হনুমানের বাস্তবিক রূপ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

27 February, 2022

হনুমানের বাস্তবিক রূপ

হনুমানের বাস্তবিক রূপ
 #হনুমানজী মানুষ ছিলেন, রামকৃষ্ণ বাবুর কুধারণানুযায়ী তাঁর লেজ ছিল।।

মহাবীর হনুমান সাধারণের প্রচলিত ধারণানুযায়ী, দীর্ঘ পুচ্ছসমন্বিত লোমশ বৃক্ষারূঢ় মর্কট ছিলেন না হনুমানজী মানুষ ছিলেন, রামকৃষ্ণের কুধারণানুযায়ী তাঁর লেজ ছিল না আমার ঘোষ এই যে, তোমাদের মত সরল বিশ্বাসে সাধু পরমহংসঙ্গের কথা বা পুরাণ কথা মেনে নিতে পারি না, অভ্রান্ত সত্যরূপে; দাতা দয়াল যেটুকু বুদ্ধি বিবেক দিয়েছেন; তাই দিয়ে বিচার করে দেখি। মহাবীর হনুমান সম্বন্ধে আমার ধারণা, তিনি শৌর্ষে বীৰ্য্যে ত্যাগ তপস্যায় মহত্বে একজন মানবশ্রেষ্ঠ ছিলেন— 

তাঁর মানুষের মতই মূর্ত্তি (Human figure) ছিল। মূলবাল্মীকি রামায়ণ সহ রামায়ণের সর্ব্ব প্রাচীন টীকা রামায়ণ কতক, রামবর্ম্মণের তিলক টীকা, গোবিন্দরাজের শৃঙ্গার তিলক টীকা, মহেশ্বর তীর্থ, বরদরাজ, মৈখিল ও নাগেশ ভট্টের রামায়ণের টীকা, অশ্বকযজ্ঞনের ধর্ম্মকুট, রামানন্দ তীর্থের রামায়ণকুট ইত্যাদি টীকাগুলি ভন্ন তন্ন করে, জ্ঞানবুদ্ধিমত অনুসন্ধান করে, রামায়ণ-বর্ণিত বালী সুগ্রীব হনুমানাদি যে মানুষ ছিলেন, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি।

তোমরাও যদি সংস্কার যুক্ত মন নিয়ে সব বিচার করে দেখ, তাহলে আশা করি, আমার সঙ্গে এক মত হবে। বাল্মীকি রামায়ণে পাই, যখন সীতা হরণের পর সীতান্বেষণে রাম লক্ষণ, সুগ্রীব হনুমানাদি যেখানে ছিলেন সেখানে পৌঁছলেন, তখন সুগ্রীবের নির্দেশে হনুমান এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে যে বুদ্ধিমত্তা সৌজন্য ও শিষ্টাচার সহ আলাপ করলেন, তাতে তিনি যে একজন শাখামৃগ মর্কটাকৃতি ছিলেন, এ ধারণা তোমাদের একমাত্র সাধু রামকৃষ্ণ পরমহংস পুরাণকারের দল ছাড়া আর কেউ করতে পারবেন না। হনুমানের বাক্যালাপে, অতুলনীয় বাচনভঙ্গীতে মুগ্ধ হয়ে রামচন্দ্র লক্ষণকে ঐ বাক্য, সুগ্রীব-অমাত্যের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ মধুর বাক্যে আলাপ করতে নির্দেশ দিলেনঃ-

তমত্যতাব সৌমিত্রে সুগ্রবং সচিবং কপিম্

বাক্যজ্ঞ মধুরৈর্বার্ক্যৈঃ স্নেহষৃক্তমরিন্দমম্। [ বাল্মীকি রামায়ণ, তৃতীয়সর্গ ২৭]

হনুমানের বচন পারিপাট্যে মুগ্ধ হয়ে রামচন্দ্র লক্ষণকে বলছেন,—

“নিশ্চয়ই ইনি মহাপণ্ডিত; ঋগ্বেদ সামবেদ যজুর্ব্বেদে পারদর্শী না হলে কেউ এরকম জ্ঞানগর্ভ বাক্যালাপ করতে পারে না। ইনি নিশ্চয়ই সমগ্র ব্যাকরণ শাস্ত্রও অধিগত করেছেন, আমার সঙ্গে এত কথা বললেন, তবুও একটিও অপশব্দ প্রয়োগ করেন নি,--

"নানৃগ্বেদ বিনীতস্য ন। যজর্ব্বেদ ধারিণঃ

না সামৰেদ....."[ বাল্মীকি রামায়ণ, কিস্কিন্ধ্যাকান্ড, তৃতীয়সর্গ ]

সীতান্বেষণে সুগ্রীব যখন চারিদিকে তাঁর সৈন্তবাহিনীকে পাঠালেন, তখন বিশেষকরে এই মহাবীর হনুমানকেই সম্বোধন করে বললেন—

