মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থ কি বেদানুকূল ? - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

06 October, 2022

মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থ কি বেদানুকূল ?

 শাস্ত্রার্থ বিষয়: মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থ কি বেদানুকূল?

স্থান: হরদুয়াগঞ্জ, জেলা - অলীগড়, উত্তর প্রদেশ
দিনাঙ্ক: ২৭ ফেব্রুয়ারি, সন ১৯৫০ ই০
আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা:

শ্রী পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী

পৌরাণিক সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্তা:

শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী

শাস্ত্রার্থের প্রধান: শ্রী বাবু প্রীতম লাল জী MA, LLB
(Advocate)
সনাতন ধর্ম সভা মন্ত্রী: শ্রী ভূদেব জী শাস্ত্রী
শাস্ত্রার্থের পূর্বে
জেলা আর্য মহা-সম্মেলন উপ প্রতিনিধি সভার (অলীগড়) পক্ষ থেকে ২৫, ২৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি সন ১৯৫০ ই০ তারিখে হরদুয়াগঞ্জে হবে নিশ্চিত হয়েছিল। এই স্থানটি অলীগড় থেকে ১০-১৫ কিমি দূরে। এই সম্মেলনে আর্য সভার পক্ষ থেকে পৌরাণিকদেরকে শাস্ত্রার্থ করার জন্য খোলা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। সেটিকে স্বীকার করে পৌরাণিকরা দুটি দাবি পেশ করে। একটি তো হল - শাস্ত্রার্থের বিষয় "স্বামী দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থ বেদানুকূল কিনা?" হতে হবে। দ্বিতীয় দাবি এটা রাখে - শাস্ত্রার্থের আয়োজন সম্মেলনের অন্তিম দিন অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে হোক। সম্মেলনের কার্যকর্তারা দুটো দাবি স্বীকার করে নেয়। নিশ্চিত সময়ে শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী দল-বল সহ গলায় ফুলের মালা পরে, শঙ্খ-কর্তাল আদির ধ্বনিতে ধ্বনিত, জয়-জয়কারের সঙ্গে গঞ্জায়মান নিজের বেদীতে এসে উপস্থিত হন । শাস্ত্রার্থের প্রধান শ্রী বাবু প্রীতম লাল জী (উকিল) শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জীকে বললেন যে - আমি ঘড়ির সময় মিলিয়েছি এখন আপনি প্রশ্ন করে শাস্ত্রার্থের আরম্ভ করুন।
Note - পণ্ডিত মাধবাচার্য জী পূর্বেও কয়েকবার শ্রী পণ্ডিত অমর সিংহ জীর নিকট পরাস্ত হয়েছেন। এইজন্য প্রশ্ন না করে এদিক-সেদিকের কথাতে সময় নষ্ট করার চেষ্টা নিজের স্বভাবানুসারে করতে থাকেন। আর শ্রী প্রধান জীকে জিজ্ঞেস করছিলেন যে আগে কি শাস্ত্রার্থ নিশ্চিত করা হয়েছিল? প্রধান জী বললেন - আমাদের পক্ষ থেকে তো শাস্ত্রার্থের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, তথা পরবর্তীতে শাস্ত্রার্থই নিশ্চিত হয়েছিল কিন্তু আশ্চর্য যে আপনি আগে কিছু না জেনে এখানে এসে উপস্থিত। আপনি কি নিজেও জানেন যে আপনি এখানে কেন এসেছেন? (জনতার মধ্যে হাসি... )
মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত গ্রন্থ কি বেদানুকূল ?

পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন,
যদি শাস্ত্রার্থ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনে শঙ্কা সমাধান কেন ছাপানো হয়েছে?
প্রধান জী বললেন, এই প্রশ্ন সর্বদা অনুপযুক্ত তথা অনাবশ্যক। কারণ শঙ্কা সমাধান এইজন্য লিখে দেওয়া হয়েছে যে বিষয় আপনার পক্ষ থেকে প্রশ্নাত্মক ছিল। অর্থাৎ শঙ্কা আপনার পক্ষ থেকেই হওয়ার ছিল আর সমাধান আর্য সমাজের পক্ষ থেকে হওয়ার ছিল। যদি বিষয় এরকম হত যে - "স্বামী দয়ানন্দ জী কৃত গ্রন্থ বেদানুকূল নাকি পুরাণ? তাহলে দুই পক্ষ থেকে প্রশ্ন হত আর দুই পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়া হত। কিন্তু এরমধ্যে প্রশ্ন এক পক্ষ থেকেই হওয়ার ছিল আর অন্য পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়ার ছিল। তাই শঙ্কা সমাধান ছাপা হয়েছিল। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এটা শাস্ত্রার্থ নয়। কারণ শাস্ত্রার্থের বিষয় নিশ্চিত থাকে। সুতরাং এটার বিষয় তো আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল। এখন দ্বিতীয় কথা হল শাস্ত্রার্থের মধ্যে সময়ের দৃঢ় প্রতিবন্ধ হয়, তো সেটা এরমধ্যেও রয়েছে, শঙ্কা সমাধানের মধ্যে না কোনো বিষয় নিশ্চিত থাকে আর না সময়ের কোনো নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এইজন্য এটা শাস্ত্রার্থই ছিল কিন্তু উভয় পক্ষের প্রশ্নোত্তর না হয়ে এক পক্ষ থেকে প্রশ্ন তথা অপর পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়ার ছিল। তাই বিজ্ঞাপনে শঙ্কা সমাধান লেখাও অনুচিত ছিল না। সুতরাং যোগ্য প্রধান জী স্পষ্টীকরণ করে দেন যে - "শাস্ত্রার্থের মধ্যে সময়ের অনেক বন্ধন হয়"। সেটা এরমধ্যেও রয়েছে। শাস্ত্রার্থের বিষয় নিশ্চিত হয়, এমনটা এরমধ্যেও রয়েছে। তৃতীয় কথা হল শাস্ত্রার্থে উভয় পক্ষের বক্তা হয়, এরমধ্যেও নিশ্চিত রয়েছে। তদনুসারে এটাও হল শাস্ত্রার্থ। হ্যাঁ! প্রশ্ন আপনার পক্ষ থেকে হবে আর উত্তর আর্য সমাজের পক্ষ থেকে এইজন্য শঙ্কা সমাধান লেখা হয়েছে। পার্থক্য কিছুই নেই, আপনি প্রশ্ন আরম্ভ করুন। এরপরেও মাধবাচার্য জী প্রশ্ন আরম্ভ করলেন না, সময় নষ্ট করার জন্য এক উপদ্রব আরও জুড়ে দিলেন যে প্রশ্নও লিখিত হোক আর উত্তরও লিখিত দেওয়া হোক, এটা খুবই হঠ তথা