শাস্ত্রার্থ
স্থান: রাজধনবার, জেলা হজারীবাগ (বিহার)
দিনাঙ্ক: ৬ এপ্রিল ১৯৫৩ (সোমবার, সকাল ৮টা)
বিষয়: ভাগবতাদি পুরাণ কি বেদানুকূল?
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা: শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী
পৌরাণিক সমাজ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা: শাস্ত্রার্থ মহারথী শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে প্রধান: শ্রী পণ্ডিত মহাদেবশরণ জী, অধিষ্ঠাতা (গুরুকুল দেবঘর)
পৌরাণিক পক্ষ থেকে প্রধান: শ্রী পণ্ডিত অখিলানন্দ জী
"কবিরত্ন"
শাস্ত্রার্থের আয়োজন কর্তা: রাজা মহেশ্বারী প্রসাদ নারায়ণ দেব "রাজধনবার" (বিহার)
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
ধর্মানুরাগী সজ্জনগণ! ভগবানের ধন্যবাদ যে আজ আমরা ভাই-ভাই পরস্পর প্রেমপূর্বক কিছু বিচার-বিনিময় করার জন্য একত্রিত হয়েছি। এই বিচার-বিনিময় প্রেম আর শান্তির সঙ্গে সমাপ্ত হোক এটা আমার হার্দিক কামনা রইলো। নিজের দেশ আর ধর্মের গৌরবকে সুরক্ষিত রাখতে আর তাকে আরও উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত আবশ্যকতা রয়েছে যে আমাদের সাহিত্যের মধ্যে যে দোষ এসে গেছে, তার সংশোধন হোক। যাতে কোনো বিদেশি, বিধর্মী আর বিপক্ষী আমাদের পূর্বজদের আর আমাদের উপর আক্ষেপ করার সুযোগ না পায়। যখন আমরা পুরাণগুলোতে দেখি তো সেখানে এরকম অসত্য কথন লেখা পাই যাকে দেখে বিরোধী লোক আমাদের পূর্বজদের নিন্দা করে, আমরা আর্য সমাজীদের এটা পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে আমাদের ঋষি, মুনি, রাজা, মহারাজাগণ এরকম কখনও ছিল না। আর তারা এরকম ধর্ম বিরুদ্ধ কার্য কখনও করে নি, যেমনটা পুরাণগুলোতে তাদের উপর দোষারোপণ করা হয়েছে। আজ দেশের সম্মুখ গোরক্ষা হল আবশ্যক প্রশ্ন, কিন্তু গোরক্ষার পথে এক বড় ভারী বাঁধা এটা হল যে, গোরক্ষা বিরোধী লোক পুরাণের আধারে এটা বলে তথা লিখছে যে গোবধ সর্বদা হত, আর ভারতের রাজা, মহারাজাগণ তথা ঋষি মহর্ষি পর্যন্ত গৌ মাংস পর্যন্ত ভক্ষণ করতো। আমি বলছি যে আমাদের দেশে মুসলমানদের থেকে পূর্বে গোবধ কখনও হত না। পুরাণে যা লেখা আছে তা বেদ বিরুদ্ধ, সর্বদা মিশ্রিত করা অসত্য রয়েছে। আর আমাদের বিরোধীরা আমাদের পূর্বজদের উপর কলঙ্ক লাগিয়ে নিজের উল্লু সোজা করার জন্য লিখেছে। কিন্তু আমার পৌরাণিক সনাতন ধর্মী ভাইরা তাকে নিজের গলায় বেঁধে বসে আছে। উদাহরণের জন্য আমি কিছু কথন উপস্থিত করছি -
ব্রাহ্মাণানাম্ ত্রিকোটীশ্চ, ভোগয়ামাশ নিত্যশঃ ।।৪৮।।
পম্চ লক্ষ গবাম্ মাম্সৈঃ সুপক্বে ঘৃত সম্স্কৃতৈঃ ।।৪৯।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ৩ অধ্যায় ৫৪ শ্লোক
৪৮,৪৯|| বেঙ্কটেশ্বর প্রেস দ্বারা প্রকাশিত)
স্বায়ম্ভূ মনু যিনি আদি আর্য সম্রাট আর মনুস্মৃতির মতন ধর্ম শাস্ত্রের প্রণেতা ছিলেন, তিনি গোমেধ য়জ্ঞ করেন, আর তিন কোটি ব্রাহ্মণদের পাঁচ লক্ষ গো মাংস যা ভালো ভাবে ঘী দ্বারা রান্না হয়েছে, খাওয়ান। কত বড় অনর্থ! কত বড় কলঙ্ক! এই সময় কি কোনো পাপীর থেকেও পাপী বাদশাহও এমন আছে, যার ওখানে লক্ষ কি হাজারও গাভীদের ভোজনের জন্য মারা হয়? স্বায়ম্ভূ মনু কি এইরকম পাপ করতেন? আমি বলছি কখনও করতেন না। আরও দেখুন -
সত্য ব্রতস্তু তদ্ভত্বয়া কৃপয়া চ প্রতিজ্ঞয়া।
বিশ্বামিত্র কলত্রম্ চ পোষয়ামাস বৈ তদা।।১।।
হত্বা মৃগান্বরাহাম্শ্চ মহিষাম্শ্চ বনে চরান্।।২।।
অবিদ্য মানে মাম্সে তু বসিষ্ঠস্য মহাত্মনঃ।।৯।।
সর্ব কামদুহাম্ দোগ্ঘ্রীম্ দদর্শ চ নৃপাত্মজঃ।।১০।।
দাশ ধর্ম গতো রাজা, তাম্ জঘান্ স বৈ মুনে।
সতম্ মাসম্ স্বয়ম্ চৈব বিশ্বামিত্রস্যত্তাত্মজম্।।১১।।
ভোজয়ামাসম্ তচ্ছুত্বা বশিষ্ঠো হ্মস্য চুকুহো।।১২।।
(শিব পুরাণ উমা সংহিতা অধ্যায় ৩৮ শ্লোক ১-২ তথা
৯-১২।। শ্যামকাশী প্রেস মথুরা দ্বারা প্রকাশিত)
