ঈশ্বরীয় পুস্তক কোনটি বেদ নাকি কুরআন ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

17 March, 2022

ঈশ্বরীয় পুস্তক কোনটি বেদ নাকি কুরআন ?

ঈশ্বরীয় পুস্তক কোনটি বেদ নাকি কুরআন ?
শাস্ত্রার্থ বিষয়: ইলহামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক কোনটি, বেদ নাকি কুরআন?

স্থান: আগরা, উত্তর প্রদেশ
দিনাঙ্ক: ১৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ (দ্বিতীয় দিন)
বিষয়: ইলহামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক কোনটি, বেদ নাকি কুরআন?
শাস্ত্রার্থকর্তা আর্য সমাজ থেকে: পণ্ডিত কৃপারাম শর্মা জগরানবী (স্বামী দর্শনানন্দজী সরস্বতী)
শাস্ত্রার্থকর্তা মুসলিমদের থেকে: মৌলবী অবুলফরহ (পানীপতী)
সহায়ক: (১) মৌলবী জহাঙ্গীর খান (২) মৌলবী অব্দুলমজীদ (৩) কাজী জুহুরুল্লহসন
আর্য সমাজের মন্ত্রী: পণ্ডিত কৃপাশঙ্কর এম এ (প্রাজ্ঞশাস্ত্রী)
আর্য সমাজের প্রধান: বাবু জমনাদাস বিশ্বাস (উকিল)
সভাপতি: বাবু জোজভ ফারনন (সিবিল লাইন আগরা)
শাস্ত্রার্থের প্রধান: শ্রী জলসা বাবু
পণ্ডিত শ্রী কৃপারাম জী শর্মা জগরানবী -
যেহেতু মৌলবী সাহেব যা উসুল (নিয়ম) অহলে ইসলামের বলেছেন তার খন্ডন স্বয়ং তার পুস্তক কুরআন শরীফ থেকে হয়ে যায়, এই কারণে ইসলাম খুদাপরস্তীর বদলে শর্ক (মোহম্মদ সাহেবকে শামিল করানো) অর্থাৎ আল্লার সঙ্গে মোহম্মদ সাহেবকেও যুক্ত করার শিক্ষা দেয়। তার খুদাই কলাম (ঈশ্বরীয় বাক্য) হওয়াতে আমাদের নিম্ন বিরোধ আছে -
(১) যে ব্যাক্তি মকর (মক্কার) দাঙ্গা কারী, ঋণগ্রহীতা আর শপথ নেয় তো তাকে কি খুদা বলা যেতে পারে?
(২) কুরআন শরীফ ১৩০০ সালে নাজিল (জন্ম) হয়, তার আগে বিশ্বে নজাতের (মুক্তির) কি পদ্ধতি ছিল? যদি মুসলিম ভাই এটা বলে যে কুরআন শরীফের আগে ইন্জীল আর ইন্জীলের আগে জবুর, আর জবুরের আগে তৌরেত ছিল, তবে যেটা বলুন যে আদম থেকে মুসা পর্যন্ত লোকেরা কোন পুস্তকের উপর মান্যতা রাখতো অর্থাৎ কোন পুস্তকের আদেশানুসার তারা চলতো? যদি পুস্তক ছিল তো তাকে পেশ করুন। যদি কোনো পুস্তক ছিল না তবে খুদার জাতের উপর অর্থাৎ খুদার উপর বেইনন্সাফীর (অন্যায়ের) ইল্জাম (দোষ) কার্যকর হবে। কারণ আদম থেকে মুসা পর্যন্ত যত মানুষ হয়েছে তাদের নজাত (মুক্তির) পদ্ধতিই বলে দেন নি আর মুসার উপর তৌরেত নাজিল করে। আর এটাও বলুন যে, খুদা তৌরেতে কি লিখতে ভুলে গেছেন, যাকে ঠিক করার জন্য জবুরকে পাঠায়, আর জবুরের মধ্যে কি খামতি রয়ে গেছিল যে তাকে ঠিক করার জন্য ইন্জীলকে পাঠায়। তৌরেত, জবুর আর ইন্জীলে কি এমন ইল্মী উসুল (জ্ঞানের সিদ্ধান্ত) ছিল না যাকে বদলানোর জন্য কুরআন শরীফ আসে? অন্যদিকে কুরআনের নির্মাতা বার বার নিজের বিচারগুলোকে ভুল বুঝে তাকে বাতিল করে। তো এখন তার সঠিক হওয়ার কি প্রমাণ আছে? আর হজরত মোহম্মদ সাহেবকে যে পৈগাম্বর মানা হয়, পৈগাম্বর মানে তো হল পৈগাম (বার্তা বাহক) আর পৈগাম (বার্তা) সর্বদা ফাসলা (দূরবর্তী) থেকে এসে থাকে। তো বলুন যে, খুদা আর মানুষের মধ্যে কত দূরত্ব আছে, যার জন্য বার্তা নিয়ে আসার জন্য পৈগাম্বরের আবশ্যকতা পড়লো? আর যে খুদা সকলের নির্মাতা এবং সবকিছুর নির্মাণ কর্তা আর সকলের চালন কর্তা, তাকে ফরিশ্তোদের মোহতাজ (আধীন) হতে হল, আর আদমকে ভূমিতে নিজের নায়ব নিশ্চিত করে ফরিশ্তোদের শর্ক (মোহম্মদ সাহেবকে আল্লার সঙ্গে মিলিত করিয়ে) তালীম দিতে হল।
মৌলবী শ্রী অবুলফরহ পানীপতী -
হজরাত সামইন! (উপস্থিত সজ্জন গণ), আমি আমার কালকের বয়ানে এই কথা লিখিয়ে দিয়ে ছিলাম যে শাস্ত্রার্থ নিয়মানুসারে হবে, আর দুই পক্ষ নিয়ম অনুসারেই মুবাহিসা (শাস্ত্রার্থ) করবে, বিনা নিয়মে নয়। আর আমি এই সব উসুলের কথা আগেই লিখিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি দুঃখিত যে, সেই সবকে ভুলে পণ্ডিত সাহেব সেই গুব্বার যা পণ্ডিত জীর হৃদয় আর মাথায় ভরে ছিল, ইজহার (প্রকাশ) করে দিল। আর আমাদের সব ইসলামী নিয়মগুলোকে ধ্যানে রাখলেন না। আমার মনে হয় যে, পণ্ডিত জী সেই সব কথাগুলোকে ভুলিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আমি এই কথোপকথনের উত্তর কেবল একটি বাক্য দিব -"ভাই এই কাজ জিদের নয় বরং ইন্সাফের (বিচারের)" আর এখানে সকলে বসে আছে, আর পণ্ডিত সাহেব লিখিয়েছে যে, কুরআন শর্কের (মোহম্মদ সাহেবকে আল্লার সঙ্গে মিলিত করার) তালীম দেয়। আমি কাল নিয়মে লিখিয়েছি যে, কোনো কথা বিনা প্রমাণে পেশ করা হবে না। কিন্তু আমি দুঃখিত যে, পণ্ডিত জী কোনো প্রমাণ পেশ করেন নি। কিন্তু আমি এখন নিজের কথা উত্তর দেওয়ার