গায়ত্রী - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

11 September, 2022

গায়ত্রী

ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ। [মহাব্যাহৃতি]

তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি।

ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। [মূল গায়ত্রী]

[যজুর্বেদ ৩।৩৫,২২।৯,৩০।২, ৩৬।৩]

ওঁ আপো জ্যোতারসোহমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভুবঃ স্বরোম্ [গায়ত্রী শির]

পদপাঠঃ

তত্। সবিতুঃ। বরেণ্যম্। ভর্গঃ। দেবস্ব। ধীমহি। ধিয়ঃ। যঃ। নঃ। প্রচোদয়াদিতি প্রऽচোদয়াত্।।

স্বর সহ মন্ত্রঃ

তৎসবিতুর্বরণ্যম্ ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়ত্।।

স্বর সহঃ পদ পাঠঃ

তত্। সবিতুঃ। বরেণ্যম্। ভর্গঃ। দেবস্য। ধীমহি। ধিয়ঃ। যঃ। নঃ। প্রচোদয়াদিতি প্রऽচোদয়াত্।।

তৎ, সবিতুঃ, বরেণ্যম্, ভর্গ, দেবষ্য, ধীমহি, ধিয়ঃ, যঃ, নঃ, প্রচোদয়াৎ।
গায়ত্রী মন্ত্রের পূর্বে প্রণব "ও৩ম্" এবং মহাব্যাহৃতি মন্ত্র "ভূর্ভুবঃ
স্বঃ" (ভূঃ, ভুবঃ, স্বঃ) যোগ করিয়া উচ্চারণ করিতে হয়।

গায়ত্রী ছন্দের তিন পাদ। তিন পাদে বিভক্ত করিলে মন্ত্রটি এইরূপ হবে-
১. তৎ সবিতুর্ব্বরেণ্যম।
২. ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
৩. ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।

গায়ত্রী ২৪ অক্ষরময়ী এবং ত্রিপদী। উহার উপর ৪ টী অক্ষর সহযোগে ২৮ বর্ণ বিশিষ্ট উষ্ণিক্ ছন্দঃ হয় এবং এইরূপে চারি চারিটি অক্ষর বাড়াইয়া 
পর পর ছন্দঃ হইয়া জগতী ছন্দঃ ৪৮ অক্ষর বিশিষ্ট হয়। 
*তৎ* স বি তু র্ব রে ণী *য়ং* 
ভ র্গো দে ব স্য ধী ম হি
ধি য়ো য়ো নঃ প্র চো দ *য়াৎ*
গায়ত্রী


প্রত্যেক পাদে ৮টি করে অক্ষর থাকিবে কিন্তু ১ম পাদে ৭টি অক্ষর আছে। বরেণ্যং শব্দটিকে বরেণীয়ং উচ্চারণ করতে হবে। যে ঝঙ্কারে সেই সত্য, দ্রষ্টার হৃদয়ে স্পন্দিত করিয়া স্বতঃই বাক্যে প্রকাশিত হয় তাহাই সেই মন্ত্রের ছন্দঃ। গায়ত্রী ছন্দঃ ত্রিপদী ও প্রত্যেক পদ অষ্টাক্ষর যুক্ত অর্থাৎ ইহা চতুর্বিংশতি অক্ষর যুক্ত। মন্ত্রে মোট ২৪টি অক্ষরের স্থানে ২৩টি অক্ষর আছে। ইহাকে "নিচুৎ" গায়ত্রী বলে। এক অক্ষর বেশী হলে "ভুরিক" গায়ত্রী বলা হয়।

পিঙ্গলাচার্য তার ছন্দঃ সূত্রে বলেছেন-
"উনাধিকেনৈকেন নিচৃৎ ভুরিজৌ।" (৩।৫৯)
অর্থাৎ ২৪ অক্ষরাত্মক গায়ত্রী ছন্দে ২৩ অক্ষর হলে নিচুৎ ও ২৫ অক্ষর হলে ভুরিক সংঙ্গা হয়।
"ইয়াদি পূরণঃ"!(৩।২)
অর্থাৎ গায়ত্রী প্রভৃতি ছন্দের পাদে যে স্থলে অক্ষর সংখ্যা কম হবে, সেই স্থলে "ইয়াদি" দ্বারা পূরণ করিতে হবে। সুতরাং ১ম পাদ এই ভাবে পাঠ করতে হবে- তৎ সবিতুর্ব্বরেণিয়ম্।

"ও৩ম্" অব (রক্ষণে)+ ম কর্ত্তরি, রক্ষা করেন বলিয়া পরমাত্মার নাম ও৩ম্। অ+উ+ম কার মিলিয়া
ওম্ হয়। এই এক নামে পরমাত্মার বহু নাম সূচিত হয়। অ অর্থে বিরাট, অগ্নি ও বিশ্ব প্রভৃতি, উ অর্থে হিরণ্যগর্ভ, বায়ু ও তৈজস প্রভৃতি এবং ম অর্থে ঈশ্বর, আদিত্য ও প্রাজ্ঞ প্রভৃতি। মান্ডুক্য বলেন-
"ওঁমিত্যেতদক্ষর মিদং সর্ব্বং"-ও৩ম নামক এই অক্ষরটি এই সমস্ত পরিদৃশ্যমান জগতে বিদ্যমান ওঁকারে সাড়ে তিন মাত্রা আছে যথাঃ- অকার+উকার+মকার+ঁ নাদবিন্দু। নাদবিন্দুকে অর্দ্ধমাত্রা বলা হয়ঃ-অ++উ+ম+ঁ একত্রে  রূপ।

গায়ত্রী ছন্দে সৰ্ব্বসমেত চব্বিশটী অক্ষর থাকে
অগ্নিপুরাণ ২১৫ অঃ অনুযায়ী গায়ত্রী মধ্যবর্ত্তী অক্ষেরের অধিপতি বা দেবতাদের নাম


ওঁ তৎসাদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ। 
ব্রাহ্মণাস্তেন বেদাশ্চ যজ্ঞাশ্চ বিহিতাঃ পুরা।।গীতা ১৭।২৩।। ও৩ম কার ব্রহ্মের তিনটি নামের অন্য়তম। ছান্দোগ্য তে ও৩ম এই অক্ষরটি পরমাত্মার নিকটতম অভিধান বাচক প্রিয়নাম বলা হয়েছে।

অকার মাত্রার উচ্চারণ স্থান নাভি, তথা হইতে উহাকে হৃদয়ে লইয়া গিয়া উকার মাত্রা উচ্চারণ পূর্ব্বক কণ্ঠে অকারকে উকারে মিলিত করিলে “ও” শব্দ হয় ৷ তাহাকে মুখবন্ধ করিয়া নাসাগ্রের নিম্ন দেশে under the nasal bridge লইয়া গিয়া ম্ ম্ ম্ ম্ উচ্চারণের রেস ললাটে ও মূর্দ্ধায় লইয়া যাইতে হইবে, অকারকে উকারে ও উকারকে মকারে ও সর্ব্বশেষে নাদবিন্দুতে লয় করিতে হইবে। কণ্ঠ ও ওষ্ঠের সহিত এই উচ্চারণের সম্বন্ধ নাই ।