অর্থাৎ মনুর বংশজ চক্রবর্তী মহারাজা মান্ধাতার পৌত্র সত্যব্রত ঋষি বিশ্বামিত্রের পরিবারকে সেই সময় পালন করে, যেসময় ঋষি বিশ্বামিত্র গভীর তপস্যায় লেগে ছিল। আর তার পত্নী নিজের পুত্র গালবকে বিক্রি করছিল। - সেইসময় সে অনেক প্রকারের মাংস দ্বারা সেই পরিবারকে পালন করে, একদিন বশিষ্ঠ ঋষির কামধেনু গাভীকে মেরে তার মাংস স্বয়ংও খায় আর বিশ্বামিত্রের পুত্রকেও খাওয়ায়। আরও দেখুন -
এবমেষা চ গৌ ধর্ম প্রাপ্স্যতে নাত্র সম্শয়ঃ।
পিতৃনভ্যর্চ্য ধর্মেণ নাধর্মো নো ভবিষ্যতি।।১৮।।
এবমুক্তাশ্চ তে সর্বে প্রোক্ষয়িত্বা চ গাম্ তদা।
পিতৃভ্যঃ কল্পয়িত্বা তু হ্য়ু পায়ুঁজ্জত ভারত।।১৯।।
উপয়ুজ্য চ গাম্ সর্বেম্ গুরোস্তস্য ন্যবেদয়ন্।
শাদ্র্দূলেন হতা ধেনুর্বত্সা বৈ গৃহ্য তামিতি।।২০।।
(শিব পুরাণ উমা সংহিতা অধ্যায় ৪১ শ্লোক ১৮,১৯,২০ পৃষ্ঠ ১২৫৭।। শ্যামকাশী প্রেস মথুরা দ্বারা প্রকাশিত)
কৌশিক (বিশ্বামিত্রের) পুত্র গর্গ ঋষির শিষ্য হয়ে গেল। আর তার গাভীকে মেরে তার মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধ করে তার বাছুরকে গর্গ ঋষির নিকট নিয়ে যায় আর বলে দেয় যে - গাভীকে তো বাঘ খেয়ে ফেলেছে, আপনি বাছুরটিকে নিন। সকলে এটা বিচার করে যে যদি এই গো মাংসকে এমনই খাই তবে পাপ লাগবে কিন্তু যদি পিতর শ্রাদ্ধ করে তার পর খাই, তবে আমাদের পাপ লাগবে না আর গৌ-ধর্ম কার্যে লেগে যাবে।
এরূপ কাহিনী পুরাণগুলোতে অনেক জায়গায় তো খুব স্পষ্ট শব্দে পাওয়া যায়।
"গবাম্ লক্ষছেদনম্ চ হরিণানাম্ দ্বিলক্ষকম্"।।১৬।। আরও দেখুন -
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রী কৃষ্ণ জন্ম খণ্ড অধ্যায় ১০৫। পৃষ্ঠ ১০৮৬, শ্লোক ৬০ থেকে ৬৩।। (কলকাতা মোর সংস্করণ দ্বারা প্রকাশিত) অর্থাৎ এক লক্ষ গাভী মারা হোক আর দুই লক্ষ হরিণ এই প্রকারে আরও লক্ষ জীব হত্যার ব্যবস্থা ছিল। তথা রূকমণীর বিবাহে অনেক পশু হত্যার বিচার করা হয়েছিল, যেখানে লক্ষ খানেক গৌ হত্যা করার নির্দেশ হয়। এরপর দেখুন -
পঞ্চ কোটি গবাম্ মাম্সম্ সম্-পূপম্ স্বান্নমেব চ।।৯৮।।
এতেষাম্ চ নদী রাশী ভুঞ্জতে ব্রাহ্মণঃ মুনে।।৯৯।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ২ অধ্যায় ৬১ শ্লোক ৯৮-৯৯।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
চন্দ্রের পৌত্র আর বুদ্ধের পুত্র "চৈত্র" -এর ওখানে পাঁচ কোটি গো মাংস ব্রাহ্মণদের খাওয়ানো হয়। "বলুন পাঁচ কোটি গাভীদের এক-একদিনে ব্রাহ্মণদের ভজনার্থ করা হয়" কত বড় ভয়ংকর পাপের দোষ এক ক্ষত্রিয় রাজার উপর লাগেনি হয়েছে? এর অতিরিক্ত দ্বিতীয় দোষ পুরাণে আমাদের পূর্বজের উপর ব্যভিচার অর্থাৎ পরস্ত্রী গমন লাগানো হয়েছে। এর উদাহরণও দেখুন। গীতায় শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র জী বলছেন -
য়দ্যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।
স য়ত্ প্রমাণম্ কুরূতে লোকস্তদনুবর্ততে।।২১।।
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা অধ্যায় ৩ শ্লোক ২১)
অর্থাৎ - শ্রেষ্ঠ পুরুষ যেমন-যেমনটা আচরণ করে। নিম্ন মানুষেরাও সেরকম-সেরকমটা করতে থাকে। অভিপ্রায় হল এটা যে, শ্রেষ্ঠ পুরুষকে সর্বদা শ্রেষ্ঠ কার্যই করা উচিত যাকে দেখে-দেখে তার অনুগামীরা শ্রেষ্ঠ কার্যই করবে। দেখুন প্রমাণ আর নোট করুন -
"মম্ পত্নী সহস্রাণি সন্তি পাম্ডব ষোড়শঃ।।"
(ভবিষ্য পুরাণ উত্তর পর্ব ৪ অধ্যায় ১১১ শ্লোক ৩ পৃষ্ঠ ৪৭২।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
আমাদের এটা প্রশ্ন হল যে, যদি এটা সত্য হয় তবে শ্রীকৃষ্ণ জী এমনটা কেন করলো? এটা কি ধর্ম? এর জন্য কি যে আমার অনুগামীরাও এরকম কাজ করুক? তাদেরও হাজার-হাজার স্ত্রী হোক? একটা নয় আপনি যত চান তত প্রমাণ নিন। যথা -
তম্ দ্রষ্ট্বা সুন্দরম্ সাম্বম্ সর্বাশ্চুক্ষুভিরে স্ত্রিয়ঃ।।২৫।।
স্বাভাবতোল্প সত্বানাম্ জঘনানি বিসুস্রু বুঃ।।২৭।।
ব্রহ্মচর্যেঽপি বর্তন্ত্যাঃ সাধ্ব্যা হ্যপি চ শ্রূয়তে।
হৃদ্যম্ হি পুরুষম্ দৃষ্টবা য়োনিঃ সম্ক্লিদ্যতে স্ত্রিয়াঃ।।২৮।।
(ভবিষ্য পুরাণ ব্রাহ্ম পর্ব অধ্যায় ৭৩ পৃষ্ঠ ৭৭, শ্লোক ২৫,২৭,২৮।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ জীর সেই পত্নীগণ শ্রীকৃষ্ণ জীরই পুত্র সাম্বের উপর কামে বশীভূত হয়ে আসক্ত হয়ে যায় এটা দেবর্ষি নারদ জী তথা শ্রীকৃষ্ণ জী দুজনে দেখলো। আর বললো -