পূর্বে প্রমাণ পেশ করছি - দেখুন - কুরআন প্রথম আয়ত পাঁচ পারার সপ্তম আয়তে লেখা আছে - (এইভাবে মৌলবী সাহেব কয়েক আয়তের পাতা লিখে দেয় - আর বলেন যে, পৈগাম্বরের আবশ্যকতার বিষয়ে যা ঋষিগণের আবশ্যকতা ছিল সেটাই পৈগাম্বরের ছিল।) - অর্থাৎ যা ঋষিগণের বিষয়ে আপনার উত্তর ছিল, সেই উত্তর হল আমার পৈগাম্বর বিষয়ের। আমি দুঃখিত যে, আপনি কুরআন ও তৌরেতকে পড়ে দেখেন নি, যে কিসের অভাব ছিল, কারণ এই তর্ক নিয়মের বাইরে চলে গেছে। এই জন্য আমি এর কারণে দ্বিতীয় সময় নিশ্চিত করবো। কারণ এই তর্ক পাঁচ নিয়মের ভিতরের নয় যা শাস্ত্রার্থ শুরুর প্রারম্ভে নিয়ত করা হয়েছিল। তো "খুদাকে মক্কার আর দাঙ্গাবাজ বলা হয়েছে" যখন আপনি কুরআন পড়বেন তো এই ছোট্ট কথা আপনি বুঝে যাবেন, ১৩০০ সালে ইসলাম আরম্ভ হয় তো তার পূর্বে নজাতের (মুক্তির) কি পদ্ধতি ছিল? নিয়মানুসারে এই তর্কের কোনো সম্বন্ধ নেই। যদি আমি তর্ক করতে চাই তো আমি আর্য সমাজের পঞ্চাশ ব্যাক্তির সঙ্গে তর্ক করতে পারি। কিন্তু আমি নিয়ম থেকে নামবো না। এই জন্য আপনিও কান খুলে শুনে নিন অর্থাৎ পুনঃ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, তর্ক নিয়মের ভিতরেই করুন। আমাদের নিয়ম হল যে, একটা খুদার পরস্তিশ (পূজা) হোক। আপনি আমাদের এখানে খুদার পরস্তিশ বলুন কোথায় হয়? পাঁচ সময়ের নামাজের বিষয়ে, জকাত (খৈরাত) দেওয়ার বিষয়ে, অফসোস! যে এই আধা প্রশ্ন রয়ে গেছে, আদমের বহিশ্ত থেকে পরে যাওয়া, আর সিড়ি-ঠিরির ইসলামের নিয়মের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ নেই, আপনি যদি এই কথাকে এইভাবে বলেন যে "আমি জিজ্ঞেস করছি" যখন কালকের নিয়মগুলোতে এই কথা নিশ্চিত হয়েগেছে যে তর্ক নিয়মান্তর্গত হবে, তো যে পাঁচ নিয়ম ইসলামের নিশ্চিত হয়েছিল তার অনুসারেই তর্ক করুন। আদমকে নামাজ, রোজা, খাওয়া, কাবা আর খুদা ইত্যাদির সঙ্গে কি সম্বন্ধ আছে? আমার খুব আফসোস হচ্ছে, আমি কোনোভাবে কোনো ভাবেই উত্তর দিবো না। প্রধান জী দাড়ান! এর বিচার করুন।
পণ্ডিত শ্রী কৃপারাম জী শর্মা জগরানবী -
আপনি নোটে লিখে দিয়েছিলেন যে, কুরআন শরীফকে আমরা কলামে ইলাহী (ঈশ্বরীয় পুস্তক) রূপে মানি, আর যে ব্যক্তি কুরআনে সন্দেহ করে, সে আপনার অনুসারে হল "কাফির"। এই কারণে কুরআন শরীফের সম্বন্ধ উসুলের (নিয়মের) সঙ্গে হল। দ্বিতীয়ত, আদমের সিজদার কুরআনে হওয়াতে শর্কের তর্ক চলছে, যা পূর্ব নিয়মের সঙ্গে সম্বন্ধিত। এই কারণে আদমের মুতাল্লিক (সম্বন্ধে) তর্ক করা নিয়মের বিরুদ্ধে নয়। মৌলভী সাহেব! আপনি জানেন যে, বৈদিক ধর্মীরা বেদ ও শাস্ত্রের প্রমাণ মানে, আপনি তার উপর প্রশ্ন করতেন কিন্তু এসব সত্ত্বেও গতকাল আপনি নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে বেদ ও শাস্ত্রকে বাদ দিয়ে তারিখের প্রমাণ চাচ্ছিলেন। যা ছিল একদমই নিয়ম বিরুদ্ধ। আজ কুরআন শরীফের আন্তরিক বিষয়ের সত্যতা জানার জন্য প্রমাণ চাইলে তা অস্বীকার করা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করছি এটা কোথাকার বিচার হল।
মৌলবী শ্রী অবুলফরহ পানীপতী -
আমি গতকাল নিজের বক্তব্যে পাঁচ উসুল (নিয়ম) কুরআনের লিখিয়ে বলেছিলাম যে, কুরআনের ভিতর ইসলামের এই নিয়ম আছে, যদি তার পাঠানো, রসূল, রোজা, নামাজ, জাকাত আর হজ্জ এই পাঁচকে যে মানে না তারা কাফির। যদি কাহিনীর উপর তর্ক করা হয় তো সেই হিসাবে কুরআনে মুসার কাহিনী তথা অন্যদেরও আছে। আদমের কাহিনীর আর আমাদের নজাতের (মুক্তির) সঙ্গে কোনো তাল্লুক (সম্বন্ধ) নেই। বেদে প্রত্যেক জ্ঞানের উল্লেখ আছে, যদি তর্ক করা হয় তবে আমি সকলের সামনে বলছি যে, বেদ যাকে ঈশ্বরীয় গ্রন্থ মানেন তো আগে তার "মন্ত্রগুলো যে ঈশ্বর কৃত" তার সবুর (প্রমাণ) দিন। যার একটুখানিও যদি বুদ্ধি থাকে তো বুঝে যাবে যে আদমের কাহিনীর সঙ্গে এর কি সম্বন্ধ? কাহিনী তো "ইসা, মরিয়ম, নূর, জিকরিয়া, মূসা" সকলের আছে, এটা আমিও জানি, আর এটাও যে তর্ক ফরূআত (বিষয়ের বাহিরের)। যদি এক খুদার ইবাদত কুরআন শরীফের বিরুদ্ধ প্রমাণিত করে দেখাতে পারেন তো আমি নিহায়ত (আনন্দের) সঙ্গে তার উপর ধ্যান দিয়ে আপনাকে উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। যখন কুরআন আর বেদের সবুত (প্রমাণ) দেওয়া হবে তো তার সঙ্গে তারিখের প্রমাণ অবশ্যই দিতে হবে। অগ্নি, বায়ু, আদিত্য, অঙ্গিরার কাল, বেদের পরম্পরা আদির সঙ্গে তারিখের প্রমাণ হোক, আমিও কুরআনে এরই সম্বন্ধিত প্রশ্নের উত্তরে তারিখ সহ উত্তর দিবো, আপনি আক্লী, নকলী, অথবা দলিলী, কোনো তো প্রমাণ দিন জনাব!
