বর্ণিত বিভিন্ন শব্দের অর্থ করেছেন।তার রচিত বই "নিরুক্ত"।। তার আগেও আরো অনেকে ছিলেন।
আবার বেদ মন্ত্রের অর্থের জন্য প্রতিটি বেদের ব্রাহ্মণগ্রন্থ রয়েছে।যেমনঃ সামবেদের মোট ১১ টি ব্রাহ্মণগ্রন্থ, ঋগ্বেদের মোট ২ টি, যর্জুবেদের ৩-৪ টি, অথর্ববেদের ১ টি ব্রাহ্মণগ্রন্থ। আর এ সমস্ত বইগুলো দেখে বেদ মন্ত্রের অর্থ করতে হয়। নাহলে মন্ত্রের অর্থের অনর্থ ঘটে।।
তাই ভারতের আর্যবিদ্বানগণই একমাত্র বেদাঙ্গ অনুসরণ পূর্বক বেদমন্ত্রের অর্থ করেছিলেন। যা অতুলনীয়।। আজ আমরা তাদের মধ্যে থাকা চারজনের বেদভাষ্য থেকে #ব্যাকরণ_প্রমাণ সহ উপরের ১২ টি মন্ত্র দেব অর্থসহ।।তারপর আপনারাই বিবেচনা করুন যে, বেদে কি আদৌতে গো-মাংস ভক্ষণের কথা আছে কিনা??
চারজন বেদভাষ্যকার হলেন (বিশুদ্ধ বেদভাষ্যকার)
১. মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
২.স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তুন্ডু
৩.পন্ডিত হরিশরণ সিধান্তলংকার
৪.পন্ডিত জয়দেব শর্মা
১.ঋগ্বেদ (৬/৩৯/১)
অপপ্রচারঃ
" হে ইন্দ্র! তুমি আমাদিগের সোমরস পান করো।ইহা মদ-কর,বিক্রান্ত, স্বর্গীয়,প্রাজ্ঞসম্মত,ফলোপধায়ক সুপ্রসিদ্ধ ও সেবনীয়। হে দেব! তুমি আমাদিগকে গো-প্রমুখ অন্ন প্রদান করো"।।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (৬/৩৯/১)
"মন্ত্রস্য কবের্দিব্যস্য বহ্নেবির্প্রমন্মানো বচনস্য মধ্বঃ। অপানস্তস্য সচনস্য দেবেষো যুবস্ব গর্ণতে গো-গ্রাঃ"।।
পদার্থঃ
হে (দেব) অত্যন্ত বিদ্বান! আপনি (বহ্নেঃ) সম্পূর্ণ বিদ্যাধারণকারী ও অগ্নির ন্যায় শুদ্ধকারী; (কবেঃ) বিদ্বান এবং (দিব্যস্য) সুন্দর ইচ্ছাসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ [হয়ে] (মন্ত্রস্য) [নিজে] আনন্দিত হন এবং [সকলকে] আনন্দিত করেন (বিপ্রমন্মনঃ) বিদ্বানের বিজ্ঞান যাতে রয়েছে সেই [বিপ্র ইতি মেধাবী নাম-নিঘ০ ৩/১৫]
(মধ্বঃ) মাধুর্যতাদি গুণযুক্ত (বচনস্য) বচনের ব্যবহারকারী হয়ে (অপাঃ) তা পালন করুন এবং (তস্য) সেই (সচনস্য) [পরমাত্মা] সম্বন্ধীয় ব্যক্তিগণের [যোগীজন] (গৃণতে) স্তুতি করার জন্য (গো-অগ্রাঃ) উত্তম বাণী যার মধ্যে রয়েছে (ইষঃ) অন্নাদি বা ইচ্ছাসমূহকে [ ইষমিত্যন্ননামসু পঠিতম্- নিঘ০ ২/৭ ] (নঃ) আমাদের জন্য (যুবস্ব) সংযুক্ত করুন।
[ যাতে আমরা তাদের থেকে বিদ্যা ও পরমাত্ম জ্ঞান লাভে সমর্থ হই ]
ভাবার্থঃ হে বিদ্বান! আপনি এমনভাবে প্রযন্ত করুন, যাতে আমরা দিব্য সুখ, দিব্য জ্ঞান এবং ঐশ্বরিক সম্পদ পাই।।
[ ভাষ্যকারঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ]
ব্যাকরণ প্রমানঃ- ঋগ্বেদ (৬/৩৯/১)
"এখানে সায়ণাচার্য ও তদানুসারে বঙ্গ ও ইংরেজি অনুবাদকগণ গো অর্থ সরাসরি গরু নিয়েছেন।যা কিনা প্রকরণ বিরুদ্ধ এবং বৈদিক ভাষ্যরীতির অনুকূল নয়।।
সঠিক অর্থ গ্রহণ+ ব্যাকরণ প্রমানঃ-
