শাস্ত্র কাকে বলে ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

12 August, 2022

শাস্ত্র কাকে বলে ?

 জৈমিনী পূর্ব-মিমাংসাতে বলেছেন যে, যাতে অনুশাসন, উপদেশ, আদেশ এবং নিষেধ থাকে তাই শাস্ত্র। অর্থাৎ সাধারণ অর্থে "আদেশ, নিয়ম, সারগ্রন্থ, সংকলন, বই বা গ্রন্থ"। অর্থাৎ যে শিক্ষা শৃঙ্খলা প্রদান করে আমাদের রক্ষা করে, পথ দেখায়, কখনও কখনও আঙুল ধরে আমাদের পথ দেখায়, তাকে বলা হয় ‘শাস্ত্র’।

ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে 'শাস্ত্র' বলতে ঋষি-মুনি প্রভৃতি দ্বারা প্রণীত সেই সব প্রাচীন গ্রন্থকে বোঝায় যা মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্তব্য ব্যাখ্যা করে এবং অনুচিত কাজকে নিষেধ করে। শাস্ত্র  অমর কোষের টীকামতে শাসন-সাধন গ্রন্থ।

সাধারণত, শাস্ত্রে বর্ণিত কর্মগুলিকে বিহিত বলে গণ্য করা হয় এবং শাস্ত্রে নিষিদ্ধ কাজগুলিকে নিষিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য করা হয়। শাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র বা ধর্মশাস্ত্র, বাস্তুশাস্ত্র, জ্যোতিশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, আয়ুর্বেদশাস্ত্র, ব্যাকরণশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র, শিল্পশাস্ত্র, ধনুর্বেদ (সৈন্য বিজ্ঞান) ইত্যাদি।

