পুরাণ কি বেদ অনুকূল ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

22 February, 2022

পুরাণ কি বেদ অনুকূল ?

 শাস্ত্রার্থঃ

বিষয়: ভাগবতাদি পুরাণ কি বেদানুকূল ?
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা: শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী
পৌরাণিক সমাজ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা: শাস্ত্রার্থ মহারথী শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে প্রধান: শ্রী পণ্ডিত মহাদেবশরণ জী, অধিষ্ঠাতা (গুরুকুল দেবঘর)
পৌরাণিক পক্ষ থেকে প্রধান: শ্রী পণ্ডিত অখিলানন্দ জী
"কবিরত্ন"
শাস্ত্রার্থের আয়োজন কর্তা: রাজা মহেশ্বারী প্রসাদ নারায়ণ দেব "রাজধনবার" (বিহার)
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
ধর্মানুরাগী সজ্জনগণ! ভগবানের ধন্যবাদ যে আজ আমরা ভাই-ভাই পরস্পর প্রেমপূর্বক কিছু বিচার-বিনিময় করার জন্য একত্রিত হয়েছি। এই বিচার-বিনিময় প্রেম আর শান্তির সঙ্গে সমাপ্ত হোক এটা আমার হার্দিক কামনা রইলো। নিজের দেশ আর ধর্মের গৌরবকে সুরক্ষিত রাখতে আর তাকে আরও উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত আবশ্যকতা রয়েছে যে আমাদের সাহিত্যের মধ্যে যে দোষ এসে গেছে, তার সংশোধন হোক। যাতে কোনো বিদেশি, বিধর্মী আর বিপক্ষী আমাদের পূর্বজদের আর আমাদের উপর আক্ষেপ করার সুযোগ না পায়। যখন আমরা পুরাণগুলোতে দেখি তো সেখানে এরকম অসত্য কথন লেখা পাই যাকে দেখে বিরোধী লোক আমাদের পূর্বজদের নিন্দা করে, আমরা আর্য সমাজীদের এটা পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে আমাদের ঋষি, মুনি, রাজা, মহারাজাগণ এরকম কখনও ছিল না। আর তারা এরকম ধর্ম বিরুদ্ধ কার্য কখনও করে নি, যেমনটা পুরাণগুলোতে তাদের উপর দোষারোপণ করা হয়েছে। আজ দেশের সম্মুখ গোরক্ষা হল আবশ্যক প্রশ্ন, কিন্তু গোরক্ষার পথে এক বড় ভারী বাঁধা এটা হল যে, গোরক্ষা বিরোধী লোক পুরাণের আধারে এটা বলে তথা লিখছে যে গোবধ সর্বদা হত, আর ভারতের রাজা, মহারাজাগণ তথা ঋষি মহর্ষি পর্যন্ত গৌ মাংস পর্যন্ত ভক্ষণ করতো। আমি বলছি যে আমাদের দেশে মুসলমানদের থেকে পূর্বে গোবধ কখনও হত না। পুরাণে যা লেখা আছে তা বেদ বিরুদ্ধ, সর্বদা মিশ্রিত করা অসত্য রয়েছে। আর আমাদের বিরোধীরা আমাদের পূর্বজদের উপর কলঙ্ক লাগিয়ে নিজের উল্লু সোজা করার জন্য লিখেছে। কিন্তু আমার পৌরাণিক সনাতন ধর্মী ভাইরা তাকে নিজের গলায় বেঁধে বসে আছে। উদাহরণের জন্য আমি কিছু কথন উপস্থিত করছি -
ব্রাহ্মাণানাম্ ত্রিকোটীশ্চ, ভোগয়ামাশ নিত্যশঃ ।।৪৮।।
পম্চ লক্ষ গবাম্ মাম্সৈঃ সুপক্বে ঘৃত সম্স্কৃতৈঃ ।।৪৯।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ৩ অধ্যায় ৫৪ শ্লোক
৪৮,৪৯|| বেঙ্কটেশ্বর প্রেস দ্বারা প্রকাশিত)