" গো" শব্দের অর্থ বাণী করেছেন, মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী; যা কিনা নিরুক্ত ও ব্রাহ্মণআদি গ্রন্থ সমর্থিত।।
উদাহরণঃ "সরস্বতী হি গৌ"- শতপথ ব্রাহ্মণ (১৪/২/১/৭)
" বাঙ নাম"- নিঘুন্ট-(১/১১)
"স্তোতৃনাম"- নিঘুন্ট-(৩/১৬)
#টিপ্পনীঃ-
" গো" শব্দের অর্থ বাণী তা ঋগ্বেদ (১/১৭৩/৮)-এও পাবেন।।
২. ঋগ্বেদ (৬/১৬/৪৭)
#অপপ্রচারঃ
"হে অগ্নি! আমরা তোমাকে হৃদয় দ্বারা সংস্কৃত ঋক্ রূপ হব্য প্রদান করিতেছি। বলশালী বৃষভ্ ও ধেনুগণ তোমার নিকট পূর্ব্বোক্তরূপ হব্য হউক"।
#জবাবঃ
ঋগ্বেদ (৬/১৬/৪৭)
" আ তে অগ্নে ঋচা হবির্হৃদা তষ্টং ভরামসি। তে তে ভবন্তুক্ষণ ঋষভাসো বশা উত"।।
পদার্থঃ হে (অগ্নে) জগদীশ্বর! যে (তে) আপনার (হবিঃ) অন্তকরণ [মূল তত্ত্ব] এবং (তষ্টম্) অত্যন্ত শুদ্ধ স্বরূপকে আমরা (ঋচা) প্রশংসারূপ ঋগ্বেদ আদি দ্বারা এবং (হৃদা) হৃদয় দ্বারা (আ-ভরামসি) উত্তমভাবে পোষণ [ ধ্যান ] করি; সেই (তে) আপনার কৃপার মাধ্যমে আপনার জন্য (তে) আপনার সম্বন্ধীয় [ সমস্ত চিন্তা ও কর্ম ] (উক্ষণঃ) [শান্তি] বর্ষণকারী (ঋষভাষঃ) উত্তম (উত) ও (বশাঃ) [সকলের জন্য মঙ্গল ] কামনাযোগ্য (ভবন্তু) হোক।
ভাবার্থঃ যাহারা সত্যভাব এবং অন্তঃকরণের দ্বারা জগদীশ্বরের [পরমাত্মার] আজ্ঞা পালন করেন, তারা সব দিক দিয়েই উৎকৃষ্ট হয়ে থাকেন।।
[ ভাষ্যকারঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ]
৩. ঋগ্বেদ (১০/১৬/৭)
অপপ্রচারঃ
"হে মৃত! তুমি গো-চর্মের সহিত অগ্নি শিখাস্বরূপ কবচ ধারণ কর, তোমার প্রচুর মেদের দ্বারা তুমি আচ্ছাদিত হও, তাহা হইলে এই যে দুর্দ্ধর্য অগ্নি, যিনি বলপূর্বক ও অহংকার সহিত তোমাকে দগ্ধ করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তিনি একেবারে তোমার সর্ব্বাংশে ব্যাপ্ত হইতে পারিবেন না"।।
জবাবঃ
💠ঋগ্বেদ (১০/১৬/৭)
" অগ্নের্বর্মপরিগোভির্ব্যযস্ব সং প্রোর্ণুষ্ব পীবসা মেদসা চ। নেত্ত্বা ধৃষ্ণুর্হরসা জর্হৃষাণো দধৃগ্বিধক্ষ্ যন্পর্যঙ্খয়াতে"।
পদার্থঃ
(অগ্নেঃ-বর্ম গোভিঃ পরিবযস্ব্য পীবসা মেদসা চ সম্প্রোর্ণুষ্ব) অগ্নির গৃহ [ বর্মোতি গৃহনাম-নিরুক্ত০ ৩/৪ ] অর্থাৎ চিতাকে ইন্দ্রিয় এবং নাড়িসমূহ সহিত এই মৃতদেহ উত্তমভাবে প্রাপ্ত হউক (ব্যয গতৌ-ভ্বাদিঃ) এবং মাংস-মেদ-চর্বি সহিত জলন্ত শব বেদিকে অর্থাৎ চিতাকে সম্যক পূর্ণভাবে প্রাপ্ত হোক, কেননা (ধৃষ্ণুঃ- জর্হৃষাণঃ- দৃধক্- বিধক্ষ্যণ্-নেত্ত্বা হরসা পর্যঙ্খয়াতে) প্রসহ্যকারী [ প্রসহনার্যস্য চৌরাদিকস্য ধৃষ্ধাতোঃ- এসিগৃধিধৃষিক্ষিপেঃ ক্নুঃ- অষ্টা০ ৩/৩/১৪০] অতিষয় তীব্রতা দ্বারা [ হৃষু-অলীকে ভ্বাদিঃ] বস্তুমাত্রকে অকিঞ্চিৎকারী অগ্নি সেই শবকে বিশেষরূপে জ্বালানোর সময় শবের অঙ্গ সমূহকে যেন ইতস্তত বিক্ষিপ্ত না করে।
ভাবার্থঃ
