ভীষ্ম পর্বের প্রক্ষিপ্ত অংশ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 February, 2022

ভীষ্ম পর্বের প্রক্ষিপ্ত অংশ

ভীষ্ম পর্বের প্রক্ষিপ্ত অংশ

ভীষ্মপর্বের সংশোধিত সংস্করণ সংকলন করেছেন ডঃ শ্রীপদ কৃষ্ণ বলভেলকর। ইনি ড: সুকথংকরের মৃত্যুর পরে সংশোধক সমিতির অধ্যক্ষ পদে বৃত্ত হন। অনেকগুলি পর্ব তিনি সংশোধন করেছেন। মহাভারতের প্রমাণ সংস্করণে ভীষ্মপর্বে ১২২ অধ্যায়, ৫৮৬৯ শ্লোক আছে। সংশোধিত সংস্করণে ১১৭ অধ্যায় ও ৫৪০৯ শ্লোক আছে, অর্থাৎ মোট ৪৬৩ শ্লোক বাদ দেওয়া হয়েছে; উল্লেখ যোগ্য বাদ হল প্রমাণ সংস্করণের ২৩ অধ্যায়ের দূর্গাস্তোত্র, তা শুধু পূর্ব ভারতের পুঁখিতে এবং পশ্চিম ভারতের কোন কোন পুঁথিতে আছে, কাশ্মীরের বা দক্ষিণ ভারতের পুথিতে নাই।

তাই অধ্যায়টি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনের যুদ্ধ বিবরণের মধ্যে শ্বেতের ভীষ্মসহ যুদ্ধ ও মৃত্যু বিবরণ – ৪৭/৪৩-৬৭ শ্লোক ও ৪৮ অধ্যায সম্পূর্ণ— মোট ১২৯ শ্লোক পরে যোজিত বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। সে শ্লোকগুলি সম্বন্ধে প্রমাণ সংস্করণের সম্পাদক ডঃ কিঞ্জবডেকরও মন্তব্য করেছিলেন যে তা স্পষ্টতঃই প্ৰক্ষিপ্ত। অবশিষ্ট অধ্যায়গুলির হতে মধ্যে মধ্যে দুটি তিনটি করে শ্লোক বাদ, মধ্যে মধ্যে অধ্যায় ও শ্লোকের পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, তবে উল্লেখযোগ্য আর কোন বাদ নাই। ভূমিকায় ডঃ বলভেলকর মন্তব্য করেছেন যে প্রমাণ সংস্করণের ১৪ অধ্যায়ে দীর্ঘ ধৃতরাষ্ট্রবিলাপ, ৬৫।২৭ হতে ৬৮।২০ শ্লোকে বিবৃত বিশ্বোপাখ্যান ও বাসুদেবের মহিমাকীর্তন, এবং যুদ্ধের তৃতীয় দিবসে কৃষ্ণের ক্রদ্ধ হয়ে ভীষ্মের অভিমূখে আক্রমণার্থ গমন ও নবম দিবসে কৃষ্ণের ক্রদ্ধ হয়ে ভীষ্মের অভিমুখে ধাবন, এর মধ্যে একটি বিবৃতি; তিন প্রক্ষিপ্ত মনে করেন, কিন্তু বহু প্রামাণ্য পুথিতে সেগুলি সব থাকায় তিনি তা বাদ দিতে পারেন নাই।

তিনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন কর্তৃক সঞ্জয়কে দিব্যদৃষ্টি স্থানের কথা সত্য বলে গ্রহণ করছেন, এবং ভূমিকায় বলেছেন যে পঞ্চম যুদ্ধে ও কৌরব শিৰিবে পরামর্শ সভায় থাক্‌তেন, আৰায় দিনশেষে হস্তিনাপুরে গিয়ে ধৃতরাষ্ট্রের নিকট সব বর্ণনা করতেন, দ্বিব্যদৃষ্টি প্রভাৰে যা দেখতেন তার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝে নিতেন। 

