সত্যার্থ প্রকাশ কি বেদ বিরুদ্ধ ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

28 September, 2022

সত্যার্থ প্রকাশ কি বেদ বিরুদ্ধ ?

 শাস্ত্রার্থ বিষয়ঃ সত্যার্থ প্রকাশ কি বেদ বিরুদ্ধ?

স্থানঃ বাঁকনের (জেলা অলীগড়, উত্তর প্রদেশ)
দিনাঙ্কঃ ৪ জুন, সন ১৯৬০ ই০
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্ত্তাঃ

পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী 

পৌরাণিক পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্ত্তাঃ

পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর

প্রধানঃ শ্রী স্বামী মুনিশ্বরানন্দ জী
(বর্তমান নিবাসী - গাজিয়াবাদ)
উপস্থিতঃ পৌরাণিক পণ্ডিত শ্রী বিমলদেব জী সন্ন্যাসী তথা শ্রী স্বামী মুনিশ্বরানন্দ জী সরস্বতী (বৈদিক ধর্মী) এই শাস্ত্রার্থের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন
•••শাস্ত্রার্থের পূর্বে•••
শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী বাঁকনের জেলা অলীগড়ে এসে নিজের স্বভাবানুসারে তিনি আর্য সমাজকে শাস্ত্রার্থের জন্য চ্যালেঞ্জ করেন আর বলেন যে এখন আমাকে যখনই ডাকা হবে তখনই চলে আসবো আর বলেন যে শাস্ত্রার্থের সময়ে খুর নিয়ে রাখা হবে। যে পরাজিত হবে তার নাক কেটে ফেলা হবে। শাস্ত্রার্থের জন্য তিথিও নিশ্চিত করে ফেলা হয়। সেই সময় শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী কলকাতায় থাকতেন। শ্রী স্বামী মুনিশ্বরানন্দ জী মহারাজ কলকাতা থেকে শাস্ত্রার্থের জন্য শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জীকে ডাকেন। ঠাকুর সাহেবের আগমনের সূচনা পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বাঁকনেরের পৌরাণিক সনাতন ধর্মীরা পণ্ডিত মাধবাচার্য জীর নিকট ঠাকুর সাহেবের আগমনের সূচনা দিয়ে শাস্ত্রার্থ হেতু আমন্ত্রণ পত্র দিল্লিতে পাঠিয়ে দেয়।
ঠাকুর সাহেবের আসার কথা শুনে শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী বাঁকনেরের পৌরাণিক সনাতনী ধর্মীদের এরকম পত্র লিখে দেন যারমধ্যে মোটা অর্থ অগ্রিম চাওয়া হয়েছিল। যত অর্থ শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী চেয়েছিলেন, অতগুলো অর্থ বাঁকনেরের পৌরাণিক সনাতনী সভা দিতে পারতো না আর না দিতে পেরেছে।
শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী কলকাতা থেকে এসে ছিলেন। শ্রী মাধবাচার্য জী দিল্লি থেকে আসেন নি, তখন পৌরাণিক সনাতনী ধর্মীদের অত্যধিক চিন্তা হয়। বাঁকনের থেকে এক ব্যক্তিকে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেখানে শ্রী পণ্ডিত ভীমসেন জী, যিনি নিজেকে প্রতি-বাদী ভয়ংকর বলতেন, তাকেই বাঁকনের নিয়ে আসা হয়। যিনি এসেই শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জীর নিকট প্রার্থনা করেন যে আমি অত্যাধিক দুর্বল, রোগ থেকে উঠেছি মাত্র, সুতরাং এক ঘণ্টার মধ্যেই শাস্ত্রার্থ করা হয়।
সত্যার্থ প্রকাশ কি বেদ বিরুদ্ধ ?
- নিবেদক
রবিকান্ত শাস্ত্রী এম০ এ০
••• শাস্ত্রার্থ আরম্ভ •••
🔵 পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
কোনো আর্য সমাজীই স্বামী দয়ানন্দ জীর মায়ের নাম জানে না, যদি জানেন তো বলুন?
