প্রাচীন শাস্ত্রে বাইনারি কাউন্টিং - ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম্মতত্ত্ব

ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান, ধর্ম গ্রন্থ কি , হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়, ইসলাম খ্রীষ্ট মত বিষয়ে তত্ত্ব ও সনাতন ধর্ম নিয়ে আলোচনা

धर्म मानव मात्र का एक है, मानवों के धर्म अलग अलग नहीं होते-Theology

সাম্প্রতিক প্রবন্ধ

Post Top Ad

স্বাগতম

01 November, 2022

প্রাচীন শাস্ত্রে বাইনারি কাউন্টিং

 

প্রাচীন শাস্ত্রে বাইনারি কাউন্টিং

বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি হলো এমন এক পদ্ধতি যাতে সকল সংখ্যাকে কেবলমাত্র ০ এবং ১ দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

প্রায় সকল আধুনিক কম্পিউটারে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বাইনারি পদ্ধতিতে প্রতিটি অঙ্ককে বিট বলা হয়। দুইটা অঙ্ক ব্যবহার করা হয় বলে অত্যন্ত সরল প্রকৃতির সংখ্যা পদ্ধতি (কম্পিউটার এর জন্য)।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহার করা সংখ্যা পদ্ধতি হল দশভিত্তিক বা desimal বা দশমিক সংখ্যা, যেখানে ১০টি অঙ্ক(0,1,2,3,4,5,6,7,8 আর 9) ব্যবহার করে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা হয়।
দশমিক হতে কয়েকটি সংখ্যার বাইনারি রূপান্তর:
দশমিক_______________বাইনারী
0____________________0000
1_____________________0001
2____________________0010
3____________________0011
4____________________0100
5____________________0101
6____________________0110
7____________________0111
8____________________1000
9____________________1001
এই সংখ্যা পদ্ধতির আবিষ্কারক হলেন গটফ্রিড উইলিয়াম লাইবনিজ।
কিন্তু, সংস্কৃত ছন্দ শাস্ত্রের জনক এবং ভারতের প্রাচীন গণিতবিদ পিঙ্গালাচার্য তার শাস্ত্রে এই বাইনারি সংখ্যাপদ্ধতির উল্লেখ করে গেছেন প্রায় ২০০-৩০০ খ্রীঃ পূর্বে।
সংস্কৃত ছন্দ শাস্ত্রে বাইনারি সংখ্যাপদ্ধতি বুঝতে গেলে প্রথমেই আমাদের জেনে নিতে হবে সংস্কৃত ছন্দের কিছু বেসিক টার্ম।
সংস্কৃতে কোন কবিতা বা গানের চরণগুলির ছন্দ সাজানো হয় মূলত লগু (Short syllable-যার উচ্চারণ হ্রস্ব) ও গুরু (Long Syllable-যার উচ্চারণ দীর্ঘ) এই দুই প্রকার পদের সংমিশ্রণে।
ছন্দ শাস্ত্রমতে, হ্রস্বস্বর বিশিষ্ট বর্ণ ( অ, ই, উ, ঋ, ৯) লঘু হয়। এবং দীর্ঘ স্বর যুক্ত বর্ণ( আ, ঈ, ঊ, ঋৃ, এ, ঐ, ও, ঔ ) , বিসর্গযুক্ত বর্ণ (যেমন- হরিঃ) এবং যুক্তবর্ণের পূর্ব বর্ণ গুরু হয়। এছাড়াও চরণের শেষ বর্ণটিও গুরু হয়।
উদাহারণস্বরুপ, নিচে শ্রী শঙ্করাচার্যের রচিত ভবানী অষ্টকম্‌ এর এই অংশটি দেখে নিন,
L G G L G G L G G L G G
ন তাতো ন মাতা ন বন্ধুর্ - ন দাতা
ন পুত্রো ন পুত্ৰী ন ভৃত্যো ন ভর্তা
ন জায়া ন বিদ্যা ন বৃত্তির্–মম–ই ব
গ--তিস্ত্বং গ--তিস্ত্বং ত্ব--মেকা ভ--বা নী ॥
অর্থঃ আমার পিতা নাই, মাতা নাই, বন্ধু নাই, পৌত্র নাই, পুত্র নাই, কন্যা নাই, ভৃত্য নাই, প্রভু নাই, স্ত্রী নাই, বিদ্যা নাই, জীবিকা নাই; হে ভবানি তুমিই আমার গতি, একমাত্র তুমিই গতি।
