মূর্ত্তিপূজা কেবল পাষন্ড মত মাত্র - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

30 October, 2022

মূর্ত্তিপূজা কেবল পাষন্ড মত মাত্র

মূর্ত্তিপূজা কেবল পাষন্ড মত মাত্র

পরমেশ্বর সর্বব্যাপক ও সর্বজ্ঞ বলিয়া সমস্ত সৃষ্টি রচনা করিয়া ও সমস্ত জীবের মধ্যে থাকিয়া দ্রষ্টা ও সাক্ষীরূপ হইয়া সর্বজ্ঞতা দ্বারা যথাযথরূপে জীবের কর্ম ফলের বিধান করিতেছেন [সাংখ্য দর্শন ৬।৬৪]।


যাহা থাকিলে যাহা থাকে এবং যাহা না থাকিলে যাহা থাকেনা তাহাই তাহার গুণ, গুণ দ্বারাই জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান হইয়া থাকে। জীব কখনও উৎপন্ন হয় নাই, সে অনাদি। কিন্তু জীব জগতের উপাদান কারণ ঈশ্বর নিমিত্ত কারণ । যাহা হইতে কোন পদার্থ উৎপন্ন হয় তাহাই তাহার নিমিত্ত। শরীরাদির সৃষ্টিকর্ত্তা পরমেশ্বর শরীরাদি দ্বারা কৃতকর্মের ফলভোগ করেন না, জীবকেই ভোগ করাইয়া থাকেন। পরমেশ্বর জীবকে কর্ম করান না, কর্মে জীব স্বতন্ত্র। তিনি যে জীবের কর্মের কর্ত্তা এ বিষয়ে শাস্ত্রে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

কোন মূর্ত্তির ভেতর ও বাইরে সর্বত্র যিনি বিদ্যমান তার উপাসনা করতে হলে আত্মার সমিপস্থ পরমেশ্বরের করা উচিৎ। ঈশ্বরের গুণ-কর্ম্ম-স্বভাবের ন্যায় নিজের গুণ-কর্ম্ম-স্বভাব পবিত্র করা এবং ঈশ্বর সর্ব্বব্যাপক, আমি তাঁহার নিকটে আছি এবং তিনি আমার নিকটে আছেন, এইরূপ জ্ঞানসহকারে যোগাভ্যাস দ্বারা ঈশ্বর সক্ষাৎকার করার নাম উপাসনা, উপনাসনার ফল জ্ঞানোন্নতি।

জীবাত্মা বিভু বা ব্যাপক হইতে পারে না [সাংখ্য ৬।৬০]
পরমেশ্বর নিরাকার এবং আকাশবৎ সর্ব্বব্যপক বলিয়া কোন পদার্থ হইতে তাঁহার কিংবা কোন পদার্থের তাঁহার হইতে পৃথক হওয়া অসম্ভব। আবার পরস্পরের মধ্যে ব্যাপ্য-ব্যাপক সম্বন্ধ বশতঃ একও হইতে পারে না, ব্রহ্ম অখন্ড। প্রকৃতি(জড়) ও জীবাত্মা থেকে ভিন্ন চেতন পদার্থ। যে বস্তু যেমন তাকে তেমন মানা উচিৎ, শরীরের ভেতর আত্মার হওয়ার অর্থ ইহা নহে শরীর জীবাত্মা। তদানুরুপ মূর্তির ভেতর ঈশ্বর তত্ত্ব বিদ্যমান ইহার অর্থ মূর্ত্তি ঈশ্বর নয়, এক্ষেত্রে ইহাও বিচার্য্য় এই যে ঈশ্বর সর্ব্বব্যাপক অর্থাৎ মূর্ত্তির ভেতর ও বাহিরে সর্বত্র বিদ্যমান। ব্রহ্ম ব্যাপক হওয়ায় জীব ও পৃথিবী আদি পদার্থ ব্রহ্ম হইতে পৃথক থাকিতে পারেনা এবং স্বরূপতঃ একও হইতে পারে না। যেমন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিবার পূর্বে ভিন্ন স্থানে মাটি, কাঠ, লোহা আদি পদার্থ আকাশেই থাকে, যখন মূর্ত্তি নির্মিত হইয়া গেল তখনও আকাশেই বর্ত্তমান রহিল এবং যখন নষ্ট (বিসর্জন) হইয়া গেল অর্থাৎ সেই মূর্ত্তির সব অবয়ব ভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত হইল তখনও আকাশেই রহিল অর্থাৎ তিনকালে আকাশ হইতে ভিন্ন।

য় এক ইদ্বিদয়তে বসু মর্তায় দাশুষে ।

ঈশানো অপ্রতিষ্কৃত ইন্দ্ৰো অঙ্গঃ।। -সামবেদ ১৩৪১
পদার্থঃ (য়ঃ এ ইত্) যিনি একই আর (দাশুষে) আত্ম সমর্পণকারী (মর্তায়) মনুষ্যের (বসু) শ্রেষ্ঠ গুণ-কর্ম-স্বভাব রূপ ঐশ্বর্য (বিদয়তে) বিশেষ রূপে দান করেন। (অঙ্গ) হে ভাই! তিনি (ঈশানঃ) সবার শাসক (অপ্রতিষ্কৃতঃ) কারোর দ্বারা প্রতিকার করেন না (ইন্দ্রঃ) ইন্দ্র নামক পরমেশ্বর।। ভাবার্থঃ পাষাণাদি মূর্তি কখনই পরমেশ্বর নহে, পরন্তু যিনি এক, নিরাকার, স্তোতার ঐশ্বর্য দানকারী, সর্বাধীশ্বর সেই পরমেশ্বরের নাম দ্বারা আহ্বান করা উচিত ।।

