তস্মাদ্যজ্ঞাৎ সূর্বহুত ঋচঃ সামানিজজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজু স্তস্মাদজায়ত।। যজুৃবেদ-৩১/৭
পদার্থ- (তস্মাৎ) সেই ( যজ্ঞাৎ) ঈশ্বর হইতে,[ য়জ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ শ০ ব্রা০-১/১/২/১৩] য়জ্ঞঃ বিষ্ণু,ব্যাপক ঈশ্বর হইতে ( সর্বহুতঃ) সর্ব পূজিত ( ঋচঃ) ঋগ্বেদ ( সাসানি) সামবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( ছন্দাংসি) অর্থবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( যজুঃ) যজুর্বেদ ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( অজায়ত) উৎপন্ন হয়।
টীকা-
ছন্দ=গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ বলা হয়েছে-"অথর্বণা চন্দ্রমা দৈবতং তদেব জ্যোতিঃ সর্বাণি ছন্দাংসি আপস্থানম্" অর্থাৎ অর্থব্বেদের চন্দ্রমা দেবতা, তিনি জ্যোতি,সমস্ত প্রকারের ছন্দ এবং জলের স্থান। এখানে সমস্ত প্রকারের ছন্দ স্পষ্ট করে দেয় যে,অথর্ব্বেদ ছন্দময়। অথর্ব্বেদের ভাষ্যকার ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী তাঁর অথর্ব্বেদভাষ্যভূমিকা'য় বলছেন-অথর্ব্বেদের আরেক নাম "ছন্দ" এর অর্থ আনন্দদায়ক,অর্থাৎ তাহার মধ্যে আনন্দদায়ক পদার্থের বর্ণনা রয়েছে। চান্দেরাদেশ্চ ছঃ [ উঃ ৪/১৯]। ইতি চদু আহ্লাদে-আসুন, চস্য ছঃ। চন্দয়তি আহ্লাদয়তীতে ছন্দঃ]। পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীর অনেক মূত্রে "ছন্দ" কে বেদের অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে,যথাঃ "ছন্দাংসি লুঙলঙলিট" [ পা০ ৩/৪/৬] অর্থাৎ বেদে ধাতু সম্বধীয় অর্থে ধাতুর সাথে লুঙ, লঙ লিট প্রত্যয় হয়। অনেকে বলে যে, পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান চিলো না এজন্য অথর্ব্বেদ অর্বাচীন। এটাও তাদের ভ্রম, কেননা যেই প্রকার শাকলাদি শাখার নামে ঋগ্বেদ প্রসিদ্ধ সেই প্রকার শৌকনাদি সংহিতার নামে অথর্ব্বেদ প্রসিদ্ধ। পাণিনি মুনি "শাকলাব্ধ" [ পা০ ৪/৩/১২৮] এবং "শৌনকাদিভ্যচ্ছন্দসি" [ পা০ ৪/৩/১০৬] এই দুই সূত্রে ঋগ্বেদ এবং অথর্ব্বেদের দুটি শাখার উল্লেখ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান ছিলো।।
#বঙ্গানুবাদ-সেই সর্বপূজ্য পরমাত্মা হইতে ঋগ্বেদ,সামবেদ,অথর্ব্বেদ ও যজুর্বেদ উৎপন্ন হইয়াছে। সমগ্র বেদ মধ্যে মহান ঈশ্বরের মহিমার পরম প্রকাশ।
#ভাবার্থ-যাহা হইতে চারিবেদ উৎপন্ হইয়াছে তিনিই উপাস্য। প্রতি সৃষ্টির প্ররম্ভে মানব জাতির শৈশবাবস্থায় পরমাত্মা উপদেষ্টা ও রক্ষকরূপে পূর্ব জন্মের সুকৃতি সম্পন্ন ঋষিদের স্বচ্ছ হৃদয়ে বেদ বাণী প্রেরণা দান করেন। ইহাই নৈমিত্তিক জ্ঞান। ইহার গবেষণাতেই মানবের শিক্ষা সভ্যতার জন্ম হয়। শুধু সহজাত জ্ঞান দ্বারা মানবের সভ্যতার বিকাশ হইতে পারে না। তাই অপৌরুষেয় জ্ঞান বা ঈশ্বর প্রদত্ত বেদ বাণীর প্রয়োজন হয়।।
পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে,
" চতুর্থ্যর্থে বহুলং ছন্দসি "
(অঃ২। পা ৩।সূ ৬২)
অর্থাৎ ব্রাহ্মণ শব্দ দ্বারা ঐতরেয় আদি ব্যাখ্যান গ্রহন হয়, এবং ছন্দস শব্দ দ্বারা মন্ত্র মূল বেদের গ্রহন হয়ে থাকে। এই জন্য এই সূত্রে ছন্দঃ গ্রহন করা হয়েছে [ছন্দাংসি] বেদ বিষয়ে [চতুর্থ্যয়ে] চতুর্থ বিভক্তির অর্থে ষষ্ঠী বিভক্তি হয় [বহুলং] বহুল করে।
ব্রাহ্মণগ্রন্থ যে বেদ সঙ্গা প্রাপ্ত হতে পারে না, তার অন্যতম কারন এই যে, " ইষে ত্বোজে ত্বেতি " শতপথঃ কাং ১।অঃ ৭। " ইত্যাদি বেদ মন্ত্রসকলের "প্রতীক" ধরে ব্রাহ্মণগ্রন্থে বেদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্র সংহিতাই ব্রাহ্মণগ্রন্থের একটিও প্রতীক কোন স্থানে দেখা যায় না। অতএব ঈশ্বরোক্ত রূপ যে, মূল মন্ত্র অর্থাৎ চারটিই সংহিতা আছে তাই বেদ, ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ নয়।। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদের ব্যখ্যান গ্রন্থ।স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী নিরুক্ত, পূর্বমীমাংসা এবং শতপথ আদি গ্রন্থের উপর গভীর দৃষ্টি দ্বারা আলোকপাত করে বলেছেন বেদের মধ্যে প্রযুক্ত শব্দ যৌগিক, রূঢি নয়। এই জন্যই বেদের মধ্যে ইতিহাস সম্ভব নয়।