চৌরেরপহৃতাঃ সর্বা বেশ্যাত্বম্ সমবাপ্স্যথ।।১৮।।
এবম্ নরদ শাপেন মচ্ছাপেন চ সাম্প্রতম্।।১৯।।
বেশ্যাধর্মেণ বর্তধ্ব মধুনাঁ নৃপ মন্দিরে।।২২।।
ন চৈকস্মিন্যতিঃ কার্য়া পুরুষে ধন বর্জিতে।।২৫।।
সুরূপো বা বিরূপো বা দ্রব্যম্ তত্র প্রয়োজনম্।।২৬।।
(ভবিষ্য পুরাণ উত্তর পর্ব অধ্যায় ১১১, পৃষ্ঠ ৪৭৩।। বেন্কটেশ্বর প্রেস বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত)
অর্থাৎ তারপর দুজনে অভিশাপ দেয় যে তোমরা সকলে বেশ্যা হয়ে যাও, বেশ্যা ধর্মে তোমরা বর্তো, ধন হীন মানুষ হতে তোমরা রতি ক্রিয়া করবে না, মনুষ্য সুরূপ হোক অথবা কুরূপ সেখানে ধনই সম্পর্ক। তথা তারপর তাদের উদ্ধারের জন্য উপায় বললেন যে রবিবারের দিন কোনো বেদপারগামী ব্রাহ্মণকে ডেকে তার সঙ্গে বিনা ফিস সমাগম করো তবে উদ্ধার হয়ে যাবে। স্থান নোট করুন তথা এই পুস্তক দেখে নিন - "ভবিষ্য পুরাণ উত্তর পর্ব অধ্যায় ১১১ শ্লোক ৩৩, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬"।। "রবিবার" শব্দ ৩৩ আর ৪৬ নম্বর শ্লোকে ভালো করে দেখে নিন।।
যখন শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ আর তার পরিবারের এই চরিত্র বলা হয়েছে তো তার ভক্তদের কি অবস্থা হবে? আরও দেখুন - "বিষ্ণু জালন্ধরের পত্নী বৃন্দার সঙ্গে ব্যভিচার করে" এটা পত্ম পুরাণে লেখা আছে। আমি বলছি আপনি ধ্যান দিয়ে শুনুন আর স্থান নোট করুন। পুরাণ আমার কাছে আছে যদি কোনো সজ্জন চান তো এসে দেখে যেতে পারেন, স্থান নোট করুন -
পদ্ম পুরাণ উত্তর খণ্ড অধ্যায় ১৬ শ্লোক ৫৩ থেকে ৭২ পর্যন্ত (আনন্দ আশ্রম প্রেস পুনা তথা কলকাতা মোর সংস্করণ দ্বারা প্রকাশিত) পদ্ম পুরাণেই আরও দেখুন - পদ্ম পুরাণ, উত্তর খণ্ড ৬ অধ্যায় ১০৫ শ্লোক ১ থেকে ৩০", তথা চন্দ্র নিজের গুরু বৃহস্পতির পত্নী তারাকে অপহরণ করে তার সঙ্গে ব্যভিচার করে। মনু জী মহারাজ নিজের স্মৃতিতে গুরু পত্নী গমনকে মহাপাপ বলেছে।
বিস্তৃত জানকারীর জন্য দেবী ভাগবত পুরাণ স্কন্দ ১ এর অধ্যায় ১১ তথা এইসব কাহিনীর কিছু ভিতর থেকে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের স্কন্দ ৯ অধ্যায় ১৪ তেই বলা হয়েছে। পণ্ডিত জী মহারাজ, এটা ছিল পুরাণগুলোর ঠিকানা! যেখানে গুরুপত্নীর হরণ ও তার সঙ্গে ব্যভিচার স্পষ্ট লেখা রয়েছে। আর মনু জী মহারাজও নিজের স্মৃতিতে গুরু পত্নী গমনকে মহাপাপ বলেছে। আর বলেছ যে - সংসারে চারটি মহাপাপ আছে। প্রথম তো ব্রহ্মহত্যা (অর্থাৎ কোনো বিদ্বান ব্রাহ্মণকে হত্যা করা), দ্বিতীয় মদ্য পান করা, তৃতীয় চুরি করা, চতুর্থ গুরুপত্নীর সঙ্গে ব্যভিচার করা, কিন্তু পঞ্চম আরও একটা মহাপাপ রয়েছে সেটা হল যে, যারা সেই ব্যাক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কে থাকে তারাদেরকেও মহাপাপী বলা হয়েছে। যথা -
ব্রহ্মহত্যা, সুরাপানম্, স্বেয়ম্, গুরু বম্গ নাগম্ঃ।
মহান্তি পাতিকাব্যাহূ সম্সর্গশ্চাপি তৈ সহঃ।।৫৪।।
(মনুস্মৃতি অধ্যায় ১১ শ্লোক ৫৪)
চন্দ্র হতে তারা গর্ভবতী হয়, তার থেকে বুদ্ধ নামের পুত্র উৎপন্ন হয়। দেবগণ তারাকে বৃহস্পতিকে দিয়ে দেয় আর পুত্র-বুধ-চন্দ্রকে আদি। এইভাবে পূর্বজদের উপর কলঙ্ক লাগানো কারী সহস্র কথন পুরাণগুলোতে ভর্তি পরে আছে। এইজন্য আর্য সমাজের এই নিজের ভাই পৌরাণিক সনাতন ধর্মীগণকে পরামর্শ হল যে তারা শীঘ্র এটা ঘোষণা করে দিক যে, পুরাণ হল বেদ বিরুদ্ধ, অপ্রমানিক তথা অমান্য।
শাস্ত্রার্থ মহারথী শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