দুরাগ্রহ এবং মূর্খতাপূর্ণ ছিল। কারণ ৫মিনিটে যা কিছু বলা যায়, তাকে লিখতে ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত আর ১০মিনিটে যা বলা যায় তা লিখতে ২০-৩০ মিনিট সময় লেগে যায়। তারপর সেটা শোনাতেও হয়। এইভাবে তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত সময় ব্যর্থ লাগানো হবে, এটা কিরকম বুদ্ধিমত্তা হল? তারপর প্রশ্নোত্তরের লেখা হওয়া অথবা ছাপানো আবশ্যক হলে পরে এক পক্ষ তার প্রশ্নের পুস্তক ছাপিয়ে দিবে আর অন্য পক্ষ তার উত্তর ছাপিয়ে দিবে। লোকজন নিজের-নিজের ঘরে বসে পড়ে নিবে। জনতা শোনার জন্য এসেছে, আর দুই পক্ষের পণ্ডিত এখানে লিখতে বসে যাবে তথা জনতা এখানে বসে একে-অপরের শুধু মুখই দেখতে থাকবে। একদম মূর্খতা! শ্রী পণ্ডিত অমর সিংহ জী বললেন,
পণ্ডিত জী ! আজকে তো আপনি ছাড় পেয়ে গেছেন যে এত লম্বা বিষয়ের উপর যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করুন। আপনি আপনার বহুমূল্য সময়কে ব্যর্থ নষ্ট করছেন, যদি আমাকে প্রশ্ন করার সময় দেওয়া হয় তো আমি এক মিনিটও ব্যর্থ যেতে দিবো না। তত্কাল প্রশ্ন আরম্ভ করে দিবো। উত্তর দেওয়া তো কঠিন হয়, আপনি প্রশ্ন করতেও এত ঘাবড়াচ্ছেন। পণ্ডিত মাধবাচার্য জী অনেক কষ্টের সঙ্গে প্রশ্ন আরম্ভ করেন আর একবারেই সাতটি প্রশ্ন করেন। সময় ছিল ১০ মিনিট, প্রশ্ন তো ৫ মিনিটে ৫০টা করা যেতে পারে। কিন্তু ৭টি প্রশ্নের উত্তর ১০ মিনিটে কিভাবে দেওয়া যেতে পারে? এইজন্য একবারে অনেক প্রশ্ন করাটা অনুচিত ছিল, কিন্তু ওনার উচিত-অনুচিতের সঙ্গে কোনো প্রয়োজন নেই। শ্রী পণ্ডিত অমর সিংহ জী নিজের সময়ের থেকে ১ মিনিট পণ্ডিত মাধবাচার্য জীকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি অরনিয়াতে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আর আপনি উত্তর দিয়েছিলেন। সে সময় আপনিই এই নিয়ম বলেছিলেন যে এক সময়ে একটিই প্রশ্ন করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, উত্তর দেওয়ার জন্য সময়েরও কোনো নিষেধাজ্ঞা হবে না। যখন উত্তর সম্পূর্ণ হয়ে যাবে তখনই সমাপ্ত হয়ে যাবে। এতে যত সময় লাগে লাগুক। বলুন, এই দুইটি কথা আপনি অরনিয়াতে বলেছিলেন কিনা? আমার কাছে বেদ আছে আর এটি মাথায় রেখে বলুন যে আপনি অরনিয়াতে (বুলন্দশহর) বলেছিলেন কিনা? মাধবাচার্য জী এতে স্পষ্ট হ্যাঁ অথবা না কিছু না বলেই এটা সেটা বলে এড়িয়ে গেলেন। সম্পূর্ণ জনতা জেনে যায় যে সেখানে এমনটা অবশ্যই হয়েছিল। শ্রী ঠাকুর জী বললেন যে আপনার নিয়ম তো গিরগিটির মতো রং বদলায়। চলুন আমি উত্তর দেওয়া আরম্ভ করছি। মাঝখানেই শ্রী মাধবাচার্য জী বললেন - ঠিক আছে! আমি ক্রমে প্রশ্ন আরম্ভ করছি। আপনি উত্তর দিয়ে দেখান ! - "সংকলনকর্তা"
• শাস্ত্রার্থ আরম্ভ •
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ভাইগণ! আপনারা শান্তিতে বসুন! শাস্ত্রার্থ আরম্ভ হচ্ছে, দেখুন স্বামী দয়ানন্দ জী মহারাজের প্রতিজ্ঞা হল "আমি যা কিছু লিখেছি, সে সব বেদানুকূলই লিখেছি।" ওনার লেখা সন্ধ্যা যাকে আর্য সমাজীরা করে, সেটিকেও বৈদিক বলে। কিন্তু এখানে "ও৩ম্ বাক্ বাক্ ! ও৩ম্ প্রাণঃ প্রাণঃ" আদি মন্ত্র স্বামী জীর কল্পিত রয়েছে। যদি সেটি বৈদিক হয় তাহলে বলুন সেটি কোন বেদের মধ্যে আর কোথায় রয়েছে?
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
শুনুন পণ্ডিত জী মহারাজ! সন্ধ্যার মধ্যে যে-যে বেদের যা- যা মন্ত্র রয়েছে, তার-তার সঙ্গে সেই-সেই বেদের স্থান লেখা রয়েছে। "ও৩ম্ বাক্ বাক্ ..." আদি বেদের মন্ত্র নয়। তবে হ্যাঁ, বেদানুসার অবশ্যই। আপনি আপনার সন্ধ্যার মধ্যেও দেখুন সেখানেও আছে কি নেই? যদি থাকে তাহলে সেখানে কার কল্পিত? আর সেখানে বেদানুকূল রয়েছে নাকি বেদ বিরুদ্ধ? পণ্ডিত জী মহারাজ! আপনার সন্ধ্যাতেও এই একই মন্ত্র যেমনটা তেমন বিদ্যমান রয়েছে। আপনার সন্ধ্যাতে যে মন্ত্রটি বেদানুকূল তো সেই মন্ত্রটি আমাদের সন্ধ্যাতে বেদ বিরুদ্ধ হল কিভাবে? ধন্য আপনাকে মহারাজ! এটা কোথাকার ন্যায় হল? এই মন্ত্রগুলোকে কল্পিত-কাল্পনিক আর বেদ বিরুদ্ধ বলা মানে নিজের অজ্ঞানকে প্রকট করা।
কৃপা করে সেই বেদমন্ত্রটি বলুন যার বিরুদ্ধ এটি, সেই মন্ত্র কোনটি? আর আমি এর বেদানুকূল হওয়ার বেদমন্ত্র বলছি শুনুন -
প্রাণম্মে পাহ্যপানম্মে পাহি ব্যানম্মে পাহি চক্ষুর্মऽউর্ব্যা বিভাহি শ্রোত্রম্মে শ্লোক্য। অপঃ পিন্বৌষধীর্জিন্ব দ্বিপাদব
চতুষ্পাত্পাহি দিবো বৃষ্টিমেরয়।।
(য়জুঃ ১৪|৮)
এই মন্ত্রটিতে বলা হয়েছে যে, হে প্রভু! আমার প্রাণের রক্ষা করুন, আমার নেত্রকে প্রকাশযুক্ত করুন, আমার কানকে শাস্ত্র শ্রবণ যোগ্য বানিয়ে দিন।
প্রাণশ্চ মেऽপানশ্চ মে ব্যানশ্চ মেऽসুশ্চ মে চিত্তম্ চ
মऽআধীতম্ চ মে বাক্ চ মে মনশ্চ মে চক্ষুশ্চ মে
শ্রোত্রম্ চ মে দক্ষশ্চ মে বলম্ চ মে য়জ্ঞেন কল্পন্তাম্।।
(য়জুঃ ১৮|২)
অর্থাৎ - আমার বাণী, আমার মন, আমার চোখ, আমার নাক আর আমার চতুরাই ধর্মের অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হোক।
বাঙ্ম আসন্নসোঃ প্রাণশ্চক্ষুরক্ষ্ণোঃ শ্রোত্রম্ কর্ণয়োঃ।
অপলিতাঃ কেশা অশোণা দন্তা বহু বাহ্বোর্বলম্।।
ঊর্বোরোজো জঙ্ঘয়োর্জবঃ পাদয়োঃ।
প্রতিষ্ঠা অরিষ্টানি মে সর্বান্মানিভৃষ্টঃ।।
(অথর্বঃ ১৯|৬০|১-২)
এখানে বলা হয়েছে যে, হে পরমেশ্বর! আমার মুখের বাণী, দুই নাক ছিদ্রে প্রাণ, দুই চোখে দৃষ্টি, দুই কানে শোনার শক্তি, কেশ না ঝরে, দাঁত স্থির আর বাহুতে বল হোক।