বিখ্যাত টীকাকার হরদত্ত তাই বলেছেন "কৈশ্চিন্মন্ত্রাণামেব বেদত্বমাখ্যাতম্ (আশ্রিতম্)" অর্থাৎ-- 'অনেক প্রাচীন আচার্য শুধু মন্ত্রকেই বেদ মেনেছেন' অর্থাৎ প্রাচীন আচার্য্যের মতে মন্ত্রেরই কেবল মূখ্য বেদত্ব সিদ্ধ, ব্রাহ্মণের নয়, এটা সুনিশ্চিত হয়ে যায়।
মহাভাষ্যকার এটা স্পষ্ট করে বলেছেন যে,
এছাড়া মহাভাষ্যকার পতঞ্জলি বলেছেনঃ
सप्तद्वीपा वसुमती । त्रयो लोकाः । चत्वारो वेदाः । साङ्काः सरहस्याः । १ ।१।१॥
এখানে পতঞ্জলি জী ঈষ্ অর্থাৎ উপনিষদকে বেদ থেকে আলাদা বলে মনে করেন। উপনিষদ আদি ব্রহ্মণ ভাগ বেদ থেকে পৃথক এবং বেদ নয়, তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থকে বেদ হিসাবে বিবেচনা করা অজ্ঞতা।
ব্রাহ্মণনাম কর্মণস্তত্মন্ত্রাণাংচাং ব্যাখ্যানগ্রন্থ
(তৈত্তিরীয় সংহিতা ১.৫.১)
অর্থাৎ মন্ত্র সংহিতার ব্যাখ্যা করার জন্য যে গ্রন্থ লিখা হয়েছে তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ।
ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ না
|
তৈত্তিরীয় সংহিতা ১।৫।১ |
"वेद का अपर नाम ब्रह्म है।" शतपथ 7.1.15ব্রহ্ম বৈ মন্ত্র: অতএব, বেদ মন্ত্রগুলির ব্যাখ্যা উপস্থাপনকারী গ্রন্থগুলি ব্রাহ্মণ্য বিশেষ্য।" 'ব্রহ্ম' শব্দটিও এই ভিত্তিতে মন্ত্রগুলির ব্যাখ্যা ছাড়াও, যজ্ঞে তাঁর উপযোগিতা এবং আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা উপস্থাপনের জন্য তাঁকে ব্রাহ্মণ হিসাবেও মনোনীত করা হয়েছে।
|
গোপথ ব্রাহ্মণ পূ০ ২।৯ |
দেখুন গোপথ ব্রাহ্মন থেকে যেখানে বেদ বিষয়ে লেখা আছে.. লাল দাগ দেওয়া অংশ দেখুন.. ব্রাহ্মণ গ্রন্থে ঋগ্বেদের উল্লেখ অর্থাৎ এটা প্রমাণ হয় না কি এটা বেদ পরবর্তী কালে রচিত হয়েছে। যেমন মহাভারতে রামায়ণের উল্লেখ পাবেন.. রামায়নে মহাভারত নিয়ে লেখা পাবেন না
|
গোপথ ব্রাহ্মণ পূ০ ২।১০ |
গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বভাগ ২।১০ লিখিত আছে...
" এবমিমে সর্বে নির্মাতাঃ সকল্পাঃ সরহস্যাঃ সব্রাহ্মণাঃ সোপনিষৎকা সেতিহাসাঃ সান্বাখ্যানাঃ
সপুরাণাঃ সস্বরাঃ সসংস্কাসনিরুক্তাঃ সানুশাসনাঃ সানুমার্জনাঃ সভাকোবাক্যাঃ " সরহস্যাঃ সব্রাহ্মণাঃ সোপনিষৎকাঃ
ব্রাহ্মণকার বলেছেন (১)কল্প (২) রহস্য (৩) ব্রাহ্মণ (৪) উপনিষদ (৫) ইতিহাস (৬) অন্বাখ্যান (৭) পুরাণ (৮) স্বর [গ্রন্থ] (৯) সংস্কার [গ্রন্থ] (১০) নিরুক্ত (১১) অনুশাসন (১২) অনুমার্জন এবং (১৩) বাকোবাক্য আদি গ্রন্থ বেদ নয়।।
ইহা বেদার্থের সহায়তার জন্য রচিত হয়েছে। ব্রাহ্মণকার স্বয়ং এগুলোকে বেদ মানেন না।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী "অনুভ্রমোচ্ছেদন" গ্রন্থে লিখেছেন ঐতরেয় আদি ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদের ব্যাখ্যান গ্রন্থ। "ब्रह्मणां वेदानामिमानि व्याख्यानानि ब्राह्मणानि। अर्थात् शेष भूतानि सन्तीति।
গোপথ ব্রাহ্মণ পূর্বভাগ ২।১৬
" চত্বারো বৈ ইমে বেদা ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদো ব্রহ্মবেদ ইতি "- এখানে ব্রাহ্মণ নিজে বলেছেন ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বেদ চার ।
বিঃদ্রঃ
এই কান্ডিকায় অথর্ববেদ কে ব্রহ্মবেদ বলা হয়েছে, রচনা কৌশলের জন্য। তাই অনেকে বেদ কে
ত্রয়ী বলে থাকেন।
ছন্দ, অথর্বাঙ্গিরস ও ব্রহ্মবেদ এগুলি অথর্ব বেদেরই নাম।
