বেদের যথার্থ ভৌতিক স্বরূপ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

21 January, 2021

বেদের যথার্থ ভৌতিক স্বরূপ

বেদের যথার্থ ভৌতিক স্বরূপ

১ম ঋগ্‌, ২য় যজুঃ, ৩য় সাম ও ৪র্থ ত অথর্ববেদ। এইরূপ ক্রম দ্বারা চারিবেদের গণনা করার কারণ,

-যাবৎ (কোন বিষয়ের) গুণ বা গুণী (গুণযুক্ত পদার্থের জ্ঞান) মনুষ্যের না জন্মে, তাবৎ তাহাতে তিনি প্রীতির সহিত প্রবৃত্ত হইতে পারেন না এবং প্রীতিপূর্বক কোন কাৰ্যে প্রবৃত্ত না হইলে শুদ্ধ ক্রিয়াদির অভাববশতঃ, মনুষ্য কদাপি সুখ প্রাপ্তি করিতে সমর্থ হন না।
এইজন্যই বেদের চারিপ্রকার বিভাগ করা হইয়াছে। যদ্দ্বারা লোকে শুদ্ধভাবে বৈদিক কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হন, কারণ গুণজ্ঞানযুক্ত বিদ্যাকে জ্ঞাত হইতে পারা যায় বলিয়াই ঋগ্বেদকে প্রথমেই গণনা করা যোগ্য হইযাছে।
তৎপরে কোন পদার্থ বিষয়ের গুণজ্ঞান-লাভানন্তর তৎসম্বন্ধে ক্রিয়ানুষ্ঠানরূপ উপকার দ্বারা সমগ্র জগতের উপকার সাধন করিয়া সমগ্র জগতের উত্তমরূপে হিত সাধন করিতে পারা যায়, এজন্য কীরূপে কোন বিষয়ের জ্ঞান লাভ করিয়া, তাহা কার্যে পরিণত করিতে পারা যায়, তদ্বিষয় জানিবার জন্য যজুর্বেদকে ২য় সংখ্যায় গণিত করা হইয়াছে। এইরূপে জ্ঞান, কর্ম্ম ও উপাসনা কাণ্ডের বৃদ্ধি ও তাহার ফল কীরূপ ও কতদূর পর্য্যন্ত পাওয়া যায় এই সমস্তের বিধান সামবেদে লিখিত আছে, এজন্য ইহাকে তৃতীয় রূপ গণনা করা হইযাছে। এইরূপে ঋক, যজু ও সাম তিন বেদশাস্ত্রে যে সকল বিদ্যা লিখিত আছে তৎসমুদায়ের পরে শেষভাগে পূর্বাদির বিধান অর্থাৎ সকল প্রকার বিদ্যার রক্ষা ও সংশয় নিবৃত্তি জন্য চতুর্থবেদরূপ অথর্ববেদ লিখিত ও গণিত হইযাছে।
উপরোক্ত বিষয়ের গুণজ্ঞান, ক্রিয়াবিজ্ঞান তথা তৎসমুদায়ের উন্নতি ও রক্ষার্থে পূর্বাপর ক্রমশঃ রূপে লিখিত হইয়াছে, জ্ঞাত হইবেন, অর্থাৎ জ্ঞানকাণ্ড বিষয় ঋগ্বেদ বর্ণিত হইয়াছে, এইরূপে ক্রিয়াকাণ্ড বিষয় যজুর্বেদ ও জ্ঞান ও ক্রিয়ার সাধনার্থ সামবেদ প্রকাশিত হইয়াছে, এবং শেষকালে অন্যান্যা পদার্থবিদ্যাদির রক্ষা, উন্নতি ও প্রকাশার্থ অথর্ববেদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থরূপে সংখ্যা বাঁধা হইয়াছে। যেহেতু (ঋচ স্তুতৌ) (যজ দেবপুজাসঙ্গতি করণদানেষু) (য়ে অন্তকর্মাণি) এবং (সাম সান্ত্বপ্রয়োগে) (থতিশ্চরতিকর্ম্মা) ইহার অর্থ দ্বারা জ্ঞাত হওয়া যায় যে বেদের ঋগ্, যজুঃ, সাম ও অথর্ব এই চারি সংজ্ঞা রাখা হইয়াছে। বিশেষতঃ যদ্দ্বারা উপরোক্ত তিন বেদ সম্বন্ধীয় বিদ্যাবিষয়ে সর্বপ্রকার বিঘ্ন নিবারণ ও তাহাদিগের গণনা উত্তমরূপে করিতে পারা যায়, তজ্জন্যই ঈশ্বর অথর্ববেদের প্রকাশ করিয়াছেন।
বেদের যথার্থ ভৌতিক স্বরূপ

নিরুক্ত, ব্রাহ্মণ গ্রন্থ ও কিছু আপ্ত গ্রন্থ থেকে বেদের যথার্থ ভৌতিক স্বরূপ
*ছন্দ** :-
ছন্দ শব্দটিতে লোকে এটি বোঝে যে বেদে যে সব মন্ত্র আছে, উহার কোনো বাক্যকে ছন্দ বলা হয়। আর যেমন গায়ত্রী, উষ্ণিক, অনুষ্টুপ আদি এসবই ছন্দ । এ কথা নিশ্চিত সত্য । কিন্তু বেশির ভাগ লোকেই জানেনা যে ছন্দকেই বেদ বলা হয়। বেদই ছন্দ রূপ। বেদে আসা শব্দের সমূহকেই ছন্দ বলা হয় অর্থাৎ বেদ হচ্ছে ছন্দ রূপ। বেদে অনেক ছন্দ আছে। সরল শব্দে যদি বলা হয় তো বেদের কোনো মন্ত্রে যতো শব্দ আছে, তার মধ্যে কিছু নির্ধারিত শব্দের সমূহকেই ছন্দ বলা হয় অর্থাৎ এক মন্ত্রে একের অধিক অথবা বহু ছন্দ হতে পারে।
(ক) ছন্দের বেদ হওয়ার প্রমাণ :-
বেদঃ বেদাংশ্ ছন্দাংসি ।।( গোপথ ব্রাহ্মণ ১|৩২)
অর্থাৎ ছন্দকেই বেদ বলা হয়।
ছন্দ কেবল মন্ত্র অথবা শব্দকেই নয়। ছন্দ একটি পদার্থ অর্থাৎ বেদ মন্ত্রে যতোগুলি ছন্দ আছে, উহা সকল ছন্দকে পদার্থ বলা হয়।
(খ) ছন্দের পদার্থ হওয়ার প্রমাণ :-
মহর্ষি পিঙ্গল রচিত ছন্দ শাস্ত্র যাকে ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী আপ্ত পাঠ বিধির অন্তর্গত এটিকে সম্মিলিত করেছে ও ছন্দ শাস্ত্র , যাকে এক বেদাঙ্গ মানা হয় । মহর্ষি পিঙ্গল ছন্দ শাস্ত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে বিভিন্ন ছন্দকে বিভিন্ন রঙ (Colour) বলেছেন ।
"সিতসারঙ্গপিশঙ্গকৃষ্ণনীললোহিতগৌরা বর্ণা:" ( পিঙ্গলছন্দ সূত্রম্ ৩|৬৫)
অর্থাৎ গায়ত্রী ছন্দের রঙ - শ্বেত ( সিত)
উষ্ণিক ছন্দের রঙ- রঙিন, রঙ- বিরঙ( সারঙ্গ )
অনুষ্টুপ ছন্দের রঙ- লাল মিশ্রিত বাদামি ( পিশাঙ্গ)
বৃহতী ছন্দের রঙ - কালো (কৃষ্ণ)
পংক্তি ছন্দের রঙ- নীল ( নীলা)
ত্রিষ্টুপ ছন্দের রঙ- লাল ( লোহিত)
জগতি ছন্দের রঙ- গৌর( গৌরা)
যদি ছন্দ কেবল শব্দ রূপ হয় তো উহায় প্রকাশ কোথা থেকে আসবে? এটি দ্বারা কি প্রমাণিত হয়? এটির দ্বারা এটাই সিদ্ধ হয় যে ছন্দকে "পদার্থ" বলে। যদি তা না হয় তবে সেখান থেকে আলাদা রঙ (প্রকাশ) আসতে পারে না।
এবার পদার্থ বিজ্ঞানে অনভিজ্ঞ লোক এটি কদাপি বুঝতে পারে না যে ছন্দে রঙ বা বিভিন্ন প্রকাশ হওয়ার জন্যই ছন্দ পদার্থ হওয়ার প্রমাণ যা মহর্ষি পিঙ্গল দ্বারা রচিত ছন্দ শাস্ত্রের দ্বারা সিদ্ধ হইল ।
ঋষি দয়ানন্দের যজুর্বেদ ভাষ্যে "ছন্দ " এর অর্থ করে লিখেছেন :-
(i) পরিগ্রহণম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 14/5)
(ii) বলম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 14/9)
(iii)বলকারী, প্রযত্নম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 14/18)
(iv)ঊর্জানম্ , প্রকাশনম্ (যজুর্বেদ ভাষ্য 15/4)
(v)প্রকাশনম্ , প্রকাশরূপ (যজুর্বেদ ভাষ্য 15/5)
(vi)স্বচ্ছন্দতা (যজুর্বেদ ভাষ্য 19/74)
