অথর্ববেদ ৯/৬/৩/৯ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

02 September, 2022

অথর্ববেদ ৯/৬/৩/৯

 

এতদ্বা উ স্বাদীয়ো য়দধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্ বা তদেব নাশ্নীয়াত্ ।।

                                               অথর্ববেদ ৯/৬/৩/৯
এই মন্ত্রে আচার্য সায়ণ ভাষ্য করেনি। পণ্ডিত শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর ভাষ্য -
পদার্থঃ (এতত্ বৈ উ স্বাদীয়ঃ) সে যে স্বাদযুক্ত আছে (য়ত্ অধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্ বা) যে গাভী থেকে প্রাপ্তকারী দুধ অথবা অন্য মাংসাদি পদার্থ আছে (তত্ এব ন আশ্নীয়াত্) তাহার মধ্যে থেকে কোন পদার্থ অতিথির পূর্বেও খাবে না ।।৯।।
এই মন্ত্রের উপর আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর মত -
এর ভাষ্যতে আর্য বিদ্বান প্রো০ বিশ্বনাথ বিদ্যালঙ্কার এখানে "মাম্স" এর অর্থ পনীর করেছে, তবে পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী মননসাধক (বুদ্ধিবর্ধক) পদার্থকে মাংস বলেছে। সকলে এই মন্ত্র তথা সূক্তের অন্য মন্ত্রের বিষয় অতিথি সৎকার বলেছে। এই মন্ত্রের দেবতা পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীর দৃষ্টিতে অতিথি ও অতিথিপতি, অন্যদিকে পণ্ডিত সাতবলেকর অতিথি বিদ্যা মেনেছে। পণ্ডিত সাতবলেকর এটির ঋষি ব্রহ্মা মেনেছে। ছন্দ পিপীলিকা হল মধ্যা গায়ত্রী।
{ব্রহ্মা=মনো বৈ য়জ্ঞস্য ব্রহ্মা (শ০ ১৪|৬|১|৭); প্রজাপতির্বৈ ব্রহ্মা (গো০ উ০ ৫|৮)। অতিথিঃ=য়ো বৈ ভবতি য়ঃ শ্রেষ্ঠতামশ্নুতে স বা অতিথির্ভবতি (ঐ০ আ০ ১|১|১)। অতিথিপতিঃ= অতিথিপতির্বাবাতিথেরীশে (ক০ ৪৬|৪-ব্রা০ উ০ কো০ থেকে উদ্ধৃত)। পিপীলিকা=পিপীলিকা পেলতের্গতিকর্মণঃ (দৈ০ ৩|৯)। স্বাদু=প্রজা স্বাদু (ঐ০আ০ ১|৩|৪); প্রজা বৈ স্বাদুঃ (জৈ০ ব্রা০ ২|১৪৪); মিথুনম্ বৈ স্বাদু (ঐ০ আ০ ১|৩|৪)। ক্ষীরম্=য়দত্যক্ষরত্ তত্ ক্ষীরস্য ক্ষীরত্বম্ (জৈ০ ব্রা০ ২|২২৮)। মাম্সম্=মাম্সম্ বৈ পুরীষম্ (শ০ ৮|৬|২১৪); মাম্সম্ বা মানসম্ বা মনোঽস্মিন্ সীদতীতি বা (নি০ ৪|৩); মাম্সম্ সাদনম্ (শ০৮|১|৪|৫)}।

ए॒तद्वा उ॒ स्वादी॑यो॒ यद॑धिग॒वं क्षी॒रं वा मां॒सं वा तदे॒व नाश्नी॑यात् ॥

पदार्थ -
(एतद् वै) यहाँ (उ) निश्चय करके (स्वादीयः) अधिक स्वादु है, (यत्) कि (तत् एव) उसी ही (अधिगवम्) अधिकृत जल, (वा) और (क्षीरम्) दूध (वा) और (मांसम्) मननसाधक [बुद्धिवर्धक] वस्तु को (न) अब [अतिथि के जीमने पर-म० ८] (अश्नीयात्) वह [गृहस्थ] खावे ॥९॥

भावार्थ - गृहस्थ को यही सुखदायी है कि अतिथि को अच्छे-अच्छे रोचक बुद्धिवर्धक पदार्थ फल, बादाम, अक्षोट आदि जिमाकर आप जीमे, जिस से वह सत्कृत विद्वान् यथावत् उपदेश करे ॥९॥

অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিদৈবিক ভাষ্য -

পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) যে অতিথি অর্থাৎ সতত গমনশীলা প্রাণ, ব্যান রশ্মির এবং অতিথিপতি অর্থাৎ প্রাণাপান রশ্মির নিয়ন্ত্রক সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির স্বাদুযুক্ত হয়ে অর্থাৎ বিভিন্ন ছন্দাদি রশ্মিকে মিথুন বানিয়ে নানা পদার্থের উৎপন্ন করাতে সহায়ক হয়। (য়ত্) যে প্রাণব্যান ও সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির (অধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্ বা) গো অর্থাৎ ‘ওম্’ ছন্দ রশ্মি রূপী সূক্ষ্মতম বাক্ তত্বে আশ্রিত হয়, সাথেই নিজের পুরীষ=পূর্ণ সংযোজন বল {পুরীষম্=পূর্ণম্ বলম্ (ম০ দ০ য়০ ভা০ ১২|৪৬); ঐন্দ্রম্ হি পুরীষম্ (শ০ ৮|৭|৩|৭); অন্নম্ পুরীষম্ (শ০ ৮|১|৪|৫)} এর সাথে নিরন্তর নানা রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের উপর ঝড়তে থাকে। এই ‘ওম্’ রশ্মির ঝড়নাই ক্ষীরত্ব তথা পূর্ণ সংযোতাকেই মাম্সত্ব বলা হয়। এখানে ‘মাম্স’ শব্দ এই সংকেত দেয়, যে এই ‘ওম্’ রশ্মির মনস্তত্ব হতে সর্বাধিক রূপ হতে নিকটতা হতে সম্বন্ধ হয়ে থাকে কিংবা মনস্তত্ব এরমধ্যে সর্বাধিক মাত্রাতে বসে থাকে। এই ‘ওম্’ রশ্মির প্রাণব্যান এবং সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির উপর ঝড়ে অন্য স্থুল পদার্থের উপর পড়তে থাকে। (তত্ এব ন অশ্নুয়াত্) এই কারণে বিভিন্ন রশ্মি বা পরমাণু আদি পদার্থের মিথুন তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয় না। এই প্রক্রিয়া অতিথিরূপ প্রাণব্যানকে মিথুন বানানো কিংবা এর দ্বারা বিভিন্ন মরুদাদি রশ্মিদের আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়া শান্ত হওয়ার পূর্বে নষ্ট হয় না, বরং তার পশ্চাৎ অর্থাৎ দুই কণের সংযুক্ত হওয়ার পশ্চাৎ আর মিথুন তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট বা বন্ধ হয়ে যায়, এটা জানা উচিত ||৯||
এই ঋচার সৃষ্টির উপর প্রভাব -
আর্ষ ও দৈবত প্রভাব- এটির ঋষি ব্রহ্মা হওয়াতে সংকেত পাওয়া যায় যে এটির উৎপত্তি মন এবং ‘ওম্’ রশ্মির মিথুন দ্বারাই হয়ে থাকে। এই মিথুন এই ছন্দ রশ্মিকে নিরন্তর ও নিকটতা থেকে প্রেরিত করতে থাকে। এর দৈবত প্রভাব দ্বারা প্রাণ, ব্যান তথা সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মিগুলো বিশেষ সক্রিয় হয়ে নানা সংযোগ কর্মের সমৃদ্ধ করে।
• ছান্দস প্রভাব - এটির ছন্দ পিপীলিকা মধ্যা গায়ত্রী হওয়ায় এই ছন্দ রশ্মি বিভিন্ন পদার্থের সংযোগের সময় তাদের মধ্যে তীব্র তেজ ও বলের সাথে সতত সঞ্চারিত হয়। এটির থেকে ঐ পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ তেজ এবং বলের প্রাপ্ত হতে থাকে।
• ঋচার প্রভাব - যখন দুই কণার সংযোগ হয়, তখন তারমধ্যে প্রাণ, ব্যান ও সূত্রাত্মা বায়ু রশ্মির বিশেষ যোগদান হতে থাকে। এই রশ্মির বিভিন্ন মরুদ্ রশ্মির দ্বারা আকুঞ্চিত আকাশ তত্বকে ব্যাপ্ত করে নেয়। এই সময় এই রশ্মির উপর সূক্ষ্ম ‘ওম্’ রশ্মিগুলো নিজের সেচন করে এতে অধিক বল দ্বারা যুক্ত করে। এর ফলে উভয় কণার মধ্যে ফীল্ড নিরন্তর প্রভাবী হয়ে ঐ দুই কণাকে পরস্পর সংযুক্ত করে দেয়।

আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিক জীর আধিভৌতিক ভাষ্য -


পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) এই যে স্বাদিষ্ট ভোজ্য পদার্থ আছে। (য়দধিগবম্ ক্ষীরম্ বা) যা গাভী হতে প্রাপ্তকারী দুধ, ঘৃত, মাখন, দই আদি পদার্থ আছে অথবা (মাম্সম্ বা) মনন, চিন্তন আদি কার্যে উপযোগী ফল, বাদাম আদি পদার্থ। *(তদেব ন অশ্নীয়াত্) সেই পদার্থকে অতিথিকে খাওয়ানোর পূর্বে খাবে না অর্থাৎ অতিথিকে খাওয়ানোর পশ্চাৎই খাওয়া উচিত। এখানে অতিথি থেকে পূর্বে না খাওয়ার প্রসঙ্গ এটির পূর্ব মন্ত্র থেকে সিদ্ধ হচ্ছে, যেখানে লেখা আছে - “অশিতাবত্যতিথাবশ্নীয়াত্”= অশিতাবতি অতিথৌ অশ্নীয়াত্। এই প্রকরণকে পূর্ব আধিদৈবিক ভাষ্যেতেও বুঝে নেবেন।
* ‘মাম্সম্’ পদের বিবেচনাঃ- এই বিষয়ে সর্বপ্রথম আর্য বিদ্বান পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা কৃত “বৈদিক সম্পত্তি” নামক গ্রন্থতে আয়ুর্বেদের কিছু গ্রন্থকে উদ্ধৃত করে বলেন -
''সুশ্রুতে'' আমের ফলের বর্ণন করে লিখেছেন -
অপক্বে চূতফলে স্নায়্বস্থিমজ্জানঃ সূক্ষ্মত্বান্নোপলভ্যন্তে
পক্বে ত্বাঽবির্ভূতা উপলভ্যন্তে।
অর্থাৎ - আমের কাচা ফলের স্নায়ু, হাড্ডি আর মজ্জা আদি প্রতীত হয় না, কিন্তু পাকার পরে সব আবির্ভূত হয়ে যায়।
এখানে আটির তন্তুকে কেশ, আটিকে হাড্ডি, আশকে স্নায়ু আর কোমল ভাগকে মজ্জা বলা হয়েছে। এই প্রকারে বর্ণন ভাবপ্রকাশেও এসেছে। সেখানে লেখা আছে যে -
আম্রাস্যানুফলে ভবন্তি য়ুগপন্মাম্সাস্থিমজ্জাদয়ো
লক্ষ্যন্তে ন পৃথক্ পৃথক্ তনুতয়া পুষ্টাস্ত এব স্ফুটাঃ।
এবম্ গর্ভসমুদ্ভবে ত্ববয়বাঃ সর্বে ভবন্ত্যেকদা লক্ষ্যাঃ
সূক্ষ্মতয়া ন তে প্রকটতামায়ান্তি বৃদ্ধিঙ্গতাঃ।
অর্থাৎ - যে প্রকার কাঁচা আমের ফলে মাংস, অস্থি আর মজ্জাদি পৃথক-পৃথক দেখা যায় না, কিন্তু পাকার পরেই জ্ঞাত হয় সেই প্রকার গর্ভের আরম্ভে মনুষ্যের অঙ্গও জ্ঞাত হয় না, কিন্তু যখন তার বৃদ্ধি হয়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই দুই প্রমাণের দ্বারা প্রকট হচ্ছে যে ফলের মধ্যেও মাংস, অস্থি, নাড়ী আর মজ্জা আদি সেই প্রকার বলা হয়েছে, যে প্রকার প্রাণীদের শরীরে বলা হয়।
বৈদ্যকের এক গ্রন্থে লেখা আছে যে -
প্রস্থম্ কুমারিকামাম্সম্।
অর্থাৎ- এক কিলো কুমারিকার মাংস। এখানে ঘীকুমারকে কুমারিকা আর তার গুদেকে মাংস বলা হয়েছে।
বলার তাৎপর্য এই যে, যেভাবে ঔষধির আর পশুদের নাম একই শব্দে রাখা হয়েছে সেইভাবে ঔষধির আর পশুদের শরীরাবয়বও একই শব্দে বলা হয়েছে। এই প্রকারের বর্ণনা আয়ুর্বেদের গ্রন্থে ভরে পরে রয়েছে। শ্রীবেঙ্কটেশ্বর প্রেস, মুম্বাইতে ছাপানো ‘ঔষধিকোষ’ এ নীচে লেখা সমস্ত পশুসংজ্ঞক নাম আর অবয়ব বনস্পতিগুলো জন্যও এসেছে দেখে নিন। আমি উদাহরণের জন্য কিছু শব্দ উদ্ধৃত করেছি -
বৃষভ - ঋষভকন্দ
সিংহী - কটেলী, বাসা
হস্তি - হস্তিকন্দ
শ্বান - কুত্তাঘাস, গ্রন্থিপর্ণ
খর - খরপর্ণিনী
বপা - ঝিল্লী=বক্কলের ভিতরের জালা
মার্জার - বল্লীঘাস, চিত্তা
কাক - কাকমাচী
অস্থি - গুঠলী
ময়ুর - ময়ুরশিখা
বারাহ - বারাহীকন্দ
মাংস - গূদা, জটান্মাসী
বীছূ - বীছূবূটী
মহিষ - মহিষাক্ষ, গুগ্গুল
চর্ম - বক্কল
সর্প - মর্পিণীবূটী
শ্যেন - শ্যেনঘন্টী (দন্তী)
স্নায়ু - রেশা
অশ্ব - অশ্বগন্ধা, অজমোদা
মেষ - জীবশাক
নখ - নখবূটী
নকুল - নাকুলীবূটী
কুক্কুট (টী) - শাল্মলীবৃক্ষ
মেদ - মেদা
হংস - হংসপদী
নর - সৌগন্ধিক তৃণ
লোম (শা) - জটামাসী
মৎস্য - মত্স্যাক্ষী
হৃদ - দারচীনী
মূষক - মূষাকর্ণী
মৃগ - সহদেবী, ইন্দ্রায়ণ, জটামসী, কপুর
পেশী - জটামসী
গো - গৌলোমী
পশু - অম্বাড়া, মোথা
রুধির - কেসর
মহাজ - বড়ী অজবায়ন
কুমারী - ঘীকুমার
আলম্ভন - স্পর্শ