তেত্রিশ দেব অর্থাৎ পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, চন্দ্রমা, সূর্য্য এবং নক্ষত্র এই সকল সৃষ্টির নিবাস স্থান বলে আট বসু বলা হয়। প্রাণ,আপান, ব্যান, উদান, সমান, নাগ, কূর্ম্ম, কৃকল, দেবদত্ত, ধনঞ্জয় এবং জীবাত্মা__এই এগারটি দেহান্তকালে রোদন করায় বলে রুদ্র বলা হয়; সংবৎসরের বার মাস (বৈশাখ, জৈষ্ঠ প্রভৃতি) সকলের আয়ু হরণ করে বলে এই সকলকে আদিত্য বলে। পরম ঐশ্বর্য্যের হেতু বলে বিদ্যুতের নাম ইন্দ্র। যজ্ঞকে প্রজাপতি বলার কারণ তদ্বারা বায়ু,বৃষ্টি,জল এবং ওষধির বিশুদ্ধি, বিদ্বানদের সন্মান এবং বিবিধ শিল্পবিদ্যার সাহায্যে প্রজাপালন হয়ে থাকে। এই সমস্ত কিছু দিব্য গুণযুক্ত থাকায় তেত্রিশকোটি দেব বলা হয় ["ত্রয়স্ত্রিংশন্ত্রিশতা"] শতপথ ব্রাহ্মণের চতুর্দ্দশ কান্ডে স্পষ্টরূপে লেখা আছে, ঋগ্বেদ ম০১।সূ০১৬৪।ম০৩৯।
ঋগ্বেদ ১০।৪৮।৫ মন্ত্রে ঈশ্বরের স্থানে অন্য কাহারও পূজা করতে বা অন্য কাউকে ঈশ্বর বলে মানতে মানা করা হয়েছে। "অহমিন্দ্রো ন পরাজিগ্য ইন্ধনং ন মৃত্যবেऽব তস্থে কদা চন। সোমমিন্মা সুন্বতো যাচতা বসু ন মে পূরবঃ সখ্যে রিষাথন" দিব্য গুণযুক্ত হলেই দেবতা বলা হয়; যথা-পৃথিবী____কিন্তু পৃথিবী কে ঈশ্বর বা উপাস্য বলে মানা মূর্খামী। দেবতা শব্দে ঈশ্বর অর্থ গ্রহণ করা ভুল, পরমেশ্বর দেবতাদের দেবতা বলে তাঁকে মহাদেব বলা হয়; কেননা তিনি সমস্ত জগতের উৎপত্তি স্থিতি ও প্রলয়কর্ত্তা ণ্যায়াধীশ এবং অধিষ্ঠাতা। দেবতাদের অধিপতি ও সর্ব্বাপেক্ষা মহান বলে পরমাত্মা চতুত্রিংশ উপাস্য দেবতা। যজুর্বেদ ১৩।৪ পরমাত্মাকেই ভক্তির নির্দেশ করা হয়েছে। ঈশ্বর নিরাকার, তিনি সাকার হলে ব্যাপক হতেন না আর ব্যাপক না হলে সর্ব্বজ্ঞাত্বাদি গুণও তাঁহার সম্ভব হতো না। উপাসনা শব্দের অর্থ সমীপস্থ হওয়া। অষ্টাঙ্গ যোগদ্বারা পরমাত্মার সমীপস্থ ইত্যাদি কর্ম যোগদর্শন সাধনপাদ সূ০ ৩০,৩২ পড়লে পাবেন। জল, অগ্নি আদি অষ্ট বসুর সঠিক জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে তার থেকে উপকার লাভ করা ও সঠিক ভাবে ব্যাবহার উপযোগী রাখা পূজা বলা যায়। নিরাকার ঈশ্বরের মূর্তি কিভাবে হওয়া সম্ভব? আর বর্তমানে যেসব ঈশ্বরের মূর্তি তৈরি বা পূজা করা হয়, সেই সবগুলোর আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রকমের। যার ফলে ঈশ্বরকে বহুরূপী (চতুর্ভুজ, অষ্টভূজ, চতুর্মুখ আদি) বানিয়ে ফেলেছে। আর মানুষের মতো ঈশ্বরকে শিব, বিষ্ণু, মহেশ আদি রূপ বানিয়ে তাঁর ভক্তদের মধ্যে ঘৃণা, বৈমনস্য, ঈর্ষার বীজ বপন করছে।

শাস্ত্রার্থ
Note: অধ্যক্ষ ঘন্টি বাজিয়ে প্রথম পক্ষ আর্য সমাজকে প্রশ্ন করতে বলেন। পণ্ডিত মহেন্দ্রার্যজী ঈশ্বর প্রার্থনোপরান্ত নিম্ন প্রকার প্রশ্ন করেন -
🟠 শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজী আর্য -
১. বেদের কোন মন্ত্রে ঈশ্বরের মূর্তি বানানোর আজ্ঞা আছে?
২. চার বেদের মধ্যে যেকোনো একটি মন্ত্র বলুন যারমধ্যে পরমেশ্বরের মূর্তি বানাতে তথা তার পূজা করার আজ্ঞা আছে?
৩. বেদ মন্ত্র দ্বারা বলুন যে ঈশ্বরের মূর্তি সোনা, রূপা, পিতল, পাথর, মাটি, কাঠ আদি কোন বস্তুর বানানো উচিত?
৪. ঈশ্বরের মূর্তি কতটা লম্বা, কতটা চওড়া, কতটা মোটা বা ভারী বানানো উচিত?
