মূর্ত্তি পূজা বিষয়ে ভাগবত গীতা বেদ প্রমান - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

07 August, 2022

মূর্ত্তি পূজা বিষয়ে ভাগবত গীতা বেদ প্রমান

বেদে মূর্তি পূজা

 

প্রথমে দেখি ঈশ্বরের স্বরূপ কেমন

••নিরাকার ও সর্বব্যাপক♦

ঈশ্বর বা ব্রহ্ম হলেন সর্বব্যাপক।ব্রহ্মান্ডের সমস্ত কিছু বস্তুকে তিনি আচ্ছাদন করে আছেন।(যর্জুবেদ_অধ্যায়_40, মন্ত্র_1)। 

এইজন্য তিনি নিরাকার(যর্জুবেদ,40/8,ঈশোপনিষদ_8)। অর্থাৎ ঈশ্বর আকার বা ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট নন।কারণ,আকার ধারণকারী জীব,এক সময়ে,সব জায়গায় অবস্থান করতে পারে না।

এই বিষয়ে,বেদ,উপনিষদ ও গীতার অনেক প্রমাণ আছে দেখুন-------------

বেদের যে মন্ত্রটি নিয়ে সবচেয়ে অপব্যাখ্যা করা হয়,সেই মন্ত্রটি দেখুন-

♦সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।

স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্।।

ঋগ্বেদ_10/90/1, 

শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ_3/14

অর্থ#সেই পূর্ণস্বরূপের অনন্ত মস্তক,অনন্ত নয়ন, অনন্ত চরণ।তিনি এই ব্রহ্মাণ্ডকে সর্বতোভাবে পরিব্যাপ্ত করে এবং অতিক্রম করে,অসীমরূপে বিদ্যমান আছেন।

এইমন্ত্রে,নিরাকার, সর্বব্যাপক ঈশ্বরের অনুবৃত্তি রয়েছে।ঈশ্বর সব জায়গায় অবস্থান করছেন,এটাই এই মন্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

♦বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো বিশ্ববাহুরুত বিশ্বতস্পাৎ। 

সং বাহুভ্যাং ধমতি সং পতত্রৈ র্দ্যাবাভূমী জনয়ন্ দেব একঃ।।

যর্জুবেদ-17/19

শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্_3/3

অর্থ#যত চোখ,যত মুখ, যত হাত,যত পা আছে,সব ঈশ্বরেরই।তিনিই মানুষ আদিদের বাহু সংযুক্ত করেন এবং মানুষাদিকে পা ও পাখি আদিকে পাখনা সংযুক্ত করেন।দ্যুলোক ও ভূলোক সৃষ্টি করে তাহার অদ্বিতীয় প্রকাশকরূপে ঈশ্বর বিরাজিত।

বিচার করার বিষয় হল এই যে,এখানে কোন স্থুল শরীরধারী ঈশ্বরের কথা বলা হয় নি। এখানেও ঈশ্বরের সর্ব ব্যাপকতার অনুবৃত্তি আছে।

এই বিষয়ে, যর্জুবেদ_অধ্যায়_ 40,মন্ত্র_8 এর প্রমাণ দেখুন-----

যর্জুবেদে,(অধ্যায়_40,মন্ত্র_8) খুব স্পষ্টভাবে বলা আছে যে,ঈশ্বর শরীর ধারণ করেন না অর্থাৎ ঈশ্বর নিরাকার।ঈশ্বরের অবতার বা সাকার রূপ হওয়া সম্ভব নয়।

{ঈশোপনিষদ্, যর্জুবেদের 18টি মন্ত্র নিয়ে গঠিত। যর্জুবেদের,40/8 মন্ত্রটি পাওয়া যায়,ঈশোপনিষদের,8 নং মন্ত্রে।এই মন্ত্রের, শংকারাচার্য যা ভাষ্য করেছেন,তা মূল সংস্কৃত ভাষ্যসহ বাংলা অনুবাদ ও পদের অর্থ সহকারে দিলাম----------------  }

♦স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণ-

মস্নাবিরং শুদ্ধপাপবিদ্ধম্।

কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূ-

র্যাথাতথ্যতোহর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।

ঈশোপনিষদ:মন্ত্র:8

যর্জুবেদ:অধ্যায়_ 40,মন্ত্র নং_8

ব্যাখ্যা:(অন্বয়)------

সঃ(সেই পরমাত্নাই), পর্যগাৎ ( সর্বত্র গিয়েছেন অর্থাৎ সর্বব্যাপী), [সঃ] (তিনিই), শুক্রম্ (জ্যোর্তিময়), অকায়ম্(শরীরহীন), অব্রণম্ (ক্ষতহীন), অস্নাবিরং (স্নায়ু বা শিরাবিহীন), শুদ্ধম্(পবিত্র), অপাপবিদ্ধম (পাপ দ্বারা অবিদ্ধ বা ধর্ম অধর্মাদি রহিত), কবিঃ(ক্রান্তদর্শী), মনীষী(সর্বজ্ঞ),পরিভূঃ (সর্বোপরি বিদ্যমান),স্বয়ম্ভূঃ (নিজেই নিজের কারণ),[সঃ] (তিনি), শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ (নিত্যকাল ধরে), [সংবৎসরাখ্য প্রজাপতিদের জন্য], অর্থান্( বিষয় সমূহ বা কর্তব্য পদার্থসমূহ), যাথা-তথ্যতঃ(লোকের যথাযথ কর্মফল ও সাধনা অনুসারে), ব্যদধাৎ(বিধান করেছেন)।