🟠 পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
যদি কোনো আর্য সমাজী স্বামী দয়ানন্দের মায়ের নাম না জানে, তাহলে কি এর দ্বারা সত্যার্থ প্রকাশ বেদ বিরুদ্ধ সিদ্ধ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নের সঙ্গে সত্যার্থ প্রকাশ বা আজকের শাস্ত্রার্থ বিষয়ের কি সম্বন্ধ? মহারাজ জী! তাছাড়া শ্রী স্বামী স্বতন্ত্রানন্দ জী মহারাজ অনেক অনুসন্ধান করে এটা সিদ্ধ করে দিয়ে ছিলেন যে, স্বামী দয়ানন্দ জীর মায়ের নাম "য়শোদা বাই" ছিল। কিন্তু পণ্ডিত জী মহারাজ! আপনি কি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, বশিষ্ঠ, কণাদ, পতঞ্জলি আদির মায়েদের নাম বলতে পারবেন? যদি না বলতে পারেন তাহলে কি পুরাণগুলোকে বেদ বিরুদ্ধ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন?
🔵 পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে শিখদের সুখমনীর নাম নিয়ে লেখা আছে যে, "বেদ পঢ়ত ব্রহ্মা মরে" এটা গ্রন্থ সাহেবের মধ্যে কোথাও নেই। স্বামী জী সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে মিথ্যা লিখেছেন। ঠাকুর জী! এটার কি কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে?
🟠 পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
বাঃ বাঃ বাঃ!! ধন্য হোক !! মনে হয় আজ আপনি ভাঙ্গ খেয়ে এসেছেন। শাস্ত্রার্থের বিষয়টা আপনার মনে আছে নাকি নেই, যদি নেশায় ভুলে থাকেন তো দ্বিতীয়বার বলে দেওয়া হবে। (জনতায় হাসি...) মহারাজ জী! ঠিক করে আগে বলুনতো প্রস্তুত বিষয়ের সঙ্গে এই প্রশ্নের সম্বন্ধটা কি? সম্বন্ধ হোক আর না হোক, আপনার তো শুধু প্রশ্ন বাড়ানো নিয়ে কথা। "মান না মান ম্যায় তেরা মেহমান" শিখরা তো আপনাকে তাদের উকিল বানায় নি। এটা জিজ্ঞেস করার আপনি কে? এই প্রশ্নটা যখন কোনো শিখ করবে তখন এর উত্তর দেওয়া যাবে, আপনি বরং যেই পৌরাণিকদের উকিল হয়ে এসেছেন তাদের পক্ষ থেকে কিছু জিজ্ঞেস করুন, কিন্তু আপনি বা শ্রোতাগণ যেন এটা না ভেবে বসেন যে আমি এর সম্বন্ধে কিছুই জানি না, তথা আমি এরকম বাহানা করে আপনার এই অমূল্য প্রশ্নটিকে সমাপ্ত করতে চাচ্ছি। তাই আপনি এটারও উত্তর অবশ্যই শুনুন! তবে এরপর থেকে কৃপা করে বিষয় ধ্যানে রেখেই প্রশ্ন করবেন। শিখদের গ্রন্থ সাহেবের মধ্যে বাক্য আছে - "বেদ পঢ়ে-পঢ় ব্রহ্মো জন্ম গঁবায়া" আর "চারোঁ বেদ ইত্ফরা পাই। মন দা ভরম্ ন জাই"। প্রথম বাক্যের ভাব স্বামী জী লিখেছেন, "বেদ পঢ়ত ব্রহ্মা মরে" আর অন্যটার ভাব লিখেছেন "চারোঁ বেদ কহানি" কারণ ইত্ফরার অর্থই হল কাহিনী।
🔵 পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
স্বামী দয়ানন্দ জী সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে শিখর কেটে ফেলার আজ্ঞা দিয়েছেন। এটা ঈসাই মতের প্রচার।
