বিষ্ণুর শেষ শয্যা - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 October, 2022

বিষ্ণুর শেষ শয্যা

বিষ্ণুর শেষ শয্যা
ক্ষীরোদসমুদ্রে অনন্তনাগের উপর বিষ্ণুর শয়ন

"রাগবিরাগযার্য্যোগঃ সৃষ্টি" অর্থাৎ ঈশ্বরীয় শক্তির দ্বারা গতিমান প্রাকৃতি পদার্থের পরস্পর রাগ (আকর্ষণ) এবং বিরাগ (বিকর্ষণ) দ্বারা সৃষ্টি রচনা চলতে থাকে। প্রকৃতির রহস্যগুলি সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করার জন্য, ভারতীয় পণ্ডিতরা অলঙ্কার এবং রূপকের সাহায্য নিয়ে পৌরাণিক চিত্রকর্ম তৈরি করেছেন। আর পৌরাণিক মূর্খ ফন্ডিতেরা সেই সকল অলঙ্কারীক রূপক চিত্র ও গল্প কে ঈশ্বর ভেবে কিংবা নিজ নিজ স্বার্থে সাধারন ভোলেভালে জনতার মধ্যে মূর্ত্তিপূজার বিষ সঞ্চার করে দিয়েছেন। 

ক্ষীরসাগরে বিশ্রাম-শয্যায় শুয়ে থাকা ভগবান বিষ্ণুর নাভি-পদ্মের ছবি আসলে সৃষ্টিরই স্তরগুলো খুলে দেওয়ার প্রয়াস করা হয়েছে। বেদে অন্তরিক্ষকে'সমুদ্র' তাথা যোগসূত্রে অভ্যন্তরীণ শক্তির সুপ্ত অবস্থাকে 'কুণ্ডলিনী' (একটি সাপের জড়বত বসে থাকার মূদ্রা) বলা হয়েছে। এই অভিব্যক্তিগুলি ছবিতে, অন্তরিক্ষকে সমুদ্র রূপে দেখানো হয়েছে, প্রকৃতির সুসুপ্তাবস্থাকে শেষনাগের কুন্ডলিনী রুপে এবং ভগবান বিষ্ণুকে শেষ-শয্যায় (প্রকৃতি) নিদ্রালু অবস্থায় দেখানো হয়েছে প্রকৃতির নিয়ন্ত্রকের নিশ্চেষ্ট অবস্থা দেখানোর হয়েছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তির ভাব দেখানোর জন্য, গর্ভবতী বিষ্ণুর নাভি থেকে উদ্ভূত দীপ্তিকে প্রতীকী করে পদ্মের কড়ি দ্বারা নাড়ীর কল্পনাকে সাকার করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এই নাড়ীর ওপর প্রস্ফুটিত পঞ্চকমলদলের মাধ্যমে পাঁচটি তন্মাত্র শক্তি,পদ্মের সহস্র তন্তু থেকে গতিমান পরিমণ্ডলীয় কণা, পদ্মের কেন্দ্রের হলুদ বৃত্তাকার অংশ থেকে নীহারিকা (নেবুলা) তথা চারমুখ যুক্ত জাতক ব্রহ্মা দ্বারা চতুর্দিক্ রচণা হওয়ার পরিকল্পনাকে চিত্রিত আকারে বোঝানোর প্রয়াস করা হয়েছে।

পরবর্ত্তী রচনাতে সহযোগী কল্যাণকারী জাগতিক পদার্থের (অষ্টপা) ভাবের রূপে ব্রহ্মার হাতে থাকা কমন্ডল, চর-অচর জগতের রচনাক্রম কে চিত্রিত করতে ওনার হাতে মালা তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তার স্বরূপ পুস্তুক চিত্রিত করা হয়েছে। প্রসব-সময় (ব্রহ্মাণ্ড-উৎপত্তির স্থিতি/অবস্থা) দেখানোর হেতু প্রসূতি সহায়তায় উপস্থিত ধাত্রীদের প্রতীক হিসেবে দেবতাদের চিত্রিত করা হয়েছে এবং প্রসব-পরবর্তী পরিশ্রমের / পীড়া দমন হেতু লক্ষ্মী গর্ভবতী বিষ্ণুর পা টিপে দিচ্ছেন এরূপ চিত্র দেখানো হয়েছে। কমলবত ব্রহ্মার এই ভারতীয় পরিকল্পনা অনুসারে, মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং গ্রিসের প্রাচীন সভ্যতায়, মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে সমুদ্র থেকে উদিত পদ্মের উপর বসে থাকা শিশুর মতো গ্রহণ করা হয়েছে (Arum, God of Sun and father of all other gods, appeared out of primeval watery abyss, as a child sitting in a lotus bud, and given birth to the gods and goddesses and performed his act as creator-Ency. Brit, Vol. VI)।