"তদযখা লভ্যতে সীতা তত্ত্বমেবোপপাদয়।

তব্যেব হনুমান্ অস্তি বল বুদ্ধিঃ পরাক্রমঃ..."[ বাল্মীকি রামায়ণ, কিস্কিন্ধ্যাকান্ড, তৃতীয়সর্গ ]

--‘বীর হনুমান, যাতে সীতার অনুসন্ধান পাওয়া যায়, তা অবশ্যই করো। তুমি রাজনীতিবিদ, বল বিক্রম বুদ্ধি শৌর্য সবই তোমাতে আছে। দেশ কাল পাত্রানুযায়ী কখন কি করতে হবে, এ সব নীতিতত্ত্বে তুমি বিশারদ।"

রামকৃষ্ণের ন্যায় পরমহংসের — theory অনুযায়ী, তোমাদের সকলেরই লাঙ্গুল গজিয়ে উঠলেও বেদজ্ঞ সর্বশাত্মার্থবিদ, মহাবিক্রমী, পরম তপস্বী হনুমানজীকে তোমাদের মত শাখামৃগ বানর পর্যায়ে ফেলা আমার পক্ষে অসম্ভব।

প্রায়শ দেখা যায় মূল পুস্তকে এক একরকম থাকে পুরাণ উপপুরাণে তার অতিরঞ্জন এবং অনুরঞ্জন ঘটে। মহর্ষি বাল্মীকির রামায়নে দু'এক স্থানে লাঙ্গুলের কথা আছে কিন্তু পুরাণকারেরা এবং সাধারণ অজ্ঞ জন সাধারণ পূর্বাপর বিচার না করেই, হনুমান বলতেই লাঙ্গুল [লেজ] 

বিশিষ্ট বর্তমানে যে মর্কট বানরদল গাছে গাছে দেখা যায়, তাদেরই সমগোত্র ভেবে বসলো। এমন কি গদাধর ওরফে রামকৃষ্ণের জীবনী তে আমরা দেখি তিনি লেজ বিশিষ্ট বজরঙ্গবলী কে দর্শন করেছিলেন তাঁর নিজের শরীরে লাঙ্গুল বা লেজের মত অংশ বৃদ্ধি পেয়েও ছিল। পাঠকগণ নি বিচার বুদ্ধিতে নিশ্চয় বুঝতে পারবেন ঐ ঘটনা কতটা কাল্পনীক ও মিথ্যা।

এই ভাবে একই প্রজাপতি গোত্র হলেও যক্ষ রক্ষ গন্ধর্ব কিছুর গরুড়াদি সুপূর্ণ নাগ সবাইকে মনুষ্যেতর কিম্ভুত কিমাকার জীবে ভেবে বসে আছে। একটা বদ্ধমূল ধারণা চলে আসছে এমন ভাবে যেন, নাগ বললেই বিষধর সাপ, উন্নত করালফণা নিয়ে দংশন করতে আসছে,

কিন্নর বলতেই যেন ঘোড়ার মত মুখ কামচর্চ্চাকারী এক প্রকার জীব আর রাক্ষস বলতেই বিকট দর্শন রক্তপিপাসু, নরখাদক দস্যু নারীহরণ করা আর গোটা গোটা মানুষ জীব জন্তু গিলেফেলাই তাদের স্বভাব ! অথচ ঐ সব যক্ষরক্ষ সুপর্ণদের যে শৌর্য্য বীর্ষ পাণ্ডিত্য ও তপোবলের পরিচয় পাওয়া যায়, তারা যে একই পিতা কশ্যপ থেকেই জন্মেছে, তারা মনুষ্যেতর পশুপাখী সাপ কি করে হ'কে সে সব ভেবে দেখবে না; মনুষ্য মাতাপিতার গুক্রশোণিত সংযোগে সাপ ভালুক পাখী বানরাধির কি করে জন্ম সম্ভব তাও একবার বিবেচনা করে দেখবে না !!

এ অল্পতা যে কবে দেশ থেকে দূর হ'বে, তা জগদীশ্বরই জানেন, স্বাধীন চিন্তাধারার প্রসারতা না ঘটলে এ অজ্ঞতা কোনদিনই যাবে না। হনুমানাদি বানর, গরুড়াদি পক্ষী, তক্ষকাদি নাগ, রাবনাদি রাক্ষস এঁরা সবাই মানুষের প্রতিবেশী মানুষই ছিলেন, কেবলমাত্র গুণগত, আচার ব্যবহারগত পার্থক্য ছিল। রামায়ণে দেখি, বানরগণ যখনই একে অপরের কাছে রামচন্দ্রের পরিচয় দিয়েছেন, তখনই তারা এইভাবে পরিচয় দিয়েছেন, “ইক্ষাকুনাং কুলে জাতঃ”, কৈ, “মনুষ্যানাং কুলে জাত:”—একথা তো কোথাও বলেন নি ? রামায়ণের বানরজাতি যদি মানুষ হ'তে পৃথক একটা জাতি হত', তাহলে "ইক্ষাকুর বংশে ইনি জন্মেছেন" না বলে "মানুষের বংশে জন্মেছেন"---এই কথাই বলতেন।।