🟠 পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
মহর্ষি দয়ানন্দ জী সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে কোথাও লেখেন নি যে শিখর সকলের কাটা উচিত অথবা অবশ্যই কাটতে হবে, বা সর্বদা কেটে রাখবে, স্বামী জী তো সন্ধ্যার সময়ে নিত্যই শিখরে গিঁট দেওয়ার আজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি পুরোনো সব ঋষিদের আজ্ঞার অনুসারে কেশান্ত সংস্কারের বর্ণনা করেছেন। যার বর্ণনা প্রায় সমস্ত স্মৃতিতে আর সমস্ত গৃহ্য সূত্রগুলোতে আছে। সেখানে শিখর সহিত সব কেশ কেটে ফেলার বিধান আছে। কোথাও-কোথাও মুণ্ডন সংস্কারে শিখর বাদে অন্য কেশ কেটে ফেলার বিকল্প আছে কিন্তু কেশান্ত সংস্কারে শিখা সহিত কেশ শ্মশ্রু, কক্ষ, বক্ষ, উপস্থের সব কেশ কেটে ফেলার বিধান আছে। দুঃখের বিষয় যে আপনি এই গ্রন্থগুলোকে অধ্যয়নই করেন নি, বেদের নাম তো নিয়েছেন কিন্তু বেদও কখনও পড়েন নি। নিন প্রমাণও শুনে নিন -
য়ত্র বাণাঃ সম্পতন্তি কুমারা বিশিখাऽইব।
(য়জুঃ ১৭|৪৮)
আপনার আচার্য উব্বট আর মহীধর দুজনে বিশিখার অর্থ "শিখা রহিতা মুণ্ডিত মস্তকাঃ" করেছে। যার অর্থ শিখা রহিত আর কেশ রহিত মস্তক...।
Note: মাঝখানেই পৌরাণিক পণ্ডিত ভীমসেন জী গর্জন করে বলে ওঠেন যে - এটা সন্ন্যাসীদের জন্য।
🟠 পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
কিন্তু দেবতা জী! এখানে তো "কুমারা" অর্থাৎ কুমার শব্দ আছে। যার প্রমাণ আমি উপরে বেদের য়জুর্বেদ মন্ত্র দিয়েছি। সেখানে তো সন্ন্যাসীর উল্লেখই নেই। কুমার সন্ন্যাসী! বাঃ বাঃ!!
🔵 পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে লেখা আছে শিশুকে তার মাতা ছয় দিন দুগ্ধপান করাবে, পশ্চাৎ ধাই। এটা বেদ বিরুদ্ধ।
🟠 পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
বলুন কোন বেদ মন্ত্রের বিরুদ্ধে? সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে এটা কোথাও লেখা নেই যে, যেই ঘরে ধাই দুগ্ধপান করাবে না সেই ঘরের সবাই নরকে চলে যাবে, সহজ সরলভাবে এটা লেখা আছে যে যদি মাতার দুগ্ধ বাদ দিয়ে শিশুকে ধাইয়ের দুগ্ধ পান করানো হয় তাহলে মাতা শীঘ্র সুস্থ আর বলবতী হয়ে যাবে। যারা ধাইয়ের প্রবন্ধ করতে পারবে না তারা গাভী বা ছাগ আদির দুগ্ধ পান করাবে, যারা গাভী বা ছাগেরও প্রবন্ধ করতে পারবে না তারা যেমনটা সম্ভব তেমনটি করবে, অভিপ্রায় হল যে তারা মাতার দুগ্ধই পান করাবে। ধাই দুগ্ধপান করাবে, এটা সুশ্রুতের শারীরিক স্থানে আর চরক শারীরিক স্থানের মধ্যেও আছে, নোট করুন আর প্রমাণ নিন - আমি কোনো কথাই বিনা প্রমাণে বলি না।
অতো ধাত্রীপরীক্ষামুপদেক্ষ্যামঃ - অথ ব্রূয়াত্
ধাত্রীমানয়তেতি, বত্সলা জীবদ্ধত্সাম্ পুম্বত্সা
দোন্ধ্রীমপ্রমত্তা - আদি।।৫৩।।
(চরক সংহিতা শারীরিক স্থান অধ্যায় ৮ বাক্য ৫৩)