ব্যাহৃতি কি

যাহাকে অতি যত্নে আহরণ করা হয় তাহাই ব্যাহৃতি (বি + আ + হৃ ) আবার যাহাকে যত্ন পূর্ব্বক উচ্চারণ করা হয় তাহাও ব্যাহৃতি ( যথা “ মিত্যে কাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্ মামনুস্মরন” গীতা ) অথবা যে মন্ত্রের দ্বারা লোক সকল ব্যাহৃত ব্যক্ত হইয়াছে তাহাই ব্যাহৃতি। 
প্রত্যেক ব্যাহৃতির পৃথক্ পৃথক্ ছন্দঃ যথা গায়ত্রী, উঞ্চিক্ অনুষ্টপ, বৃহতী, পঙক্তি, ত্রিষ্টুপ এবং জগতী পূর্বেই আমরা আলো চনা করিয়াছি যে গায়ত্রী ২৪ অক্ষরময়ী এবং ত্রিপদী। উহার উপর ৪টা অক্ষর সংযোগে ২৮ বর্ণ বিশিষ্ট উষ্ণিক্ ছন্দঃ হয় এবং এইরূপে চারি চারিটী অক্ষর বাড়াইয়া পর পর ছন্দঃ হইয়া জগতী ছন্দঃ ৪৮ অক্ষর বিশিষ্ট হয় ।

এই মন্ত্রের নানাপ্রকার অন্বয় আছে । তদ্দ্বারা “তৎ” এবং “বঃ” শব্দ ভিন্ন ভিন্ন শব্দের সহিত অন্বিত হইয়াছে । “তৎ,” ‘সবিতা,’ ‘ভর্গঃ” এবং ‘ধীমহি’ শব্দের নানাপ্রকার অর্থ গ্রহণ পূর্ব্বক বিভিন্ন প্রকার অর্থ করা হইয়াছে "ভূরিতি বৈ প্রাণঃ। ভূবরিত্যপানঃ। স্বরিতি ব্যানঃ।।" (তৈত্তিরী ৭।৬).
অর্থ- ভূঃ অর্থে প্রাণ। যিনি সর্ব প্রাণীকে প্রাণ দান করেন, যিনি প্রাণ স্বরূপ, তিনিই "ভূঃ"।
ভুবঃ অর্থে অপান। যিনি দুঃখ বিনাশ করেন তিনিই "ভূবঃ"।
স্বঃ অর্থে ব্যান। যিনি সর্বত্র ব্যাপক বা যিনি আনন্দস্বরূপ তিনিই "স্বঃ"।
ভূ (সত্তায়াম)+সুক্ কর্ত্তরি=ভূঃ।
ভূ (সত্তায়াম)+অসুক্ কর্ত্তরি=ভুবঃ।
স্ব (শব্দে)+বিচ্ অধিকরণে= স্বঃ।
"সবিতুঃ" জগৎস্রষ্টা পরমাত্মীয়, সূ (যুঙ্প্রাণিগর্ভে বিমোচনে)+তৃচ্ কর্ত্তরি সবিতু,
ষষ্ঠী এক বচনে সবিতুঃ প্রসব কর্ত্তার বা স্রষ্টার। যিনি এই সমস্ত জগৎ উৎপাদন অর্থাৎ সৃষ্টি করেন, তিনিই সবিতা।
"দেবস্য" দেবতার, দিব (দিবু ক্রীড়া- বিজিগীষা- ব্যবহারদ্যুতি- স্মৃতি- মোদ- স্বপ্ন- কান্তিগতিষু) +অন্কর্ত্তরি= দেব। দিব ধাতুর ক্রীড়া, জয়েচ্ছা, ব্যবহার, দ্যুতি, স্তুতি, আনন্দ, মত্ততা, নিদ্রা, জ্ঞান ও গতি এই দশ অর্থের যে কোন একটি কার্য যাহাতে প্রকাশ পায় তাহাকে দেব বলা যায়। 
নিরূক্তকার যাস্ক বলেন-
"দেবো দানাদ্বা দীপনাদ্বা দ্যোতনাদ্বা দ্যঃস্থানে ভবোতীতি বাঃ" (নিরুক্ত ৭।৪।১৫.)
অর্থ- যাহা দাতা প্রদীপক দ্যোতক বা দুঃস্থানীয় পদার্থ তাহাই দেব।
দেবস্য— দীপ্তি-ক্রীড়া-যুক্তস্য, ঘোতমানস্য সূৰ্য্যস্য। পরশ্বৈপদী দিব ধাতু হইতে কর্তৃবাচ্যে অন্ প্রত্যয়ে দেব শব্দ সিদ্ধ দিবু ক্রীড়া বিজিগীষা-ব্যবহার-দ্যুতি-স্তুতি-মোদমদ-স্বপ্নকান্তি-গতিষু । এই গুলি দিব্ ধাতুর অর্থ । ক্রীড়ার অর্থ ধরিলে—যিনি শুদ্ধ জগতের ক্রীড়া করাইতে ইচ্ছা করেন, তিনি দেবতা। বিজিগীষা অর্থে—যিনি ধাৰ্ম্মিক লোকদিগকে জয়যুক্ত করিতে ইচ্ছা করেন, তিনি দেবতা। ব্যবহার অর্থে- যিনি সমস্ত চেষ্টা বা উত্তমের সাধন এবং উপসাধন, দান করেন, তিনি দেবতা। হাতি অর্থে—যিনি স্বয়ং প্রকাশস্বরূপ হইয়া সকলকে প্রকাশ করেন, তিনি দেবতা। স্তুতি অর্থে—যিনি স্তব গ্রহণের এবং প্রশংসার যোগ্য, তিনি দেবতা । মোদ অর্থে—যিনি আনন্দ স্বরূপ হইয়া সকলকে আনন্দ প্রদান করেন, তিনি দেবতা। মদ অর্থে—যিনি মদোন্মত্তদিগের তাড়না করেন, তিনি দেবতা। স্বপ্ন অর্থে—যিনি সকলের শয়নার্থ রাত্রি এবং প্রলয় বিধান করেন, তিনি দেবতা। কাস্তি——অর্থে যিনি কামনা যোগ্য, তিনি দেবতা । গতি অর্থে—যিনি জ্ঞান-স্বরূপ সৰ্ব্বত্র গমনশীল, সেই পরমেশ্বরের নাম “দেব”। অথবা “যো দিব্যতি ক্রীড়তি স দেব”। অর্থাৎ যিনি জগতের সৃষ্টিস্থিতি প্রলয় রূপ ক্রীড়া করেন অথবা যিনি সমস্ত ক্রীড়ার আধার স্বরূপ হইয়া রহিয়াছেন, তিনিই দেবতা” । য বিজীগীয়তে স দেবঃ । ষঃ ব্যবহারয়তি স দেবঃ। যশ্চরাচরং জগৎ স্মোতয়তি স দেবঃ। যঃ স্বাপয়তি স দেবঃ। যঃ কাময়তে কাম্যতে বা স দেবঃ । যো গচ্ছতি গম্যতে বা স দেব:” ৷ ইতি সত্যার্থ প্রকাশে ।।

পরমাত্মা দাতা, জ্ঞানের উদ্দীপক ও দ্যোতক এই অর্থে তিনি দেব, তিনি জ্যোতির্স্ময় বা জ্ঞানময়,
তাহার "তৎ" সেই প্রত্যক্ষ। "বরেণ্যম" বরণীয়, প্রার্থনীয় ও উপাসনীয়। বৃ (সম্ভক্তৌ)+ এন্য কর্ম্মণি = বরেণ্য। "ভর্গ" শুদ্ধ জ্ঞানস্বরূপ। ভ্রসজ (পাকে)+ঘঙ্ কর্ত্তরি=ভর্গঃ। "ধীমহি" ধ্যান করি।  বৈদিক প্রয়োগে ধ্যৈ ধাতু আত্মনেপদী ও সম্প্রসারণ যুক্ত হয়েছে।
লৌকিক সংস্কৃত ব্যাকরণ মতে ধ্যৈ ধাতু পরস্মৈপদী "ধ্যায়েম" হবে। "যঃ" যে পরমেশ্বর। "নঃ" আমাদের। "ধিয়ঃ" ধারণাবতী বুদ্ধির।
"প্রচোদয়াৎ" প্ররণা দান করেন।