সজ্জন গণ! মহাশয় জী যা প্রশ্ন করেছে আর যে কথাগুলোকে না বোঝার কারণে ওনার ভ্রম হয়েছে। যদি সেসব কথা বিধর্মীদের হত তবে আমি বিনা কোনো দ্বিধায় সেগুলো পুরাণ থেকে বের করতে অথবা পুরাণগুলোকে ছাড়ার ঘোষণা করে দিতাম। কিন্তু আপনি পুরাণ থেকে যা শুনিয়েছেন এসব যেমনটা তেমন বেদের মধ্যেও বিদ্যমান আছে। মহাশয় জী! যে আক্ষেপ আজ আপনি পুরাণের উপর লাগাচ্ছেন সেই সব আক্ষেপ বৌদ্ধ কাল থেকে বেদের উপর লাগানো হয়। বৌদ্ধদের সেই ডিমডিম ঘোষণা প্রসিদ্ধ আছে - "ত্রয়ো বেদস্য কর্ত্তারো ভাণ্ড ধূর্ত নিশাচরাঃ"। অর্থাৎ বেদের কর্তা ভাণ্ড, ধূর্ত, নিশাচর হতে পারে। কারণ সেখানে অশ্লীলতা, ধূর্ততা পূর্ণ আর দুরাচারের কথা লেখা আছে। এরকম অবস্থায় পুরাণকে ত্যাগ করলে কাজ হবে না। কিন্তু বেদ তথা অন্যান্য আর্ষ গ্রন্থগুলোকে ছেড়ে বিধর্মীই হয়ে যেতে হবে। কোনো অন্য ধর্মাবলম্বী এরকম কথন মিলিয়ে দিয়েছে এসব কল্পনা নিরাধার আর অবিশ্বাস্য কারণ কন্যাকুমারী থেকে হিমালয় পর্যন্ত উপলব্ধ পুস্তকগুলোতে তাড় পত্রের উপর লেখা অধাবধি সুরক্ষিত অনেক পুস্তকালয়ে প্রাপ্ত পুরাণ গ্রন্থে সর্বত্র কোনো মিশ্রণ করতে সমর্থ হবে এটা সর্বথা অসম্ভব। এইজন্য মহাশয় জীর ভ্রান্তির একমাত্র এটাই কারণ যে তিনি গুরুমুখে পুরাণের অধ্যায়ন করে নি। যে ব্যাক্তি গুরুমুখ হতে বেদ ও পুরাণ পড়বে তার ভ্রম হবেই না। গৌমাতা সনাতন ধর্মীদের হল প্রাণ, আমাদের অগণিত পূর্বজেরা গৌয়ের জন্য নিজের প্রাণ দিয়ে দিয়েছে। আজকেও এক সত্য হিন্দু আবশ্যকতা পড়লে গৌয়ের জন্য নিজের প্রাণও দিতে হিচকিচাবে না। এই যুগেই শ্রী স্বামী করপাত্রী জী মহারাজের সঙ্গে গৌ রক্ষা আন্দোলনে ২৫হাজার সনাতনী জেল যাত্রা করে ফেলেছে। যেখানে এই সেবকও ছিল, তিন মহাত্মা জেলার আতনায় নিজের প্রাণও দিয়ে দিয়েছে। এখনও স্বামী করপাত্রী জী এই আন্দোলনে জেল আতনা ভুগছেন। যদি এই শাস্ত্রার্থের পুরোগম না হত তবে এই সেবকও হয়তো জেলে থাকতো। এই অবস্থাতে সনাতনীদের কোনো গ্রন্থে পূজ্য গৌ মাতার বিরুদ্ধ একটা শব্দও হতে পরে না। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩|৩|৩| এ লেখা আছে যে, "মহাস্ত্বেব গোর্মহিমা" গরুর মহত্ব হল অনেক বড়, এখন আপনার প্রশ্নের উত্তর শুনুন -
(১) স্বায়ম্ভুব মনু অনেক গোমেধ য়জ্ঞ করে। "সম্গমে" ধাতু হতে "মেধ" শব্দ তৈরি হয়। যার অর্থ হল, গৌয়ের সৎকার বা পূজা। "সর্বে দেবাস্থিতা দেহে"। (বৃহত্ পারাশরস্মৃতি) ৩|৩|৩| প্রমাণানুসারে গৌয়ের শরীরে তেত্রিশ কোটি দেবতাগণের নিবাস আছে। সুতরাং যে য়জ্ঞে গৌয়ের বিশেষ রীতিতে পুজন সৎকার হয় এমন য়জ্ঞকে "গৌ মেধ" বলা হয়। তাই আমাদের সকল পূর্বজ গৌ ভক্তির অনেক অনুষ্ঠান করতেন কারণ আমাদের গ্রন্থে "গাবো বিশ্বস্য মাতরঃ" অর্থাৎ গৌ হল বিশ্বের মাতা এমনটা ঘোষণা করা হয়েছে। মাংস শব্দের অর্থ কেবল লোক প্রসিদ্ধ পশু আদির রক্তের পর হয়ে থাকা - "রসাদরক্তম্ ততোমাম্সম্" দ্বিতীয় ধাতু অর্থাৎ গোশ্তই নয় বরং কাণ্ড আর ফলের গুদা এবং দুধ আদি তরল পদার্থের সার-ভাগ-রবড়ি, ক্ষীর, খোয়া আদিরও, এর অনেক অর্থ আছে। এইজন্য ভোজন প্রসঙ্গেও যেখানে "গো মাংস" শব্দ এসেছে, সেখানে গৌ হতে উৎপন্ন হওয়া দুগ্ধ, দই, মাখনাদি গব্য দ্বারা অভিপ্রায় হবে অথবা গব্য নির্মিত সারভূত পায়েস, ক্ষীর, রবড়ি আদির সঙ্গে অর্থ হবে। সংস্কৃত সাহিত্যে বৃক্ষ ফল আদির উর্ধভাগ, মধ্যভাগ, আর কঠিন ভাগকে ক্রমশঃ ত্বচা গুদের মাংস আর গুট্ঠলকে অস্তি নামেই স্মরণ করা হয়ে থাকে। হরড়ের বিষয়ে - শালীগ্রাম নিঘণ্টু পৃষ্ঠ ১১-৫২|| তে লেখা আছে যে - "সূক্ষ্মাস্থি মাম্সলা পথ্যা" অর্থাৎ যেখানে অস্থি গুট্ঠল সূক্ষ্ম হয় আর মাংস গুদা অধিক হয় সেটা হল শ্রেষ্ঠ, সুতরাং স্বায়ম্ভব মনু নিত্য গো পূজন করতেন। পাঁচ লক্ষ গাভীর গব্য দ্বারা নির্মিত ব্রাহ্মণদের তৃপ্ত করতেন। মূলে গৌ মাংস শব্দের বিশেষণ দ্বারাও আমার অর্থের পুষ্টি হবে। যেমন - "সাপূপম্" মালপোয়া সঙ্গে হত, তথা সেই গব্যতে চালের রন্ধন হত, যার সোজা তাৎপর্য হল যে গো দুগ্ধ নির্মিত ক্ষীর আর মাপোয়া দ্বারা ভোজন হত। বেদে স্পষ্ট লেখা আছে যে -
(ক) এতদ্হবৈ দেবানাম্ পরমম্ অন্নাদ্যম্।
(শতপথ ব্রাহ্মণ ১১|৭|)
(খ) পরমন্নম্ তু পায়সম্ (অমর কোষ)
অর্থাৎ দেবতাদের অর্পণ করা মাংসকে "পরমান্ন" বলে।