অনুবাদ-----

তিনি অর্থাৎ পরমাত্মা, সর্বব্যাপী,জ্যোতির্ময় ও অশরীরী(অশরীর শব্দে পরমাত্মার লিঙ্গ শরীরের নিষেধ) ক্ষতরহিত,শিরাহীন, স্নায়ুহীন,(ক্ষতরহিত ও শিরাহীন শব্দে, স্থূল শরীরের নিষেধ), নির্মল (নির্মল শব্দে,কারণ শরীরের নিষেধ করা হল) ও অপাপবিদ্ধ।তিনি, সর্বদর্শী,সর্বজ্ঞ, সর্বোপরি বিদ্যমান ও স্বয়ম্ভূ।পরমাত্না, চিরকাল ধরে, লোকের যথাযথ কর্মফল অনুসারে কর্তব্য বিধান করছেন।

এইবার গীতা ও উপনিষদের প্রমাণ দেখুন---------

♦সর্বতঃ পাণিপাদং তৎ সর্বতোহক্ষিশিরোমুখম্।

সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি।।

গীতা_13/14, 

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ_3/16

অর্থ#সর্বত্র যাঁর হাত ও পা,সর্বত্র যাঁর চোখ,মাথা ও মুখ,সর্বত্র যাঁর কান,তিনি ইহলোকে সমস্ত ব্যাপ্ত করে অবস্থান করেন।

অর্থাৎ,ঈশ্বর সমস্ত প্রাণী শরীরে অবস্থান করছেন।

এই শ্লোক পড়ে অনেক সময়,ভ্রান্ত ধারণা হতে পারে যে,ঈশ্বর শরীরধারী।

এইজন্য তার পরের শ্লোকেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দেখুন--------

♦সর্বেন্দ্রিয়গুণানাং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্।

অসক্তং সর্বভৃচ্চৈব নির্গুণং গুণভোক্তৃ চ।।

গীতা_13/15

অর্থ#ব্রহ্মের ইন্দ্রিয়গুলি সকল গুণের প্রকাশক হলেও তিনি ইন্দ্রিয় বর্জিত। তিনি সকলের সঙ্গে সম্বন্ধহীন হয়েও সকলকেই ধারণ করে রয়েছেন।তিনি নির্গুণ হয়েও সকল গুণের প্রতিপালক।

♦সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্।

সর্বস্য প্রভুমীশানং সর্বস্য শরণং বৃহৎ।।

শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ_3/17

অর্থ#ব্রহ্ম নিখিল ইন্দ্রিয়ের গুণবিশিষ্ট-রূপে প্রতিভাত হন।অথচ তিনি সমুদয় ইন্দ্রিয়ব্যাপার-শূন্য।তিনি সকলেরই শক্তিশালী নিয়ন্তা সকলের আশ্রয়, এবং পরম কারণ।

♦অপাণিণাদো জবনো গ্ৰহীতা।

পশ্যতচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ

স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা

তমাহুরগ্ৰ্যং পুরুষং মহান্তম্

।।

শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ্_3/19

অর্থ#ব্রহ্মের,হাত-পা না থাকলেও তিনি দ্রুত গমন করেন এবং সর্ববস্তু গ্রহণ করেন,চোখ না থাকলেও দর্শন করেন,কান না থাকলেও শ্রবণ করেন। তিনি জ্ঞাতব্য সর্ব বস্তু জানেন,অথচ তাঁকে কেউ জানে না।ব্রহ্মবিদগণ তাঁকে সর্বাগ্ৰণী,পরিপূর্ণ এবং মহান বলে থাকেন।

বিঃ দ্রঃ_এইবার নিজের যুক্তি দিয়ে ভাবুন।অসীম বস্তু সবসময় নিরাকার হয়।যেমন,মহাকাশ।ঈশ্বর তো সব জায়গায় আছেন অর্থাৎ জগতের সমস্ত অণু-পরমাণু ব্যাপ্ত করে আছেন।দেহধারণ করলে,ঈশ্বরের সর্বব্যাপকতা লোপ পায়।কারণ দেহধারী কখনোই সব জায়গায় থাকতে পারবেন না।

যাঁরা ঈশ্বর সাকার হতে পারেন বলে,উলম্ফন করেন,তাঁরা হলেন,বেদ বিরোধী নাস্তিক।


ভাগবত পুরাণ- 3/29/21-22


"অহং সর্বেষু ভূতেষু ভূতাত্নাবস্থিতঃ সদা।

তবজ্ঞায় মাং মর্ত্যঃ কুরুতেহর্চা বিড়ম্বনম্।।

যো মাং সর্বেষু ভূতেষু সন্তমাত্নানমীশ্বরম্।

হিত্বার্চাং ভজতে মৌঢ্যাদ্ ভস্মন্যেব জুহোতি সঃ।।


-অর্থ- আমি,অন্তর্যামীরূপে সর্বদা সকল প্রাণীতে অবস্থান করি।মানব সেই সর্বভূতস্থিত আমাকে অবজ্ঞা করে,প্রতিমাদিতে যে পূজা করে,তা বিড়ম্বনা মাত্র।যে লোক,সর্বভূতে বিরাজমান অন্তর্যামী ঈশ্বর আমাকে ত্যাগ করে,মূর্খতা বশতঃ প্রতিমার ভজনা করে,সে ভস্মে আহুতি দেয়।