অভিপ্রায় এটা হল যে, যার বালক আছে এবং যার বালক জীবিত আছে, আর যার পর্যাপ্ত মাত্রায় দুগ্ধ আছে। শ্রী রামচন্দ্র জীরও ধাই ছিল। ধাইয়ের যেরকম বর্ণনা সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে আছে সেরকমই আপনার মান্য গ্রন্থ গরুড় পুরাণের মধ্যেও আছে, প্রমাণ নিন -
বিদারীকন্দস্বরসম্ মূলম্, কার্পাসজম্ তথা।
ধাত্রী স্তন্যবিশুধ্যর্থ মুম্গয়ূষো রসাশিনী।।
(গরুড় পুরাণ আচার কাণ্ড অধ্যায় ১৭২ শ্লোক ১৩)
গরুড় পুরাণে এর অর্থ হল, বিদারী ফুলের স্বরস, কপাসের মূল তথা মুঙ্গের য়ুষ (শূপ) ধাইয়ের দুগ্ধকে শুদ্ধ করবে। যদি ধাই না পাওয়া যায় তাহলে ছাগী বা গাভীর দুগ্ধ শিশুকে পান করাবে। আপনি সব কথাকেই বেদ বিরুদ্ধ বলে দেন অথচ বেদ মন্ত্র একটাও বলেন না, যার দ্বারা এটা বোঝা যাবে যে এটা অমুক বেদ মন্ত্রের বিরুদ্ধে। আপনার কাছে তো বেদ মন্ত্র নেই কিন্তু আমি এরজন্যও বেদ মন্ত্র দিচ্ছি, দেখুন তথা ধ্যান দিয়ে শুনুন -
নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকঁ
সমীচী। (য়জুঃ ১২|২)
আরও দেখতে চান তো আপনি য়জুর্বেদ অধ্যায় ১৭ মন্ত্র ৭০ টি দেখুন, যার মধ্যে বলা হয়েছে যে দুই স্ত্রী একটি শিশুকে এক মনে দুগ্ধপান করায়। দুই স্ত্রী মাতা আর ধাই হবে, আর কেউ না।


🔵 শ্রী পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে লেখা আছে যে - "বিবিধানি চ রত্নানি বিবেক্তেষূপপাদয়েত্" এই শ্লোকটি মনুস্মৃতির নামে লেখা আছে। আর অর্থ বলা হয়েছে যে সন্ন্যাসীদের ধন দেওয়া উচিত। এই শ্লোকটি মনুস্মৃতির কোথাও লেখা নেই, সত্যার্থ প্রকাশে এই শ্লোকটি মনুস্মৃতির নামে মিথ্যা লিখে দেওয়া হয়েছে।
🟠 শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
মহারাজ জী! আপনি গ্রন্থকে পড়ুন, দেখুন মনুস্মৃতিতে সম্পূর্ণ শ্লোকটি এইভাবে আছে -
ধনানি তু য়থাশক্তিঃ বিপ্রেষু প্রতি পাদয়েত্।
বেদ বিত্ষু বিবিক্তেষু প্রেত্য স্বর্গ সমস্নুতে।।
(মনুস্মৃতি ১১|৬)
অর্থ হল বেদজ্ঞানী বিরক্ত ব্রাহ্মণ অর্থাৎ সন্ন্যাসীকে যথাশক্তি ধন দেওয়া উচিত। এখানে কিছু পাঠ ভেদ আছে তবে অর্থের কোনো ভেদ নেই। এরকমই অর্থ আপনার আচার্য কুল্লূক ভট্টও করেছেন, দেখুন আর ধ্যান দিন - "বিবিক্তেষু পুত্র কলত্রাদিষ্ববসক্তেষু" অর্থাৎ পুত্র কলত্র আদি হতে বিরক্ত ব্রাহ্মণকে ধন দাও, তিনিই হচ্ছেন সন্ন্যাসী। এছাড়াও "বি" উপসর্গ পূর্বক "বিচির" পৃথক ভাবে ধাতু হতে "বিবিক্ত" শব্দ হয়েছে, তার অর্থ সন্ন্যাসীই হবে। এটা মনুস্মৃতিতে এখনও বিদ্যমান আছে।
🔵 শ্রী পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে লেখা আছে যে "অগ্নি, বায়ু, আদিত্য আর অঙ্গিরার কাছ থেকে ব্রহ্মা পড়েছে" - এটা বেদ বিরুদ্ধ। কারণ অথর্ববেদের মধ্যে বলা হয়েছে যে -
