আর্যভট্ট - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

14 October, 2022

আর্যভট্ট

আর্যভট্ট – জীবন ও রচনা

প্রাচীন ভারতের প্রথম খ্যাতিমান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্যভট্ট। ৪৭৬ সাধারণাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। আর্যভট্ট কুসুমপুর অর্থাৎ বর্তমান পাটনা শহরে অবস্থানকালে তাঁর গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গ্রন্থগুলি রচনা করেছিলেন বলে মনে করা হয়। তাঁর রচিত ‘আর্যভটীয়’ গ্রন্থ ছাড়া অন্য কোনও গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ‘আর্যভটসিদ্ধান্ত’ নামে তাঁর আর একটি গ্রন্থের উল্লেখ পরবর্তী লেখকদের রচনায় পাওয়া গেলেও গ্রন্থটির এখনও পর্যন্ত কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
‘আর্যভটীয়’ গ্রন্থের আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য থেকে ৪৯৯ সাধারণাব্দে আর্যভট এই গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। সংস্কৃত ভাষায় রচিত ১২১টি স্তবকে সম্পূর্ণ এই গ্রন্থটি চারটি পাদে বিভক্ত – গীতিকাপাদ, গণিতপাদ, কালক্রিয়াপাদ এবং গোলপাদ। এই গ্রন্থের কিছু অংশের লিখনরীতি প্রায় সূত্রসাহিত্যের মতো। গীতিকা ছন্দে লেখা গীতিকাপাদের দ্বিতীয় থেকে দ্বাদশ স্তবক দশগীতিকাসূত্র নামে পরিচিত। আর্যা ছন্দে রচিত গণিতপাদ, কালক্রিয়াপাদ এবং গোলপাদের ১০৮টি স্তবক আর্যাষ্টশত বা আর্যভটতন্ত্র নামে পরিচিত।