স্বায়ম্ভূ মনু যিনি আদি আর্য সম্রাট আর মনুস্মৃতির মতন ধর্ম শাস্ত্রের প্রণেতা ছিলেন, তিনি গোমেধ য়জ্ঞ করেন, আর তিন কোটি ব্রাহ্মণদের পাঁচ লক্ষ গো মাংস যা ভালো ভাবে ঘী দ্বারা রান্না হয়েছে, খাওয়ান। কত বড় অনর্থ! কত বড় কলঙ্ক! এই সময় কি কোনো পাপীর থেকেও পাপী বাদশাহও এমন আছে, যার ওখানে লক্ষ কি হাজারও গাভীদের ভোজনের জন্য মারা হয়? স্বায়ম্ভূ মনু কি এইরকম পাপ করতেন? আমি বলছি কখনও করতেন না। আরও দেখুন -
সত্য ব্রতস্তু তদ্ভত্বয়া কৃপয়া চ প্রতিজ্ঞয়া।
বিশ্বামিত্র কলত্রম্ চ পোষয়ামাস বৈ তদা।।১।।
হত্বা মৃগান্বরাহাম্শ্চ মহিষাম্শ্চ বনে চরান্।।২।।
অবিদ্য মানে মাম্সে তু বসিষ্ঠস্য মহাত্মনঃ।।৯।।
সর্ব কামদুহাম্ দোগ্ঘ্রীম্ দদর্শ চ নৃপাত্মজঃ।।১০।।
দাশ ধর্ম গতো রাজা, তাম্ জঘান্ স বৈ মুনে।
সতম্ মাসম্ স্বয়ম্ চৈব বিশ্বামিত্রস্যত্তাত্মজম্।।১১।।
ভোজয়ামাসম্ তচ্ছুত্বা বশিষ্ঠো হ্মস্য চুকুহো।।১২।।
(শিব পুরাণ উমা সংহিতা অধ্যায় ৩৮ শ্লোক ১-২ তথা
৯-১২।। শ্যামকাশী প্রেস মথুরা দ্বারা প্রকাশিত)
অর্থাৎ মনুর বংশজ চক্রবর্তী মহারাজা মান্ধাতার পৌত্র সত্যব্রত ঋষি বিশ্বামিত্রের পরিবারকে সেই সময় পালন করে, যেসময় ঋষি বিশ্বামিত্র গভীর তপস্যায় লেগে ছিল। আর তার পত্নী নিজের পুত্র গালবকে বিক্রি করছিল। - সেইসময় সে অনেক প্রকারের মাংস দ্বারা সেই পরিবারকে পালন করে, একদিন বশিষ্ঠ ঋষির কামধেনু গাভীকে মেরে তার মাংস স্বয়ংও খায় আর বিশ্বামিত্রের পুত্রকেও খাওয়ায়। আরও দেখুন -
এবমেষা চ গৌ ধর্ম প্রাপ্স্যতে নাত্র সম্শয়ঃ।
পিতৃনভ্যর্চ্য ধর্মেণ নাধর্মো নো ভবিষ্যতি।।১৮।।
এবমুক্তাশ্চ তে সর্বে প্রোক্ষয়িত্বা চ গাম্ তদা।
পিতৃভ্যঃ কল্পয়িত্বা তু হ্য়ু পায়ুঁজ্জত ভারত।।১৯।।
উপয়ুজ্য চ গাম্ সর্বেম্ গুরোস্তস্য ন্যবেদয়ন্।
শাদ্র্দূলেন হতা ধেনুর্বত্সা বৈ গৃহ্য তামিতি।।২০।।
(শিব পুরাণ উমা সংহিতা অধ্যায় ৪১ শ্লোক ১৮,১৯,২০ পৃষ্ঠ ১২৫৭।। শ্যামকাশী প্রেস মথুরা দ্বারা প্রকাশিত)
কৌশিক (বিশ্বামিত্রের) পুত্র গর্গ ঋষির শিষ্য হয়ে গেল। আর তার গাভীকে মেরে তার মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধ করে তার বাছুরকে গর্গ ঋষির নিকট নিয়ে যায় আর বলে দেয় যে - গাভীকে তো বাঘ খেয়ে ফেলেছে, আপনি বাছুরটিকে নিন। সকলে এটা বিচার করে যে যদি এই গো মাংসকে এমনই খাই তবে পাপ লাগবে কিন্তু যদি পিতর শ্রাদ্ধ করে তার পর খাই, তবে আমাদের পাপ লাগবে না আর গৌ-ধর্ম কার্যে লেগে যাবে।
এরূপ কাহিনী পুরাণগুলোতে অনেক জায়গায় তো খুব স্পষ্ট শব্দে পাওয়া যায়।
"গবাম্ লক্ষছেদনম্ চ হরিণানাম্ দ্বিলক্ষকম্"।।১৬।। আরও দেখুন -
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রী কৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ১০৫। পৃষ্ঠ ১০৮৬, শ্লোক ৬০ থেকে ৬৩।। (কলকাতা মোর সংস্করণ দ্বারা প্রকাশিত) অর্থাৎ এক লক্ষ গাভী মারা হোক আর দুই লক্ষ হরিণ এই প্রকারে আরও লক্ষ জীব হত্যার ব্যবস্থা ছিল। তথা রূকমণীর বিবাহে অনেক পশু হত্যার বিচার করা হয়েছিল, যেখানে লক্ষ খানেক গৌ হত্যা করার নির্দেশ হয়। এরপর দেখুন -
পঞ্চ কোটি গবাম্ মাম্সম্ সম্-পূপম্ স্বান্নমেব চ।।৯৮।।