"ব্রহ্মা দেবানাম্ প্রথমঃ সম্বভূব" অর্থাৎ ব্রহ্মা দেবের মধ্যে সবার আগে প্রকট হয় যাকে আদমও বলা হয়, আর একজনই সবার আগে জন্মেছিল। যখন সে সবার আগে প্রকট হয়েছিল, তাহলে সে অগ্নি আদির কাছ থেকে বেদ কিভাবে পড়েছিল? অগ্নি আদির নিকট চার বেদ আসে, এর কোনো প্রমাণ নেই।
🟠 শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
শ্রীমান জী! আমি আবারও বলছি আপনি একটু পড়ুন, তাহলে আপনি জানবেন যে যিনি অগ্নি, বায়ু আদির নিকট থেকে চার বেদ পড়েছিলেন তিনিই ব্রহ্মা ঋষি ছিলেন, কারণ "চতুর্বেদ বিদ্ ব্রহ্মা ভবতি" চার বেদের জ্ঞানীই হল ব্রহ্মা। এই যে আপনি অথর্ববেদের নামে প্রমাণ দিলেন এটা অথর্ববেদের কেন কোনো বেদেরই মন্ত্র না, আপনি মনে করেছেন যে বাঁকনেরের সনাতন ধর্মীদের উপরে এই প্রভাব পড়ে যাবে যে প্রতিবাদী ভয়ংকর জী তোপ কামানের মতো ভয়ংকর, বেদও পড়েছেন। কিন্তু এটা জানে না যে সামনে কে বসে আছে? এই সব পোল খুলে দিবে। শ্রীমান জী! এটা বেদের মন্ত্র না, এটা উপনিষদের বচন, এটা হল "মুণ্ডক উপনিষদের মুণ্ডক ১ বচন ১" আর সম্পূর্ণ পাঠ এই রকম, নোট করুন -
ব্রহ্মা দেবানাম্ প্রথমঃ সম্বভূব বিশ্বস্য কর্ত্তা ভুবনস্য
গোপ্তা। স ব্রহ্মবিদ্যাম্ সর্ববিদ্যাম্প্রতিষ্ঠামথর্বায়
জ্যেষ্ঠপুত্রায় প্রাহ।।
এর অর্থ হল - ব্রহ্মা দেবের মধ্যে মুখ্য, প্রথমের অর্থ এটা নয় যে "সবার আগে হল"। যেমনটা নচিকেতা বলেছে। "বহূনা প্রথমঃ বহূনায়েমি মধ্যমঃ" অর্থাৎ আমি হলাম অনেকের মধ্যে মুখ্য, আর অনেকের মধ্যে মধ্যম।
সবার আগে আদম হয় - এটা আপনি ঈসাইদের থেকে শিখেছেন। বেদের মধ্যে তো এটা বলা হয়েছে যে - "সাধ্যাঃ ঋষয়শ্চ য়ে" (য়জুর্বেদ) সৃষ্টির আরম্ভে অনেক মানুষ সাধ্য আর ঋষি সিদ্ধ উৎপন্ন হয়, একজন হয় নি। এদের মধ্যে ব্রহ্মা মুখ্য হয় কারণ তিনি চারটা বেদ পড়েছেন। অগ্নি আদি এক-একটি বেদের গ্রহণকারী ছিলেন, ব্রহ্মা জী এই চার ঋষিদের থেকে চার বেদ পড়েছেন, এর খণ্ডনে আপনি কি প্রমাণ দিলেন? বাস্তবিকতা এই হল যে আপনি না তো বেদ পড়েছেন আর না উপনিষদ, এইসব স্বাধ্যায়ের বিষয়, এরকম তিলক ছাপা লাগিয়ে হয় নাকি! অগ্নি আদির উপর বেদ আসে এর প্রমাণ আপনি পান নি, যারা পড়ে তারা পায়, আমার কাছ থেকে শুনুন আর লিখুন নোট করুন -
অগ্নিবাযুরবিভ্যস্তু ত্রয়ম্ ব্রহ্ম সনাতনম্।
দুদোহ য়জ্ঞসিদ্ধ্যর্থমৃগ্যজুঃ সামলক্ষণম্।।
(মনুঃ ১|২৩)
অর্থাৎ - অগ্নি, বায়ু, অঙ্গিরা নামক ঋষাদির মাধ্যমে ক্রমশঃ ঋক্ আদি বেদকে পরমাত্মা দোহন করে প্রকাশ করেছিলেন। আরও প্রমাণ নিন -
অগ্নিঃ ঋগ্বেদঃ বায়োর্য়জুর্বেদঃ সূর্য়াত্সামবেদঃ
(শতপথ ব্রাহ্মণঃ ১১|৫|৮|৩)
অর্থাৎ - অগ্নি থেকে ঋগবেদ বায়ু থেকে য়জুর্বেদ তথা সূর্য থেকে সামবেদ প্রকট হয়। এই প্রমাণকে আপনার সায়ণাচার্য জী ঋগ্বেদ ভাষ্যের ভূমিকাতে উদ্ধৃত করেছেন। আরও প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করুন পণ্ডিত জী মহারাজ?