অশোক কাননে হনুমান সীতা দেবীকে প্রশ্ন করছেন-

"সুরানাম্ অসুরানাঞ্চ, নাগগন্ধর্ব্ব রাক্ষসাম্

বক্ষাণাং কিন্নরাণাঞ্চ কা স্বাং...." [বাল্মীকি রামায়ণ, সুন্দরকান্ড ৩৩ অধ্যায়, ৫ শ্লোক]

--- ঐয়ি শোভনে ! সুর, অসুর, নাগ গন্ধর্ব্ব যক্ষ বৃক্ষ কিন্নর কোন কুলে আপনি জন্মেছেন'? তাহলেই বেশ বোঝা যাচ্ছে, সুর অসুর নাগ গন্ধর্ব্ব যক্ষ রক্ষ কিন্নর এবং মানুষের মধ্যে শারীরিক গঠনের বৈষম্য ছিল না। তাহলে সেই Particular demarcating feature থেকেই (অর্থাৎ রাক্ষসের লম্বা লম্বা রক্তাক্ত দাঁত, কিন্নরের অশ্বমুখ প্রভৃতি !!) তিনি সহজেই বুঝতে পারতেন।

লক্ষ্য করুন, ঐ স্নোকে 'মানুষ' কথাটি নেই। কারণ, হনুমান নিজেও মানুষ ছিলেন, তিনি অপর মানুষ দেহধারী আর একজনকে তিনি মানুষ কিনা এ অবান্তর প্রশ্ন করবেন কেন ? দেব যক্ষ রক্ষ কিন্নর আর মানুষে আকৃতিগত কোন অমিল ছিল না, পারস্পরিক বৈষম্য ছিল শুধু শৌর্য্যে বীর্ষে শিল্পকলায় আচার বিচার আর বিশ্বাসে, তাই হহুমান সীতা জীকে ঐ ভাবে প্রশ্ন করছেন, যেমন আমরা কাউকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি চীনা, না জাপানী ? বুলগেরিয়ান, না, হাঙ্গেরিয়ান? ইংরেজ, না, ফরাসী? বৌদ্ধ, না, খ্রীষ্টান ? ইত্যাদি।

রামায়ণের দু'এক স্থানে লেজের যে বর্ণনা  আমার মনে হয়, হনুমানজীর লাঙ্গুল বা আকাশচারী গরুড়ের পক্ষদ্বয় শুতে যাতায়ান করার উপযোগী কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ছিল। হনুমান সমুদ্র লঙ্ঘন করছেন, তখন মহর্ষি বর্ণনা দিচ্ছেন 

"উৎপাপাতথ বেগেন বেগবান্ বিচারয়ণ্।

সুপর্ণমিব চাত্মানং মেনে স কাপকুঞ্জরঃ"।।[[বাল্মীকি রামায়ণ, সুন্দরকান্ড]

--হন মানের লাঙ্গুল, শূন্যে গমনাগমনের জন্য ব্যোমযান বিশেষ !‘বেগশালী হনুমান তখন মহাবেগে আকাশে উড়ে চললেন, নিজেকে তখন তিনি সুপর্ণ গরুড়ের ন্যায় ভাবলেন'। 

হনুমানের লাঙ্গুল যদি ব্যোমযানের মত যন্ত্র বিশেষ না হবে, তাহলে তাতে উড়া যায় কি করে ? বর্তমানেও তো বানরের বা অন্যান্য জীবজন্তুর লেজ দেখতে পাই, তার দ্বারা তারা তো কৈ উড়তে পারে না?

আমার এ ধারণা আরও দৃঢ়তর হয় মূল রামায়ণের পরবর্ত্তী বর্ণনায়—

তস্য বানর সিংহ্য প্লবমানস্য সাগরম্।

পক্ষান্তরগতো বায়ু জীমূত ইব গর্জ্জতি।

--'সাগর লঙ্ঘনকারী প্লবমান হনুমানের পক্ষান্তরগত বায়ু মেঘের মত গর্জন করছে।" বর্তমানে আকাশে এরোপ্লেন উড়লে যে শব্দ হয়, ঐ বায়ুগর্জন সেই ধরণের কোন কিছু স্মরণ করায় না কি? 

বালী সুগ্রীব এঁরা যে মানুষ ছিলেন তা বালীরাজার মৃতদেহ সৎকারের বর্ণনাতে স্পষ্ট-

বাল্মীকি রামায়ণ, কিস্কিন্ধ্যাকান্ড, ২২,২৩,২৪

দিব্যাং ভদ্রাসনাযুক্তাং শিবিকাং স্যন্দনোপমম্ [বালীর অগ্নিহোত্রানুযায়ী প্রেতকার্য্য]

1 comment:

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

अथर्ववेद 6/137/1

  एक वरिष्ठ वैदिक विद्वान् ने मुझे अथर्ववेद के निम्नलिखित मन्त्र का आधिदैविक और आध्यात्मिक भाष्य करने की चुनौती दी। इस चुनौती के उत्तर में म...

Post Top Ad

ধন্যবাদ