শবদাহ করার বেদীর পরিমাণ এতটা হওয়া উচিত, যাতে মৃতদেহ সুন্দর করে চিতাতে প্রবিষ্ট হয়, আর শবের প্রত্যেক ইন্দ্রিয়,নাড়ী,মাংস,চর্বি আদি সকল অংশে আগুন যেন উত্তমভাবে প্রবেশ করে।যারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করেন তাদের মনে রাখা উচিত যে, চিতাতে আগুন এমনভাবে জ্বালাতে হবে যেন আগুন অতি তীক্ষ্ণ ও শক্তিশালী হয়ে বিপরীত ভাবে মৃতদেহকে পুরানোর মাধ্যমে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত না করে।।
[ ভাষ্যকারঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ]
৪. ঋগ্বেদ (১০/৮৭/১৬)
অপপ্রচারঃ [ এটি আসলে অপপ্রচার নয়, এখানে হরফের অনুবাদ প্রায় ঠিক আছে ]
" যে রাক্ষস নর-মাংস সংগ্রহ করে, অথবা অশ্ব প্রভৃতি পশুদিগের মাংস সংগ্রহ করে, যে হত্যার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরণ করে। হে অগ্নি! নিজ বলে তাহাদিগের মস্তক ছেদন করিয়া দেও"।।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/৮৭/১৬)
[ ক্রুরতা বা নিষ্ঠুরতাকে বিরত রাখা ]
यः पौरु॑षेयेण क्र॒विषा॑ सम॒ङ्क्ते यो अश्व्ये॑न प॒शुना॑ यातु॒धान॑: । यो अ॒घ्न्याया॒ भर॑ति क्षी॒रम॑ग्ने॒ तेषां॑ शी॒र्षाणि॒ हर॒सापि॑ वृश्च ॥
পদার্থঃ হে (অগ্নে) রাজন! (তেষাম্) তাদের [ নিষ্ঠুর ব্যক্তিদের ] (শীর্ষাণি) মস্তকের [অশুভ চিন্তাধারাকে] (হরসা) আপনার প্রজ্বলিত তেজের দ্বারা (বৃশ্চ) আপনি ধ্বংস করেন বা নষ্ট করেন।অর্থাৎ এদের [ নিষ্ঠুর ব্যক্তিদের ] উচিত শাস্তি বা দন্ড প্রদান করে তাদের এসব অপবিত্র কর্ম থেকে থামান বা বিরত করেন। সর্বপ্রথম আপনি তাদের থামান। (যঃ) যে (পৌরুষেয়েণ) পুরুষ সম্পর্কিত (ক্রবিষা) মাংসের দ্বারা (সমঙক্তে) নিজেকে সংগত করে। নর [ মনুষ্য ] মাংসের বর্ধন কামনা করে।২. (যঃ) যে জন (অশ্বেন) ঘোড়ার মাংসের সাথে নিজেকে সংগত করে।ঘোড়ার মাংস ভক্ষণ করে অথবা ঘোড়াদের দিন-রাত জোয়াতে তথা বাজিতে রেখে নিজের ভোগ বিলাসিতা বাড়ানোর প্রযন্ত করে। (যঃ যাতুধানঃ) যে ব্যক্তি অন্যদের দুঃখ-কষ্ট প্রদান করে; (পশুনা) এক পশুর দ্বারা, অন্য পশুদের যন্ত্রণা বা কষ্ট দিয়ে, নিজের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করতে চায়, গাভী বা গো-আদি পশুদের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করে, নিজের জীবিকা তথা উপার্জন অতিরিক্ত বৃদ্ধির জন্য যন্তশীল হয়। ৩. আর (যঃ) যে ব্যক্তিবর্গ (অধ্ন্যায়ঃ) হত্যার অযোগ্য গাভীকে (ক্ষীরাম)দুধ (ভরতি) দুধ দোহন করার পরিবর্তে, গাভীদের যন্ত্রণা প্রদান করে, হরণ করতে চায়। গাভীর সন্তান বাছুরকেও উচিত মাত্রায় দুধ না দিয়ে যে জন সম্পূর্ণ দুধই নিয়ে যেতে চায়, তাকে ও তাদের যেন রাজা যোগ্য শাস্তি প্রদান করার মাধ্যমে এই নিষ্ঠুর অপরাধ করার থেকে থামায়।মানুষের ওপর, ঘোড়ার ওপর ও অন্য পশুদের ওপর অথবা গো-আদি পশুদের ওপর হতে থাকা নির্দয়তার মতো নিষ্ঠুরতাকে দূর করে।আর এটি একজন আদর্শ দেশ পরিচালকের তথা রাজার কর্তব্য।।
ভাবার্থঃ রাজ্যের নিয়ম এমন হওয়া উচিত যে, কোনো মানুষ যেন অন্য মানুষকে, ঘোড়াদের অথবা অন্যান্য পশুদের এবং গাভীদের তথা গো-আদি পশুর ওপর নিষ্ঠুর আচরণ প্রদর্শন করতে না পারে।।