পণ্ডিত শ্রী কৃপারাম জী শর্মা জগরানবী -
আপনি প্রথম দিন আর্য সমাজের নিয়মের উপর তর্ক করেন নি, বরং নিয়মের বদলে বেদের উপর তর্ক করেছিলেন, এইজন্য কুরআনের অনুসারে পাঁচ নিয়ম আপনি বলেন, আর এই কারণে কেবল কুরআনের উপরই তর্ক করা হয়েছে। কারণ যা হচ্ছে এই পাঁচের মূল তো সেই মূলের ভুল হয়ে গেলে সব নিয়ম ভুল হয়ে যাবে। যেহেতু নামাজে সজদা (কারও প্রতি নতমস্তক) হয়ে থাকে, আর ফরিশ্তগণকেও আদমের জন্য সজদা করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এটা আমিও জানি যে এটা হল পুরোনো কাহিনী কিন্তু এর নিয়মের সঙ্গে সম্বন্ধ আছে, কারণ যেমন ইবলীস আদমের সামনে সিজদা (নতমস্তক) করে নি তো সে কাফির হয়ে গেলো, যদি সিজদা করার আদেশ খুদার তরফ থেকে না হত তো কেবল কাহিনীই হত, তো তার নিয়মের সঙ্গে সম্বন্ধ হত না, কিন্তু খুদা স্বয়ং, সিজদা (নত মস্তক) হওয়ার আদেশ দেয়, আর সিজদা (নত মস্তক) না কারীকে শাস্তি দেয়, যেরকম সরকারের কোনো আদেশ না মানলে পরে শাস্তি দেওয়া হয় তো সেটা সরকারের হুকুম (আদেশ) মানা হয়। এইভাবে যখন খুদা আদমকে সিজদা (নত মস্তক) না করার জন্য ইবলীসকে শাস্তি দেয়, তো এই সিজদা খুদার আদেশ ছিল, আর যা খুদার আদেশ সেটাই হল নিয়ম, মানে "শপথ দ্বারা শর্ক প্রমাণিত করে নি, বরং এটা যে বলেছিল "শপথ করে" সে খুদা কেমন করে হবে?" খুদাবন্দ করীম শপথ করে আত্মবিশ্বাসের দাতা "খুদা হতে পারে না"। কারণ বলেও দিয়েছে যে "কসম খুর্দন খুদরা কসম সাখ্তন্ অস্ত" শপথ করে নেওয়া স্বয়ং নিজেকে সন্দেহযুক্ত সিদ্ধ করা হয়। খুদাকে কোনো শপথ করারই আবশ্যকতা নেই, সে এই ব্রহ্মাণ্ডের মালিক, সে প্রত্যেক হৃদয়ে যে বিচারকে চায় তা দিয়ে বিশ্বাস করাতে পারে।
আপনারা সকলে জেনে থাকবেন যে, কোনো বিদ্বানকে "কসম" (শপথ) তুলে বোঝানোর দরকার হয় না, সে তো আবেদনে বোঝা যায়। আপনি যে ঋষিগণের উপর বেদের প্রকাশ হওয়া আর পৈগাম্বরগণের আসার তুলনা করলেন এটা ঠিক নয়। কারণ এটা লেখা নেই যে - "ফরিস্তে পৈগাম নিয়ে আসে" বরং সেখানে তো পরমেশ্বরের প্রত্যেক স্থানে উপস্থিত থাকাতে সেই ঋষিগণের আত্মাতে যে পরমাত্মা সর্বব্যাপক আছে তার থেকেই উপদেশ পায়, এটা বলা হয়েছে। এই জন্য যে জন পৈগাম নিয়ে আসার দাবি করে তার জন্য এটা আবশ্যক যে প্রথমে খুদা আর মানুষের মধ্যে ফসলা (দূরত্ব) হওয়া প্রমাণিত করুক। মৌলবী সাহেব আমার প্রশ্নের উত্তর দিন যে পৈগাম্বরের আবশ্যকতা কেন হয়েছে? যতক্ষণ খুদা আর মানুষের মধ্যে কোনো দূরত্ব না জানা যাবে ততক্ষন পৈগাম্বরের আবশ্যকতা প্রমাণিত হতে পরে না? আমি যে ১৩০০ বর্ষ থেকে ইসলামের মান্যতা বলার পর বলেছিলাম যে, তার পূর্বে কোন নিয়মের পথে চলে মানুষের নিজাত (মুক্তি) হত? আর যে উসুলে নিজাত (মুক্তির সম্বন্ধে নিয়ম) খুদার তরফ থেকে চলতো সেই নিয়ম কুরআন শরীফের মুআফিক (অনুকূল) ছিল অথবা ছিল না? আর সেই নিয়মগুলোতে কি খামতি ছিল, যাকে কুরআন এসে পূর্ণ করে? তার সম্বন্ধ কুরআনের সঙ্গে আছে। আর যতক্ষণ সেই পুস্তক থেকে যা ইসা, দাউদ আর মূসার উপর নাজিল হয়, যাকে অহলে ইসলামের তরফ থেকে মানা হয়। যতক্ষণ কোনো নতুন নিয়মের জন্ম হওয়া আর তার নিয়মের বাতিল হওয়া, পরিষ্কার ভাবে সামনে না আসে ততক্ষন কুরআনের আবশ্যকতাই প্রমাণিত হয় না। আর যে পুস্তক হজরত মূসা-ঈসা আর দাউদের উপর আসে, তা কেন মনসূখ (বাতিল) হয়। আর যে খুদা নিজের হুকম (আদেশ) তিনবার বাতিল করেছে তার এখন কি প্রমাণ আছেন যে সে কুরআনকে বাতিল করবে না? এর উত্তর মৌলবী সাহেব দেন নি। মৌলবী সাহেব প্রশ্নের উত্তর একদমই দেন নি বরং ওনার বার বার আফসোস হতে বোঝা যায় যে প্রশ্নের উত্তর তিনি "আফসোস" দেন। আমার শখ্ত আফসোস হল যে, আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর বাদ দিয়ে নিজের দাবীর একটাও প্রমাণ পেশ না করে আফসোস আর আফসোসই করেছেন। ওনার হৃদয়ের এই ফিলিং (মহসূসিয়ত) যা জবাব না দেওয়ার কারণে জাহির হয়, দেখা যায় তো তিনি স্বয়ং জাহির করেন, যদি কোরআনের এই আয়তগুলোকে যেখানে শর্ক করতে নিষেধ করেছে, তা মানা যায়, আর যে আয়তে আদমকে সিজদা করার হুকুম আছে, তাকেই মানা যায় তো মুতজাদ (পরস্পর বিরোধী) আদেশ হওয়াতে কুরআনকে খুদার হওয়াতে তার উপর অনেক বাকয়া (দোষ) হয়ে যায় যে, সে স্বয়ং নিজেই নিজের কথাকে কাটতে থাকে। আর এমনটা যে, কোনো ব্যাক্তি নিজের অজীজের (প্রিয়ের) কসম (শপথ) খায় তো তাতে কি হয়েছে! কিন্তু কুরআনী খুদা তো দৌড়ানো ঘোড়ার কসম (শপথ) আর জমিন ও তার বিছানকারী আদি এইরকম অনেক জিনিসের কসম (শপথ) খেয়েছে যাকে মৌলবী সাহেব খুদার অজিজ প্রমাণিত করতে পারবে না। আর জমিনকে বিছানকারী কেবল খুদা ছাড়া অন্য দ্বিতীয় কেউ নয়। আবার খুদা হওয়ার পরেও সেই জমিনের বিছানকারীর কসম (শপথ) খাওয়ার কি প্রয়োজন হল? আর সঙ্গে এটাও লেখা আছে যে "কসম খানে ওয়ালে কা এতরাজ নহী হোতা (শপথকর্তা কিছু মনে করেন না)"। কিন্তু শর্ত এটা তা যেন যুক্তিসঙ্গত হয়, যে বহুত মক্কার আর মকরের স্বভাব আছে তার জলীল (খারাপ) হওয়াতে কি শক (সন্দেহ) আছে? কারণ মকরের জন্য দফা ৪১৭ নিযুক্ত আছে, এইজন্য যে দগা- ফরেব (ধাপ্পাবাজি) করে তার সদাকত (সত্যতা) কোনো কিছুতেই প্রমাণিত হতে পারবে না। আর কুরআনী খুদা কুরআনের সত্যতার জন্য স্বয়ং কসম (শপথ) খেয়েছে যা কুরআন দ্বারাই গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকে না। এইজন্য মৌলবী সাহেবের দাবি অক্লী দলিল (বৈধ যুক্তি) দ্বারা, যার সঙ্গে মুদ্দল্লিল (যুক্তিসঙ্গত) করে দেখানো উচিত ছিল, যা নত হয়েগেছে।
