রামায়ণে অকাল বোধন - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

13 September, 2022

রামায়ণে অকাল বোধন

 শরৎকালে পুরুষোত্তম রাম চন্দ্র জী যখন যুদ্ধযাত্রাই করেননি, তখন শরৎকালে, অকালবোধন হল কিভাবে ?

বাল্মীকি রামায়ণম্ কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড ষড়্ বিংশঃ সর্গঃ শ্লোক ১৪-১৭ দেখুন..আশ্বিন মাসে,রাম জী রাবণের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ যাত্রাই করেননি। রাম চন্দ্র জী যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন, কার্তিক মাসে।
বাল্মীকি মুনি রচিত মূল রামায়ণ রামায়ণম্ কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড ষড়্ বিংশঃ সর্গঃ শ্লোক ১৪-১৭
পূর্বোহয়ং বার্ষিকো মাসঃ শ্রাবণঃ সলিলাগমঃ।
প্রবৃত্তাঃ সৌম্য চত্বারো,মাসা বার্ষিকসংজ্ঞিতাঃ।১৪
নায়মুদযোগসময়ঃ,প্রবিশ ত্বং পুরীং শুভাম্।।
অস্মিন্ বৎস্যাম্যহং সৌম্য পর্বতে সহলক্ষ্মণঃ।।১৫
ইয়ং গিরিগুহা রম্যা বিশালা যুক্তমারুতা।
প্রভূতসলিলা সৌম্য প্রভূতকমলোৎপলা।।১৬
কার্তিকে সমনুপ্রাপ্তে ত্বং রাবণবধে যতঃ
এষ ন সময়ঃ সৌম্য!প্রবিশ ত্বং স্বমালয়ম্।
অভিষিচ্যস্ব রাজ্যে চ সুহৃদঃ সম্প্রহর্ষয়।।১৭
সত্যি কি অকাল বোধন হয়েছিলো ?