[ ভাষ্যকারঃ পন্ডিত হরিশরণ সিধান্তলংকার (আর্যসমাজ) ]
৫. ঋগ্বেদ (১০/৯১/১৪)
#অপপ্রচারঃ
" যে অগ্নির উপর বিস্তর ঘোটক, বলবান বৃষ,পুরুষত্ব বিহীন মেষ আহুতিরূপে অর্পণ করা হইয়াছে, যিনি জলের পালনকর্তা, যাহার পৃষ্ঠে সোমরস, যিনি যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা, সেই অগ্নির উদ্দেশ্যে মনে মনে চিন্তা করিয়া এই সুন্দর স্তব রচনা করিতেছি"।
#জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/৯১/১৪)
" যস্মিন্নশ্বাস ঋষভাস উক্ষণো বশা মেষা অবসৃষ্টাস আহুতাঃ। কীলালপে সোমপৃষ্ঠাঃ বেধসে হৃদা মতিং জনয়ে চারুমগ্ময়ে "।।
পদার্থঃ (যস্মিন্) যে উপাসনাতে আনীত পরমাত্মাকে অথবা যার আশ্রয়ে (উক্ষণঃ) সেচন সমর্থ (অশ্বাসঃ) অশ্ব (ঋষভাসঃ) বৃষভ (বশাঃ) কামনীয় দুগ্ধদানকারী গো-সমূহ (মেষাঃ) ঊর্ণ বা সুতাদানকারী ভেড়া (অবসৃষ্টাসঃ) পর্যাপ্ত (আহুতাঃ) অভিপ্রাপ্ত [ " আহুতং-অভিহুতম্" নিরুক্ত০ ২/২৫ ] (কীলালপে) সেই অন্নরক্ষক [ "কীলালম্ অন্ননাম"- নিঘ০ ২/২৫ ] (সোমপৃষ্ঠায়) সৌম্য ঔষধীরস যেমন আনন্দ স্পৃষ্ট করছে, আত্মাতে ভাবনা করা হয় যার আশ্রয়ে, সেই (বেধসে-অগ্ময়ে) বিধাতা-পরমাত্মার জন্য ( হৃদা-চারুং-মতিং জনয়ে) আমি হৃদয় থেকে, মন দ্বারা অতিসুন্দর আস্তিক চিন্তা-ভাবনা উৎপন্ন করি।
ভাবার্থঃ ঈশ্বর আমাদের শক্তিশালী ঘোড়া,বৃষ,সুন্দর কামনীয় দুগ্ধদানকারী ছাগল-ভেড়া, গো-আদি পশু প্রয়োজন অনুসারে প্রদান করেছেন, তেমনি খাদ্য ও রস দিয়েছেন জীবনে বেচে থাকার জন্যে।তাই আমরাও যেন সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে ও মন ভরে আস্তিক্যভাবের সাথে সেই ঈশ্বরের স্তুতি করি।।
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তুন্ডু ]
৬. ঋগ্বেদ (১০/৮৯/১৪)
অপপ্রচারঃ
" হে ইন্দ্র! যে অস্ত্র ক্ষেপণ করিয়া পরমাত্মা রাক্ষসকে বিদীর্ণ করিলেন, তোমার সেই নিক্ষেপণযোগ্য অস্ত্র কোথায় রহিল? যেরূপ গো-হত্যাস্থানে গাভীগণ হত হয়, তদ্রুপ তোমার ঐ অস্ত্রদ্বারা নিহত হইয়া বন্ধুদ্বেষী রাক্ষসগণ পৃথিবীতে পতিত হইয়া শয়ন করে"।
#জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/৮৯/১৪)
" কর্হি স্বিংসা ত ইন্দ্র চেত্যাসদঘস্য যদ্ভিনদো রক্ষ এষৎ। মিত্রক্রুবো যচ্ছসনে ন গাবঃ পৃথিব্যা আপৃগমুয়া শয়ন্তে"।।
পদার্থঃ (ইন্দ্র) হে পরমাত্মন্! (তে) তোমার (কর্হিস্বিৎ) কদাচিত (সা চেত্যা) সেই চেতনা ও প্রেরণীয় শক্তি (যৎ) যতঃ- যার দ্বারা (অঘস্য রক্ষঃ) পাপী রাক্ষস অর্থাৎ [ ক্রুর-নিষ্ঠুর-মানবতা ও জীব-প্রকৃতি বিরোধী ও ক্ষতিকারীর প্রতি ] (এষৎ অভিনৎ) আক্রমণ করে, তাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে নষ্ট করে (মিত্রক্রুবঃ) মিত্রঘাতক [ পশু ও প্রকৃতিরূপ মিত্রের ঘাতক ] (যৎ-শসনে ন) যেভাবে হিংসাস্থানে (গাবঃ) গো-আদি পশু হত্যা করে, (অমুয়া পৃথিব্যাঃ) সেই শক্তি দ্বারা পৃথিবীর সহিত (আপৃক্ শয়ন্তে) সম্যক সম্পৃক্ত হয়ে মৃতভাবে শয়ন করে।।
