হনুমান জী কি বাঁদর ছিলেন ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

25 January, 2022

হনুমান জী কি বাঁদর ছিলেন ?

পবনসুত হনুমান, রামায়ণের এক বহুল আলোচিত চরিত্র। রামচন্দ্রের প্রতি ভক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত, প্রভুভক্তির এক মূর্তিমান স্বরূপ। অনেককাল থেকেই হনুমানের কথিত ভক্তরা তাঁকে লেজযুক্ত বানর (monkey) বলে মনে করেন এবং মান্যতার সহিত মিথ্যাভক্তি ও প্রচার করেন। মূলত বানর শব্দ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে রামায়ণে সেটার বিচার করা এখানে আবশ্যক। সাধারণত রূঢ় অর্থে বানর অর্থ বানর (monkey) বুঝায়। যোগরূঢ় অর্থে "বানর" শব্দ দ্বারা 'বন মধ্যে উৎপন্ন হওয়া অন্ন ভোজনকারী' বুঝায় । যেমন পর্বত অর্থাৎ গিরিমধ্যে অবস্থানকারী এবং সেখানকার অন্ন গ্রহনকারী কে "গিরিজন" বলে। তেমনই বন মধ্যে উৎপন্ন হওয়া অন্ন ভোজনকারী ও অবস্থানকারীকে 'বানর' বলা হয়। হনুমান এবং তাঁহার স্বজনরা বনমধ্যে উৎপন্ন হওয়া ফলমূলাদি ভোজন করতেন এবং অবস্থান করতেন তাই তাঁদের 'বানর' বলা হতো। আমরা কিছু প্রশ্ন-সমাধানের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি যে হনুমান বানর (monkey) ছিল নাকি মনুষ্য!

হনুমান জী কি বাঁদর ছিলেন ?

◾১. (ক) বানর কি মানুষের মতো কথা বলতে পারে?
(খ) বানর কি লেখা-পড়া করে উচ্চকোটির বিদ্বান্ হতে পারে?
☞বানর (monkey) মনুষ্যের ন্যায় কথা বলতে পারেনা, এটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ। এটি সাধারণ হইতে বিজ্ঞানমনস্ক ব্যাক্তিরাও মানেন যে, বানর (monkey) মনুষ্যের ন্যায় কথা বলতে পারে না এবং পারতোও না। আর কোন বানর (monkey) লেখা-পড়া করে উচ্চকোটির বিদ্বান্ হতে পারে এটি হাস্যকর ছাড়া আর কিইবা ভাববে বিবেক-বুদ্ধির ব্যবহার করতে জানা মনুষ্যজন! কিন্তু রামায়ণে দেখা যায় হনুমান মনুষ্যের ন্যায় কথা বলতেন এবং উচ্চকোটির বিদ্বান্ ব্যক্তিও ছিলেন। শ্রীরামচন্দ্র স্বয়ম্ ঋচ্যমূক পর্বতে হনুমানের সহিত প্রথম সাক্ষাৎকারে কথন করে, ভ্রাতা লক্ষ্মণকে বলেছেন -
নানৃগ্বেবেদবিনীতস্য নাযজুর্বেদধারিণঃ।
নাসামবেদবিদুষঃ শক্যমেবম্ প্রভাষিতুম্।।”
-------বাল্মীকি রামায়ণ-৪/৩/২৮
অনুবাদ : এই হনুমান উচ্চকোটির বিদ্বান্ ব্যক্তি, কেননা ঋগ্বেদ অধ্যয়নে অনভিজ্ঞ, যজুর্বেদের জ্ঞানহীন এবং সামবেদের বোধ শূণ্য ব্যক্তি এরূপ পরিষ্কৃত কথন করতে পারবেন না।
নূনং ব্যাকরণং কৃত্স্নমনেন বহুধা শ্রুতম্।
বহু ব্যাহরতানেন ন কিঞ্চিদপশব্দিতম্।।
-------বাল্মীকি রামায়ণ-৪/৩/২৯
অনুবাদ : নিশ্চয়ই তিনি ব্যাকরণ শাস্ত্র অনেকবার অধ্যয়ন করেছেন, কারন এই যে - এতক্ষণ যাবৎ কথনের মধ্যে তিনি কোন ত্রুটিই করেননি।