হিরণ্য শব্দে জ্যোতি ও বিজ্ঞান বুঝায়, এজন্য যাঁহার গর্ভ অর্থাৎ স্বরূপ ও সামর্থ মধ্যে জ্যোতি অর্থাৎ অমৃত বা মোক্ষ বিদ্যমান অথবা জ্যোতি অর্থাৎ প্রকাশ স্বরূপ সূর্য্যাদি লোক যাঁহার গর্ভে স্থিত রহিয়াছে; কিংবা জ্যোতি অর্থাৎ জীবাত্মা যাঁহার গর্ভে অর্থাৎ সামর্থ্য মধ্যে রহিয়াছে; অথবা হিরণ্য শব্দে যশঃ, সৎকীর্ত্তি ও ধন্যবার বুঝায়; এজন্য যশ ও সৎকীর্ত্ত্যাদি যাঁহার স্বরূপে বিদ্যমান রহিয়াছে; অথবা জ্যোতি বা ইন্দ্র অর্থাৎ সূর্য্য, বায়ু ও অগ্নি যাঁহার সামর্থ্য মধ্যে অবস্থান করে, এরূপ পরমেশ্বর / হিরণ্যগর্ভ হতে বেদ জ্ঞান প্রকাশিত হয়েছে [বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২.৪.১০] হিরণ্যগর্ভ [শতপথ ব্রাহ্মন ৬।৭, ১৪।৭, ১০।৪, নিরুক্ত ১২।২৫]
ব্রাহ্মণগ্রন্থ কদাপি বেদ হইতে পারে না; যে হেতু ব্রাহ্মণগ্রন্থকেই ইতিহাস, পুরাণ, কল্প, গাথা ও নারাশংসী বলা যায়। ব্রাহ্মণগ্রন্থ ঈশ্বরকৃত নহে, পরন্তু ইহা মহর্ষিগণ কর্ত্তৃক বেদের ব্যাখ্যান স্বরূপ লিখিত হইয়াছে। কাত্যায়ন ভিন্ন অন্য কোন ঋষি, ব্রাহ্মণগ্রন্থকে বেদ বলিয়া সাক্ষী দেন না। ব্রাহ্মণ গ্রন্থে যে ইতিহাস পাওয়া যায় তা কেবল ঋষিদের ইতিহাস। ভিডিও 👉 দেখুন [ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩৩।৬ এর ইতিহাস থেকে বৈজ্ঞানীক ভাষ্য ]
ব্রাহ্মণগ্রন্থ দেহধারী পুরুষ কর্ত্তৃক রচিত বলিয়া কদাপি বেদ সংজ্ঞা প্রাপ্ত হইতে পারে না। মন্ত্র সংহিতা (স্বয়ং) ঈশ্বর কর্ত্তৃক রচিত ও সকল প্রকার বিদ্যার মূল স্বরূপ বলিয়া ইহাকে বেদ বলা হয় [শ০কাঃ ৮ অঃ১, ১।৭, ৭।৫, ৩।৭.. অথর্ব্ববেদ ২।২।৬১]।।
ব্রাহ্মণগ্রন্থ সকল যে বেদ সংজ্ঞা প্রাপ্ত হইতে পারে না, তাহার অন্যতম কারণ এই যে "ইযেত্বোর্জেত্বেতি" [শঃ১।৭] ইত্যাদি বেদ মন্ত্র সকলের প্রতীককে ধরিয়া ব্রাহ্মণগ্রন্থে বেদের ব্যাখ্যান করা হইয়াছে; পরন্তু মন্ত্রভাগরূপ সংহিতায় ব্রাহ্মণগ্রন্থের একটিও "প্রতীক" কোন স্থানে দেখা যায় না। ‘ब्राह्मणं नाम कर्मणस्तन्मन्त्राणां व्याख्यानग्रन्थः’ [তৈতরীয় সংহিতা ১।৫।১]- ব্রাহ্মণ গ্রন্থের অতিরিক্ত নাম হল ইতিহাস, পুরাণ, কল্প, গাথা এবং নারাশংসী। মন্ত্র সংহিতার ব্যাখ্যা করার জন্য যে গ্রন্থ লিখা হয়েছে তাই ব্রাহ্মণ গ্রন্থ। এই ব্রাহ্মণ গ্রন্থে দেবসুর অর্থাৎ দেবতা (পণ্ডিত) অসুর (মূর্খ) উভয়েই যুদ্ধের জন্য বর্ণনা- ইত্যাদি গল্পের অংশ পাওয়া যায়, এর ইতিহাস নামকরণ করা হয়েছে।
"পুরাণপ্রোক্তেষু ব্রাহ্মণকল্পেষু।"-(অষ্টাধ্যায়ী ৪.৩.১০৫) অর্থাৎ পুরাণতথা পুরাতন ঋষিরা ব্রাহ্মণ প্রোক্ত তথা রচনা করেছেন। "গাথা ইতিহাসা পুরাকল্পশ্চ ব্রাহ্মণান্যেচ"-(শতপথ ১৪.৭.২.১১,১২,১৩)
অর্থাৎ গাথা, ইতিহাস, পুরাণ এইসব নিয়ে ব্রাহ্মণ রচিত।
মীমাংসাসূত্রে বলা হয়েছে-
"তচ্চোদকেষু মন্ত্রাখ্যা শেষে ব্রাহ্মণশব্দ"-(পূর্বমীমাংসা ২.১.৩৩)
অর্থাৎ ঈশ্বর কৃত মন্ত্র পরে যেসকল শব্দ রচিত হয়েছে ব্যখ্যা হিসেবে তা হল ব্রাহ্মণ।
প্রাচীন বেদভাষ্যকার ভাস্কর তৈত্তিরীয় সংহিতার ভাষ্যে বলেছেন একই কথা-
ব্রাহ্মণ নাম কর্মণস্তন্মন্ত্রাণাং চ ব্যাখ্যানগ্রন্থ-(তৈত্তিরীয় সংহিতা ১.৫.১)
অর্থাৎ বেদ তথা মন্ত্র সংহিতার ব্যাখ্যানগ্রন্থ ই হল ব্রাহ্মণ।
ঋষি গৌতমও ন্যায়সুত্রে একই কথা বলেছেন-
তদপ্রামাণ্যমনৃণব্যাখ্যাতপুনরোক্তদোশেভ্য
(২.১.৫৬) অর্থাৎ এই প্রামাণ্য মন্ত্রবেদের শেষে ব্যাখ্যানরুপ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ পুনরায় লেখা হয়েছে বা উক্ত হয়েছে।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কি ভিডিও তে👉
দেখুন
এবং আর একটি মন্ত্রে স্পষ্ট বেদ কে নিত্য বলা হয়েছে
"তস্মৈ নূনমভিদ্যবে বাচা বিরূপ নিত্যয়া"
ঋগবেদ ৮.৭৫.৬
" অত এব চ নিত্যম;তু নিত্য।"
