অর্ধনারীশ্বর - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 August, 2022

অর্ধনারীশ্বর

অর্ধনারীশ্বর মূর্তিটি দেহের ঠিক মাঝখান থেকে সমানভাবে বিভাজিত অর্ধেক পুরুষ ও অর্ধেক নারীর মূর্তি রূপে বর্ণিত হন। অর্ধনারীশ্বর নামটির অর্থ "অর্ধেক নারী যে ঈশ্বর"। বস্তুতঃ আকাশে [ব্যোমে] আগুনের স্থিতিকে সূর্যমন্ডলী (নাভিচক্র বা গ্যালাক্সি) তথা সোমের স্থিতিকে অগ্নির ওপর পরমেষ্ঠি মন্ডলে ( শূন্য / space ) অঙ্কিত করা হয়েছে । আগুনের স্বভাব / প্রকৃতি প্রসরণশীল, কিন্তু সোমের প্রকৃতি / স্বভাব সংকোচনশীল। অগ্নি বিরল ভাব বা তারল্যের কারণ আর সোমা হল ঘনত্বের কারণ। অগ্নি ভেদক হলে সোম সংযোজক, অগ্নি অর্ধগামী সোম অধোগামী।


অগ্নি অত্যন্ত শক্তিময় হয়ে সোমে সমাহিত হয়ে যায় এবং সোম তখন শক্তিময়ী হয়ে অগ্নিকে প্রখরতা প্রদান করে। সোম ভোজ্ঞা তো অগ্নি ভোক্তা এই জন্য সোম কে স্ত্রী (শিবা) এবং অগ্নি কে পুরুষ (উগ্র) শ্রেনীতে কল্পনা কারা হয়েছে। সোমের আনুপাতিক সংস্পর্শে আসায় অগ্নির এই উগ্ররূপ কিছুসময়ের জন্য শান্ত (শিব, পৌরাণিক চিত্র) হয়ে যায়, অগ্নির প্রবলতা সোমকেও উগ্র বানিয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ধ্বংসাত্মক আগুনে গোগৃত কে আনুপাতিকভাবে আহুতি দিয়ে যেখানে বায়ুমন্ডলে লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি স্বাস্থ্য-বর্ধক অক্সিজেন উৎসর্জিত হতে থাকে, একই অগ্নিতে আবৃত হওয়ায়, ঘিও শিখার আকারে জাজ্বল্যমান হয় এবং এর তীব্রতা দ্বিগুণ করে তোলে। 

অর্ধনারীশ্বর


এই কারণে শিবা (সোম) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিব (অমৃতাগ্নি) মহাকাল (রৌদ্রাগ্নি) নিজ নৈসর্গিক রূপে অনুভুত হতে থাকে, তখন শিবা (সোম)ও রৌদ্রপ্রধান গুণ (অগ্নি) বাহুল্যতায় নিজ মূল স্বভাব ত্যাগ করে মহাকালী অর্থাৎ প্রলয়কারিনী রূপ ধারণ করে। এই কারণে প্রলয় কাল কে পৌরাণিক মান্যতায় মহাকালের তান্ডবের প্রতিফল মানা হয়েছে। বস্তুতঃ অগ্নির সম্যক বিস্তার সোমকে সৃজনাত্মক নিখার তথা সোমের মাত্রাত্মক নৈবেদ্য অগ্নির আনুপাতিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়। অস্তিত্বগতভাবে পরিপূরক হওয়ায় তাদের আন্তঃসম্পর্ক অভেদ্য। পৌরাণিক চিত্রে প্রদর্শিত শিবের অর্ধনারীশ্বর স্বরূপ, সোমাগ্নির এই ঐক্যভাবের প্রতিফলিত রূপ মাত্র, যা পৌরাণিকেরা ঈশ্বর ভেবে পূজা অর্চনা করে থাকে। এই সোমাগ্নিকে "ব্যোমকেশ" বহা হয়ে থাকে। ১৬শ শতাব্দীর মূর্তিতত্ত্ব সংক্রান্ত গ্রন্থ শিল্পরত্ন, মৎস্যপুরাণ এবং অংশুমাদভেদাগম, কামিকাগম, সুপ্রেদাগম ও কারণাগম প্রভৃতি আগম গ্রন্থে অর্ধনারীশ্বরের মূর্তিতত্ত্বটি বর্ণিত হয়েছে। আগমগুলি প্রধানত দক্ষিণ ভারতে রচিত হয়। অর্ধনারীশ্বর মূর্তিটি হিন্দুদের দুটি পৌরাণিক শাখা শৈব ও শাক্তকে সংযুক্ত করার একটি প্রয়াস রূপেও ব্যাখ্যা করা হয়। উল্লেখ্য, শৈবে শিব-উপাসনা কেন্দ্রিক এবং শাক্ত শক্তি-উপাসনা কেন্দ্রিক সম্প্রদায়। একইভাবে হরিহর মূর্তির দ্বারা শিব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবতা বিষ্ণুকে একীভূত করা হয়ে থাকে। অর্ধনারীশ্বর ধারণাটির উদ্ভব ঘটেছিল যুগপৎ কুষাণ ও গ্রিক সংস্কৃতিতে। কুষাণ যুগে (৩০-৩৭৫ খ্রিষ্টাব্দ) অর্ধনারীশ্বরের মূর্তিতত্ত্বটি বিবর্তিত হয়। কিন্তু গুপ্ত যুগেই (৩২০-৬০০ খ্রিষ্টাব্দ) এই মূর্তিতত্ত্ব পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করে [Swami Parmeshwaranand pp. 55–6]।