ভাগবত পুরাণ ১০/৮৪/১৩
ভাগবত পুরাণ ১০/৮৪/১৩ গীতাপ্রেসে মাটি, পাথর কাঠ প্রভৃতি বিকার সমূহ পদার্থে ইষ্ট ভক্তি রাখে তারা অধম পশু তুল্য। 


যৎ তু কৃৎস্নবদেকস্মিন্ কার্যে  সক্তমহৈতুকম্।

অতত্ত্বার্থবদল্পঞ্চ তৎ  তামসমুদাহৃতম্।।

গীতা_18/22

অনুবাদ# যে জ্ঞান একটি মাত্র কার্যে অর্থাৎ দেহ বা প্রতিমায় সমগ্ররূপে আসক্ত অর্থাৎ যে জ্ঞান, কোন প্রতিমাকে সর্বস্বরূপ  ব্রহ্মজ্ঞান করে,যা, অহৈতুক অর্থাৎ অযৌক্তিক,অতত্ত্বার্থবৎ অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞানরহিত এবং অল্প,সে জ্ঞান তামস বলে কথিত হয়।

[এক কার্যে অর্থাৎ স্থূল শরীরে অথবা প্রতিমাদিতে সম্পূর্ণবৎসক্ত অর্থাৎ 'এই শরীর মাত্রই আত্মা' এবং 'প্রতিমাই ঈশ্বর' এই রকম যুক্তিবিরুদ্ধ জ্ঞানই হল তামসিক জ্ঞান।]

{♦শংকারাচার্য কৃত ভাষ্য♦

'যৎ তু' জ্ঞানং 'কৃৎস্নবৎ' সমস্তবৎ সর্ববিষয়ম্ ইব 'একস্মিন্ কার্যে' দেহে বহিঃ বা প্রতিমাদৌ 'সক্তম্'----এতাবান্ এব আত্না ঈশ্বরো বা ন অতঃ পরম্ অস্তি ইতি যথা নগ্নক্ষপণকাদীনাং শরীরানুবর্তী দেহপরিমাণো জীব ঈশ্বরো বা পাষাণদার্বাদিমাত্র ইতি এবম্ একস্মিন্ কার্যে সক্তম্।

♦ভাষ্যানুবাদ# যে জ্ঞান কোনও এক কার্যে অর্থাৎ দেহে অথবা বহিস্থ প্রতিমাদিতে সর্ববস্তুবিষয়ক সম্পূর্ণ জ্ঞানের মত অভিনিবিষ্ট হয়----অর্থাৎ তারা এইরূপ মনে করে যে,আত্মা এবং ঈশ্বর এই পর্যন্তই অর্থাৎ দেহ বা প্রতিমাপরিমাণই,এর অতিরিক্ত আত্মা বা ঈশ্বর বলে আর কিছু নেই,যেমন নগ্নক্ষপণকাদি জৈনদিগম্বরদের মত---- শরীরানুবর্তী দেহ-পরিমাণ জীব,অথবা পাষাণ,কাঠ প্রভৃতি দ্বারা নির্মিত প্রতিমা মাত্রই ঈশ্বর।এইভাবে এরা কোন একটি বিশিষ্ট প্রাকৃত পরিমাণকার্যে আসক্ত অর্থাৎ সন্তুষ্ট থাকে}


শ্রীকৃষ্ণ কি মূর্তি পূজায় বিশ্বাস করতেন•সমীক্ষা•♦

বৈষ্ণব সম্প্রদায়রা তো অন্য প্রমাণ মানতেই চান না,তাই বৈষ্ণবদের অতিপ্রিয় ভাগবত পুরাণ থেকে প্রমাণ দেখাবো-----

মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বচন শুনুন-

যস্যাত্নবুদ্ধি কুনপে ত্রিধাতুকে।

স্বধীঃ কলত্রাদিষু ভৌম ইজ্যধীঃ।।

যত্তীর্থ বুদ্ধিঃ সলিলে ন কর্হিচিজ্জনেষবভিজ্ঞেসু স এব গোখরঃ।।

ভাগবত পুরাণ_10/84/13

(শ্রীকৃষ্ণ বলছেন),

যার, ত্রিধাতুযুক্ত (কফ-বায়ু-পিত্ত) দেহে আত্নবুদ্ধি,কলত্রাদিতে আত্নীয়বুদ্ধি,ভূবিকারে অর্থাৎ মৃন্ময়,পাষাণ মূর্তিতে দেবতাবুদ্ধি বা জলে তীর্থবুদ্ধি আছে, কিন্তু সাধুদের যে ব্যক্তি সেরূপ অর্থাৎ দেবতাজ্ঞান করে না,সে ব্যক্তি গরুর ঘাস বহনকারী গাধার মত।

অর্থাৎ,গাধা তেমন নিজে পশু হয়েও,অন্য পশু গরুর জন্য ঘাস বয়ে মরে অথচ নিজের জন্য ঘাস জোটে না,সেই রকম যে লোক ভগবানের প্রত্যক্ষ জীবন্ত স্বরূপ সাধু মহাপুরুষকে অবজ্ঞা করে জড়মূর্তির পূজার জন্য মন্দিরে এবং জলময় স্থানগুলোকে তীর্থ মনে করে দৌড়ে বেড়ায় সেই লোক ঠিক ওই গাধার মত কেবল পন্ডশ্রম করে মরে!!!