আর্যভট্ট

প্রাচীন ভারতে কালের প্রকৃতি ও পরিমাণ নিরূপণের একাধিক ঐতিহ্য প্রচলিত ছিল। বেদানুসারী শাস্ত্রসমূহে উল্লিখিত ঐতিহ্য অনুযায়ী কাল রৈখিক, অর্থাৎ কালের আদি ও অন্ত বিদ্যমান এবং ব্রহ্মার প্রত্যেক দিনে এক কল্প। এই ঐতিহ্যে চতুর্যুগ ও মনুর জীবনকাল দ্বারা কল্পের পরিমাপ করা হয়। চারটি যুগ কৃত (সত্য), ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি নামে অভিহিত এবং কালগণনার এই ঐতিহ্য অনুযায়ী বর্তমানে কলিযুগ চলছে। মনুস্মৃতিতে (১.৬৮-৭২) এই চারটি যুগের কালপরিমাণও উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে জৈন শাস্ত্রগ্রন্থে বর্ণিত ঐতিহ্য অনুযায়ী কাল আদি ও অন্ত হীন, চক্রাকার, কালের প্রত্যেক আবর্তনে একটি কল্প সম্পূর্ণ হয়। প্রত্যেক কল্প দুটি অর্ধে বিভক্ত – উস্সপিণি (উৎসর্পিণী) ও ওস্সপিণি (অবসর্পিণী)। প্রতিটি অর্ধ ৬টি ভাগে বিভক্ত। অবসর্পিণী অর্ধের ৬টি ভাগ – সুষম-সুষমা, সুষমা, সুষম-দুঃষমা, দুঃষম-সুষমা, দুঃষমা, ও দুঃষম-দুঃষমা (বা অতিদুঃষমা)। উৎসর্পিণী অর্ধেরও ৬টি ভাগ – দুঃষম-দুঃষমা (বা অতিদুঃষমা), দুঃষমা, দুঃষম-সুষমা, সুষম-দুঃষমা, সুষমা, ও সুষম-সুষমা। বর্তমানে অবসর্পিণী অর্ধের দুঃষমা অংশ চলছে। সাধারণাব্দের ষষ্ঠ শতকের জৈন আচার্য যতিবৃষভের লেখা তিলোয়পণ্ণত্তী (ত্রিলোকপ্রজ্ঞপ্তি) (৪.৩১৩-৩১৯) এবং উপাঙ্গ পর্যায়ের আগমশাস্ত্র জম্বুদ্বীপপ্রজ্ঞপ্তিসূত্রে (২.২৪-২৫) এই কাল বিভাগের বিবরণ রয়েছে।
অধিকাংশ আধুনিক বিদ্বান মনে করেন, ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ নামে একটি জ্যোতিষ বিষয়ক গ্রন্থেই প্রথম ৩১০২ সাধারণপূর্বাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারির সূর্যোদয়ের ক্ষণকে বেদমূলক ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত কলিযুগের সূচনা ক্ষণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, কিছু আধুনিক বিদ্বানদের মতে, আর্যভটও ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত চারযুগের ও বর্তমান কলিযুগের প্রারম্ভের ক্ষণের উল্লেখ করেছেন এবং গীতিকাপাদের পঞ্চম স্তবক ও কালক্রিয়াপাদের দশম স্তবকে এই উল্লেখ রয়েছে।
আর্যভটীয় গ্রন্থের গীতিকাপাদ ১৩টি স্তবকে সম্পূর্ণ। এর পঞ্চম স্তবকে বলা হয়েছে-
“কাহো মনবো ঢ মনুযুগাঃ শ্খ গতাস্তে চ মনুযুগাঃ ছ্না চ।
কল্পাদের্যুগপাদা গ চ, গুরুদিবসাচ্চ, ভারতাত্ পূর্বম্॥”
অর্থাৎ,
এক ব্রাহ্ম দিবসে (কল্প) ‘ঢ’ অর্থাৎ ১৪ সংখ্যক মনুর কাল এবং প্রতি মনুর কালে ‘শ্খ’ অর্থাৎ ৭২টি যুগ। যে বৃহস্পতিবারে (বর্তমান) কল্পের শুরু হয়েছিল, তখন থেকে ভারত পর্যন্ত ‘চ’ অর্থাৎ ৬ সংখ্যক মনু, ‘ন’ অর্থাৎ ২৭টি যুগ, এবং (বর্তমান যুগের) ৩টি পাদ (অর্থাৎ ৩/৪ অংশ) অতিক্রান্ত হয়েছিল।
এই স্তবকে আর্যভট যে গাণিতিক তথ্য জানিয়েছেন, তা হল:
১. ১ ব্রাহ্ম দিবস বা কল্প = ১৪ মনু এবং ১ মনু = ৭২ যুগ। অতএব ১ কল্প = ১০০৮ যুগ।
২. ভারত পর্যন্ত বর্তমান কল্পের অতিবাহিত কাল = ৬ মনু + ২৭ যুগ + ৩/৪ অংশ
এর আগের দুটি স্তবকে আর্যভট উল্লেখ করেছেন, প্রতিটি যুগ = ৪৩,২০,০০০ সৌর বছর এবং বর্তমান যুগের সূচনাকারী ক্ষণ হল বুধবার, সূর্যের মেষ রাশিতে প্রবেশের দিন, লঙ্কার দ্রাঘিমাংশে (প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে লঙ্কা উজ্জয়িনীর সঙ্গে একই দ্রাঘিমাংশে বিষুবরেখার উপর অবস্থিত বলে মনে করা হয়) সূর্যোদয়ের ক্ষণ।সুতরাং, বর্তমান যুগের সূচনা থেকে ভারত পর্যন্ত ৪৩,২০,০০০x৩/৪ = ৩২,৪০,০০০ সৌর বছর অতিবাহিত হয়েছে।
আর্যভটীয় গ্রন্থের তৃতীয় পাদ, কালক্রিয়াপাদ ২৫টি স্তবকবিশিষ্ট, কালের গণনা নিয়ে এখানে চর্চা করা হয়েছে। কালক্রিয়াপাদের সপ্তম থেকে দশম স্তবকে চর্চিত বিষয় যুগপরিমাণ। এই চারটি স্তবকে বলা হয়েছে-
“রবিবর্ষং মানুষ্যং তদপি ত্রিংশদ্ গুণং ভবতি পিত্র্যম্।
পিত্র্যং দ্বাদশগুণিতং দিব্যং বর্ষং বিনির্দিষ্টম্॥ ৭
দিব্যং বর্ষসহস্রং গ্রহসামান্যং যুগং দ্বিষট্ কগুণম্।
অষ্টোত্তরং সহস্রং ব্রাহ্মো দিবসো গ্রহযুগানাম্॥ ৮
উৎসর্পিণী যুগার্ধং পশ্চাদপসর্পিণী যুগার্ধং চ।
মধ্যে যুগস্য সুষমাঽঽদাবন্তে দুষ্ষমেন্দূচ্চাত্॥ ৯
ষষ্ট্যব্দানাং ষষ্টির্যদা ব্যতীতাস্ত্রয়শ্চ যুগপাদাঃ।
ত্র্যধিকা বিংশতিরব্দাস্ত্দেহ মম জন্মনোঽতীতাঃ॥ ১০”
অর্থাৎ,
এক রবিবর্ষ (সৌর বছর) মানবের এক বছর, তার ৩০ গুণ এক পিতৃবর্ষ (পিতৃগণের বছর)। পিতৃবর্ষের ১২ গুণ এক দিব্যবর্ষ (দেবগণের বছর)।[৭] দিব্যবর্ষের ১২,০০০ গুণ এক গ্রহযুগ।১০০৮ গ্রহযুগে এক ব্রাহ্ম দিবস (ব্রহ্মার দিন) হয়।[৮] (প্রত্যেক) যুগের (প্রথম) অর্ধ উৎসর্পিণী ও তার পরের অর্ধ অপসর্পিণী (নামে পরিচিত)।(প্রত্যেক) যুগের মধ্যবর্তী অংশকে সুষমা, এবং প্রথম ও অন্তিম অংশকে দুষ্ষমা বলা হয়।[৯] (বর্তমান) যুগের তিন পাদ (=৩/৪) এবং ৬০x৬০ বছর যখন ব্যতীত হয় তখন আমার ২৩ বছর বয়স পূর্ণ হয়।[১০]
এই চারটি স্তবকে আর্যভট যে গাণিতিক তথ্য জানিয়েছেন, তা হল:
১. ৪৩,২০,০০০ রবিবর্ষ (সৌর বছর) = ১,৪৪,০০০ পিতৃবর্ষ = ১২০০০ দিব্যবর্ষ = ১ গ্রহযুগ।
২. ১০০৮ গ্রহযুগ = ১ ব্রাহ্ম দিবস।
৩. ১ যুগ = {উৎসর্পিণী অর্ধ = (দুষ্ষমা পাদ + সুষমা পাদ)} + {অপসর্পিণী অর্ধ = (সুষমা পাদ + দুষ্ষমা পাদ)}।
৪. আর্যভটের ২৩ বছর পূর্ণ = (বর্তমান) যুগের তিন পাদ (দুষ্ষমা পাদ + সুষমা পাদ + সুষমা পাদ) + চতুর্থ দুষ্ষমা পাদের ৩৬০০ সৌর বছর পূর্ণ।
আর্যভটীয় গ্রন্থের কাল পরিমাণ বিষয়ক এই স্তবকগুলি থেকে কয়েকটি তথ্য অন্তত খুবই স্পষ্ট:
১. পরবর্তীকালের গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত (ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত ১.২৬) বা প্রথম ভাস্কর (মহাভাস্করীয় ১.৪) রচিত গ্রন্থে শকাব্দের সূচনার পূর্ববর্তী ৩১৭৯তম বছরের শুরুকে (অর্থাৎ ৩১০২ সাধারণপূর্বাব্দ) কলিযুগের সূচনাকাল বলে যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, আর্যভটীয় সেই বিষয়ের কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উল্লেখ করেনি।
২. এখানে কোথাও কলিযুগের বা অন্য তিনটি যুগের নামের উল্লেখমাত্র নেই এবং প্রত্যেক যুগকে চারটি সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পৌরাণিক সাহিত্যে (বায়ুপুরাণ ৩২.৫৫-৬৩) চারটি ভাগের কালের অনুপাত ৪:৩:২:১।
৩. এখানে যুগের সূচনাকারী দিনটিকে বুধবার ও কল্পের সূচনাকারী দিনটিকে বৃহস্পতিবার বলে ধরা হয়েছে অথচ ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত (১.৪) অনুযায়ী কল্প ও কলিযুগ উভয়েরই সূচনাকারী দিনটি রবিবার, আর সূর্যসিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলিযুগের শুরুর দিনটি শুক্রবার।
৪. এখানে প্রত্যেক যুগের দুটি অর্ধ - উৎসর্পিণী ও অপসর্পিণী। তাঁর মতে, প্রতিটি যুগ চারটি পাদে বিভক্ত – দুষ্ষমা, সুষমা, সুষমা ও দুষ্ষমা। বর্তমান যুগের চতুর্থ পাদ, দুষ্ষমার সূচনা থেকে ৩৬০০ সৌর বছর পূর্ণ হবার দিন তাঁর ২৩ বছর পূর্ণ হয়েছে।
আর্যভটের রচিত এই স্তবকগুলির সঙ্গে জৈন আগমশাস্ত্রে বর্ণিত কালগণনার মিল এত বেশি যে তা নিঃসন্দেহে সমাপতন হতে পারে না। আদি ও অন্তহীন কালের ধারণা (কালক্রিয়াপাদ।১১), যুগকে উৎসর্পিণী ও অপসর্পিণী (বা অবসর্পিণী) দুই অর্ধে বিভাগ এবং সুষমা এবং দুষ্ষমার (বা দুঃষমার) উল্লেখ, এই সবই জৈন কালচক্রের ধারণার সঙ্গে যুক্ত। সম্ভবত আর্যভটের কাল পরিমাণ বিষয়ক ধারণার উপর জৈন চিন্তার প্রভাব লক্ষ্য করেই শৈব মতাবলম্বী গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত, তাঁর আনুমানিক ৬২৮ সাধারণাব্দে লেখা ‘ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত’ (১১.৪, ১১.১০) গ্রন্থে তাঁকে কঠোর সমালোচনা করেছেন, স্মৃতিশাস্ত্র উল্লিখিত মনু, যুগ ও কল্পের কাল পরিমাণ থেকে পৃথক কাল পরিমাণ উল্লেখ করার জন্য।
মধ্যযুগের ইরানীয় বিদ্বান আল-বিরুনি (৯৭৩-১০৪৮ সাধারণাব্দ), তাঁর ‘কিতাব-আল-হিন্দ’ (১০৩০ সাধারণাব্দ) গ্রন্থে জানিয়েছেন, একটি ক্ষুদ্র গ্রন্থ (অর্থাৎ আর্যভটীয়) ছাড়া তিনি আর্যভটের অন্য কোন রচনার সন্ধান পাননি। আর্যভটের এই ক্ষুদ্র গ্রন্থ থেকে কালের গণনা সম্বন্ধে কিছু তথ্য তিনি জেনেছেন। এই গ্রন্থ অনুযায়ী, ১০০৮ যুগে ব্রহ্মার এক দিন। এর প্রথম অর্ধের ৫০৪ যুগকে উৎসর্পিণী ও দ্বিতীয় অর্ধের ৫০৪ যুগকে অবসর্পিণী বলা হয়। এই সমগ্র কালপর্বের মধ্যবর্তী অংশকে সম ও দুই অন্তিম অংশকে দুর্তম বলা হয়। আল-বিরুনির বর্ণনা প্রমাণ করে যে, একাদশ শতকে আল-বিরুনিকে তথ্য সরবরাহকারী ভারতীয় বিদ্বানরা আর্যভটীয় গ্রন্থে উল্লিখিত কাল পরিমাণের বিষয়ে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হননি।
আর্যভটের কাল পরিমাণ নির্ণয় প্রসঙ্গে একটি বিতর্কিত বিষয়, তাঁর গীতিকাপাদের পঞ্চম স্তবকে উল্লিখিত ‘ভারতাত্ পূর্বম্’ কথাটির প্রকৃত অর্থ। পৌরাণিক সাহিত্যে (যেমন, বিষ্ণুপুরাণ ৪.২৪.১১৩, ভাগবতপুরাণ ১২.২.৩৩) খুবই স্পষ্টভাবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরবর্তীকালে কৃষ্ণের দেহত্যাগের ক্ষণকে কলিযুগের সূচনার ক্ষণ হিসাবে স্বীকৃত। তা সত্বেও প্রাচীন কাল থেকেই আর্যভটের লেখা এই স্তবকের ‘ভারতাত্ পূর্বম্’কে ‘ভারত যুদ্ধ’ অর্থাৎ মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত করে, আর্যভট মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূচনাকে কলিযুগের সূচনাকাল বলে উল্লেখ করেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়েছে। দশম বা একাদশ শতক সাধারণাব্দে সোমেশ্বর তাঁর আর্যভটীয় গ্রন্থের ব্যাখায় এই বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছেন। গণিতবিদ প্রথম ভাস্কর তাঁর ৬২৯ সাধারণাব্দে রচিত আর্যভটীয় গ্রন্থের ব্যাখ্যায় ভারত কথাটির অর্থ ভরতবংশীয় যুধিষ্ঠির বলে গ্রহণ করেছেন। তাঁর বিশ্বাস আর্যভট এখানে যুধিষ্ঠিরের সিংহাসন ত্যাগ করে মহাপ্রস্থানের দিন থেকে কলিযুগের সূচনাকাল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই বিশ্বাসগুলির কোনওটিই সম্ভবত ঠিক নয়। চালুক্য শাসক দ্বিতীয় পুলকেশীর (রাজত্বকাল ৬১০-৬৪২ সাধারণাব্দ) জৈন ধর্মাবলম্বী সভাকবি রবিকীর্তির ৬৩৪ সাধারণাব্দে রচিত ‘আইহোল প্রশস্তি’ শিলালেখের দুটি শ্লোক পাঠ করলে এই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। এই প্রশস্তির শুরুতে জিনেন্দ্র স্তুতি নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় পুলকেশীর জৈন ধর্মের প্রতি অনুরাগের পরিচায়ক। ‘আইহোল প্রশস্তি’র ৩৩ ও ৩৪ সংখ্যক শ্লোকে এই প্রশস্তি রচনার দুটি সালের উল্লেখ রয়েছে - প্রথমটি ‘ভারতাত্ আহবাদিত’ অর্থাৎ ভারতের যুদ্ধ থেকে সূচিত কালের ৩৭৩৫ বছর ও দ্বিতীয়টি ৫৫৬ শকাব্দ। এর অর্থ ‘ভারতাত্ আহবাদিত’ কালের সূচনা সাধারণাব্দের ৩১০১ বছর পূর্বে। জৈন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বর্তমান অবসর্পিণী অর্ধের প্রথম চক্রবর্তী রাজা ভরত, প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র। জৈন বিশ্বাস অনুযায়ী ‘ভরতক্ষেত্র’ (অর্থাৎ পৌরাণিক ‘ভারতবর্ষ’) নামের উৎপত্তিও এই রাজা ভরত থেকে। খুব সম্ভবত, আর্যভট এবং রবিকীর্তি দুজনেই জৈন ঐতিহ্যের দ্বারা অনুপ্রেরিত হয়েছিলেন এবং উভয়েই বর্তমান যুগের চতুর্থ পাদের সূচনার সঙ্গে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ বা যুধিষ্ঠিরের সিংহাসন ত্যাগ নয়, রাজা ভরতের তাঁর ভ্রাতা বাহুবলীর সঙ্গে যুদ্ধ ও সিংহাসনলাভের ঘটনাকে যুক্ত করেছেন।