(গ) ক্ষীরের অন্যতম নাম হল "পরমান্ন"। আশা করছি মহাশয় জী এখন কেবল মাংস শব্দ দেখে ভ্রমে পড়বেন না। আয়ুর্বেদে বর্ণন আছে যে অমুক ঔষধিতে "প্রস্থম্ কুবারিকা মাঁসম্" অর্থাৎ এক সের ভর্তি ঘী কুবারীর মাংস ঢালা হয়। এখন যদি আপনার মতো জ্ঞানী! কুমারী কন্যার সের ভর্তি মাংস - গোস্ত ঢালার ব্যবস্থা করে তো অনর্থ হয়ে যাবে।
(২) সত্যব্রত নামক যে ব্যাক্তির কথা বলে এখানে আক্ষেপ করা হচ্ছে বাস্তবে সে সেরকমই দুরাচারী ছিল যাকে বিকৃতাঙ্গ করে হিন্দু ধর্ম থেকে সর্বদা বহিষ্কৃত করে দেওয়া হয়েছিল। এটা "হরিবংশ পুরাণে" স্পষ্ট লেখা আছে। একই কশ্যপ ঋষির সন্তান - কেউ দেবতা তো কেউ দানব। একই পুলস্ত্যের নাতি - রাবণ আর বিভীষণ। এইপ্রকার সত্যব্রত, ঋষির হওয়ার পরেও দুর্ভাগ্যবশত পথ ভ্রষ্ট হয়ে "রাক্ষস" হয়ে যায়। পুরাণে দেব, দানব, মানব, সকলের সমুচিত আর দুশ্চরিত্রের বর্ণন আছে, যেখানে মনুষ্য ধর্ম অধর্মের পরিণাম জেনে পাপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক, সুতরাং যেমন রাবণের দুরাচারী হওয়ায় রাম ভক্তের উপর কোনো আক্ষেপ হতে পারে না, সেইভাবে সত্যব্রতের দুরাচারীর তাকে উগ্র দণ্ডদাতা সনাতনী ধর্মীদের উপর কোনো আক্ষেপ করা ব্যর্থই হবে। কারণ আমরা তো হলাম "রামাদ্বিতপ্রবর্তিব্যম্, ন রাবণাদিবত্" এর অনুসারে রামাদির অনুকরণকারী, রাবণ আদির নয়।
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্যজী শাস্ত্রী -
(৩) রুক্মিণীর বিবাহ প্রস্তুতিতে গৌ আদি পশুদের বধ করার জন্য একত্রিত করার উপর আক্ষেপ আছে। সেটাও নির্মূল কারণ প্রকৃতি প্রসঙ্গ এই হল যে - ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মধ্যে লেখা আছে যে - কুডনপুরের রাজা ভীষ্মক একজন ধার্মিক রাজা ছিলেন। কিন্তু তার কুপুত্র রুক্মীকংস শিশুপালাদির দলের অন্যতম সদস্য ছিল। একবার সভাতে রুক্মিণীর বিবাহার্থ যখন পরামর্শ চলে তো শতানন্দ পুরোহিত শ্রীকৃষ্ণকে রুক্মিণীর যোগ্য বর বলে, আর মাখন মিশ্রী আদি দিয়ে অনেক সৎকারের কথা বলে। কিন্তু দুষ্ট রুক্মী পুরোহিত, নিজের পিতা আর শ্রীকৃষ্ণ তিনজনকে অপশব্দ করে নিজের বোনকে শিশুপালের সঙ্গে বিবাহ করানোর জন্য নিজের দৃঢ় নিশ্চয় ব্যক্ত করে আর শিশুপালাদির জন্য নানা বিধি মদ্য আর অনেক পশুর মাংসাদির প্রবন্ধ করার ঘোষণা করে, তর্ক-বিতর্কের সঙ্গে সভা সমাপ্ত হয়ে যায়। অন্য দিকে রুক্মিণী মাতা-পিতার সম্মতি ছাড়া গুপ্ত রীতিতে ভগবান্ কৃষ্ণের কাছে এক ব্রাহ্মণকে পাঠিয়ে নিজের উদ্ধারের সব ব্যবস্থা ঠিক করে নেয়। নিশ্চিত সময়ে শিশুপালের বরযাত্রী আসে। কিন্তু ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ সবার সামনে রুক্মিণীকে হরণ করে নেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। রুক্মীর সব সঙ্গী মারা যায়। শিশুপাল পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচায়, আর স্বয়ং রুক্মিণী হস্তক্ষেপ না করলে তো শ্রীকৃষ্ণের হাতে সেও মারা যেত। শেষে মাথা ন্যাড়া করে মুখ কালা করে তাকে অপমান পূর্বক ছেড়ে দেওয়া হয়, এইভাবে রুক্মীর বিচারানুসারে না তো রুক্মিণীর বিবাহ শিশুপালের হয় আর না কোনো প্রাণীকে মারার সুযোগ আসে। সুতরাং রুক্মিণীর বিবাহতে গৌবধ তো দূর থাকুক মাছির পর্যন্ত বধ হয়নি।
(৪) যেরকম পৌলস্ত ঋষির অগণিত পুত্র-পৌত্রদের গৌ ভক্ষক আর নর ভক্ষক রাক্ষস হয়ে যাওয়াতে সনাতন ধর্মের উপর কোনো আক্ষেপ হতে পারে না সেই রকম বিশ্বামিত্রের সঙ্গে কিংবা ন্যূনাধিক পুত্রের বিধর্মী হয়ে যাওয়াতে আমাদের উপর কোনো আক্ষেপ হতে পারে না। আপনি যে গৌ বধের প্রসঙ্গ তুলেছেন এতে ঈসাই- মুসলমান ফালতু লাভ উঠাবে। এটা আপনি না তুললে ভালো হতো। মুসলমানদের আসার পূর্বে গৌ বধ হতো না, এটা সর্বথা অসত্য আর এক সম্প্রদায়ের ব্যর্থ নিন্দা। কোনো সম্প্রদায়কে এইভাবে অপমান করা উচিত না।
Note - এরকম কথা বলে মাধবাচার্যজী মুসলমানদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন কিন্তু বিফল হন। আর তারপর বলেন -