◑ শুধু তাহাই নয় একজন সত্যিকারের উত্তম মনুষ্যের গুণসম্পন্ন ছিলেন হনুমান। তা তাঁহার কথনের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। শ্রীরামচন্দ্রও বলেছেন -
ন মুখে নেত্রয়োর্বাপি ললাটে চ ভ্রুবোস্তথা।
অন্যেষ্বপি চ গোত্রেষু দোষঃ সংবিদিতঃ ক্বচিত্ ॥
-------বাল্মীকি রামায়ণ-৪/৩/২৯
অনুবাদ : বাক্য প্রয়োগ কালে তাঁহার মুখ, নেত্র, ললাট, ভ্রমধ্যে তথা অপর কোন অঙ্গেই বিন্দুমাত্রও কোন বিকার বা দোষ দেখা যায়নি।
অবিস্তরমসন্দিগ্ধমবিলম্বিতমদ্রুতম্।
উরঃস্থং কণ্ঠগং বাক্যং বর্ততে মধ্যমে স্বরে ॥
-------বাল্মীকি রামায়ণ-৪/৩/৩১
অনুবাদ : তাঁহার ভাষণ সংক্ষিপ্ত, পরন্তু সন্দেহরহিত। নিজ কথন ব্যক্ত করার সময় না তো শীঘ্রতা করেছে আর না বিলম্ব করেছে। তাঁহার হৃদয়ের বাক্য যখন কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে, তখন তাঁহার স্বর না উচ্চ হতো আর নাতো খুব নিম্ন হতো, অপিতু মধ্যম স্বর হতো।
সংস্কারকমসম্পন্নামদুতামৰিলম্বিতাম্।
উচ্চারয়তি কল্যাণীং বাচং হৃদয়হারিণীম্॥
-------বাল্মীকি রামায়ণ-৪/৩/৩২
অনুবাদ : তাঁহার বাণী ব্যাকরণ দ্বারা সংস্কারিত, ক্রম সম্পন্ন তথা না তো খুবই ধীরে বলেছে আর নাতো খুব শীঘ্র বলেছে। তাঁহার বাণী (বাক্য) হৃদয়কে হর্ষিত করার মতো এবং খুবই মধুর।
হনুমান ছিলেন সর্বশাস্ত্রবিশারদ (বাল্মীকি রামায়ণ-৪/৫৪/৫)
◑স্বয়ম্ হনুমানজী অশোক বাটিকা মধ্যে সীতাকে নিজ পরিচয় দেবার পূর্বে চিন্তা করলেন যে-
যদি বাচম্ প্রদাস্যামি দ্বিজাতিরিব সংস্কৃতাম্।
রাবণম্ মন্যমানা মাম্ সীতা ভীতা ভবিষ্যতি।।
---------(বাল্মীকি রামায়ণ -৫/৩০/১৮)
অনুবাদ : যদি আমি দ্বিজাতির (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য) ন্যায় পরিমার্জিত সংস্কৃত ভাষা প্রয়োগ করি তাহলে আমাকে রাবণ ভেবে, সীতা ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে।
[তাই এমন কোন উপায় খুঁজতে হবে যা দ্বারা সীতা আমার কথাও শুনবে কিন্তু ভয়ে ভীত হবে না]
◑এর দ্বারা প্রমাণিত যে হনুমানজী মহান্ বিদ্বান্ ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি ব্যতিতও অন্য সুগ্রীব, অঙ্গদ ও তারা সহ অনেক বানরই বৈদিক বিদ্বান্ ছিলেন। অঙ্গদ সম্পর্কে হনুমানজী বলেছেন -
বুদ্ধ্যা হ্যষ্টাঙ্গয়া যুক্তম্ চতুর্বলসমন্বিতম্।
চতুর্দশ গুণম্ মেনে হনুমান্ বালিনঃ সুতম্।।
---------(বাল্মীকি রামায়ণ -৪/৫৪/২)
অনুবাদ : বালীপুত্র অঙ্গদ অষ্টাঙ্গ বুদ্ধিসম্পন্ন, চার প্রকার বলযুক্ত এবং রাজনীতির চৌদ্দ প্রকার গুণে সমলঙ্কৃত।
✔ বুদ্ধির অষ্ট অঙ্গ : ১.শ্রবণ করার ইচ্ছা, ২.শ্রবণ করা, ৩.বুঝা, ৪.শ্রবণ করে ধারণ করা, ৫.উহাপোহ করা , ৬.অভিপ্রায় জানা , ৭.বিজ্ঞান, ৮.তত্বজ্ঞান।
✔ চার প্রকার বল : ১.শাম, ২.দান, ৩.ভেদ, ৪.দণ্ড।