মহাভারত সংশোধন মন্ডলীর বিচারে মূল মহাভারতে কৃষ্ণ মানবরূপে চিত্রিত, গীতায় তাঁকে ভগবান [ঈশ্বর] রূপে কথা বলান হয়েছে। কৃষ্ণের উপর বিষ্ণুর অবতারত্ব আৰোপ কুক্ষেত্র যুদ্ধের বহু শতাব্দী পরে হয়েছিল, সম্ভবতঃ তা হয় খৃঃপূঃ দ্বিতীয় বা তৃতীর শতাব্দীতে। উভয় পক্ষের সৈন্য যখন মুখোমুখী হয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছে, তখন একপক্ষের শ্রেষ্ঠ বীর কয়েক দণ্ড ধরে ধর্মতত্ত্ব গুনবেন এবঃ দুই পক্ষের সেনাই চিত্রাপিতবৎ দাড়িয়ে থাকবে তা সম্ভৰ নয়। গীভায় যেন ভারতযুদ্ধের বর্ণনা নূতন করে আরম্ভ করা হল, ভীষ্মপর্বে ১৬-১৯ অধ্যাশে যে যুদ্ধোদ্যমের বর্ণনা আছে, সেটাকে যেন অস্বীকার করা হয়েছে। 

ভীষ্ম পর্বের প্রক্ষিপ্ত অংশ

গীতার প্রথম অধ্যায়ে কয়েকটি কথা আছে, যা মহাভারত কাহিনীর সঙ্গে মেল না ; মহাভারত আখ্যানে অর্জুন সেদিন পান্ডবব্যৃহ রচনা করেছিলেন বলা হয়েছে ( ১৯ অঃ), কিন্তু গীতায় প্রথম অধ্যাযে বলা হয়েছে যে ধৃষ্টদ্যুম্ন তা করেন। গীতায় শৈব্য ও কাশরাজের নাম পাওবপক্ষের শ্রেষ্ঠ বীরদের মধ্য করা হয়েছে, কিন্তু মহাভারতে তাদের নাম যদি বা খুঁজে পাওয়া যায়, তাদের কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণের কথা নাই। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য এই কথা যে গীতার উপদেশে অর্জুনের যে কোন ভাবান্তর হ'ল, তা দেখা যায় না, প্রথমদিন যুদ্ধশেষে যুধিষ্টির কৃষ্ণের নিকট আক্ষেপ করছেন যে ভীষ্ম দ্রোণ পান্ডব সেনাকে অগ্নিৰৎ দগ্ধ করছেন, এক ভীষ্ম তার যথাসাধ্য প্রতিকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু অর্জুন নির্লিপ্ত ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বিচরণ করছেন। গীতা শুনে "তোমার কথামত কাজ করব” কৃষ্ণকে বলে অর্জুন কি নির্লিপ্তভাবে থাকতেন ? আরো দ্রষ্টব্য যে যুদ্ধপর্বগুলির মধ্যে কোথায়ও গীতার বা গীতার উপদেশের উল্লখ নাই।

শান্তি পর্বে ও আশ্বমেধিক পর্বে আছে, কিন্তু তা স্পষ্টত পরের কালে যোজিত। যুধিষ্ঠিরেরও কৌরব-বাহিনীর মধ্যদিয়ে গিয়ে ভীষ্ম দ্রোণাদিকে প্রণাম করার কারণ নাই, সঞ্জয় -ও কৃষ্ণের দৌত্যকালে তিনি তাদের প্রমুখাৎ প্রণাম জানিয়েছিলেন। অতএব ২৪-৪৩ অধ্যায় বাদ হবে, তা মূল ভারত কথার অংশ নয় ; ২৪ অধ্যায় বাদ হবে, কারণ ২৪ অধ্যাষে কৃত প্রশ্ন আবার ৪৪ অধ্যায়ে করা হয়েছে, সেখানেই গ্রাহ্য।

ভীষ্ম পর্বের প্রথম অনুপর্ব জম্বুখন্ড বিনির্মাণ ১-১০ অধ্যায়ে কথিত। ১ অধ্যায়ে যুদ্ধারম্ভের প্রাকালীন অবস্থা ও যুদ্ধের নিয়ম স্থাপন—১-১৭, ২৩-৩৪ গ্রাহ্য, ১০-২২ শ্লোক আতিশয্য হেতু বাদ। ২-৩ অধ্যায়ে আছে যে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস ধৃত্তরাষ্ট্রের কাছে এসে উপস্থিত হলেন,