সেহেতু কল্পান্তরে তো এটা স্বাভাবিক যে, অপৌরুষেয় নিত্য বাণীতে কোন মনুষ্যের জীবনকাহিনী বা ইতিহাস থাকবে না। কারণ ইতিহাস তো কোন ব্যক্তির জন্মের পর তার জীবনের কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়ে থাকে। আর কল্পান্তরে ইতিহাস কখনো এক থাকে না এজন্য ইতিহাস সর্বদা অনিত্য। যেহেতু বেদ সর্বদা নিত্য , তাই অনিত্যাদি ইতিহাস যুক্তগ্রন্থ বেদ হতে পারে না।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ নয় পরন্ত তার ব্যাখ্যাস্বরূপ লিখিত হয়েছে। এরূপ অনেক বেদ মন্ত্রের ব্যাখ্যা ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থে পাওয়া যায়। বেদে কোন ব্রাহ্মণ গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায় না, পরন্তু ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বেদের উল্লেখ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদের পরবর্ত্তী কালে রচিত হয়েছে।
যেমন- ঋগবেদ ১।২৪।৩ এর ব্যাখ্যা ঐতেরীয় ব্রাহ্মণ ১।১৬ মধ্য, যজুর্বেদের ১ম মন্ত্রের ব্যাখ্যা শতপথ ১।৭।১ এ, তথা সামবেদ ১ম মন্ত্রের ব্যাখ্যা তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ১১।২।৩ এর মধ্যে।
ঋষি অরবিন্দের মতেও এটা স্পষ্ট যে, বেদ মন্ত্র কোন ইতিহাসাদির বর্ণনা করে নি। বরং মন্ত্রগুলোর একটা উচ্চ আধ্যাত্মিক অর্থ রয়েছে এটাই তিনি স্বীকার করেছেন।
মন্ত্রসংহিতা ই একমাত্র ব্রহ্ম প্রেরিত বাণী তা স্বয়ং বেদ নিজেই বলছে-
প্র নুনং ব্রহ্মণ স্বতির্মন্ত্রং বদত্যুক্তম (যজুর্বেদ ৩৪। ৫৭)
অর্থাৎ ব্রহ্ম স্বয়ং মন্ত্রের উপদেষ্টা।( ব্রাহ্মণ এর নন )
বেদোৎপত্তির বিষয়ে আমরা যেসব তথ্য পাই সেক্ষেত্রে বেদ কে অপৌরুষেয় এবং নিত্য বলা হয়েছে। এবং বেদ কি কি তাহা স্পস্টতঃ বলা হয়েছে। সেখানে ব্রাহ্মণ গ্রন্থের কোন উল্লেখ নেই। যেমনঃ
তস্মাৎ যজ্ঞাত্ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাৎ যজুস্তস্মাদজায়ত।।
(ঋঃ ১০।৯০।৯, যজুঃ ৩১।৭, অথর্বঃ ১৯।৬।১৩)
অর্থাৎ সেই পূজনীয় এবং সবার গ্রহনযোগ্য পরমেশ্বর হতে ঋগবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ উৎপন্ন হয়েছে।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থে কোন মন্ত্র অংশ নেই, উদাঃ শতপথ ব্রাহ্মণ কান্ড, অধ্যায়, ব্রাহ্মণ অংশে বিভক্ত। যদি বেদ হতো তাহলে এখানে বেদের ন্যায় মন্ত্র অংশ পাওয়া যেত।
পদার্থ- (তস্মাৎ) সেই ( যজ্ঞাৎ) ঈশ্বর হইতে,[ য়জ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ শ০ ব্রা০-১/১/২/১৩] য়জ্ঞঃ বিষ্ণু,ব্যাপক ঈশ্বর হইতে ( সর্বহুতঃ) সর্ব পূজিত ( ঋচঃ) ঋগ্বেদ ( সাসানি) সামবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( ছন্দাংসি) অর্থবেদ ( জজ্ঞিরে) উৎপন্ন হয় ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( যজুঃ) যজুর্বেদ ( তস্মাৎ) তাহা হইতে ( অজায়ত) উৎপন্ন হয়
।-যজুঃ ৩১।৭
টীকা-ছন্দ=গোপথ ব্রাহ্মণের পূর্বভাগ ১/২৯ এ বলা হয়েছে-"অথর্বণা চন্দ্রমা দৈবতং তদেব জ্যোতিঃ সর্বাণি ছন্দাংসি আপস্থানম্" অর্থাৎ অর্থব্বেদের চন্দ্রমা দেবতা, তিনি জ্যোতি,সমস্ত প্রকারের ছন্দ এবং জলের স্থান। এখানে সমস্ত প্রকারের ছন্দ স্পষ্ট করে দেয় যে,অথর্ব্বেদ ছন্দময়। অথর্ব্বেদের ভাষ্যকার ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী তাঁর অথর্ব্বেদভাষ্যভূমিকা'য় বলছেন-অথর্ব্বেদের আরেক নাম "ছন্দ" এর অর্থ আনন্দদায়ক,অর্থাৎ তাহার মধ্যে আনন্দদায়ক পদার্থের বর্ণনা রয়েছে। চান্দেরাদেশ্চ ছঃ [ উঃ ৪/১৯]। ইতি চদু আহ্লাদে-আসুন, চস্য ছঃ। চন্দয়তি আহ্লাদয়তীতে ছন্দঃ]। পাণিনীর অষ্টাধ্যায়ীর অনেক মূত্রে "ছন্দ" কে বেদের অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে,যথাঃ "ছন্দাংসি লুঙলঙলিট" [ পা০ ৩/৪/৬] অর্থাৎ বেদে ধাতু সম্বধীয় অর্থে ধাতুর সাথে লুঙ, লঙ লিট প্রত্যয় হয়। অনেকে বলে যে, পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান চিলো না এজন্য অথর্ব্বেদ অর্বাচীন। এটাও তাদের ভ্রম, কেননা যেই প্রকার শাকলাদি শাখার নামে ঋগ্বেদ প্রসিদ্ধ সেই প্রকার শৌকনাদি সংহিতার নামে অথর্ব্বেদ প্রসিদ্ধ। পাণিনি মুনি "শাকলাব্ধ" [ পা০ ৪/৩/১২৮] এবং "শৌনকাদিভ্যচ্ছন্দসি" [ পা০ ৪/৩/১০৬] এই দুই সূত্রে ঋগ্বেদ এবং অথর্ব্বেদের দুটি শাখার উল্লেখ করেছেন। এ থেকে স্পষ্ট যে পাণিনি মুনির অথর্ব্বেদের জ্ঞান ছিলো।।
