অসুর - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 August, 2022

অসুর

 অসুররা আমাদেরই মত মানুষ। ভারতেরই একটি সুপ্রাচীন জাতি। এই অসুরদেরই একটি শাখা ইরাণে গিয়ে বসবাস করেছিল। ইরাণীদের ধর্মগ্রন্থ আবেস্তাতে অহর' শব্দটি অসুর শব্দেরই অপভ্রংশ। শব্দটি খুবই মর্যাদাসূচক। আহুর মাজদা তাঁদের পরমেশ্বরের নাম। বেদে ১০৫ বার অসুর শব্দের উল্লেখ আছে। তার মধ্যে ১০ বারই ভাল অর্থে ব্যবহৃত। যেমন অসুর অসু ক্ষেপণে শত্রুণ ইত্যসুরঃ। 

অসুর

যারা শত্রুদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে পটু তারা অসুর। কিংবা অসুন প্রাণান্ রাতি দদাতি ইত্যসুর। যারা প্রাণদান করে, যাদের মধ্যে দুর্দম প্রাণশক্তির প্রকাশ দেখা যায়, সেই সমস্ত বলিষ্ঠ বীররাই অসুরপদবাচ্য। যা তার নিঘন্টু ও নিরুক্ত গ্রন্থে (৩/৮) বলেছেন যে অস্ ধাতু হতে অসুর শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। তাঁর মতে অস্ শব্দ মার অর্থ শ্বাসবায়ু, তা হতেও অসুর শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। তার মতে অসু শব্দ যার অর্থ শ্বাসবায়ু তা হতেও অসুর শব্দ নিষ্পন্ন হতে পারে।


বৈদিক যুগের গোড়ার দিকে যারাই শৌর্যে বীর্যে বড় হতেন, তাঁরাই অসুর উপাধিতে ভূষিত হতেন। রুদ্র, মরুং, দৌ, বরুণ, ত্বষ্টা, অগ্নি, বায়ু, পুষা, সবিতা, পর্জনা এঁদের অলৌকক শক্তি ছিল বলে এঁদেরকে বৈদিক ঋষিরা অসুর বলতেন_______

যথা মরুৎ (ঋগ্বেদ ৬৪/২)___তে জঙিয়ে দিব অমাস উক্ষণো রুদ্রস্য মর্যাসুরা: অরেপসঃ

রুদ্র (ঋগ্বেদ ৫/৪2/27)___ যক্ষরামহে সৌমনসায় কম্ভ্রম নমোভির্দেবং অসুর দেবস্য।

দ্যৌ (ঋগ্বেদ ৩১/১)___ ইন্দ্রায় হি দৌবসুরো ইত্যাদি।

ইন্দ্ৰ (ঋগ্বেদ ৫৪/৩)____বৃহচ্ছবা অসুরো বইনা কৃতঃ পুরো হরিভ্যাং বৃষভো রথো হি যঃ

বরুণ (ঋগ্বেদ ২/২/১০)___ ত্বং বিশ্বেষাং বরুনাসি রাজা যে চাদেবা অসুর যে চ মন্তঃ

অগ্নি (ঋগ্বেদ ৫/১২/১)____ প্রাপায়ে বৃহতে যজ্ঞিয়ায় ঋতস্য অসুৱায় মন্ম।


সেযুগে ধর্মীয় আচার আচরণকে কেন্দ্র করে ভারতীয়রা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছলেন। একদল বেদ মানতেন। সেই বেদপন্থীদের মধ্যে ভূত্ত অগ্নিপূজার প্রচলন করেন। তাঁরা যজ্ঞ নিয়ে মেতে রইলেন; এঁদেরই নাম হল - শতপথ ব্রাহ্মাণে তাই দেবের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। -যজ্ঞেন বৈ দেবাঃ (১-৫/৫/২৬), আর যারা যজ্ঞ করতেন দেব। না, তাঁদের নাম হয়ে গেল অসুর। প্রথম প্রথম দেব ও অসুরের মধ্যে খুব সৌলাতৃত্ব ছিল। কিন্তু পরে খুব শত্রুতা দেখা দেয়, অনেক বড় বড় যুদ্ধ হয়। দেবতাদের নেতা ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে বধ করেন। শত্রুতা সুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে 'অসুর' শব্দটি খারাপ অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকলো -যেমন অসুরাঃ রাক্ষসা: দেবনিন্দকাঃ ইত্যাদি। ১০৫ বারের মধ্যে ১০ বার বাদ দিলে বাকী ১৫ বার ঐ রকম খারাপ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই থেকেই কল্পনা-সম্রাট পুরাণকার থেকে আরম্ভ করে ঠাকুরমার ঝুলির রচয়িতার হাতে পড়ে অসুররা এক ভীতিপ্রদ অনানুষের পর্যায়ে নেমে গেল।