যুদ্ধের কুফল বর্ণনা ক'রে তারপরে ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধ দেখ্‌বার জন্য দিব্যচক্ষু দিতে চাইলেন, ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন যে ধৃতরাষ্ট্র স্বচক্ষে স্ববলের নিধন দেখতে চান না, শুধু বর্ণনা শুনতে চান। তখন ব্যাস সঞ্জয়কে দিব্যদৃষ্টি দিলেন, বললেন যে সে সব দেখতে পেয়ে তোমাকে সম্পূর্ণ বর্ণনা শোনাবে। দিব্য দৃষ্টির কথা গ্রাহ্য নয়। এই দুটি অধ্যায়ে আর যা আছে, যথা শুভ অশুভ লক্ষণের কথা, তা অবান্তর। ২-৩ অধ্যায় বাদ হবে। ৪-১০ অধ্যাযে ভূমি বা পৃথিবীর জীব ও উদ্ভিদ ধারক রূপের বর্ণনা, জম্বুদ্বীপে বা এশিয়ায পর্বত ও দেশ বিভাগ বর্ণনা, ভারতবর্ষের পর্বত, নদী ও দেশবিভাগের বর্ণনা, এবং বিভিন্ন যুগে মানুষের আযুর বর্ণনা আছে। পৌরাণিক কালের ধারণ, মত বর্ণনা, বর্তমান কালের উপযুক্ত বর্ণনা নয়, এবং ভারতকথা প্রসঙ্গে অবান্তর, তাই এই অধ্যায় সমূহ সম্পূর্ণ বাদ হবে।

দ্বিতীয় অনুপর্বের নাম ভূমিপর্ব, ১১-১২ অধ্যায়ে মাত্র কথিত; সে দুটিতে জম্বুদ্বীপ ছাড়া বাকী দ্বীপ ৰা মহাদেশ সমূহের বর্ণনা, ও কাল্পনিক এবং ভারতকথায় অবান্তর ; সম্পূর্ণ বাদ হবে।

 তৃতীয় অনুপৰ্ব ভগবদ্‌গীতাপর্ব, তার মধ্যে ১৩-২৪ অধ্যায়ে যুদ্ধব কথা এবং গীতার ভূমিকা ২৫-৪২ অধ্যাযে ভগবদ্‌গীতা। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মহাভারতের ৬ষ্ঠ পর্ব তথা ভীষ্ম পর্বের অধ্যায় ২৫ হতে অধ্যায় ৪২ পর্যন্ত মোট ১৮ টি অধ্যায়ের সমষ্টি। ১৩ অধ্যায়ে আছে যে সঞ্জয় হঠাৎ যুদ্ধক্ষেত্র হতে ধৃতরাষ্ট্রের নিকট উপস্থিত হয়ে শিখন্ডির হস্তে ভীষ্মের মৃত্যুসংবাদ দিলেন। অধ্যায়টি সম্পূর্ণ গ্রাহ। ১৪ অধ্যায়ে ভীষ্মের মৃত্যুহেতু ধৃতরাষ্ট্রের দীর্ঘ বিলাপ আছে, ডঃ বেলকর, বলেছেন যে এই অধ্যায়টি নিকষ্ট ও বর্জনীয় মনে হয়, তবে বহু প্রদেশের পুঁথিতে এটি থাকায় তিনি বাদ দিতে পারেন নাই। আমার মতে শুধু ১-৪,৫৭-৫৮, ৭৬-৭১, এই নয়টি শ্লোক গ্রাহ. বাকী শ্লে'ক বাদ হবে। ১৫/১ শ্লোক বাদ হবে, তাতে ব্যাসের বরদান ও সঞ্জয়ের তিরস্কার বর্ণিত। ১৫/১০-২ গ্রাহ্য, ১৩ অধ্যায়ে দশদিনের যুদ্ধফল বলে এখান থেকে বিস্তৃত বর্ণনার আরম্ভ। ১৬ অধ্যায়ে বাহিনীদ্বয়ের শিবির হতে নিমন্ত্রন বর্ণিত হয়েছে, গ্রাহ্য। ১৭/১-৪, ৭-৩৯ গ্ৰাহ্য, ৫-৬ শ্লোক ৰাদ হবে— তাতে আছে যে ভীষ্ম ও দ্রোণ প্রতিদিন প্রাতে পাণ্ডু পুত্ৰদের জয় হোক বলে কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ আরম্ভ করতেন, কিন্তু তাঁরাউভয়েই যথাসাধ্য যুদ্ধ করেছেন, প্রতিদিন প্রাতে পাণ্ডুপুরদের জয় হোক বলে কাজ আরম্ভ করতেন তা গ্রাহ্য নয়। ১৮, ১৯ অরণ্যের ব্যৃহ নির্মাণাদি বর্ণনা গ্রাহ্য। ২০ অধ্যাষ বাদ হবে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেশ্ন আছে যে মুদ্ধোদ্যম কালে কাদের সেনাকে বেশী হৃষ্ট দেখা গেল- এই প্রশ্ন আবার ২৪ অধ্যাযে আছে, এবং ২০ অধ্যায়ের ভাষা ও বর্ণনাশৈলী নিকৃষ্ট মনে হয়। ২১ অধ্যায়ে নারদের কথা এবং কৃষ্ণকে বৈকুণ্ঠপতি হরি বলা হয়েছে, এই অধ্যায় পরে কালে যোজিত সন্দেহ নাই। ২২ অধ্যায়ে যুধিষ্টির কর্তৃক পাণ্ডবগণের সেনাকে উৎসাহ দান ও পান্ডবগণ কর্তৃক ভীমরচিত ব্যূহের প্রতিব্যূহ রচনা ইত্যাদি আছে, পাণ্ডবগণের ব্যৃহ গঠনের কথা ১৯ অধ্যায়েই আছে, ২২ অধ্যায়ে পুনরুক্তি, তা বাদ হবে। ২০ অধ্যায়ে কৃষ্ণের উপদেশ মত অর্জুন কর্তৃক দুৰ্গাস্তব তা বাদ হবে। খৃঃপূঃ একাদশ-দশম শতকে দুর্গাপূজা প্রবর্তন হয় নাই। সংশোষকগণও এই অধ্যায় বাদ দিয়েছেন।