মহারাজ জী! আপনি নিজের সন্ধ্যাও মনে রাখেন নি, আপনি এটিও জানেন না যে আপনার সন্ধ্যার মধ্যে কোন কোন মন্ত্রগুলো রয়েছে? আর তাছাড়া সেগুলো দেখা ও মনে রাখার প্রয়োজনটাই বা কি! যখন কেবল জলের ছিটে মারলে আর ঘন্টি বাজালেই কাজ হয়ে যায়! মহারাজ জী কিছু পড়ুন, আমার কাছে এক-দুটি নয়, এর বৈদিক অনুকূলতার জন্য পঞ্চাশটার মতো বেদ মন্ত্র আছে। আর আপনি এটা বেদ বিরুদ্ধ হওয়ার সম্বন্ধে একটিও মন্ত্র দেখাতে পারবেন না।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ঠাকুর সাহেব! এরকম চ্যালেঞ্জ আমি অনেক শুনেছি। যখন সেই মন্ত্র দেখাতে হবে তখন জানা যাবে। বলা আর বলে শ্রোতাদের উপর নিজের পাণ্ডিত্যের তেজ দেখানো অন্য বিষয়। আপনি পঞ্চাশের কথা বলছেন, দশ - পাঁচটাই দেখিয়ে দেন তো আমি মানি, (আবেশে এসে) ভাইয়েরা ! জিজ্ঞেস করুন এই আর্য সমাজীদের কাছে, যেসব গ্রন্থগুলোকে এরা বেদানুকূল সিদ্ধ করতে যাচ্ছে তারমধ্যে সংস্কার বিধিও রয়েছে, স্বামী দয়ানন্দের একটি মন্ত্র যা সংস্কার বিধির মধ্যে লেখা রয়েছে, সেটি বেদের মধ্যে কোথায় রয়েছে? সেই মন্ত্রটি এরকম যেটিকে বলে এরা য়জ্ঞোপবীত ধারণ করে, দেখুন -
ওম্ য়জ্ঞোপবীতম্ পরমম্ পবিত্রম্ প্রজাপতের্য়
ত্সহজম্ পুরস্তাত্ । আয়ুষ্যমগ্রম্ প্রতিমুঞ্চ শুভ্রম্
য়জ্ঞোপবীতম্ বলমস্তু তেজঃ।।
এই মন্ত্রটিকে আর্য সমাজীরা পৈতে ধারণ করার জন্য প্রয়োগ করে। যদি ঠাকুর সাহেব আপনি এটাকে বেদের মধ্যে দেখিয়ে দিতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে ১০০ টাকা পুরস্কার দিবো ।
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিত জী! আপনি এরকম চ্যালেঞ্জ কেবল শুনেছেন, দেখেন নি, আজ দেখেও নেবেন -- প্রথম তো আপনি নিজেরই ঘরের মধ্যে আগে হাতছানি করুন, যদি আপনি এতটুকু কষ্ট করতে না পারেন তো ধ্যান দিয়ে শুনুন -- কাশী (বারাণসী) -তে ছাপা "বৃহত্ য়জুর্বেদীয়সন্ধোপাসনম্" নামক পুস্তকটি হল আপনাদের সন্ধ্যার। তার পৃষ্ঠা ৯ তে, সেই মন্ত্রটি এইভাবে লেখা রয়েছে -
(১) ॐ বাক্ বাক্ (২) ॐ প্রাণঃ প্রাণঃ (৩) ॐ চক্ষুঃ চক্ষুঃ (৪) ॐ শ্রোত্রম্ শ্রোত্রম্ (৫) ॐ নাভিঃ (৬) ॐ হৃদয়ম্ (৭) ॐ বাহুভ্যাম্য়শোবলম্ (৮) ॐ করতল কর পৃষ্ঠে।
দ্বিতীয়টি এইভাবে ছাপা হয়েছে -
(১) ॐ ভূঃ পুনাতু (শিরসি) (২) ॐ ভুবঃ পুনাতু (নেত্রয়োঃ) (৩) ॐ স্বঃ পুনাতু (কণ্ঠে) (৪) ॐ মহঃ পুনাতু (হৃদয়ে) (৫) ॐ জনঃ পুনাতু (নাভ্যাম্) (৬) ॐ তপঃ পুনাতু (পাদয়োঃ) (৭) ॐ সত্যম্ পুনাতু পুনঃ (শিরসী) (৮) ॐ খম্ ব্রহ্ম পুনাতু (সর্বত্র)। এই একই বাক্য এইভাবেই কলকাতাতে "য়জুর্বেদীয় ত্রিকাল সন্ধ্যা" -র পৃষ্ঠা ৬-৭ এর মধ্যে ছাপা রয়েছে। এই দুটি পুস্তক আমার কাছে আছে। আপনি যদি দেখতে চান তো দেখতে পারেন। এখন এর বেদানুকূলতার প্রমাণ দেখুন-
💠 ওম্ বাক্ বাক্ -
(১) জিহ্বা মে ভদ্রম্ বাঙ্ মহো ... (য়জুঃ ২০|৬)
অর্থাৎ - আমার জিভ কল্যাণকর ভোজনকারী আর বেদ তথা শাস্ত্র জ্ঞানের বিস্তারকারী হোক।
(২) বাচো মে বিশ্ব ভেষজো... (য়জুঃ ২০|৩৪)
অর্থাৎ - আমার বাণী সারা বিশ্বের সব রোগ আর দোষের নাশক সর্বোত্তম ঔষধি হোক।
(৩) বাচে স্বাহা ... (য়জুঃ ২২|২৩)
অর্থাৎ - সুন্দর সত্য বলার মতো বাণীর জন্য স্বাহা।
(৪) বাচম্ মে তপর্য়ত ... (য়জুঃ ৬|৩১)
অর্থাৎ - আমার বাণীকে তৃপ্ত করুন।
(৫) বাচে মে বর্চোদা বর্চসে পবস্ব ... (য়জুঃ ৭|২৭)
অর্থাৎ - আমার বাণীতে বর্চস, শক্তি, সামর্থ্য আর পবিত্রতা দিন।
(৬) বাচম্মে পিন্ব ... (য়জুঃ ১৪|১৭)
অর্থাৎ - আমার বাণীকে ভালো শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করুন।
(৭) বাক্ চ মে ... য়জ্ঞেন কল্পন্তাম্।। (য়জুঃ ১৮|২)
অর্থাৎ - আমার বাণীকে জ্ঞান, গমন, প্রাপ্তি আর দানের সঙ্গে যুক্ত করুন।
(৮) বাক্ য়জ্ঞেন কল্পতাম্ ... (য়জুঃ ১৮|২৯)
অর্থাৎ - আমার বাণী যজ্ঞ কর্মের মধ্যে সমর্থ হোক।
(৯) বাচম্ তে শুন্ধামি ... (য়জুঃ ৬|১৪)
অর্থাৎ - আমি তোমার বাণীকে শুদ্ধ করি।
(১০) বাক্ তऽআপ্যায়তাম্ ... (য়জুঃ ৬|১৫)
অর্থাৎ - আমি তোমার বাণীকে সব গুণ দিয়ে যুক্ত করি।
পণ্ডিত জী! আমি আপনাকে এত প্রমাণ কেবলমাত্র "ॐ বাক্ বাক্" এর উপর দিলাম। আপনি অন্ততঃ এর বিরোধে একটি মন্ত্র বলুন। আপনি একটি মন্ত্র সংস্কার বিধির মধ্যে থেকে পড়ে নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন যে "যদি এই মন্ত্রটিকে বেদের মধ্যে দেখাতে পারেন তো ১০০ টাকা পুরস্কার দিবো।" পণ্ডিত জী মহারাজ! আপনাকে কে বলেছে যে এটি বেদের মন্ত্র? মহর্ষি দয়ানন্দ কোথায় লিখেছেন যে এই মন্ত্রটি বেদের? যদি আপনি এরসঙ্গে এই লেখা দেখাতে পারেন যে এটা বেদের মন্ত্র তাহলে আমি আপনাকে নগদ ৫০০ টাকা পুরস্কার দিবো। যখন স্বয়ং ঋষি দয়ানন্দ জী এটিকে বেদমন্ত্র বলেন নি, তাহলে আপনার কি অধিকার রয়েছে যে এটিকে বেদের মধ্যে জিজ্ঞেস করার?
আপনি এটা বলুন যে এই মন্ত্রটি বেদ বিরুদ্ধ, তখন জানবেন, মহারাজ জী! আপনিও তো এটা দিয়েই য়জ্ঞোপবিত (পৈতে) পরেন আর পরান। আপনি এটাও জানেন না যে এই মন্ত্রটি কোথাকার? আপনি আমার কাছে জিজ্ঞাসু হয়ে জিজ্ঞেস করুন তারপর আমি বলবো, পরবর্তীতে আমি সময় পেলে আরও প্রমাণ দিবো।

🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
"এমম্ ত উপস্থম্ মধুনা সম্সৃজামি প্রজাপতের্মুখমেতত্
দ্বিতীয়ম্" - এই মন্ত্রটি কোন বেদের?