এই প্রমানের দ্বারা সিদ্ধ হলো ছন্দ রশ্মি স্বচ্ছন্দ রূপে বিচরণ করতে করতে বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিকে সব দিক থেকে গ্রহণ করে নেয় ও বল, প্রকাশ ও ঊর্জা উত্পন্ন করতে করতে নানা পদার্থ কে ধারণ ও সক্রিয় করে । এই ছন্দের দ্বারাই ব্রহ্মাণ্ডে বিভিন্ন প্রকারের কণ উত্পত্তি হয়।
অতএব ঋষি দয়ানন্দের এ প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে ছন্দ পদার্থকে বলা হয়। ছন্দ অর্থাৎ পদার্থ অর্থাৎ বেদ মন্ত্র ।
ছন্দ বিষয়ে অন্যান্য ঋষি গণের প্রমাণ:-
১| ছন্দাংসি অচ্ছাদনাত্ ( নিরুক্ত ৭|১২)
অর্থাৎ ছন্দ কোনো কণকে, কোনো পদার্থকে, কোনো কিরণকে লোক- লোকান্তরে আচ্ছাদিত করে , এজন্য ছন্দকে পদার্থ বলা হয়।
২| ছন্দ উহা যা সবাইকে আচ্ছদন করে । ( দৈবত ব্রাহ্মণ ৩|১৯)
অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে উপস্থিত সমস্ত পদার্থ, কণ, ধাতু, দ্রব্য, গ্যাস, ইলেকট্রনস্, প্রোটোনস্, কোয়ারকস্, অগ্নি, বায়ু, জল, আকাশ, অন্তরিক্ষ, গ্রহ, উপগ্রহ, সৌরমন্ডল, সূর্য, চন্দ্র, তারা, উল্কা- পিন্ড , ধূমকেতু আদি সমস্ত পদার্থ ছন্দের দ্বারা আচ্ছাদিত । আমাদের শরীরের এক এক কোষ ছন্দের দ্বারা আচ্ছাদিত । ইহার সব নির্মাণ বেদ মন্ত্র অর্থাৎ ছন্দের দ্বারা হয়েছে । ও এ ছন্দ কী? ছন্দ হচ্ছে পদার্থ যা বেদ মন্ত্র ।
এই প্রকারেই ছন্দ বিষয়ে অন্য ঋষিদের প্রমাণ :-
১| ছন্দ স্তোতৃণাম ( নিঘন্টু 3/16)
২| ছন্দতি অর্চতিকর্মা ( নিঘন্টু 3/14)
৩| ছন্দাংসি ছন্দয়নতীতী বা ( দৈবত ব্রাহ্মণ 3/19)
৪| ছন্দাংসি বৈ বাজিন: ( গোপথ ব্রাহ্মণ 1/20)
৫| ছন্দাংসি বৈ ধুরঃ ( জৈমিনী ব্রাহ্মণ 3/210)
৬| ছন্দোবীর্যজ্ঞস্থয়তে ( জৈমিনী ব্রাহ্মণ 2/431)
৭| উপবরহণম্ দদাতি । এতদৈ ছন্দাংসি রূপম্( কপিষ্ঠল সংহিতা 44/4)
৮| ছন্দোভিহীদঃ সর্ব বয়ুনং নদ্ধম্ ( শতপথ ব্রাহ্মণ 4/2/2/4)
এই প্রমানের দ্বারা ছন্দ রশ্মির বহু গুণ স্পট হয় :-
(ক) ছন্দ রশ্মি প্রকাশ কে উত্পন্ন করে।
(খ) ছন্দ রশ্মি কোনো কণ, পরমাণু, আদিকে সমস্ত দিক থেকে আচ্ছাদন করে।
(গ) ছন্দ রশ্মি বলের সংযোজিকা ও উতপাদিকা
(ঘ) ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণ, ও সমস্ত লোকের আধার রূপকে ধারণ করে।
(ঙ) ছন্দ রশ্মি সমগ্র সৃষ্টির সংযোগ- বিয়োগ আদি ক্রিয়াকে সম্পাদিত ও সমৃদ্ধ করে ছড়ায় ।
(চ) সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড ছন্দ রশ্মি দ্বারা বাধিত।
*রশ্মি* :-
ছন্দকে রশ্মি বলা হয় ও ছন্দ মন্ত্রকে বলা হয়। তাই বস্তুত বেদ মন্ত্রকে রশ্মি বলা হয়। এ রশ্মি প্রাণ স্বরূপ হয় তাই একে প্রাণ রশ্মিও বলা হয়। অতএব মন্ত্রকেই পদার্থ বলা হয় , ছন্দকেই পদার্থ বলা হয় , ছন্দই মন্ত্র ও মন্ত্রই ছন্দ ।
*ছন্দের প্রাণ রশ্মি হওয়ার প্রমাণ:-*
১|প্রাণ বৈ ছন্দাংসি ( কৌশিক ব্রাহ্মণে ১৭|২)
অর্থাৎ ছন্দ প্রাণ রূপে হয় ।
এবার , প্রাণ নিয়ে মহর্ষি বেদ ব্যাস বলেছেন:-
২|প্রাণা কম্পনাত্ ( ব্রহ্ম সূত্র ১|৩|৩৯)
অর্থাৎ কম্পন করবার জন্য প্রাণ বলা হয়।
৩|প্রাণা রশ্ম্যঃ ( তৈতরীয় ব্রাহ্মণ ৩|২|৫|২)
অর্থাৎ রশ্মিকে প্রাণ বলা হয়।
তাই ইহার দ্বারা সিদ্ধ হচ্ছে যে ছন্দ হচ্ছে কম্পন স্বরূপ প্রাণ যা রশ্মি (অর্থাৎ প্রাণ রশ্মি)।
৪|প্রাণ এবঃ রজ্জু ( কাণবীয় শতপথ ব্রাহ্মণ 3/¼/2)
অর্থাৎ প্রাণ হচ্ছে রজ্জু (দড়ি) । রজ্জু কোনো অন্য পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই প্রাণ রশ্মি বলা হয়। অর্থাৎ বেদ মন্ত্র কোনো দ্বিতীয় পদার্থ, রশ্মি , কণ আদিকে নিয়ন্ত্রণ করে এ জন্য বেদ মন্ত্র রজ্জু , রশ্মি বলা হয় অর্থাৎ বেদ মন্ত্রকেই প্রাণ রশ্মি বলা হয়।
এ সকল প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ হচ্ছে যে:-
১| বেদ মন্ত্র কম্পন স্বরূপ।
২| বেদ মন্ত্র ছন্দ স্বরূপ।
৩| ছন্দ হচ্ছে পদার্থ ।
৪| ছন্দ প্রাণ রশ্মি ।
৫| ছন্দকেই বেদ বলা হয়।
৬| বেদ রশ্মি স্বরূপ।
৭| বেদ প্রাণ রশ্মি স্বরূপ ।
৮| বেদ মন্ত্র হচ্ছে পদার্থ ।
বেদের সমস্ত ছন্দকে এক সাথে মিলিয়ে প্রাণ রশ্মি বলা হয় যেখানে আলাদা আলাদা ছন্দ (ছন্দ রশ্মি) আছে যেমন গায়ত্রী, অনুষ্টুপ ইত্যাদি যার থেকে আলাদা রঙ নির্গত হয় তাই তা পদার্থ স্বরূপে যা ওপরে পিঙ্গল ছন্দ শাস্ত্র থেকে প্রমাণ দেওয়া হয়েছে ।
অর্থাৎ বেদ মন্ত্র = ছন্দ স্বরূপ= রশ্মি = ছন্দ রশ্মি = প্রাণ রশ্মি = পদার্থ ।
মহর্ষি দয়ানন্দ জি রচিত ঋগ্বেদাদিভাষ্য ভূমিকার প্রমাণ-
মহর্ষি দয়ানন্দ জী ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকার তৃতীয় অধ্যায় (वेदानां नित्यत्वविचारः सम्पाद्यताम्) তে এটা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে বেদ মন্ত্র নিত্য সর্বদা একই রস থাকে ।
বৈদিক শব্দ নিত্য । বৈদিক শব্দ কুটস্থ অর্থাৎ বিনাশহীন। বৈদিক শব্দ সর্বদাই অখণ্ড একরস থাকে
আর এই বৈদিক শব্দের (বেদ মন্ত্রগুলির) নিবাসস্থান হল আকাশ।
মহর্ষির এই কথাগুলি প্রমাণ করে যে বেদ শব্দ অর্থাৎ বেদ মন্ত্র আকাশে সর্বত্র বিরাজমান। যা কখনো নষ্ট বা ক্ষয় হয় না। অর্থাৎ মহাবিশ্বে বিদ্যমান সকল পদার্থ, কণা, ধাতু, পদার্থ, গ্যাস, ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, কোয়ার্ক, আগুন, বায়ু, জল, আকাশ, মহাকাশ, গ্রহ, উপগ্রহ, সৌরজগত, সূর্য, চাঁদ, তারা, উল্কা, ধূমকেতু, ইত্যাদি সমস্ত জিনিস ছন্দ দ্বারা আচ্ছাদিত। মহাবিশ্বে উপস্থিত যত পদার্থ আছে তাহা ছন্দ দ্বারা আচ্ছাদিত।
তাহলে বলা হবে বেদ মন্ত্র অখন্ড একরসে গঠিত।