ব্রাহ্মণের শেষাংশের নাম আরণ্যক। আর সংহিতা বা আরণ্যকের অংশ হিসাবে থাকে উপনিষদ।
ভিন্ন ভিন্ন ব্রাহ্মণের ভিন্ন ভিন্ন আরণ্যক। যেমন ঋগ্বেদীয় ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ঐতরেয় আরণাক, কৃষ্ণ যজুর্ব্বেদীয় তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের তৈত্তিরীয় আরণ্যক, শুরু যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণের বৃহদ্ আরণ্যক ইত্যাদি।
প্রত্যেক বেদে দুইটি বিভাগ বর্তমান, মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ –“মন্ত্রব্রাহ্মণয়োর্বেদ বৈশিষ্ট্য— নামধেয়ম"। মন্ত্র বলিতে বুঝায় যাহার দ্বারা মনন করা যায়। (মন্ত্রা: মননাৎ ) মন্ত্রগুলি হইতেই মননকারিগণ অধ্যায় ও আধিদৈবাদি বিষয় চিন্ত। করেন।
“ তেভ্যো হি অধ্যাত্মাধিদৈবিকাদি মন্তারো মন্যন্তে তদেষা মন্ত্রত্বম" (৭।১।১১)”। মন্ত্রভাগের অপর এক নাম সংহিতা। আর শ্রুতি নিজেই যে অংশে নিজের অপ্রকাশিত অর্থ ব্যক্ত করিয়াছেন ও সংহিতার প্রয়োগাদি প্রদর্শন করিযাছেন, সেই বেদাংশকে বলা হয় ব্রাহ্মণ। বিধি বা কর্মচোদনাই হইল ব্রাহ্মণ । “কর্মচোদনা ব্রাহ্মণানি।” অনেকে বলেন, ত্রিবেদজ্ঞ ঋত্বিক ব্রহ্ম। যে বেদভাগের সাহায্যে স্বীয় কর্তব্য সম্পাদন করিতেন, তাহারই নাম ব্রাহ্মণ।
প্রতি বেদেরই ব্রাহ্মণগ্রন্থ আছে। যেমন, (১) ঋগ্বেদের ব্রাহ্মণ—ঐতরেয়
কৌষীতকি সাঙ্থায়ন,
(২) যজুর্বেদেব ব্রাহ্মণ – শতপথ.. তৈত্তিরীয়।
(৩) সামবেদের ব্রাহ্মণ-তাণ্ড্য, ষডবিংশ.. সামবিধান.. আর্ষেয়, দেবতাধ্যায়..মন্থব্রাহ্মণ, সংহিতোপনিষৎ বংশ ব্রাহ্মণ।
(৪) অথর্ববেদের ব্রাহ্মণ গোপথব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণসাহিত্যের ঋষিবা যজ্ঞাষ্ঠানকে অধিক প্রাধান্য দিয়াছেন। যজ্ঞানুষ্ঠানের নিয়মাবলী বিস্তৃতভাবে বিধৃত হইয়াছে ব্রাহ্মণসাহিত্যে। যজ্ঞে কি করণীয় এবং কি বর্জনীয়, করণীয় অন্তষ্ঠানের স্বফল এবং বর্জনীয় অনুষ্ঠানের কুফল সম্বন্ধে বক্তব্যাদি সুন্দরভাবে আধৃত হইয়াছে ব্রাহ্মণসাহিত্যে। মন্ত্রের দুরতিক্রমণীয় প্রভাবও পরিলক্ষিত হয় সেখানে। অনেকের মতে, ঋগ্বেদের ২১ টি শাখা, সামবেদের সহস্র শাখা, যজুর্বেদের ১০০ টি শাখা এবং অথর্ববেদের ৯ টি শাখা আছে। এই বিষয়ে প্রচুর মতবৈষম্য থাকলেও, একথা স্পস্টতঃ বেদের শাখা গুলি বেদ নয়.. যদি হতো তাকে শাখা বলা হতো না।
পাণিনি মুনি অষ্টাধ্যায়ীতে বেদ ও ব্রাহ্মণগ্রন্থের ভেদ স্পষ্ট প্রকাশ করিয়াছেন।
দ্বিতীয়া ব্রাহ্মণে। অষ্টা০ ২/৩/৬০। বেদ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হতে ভিন্ন শৈলীতে সৃষ্টি। বেদ ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থ আলাদা।
চতুর্থ্য র্থে বহুলং ছন্দাংসি। অষ্টা০ ২/৩/৬২। চারিবেদ সমূহ ছন্দস্বরূপ। যাহা নির্দিষ্ট অক্ষর সহিত সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থে আখ্যায়িকা থাকে যাহা ছন্দের কোন নিয়ম মেনে রচনা হয় না। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদের মন্ত্র নিয়ে ব্যাখ্যা দেয় মাত্র।
ষষ্ঠীযুক্তশ্ছন্দসি বা। অষ্টা০ ২/৩/৩।
দ্বয়চশ্ছন্দসি। অষ্টা৪/৩/১৫০।
বেদ মন্ত্রসমূহ ছন্দযুক্ত হয়। বেদ সাত ছন্দ এবং প্রতিপ্রকার ছন্দে ৮ প্রকার উপছন্দ আছে। মোট ৫৬ প্রকার বিশেষ ছন্দ ও তাহার অনেক উপছন্দ নিয়ে বেদ মন্ত্রের শৈলী সৃষ্টি হয়েছে।
একটি নির্দিষ্ট অক্ষর সংখ্যা নিয়ে প্রতিটি ছন্দের নির্মাণ হয়। যেমন গায়ত্রী হয় ২৪ অক্ষরে তাহার সাথে ৪ অক্ষের ক্ষয় অথবা যোগ হয়ে সকল উপছন্দের নির্মাণ হয়েছে যায়। জগতী তে ৪৮ টি অক্ষর আছে। এই ভাবে বেদের প্রতিটি ছন্দের নির্দিষ্ট অক্ষর আছে। প্রতিটি বেদ মন্ত্র নির্দিষ্ট অক্ষরযুক্ত।