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিত জী মহারাজ! আপনি এরকম-এরকম প্রশ্ন করে কেন সময় নষ্ট করছেন? যদি কিছুই জানেন না তো কেন শাস্ত্রার্থ করতে এসেছেন? এই মন্ত্রটা কোনো বেদেরই না, কে বলেছে যে এটা বেদের মন্ত্র, কোন গ্রন্থের মধ্যে এটার নিচে বেদের ঠিকানা দেওয়া আছে? না কোথাও লেখা আছে আর না কেউ বলেছে, তাহলে পরে জিজ্ঞেস করুন যে এটা কোথাকার, যখন আপনি নিজেই জানেন না, আর না আমরা বলেছি আর না ঋষি দয়ানন্দ জী বলেছেন যে এই মন্ত্রটা বেদের, তাহলে আপনি এটাকে বেদের মধ্যে জিজ্ঞেস করার কে? জিজ্ঞাসু হয়ে জিজ্ঞেস করুন, আপনাকে বলে দেওয়া হবে। তবে ঠিক আছে, আর তাছাড়া আপনি কি বা প্রশ্ন করতে পারেন! এরকম - এরকম প্রশ্ন দিয়েই প্রশ্নের সূচী তৈরি করে রাখা হয়েছে। এই সূচীকে বাড়াতে চাইলে মনুস্মৃতি, দর্শন, ব্রাহ্মণগ্রন্থ আর উপনিষদ আদি গ্রন্থের যেসব প্রমাণ সত্যার্থ প্রকাশ আদি গ্রন্থের মধ্যে ঋষি দয়ানন্দ জী দিয়েছেন, একটি-একটি করে সবগুলোকে বেদের মধ্যে জিজ্ঞেস করুন, সময়ও পূরণ হয়ে যাবে, আপনাকে ডাকা সজ্জনও খুশি হয়ে যাবে যে পণ্ডিত জী অনেক প্রশ্ন করেছেন, ধন্য হোক আপনার বুদ্ধির! আপনি এটা কেন মনে করেন যে, আমরা আর্যরা কেবল বেদকেই প্রমাণরূপ মানি, অন্য কোনো গ্রন্থকে মানি না? এরকম না তো আমরা কখনও বলেছি আর না ঋষি দয়ানন্দ কোথাও লিখেছেন। সত্যার্থ প্রকাশের মুখ পৃষ্ঠাতেই দেখুন সেখানে লেখা আছে যে - "বেদাদি বিবিধ সচ্ছাস্ত্র প্রমাণ সমন্বিতঃ" আর সংস্কার বিধির শুরুতে ঋষির নির্মিত অনেক শ্লোকের মধ্যে এটাও আছে - "বেদাদি শাস্ত্র সিধান্তমাধ্যায় পরমাদরাত্" এটার অভিপ্রায় স্পষ্ট যে, আমরা কেবল বেদকেই নয়, বরং বেদানুকূল সকল সত্য শাস্ত্রগুলোকে মানি; যথা ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ, দর্শন, মনুস্মৃতি, ধর্মসূত্র, গৃহ্যসূত্র, রামায়ণ, মহাভারত আদি।
এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে যদি কোনো ভাগ বেদ বিরুদ্ধ হয়, তাহলে তাকে ছেড়ে বেদানুকূলকে আমরা স্বীকার করি। আপনারও তো দাবি বেদানুকূল মানার। "ইমম্ ত উপস্থম্ মধুনা সম্সৃজামি..." এই মন্ত্রটি আপনার পদ্ধতির মধ্যেও বিদ্যমান আছে, যদি বেদ বিরুদ্ধ মনে করেন তাহলে বের করে ফেলে দেন না কেন? আপনি যদি না জানেন তো জিজ্ঞাসু ভাবে জিজ্ঞেস করুন।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ঠাকুর সাহেব! এইভাবে নিজের কথাকে বেদানুকূল সিদ্ধ করলে তো পাঁচ সময়ের নামাজও সিদ্ধ হয়ে যাবে। আর আমাদের বেদ তো এগারো শো একত্রিশ। আমাদের সব সিদ্ধান্ত আর সব মন্ত্র আমাদের বেদের থেকে বেরিয়ে আসবে। আপনার বেদ তো কেবল চারটি, সেখান থেকে আপনি কি কি বের করতে থাকবেন?
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পাঁচ সময়ের নামাজ বেদানুকূল তো আপনার সম্মুখ সিদ্ধ হবে, যারা বেদকে কখনও পড়ে না। আমরা তো বেদকে পড়ি, যেখানে বলা হয়েছে যে -
উপ ত্বাগ্নে দিবেদিবে দোষাবস্তর্ধিয়া বয়ম্।
নমো ভরন্ত এমসি।। (ঋঃ ১|১|৭)
এই মন্ত্রের মধ্যে স্পষ্ট দুই কালের সন্ধ্যা আছে। পাঁচ সময়ের নামাজ হল এর বিরুদ্ধ। ১১৩১ বেদের গুল আপনি খুব মারেন, আমি বলছি যে ১১০০ ছেড়ে দিন সেটা না হয় মাপ করে দিলাম, আপনি কেবল ৩১টি বেদই বলেদিন যে সেটা কোথায় তথা কোন প্রেসে ছাপা হয় আর কোথায় পাওয়া যাবে? নাকি কেবল গুল মারাকেই ১১৩১ বলে থাকেন, আপনি কি কখনও দেখে-পড়েছেন বা শুনেছেন? আমি নিশ্চিত যে আপনি এর নামও শোনেন নি, আপনার সেই বেদ নষ্ট হয়ে গেছে, তার সঙ্গে-সঙ্গে আপনার সম্প্রদায়ও নষ্ট হয়ে গেছে, আপনাকেও আমাদের চার বেদেরই শরণ নিতে হয়।
এটা খুবই আশ্চর্য যে, আপনি য়জ্ঞোপবীতের সেই মন্ত্রটি বেদের নাকি অন্য কোনোখানের সেটা জানেন না? মহারাজ জী, এই বচনটি না তো চার বেদের আর না ১১৩১ বেদের থেকে, এটা তো পারস্কর গৃহ্য সূত্রের বচন। আর "ইমম্ তে উপস্থ..." ইত্যাদি এই বচন মন্ত্রটি হল ব্রাহ্মণের, আপনি ব্যর্থ এটাকে বেদের মধ্যে জিজ্ঞেস করে সময় নষ্ট করলেন। "ওম্ বাক্ বাক্" আদির আধার আমি বলেই দিয়েছি।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ঠাকুর সাহেব! যদি আপনি এই সবগুলোকে বেদানুকূল মানেন তাহলে বেদ বাক্য দেখান আর স্বামী দয়ানন্দের উচিত ছিল যে সর্বত্র বেদ বাক্যকেই লিখতেন। নিজের আর অন্য গ্রন্থের বাক্য লিখে তাকে বেদানুকূল বলার মানে কি?
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
বাঃ বাঃ! বাঃ! পণ্ডিত জী ধন্য আপনাকে! এখন তো ভগবান্ কৃপা করলে তবেই কল্যাণ হবে। পণ্ডিত জী মহারাজ, আপনি এটা বলুন যে যদি বেদ বাক্যই লিখতেন তাহলে তাকে বেদানুকূল কেন বলতো? সেটা তো বেদ বাক্যই হত, বেদানুকূল কি? বেদানুকূল বলার অভিপ্রায় হল এটাই যে সেটা বেদের বাক্য নয় বেদ বাক্যের আধারে অন্য বেদানুকূল গ্রন্থের বাক্য। মহারাজ জী! একটু ভেবেচিন্তে বলুন। যদি মনুস্মৃতিতে মনু জীর বাক্য না হত, আর তার জায়গায় বেদ বাক্যই হত, তাহলে সেটা কি বেদানুকূল মনুস্মৃতি হত? সেটা তো বেদই হত, আর সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে যদি ঋষির নিজের আর অন্য শাস্ত্রের বাক্য না হত, আর কেবল বেদ বাক্যই হত তাহলে তার নাম সত্যার্থ প্রকাশ হত কি? বেদই হত। বেদের মধ্যে বীজ রূপ মূল বিধান আছে, আর শাস্ত্রের মধ্যে তদনুকূল বিস্তারভাবে বিধি আর ব্যাখ্যা থাকে। সেটা ঋষিদের নিজের বাক্য, বেদানুকূল তো সেটাই যেটা বেদ বাক্য হবে না কিন্তু বেদ হতে অবিরুদ্ধ হবে।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে স্বামী জী শিখর কেটে ফেলার উপদেশ দিয়ে ঈসাইদের প্রচার করেছেন, দেখান শিখর কাটা কোন বেদের মধ্যে লেখা আছে?