মৌলবী সাহেবের কাছে এটা আমার প্রশ্ন যে, আপনি কোনো প্রমাণিত তারিখ দ্বারা এটা প্রমাণ দিন যে আদম কত দিন পর্যন্ত বহিশ্ত (স্বর্গে) ছিল? আর যখন বহিশ্ত থেকে নামানো হয় তো কত সাল আর কত তারিখে নামানো হয়? আর যখন বহিশ্ত থেকে হজরত নামে তো তার বয়স কত ছিল? আর সেই বহিশ্ত যেখান থেকে হজরত আদমকে নামানো হয় সেটা জমিনের উপর নাকি আসমানে (আকাশে)? আর নামার সময় তারা সে কোনো সিড়ি দ্বারা নেমেছিল নাকি এমনি করেই ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল? এর প্রমাণ আপনি কোনো প্রমাণিত পুস্তক দ্বারা দিন। কেবল মুসলমানের লেখা পুস্তক প্রমাণের যোগ্য মানা যাবে না।
Note - এর পরে আজকের দিনও সমাপ্ত হয়ে যায় আর পরদিন মৌলবী সাহেব বেদের উপর আপত্তি করেন। আর সেই সময়ে শেষে এটাও নির্ণয় হয়ে যায় যে পরের দিন থেকে - "বেদের ইল্হামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক হওয়ার আর কুরআনের ইল্হামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক হওয়ার উপর" তর্ক হবে, এই কথা সাধারণ ভাবে সকল শ্রোতাগণের সম্মুখ নির্ণয় হয়ে যায়। আর তার অনুসারে পরের দিন মৌলবী সাহেব বেদের ইল্হামী (ঈশ্বরীয়) হওয়ার উপর তর্ক করেন। আর এই কথার প্রমাণ চান যে ইল্হামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তকে কি প্রমাণ হওয়া উচিত? আর এটাও মৌলবী সাহেব যতটা পারেন বেদের বিষয়ে তর্ক করেন, সেই তর্ককে শ্রোতাগণ তারিখের তর্ক থেকে ভালোভাবে বুঝে যাবেন। কিন্তু যেদিন সকাল মৌলবী সাহেবের সঙ্গে কুরআনের আলোচনার জন্য প্রশ্ন করার নিশ্চিত হয়েছিল, সেই দিন তিনি ইজাজাত (স্বীকৃতি) দেন নি, যার কারণে সাধারণ জনতা বুঝে যায় যে মৌলবী সাহেব কত দূর সত্যতা পছন্দকারী ছিল? যা তিনি জিদ করেন, আর স্বয়ং মৌলবী সাহেব লিখিয়ে ছিল যে - "এ কাজ জিদের নয় বিচারের কাজ" আর আর্য সমাজ শুরু থেকেই তহকীকাত (অনুসন্ধানকেই) ধ্যানে রেখে নিজের বানানো কূল কায়দো (নিয়মের) বিরুদ্ধে মৌলবী সাহেব তার নিজের বানানো নিয়মের অনুকূল তর্কে রাজি হয় কিন্তু মৌলবী সাহেব নিজের নিয়মকে নিজেই ভেঙে দেয়, আর তহকীক (সত্যতা) থেকে সরে পড়েন। তার অবস্থা সকলে ওখানে উপস্থিত সজ্জনগণেরা বোঝেন। এর বেশি কিছু বলার আর আবশ্যকতা নেই।
প্রধান - জমনা দাস বিশ্বাস (উকিল)
১৩-০৯-১৮৯৯

স্থান: আগরা আর্য সমাজ, উত্তর প্রদেশ (ভারত)
দিনাঙ্ক: ১৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ (তৃতীয় দিন)
বিষয়: ইলহামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক কোনটি, বেদ নাকি কুরআন?
শাস্ত্রার্থকর্তা আর্য সমাজ থেকে: পণ্ডিত কৃপারাম জী শর্মা জগরানবী (স্বামী দর্শনানন্দজী সরস্বতী)
শাস্ত্রার্থকর্তা মুসলিমদের থেকে: মৌলবী অবুলফরহ (পানীপতী)
সহায়ক: (১) মৌলবী জহাঙ্গীর খান (২) মৌলবী অব্দুলমজীদ (৩) কাজী জুহুরুল্লহসন
আর্য সমাজের মন্ত্রী: পণ্ডিত কৃপাশঙ্কর এম এ (প্রাজ্ঞশাস্ত্রী)
আর্য সমাজের প্রধান: বাবু জমনাদাস বিশ্বাস (উকিল)
সভাপতি: বাবু জোজভ ফারনন (সিবিল লাইন আগরা)
শাস্ত্রার্থের প্রধান: শ্রী জলসা বাবু
মৌলবী অবুলফরহ পানীপতী -
সাহেবান (বিদ্বানগণ)! "বেদ কি ইলহামী (ঈশ্বরীয়) পুস্তক" এই বিষয়ের উপর আমার প্রশ্ন এই রকম আছে -
(১) কোনো পুস্তককে মিন্ জানব অল্লা (খুদার তরফ থেকে) অর্থাৎ ঈশ্বর কৃত করার জন্য কোন কোন সাক্ষ্যের জরুরত (আবশ্যকতা) আছে?
(২) এই দলায়ল আর কবায়দ (যুক্তি আর নিয়মের) মধ্যে কোনটা হবে যার উপর সিদ্ধ করে কোনো পুস্তককে খুদার তরফ থেকে "ঈশ্বরকৃত" হওয়ার প্রমাণিত করা হবে?
(৩) এই নিয়ম আর যুক্তি কোনটা যা এই কথার জন্য নিযুক্ত করা হবে? খুদার কিতাব (পুস্তক) সেই বিশেষত্বের অনুকূল হওয়া উচিত যা সর্বদা বিদ্বানদের বোঝাতে পারে।
(৪) সে নিয়ম ও নীতি যা খুদার পুস্তক চিনতে পারার জন্য নিযুক্ত করা হয় তা উকলেদস (ঈশ্বরীয় জ্ঞানের) পক্ষে হবে নাকি কম হবে নাকি বেশি হবে নাকি সমতুল্য হবে?
(৫) সেসব নিয়ম বা মিয়ার (অবস্থা) কোনটা যার দ্বারা খুদার পুস্তক চেনা যাবে? আর সে কোন বিশেষ অবস্থা হতে হবে যার তারিখ দ্বারা খুদার পুস্তক চেনা যাবে?
