|
পাথরে খোদাই করা আল-লাতের প্রতিকৃতি |
আল্লা শব্দটি সংস্কৃত, হিন্দু পরম্পরায় দেবীকে বোঝায়। আল্লা আক্কা আম্বার তিনটি সমার্থক শব্দ। দেবী বা মাতার ক্ষেত্রে এই তিন শব্দ ব্যবহৃত হয়। "Gulf of Akkaba" নামকরণ এই জন্য হয়েছে যে ঐ সাগরতটি পৌরাণিক দেবীর বিশাল মন্দির ছিল, এবং এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান ছিল। সংস্কৃতে অল্লেশ্বরী দেবীর স্তোত্র আছে, পরে পরে আল্লোপনিষদ ও রচনা করা হয়েছে। চন্ডী, ভবানী, দূর্গা, অম্বা, পার্বতীর নাম আল্লাহ্।
যদিও মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহকে পুংলিঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে এটি মূল সংস্কৃতে একটি স্ত্রীলিঙ্গ শব্দ। এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও ইসলামী রীতিতে পাওয়া যায়। মুসলমানরা [या अल्ला ] "ইয়া আল্লাহ" বলে কিন্তু যদি আল্লাহ্ পুরুষবাচক তবে উচ্চারণ হওয়া উচিত ছিল "হে আল্লাহ" বা "ভো আল্লাহ"।
"ইয়া কুন্দেন্দু তুষারহার ধবলা
ইয়া শুভ্রাবস্ত্রাবৃতা
ইয়া বীণাবরদণ্ডমণ্ডিত করা
ইয়া শ্বেত পদ্মাসনা
ইয়া ব্রহ্মাচ্যুত শঙ্কর প্রভৃতিভিদৈর্বৈঃ"- এই সরস্বতী প্রসংসা এবং
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।"-দেবীর আরাধনা থেকে দেখা যায় যে সংস্কৃতে দেবীর জন্য ব্যবহৃত "ইয়া" শব্দটিকে ইসলামিক ঐতিহ্যে আল্লাহর স্মরণে "ইয়া আল্লা" বলা হয়। এ থেকে বোঝা যায় যে, প্রাচীন ইসলাম পূর্ব আরবের লোক দেবীকে আল্লাহ্ বলে ডাকত। ইসলাম পূর্বে আরব ও পেট্রাতে পৌরাণিক দেব-দেবীর পূজা প্রচলিত ছিল, নমুনা স্বরূপ আমরা [মিউকজিয়াম]। পৃথিবীর ইতিহাসে হাজার হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে আসছে। কম-বেশি অনেক দেশেই এসব প্রাচীন দেব-দেবীর মূর্তি এখনও দেখা যায়। এর আরেকটি কারণ আছে, শিবের স্ত্রী পার্বতীকে আল্লাহ্ বলা হতো। মুহাম্মদের পরিবার শিবের পূজারী হওয়ার কারণে, শিবের স্ত্রী পার্বতী ওরফে গৌরী ওরফে আল্লাহ্ ছিলেন মুহাম্মদের পরিবারের কুলস্বামিনী ছিলেন।
এ কারণেই আল্লাহ্ শব্দটি দিয়ে ইসলামী খোদার নির্দেশ চলতে থাকে। মুসলমানরা কিভাবে দেবীর নাম আল্লা পুংলিঙ্গ হিসেবে পেল তা নিয়ে যদি সন্দেহ করা হয়, তাহলে এর অনেক উত্তর হতে পারে। একটি উত্তর হল যে "আত্মা" শব্দটি সংস্কৃতে "পুংলিঙ্গ" হওয়া সত্ত্বেও হিন্দিতে এটি স্ত্রীলিঙ্গ হয়েছে। অর্থাৎ ভাষা পরিবর্তন করে উভয় ভাষায় একই শব্দের লিঙ্গ ভিন্ন হতে পারে।