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
পণ্ডিত জী মহারাজ! আর্য সমাজ লক্ষ-লক্ষ মুসলমান আর ঈসাইদের শুদ্ধ করে তাদের মাথায় শিখর রেখেছে। লক্ষ নয় বরং কোটি-কোটি হিন্দুদের মুসলমান হওয়ার থেকে বাঁচিয়ে কোটি-কোটি শিখরের রক্ষা করেছে, ঋষি দয়ানন্দ জীর কৃপায় কোটি-কোটি শিখরের রক্ষা হয়েছে। ওনাকে ঈসাইদের প্রচারক বলা আর শিখর কাটার উপদেশ তিনি দিয়েছেন এরকম বলাটা কৃতঘ্নতা হবে আর মিথ্যা দোষারোপণ হবে। কোনো বিশেষ অবস্থাতে শিখর কাটা সেটা অন্য বিষয় হবে। সন্ন্যাসী শিখরও কেটে ফেলে আর য়জ্ঞোপবীতও খুলে ফেলে, তাদের ঈসাই অথবা মুসলমান বলে না।
ফোড়া, ফুন্সি, খাজ বা চেচকের বেশিরভাগে য়জ্ঞোপবীতও খুলে ফেলা হয়। আবার মাথায় ফোড়া আদি হলে শিখরও কেটে ফেলা হয়, এরকমটা করলে কেউ ঈশাই হয়ে যায় না। "কেশান্ত সংস্কার" এর প্রকরণে এইভাবে লেখা আছে যে, শীত প্রধান দেশ তো কামাচার, তারা যতই কেশ রাখুক। অতি উষ্ণ দেশ হলে, সব শিখা সহিত ছেদন করে ফেলা উচিত। সাধারণ উষ্ণ দেশ নয়, অতি উষ্ণ দেশ হলে, এখানে দেশ বিশেষের নির্দেশ আছে। কাল আর পাত্রও দেখা উচিত, এটা দেখা উচিত যে শিখর রাখলে উষ্ণতা অধিক হবে আর বুদ্ধি কম হওয়ার ভয় হলে সব ছেদন করে ফেলা উচিত। সোজা কথা হল, বিশেষ অবস্থা হলে কাটা উচিত, অকারণে নয়, যেমন ফোড়া, ফুন্সি আদি যা উষ্ণতার জন্য হয়ে থাকে, হওয়ার সম্ভাবনা হলে এইরূপ শর্ত আছে, এর জন্য প্রমাণের কি আবশ্যকতা আছে? আর প্রমাণ যদি অবশ্যই দরকার তাহলে নিন আপনার কাত্যায়ন স্মৃতির মধ্যেই লেখা আছে যে -
স শিখম্ বয়নঁ কার্য়মাস্নানাম্ দৃহ্যচারিণা।।১৪।।
(কাত্যায়ন স্মৃতিঃ ২৫|১৪)
অর্থাৎ - শিখা সহিত কেশকে কেটে ফেলা উচিত।
আরও দেখুন নোট করতে থাকুন -
মুণ্ডো বা জটিলো বা স্যাদথবা স্যাচ্ছিখাজটঃ।।
(মনুস্মৃতিঃ ২|১৯৪ {২.২১৯})
এর উপর কুল্লুক ভট্টের টিকা দেখুন - "মুণ্ডিত মস্তক শিরা কেশো জটাবান্বা শিখৈব বা জটা জাতা য়স্য" অর্থাৎ হয় শিখা সহিত কেশ কেটে মুণ্ডিত হয়ে যাও অথবা জটা রেখে দাও, অথবা শিখর রেখে দাও, এসব ব্রহ্মচারীদের জন্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যাতে পড়াশোনাতে কষ্ট না হয়। বেদের মধ্যেও যদি দেখতে চান তাহলে আমি বেদেরও প্রমাণ প্রস্তুত করছি -
কুমারা বিশিখাऽইব ..." (য়জুঃ ১৭|৪৮)
এর উপর উব্বটের ভাষ্য শুনুন - "বিগত শিখা কর্ত্ত মুণ্ডা" অর্থাৎ শিখা সহিত সর্ব মুণ্ডিত, আপনারই আচার্য মহীধরের ভাষ্য দেখুন - "বিশিখা শিখা সহিতা মুণ্ডিত মুণ্ডা" অর্থাৎ শিখা সহিত মাথা কামানো।
Note - কেশান্ত সংস্কার ব্রাহ্মণের বালকের ১৬তম বর্ষে, ক্ষত্রিয়ের বালকের ২২তম বর্ষে আর বৈশ্যের বালকের ২৪তম বর্ষে হয়।
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ঠাকুর সাহেব! আপনি কতদূর ওকালতি করবেন! মহর্ষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যেই লিখেছেন যে প্রসূতি স্ত্রী ছয় দিন দুগ্ধপান করাবে, তার পশ্চাৎ ধাই পান করাবে। এটা সত্যার্থ প্রকাশে বেদ বিরুদ্ধ লেখা আছে। যদি বালক কোনো দাসী আদির দুগ্ধ পান করতো তাহলে তার মাথা কেটে ফেলা হত।
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে এটা কোথাও লেখা নেই যে, প্রসূতা মাতা যদি দুগ্ধ পান করায় তাহলে নরকে যাবে, বা পাপিনী হয়ে যাবে, সেখানে তো লেখা আছে যে - প্রসূতার দুগ্ধ ছয় দিন পর্যন্ত বাচ্চাকে পান করাবে। পশ্চাৎ ধাই পান করাবে কিন্তু ধাইকে উত্তম পদার্থের আহার মাতা-পিতা করাবে। যারা দরিদ্র ধাই রাখতে পারবে না তাহলে তারা গাভী বা ছাগীর দুধের সাথে উত্তম ঔষধি যা বুদ্ধি, পরাক্রম, আরোগ্যকারী হবে, তাকে শুদ্ধ জলে ভিজিয়ে - ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে দুধের মধ্যে সমান জল মিশিয়ে বালককে পান করাবে। আর যেখানে ধাই বা গাভী, ছাগী আদির দুগ্ধ পাওয়া যায় না সেখানে যেমনটা উচিত বলে মনে হবে তেমনটা করবে। প্রসূতা কেন পান করাবে না? এরও কারণ লিখে দিয়েছেন যে -
কারণ, প্রসূতা স্ত্রীর শরীরের অঙ্গ থেকে বালকের শরীর হয়, এইজন্য স্ত্রী প্রসবের সময় নির্বল হয়ে যায়। তাই প্রসূতা স্ত্রী দুগ্ধ পান করাবে না, কত সোজা, সঠিক বুদ্ধিমত্তার কথা। খুবই আশ্চর্যের যে আপনি এর উপরেও আক্ষেপ করছেন। যদি আপনি এটাকে বেদ বিরুদ্ধ বলেন তাহলে বেদ মন্ত্র বলুন, বলুন এই কথাটা বেদের কোন মন্ত্রের বিরুদ্ধে? এর বিরুদ্ধে বেদের কোন মন্ত্রটা আছে? আপনি তিন কালেও বলতে পারবেন না। বেদের কোনো মন্ত্রই এর বিরুদ্ধে নেই। এর দ্বারা এটাও সিদ্ধ হয়ে গেল যে এটা বেদানুকূল অর্থাৎ বেদের অবিরুদ্ধ। যদি প্রমাণই চান তো শুনুন আর নোট করুন-
নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকꣳ
সমীচী। (য়জুঃ ১২|২)