ভাবার্থঃ পাপী-রাক্ষসের প্রতি [ ক্রুর-নিষ্ঠুর, মানবতা ও জীব-প্রকৃতি বিরোধী ক্ষতিকারীর প্রতি ] পরমাত্মার অস্ত্রশক্তি [ চেতনা ও প্রেরণীয় শক্তি ] গমন করে,আর তাদের ধ্বংস করে দেয়। যেভাবে পাপীদের দ্বারা গো-আদি পশু মারা যাবার পর পৃথিবীতে শয়ন করে, সেভাবে পাপীরাও মৃত্যুর পর পৃথিবীতে শায়িত হয়ে যায়।।
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তুন্ডু ]
৭. ঋগ্বেদ (১০/৮৬/১৩)
অপপ্রচারঃ
" হে বৃষকপিবনিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্ত এবং আমার সুন্দরী পুত্রবধূ। তোমার বৃষদিগকে ইন্দ্র ভক্ষণ করুন, তোমার অতি চমৎকার অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ করুন। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ"।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/৮৬/১৩)
" বৃষকপায়ি রেবতি সুপুত্র আহু সুস্নুষে। ঘসত্ত ইন্দ্র উক্ষণঃ প্রিয়ং কাচিৎকরং হবির্বিশ্বস্মাদিন্দ্র উত্তর।
সরলার্থঃ
সমস্ত সুখ কে মেঘের তুল্য বর্ষনকারী প্রভুর অপার শক্তি! হে অনেক ঐশ্বর্যের স্বামিনি! হে উত্তম পুত্র, জীবধারী! হে উত্তম সুখপূর্বক বিরাজমান, সুখদায়িনি! পরম ঐশ্বর্যবান প্রভু সেচনকারী মেঘ দ্বারা উৎপন্ন প্রীতিকারক অনেক সুখ দানকারী তোমার উত্তম অন্ন সদৃশ [ জগতকে ] ভক্ষণ করেন [ প্রলয়কালে লীন করে নেয় ] পরমঐশ্বর্যবান প্রভু সবার থেকে উপরে।
[ ভাষ্যকারঃ পন্ডিত জয়দেব শর্মা ]
৮. ঋগ্বেদ (১০/৮৬/১৪)
অপপ্রচারঃ
" আমার জন্য পঞ্চদশ এমন কি বিংশ বৃষ পাক করিয়া দেয়, আমি খাইয়া শরীরের স্থুলতা সম্পাদন করি, আমার উদরের দুই পার্শ্ব পূর্ণ হয়। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ"।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/৮৬/১৪)
" উক্ষ্ণো হি মে পঞ্চদশ সাকং পচন্তি বিংশতিম্। উতাহমদ্মি পীব ইদুভা কুক্ষো পৃণন্তি মে বিশ্বস্মাদিন্দ্র উত্তর"।
সরলার্থঃ
আমার সেচনকারী পনেরো-দশ ইন্দ্রীয় এবং পঞ্চ প্রাণ হাত এবং পায়ের বিশ আঙ্গুলির সমান শরীরের ভিতর বিশ অঙ্গকে একসাথে পরিপাক করে এবং পরিপুষ্ট হয়ে পুষ্টিদায়ক ভোগ্য দেহ এবং নানা প্রকার ভোগকে বা সেই প্রাণকে ভোগ করি, ঐ সমস্ত প্রাণ নিশ্চয়রূপে আমার দুই পার্শ পূর্ণ করে, শক্তিশালী প্রভু সবার থেকে উপরে।।
[ ভাষ্যকারঃ পন্ডিত জয়দেব শর্মা ]
ব্যাকরণ প্রমানঃ
এখানে "বৃষভ" শব্দের অর্থ বৃষ বা ষাড় অর্থে নেওয়া যাবে না।কারণ তা বৈদিক সংস্কৃতের ব্যাকরণ বিরুদ্ধ।।
১.নিরুক্ত (৭/২৩)- "বৃষভ" অর্থ- বর্ষা বর্ষণকারী আবার সুখ-প্রভৃতির বর্ষণকারী পরমেশ্বর।।
"প্রনু মহিত্বং বৃষভস্য বোচম"।।
২. " বৃষভ" শব্দের আরেকটি অর্থ হলো "বেদজ্ঞ বিদ্বান"।
" অনর্বাণং বৃষভং মন্ত্রজিহ্লম"-