দ্বিতীয় উত্তর হল, হাজার হাজার বছর পর আরবে পৌরাণিক কীর্তন বা প্রবচন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, ইসালামী নির্মম পথে চলার সময় দেব-দেবীর পূজা, আনাড়ি,গাঁবার, অসভ্য পন্ডিতদের হাতে চলতে চলতে লিঙ্গ ভেদ আদি মিটে পার্বতীর নির্দেশ আল্লা নাম পুরুষ হিসেবে গণ্য হতে শুরু হয়। মুহাম্মদের পূর্বে আল্লার পূজা হতো তার প্রমাণ স্বরূপ প্রাকইসলামী নিজেদের নামকরণে তারা আব্দুল্লাহ (অর্থাৎ, আল্লাহর বান্দা বা গোলাম) শব্দটি ব্যবহার করতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মুহাম্মাদের পিতার নাম ছিল (عبدالله ) আব্দুল্লাহ'। শিবলিঙ্গকে আরবীতে ""संगे अस्वद"" যার অর্থ "কালো পাথর" বলা হয়। অসবাদ সংস্কৃত "কালো" এর একটি বিকৃতি।
প্রাক-ইসলামী সৌদি আরব থেকে পাওয়া একটি পাথরের তৈরী গোমুখ লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা আছে। পৌরাণিক মতে এই ধরনের গো-মুখ থেকে জল নির্গত হলে পবিত্র বলে মনে করা হয়। প্রাক-ইসলামিক পৌরাণিক বা হিন্দু রীতিতে গরুকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। কোরআনের একটা আয়াতের নাম "বকর"-অর্থাৎ গাভী, যদিও এই আয়াতে গরুর কনো উল্লেখ নেই। বকর ইদ ও ছিল গরু পূজার দিন। বরক অর্থ গরু ও ঈদ (পূজা) যা বর্ত্তমানে গরু কে খাওয়ার উৎসবে পরিবর্ত্তন করেছে।
ইসালমিক নাম "আবুবকর" এর অর্থ গরুর রক্ষণ। সৌদিআরব থেকে প্রাক-ইসলামী সরস্বতী মূর্ত্তি ও নানা দেবদেবীর মূর্ত্তি লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা আছে। ইসালামী রীতিনীতি, উৎসব, উপবাস ইত্যাদি সবই প্রাচীন ইসালাম (অর্থাৎ মন্দির) ঐতিহ্য। মহাভারত যুদ্ধের আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ প্রায় ৩৮১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত) পৃথিবীতে সর্বত্র শুধু বৈদিক ধর্ম ছিল। তার পরে পরে জৈন মত থেকে মূর্তিপূজো খুব ভালোভাবে প্রচলন হয়েছিল। এরপর ইসলামের আগমনে, শিল্পের অবনতি হয়েছে, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা ধ্বংস করা হয়েছে। ইসলামী-লেখক সুলেমান নাদভি বলেছেন যে চারটি হিন্দি বা সংস্কৃত শব্দ কোরানে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন "অম্বর", "কস্তুরী", "অদরখ", "কপুর"। আরবি সাহিত্যে প্রায়শই ব্যবহৃত অন্যান্য ভারতীয় শব্দগুলি হল চন্দন, তাম্বুল, কানেরফুল, নিলোফার, বেল, জয়ফল, ত্রিফলা, বালিলা, হালিলা, কফস অর্থ তুলা।