মহর্ষির এই বচনগুলো সাংকেতিক এবং রহস্যময়, যার অর্থ এই আকাশ শুধুমাত্র বেদ মন্ত্রের কম্পন দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। বেদ মন্ত্রগুলি আকাশের সর্বত্র অনুরণিত হয়, যা চিরকাল একরস থাকে। তর্ক শক্তি, ঊহা শক্তি এবং বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিমত্তার অভাবের কারণে ঋষি দয়ানন্দের এই ভাবার্থ এখনো পর্যন্ত সকল বিদ্বান মানুষ বুঝতে পারেনি। ঋষি অগ্নিব্রত নৈষ্টিক জি ব্যতীত, অন্য কোন মানব ঋষি দয়ানন্দ জির এই প্রতীকী বক্তব্য বুঝতে পারেনি।
বেদ থেকে সমগ্র মহাবিশ্ব এবং এই মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির প্রমাণ
শৈলীর দৃষ্টিতে বেদ ৩টি আর বিষয়ের দৃষ্টিতে বেদ ৪টি।
শৈলীর দৃষ্টিতে বেদ ৩টি যথা-
ঋক
যজু:
সাম
বিষয়ের দৃষ্টিতে বেদ ৪টি যথা-
ঋগ্বেদ
যজুর্বেদ
সামবেদ
অথর্ববেদ
অর্থাৎ ঋগ্বেদের সমস্ত মন্ত্রে ঋক রশ্মি থাকে, আর তাই ঋগ্বেদের দ্বিতীয় নাম ঋক। যজুর্বেদের সমস্ত মন্ত্রে যজু: রশ্মি আছে, তাই একে যজু:। সামবেদের সমস্ত মন্ত্রে সাম রশ্মি আছে, তাই একে সাম আর অথর্ববেদের সমস্ত মন্ত্রে এই তিন প্রকার রশ্মি (ঋক, যজু:, সাম) রয়েছে। এই কারণে ঋষিদের প্রায় সকল গ্রন্থে ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ লেখার স্থানে আমরা সর্বত্র ঋক, যজু:, সাম-কেই দেখতে পাই ।
(১) ऋग्भ्यो जाताँ सर्वशो मूर्तिमाहुः। (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১২/৯/১)
অর্থাৎ, এই সৃষ্টির সমস্ত মুর্তিমান পদার্থ এবং জড় পদার্থ সবই ঋক রশ্মি (ঋগ্বেদ মন্ত্র) থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
(২) ऋक् अर्चनी । (নিরুক্ত ১/৮)
ঋক রশ্মি সূক্ষ্ম দীপ্তি যুক্ত হয়ে থাকে।
(৩) জৈমিনী ব্রাহ্মণ (২/৩৮০) – ব্রহ্মাণ্ডে যতগুলো অপ্রকাশিতলোক আছে, সূক্ষ্ম কণা আছে, অসুর তত্ব (Dark Matter) আছে, এদের মধ্যে ঋক রশ্মির প্রাধান্য রয়েছে।
(৪) ज्योतिस् तद् यद् ऋक् (জৈমিনী ব্রাহ্মণ ১/৭৬)
ঋক রশ্মি জ্যোতি স্বরূপ হয়ে থাকে।
(৫) কাঠক সংহিতা (২৩/৩) - ঋক রশ্মি যখন অপ্রকাশিত আর সঘন রূপ ধারণ করে তখন তার মধ্যে আকর্ষণ বলের প্রধানতা হয়।
(৬) কাঠক সংহিতা (২৭/১) - যেকোনো পদার্থরকে সংমিশ্রণে যজু: রশ্মির (যজুর্বেদমন্ত্রের) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
(৭) নিরুক্ত (৭/১২) – পদার্থের সংযোজন-বিয়োজনে যজু: রশ্মির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
(৮) अन्तरिक्षं वै यजुषाम् आयतनम् (গোপথ ব্রাহ্মণ প্রথম ২/২৪)
মহাকাশ হচ্ছে যজুঃ রশ্মির আয়তন। অর্থাৎ, মহাকাশ হচ্ছে যজুঃ রশ্মি (যজুর্বেদ মন্ত্র) দ্বারা গঠিত। মহাকাশ হচ্ছে যজু: রশ্মির জাল । মহাকাশ হচ্ছে যজু: রশ্মির এক সম্প্রসারণ। মহাকাশ হচ্ছে যজুঃ রশ্মির বিস্তার।
(৯) अन्वाहार्य्यपचनोऽन्तरिक्षलोको यजुर्व्वेदः। (ষদ্বিংশ ব্রাহ্মণ ১/৫)
যজু: রশ্মি থেকে অর্থাৎ যজুর্বেদের মন্ত্র দ্বারা মহাকাশ সৃষ্টি হয়েছে।
(১০) सर्वा गतिर्याजुषी हैव शश्वत् । (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১২/৯/১)
অর্থাৎ এই সমগ্র সৃষ্টিতে যত প্রকার গতি আছে, তার গতির কারণই হচ্ছে যজুঃ রশ্মি।
(১১) শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৫/১/৫ - সূর্যের রশ্মিতে সাম রশ্মি (সামবেদ মন্ত্র) এর প্রাধান্য রয়েছে।
(১২) তৈত্তিরীয় সংহিতা ৭/৫/১/৬ - এই মহাবিশ্বে, সমস্ত ধরণের কণা, কোয়ান্টাস, ক্ষেত্র কণা (Field Particles) এবং মধ্যস্থ কণা (Mediator Particles) এ সাম রশ্মির প্রাধান্য রয়েছে। এই সমস্ত সাম রশ্মি (সামবেদ মন্ত্র) থেকে তৈরি।
(১৩) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/১২/৯/২ - এই মহাবিশ্বে যত প্রকাশ রয়েছে সেগুলোতে সাম রশ্মি বিদ্যমান রয়েছে, সাম রশ্মি দ্বারাই তারা প্রকাশিত। অর্থাৎ মহাবিশ্বের যত ধরনের তরঙ্গ যেমন বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ (Electromagnetic Waves) ইত্যাদি আছে, সেগুলোতে সাম রশ্মির প্রাধান্য রয়েছে।
(১৪) শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৮/৩/২৩ - সাম রশ্মির ভেদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
(১৫) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/১/৩/৫ - সাম রশ্মি ঋক রশ্মিদের রক্ষাকারী।
(১৬) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/১/৩/৩ - সাম রশ্মিরা ঋক রশ্মির ভিতর আলোকিত হয়। যেমন ফোটন নিজে আলোকিত হয় না কিন্তু কোনো কণার মধ্যে পড়লেই তা শোষিত হয়, সেই কণাগুলো (Particles) আলোকিত হতে শুরু করে। অর্থাৎ কণাগুলোতে ঋক রশ্মি আর ফোটনে সাম রশ্মি রয়েছে তো ঋক রশ্মির ভিতর সাম রশ্মিরা আলোকিত হয়।
(১৭) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৬/৪/১৩ - যখন বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গগুলো মহাকাশে গমন করে তো তাতে যে বিকিরণ আসে তা মহাকাশ থেকে সাম রশ্মি গ্রাস করে। অর্থাৎ যত প্রকাশিত কণা আর মূল কণা রয়েছে তারাও সাম রশ্মি গ্রাস করে।
(১৮) নিরুক্ত ৭/১২ - মনস্তত্বতে যখন সূক্ষ্ম প্রকাশ হবে এরূপ মুহূর্তে অর্থাৎ ওম রশ্মি যখন মনস্তত্বকে অনুপ্রাণিত করা শুরু করে তখন যে সর্বপ্রথম স্পন্দন মনস্তত্বতে হয় তাকে গায়েত্রী ছন্দ বলে। অর্থাৎ এই সৃষ্টিতে সর্বপ্রথম উৎপন্ন কম্পনই (স্পন্দন) হলো গায়েত্রী ছন্দ আর সর্বপ্রথম উৎপন্ন কম্পন যেটি হলো ওম সেটিই গায়েত্রী। গায়েত্রী ছন্দ দ্বারাই সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরা ওম রূপ গায়েত্রীই মনস্তত্বকে সামনের অন্য স্পন্দনগুলোকে উৎপন্ন করার জন্য প্রেরিত করতে থাকে আর মনস্তত্বতে যে পশ্যন্তী ওম রশ্মি স্পন্দন করে সেটিও সর্বপ্রথম গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিকেই উৎপন্ন করে।
