মনুস্মৃতি ৫/৩৫ - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

06 October, 2022

মনুস্মৃতি ৫/৩৫

 এই শ্রোক প্রক্ষিপ্ত অতঃ মূল মনুস্মৃতির অংশ নয়-

নিযুক্তস্তু যথান্যায়ম্ য়ো মাংসম্ নাত্তি মানবঃ। 

স প্রেত্য পশুতাম্ য়াতি সম্ভবানেকবিংশতিম্।। মনু-৫/৩৫

টিপ্পলী-
এই ( ৫/২৬-৪২) সতেরটি শ্লোক নিম্ম লিখিত কারণে প্রক্ষিপ্ত-

( ক) যেমন মাংসের বিষয়ে মনু খুবই স্পষ্ট লিখেছেন-

(১)-যক্ষরক্ষঃ পিশাচান্নম্ মদ্য মাংসম্ সুরাসবম্।। ( ১১/৯৬)
( ২)-নাকৃত্বা প্রাণিনাম্ হিংসাং মাংসমুৎপদ্যতে ক্বচিৎ ন চ প্রণিবধঃ স্বর্গ্যস্তস্মান্মাংসং বিবর্জয়েৎ ( ৫/৪৮) অর্থাৎ মাংস রাক্ষসের ভোজন। এই প্রাণিদের হিংসা ছাড়া না প্রাপ্ত হয়। এবং প্রাণিদের হিংসা দ্বারা সুখ না মিলে,এইজন্য মাংস ভক্ষণ কখনও করো না। এবং ৫/৫১ এতে মাংস ভক্ষণকারীকে ঘাতক-আট পাপীদের মধ্যে গণ্য হয়। একই বিদ্বান্-মনু মাংস ভক্ষণের বিধান করতে পারে? এইজন্য ৫/২৬-৩৮ পর্যন্ত মাংস ভক্ষণের প্রতিপাদক শ্লোক মনুর মান্যতা থেকে সর্বথা বিরুদ্ধ। কারণ মনু অহিংসাকেই পরম ধর্ম বলে মনে করেছেন,তাহলে তিনি হিংসার বিধান কিভাবে করবেন।

মনুস্মৃতি ৫/৩৫

(খ) এবং যজ্ঞে পশুবলির বিধান ৫/৩৯-৪২ তে মনুর মান্যতার বিরুদ্ধ। যে যজ্ঞের এক "অধর"-হিংসারহিত" সার্থক নাম শাস্ত্রে বর্ণিত আছে এবং যাকে "যজ্ঞ বৈ শ্রেষ্ঠতম কর্ম" বলে মনে করা হয়েছে,এতে প্রাণিদের বলিদান করা কদাপি সংগতই হতে পারে? এবং যজ্ঞের উদ্দেশ্য হল-বায়ু জলাদিকে শুদ্ধি করা এইজন্য এতে রোগ-নাশক,কীট-নাশক,পুষ্টিকর,সুগন্ধিত দ্রব্যকে আহুতি দেওয়া হয়। যদি মাংসকে আহুতি দ্বারা যজ্ঞের উদ্দেশ্য,পূর্ণ হতে হয় তবে মনুষ্যকে অন্ত্যেষ্টির সময় সুগন্ধিত ঘৃত,সামগ্রী চন্দনাদির প্রক্ষেপের কোনো আবশ্যকতা নেই। কারণ যে তাদের মত থেকে তো মাংস থেকেই উদ্দেশ্য পূরন হবে। কিন্তু এটা প্রত্যক্ষ বিরুদ্ধ। অগ্নিতে মাংস নিক্ষেপ দ্বারা দুর্গন্ধ ছড়ায়, সুগন্ধ নয়। এবং যে মনু গৃহস্থের জন্য পঞ্চমহাযজ্ঞের বিধান দিয়েছেন, যে ( ৩/৬৮-৬৯) গৃহে চুলা, কল, বুহারি, উখল এবং জল-কালশাদি দ্বারা অসাবধানতাবশত যে হিংসা হয়,তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য দৈনিক মহাযজ্ঞের দ্বারা পরিহার হয়। কারণ সেই মনু জেনে বুঝে যজ্ঞে পশুদের বধের বিধান করতে পারে? এবং সেই পশু-বধের কোনো প্রায়শ্চিত্তও লিখা নেই। এবং মনুজী বেদকে পরম প্রমাণ বলে মনে করেছেন। "ধর্ম জিজ্ঞাসমাননাম্ প্রমাণম্ পরমম্ শ্রুতিঃ" এটা মনুজীর নিশ্চিত সিদ্ধান্ত। যখন বেদে পশুদের হিংসার নিষেদের স্পষ্ট বিধান রয়েছে,তখন মনু বেদ-বিরুদ্ধ পশুবধকে কিভাবে বলতে পারেন? বাস্তবে এমন মিথ্যা মান্যতা কামমার্গী লোকদের,যারা মনুস্মৃতির মতো প্রমাণিক স্মৃতিতেও তাদের মান্যতাকে সিদ্ধ করতে প্রক্ষিপ্ত করেছে। কারণ যে তারা মান্যতা করে যে মদ্য,মাংস,মীন,মূদ্রা তথা মৈথুন এই পা্চ প্রকার মোক্ষ দান যুক্ত।