এইবার গীতার প্রমাণ দেখুন--------

যৎ তু কৃৎস্নবদেকস্মিন্ কার্যে  সক্তমহৈতুকম্।

অতত্ত্বার্থবদল্পঞ্চ তৎ  তামসমুদাহৃতম্।।

গীতা_18/22

এই শ্লোকটির উপর প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব আচার্য ও চৈতন্য মহাপ্রভুর অতি প্রিয়,শ্রীধর স্বামীর টীকা দেখুন-------

"একস্মিন্ কার্যে দেহে বা প্রতিমাদৌ বা কৃৎস্নবৎ পরিপূর্ণবৎ সক্তম্ এতাবানেবাত্না ঈশ্বরো বেত্যাভিনিবেশ যুক্তম্।অহৈতুকম্ নিরুপপত্তিকম্।

অতত্ত্বার্থবৎ পরমার্থাবলম্বনশূন্যম্।

অতএবাল্পম্ তুচ্ছম্।অল্পবিষয়াত্বাৎ।অল্পফলত্বাচ্চ।যদেবম্ভূতম্ জ্ঞানম্ তত্তামসমুদাহৃতম্।।"

অর্থাৎ, যে জ্ঞানে একমাত্র দেহে বা প্রতিমাদিতে পরিপূর্ণ ঈশ্বর অবস্থিত আছেন,এইরূপ অভিনিবেশ জন্মে,এক পরিছিন্ন মূর্তি পরিপূর্ণবৎ প্রতীয়মান হয়,সেই জ্ঞানে কোন পরমার্থ লাভ হয় না।অতএব,অযথার্থ, যুক্তিহীন ও তুচ্ছ জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলা হয়।

অর্থাৎ,যে জ্ঞানে মনে হয়,ঈশ্বর শরীর ধারণ করেন,মূর্তির মধ্যে ঈশ্বর আছেন বা মূর্তিই ঈশ্বর,সেই জ্ঞান হল খুব নিম্নমানের,তামসিক জ্ঞান।

বৈষ্ণবরা তো শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং ঈশ্বর বলেন।স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ মূর্তি পূজকদের গাধা বলেছেন।

আপনাদের চৈতন্য মহাপ্রভুর অতি প্রিয় বৈষ্ণব আচার্য,শ্রীধর স্বামী মূর্তিকে ঈশ্বর ভেবে পূজা করাকে তামসিক জ্ঞান বলেছেন!!!

আর্য সমাজ মূর্তি পূজার বিরোধিতা করে বলে তারা যদি কাঠ মোল্লা হয়,তাহলে মূর্তি পূজার বিরোধিতা করা, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীধর স্বামী এখানে কোন স্তরের মোল্লা?!!