৫. তার আকৃতি কিরকম হবে আর তার রঙ লাল, সবুজ, হলুদ আদি কি রকমের হবে? বেদ মন্ত্রের দ্বারা সিদ্ধ করুন।
য়জুর্বেদ অধ্যায় ৪০ এর প্রথম মন্ত্র -
ঈশা বাস্যমিদꣳসর্বম্ য়ত্কিঞ্চ জগত্যাম্ জগত্।
ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্।।
এই মন্ত্রটির মধ্যে ঈশ্বরের সর্বব্যাপকতার বর্ণনা আছে যে সৃষ্টির সমস্ত চর আর অচর ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত অর্থাৎ সে প্রত্যেক অণুর মধ্যে ব্যাপ্ত। সর্বব্যাপকের মূর্তি কিভাবে বানানো সম্ভব? (টার্ন টিং টিং টিং) আমি আমার বাকি তিনটি প্রশ্ন পরের বার বলবো।
🔵 শ্রী স্বামী প্রেমদাসজী -
সজ্জনগণ! এই পণ্ডিতজী এটাও জানে না যে সমস্ত বেদ, শাস্ত্র ও পুরানাদিতে স্পষ্টভাবে মূর্তি পূজার বর্ণনা ভরে পরে আছে আর ইনি বলছেন যে মূর্তি পূজার অনুকূলতায় বেদমন্ত্র শোনান! আরে একটা হলে তো শোনাবো, অনেক আছে, কতদূর শোনাবো? মূর্তিপূজা রাম করেছে, রাবণ করেছে, একলব্য করেছে আর তার ফলও প্রাপ্ত করে। মূর্তিপূজা বেদানুকূল ছিল বলেই তো এইসব লোকেরা করেছিল। যদি না হতো তাহলে এই রামাদি মহাপুরুষ কেন করতো? আমি বলি কি যদি বেদ বিরুদ্ধ হয় তাহলে বরং আপনিই বেদমন্ত্রের দ্বারা সিদ্ধ করে দেখান তবে জানবো। (টার্ন)
🟠 শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজী আর্য -
সজ্জনগণ! স্বামীজী আমার একটা প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়ে এদিক-সেদিকের কথা বলে সময় নষ্ট করে দিয়েছেন। মূর্তিপূজা বেদের মধ্যে ভরে পরে আছে এটা তো বলে দিলেন, কিন্তু বেদের একটা প্রমাণও দিলেন না আর বলে দিলেন যে মূর্তিপূজা রাম করেছে। কখন করেছে আর কোথায় করেছে? এটা বললেন না। আপনার ঘাটিয়াঘাট ফার্রুখাবাদের মধ্যে করেছিল নাকি? তাছাড়া মূর্তিপূজা রাম করুক বা শ্যাম করুক, বেদ বিরুদ্ধ কাজ অনুকরণীয় নয়। বাকি রইলো রাক্ষসরাজ রাবণ তথা ভীলরাজ একলব্যের কথা! তা এরা দুজন অনার্য সংস্কৃতির সঙ্গে সম্বন্ধিত হওয়ার কারণে প্রমাণের শ্রেণীতে আসে না। অনার্য ব্যক্তি অনেক কিছুই করতে পারে, আপনি ঋষি মহর্ষি তো পান নি, ভীল আর রাক্ষসের মতো গুরু পেয়েছেন যার অনুকরণ করছেন। আপনার বুদ্ধিতে সমস্যা আছে, এই দেখুন! রাবণ মূর্তিপূজার ফল পায় লঙ্কা সহিত বিনাশ আর একলব্যকে ডান আঙ্গুল দিয়ে অঙ্গ ভঙ্গ হতে হয়েছিল। এখন আপনি মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে য়জুর্বেদ অধ্যায় ৩২, মন্ত্র ৩ এর প্রমাণ দেখুন - "ন তস্য প্রতিমাऽঅস্তি য়স্য নাম মহদ্যশঃ" যারমধ্যে বলা হয়েছে যে ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই। জড় (মূর্তি) পুজকের কি দশা হয়? সেটা কত সুন্দর শব্দে য়জুর্বেদ অধ্যায় ৪০ মন্ত্র ৯ এরমধ্যে বলা হয়েছে -
অন্ধন্তমঃ প্র বিশন্তি য়েऽসম্ভূতিমুপাসতে।
ততো ভূয়ऽইব তে তমো য়ऽউ সম্ভূত্যাꣳ রতাঃ।।
অর্থাৎ - যে কারণ রূপ প্রকৃতিরই উপাসনা করে সে ঘন অন্ধকারের (অজ্ঞান) মধ্যে পড়ে যায় আর যে কেবল প্রকৃতি দ্বারা নির্মিত পদার্থেরই উপাসনা করে সে তার থেকেও ঘন অন্ধকারকে (অজ্ঞান) প্রাপ্ত করে।
Note: শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজী আরও স্পষ্ট করে বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু অধ্যক্ষ মহোদয় ঘন্টি বাজিয়ে সময় সমাপ্তির সূচনা দিয়ে দেন।
🔵 শ্রী স্বামী প্রেমদাসজী -
সজ্জনগণ! ইনি এটাও জানেন না যে রাম কবে আর কোথায় মূর্তিপূজা করেছিল। সেতুবন্ধ রামেশ্বরে শিবলিঙ্গের স্থাপনা রামই করেছিল। আপনি বেদের প্রমাণ চাইছেন, কিন্তু কলিযুগে তো রামায়ণ, গীতা আর পুরাণাদিই হচ্ছে পঞ্চম বেদ তবুও বেদেরই প্রমাণ দিচ্ছি এই নিন -
এহ্যশ্মানমা তিষ্টাশমা ভবতু তে তনুঃ।
কৃণ্বন্তু বিশ্বদেবা আয়ুষ্টে শরদঃ শতম্।।
(অথর্বঃ ২|১৩|৪)