প্রথম দিনের যুদ্ধ বিবরণের মধ্যে ৪৭।৪৩ হতে ৪৯/২৫, যাতে পাণ্ডব পক্ষের বীর শ্বেতের তীব্র যুদ্ধ ও মৃত্যু বর্ণিত হয়েছে, তা শুধু সংশোধকগণ নয়, প্রমাণ মহাভারতের সম্পাদক ও প্রক্ষিপ্ত বলেছেন। শ্বেতের নাম রধাতিযথ সংখ্যানে নাই। ভীষ্মের দশদিন যুদ্ধ বিবরণ বহু বিস্তৃত, তার মধ্যে শ্বেতের যুদ্ধ কথার মত আরো বহু প্রক্ষিপ্ত অধ্যায় ও শ্লোক আছে সন্দেহ নাই। ভীষ্মের সৈৰাপত্যে প্রকৃতই দশদিন যুদ্ধ হয়েছিল কিনা, তাতেও সন্দেহ আছে কারণ ভীষ্ম তখন অতি বৃদ্ধ, এবং ভীষ্মের সৈনাপত্য কালে দশম দিনে ভীষ্মের পতন ছাড়া কোন প্রখ্যাত পাওব বা কৌরববীরের পতন হয় নাই।

তৃতীয় দিন যুদ্ধ বিবরণে ও নবম দিন যুদ্ধ বিবরণে আছে যে কৃষ্ণ অর্জুনের মৃদুযুদ্ধে বিরক্ত হয়ে নিজেই রথ থেকে লাফিয়ে নেমে ভীষ্মের দিকে ছুটলেন, অর্জুন অনেক কষ্টে তাঁকে নিবৃত্ত করলেন। পর্বসংগ্রহে একবারই কৃষ্ণের প্রতোদ হাস্ত ভীষ্মের অভিমুখে ধাবনের কথা আছে।