ঈশ্বর সাকার না নিরাকার••সমীক্ষা♦
যর্জুবেদে,(অধ্যায়_40,মন্ত্র_8) খুব স্পষ্টভাবে বলা আছে যে,ঈশ্বর শরীর ধারণ করেন না অর্থাৎ ঈশ্বরের অবতার বা সাকার রূপ হওয়া সম্ভব নয়।
ঈশোপনিষদ্, যর্জুবেদের 18টি মন্ত্র নিয়ে গঠিত। যর্জুবেদের,40/8 মন্ত্রটি পাওয়া যায়,ঈশোপনিষদের,8 নং মন্ত্রে।এই মন্ত্রের, শংকারাচার্য যা ভাষ্য করেছেন,তা মূল সংস্কৃত ভাষ্যসহ বাংলা অনুবাদ ও পদের অর্থ সহকারে দিলাম----------------
স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণ-
মস্নাবিরং শুদ্ধপাপবিদ্ধম্।
কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূ-
র্যাথাতথ্যতোহর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।
ঈশোপনিষদ:মন্ত্র:8
যর্জুবেদ:অধ্যায়_ 40,মন্ত্র নং_8
ব্যাখ্যা:(অন্বয়)------
সঃ(সেই পরমাত্নাই), পর্যগাৎ ( সর্বত্র গিয়েছেন অর্থাৎ সর্বব্যাপী), [সঃ] (তিনিই), শুক্রম্ (জ্যোর্তিময়), অকায়ম্(শরীরহীন), অব্রণম্ (ক্ষতহীন), অস্নাবিরং (স্নায়ু বা শিরাবিহীন), শুদ্ধম্(পবিত্র), অপাপবিদ্ধম (পাপ দ্বারা অবিদ্ধ বা ধর্ম অধর্মাদি রহিত), কবিঃ(ক্রান্তদর্শী), মনীষী(সর্বজ্ঞ),পরিভূঃ (সর্বোপরি বিদ্যমান),স্বয়ম্ভূঃ (নিজেই নিজের কারণ),[সঃ] (তিনি), শাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ (নিত্যকাল ধরে), [সংবৎসরাখ্য প্রজাপতিদের জন্য], অর্থান্( বিষয় সমূহ বা কর্তব্য পদার্থসমূহ), যাথা-তথ্যতঃ(লোকের যথাযথ কর্মফল ও সাধনা অনুসারে), ব্যদধাৎ(বিধান করেছেন)।
অনুবাদ-----
তিনি অর্থাৎ পরমাত্মা, সর্বব্যাপী,জ্যোতির্ময় ও অশরীরী(অশরীর শব্দে পরমাত্মার লিঙ্গ শরীরের নিষেধ) ক্ষতরহিত,শিরাহীন, স্নায়ুহীন,(ক্ষতরহিত ও শিরাহীন শব্দে, স্থূল শরীরের নিষেধ), নির্মল (নির্মল শব্দে,কারণ শরীরের নিষেধ করা হল) ও অপাপবিদ্ধ।তিনি, সর্বদর্শী,সর্বজ্ঞ, সর্বোপরি বিদ্যমান ও স্বয়ম্ভূ।পরমাত্না, চিরকাল ধরে, লোকের যথাযথ কর্মফল অনুসারে কর্তব্য বিধান করছেন।
বিঃ দ্রঃ_এইবার নিজের যুক্তি দিয়ে ভাবুন।অসীম বস্তু সবসময় নিরাকার হয়।যেমন,মহাকাশ।ঈশ্বর তো সব জায়গায় আছেন অর্থাৎ জগতের সমস্ত অণু-পরমাণু ব্যাপ্ত করে আছেন।দেহধারণ করলে,ঈশ্বরের সর্বব্যাপকতা লোপ পায়।কারণ দেহধারী কখনোই সব জায়গায় থাকতে পারবেন না।
যাঁরা বলেন,ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান তাই সাকার হতে পারেন,তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি,যেখানে স্বয়ং ঈশ্বর বেদবাণীতে বলছেন,তিনি স্থুল,সূক্ষ্ম ও কারণ শরীর ধারণ করেন না,সেখানে আপনি ও আপনাদের গুরুরা কি, ঈশ্বরের চেয়ে বেশি জ্ঞানী হয়েছেন নাকি?!!!
কিছু অতিজ্ঞানী মূর্খ বৈষ্ণব বলেন, ঈশ্বরের শরীর অপ্রাকৃত!!ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেছেন, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে।তাহলে নিজের অপ্রাকৃত শরীর কোন উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন?!!এই অপ্রাকৃত শরীরের উপাদান,ঈশ্বর মনে হয়,বৈষ্ণবদের ঘর থেকে সংগ্ৰহ করেন!!!
এইজন্য বলা হয়,বেদ বিরোধী নাস্তিক সম্প্রদায়ের নাম হল,বৈষ্ণব।
(যাঁরা আগ্ৰহী তাঁদের জন্য, শংকারাচার্য দ্বারা কৃত সংস্কৃত ভাষ্য দিলাম।)
♦শংকর-ভাষ্যম্♦
যোহয়মতীতৈর্মন্ত্রৈরুক্ত আত্না, স স্বেন রূপেণ কিংলক্ষণ ইত্যাহ অয়ং মন্ত্রঃ। স পর্য্যগাৎ, স যথোক্ত আত্না পর্য্যগাৎপরি সমন্তাৎ অগাৎ গতবান্ আকাশবদ্ব্যাপীতর্থ্যঃ। শুক্রং শুদ্ধং জ্যোতিষ্মৎ দীপ্তিমানিত্যর্থঃ।অকায়মশরীরঃ--
লিঙ্গশরীরবর্জিত ইত্যর্থঃ।অব্রণমক্ষতম্।অস্নাবিরং--স্নাবাঃ শিরা যস্মিষ্ ন বিদ্যন্ত ইত্যস্নাবিরম্।অব্রণমস্নাবিরমিত্যেতাভ্যাং স্থুলশরীরপ্রতিষেধঃ। শুদ্ধং নির্মলমবিদ্যামলরহিতমিতি কারণ শরীর প্রতিষেধঃ।অপাপবিদ্ধং ধর্মাধর্মাদিপাপবর্জিতম্।শুক্রমিত্যাদীনি বচাংসি পুংলিঙ্গত্বেন পরিণেয়ানি। 'স পর্য্যগাৎ' ইত্যুপক্রম্য 'কবির্মনীষী' ইত্যাদিনা পুংলিঙ্গত্বেনোপসংহারাৎ।কবিঃ ক্রান্তদর্শী---সর্বদৃক্। 'নান্যোহতোহস্তি দ্রষ্টা'(বৃ.আ. 3/7/23) ইত্যাদিশ্রুতেঃ। মনীষী মনস ঈষিতা-----সর্বজ্ঞ ঈশ্বর ইত্যর্থঃ।পরিভূঃ সর্বেষাং পরি উপরি ভবতীতি পরিভূঃ।স্বয়ম্ভূঃ স্বয়মেব ভবতীতি,যেষামুপরি ভবতি,যশ্চোপরি ভবতি,সঃ সর্ব স্বয়মেব ভবতীতি স্বয়ম্ভূঃ।স নিত্যমুক্ত ঈশ্বরো যাথাতথ্যতঃ, সর্বজ্ঞত্বাদ্,যথাতথাভাবো যাথাতথ্যং তস্মাদ্ যথাভূতকর্মফলসাধনতোহ-র্থান্ কর্তব্যপদার্থান্ ব্যদধাদ্বিহিতবান্ যথানুরূপং ব্যভজদিত্যর্থঃ শাশ্বতীভ্যো নিত্যাভ্যঃ সমাভ্যঃ সংবৎসরাখ্যেভ্যঃ প্রজাপতিভ্য ইত্যর্থঃ।।