উপরিউক্ত মহামন্ত্র স্পষ্টতঃ পাষাণ-প্রতিমার মধ্যে ঈশ্বরের আহ্বান করছে। আমরা সবাই এই "মন্ত্র দিয়েই তো মূর্তির মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করাই" আর শতপথের মধ্যেও মহাবীরের মূর্তি তৈরির আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যথা -
অথমৃত্ত্পিণ্ডম্ পরিগ্রহণ্তি।
তন্মৃদশ্চা পাম্চ মহাবীর কৃতা ভবন্তি।।
এইভাবে আমি সর্ব প্রকারে মূর্তিপূজা সিদ্ধ করেছি।
Note: এটুকু বলে সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই স্বামীজী চুপ হয়ে যান আর অধ্যক্ষ মহোদয় শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজীকে উত্তর দেওয়ার জন্য ঘন্টি বাজিয়ে সংকেত করে দেন।
🟠 শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজী আর্য -
সজ্জনগণ! আমি স্বামীজীর কাছে বেদের প্রমাণ চেয়েছি কিন্তু তিনি দিচ্ছেন রামায়ণের প্রমাণ আর তাও আবার পুরোটাই অশুদ্ধ। রামায়ণের মধ্যে মূর্তিপূজার কথা নেই সেখানে তো কেবল এই বর্ণনা আছে যে -
এতত্তু দৃশ্যতে তীর্থম্ সাগরস্য মহাত্মনঃ।
সেতুবন্ধ ইতি খ্যাতম্ ত্রৈলোক্যেন চ পূজিতম্।।২০।।
এতত্ পবিত্রম্ পরমম্ মহাপাতক নাশনম্।
অত্র পূর্ব মহাদেবঃ প্রসাদমকরোদ্বিভুঃ।।২১।।
(বাল্মীকি রামায়ণ, যুদ্ধকাণ্ড, অধ্যায় ১২৫)
এখানে যে এই বিস্তৃত সমুদ্রে ভাসমান পুল দেখা যাচ্ছে, এটা সেতুবন্ধ নামে প্রসিদ্ধ যা সারা বিশ্বের মধ্যে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখার যোগ্য।।২০।। এই পুলটি হল পরম পবিত্র আর মহাপাতকী রাবণের নাশকারী। এখানে পূর্বে অর্থাৎ যাওয়ার সময় বিভুঃ মহাদেবঃ (ব্যাপক পরমেশ্বর) প্রসাদম্ অকরোত্ (কৃপা করেন) যারজন্য এই পুলটি বাঁধা সম্ভব হয়েছিল।।২১।। এই অভিপ্রায় আছে। এই বাক্য শ্রীরাম লঙ্কা থেকে ফেরার সময় সীতাকে বলেছিল, এরমধ্যে শিবলিঙ্গ পূজা বা কোনো প্রকারের মূর্তিপূজার লেশমাত্রও বর্ণনা নেই। একইভাবে অথর্ব বেদের মন্ত্রটি দিয়েও পাথরের মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা সিদ্ধ হয় না। মন্ত্রটির মধ্যে গুরু নিজের ব্রহ্মচারীকে পাথরের উপরে চড়ার আদেশ দিয়ে বলছে যে "তুমি এখানে বসো আর তোমার শরীর এই পাথরের সমান দৃঢ় হোক আর সব উত্তম গুণকারী পদার্থ তথা পুরুষ তোমার আয়ুকে শতবর্ষ করুক"। বলুন স্বামীজী, এটা তো অন্য কিছু বেরিয়ে এলো! আপনি অজর-অমর ঈশ্বরকেও ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচার আশীর্বাদ দিয়ে দিলেন আর আপনি ঈশ্বরেরও ঈশ্বর হয়ে গেলেন, পরমাত্মা যে অপরিমিত তাকেও পরিমিত করে দিলেন। আপনি যখন পাষাণ প্রতিমার মধ্যে প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে মৃতক শরীরের মধ্যে কেন করেন না? তাহলেই তো জীবিত হয়ে পুনঃ ক্রিয়াশীল হতে পারে। আপনার পাষাণ বুদ্ধিকে কি বলবো, সেটা জড়ের পূজা করতে-করতে স্বয়ং জড় হয়ে গেছে। আপনি যে মাটির মহাবীরের কথা বললেন, সেটা তো যজ্ঞ পাত্রের নাম। শতপথ তুলে দেখুন, মাটির মহাবীর বানানোর কথা কোথাও নেই। আপনি সম্পূর্ণ সময় এদিক- সেদিকের কথা বলেই নষ্ট করলেন, কিন্তু মূর্তিপূজার সিদ্ধি করে এমন কোনো যুক্তি সংগত প্রমাণ দিলেন না। আপনার কাছে যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না থাকে তাহলে বাকি নিম্নাঙ্কিত ৩টি প্রশ্নেরই উত্তর দিন -
১. আজকাল মন্দিরের মধ্যে যেসব মূর্তিগুলো আছে সেই মূর্তিগুলোর মধ্যে ঈশ্বরের মূর্তি কোনটি? দুই মুখ, চার মুখ, ছয় মুখ, এক মুখ তথা দুই হাত বা এক মুখ তথা চার হাত বা আট হাতওয়ালা, রুণ্ড মুণ্ড নাকি গোল মটোল আদি, কোনটি? এদের মধ্যে কোনটি বেদানুকূল আর কোনটি বেদ বিরুদ্ধ? যদি সবগুলোই ঈশ্বরের হয় তাহলে বিরোধটা কিসের? সপ্রমাণ বলুন।
২. বর্তমান সময়ে মন্দিরের মধ্যে রাম, কৃষ্ণ আদি মানুষের, কচ্ছপ ও মাছ আদি জলচরের তথা বরাহ, নৃসিংহ আদির মূর্তি আছে। এদের মধ্যে পরমেশ্বরের মূর্তি কোনটি?