(১৯) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/২/৩/৯ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি অন্য ছন্দ রশ্মিগুলোর তুলনায় সূক্ষ্মতম কিন্তু সর্বাধিক তেজস্বিনী হয়ে থাকে আর এই সাতটি ছন্দতে এর গতিই সবচেয়ে বেশি।
(২০) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ২/১০১ – সৃষ্টি প্রক্রিয়াতে সর্বপ্রথম যে রশ্মিগুলো উৎপন্ন হয় ওসবগুলোই গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি এবং সংযোগ বিয়োগের যে ক্রিয়া হয় তা অকস্মাৎ দ্রুত এর মধ্যেই ঘটে থাকে। সৃষ্টি প্রক্রিয়ার প্রথম চরণে গায়েত্রী ছন্দ রশ্মির সংখ্যা অন্যান্য রশ্মির চেয়ে সর্বাধিক থাকে।
(২১) তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ১৩/৭/২ – সৃষ্টিতে প্রকাশ, বিদ্যুৎ, অগ্নি, উষ্মা, আবেশ ইত্যাদির উৎপত্তি যেখানেই হয় সেখানে অন্য রশ্মির তুলনায় গায়েত্রী ছন্দ রশ্মির প্রধানতা সর্বাধিক থাকে। অর্থাৎ প্রকাশ, বিদ্যুৎ, অগ্নি, উষ্মা, ফোটনে সর্বাধিক মাত্রা গায়েত্রী ছন্দ রশ্মির থাকে। এই সব উৎপন্ন করতে প্রথম ভূমিকা হলো গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি। সৃষ্টিতে যেখানেই কোনো কণার মাঝে সংযোগ বিয়োগ ক্রিয়া হয় আর তাতে যে সৃষ্টিতে প্রকাশ, বিদ্যুৎ, অগ্নি, উষ্মা, আবেশ হয় সেখানে গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি হয়। সৃষ্টিতে যত প্রকাশিত অপ্রকাশিত লোক, পৃথ্বিয়াদি, গ্রহ, উপগ্রহ, তারা, উল্কা-পিন্ড, ধূমকেতু, মহাকাশ আদিতে গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি সর্বত্র সর্বদা এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডে বিদ্যমান থাকে।
(২২) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মিকে ত্বকের নেয় আবৃত করে। অর্থাৎ গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মিকে সর্বদা ঢেকে (আচ্ছাদিত) করে রাখে।
(২৩) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৪/১/২ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মিকে চারিদিকে আচ্ছাদিত করে ঢেকে রাখে অর্থাৎ প্রাণ রশ্মি আর ছন্দ রশ্মির (গায়েত্রী আদি) মিথুন (যুক্ত) না হলে সৃষ্টিও হবে না।
(২৪) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৩/৭ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি হলো অন্য ছন্দ রশ্মি মুখ। অর্থাৎ এটি ছন্দ রশ্মিকে বিভিন্ন ক্রিয়ার জন্য প্রেরিত করে।
(২৫) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৩/৫/৪ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিগুলো এই সৃষ্টির বীর্য রূপ কারণ সৃষ্টি তৈরী হতে মনস্তত্বতে এই ছন্দ রশ্মিগুলো অন্য ছন্দ রশ্মিগুলোকে বীজ বোনার ক্রিয়া করে থাকে।
(২৬) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৩/৪/৬ - গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিতে প্রকাশ থাকে আর অন্য ছন্দ রশ্মিকেও প্রকাশিত করে।
(২৭) নিরুক্ত ৭/১২, দৈবৎ ব্রাহ্মণ ৩/৪ – উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি গায়েত্রী ছন্দ রশ্মিকে আবৃত করে আর অন্য ছন্দ রশ্মিতে পারস্পরিক আকর্ষণীয় ভাব সমৃদ্ধ করে এবং অধিক কান্তিযুক্ত (প্রকাশময়) বানায়।
(২৮) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১/৫, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৭/২ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিতে সংযোজকতার গুণ বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ যৌগিক কণা যাই হোক না কেন তাদের ক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে।
(২৯) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৬/২/১১ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মিগুলো অন্য ছন্দ রশ্মি থেকে নির্গত যে সকল সূক্ষ্ম ছন্দ রশ্মিগুলো আছে তাদের শোষণ করতে সাহায্য করে।
(৩০) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬ - বিভিন্ন ছন্দ রশ্মি যেমন গায়েত্রী ছন্দ রশ্মি রয়েছে যে সকল ছন্দরশ্মিকে ঢেকে রাখার কাজ করে তো এই উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি সেই ঢেকে থাকা রশ্মির ওপর লোমের মতো সেই সকল ছন্দ রশ্মিকে নিরাপত্তা প্রদান করতে তাদের আবরণের কাজ করে।
(৩১) শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৩/১/১ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিকে প্রকাশশীল বানায়।
(৩২) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২০৯ - উষ্ণিক ছন্দ রশ্মি বজ্র স্বরূপ হয় এটি অন্য ছন্দ রশ্মিকে তীক্ষ্ণ বানাতে সাহায্য করে।
(৩৩) নিরুক্ত ৭/১২, দৈবৎ ব্রাহ্মণ ৩/৭ – অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মি অন্য ছন্দ রশ্মিকে অনুকূলতা পূর্বক থামায় অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে বিভিন্ন ছন্দ রশ্মিগুলো নিজের কাজ করে আর যদি এমন সময় আসে যেখানে সেই রশ্মিগুলোতে শীতলতা আসে বা তাদের বল ক্ষীণ হতে থাকে এরূপ সময়ে অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলো তাদের সমর্থন করে, তারা তাদের কাজ করতে সাফল্য প্রদান করে।