ওম্ ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুজ্ঞীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্।।
যর্জুবেদ#40/1, ঈশোপনিষদ্-1
পদের অর্থ#
জগত্যাং(গতিশীল ব্রহ্মান্ডে বা পৃথিবীতে)যৎ কিঞ্চ(যা কিছু)জগৎ(চলমান বা অনিত্য)[বস্তু আছে] ইদং(এই) সর্বম্(সবকিছু) ঈশা(ঈশ্বরের দ্বারা) বাস্যম্(আচ্ছাদনীয়) তেন(সেই) ত্যক্তেন(ত্যাগের দ্বারা) ভুজ্ঞীথাঃ(আত্নাকে পালন কর) কস্যস্বিৎ(কাহারও) ধনম্(ধন), মা গৃধঃ (আকাঙ্খা করো না)[কারণ]কস্য স্বিৎ ধনম্?(ধন আবার কার? অর্থাৎ ধন কারো নয়।)
অনুবাদ- গতিশীল বিশ্বে বা পৃথিবীতে যা কিছু অনিত্য বস্তু আছে সমস্তই পরমাত্মার দ্বারা, আচ্ছাদনীয়। ত্যাগের দ্বারা আত্মাকে পালন কর, কারো ধনে লোভ করো না অথবা ধনে আকাঙ্ক্ষা করো না।কারণ ধন আবার কার?
এই মন্ত্রে,ঈশ্বর উপদেশ দিচ্ছেন,সৎভাবে ও নির্লোভ হয়ে জীবন যাপন করার জন্য।
আর যাঁরা,সন্ন্যাসী হতে চান,তাঁরা যেন,সব ধরনের, পার্থিব ধনের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেন। প্রকৃতপক্ষে,ত্যাগ হল প্রকৃত সন্ন্যাসীর বৈশিষ্ট্য।

পরমেশ্বর নিরাকার এবং আকাশবৎ সর্ব্বব্যাপক বলিয়া কোন পদার্থ হইতে তাঁহার কিংবা কোন পদার্থের তাঁহা হইতে পৃথক হওয়া অসম্ভব। আবার পরস্পরের মধ্যে ব্যাপ্য-ব্যাপক সম্বন্ধ বশতঃ একও হইতে পারে না। অর্থাৎ ব্যাপ্য-ব্যাপক মিলিত অথচ সর্ব্বদা পৃথক থাকে। এক হইলে নিজের মধ্যে ব্যাপ-ব্যাপকভাব সম্বন্ধ কখনও ঘটিতে পারে না। বৃহদারণ্যকের অন্তর্য্যামী ব্রাহ্মণে ইহা স্পষ্টরূপে লিখিত আছে। ব্রহ্ম অখন্ড, ব্রহ্ম জীব ও প্রকৃতি পৃথক। যদি পৃথক না মানা হয় তাহা হইলে কিছু স্থানে ব্রহ্ম অজ্ঞানী ও কিছু স্থানে জ্ঞানী মানিতে হইবে। তিনি চেতন, অখন্ড ব্রহ্মের এক দেশে আবরণের প্রভাব সর্ব্বদেশে হওয়ায় সমস্ত ব্রহ্মও অজ্ঞান হইবে যা সম্ভব নহে। যাঁহার কল্পনা মিথ্যা, তিনি কখনো সত্য হইতে পারেন ?