৩. আপনার পঞ্চম বেদ গীতা, রামায়ণ ও পুরাণের মধ্যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, রাম, কৃষ্ণ আদি ব্যবহারতঃ কেউই পরমেশ্বর সিদ্ধ হয় না তাহলে তাদের নামে তৈরি মূর্তিগুলোও পরমেশ্বরের কিভাবে হতে পারে? যেই মহাবীরকে আপনি ঈশ্বর মানেন সেটা কি জৈনদের তীর্থাঙ্কর মহাবীর নাকি লেজওয়ালা হনুমান? যদি লেজওয়ালা হয় তাহলে কি লেজ ঘষে পরমেশ্বর বানাতে চান? আপনার মূর্তিপূজা তো বেদ বিরুদ্ধই, তথাকথিত পঞ্চম বেদ পুরাণেরও বিরুদ্ধ। যথা -
য়স্যাত্ম বুদ্ধিঃ কুণ্পেত্রিধাতুকে।
স্বধীঃ কলত্রাদিষু ভৌম ইজ্যধীঃ।।
য়স্তীর্থ বুদ্ধিঃ সলিলেন কর্হিচিত্।
জনেষ্বভিজ্ঞেষু স এব গোখরঃ।।
(শ্রীমদ্ভাগবত স্ক০ ১০ অ০ ৮৪)
দেখুন উপরিউক্ত শ্লোকের মধ্যে মূর্তি পূজককে "ষাঁড়" আর "গাধা" বলা হয়েছে।
দুর্গাগ্রে শিব সূর্যস্য বৈষ্ণবাখ্যান মেব চ।
য়ঃ করোতি বিমূঢ়াত্মা গার্দভীম্ য়োনিমাবিশেত্।।
(ভবিষ্য পুরাণ মধ্য পর্ব ২, অ০ ৭, শ্লোক ৩১)
এরমধ্যে বলা হয়েছে যে দূর্গার আগে শিব, সূর্য বা বিষ্ণুর যে স্তুতি করে সেই মূঢ় গাধার য়োনিতে যায়।
অদ্য প্রভৃতি য়ে লোকা নৈবেদ্য ভুঞ্জতে তব।
তে জন্মৈকম্ সার মেয়া ভবিষ্যন্তেব ভারতে।।
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ কৃষ্ণ জন্ম খণ্ড ৩৭|৩২)
অর্থাৎ - পার্বতী শিবজীকে বলে যে আজ থেকে যারা তোমার নৈবেদ্য লাগিয়ে প্রসাদ খাবে তারা ভবিষ্যতে পরজন্মে কুকুর হবে। (টার্ন)
🔵 শ্রী স্বামী প্রেমদাসজী -
আমি আপনাকে বারংবার বুঝিয়েছি যে প্রভুকে প্রাপ্ত করার জন্য মূর্তিপূজা হল একটি সিড়ি আর সকল বিদ্বানরা এটাকে মুক্ত কণ্ঠে প্রশংসা করার সঙ্গে স্বীকার করেছে। এখন আপনি যখন আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন তখন বুঝবেন। আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি আর মূর্তিপূজাও সিদ্ধ করেছি।
Note: এরপর অধ্যক্ষ মহোদয়জী সময়ের পূর্বেই ঘোষণা করে দেন যে এখন পৌরাণিক সনাতন ধর্মের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হবে আর আর্য সমাজের পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়া হবে। এটা বলে তিনি স্বামীজীকে প্রশ্ন করার আজ্ঞা দেন।

স্বামী প্রেমদাসজী নিজের দাড়ি-গোঁফে হাত বুলিয়ে একবারেই নিম্নাঙ্কিত ৮টি প্রশ্ন করে দেন। যা এই রকম -
🔵 শ্রী স্বামী প্রেমদাসজী -
১. স্বামী দয়ানন্দ উস্তরকে নমস্কার করা তথা ঊখল মূসলের পূজা লিখেছেন। এর দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তিনি মূর্তিপূজা মানতেন, সেইজন্যই লিখেছেন।
২. আপনার দ্বারা পৌরাণিকদের গাধা বলা শ্লোকটা ভুল (অশুদ্ধ), তারমধ্যে এরকমটা নেই। যদি এরকমও হয় তাহলেও স্বামী দয়ানন্দের বাপ দাদারাও তো মূর্তি পূজক ছিল।
৩. স্বামী দয়ানন্দের মায়ের নাম কি ছিল?
৪. আর্য সমাজী ঈশ্বরকে সর্বব্যাপক মানে, আমরাও পাথরের মধ্যে ঈশ্বর মেনেই তাঁর পূজা করি, পাথরের মধ্যে কি ঈশ্বর নেই?