তাই বেদ মন্ত্রসমূহ কখন ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হইবে না। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহ কাণ্ডিকা আকারে থাকে। কাণ্ডিকা ব্রাহ্মণগুলো অনেক অক্ষরের সহিত গদ্য ও পদ্যে তৈরী হয়। যাহার নির্দিষ্ট কোন অক্ষর সংখ্যা বা ছন্দ নাই। ব্রাহ্মণগ্রন্থ বেদ হতে মন্ত্র নিয়ে উক্ত মন্ত্রের ছন্দবিজ্ঞান তথা সৃষ্টি বিদ্যার বিশেষ আলোচনা করে অথবা ব্রহ্মবিদ্যার বিশেষ আলোচনা করে থাকে।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের মধ্যে আরণ্যক এবং উপনিষদ থাকে। প্রতিটি আরণ্যক অথবা উপনিষদগুলো ব্রাহ্মণগ্রন্থের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ মাত্র। তাই পাণিনিসূত্র ছন্দ তথা বেদ ও ব্রাহ্মণগ্রন্থের বিশেষ পার্থক্যের নির্দেশ করেছে।
বেদের ব্রাহ্মণ অংশ
ঋগ্বেদ
ব্রাহ্মণ : ঐতরেয়
আরণ্যক : ঐতরেয়
উপনিষদ : ঐতরেয়
ব্রাহ্মণ : কৌষীতকি বা শাঙ্খ্যায়ন
আরণ্যক : কৌষীতকি
উপনিষদ : কৌষীতকি
সামবেদ
শাখা : কৌষুন
শাখা : রাণায়ণীয়
শাখা : জৈমিনীয়
ব্রাহ্মণ : তাণ্ডা মহাব্রাহ্মণ বা পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ
ব্রাহ্মণ : ষড়বিংশ (শেষাংশ অদ্ভুত ব্রা্হ্মণ)
ব্রাহ্মণ : মন্ত্র
ব্রাহ্মণ : ছান্দোগ্য
উপনিষদ : ছান্দোগ্য
ব্রাহ্মণ : তলবকার বা জৈমিনী
উপনিষদ : কেন
যজুর্বেদ
শাখা : কৃষ্ণ
ব্রাহ্মণ : তৈত্তরীয়
আরণ্যক : তৈত্তরীয়
উপনিষদ : তৈত্তরীয়
শাখা : পাওয়া যায় নাই
ব্রাহ্মণ : পাওয়া যায় নাই
আরণ্যক : পাওয়া যায় নাই
উপনিষদ : কঠ, শ্বেতাশ্বতর
শাখা : শুক্ল
ব্রাহ্মণ : শতপথ
আরণ্যক : শতপথ
উপনিষদ : বৃহদারণ্যক
সংহিতা : ঈষ
উপনিষদ : ঈশ
অর্থবর্বেদ
শাখা : নাম পাওয়া যায় না
ব্রাহ্মণ : গোপথ
শাখা : পৈপ্পলাদ
উপনিষদ : প্রশ্ন
শাখা : নাম পাওয়া যায় নাই
উপনিষদ : মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য
মণ্ডুক উপনিষদের মতে- বিদ্যা দুই ভাগে বিভক্ত। ভাগ দুটি হলো পরা ও অপরা। যার দ্বারা অক্ষর ব্রহ্মকে জানা যায় তাকে বলা হয় পরা বিদ্যা এ কারণেই পরাই হলো- শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। পক্ষান্তরে অপরা হলো জাগতিক জ্ঞান। এই বিচারে বেদ অপরা বিদ্যা।
"ত্রয়ী বৈ বিদ্যা"-(শতপথব্রাহ্মণ : ৪/৬/৭/১)
বেদ যে চারটিই ছিলো তার বহু প্রমাণ সংস্কৃত সাহিত্যে পাওয়া যায় -
তত্রাপরা ঋগ্বেদোযজুর্বেদঃ সামবেদোঽথর্ববেদঃ শিক্ষা কল্পো ব্যাকরণং।
নিরুক্তং ছন্দো জ্যোতিষমিতি। অথ পরা যয়া তদক্ষরমধিগম্যতে।।
(মুন্ডকোপনিষদ ১।১।৫)
#অপরাবিদ্যা - ঋগবেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, শিক্ষা, কল্প, ব্যকরন, নিরুক্ত, ছন্দঃ ও জ্যোতিষ। পরা বিদ্যা - যা দ্বারা অক্ষর ব্রহ্মকে জানা যায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদে চারটি বেদ কে পরমাত্মার নিঃশ্বাসস্বরূপ বলা হয়েছে -
"ঋগ্বেদো যজুর্বেদঃ সামবেদোঽথর্বাঙ্গিরসঃ"- (বৃহদারণ্যক উপনিষদ: ২/৪/১০
"অনন্ত বৈ বেদা"-বেদ কে যতো গভীর ভাবে জানা যাবে পুরো ব্রহ্মান্ডকেই তত বালো ভাবে জানা যাবে। সংসারে এই রূপ কোন ধ্বনি,বাক্য গ্রন্থ নেই। অনন্ত বৈ বেদা অর্থাৎ সৃষ্টিতে বেদ অনন্ত। ঋষিগণ তাদের মানবীয় সামর্থ দ্বারা যতটুকু বৈদিক রশ্মিকে শোষণ করে নিতে পেরেছেন ততটুকুই মনুষ্যের জন্য বিদিত হয়েছেন।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থের রূঢ় অর্থের জন্য নানান ইতিহাস পাওয়া যায় যেমনঃ
শাতপর্ণেয় ধীর - সত্যকাম জাবালের নিকট উপদেশ গ্রহণে গিয়েছিলেন ' ধীরো হ শাতপর্ণেয়ঃ মহাশালং জাবালমুপোৎসসাদ' শতপথ ব্রাহ্মণ ১০।৩।৩।১
কেশী দার্ভ্য - ' রথপ্রোতং বৈ দার্ভ্যমভ্যশঁসন্ ' মৈত্রেয়াণী সংহিতা ২।১।৩ ; ' কেশী হ দার্ভ্যো দীক্ষিতো নিষসাদ ' কৌষিতকী ব্রাহ্মণ ৭।৪