ডঃ বেলভঙ্কর বলেছেন যে তৃতীয় ও নবম দ্বিবসে কৃষ্ণের ভীষ্ম অভিমুখে ধাবনের কথার মধ্যে একটি বাদ দিতে পারলে তিনি সুখী হতেন, অর্থাৎ একটি যে পরের কালের যোজনা, তা তিনি অনুভব করছেন, কিন্তু নানাস্থানের পুঁখিতে তা থাকয় বাদ দিতে পারেন না। হয়তো তৃতীয় দিনের যুদ্ধ ও নবম দিনের যুদ্ধ একই দিনের কথা, এবং ভীষ্মের সৈনাপত্যে যুদ্ধ চারদিনেই শেষ হয়েছিল। কিন্তু বহুশতাব্দী ধরে যে ঐতিহ্য গৃহীত হয়েছে, শুধু অনুমানের উপরে তা অন্যরহম করা সম্ভব নয়। তবে তৃতীয় দিনের যুদ্ধ বিবরণ হতে কৃষ্ণের রথ হতে লাফিয়ে পড়ে ভীষ্মের দিকে দ্রুত গমনের কথা ইত্যাদি বাদ দেওয় বর্তে, কারণ তৃতীয় দিনের এই ঘটনার বিবরণে আছে যে কৃষ্ণ তাঁর বত্রনাভ চক্র নিয়ে ছুটলেন ১।; সেই চক্র তো কৃষ্ণের রথে বা শিবিরে থাকবে তা অর্জুনের রথে কৃষ্ণ কি করে পাবেন ? পর্বসংগ্রহে কৃষ্ণের প্রতোদ হস্তে গমনের কথা

আছে, নবম দিনের ঘটনায় ১০৬ অধ্যায়ে আছে যে কৃষ্ণ প্রভোদ নিয়েই ভীষ্মের দিকে ছুটলেন। ৫৯ অধ্যায়ে এবং ১০৬ অধ্যায়ে এই ঘটনার বিবরণ দিতে বহু সাধারণ শ্লোক আছে, তার থেকেও মনে হয় কোন পরের কৰি শ্লোক নকল করে দ্বিতীয় ঘটনার বিবরণ লিখে বসিয়ে দিয়েছেন।
অতএব ৫১/৪৯-১০৭ শ্লোক বাদ হবে। প্রথম দিন থেকে চতুর্থ দিনের যুদ্ধ বিবরণে যে দুটি ঘটনার বিবরণ বাদের কথা বলা হল, তাছাড়া সংশোধিত পাঠমত গ্রাহ্য। চতুর্থ দিনের যুদ্ধ বিবরণ গুনে ধৃতরাষ্ট্র প্রশ্ন করলেন যে আমাদের দিকে এত শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা আছে, তারা পাণ্ডবদের কিছু ক্ষতি করতে পারছে না কেন?
উত্তরে সঞ্জয় বললেন, চতুর্থ দিন যুদ্ধশেষে দুর্যোধন গিয়ে ভীষ্মকে সেই প্রশ্ন করেছিলেন, তার উত্তরে তীষ্ম যা বলেছিলেন, তা আপনাকে শোনাচ্ছি (৬৫/১-২০)। ভীষ্মের উত্তর হ'ল যে পাণ্ডবগণ বাসুদেবের দ্বারা রক্ষিত, বাসুদেব হলেন বিশ্বের প্রভু, বিশ্বমূর্তি, বিষ্ণুরূপে পরমপুরুষ; তিনিই আবার আত্মারূপ সংকর্ষণ, প্রদ্যুম্ন তাঁর আত্মা স্বরূপ, প্রদ্যুম্ন হতে তিনি অনিরুদ্ধকে সৃষ্ট করেছেন আবার অনিরুদ্ধও অব্যয় বিষ্ণু স্বরূপ। সেই পরমপুরুষ বাহুদেবরূপে নরদেহ ধারণ করেছেন, পাওয়গণ তাঁর রক্ষিত, ভাই ভারা অবধ্য এবং যুদ্ধে জয়ী হবে; বলদেব সাত্বত বিধি গানে প্রকাশ করে বাহুদেবের আরাধনা করেছিলেন।
ডঃ ৰেগভলকর বলেছেন যে ৬৪, ৬৮ অধ্যায়ে বিবৃত এই যে বিশ্ব উপাখ্যান বা চতুর্ব্যুহতত্বযুক্ত সাত্বতবিধি ব নারায়ণীয় ধর্ম বিবরণ, তা পবের কালের প্রক্ষেপ এবং বাদ দিতে পারলে খুসী হতেন, কিন্তু উত্তর ভারত দক্ষিণ ভারত সব স্থানের পুঁথিতে থাকায় বাদ দিতে পারেন নাই। কিন্তু কৃষ্ণকে বিষ্ণু ভগবানের অবতার বা সাক্ষাৎ ভগবান (ঈশ্বর) রূপে পুজা খৃঃ পুঃ তৃতীয় বা দ্বিতীয় শতকের পূর্বে হয নাই নারাযণীয় বা সাত্বত ধর্ম্ম কৃষ্ণ কর্তৃক কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের করে বৎসর পরে প্রচারিত হয়। অতএব ৬৫-৬৮ অধ্যায যে মূল ভারত কথার অংশ নয়, অনেক পরের কালে যোজিত, তাতে কোন সন্দেহ নাই। এই চারটি অধ্যায় বাদ হবে।