অনান্য লেখ থেকে আমরা দেখতে পাই আল-লাত ইসলাম-পূর্ব যুগে মক্কাসহ সমগ্র আরব উপদ্বীপে দেবীর উপাসনা করা হতো। তাকে যুদ্ধ, শান্তি ও সমৃদ্ধির দেবী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সিংহ, গেজেল (হরিণ বিশেষ), অর্ধচন্দ্র এবং ঘনকাকৃতির পাথর হলো তার প্রতীক। এছাড়া সিংহ, গেজেল (হরিণ) এবং উট তার পবিত্র পশু হিসেবে বিবেচিত। এক হাতে খেজুর পাতাসহ সিংহের সাথে আল-লাতের প্রতিমূর্তি দেখা যায়। মূলত উত্তর আরবে এই দেবীর উপাসনা বেশি হতো। তবে মক্কার হেজাজ অঞ্চলেও তার উপাসনা হতো এবং এই চর্চা সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আরবের সংস্কৃতিতে বর্ষগণনা মূলত চন্দ্রকেন্দ্রিক। তাই আল-লাতের একটি প্রতীক চাঁদ। তাকে তিন দেবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ধরা হতো। তার প্রধান উপাসনা কেন্দ্র ছিল তায়েফের পালমিরাতে। সেখানে এটি 'লেডি অব দ্য টেম্পল' হিসেবে পরিচিত ছিল। তাকে গ্রিক দেবী এথেনা এবং রোমান দেবী মিনার্ভার সাথে তুলনা করা হতো।
ইসলামের প্রাচীন আমলে হুবাল বা চন্দ্র দেবতার মুর্তি কাবা ঘরে পাওয়া যায়। প্যাগান দেবতা হুবাল এবং মোহাম্মদের ইলাহ আল্লাহ হুবাল প্রাক ইসলামিক যুগের একজন পৌত্তলিক বা প্রকৃতি উপাস্য দেবতা বা ইলাহ। মক্কা নগরীর কাবাঘরে অবস্থিত ৩৬০টি দেবমূর্তির মাঝে মনুষ্যাকৃতির হুবালের মূর্তিও স্থাপিত ছিলো। হুবাল অনুসারীগণ তার সামনে রক্ষিত তীরের সাহায্যে দেবতার মতামত নিতো, তবে হুবাল সম্পর্কে খুব বেশী জানা যায় না। উত্তর আরবে প্রাপ্ত নবতাইয়া লিপিতে হুবালের কথা বর্ণিত আছে, কিন্তু হুবাল বিশেষ কোন ক্ষমতার (যেমন বৃষ্টির দেবতা বাআল) অধিকারী দেবতা ছিলেন, তা স্পষ্ট জানা যায় না। তবে তৎকালীন অনেকের বিশ্বাস ছিলো, হুবালের নির্দেশেই বাকি দেবতারা নিয়ন্ত্রিত। হুবালের উপাসনা এবং রক্ষনাবেক্ষণের ভার ছিলো মক্কার কুরাইশ বংশের উপর। একই কাবাঘরে একই সময়ে ভিন্নভিন্ন গোত্রের ভিন্নভিন্ন বিশ্বাসের ভিন্নভিন্ন দেবতার ভিন্নভিন্ন উপাসনার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও ছিলো, যদিও তাদের আচার-আচরণ, কৃষ্টি আলাদা ছিলো। তবে এইসব দেবমুর্তিগুলি মূলত আদিম মানুষের টোটেম বিশ্বাসের প্রাকৃতিক প্রতীক, আর তাদের সংক্ষিপ্ত গোত্র নীতিমালাকে বলা হতো টাবু, তাদের মুর্তির সাথে অধঃস্তন কোনো কোনো টোটেম বিশ্বাসীরা, সেটা তাদের বাহক একক বা সঙ্করাকৃতির প্রাণী বা হাতের বৃক্ষলতাফুল দেখে বোঝা যেতো। তারা বিভিন্ন আদিম রীতি-রেওয়াজ অনুসারেই দেবদেবীর সন্তুষ্টিলাভের বিশ্বাসে তাদের বিভিন্ন নামে আঞ্চলিকভাবে নিয়ম করে উপাসনা ব্রতপালন করতো, উৎসব পালন করতো, নর বা পশুবলীও দিতো।
|
ছবিতে মাঝে আল-লাত, ডানে আল-উজ্জা ও বামে মানাত |