মন্ত্র সংহিতা বেদ। ছন্দ থেকে ব্রাহ্মণ পৃথক পাণিনি অষ্টধ্যায়ী ৪।২।৬৬ [ देखिये-छन्दोब्राह्मणानि च तद्विषयाणि ]
জৈমিনিকৃত পূর্বমিমাংসা ১।২।৩২ [ तच्चोदकेषु मंत्राख्या ] ২।১।৩৩ [ शेषे ब्राह्मणशब्दः ] যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে বেদের যে অংশটি অবশিষ্ট আছে তা ব্রাহ্মণ।
"ब्रह्मणां वेदानामिमानि व्याख्यानानि ब्राह्मणानि अर्थात् शेषभूतानि सन्तीति"-ঈশ্বর বেদস্থ বাক্য অর্থাৎ ছন্দ মন্ত্রাদি দ্বারা ঋষিদের বেদ জ্ঞাত করেছেন, বাকি অর্থ শিক্ষা, শ্রবণ, আবৃত্তি, ব্যখ্যা ইত্যাদি..যা কিছু। ব্রহ্মা থেকে জৈমিনি মুনি মহাশয়রা করে গেছেন, যার কারনে ঐতরেয় প্রভৃতি গ্রন্থগুলি ব্রহ্মাদির ব্যাখ্যান গ্রন্থ.. তাই এসকলের নাম ব্রাহ্মণ গ্রন্থ হয়েছে, অর্থাৎ "ব্রাহ্মণম বেদনামিমানি ব্যাখ্যানানি ব্রাহ্মণানি অর্থাৎ শেষভূতানি সন্তীতি"।
তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ১।৩।২।৬ "यद् ब्रह्मणः शमलमासीत् सा गाथा नाराय स्यभवत् ।"
ইয়াদ ব্রাহ্মণঃ শমলমাসীত্ সা গাথা নারায়ম স্যাভবত্।
-এখানে নারাশংসী অর্থাৎ গাথা আদি যা বেদ তুল্য ও মানা যায় না।
শতপথ ব্রাহ্মণ ১১।৩।১।২ থেকে ৪ উপনিষদের মত গল্প আকারে বর্ননা পাওয়া যায় মহারাজ জনক মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য কে যজ্ঞ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন।
তদেতদ্গাথয়াভিগীতম্ শতানীকঃ সমন্তাসু মেধ্যং সাত্রাজিতো হয়ম্। আদত্ত যজ্ঞং কাশীনাং ভরতঃ সত্বতামিবেতি - শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩।৫।৪।২১
ভরতো দৌঃষন্তিরীজে তেনেষ্ট্বেমাং ব্যষ্টিম্ব্যানশে যেয়ং ভরতানাং তদেতদ্গাথয়াভিগীতমষ্টাসপ্ততিং ভরতো দৌঃষ্যন্তির্যমুনামনু গঙ্গায়াং...১১
শকুন্তলা নাডপিত্যপ্সরা ভরতং দধে...১৩
ভরতস্য ন পূর্বে নাপরে জনাঃ...১৪
শতপথ ব্রাহ্মণ ১১।৫।৪।১১,১৩,১৪
অর্থাৎ আমরা ব্রাহ্মণ গ্রন্থে শ্রীরামচন্দ্রের সময়কার জনক থেকে শুরু করে মহাভারত সময়ের ব্যাস এমনকি পরিক্ষিত , জনমেজয়েরও উল্লেখ পাওয়া যায়। যে গ্রন্থে কোন ব্যক্তি বিশেষের বা কোন বর্গ বিশেষের ইতিহাস পাওয়া যায় তা কোন দিন বেদ হতে পারে না।
দেখুন অন্য দিক দিয়ে বিচার করলে দেখায়ায়.. যেমন ঈশপনিষ যজুর্বেদের মন্ত্রের ব্যখ্যা মন্ত্র সহকারে পাওয়া যায় আথচ ঈশ উপনিষদ্ কে বেদ বলা হয় না।
|
ঈশপনিষদ ভূমিকা |
ঈশপনিষদ যা যজুর্বেদের ৪০ অধ্যায়ের হুবহু মন্ত্র ভাগ পাওয়া যায়.. অথচ তা বেদ নয়। ঈশপনিষদের ভূমিকা দেখুন.. কোন গ্রন্থে মন্ত্র অংশ থাকলে তা কখনই বেদ হয় না..
গৌণ বিষয়ে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়.. মূখ্য বিষয় দেখা উচিৎ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ বেদ কিনা দেখার আগে ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কি ও এর রচয়তা তা দেখলেই দেখবেন এই সকল গ্রন্থ মনুষ্যকৃত।
মনুস্মৃতি ২।১৪০ দেখুনঃ
" উপনিয় তু য়ঃ শিষ্যং বেদমধ্যাতয়েদ্র দ্বিজঃ। সকল্পঃ সরহস্যঃ চ তমাচার্য প্রচক্ষতে।। "
এই শ্লোকে রহস্য শব্দ এসেছে। "রহস্য" শব্দ আরণ্যক অথবা উপনিষদের প্রকাশ হয়। উপনিষদ ও আরণ্যক আজকাল ব্রাহ্মণের ভাগমাত্র মানা হয়। মনু ইহাকে বেদ হতে পৃথক নির্দেশ করেছেন। মহত্মা মনু জী ব্রাহ্মণ কে বেদ মানেন না।
তৈত্তিরিয় সংহিতায় দেখুন পূর্বেও বলেছি
|
(তৈত্তিরীয় সংহিতা ১.৫.১) |
ব্রাহ্মণের ভাষা লৌকিক নয়, ব্রাহ্মণের ভাষা প্রবচনের ভাষা..অতঃ ব্রাহ্মণ বেদের ব্যখ্যান গ্রন্থ।
গাথা কখনো অপৌরুষেয় হতে পারে না, গাথা পৌরষেয় প্রমাণ শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩।৫।৪।২,৩,৬,৭,৮,১১