"শরীরে ভবঃ শারীরঃ"; [অনুপপত্তেস্তু ন শারীরঃ [বেদান্তসূত্র ১।২।৩ ব্যসমুনিকৃত] শরীরধারী জীব ব্রহ্ম নহে,কারণ ব্রহ্মের গুণ-কর্ম্ম-স্বভাব জীবে ঘটে না।। সকল জীবের মধ্যে পরমাত্মা অন্তর্য্যামী রূপে স্থিত আছেন। প্রকৃতি এবং জীব হইতে ব্রহ্ম ভিন্ন [বেদান্ত সূত্র ১।১।২২], সর্ব্বব্যাপক ব্রহ্মে জীবের যোগ অথবা জীবে ব্রহ্মের যোগ প্রতিপাদিত হওয়াতে জীব এবং ব্রহ্ম ভিন্ন। কারণ ভিন্ন পদার্থের মধ্যেই যোগ হইয়া থাকে। ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হইয়া জীব আনন্দস্বরূপ হয়-এই প্রাপ্তি বিষয় ব্রহ্ম এবং পাইবার পাত্র জীব, জীব এবং ব্রহ্মএক নহে।
মুণ্ডকোপনিষদ্ ২।১।২ দিব্য,শুদ্ধ অমূর্ত্ত, সকলের মধ্যে পূর্ণ, অন্তরে বাহিরে নিরন্তর ব্যাপক, অজ, জন্ম-মরণ-শরীরধারণাদি রহিত, শ্বাস-প্রশ্বাস-শরীর-মন সম্বন্ধরহিত, প্রকাশস্বরূপ ইত্যাদি পরমেশ্বরের বিশেষণ।। যজুর্বেদ অনুযায়ী যাহারা ব্রহ্মের স্থানে অসম্ভূতি অর্থাৎ অনুৎপন্ন, অনাদি প্রকৃতি-রূপ কারণের উপাসনা করে, তাহারা অন্ধকার অর্থাৎ অজ্ঞানতা এবং দুঃখসাগরে নিমগ্ন হয়।
যাহারা ব্রহ্মের স্থানে সম্ভূতিকে অর্থাৎ কারণ হইতে উৎপন্ন কার্য্যরূপ পৃথিব্যাদি ভূত, পাষাণ, বৃক্ষাদির অবয়ব এবং মনুষ্যাদরি শরীরের উপাসনা করে, তাহারা উক্ত অন্ধকার অপেক্ষাও অধিকতর অন্ধকারে নিপতিত হয়ে মহামূর্খরূপে চিরকাল ঘোর দুঃখরূপ নরকে পতিত হইয়া মহাক্লেশ ভোগ করে [যজু০ ৪০।৯]। যিনি সমস্ত জগতে ব্যাপক, সেই নিরাকারের প্রতিমা, পরিমাণ, সাদৃশ্য অথবা মূর্ত্তি নাই [যজু০ ৩২।৩]।।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতিখণ্ড ৫৪ অধ্যায় ঋষিদের গরু খাওয়ার কাহিনী! 
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ/ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড/৭২ অধ্যায়/ ৫৩-৬৯ শ্লোক। অনুবাদক - পঞ্চানন তর্ক রত্ন, নবভারত পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত, নিম্নলিখিত লিঙ্ক থেকে পুরাণের পৃষ্ঠার ছবি সহ ছবি দেওয়া হলো দেখে নেবেন সকলে,
এখানে যা বলা হয়েছে সংক্ষেপে বলছি- শ্রীকৃষ্ণ কামুক কুব্জা কে বুকে ধারণ করে শৃঙ্গার ও চুম্বন করতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণ নিজের নখ দিয়ে কুব্জার স্তনযুগল ও শ্রোণীমণ্ডল ক্ষত বিক্ষত করলেন এবং দশন(দাঁত) দ্বারা দংশন (কামড় দেওয়া) করে অধরদেশ(ঠোঁট) ক্ষত বিক্ষত করলেন। শেষে শ্রীকৃষ্ণের বীর্যপাত হলো, কুব্জা মুর্চ্চাপন্ন হয়ে গেল এবং তার দিন রাত্রি কিছুই বোধ ছিল না।
এখানেই শেষ নয়, আরও আছে____
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ/ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড/১১৫ অধ্যায়/৬০-৬২ শ্লোক।
এখানে বলা হচ্ছে -পরম লম্পট দুষ্ট গোপাল, পুতনা কে হত্যা করে স্ত্রী হত্যাপাপে লিপ্ত হয়েছে, আবার মথুরায় এসে মৈথুন যোগে কুব্জা কে হত্যা করেন, তিনি অতি নিষ্ঠুর যোনিলোলুপ।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড, ১১৫ অধ্যায়, ৬১-৬২ শ্লোক। শ্রীকৃষ্ণ কুব্জার সাথে মৈথুন করে করেই হত্যা করে ফেলে ছিল কুব্জা কে।
গীতা ৩/২১,২২,২৩,২৪ এর অভিপ্রায় এই যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যেমন আচরণ করে, সাধারণ মনুষ্যরা তা মেনে চলে। শ্রীকৃষ্ণ এই কারণেই কর্ম করে যাতে মনুষ্যরা কর্ম ত্যাগ না করে। শ্ৰীকৃষ্ণ যদি কর্ম না করে তাহলে তার দেখে দেখে সকল মনুষ্যও কর্ম ত্যাগ করবে। (এখানে ধর্মীয় কর্মের কথা বলা হয়েছে) ।
শিবের মূত্রেন্দ্রিয় হতে শুক্রাচার্য এর জন্ম, দেখুন সংক্ষেপে----
🍍দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের উৎপত্তির পৌরাণিক বৃত্তান্ত🍍
শিবপুরাণ, রুদ্রসংহিতা, ৪৭-৪৯ অধ্যায়
এক সময় দেবতা আর দৈত্যদের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ চলছিল, সেখানে বিরাজমান ছিল দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য, তা দেখে বলশালী নন্দীশ্বর শুক্রাচার্য কে অপহরণ করেন, সমস্ত দৈত্যগণ শুক্রাচার্যকে ছাড়ানোর জন্য নন্দীর পেছনে ছুটতে থাকে এবং নানান শস্ত্র বর্ষণ করতে শুরু করে তাহার ওপর তখন নন্দী বিকরাল রূপ ধারণ করে নিজের মুখ হতে আগুন বের করে সমস্ত দৈত্যদের শস্ত্র ভস্ম করে দেন, তারপর নন্দীশ্বর শিবের কাছে উপস্থিত হন আর বলেন - হে ভগবান ! এই হলো শুক্রাচার্য, তখন ভোলানাথ উপহারের সাদৃশ্যে শুক্রাচার্য কে ধরেন আর ফলের মতো তাকে ভক্ষণ করেন, তখন সমস্ত অসুরগণ হাহাকার করতে শুরু করে। অনেক সময় ধরে প্রচেষ্টার পরেও শিবের দেহ হতে বের হওয়ার কোনো ছিদ্র খুলে পেলো না তারপর ভৃগুনন্দন শুক্রাচার্য শিবযোগের আশ্রয়ে শিব মন্ত্র জপ করতে থাকে, ওই মন্ত্রের প্রভাবে শিবের শুক্ররূপে লিঙ্গ পথে বাইরে বেরিয়ে আসে, তারপর শুক্রাচার্য শিব জি কে প্রণাম করেন। করুণা সাগর মহেশ্বর ভৃগুনন্দন শুক্রাচার্য কে বীর্যের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসার জন্য হাসতে হাসতে বলেন- হে ভৃগুনন্দন! তুমি আমার লিঙ্গ মার্গ হতে শুক্রের মতো বেরিয়ে এসেছ তাই আজ থেকে তোমার নাম শুক্র, আর আজ থেকে তুমি আমার পুত্র। ইহার পর শুক্র জী শিব কে পুনঃ পুনঃ হাত জোড় করে প্রণাম করেন। আর ইহার পর থেকেই ভৃগুনন্দের নাম শুক্রাচার্য !