অর্থাৎ সুন্দর বাণীসম্পন্ন বেদজ্ঞ বিদ্বানকে অন্ন দ্বারা পোষণ করো।।
"পচন" শব্দের ব্যাকরণগত অর্থঃ-
"বিদ্যা অথবা বলকে পরিপক্ক করা"।
" য়ঃ সুন্বন্তম্ অবতি য়ঃ পচন্তম্"।।
অষ্টাধ্যায়ী- (২০/৩৪/১৫)
টিপ্পনীঃ-ঋগ্বেদ (২/১২/১৪)
"উক্ষণ" শব্দের ব্যাকরণ প্রমাণঃ-
[ ঋগ্বেদ (৬/১৬/৪৭) ]
এখানে উক্ষণ,ঋষভ ও বশা যথাক্রমে সায়ণভাষ্যে ষাঁড়, মহিষ ও ধেনু করা হয়েছে।।
সঠিক অর্থঃ-
১."উক্ষণ" শব্দের অর্থ সেচন সমর্থ ও বর্ষণকারী।
নিরুক্ত (১৩/৯) অনুযায়ী জল সেচনার্থে ব্যবহৃত হয়।
উণাদিকোষ (১/১৫৯)-উক্ষণ বৃদ্ধিকর্মণ।
২. "ঋষভ" অর্থ উত্তম বা শ্রেষ্ঠগুণসম্পন্ন মানুষ।।
শতপথ ব্রাহ্মণ (৫/৩/১/৩)-এ
"শ্রেষ্ঠ মনুষ্যকে ঋষভ বলা হয়েছে "।।
৯. ঋগ্বেদ (১০/৭৯/৬)
অপপ্রচারঃ
" হে অগ্নি! তুমি কি দেবতাদিগের মধ্যে কোন অপরাধ পাইয়া ক্রোধ ধারণ করিয়াছ? আমি জানিনা, এই জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছি? যেমন, খড়্গদ্বারা কোন গাভীকে খন্ড করিয়া ছেদন করে, তদ্রুপ তুমি ক্রিড়া করো, আর না কর, কিন্তু তুমি উজ্জ্বল হইয়া তোমার আহারীয় দ্রব্য ভোজন কালে পর্ব্বে পর্ব্বে উহা কর্ত্তন করো"।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/৭৯/৬)
किं दे॒वेषु॒ त्यज॒ एन॑श्चक॒र्थाग्ने॑ पृ॒च्छामि॒ नु त्वामवि॑द्वान् । अक्री॑ळ॒न्क्रीळ॒न्हरि॒रत्त॑वे॒ऽदन्वि प॑र्व॒शश्च॑कर्त॒ गामि॑वा॒सिः ॥
পদার্থঃ হে (অগ্নে) অগ্রনায়ক পরমাত্মন্! তোমার (দেবেষু) জীবন্মুক্ত বিদ্বানগণের মধ্যে (ত্যজঃ-এনঃ) ক্রোধ তথা পাপ [ ত্যজঃ ক্রোধনাম- নিঘ০ ২/১৩ ] (কিং চকর্থ) কি করে? অর্থাৎ কিছু করে না (নু-অবিদ্বানৎবাং পৃচ্ছামি) অবিদ্বান হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি (অক্রীডন্ - ক্রীডন্ হরিঃ) জানি বা না জানি তুমি সংহর্তা (অত্তবে-অদন্) নিজের মধ্যে গ্রহণ করার জন্য গ্রহণকারী (অসিঃ) অসি [দ্বারা] (পর্বশঃ) খন্ড খন্ড করো, (গাম্-ইব) অন্নের বীরুৎকে যেভাবে [ "অন্নং বৈ গৌঃ" - শত০ ৪/৩/৪/২৫ ] (বিচকর্ত) ছিন্ন-ভিন্ন করে দাও।।
ভাবার্থঃ
পরমাত্মা জীবন্মুক্তগণদের জন্য কখনো ক্রোধ ও অহিত করেন না।কারণ রাগ-অবিদ্যাদি পঞ্চক্লেশ থেকে তিনি সর্বদা মুক্ত।এই বিষয়টি অবিদ্বানগণ জানেন না।কিন্তু যে এই জড়জাগতিক সংসারে জন্মগ্রহণ করে, যে তার কর্ম করে এবং ধান গাছ পরিপক্ক হলে যেরূপ কেটে নেওয়া হয় সেভাবে কালও তারও অঙ্গ-বিভক্ত হতে থাকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে।। অর্থাৎ, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তার অঙ্গ-সমূহ আস্তে আস্তে জীর্ণ হয়ে আসে। সে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।।
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তুন্ডু ]
১০. ঋগ্বেদ (১০/২৭/২)
অপপ্রচারঃ