(৩৪) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ১১/৫/১৭ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলো সকল ছন্দ রশ্মিগুলোর যোনি অর্থাৎ সকল ছন্দ রশ্মিগুলোর এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সকল ছন্দ রশ্মি উৎপত্তি হওয়ার মার্গ।
(৩৫) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬, ১/১/৩ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মির কোনো পদার্থকে ছেদন করার ক্ষমতা অন্য ছন্দ রশ্মির থেকে অনেক বেশি।
(৩৬) কাঠক সংহিতা ১৯/৩ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মি যজ্ঞ রূপ হয়। অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির সংগতিকরণ, সংযোগীকরণ ও সংঘনাতে এর মূখ্য ভূমিকা থাকে।
(৩৭) কাঠক সংহিতা ১৯/৫ - অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলোর দ্বারা অগ্নি তত্বকে ধারণ করা হয় ও অগ্নি তত্ব এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে। সৃষ্টিতে যেখানেই উষ্ণতা তাপমান আছে সেখানে অনুষ্টুপ ছন্দ রশ্মিগুলোর প্রমুখ ভূমিকা থাকে।
(৩৮) নিরুক্ত ৭/১২ - বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলো অন্য সকল রশ্মিকে, বিভিন্ন জগৎকে, সূক্ষ্ম কণাকে, ফোটনসকে ঘিরে ধরে নিজের বৃদ্ধি করতে থাকে; অর্থাৎ ব্রহ্মাণ্ডে যখন এই পদার্থগুলোর নির্মাণ হতে শুরু করে তো প্রাণ আর ছন্দ রশ্মিগুলো ঘনীভূত হতে থাকে তো তাকে সংযোজিত করতে সূত্রাত্মা বায়ুর মুখ্য ভূমিকা থাকে তখন বৃহতী ছন্দ রশ্মি তার মধ্যে সংযোজিত আর ঘনীভূত হয়ে পিন্ডের আকার নির্মাণ করে।
(৩৯) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৪/৩ - বিভিন্ন রশ্মির যখন সঙ্কোচন ও সংঘাত হয় তো সেই সঙ্কোচনে বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর প্রমুখ ভূমিকা থাকে।
(৪০) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৩/৯ - মহাকাশে (আকাশ মহাভূত) বৃহতী ছন্দ রশ্মির প্রমুখ ভূমিকা থাকে। বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর কারণেই মহাকাশ যেকোনো পদার্থকে সংকুচিত করে।
(৪১) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৯০, ২/৭ শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৫/৪/৬ - ব্রহ্মান্ডে সকল নক্ষত্রের (সূর্যের) ঘনত্বের নির্মাণে বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর মুখ্য ভূমিকা থাকে।
(৪২) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/৩১৬, ১/২৫৪ - সকল ছন্দ রশ্মির বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলোর কারণেই একত্রিত হয়ে থাকে, ওই সকল ছন্দ রশ্মিকে বেঁধে রাখার কাজ বৃহতী ছন্দ রশ্মিগুলো করে।
(৪৩) মহর্ষি দয়ানন্দ যজুর্বেদ ভাষ্য ২৩/৩৩, গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বার্দ্ধ ৫/৪, শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/২/৪/৬ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মিগুলো ছড়িয়ে উৎপন্ন হয়। এটি নানান প্রকারের ক্রিয়াগুলোকে বিস্তৃত করে। বিভিন্ন রশ্মির ক্রিয়াগুলোকে এটি বিস্তার প্রদান করে তাকে ছড়িয়ে দেয়।
(৪৪) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৫/১৮, ৬/২০ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি পাঁচ প্রকারের গতিতে যুক্ত থাকে।
(৪৫) মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/৩/৯ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি যজ্ঞমান স্বরূপ হয়। অর্থাৎ এই রশ্মি পদার্থের মধ্যে সংযোগ বিয়োগ ক্রিয়াকে সম্পন্ন করে।
(৪৬) ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি মজ্জার মতো ব্রহ্মান্ডে কার্য করে।
(৪৭) শতপথ ব্রাহ্মণ ১০/৩/১/১, কাঠক সংহিতা ৩৯/৮ - পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি অন্য ছন্দ রশ্মিগুলোকে বিস্তার প্রদান করে সংযোগ বিয়োগ আদির ক্রিয়াকে বিস্তৃত করে।
(৪৮) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৫৪ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি অন্য সকল রশ্মির নাভি তুল্য। ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি বৃহতী ছন্দ রশ্মির সাথে মিলে সম্পূর্ণ পদার্থ, ব্রহ্মান্ডকে বেঁধে রাখে।
(৪৯) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৬/১২ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি উৎপাদক ক্ষমতায় বিশেষ যুক্ত হয়ে থাকে। ব্রহ্মান্ডে সকল কণা, পদার্থ, লোক লোকান্ত্রের নির্মাণে অন্য রশ্মির যে নিজ নিজ ভূমিকা থাকে সেসব রশ্মিকে ত্রিষ্টুপ রশ্মি বল শক্তি প্রদান করে আর তাদের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
(৫০) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ৭/৩/৯ - তারার কেন্দ্র ভাগে যে একীকরণ ক্রিয়া হয় ওখানে ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মির ভূমিকা মুখ্য থাকে।
(৫১) শতপথ ব্রাহ্মণ ৬/৬/২/৭, জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/১৩২, ৩/২০৬ - ব্রহ্মান্ডে যে তীক্ষ্ণ বিদ্যুৎ তরঙ্গ (তড়িৎ) হয় ওই বিদ্যুতের বজ্র ও দীপ্তিতে ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মির ভূমিকা থাকে।
(৫২) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ২০/১৬/৮ - যতগুলো ছন্দ রশ্মি আছে তাদের মধ্যে দুটি ছন্দ রশ্মি (ত্রিষ্টুপ ও গায়েত্রী) সব থেকে অধিক বীর্যবান, তেজস্বিনী, ভেদক ক্ষমতা অত্যাধিক আর প্রেরক ক্ষমতা সর্বাধিক আছে।