অথবা - ১.বাহুবল, ২.মনোবল, ৩.উপায়বল, ৪.বন্ধুবল।
✔ রাজনীতির চৌদ্দ গুণ : ১.দেশ কালের জ্ঞান, ২.দৃঢ়তা, ৩.কষ্টসহিষ্ণুতা, ৪.সর্ববিজ্ঞানতা, ৫.দক্ষতা, ৬.উৎসাহ, ৭.মন্ত্রগুপ্তি, ৮.একবাক্যতা, ৯.শুরতা, ১০.ভক্তিজ্ঞান, ১১.কৃতজ্ঞতা, ১২.শরনাগতবৎসলতা, ১৩.অমর্ষিত্ব = অধর্মের জন্য অসহিষ্ণুতা, ১৪.অচপলতা = গম্ভীরতা।
এত গুণ বানরের তো দূরের কথন, বর্তমান কোন মনুষ্যের আছে কিনা সন্দেহ হয়। এত আধুনিক যুগের বানরের যেখানে এত গুণ নেই তাহলে পূর্বকালীন বানর (monkey) কি এত গুণসম্পন্ন হতে পারে?
◾২. বানরদের কি মানুষের মতো আলাদা আলাদা নাম থাকে?
☞আমরা সকলেই জানি যে, মানুষের ন্যায় বানরদের আলাদা আলাদা নাম থাকেনা। কিন্তু রামায়ণে উল্লেখিত বানরদের আলাদা আলাদা নাম ছিল, যেমন -
ক. সুগ্রীব (বাল্মীকি রামায়ণ -৪/২/১)
খ. হনুমান (বাল্মীকি রামায়ণ -৪/২/১৩)
গ. বালী (বাল্মীকি রামায়ণ -৪/২/১৪)
ঘ.অঙ্গদ (বাল্মীকি রামায়ণ -৪/৫৪/১)
ঙ.তারা (বাল্মীকি রামায়ণ -৪/১৫/৬)........
অনেকেই হয়তো বলতে পারেন যে, যারা বানর খেলা দেখায় তারা তো নিজেদের পোষা বানরের আলাদা আলাদা নাম রাখেন, তো এক্ষেত্রে এইসকল কথন গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা উপরোক্ত নামের বানরেরা কারো পোষ্য ছিলনা, এরূপ প্রমাণও পাওয়া যায়না।
◾৩. বানর কি রাজা, রাজকুমার, মন্ত্রী হতে পারে?
☞রাজা, রাজকুমার, মন্ত্রী এইসকল যে কেবল মানুষই হয় /হয়েছিল সেটা সকলেই জানে এবং মানে। বানরের দ্বারা রাজা,মন্ত্রী আদি হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু রামায়ণে উল্লেখিত বানরদের, রাজা-রাজকুমার-মন্ত্রী হিসেবে বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন -
ক. 'বালী' ছিলেন কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের রাজা।
খ. 'অঙ্গদ' ছিলেন কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের রাজকুমার।(বাল্মীকি রামায়ণ -৪/১৫/১৫)
গ. 'সুগ্রীব'ও ছিল কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের রাজা।
ঘ. 'হনুমান' ছিলেন সুগ্রীবের মন্ত্রী।
ঙ. 'তারা' ছিলেন কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্যের রানী।........👇
উপরোক্ত লিখার তথ্যসূত্র-(বাল্মীকি রামায়ণ কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড)
এই সকল বিভ্রান্তি তাদেরই হয়, যে বা যাহারা রামায়ণে উল্লেখিত হনুমানজী সহ অন্য বানরদের monkey বলে মনে করেন। আমাদের আর্যদের মনে এমন বিভ্রান্তি উৎপন্ন হয় না কারণ আমরা জানি এবং মানি যে, রামায়ণে উল্লেখিত বানরেরা আমাদের ন্যায়ই মনুষ্য, কোন monkey নয়।
◾৪. বানরের যেরূপ লেজ থাকে, হনুমানেরও সেরূপ লেজ ছিল বলিয়া রামায়ণে প্রমাণ আছে। এই বিষয়ে কি বলবেন?