এই মন্ত্রটিতে বলা হয়েছে, যেভাবে দুই ভিন্ন-ভিন্ন রূপী স্ত্রী মাতা আর ধাই একটি বালককে সমান মনে দুগ্ধ পান করায়, সেইভাবে রাত্রি আর ঊষা দিবস রূপী সন্তানকে সুখ রূপ দুগ্ধ পান করিয়ে পালন করে। এখানে ধাইয়ের দুগ্ধ পান করানো স্পষ্ট লেখা আছে। আরও শুনুন আপনার চব্বিশ অবতারের মধ্যে একটি অবতার ধন্বন্তরি জী নিজের শিষ্য সুশ্রুতকে বলেছেন যে, বালককে দুগ্ধ পান করার জন্য ধাই হোক, যার দুগ্ধ আনন্দদায়ক হবে। "ততো য়থা বর্ণ ধাত্রীমুপেয়াত্" পশ্চাৎ সমান বর্ণের ধাই নিযুক্ত করো। এরপর আরও বলেছেন যে - কিরকম ধাইয়ের দুগ্ধ পান করানো যাবে না। দেখুন - সুশ্রুত শারীরিক স্থান অধ্যায় ১০ বচন ৩৮ ও ৩৯ তথা চরক শারীরিক স্থান অধ্যায় ৮ বাক্য ১০৭ ও ১০৮, তথা "অথ ব্রূয়াত্ ধাত্রী মানয়তেতি" অর্থাৎ ধাইকে নিয়ে আসার কথা কেউ বলে। এবম্ সমানবর্ণা য়ৌবনস্থাম্... জীবিদ্বত্সাম্ পুম্-বত্সাম্ দোধ্রীম স্তনস্তন্যপ দুপেতামিতি।। অর্থাৎ সমান বর্ণের যুবতী যার সন্তান জীবিত আছে, আর ছেলে সন্তান আছে, যার স্তনে অনেক দুগ্ধ আছে। আরও শুনুন আপনার পঞ্চম বেদ "গরুড় পুরাণ" এর মধ্যেও বলা হয়েছে -
বিদারীকন্দস্বরসম্ মূলম্, কার্পাসজম্ তথা।
ধাত্রী স্তন্যবিশুধ্যর্থ মুম্গয়ূষো রসাশিনী।।
(গরুড় পুরাণ আচার কাণ্ড অধ্যায় ১৭২ শ্লোক ১৩)
এখানেও বলা হয়েছে যে, বিদারী ফুলের রস, কপাসের মূল তথা মুঙ্গের য়ুষ (শূপ) ধাইয়ের দুগ্ধকে শুদ্ধ করার জন্য রসায়ন। এর সঙ্গেই সত্যার্থ প্রকাশের ন্যায় এটাও লেখা হয়েছে যে, যদি ধাই না পাওয়া যায় তাহলে ছাগী বা গাভীর দুগ্ধ বালক পান করবে। "স্তন্যাভাবে পয়শ্ছাগ গব্যম্ বাতদ্গুণম্ পিবেত্।।১৫।। বলুন এই পুরাণ বেদানুকূল, তথা মহর্ষি ব্যাস জী রচিত? সেখানে সেটাই আছে যা সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে আছে, বাল্মীকি রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্র জীর ধাইয়ের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। বলুন, ইতিহাসে ধাইয়ের দুগ্ধ পান করার জন্য কয়টা শিশুর মাথা কাটা হয়েছে? চিত্তৌড়ের মহারাণাসাঙ্গা (সংগ্রাম সিংহ) জীর পুত্র উদয় সিংহের জন্যও একটি ধাই ছিল, যা সারা ইতিহাসে "পন্না ধাই" নামে প্রসিদ্ধ।

🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
ঠাকুর সাহেব! স্বামী দয়ানন্দ জী সংস্কার বিধির মধ্যে লিখেছেন যে, গর্ভাধানের সময় স্ত্রী ও পুরুষ নাকের সামনে নাক আর মুখের সামনে মুখ করবে। আর প্রসূতা (জচ্চা) য়োনি সঙ্কোচ করবে। এটা স্বামী জী কিভাবে লিখেছেন? এটা বেদ বিরুদ্ধ।
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
এরমধ্যে আপনার কি শঙ্কা? এটাই হল উচিত বিধি। আপনি কি পিঠের পিছনে মুখ করতে পছন্দ করেন? (জনতায় হাঁসি...) এই বিষয়ে স্বামী জী সব গ্রন্থের মধ্যে এরকমই লেখা দেখেছেন আর বুদ্ধির অনুকূল দেখে আবশ্যকতানুসারে লিখে দেন, তাছাড়া প্রত্যেক বুদ্ধিমান আর ভালো ব্যক্তিও এই বিধিটাকেই পছন্দ করবে। এরজন্য প্রমাণের আবশ্যকতা হবে না, তবুও আমি মিথ্যাকে তার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেই। নিন প্রমাণ শুনুন -
ন চ ন্যুব্জাম্ পার্শ্বগতা বা সম্সেবেত। ন্যুব্জায়া বাতো
বলবান্ স য়োনি পীডয়তি, পার্শ্বগতায়া দক্ষিণে
পার্শ্বে শ্লেষ্মা সম্চ্যুতোऽপিদধাতি গর্ভাশয়ম্,
বামে পিত্তম্ পার্শ্বে। তস্যাঃ পীডিতম্ বিদহতি রক্ত
শুক্রম্। তস্মাদুত্তানা সতী বীজম্ গ্রহ্ণীয়াত্।
তস্যা হি য়থাস্থানমবতিষ্ঠন্তে দোষাঃ।
পর্য়াপ্তে চৈনাম্ শীতোদকেন পরিষিঞ্চেত্।।৭।।
(চরক শারীরিক স্থান অধ্যায় ৮ বাক্য ৭)
অর্থাৎ - স্ত্রী উল্টো হয়ে বা বামপাশ বা ডানপাশ ঘুরে সহবাস করবে না, কারণ উল্টো হওয়াতে বলবান বায়ু য়োনিকে পীড়িত করে। ডানপাশ ঘুরে শুয়ে গর্ভাধান করলে কফ পরে গর্ভাশয়কে আচ্ছাদিত করে দেয়। আর বামপাশ ঘুরে সহবাস করলে পীড়িত হওয়া "চিত্ত" রজ আর বীর্যকে দূষিত করে দেয়। এইজন্য সোজা উদান (চিত্ত) শুয়ে স্ত্রী পুরুষের বীর্যকে গ্রহণ করবে আদি। গর্ভাধান পাপ কর্ম নয়। এটা পরম পবিত্র আর পুণ্য কর্ম তথা যজ্ঞ, পাপীদের দৃষ্টিতে এর বর্ণনা অশ্লীল আর অপবিত্র, কিন্তু শুদ্ধ অন্তঃকরণ ঋষিদের দৃষ্টিতে এটা আবশ্যক বর্ণনীয় বিষয়। এইজন্য ঋষিরা এটার নিঃসঙ্কোচ বর্ণনা করেছেন। শুনুন -
অথ য়ামিচ্ছেদ্দধীতেতি তস্যামর্থম্ নিষ্ঠায় মুখেন মুখম্
সন্ধায়াপান্যাভিপ্রাণ্যাদিন্দ্রিয়েণ তে রেতসা রেত
আদধামীতি গর্ভিণ্যেব ভবতি।।১১।।
(বৃহদারণ্যক উপ০ ৬|৪|১১)
অর্থাৎ - এরপর সেই পুরুষ যেই স্ত্রীকে চাইবে যে সে গর্ভ ধারণ করুক, তো সেই স্ত্রীর য়োনিতে নিজের প্রজনন ইন্দ্রিয়কে রেখে মুখের সঙ্গে মুখ মিলিয়ে প্রবেশ করে উদ্দীপন করবে। আর এরকম বলবে যে বীর্য দানবান নিজের ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তোমার গর্ভাশয়ে বীর্য স্থাপিত্ করছি। তখন সেই স্ত্রী অবশ্যই গর্ভবতী হবে।
বলুন পণ্ডিত জী মহারাজ! এখন এর থেকে স্পষ্ট আর কি প্রমাণ চাইবেন? আপনার জিজ্ঞাসা হল - কেন লিখেছেন? এইজন্য লিখেছেন যে কামী পুরুষ কাম বাসনার বশে অনেক প্রকারের কুচেষ্টা আর মৈথুনে কুৎসিত আচার করে থাকে। ধর্মাত্মা পুরুষ গর্ভাধানের সময় এটা ধ্যানে রাখবেন যে, আমরা কাম বাসনা পূর্ণ করার জন্য সহবাস করি না। বরং আমাদের উদ্দেশ্য হল উত্তম সন্তানের জন্ম দেওয়া। যদি এর বিপরীত করেন তবে কুরূপ, খাটো, রোগী আদি উৎপন্ন হবে। আপনি ভুলে গেছেন যে আপনাদের একটি অবতার ব্যাস জী আম্বিকার সঙ্গে নিয়োগ করার জন্য সমাগম করে আর সে ভয়ে ব্যাস জীর সঙ্গে চোখ মেলাতে পারেনি, এইজন্য অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র জন্ম নেয়।