ষষ্ঠ দিনের যুদ্ধ বিধরণের মধ্যে ৭৬ অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিলাপ এবং ৭৭/১-৫ প্লে কে সঞ্জরে তিরস্কার অবান্তর হিসাবে বাদ হবে। পঞ্চমদিনের যুদ্ধ বিবরণ (৬৯-৭৪ অধ্যায়) ও ষষ্ঠ দিনের যুদ্ধ বিবরণের (৭৫-৭৯ অ্যায়) অবশিষ্ট অংশ সংশোধিত পাঠমত গ্রাহ্য। সপ্তম দিনের যুদ্ধ বিবরণও (৮০-৮৬) সংশোধিত পাঠমত গ্ৰাহ্য। অষ্টম দিনের যুদ্ধ বিবরণ (৮৭-৯৬ অধ্যায়) মধ্যে ৮৯।১-১৩ শ্লোক বাদ হবে—তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিলাপ ও সঞ্জয়ের তিরস্কার আছে, তা অবান্তর মনে হয়।  ৯০ অধ্যায়ে অর্জুন উলুপীর পুত্র ইরাবানের সসৈন্যে আগমন, অর্জুনের নিকট পরিচয় দান, এবং পাণ্ডবপক্ষে যুদ্ধ করে কৌরব কাহিনী বিচলিত করে অবশেষে কৌরবপক্ষে নবাগত এক রাক্ষস অতিরথ আর্যশৃঙ্গির হতে মৃত্যু বর্ণিত হয়েছে। আদিপর্বে উলুপী সহ সঙ্গমের কথা যেখানে আছে, সেখানে অর্জুন উলুপীর পুত্রের নাম নাই,
পর্বসংগ্রহ হতে বব্রূবাহন উলুপীর পুত্র সেই কথা মনে হয়। ভীষ্মের অষ্টম দিন যুদ্ধ বিবরণে ছাড়া ইরাবানের নাম মহাভাবতে আর কোথাও নাই, বিষ্ণুপুরাণে আছে, মনে হয় পৌরাণিক যুগে যুদ্ধ বিবরণ স্ফীত করতে ইরাবানের কথা আনা হয়েছে। এই অধ্যায়ের ভাষায় কিছু পার্থক্য আছে, যা "ব ঢম্” শব্দ পরপর দুবার ব্যবহৃত হয়েছে ( ৩২, ৪২ শ্লোকে), সেই শব্দের ব্যবহার যুদ্ধ বর্ণনায় অন্যত্র বিশেষ নাই। এই অধ্যায় বাদ হবে, এবং ইরাবানের উল্লেখ থাকায় ৯১।১, ৯৬/১-১৩, ৯৫।৮৩ শ্লোক বাদ হবে।