৫. স্বামী দয়ানন্দ নিয়োগের আদেশ দিয়ে পতিদের লাইন (পঙক্তি) বানিয়ে দেন, স্বামীজী ব্যভিচারের প্রচারক ছিলেন।
৬. স্বামী দয়ানন্দ যদি ভালো হতেন তাহলে বেশ্যার হাতে কেন মারা যান? তার সঙ্গে ওনার নিশ্চয়ই অনুচিত সম্বন্ধ থাকতে পারে, এইজন্য তো এরকম খারাপভাবে মারা যান।
৭. স্বামী দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে অন্য মতের সিদ্ধান্ত তথা সংস্থাপকদের ভুল বলেছেন। বলুন, যে সবাইকে ভুল বলছে সে স্বয়ং ভুল হতে পারে নাকি বাকি সবাই ভুল হতে পারে? সম্পূর্ণ অসত্যার্থ প্রকাশ বানিয়েছেন।
৮. যদি মূর্তিপূজা মানেন না তাহলে আমি বলছি যে আর্য সমাজী দয়ানন্দের চিত্র পূজা করে, ভোগ লাগায় আর আরতি করে। যদি এরকমটা না করে তাহলে এই নিন দয়ানন্দের ছবি, এর উপর হাত দিয়ে পাঁচটা জুতো লাগিয়ে দিন। (টার্ন)
Note: এই অন্তিম প্রশ্নটির উপর স্বামীজী পুরো শক্তি লাগিয়ে দেন। ততক্ষণে ঘন্টি বেজে যায় আর স্বামীজীর বলার সময় সমাপ্ত হয়ে যায়।
🟠 শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজী আর্য -
সজ্জনগণ! স্বামী দয়ানন্দ কোথাও উস্তরকে নমস্কার তথা ঊখল মূসলের পূজার কথা লেখেন নি। যদি দেখাতে পারেন তাহলে আমি এখনই আমার পরাজয় স্বীকার করে নিবো। আমি সংস্কার বিধি অধ্যক্ষজীর কাছে দিয়েছি।
[[Note: এতে স্বামী প্রেমদাসজীর অবস্থাটা দেখবার মতো ছিল, ক্রোধে মুখ লাল হয়ে যায় আর গর্জন করে অধ্যক্ষজীকে বলেন, "মূর্খ! গাধা!! আমি তো তোমাদের জন্য মরি আর তুমি তাদেরই হয়ে বাজাচ্ছো!" ]]
পরবর্তী প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমি বলবো যে, আপনি ভাগবতের মধ্যে "গাধা" শব্দ স্কন্ধ ১০ অধ্যায় ৮৪ শ্লোক ১৩ পড়ে দেখুন, সেখানে স্পষ্টভাবে মূর্তিপূজককে গাধা বলা হয়েছে। তারপর আপনি বলেছেন যে দয়ানন্দের বাপ দাদা মূর্তি পূজক ছিল। দেখুন, আমি হলাম দয়ানন্দের উকিল, আমি ওনার বাপ দাদার উকিল না। তারা কি ছিল কি ছিল না? এতে আমার কোনো যায় আসে না, ওনার বাপ দাদা সেটাই ছিল, যা আপনার বাপ দাদা ছিল, আমার উপর সেইসবের কোনো উত্তরদায়িত্ব নেই। তৃতীয় প্রশ্নটিতে স্বামীজীর মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেছেন। ওনার মায়ের নাম "য়শোদা বাই" ছিল, তবে এটা তো শাস্ত্রার্থের বিষয় না। প্রশ্নের সংখ্যাটা আপনি বাড়াতে চাইছিলেন তাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি পৌরাণিক সনাতন ধর্মের মন্ত্রী ও প্রধানের ঠাকুমা ও তার বড়ো ঠাকুমার নাম কি ছিল তথা রামের বড়ো ঠাকুমার নাম কি ছিল আদি? মায়েদের নাম যদি আপনার শুনতে ভালো লাগে তাহলে পৌরাণিক ঋষ্যাদির মায়েদের নামগুলো শুনে নিন আর পুরাণধারীদের "রিসার্চ স্কলার মার্কা বুদ্ধির" পরিচয়টাও দেখে নিন - শুকদেবজী টিয়া পাখি থেকে জন্মেছে, কণাদি পেঁচা থেকে জন্মেছে, শৃঙ্গীঋষি হরিণের পেটে জন্মেছে, দ্রোণাচার্য পাতার থালা থেকে, বশিষ্ঠজী গণিকা (বেশ্যা) থেকে, মাডব্য ব্যাঙ থেকে জন্মেছে, তথা হনুমানজী কান থেকে জন্মেছে আদি আদি। চতুর্থ প্রশ্নে আপনি বলেছেন, "পাথরের মধ্যে ঈশ্বরকে মেনে পূজা করি তাহলে কি পাথরের মধ্যে ঈশ্বর নেই"? পাথরের মধ্যে ঈশ্বর তো আছে কিন্তু তারমধ্যে আপনার আত্মাটাই তো নেই। মিলন তো সেখানেই হয় যেখানে মিলনকারী আর যার সঙ্গে মিলবে উভয়ই উপস্থিত থাকবে। পাষাণ মূর্তির মধ্যে আপনার প্রবেশ অসম্ভব আর পাষাণের ঈশ্বর আপনার সঙ্গে বাইরে এসে মিলন করবে না। গীতাতে ভগবান্ কৃষ্ণ বলেছেন -
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাম্ হৃদ্দেশেऽর্জুন তিষ্ঠতি।
ভ্রাময়ন্সর্বভূতানি য়ন্ত্রা রূঢ়ানি মায়য়া।।
(অধ্যায় ১৮|৬১)