রামজী কর্তৃক দুর্গাপূজার কুসুমিত পল্লবিত অলীক কাহিনীটি কবি কৃত্তিবাস জীর সৃষ্টি। তিনি মূল বাল্মীকি রামায়ণকে কোথাও সংক্ষিপ্ত করেছেন, কোথাও বা পুরাণ উপকথার কিংবদন্তির সঙ্গে নিজের অপূর্ব কল্পনা ও কবিত্ব মিশিয়ে ঘটনাকে বহুভাবে বিস্তৃত করেছেন, নুতন বিষয়ের অবতারণাও করেছেন।
মূল বাল্মীকি রামায়ণ যদি কারও পড়া নাও থাকে তাহলেও 'কবি কৃত্তিবাস ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন ব্যাপারে, গঙ্গোত্রী হতে বেরিয়ে গঙ্গা যে সমস্ত পার্বত্যভূমির উপর দিয়ে ব'য়ে এসেছে তার উল্লেখ না করে, মোড়তলা আকৃনা মাহেশ নবদ্বীপ প্রভৃতি বাংলার যে সমস্ত গঙ্গাতীরবর্তী গ্রাম নগরাদির উল্লেখ করেছেন তা থেকেই সহজে বুঝতে পারবেন এ সমস্তই তাঁর সংযোজনা এবং এগুলি সঠিক নয় ।
"আকনা মাহেশ গঙ্গা দক্ষিণ করিয়া
বিহুরোদের ঘাটেতে উত্তরিল গিয়া।।”(আদিকাণ্ড. কৃত্তিবাসের রামায়ণ )
রামজীর দুর্গাপুজার গল্পটিও এই ধরণের একটি সংযোজনা মাত্র। বাল্মীকি মুনির রামায়ণ পড়লেই বুঝতে পারবেন, যখন লঙ্কাযুদ্ধ শুরু হয় তখন আশ্বিন কাৰ্ত্তিক মাস, শরৎকাল শেষ করে গেছে। বালীবদের পর রামজী সুগ্রীবকে বলছেন, 'এখন চার মাস বর্ষাকাল ( আষাঢ় হতে আশ্বিন), এখন যুদ্ধোদ্যোগের সময় নয়; কাৰ্ত্তিক মাস পড়লে রাবণ বধের আয়োজন করবে, এখন স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন কর' “প্রবৃত্তাঃ সৌম, চত্বারো, মাসা: বার্ষিক সজ্ঞকাঃ...." (কিঞ্চিদ্ধাকা মূল বাল্মীকি রামায়ণ )।
দেখুন লঙ্কা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব্বেই শরৎকাল গত ! কৃত্তিবাসের বর্ণানুযায়ী বালি বধের পর সুগ্রীব যখন কিষ্কিন্ধ্যার সিংহাসনে বসেন তখন বর্ষাকাল । সীতা বিরহে রামচন্দ্রের দুঃখের অন্ত নেই।
"কাদিতে কাঁদিতে গেল সে প্রাণ মাস,
রামের ক্রন্দনে গীত গায় কৃত্তিবাস”।__[কিষ্কিন্ধাকাণ্ড ]
রাজ্যসুখে মত্ত সুগ্রীবকে লক্ষণ জী গিয়ে তিরস্কার করে আসার পর হুনুমানকে সুগ্রীব বললেন—
"পাঠাও হে ভূতগণে দেশ দেশান্তর,
দশ দিন মধ্যে যেন আইসে সত্বর" [কিষ্কিন্ধাকাণ্ড]
ভাদ্র মাসের দশ দিনে তাহলে বানর সৈন্তরা সমবেত হ'ল, দলে দলে ভাগ করে সুগ্রীব তাদেরকে নানাদিকে মাতা সীতার খোঁজ করতে পাঠালেন; হুকুম দিলেন ,
"যেই বীর মাসেকের মধ্যে না আইসে,
সবংশে মরিবে সেই আপনার দোষে”। [কিষ্কিন্ধাকাণ্ড]
ঐ কৃত্তিবাসী রামায়ণেই আছে, একমাস গত হয়ে গেল, অঙ্গদ হুমানাদি সীতার কোন সন্ধান না পেয়ে যখন প্রায়োপবেশনে মরতে চাইছেন,
সেই সময় ঘটায়ূর ভাই সম্পাতি তাদেরকে রাবণ কর্তৃক সীতা হরণের সংবাদ ছিলেন। কি ভাবে সমুদ্র লঙ্ঘন করে লঙ্কাতে যেতে হবে তাও বলে ছিলেন। তাহলে সম্পাতির কাছে গীতার খবরই পেলেন তাঁরা আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি !
তারপর হুমানের সমুদ্রলঙ্ঘন, অশোকবনে সীতাজীরদর্শন, লক্ষাদহন, ফিরে এসে রামচন্দ্রকে সীতাদত্ত অভিজ্ঞান উপহার, বানর দৈত সংগ্রহ সবকে পরিচালিত করে সমুদ্রতীরে আনয়ন প্রভৃতি ব্যাপার ঘটতে ঘটতে আশ্বিন মাস থাকছে কি ? তারপর এক মাস লাগলো শুধু সমুদ্র বন্ধন করতে।
"আনন্দে করয়ে নল সাগর বন্ধন
এক মাসে বাঁধা হল শতেক যোজন।"
তারপর লঙ্কাতে পৌঁছেও_____
"পঞ্চ দিন উভয় সৈন্যের সমাবেশ.."(কৃত্তিবাসকৃত রামায়ণ)
লঙ্কাযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো আর রাবণের সঙ্গে রামজীর যুদ্ধ হয় নি, দেবী দুর্গাও রাবণকে রক্ষা করতে ছুটে আসেন নি, বা তাই দেখে রাম মূর্তি গড়িয়ে দুর্গাপূজায় বসে যান নি ! কৃত্তিবাসেরই বর্ণনানুযায়ী অনেক রাক্ষস সেনাপতি মরলো, তরনীসেন, অতিকায়, ইন্দ্রজিৎ, কুম্ভকর্ণাদির মৃত্যুর পর রাবণ যুদ্ধে এলেন আর রামের বাণে পর্যুদস্ত হয়ে নিতান্ত অসহায় ভাবে কাদতে কাদতে প্রার্থনা জানালেন দেবী দুর্গার কাছে ;
"তবে তুষ্টা হয়ে মাতা দিল দরশন,
বাসলেন রথে কোলে করিয়া রাবণ"। (লঙ্কাকাণ্ড,কৃত্তিবাসকৃত)
আর তাই দেখে রামজী করলেন অকাল বোধন ? বিভীষণের পরামর্শে করলেন দুর্গাপূজা ? এই তো তোমাদের দুর্গোৎসবের উৎস? সমস্ত ঘটনার সময় এবং কাল পর্যালোচনা করে দেখ, কৃত্তিবাসেরই বর্ণনানুযায়ী, ঐ শরৎকাল গত হয়ে গেছে কতো দিন আগে!! তবুও কি বলবে আশ্বিন মাসে রাবণ বধের সময়, রামচন্দ্র মূর্ত্তিগড়ে অকাল বোধন পূর্ব্বক দুর্গাপূজা করেছিলেন ?

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