☞ উপরোক্ত তথ্য দ্বারা অন্তত এটা তো প্রমাণিত হয়েছে যে, রামায়ণে উল্লেখিত বানরেরা monkey ছিলনা। তাঁরাও আমাদের ন্যায় মনুষ্য দেহধারী ছিল এবং তাঁহারা মহামানব ছিল। লেজ ছিল তাঁদের আভূষণ। রাবণের সহিত হনুমান যখন কথা বলছিল তখন এক পর্যায়ে রাবণ বলেছেন -
কপিনাং কিল লাঙ্গুলমিষ্টং ভবতি ভূষণম্।।
-------(বাল্মীকি রামায়ণ -৫/৫৩/৩)
অর্থাৎ বানর জাতি লোকের জন্য তাদের 'লাঙ্গুল' খুবই প্রিয় এবং উত্তম আভূষণ।
আভূষণ যে আভূষণধারী ব্যক্তি হইতে আলাদা কিছু তা আমরা সকলেই জানি। জগদীশ্বরানন্দ সরস্বতী রামায়ণ ভাষ্যের টিপ্পনীতে লিখেছেন - 'লাঙ্গুল' ছিল বানরজাতির রাষ্ট্রীয় চিহ্ন, ইহাকে তাঁহারা খুবই শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতেন তথা ইহার অপমানকে জাতীয় অপমান মনে করতেন। রাবণ ইহাকেই জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন-(বা০ রা০-৫/৫৩/৪)। লাঙ্গুল বানরের লেজ সদৃশই ছিল, যা হনুমান ধারণ করেছিলেন। কিন্তু তা হনুমান সহ অন্য বানরজাতির শরীরের বাস্তবিক অঙ্গ ছিলনা।
➤এই বিষয়ে, গবেষক 'ডা০ শান্তিকুমার নানুরাম ব্যাস' লিখেছেন -
বানরদের সংস্কৃতিকে মহান এবং সমুন্নত অঙ্কিত করা হয়েছে। সুগ্রীবের রাজ্যাভিষেক তথা বালীর অন্ত্যেষ্টি দুইই বৈদিক বিধিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। সুগ্রীব, হনুমান তথা অঙ্গদের যে প্রভাবশালী চিত্রণ কবি [বাল্মীকি মুনি] করেছেন তা তাঁহের মহান সংস্কৃতির সূচক। বানরদের সম্পত্তি-বৈভব, বসনাভরণ, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম তথা সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনের বর্ণন হতে স্বাভাবিক নিষ্কর্ষ ইহাই হয় যে, রামায়ণকার রামের সহযোগীদের বস্তুত বানর (monkey) মানতেন না।
এই জাতির যে নামের উল্লেখ রামায়ণে রয়েছে তার মধ্যে 'বানর' শব্দ ১০৮০ বার প্রযুক্ত হয়েছে, এবং এর পর্যায়রূপে- 'বনগোচর', 'বনকোবিদ', 'বনচারী', 'বনৌকস' শব্দ রয়েছে। এর দ্বারা এটা স্পষ্ট যে 'বানর' শব্দ monkey এর সূচক নয় বরং বনবাসীর দ্যোতক। এর ব্যুৎপত্তি এইপ্রকার করা উচিৎ - বনসি (অরণ্যে) ভব চরো বা ইতি বানর = বনৌকস, আরণ্যক। বানরদের জন্য 'হরি' শব্দ ৫৪০ বার, প্লবগ শব্দ ২৪০ বার, কপি শব্দ ৪২০ বার প্রযুক্ত হয়েছে।...............
রামায়ণে উল্লেখিত বানরদের মনুষ্য মানতে সবথেকে বড় বাধক এই লেজ। কিন্তু সূক্ষভাবে বিচার করলে দেখা যায় যে, এই লেজ, হাত-পায়ের মতো শরীরের অভিন্ন অঙ্গ না হয়ে বানরদের এক বিশিষ্ট জাতীয় নিশান ছিল, যা আলাদা লাগানো হতো শরীরে। সেজন্যই হনুমানের লেজে আগুন লাগানোর পরেও, হনুমানের শারীরিক কোন কষ্ট অনুভব হয়নি।....