এতেষাম্ চ নদী রাশী ভুঞ্জতে ব্রাহ্মণঃ মুনে।।৯৯।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ২ অধ্যায় ৬১ শ্লোক ৯৮-৯৯।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
চন্দ্রের পৌত্র আর বুদ্ধের পুত্র "চৈত্র" -এর ওখানে পাঁচ কোটি গো মাংস ব্রাহ্মণদের খাওয়ানো হয়। "বলুন পাঁচ কোটি গাভীদের এক-একদিনে ব্রাহ্মণদের ভজনার্থ করা হয়" কত বড় ভয়ংকর পাপের দোষ এক ক্ষত্রিয় রাজার উপর লাগেনি হয়েছে? এর অতিরিক্ত দ্বিতীয় দোষ পুরাণে আমাদের পূর্বজের উপর ব্যভিচার অর্থাৎ পরস্ত্রী গমন লাগানো হয়েছে। এর উদাহরণও দেখুন। গীতায় শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র জী বলছেন -
য়দ্যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।
স য়ত্ প্রমাণম্ কুরূতে লোকস্তদনুবর্ততে।।২১।।
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৩ শ্লোক ২১)
অর্থাৎ - শ্রেষ্ঠ পুরুষ যেমন-যেমনটা আচরণ করে। নিম্ন মানুষেরাও সেরকম-সেরকমটা করতে থাকে। অভিপ্রায় হল এটা যে, শ্রেষ্ঠ পুরুষকে সর্বদা শ্রেষ্ঠ কার্যই করা উচিত যাকে দেখে-দেখে তার অনুগামীরা শ্রেষ্ঠ কার্যই করবে। দেখুন প্রমাণ আর নোট করুন -
"মম্ পত্নী সহস্রাণি সন্তি পাম্ডব ষোড়শঃ।।"
(ভবিষ্য পুরাণ উত্তর পর্ব ৪ অধ্যায় ১১১ শ্লোক ৩ পৃষ্ঠ ৪৭২।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
আমাদের এটা প্রশ্ন হল যে, যদি এটা সত্য হয় তবে শ্রীকৃষ্ণ জী এমনটা কেন করলো? এটা কি ধর্ম? এর জন্য কি যে আমার অনুগামীরাও এরকম কাজ করুক? তাদেরও হাজার-হাজার স্ত্রী হোক? একটা নয় আপনি যত চান তত প্রমাণ নিন। যথা -
তম্ দ্রষ্ট্বা সুন্দরম্ সাম্বম্ সর্বাশ্চুক্ষুভিরে স্ত্রিয়ঃ।।২৫।।
স্বাভাবতোল্প সত্বানাম্ জঘনানি বিসুস্রু বুঃ।।২৭।।
ব্রহ্মচর্যেঽপি বর্তন্ত্যাঃ সাধ্ব্যা হ্যপি চ শ্রূয়তে।
হৃদ্যম্ হি পুরুষম্ দৃষ্টবা য়োনিঃ সম্ক্লিদ্যতে স্ত্রিয়াঃ।।২৮।।
(ভবিষ্য পুরাণ ব্রাহ্ম পর্ব অধ্যায় ৭৩ পৃষ্ঠ ৭৭, শ্লোক ২৫,২৭,২৮।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ জীর সেই পত্নীগণ শ্রীকৃষ্ণ জীরই পুত্র সাম্বের উপর কামে বশীভূত হয়ে আসক্ত হয়ে যায় এটা দেবর্ষি নারদ জী তথা শ্রীকৃষ্ণ জী দুজনে দেখলো। আর বললো -
চৌরেরপহৃতাঃ সর্বা বেশ্যাত্বম্ সমবাপ্স্যথ।।১৮।।
এবম্ নরদ শাপেন মচ্ছাপেন চ সাম্প্রতম্।।১৯।।
বেশ্যাধর্মেণ বর্তধ্ব মধুনাঁ নৃপ মন্দিরে।।২২।।
ন চৈকস্মিন্যতিঃ কার্য়া পুরুষে ধন বর্জিতে।।২৫।।
সুরূপো বা বিরূপো বা দ্রব্যম্ তত্র প্রয়োজনম্।।২৬।।
(ভবিষ্য পুরাণ উত্তর পর্ব অধ্যায় ১১১, পৃষ্ঠ ৪৭৩।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