অথর্ববেদ ৯/৬/৩/৯

এই সূচীতে সমস্ত পশু পক্ষীর আর তাদের অঙ্গের নাম তথা সমস্ত বনস্পতির আর তাদের অঙ্গের নাম একই শব্দ দ্বারা সূচিত করা হয়েছে। এরূপ অবস্থায় কিছু শব্দ দ্বারা পশু আর তারই অঙ্গকে গ্রহণ করা উচিত নয়।
বিজ্ঞ পাঠক এখানে বিচার করুন ঐরূপ স্থিতিতে যেখানে ‘মাম্সম্’ পদ হতে গৌ আদি পশুর বা পক্ষীর মাংস গ্রহণ করা কি মুর্খতা নয়? এখানে কোনো পাশ্চাত্য শিক্ষা দ্বারা অভিভূত তথা বৈদিক বা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপহাসকর্তা কথিত প্রবুদ্ধ কিংবা মাংসাহারের পোষক সংস্কৃত ভাষার এইরূপ নামের উপর ব্যঙ্গ্য যেন না করে, এই কারণে আমি তাদের ইংরেজি ভাষারও কিছু উদাহরণ দিচ্ছি -
১. Lady Finger ভেণ্ডীকে বলা হয়। যদি ভোজন বিষয়ে কেউ এর অর্থ কোনো মহিলার আঙ্গুল করে, তখন কি তার অপরাধ হবে না?
২. Vegetable কোনো শাক বা বনস্পতিকে বলা হয়। অন্যদিকে Chamber dictionary তে এর অর্থ Dull understanding person -ও দেওয়া রয়েছে। যদি Vegetable খেতে বসা কোনো ব্যক্তিকে দেখে কেউ তাকে মন্দবুদ্ধি মানুষের খাদ্য পদার্থ বলে, তখন কি এটা মূর্খতা হবে না?
৩. আয়ুর্বেদে একটি চারাগাছ আছে - গোবিষ, যাকে হিন্দীতে কাকমারী তথা ইংরেজিতে Fish Berry বলা হয়। যদি কেউ এর অর্থ মাছের রস লাগায়, তখন তাকে কি বলবেন?
৪. Potato আলুকে বলা হয়, অন্যদিকে এর অর্থ A mentally handicapped person -ও হয়, তখন কি আলু খাওয়া ব্যক্তিকে মানসিক রোগী মনুষ্য ভক্ষণকারী মানা হবে?
৫. Hag এটা এক প্রকারের ফল, অন্যদিকে An ugly old woman -কেও hag বলা হয়, তখন কি এখানেও কেউ hag ফলের অর্থ উল্টোই লাগানোর চেষ্টা করবে?
এখন আমরা এর উপর বিচার করি যে ফলের গূদাকে মাংস কেন বলে? যেমনটা আপনি আধিদৈবিক ভাষ্যে জেনেছেন যে, পূর্ণবলযুক্ত বা পূর্ণবলপ্রদ পদার্থকে মাংস বলা হয়। বিশ্বে সকল মনুষ্য ফলের গূদারই প্রয়োগ করে থাকে, অন্য ভাগকে নয়, কেননা ফলের সার ভাগ হল সেটাই। সেই ভাগ হল বল-বীর্যের ভাণ্ডার অর্থাৎ তার ভক্ষণ দ্বারা বল-বীর্য-বুদ্ধি আদির বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করতে পারে যে, প্রাণিদের শরীরের মাংসকে মাংস কেন বলা হয়েছে? এর উত্তর হল এই যে, যেকোনো প্রাণীরই শরীরের বল তার মাংসপেশীর অন্তর্গতই নিহিত থাকে, এই কারণে একেও মাংস বলা হয়। যেরূপ শাকাহারী প্রাণী ফলের গূদাকেই বিশেষ ভক্ষণ করে, সেইরকম সিংহাদি মাংসাহারী প্রাণী, প্রাণীর মাংস ভাগকেই বিশেষ রূপে খেয়ে থাকে। এই উভয়ের মধ্যে সমানতা রয়েছে। যে স্থানটি ফলের মধ্যে গূদার হবে, সেই স্থানটি প্রাণীর শরীরের মধ্যে মাংস হবে। মনুষ্য হল প্রাকৃতিক রূপে কেবল শাকাহারী ও দুগ্ধাহারী প্রাণী, এই কারণে বেদাদি শাস্ত্রে প্রাণীর মাংস খাওয়ার চর্চা হল বেদাদি শাস্ত্রের ঐতিহ্য হতে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার লক্ষণ। এরূপ চর্চাকারী কথিত বেদজ্ঞ, তা সে বিদেশী হোক বা স্বদেশী, আমাদের দৃষ্টিতে তারা বেদাদি শাস্ত্রের বর্ণমালাও জানে না, যদিও বা তিনি ব্যাকারণাদি শাস্ত্রের যত বড়ই অধ্যেতা- অধ্যাপক হোন না কেন। মাংসাহারের বিষয়ে আমরা অন্য কোনো এক সময় একটি পৃথক গ্রন্থ লেখার বিবেচনা করব, যার মধ্যে সারা বিশ্বের মাংসাহার ভোগীদের সমস্ত সংশয় দূর হবে।