(৫) পুরাণ সাহিত্যের মধ্যে দুটি কৃষ্ণের বর্ণনা আছে। একটা কংস আদি দুষ্টের নাশক, গীতার উপদেষ্টা, সদাচারী, সনাতন ধর্মীদের গোপাল কৃষ্ণ ভগবান্, দ্বিতীয় করুষ দেশের রাজা পৌণ্ড্রিক যে যন্ত্র সঞ্চালিত নকল অস্ত্র লাগিয়ে সেরকমই বহুরূপ বানিয়ে কৃষ্ণের নামে বিখ্যাত হওয়ার অনর্থকারীতে প্রয়ত্নশীল, দুরাচারী, দম্ভী, নকল কৃষ্ণ ছিল।
শেষে ভগবান্ কৃষ্ণেরই হাতে সে মারা যায়। মহাশয়জী, আপনি যে অনর্থ চেষ্টা এখানে প্রকট করছেন সেটা সেই নকল কৃষ্ণ সম্বন্ধিত। এই ঈর্ষালু দুষ্ট বাহন স্বয়ং তো ভগবান্ কৃষ্ণের মতো বানিয়ে ছিল কিন্তু সদাচারে তাদৃশ হতে পারেনি। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের দশম স্কন্দে আর পুরাণান্তরের মধ্যেও এই নকল কৃষ্ণ পৌণ্ড্রিকের এরকম উপহাসাস্পদ কথা বিদ্যমান আছে।
(৬) শ্রীকৃষ্ণজীর ১৬ সহস্র স্ত্রী যা আপনি বলেছেন সেটা হল সাম বেদের ঋচা।
Note - এতে মাঝখানেই ঠাকুর অমর সিংহজী বলে ওঠেন -
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহজী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
মহারাজজী! আপনার কি মনে আছে বদ্দোমল্লী জেলা স্যালকোট (বর্তমান পাকিস্থান) -এর শাস্ত্রার্থের কথা? আপনি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন যে - শ্রীকৃষ্ণজীর এত সামর্থ্য ছিল যে তিনি এত স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন আর সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে নরকাসুরের ওখানে ১৬ সহস্র কন্যা বন্দী ছিল। তার উদ্ধার এইভাবেই হওয়ার ছিল। তাকে মেরে তাদের ছিনে নিয়ে আসেন আর নিজের কাছে আশ্রয় দিয়ে ছিলেন, এখন আপনি সাম বেদের ঋচা বলছেন।
Note - পণ্ডিতজীর উপরিউক্ত কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মাধবাচার্যজী বলতে লাগলেন-
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্যজী শাস্ত্রী -
এখানে জালন্ধর শব্দের অর্থই হল জলকে ধারণকারী মেঘ। মেঘান্তরবর্তী বিদ্যুতই হল বৃন্দা যাকে একজন পতিব্রতার মতো তদনুগামিনী বলা হয়েছে। বায়ু রূপ বিষ্ণু যতক্ষণ পর্যন্ত না বিদ্যুত্ রূপ বৃন্দার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত বর্ষা হয় না। এই বৃষ্টি বিজ্ঞানই হল এই কথার বাচ্যার্থ যা আমাদের পুরাণ দিগ্দর্শন গ্রন্থের মধ্যে বিস্তার পূর্বক লেখা আছে।
Note - মাঝখানেই ঠাকুর সাহেব দাঁড়া হয়ে বললেন -
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহজী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিতজী মহারাজ! বৃন্দার কথাতে আপনি জেলা স্যালকোটের শাস্ত্রার্থের মধ্যে বলেছিলেন যে, "জালন্ধর দুরাচারী ছিল, সে পরস্ত্রীদের সঙ্গে দুরাচারী করতো, তাকে এখানে দণ্ড দেওয়া উচিত ছিল"। দ্বিতীয়ত আপনি বলেছিলেন যে "বৃন্দা পতিব্রতা থাকাতে সে মারা যেত না। তাই তার পতিব্রত ধর্ম নষ্ট করা আবশ্যক ছিল"।
Note - ঠাকুর সাহেবের একথার কোনো উত্তর না দিয়েই -
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্যজী শাস্ত্রী -
আকাশস্থ বৃহস্পতি নামক গ্রহের কক্ষতে পরিভ্রমণকারী এক উপগ্রহ যেটা তারা নামেই বিখ্যাত সেটা একবার চন্দ্রমার আকর্ষণে চন্দ্র কক্ষতে চলে যায় তো আকর্ষণ বিকর্ষণের তারতম্য বিশৃঙ্গল হয়ে যাওয়াতে সব গ্রহ নক্ষত্রতে হইচই শুরু হয়ে যায় শেষে প্রজাপতি - সূর্যের বিশিষ্ট আকর্ষণ দ্বারা সেই তারাটি চন্দ্র কক্ষকে ছেড়ে দিয়ে পুনঃ বৃহস্পতি কক্ষতে পূর্ববত্ সম্বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই টানাহেঁচড়ার মধ্যে চন্দ্রমা আর তারার অনেকটা ভাগ ভেঙ্গে গিয়ে এক অন্য স্বতন্ত্র গ্রহের প্রাদুর্ভাব হয়ে যায় যাকে আজ "বুধ" বলা হয়। এটা হল বুধ গ্রহের বৈজ্ঞানিক উৎপত্তির খগোলিক কথা। আমি ঠাকুর সাহেবের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। ঠাকুর সাহেবজী! ভালো হতো যদি আপনি সামান্য পুরাণের বিষয়ের উপর বিচার করতেন। পুরাণ হল বেদোক্ত, কারণ অথর্ববেদের (১১|৭|২৪) মধ্যে "ঋচঃ সামানি চ্ছন্দাম্সি পুরাণম্ য়জুষা সহ।" আদিতে পুরাণ নাম আছে। আপনি পুরাণ নামকে বাদ দিয়ে পুরাণের কথা নিয়ে বসে আছেন। আপনি ঠাকুরগীরি করেন নাকি শাস্ত্রার্থ?