এই ৩৬০টি দেবমূর্তির প্রধান হিসাবে আল-ইলাহ বা আল্লাহ নামেরও একটি মূর্তি ছিলো, প্রমাণ হিসাবে প্রাক-ইসলাম যুগের মুহাম্মদের বাবার নাম আব্দুল্লাহ বা আবদ আল্লাহ মানে আল্লাহর দাস। ধারণা করা হয়, হুবালকেই সর্বদেবতার নিয়ন্ত্রক হিসাবে আল্লাহ বলা হতো। যার তিনকন্যা উজ্জাম লাত ও মানাত-এর মূর্তি ছিলো সর্বাপেক্ষা বড়, যারা স্ব-স্বগুণের আধার হিসাবে পৌত্তলিক বিশ্বাসের বহুদেবদেবীর মতো পূজিত হয়ে আসছিলো হাজার বছর ধরেই। ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বদরের যুদ্ধে এই বহুদেবতা বিশ্বাসী কুরাইশ মূর্তিপূজারীগণ মুহাম্মদ-এর অনুসারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদ কাবাঘরের রক্ষিত হুবালসহ ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে ফেলেন।
হিশাম ইবনে আল কালবি লিখিত কিতাব "আল-আসনাম" থেকে জানা যায়, হুবালের মূর্তিটি আঁকা ছিলো যার ডান হাত ভাঙা এবং সেটা সোনার হাত দিয়ে প্রতিস্থাপিত।
কুরাইশদের একটি অংশ হুবাল বা আল্লাহর তিন কন্যা, প্রভাবশালী চন্দ্রদেবী, আল লাত (দীপ্তিমান চন্দ্র), আল মানাত (অন্ধকারাচ্ছন্ন চন্দ্র) এবং আল-উজ্জা (দীপ্তি আধিয়ার সমন্বিত চন্দ্র) - তাদেরও উপাসনা করতো।
উজ্জা হলো প্রাক-ইসলামিক যুগে কাবাঘরে সংরক্ষিত দেবতা মূর্তিসমূহের মধ্যে লাত, মানাত সহ তিনটি প্রধান দেবীমূর্তির মাঝে একটি। হুবাল দেবতার মতোই উজ্জাকেও সমৃদ্ধি ও কল্যাণের আশায় কুরাইশরা পূজা করতো। মক্কা বিজয়ের পর মুহাম্মদ-এর নির্দেশে খালিদ বিন ওয়ালিদ তার একটি অভিযানের মাধ্যমে নাখলা নামক স্থানে উজ্জার প্রতি উৎসর্গীকৃত একমাত্র মন্দির ও তার ভেতরে অবস্থিত উজ্জার দু'টি মূর্তিই ধ্বংস করে দেন।
মানাত হলো ইসলাম-পূর্ব যুগে মক্কায় পৌত্তলিকদের তিন প্রধান দেবীর অন্যতমা। আল লাত, উজ্জা ও মানাত এই তিন দেবীর মধ্যে মানাত সবচেয়ে প্রাচীন। মতান্তরে, মানাতকে হুবালের স্ত্রীও বিশ্বাস করে কেউ কেউ। প্রাচীন আরবগণ তাদের সন্তানদের নামকরণ আবদ মানাত এবং যায়িদ মানাত করতো। মানাতের মূর্তি কুদায়িদ-এর নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলে ছিল, যা মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থান। আরবগণ তাকে অর্চনা ও তার কাছে উৎসর্গ করতো। আউস, খাজ্রায, মক্কা-মদিনা ও তাঁর আশেপাশের নাগরিকরা তার পূজা করতো, তার কাছে বলি দিতো এবং তাকে নৈবেদ্য প্রদান করতো। আউস, খাজ্রায এবং ইয়াশ্রিবরা তীর্থযাত্রায় নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে নিশিপালন করতো, কিন্তু মস্তকমুণ্ডণ করতো না। তীর্থযাত্রার পরে তারা বাড়ি ফিরতো না বরং যেখানে মানাত পূজা হয়েছিল, সেখানে মস্তকমুণ্ডণ করতো এবং কিছু সময় অতিবাহিত করতো। মানাত দর্শন না করা পর্যন্ত তারা তীর্থযাত্রা অসম্পূর্ণ মনে করতো। বর্তমানে হজ্বগামী হাজ্বীদের যেমন মাথামুণ্ডণ করতে হয়।