শিবপুরাণ, রুদ্রসংহিতা, ৪৭-৪৯ অধ্যায়





✍️ সমীক্ষা:- শিব পুরাণ যে ব্যক্তি লিখেছে সে কতটা অশ্লীল চরিত্রের ছিল একটু ভেবে দেখো! আর কতটা জ্ঞানহীন ছিল সেটিও দেখে নিও! আমরা মাতৃ গর্ভে প্রায় দশ মাস থাকার পর জন্ম হয়, এই দিকে শিবের মূত্রেন্দ্রিয় হতে জন্ম হচ্ছে এক ব্যক্তির ! আমার পৌরাণিক ভাইয়েরা এই সমস্ত পুরাণ মানতে কি একটুও লজ্জা বোধ করেনা ? নাকি বিশ্বাস করে যে- 'শিব তো সব পারে তাই শিবের লিঙ্গ দিয়ে একটা ব্যক্তি বেরিয়ে আসা কোনো ব্যাপার নয়' ! এমন মনে করেন নাকি ? আমাদের বৈদিক ধর্ম কে বিকৃতির দিকে হাজার বছর ধরে নিয়ে চলছে এই সমস্ত অশ্লীল পুরাণ কাহানি যে কাহানি কোনো হাত পা মুন্ড নেই! কিন্তু আমাদের মহাপুরুষদের প্রচুর পরিমানে অপমান করা হয় এই সমস্ত গ্রন্থে, এমন কাহানি আর বাইবেল আর কুরআনের অশ্লীলতার কোনো কি পার্থক্য রইলো ? অনেক কথিত হিন্দুরা নাস্তিক এবং মুসলীম খ্রিস্টান আদি মতবাদে প্রবেশ করেছে একমাত্র এই সমস্ত মুন্ডহীন কাহানির জন্য।


শিব পুরাণ, কোটিরুদ্রসংহিতা, ১২ অধ্যায়ের ৫ থেকে ৪৮ শ্লোক




শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে ৩য় স্কন্দ ১২ অধ্যায় ২৮ থেকে ৩১ শ্লোক পৃঃ নং ২৫৫ [ গীতাপ্রেসের ভাষ্য ] নিজকন্যা সরস্বতীকে দেখে ব্রহ্মা কামগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন , দেখুন -
বাচং দুহিতরং তন্বীং স্বয়ম্ভূহরতীং মনঃ ।
অকামাং চকমে ক্ষত্তঃ সকাম ইতি নঃ শ্ৰুতম্ ৷৷ ২৮
তমধর্মে কৃতমতিং বিলোক্য পিতরং সুতাঃ ।
মরীচিমুখ্যা মুনয়ো বিশ্রম্ভাৎ প্ৰত্যবোধয়ন্ ৷৷ ২৯
নৈতৎ পূর্বৈঃ কৃতং ত্বদ্য ন করিষ্যন্তি চাপরে ।
যত্ত্বং দুহিতরং গচ্ছেরনিগৃহ্যাঙ্গজং প্ৰভুঃ ৷৷ ৩০
তেজীয়সামপি হ্যেতন্ন সুশ্লোক্যং জগদ্গুরো । যদ্‌বৃত্তমনুতিষ্ঠন্‌ বৈ লোকঃ ক্ষেমায় কল্পতে ৷৷ ৩১
- শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ৩য় স্কন্দ ১২অধ্যায় ২৮-৩১শ্লোক
বঙ্গানুবাদঃ হে বিদুর ! ব্রহ্মার কন্যা সরস্বতী অতীব মনোহারিণী সুন্দরী ছিলেন । আমি শুনেছি যে একদা নিজকন্যাকে দেখে ব্রহ্মা কামগ্রস্ত হয়েছিলেন যদিও সরস্বতী নিজে কামভাবরহিতা ছিলেন ॥ ২৮ ॥
পিতাকে এই রকম অধর্মজনক কুকর্মে আসক্ত দেখে তাঁর পুত্র মরীচিপ্রমুখ মুনিগণ সবিনয় বচনে বুঝিয়েছিলেন ॥ ২৯ ॥
‘হে পিতা ! আপনি অসীম প্রভাবশালী হয়েও আপনার মনে উৎপন্ন কামবেগ সংবরণ না করে নিজ কন্যার প্রতি কামা-ভিলাষ পূরণের মতো যে দুস্তর পাপকর্মে উন্মুখ হচ্ছেন , আপনার পূর্ববর্তী কোনো ব্রহ্মাই তো এমন কর্ম অতীতে করেননি আর ভবিষ্যতেও করবেন না ॥ ৩০ ॥
হে জগদ্গুরু ! আপনার মতো তেজস্বী পুরুষের এই কাজ শোভন নয় ; কারণ আপনার মতো ব্যক্তিদের চরিত্রের অনুসরণের দ্বারাই তো সংসারের মঙ্গল হয়ে থাকে ॥ ৩১ ॥

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