অর্থাৎ - হে অর্জুন! (য়ন্ত্রারূঢ়ানি) পরমাত্মার নিয়মরূপী যন্ত্রের মধ্যে স্থির (সর্বভূতানি) সকল প্রাণীকে (মায়য়া) নিজের প্রকৃতিরূপী মায়া দ্বারা (ভ্রাময়ন্) ভ্রমণ করিয়ে (ঈশ্বরঃ) পরমেশ্বর (সর্বভূতানাম্) সকল প্রাণীদের (হৃদ্দেশে) হৃদয় দেশের মধ্যে (তিষ্ঠতি) অধিষ্ঠিত আছেন।
সে যখন আপনার হৃদয়ের মধ্যেই বিরাজমান আছে তাহলে মানুষের দ্বারা নির্মিত পাষাণ মূর্তির মধ্যে কেন মাথা ঠুকছেন? পরমাত্মা দ্বারা নির্মিত শরীরের হৃদয় দেশের মধ্যে কেন দেখছেন না? (টার্ন)
🔵 শ্রী স্বামী প্রেমদাসজী -
স্বামী দয়ানন্দ নিয়োগ লিখে ব্যভিচারের প্রচার করেন আর সত্যার্থ প্রকাশ বানিয়ে সংসারকে বিভ্রান্ত করেন তথা বেদের নামে সবকিছু মিথ্যা লিখেছেন। আপনি জানেন না যে, সনাতন সূর্যের উপর যে মুখ তুলে থুথু ফেলবে সে স্বয়ং নিজের মুখের উপর থুথু ফেলবে। আপনি স্বামীজীর ছবিকে জুতো দিয়ে পূজা করেন নি যেমনটা বুদ্ধদেব বিদ্যালঙ্কার দ্বারা হায়দ্রাবাদে ক্রমাগত জুতো দিয়ে হয়েছিল। ...(বিঘ্ন)
Note: এতে পণ্ডিত মহেন্দ্রজী সংকেত করে অধ্যক্ষজীকে বলেন যে - এনাকে অশিষ্ঠতা হতে থামান। অনুচিত বলার জন্য অধ্যক্ষজী থামিয়ে দেন, আর থামিয়ে দেওয়ার জন্য স্বামীজী পুনঃ ক্রোধের সঙ্গে বলতে থাকেন যে - "মূর্খ কোথাকার তুমি কি জানো"? অধ্যক্ষজী বলেন যে - আমি আর্যসমাজী পণ্ডিতের যোগ্যতা তথা শালীনতা উভয়ের উপর মুগ্ধ, আপনি ঠিকভাবে বার্তালাপ করুন।" স্বামী প্রেমদাসজী পণ্ডিত মহেন্দ্রজীকে লক্ষ্য করে বলেন যে, আপনার আগমনে লোকজন আপনাকে "য়াদব" বলছিল, আপনি ব্রাহ্মণ কেন হন নি? আর্যসমাজের গুণ কর্ম স্বভাবকারী বর্ণ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি তো?" এই বলে চুপ হয়ে যান, তখন অধ্যক্ষজী বলেন যে - আপনার সময় এখনও বাকি আছে, আপনি বলুন। এতে স্বামীজী বলেন যে, এখন তিনি তার শেষ সময় এই পণ্ডিতজীকে দিচ্ছেন যাতে ইনি ঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেন।
🟠 শ্রী পণ্ডিত মহেন্দ্রজী আর্য -
ঋণ করে খাওয়ার স্বভাব আমার নেই, এই দয়া আপনি আপনার ভক্তদের মধ্যে ভাগ করে দিবেন। আপনি এটা কেন বলছেন না যে আপনার কাছে বলবার মতো কিছুই নেই? গালি দেওয়ার কোষও কি শূণ্য হয়ে গেছে? এখন আমি আপনার গালির উপহার আপনাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি যাতে এগুলো আপনি আপনার মান্য দেবতাদের জন্য প্রয়োগ করতে পারেন। আপনি সনাতন সূর্যের উপর যে থুথু দেওয়ার কথাটা বলেছেন সেটাও ঠিক কারণ "সনাতন সূর্য কামাতুর হয়ে নিজের ভাগ্নির সঙ্গে ভোগ করেছে"। যদি সনাতনী সূর্য এরকম ব্যভিচার প্রচারক দেবতা হয়, তাহলে শুধু আমি কেন, পুরো সংসার তাকে থুথু দিবে, যে কিনা "কুমারী কুন্তীকেই গর্ভবতী" করে দেয়। কিন্তু যদি বর্তমানে আপনার সনাতনী সূর্য এরকমটা করে তাহলে ভারতের সব নারী তার প্রতি বিদ্রোহ করে দিবে আর আপনার সূর্য জেলের ভিতরে দেখা যাবে আর কোনো ধরনের প্রতিভূতিতেও তার জামিন হবে না। আপনি নিয়োগের উপর আপত্তি করেছেন, অথচ আপনার ঘরের মধ্যেই নিয়োগজ সন্তানের বাহুল্য আছে। পাণ্ডব নিয়োগজ ছিল, কর্ণ তথা হনুমানও নিয়োগজ ছিল। বাকি রইলো ব্যভিচার প্রচারের কথা, তা স্বামী দয়ানন্দজী আপনার ঘরকে ব্যভিচারের কলঙ্ক থেকে বাঁচানোর জন্যই নিয়োগকে বেদোক্ত সিদ্ধ করেন। কারণ আপনার ভগবান্ "বিষ্ণু ছল করে বৃন্দার সতীত্ব নষ্ট করে, অহিল্যার সতীত্ব ইন্দ্র নষ্ট করে, ব্রহ্মা নিজের পুত্রী সরস্বতীর উপর আসক্ত হয়ে যায় আর শিব নগ্ন হয়ে মোহিনীর পিছু নেয় তথা দারুবনের মধ্যে গিয়ে ঋষি পত্নীদের সঙ্গে কুকর্ম করে এমনকি ঋষিদের অভিশাপে তার লিঙ্গ টুকরো হয়ে যায়"। এখন বলুন ব্যভিচারের প্রচারক স্বামী দয়ানন্দজী ছিলেন নাকি আপনার ভগবান্ মন্ডলী? যখন