" ঋষি কহিতেছেন, যেসকল ব্যক্তি দৈবকর্মের অনুষ্ঠান না করে এবং কেবল তাহাদিগের নিজের উদর পূরণ করিয়া স্ফীত হইয়া ওঠে, আমি যখন তাহাদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে যাই, তখন হে ইন্দ্র! তোমার নিমিত্ত পুরোহিতদিগের সহিত একত্র স্থুলকায় বৃষকে পাক করি এবং পঞ্চদশ তিথির প্রত্যেক তিথিতে সোমরস প্রস্তুত করিয়া থাকি"।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/২৭/২)
यदीद॒हं यु॒धये॑ सं॒नया॒न्यदे॑वयून्त॒न्वा॒३॒॑ शूशु॑जानान् । अ॒मा ते॒ तुम्रं॑ वृष॒भं प॑चानि ती॒व्रं सु॒तं प॑ञ्चद॒शं नि षि॑ञ्चम् ॥
পদার্থঃ হে (তে-অমা) ঐশ্বর্যবান পরমাত্মা! আপনার সহায়তায় (যদি-ইত-অহম য়ুধয়ে) আমি উপাসক [ আপনার উপাসক বানানোর ] যুদ্ধের জন্য উদ্যত হব (তণ্বা শূশুজানান্) শরীরে জাজ্বল্যমান ক্রোধিত হয়ে ; (অদেবয়ুন্) যে আপনাকে নিজের ইষ্টদেব মানে না; স্বীকার করে না; সেই সকল নাস্তিকদের (সমনয়ানি) সম্যক প্রভাবিত করিব ; এবং আপনার উপাসক ও আস্তিক বানাব (তুম্রং বৃষভাং পচানি) আমি [ আপনার (পরমাত্মার) ভক্ত ] খুব মারাত্মক ষাড়ের মতো ভয়ংকর পাপকে ধ্বংস করিব। (তীব্রং সুতম্-পঞ্চদশং নিষিঞ্চদশং নিষিঞ্চম্) সেই প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে আমি আমার মনে ও আত্মাতে পূর্ণরূপে ধারণ করিতেছি।।২।।
ভাবার্থঃ ঈশ্বরের সহায়তা নিয়ে তার উপাসকেরা আত্মশক্তির সাথে অতি রাগান্বিত ব্যাক্তিদের ও নাস্তিকদের সাথে যুদ্ধ করে [ বাকযুদ্ধ, বোঝানোর জন্য প্রচেষ্টা ] তাদের ঈশ্বরের উপাসক-আস্তিক বানায় এবং তাদের ভেতরের কতৃত্বপূর্ণ পাপ দূর করে তাদের [উপাসকদের] মন ও আত্মায় আধ্যাত্মিক তেজকে ধারণ করেন।।২।।
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তুন্ডু ]
১১. ঋগ্বেদ (১০/২৮/৩)
অপপ্রচারঃ
" হে ইন্দ্র! যখন অন্ন কামনাতে তোমার উদ্দেশ্য হোম করা হয়, তখন তাহারা শীঘ্র শীঘ্র প্রস্তরফলক সহযোগে মাদকতাশক্তি যুক্ত সোমরস প্রস্তুত করে, তুমি তাহা পান কর। তাহারা বৃষভ সমূহ পাক করে, তুমি তাহা ভোজন কর"।।৩।।
জবাবঃ
ঋগ্বেদ (১০/২৮/৩)
"अद्रि॑णा ते म॒न्दिन॑ इन्द्र॒ तूया॑न्त्सु॒न्वन्ति॒ सोमा॒न्पिब॑सि॒ त्वमे॑षाम् । पच॑न्ति ते वृष॒भाँ अत्सि॒ तेषां॑ पृ॒क्षेण॒ यन्म॑घवन्हू॒यमा॑नः ॥
পদার্থঃ হে (ইন্দ্র) আত্মা! হে রাজন! (তে) তোমার জন্য (অদ্রিণা) চিকিৎসকের বা যাজকের দ্বারা অনুপ্রাণিত ভক্ত, (মন্দিনঃ) আপনার প্রযন্তকারী পরিবারের সদস্য বা কর্মচারীরা (নূয়াত্ সোমান্ সুন্বন্তি) রসময় সোমের প্রস্তুত করেন ( তেষাং ত্বং পিবসি) সেটাকে আপনি [ আত্মা বা রাজন ] পান করুন আর (তে) আপনার জন্যে (বৃষভান্ পচন্তি) সুখের বর্ষণকারী ভোগের প্রস্তুত করা হয় (মঘবন্ পৃক্ষেণ হূয়মানঃ) হে আত্মন! হে রাজন! স্নেহের সাথে প্রস্তুতকৃত (তেষাম্অতিস) এসকল কিছুকে আপনি ভোগ করুন।।৩।।
ভাবার্থঃ