আর্যভটের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্বন্ধে আমরা বিশেষ কিছু জানি না। গীতিকাপাদের প্রথম স্তবকে তিনি পরমব্রহ্মের বন্দনা করেছেন এবং ত্রয়োদশ স্তবকে তিনি বলেছেন, পৃথিবী ও অন্য গ্রহগুলির গতিগুলি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করলে পরমব্রহ্মের প্রাপ্তি হয়। গণিতপাদের প্রথম স্তবকে তিনি ব্রহ্ম, পৃথিবী, চন্দ্র, বুধ, শুক্র, সূর্য, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি ও নক্ষত্রদের বন্দনা করেছেন। প্রথম ভাস্কর তাঁর আর্যভটীয় গ্রন্থের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থে আর্যভট ব্রহ্মার তপস্যা করেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু, আর্যভটীয় গ্রন্থে কালের পরিমাণ নিরূপণ এবং অন্যান্য গাণিতিক সিদ্ধান্ত, যেমন পৃথিবীর আবর্তনের ধারণা, সম্ভবত আমাদের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করবে যে, এই মহান গণিতবিদ, তাঁর গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত চিন্তাকে কোন একটি বিশেষ ধর্ম বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হতে দেননি। তাঁর এই ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তার প্রতিফলিত হয়েছে, আর্যভটীয় গ্রন্থের চতুর্থ পাদ, গোলপাদের একাদশ স্তবকে। মেরুপর্বতের (উত্তরমেরু) উচ্চতা সংস্কৃত পৌরাণিক সাহিত্যে (বিষ্ণুপুরাণ ২.২.৮-৯, ) ৮৪,০০০ যোজন, বৌদ্ধ শাস্ত্রগ্রন্থে (বসুবন্ধুর অভিধর্মকোশ) ১,৬০,০০০ যোজন (৮০,০০০ যোজন সমুদ্রের নীচে, ৮০,০০০ যোজন উপরে) এবং জৈন শাস্ত্রগ্রন্থে (লোকপ্রকাশ ১৮.১৫-১৬) ১,০০,০০০ যোজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, আর্যভট এই স্তবকে মেরুপর্বতের উচ্চতা মাত্র এক যোজন বলে স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। তাঁর উল্লিখিত এই মান তৎকালীন প্রচলিত তিনটি প্রধান ধর্মীয় বিশ্বাসের একটির দ্বারাও প্রভাবিত নয়, তাঁর যুক্তিবাদী মানসের পরিচায়ক।
আর্যভট ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের ঊর্ধ্বে বিজ্ঞান চেতনাকে স্থান দেওয়ার যে ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিলেন, ভারতে পরবর্তীকালে তা আর বিশেষ দেখা যায়নি। এই বিজ্ঞান চেতনারই পরিচয় দিয়ে তৎকালীনসমস্ত ধর্মীয় বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করে আর্যভট গোলপাদের নবম স্তবকে বলিষ্ঠ কাব্যময় ভাষায় ঘোষণা করেন, নক্ষত্ররা স্থির, পৃথিবীই নিজের অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তিত হচ্ছে:

“অনুলোমগতির্নৌস্থঃ ঽপশ্যত্যচলং বিলোমগং যদ্বৎ।
অচলানি ভানি তদ্বৎ সমপশ্চিমগানি লঙ্কায়াম্॥”

অর্থাৎ,
যেমন, চলমান নৌকায় অবস্থিত যাত্রীরা (নদীর দুই তিরে অবস্থিত) সমস্ত স্থির বস্তুকে বিপরীত দিকে চলমান দেখতে পান, তেমনই লঙ্কার (উজ্জয়িনীর সঙ্গে একই দ্রাঘিমাংশে বিষুবরেখার উপর অবস্থিত স্থানের) অধিবাসীরা (পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তনের কারণে) স্থির নক্ষত্রগুলিকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে চলমান দেখতে পান।
পরবর্তীকালে, আর্যভটের শিষ্যরা তাঁর পৃথিবীর আবর্তনের এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে গণিতের যুক্তি দিয়ে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই খ্যাতিমান জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির ও ব্রহ্মগুপ্ত আর্যভটের সিদ্ধান্তকে খণ্ডন করে পৌরাণিক ঐতিহ্যকে আবার পুনঃস্থাপিত করতে সক্ষম হন।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে আর্যভট্ট এই গ্রন্থটি সংকলন করেন। এ চারটি অধ্যায়‌ দশগীতিকা, গণিতপাদ, কালক্রিয়াপদ ও গোলপাদ। দশগীতিকা, কালক্রিয়া ও গোলপাদ অধ্যায়ে গোলীয় ত্রিকোণমিতি ও জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়াবলী রয়েছে। অন্যদিকে গণিত পাদে আছে পাটীগণিত, বীজগণিত, সমতল ত্রিকোণমিতি, দ্বিঘাত সমীকরণ, প্রথম n সংখ্যক স্বাভাবিক সংখ্যার ঘাতবিশিষ্ট পদ সমূহের বর্গ ও ঘনের সমষ্টি এবং একটি সাইন অণুপাতের সারণি রয়েছ। তাছাড়া এই অধ্যায়ে সে সময়কার জনপ্রিয় জ্যোতিষচর্চার প্রয়োজনীয় ৩৩টি গাণিতিক প্রক্রিয়ার বর্ণনা রয়েছে। গণিতপাদে আর্যভট্ট পাই-এর মান তথা বৃত্তের পরিধির সঙ্গে এর ব্যাসের মান ৩.১৪১৬ হিসাবে চিহ্নিত করেন। তিনিই সর্বপ্রথম বিশ্বে শূন্যের প্রচলন করেন।