🔵 শ্রী পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
আঙ্গিরার চতুর্থ নাম সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে লেখা আছে। তার কোনো প্রমাণ নেই আর অগ্নি, বায়ু, আদিত্য আদি এগুলো ঋষি না, জড় পদার্থ। তাদের উপর বেদ কিভাবে প্রকট হতে পারে?
🟠 শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
চতুর্থ আঙ্গিরা নাম চতুর্থ বেদ অথর্ববেদের মধ্যে অথর্ব নামের সঙ্গেই আছে। দেখুন -
য়শ্মাদৃচো অপাতক্ষন্যজুর্য়স্মাদপাকষন্।
সামানি য়স্য লোমান্যথর্বাঙ্গিরসো মুখম্।
স্কম্ভম্ তম্ ব্রূহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।।
(অথর্বঃ ১০|৭|২০)
অর্থাৎ - সেই সর্বশক্তিমান পরমাত্মা হতে ঋগ্বেদ, য়জুর্বেদ, সামবেদ আর অথর্ববেদ, এই বেদ চতুষ্টয় প্রাদুর্ভূত হয়। অঙ্গিরস অর্থাৎ অথর্ববেদ যার মুখের স্বরূপ, সামবেদ যার লোমবৎ, য়জুর্বেদ যার হৃদয় স্বরূপ আর ঋগ্বেদ যার প্রাণ স্বরূপ। এইভাবে পরমাত্মা রূপকালঙ্কার দ্বারা বেদের উৎপত্তির প্রকাশ করেন©।
এই মন্ত্রটাতে চার বেদের নাম আছে, সেখানে অথর্ববেদের সঙ্গে চতুর্থ ঋষি অঙ্গিরারও নাম আছে। অগ্নি, বায়ু আদিকে আপনি ঋষি না ভেবে জড় পদার্থ ভেবে ফেলেছেন, কিন্তু আপনার গুরু আচার্য সায়ণ ঋগ্বেদ ভাষ্যের ভূমিকাতে অগ্নি আদিকে শতপথ ব্রাহ্মণের প্রমাণ দিয়ে তাদের "জীব বিশেষ" বিশেষ জীব অর্থাৎ ঋষি বলেছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আপনি আপনার গ্রন্থকেও পড়েন না আর শাস্ত্রার্থ করতে সামনে এসে যান। স্বাধ্যায় কিছুই করেন না।
নোট - পণ্ডিত ভীমসেন জী চেঁচিয়ে ঠাকুর অমর সিংহকে বললেন -
🔵 শ্রী পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -
আপনি তো লাহোরে "দিলরুবা" আর "সারঙ্গী" বাজাতেন। অন্যকে বার-বার বলছেন যে পড়ে না, স্বাধ্যায় করে না, নিজের দিকেও দেখুন। (জনতায় হাসি...)
🟠 শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
যদি আমি সারঙ্গী আর দিলরুবা বাজিয়েছি, তো এতে আমার ভিতর কোন দোষটা এসে গেল? সঙ্গীত বানানোর জন্য সত্যার্থ প্রকাশ বেদ বিরুদ্ধ হয়ে গেল? ধন্য হোক আপনার জ্যোতির মহারাজ জী! কিন্তু এতে আপনার আর কি দোষ, এই বেচারা পৌরাণিক সনাতন ধর্মীদের খুশি করার জন্য প্রশ্নের সংখ্যা তো বাড়াতেই হবে। তা সেই প্রশ্নের সম্বন্ধ শাস্ত্রার্থের সঙ্গে হোক অথবা না হোক। স্বাধ্যায় আর বিদ্বতার সঙ্গে তো আপনার দূর-দূর পর্যন্ত কোনো সম্বন্ধ নেই। প্রশ্ন তো আপনি করেছেন, এইজন্য প্রশ্ন বিষয়ান্তর হলেও আমি উত্তর না দিয়ে ছাড়বো না। কারণ আমি আমার জীবনে ঋণ রাখা শিখি নি। তাই শুনুন আপনার দেবতারা শ্রীকৃষ্ণ জী বাঁশি, নারদ জী বীণা, শিব জী ডামরু বাজাতেন। তো আমিও আপনার দেবতাদের সঙ্গে মিলে গেলাম, এতে আমার মধ্যে কি দোষটা এসে গেল? আমিও আপনার দেবতাদের মধ্যে সামিল হয়ে গেলাম। (জনতার মধ্যে হাততালির জোরালো শব্দের সঙ্গে অট্টহাসি...)