আত্মা (জীবাত্মা) যখন শরীরে প্রবেশ করে, তখন তাকে অনুমোদনকারী চিকিৎসক ও প্রযন্তকারী পারিবারিক সদস্য তার জন্য অনেক রস এবং ভোগ্য পদার্থের প্রস্তুত করেন এবং আদর করে খাওয়ান যাতে সন্তানের শরীর পুষ্ট হয় তথা হতে থাকে ; তথা রাজা যখন রাজপদে অভিষিক্ত হন।তখন তার ভক্ত, পুরোহিত এবং তার প্রযন্তকারী রাজকর্মচারীগণ তার জন্যে সোম-আদি ঔষধের রস এবং উপাদেয় ভোগের প্রস্তুত করেন। রাজন সেসব কিছু স্নেহের ও শ্রদ্ধার সহিত সেবন করুক।।৩।।
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তুন্ডু ]
১২. যর্জুবেদ (১৩/৪৯)
মন্ত্রঃ
इ॒मꣳ सा॑ह॒स्रꣳ श॒तधा॑र॒मुत्सं॑ व्य॒च्यमा॑नꣳ सरि॒रस्य॒ मध्ये॑। घृ॒तं दुहा॑ना॒मदि॑तिं॒ जना॒याग्ने॒ मा हि॑ꣳसीः पर॒मे व्यो॑मन्। ग॒व॒यमा॑र॒ण्यमनु॑ ते दिशामि॒ तेन॑ चिन्वा॒नस्त॒न्वो निषी॑द। ग॒व॒यं ते॒ शुगृ॑च्छतु॒ यं द्वि॒ष्मस्तं ते॒ शुगृ॑च्छतु॥४९॥
পদার্থঃ
হে (অগ্নে) দয়াময় পরোপকারী রাজন! আপনি (জনায়) মনুষ্যাদির প্রাণীর জন্য (ইমম্) এই (সাহস্রম) অসংখ্য সুখের সাধনের (শতধারম) ও অসংখ্য দুধের ধারা বর্ষণের নিমিত্ত (ব্যচ্যমানম্) অনেক প্রকারে পালনের যোগ্য (উৎসম্) কুয়ার ন্যায় রক্ষাকর্তা বীর্যসেচক ষাড় এবং (ঘৃতম) ঘৃতকে (দুহানাম্) পূর্ণ করার মাধ্যমে (অদিতিম্) হত্যার অযোগ্য গাভীকে (মা-হিংসীঃ) হত্যা করো না। (তে) হে রাজন! আপনার রাজ্যে যেই (আরণ্যম্) বনে বা জঙ্গলে থাকা (গবয়ম্) বন্য পশুদের মাধ্যমে যদি চাষাবাদের ক্ষতি হয় তবে (অনুদিশামি) উপদেশ করি যে, (তেন) তাদের বিদূড়িত করার মাধ্যমে, সুরক্ষিত অন্নের দ্বারা (পরমে) উৎকৃষ্ট (ব্যোমন্) সর্ববাপী পরমাত্মার এবং (সরিরস্য) বিস্তৃত আকাশের মাঝে (চিন্বানঃ) সমৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোন। আপনার (তন্বঃ) শরীরের মধ্যে (নিষীদ) নিবাস করে (তে) আপনার শোক যেন (তম্) সেই (গবয়ম্) ক্ষতিসাধনকারী (ঋচ্ছতু) প্রাপ্ত হয় আর (য়ম) যেসমস্ত (তে) আপনার শত্রুদের (দ্বিষ্মঃ) আমরা দ্বেষ করি, তাদেরও যেন আপনার (শুক্) শোক তথা দুঃখ (ঋচ্ছতু) প্রাপ্ত হয়।। ৪৯।।
ভাবার্থঃ
এই মন্ত্রে বাচকলুপ্তোপমালঙ্কার রয়েছে। হে রাজ্যের শাসক রাজনগণ ! আপনাদের উচিত, যেসকল গো-আদি পশুর দুগ্ধ হতে দুধ,ঘৃত আদি উত্তম পদার্থ প্রাপ্ত হয়, যাদের দুধ আদি দ্বারা সকল প্রজার লালন-পালন হয় সেসকল পশুদের কখনোই হত্যা না করা। আর যেসকল ব্যক্তি এই উপকারী প্রাণীদের হত্যা করে, তাদেরকে ন্যায়বিচার করে যোগ্য শাস্তি প্রদান করা, আর বন-জঙ্গলে থাকা বন্য হিংস্র জীব-জন্তু যারা প্রজাদের ক্ষতিসাধন করে, তাদের বিদূরিত করা।।৪৯।।
[ ভাষ্যকারঃ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ]
সামবেদ মন্ত্রসংখ্যাঃ-১৬১ ও ১৪২-এ "বৃষভ"- শব্দের অর্থঃ- সুখ-শান্তির বর্ষা প্রদানকারী পরমাত্মা!
সামবেদ-১৩২ নং মন্ত্রঃ " বৃষন" শব্দের অর্থঃ-" অভিষ্ট সুখ,শান্তি আর ধন প্রভৃতির বর্ষণকারী পরমেশ্বর।
সামবেদ (১৪৮) এ "বৃষন্তম"- অর্থ- " অতিশয় বলবান অথবা বৃষ্টি প্রদানকারী পরমেশ্বর।।
ও৩ম্ শম্
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