সৃষ্টিতত্ত্বের দুই প্রকার মতবাদ প্রসিদ্ধ আছে। একটি “বিকার বাদ” অপরটি “বিবর্ত্তবাদ” । 
বিকার বাদ কি ? 
একদ্রব্য পরিবর্ত্তিত হইয়া অপর দ্রব্যে পরিণত 
হইলে দ্বিতীয় দ্রব্যকে প্রথমোক্ত দ্রব্যের বিকার বলা হয়, যথা দুগ্ধের বিকার দধি। ইহাতে মূল দ্রব্য বিভিন্ন দ্রব্যে পরিণত হয়। ইহার অপর নাম “পরিণাম” বাদ 
সাংখ্য দর্শন মতে পুরুষ সন্নিধিহেতু মূল-প্রকৃতি বিকার প্রাপ্ত হয় ও সেই বিকার ফলে চতুর্বিংশতি তত্ত্ব হইয়া বিশ্ব সৃষ্টি হয়। এই মূল প্রকৃতির প্রধান বিকার সাতটী
যথা । ১। মহত্তত্ত্ব বা বুদ্ধিতত্ত্ব ২ । অহঙ্কার তত্ত্ব, ৩। শব্দ তন্মাত্র, ৪। স্পর্শ তন্মাত্র, ৫। রূপ তন্মাত্র, ৬ ৷ রস তন্মাত্র, ৭ । গন্ধ তন্মাত্র, ইহাদের অবান্তর বিকারে আরও ১৬টি বিকার বা তত্ত্ব দৃষ্টি হয় যথা পঞ্চ মহাভূত ( আকাশ, বায়ু, তেজঃ, অপ্, ক্ষিতি। ইহা ভিন্ন ) একাদশ ইন্দ্রিয় যথা মনঃ, কর্ণ, ত্বক্, চক্ষুঃ, জিহ্বা, নাসিকা ( ইহারা জ্ঞানেন্দ্রিয়) ও বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু, এবং উপস্থ ( ইহারা কর্মেন্দ্রিয় ) মূল প্রকৃতিই মুখ্য ভাবে প্রকৃতি। বুদ্ধি ( মহৎ) অহঙ্কার ও পঞ্চ তন্মাত্র ইহারা ইন্দ্রিয়গণের ও মহাভূতের উপাদান বলিয়া গৌণভাবে ইহাদিগকেও প্রকৃতি বলা হয়—এই জন্য তত্ত্ব সমাস বলিয়াছেন “অষ্টো প্রকৃতয়ঃ ষোড়শ বিকারা: ১।২ সূত্র।

তন্মাত্র কি ?

তন্মাত্র, তাঁহার, বিশ্বকর্তার, বিশ্বরূপে বিকাশের মাত্রা বা মাপ কাঠি, শ্রেণী বিভাগ ৷ তিনি পঞ্চ ভোগ্যরূপে, সূক্ষ্ম বিষয়রূপে বিবৰ্ত্তিত হইয়া তাহাদেরই—স্থূলমূর্ত্তি পঞ্চমহাভূত সৃষ্টি করেন। আবার একাদশ ইন্দ্রিয় দ্বারা সেই ভূত ও বিষয়কে ভোগ করেন। ইহাই চতুর্বিংশতি তত্ত্ব ৷
তন্মাত্র কি ?
গায়ত্রী
মহাবুদ্ধি (মহৎ) হইতে স্থূল ক্ষিতি তত্ত্ব পৰ্য্যন্ত সমস্ত আবরণই জড় পদার্থ, একমাত্র পুরুষের বিম্ব উহাতে পতিত হ‍ইয়া কিংবা পুরুষের বিদ্যমান হওয়ায় উহাদিগকে সজীব দেখায় ।

বিবর্ত্তন বাদ

বিবর্ত্ত অর্থে ভ্রম। মূল দ্রব্যে কোন পরিবর্তন হয় না, অথচ দ্রষ্টার বুঝিবার দোষে তিনি সেই দ্রব্যকে অপর দ্রব্য বলিয়া ভ্রম করেন। যেমন রজ্জুতে সর্পভ্রম। রজ্জু রজ্জুই থাকিয়া যায় কিন্তু দ্রষ্টা দৃষ্টির অস্পষ্টতায় তাহাতে সর্প দর্শন করেন। এই ভ্রম জ্ঞান বিনা আধারে হয় না ; ইহার একটী অধিষ্ঠান আবশ্যক হয়। 
যাহাকে অবলম্বন করিয়া তাহার উপর ভ্রম কল্পিত দ্রব্যটি অধ্যস্ত বা আরোপিত হয় শেষোক্ত দ্রব্যটি মিথ্যা, মায়াকল্পিত মাত্র। এই মতানুসারে দৃশ্য জগৎ কেবল জগৎরূপে সত্য নহে, জগৎ মায়৷ কল্পিত মাত্র, কিন্তু স্বরূপ ব্রহ্ম ইহার অধিষ্ঠান, সেইজন্য সৎ স্বরূপ ব্রহ্মরূপে উহা সতা ৷ জগৎ দর্শন সর্প দর্শনের ন্যায় অসত্য হইলে ও তদধিষ্ঠান ব্রহ্ম-রজ্জু সত্য পদার্থ । অতএব একমাত্র ব্রহ্মই সত্য এবং জগৎ মিথ্যা ।

মত সমন্বয়

উভয় মত কি পরস্পর বিরোধী ? না ইহারা বিরোধী নহে আচাৰ্য্য দিগের দৃষ্টিভূমির অবস্থান (stand point ) অনুসারে একই সত্যের বিভিন্ন অংশ প্রাধান্য লাভ করিয়াছে মাত্র ব্রহ্ম ব্ৰহ্মই থাকিয়া যান, আবার তিনি স্বীয় মায়াশক্তি অবলম্বন পূর্ব্বক ইন্দ্রজাল রচনা করিয়া জগৎ রূপে “বিবর্তিত মত” হইবার ক্রমটি চতুর্বিংশতি তত্ত্বরূপে প্রকাশিত করিয়াছেন । অদ্বৈতবাদের তত্ত্ব হল_____ ব্ৰহ্মা সত্য জগৎ মিথ্যা। 
(১) ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা এটি বেনান্তের দুল তত্ত্ব। আচার্য শঙ্কর বলতেন অর্দ্ধ শ্লোকে প্রবক্ষ্যামি যদুক্তং গ্রন্থকোটিভিঃ – কোটি কোটি গ্রন্থে যা লেখা আছে তা আধখানা শ্লোকে আমি বলছি _____

ব্রহ্ম সত্যং জগদ্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈা নাপরঃ। 
ইসমের তু সচ্ছাত্রমিতি বেদান্ত ডিণ্ডিমঃ। ২১ (ব্রহ্ম জ্ঞানাবলী মালা)