(৫৩) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ১/১/৯/৬ - ব্রহ্মান্ডে যেখানেই যত ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি হবে সেখানে ততই প্রকাশ, তেজ, বল, ভেদন শক্তি হবে।
(৫৪) দৈবৎ ব্রাহ্মণ ৩/১৪, ৩/১৫ - ব্রহ্মান্ডে সকল ছন্দ রশ্মি যারা নিজের নিজের কার্য করে তাদের মধ্যে কিছু ছন্দ রশ্মি দুর্বল হতে থাকে তো তাদের ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি সাহায্য করে বল এবং শক্তি প্রদান করে।
(৫৫) নিরুক্ত ৭/১২ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণা, রশ্মি আর তরঙ্গকে তিন প্রকারে থামিয়ে রাখে।
(৫৬) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/১৬ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি বজ্র রূপ হয়।
(৫৭) জৈমিনীওপনিষদ ব্রাহ্মণ ১/১৭/৩/৩ - ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মি মহাকাশে প্রচুর মাত্রায় থাকে। এই রশ্মিগুলো মহাকাশকে আবদ্ধ করে রাখে।
(৫৮) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৩/৪/১১ – মহাকাশে ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মির প্রধানতা থাকে।
(৫৯) নিরুক্ত ৭/১৩ - জগতী ছন্দ রশ্মি সর্বাধিক দূর গতি কারক হয়ে থাকে আর এর গতি জলের ঢেউ এর মতো হয়। এই রশ্মিগুলি সবার শেষে উৎপন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ জগতী ছন্দ রশ্মিগুলির কম্পন দূরগামী হয় কিন্তু এর কম্পন করার গতি অন্য ছন্দ রশ্মির তুলনায় ধীরগতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যাপক কিন্তু ধীর।
(৬০) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৮/২/১১ - সম্পূর্ণ জগৎ এই জগতী ছন্দ রশ্মিগুলিতে প্রতিষ্ঠিত।
(৬১) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩/৪৭ - জগতী ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণা ও কোয়ান্টজকে আবদ্ধ করে আর সংযোগ ক্রিয়া হেতু তাকে প্রেরিত করে।
(৬২) তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণ ২১/১০/৯ - জগতী ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থকে শক্তিশালী করে তোলে। এই রশ্মিগুলি পদার্থের যে সংযোগ ও বিয়োগ করে এটা তাকে অবশোষিত করে তাকে শক্তিশালী করে।
(৬৩) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/৯৩, ষদ্বিংশ ব্রাহ্মণ ২/৩ - জগতী ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন প্রকারের পদার্থের উৎপত্তিতে সহায়ক হয়।
(৬৪) গোপথ ব্রাহ্মণ উত্তরার্দ্ধ ২/৯ - নক্ষত্র আদি (সূর্য) লোকে যে শোষণ-নির্গমনের ক্রিয়া হয় তাতে জগতী ছন্দ রশ্মিগুলির প্রমুখ ভূমিকা থাকে।
(৬৫) শতপথ ব্রাহ্মণ ৮/৬/২/৩, ঐতরেয় আরণ্যক ২/১/৬, মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/১৩/১৭ - সকল প্রকারের কণা ও কোয়ান্টজকে নিয়ে যেতে, তাদের গতি প্রদান করতে জগতী ছন্দ রশ্মির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
(৬৬) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১৯/৪/২৩ - ঈশ্বর সৃষ্টি নির্মাণের জন্য মনস্তত্ব স্পন্দন উৎপন্ন করেন। সর্বপ্রথম পশ্যন্তী ওম রশ্মির স্পন্দন হয় আর তার তীব্রতা (intensity) বাড়তে থাকে আর তাতে ১২টি পদার্থ উৎপন্ন হয়।
(৬৭) নিরুক্ত ১৩/১২ - বৈদিক শব্দ কখনো ছিন্ন (নষ্ট) হয় না। বৈদিক শব্দ (মন্ত্র/ঋচা/ছন্দ) দ্বারা সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ড তৈরি হয়। আর সেই অক্ষরগুলো দিয়ে উৎপন্ন বিভিন্ন রশ্মির দ্বারা এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ড তৈরী হয়েছে।
সৃষ্টির প্রলয়ের পশ্চাতেও যখন কোনো কিছু থাকে না তখনও এই অক্ষর অব্যাক্ত রূপে মূল পদার্থ (প্রকৃতি) তে বিদ্যমান থাকে। অক্ষররের নিবাস বাণীতে হয়। অক্ষর রূপ রশ্মিগুলি সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডের (অক্ষ)আধার হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডে উপস্থিত পদার্থ (সূর্য, চাঁদ, আকাশ, মহাকাশ, উল্কা, ধূমকেতু, গ্রহ, উপগ্রহ, তারা, সৌরজগত) এই বৈদিক অক্ষর (বেদ মন্ত্র)গুলো দ্বারা নির্মিত। তথা এই সমস্ত পদার্থগুলোতে এই বৈদিক অক্ষর সর্বত্র বিদ্যমান রয়েছে।
(৬৮) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ৩/৫৫/১ - যেটি মহৎ তত্বের অবস্থা ওখানেই অক্ষর হয় অর্থাৎ মহৎ তত্বই অক্ষর রূপ। অক্ষর রূপ পদার্থ হল মহৎ তত্বের এক সূক্ষ্ম অংশ (পরমাণু)।
(৬৯) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩/৬, গোপথ ব্রাহ্মণ ৩/২, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/৩/৬/১১, মৈত্রায়ণী সংহিতা ৪/৩/৮ – ব্যাহৃতি রশ্মিগুলি অন্য রশ্মিগুলিকে সুগমতা আর ভালো প্রকারে ধারণ আর নিয়ন্ত্রিত করতে সহায়ক হয়। বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিগুলি এই রশ্মিতে প্রতিষ্ঠিত হয় আর প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই রশ্মি নিজের নিজের কর্ম ভালো প্রকারে করতে সক্ষম হয়। এই রশ্মি অন্য রশ্মি থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে আর তাতে পূর্ণ ব্যাপ্ত হয়ে তাকে আধার প্রদান করিয়ে তার বাইরের ভাগে স্থিত হয়ে যায় আর যেসকল ক্রিয়াগুলি হচ্ছে, তাতে পুর্ন গতি ও বল প্রদান করে।