বৈদিক যুগের শেষভাগে যজ্ঞাবাদী আর্যদের সঙ্গে অনুবাদের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। অসুরজাতির অধিকাংশ ভারত ত্যাগ করে পারস্য ও তুর্কীস্থানে গিয়ে বাস করতে থাকেন। বাকী যাঁরা রইলেন, তাঁরা প্রয়াগ, ছোটনাগপুর, তিকাত বা কামরূপের দিকে চলে যান। পূর্বে যে তাম্রশাসনের উল্লেখ করেছি, সেই প্রশাসন বর্ণিত প্রয়াগের ত্রিলোচন পালদেব প্রভৃতিরা এই অসুর জাতিরই শাখা। ছোটনাগপুরে এখনও একটি জাতির সন্ধান পাওয়া যার সংখ্যায় অল্প হলেও এরা অসুর জাতি নামে পরিচিত। এরাও তাম্রপ্রিয়, ছোটনাগপুরের অজগনিতে কাজ করে। প্রত্নতত্ত্ববিদ্রা এদেরকে সেই প্রাচীনকালের বিধ্বস্ত ও বিতাড়িত অসুরদেরই বংশধর বলে মনে করেন।


ওদিকে, অসুরদের যে বড় দলটি ভারতের বাইরে গেলেন, এখন হতে ৫ হাজার বছর পূর্বে তারাই ব্যাবিলনের শতক্রোশ উত্তর পশ্চিমে এক সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। এই সাম্রাজ্যের নাম হয় অনুর বা "আসীরিয়া। টাইগ্রীস নদীর উপকূলে এঁদের যে রাজধানী স্থাপিত হয় তার নাম হয়। এক গ্রাম্য দেবতার নামও হয় – অসুর। আসিরীয়দের সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রাম্য দেবতা জাতীয় দেবতায় অসূস্থর। আমীরিরনের পরিণত হয়। আসিরীয় সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার একটি। ব্যাবিলনের বন্দর এরিভুতে যে দেবতার পূজা হত, তাঁরও নাম ছিল অসরি (Asan)। এই নাম যে অসুর শব্দের অপভ্রংশ তা ধারণা করা চলে। ব্যাবলনীয়দের রাজন্যবর্গের নামমালার মধ্যে অসক (Asuni), অসুর-নাসির- পাল (Asumasipal), অসুর বনিপাল (Asurbanipal) নামগুলি পাওয়া যায়। মোট কথা, যাদের বাসস্থানের নাম আসিরীয় বा অসুর, রাজাদের নাম অসুর উপাধিযুক্ত এবং উপাস্য দেবতার নাম অসরি বা অসূর তারাই অসুর নামে অভিহিত। 

ভারতীয় অসুরগণ দুর্গ নির্মাণে পটু ছিলেন। পুরাণে তার বহু প্রমাণ পাই। এদিকে আসিরীয় অসুরদের যে পরিচয় পাই, তাতে তারাও যে যুদ্ধবিদ্যায় পটু ছিলেন তারও ইতিহ সম্মত প্রমাণ আছে। তাঁদেরও দুর্ভেদ্য দুর্গ ছিল। কালক্রমে বাহুবলে এশিয়া মাইনর হতে ককেশাস পর্বত পর্যন্ত নিজেদের অধিকার বিস্তার করেছিলেন। ভারতের অসুরজাতি এবং আসিরীয় অসুরজাতি যে একই জাতি তা বলবার আরও তিনটি কারণ আছে ____


(ক) আসিরীয়রা দুরকম শ্মশান তৈরী করতেন। একটি ছিল তাদের তাঁবুর আকৃতি তার একটি ডিম্ব শতপথ ব্রাহ্মণে দেখি দেবতাদের শ্মশান ছিল চতুরস্রাকার আর অসুরদের শ্মশ্মশান ছিল গোলাকৃতি যা আসূর্য প্রাচ্যাস্ত যে ত্বং পরিমণ্ডলানি শ্মশানানি করতে। 


(খ) দ্বিতীয়ত: আসীরায় অসুররা মার্তুকের প্রতীক পূজা করতেন। এই প্রতীক বাগাকৃতি Strom God এরপূজাও এদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এদিকে ভারতীয় অসুররাও ছিলেন রুদ্রোপাসক। বেদে কারও Shor God রূপে চিত্রিত। বাণাসুরের পতাকায় যে 'বাগ' প্রতীক থাকতো, তার বর্ণনা আমরা মহাভারতে পাই।

 (গ) তৃতীয়তঃ, ভারতীয় অসুররা মায়া বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। যার জন্য তাদেরকে মায়াবী' বলা হয়। আসিরীয় অসুরগণও যে অলৌকিক মায়া বিদ্যার অনুশীলন করতেন তা ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দে ও Smith Assyrian Discoveries নামক গ্রন্থে বহু গবেষণামূলক তথ্যের দ্বারা প্রমাণ করেছেন। তিনি আমিনীনাদের কতবাগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেবদেবীর মূর্তিও উদ্ধার করেছেন। এগুলি British Museum Bab Room 5 (No. 99 1000) রক্ষিত আছে।

লেখকঃ শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল মহাশয়

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