এই শ্লোকের সরল অর্থ- 'ব্রহ্ম সত্য,জগৎ মিথ্যা, জীব ব্রহ্মস্বরূপ, ব্রহ্ম হতে জীব ও জগতের পৃথক কোন সত্তা নাই - এই হল সমস্ত বেদান্তের উচ্চনিনাদ বা ঘোষণা। ব্রহ্ম সৎ চিৎ আনন্দস্বরূপ, নির্বিশেষ, স্বপ্রকাশ, দেশ কাল পাত্র দ্বারা অপরিচ্ছিন্ন এক অন্বয় পরমতত্ত্ব__ আশা করি এই ঋষিবাক্যে আপনাদের কোন সংশয় নাই। এই দৃশ্যমান জগৎ, আপনাদের ভাষায় এত সুখের ও সাধের পৃথিবী' মিথ্যা – এই কথাটি নিয়ে আপনাদের গোল বেধেছে। কিন্তু আচার্য এখানে কোন নঞর্থক (Negative) ভাবে 'মিথ্যা' শব্দটি প্রয়োগ করেন নি। মিথ্যা মানে আত্যত্ত্বিক সত্তার অভাব। জলের কাছে দাঁড়ালে আপনাদের ছায়া পড়ে। আপনি দাঁড়িয়ে থাকলে ছায়াকেও দণ্ডায়মান দেখা যাবে, বসে থাকলে ছায়াও বসবে, আপনারা জলের কাছ হতে দূরে সরে যান, তাহলে জলের মধ্যে আর ছায়া দেখা যাবে না। তাহলেই বুঝে দেখুন আপনাদের ছাড়া ছায়ার কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বা সত্তা নাই। এই অর্থে জগৎ মিথ্যা। 
জগৎ যে মিথ্যা তা জগৎ শব্দের মধ্যেই প্রতিপাদিত রয়েছে। গচ্ছতীতি জগৎ (গম্ - ড)___ যা নিয়ত গমন করে, নিয়ত পরিবর্তিত হয়. ever fleeting ever changing, always inconstant, তাকে মিথ্যা ছাড়া আর কি বলা যাবে ?
সত্য আমরা কাকে বলি ? কালত্রয়মবাধিতং সত্যং যা ত্রিকালে অবাধিত। যা পূর্বে ছিল, এখন আছে এবং পরেও থাকবে তারই নাম ঋষিরা দিয়েছেন সত্য'। যা পূর্বে ছিল, এখন নাই, তা সত্য নয়। পূর্বে ছিল না কিন্তু পরে হয়ত দেখা যাবে তাও সত্য নয়। আজ যে ৭০ তলা বা ১০২ তলা বিশিষ্ট আকাশচুম্বী অট্টালিকার কথা শুনে আপনারা বিস্ময়ে হতবাক হচ্ছেন, বিশ পঁচিশ বা পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে ঐরকম ছিল না, কয়েক বৎসর পরে হয়ত দেখবেন তার রূপ এবং আকৃতি সবই বদলে গেছে! আপনারা আপনাদের স্ব স্ব স্থানেও দেখতে পাবেন এখানেও নানা পরিবর্তনের ধারা। জগতের প্রতি বস্তু সম্বন্ধেই এই কথা প্রয়োজ। জাগতিক যে কোন বস্তুর দিকে তাকিয়ে দেখুন, বিচার করলেই বুঝতে পারবেন, এখানে কোন বস্তুই নিত্য স্থির নয়। দৃশ্যপট, তার রূপ, রঙ প্রতিনিয়তই বদলাচ্ছে। এইভাবে যার উৎপত্তি বৃদ্ধি, বিবর্ধন ও বিলুপ্তি ঘটে, তা স্বভাবতই মিথ্যা।

কোন কোন টীকাকারের মতে, জগৎ শব্দের অর্থ যা ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানের বিষয়। এই অর্থে তাবৎ দৃশ্য পদার্থই জগৎ পদবাচ্য। ব্রহ্মা জ্ঞেয় বা দৃশ্য হন না আবার যা সোনার পাথরবাটি, কাঁঠালের আমসত্ত্ব এবং বন্ধাপুত্রাদির ন্যায় অসৎ তাও দৃশ্য হয় না। সুতরাং জগৎ সৎ নয়, অসৎও নয়। মিথ্যা বলতে যা সৎ নয়, অসৎ নয় এবং সদসত্ত নয় তাকে বুঝায়। যেমন রজ্জুতে যে সর্পের জ্ঞান হয়, সেই সৰ্প মিথ্যা। মিথ্যা বস্তু তিনকালেই থাকে না অথচ তা জ্ঞানের বিষয় হয়। যেহেতু এ সম্বন্ধে জ্ঞান হয় এজন্য এটি সৎ কিন্তু তিনকালে বিদ্যমান থাকে না, এজন্য এটি অসং। আবার অধিষ্ঠানের জ্ঞানে (রজ্জুকে রজ্জু বলে বুঝামাত্রই) এর নিবৃত্তি হয় বলে একে অসও বলা যায় না। এইভাবে এটি সদসৎ হতে ভিন্ন বস্তু। যা সদসৎ হতে ভিন্ন তা মিথ্যা। জগৎ এইরূপ মিথ্যা বস্তু।

যাইহোক, আমি আর একটি উদাহরণ দিয়ে পুনরায় তত্ত্বটি পরিস্ফুট করার চেষ্টা করছি। মনে করুন কোন মা-বাবা ছেলেকে নিয়ে সন্ধ্যেবেলা নর্মদার ধারে বেড়াতে গেছেন। আকাশে চাঁদ উঠেছে। ছেলেটি নিতান্ত খেলার ছলে জলে একটা ঢিল ছুঁড়ল। ঢেউ উঠল। বাচ্চা ছেলেটা তার মাকে বলল- দেখ দেখ মা জলের ভিতর চাঁদ নাচছে। ভেবে দেখুন ছেলেটার ঐ কথা কি ঠিক? আকাশের চাঁদ আকাশেই আছে, পুকুরে চাঁদ নাই, সে নাচছে না, মা হয়ত ভুল শুধরে দিবার জন্য বললেন না না, চাঁদ নাচছে না, জলের নীচে চাঁদের প্রতিবিম্বটাই নাচছে'। কিন্তু একথাও যথার্থ নয়। বিশ্বে যা থাকে প্রতিবিম্বে ত তারই প্রতিফলন ঘটে। কাজেই চাঁদ যখন নাচছে না, তখন তার প্রতিবিম্বও নাচতে পারে না। বল বা গতি জ্বলে বাধা পেয়ে wave length সৃষ্টি করেছে, সেটাই কেঁপে কেঁপে চলেছে। পুকুরে চাঁদ নাই, তা নাচছে না, তার প্রতিবিম্বও নাচছে না।

এই উদাহরণ থেকে তাহলে একথাটি নিশ্চয়ই স্পষ্ট হল যে চর্মচক্ষুতে যা প্রত্যক্ষ দেখা যায়, সর্বদা তা সত্য হয় না। তাই আচার্য শঙ্করের অভিমত। - জগৎ মিথ্যা। যোগী যার স্বরূপ জ্ঞান হয়, তাঁর চোখে একমাত্র ব্রহ্মাই সত্য। এই দৃশ্যমান ব্যবহারিক জগৎ অবিদ্যামানোঽপি অবভাসতে। বাস্তবিক পক্ষে নাই অথচ আছে বলে মনে হয়, এই ভ্রান্ত জ্ঞানের উপরই জগৎ চলছে। এটি কেমন? না- শঙ্কর বলেছেন -যেমন, রজ্জুতে সর্পজ্ঞানবং সত্যি সত্যি সাপ নাই অথচ একগাছি দড়ি দেখে মনে হল সেটা সাপ। তাত্ত্বিবশে দড়িতে সাপের চিত্র ভেসে উঠল। পরম বৈজ্ঞানিক ঋষিরা বলেছেন - এই যে অবস্পন্দিত দৃষ্টি, এই যে লাস্তি দর্শন, এর কারণ আপেক্ষিকতা (due to Relativity)। আপেক্ষিকতার ঊর্ধ্বে একমাত্র তুরীয় ভূমিতে জীবাত্মার সমুত্থান ঘটলে তবেই বুঝা যায় যে নাভাবো বিদ্যতে সতঃ -সংএর বিদ্যমানতার কখন অভাব ঘটে না অর্থাৎ কিনা যা সৎ তা সদৈব অবিনাশী। সর্বব্যাপী ব্রহ্মে রজ্জুতে সর্পবৎ জগৎ ভাসে, কেবল প্রতীত হয়, প্রতীয়মান হয়। প্রকৃতপক্ষে জগতের ব্রহ্মনিরপেক্ষ কোন আন্তরিক সত্তা নাই। কাজেই বাগং যে মিথ্যা -- এটি যুক্তিসিদ্ধ এবং অনুভবসিদ্ধ।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক, গায়ত্রীন্ শব্দ পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ ও ক্লীবলিঙ্গ অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। 
পুংলিঙ্গ অর্থে— উদ্‌গাতা এবং সামগায়ক । গায়ন্তঃ ত্রায়তে শত‍ৃ গায়ৎ ত্রৈ-ণিণি আলোপাৎ সাধুঃ ।
ক্লীবলিঙ্গ অর্থে— গায়ত্ৰীচ্ছন্দ। স্ত্রীলিঙ্গ অর্থে— বেদমাতা, উপাস্য বৈদিক মন্ত্র বিশেষ। যে মন্ত্র গান বা পাঠ করিলে, গায়ক ও পাঠককে ত্রাণ করে... বলিয় এই মন্ত্রটীর নাম গায়ত্ৰী হইয়াছে [পৌরাণিক মত]।