অর্থাৎ তারপর দুজনে অভিশাপ দেয় যে তোমরা সকলে বেশ্যা হয়ে যাও, বেশ্যা ধর্মে তোমরা বর্তো, ধন হীন মানুষ হতে তোমরা রতি ক্রিয়া করবে না, মনুষ্য সুরূপ হোক অথবা কুরূপ সেখানে ধনই সম্পর্ক। তথা তারপর তাদের উদ্ধারের জন্য উপায় বললেন যে রবিবারের দিন কোনো বেদপারগামী ব্রাহ্মণকে ডেকে তার সঙ্গে বিনা ফিস সমাগম করো তবে উদ্ধার হয়ে যাবে। স্থান নোট করুন তথা এই পুস্তক দেখে নিন - "ভবিষ্য পুরাণ উত্তর পর্ব অধ্যায় ১১১ শ্লোক ৩৩, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬"।। "রবিবার" শব্দ ৩৩ আর ৪৬ নম্বর শ্লোকে ভালো করে দেখে নিন।।
যখন শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ আর তার পরিবারের এই চরিত্র বলা হয়েছে তো তার ভক্তদের কি অবস্থা হবে? আরও দেখুন - "বিষ্ণু জালন্ধরের পত্নী বৃন্দার সঙ্গে ব্যভিচার করে" এটা পত্ম পুরাণে লেখা আছে। আমি বলছি আপনি ধ্যান দিয়ে শুনুন আর স্থান নোট করুন। পুরাণ আমার কাছে আছে যদি কোনো সজ্জন চান তো এসে দেখে যেতে পারেন, স্থান নোট করুন -
পদ্ম পুরাণ উত্তর খণ্ড অধ্যায় ১৬ শ্লোক ৫৩ থেকে ৭২ পর্যন্ত (আনন্দ আশ্রম প্রেস পুনা তথা কলকাতা মোর সংস্করণ দ্বারা প্রকাশিত) পদ্ম পুরাণেই আরও দেখুন - পদ্ম পুরাণ, উত্তর খণ্ড ৬ অধ্যায় ১০৫ শ্লোক ১ থেকে ৩০", তথা চন্দ্র নিজের গুরু বৃহস্পতির পত্নী তারাকে অপহরণ করে তার সঙ্গে ব্যভিচার করে। মনু জী মহারাজ নিজের স্মৃতিতে গুরু পত্নী গমনকে মহাপাপ বলেছে।
বিস্তৃত জানকারীর জন্য দেবী ভাগবত পুরাণ স্কন্দ ১ এর অধ্যায় ১১ তথা এইসব কাহিনীর কিছু ভিতর থেকে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের স্কন্দ ৯ অধ্যায় ১৪ তেই বলা হয়েছে। পণ্ডিত জী মহারাজ, এটা ছিল পুরাণগুলোর ঠিকানা! যেখানে গুরুপত্নীর হরণ ও তার সঙ্গে ব্যভিচার স্পষ্ট লেখা রয়েছে। আর মনু জী মহারাজও নিজের স্মৃতিতে গুরু পত্নী গমনকে মহাপাপ বলেছে। আর বলেছ যে - সংসারে চারটি মহাপাপ আছে। প্রথম তো ব্রহ্মহত্যা (অর্থাৎ কোনো বিদ্বান ব্রাহ্মণকে হত্যা করা), দ্বিতীয় মদ্য পান করা, তৃতীয় চুরি করা, চতুর্থ গুরুপত্নীর সঙ্গে ব্যভিচার করা, কিন্তু পঞ্চম আরও একটা মহাপাপ রয়েছে সেটা হল যে, যারা সেই ব্যাক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কে থাকে তারাদেরকেও মহাপাপী বলা হয়েছে। যথা -
ব্রহ্মহত্যা, সুরাপানম্, স্বেয়ম্, গুরু বম্গ নাগম্ঃ।
মহান্তি পাতিকাব্যাহূ সম্সর্গশ্চাপি তৈ সহঃ।।৫৪।।
(মনুস্মৃতি অধ্যায় ১১ শ্লোক ৫৪)
চন্দ্র হতে তারা গর্ভবতী হয়, তার থেকে বুদ্ধ নামের পুত্র উৎপন্ন হয়। দেবগণ তারাকে বৃহস্পতিকে দিয়ে দেয় আর পুত্র-বুধ-চন্দ্রকে আদি। এইভাবে পূর্বজদের উপর কলঙ্ক লাগানো কারী সহস্র কথন পুরাণগুলোতে ভর্তি পরে আছে। এইজন্য আর্য সমাজের এই নিজের ভাই পৌরাণিক সনাতন ধর্মীগণকে পরামর্শ হল যে তারা শীঘ্র এটা ঘোষণা করে দিক যে, পুরাণ হল বেদ বিরুদ্ধ, অপ্রমানিক তথা অমান্য।
শাস্ত্রার্থ মহারথী শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