নোট - শ্রী পণ্ডিত ভীমসেন জী সত্যার্থ প্রকাশকে বেদ বিরুদ্ধ সিদ্ধ করতে পারেন নি। তিনি তার প্রশ্ন পুনরাবৃত্ত করছিলেন যার উত্তর আগেই দেওয়া হয়েছিল তাই উত্তরও পুনরাবৃত্ত দেওয়া হয়। এইভাবে শাস্ত্রার্থ শান্তিপূর্বকভাবে সমাপ্ত হয় আর আর্য সমাজের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে কাল অন্য কোনো বিষয়ে শাস্ত্রার্থ হবে। যার সূচনা উভয় পক্ষের নির্ণয় থেকে দেওয়া হবে, এতে পৌরাণিক সনাতন ধর্মের পক্ষ থেকে এক যুবক উঠে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে যে শাস্ত্রার্থ এক দিনের হোক অথবা দশ দিনের বা সারা মাসের, আমরা কেবল সত্যার্থ প্রকাশের উপরেই শাস্ত্রার্থ করবো। আর কোনো বিষয়ে শাস্ত্রার্থ হতে দিবো না। না এখানে ভজন হতে দিবো আর না বক্তৃতা, এই প্যান্ডেলকেও তুলে ফেলে দিবো, আমি এটা আগুন লাগিয়ে দিবো।
অত্যন্ত দায়িত্বহীন বেশ কয়েকটা কথা সে এরকমই বলেছে যে, যা আর্য সমাজী যুবক সেসব শুনে আবেশে আসতে পারতো, আর ঝগড়া অতি উগ্ররূপ ধারণ হয়ে যেত। কিন্তু আর্য সমাজীরা খুবই গম্ভীরতার সঙ্গে কাজ করে আর বলে দেয় যে রাত্রি এগারোটা পর্যন্ত এই বিষয়ের উপরেই শাস্ত্রার্থ করার জন্য আর্য সমাজ প্রস্তুত। এখনই শাস্ত্রার্থ আরম্ভ করে দিন, তবে কালকে অন্য কোনো বিষয়ে শাস্ত্রার্থ হবে, আর অবশ্যই হবে। যার নির্ণয় পূর্বেই নির্ধারিত করা হয়েছে, সেই বিষয়গুলো হল -
(১) ঈশ্বর জন্ম নেয় অথবা নেয় না?
(২) মূর্তি পূজা করা উচিত অথবা উচিত না?
(৩) শ্রাদ্ধ মৃতকের হতে পারে অথবা জীবিতদের?
(৪) ভাগবত আদি পুরাণ কি বেদানুকূল?
পৌরাণিক পণ্ডিত ভীমসেন জী আসার পূর্বে পত্র ব্যবহার দ্বারা উভয় পক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ের উপরে শাস্ত্রার্থ করবেন নিশ্চিত হয়েছিল কেবল এটা বলার অপেক্ষা ছিল যে ঠিক কোন দিন কোন বিষয়ে শাস্ত্রার্থ হবে। পণ্ডিত ভীমসেন জী এই কথার উপর বলে দেওয়া শুরু করেন যে - কোনো বিষয়েই শাস্ত্রার্থ হবে না, যদি হয় তবে সেই বিষয়েই হবে - "সত্যার্থ প্রকাশ কি বেদ বিরুদ্ধ?" তো সেটা সেখানকার শ্রোতাগণ শুনে ফেলেছে যে সত্যার্থ প্রকাশ কিরকম বেদ বিরুদ্ধ সিদ্ধ হয়েছে? তথা পাঠকগণ এখানে পড়ে নেবেন যে কার হার হয়েছে আর কার জিত হয়েছে। সকল শ্রোতাগণের নিকট স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ভীমসেন জী এখন শাস্ত্রার্থ করবেন না। কারণ তিনি খুব প্রচণ্ডভাবে পরাজিত হয়েছেন তাই আর দ্বিতীয় শাস্ত্রার্থ হয়নি। শাস্ত্রার্থের সময় পৌরাণিক সন্ন্যাসী শ্রী স্বামী বিমল দেব জীও পৌরাণিকদের মঞ্চে বিদ্যমান ছিলেন। শান্তি পাঠের পশ্চাৎ সভা সমাপ্ত হয়ে যায়।
_________________________________________
© বিস্তারিতভাবে জানতে - ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা পৃষ্ঠা ১০

(সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