আর্যভট্টের কাজে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির পূর্ণ ব্যবহার পাওয়া যায়। আর্যভট্ট অবশ্য তার কাজে প্রচলিত ব্রাহ্মী লিপি ব্যবহার করেননি। পদবাচ্যের আকারে গ্রন্থ রচনা করায় সংখ্যা উপস্থাপনের একটি নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন তিনি। সেখানে সংখ্যাকে শব্দের আকারে উপস্থাপন করা হত। ব্যঞ্জনবর্ণগুলোকে তিনি ব্যবহার করতেন বিভিন্ন অঙ্ক হিসেবে আর স্বরবর্ণগুলোর সাহায্যে বুঝিয়ে দিতেন যে কোন অঙ্কটি কোন অবস্থানে রয়েছে। সে দিক থেকে তার ব্যবহৃত দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থা ঠিক আজকের দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থার মত নয়, তবে পদ্ধতিগত বিবেচনায় আজকের দশমিক সংখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তার দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্য ছিল কিনা সে বিষয়ে দ্বন্দ্ব্ব রয়েছে। শূন্যের সমতুল্য একটি ধারণা তার কাজে ছিল, সেটিকে বলা হয়েছে ‘খ’ (শূণ্যতা অর্থে)। ‘খ’ এর ধারণাটি কোন অঙ্ক হিসেবে ছিল নাকি শূন্যস্থান জ্ঞাপক চিহ্ন হিসেবে ছিল সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রচলিত বইগুলোতে সেটিকে শূন্যস্থান জ্ঞাপক চিহ্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যদিও Georges Ifrah দাবি করেছেন যে আর্যভট্ট পরোক্ষভাবে সেটিকে একটি দশমিক অঙ্ক হিসেবেই ব্যবহার করতেন। তবে দশমিক পদ্ধতিকে ব্যবহার করে তিনিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ গাণিতিক প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন, এর মাঝে ছিল সংখ্যার বর্গমূল ও ঘনমূল নির্ণয়। এটিই ছিল দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গরূপে স্থাপিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি, কারণ স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় এ সংখ্যার উপস্থাপন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভ্যতায় ব্যবহার করা হলেও স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় গাণিতিক প্রক্রিয়াগুলোর ব্যবহারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, সুতরাং এটির পদ্ধতিগত উপযোগিতা সম্পূর্ণরূপে অণুধাবিত হয়নি। সে সময় সবচেয়ে জরুরি ছিল দশমিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পদ্ধতিগত সাধারণীকরণ নিশ্চিত করা, যেটি সর্বপ্রথম করেন আর্যভট্ট। তাই তিনিই পূর্ণাঙ্গ দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি প্রবর্তনের কৃতিত্বের দাবিদার। ৪৯৮ সালের দিকের একটি কাজে আর্যভট্টের একটি কাজে দশমিক সংখ্যা ব্যবস্থার বিবৃতিতে স্থানম স্থানম দশ গুণম বাক্যাংশটি পাওয়া যায় যার অর্থ হল- স্থান থেকে স্থানে দশ গুণ করে পরিবর্তিত হয়। এখান থেকে স্পষ্টতই বর্তমান দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি মেলে।

আর্যভট্টের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক অবদান হচ্ছে আধুনিক ত্রিকোণমিতির সূত্রপাত করা। ত্রিকোণমিতির ব্যবহারে আর্যভট্ট সাইন, ভারসাইন (Versine = ১ - Cosine), বিপরীত সাইনের ব্যবহার করেন। সূর্য সিদ্ধান্তে এ সংক্রান্ত কিছু কাজ থাকলেও আর্যভট্টের কাজে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ মেলে। সাইন ফাংশনের জন্য যুগ্ম ও অর্ধ কোণের সূত্রগুলো তিনি জানতেন বলে ধারণা করা হয়। আর্যভট্টের ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ ত্রিকোণমিতিক সম্পর্কগুলোর একটি হল- sin (n+১)x কে sin x এবং sin (n-১)x এর সাহায্যে প্রকাশ করা। আর্যভট্ট একটি সাইন টেবিল তৈরি করেছিলেন, যেটিতে ৩ ডিগ্রি ৪৫ মিনিট পার্থক্যে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত সাইন এবং ভারসাইনের মান উল্লেখ করা ছিল। তার ব্যবহার করা এই সূত্রটি দিয়ে খুব সহজেই এই সাইন টেবিলটি recursively তৈরি করে ফেলা সম্ভব। সেই সূত্রটি হল-