মুহাম্মদের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত আরবগণ মানাতের পূজা করত। মানাতের মন্দির মুহাম্মদের নির্দেশে সাদ ইবনে যায়িদ আল আশহালি জানুয়ারি ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে ধ্বংস করেন।
লাত বা আল-লাত ছিল আরবের প্রাক-ইসলামী যুগের একজন দেবী। সে মক্কার তিনজন প্রধান দেবীর একজন। মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরীফের ৫৩ নম্বর সুরা নজমের ১৯ নম্বর আয়াত বা বাক্যে লাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, যা থেকে জানা যায় ইসলাম-পূর্ববর্তী সময়ে আরবের অধিবাসীগন মানাত ও উজ্জার সাথে লাতকেও ঈশ্বরের মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করতো। মতান্তরে, আল-লাত (ইলাহ) থেকেই আল্লাত বা আল-ইলাহ বা আল্লাহ নামের উৎপত্তি, সে ক্ষেত্রে আল্লাহ স্ত্রীবাচক এবং সেই পৌরাণিক দাবিই বেশি জোরালো।
"তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত এবং উজ্জা সম্পর্কে ? এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? তবে কি তোমাদের জন্য পুত্রসন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যাসন্তান? তাহলে এই বন্টন অসঙ্গত। এগুলো তো কেবল কিছু নাম যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছ, যার সমর্থনে আল্লাহ কোনো দলিল বা প্রমাণ প্রেরণ করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে পথনির্দেশ এসেছে।"-সূরা নজম (আয়াত: ১৯-২৩)
বর্তমানেও মূল আরবী “আল্লাহ্” শব্দটি বিভিন্ন ভাষায়
বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়। যেমন:
জাপানিজ: আরা, আর্রা, আর্রাফু।
রাশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান, বুলগেরিয়ান: আল্লাখ্।
সাইবেরিয়ান, বেলারুশিয়ান, ম্যাসিডোনিয়ান: আলাখ্।
মুহাম্মদ-এর নির্দেশে তায়েফ-এ আল-লাতের মন্দির গুড়িয়ে দেয়া হয়। তায়েফের পরাজিত গোত্রবাসীদের ক্ষমা করার পূর্বে, আল্লাতের মূর্তি ধ্বংস করার শর্ত দাবি করেছিলেন যুদ্ধজয়ী মুহাম্মদ।
উর্বরতার দেবী আল্লাত প্রাচীন কালে সারা বিশ্বে ভিনভিন্ন দেশে ভিন্নভিন্ন নামে পূজিত হতো। গ্রীসে - আফ্রোদিত, রোমে - ভেনাস, মেসোপটেমিয়ায় - ইশতার, ভারতে - মা কালী, আনাতোলিয়ায় - সিবেল এবং নর্স রুপকথায় - ফ্রিগা। এই ফ্রিগা বা ফ্রিগডে থেকেই ফ্রাইডে নামকরণ, যেই দিনকে ইসলাম পবিত্র এবং গুরুত্ববাহী জুম্মাবার ঘোষণা দিয়েছে, যার সাথে আল্লাতের সম্পৃক্ততা বিদ্যমান। এই দেবীর সাথে কালো পাথরেরও যোগ আছে। আজো সাইপ্রাসের পাফোসের নিকটে আফ্রোদিতের মন্দিরে একটি পবিত্র কালো পাথর সযত্নে রাখা আছে।