(৭০) গোপথ ব্রাহ্মণ ৩/২৩, তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ৬/৮/৬, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ৩/২, জৈমিনীওপনিষদ ব্রাহ্মণ ১/৩/৩/৫, ১/১১/১/৯ -
হিম্ তথা ঘৃম্ রশ্মি বিভিন্ন রশ্মির জন্য পুরুষ রূপ ব্যবহার করে। এটা তাদের অনুপ্রাণিত করে আর নিরন্তর তাদের বল প্রদান করতে থাকে তথা দুই ছন্দ রশ্মিকে বাঁধতে (জুড়তে)সহায়ক হয় আর না কেবল সন্ধির কাজ করে অপিতু ওই দুই রশ্মিতে প্রতিষ্ঠান করে তাকে নিরন্তর বল প্রদান করতে থাকে আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই রশ্মিগুলি অন্য রশ্মিগুলিকে সংকুচিত করে ও তাকে বেঁধে কম্পন করতে থাকে যাতে সেটি পৃথক না হতে পারে।
(৭১) তৈত্তিরীয় সংহিতা ২/২/৯/৪, ২/৩/১০/১ মৈত্রায়ণী সংহিতা ১/৬/৮, ২/৩/৪ –
হিম্ তথা ঘৃম্ রশ্মিগুলি পদার্থ থেকে ঝরতে থাকে। এই রশ্মিগুলি তেজ স্বরূপ হয়, এর থেকে তেজ উৎপন্ন হয়।
(৭২) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৩ - হিম্ তথা ঘৃম্ রশ্মি হলো মহাকাশের রূপ। মহাকাশে যে সূক্ষ্ম দিপ্তি (প্রকাশ) আছে তাতে এই রশ্মি বিদ্যমান।
(৭৩) কাঠক সংহিতা ২৭/১, কপিষ্ঠ সংহিতা ৪২/১ - মনস্তত্বের দ্বারাই প্রাণ তত্বকে ধারণ করে আছে। অর্থাৎ মন রূপী মহাসাগরে এই রশ্মি তরঙ্গের রূপে উৎপন্ন হতে থাকে, এর থেকেই সম্পূর্ণ সৃষ্টি হয়েছে।
(৭৪) কাষকৃষ্ণ শতপথ ৩/১/৪/২ - প্রাণই দড়ির সমান। প্রাণই সকলকে বেঁধে রেখেছে, সকলকে নিয়ন্ত্রণ করছে আর তাই প্রাণকেই রশ্মি বলা হয়।
(৭৫) তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩/২/৫/২ - প্রাণ রশ্মির হলো রূপ। প্রাণ তরঙ্গ রূপে হয়।
(৭৬) ঐতরেয় আরণ্যক ৩/১/৬ - বাক আর প্রাণ তত্ব সাথে -সাথে থাকে।
(৭৭) শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৪/১/২ - বাক আর প্রাণ তত্ব এক জোড়ায় থাকে। এই দুইয়ের মিথুনেই সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ কেবল ধনাত্মক চার্জ অথবা কেবল ঋণাত্মক চার্জ দ্বারা সৃষ্টি হয় না। এই দুইয়ের মিথুনেই সৃষ্টি হয়।
(৭৮) ব্রহ্মসূত্র ২/৪/৫, ২/৪/১৪ - সাত প্রকারের ভিন্ন ভিন্ন গতির কারণে প্রাণ প্রধানত সাত প্রকারের হয় ও তার গুণ ব্যাবহারও ভিন্ন ভিন্ন রকম হয় আর এই সকল প্রাণ রশ্মি হলো জ্যোতি, বিদ্যুৎ ও প্রকাশের মূল কারণ । এই সৃষ্টিতে যেখানেই প্রাণ রশ্মি আছে ওখানে বিদ্যুৎ আছে আর এই প্রাণ তত্বের কারণেই বিদ্যুৎ চার্জ আটকে আছে আর এই প্রাণ তত্বের কারণেই বিদ্যুৎ চার্জ উৎপন্ন হয় ।
(৭৯) মহর্ষি দয়ানন্দ যজুর্বেদ ভাষ্য ১৭/৩২ - গন্ধর্ব শব্দের অর্থ সূত্রাত্মা বায়ু করেছেন আর তার উৎপত্তি ১০ প্রাণের পূর্বে হয় এমনটা লেখা আছে।
(৮০) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ৬/২১/৯ আর যজুর্বেদ ২৭/২৫ - এ ভাবার্থে সূত্রাত্মা বায়ুর জন্য এক বিশেষণের প্রয়োগ করেছেন সর্বধর্ম । অর্থাৎ এই সূত্রাত্মা বায়ু অন্য ১০ প্রাণ রশ্মিকে ধারণকারী তাদের বেস
আর তাদের পালনকারী, তাদের নিরন্তন বল প্রদানকারীও ।
(৮১) মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/৮/৪, কপিষ্ঠ সংহিতা ৩৮/৬, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৭/৭, তৈত্তিরীয় আরণ্যক ১০/৬৪/১ - বিভিন্ন প্রাণ রশ্মি রূপী দেবতাদের যজ্ঞান করাতে সর্বোপরি ভূমিকা নেয় আর ওম রশ্মির পশ্চাৎ সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে বিভিন্ন রশ্মি এবং কণাকে যুক্ত করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা এরই হয়ে থাকে।
(৮২) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/৪০ - সূত্রাত্মা বায়ু বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিতে মিশ্রিত। এটি মিশ্রিত হয়েই প্রকট হয়। এবং পদার্থতে মিশ্রিত হয়ে তাকে সংযুক্ত করে।
(৮৩) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ২/৪১ - প্রাণ রশ্মি মহাকাশকে সামর্থবান বানায়।
(৮৪) মহর্ষি দয়ানন্দ প্রাণ শব্দের জন্য অনেক বিশেষণ প্রয়োগ করেছেন। ঋগ্বেদ ভাষ্য ৬/১/৫০ তে শব্দের জন্য প্রিয়ম এর প্রয়োগ করেছেন।
অর্থাৎ প্রাণ নামক প্রাণ রশ্মিতে আকর্ষণ বল হলো প্রধান। সৃষ্টিতে যেখানেই আকর্ষণ বল আছে সেই প্রাণ রশ্মিতে আকর্ষণ বলের প্রধানতা সব থেকে অধিক হয়।
(৮৫) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ১/১৫/৬ এর ভাষ্যে প্রাণের জন্য লিখেছেন সর্বমিত্র বাহ্যগতি। অর্থাৎ এই প্রাণ রশ্মি সকলের মিত্র হয়ে সকলকে আকর্ষিত করে ভেতর থেকে বাহিরে গতি করে।
(৮৬) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৭২ - প্রাণ রশ্মি থেকে প্রিয় অর্থাৎ আকর্ষণ বল যুক্ত এই স্তরের অন্য কোনো রশ্মি নেই।
(৮৭) গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বার্দ্ধ ১/৩৩, শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৯/১/১৬ - প্রাণই প্রত্যেক পদার্থের প্রেরক আর উত্পাদক।
(৮৮) তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৭/৫/৩, তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৫/৩ - ভূ: রশ্মি প্রচুর মাত্রায় উত্পন্ন হলে তখন প্রাণ রশ্মি উৎপন্ন হয়।
(৮৯) তৈত্তিরীয় সংহিতা ২/৫/২/৪ - প্রাণ রশ্মি বল প্রধান হয় আর অপান রশ্মি হলো ক্রিয়া প্রধান। অর্থাৎ পদার্থে যেখানেই বল অধিক হয় ওখানে প্রাণ রশ্মি হলো প্রধান এবং যেখানে ক্রিয়া অধিক হয় ওখানে অপান রশ্মি হলো প্রধান।