sin (n + ১) x - sin nx = sin nx - sin (n - ১) x - (১/২২৫)sin nx

আর্যভট্টের তৈরি করা সাইন টেবিলটি এখানে উল্লেখ করা হল। বলে রাখা যেতে পারে আর্যভট্ট তার সাইন টেবিলে সরাসরি sinθ এর বদলে Rsinθ ব্যবহার করেছেন। এখানে R দ্বারা একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের ব্যাসার্ধ বোঝানো হচ্ছে। আর্যভট্ট এই ব্যাসার্ধের মান ব্যবহার করেছিলেন ৩৪৩৮, এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে আর্যভট্ট এক মিনিট পরিমাণ কোণের জন্য একক ব্যাসার্ধের বৃত্তে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্যকে এক একক হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। একটি বৃত্তের সম্পূর্ণ পরিধি তার কেন্দ্রে (৩৬০ × ৬০) = ২১৬০০ মিনিট কোণ ধারণ করে। সে হিসেবে বৃত্তের পরিধি হল ২১৬০০ একক এবং ঐ বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২১৬০০/২π, আর্যভট্টের হিসেবে পাওয়া π = ৩.১৪১৬ ব্যবহার করলে ব্যাসার্ধের মান প্রায় ৩৪৩৮ হয়।

ক্রমিক নংকোণের মান (A)
ডিগ্রি,মিনিট
আর্যভট্টের নিজস্ব সংখ্যাপদ্ধতিতে উল্লিখিত মান
(দেবনগরী)
আর্যভট্টের নিজস্ব সংখ্যাপদ্ধতিতে উল্লিখিত মান
(ISO ১৫৯১৯ প্রতিবর্ণীকরণ অনুসারে)
প্রচলিত দশমিক পদ্ধতি অনুসারে R(sin nx - sin (n-১)x) এর আর্যভট্ট প্রদত্ত মানআর্যভট্ট প্রদত্ত
(R × sinA) এর মান

(R × sinA) এর প্রকৃত মান
   ১
০৩°   ৪৫′
मखि
makhi
২২৫
২২৫′
২২৪.৮৫৬০
   ২
০৭°   ৩০′
भखि
bhakhi
২২৪
৪৪৯′
৪৪৮.৭৪৯০
   ৩
১১°   ১৫′
फखि
phakhi
২২২
৬৭১′
৬৭০.৭২০৫
   ৪
১৫°   ০০′
धखि
dhakhi
২১৯
৮৯০′
৮৮৯.৮১৯৯
   ৫
১৮°   ৪৫′
णखि
ṇakhi
২১৫
১১০৫′
১১০৫.১০৮৯
   ৬
২২°   ৩০′
ञखि
ñakhi
২১০
১৩১৫′
১৩১৫.৬৬৫৬
   ৭
২৬°   ১৫′
ङखि
ṅakhi
২০৫
১৫২০′
১৫২০.৫৮৮৫
   ৮
৩০°   ০০′
हस्झ
hasjha
১৯৯
১৭১৯′
১৭১৯.০০০০
   ৯
৩৩°   ৪৫′
स्ककि
skaki
১৯১
১৯১০′
১৯১০.০৫০৫
   ১০
৩৭°   ৩০′
किष्ग
kiṣga
১৮৩
২০৯৩′
২০৯২.৯২১৮
   ১১
৪১°   ১৫′
श्घकि
śghaki
১৭৪
২২৬৭′
২২৬৬.৮৩০৯
   ১২
৪৫°   ০০′
किघ्व
kighva
১৬৪
২৪৩১′
২৪৩১.০৩৩১
   ১৩
৪৮°   ৪৫′
घ्लकि
ghlaki
১৫৪
২৫৮৫′
২৫৮৪.৮২৫৩
   ১৪
৫২°   ৩০′
किग्र
kigra
১৪৩
২৭২৮′
২৭২৭.৫৪৮৮
   ১৫
৫৬°   ১৫′
हक्य
hakya
১৩১
২৮৫৯′
২৮৫৮.৫৯২৫
   ১৬
৬০°   ০০′
धकि
dhaki
১১৯
২৯৭৮′
২৯৭৭.৩৯৫৩
   ১৭
৬৩°   ৪৫′
किच
kica
১০৬
৩০৮৪′
৩০৮৩.৪৪৮৫
   ১৮
৬৭°   ৩০′
स्ग
sga
৯৩
৩১৭৭′
৩১৭৬.২৯৭৮
   ১৯
৭১°   ১৫′
झश
jhaśa
৭৯
৩২৫৬′
৩২৫৫.৫৪৫৮
   ২০
৭৫°   ০০′
ङ्व
ṅva
৬৫
৩৩২১′
৩৩২০.৮৫৩০
   ২১
৭৮°   ৪৫′
क्ल
kla
৫১
৩৩৭২′
৩৩৭১.৯৩৯৮
   ২২
৮২°   ৩০′
प्त
pta
৩৭
৩৪০৯′
৩৪০৮.৫৮৭৪
   ২৩
৮৬°   ১৫′
pha
২২
৩৪৩১′
৩৪৩০.৬৩৯০
   ২৪
৯০°   ০০′
cha
৩৪৩৮′
৩৪৩৮.০০০০