নবম দিনের যুদ্ধ বিবরণ ১৭-১০৭ অধ্যায় নিয়ে বর্ণিত। তার মধ্যে ১৩ ধ্যায় বাদ দেওয়া যায় ; এটি সঙ্কুল যুদ্ধ বিবরণ, যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে নদীর তুলনা করা হয়েছে, তা অনেক অধ্যায়ে আছে। এই অধ্যায়ে মধ্য দিনের যুদ্ধ বর্ণন বলে আরম্ভ হয়েছে, কিন্তু ১০৪ অধ্যায়ে মধ্যদিনের যুদ্ধের কথা আছে। ১০২ অধ্যায়ের পরে ১০৪ অধ্যায় পড়লে স্বাভাবিক মনে হয়। ১০৩ অধ্যায় বাদ হবে। ১০৭ অধ্যায়ে আছে যে যুদ্ধশেষে যুধিষ্ঠিরাদি ভীষ্মের কাছে গিয়ে তাঁর বধের উপায় জানতে চাইলেন, এবং ভীষ্মও বলে দিলেন যে শিখন্ডীকে সামনে রেখে যুদ্ধ কর, তাকে আমি আঘাত করব না, সেই সুযোগে আমাকে বধ করতে পারবে। বিপক্ষের সেনাপত্তির নিকট গিয়ে তার বধের উপায় জানার চেষ্টার কথা গ্ৰাহ্য নয়। সে কথা অনুক্রমণিকাধ্যায়ে ১৮৩ শ্লোকে ছিল, সেটি সংশোষক গণ বাদ দিয়েছেন । ১০৭।৪৫- ৯০ শ্লোক বাদ হবে। দশম দিনের যুদ্ধ বিবরণ ১০৮,১২২ অধ্যায়ে আছে। তারমধ্যে বহু পুনরুক্তি, অর্থাৎ নানা কবির হস্তক্ষেপের নিদর্শন পাওয়া যায়। ১০৮, ১০৯ ও ১১৫ অধ্যায়ের প্রারম্ভে ধৃতরাষ্ট্রের প্রশ্ন আছে, ১০৮ ও ১০৯ অধ্যায়ে প্রশ্ন যে শিখণ্ডী ও পাণ্ডবগণ কিভাবে ভীষ্মের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল ?
১১৫ অধ্যায়ে প্রশ্ন যে ভীষ্ম কিভাবে পাণ্ডব ও পান্ডবের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। ১০৮-১১৪ অধ্যায় বাদ দিয়ে ১১৫-১১৯ অধ্যায় পড়লে দশম দিনের যুদ্ধের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়। অতএৰ ১০৮-১১৪ অধ্যায় প্রক্ষিপ্ত হিসাবে বাদ হবে। ১১৯ অধ্যায়ের ৯২-১০৯ শ্লোকে কথিত ভীষ্মেব উত্তরায়ণের জন্য প্রতীক্ষার কথা বাদ হবে। সন্মুখযুদ্ধে মৃত্যুতেই তো ক্ষত্রিদের স্বর্গলাভ হয় এই ধারণা ছিল, তাছাড়া ভীষ্ম যদি শাপভ্ৰষ্ট বসু দ্যৌ হন, তবে তো তাঁর মানবদেহ ত্যাগ করে যেতে বিলম্ব করবার কারণ নাই।
শাপভ্রষ্ট বসুর কথা অবশ্য পৌরাণিক কল্পনা, তবু আর কোন ক্ষত্রিয় বীর উত্তরায়ণেব প্রতীক্ষার কথা বলেন না, ভীষ্মই বা কেন বলবেন ? ১২০-১২১ অধ্যায়ে আছে যে অজু'ন শরশয্যাষ পতিত্ত ভীষ্মের দোদুল্যমান মস্তকের জন্য তিনটি বাণ দিয়ে উপাধান বা বালিশের মত করে দিলেন, এবং ভীষ্মের পিপাসা নিবারণের জন্য বরুণ অস্ত্র প্রযোগ করে ভূমি হতে জলের উৎস সৃষ্টি করলেন, যা ভীষ্মের মুখে দিয়ে পড়ল। এই সব অনৈসর্গিক কথা বাদ হবে, অর্থাৎ ১২০.৩৪- ৫৪ ও ১১২, ১২১ অধ্যায় সম্পূর্ণ বাদ হবে। ১২২ অধ্যায়ে ভীষ্মের পত্তনের পরে কর্ণের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা আছে, তা গ্রাহ্য।

ভীষ্মের পতন হয় পৌষ মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীতে[ভীষ্ম পর্ব ১৭।২], দর্যোধনের মৃত্যু হয় পৌষমাসে অমাবস্যার রাত্রে। ভীষ্মের বিরূদ্ধে যুদ্ধকালে শিখন্ডী নায়কত্ব করেছিলেন [আশ্বমেধিক ৬০।৯,১৫]। হিরণ্বতী নদীর তীরে যুদ্ধ হয়।

মহাভারত লিঙ্ক

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

অথর্ববেদ ২/১৩/৪

  ह्यश्मा॑न॒मा ति॒ष्ठाश्मा॑ भवतु ते त॒नूः। कृ॒ण्वन्तु॒ विश्वे॑ दे॒वा आयु॑ष्टे श॒रदः॑ श॒तम् ॥ ত্রহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতুতে তনূঃ। কৃণ্বন্তু...

Post Top Ad

ধন্যবাদ