বস্তুতঃ আকাশের ন্যায় ব্যাপক বলে এবং সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ বলে ব্রহ্ম ঈশ্বরের নাম (যজু০ ৪০।১৭)। সমগ্র বেদাদি শাস্ত্রে ঈশ্বরকে নিরাকার বলা হয়েছে। সর্ব্ব জগতের স্রষ্টা বলে তাঁকেই "ব্রহ্মা" বলা হয়েছে,আবার সর্ব্বব্যাপক বলেই তো পরমাত্মাকে "বিষ্ণু" বলা হয়েছে। ইতিহাস তথা পুরাণে ব্রহ্মা, বিষ্ণু নামক বিদ্বান পুরুষের উল্লেখ পাওয়া যায়, পৌরানিক ব্যক্তি যাদের ঈশ্বর বানিয়ে দিয়েছেন, কল্পিত চিত্রের আকারে যা অলঙ্কারীক, উপমালঙ্কারীক শব্দ থেকে নেওয়া। (বিশ ব্যাপ্তৌ) এই ধাতু হতে "নু" প্রত্যয় করে বিষ্ণু শব্দ সিদ্ধ হয়। পরমেশ্বর চর এবং অচর (স্থাবর ও জঙ্গম) জগতে ব্যাপ্ত হয়ে থাকায় পরমাত্মার নাম বিষ্ণু, ইনি কোন ভিন্ন চরিত্রের নন, না লক্ষ্মী কোন ভিন্ন চরিত্র, না তো নারায়ণ। নারা অর্থাৎ জল ও জীব যাঁর নিবাস্থান সেই সর্ব্বজীবব্যাপক পরমাত্মার নাম "নারায়ণ"(মনু০ ১।১০)। (লক্ষ দর্শনাঙ্কনয়োঃ) এই ধাতু থেকে "লক্ষ্মী" শব্দ সিদ্ধ হয়। যিনি চরাআচর জগতের দ্রষ্টা এবং জগৎকে চিহ্নিত অর্থাৎ দৃষ্টির উপযোগি করেন, যিনি শরীরস্থ চোখ,নাক,ইত্যাদি, ফল,মূল,পৃথিবী, চন্দ্রসূর্য্যাদি চিহ্ন করেন; যিনি স্বয়ং সকল শোভার শ্রেষ্ঠ শোভা, যিনি বেদাদি শাস্ত্রের এবং ধার্মিক বিদ্বান যোগীদের লক্ষ সেই পরমেশ্বরের নাম লক্ষ্মী।

(অগ্নি) সর্বেষাং দেবানামাত্মা (শ০ ১৪।৩।২।৫), অগ্নির্বে দেবতানাং মুখম্ (শ০ ৩।৬।১।৬), অগ্নির্বৈ দেবয়োনিঃ (ঐ০ ১।২২), অগ্নিরু দেবানাং প্রাণঃ (১০।১।৪।১২), যজ্ঞ বৈ বিষ্ণুঃ(শ০ ১।৬।৩।৬)।

ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১।১।৪ "অগ্নিয়ে সর্বা দেবতা বিষ্ণুঃ সর্বা দেবতাঃ"_অর্থাৎ এই সৃষ্টির সমস্ত দৃশ্যমান এবং আকর্ষণাদি বলে সমপন্ন কণা বা তরঙ্গ বিদ্যমান ঐ সমস্তের ভেতর বিদ্যূতরূপ অগ্নি অবশ্য বিদ্যমান। এই বিদ্যুৎই সেই সমস্ত জিনিসকে সচল ও জীবন্ত রাখে। এই বিদ্যুৎই সমস্ত পদার্থের উৎস এবং এর কারণেই বিভিন্ন ধরনের কণা একে অপরকে ভক্ষণ করে। এই বিদ্যুদগ্নি সকল পদার্থের আত্মা, অর্থাৎ এই বিদ্যুদগ্নি সব কিছুর মধ্যেই সর্বদা চলমান বা পরিব্যাপ্ত। তাই মহর্ষি বলেছেন "অগ্নিয়ে সর্বা দেবতাঃ" যার তাৎপর্য হল সমস্ত দেবতা বিদ্যুতে বিরাজমান কারণ সমস্ত পদার্থ বিদ্যুৎময় হয়। এদিকে, বিষ্ণু একটি নক্ষত্রের রূপে, যিনি তাঁর মোহনীয়তা (আকর্ষণ) এবং তেজ (দীপ্তি) দ্বারা সকলকে পরিব্যাপ্ত করেন, বিশেষ করে তাঁর কেন্দ্রীয় ভাগ, সমস্ত দেব পদার্থের মহান সঙ্গম স্থান। এই নক্ষত্রগুলির মধ্যে, বিভিন্ন ধরণের পদার্থের অণু এবং বিভিন্ন ধরণের তরঙ্গ সর্বদা তৈরি হয়। এই কারনে বিষ্ণুকে সকল দেবতার আদি ও বাসস্থান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই হলো বেদ ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থের বিষ্ণু। এখানে দেবতা পদে বিভিন্ন প্রাণ রশ্মি গ্রহণ করা উচিত।