সজ্জন গণ! মহাশয় জী যা প্রশ্ন করেছে আর যে কথাগুলোকে না বোঝার কারণে ওনার ভ্রম হয়েছে। যদি সেসব কথা বিধর্মীদের হত তবে আমি বিনা কোনো দ্বিধায় সেগুলো পুরাণ থেকে বের করতে অথবা পুরাণগুলোকে ছাড়ার ঘোষণা করে দিতাম। কিন্তু আপনি পুরাণ থেকে যা শুনিয়েছেন এসব যেমনটা তেমন বেদের মধ্যেও বিদ্যমান আছে। মহাশয় জী! যে আক্ষেপ আজ আপনি পুরাণের উপর লাগাচ্ছেন সেই সব আক্ষেপ বৌদ্ধ কাল থেকে বেদের উপর লাগানো হয়। বৌদ্ধদের সেই ডিমডিম ঘোষণা প্রসিদ্ধ আছে - "ত্রয়ো বেদস্য কর্ত্তারো ভাণ্ড ধূর্ত নিশাচরাঃ"। অর্থাৎ বেদের কর্তা ভাণ্ড, ধূর্ত, নিশাচর হতে পারে। কারণ সেখানে অশ্লীলতা, ধূর্ততা পূর্ণ আর দুরাচারের কথা লেখা আছে। এরকম অবস্থায় পুরাণকে ত্যাগ করলে কাজ হবে না। কিন্তু বেদ তথা অন্যান্য আর্ষ গ্রন্থগুলোকে ছেড়ে বিধর্মীই হয়ে যেতে হবে। কোনো অন্য ধর্মাবলম্বী এরকম কথন মিলিয়ে দিয়েছে এসব কল্পনা নিরাধার আর অবিশ্বাস্য কারণ কন্যাকুমারী থেকে হিমালয় পর্যন্ত উপলব্ধ পুস্তকগুলোতে তাড় পত্রের উপর লেখা অধাবধি সুরক্ষিত অনেক পুস্তকালয়ে প্রাপ্ত পুরাণ গ্রন্থে সর্বত্র কোনো মিশ্রণ করতে সমর্থ হবে এটা সর্বথা অসম্ভব। এইজন্য মহাশয় জীর ভ্রান্তির একমাত্র এটাই কারণ যে তিনি গুরুমুখে পুরাণের অধ্যায়ন করে নি। যে ব্যাক্তি গুরুমুখ হতে বেদ ও পুরাণ পড়বে তার ভ্রম হবেই না। গৌমাতা সনাতন ধর্মীদের হল প্রাণ, আমাদের অগণিত পূর্বজেরা গৌয়ের জন্য নিজের প্রাণ দিয়ে দিয়েছে। আজকেও এক সত্য হিন্দু আবশ্যকতা পড়লে গৌয়ের জন্য নিজের প্রাণও দিতে হিচকিচাবে না। এই যুগেই শ্রী স্বামী করপাত্রী জী মহারাজের সঙ্গে গৌ রক্ষা আন্দোলনে ২৫হাজার সনাতনী জেল যাত্রা করে ফেলেছে। যেখানে এই সেবকও ছিল, তিন মহাত্মা জেলার আতনায় নিজের প্রাণও দিয়ে দিয়েছে। এখনও স্বামী করপাত্রী জী এই আন্দোলনে জেল আতনা ভুগছেন। যদি এই শাস্ত্রার্থের পুরোগম না হত তবে এই সেবকও হয়তো জেলে থাকতো। এই অবস্থাতে সনাতনীদের কোনো গ্রন্থে পূজ্য গৌ মাতার বিরুদ্ধ একটা শব্দও হতে পরে না। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩|৩|৩| এ লেখা আছে যে, "মহাস্ত্বেব গোর্মহিমা" গরুর মহত্ব হল অনেক বড়, এখন আপনার প্রশ্নের উত্তর শুনুন -
(১) স্বায়ম্ভুব মনু অনেক গোমেধ য়জ্ঞ করে। "সম্গমে" ধাতু হতে "মেধ" শব্দ তৈরি হয়। যার অর্থ হল, গৌয়ের সৎকার বা পূজা। "সর্বে দেবাস্থিতা দেহে"। (বৃহত্ পারাশরস্মৃতি) ৩|৩|৩| প্রমাণানুসারে গৌয়ের শরীরে তেত্রিশ কোটি দেবতাগণের নিবাস আছে। সুতরাং যে য়জ্ঞে গৌয়ের বিশেষ রীতিতে পুজন সৎকার হয় এমন য়জ্ঞকে "গৌ মেধ" বলা হয়। তাই আমাদের সকল পূর্বজ গৌ ভক্তির অনেক অনুষ্ঠান করতেন কারণ আমাদের গ্রন্থে "গাবো বিশ্বস্য মাতরঃ" অর্থাৎ গৌ হল বিশ্বের মাতা এমনটা ঘোষণা করা হয়েছে। মাংস শব্দের অর্থ কেবল লোক প্রসিদ্ধ পশু আদির রক্তের পর হয়ে থাকা - "রসাদরক্তম্ ততোমাম্সম্" দ্বিতীয় ধাতু অর্থাৎ গোশ্তই নয় বরং কাণ্ড আর ফলের গুদা এবং দুধ আদি তরল পদার্থের সার-ভাগ-রবড়ি, ক্ষীর, খোয়া আদিরও, এর অনেক অর্থ আছে। এইজন্য ভোজন প্রসঙ্গেও যেখানে "গো মাংস" শব্দ এসেছে, সেখানে গৌ হতে উৎপন্ন হওয়া দুগ্ধ, দই, মাখনাদি গব্য দ্বারা অভিপ্রায় হবে