ত্রিষ্টুপ মাংসম্ প্রাণস্য (ঐ০ আ০ ২/১/৬) ত্রিষ্টুপ ছন্দ রশ্মিই মাংস।

সাধারন বাংলায় পশু Animal বোঝালেও বৈদিক সংস্কৃততে তা অন্যকিছুও বোঝায়। নিরুক্ত তে পাওয়া যায় পশু অর্থ কণাজাতীয় জিনিস। এটা ' পশ্ ' মুল থেকে এসেছে যার অর্থ হল যা দেখা সম্ভব । পশু শব্দের ধাতু হলো √পশ্ আর এই ধাতুগত অর্থ অনুসারে যাকে পশ্য অর্থাৎ দেখা হয় তাই পশু ।
প্রশ্ন - বেদে ‘মাম্সম্’ পদের অর্থ প্রাণীদের মাংস কখনও হয় না, এটা আপনার পূর্বাগ্রহও তো ধরে নেওয়া যেতে পারে, যা শুধুমাত্র শাকাহারের আগ্রহবশেই করা হয়েছে?
উত্তর - যে সংস্কারে সামান্য য়োগসাধকের জন্য অহিংসাকে প্রথম সোপান বলা হয়েছে, যেখানে মন, বচন, কর্ম দ্বারা কোথাও এবং কখনও কোনো প্রাণীর প্রতি ঘৃণা ত্যাগ অর্থাৎ প্রীতির সন্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে সিদ্ধ পুরুষ য়োগীদের এবং সেই ক্রমে নিজের য়োগসাধনা দ্বারা ঈশ্বর ও মন্ত্রের সাক্ষাৎকৃতধর্মা মহর্ষির, তাদের গ্রন্থের এবং বেদরূপ ঈশ্বরীয় গ্রন্থের দ্বারা হিংসার সন্দেশ দেওয়া মূর্খতা ও দুষ্টতা নয়, তো কি? যে বিদ্বান বৈদিক অহিংসার স্বরূপ দেখতে চান, তিনি পতঞ্জল য়োগদর্শন ব্যাসভাষ্য স্বয়ং পড়ে দেখুক। এই ঐতরেয় ব্রাহ্মণে যেখানে প্রায়ঃ সকল ভাষ্যকারই পশুর নৃশংস বধ এবং তার অঙ্গকে ভক্ষণের বিধান করেছে, সেখানে আমি তার কেমন গূঢ় বিজ্ঞান প্রকাশিত করেছি, তা পাঠক এই বেদ-বিজ্ঞান আলোক গ্রন্থের সম্পূর্ণ অধ্যয়ন দ্বারা জেনে যাবে। পাঠকদের জানার জন্য আমি বেদের কিছু প্রমাণ দিচ্ছি -

য়দি নো গাম্ হম্সি য়দ্যশ্চম্ য়দি পূরুষম।

তম্ ত্বা সীসেন বিধ্যামঃ।।-(অথর্ব০ ১|১৬|৪)

অর্থাৎ - তুমি যদি আমাদের গাভী, ঘোড়া ও মনুষ্যকে হত্যা করো, তবে আমি তোমাকে সীসা দিয়ে ছেদ করে দেবো।
মা নো হিম্সিষ্ট দ্বিপদো মা চতুষ্পদঃ।।
(অথর্বঃ ১১|২|১)
অর্থাৎ - আমাদের মনুষ্য আর পশুদের নষ্ট করো না।
অন্যত্র বেদে দেখুন -
ইমম্ মা হিম্সীদ্রবিপাদ পশুম্।
(যজুঃ ১৩|৪৭)
অর্থাৎ - এই দুই খুরবান পশুকে হিংসা করো না।

ইমম্ মা হিম্সীরেকশফম্ পশুম্।-(যজুঃ ১৩|৪৮)

অর্থাৎ - এই এক খুর ওয়ালা পশুদের হিংসা করো না।

য়জমানস্য পশুন্ পাহি। -(যজুঃ ১|১)

অর্থাৎ - যজমানের পশুদের রক্ষা করো।
এখন আপনি বলতে পারেন যে, এই কথা যজমান বা কোনো মনুষ্য বিশেষের পালিত পশুর কথাই বলেছে নাকি সমস্ত প্রাণিদের? এই ভ্রমের নিবারণার্থ অন্য প্রমাণ -

মিত্রস্যাহম্ চক্ষুসা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।__(যজুঃ ৩৬|১৮) 

অর্থাৎ - আমি সকল প্রাণীদের মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি।