এই সমস্ত ব্রাহ্মণে লৌকিক ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে। যে সকল গ্রন্থে লৌকিক ভাষা সহ পৌরুষেয় গাথা পাওয়া যায় এবং পাওয়া যায় না গেলেও, উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেগুলি বেদ অর্থাৎ ঐশ্বরিক হতে পারে না। এটি ব্রাহ্মণ-প্রন্থগুলিতে পাওয়া যায়, তাই ব্রাহ্মণ-গ্রন্থগুলি বেদ নয়।
এই উপমাতে গাথা, নরাশংসী প্রভৃতিকে ব্রহ্ম অর্থাৎ বেদের সমতুল্য মনে করা হয়নি।
ক্রমশ দেখুন তৈত্তিরিয় আরন্যক ১।১ এবং অশ্বল্যায়নশ্যসূত্র ৩।৩।২-৩
--"ব্রাহ্মণনীতিহাসন্ পুরাণানি কল্পান্ গাথা নরশংসীঃ।
যদ্ ব্রাহ্মণানি কল্পান্ গাথা নারাশংসীরিতিহাসপুরাণানীতি।। "
এখানে ইতিহাস, পুরাণ, কল্প, গাথা, নরশংসীকে ব্রাহ্মণের বিশেষণ বলে মনে করা হয়।
এই বাক্যদ্বারা প্রতিত হয় ব্রাহ্মণগ্রন্থে প্রাচীন ইতিহাস পুরাণ (জগতউৎপত্তি সম্বন্ধী কথা), কল্প,গাথা এবং নারাসলসী আদি লেখা রয়েছে।
শঙ্কা নিরুক্ত অধ্যায় ৪ খন্ড ৬ "तत्र ब्रह्मेतिहास मिश्रमृड्मिश्रं गाथामिश्रं भवति।" তত্র ব্রহ্মেতিহাস মিশ্রমৃড্মিশং গাথামিশংভবতি----অর্থাৎ এখানে শঙ্কা হয় বেদে ইতিহাস ও গাথাদি মিশ্রিত আছে। এর জন্য অনেক সময় বেদ মনুষ্য কৃত মনে হয়।
সমাধানঃ কিন্তু এর দ্বারা ইহা প্রমাণ হয় না। এখানে "তত্র" পদের সাথে নিরুক্তস্য পূর্বের বাক্য থেকে "সূক্ত" পদের অনুবৃত্তি এসেছে। এর অভিপ্রায় এই ঋগ্বেদের এ সূক্ত (১।১০৫) ব্রহ্ম অর্থাৎ বেদেই এমন কিছু মন্ত্র রয়েছে, যা নিত্য ইতিহাসকে বলা হয়েছে,
এবং কিছু মন্ত্র এমন আছে যার পরিভাষিক সংজ্ঞা গাথা হয়েছে। উহাকে গাথা বলা হয় কারণ এতে গাথারূপ আলঙ্কারিক ভাবে বর্ণন হয়েছে।
বিঃদ্রঃ শ্লোক শব্দ বেদ মন্ত্রের জন্যও ব্যবহৃত হয়, একইভাবে গাথা শব্দের দ্বিমুখী ব্য়বহার রয়েছে । শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪।৭।২।১১,১২,১৩ যাজুষ মন্ত্র কে শ্লোক বলা হয়েছে।
গোপথ ব্রাহ্মণ পূ০ ২/১০ লিখিত আছে...
" এবমিমে সর্বে নির্মাতাঃ সকল্পাঃ সরহস্যাঃ সব্রাহ্মণাঃ সোপনিষৎকা সেতিহাসাঃ সান্বাখ্যানাঃ
সপুরাণাঃ সস্বরাঃ সসংস্কাসনিরুক্তাঃ সানুশাসনাঃ
সানুমার্জনাঃ সভাকোবাক্যাঃ "
সরহস্যাঃ
সব্রাহ্মণাঃ
সোপনিষৎকাঃ
ব্রাহ্মণকার বলেছেন (১)কল্প (২) রহস্য (৩) ব্রাহ্মণ (৪) উপনিষদ (৫) ইতিহাস (৬) অন্বাখ্যান (৭) পুরাণ (৮) স্বর [গ্রন্থ] (৯) সংস্কার [গ্রন্থ] (১০) নিরুক্ত (১১) অনুশাসন (১২) অনুমার্জন এবং (১৩) বাকোবাক্য আদি গ্রন্থ বেদ নয়।।
ইহা বেদার্থের সহায়তার জন্য রচিত হয়েছে।। যখন ব্রাহ্মণকার স্বয়ং এগুলোকে বেদ মানছেন না তাহলে আমরা কেন ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থকে বেদ মানবো?
পরমবিদ্বান বেদবিদ ভগবান মনু নিজের ধর্মশাস্ত্রে বলেছেন...
" উপনিয় তু য়ঃ শিষ্যং বেদমধ্যাতয়েদ্র দ্বিজঃ।
সকল্পঃ সরহস্যঃ চ তমাচার্য প্রচক্ষতে।। "
--- মনু০ ২/১৪০
এই শ্লোকে রহস্য শব্দ এসেছে। "রহস্য" শব্দ আরণ্যক অথবা উপনিষদের প্রকাশ হয়। উপনিষদ ও আরণ্যক আজকাল ব্রাহ্মণের ভাগমাত্র মানা হয়। মনু ইহাকে বেদ হতে পৃথক নির্দেশ করেছেন। অতএব মনুর দৃষ্টিতে ব্রাহ্মণ বেদ নয়।।
মনুর এই শ্লোকে কল্প ও রহস্যের তাৎপর্য ঃ
এখানে " কল্প " দ্বারা কোন গ্রন্থ বিশেষের অভিপ্রায় হয় নি। পরন্তু বেদোক্ত যজ্ঞ,সন্ধ্যা,ধর্মাচারণ ধর্মক্রিয়া আদির অনুষ্ঠান বিধি এবং কৌশলের নিরুপণ এখানে হয়ে থাকে,এরুপ বিদ্যাবিশেষ।
" রহস্য " এই শব্দ মহত্বপূর্ণ হয়।। এর অর্থ এখানে বেদে নিহিত যে গম্ভীর বিদ্যা এবং তার ব্যাখ্যা দ্বারা স্পষ্ট করা হয়।
বেদ বিষয়ে মনু আদি সমস্ত ঋষিদের ধারণা...
"বেদোহখিলো ধর্মমূলম" ---মনুস্মৃতি( ১/১২৫/, ২/৬ )
" সর্বংবেদাৎ প্রসিদ্ধ্যতি " -- মনুস্মৃতি (১২/৯৭)
অর্থাৎ, এই সবকিছু উদঘাটিত করার ব্যাখ্যা-শৈলিকে রহস্য বলা হয়।।
অর্থাৎ, ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থ বেদ নয় ইহা ব্রাহ্মণ ও মনুস্মৃতি থেকে প্রমাণিত।।
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