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সর্বপ্রথম গায়ত্রী মন্ত্রের আধ্যাত্বিক ভাষ্য করিয়াছেন। কেবল যজুঃ ৩০।২ এর ভাবার্থে আধিভৌতিক এর স্বল্প সংকেতও আছে; শেষে আধ্যাত্বিকই আছে।

সবিতা বিষয়ে ঋষি অভিপ্রায়ঃ-

"সবিতা সর্বস্য প্রসবিতা" [নিরুক্ত ১০।৩১]

"সবিতা বৈ দেবানাং প্রসবিতা" [শঃব্রাঃ১।১।২।১৭]

"মনো বৈ সবিতা" [শঃব্রাঃ৬।৩।১।১৩]

"বিদ্যুদেব সবিতা"[গোঃব্রাঃপূ ১।৩৩]

"পশবো বৈ সবিতা"[শঃব্রাঃ৩।২।৩।১১]

"প্রাণো বৈ সবিতা" [ঐঃব্রাঃ১।১৯]

"বেদা এব সবিতা" [গোঃব্রাঃপূ ১।৩৩]

"সবিতা রাষ্ট্রং রাষ্ট্রপতিঃ" [তৈঃব্রাঃ ২।৫।৭।৪]

- ইহা হইতে প্রাপ্ত অর্থঃ নিম্নরূপ

#সবিতা নামক পদার্থ সবার উৎপত্তি বা প্রেরণার স্রোত বা সাধন।

# এই সমস্ত প্রাকাশিত বা কামনা অর্থাৎ আকর্ষণাদি বল হিতে যুক্ত কণার উৎপাদাক বা প্রেরক।

# এই সমস্ত পদার্তের নিয়ন্ত্রক।

# "ওম্" রশ্মি রূপ ছন্দ রশ্মি এবং মনস্তত্বই সবিতা।

#বিদ্যুৎ কে ও সবিতা বলা হয়।

#বিভিন্ন মরুদ্ রশ্মি এবং দৃশ্য কণাকে "সবিতা" বলা হয়।

#বিভিন্ন প্রাণ রশ্মি "সবিতা।

#সমস্ত ছন্দ রশ্মিও 'সবিতা"।

#তারা কেন্দ্রীয় ভাগ রূপ রাষ্ট্রকে প্রকাশিত বা তাহার পালনকারী সম্পূর্ণ তারাও "সবিতা"।

মন্ত্রে দেবতা মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়। এই কারণ এই মন্ত্রের মুখ্য প্রতিপাদ্য "ওম্" ছন্দ রস্মি, মনস্তত্ত্ব, প্রাণ তত্ত্ব এবং যত ছন্দ রশ্মি আছে। এই ঋচার উৎপত্তি বিশ্বামিত্র ঋষি "বাগ্ বৈ বিশ্বামিত্রঃ (কৌঃব্রাঃ১০।৫); 'বিশ্বামিত্রঃ সর্বমিত্রঃ (নিরুক্ত ২।২৪) অর্থাৎ সবার আকৃষ্ট করিতে সমর্ত "ওম্" ছন্দ রশ্মি দ্বারা হয়। মূল প্রকৃতির প্রথম বিকার মহতত্ত্ব বা মহাবুদ্ধিতত্ত্ব । ইহা সমষ্টি বুদ্ধি cosmic intelligence ইহা ঈশ্বরেই সম্ভবে। বুদ্ধিতত্ত্বের বিকাব 'অহঙ্কার তত্ত্ব'। তদনন্তর অহঙ্কার তত্ত্বের বিকারে আকাশ তত্ত্ব। 

[আধিদৈবিক / বৈজ্ঞানিক ভাষ্য]

भूर्भुवः॒ स्वः। तत्स॑वि॒तुर्वरे॑ण्यं॒ भर्गो॑ दे॒वस्य॑ धीमहि।धियो॒ यो नः॑ प्रचो॒दया॑त्॥

যজুঃ ৩৬।৩

পদার্থ : (ভূঃ) ‘ভূঃ’ নামক ছন্দরশ্মি কিংবা অপ্রকাশিত কণা বা লোক, (ভুবঃ) ‘ভুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা আকাশ তত্ত্ব, (স্বঃ) ‘সুবঃ’ নামক রশ্মি কিংবা প্রকাশিত কণা , আকাশ কণা বা সূর্যাদি তারা আদিতে যুক্ত । (তত্) ওই অগোচর বা দূরস্থ সবিতা অর্থাৎ মন, ‘ওম্’ রশ্মি, সমস্ত ছন্দরশ্মি, বিদ্যুৎ সূর্যাদি আদি পদার্থকে (বরেণ্যম্ ভর্ঘঃ দেবস্য) সাধারণ-ভাবে আচ্ছাদিতকারী ব্যাপক [ভর্গঃ=অগ্নি বৈ ভর্গঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৮; আদিত্য বৈ ভর্গঃ জৈ০ উ০ ৪.১২.২.২; বীর্যং বৈ ভর্গহত্রর্ষ বিষ্ণুর্য়জ্ঞঃ শ০ ব্রা০ ১২.৩.৪.৭] আগ্নেয় তেজ, যে সম্পূর্ণ পদার্থকে ব্যাপ্ত করে অনেক সংযোগ সংকোচকারী বল দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত লোকের নির্মাণ যুক্ত প্রেরিত করতে সমর্থ, (ধীমহি) প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ সে সম্পূর্ণ পদার্থ ঐ আগ্নেয় তেজ, বল আদিকে ব্যাপক রূপে ধারণ করেন । (ধিয়ঃ য়ঃ নঃ প্রচোদয়াত্) যখন সে উপযুক্ত অগ্নিতেজ ঐ পদার্থকে ব্যাপ্ত করেন, তখন বিশ্বামিত্র ঋষি জ্ঞান ভিত্তিক মন বা ‘ওম্’ রশ্মি রূপ পদার্থ [ধীঃ=কর্মনাম নিঘ০ ২.১; প্রজ্ঞানাম নিঘ০ ৩.৯; বাক্ বৈ ধীঃ ঐ০ আ০ ১.১.৪] নানা প্রকারের বাক্ রশ্মির বিবিধ দীপ্তি বা ক্রিয়া দ্বারা যুক্ত করিয়ে উত্তম প্রকার প্রেরিত বা নিয়ন্ত্রিত করতে থাকেন ।