Note - এতে জনগণের মধ্যে হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে যায় তথা চতুর্দিক থেকে "শব্দ ফিরিয়ে নিন" এর আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। তখন শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহজী দাঁড়া হয়ে জনতাকে শান্ত করেন, আর বলেন যে - আমার প্রতি বলা শব্দে আপনারা খারাপ পাবেন না, আমি কোনো কিছুই খারাপ মনে করি না। ইনি তো এটাই চান যেকোনো ভাবে আপনারা রাগ করুন আর শাস্ত্রার্থ থেকে এনার পিছা ছুটে যাক। আপনারা এনার প্ররোচনাতে একদম জ্বলে উঠবেন না আর শান্তি পূর্বক শাস্ত্রার্থ চলতে দিন।
তদোপরান্ত - শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্যজী শাস্ত্রী বলেন যে - ঠাকুর সাহেব! আপনি "পুরাণের অপারেশন হওয়া উচিত" তথা "বিষ্ণুজী বৃন্দার সঙ্গে ব্যভিচার করেছে" এই কঠোর শব্দ বলেছেন।
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহজী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
সামান্য পুরাণ শব্দের উপর আমাদের কোনো বিবাদ নেই। এর উপর প্রমাণ দেওয়া আর সেইদিকে শাস্ত্রার্থকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাটা হল প্রস্তুত বিষয় থেকে পালিয়ে যাওয়া। "গৌ" শব্দের অর্থ গৌ পশু অতিরিক্ত আরও আছে আর "মাংস" শব্দ আয়ুর্বেদের মধ্যে অর্থাৎ আয়ুর্বেদ গ্রন্থের মধ্যে "গূদা"র জন্যও এসেছে। আমি আয়ুর্বেদ বিধি পূর্বক গুরুমুখ থেকে পড়েছি আর আমি নিজেও বৈদ্য অতঃ "প্রস্থম্ কুমারিকা মাম্সম্" এর অর্থ তো যে কেউ "মেয়ের এক সের মাংস" কোথাও করবে, কিন্তু আপনার মতো জ্ঞানী কোনো বৈদ্যের কাছ থেকে শুনে যে কুমারী "ঘী কুমারকে বলে" আর সর্বত্র কুমারীর অর্থ ঘীকুমারই করে অথবা একটু ব্যাকরণের অভিমানে আয়ুর্বেদে লেখা "কন্টকারী" ওষুধের অর্থ -- কাটার শত্রু জুতা করে তাহলে অবশ্যই হাস্যাস্পদ হবে, যেমনটা গৌমাংসের অর্থ আপনি ঘী, দুধ, মাখন, রাবড়ি, আর খোয়া© করে বিদ্বানদের মাঝে হাস্যাস্পদ হচ্ছেন। আপনি কি এরকম কোনো কোষ বা কোনো প্রামাণিক গ্রন্থের প্রমাণ দিতে পারবেন? যে - গৌমাংস বা মাংসের অর্থ খোয়া আদি হবে? কোনোদিনও দিতে পারবেন না।
১. রাজা সত্যব্রত গৌ মাংস খেয়েছেন আর বিশ্বামিত্রের পত্নী আর তার পুত্রকে খাওয়ান। এখানে গোমাংসের অর্থ আপনি খোয়া করেন নি। "মাম্স রক্তোদ্ভব" -ই মানেন।
২. বিশ্বামিত্রের সাত পুত্র গর্গ ঋষির কপিলা গাভীকে হত্যা করে নিজেদের পিতরের তৃপ্তির জন্য শ্রাদ্ধ করে ব্রাহ্মণদের খাওয়ায় তথা ব্রাহ্মণরা খায়। এখানেও আপনি খোয়া আদি অর্থ করেন নি, রক্তজমাংসই মনে করেন।
৩. চন্দ্রের বংশজ চৈত্র গৌ মাংস ব্রাহ্মণদের খাওয়ায়, সেখানেও আপনি খোয়া অর্থ করেন না।
৪. রুক্মিণীর বিবাহের মধ্যেও আপনি মানেন যে রুক্মিণীর ভাই রুকমীর প্রস্তাব এক লক্ষ গাভীকে মারার ছিল। এই প্রস্তাবের মধ্যেও আপনি খোয়া অর্থ করেন না। গাভীকে মারার প্রস্তাব মানেন। "একটা মাছিও মারা হয়নি" এটা আপনি বিনা প্রমাণেই বলে দিলেন। আপনিই বলেন যে - শতানন্দ পুরোহিতের প্রস্তাব - কৃষ্ণ বর আর ভোজন, মাখন আদির ছিল আর রুকমীর প্রস্তাব - শিশুপাল বর আর ভোজন গোমাংস আদির ছিল। আপনিই বলেছেন যে - বরযাত্রী শিশুপালেরই আসে। রুক্মিণী গুপ্ত পত্র দিয়ে কৃষ্ণজীকে ডাকে। স্পষ্ট হচ্ছে যে - রুকমীর প্রস্তাব পাস হয়, শতানন্দ পুরোহিতের হয়নি, তবুও আপনি বলছেন যে - "একটাও জীব মারা যায়নি, একটা মাছিকেও মারা হয়নি, মারার সুযোগই আসেনি। আপনার কথন কিরকম উপহাস জনক? এটা কার মাথায় আসবে যে -- যেই বরযাত্রীর জন্য এক লক্ষ গোহত্যা করার কথা ছিল আর লক্ষ-লক্ষ পশু কাটার কথা ছিল সেই বরযাত্রীকে নিমন্ত্রণ করে আনা হয় আর নিমন্ত্রণকর্তা তাদের ভোজনের জন্য কোনো প্রবন্ধই করেনি! এটা আপনি ছাড়া আর কারও মাথায় আসবে না। বরযাত্রী সেটাই আসে যেটা রুকমী চেয়েছিল তাহলে ভোজনও নিশ্চয়ই সেটাই বানানো হয়েছে যেটা সে চেয়েছিল। পাঁচ প্রকরণের মধ্যে কেবল একটি প্রকরণের মধ্যে আপনি "গৌমাংসের" অর্থ খোয়া, পনির আদি করেন, অন্য চারটিতে কেন করেন নি? সেখানে গৌয়ের সঙ্গে অন্য হরিণ, খরগোশ, কচ্ছপ আদিরও নাম আছে। এইজন্য সেখানে গৌ মাংসের অর্থ গূদা অর্থাৎ খোয়া নয়, গৌমাংসই হতো। হ্যাঁ! যে খাওয়ায় তাদের আপনি পাপী আর দুরাচারী বলে দিলেন কিন্তু মনুর প্রসঙ্গে অন্য পশুদের নাম নেই সেখানে কেবল, "গৌমাংস" আছে। অতঃ সেখানে ইচ্ছেমতো অর্থ - "গাভীর খোয়া" করে দিলেন। ব্যস হয়ে গেল শাস্ত্রার্থে বিজয়! শ্রীমান জী সেখানে -
"পম্চ লক্ষ গবাম্ মাসৈঃ সুপক্বৈঃ ঘৃত সম্স্কৃতৈঃ।।"
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ২ অধ্যায় ৫৪ শ্লোক ৪৯