অথবা গব্য নির্মিত সারভূত পায়েস, ক্ষীর, রবড়ি আদির সঙ্গে অর্থ হবে। সংস্কৃত সাহিত্যে বৃক্ষ ফল আদির উর্ধভাগ, মধ্যভাগ, আর কঠিন ভাগকে ক্রমশঃ ত্বচা গুদের মাংস আর গুট্ঠলকে অস্তি নামেই স্মরণ করা হয়ে থাকে। হরড়ের বিষয়ে - শালীগ্রাম নিঘণ্টু পৃষ্ঠ ১১-৫২|| তে লেখা আছে যে - "সূক্ষ্মাস্থি মাম্সলা পথ্যা" অর্থাৎ যেখানে অস্থি গুট্ঠল সূক্ষ্ম হয় আর মাংস গুদা অধিক হয় সেটা হল শ্রেষ্ঠ, সুতরাং স্বায়ম্ভব মনু নিত্য গো পূজন করতেন। পাঁচ লক্ষ গাভীর গব্য দ্বারা নির্মিত ব্রাহ্মণদের তৃপ্ত করতেন। মূলে গৌ মাংস শব্দের বিশেষণ দ্বারাও আমার অর্থের পুষ্টি হবে। যেমন - "সাপূপম্" মালপোয়া সঙ্গে হত, তথা সেই গব্যতে চালের রন্ধন হত, যার সোজা তাৎপর্য হল যে গো দুগ্ধ নির্মিত ক্ষীর আর মাপোয়া দ্বারা ভোজন হত। বেদে স্পষ্ট লেখা আছে যে -
(ক) এতদ্হবৈ দেবানাম্ পরমম্ অন্নাদ্যম্।
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১১|৭|)
(খ) পরমন্নম্ তু পায়সম্ (অমর কোষ)
অর্থাৎ দেবতাদের অর্পণ করা মাংসকে "পরমান্ন" বলে।
(গ) ক্ষীরের অন্যতম নাম হল "পরমান্ন"। আশা করছি মহাশয় জী এখন কেবল মাংস শব্দ দেখে ভ্রমে পড়বেন না। আয়ুর্বেদে বর্ণন আছে যে অমুক ঔষধিতে "প্রস্থম্ কুবারিকা মাঁসম্" অর্থাৎ এক সের ভর্তি ঘী কুবারীর মাংস ঢালা হয়। এখন যদি আপনার মতো জ্ঞানী! কুমারী কন্যার সের ভর্তি মাংস - গোস্ত ঢালার ব্যবস্থা করে তো অনর্থ হয়ে যাবে।
(২) সত্যব্রত নামক যে ব্যাক্তির কথা বলে এখানে আক্ষেপ করা হচ্ছে বাস্তবে সে সেরকমই দুরাচারী ছিল যাকে বিকৃতাঙ্গ করে হিন্দু ধর্ম থেকে সর্বদা বহিষ্কৃত করে দেওয়া হয়েছিল। এটা "হরিবংশ পুরাণে" স্পষ্ট লেখা আছে। একই কশ্যপ ঋষির সন্তান - কেউ দেবতা তো কেউ দানব। একই পুলস্ত্যের নাতি - রাবণ আর বিভীষণ। এইপ্রকার সত্যব্রত, ঋষির হওয়ার পরেও দুর্ভাগ্যবশত পথ ভ্রষ্ট হয়ে "রাক্ষস" হয়ে যায়। পুরাণে দেব, দানব, মানব, সকলের সমুচিত আর দুশ্চরিত্রের বর্ণন আছে, যেখানে মনুষ্য ধর্ম অধর্মের পরিণাম জেনে পাপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক, সুতরাং যেমন রাবণের দুরাচারী হওয়ায় রাম ভক্তের উপর কোনো আক্ষেপ হতে পারে না, সেইভাবে সত্যব্রতের দুরাচারীর তাকে উগ্র দণ্ডদাতা সনাতনী ধর্মীদের উপর কোনো আক্ষেপ করা ব্যর্থই হবে। কারণ আমরা তো হলাম "রামাদ্বিতপ্রবর্তিব্যম্, ন রাবণাদিবত্" এর অনুসারে রামাদির অনুকরণকারী, রাবণ আদির নয়।

শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিত জী, আপনি পুরাণের উকিল, পুরাণ ১৮ বলে আর মানা হয়। শুনুন - "অষ্টাদশ পুরাণানাম্ কর্ত্তা সত্যবতী সুতঃ" আমি নিশ্চিত যে আপনি যে পুরাণের উকিল, সেই ১৮ পুরাণের নাম আপনি বলতে পড়বেন না। যদি বলতে পারেন তো বলুন। এটি হলো প্রথম পরীক্ষা, আমি নিশ্চয় পূর্বক বলবো যে শাস্ত্রার্থের অন্তিম সময় পর্যন্ত আমার এই প্রশ্নের উত্তর আপনি দিতে পারবেন না। ১৮ পুরাণের নাম কি কি?

পুরাণ কি বেদঅনুকূল ?

শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
বাঃ বাঃ!! "প্রথমে গ্রাসে ভক্ষিকা পাতঃ" অনেক বড়ো প্রশ্ন করেছেন আপনি। আমার শত গ্রন্থের নাম মনে আছে। আর ১৮পুরাণের নাম মনে রাখতে পারবো না? ১৮ নাম তো কোনো বাচ্চাও বলে দিবে। আমি ভেবেছিলাম, কোনো বড়ো ভারী প্রশ্ন আমার সন্মুখ আসবে, প্রশ্ন আসলো তো আসলো এটা যে ১৮ পুরাণের নাম কি? আমি বলছি শুনুন -
মদ্বয়ম্ ভদ্বয়ম্ চৈব ব্রন্নয়ম্ চ চতুষ্টয়ম্।
অনাপ লিম্গ কুস্কানি, পুরাণানি প্রথক্ প্রথক্।।
অর্থাৎ 'ম' থেকে দুই (মৎস্য আর মার্কণ্ডেয়) 'ভ' থেকে দুই (ভাগবত আর ভবিষ্য) 'ব্র' থেকে তিন (ব্রহ্ম, ব্রহ্মাণ্ড আর ব্রহ্মবৈবর্ত্ত) 'চ' থেকে চার (বরাহ, বায়ু, বামন আর বিষ্ণু) এইভাবে এটা ১১ পুরাণ হলো, বাকি সাত পুরাণের আদ্যক্ষর এই ভাবে যেমন, 'অ' থেকে অগ্নি 'ন' থেকে নারদ 'প' থেকে পদ্ম 'লিং' থেকে লিঙ্গ 'গ' থেকে গরুড় 'কূ' থেকে কূর্ম 'স্কম্' থেকে স্কম্দ এই আঠারো নাম পুরাণের এই শ্লোকে নেওয়া হয়েছে। ওখানে শিব পুরাণের নাম নেই, আর ভাগবত তিনটা আছে, কিন্তু তার মধ্যে কেবল একটার নামই এখানে আছে। আপনি আঠারো পুরাণের নাম বলুন? আমি তো বলে দিয়েছি।
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিত জী ! প্রশ্নটা আঠারো নাম মনে রাখার ছিল না। আমার প্রশ্নে রহস্য আছে, সেটা এই যে পুরাণ আঠারোটা নয়, আশ্চর্য এই যে - আপনি পুরাণের ঠেকেদার হয়েও এটা বলতে পারছেন না যে - আঠারো পুরাণ কি কি? তাদের নামগুলো কি কি? সেই রহস্যটা আমি জানি। আপনি জানেন না আর তাই আপনি আঠারো পুরাণের নাম বলতে পারবেন না। শুনুন এক রহস্য এটা হলো যে - যেখানে যেখানে আঠারো পুরাণের নাম গনা হয়েছে, সেখানে সেখানে নামের ভিন্নতা রয়েছে, কখনো শিব পুরাণ আঠারো পুরাণে গণা হয়, বায়ু পুরাণ নয়। আবার কখনো বায়ু পুরাণকে আঠারো পুরাণে গণা হয় তো শিব পুরাণ বাদ যায়। শিব পুরাণ আর বায়ু পুরাণ দুটোকেই যদি পুরাণ মানা যায় তো পুরাণ ১৮ নয় বরং ১৯ হয়ে যাবে। বলুন আপনি ১৮টির উকিল নাকি ১৯টির? আরও শুনুন শিব পুরাণে কি বলা হয়েছে -
"ষাড্বিম্শতি পুরাণাম্, মধ্যেত্স্যেকম্ শ্রুণোতি য়ঃ"
এখানে চব্বিশ পুরাণের উল্লেখ রয়েছে, বলুন! আপনি কোন কোন পুরাণের আর কত পুরাণের ঠেকেদার? আপনি আমাকে আঠারো পুরাণের নাম জিজ্ঞেস করছেন, আমি তো তার মধ্যে একটাকেও মানি না, আর এটাও মানি না যে পুরাণ আঠারোটা। আমার উদ্দেশ্য তো আপনার পুরাণ খন্ডন করা, সেটা এক হোক অথবা একশ, বা সেটা ১৮টা হোক অথবা ১৮০০টা।
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী -
ঠাকুর সাহিব, বোঝা গেলো আপনি পুরাণের নাম জানেন না। আপনি এটা জানেন না যে পুরাণ ১৯টা নয় বরং ১৮টাই। আপনি কোথাও পুরাণের সূচিতে "শিব-পুরাণ" এর নাম পড়েছেন আর কোথাও শিব পুরাণের নয় তো "বায়ু-পুরাণের" নাম পড়েছেন, তো আপনি ১৯টা পুরাণ ভেবে নিয়েছেন। ঠাকুর সাহিব পুরাণ তো আপনি আমার কাছে পড়ুন, আর আমার কাছে বুঝে নিন। শুনুন, "শিব পুরাণের বায়বীয় সংহিতার নামই বায়ু পুরাণ"। "বায়ু পুরাণ" কোনো পৃথক পুস্তক নয়।
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