আপনার ভগবানের আচরণ এইরকম তাহলে ভক্তরাও তার মতোই আচরণ করতে পারে। এখন আসছি পতির পঙক্তিওয়ালা কথাটির উপর! স্বামীজী সেটা আবশ্যক বলেন নি, বরং "বিশেষ পরিস্থিতিতে আপদ্ধর্ম" ব্যবস্থার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আপনার ওখানে তো অনাবশ্যকভাবে "দ্রৌপদীর পাঁচ, জটিলার সাত, বার্ক্ষীর দশ আর দিব্যা দেবীর ২১টা পতি" বলা হয়েছে আদি-আদি। এখন বলুন পতির পঙক্তি (লাইন) আপনার ওখানে আছে নাকি স্বামী দয়ানন্দজীর দ্বারা মাত্র আপদ্ধর্ম ব্যবস্থা ব্যাখ্যার মধ্যে আছে? আপনি বলেছেন স্বামীজীর নোংরা মৃত্যু হয় কারণ বেশ্যার সঙ্গে ওনার সম্বন্ধ ছিল। সমস্ত অনুসন্ধান দ্বারা সিদ্ধ হয়ে গেছে যে বেশ্যাগমনের বিরোধ করার কারণে এক বেশ্যার দেওয়া বিষ "আপনারই কুলকলঙ্কী জগন্নাথের দ্বারা দেওয়া হয়েছিল"। যদি বেশ্যার সঙ্গে ওনার অনুচিত সম্বন্ধ থাকতো তাহলে কি তিনি এইভাবে মারা যেতেন? বরং সেই রকম সুখোপভোগ করতেন যেভাবে আপনার পরমাত্মা শিবজী মহানন্দা বেশ্যার ঘরে গিয়ে শুক্লরূপে একটি সোনার দুল দিয়ে নরম খাটে আর গদিতে শোয় আর তিন দিন পর্যন্ত সুখ পূর্বক সম্ভোগ করে। আপনার "ভবিষ্য পুরাণ" তো এটাও বলে যে, রবিবারের দিন পৌরাণিক ব্রাহ্মণদের যদি বেশ্যারা বিশেষভাবে রতিদান করে তাহলে তাদের বিষ্ণুলোকের প্রাপ্তি হবে। বলুন, আপনিও কি এইরকম স্বর্গের টিকিট বিলি করেন নাকি? আপনি সত্যার্থ প্রকাশকে অসত্যার্থ প্রকাশ বলেছেন অথচ সত্যার্থ প্রকাশের বিজ্ঞান সম্মত এবং তর্ক সঙ্গত সিদ্ধান্তের উপর মুখ খোলার সাহসই কারও নেই। যেটা যেমন ছিল স্বামীজী সেটা সেই রকমই লিখে দিয়েছেন, সত্য লেখা কি খারাপ? তাহলে আপনি অন্যের ওকালতি কেন করছেন? যদি সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা হল তাহলে তার উত্তর দিবেন, আপনি নিজের ওকালতি করুন। আপনি বলেছেন আমি কেন ব্রাহ্মণ হইনি, য়াদবই কেন আছি? আমি বলি কি আর্য সমাজ আমাকে ব্রাহ্মণ মনে করে আর আমি পুরোহিত্য কাজও করি আর সেটা এখানকার প্রধানাচার্যজীও জানেন। কিন্তু কখনও-সখনও য়াদব এই কারণে বলে ফেলি যে তারমধ্যে আমার গৌরবের প্রাপ্তি আরও অধিক হয়ে যায়, কারণ আপনার দাদা পরদাদা য়দুকুলভূষণ কৃষ্ণের নকল মূর্তির চরণামৃত ঢক-ঢক করে পান করে এসেছে আর আপনিও এরকম করেন। তো আমি যখন আপনার পূজ্য কুলের তাই ব্রাহ্মণ হয়ে পূজারী কেন হবো? আর স্বামীজীর ছবিতে জুতো মারার কথা বলছিলেন, তো এরকম প্রশ্ন মূর্খের সংসারে মূর্খই করে। মূর্তিটাও জড় আর ছবিটাও জড়, দুটোই বোঝে না যে তাদের পূজো হচ্ছে নাকি জুতো মারা হচ্ছে! মূর্তিতে ফুল চরানো অথবা ছবিতে জুতো মারা দুটোই প্রচণ্ড মূর্খতাপূর্ণ কাজ, সুতরাং দুটোর মধ্যে একটাও মূর্খের কাজ আমি করবো না। তাছাড়া এই রকমভাবে কি পূজা (আদর) বা অপূজা (নিরাদর) করার পরীক্ষা হয়? যদি এরকমই হয়, আর আপনি যদি ঈশ্বর সর্বব্যাপকের একতা পাথরের মধ্যেই মনে করেন তাহলে আমি বলি কি আপনি আপনার দাড়ি গোঁফ আর বস্ত্রকে জ্বালিয়ে সেই বস্ত্রকে ছিড়ে দেখান আর তার সঙ্গে আপনি পুরীষ (বিষ্ঠা) খেয়ে আর মূত্র পান করে দেখান। (বিঘ্ন)
Note: এটা বলতেই স্বামী প্রেমদাসজী ক্রোধে লাল হয়ে মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন আর অধ্যক্ষজীকে বলতে থাকেন - "আপনি কোন মূর্খ নাস্তিককে আমার সম্মুখে এনে দাঁড় করিয়েছেন? আমি এর একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিবো না আর একে ক্ষমাও করবো না।" পণ্ডিত মহেন্দ্রজী সেখান থেকেই বলে উঠেন - আপনি উত্তর দিবেনই বা কি? শ্রোতাদের সামনে পৌরাণিক সনাতন ধর্মের পর্দাফাঁস হয়ে যায় আর সভাও বিসর্জিত হয়ে যায়।
(সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