ডঃ ওম প্রকাশ পাণ্ডে জীর "দ্রষ্টব্য জগতের যথার্থ" অংশ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হয়েছে।। 

এই ভাবে শিবা (মহাকালী) কে পৌরাণিক চিত্র প্রদান করে শিবের বক্ষঃস্থলের ওপর আরোহণ করে দেখানো হয়েছে। বহ্মাণ্ডে সমষ্টিরূপে ব্যাপ্ত ঘোর প্রাণ উর্জার সংযোগকে স্থিতির অনুসারে সাংকেতিক আকারেই দেখানো হয়েছে।

মহাকালী
মহাকালী


বিদ্যুতীকৃত কণা কখনও কখনও পৃথিবীর চৌম্বকীয় কবজ ভেদ করে এবং এর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে ঘর্ষণের কারণে সৌর বায়ুর এই জলগুলি উঠতে থাকে। ভারতীয় গ্রন্থে, এই উল্কাগুলিকে ভৌত আগুন, মহাকাশে প্রবাহিত বিদ্যুতের বিবর্তনকে রৌদ্র, বিদ্যুতের প্রভাবে গঠিত প্রোটন এবং কণা ইলেকট্রনের অণুকে (বা রৌদ্র) মারুত বা রুদ্রের পুত্র (মারুতো রুদ্রপুত্রসঃ ) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে  এবং সৌর-বায়ু ভৌত বায়ু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্ভবতঃ অন্তরিক্ষে ক্ষরিত হওয়া সোম নামক ঘনীভূত তরল শক্তির সংঘর্ষের কারণে, সূর্যের অতি উত্তপ্ত পৃষ্ঠগুলি কখনও কখনও তুলনামূলকভাবে শীতল হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ উপরে কালো দাগ দৃষ্টিগোচর হয় এবং এই সংঘাত সৌর বায়ু বা উৎসর্জনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু ভৌতিক অগ্নিকে রৌদ্রাগ্নির প্রকট স্বরূপ বিবেচনা করা হয়, অতঃ রুদ্রের এগারোটি রূপের মতো, আগুনকেও [fire] গুণ-দোষের আধারে গার্হপত্য (পুরাংগর্হাপত্য এবং নূতনগহপত্য), অনীয়া তথা ধীষ্ণয় (অর্থাৎ অগ্নিধীয়া,অচ্ছাবাকীয়,নেষ্ট্রীয়, পৌত্রিয়, ব্রাহ্মণচঞ্চনস্ত্রীয়, হোত্রীয়, প্রশাস্ত্রীয় ও মার্জালীয়  এগারোটি ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে)। রুদ্র-প্রাণের প্রাচুর্যের কারণে সৌরজগৎ থেকে যে তাপ / উষ্মা (সূর্য-তাপ) প্রবাহিত হয় তাকে প্রায়শই রৌদ্র বা রৌদ বলা হয়। 

অর্ধনারীশ্বর

একইভাবে, অগ্নিময় রুদ্রের উপরে, আপ (জল), বায়ু (প্রাণ) এবং সোম (অমৃত) এর ক্রমগুলি থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত উর্জা গুলির প্রতীকাত্মক অভিব্যক্তি প্রদান করে শিবের পৌরাণিক চিত্রগুলিতে তার কপালে অমৃতময় চন্দ্রমা রয়েছে যার সাথে বাযুরূপী ঢেউ জটা দোলাচ্ছে এবং জলরূপে সমাহিত হওয়া দেখানো হয়েছে। রূদ্রের এই স্বরূপে সৌরমণ্ডল স্থিত এবং এই সৌরমণ্ডলে গঙ্গার চিত্র অঙ্কিত করা হয়েছে, এবং সৌরকক্ষপথে বৃত্তাকারে কুন্ডলাকার সর্প কে ক্রমাগত প্রদক্ষিণ হওয়া গ্রহ নক্ষত্র কে প্রতীকী আকারে চিত্রিত করা হয়েছে। 



No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