সুতরাং চোখের সামনে চোখ হওয়াই উচিত, আপনার পুরাণের মধ্যে অনেকগুলো উল্টো-পাল্টা গর্ভাধান আছে, দেখুন তথা নোট করুন - (১) সূর্য সঞ্জার নাকে গর্ভাধান করে দেয় তাই দুটি অশ্বিনী কুমার উৎপন্ন হয়। (২) শিব জী অগ্নির মুখে গর্ভাধান করে দেয়। (৩) অঞ্জনার কানে গর্ভাধান হয়ে যায়। (৪) যুবনাশ্ব রাজার (পুরুষের) গর্ভাধান হয়ে যায়।
গর্ভাধান কিভাবে আর কোথা থেকে হল - এটা পণ্ডিত জী আপনি জানেন আর আপনার ধর্মশাস্ত্র! এইজন্য ঋষি বিধি লিখে দিয়েছেন যাতে কেউ এরকম-এরকম ভুল গর্ভাধান যেন না করে, আপনার অবতার ধন্বন্তরি সুশ্রুতের মধ্যে বলেছেন যে, সন্তানের নপুংসক (হিজড়া অথবা হিজড়ি) উৎপন্ন হওয়ার কারণ হল বিপরীত পদ্ধতিতে গর্ভাধান করা। অথবা স্ত্রীর ন্যায় পুরুষ বা পুরুষের ন্যায় স্ত্রী ক্রিয়া করে সম্ভোগ করলে সন্তান হিজড়া বা হিজড়ি উৎপন্ন হয়। হ্যাঁ, এখন প্রসূতার য়োনি সঙ্কোচ বাকি আছে সেটাও শুনে নিন, প্রসূতা স্ত্রীর জন্য সারা সংসারে অনেক প্রকারের চিকিৎসা করা হয়, যাতে সন্তান উৎপন্ন হওয়াতে বিকৃত য়োনি ঠিক হয়ে যায়। ঘরে-ঘরে সব স্ত্রী নরম বস্ত্র বা তুলো আদিতে ওষুধ দিয়ে ভিজিয়ে য়োনিতে রাখে। ডাক্তারেরা প্রসূতাকে ওষুধের ভিতর বসিয়ে রাখে। কিন্তু আপনার প্রয়োজনটা কি? আপনি তো যেমন তেমনভাবে আর্য সমাজের হাসি উড়াতে চান, সেটা অর্থই হোক বা অনর্থ, তাই বিভিন্নভাবে কুচেষ্টা করে নিজের ভক্তদের প্রসন্ন করার প্রচেষ্টা করেন।
আপনি য়োনি সঙ্কোচনের বিধি বেদের মধ্যে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি আপনার ঘরের ভিতর থেকেই দেখিয়ে দিচ্ছি, দেখুন আপনার পঞ্চম বেদ পুরাণ কি বলছে -
শম্খ পুষ্পী, জটামাসী, সৌমরাজীচ ফল্গুকম্।
মাহিষম্ নবনীতম্ চ গুরো কারণ মুত্তমম্।।৬।।
সনাতনী চ পক্ষাণি ক্ষীরেণাজ্যেন পেষয়েত্।।৭।।
গুটিকাঁ শোধিতাম্ কৃত্বা স্ত্রী য়োন্যাম্ প্রবেশয়েত্।
দশবার প্রসূতাপি পুনঃ কন্যা ভবিষ্যতি।।৮।।
(গরুড় পুরাণ, আচার কাণ্ড, অধ্যায় ১৮, শ্লোক ৬,৭,৮)
বলুন কতই না সুন্দর বিধি! আর বিনা ফী-তে বলছি, পণ্ডিত জী মহারাজ!
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
মৃত পতির দেহ পড়ে আছে, আর তার পাশে বসে থাকা স্ত্রীর জন্য স্বামী জী সত্যার্থ প্রকাশে লিখেছেন যে - " হে স্ত্রী! তুমি মৃতের পাশ থেকে উঠো আর এর আশ্রয় ছেড়ে এই দাঁড়িয়ে থাকা হাট্টা-কাট্টা ব্যক্তিদের মধ্যে কাউকে বেছে নাও। আর তাকে দিয়ে সন্তান উৎপন্ন করো, সেই মৃত শরীর দিয়ে কিছুই হবে", বলুন ঠাকুর সাহেব! বলুন, এটা কোন বেদ আর কোথায় লেখা আছে?
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
মিথ্যা! মিথ্যা! ডাহা মিথ্যা কথা!!! সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে কোথাও লেখা নেই যে মৃত পতির দেহ পড়ে আছে, আর তার পাশে বসে থাকা স্ত্রীকে কেউ নিয়োগের জন্য বলছে। মিথ্যার উপর আরও মিথ্যা হল - "এই দাঁড়িয়ে থাকা হাট্টা-কাট্টা ব্যক্তিদের মধ্যে কাউকে বেছে নাও" - এটা কি সত্যার্থ প্রকাশে লেখা আছে? পণ্ডিত জী মহারাজ! বলতেও কোনো লজ্জা আসেনি! কিন্তু লজ্জা কার আসবে আর কোথা থেকেই বা আসবে! সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে সেই মন্ত্রটি দেওয়া আছে, যা এইরকম -
উদীর্ষ্ব নার্য়ভি জীবলোকম্ গতাসুমেতমুপ শেষ এহি।
হস্তগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদম্ পত্যুর্জনিত্বমভি সম্ বভূথ।
(ঋঃ ১০|১৮|৮)
এই মন্ত্রটির অর্থ সেখানে লেখা আছে, "হে বিধতে! তুমি এই মৃত পতির আশা পরিত্যাগ করে অবশিষ্ঠ পুরুষের মধ্যে জীবিত দ্বিতীয় পতিকে প্রাপ্ত হও" বলুন, এরমধ্যে মৃত পতির দেহ কোথায় পড়ে আছে? আর হাট্টা-কাট্টা ব্যক্তি কোথায়? আমি জিজ্ঞেস করছি যে আপনার প্রশ্ন নিয়োগকে অনুচিত আর পাপ মনে করে নাকি মৃতদেহ পড়ে থাকায় নিয়োগের আজ্ঞাকে অনুচিত মনে করে? নাকি হাট্টা - কাট্টার ভয়ে? যদি হাট্টা-কাট্টার ভয়ে হয় তবে নিশ্চিন্ত থাকুন, এমন কিছু হচ্ছে না। আপনি কালুরাম জী আদির কাছ থেকে শুনে বলার চেয়ে স্বয়ং নিজেই সত্যার্থ প্রকাশ পড়ার চেষ্টা করুন, আর সেখানে হাট্টা-কাট্টার নাম পর্যন্ত নেই। তাছাড়া আমি জানতে চাই, পণ্ডিত জী মহারাজ! আপনার ইচ্ছা দুর্বল এবং নপুংসকদের সঙ্গে নিয়োগ করানোর নয় তো? বিবাহ হাট্টা-কাট্টা আর স্বাস্থ্য পুরুষদেরই হয়, দুর্বল বা হিজড়াদের হয় না। যদি নিয়োগ মাত্রকে আপনি পাপ মনে করে আপনি প্রশ্ন করেন তাহলে এটা আপনার ভুল হবে। প্রথম তো এই মন্ত্রের মধ্যে "দিধিষু" শব্দটিকে দেখুন! আর আপনার অমরকোষকে পড়ুন, যেখানে দিধিষু বিধবার দ্বিতীয় পতির নাম বলা হয়েছে। আবশ্যকতা আর সময় হলে অন্য মন্ত্রও দেওয়া যেতে পারে। মনুস্মৃতি আর অন্য স্মৃতিগুলোতেও নিয়োগের স্পষ্ট আজ্ঞা আছে। আর মহাভারত আদি পর্বে অনেক নিয়োগ লেখা আছে। ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু আর বিদুর নিয়োগ দ্বারাই জন্ম হয়। বিচিত্র বীর্যের বিধবা স্ত্রী অম্বিকা আর অম্বালিকার সঙ্গে মহর্ষি ব্যাস নিয়োগ করেন। পাঁচ পাণ্ডব নিয়োগ দ্বারা জন্মেছে। বাল্মিকী রামায়ণে হনুমান জী নিয়োগ দ্বারা জন্মেছেন। নিয়োগের নিষেধ আপনি কিভাবে করবেন?