আমরা জানি সৃষ্ট পদার্থ অর্থাৎ প্রকৃতিজাত পদার্থকে ঈশ্বরবুদ্ধিতে উপাসনা করতে বেদ মন্ত্রে [যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০ মন্ত্র সংখ্যা ৯] নিষেধ করা হয়েছে (অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহসম্ভূতিমুপাসতে। ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাং রতাঃ)। শ্বেত০ উ০ ৪।১৯ সেখানে কোনো জড় মূর্তি ঈশ্বরের চিহ্ন বা অনুমানের উপায়ভূত হেতু হতে পারে না বলা হয়েছে। যজু০ ৩২।৩ মন্ত্রে ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই অর্থাৎ তাঁর প্রতিমা হতেই পারে না বলা হয়েছে [ন তস্য প্রতিমা অস্তি]।

আবার যজুর্বেদ ৪০।৮ নম্বর মন্ত্রে শব্দ এসেছে  "স পর্য়গাত্"- সেই ঈশ্বর সর্বত্র ব্যাপক। "অকায়ম্"- সেই ঈশ্বর স্থূল, সূক্ষ্ম তথা কারণ শরীর হতে রহিত। "অব্রণম্"- সেই পরমাত্মা অচ্ছেদ্য, অবিকারী সত্তা। "অস্নাবিরম্"- সেই পরমাত্মা জীবাত্মার মতো নস-নাড়ির বন্ধনে কখনও আসে না। "শুদ্ধম্"- অবিদ্যা আদি দোষে গ্রস্থ না হওয়ার কারণে সর্বদা পবিত্র। "মনীষী"- তিনি সমস্ত জীবের মনোবৃত্তিকেও জানেন। "স্বয়ম্ভূ"- তাঁর কোনো কারণ নেই, যা অনাদি স্বরূপ অর্থাৎ সেই ঈশ্বর জন্ম-মরণ তথা বৃদ্ধি-ক্ষয় হতে রহিত, ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিচার করে মহর্ষি ব্যাসজী য়োগ ভাষ্যতে ঈশ্বরকে "সদৈব মক্তঃ" বলেছেন। 

"স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়মব্রণমস্নাবিরꣳ শুদ্ধমাপাপবিদ্ধম্ । 

কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথাতথ্যতোহऽর্থান্ ব্যদধাচ্ছাশ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ।।"যজু০ ৪০।৮

অনেক পৌরাণিক আপেক্ষকারী বেদ ও উপনিষদের অলঙ্কারীক, উপমালঙ্কার থেকে ঈশ্বর সাকার প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন তাঁরা শ্বেত০ উ০ ৩।১৯ নম্বর শ্লোকের মহাত্মা নারায়ণ স্বামীকৃত অর্থ পড়ে দেখুন______

অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ। 

স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যান্তি বেত্তা তমাহুরগ্র্যং পুরুষম্ মহাস্তম্। শ্বেতা-৩/১৯

পদার্থ-[ পরমেশ্বরের ]  ( অপাণিপাদঃ) হাত-পা নেই [ পরন্তু ] ( গ্রহীতা) নিজ শক্তিস্বরূপ হাত দ্বারা সকলের গ্রহণ কর্তা [ এবং ] ( জবনঃ) সর্বব্যাপক হওয়ায় সব থেকে অধিক বেগবান্ গতিশীল,( অচক্ষুঃ) চোখের গোলক নেই [ পরন্তু ] ( পশ্যতি) সকলকে যথাযথ দেখেন,( অকর্ণঃ) কান নেই [ পরন্তু ] ( শুণোতি) [ সবই বলেন ] শোনেন,[  অন্তঃকরণ নেই পরন্তু ] ( সঃ) সেই  ( বিশ্বম্) সমস্ত জগৎকে ( বেত্তি) জানেন ( চ) এবং ( তস্য) তাঁর ( বেত্তা) [ অবিধিসহিত ] জ্ঞাতা কেউ নেই। ( তম্) তাঁকে ( অগ্রয়ম্) সব থেকে শ্রেষ্ঠ,( মহান্তম্) সব থেকে মহান্ ( পুরুষম্) [ সব থেকে পূর্ণ হওয়ায় ] পুরুষ ( আহুঃ) বলা হয়।।

সররার্থ-পরমেশ্বরের  হাত-পা নেই পরন্তু নিজ শক্তিরূপ হাত দ্বারা সকলের গ্রহণ কর্তা  এবং সর্বব্যাপক হওয়ায় সব থেকে অধিক বেগবান্ গতিশীল,চোখের গোলক নেই পরন্তু সকলকে যথাযথ দেখেন, কান নেই পরন্তু  সবই বলেন শোনেন,অন্তঃকরণ নেই পরন্তু সেই  সমস্ত জগৎকে  জানেন এবং তাঁর অবিধিসহিত  জ্ঞাতা কেউ নেই। তাঁকে  সব থেকে শ্রেষ্ঠ, সব থেকে মহান্ সব থেকে পূর্ণ হওয়ায় পুরুষ  বলা হয়।। 

ও৩ম্ শম্

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