(বেঙ্কটেশ্বর বোম্বাই দ্বারা প্রকাশিত) এরকম পাঠ আছে। যার অর্থ হল - ঘী দিয়ে ভেঁজে পাঁচ লক্ষ গাভীর ভালো প্রকারে রন্ধন করা মাংস দিয়ে ব্রাহ্মণদের ভোজন করানো হয়"। পুরাণের মধ্যে গৌবধ আর গৌমাংস ভক্ষণ এতটাই স্পষ্ট আছে যে - তার উপর কোনো প্রকারের লিপাপতি হওয়া সম্ভব না। বেদের মধ্যে যেভাবে যৌগিক শৈলী দ্বারা অর্থ করা হয়, যদি সেইভাবে পুরাণ আর ইতিহাসের মধ্যেও করা হয় তাহলে সমস্ত ইতিহাসই নষ্ট হয়ে যাবে। না রাম থাকবে না দশরথ না যুধিষ্ঠির থাকবে না কৃষ্ণ আদি, "পুরাণ থাকতে গৌবধ আর মাংস ভক্ষণের কলঙ্ক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব না"। "হঠয়োগ প্রদীপিকা"র আপনি প্রমাণ দিলেন। আমাদের জন্য তার কোনো মান্য নেই, আমাদের জন্য যেরকম পুরাণ অপ্রামাণিক ঠিক তেমনই হঠয়োগ প্রদীপিকাও অপ্রামাণিক। কিন্তু আপনারও দোষ এরমধ্যে কোথায়, প্রমাণ এনেছেন কোথা থেকে? এটা আপনি মজার কথা বলেছেন যে - আপনার কথায় ঈশাই-মুসলমান লাভ উঠাবে। বাঃ বাঃ! আমি বলি যে - গৌবধ আর গৌমাংস ভক্ষণ ভারতে মুসলমানদের আগে কখনও হতো না। আমার কথায় কিভাবে লাভ উঠাবে? তারা তো আপনার কথায় লাভ উঠাবে, কারণ আপনিই বলেছেন যে - "গৌবধ আর গৌমাংস ভক্ষণ সর্বদা হতো"। আমি আবারও বলছি যে - মুসলমানদের পূর্বে কখনও গৌবধ হতো না। আপনি যত ইচ্ছে মুসলমানদের উস্কে দিন, আমি এতে ভয় পাই না, তারমধ্যে মুসলমানদের কোনো অপমানই নেই। শ্রীকৃষ্ণজীর ষোলো সহস্র স্ত্রী হল সামবেদের ঋচা, এটা আপনি দারুন বলেছেন! কোনো বেদপাঠীর কাছেই জিজ্ঞেস করে নিতে পারতেন যে - সামবেদের মধ্যে ষোলো ঋচা আদৌ আছে কি না? সামবেদের মধ্যে তো পুরো দুই সহস্র ঋচা পর্যন্ত নেই তাহলে সামবেদের ঋচাগুলো বেশ্যা কিভাবে হয়েগেল? পণ্ডিতজী মহারাজ! নকল কৃষ্ণ কেউ ছিল কি ছিল না এতে আমি কিছুই বলবো না। এরপর শুনুন! স্ত্রীরা সাম্ব (কৃষ্ণজীর পুত্রের) উপরে মোহিত হয়ে যায় আর তারা শাপ বশত বেশ্যা হয়, যার উদ্ধারের উপায় রবিবারের দিন ব্রাহ্মণের সঙ্গে বিনা ফিস সম্ভোগ করার কথা বলা হয়েছে, একথা নকল কৃষ্ণের ঘরের। এটা আপনি তিন কালেও সিদ্ধ করতে পারবেন না, কৃষ্ণজী স্বয়ংই মহারাজা যুধিষ্ঠিরকে নিজের ঘরের অবস্থা শোনাচ্ছেন। সেখানেই তিনি ষোলো সহস্র স্ত্রী বলেছেন তথা সেখানে এরপর তাদের বিষয়ে স্বয়ং বলছেন যে - "তারা সবাই সাম্ব (কৃষ্ণজীর পুত্রের) উপর মোহিত হয়, এতে আমি আর নারদজী তাদের বেশ্যা হাওয়ার অভিশাপ দেই, বেশ্যা হয়ে যায় আর রবিবারের দিন করে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে বিনা ফিস "সনাতন ধর্ম" (ব্যভিচার) করলে তাদের উদ্ধার বলেছি। একথা মোটেও নকল কৃষ্ণের নয়, আমি এটা বলেছি যে - "বিষ্ণু বৃন্দার সঙ্গে ব্যভিচার করে" এর উপর আপনি রেগে ওঠেন আর বলেন যে - এটা কঠোর শব্দ। শুনুন আমার শব্দ কঠোর নাকি বৃন্দা যা বলেছে সেটা কঠোর? বৃন্দা বলেছে - ওহ! মায়াবী তপস্বী! পরস্ত্রীর প্রতি লম্পট, তোমাকে ধিক্কার!
জালন্ধর হল মেঘ আর বৃন্দা হল বিদ্যুৎ আদি আপনার এই বিজ্ঞান পুরাণে চলবে না, সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে যে - বৃন্দা অভিশাপও দেয় আদি। বৃহস্পতি, তারা, চন্দ্র, বুধ এগুলো গ্রহ নক্ষত্র, এরকমটা আপনার বলাও পুরাণের বিরুদ্ধ কারণ দেবী ভাগবতের মধ্যে স্পষ্ট লেখা আছে যে - চন্দ্র মহর্ষি অত্রির পুত্র ছিল। বৃহস্পতি দেবতাদের আর চন্দ্রেরও গুরু ছিল। চন্দ্র গুরুপত্নি হতে যে পুত্র উৎপন্ন করে তার নাম হল বুধ। মনুর পুত্রী ইলার সঙ্গে তার বিবাহ হয় আর তার থেকে চৈত্র নামক পুত্র উৎপন্ন হয়। এই চন্দ্র আকাশের চন্দ্র নয়, ক্ষত্রিয়ের চন্দ্রবংশের আদি পুরুষ অত্রি-পুত্র চন্দ্র ছিল। আপনি পুরাণ কখনও পড়েনই না, এই সমস্যা তো আমাদের গলাতেই আটকে আছে। (শ্রোতাদের মধ্যে হাসি...) আমি নিশ্চয়পূর্বক বলছি যে - যদি আপনি পুরাণগুলোকে পড়েন তাহলে আপনি অবশ্যই আর্য সমাজী হয়ে যাবেন। (হাততালির ধ্বনির সঙ্গে প্রচণ্ড হাসি...) আমি পুরাণের মধ্যে থেকে আরও কথা অবশ্যই শোনাবো, শুনুন আর উত্তর দিন! শিব পুরাণে আছে যে - "এক বার শিবজী বণিকের রূপ নিয়ে মহানন্দ বেশ্যার ঘরে যায়।" তথা তারপর তিনি এক সোনার রত্ন জটিত কংকণ তাকে দেখালেন সে সেটিকে পছন্দ করে তো বণিকরূপী শিব বললেন - "মৌল্যমস্য দদাসি কিম্?" অর্থাৎ তুমি এর মূল্য কত দিবে? বেশ্যা নিজের কাম বলে দেয়। শপথ তুলে ফেলার পশ্চাৎ তিন রাতের জন্য বেশ্যা থেকে বনিকের পত্নী হয়ে যাওয়ার নিশ্চয় (চুক্তি) হয়ে যায়। আর দুইজন মিলে নরম খাটে আর গদিতে শুয়ে পড়ে। বলুন! শিবজী মহারাজের উপর বেশ্যা গমনের কিরকম ঘৃণিত কলঙ্ক লাগানো হয়েছে পুরাণে? দেখুন আর স্থান নোট করুন (শিব পুরাণ শতরুদ্র সংহিতা অধ্যায় ২৬ শ্লোক ১৩ থেকে ৩০ পর্যন্ত পৃষ্ঠা ৮৯৫ - ৮৯৬, -- শ্যাম কাশী প্রেস মথুরা বিক্রম ১৯৯৭), এখানে শিব আর মহানন্দা বেশ্যার সম্পূর্ণ কথা বিদ্যমান আছে।
____________________________________________
© দুধের ছানা
No comments:
Post a Comment
ধন্যবাদ