যদি মৃতদেহ সেখানে পড়ে থাকলে নিয়োগের আজ্ঞা আপনার অনুচিত বলে মনে হয় তবে সেখানে মৃতদেহের কোনো উল্লেখ নেই। যদি "এই" শব্দটি আসাতে আপনি ভ্রমে পড়েছেন বা লোকেদের ভ্রমে ফেলতে চান, তাহলে এটা আপনার বড়ো ভুল হবে। "এই" শব্দ তো প্রত্যেক উপস্থিত বিষয়ের নামাদির জন্য ব্যবহার হতে পারে। তা সেই বিষয় বা নাম যতই পুরোনো হোক না কেন, যখন তার প্রসঙ্গ চলছে, তখন তার জন্য "এই" শব্দের প্রয়োগ সর্বদাই উচিত হবে। প্রসিদ্ধ সিদ্ধান্ত হয় -
"বর্তমানসমীপে বর্তমানবদ্ বা" অর্থাৎ বর্তমানের সমীপের সময়কে বর্তমানের মতোই বলা যেতে পারে। তাছাড়া খুবই দুঃখ আর আশ্চর্য লাগছে যে মন্ত্রের উপর আপনি ধ্যানই দেন নি। কি বলা যেতে পারে যে, আপনার মন্ত্রার্থের জ্ঞান নেই নাকি জেনে বুঝে ঠকাচ্ছেন? মন্ত্রের মধ্যে স্পষ্ট আছে যে "এতম্" এর অর্থ একে "গতাসুম্" এর অর্থ "মৃতকে"। জিজ্ঞেস করুন কোনো বিদ্বানকে এটাই অর্থ নাকি অন্য? "লড়তে চলেছে অথচ হাতে অস্ত্র নেই" শাস্ত্রার্থ করার যখন এতই ইচ্ছা তো পণ্ডিত জী মহারাজ কিছু পড়ুন, কেন এই বেচারা সনাতনী ধর্মীদের মাটি নষ্ট করছেন। যখন "এতম্" এর অর্থই হল একে তাহলে আপনি মহর্ষি দয়ানন্দের উপর গিয়ে কেন পড়লেন? যদি মহারাজ জী আপনি এটা নিয়েই সায়ণাচার্য জীর ভাষ্য দেখে নিতেন তাহলে এরকম প্রশ্ন করার সাহসই হত না। দেখুন এই মন্ত্রই তৈত্তিরীয় আরণ্যকের মধ্যে আছে, আর সেখানে আচার্য সায়ণ জীর ভাষ্য এই রকম -
"হে (নারি) ত্বম্ (গতাসুম্) গতপ্রাণম্ (এতম্) পতিম্ (উপশেষঃ) উপত্য শয়নম্ করোষি (উদীর্ষ্ব) অস্মাত্ পতি সমীপাত্ উত্তিষ্ঠ। (জীবলোকমভি) জীবিত প্রাণিসমূহমভিলক্ষ্য (এহি) আগচ্ছ ত্বম্ (হস্তগ্রাভস্য) য়াণি গ্রাহবতঃ (অভি সম্বভূথ) অভিমুখ্যেন সম্যক্ প্রপ্নুহি।।
এর ভাবার্থ হল - হে স্ত্রী তুমি এই মৃত পতির সাথে শুয়ে আছো। এই পতির পাশ থেকে উঠো, আর জীবিত পুরুষের সমূহের মধ্যে ভালো করে দেখো! হাত ধরবে আর পুনর্বিবাহ করতে ইচ্ছুক এরকম পতির পতিত্বকে সুন্দরভাবে প্রাপ্ত করো অর্থাৎ বিধবার সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ করতে যে পুরুষ ইচ্ছুক, তুমি তার স্ত্রী হয়ে যাও। বলুন, স্বামী দয়ানন্দ জীর অর্থে তো উপহাস করেন আর নিয়োগের উপর প্রশ্ন তোলেন, এখন কিছু লজ্জা আসবে নাকি আসবে না?
🔵 শ্রী পণ্ডিত মাধবাচার্য জী শাস্ত্রী -
সজ্জনগণ! সত্যার্থ প্রকাশ আমার কাছে নিয়ে আসবেন, আমি কালকে চিহ্ন লাগিয়ে দিবো তারপর আপনারা আর্য সমাজীদের কাছে প্রশ্ন করবেন।
শাস্ত্রার্থের মাঝখানেই ... দাঁড়িয়ে ঠাকুর অমর সিংহ জী বললেন -
🟠 শ্রী ঠাকুর অমরসিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -
ভাইগণ! আপনারা সেই চিহ্ন লাগানো আমার কাছে নিয়ে আসবেন, আমি সব প্রশ্নগুলোর ছাতু করে ফেলবো আর পুরাণের উপর শত-শত এমন-এমন প্রশ্ন লিখে দিবো তথা শিখিয়ে দিবো যার উত্তর সারা বিশ্বের কোনো পৌরাণিকই দিতে পারবে না। মাধবাচার্য জীর সংখ্যাই বা কত হবে? আপনারা শান্ত হয়ে যান। আজকের শাস্ত্রার্থ এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে। কালকে আবার শাস্ত্রার্থ হবে যার বিষয় হবে - "মূর্তি পূজা কি বেদানুকূল?" যদি খেলা দেখতে চান তো কাল দেখবেন, আমি পণ্ডিত জী মহারাজকে কিভাবে নাচাবো। এখন শান্তি পাঠ করুন - ও৩ম্ দ্যৌ শান্তি, অন্তরিক্ষম্ শান্তি ...
শাস্ত্রার্থ সমাপ্ত হতেই শান্তি পাঠের পরে অনেক বড়ো ভিড়কে ভেদ করে শ্রী প্রফেসর কিশোরী লাল জী এম০ এ০ কাব্যতীর্থ জী এসে শ্রী পণ্ডিত অমর সিংহ জীকে গলায় জড়িয়ে ধরেন আর বলতে থাকেন, "আপনার বিদ্যা অপার, পরমাত্মার কৃপায় আপনি যেন শত বর্ষের অধিক বাঁচেন। আমার প্রার্থনা আছে ঠাকুর সাহেব! এই বিদ্যা আপনি নিয়ে যাবেন না, অন্যদেরও দিয়ে যাবেন, এই বিদ্যা কেবল আপনার পর্যন্তই যেন সীমিত না থাকে।" অপর দিকে পণ্ডিত মাধবাচার্য জী তার ভক্ত মণ্ডলীকে সঙ্গে নিয়ে চুপচাপ চলে যান।
(সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