--------রামায়ণ-কালীন সমাজ/পৃষ্ঠা-৭১,৭২
প্রকাশকাল : ১৯৫৮
➤রামায়ণে উল্লেখিত বানরেরা মনুষ্য হওয়া সত্ত্বেও বানর বলার কারণ হিসেবে আরো একটি তথ্য গবেষক ক্ষিতিমোহন সেন এম০. এ. লিখেছেন-
আর্যদের পূর্ববর্তী অনেকেই নিজ পরিচয় কোন জীব-জন্তু অথবা বৃক্ষ-লতা আদির নাম দ্বারা দিয়ে থাকতেন।....নানা দেশে অতি প্রাচীন কাল হইতে এক বিশেষ চিহ্ন বা লাঞ্ছন দ্বারা পরিচয় দেওয়ার রীতি দেখা যায়। এই চিহ্ন সাধারণত কোন জীব-জন্তুর হয় নয়তোবা বৃক্ষ-লতা এবং পুষ্পের হয়। যে বস্তু চিহ্ন বা লাঞ্ছন রূপে ব্যাবহার হয়, সেই বস্তু সেই জাতির প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট শ্রদ্ধা ও সম্মানের বস্তু। ইংরেজিতে ইহাকে টোটেম (Totem) বলা হয়। ছোটকালে রামায়ণে- বানর এবং ভাল্লুককে মনুষ্যোচিত ব্যাবহার করতে দেখে, বড় কৌতূহল হতো। বড় হয়ে বুঝতে পারলাম এখনো নিজেকে বানর এবং ভাল্লুকের বংশধর পরিচয় দেয় এমন লোক এদেশে আছে। আরো পরে বুঝতে পারলাম এইসব টোটেরই ব্যাপার।
--------- ভারতবর্ষমেং জাতিভেদ /পৃষ্ঠা-১০৫
প্রকাশকাল : ১৯৪০
➤রামায়ণেই দেখা যায়, হনুমানের সহিত মাতা সীতা প্রথম কথনের শুরুতে হনুমানকে বলেছেন -
সুরাণাম্ অসুরাণাম্ চ নাগ গন্ধর্ব রক্ষসাম্ |
যক্ষাণাম্ কিম্নরাণাম্ চ কা ত্বম্ ভবসি শোভনে ||
----------বাল্মীকি রামায়ণ-৫/৩৩/৫
অর্থাৎ হে শোভনে! সুর, অসুর, নাগ, গন্ধর্ব্ব, যক্ষ, রাক্ষস,কিন্নরের মধ্যে আপনি কোন কুলের।
দেখুন যদি হনুমান বানরই হতো তাহলে এটা জিজ্ঞেস করার কি আছে যে - সে নাগ, কিন্নরাদি কিনা? আবার এখানে মানুষ কিনা তাও জিজ্ঞেস করেনি। করার কথাও নয়, কেননা কোন মনুষ্য অন্য কোন মনুষ্যের পরিচয় জানতে কি জিজ্ঞেস করে তুমি কি মানুষ অথবা সর্প, বানর, পাখি কিনা?
তাছাড়াও মহাভারতেও বিভিন্ন জাতির নাম উল্লেখ পাওয়া যায় । যারা মনুষ্য কিন্তু জাতির নাম কোন পশু-পাখি আদির নামে। মহাভারত/ভীষ্মপর্ব/নবম অধ্যায়ের ৫৬-৬৫ শ্লোকে - কুকুর, কাক..... ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য নামের উল্লেখ রয়েছে।
➤জাতি বলতে কি বুঝিয়েছেন?
মহর্ষি গৌতম প্রণীত নায়দর্শন-২/২/৭১ সূত্রের ভাষ্যে, স্বামী দর্শনানন্দ সরস্বতী একটি প্রশ্নোত্তর লিখেছেন জাতি বিষয়ে। যথা
প্রশ্ন- জাতি কত প্রকার?
উত্তর : জাতি দুই প্রকার। ১.সামান্য ২.বিশেষ। যেমন মনুষ্য জাতি সামান্য, এর মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়াদি বা শ্বেত-কৃষ্ণাদি, বা দেশভেদ অথবা আচার ভেদের জন্য অবান্তর জাতি তৈরি হয়।
এখানে জাতি বলতে জাতির বিশেষ অর্থটিই বুঝানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