-মন এবং "ওম্" রশ্মি ব্যাহৃত রশ্মির সাথে যুক্ত হয়ে ক্রমশঃ সমস্ত মরুদ্, ছন্দ আদি রশ্মিকে সক্রিয় করে।সমস্ত কণাদি এবং আকাশ তত্ত্বকে উচিত বল বা নিয়ন্ত্রন করে যুক্ত করে। এই সমস্ত লোক তথা অন্তরিক্ষে বিদ্যমান পদার্থ নিয়ন্ত্রিত উর্জাতে যুক্ত হয়ে থাকার কারণে তাদের ক্রিয়াগুলি যথাযথভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। ইহাদ্বারা সমস্ত বৈদ্যুতিক শক্তিও যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।

এই ঋচার উৎপত্তি পূর্ব বিশ্বামিত্র ঋষি অর্থা 'ওম্' চন্দ রশ্মি বিশেষ সক্রিয় হয়। ইহার ছন্দ দৈবী বৃহৃতী+নিচৃদ্ গায়ত্রী ইইয়া ইহার ছন্দস প্রভাব দ্বারা বিভিন্ন প্রকাশিত কনা বা রশ্মি আদি পদার্ত তীক্ষ্ন তেজ বা বল প্রাপ্ত করিয়া সম্পীডিত হইতে থাকে। ইহার দৈবত প্রভাব দ্বারা মনস্তত্ত্ব এবং 'ওম্' ছন্দ রশ্মি রূপ সূক্ষ্মতম পদার্থ হইতে বিভিন্ন প্রাণ, মরুৎ চন্দ রশ্মি, বিদ্যুতের সাথে-সাথে সমস্ত দৃশ্য কণা  বা কোয়ান্টাজ প্রভাবিত অর্থাৎ সক্রিয় হয়। এই প্রক্রিয়াতে 'ভূঃ', 'ভুবঃ' এবং 'সুবঃ' নামক সূক্ষ চন্দ রশ্মি 'ওম্' চন্দ রশ্মির দ্বারা বিশেষ সংগত বা প্রেরিত হইয়া কণা, কোয়ান্টা, আকাশ তত্ত্ব পর্যন্ত প্রভাবিত করেন। ইহা হিতে এই সমস্তে বল এবং ঊর্জ্বার বৃদ্ধি হইয়া সমস্ত পদার্থ বিশেষ সক্রিয়তাকে প্রাপ্ত হয়। এই সময় বিদ্যমান সমস্ত ক্রিয়াতে যে-যে- ছন্দ রশ্মি নিজের ভূমিকা নির্বাহ করেন, সেই সমস্ত বিশেষ উত্তেজিত হইয়া নানা কর্মকে সমৃদ্ধ করেন। বিভিন্ন লোকের ইচ্ছদ, সেই তারাদি প্রকাশিত লোক আছে অথবা পৃথিবাদি গ্রহ বা উপগ্রহাদি অপ্রকাশিত লোক আছে, সবার রচনার সময় এই ছন্দ রশ্মি নির্বাহ করেন। ইহার প্রভাব দ্বারা সম্পূর্ণ পদার্থে বিদ্যুৎ এবং ঊষ্মার বৃদ্ধি হয় পরন্তু এই স্থিতিতে ও এই চন্দ রশ্মি বিভিন্ন কণা বা কোয়ান্টাজের সক্রিয়তা প্রদান করাইয়াও অনূকুলতা হইতে নিয়ন্ত্রিত রাখতে সহায়ক হয়।

ভাবার্থ : মন এবং ‘ওম্’ রশ্মি ব্যাহৃতি (পরিব্যাপ্ত) রশ্মির দ্বারা যুক্ত হয়ে ক্রমশঃ সমস্ত মরুত, ছন্দরশ্মির অনুকূলতা থেকে সক্রিয় করিয়ে সমস্ত কণা, পরিণাম এবং আকাশ তত্ত্বকে উচিত বল বা নিয়ন্ত্রণ দ্বারা যুক্ত করেন । ইহাতে সমস্ত লোক তথা অন্তরিক্ষে বিদ্যমান পদার্থ নিয়ন্ত্রিত শক্তি দ্বারা যুক্ত হয়ে নিজে-নিজে ক্রিয়ায় উপযুক্ত রূপে সম্পাদিত করতে সমর্থ হয় । ইহাতে বিদ্যুৎ বলও উত্তমরূপে নিয়ন্ত্রিত থাকে । সৃষ্টির প্রথমে দৈবী গায়ত্রী ছন্দ পরাওম্ প্রকট হয় । পরা ওম্ ২৪ অক্ষর রশ্মির গায়ত্রী ছন্দের নির্মান করে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ বলের নির্মান করেন । উক্ত বিদ্যুৎ তথাকথিত ব্যবহার্য বিদ্যুৎ নন । প্রতিটি ২৪ টি অক্ষরই সূক্ষ সূক্ষ কম্পনরূপী ছন্দ বল যাহা আকাশ আদিকে অবকাশ মুক্ত করে সৃষ্টি নির্মানের জন্য গতি , বল , স্থান , প্রাণ সব কিছুই দান করে থাকে ।

সরলার্থঃ "ভূ" নামক ছন্দ রশ্মি কিংবা অপ্রকাশিত কণা বা লোক, 'ভুবঃ' নামক রশ্মি কিংবা আকাশ তত্ত্ব, 'সুবঃ' নামক রশ্মি কিংবা প্রকাশিত কণা, ফোটন বা সূর্যাদি তারা আদিতে যুক্ত। সেই অগোচর বা দূরহ সবিতা অর্থাৎ মন,'ওম্' রশ্মি, সমস্ত ছন্দ রশ্মি, বিদ্যুৎ সূর্যাদি পদার্থকে সর্বত্র আচ্ছাদিতকারী ব্যাপক আগ্নেয় তেজ, যাহা সম্পূর্ণ পদার্থকে ব্যাপ্ত করিয়া অনেক সংযোজক বা সম্পীডক বল দ্বারা যুক্ত হইয়া প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত লোকের নির্মাণ হেতু প্রেরিত করিতে সমর্থ ও প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ সেই সম্পূর্ণ পদার্থ ওই আগ্নেয় তেজ, বল আদির ব্যাপক রূপে ধারণ করেন। যখন সেই উপযুক্ত আগ্নেয় তেজ পদার্থকে ব্যাপ্ত করিয়া নেয়, তখন বিশ্বামিত্র ঋষি সংজ্ঞক মন বা 'ওম্' রশ্মি রূপ পদার্থ নানা প্রকারের বাগ্ রশ্মিকে বিবিধ দীপ্তির বা ক্রিয়া হিতে যুক্ত করাইয়া উত্তম প্রকার প্রেরিত বা নিয়ন্ত্রিত্ করিতে থাকেন।

কৃতজ্ঞতাঃ আচার্য অগ্নিব্রত নৈষ্টিক জী


(আধিদৈবিক ভাষ্যঃ যজুর্বেদ ৩৬।৩)