(৬) "মিন্জানব অল্লা" (ঈশ্বর কৃত) প্রমাণিত করার জন্য কোনো পুস্তকের সাক্ষ্য পেশ করা যেতে পারে সেটা কত রকমের হবে?
(৭) সেই শহদতে (সাক্ষ্যগুলো) যা কোনো পুস্তককে ঈশ্বরকৃত হওয়া প্রমাণিত করবে সেটা অন্তরীণ সাক্ষ্য হওয়া উচিত নাকি বাহ্যিক হওয়া উচিত?
(৮) যদি সেই সাক্ষ্য অন্তরীণ হয় তবে সেটা কি কি ধরনের? আর যদি বাহ্যিক হয় তবে কোন ব্যাক্তির দ্বারা বানানো হয়েছে বা তাকে চয়ন করা হয়েছে?
(৯) এটা হল যে ব্যাক্তি নিজের জ্ঞানের শক্তি দ্বারা অথবা নিজের মজহবী জিদের শক্তি দ্বারা কোনো পুস্তকের উপর জোর দেয় তবে তার বক্তব্যে ভুল হতে পারে কি না? আর যদি সে "ঈশ্বরকৃত" তাকে প্রমাণিত করতে চায়। ব্যস এই নয় প্রশ্নের উপর উত্তর, পণ্ডিত জী! একবার ধ্যান দিয়ে দৃষ্টি ফেলুন আর বিস্তারপূর্বক প্রত্যেকের উত্তর আর নাম-ঠিকানা দিন।
পণ্ডিত শ্রী কৃপারাম জী শর্মা জগরানবী -
(১) প্রথম প্রশ্নের উত্তর হল যে, পরমেশ্বরের বানানো পুস্তকের জন্য এটা আবশ্যক যে সেই পুস্তকে পরমেশ্বরের উপর কোনো রূপ ইল্জাম (দোষ) আসবে না।
(২) দ্বিতীয় কথার উত্তর এটা হল যে, পরমেশ্বর বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে বানিয়েছে আর ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই পরমেশ্বরের বানানো। যে পুস্তক তার বিরুদ্ধে নয় সেই পুস্তকটি পরমেশ্বরের।
(৩) তারজন্য এই নিয়ম আবশ্যক যে, তা যেন কোনো মূল্কের (দেশের) ভাষা না হয়, দ্বিতীয়ত - সেখানে কোনো ব্যাক্তির কিস্সা-কাহিনী হবে না, তৃতীয়ত - যেভাবে পরমেশ্বর সৃষ্টির প্রারম্ভে সূর্যের রশ্মি দেয় আর মানুষেরা প্রদীপের আলো মাঝখান থেকে বানিয়ে ফেলে, এইভাবে সেটা বিশ্বের প্রারম্ভে হবে, চতুর্থ - সেই পুস্তকে আপসি বিরোধ (পরস্পরবিরোধী শব্দাবলী) হবে না, পঞ্চম - কোনো কথাই ইল্মী উসূলের (বিজ্ঞানের নিয়ম) বিরুদ্ধে হবে না, ষষ্ঠ - সেই পুস্তকে একই কথা বিনা প্রয়োজনে বার বার পুনরাবৃত্তি হবে না।
(৪) এই প্রশ্নের উত্তর এটা হল যে, পরমেশ্বরের নিয়ম কেবল ব্যাক্তির নির্মাণের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখে, অন্য কোনো বস্তুর সঙ্গে নয়, আর সেটাও নির্মিত, ঈশ্বরীয় পুস্তকের জন্য যে নিয়ম প্রয়োগ করা যেতে পারে তা ঈশ্বরীয় সিফাত (পরমেশ্বরের গুণগুলোর) অনুসারে নেওয়া হবে।
(৫) পরমেশ্বরের পুস্তককে প্রমাণিত করতে যা নিয়ম করা হতে পারে তা পরমেশ্বরের গুণ দ্বারা হতে পরে, কোনো ব্যাক্তির ফর্জী খ্যালাত (বানানো বিচার) দ্বারা হতে পারবে না।
(৬) প্রত্যেক পুস্তকের তদন্তের জন্য দুই প্রকারের সাক্ষ্যের আবশ্যকতা হয়, এক সেই বেগর্জ (অসহ্য) ব্যাক্তিদের যারা নিয়মানুসারে তার নিয়মকে বোঝার পর তার সম্বন্ধে নিজের রায় দিয়েছে। দ্বিতীয়, তার মজমূনো (বিষয়গুলোর) ভিতর থেকে।
(৭) এই প্রশ্নের উত্তর ষষ্ঠ প্রশ্নের উত্তরে এসে গেছে যে, আন্তরিক আর বাহ্যিক সাক্ষ্যের আবশ্যকতা আছে, আন্তরিক সাক্ষ্যের জন্য এটা আবশ্যক যে -
(ক) সেই পুস্তকের যে আবশ্যকতা আছে প্রমাণিত করে।
(খ) সেই পুস্তক যেকোনো জ্ঞানের বিরুদ্ধ হবে না।
(গ) যেভাবে পরমেশ্বরের বানানো এক বীজের ভিতর এক বড় ভারী বৃক্ষের হওয়ার শক্তি থাকে, সেইভাবে তার ভিতরেও অল্প শব্দে ভালো পরিমাণে উলূম (জ্ঞান) হতে হবে। পুরোনো গল্প-কাহিনী হলে হবে না। যদি বাহ্যিক সাক্ষ্য নেওয়া হয় তবে সেই ব্যাক্তিদের নেওয়া উচিত যাদের কামবাসনা (বিষয়বাসনা) নেই। যার বাণী সত্যের জন্য, তাদের লেখা অনুসারে একটাও শব্দ যেন অকল (বুদ্ধির) বিরুদ্ধে না পাওয়া যায়। যে ব্যাক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে য়োগ আর সমাধির সম্বন্ধ করে কোনো সত্য উলূম (জ্ঞানের) সম্পর্কে জানকারী প্রাপ্ত করে নিজের মশবরা (পরামর্শ) দেয়, তো তার কথন ঠিক মানা যেতে পারে। যেভাবে অগ্নির নিকট থাকার ফলে লোহার ভেতর অগ্নির গুণ এসে যায়, সেইভাবে পরমেশ্বরের উপাসনা কারী য়োগী প্রত্যেক তত্বকে বুঝতে পারে। হ্যাঁ যদি কোনো সাধারণ বিষয়ী ব্যাক্তি নিজের জানকারীর জোরে কোনো কিছু বলে তো তার সত্য - মিথ্যা দুটোই হতে পারে। অর্থাৎ সকল প্রকারের প্রমাণ এখন যদি মৌলবী সাহেব চান তো আমি আন্তরিক ও বাহ্যিক বেদের সম্বন্ধে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। আর রইলো এই প্রশ্নগুলোর বিস্তারপূর্বক উত্তর দেওয়ার! তো সেটা ১৫ মিনিটের সময়ে মুস্কিল (কঠিন) হবে, কিন্তু তবুও আমি সংক্ষেপে উত্তর লিখিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।
মৌলবী শ্রী অবুলফরহ পানীপতী -
(১) যজুর্বেদের অধ্যায় ১৩তে মন্ত্র ২০, ও অধ্যায় ২১শে মন্ত্র ১৪ ও ১৯ শে মন্ত্র ৯৪ তে দয়ানন্দ ভাষ্যে এর অনুবাদ এই রকম করেছে -
(২) যে স্ত্রীর সন্তান হয় না তার প্রয়োজন যে সে দ্বিতীয় পতি হতে সন্তান প্রাপ্ত করুক।
(৩) তৃতীয় প্রশ্ন এটা হল যে, পরমেশ্বর স্ত্রীদের হিদায়ত (নির্দেশ) করে, যে স্ত্রীর স্বামী আছে তো সেও দ্বিতীয় স্বামীর হতে সন্তান প্রাপ্ত করতে পারে যদি তার স্বামী নপুংশক হয়।
(৪) মূল্কী জুবান (দেশী ভাষার) পুস্তকের উপর আপত্তি আছে, তাহলে সংস্কৃত কোন দেশের ভাষা?