বোঝা গেলো আপনি পুরাণের সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। না আপনি কখনো পুরাণ পড়ে-দেখেছেন। নিন, আমি আপনার পুরাণ জ্ঞানের পোল এখনই খুলে দিচ্ছি। আমার কাছে শিবপুরাণও আছে আর বায়ুপুরাণও, দেখুন এই নিন, শিবপুরাণের "বায়বীয় সংহিতার" নাম বায়ুপুরাণে নেই। এই বায়ুপুরাণ হলো সর্বথা স্বতন্ত্র গ্রন্থ। পুরাণকে বাস্তবে আমিই পড়েছি। আপনি তো কোথাও শুনেছেন। নিন, আরও এক রহস্যের কথা বলি, আঠারো গণনাতে ভাগবতের একটি পুরাণকে গণা হয়েছে কিন্তু ভাগবত হলো তিনটি, শ্রীমদ্ভাগবত দ্বিতীয় দেবী ভাগবত, শিব পুরাণে দেবী ভাগবতকেই "ভাগবত" গণা হয়েছে। এই প্রকারে পুরাণ আঠারো নয় ২১টা হয়ে গেলো। আপনার জ্ঞানে আরও ঝগড়া বাড়লো! এখানেই শেষ নয়! আজ আপনি বুঝবেন যে কার পালাতে পড়েছেন? পুরাণ তো আমিই পড়েছি। নিন, আরও এক ভাগবত শুনাচ্ছি, এখানে লেখা আছে - "শ্রীকৃষ্ণ জী পার্বতীর অবতার ছিল"। আপনি তো এযাবৎ তাকে বিষ্ণুর অবতারই মানেন। এখন আমার কাছ থেকে শুনুন! শিব জী পার্বতীকে বলছেন -
য়দি ত্বম্ মে প্রসন্নাসি, তদা পুম্স্ত্বমবাপ্নুহি।
কদাচিত্ পৃথিবী পৃষ্ঠে, য়াস্য়েsহম্ স্ত্রী স্বরূপতাম্।।১৬।।
য়থাহম্ তে প্রিয়ো ভর্তা ত্বম্ বৈ প্রাণ সমাঙ্গনা।
এতদেব গনো অভীষ্টম্ বিদ্যতে প্রার্থ্য মুবমম্।।১৭।।
দেব্য়ুবাচ ভবিষ্য়েsহম্ ত্বশ্রিয়ার্থম্ নিশ্চিত্তম্ পৃথিবী তলে।।১৮।।
পুঁরূপেণ মহাদেব বসুদেব গৃহে প্রভু।
কৃষ্ণোsহম্ মত্প্রিয়ার্থম্ স্ত্রী ভব ত্বম্ হি ত্রিলোচন।।১৯।।
বৃষভানোঃ সুতা রাধা স্বরূপাহম্ স্বয়ম্ শিবে।।২০।।
তাম্ রাধামুপসম্য়েমে কোsপি গোপো মহামুনে।
ক্লীবত্বম্ সহসা প্রায় শম্মোরিচ্ছা নুসারতঃ।।২১।।
অর্থাৎ - হে পার্বতী জী! যদি তুমি আমার উপর প্রসন্ন হও তো তুমি পুরুষ হও, আমি পৃথিবীতে কোথাও স্ত্রী হয়ে যাবো। যেমন আমি তোমার প্রেমপূর্ণ করি। সেরকম তুমিও আমার পতি হও এটা আমার কামনা। দেবী বললেন - আমি তোমার প্রেমের জন্য নিশ্চয় বাসুদেবের ঘরে জন্ম নিয়ে কৃষ্ণ হবো। শিব জী বললেন - আমি বৃষভানের ঘরে তার কন্যা রাধা হবো? সেই রাধাকে কোনো গোপ বিয়ে করেছে তো সে শিবের ইচ্ছানুসার নপুংসক হয়ে গেছে।
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী -
শ্রীমান ঠাকুর সাহিব, আপনি এটা কোন পুস্তক পড়ে শোনাচ্ছেন?
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
(হেসে...) শ্রীমান পণ্ডিত জী মহারাজ! এটা হলো সেই তৃতীয় ভাগবত। এর নাম হলো "মহাভাগবত মহাপুরাণ"।
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী -
ঠাকুর সাহিব, কৃপা করে এই পুস্তক আপনি আমাকে দিন, এই পুস্তক আমিও দেখিনি।
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
কেনো নয়, এই নিন। বাহ্! আপনি এটা ভালই বললেন। নিন আপনি নিশ্চয়ই দর্শন করুন।
(Note- সেই পুস্তককে শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী না কখনো দেখেছেন না শুনেছেন। পুস্তকটি দেখে অবাক হয়ে গেলেন। সম্পূর্ন সভাতে নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো।)
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী -
ঠাকুর সাহিব, এই পুস্তক আজ আপনি আমার কাছেই রাখুন, আজ একে দেখবো আর কাল এর উত্তর দিব।
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিত জী মহারাজ! কৃপা করে আমার পুস্তক শিগগিরই আমাকে ফেরৎ দিন, এর উত্তর তো আপনি তিন জন্মেও দিতে পারবেন না। আপনি শিগগির পুস্তক ফিরিয়ে দিন।
(Note- পুস্তক ফিরে আসলো। কিন্তু সম্পূর্ণ সভা আশ্চর্যতে পড়ে গেলো। চতুর্দিক নিঃস্তব্ধ ছেয়ে গেছে। আর্য সমাজী যুবক লম্ফোঝম্ফো করে জয় ধ্বনি দেওয়া শুরু করে। চতুর্দিক থেকে আওয়াজ আসতে থাকে বৈদিক ধর্মের - জয়। আর্য সমাজ - অমর হোক। বেদের জ্যোতি - জলতে থাকুক।)
(চলবে)

অনুবাদকঃ -আশীষ আর্য

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

अथर्ववेद 6/137/1

  एक वरिष्ठ वैदिक विद्वान् ने मुझे अथर्ववेद के निम्नलिखित मन्त्र का आधिदैविक और आध्यात्मिक भाष्य करने की चुनौती दी। इस चुनौती के उत्तर में म...

Post Top Ad

ধন্যবাদ