(৯০) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/৩৭ - প্রাণ রশ্মি কোনো রশ্মির বাহিরে এবং অপান রশ্মি কোনো রশ্মির ভেতরে থেকে তাদের বল প্রদান করে। অর্থাৎ প্রাণ রশ্মি প্রত্যেক কণা ও তরঙ্গের ভেতর বাহিরের দিকে স্পন্দিত হয় আর অপান রশ্মি প্রত্যেক কণা ও তরঙ্গের ফোটনের ভেতর স্পন্দিত হয়।
(৯১) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৫৪, কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ১৩/২, তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৭/৫/৩, তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৫/৩ - ব্যাহৃতি আর পঙ্কতি ছন্দ রশ্মি প্রাণ রশ্মির সমান ব্যবহার করে। অর্থাৎ গুরুত্ব বলের প্রধানতা প্রাণ রশ্মি হয়।
(৯২) ছান্দোগ্যপনিসাদ ১/৩/৩ - ব্যান রশ্মি ছাড়া প্রাণ ও অপান রশ্মি পরস্পর জুড়ে থাকতে পারে না।
(৯৩) শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৯/১/১৬ - ব্যান রশ্মি বরুণের সমান হয়। এই ব্যান রশ্মি প্রাণ ও অপান রশ্মিগুলিকে বেঁধে রাখে অর্থাৎ ব্যান রশ্মিগুলি সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডকে ধরে রাখতে সূত্রাত্মা বায়ুকেও সাহায্য করে।
(৯৪) মৈত্রায়ণী সংহিতা ৩/৪/৪, কাঠক সংহিতা ২১/১২ - ব্যান রশ্মি প্রাণ ও অপান রশ্মিগুলিকে তিন প্রকার থামিয়ে ও বেঁধে রাখে আর তাদের তেজ ও বলে সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।
(৯৫) তৈত্তিরীয় আরণ্যক ৭/৫/৩, তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৫/৩ - যখন ব্রহ্মান্ডে স্ব: রশ্মি প্রধান হয় তখন এর উৎপত্তি হয় আর ব্যান প্রাণের অনেক গুণও স্ব: ব্যাহৃতি রশ্মিগুলির গুণের অনুরূপ।
(৯৬) কাঠক সংহিতা ৩৯/৮ - ব্যান রশ্মি অপান রশ্মিগুলিকে ছড়িয়ে দিয়ে কোয়ান্টজ-এর কণের তুলনায় অতি ন্যূন ঘনীভবন প্রদানে সাহায্য করে।
(৯৭) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ১/১৩১/২- তে বলা হয়েছে - सर्वत्रैव स्वव्याप्तयैकरसम
অর্থাৎ সমান রশ্মি বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিতে সর্বত্র একরস হয়ে ব্যাপ্ত থাকে।
(৯৮) মহর্ষি দয়ানন্দ যজুর্বেদ ভাষ্য ২২/৩২ -তে সমান রশ্মি সম্বন্ধে বলা হয়েছে- समानयति रसं येन सः
অর্থাৎ সমান রশ্মি না কেবল স্বয়ং ছন্দময় হয়ে স্পন্দিত (কম্পিত) করে বরং প্রাণ অপান আদি অন্য রশ্মিকেও ছন্দময় বানিয়ে রাখে।
(৯৯) মহর্ষি য়াস্ক নিরুক্ত ৪/২৫ - সমান রশ্মি বিভিন্ন রশ্মির পরিসীমাতেই সঞ্চিত হয়ে তাকে বানিয়ে রাখতে সহায়ক হয় অর্থাৎ এই রশ্মি বিভিন্ন প্রাণ রশ্মির সীমাতেই থেকে স্পন্দিত হতে থাকে।
(১০০) শতপথ ব্রাহ্মণ ৬/২/২/৬ - উদান রশ্মি অন্যান্য রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে, নিয়মিত করে আর একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে অর্থাৎ এই রশ্মি ব্যানকে প্রাণের সাথে তথা ব্যানকে অপানের সাথে সংযোগ স্থাপনে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।
(১০১) জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২২৯ - উদান রশ্মি বিভিন্ন প্রকারের পদার্থের গুণে বৃদ্ধি করে অর্থাৎ এই রশ্মি বিভিন্ন পদার্থ যেমন কণা, অণু, পরমাণু, ফোটন, সৌরজগৎ আদি সব পদার্থের গুণে বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়।
(১০২) ষদ্বিংশ ব্রাহ্মণ ২/৭ - উদান রশ্মি বিভিন্ন রশ্মিকে পরস্পর সংযুক্ত হতে সহায়ক হয়।
(১০৩) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ৬/৫০/১ - তে উদানকে নিয়ে লেখা আছে-
উদান রশ্মিগুলি হলো উৎকৃষ্ট। এই রশ্মি অন্য রশ্মিকে উৎকৃষ্ট বল প্রদানকারী আর অন্য রশ্মির ক্রিয়াগুলিকে উৎকৃষ্ট রূপ প্রদানকারী আর এটি প্রাণ রশ্মি, বিভিন্ন রশ্মি, কণা, অণু, পরমাণুর গতি ও বলকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হয়।
(১০৪) মহর্ষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ভাষ্য ১/২৩/৪ – তে লিখেছেন ऊर्ध्वगमनबलहेतुमुदानं
অর্থাৎ কোনো বলের বিরুদ্ধে কার্য করতে উদান রশ্মির প্রাথমিক ভূমিকা হয়ে থাকে।
(১০৫) মহর্ষি দয়ানন্দ উণাদিকোষ ৫/১ - তে লিখেছেন –
যে জ্বালায় অথবা যে জ্বালান ক্রিয়া করা হয় তা নাগ রশ্মি বলে অর্থাৎ ব্রহ্মান্ডে যেখানেই উষ্মা আছে সেখানে নাগ রশ্মিগুলির প্রধানতা আছে। নাগ রশ্মির স্পন্দন অতি সুক্ষ্ম হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রাণ রশ্মিতে নাগ রশ্মির গতি সব থেকে ধীর হয়ে থাকে। নাগ রশ্মির গতি সব থেকে ধীর হলেও এটি প্রাণ রশ্মিকে বাধাহীন গতি বল প্রদানের ক্ষমতা রাখে এটি তার বিশেষত্ব।
(১০৬) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/১ - ব্রহ্মান্ডে কুর্ম প্রাণ রশ্মি রসরূপ হয়ে অপান রশ্মিগুলিকে প্রেরণ ও বল প্রদান করে।
(১০৭) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৫ - ব্রহ্মান্ড নির্মাণে যখন প্রাণ অপান রশ্মি কার্য করতে থাকে তো মনস্তত্ব অন্য সুক্ষ্ম রশ্মিকেও উৎপন্ন করে। ব্যানকে অপানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কুর্ম প্রাণ রশ্মির ভূমিকা আছে।
(১০৮) শতপথ ব্রাহ্মণ ৭/৫/১/৩৫ - কুর্ম প্রাণ অপান রশ্মিকে নিয়ন্ত্রণ করে, অপান রশ্মিকে ব্যানের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যানের দ্বারা প্রাণ রশ্মিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(১০৯) তৈত্তিরীয় সংহিতা ৫/২/৮/৫ - কুর্ম প্রাণ মরুদ ও ছন্দ রশ্মিকে তথা সুক্ষ্ম কণাকে পরস্পর সংযুক্ত করতে সহায়ক হয়।

বঙ্গানুবাদ- আশীষ আর্য


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