ব্রাহ্মণহস্য মুখসাসীদ্ৰাহ্ রাজন্যঃ কৃতঃ।

উরূ তদস্য অদ্বৈশ্যঃ পদ্ধ্যাং শূদ্রোহঅজায়ত।। যজু০ ৩১।১১

পদার্থঃ হে জিজ্ঞাসু গণ! (অস্য) ঈশ্বরের সৃষ্টিতে (ব্রাহ্মণঃ) গায়ত্রী ছন্দরশ্মি অন্য ছন্দরশ্মির স্থলে মূখ্য স্থানীয় ব্রাহ্মণ' এই ছন্দশ্মি সৃষ্টিতে প্রথম উৎপন্ন হয় [গায়ত্রো বৈ ব্রাহ্মণাঃ।' ঐ০ ব্রা ১.২৮] (মুখ) গায়ত্রী ছন্দরশ্মিই মুখ [ছন্দ সাম মুখ গায়ত্রী।' তা ব্রা ৭.৩.৩.] (আসীত) হইয়া থাকে (ৰাহ্) সূত্ৰাত্মা বায়ু সহ একাদশ প্রাণই বাহু’ (রুদ্রস্য বাহ্।' তৈ০ ব্রা ১.৫.১.১) (রাজন্যঃ) বাল বা পরাক্রমই রাজন্য' ('বীয় বাহ এতদ্ৰাজন্যস্য য় বাহু।' শo ব্রা ৫.৪.১.১৭] (কৃতঃ) করিয়াছে (য়) যে (উর) অনুষ্টুপ ছন্দ সহ সকল প্রকাশক বলই উরূ [অনুষ্টুপছন্দো বিশ্বে দেবা দেবতােরূ।' শo ব্ৰ০ ১০.৩.২.৯] (তত্) সেই (অস্য) তাহাকে (বৈশ্যঃ) সর্বত্র বিস্তারকারী মরুত রশ্মিই বৈশ্য' ('মারুতাে হি বৈশ্য। তৈ০ ব্রা ২.৭.২.২] (প্যা) সেবা এবং অভিমান রহিত (শূদ্রঃ) অগ্নি, সূর্য প্রকাশক বলই শূদ্র' ('তপাে বৈ শূদ্র। শo ব্রা ১৩.৬.২.১০] (অজায়ত) উৎপন্ন হইয়াছে, এই উত্তম ক্রম জানিৰে।। 


ভাবার্থঃ হে জিজ্ঞাসু গণ ! গায়ত্রী ছন্দরশ্মিই ব্রাহ্মণ, প্রাক সৃষ্টিতে গায়ত্রী ছন্দই মূখ্য স্থানীয় হইয়া থাকে। সূত্রত্মা বায়ু সহ প্রাণ, অপান, ব্যান, সমান, উদান, নাগ, কূর্ম, কৃকল, দেবদত্ত, ধনঞ্জয় এই একাদশ প্রাণ এবং উপ-প্রাণরশ্মিই রাজন্য ক্ষিত্রিয়]। অনুষ্টুপ্ ছন্দরশ্মিই বৈশ্য, অনুষ্টুপ্ ছন্দরশ্মি পূর্বক্ত ছন্দ [গায়ত্রী, উষ্ণিক ছন্দরশ্মির সাথে কার্যের গতি বৃদ্ধির সাথে-সাথে সৃষ্টি প্রকাশের সহায়ক ভূমিকা পালন করেন এবং গায়ত্রী ও উষ্ণিক ছন্দরশ্মির বল পরাক্রম অর্জনই বৈশ্য কর্ম। তপা বলই শুদ্র, অগ্নি, সূর্য, বিদ্যুৎ এবং কারণরূপ অগ্নি

আদি প্রকাশক বলই সমগ্র সৃষ্টিকে ধারণ করেন এবং পালন-পােষণ-ধারণ করেন এই ধারণ কার্যই তপাে কর্ম জানিবে।।

ঐতরেয় আরণ্যকে, সূর্যমণ্ডলে অবস্থিত 'মহাব্রত' নামে যে প্রাণশক্তি পরিচিত, তাকে বলা হয় বিশ্বামিত্র। সৌরজগতে তিন প্রকার প্রাণশক্তি অধিব্যপ্ত। এক প্রাণের নাম 'মহোক্ত', যা শতপথব্রাহ্মণে (১০.৫.২) ঋগ্বেদের নামে উল্লেখ আছে। এটি সূর্যমণ্ডলের রূপ। দ্বিতীয় 'মহাব্রত' প্রাণ হল যা সূর্যের রশ্মি দ্বারা প্রকাশিত এবং সামবেদে বলা হয়েছে। আবার তৃতীয়ত প্রাণতত্ত্ব বলা হয়েছে যা সৌরজগতে পুরুষরূপে প্রকাশিত এবং যাকে শ্রুতিতে অগ্নি নামে অভিহিত করা হয়েছে এবং যজুর্বেদেও বর্ণনা করা হয়েছে। এই তিনটি বেদের সমুদায়কে সূর্য বলা হয়। তাদের মধ্যে "মহাব্রত" নামক প্রাণশক্তিকে বলা হয় বিশ্বামিত্র। তিনি সমগ্র জগতের বন্ধু, অর্থাৎ সর্বত্র তিনি প্রাণশক্তি অর্পণ করেন, এই জন্যই তাঁকে 'বিশ্বামিত্র' বলা হয়। সংস্কৃত ব্যাকরণে শুধুমাত্র বিশ্বের মিত্রকে "বিশ্বামিত্র" বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ছিল বিশ্বামিত্রের অধিদৈবিক রূপ। সূর্য থেকেই সমস্ত প্রাণীর মধ্যে শক্তি আসে ,প্রাণ আসে। তাদের মধ্যে সেই প্রাণশক্তি, যা খাদ্যের পরিপাকে নিয়োজিত, তা হল 'বিশ্বামিত্রের আধ্যাত্মিক রূপ। সমস্ত জীবই প্রাথমিকভাবে খাদ্যভোজন এবং পরিপাক দ্বারা জীবিত, এবং যে ব্যক্তি প্রাণীকে এবং তাঁর প্রাণশক্তিকে প্রথম দেখেছেন এবং বেদসংহিতার মাধ্যমে সকলকে তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন, তিনি হলেন পুরুষ রূপ, আধিভৌতিক মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি'বিশ্বামিত্র'।

“গায়ত্রী বা ইদং সৰ্ব্বং ভূতং যদিদং কিঞ্চ। 
বাম্বৈগায়ত্রী বাথ৷ ইদং সৰ্ব্বং ভূতম্ । 
গায়তি চ ত্রায়তে চ।”-ছান্দোগ্য ৩।১২।১

যাহা কিছু স্থাবর জঙ্গমাত্মক পদার্থ আছে, তৎসমুদায়ই “গায়ত্রী।” বাক্‌ই গায়ত্রী ; কারণ বাক্ই সমস্ত ভূতকে গান করে ও রক্ষা করে। গায়ত্ৰী ই বাণী এবং বাণীই সরস্বতী। বক্ষ্যমান গায়ত্রীই পৃথিবী ; কারণ সকল প্রাণী এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং ইহা ত্যাগ করিয়া কেহ প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে না ।
গায়ত্রী সম্যক অবগত হইলে সমস্ত বেদ নিহিত জ্ঞান লাভ হয়।
 তৎ -- সেই অর্থাৎ তিনিই। “তদ্” এই সর্ব্বনাম শব্দের ক্লীব লিঙ্গের প্রথমা ও দ্বিতীয়ার এক বচনে তৎ হইয়া থাকে। উপনিষদে তৎ বহ্মবাচক শব্দ। তৎ বলিলে ব্রহ্মকেই বুঝায়। তিনি পুরুষ ও নহেন, স্ত্রী ও নহেন, এই জন্য ক্লীব লিঙ্গ শব্দ প্রয়োগ করা হইয়াছে। সেই “তৎ” ই সৎ, এজন্য উপনিষদে “তৎ সৎ” 
ব্রহ্ম রূপে ব্যবহৃত। “তৎ” এর অর্থাৎ বহ্মের যে ভাব তাহাই তত্ত্ব। “তৎ” বলিলে “যৎ” শব্দ আসিয়া পড়ে । তিনি 'কনি ? উত্তর--যিনি সকলের উপাস্থ্য। সেইরূপ “সৎ” বলিলেও অসৎ” শব্দ উদয় হয়। যাহার অস্তিত্ব অস্থায়ী ও অন্যের উপর নির্ভর কবে, তাহা অসৎ ।