একাধিক অজানা রাশি সংবলিত সমীকরণ (সাধারণভাবে ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণ নামে পরিচিত) সমাধান করার একটি সাধারণ পদ্ধতি তৈরি করেন আর্যভট্ট। এটির নাম ছিল "কুত্তক"। প্রথম ভাস্করের কাজে কুত্তক পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেবার সময় একটি উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে- "এমন সংখ্যা নির্ণয় কর যাকে 8 দিয়ে ভাগ করলে 5, 9 দিয়ে ভাগ করলে 4 এবং 7 দিয়ে ভাগ করলে 1 অবশিষ্ট থাকে।" পরবর্তীকালে এ ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতবর্ষে কুত্তক পদ্ধতিটিই আদর্শ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর্যভট্টের কাজে প্রথম n সংখ্যক স্বাভাবিক সংখ্যার ঘাতবিশিষ্ট পদ সমূহের বর্গ ও ঘনের সমষ্টির সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়।


আর্যভট্টীয় বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে আর্যভট্ট লিখেছেন- “চার এর সাথে একশ যোগ করে তাকে আট দিয়ে গুণ করে তার সাথে বাষট্টি হাজার যোগ করা হলে বিশ হাজার একক ব্যাসের বৃত্তের পরিধি পাওয়া যায়”। সে হিসেবে আর্যভট্ট পাই এর মান নির্ণয় করেছিলেন ((4+100) ×8+62000)/20000 = 62832/20000 = 3.1416, যেটা তার সময় পর্যন্ত যেকোন গণিতবিদের বের করা মানগুলোর মাঝে সবচেয়ে সঠিক।

আর্যভট্টীয় বইটির গোলপাদ অংশে আর্যভট্ট উদাহরণের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন যে পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। তিনি পৃথিবীর আক্ষিক গতির হিসাবও করেছিলেন। তার হিসেবে পৃথিবীর পরিধি ছিল ৩৯,৯৬৮ কিলোমিটার, যেটা সে সময় পর্যন্ত বের করা যেকোন পরিমাপের চেয়ে শুদ্ধতর (ভুল মাত্র ০.২%)। সৌর জগৎে গ্রহগুলোর কক্ষপথের আকৃতি তার ভাষ্যে ছিল উপবৃত্তাকৃতির, এক বছর সময়কালের প্রায় সঠিক একটি পরিমাপ করেছিলেন, সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সঠিক কারণ উল্লেখ করা এবং তার সময় নির্ধারণ করা। তিনি সৌরজগতের পৃথিবীকেন্দ্রিক নাকি সূর্যকেন্দ্রিক মডেল ব্যবহার করেছিলেন সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। B.L. van der Waerden, Hugh Thurston এর লেখায় আর্যভট্টের জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত হিসাব নিকাশের পদ্ধতিকে সরাসরি সূর্যকেন্দ্রিক বলে দাবি করা হয়েছে। Noel Swerdlow অবশ্য এ জন্য B.L. van der Waerden এর প্রত্যক্ষ সমালোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে আর্যভট্টের ধারণায় সৌরজগৎ পৃথিবীকেন্দ্রিকই ছিল। অপর দিকে Dennis Duke এর মতে, আর্যভট্টের কাজের পদ্ধতি সূর্যকেন্দ্রিক ছিল, তবে সেটি আর্যভট্ট লক্ষ করেননি কিংবা জানতেন না।


আর্যভট্ট সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের হিন্দু পৌরাণিক ধারণার পরিবর্তে প্রকৃত কারণগুলো ব্যাখ্যা করে গেছেন। সেই সাথে তিনি সূর্য গ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল নির্ণয়ের পদ্ধতিও বের করেছিলেন। আর্যভট্ট বলেছিলেন যে চাঁদের আলো আসলে সূর্যের আলোর প্রতিফলনেরই ফলাফল।


তথ্যসূত্র
১. K. Chandra Hari, “Indian Astronomical Epoch: 3102 CE 18 February Implications of Āryabhata's Works to Indian Chronology” in ‘Annals of the Bhandarkar Oriental Research Institute’, Vol.90; Pune: Bhandarkar Oriental Research Institute, 2009, pp. 59-80.
২. W.E. Clark edited, ‘The Āryabhaṭīya of Āryabhaṭa’; Chicago: The University of Chicago Press, 1930.
৩. P. Dundas, ‘The Jains’; London: Routledge, 2002.
৪. T. Hayashi, “The Units of Time in Ancient and Medieval India” in ‘History of Science in South Asia’, 5.1; 2017, pp. 1-116. [DOI: 10.18732/H2HT0H]
৫. F. Kielhorn, “Aihole Inscription of Pulikesin II, Saka-Samvat 556” in E. Hultzsch ed. ‘Epigraphia Indica’, Vol. VI; Calcutta: Office of the Superintendent of Government Printing, India, 1901, pp. 1-12.
৬. E.C. Sachau, ‘Alberuni’s India’, Vol. I; London: Trübner & Co, 1910, pp. 370-371.
৭. P.C. Sengupta, ‘Ancient Indian Chronology’; Calcutta: University of Calcutta, 1947.
৮. Ram Swarup Sharma edited, ‘Shri Brahmagupta Viracita Brāhma-Sphuṭa Siddhānta with Vāsanā, Vijñāna and Hindi Commentaries’, Vol. III; New Delhi: Indian Institute of Astronomical and Sanskrit Research, 1966.

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