(৫) আপনি মহাশয় এটা দাবী করেছেন যে, চার বেদ হল পরমেশ্বরের পুস্তক এইজন্য কৃপা করে আপনি কেবল এটা বলুন এই পুস্তকটি কোন মূল্কে (দেশে) নামে আর সেখানে কোন লোকেরা থাকে? পৈগাম্বরের বিশেষত্ব হল সে নেকচলন (সদাচারী) হবে, কোনো তারিখ দিয়ে বলুন যে এই লোক একই সময়ের ছিল, নাকি ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ছিল? আর এই চারটি বেদ কি একই সময়ে আসে নাকি আলাদা-আলাদা সময়ে আসে? আর যদি একই সময়ে আসে তবে সেটা কিভাবে নিয়ে আসা হয়? লিখিয়ে দেওয়া হয় নাকি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়? আর তারা কি কিভাবে শোনে? এর উদাহরণ দিন যে আপনাদের কাছে সোজাসুজি আসে? কারণ পণ্ডিত জী বলেছিলেন যে, প্রারম্ভে তারিখের ধারাবাহিকতা ছিল না।
(৬) নজুমের (জ্যোতিষের) হিসাবে প্রাচীনকালের কথা কিভাবে জ্যোতিষ দ্বারা বলা হয়েছে? আর এই কথার প্রমাণ দিন যে যারা বেদের তালীম (প্রশিক্ষণ) দিয়ে ছিল তারা কোথায় মারা যায়, আর কোথায় থাকতেন? আর রহন - সহন (জীবনযাপন) তাদের কিরকম ছিল? পরমেশ্বর কি হাতে-হাতে তাদের নিজের কলাম (উপদেশ) দিয়েছিল নাকি কারও দ্বারা পৌঁছায়ে দেয়? আর যদি সেটা খুদার পুস্তক ছিল তবে কি চেষ্টা করা উচিত নয় কি যে এটা খুদারই কিতাব (পুস্তক) কিনা? আর আপনি এই বেদ কোন ব্যাক্তির কাছে পেয়েছেন, যিনি এটা বলেছিলেন যে এটা বেদ? আর ধারাবাহিক ভাবে আপনার কাছে এই বেদ কিভাবে আসে?
যদি শক্ত প্রমাণ আপনি না দেখাতে পারেন তো আমি স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হবো না। আপনি এর প্রমাণ তারিখ দ্বারা দিন নয়তো আমি তার জবাব বিস্তারপূর্বক দিবো।
পণ্ডিত শ্রী কৃপারাম জী শর্মা জগরানবী -
চারটি বেদই সৃষ্টির প্রারম্ভে আসে আর যা চার ঋষিগণের উপর আসে, যাদের নাম অগ্নি, বায়ু, আদিত্য আর অঙ্গিরা ছিল। যার জন্য এই প্রমাণ উপস্থিত আছে, যা আজ বানানো হয় নি বরং লক্ষ বর্ষ পূর্বের উপস্থিত আছে দেখুন - "ঐতরেয় ব্রাহ্মণ পঞ্চকাপঞ্চ কণ্ডিকা ৩২" অর্থাৎ ঋগ্বেদ অগ্নি ঋষির উপর আসে, যজুর্বেদ বায়ু ঋষির উপর আসে, সামবেদ আদিত্য ঋষির উপর আসে এবং অথর্ববেদ অঙ্গিরা ঋষির উপর আসে। এরপর দেখুন - "সায়ণাচার্যের ঋগ্বেদের ভাষ্যের ভূমিকা পৃষ্ঠ ৩, ছাপা বোম্বই।" সৃষ্টির প্রারম্ভে জন্মা বিশেষ জীবাত্মা অর্থাৎ দেবর্ষি অগ্নি, বায়ু, আদিত্য, অঙ্গিরার উপর বেদের প্রকাশ পরে, কারণ অগ্নি আদির হৃদয়ে ঈশ্বর বৈদিক জ্ঞানের প্রকাশ করে। এই জন্য য়োগসূত্রেও ঈশ্বরকে সকলের গুরু মানা হয়েছে, যেমন লিখেছে - "স এষঃ পূর্বেষামপি গুরুঃ" অর্থাৎ সে পরমেশ্বর হল বিশ্বের মানবের সর্বপ্রথম গুরু। অর্থাৎ সে তাদের শিক্ষা দিয়েছিল, তারসঙ্গে অথর্ববেদ যা বম্বাইয়ে ছাপা হয় তার পৃষ্ঠ নম্বর ২ দেখুন - সেখানেও অগ্নি, বায়ু, আদিত্য, অঙ্গিরা এই চার ঋষির সৃষ্টির আদিতে হওয়া আর তাদের হৃদয়ে বেদের প্রকাশ হওয়া নিয়ে বলা হয়েছে। এছাড়া ওনার প্রশ্ন যে, বেদ কোন মুল্কে (দেশে) আসে? তার উত্তর এটা হল যে, যে স্থানে সৃষ্টির আরম্ভ হয় সেই স্থানের নাম হল তিব্বত যা আজকালকের সন্ধান থেকেও সেটা প্রমাণিত হয়। কারণ বিশ্বের সবথেকে উচু পাহাড় হল হিমালয় আর ভূমি জলের ভিতর থেকে বেরিয়েছে। যার প্রমাণ দেখুন যে - সবার আগে পরমেশ্বর প্রকৃতিকে সক্রিয় করে আকাশ উৎপন্ন করে, অগ্নি, বায়ু, জল, পৃথ্বী, আকাশ, এই তত্ত্বের পূর্ব অবস্থা অর্থাৎ এরা পরমাণু রূপে ছিল তাদের হরকত (ক্রিয়া) করে, তো সেই হরকতে (ক্রিয়াতে) সর্বপ্রথম আকাশ উৎপন্ন হয়, আকাশ থেকে বায়ু, বায়ু থেকে অগ্নির উৎপন্ন হয়, অগ্নির পরে জল উৎপন্ন হয়, জলের পরে জমিন (পৃথ্বী) হয়, এবং যেহেতু সবার আগে হিমালয়ের চুরা জলের বাহিরে আসে, এই জন্য যেখানে সৃষ্টির আরম্ভ হয়, সেখানেই ঋষিগণের হৃদয়ে যারা সৃষ্টির আরম্ভে জন্মে ছিল, আলাদাভাবে একই সময়ে বেদের প্রকাশ তারা পায়।" একটা প্রশ্ন করা হয়েছে যে, বেদ লিখিয়ে দিয়েছিল অথবা বুঝিয়ে দিয়েছিল - এটা বলা ভুল হবে, বরং সেই বেদরূপী জ্ঞানকে সেই ঋষিগণের হৃদয়ে প্রকাশিত করা হয়েছিল।
মৌলবী শ্রী অবুলফরহ পানীপতী -