মা হিম্সীস্তন্বা প্রজাঃ।-(যজুঃ ১২|৩২) 

অর্থাৎ - এই শরীর দ্বারা প্রাণীদের মেরো না।
মা স্রেধত।
(ঋ০ ৭|৩২|৯)
অর্থাৎ - হিংসা করো না।
মহর্ষি জৈমিনীর পশ্চাৎ সবথেকে মহান বেদবেত্তা মহর্ষি দয়ানন্দ জীর মাংসাহারের বিষয়ে বিচারও পাঠক পড়ুন-
“মদ্যমাংসাহারী অনার্য জাতির যাহার শরীর মদ্যমাংসে পরমাণুর দ্বারাই পরিপূর্ণ আছে, তাহার হাতে খাবে না।”
“এই পশুদের হত্যাকারীরা সব মনুষ্যের হত্যাকারী জানবে।”
“যখন থেকে বিদেশী মাংসাহারী এই দেশে এসে গাভী আদি পশুদের হত্যাকারী মদ্যপায়ী রাজ্যাধিকারী হয়, তখন থেকে ক্রমশঃ আর্যের দুঃখের সীমা বাড়তে থাকে।”
- সত্যার্থ প্রকাশ; দশম সমুল্লাস
দেখুন দয়ার সাগর ঋষি দয়ানন্দজী কি বলছেন -
“যাহারা পশুর গলা কেটে নিজেদের পেট ভরে তাহারা সারা পৃথিবীর ক্ষতি করে। সংসারে তাহাদের থেকেও অধিক কোন বিশ্বাসঘাতক, অনুপকারী, দুঃখ দানকারী পাপীজন আর আছে কি?"
“হে মাংসহারীরা! যখন তোমরা কিছু সময় পর পশু পাবে না তখন মনুষ্যের মাংসকেও ছাড়বে কি?”
“হে ধার্মিক লোকেরা! আপনারা এই পশুদের রক্ষা তন, মন আর ধন দ্বারা কেন করেন না?” (গোকরুণানিধি)
আশা করি বুদ্ধিমান এবং নিষ্পক্ষ পাঠকদের মাংসাহারের ভ্রান্তি নির্মুল হয়ে গিয়েছে।
________________________________________________________________________________________

আচার্য অগ্নিব্রত ন্যাষ্টিকজীর আধ্যাত্মিক ভাষ্য -

{মাম্সম্= মন্যতে জ্ঞায়তেঽনেন তত্ মাম্সম্ (উ০ কো০ ৩|৬৪), মাম্সম্ পুরীষম্ (শ০ ৮|৭|৪|১৯), পুরীষম্= পুরীষম্ পৃণাতেঃ পূরয়তের্বা - নি০ ২|২২; সর্বত্রাঽভিব্যাপ্তম্ - ম০দ০য়০ভা০ ৩৮|২১; য়ত্ পুরীষম্ স ইন্দ্রঃ - শ০ ১০|৪|১|৭; স এষ প্রাণ এব য়ত্ পুরীষম্ - শ০ ৮|৭|৩|৬)}
পদার্থঃ (এতত্ বা স্বাদীয়ঃ) য়োগী পুরুষের নিকট পরমাত্মার আস্বাদনকারক এই পদার্থ বিদ্যমান থাকে, যারজন্য জীব পরমাত্মার সঙ্গে সায়ুজ্য থাকে, (য়দধিগবম্ ক্ষীরম্ বা মাম্সম্ বা) সে পদার্থটি য়োগীর মন আদি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে পদার্থটি কি, এর উত্তর হয় এই যে, সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্য় সম্পন্ন ইন্দ্ররূপে পরমাত্মা হতে ঝরতে থাকা "ওম্" বা গায়ত্রী আদি বেদের ঋচাগুলোই হল সেই পদার্থ, যা য়োগীর ইন্দ্রিয় ও অন্তঃকরণে নিরন্তর স্রবিত হতে থাকে। য়োগী সেই আনন্দময়ী ঋচাগুলোর রসাস্বাদন করতে থাকে, তখন সে পরমানন্দের অনুভব করতে থাকে। (তদেব ন অশ্নীয়াত্) য়োগী সেই ঋচার আনন্দকে ততক্ষন পর্যন্ত অনুভব করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত অতিথিরূপ প্রাণ তত্ব, যা য়োগীর মস্তিষ্ক ও শরীরে সতত সঞ্চারিত হয়, সেই ঋচার সঙ্গে সঙ্গত না হয়। এখানে অতিথি হতে পূর্বের প্রকরণ পূর্ববত্ বুঝে নিবেন।
ভাবার্থ - যখন কোনো য়োগী য়োগসাধনা করে আর এতদর্থ প্রণব বা গায়ত্রী আদির নিরন্তর জপ করে, তখন সর্বত্র অভিব্যাপ্ত পরমৈশ্বর্য়বান্ ইন্দ্ররূপ ঈশ্বর হতে নিরন্তর প্রবাহিত "ওম্" রশ্মির সেই য়োগীর অন্তঃকরণ তথা প্রাণের ভিতর স্রবিত হতে থাকে। এরফলে সেই য়োগী ঐ রশ্মির রসস্বাদন করার সঙ্গে আনন্দে নিমগ্ন হয়ে যায়।
(বেদবিজ্ঞান-আলোকঃ পূর্ব পীঠিকা হতে উদ্ধৃত
পূর্বপীঠিকা-বেদের যথার্থ স্বরূপ, নবমোধ্যায়)
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬।৪।১৮ কন্ডিকা নিয়ে একটা শঙ্কা আমাদের সামনে প্রায়শই উঠে। শঙ্কটা এরূপ যে, বিদ্বান পূত্র লাভের জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়ে বৃষের মাংস দ্বারা পাককৃত অন্ন আহার করবে । প্রায় সব অনুবাদক এমনটাই অনুবাদ করেছে। অর্থাৎ ইহা দ্বারা সনাতন ধর্মে গোমাংস খাওয়ার বিধান সিদ্ধ এমনটা দাবী করে অপপ্রচারকারীরা। মূলত আমাদের ধর্মের মূল স্রোত হলো বেদ।
বেদের জ্ঞান দ্বারাই পরবর্তিতে অনেক শাস্ত্র রচিত হয়েছে । সেই বেদে আমরা গোহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাই ।
গোহত্যা সমন্ধ্যে বেদ বলছে যে -

"মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট"

(ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)

অর্থাৎ নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না ।
শুধু তাই নয় গোহত্যাকারীকে দন্ডের বিধান দিয়ে বেদ বলছে যে -
যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব । (অথর্ববেদ ১।১৬।৪)
উপনিষদ বেদেরই ব্যাখ্যা হওয়ার হেতু উপনিষদে গোমাংস আহারের নির্দেশ কদাপি থাকতে পারে না । আমাদের স্থুল বিচার বিবেচনার জন্যই মূলত এরূপ শঙ্কার উদ্ভব হয়েছে । আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত বিশ্লেষন করা যাক -

অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিজিগীতঃ সমিতিঙ্গমঃ শুশ্রুষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বাণ বেদাননুব্রুবিত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাষৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বাSSর্ষভেণ বা ।। (বৃহঃ উপঃ ৬।৪।১৮) 

শব্দার্থঃ (অথ যঃ ইচ্ছেত্ পুত্রঃ মে) এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র (পন্ডিতঃ) বিদ্বান (বিজিগীথঃ) প্রসিদ্ধ (সমিতিয় গমঃ) সভায় গমন যোগ্য (শুশ্রুষিতাম বাচম্ ভাষিতা) আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী (জায়েত) হবে (সর্বাণ বেদাননুববীত সর্বম্ আয়ু ইয়াত্ ইতি) সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো (মাষৌদনম্) [পাঠভেদ - মাংসৌদম্] মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল (পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তম্ অশ্নীয়াতাম্ ইশ্বরী জনয়িতবৈঃ) পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো (অপেক্ষেত পুত্র) পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে (ঔক্ষেণ বা আর্ষভেণ) ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা ।

সরলার্থঃ এবং যে এই ইচ্ছা করে যে আমার পুত্র বিদ্বান প্রসিদ্ধ সভায় গমন যোগ্য আদরের সহিত শ্রবণ যোগ্য ভাষনকারী হবে, সমস্ত বেদের জ্ঞাতা পূর্নায়ুর উপভোক্তা হবে তো মাষের [কলাই বিশেষ] সাথে চাউল পাক করে ঘৃতের সাথে উভয়ে [স্বামী স্ত্রী] আহার করে তো পুত্র উৎপন্ন করতে সমর্থ হবে ঔক্ষ [বিধি] দ্বারা অথবা ঋষভ [বিধি] দ্বারা ।

তাৎপর্যঃ এই কন্ডিকার মধ্যে বর্ণিত পুত্র প্রাপ্তির জন্য বলা হয়েছে যে, মাষের সাথে পাককৃত চাউল বিধির সাথে আহার করা উচিৎ । এই পুত্র এবং পুত্রি উৎপন্ন করার জন্য অপেক্ষিত সাধনের কাজে নেবার শিক্ষাকে সমাপ্ত করে ইহা বলা হয়েছে যে, সব প্রকারে পুত্র কে উৎপন্ন করা আদির কৃত্য ঔক্ষ এবং আর্ষভ বিধি দ্বারা করা উচিৎ ।

ঔক্ষ বিধি - ঔক্ষ শব্দ উক্ষ (সেচনে) ধাতু হতে এসেছে । উক্ষ দ্বারা উক্ষণ এবং উক্ষণের বিশেষন ঔক্ষ। ঔক্ষ বিধি বর্ণনাকারী শাস্ত্রকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলে । কোন মিশ্রিত ঔষধি পাক আদি তৈরীতে কোন কোন ঔষধি কি কি মাত্রায় পড়া উচিৎ তাহা বর্ণনাকারী শাস্ত্রের নাম ঔক্ষ শাস্ত্র। অভিপ্রায় এই যে, উপরিউক্ত মাষের অথবা তিলৌদন আদির প্রস্তুতে এই (ঔক্ষ শাস্ত্র) র মর্যাদা কে লক্ষ্য রেখে কাজ করা উচিৎ ।