কাবা কথার অর্থ বর্গাকার বা চৌকোণা। ভবনের আকারের ভিত্তিতে উপাসনালয়/মন্দিরের নাম হয়েছে কাবা, যেমন ষাটটি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ ষাটগম্বুজ, তখন কাবার উপরে ছাদ ছিলোনা। ঐ সময়ে আরবে তিনটি কাবা বা দেব-দেবীর উপাসনার স্থান ছিল। মক্কার কাবা কালো পাথরের, আরবের দক্ষিনাঞ্চলের ঘাইমান শহরের কাবা লাল পাথরের এবং তাবালা শহরের কাছে অবস্থিত ছিল সাদা পাথরের কাবা।
মক্কার কাবা থেকে মোহাম্মদ একত্ববাদী ঈশ্বর প্রচারে বহুদেবতাবাদী ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে ফেললেও তাকওয়ার স্বার্থে হজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরখানা সরালেন না, যার সাথে প্যাগানদেবী আল্লাতের সম্পৃক্ততা আছে এবং এই পাথরও আল্লাতের সাথেই পূজিত হতো। এখনও হাজ্বীরা হজ্বে গিয়ে এই কালো পাথরে চুমু খেয়ে বিগতদিনের পাপমুক্ত হয়ে নিষ্পাপ নবজাতক হয়ে ওঠে বলেই বিশ্বাস করে।
ইসলাম-পূর্ব পৌত্তলিক যুগে প্রাচীন আরব ছিলো পশুপালন-নির্ভর অর্থনীতি, সে সময় দিনের বেলার প্রখর সুর্যের তাপের চেয়ে রাতের চন্দ্রালোককেই পশু চরানোর সুবিধাজনক সময় হিসাবে বেছে নিতো। তাই আরব্য বর্ষগণনা শুরু হয় চান্দ্র পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে, যা তাদের জীবন-জীবিকার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি তখনও শুরু হয়নি, কারণ কৃষিনির্ভর বর্ষগণনা সুর্যের ওপর নির্ভরশীল সৌরবর্ষ, এটাই বাকি বিশ্বজুড়েও স্বীকৃত। ফসলশূন্য মরু-আরবে চন্দ্রদেবীকে আলাদা আসনে বসানো হয়। মুহাম্মদ ইহুদী, যোরোস্ট্রিয়ান, খ্রিষ্টানদের ধর্ম থেকে একেশ্বরবাদ তত্ত্ব আমদানী করলেও আল্লাত নামক পৌত্তলিক চন্দ্রদেবীর প্রভাব সেই সংশোধিত আব্রাহামিক সংস্করণেও থেকে যায়। যার প্রমাণ ইসলামের বিভিন্ন নকশা অবকাঠামোয় কৃষকায় চন্দ্র প্রতীকের ব্যবহারপ্রীতি এবং কাবায় চান্দ্রদেবী সংশ্লিষ্ট হজরে আসওয়াদের পুনর্বহাল।
|
আল-উজ্জার ছবি |
পশুপালন নির্ভর আদিম সভ্যতায় উর্বরতা ও সমৃদ্ধির পৌত্তলিক প্রতীক - নারীর যোনী। তারা বিশ্বাস করে, নারীর যোনীই উৎপাদনের, সৃষ্টির, লালনপালনের, মাতৃত্ব ও মমতার প্রতিকৃতি। যারা হজ্বে গিয়েছেন তারা ভালো মতো লক্ষ্য করেছেন, হজরে আসওয়াদের আকৃতি পুরোপুরি নারীর যোনী আকৃতির। আরেকটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন, মুক্তযোনীমুখে ভুমিষ্ট উম্মুখ এক গোলাকার শিশুমাথা। প্যাগানদের বিশ্বাস ছিলো, আল্লাতের যোনিমুখের শিশুর মাথায় চুম্বন করে সকল পাপমুক্ত হয়ে নিষ্পাপ শিশুর মতোই নতুন জীবন শুরু করা যাবে।