জর্রা (পরমাণু) আসমান (আকাশ) ও জমিনকে (পৃথ্বীকে) খুদা আলাদা করে দেয়, পণ্ডিত জী! এরা কি পূর্বে মিশ্রিত ছিল? প্রথম চুরা হিমালয় আর তা জল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা, - এর প্রমাণ কি কোনো পুস্তকে আছে? পণ্ডিত সাহেব বলেন যে, চার বেদ সৃষ্টির প্রথমে আসে, এরপর উনি বলেন যে, খুদা জর্রাত (পরমাণুগুলোকে) হরকত (ক্রিয়া) করে আর সব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়, তো এই কৌমে (হিন্দুগণে) পরিষ্কার বোঝা যায় যে, বায়ু হবাকে (বাতাসকে) বলে, এটা বলা উচিত যে এটা ঋষিগণের নাম নাকি অনাসার (তত্বের) নাম? তো কোন মুবর্রাখ্ (ইতিহাসকার) লিখেছে যে, সবার আগে হিমালয় পাহাড় জলের ভিতর থেকে বাইরে আসে? আপনি এটা বলেছেন যে, চার ঋষি একই স্থানে উপস্থিত ছিল তো এর সাক্ষ্য কোনো প্রমাণিত পুস্তক থেকে দিন। আমার মাথায় আসছেনা ভাইগণ! যে আল্লার কি দরকার ছিল যে চারটি বেদ একই স্থানে নামানোর? দয়া করে পণ্ডিত জী মহারাজ আপনি পুস্তক দ্বারা প্রমাণ পেশ করুন যে, হিমালয় পাহাড় সর্বপ্রথম বেরিয়ে আসে, আর এই ঋষিগণ সেই কালে ছিল, বেদের কোনো বাক্য অথবা মন্ত্র দ্বারা বলুন যে, তিব্বত দেশে এই ঋষিগণ একই সময়ে ছিল। এটাও বলুন যে, খুদা কিভাবে তাদের হৃদয়ে তালীম (শিক্ষা) দিয়ে দেয়, খতরা (ভয়ের) মতো কোনো খ্য়াল (বিচার) হৃদয়ে উৎপন্ন হয়েছিল? নাকি এটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে তুমি খুদার মিত্র। যতটুকু পণ্ডিত জী সাহেব সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তারমধ্যে কোনোটাই এটা প্রমাণিত করে না যে, এক আরব ছিয়ানব্বই কোটির কথা কোনো লেখক বলে। তাহলে বিনা কোনো আধারে কিভাবে এই কথা মানা হবে?
এই ইতিহাসকার বলুক যে "ঋষি হিমালয়ে উপর হয়" সে লেখক সেই কালের ছিল? এবং এটা বলুক যে তিব্বতে যে সন্তান জন্মায় তারা কিভাবে হয়? সে সন্তান সেই ঋষিদের থেকে জন্মে নাকি নারীদের থেকে? আবার ঋষি তো উপস্থিত ছিল ঋষিকা কোথা থেকে আসলো? নারীরা তো প্রারম্ভে ছিলই না। তো নারীরা কথা থেকে এসে গেলো, নারী বিনা সন্তান কিভাবে উৎপন্ন হয়ে গেলো? এবং বলুন যে, কোন কোন ঋষিগণের শার্গিদ (শিষ্য) ছিল যাদের তারা বেদ শুনিয়ে ছিল, সেই সময়ের পুরো পরিস্থিতিটা বলুন। এবং সেই পরিস্থিতিকে ধারাবাহিকভাবে বলুন যে যার মাধ্যমে বেদ আপনার কাছে পর্যন্ত পৌঁছেছে? আর এটাও বলুন যে যখন সেটা কোনো মুল্কের (দেশের) জুবান (ভাষা) ছিল না তবে বেদ সংস্কৃত ভাষায় কিভাবে বানানো হয়েছে?
Note - এরপর যেহেতু তৃতীয় দিনের সময় নিয়মানুসারে তিন বার প্রশ্ন কর্তার এবং দুই বার উত্তর দাতার বলা হয়ে গেছে, এই বার সেই প্রশ্নকে সেখানেই ছাড়া হয়, পরবর্তী দিন মৌলবী সাহেবের উপর আর্য সমাজের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করার ছিল, কিন্তু মৌলবী সাহেব প্রথম দিনেও উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বরং তিনি এটা ভেবে ছিলেন যে যেভাবে হোক সেইভাবে প্রশ্নের উপরেই করবে আর প্রথম দিন "বিষয়ের বাইরে" এটা বলে সময় কাটা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন এটা নির্ণয় হয়েছিল যে, মৌলবী সাহেব বেদের বিষয়ে বিরোধ করবেন যেমনটা তৃতীয় দিন নিজের যোগ্যতার অনুসারে প্রশ্ন করে ছিলেন। তার কাছে শুধু তারিখের প্রমাণ চাওয়া ছাড়া আর কোনো যুক্তি ছিল না। কিন্তু আদমের সম্বন্ধে নিজের তারিখী প্রমাণ দিতে অস্বীকার ছিল, সেখানে বলেছিলেন যে "উসূল-ইসলামের সঙ্গে এর কোনো সম্বন্ধ নেই"। সেই দিন মৌলবী সাহেব বাড়ি থেকে এটা নির্ণয় করে এসেছিলেন যে, তিনি শাস্ত্রার্থ করবেন না। কারণ আজ আর্য সমাজের পক্ষ থেকে কুরআনের উপর বিরোধ করার দিন নিশ্চিত ছিল, যাকে শোনা মুত্তাস্সব (জিদ্দী) মুসলমানদের নাগবার (খারাপ) লাগতো। আসল কারণটা ছিল এটাই যে আর্য সমাজ প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে যাবে, যেহেতু নিয়মানুসারে তা আবশ্যক ছিল, কিন্তু মৌলবী সাহেব নিজের করা সব নিয়মকে আলাদা রেখে এটা বলেন যে, আজ সেই শর্ক (মোহম্মদ সাহেবকে আল্লার সঙ্গে যুক্ত করা) - এর প্রশ্নের উত্তর দিব। যখন তাকে এটা বলা হয় যে এই প্রশ্ন নিয়মানুসারে সমাপ্ত হয়ে গেছে, অর্থাৎ আর্য সমাজ দ্বারা তিন বার বলা হয়ে গেছে আর অহলে ইসলামের তরফ থেকে নিয়মানুসারে দুই বার জবাব (উত্তর) দেওয়া হয়ে গেছে, তবে এই শর্তের অনুসারে আজ আর্য সমাজকে কুরআনের উপর আপত্তি করার সুযোগ দেওয়া হবে।