আর্ষভ বিধি - আর্ষভ - ঋষভ শব্দের বিশেষন। ঋষভ এবং ঋষি শব্দ পর্যায়বাচক। আর্ষভের অর্থ ঋষিকৃত অথবা ঋষিদের বানানো কিছু । ঔক্ষ শাস্ত্রের সাথে এই আর্ষভ শব্দের ভাব এই যে, ঋষিদের বানানো বিধি (পদ্ধতি) র নামই ঔক্ষ শাস্ত্র । অর্থাৎ কোন অনভিজ্ঞর বানানো বিধিকে ঔক্ষ শাস্ত্র বলা হয় না । ঋষিকৃত পদ্ধতিই ঔক্ষ শাস্ত্র ।

মাষৌদন - নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থে মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মনকে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)। বলা হয়েছিল যে মাষৌদনের পাঠভেদ অনেক গ্রন্থে মাংসৌদন আছে। কেবল এই অর্থে যদি ধরে নেওয়া হয় (মনঃ সীদত্যাস্মিন্ স মাংস:) যাহাতে মন প্রসন্ন থাকে তাহাই মাংস এবং এই দৃষ্টি দ্বারা মাষৌদন কে মাংসৌদন বলা যায় । এই জন্য কোন প্রকরণে গো মাংস অর্থে মাংসের প্রয়োগ যা এই প্রকরনে নেই। এইজন্য যে দশ ঔষধিকে দ্বারা মাষ এবং ঔদন বর্ননার বিধান রয়েছে তাহার নাম স্বয়ং উপনিষদই উল্লেখ করেছে-
(১)ধান্য (২)যব (৩)তিল (৪)মাষ (৫)বাজরা (৬)প্রিয়জু (৭)গোধূম (৮)মসুর (৯)খল্ব (১০) থলকুল ।
(বৃহঃ উপঃ ৬।৩।১৩)
এখানে একটা বিষয়ে গভীর ভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ যে, এই ঔষধির গণনা করে দেখা যাচ্ছে তিলের পরেই মাষের উল্লেখ রয়েছে । এইজন্য সতেরো কন্ডিকায় তিলৌদন এবং তাহার পরে আঠারো কন্ডিকায় মাষৌদনের উল্লেখ রয়েছে । অন্যথা মাংসের তো এখানে যেমন বলা হলো তার কোন প্রকরনই নেই ।

"য আমং মাংস মদন্তি পৌরুষেয়ং চ যে করিঃ ।

গর্ভান্ খাদন্তি কেশবাস্তানিতো নাশয়ামসি।" - অথর্ববেদে (৪।৬।২৩)

যে কাঁচা বা রন্ধন করা মাংস খায়, যে গর্ভনাশ করে, এখানে আমি তাদের বিনাশ করি ।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশে বলেছেন যে, মাংসাহার করলে মানুষের স্বভাব হিংস্র হয়ে যায় ।। যারা মাংসাহার করে বা মদ্য পান করে, তাদের শরীর ও বীর্য দূষিত হয় ।।
সহৃদয়ং সাংসন স্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ অন্যে অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা ।। - অথর্ববেদ ৩/৩০/১ মন্ত্র
ভাবার্থ : (হে মনুষ্যগন) আমি তোমাদের সম মনষ্ক ও অবিদ্বিষ্ট করছি । যেমন - অবধ্য গাভী (অঘ্ন্যা) তার জাত বৎসকে নিজের অভিমুখে কামনা করে,তেমনি তোমরা পরস্পরকে কামনা কর।

যঃ পৌরুষেয়েন ক্রবিষা সং মংক্তে যো অশ্ব্যেন পশুনা যাতুধানঃ যো অঘ্ন্যায়া ভরতি ক্ষীরমগ্নে তেষাং শীর্ষানি হরসাপি বৃশ্চ ।। - ঋগ্বেদ ১০/৮৭/১৬ মন্ত্র 


ভাবার্থ : যে রাক্ষস নরমাংস সংগ্রহ করে অথবা অশ্ব প্রভৃতি পশুদিগের মাংস সংগ্রহ করে, যে হত্যা করিবার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরন করে, হে অগ্নি ! নিজ বলে তাহাদিকের মস্তক ছেদন করিয়া দাও ।
অথর্ববেদ ১৯/১/২৯ মন্ত্রে বলা হয়েছে -

অনা গোহত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং পুরুষং বধীঃ।

যত্র যত্রাসি নিহিতা ততসত্বোতথাপ যামসি পর্ণাল্লঘীযসী ভব।।


ভাবার্থ : নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ । কখনো মানুষ, গো, অশ্বাদিদের হত্যা করো না ।

রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্তদধ্বরঃ। 

অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ ।। (অথর্ববেদ ১১।৭।৭)

রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ । যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা । এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন । যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ । তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই।
।।ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি।।

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