আরও লক্ষ্য করলে দেখবেন, যোনীমুখটি পূর্বদিকে শীতের সকালের সুর্যোদয়মুখী করা, অর্থাৎ আরেক প্যাগান সুর্যদেবতার দিকে মিলনোম্মুখ, কারণ চান্দ্রদেবী আল্লাতের সকল কর্মকাণ্ড ছিলো সুর্যদেবতাকেন্দ্রিক। আরব প্যাগানদের বিশ্বাস মতে - শীতের সুর্য একেকটা নতুন সুর্য বা নতুন জীবনের প্রতীক। কারণ গ্রীষ্মের সুর্যের প্রখরতায় চারপাশ গাছপালা প্রাণী ছারখার হতে দেখে, নবোদ্দমে জেগে ওঠা শীতের সুর্যকেই তারা মঙ্গলবার্তাবাহী নতুনত্বে বিশ্বাস করে। তাহলে হজ্বের সময় পাপমুক্তির জন্য মুসলিম হাজ্বীদের হজরে আসওয়াদে চুম্বন মুলত পৌত্তলিকদের উর্বরতার প্রতীক চন্দ্রদেবী আল্লাতের প্রসবোম্মুখ যোনীমুখেই কি পবিত্র চুম্বন নয়? মক্কাকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করাও তৎকালীন পোরাণিক ও বৈদিক সাতফেরের ন্যায় আবিষ্কৃত ৫ টি গ্রহ এবং চন্দ্র-সুর্য নামাবলীর পৌত্তলিক দেবতার স্মরণেই নয় কি? এই সাত পাক প্রথাও আল্লাতের জন্মকুষ্ঠির সাথে সম্পৃক্ত। এই পৌত্তলিক সপ্তদেবতার নামানুসারে সপ্তাহের সাতদিনও নামাঙ্কিত। পৌত্তলিক শয়তানের দিকে পাথর মারা, সাফা মারওয়া দৌড়াদৌড়ি সেই পৌত্তলিক উপাসনারই মরুধর্মীয় বিবর্তনের ধারাবহিক বহিঃপ্রকাশ।
হ্যাঁ, এভাবেই পৌত্তলিকবিরোধী মুহাম্মদ একত্বাবাদী ধর্ম ইসলাম প্রচারে পৌত্তলিক ৩৬০ দেবতা এবং একেশ্বরবাদকে গুলিয়ে আল্লাত বা হুবালকেই সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছেন। তারপর সেই পৌত্তলিক নিদর্শনগুলো ধুলায় মিশিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন স্রেফ সংশ্লিষ্টতাগুলো আড়াল করার হীন মানসীকতা থেকেই। সেটা মুসার জিহোবা, যোরোস্ট্রিয়ানদের আহুর মাজদা কিংবা খ্রিষ্টধর্মের হোলি স্পিরিট বা গডের বিন্দুমাত্র ধারাবাহিকতা নয়। যদিও মোহাম্মদ একেশ্বরবাদীদের কাছে থেকে বহু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব ও পৌরাণিক গল্পগাথা ধার করেছেন, সেটা বিশাল পরিসরে সুযোগ পেলে বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখে। মোহাম্মদের কোরাইশী আল্লাহ, একত্বাবাদের মোড়কে পৌত্তলিকতারই প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র, প্রচলিত বিশ্বাসে পাপমুক্তির নামে আল্লাতের যোনিমুখে চুম্বনই চৌদ্দশত বছর যাবৎ তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে
📘বৈদিক বিশ্ব রাষ্ট্র কা ইতিহাস পুস্তক।।
📗The Rationalist Association of New South Walcs, 58 Regent Street, Chippendale, N.S.W.2008 Australia পুস্তিকা।।
📕"Origines"-Sir William Drummond.
📘"Meeca The Sacred and Medina The Radiant"-Emil Esin
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