কিন্তু আফসোস! মৌলবী সাহেব তার জন্য প্রস্তুত হন নি আর নিজের সকল শর্তগুলোকে ছেড়ে দেয় আর বলতে থাকেন যে আমি অন্তিমে অবশ্যই বলবো। যখন তাকে বলা হয় যে আজ প্রথমে আপনার বলার সময় নয়, তো মৌলবী সাহেব বলেন যে, যেই শর্কের জন্য অহলে ইসলাম জগল কসনূন (......) দিয়ে ভরে দেয় আর লক্ষ-লক্ষর রক্ত বৈয়ে দেয় সেই শর্কের সম্বন্ধের নির্ণয় এইভাবে হতে পারে না। এইজন্য আজ থেকে সেই সম্বন্ধে তর্ক হওয়া উচিত। যখন বলা হল যে, আপনি তো নিয়ম বানানোর সময় এটা নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন যে, সায়ল (প্রশ্নকর্তা) তিনবার বলবে, উত্তরদাতা দুইবার বলবে। যখন এই নিয়মের অনুসারে তর্ক সমাপ্ত হয়েছে আর আপনি কুরআনের উপর তর্ক করার শর্তও করে ছিলেন, তখন তিনি কেবল ঝগড়া আর শোরগোল ছাড়া কোনো অনুকূল উত্তর দেননি। যখন কেউ কিছু বলতো তো মৌলবী সাহেব অবশ্যই তার প্রতুত্তরে বলার জন্য প্রস্তুত হতেন। আর তিনি এলানিয়া (প্রকাশ্যে) বলেছেন যে, আমি শর্কের প্রসঙ্গ ছাড়া আর নতুন কোনো প্রশ্ন করতে দিবো না আর না প্রশ্ন করার সুযোগ দিবো। এমনকি আর্য সমাজ থেকে অনেক বিনম্র চেষ্টা করা হয় যে, এইভাবে লোকের সময় ফিজুল জায়া (ফালতু বর্বাদ) না করা হোক, বরং আসলী মজমূন (আসল বিষয়ের) উপর তর্ক করা হোক। কিন্তু মৌলবী সাহেব এর জন্য প্রস্তুত হলেন না। যার কারণ এটা ছিল যে মৌলবী সাহেব স্বয়ং হিন্দি - সংস্কৃত হতে নাবাকফ (অনভিজ্ঞ) আর উসূল মুবহিসা (শাস্ত্রার্থের নিয়ম) হতেও বেখবর (অজ্ঞানী) ছিলেন। আর সত্যতার অনুসন্ধানে তিনি রাজি ছিলেন না। তিনি মুসলমানদের উৎসাহিত করে ঝগড়া করতে চেয়েছিলেন। যারা সেসময় মৌলবী সাহেবের পরিস্থিতি দেখেছিল, তাদের কাছে এসব কথা লুকানো যাবে না।
যদি সেদিন মৌলবী সাহেব তর্ক করতেন তো কুরআনের তহকীকাত (অনুসন্ধান) হয়ে যেত, কিন্তু মৌলবী সাহেবের জিদের কারণ আর তর্ক না করায় পাবলিক (জনগণ) যে নির্ণয় নিয়েছিল তা প্রত্যেক ব্যাক্তি হৃদয় থেকে জানে। মৌলবী সাহেবের সেদিন তর্ক হতে গুর্রেজ (এড়ানো), যেদিন তার প্রতি বিরোধের উত্তর দেওয়া আবশ্যক ছিল, এসব প্রমাণ করে যে মৌলবী সাহেব একদমই হক পসন্দ (সত্যতা পছন্দ) করেন না। সেই শাস্ত্রার্থের পর আগ্রাবাসী মৌলবী সাহেবের বিরুদ্ধে এক বিজ্ঞাপন বের করেছিল যার দ্বারা ওনার যোগ্যতা আর সত্যতার নকশা দেখা যায়। আফসোস এই কথার হল যে আমাদের মুসলিম মিত্ররা নিজের মজহবী অনুসন্ধানের সময় এমন ব্যাক্তিকে নিজের উকিল বানিয়েছে যে বিপক্ষের সিদ্ধান্ত থেকে নাবাকফ্ (অনভিজ্ঞ) হওয়া ছাড়া ইল্ম মাকূল "সত্য জ্ঞান" থেকেও নাবাক্ফ্ ছিল। কিন্তু তার এটা দায়িত্ব ছিল যে সে নিজের দাবির অনুসারে ও নিজের শর্তের অনুসারে বুদ্ধি দ্বারা সিদ্ধ করে দেখাতো, কিন্তু কথায় আছে না, যে গর্জন করে সে কামরায় না! মৌলবী সাহেব দাবি তো অনেক করেন, যেখানে বাহাত্তুর ইল্মের পুস্তক নিয়ে আসার উল্লেখ করেন, কিন্তু সকল দাবি ফাঁকাই দেখা যায়, যাই হোক! মৌলবী সাহেব খুব আর্য সমাজের সঙ্গে শাস্ত্রার্থের চ্যালেঞ্জ করেছিল, অর্থাৎ মৌলবী জাহাঙ্গীর খান সাহেব স্বয়ং আর্য সমাজে মুবাহিসা "শাস্ত্রার্থ" করতে আসে আর নিজে স্বয়ংই শাস্ত্রার্থে উত্তর না দিতে পারায় মৌলবী অবুলফরহ সাহেবকে নিজের স্থানে রেখে চলে যায়।
কিন্তু মৌলবী সাহেব কুরআনের সত্যতার উত্তরে কেবল এই অলফাজ (শব্দে) "এই বিরোধ নিয়মের বাইরে" আমি কোনোভাবেই এর জবাব দিবো না, আর কোনো প্রমাণ দিবো না। অর্থাৎ মৌলবী সাহেব নিজেই নিজের নিয়মের বিরুদ্ধে তর্ক করে, কারণ তিনি বৈদিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একদমই অনভিজ্ঞ ছিলেন। কিন্তু এইদিক থেকে সত্যতা জানার জন্য নিজের কর্তব্য বুঝে তার সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। আর মৌলবী সাহেবের বিরোধ তো প্রথম দিনই উত্তর দিতে মানা করেন, আর তিনি দ্বিতীয় দিন প্রশ্ন করার পূর্বেই এত ভয় পান যে শাস্ত্রার্থের প্রধান জলসা জীকে শাস্ত্রার্থ সমাপ্ত করতে হয়, যদি মৌলবী সাহেব এই দিন সঠিক ভাবে তর্ক করতেন আর আমাদের আপত্তির উত্তর দিতে অস্বীকার না করতেন তাহলে আমাদের "কুরআনের অনুসন্ধান" লেখার পরিশ্রম সহ্য করতে হতো না কারণ সবালাত্ (প্রশ্নের) উত্তর মৌলবী সাহেবের কাছ থেকেই পাওয়া যায়। আমি যা কিছু লিখেছি তার কারণ হল কেবল সহানুভূতি, যে আমাদের মুসলমান ভাই যারা কিছু সময় পূর্বে আমাদেরই ভাই ছিল, আর শুধু অজ্ঞানতার কারণে এক ভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভক্ত হয়ে যায়, আর নিজের বাপ-দাদার (পূর্বজের) মুকম্মল (সম্পূর্ণ) ধর্মকে ত্যাগ করে যেখানে খুদা (পরমাত্মাকে) ছাড়া অন্যের উপাসনা করা নিষেধ ছিল, সেটা বাদ দিয়ে তারা মর্দমপরস্তী (মৃতকপূজক) আর কাবাপরস্তী (কাবাপূজা) তে চলে যায়। এই মুবাহিসার সঙ্গে "কুরআনের অনুসন্ধান" -এর ভাগ আলাদা ছাপা হয়েছে। মুবাহিসা (শাস্ত্রার্থ) আর্য সমাজ আগরা আর অহলে ইসলামের সমাপ্ত হল।
• প্রবন্ধক •
অমর স্বামী প্রকাশন বিভাগ

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

अथर्ववेद 6/137/1

  एक वरिष्ठ वैदिक विद्वान् ने मुझे अथर्ववेद के निम्नलिखित मन्त्र का आधिदैविक और आध्यात्मिक भाष्य करने की चुनौती दी। इस चुनौती के उत्तर में म...

Post Top Ad

ধন্যবাদ