( গ)-( ৫/৪২) তে "অব্রবীন্মনুঃ" বাক্য দ্বারাও এই শ্লোকের প্রক্ষিপ্ততা স্পষ্ট হয়েছে যে এই শ্লোকের রচয়িতা মনু থেকে ভিন্নই হয়। কারণ যে মনুর এই শৈলী নয় তিনি নিজ নাম নিয়ে প্রববচন করা।

( ঘ)-(৫/৪২) তে যজ্ঞ থেকে ভিন্ন মধুপর্ক তথা শ্রাদ্ধেও পশুদের হিংসা লিখা আছে, এটাও মনুর মান্যতার বিরুদ্ধ। মধুপর্ক,যাতে মধু-মধু,ঘৃত অধবা দই এর মিশ্রণ হয়,তাতেও মাংসের কথা বলা মধুপর্কেই বুঝানো হয় না। এবং যে শব্দের জন্য ( ৩/৮২ তে) মনু অন্ন,দুধ,ফল-মূল জলাদি দ্বারা বিধান করেছেন,কারণ তিনি নিজ বচনেরই বিরুদ্ধ মাংসের বিধান করতে পারে? বাস্তবে এই মৃতক শ্রাদ্ধের কল্পনাকারীে অযুক্তিযুক্ত প্রক্ষিপ্ত করেছে।

( ঙ)-এই শ্লোক গুলিতে অবান্তর বিরোধও কম নয়, যাতে স্পষ্ট হয় যে এর রচনাকারী ভিন্ন-ভিন্ন ব্যক্তি ছিল। কারণ যে এক ব্যক্তির লিখাতে এমন সামন্য বিরোধ হতে পারে না। যেমন-(১)-৪/৩২ শ্লোকে যজ্ঞের জন্য মাংস ভক্ষণ দেবতাদের বিধি বলা হয়েছে এবং যজ্ঞ দ্বারা অন্যত্র শরীরের-পুষ্টির জন্য মাংস ভক্ষণ পশুদের কার্য মানা হয়েছে। যদি মাংস ভক্ষণে দোষ হয়,তাহলে তা যজ্ঞের নিমিত্ত থেকে ভক্ষণ করা বা অন্য নিমিত্ত থেকে,দোষ কিভাবে দূর করা যেতে পারে? এবং দেবতা আর রাক্ষসের মধ্যে পার্থক্য কি ছিল? মাংস তো দুজনেই খাচ্ছে।

(২)-এবং ৪/১৪-১৫ তে মাছ ভক্ষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ৪/১৬ তে হব্য-কব্যে মাছ ভক্ষণের বিধান দেওয়া হয়েছে।

(৩)-৫/২২ তে বলা হয়েছে যে চাকরদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পশু-পাখি বধ করা উচিত এবং ৫/৩৮ এ বলা হয়েছে যে যজ্ঞ দ্বারা অনত্র পশুদের বধকারী জীবত পশুকে বধ করে সে অনেক জন্মের বিনিময়ে তাকে বধ করা হয়। ৪, এবং ৫/১১-১৯ তম শ্লোকে কিছু পশুকে ভক্ষ এবং কিছু পশুকে অভক্ষ বলা হয়েছে এবং ৫/৩০ এ বলা হয়েছে যে ব্রহ্মা সমস্ত পশু বা প্রাণীকে খাওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন। অতঃ এই প্রকারের পরস্পর-বিরোধি বচন কোন বিদগ্ধ ব্যক্তিরও হতে পারে না,মনুর বলা আত্তিকর প্রলাপই হয়।।

(ডঃ সুরেন্দ্র কুমার জীর ভাষ্যের বাংলা অনুবাদ)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