গায়ত্রী মন্ত্রের রেফারেন্স সমূহঃ

ঋগ্বেদ: ৩/৬২/১০ ; যর্জুবেদ: ৩/৩৫; ২২/৯;৩০/২; ৩৬/৩ ; সামবেদ উত্তরার্চিক ১৪৬২; তৈত্তিরীয় সংহিতা: ১/৫/৬/৪, ৪/১/১১/১ ; তৈত্তিরীয়াণ্যক: ১/১১/২, ১০/২৭/১; তৈত্তিরীয়াণ্যক ( আন্ধ্র) : ১০/৩৫ ; মৈত্রিয়নী সংহিতা: ৪/১০/৩; ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৪/৩২/২, ৫/৫/৬, ৫/১৩/৮, ৫/১৯/৮ ; কৌষীতকি ব্রাহ্মণ: ২৩/৩, ২৬/১০; গোপথ ব্রাহ্মণ: ১/১/৩৪; দৈবত ব্ৰাহ্মণ: ৩/২৫ ; শতপথ ব্রাহ্মণ: ২/৩/৪/৩৯, ১৩/৬/২/৯, ১৪/৯/৩/১১, তৈত্তরীয় আরণ্যক : ৪/১১/২, ১০/২৭/১; তৈত্তরীয় আরণ্যক ( আন্ধ্র): ১০/৩৫ ; বৃহদারণ্যক উপনিষদ: ৬/৩/১১ ; জৈমিনীয় উ. ব্রাহ্মণ: ৪/২৮/১ ; শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ: ৪/১৮ ; আশ্বালায়ন শ্রৌতসূত্র: ৭/৬/৬ ;৮/১/১৮; শাংখ্যায়ন শ্রৌতসূত্র: ২/১০/২, ২/১২/২, ১০/৬/১৭, ১০/৯/১৬ ; আপ. শ্রৌতসূত্র: ৬/১৮/১; শাংখ্যায়ন গৃহ্যসূত্র: ২/৫/১২, ২/৭/১৯, ৬/৪/৮ ; কৌশিক সূত্র: ৯১/৬ ; সামমন্ত্র ব্রাহ্মণ: ১/৬/২৯ ; বৌধায়ন ধর্মশাস্ত্র: ২/১০/১৭/১৪; খাদিরগৃহ্য সূত্র: ২/৪/২১; আপস্তম্ব গৃহ্যসূত্র: ৪/১০/৯-১২ ; আপস্তম্ব শ্রৌতসূত্র: ২০/২৪/৬ ; মানব শ্রৌতসূত্র: ৫২/৪/৪৩; ঋগ্বিধান ১/১২/৫]

विता देवताछन्दः - दैवी बृहती, निचृद्गायत्रीस्वरः - मध्यमः,षड्जः

भूर्भुवः॒ स्वः। तत्स॑वि॒तुर्वरे॑ण्यं॒ भर्गो॑ दे॒वस्य॑ धीमहि।धियो॒ यो नः॑ प्रचो॒दया॑त्॥३॥

स्वर सहित पद पाठ

भूः। भुवः॑। स्वः᳖। तत्। स॒वि॒तुः। वरे॑ण्यम्। भर्गः॑। दे॒वस्य॑। धी॒म॒हि॒ ॥ धियः॑। यः। नः॒। प्र॒चो॒दया॒दिति॑ प्रऽचो॒दया॑त् ॥३ ॥


स्वर रहित मन्त्र

भूर्भुवः स्वः । तत्सवितुर्वरेण्यम्भर्गो देवस्य धीमहि । धियो यो नः प्रचोदयत् ॥


स्वर रहित पद पाठ

भूः। भुवः। स्वः। तत्। सवितुः। वरेण्यम्। भर्गः। देवस्य। धीमहि॥ धियः। यः। नः। प्रचोदयादिति प्रऽचोदयात्॥३॥

पदार्थ -
हे मनुष्यो! जैसे हम लोग (भूः) कर्मकाण्ड की विद्या (भुवः) उपासना काण्ड की विद्या और (स्वः) ज्ञानकाण्ड की विद्या को संग्रहपूर्वक पढ़के (यः) जो (नः) हमारी (धियः) धारणावती बुद्धियों को (प्रचोदयात्) प्ररेणा करे, उस (देवस्य) कामना के योग्य (सवितुः) समस्त ऐश्वर्य के देनेवाले परमेश्वर के (तत्) उस इन्द्रियों से न ग्रहण करने योग्य परोक्ष (वरेण्यम्) स्वीकार करने योग्य (भर्गः) सब दुःखों के नाशक तेजःस्वरूप का (धीमहि) ध्यान करें, वैसे तुम लोग भी इसका ध्यान करो॥३॥

अन्वयः - हे मनुष्याः! यथा वयं भूर्भुवः स्वरधीत्य यो नो धियः प्रचोदयात्, तस्य देवस्य सवितुस्तद्वरेण्यं भर्गो धीमहि, तथा यूयमप्येतद् ध्यायत॥३॥

पदार्थः -
(भूः) कर्मविद्याम् (भुवः) उपासनाविद्याम् (स्वः) ज्ञानविद्याम् (तत्) इन्द्रियैरग्राह्यं परोक्षम् (सवितुः) सकलैश्वर्यप्रदस्येश्वरस्य (वरेण्यम्) स्वीकर्त्तव्यम् (भर्गः) सर्वदुःखप्रणाशकं तेजःस्वरूपम् (देवस्य) कमनीयस्य (धीमहि) ध्यायेम (धियः) प्रज्ञाः (यः) (नः) अस्माकम् (प्रचोदयात्) प्रेरयेत्॥३॥-स्वामी दयानन्द सरस्वती

भावार्थ - इस मन्त्र में वाचकलुप्तोपमालङ्कार है। जो मनुष्य कर्म, उपासना और ज्ञान सम्बन्धिनी विद्याओं का सम्यक् ग्रहण कर सम्पूर्ण ऐश्वर्य से युक्त परमात्मा के साथ अपने आत्मा को युक्त करते हैं तथा अधर्म, अनैश्वर्य और दुःखरूप मलों को छुड़ा के धर्म, ऐश्वर्य और सुखों को प्राप्त होते हैं, उनको अन्तर्यामी जगदीश्वर आप ही धर्म के अनुष्ठान और अधर्म का त्याग कराने को सदैव चाहता है॥३॥

গায়ত্রী গায়তেঃ স্তুতি কর্মণ |
[নিরুক্ত ৭/১২]









চতুর্বিংশত্যক্ষরা বৈ গায়ত্রী ৷
[ শতপথ ব্রাহ্মণ- ৩/৫/১/১০]
গায়ত্রী ২৪ অক্ষরের হয়৷
গায়ত্রী প্রগাথা য়েষু চতুর্ষু বেদেষু তং বেদচতুষ্টয়ম্= গায়ত্রী আদি ছন্দ দ্বারা যুক্ত৷
অষ্টাক্ষরা বৈ গায়ত্রী৷
গায়ত্রী আট অক্ষরের [ত্রিপাদ ]
চতুবিংশক্ষরা বৈ গায়ত্রী
[ ঐ০ব্রা০- ৩/৩৬]
গায়ত্রী ছন্দের মন্ত্রে ২৪ অক্ষর থাকে,,
গায়ত্রী ছন্দে রচিত হওয়ার কারণে মন্ত্রকে বলা হয় গায়ত্রী৷ 'তৎসবিতুর বরেণম্' এই মন্ত্র বাদেও যেসকল মন্ত্র গায়ত্রী ছন্দে রচিত তাকে গায়ত্রী মন্ত্র বলে৷
যেমন-
(অগ্নিমীড়ে পুরোহিতম্ যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্ | হোতারম্ রত্নধাতমম্ || ঋ০ ১/১/১)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