শাস্ত্র কাকে বলে ?
“ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ।”['মনুস্মৃতি ২।১৩] অর্থাৎ যে ধর্মের বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চায় তার জন্য বেদই মূখ্য প্রমাণ। য়ঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ। ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ ॥ [গীতা ১৬।২৩] = যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারে প্রবৃত্ত হয়, সে সিদ্ধি প্রাপ্ত হয় না, সুখ প্রাপ্ত হয় না ও পরম গতি প্রাপ্ত হয় না, ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্ [গীতা ৩।১৫] = বেদ স্বয়ং ঈশ্বর হতে প্রকাশিত। “শ্রুতিবিরোধাত্রকুতর্কাপসদস্যাত্মলাভঃ।” [সাংখ্য দর্শন ৬।৩৪] = বেদবিরোধী কুতর্কে আসক্তিযুক্ত পুরুষের আত্মতত্ত্ব লাভ হতে পারে না। “ন পৌরুষেয়ত্বং তৎকর্তঃ পুরুষস্যাভাবাৎ।” [সাংখ্য দর্শন ৫।৪৬] = বেদের কর্তা কোনো মানব নয়। ” নিজশক্ত্যাভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রমাণ্যম্।” [সাংখ্য দর্শন (163] ঈশ্বরের স্বাভাবিক শক্তি বেদরূপে প্রকাশিত বলে বেদ স্বতঃপ্রমাণ। ব্রহ্মসূত্রে “শাস্ত্রয়োনিত্বাৎ” [ব্রহ্মসূত্র ১।১।৩] তে তথা “অতএব চ নিত্যত্বম্”[ব্রহ্মসূত্র ১।৩।২৯] ইত্যাদি সূত্রের দ্বারা পরমেশ্বরকে ঋগ্বেদাদি রূপ সর্ব জ্ঞানের কর্তা মেনে বেদের নিত্যতা প্রতিপাদন করা হয়েছে। বৈশেষিক দর্শনে মহামুনি কণাদ বলেছেন “তদ্বচনাদামায়স্য প্রামাণ্যম্।” [বৈশেষিক দর্শন ১।১।৩] = বেদ ঈশ্বরোক্ত বলেই তাতে সত্য বিদ্যা ও পক্ষপাত রহিত ধর্মের প্রতিপাদন আছে, অতএব বেদ চতুষ্টয়কে নিত্য হিসেবে স্বীকার করা মনুষ্যমাত্রেরই কর্তব্য, কারণ যখন ঈশ্বর নিত্য, তখন তাঁর নিত্যজ্ঞানস্বরূপ বেদও অবশ্যই নিত্য হবে, এতে সন্দেহ নাই। অগ্নিমূর্ধা চক্ষুষী চন্দ্ৰসূয়োঁ দিশঃ শ্রোত্রে বাগ্ বিবৃতাশ্চ বেদাঃ। [মুণ্ডক উপনিষদ ২।১।৪] = এই পরমাত্মার অগ্নি মস্তক, চন্দ্র এবং সূর্য চক্ষু, দিশা শ্রোত্র, প্রসিদ্ধ ঋগ্বেদাদি তাঁর বাণী। তস্মাদৃচঃ সাম য়জুংষি দীক্ষা য়জ্ঞাশ্চ সর্বে দ্ৰুতবো দক্ষিণাশ্চ। [মুণ্ডক উপনিষদ ২।১।৬] = সেই পূর্ণ পরমাত্মা থেকে ঋগ্বেদ, সামবেদ,যজুর্বেদ, উপনয়নাদি সংস্কার এবং সকল অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞরূপ কর্ম, অশ্বমেধাদি সকল যজ্ঞ, শ্রদ্ধাপূর্বক দান এবং মুহূর্তাদি সকল কাল এবং যজ্ঞকর্তা যজমান এবং সকল ইন্দ্রিয়ের গোলক এবং যেখানে চন্দ্রমা পবিত্র বা প্রকাশিত হয়, যেখানে সূর্য প্রকাশিত হয়, এই সমস্ত লোক উৎপন্ন হয়েছে।
য়ো বেদে চ শাস্ত্রে চ, গ্রন্থধারণতৎপরঃ। ন চ গ্রন্থায়তত্বজ্ঞঃ,তস্য তদ্ধারণং বৃথা । ভারং স বহতে তস্য গ্রন্থস্যার্থ ন বেত্তি য়ঃ। য়স্তু গ্রন্থার্থতত্ত্বজ্ঞো নাস্য গ্রন্থাগমো বৃথা ৷৷ [মহাভারত শান্তিপর্ব ৩০৫।১৩-১৪]
= যে কেবল বেদ পড়ে কিন্তু বেদের অর্থ এবং তত্ত্ব জানে না, তার এই প্রকার অধ্যয়ন নিষ্ফল হয়ে যায়। অতএব সকলের উচিত বেদের অধ্যয়ন অর্থ এবং তত্ত্বের সহিত করা।
য়া বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো য়াশ্চ কাশ্চ কুদৃষ্টয়ঃ। সর্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্ৰেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাঃ স্মৃতাঃ৷৷ [মনুস্মৃতি ১২।৯৫] = বেদবাহ্য অর্থাৎ বেদবিরুদ্ধ যে সব স্মৃতি আছে এবং যে সব শাস্ত্র কুদৃষ্টিমূলক অর্থাৎ অসৎ-তর্কযুক্ত মতবাদসমূহ যে শাস্ত্রে আছে, সেগুলি সব শেষ পর্যন্ত একেবারে নিষ্ফল অর্থাৎ বৃথা বা অকিঞ্চিৎকর বলে প্রতিভাত হয় এবং সেগুলি তমোনিষ্ঠ বলে স্মৃত হয়ে থাকে।
উৎপদ্যন্তে চ্যবন্তে চ য়ান্যতোংন্যানি কানিচিৎ। তঅন্যর্বাক্কালিকতয়া নিষ্ফলান্যনৃতানি চ৷৷ [মনুস্মৃতি ১২।৯৬] = এই বেদ ছাড়া আর যত কিছু শাস্ত্র আছে অর্থাৎ যেগুলি মানব রচিত সেগুলি কালক্রমে উৎপন্ন হয় এবং বিনাশও প্রাপ্ত হয়। সেগুলি সব অর্বাচীনকালীন; এজন্য সেগুলি সব নিষ্ফল ও মিথ্যা।


No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