উপরের এই শ্লোকটিতে প্রতি চরণে, লগু(L) এবং গুরু(G) সংমিশ্রণে যে প্যাটার্ণটি পাওয়া যায় তা হলো,
LGG LGG LGG LGG
LGG LGG LGG LGG
LGG LGG LGG LGG
LGG LGG LGG LGG
একে বলা হয় ভুজঙ্গপ্রয়াতম্‌ (একটি সাঁপের চলনের মত)
পিঙ্গালাচার্য “ n ” সংখ্যক বর্ণের জন্য, একটি সংস্কৃত পদ বা চরণে থাকা কোন অক্ষরের (লগু ও গুরু) সম্ভাব্য সমস্ত সংমিশ্রণ সহজে নির্ণয় করার জন্য কিছু বিশেষ সূত্র বা এলগরিদম আবিষ্কার করেন যাকে বলা হয় “প্রস্তর”।
বোঝার সুবিধার্তে লগু = L এবং গুরু = G বসালে পিঙ্গালাচার্যের সূত্রানুযায়ী সংস্কৃতে লগু ও গুরু অক্ষর সাজানোর সম্ভাব্য প্যাটার্ন গুলো ব্যাখা করলামঃ
তিনি তার ছন্দশাস্ত্রে ৮ম অধ্যায়ের প্রস্তর শাখায় ২১, ২২ এবং ২৩ নং নিন্মোক্ত সূত্র তিনটির উল্লেখ করেন,
১) দ্বিকৌ গ্লৌ ২)মিশ্রৌ চ ৩) প্রত্থগ্লা মিশ্রাঃ
1) L 1)LL 1)LLL
2) G 2)GL 2)GLL
3)LG 3)LGL
4)GG 4)GGL
5)LLG
6)GLG
7)LGG
8)GGG
দ্বিকৌ গ্লৌ- অর্থাৎ, একটি বর্ণ থাকলে হয় সেটি গুরু হবে অথবা লগু হবে এই দুইটি সম্ভাব্য ফল আসবে। উপরের প্যাটার্নগুলো ভালো করে লক্ষ্য করুন, এখানে প্রথম প্যাটার্ণে একটি L ও একটি G আছে।
মিশ্রৌ চ- অর্থাৎ, কোন শব্দে দুটি বর্ণ থাকলে, সেক্ষেত্রে একটি L ও একটি G’র সাথে পর পর দুটি L যুক্ত হয়েছে, তার নিচে আবার একটি L ও G’র সাথে আবার পর পর দুটি G যুক্ত হয়েছে (অর্থাৎ, ২য় প্যাটার্নে লগু গুরুর মিশ্রনটি হলো LL GL LG GG)।
প্রত্থগ্লা মিশ্রাঃ- অর্থাৎ, পুনরায় বার বার লগু গুরুর সংমিশ্রণ তৈরীকরণ। উপরের ৩য় প্যাটার্ণটি লক্ষ করুন। এখানে ২য় প্যাটার্নের সাথে পুনরায় লগু ও গুরুর সংমিশ্রনে ৩য় প্যাটার্ন তৈরী হচ্ছে। এভাবেই পর পর প্রতিটা প্যাটার্ণ সম্পর্কযুক্ত।
এখানে ৩য় প্যাটার্ণ টির দিকে লক্ষ্য করুন।
আমরা যদি G এর বদলে বাইনারির 0 ( G=0 ) এবং L এর বদলে 1 লিখি ( L=1 ) তাহলে প্যাটার্নটি হবে নিম্নরুপঃ
প্যাটার্ণ বাইনারি দশমিক সংখ্যা
LLL 111 7
LLG 110 6
LGL 101 5
LGG 100 4
GLL 011 3
GLG 010 2
GGL 001 1
GGG 000 0
উপরের ছকটিতে দেখতে পাচ্ছি, LLL তথা তিনটি লগু পরপর সাজালে তা বাইনারি 111 এর অনুরুপ, যা মূলত 7 এর বাইনারি মান। একইভাবে পর পর অন্যন্য সংখ্যাগুলোর বাইনারি মানের সাথে পিঙ্গালার সূত্রের লঘু গুরু প্যাটার্ন মিলে যায়।
এভাবেই পিঙ্গালার লগু/গুরু সাজানোর সূত্র বা প্যাটার্ণ সম্পূর্ণভাবে বাইনারি নাম্বার কাউন্টিং এর অনুরুপ।
নিচের ছক টি দেখুনঃ
এখানে পাশাপাশি দশমিক সংখ্যা এবং দশমিক সংখ্যাগুলোর বাইনারি ডিজিট দেখানো হলোঃ
Decimal___Pingala’s Binary system___Binary system
----------|------------------------------|------------------
15______________________LLLL___________________________1111
14______________________LLLG___________________________1110
13______________________LGLL___________________________1011
12______________________LLGG___________________________1100
11_______________________LGLL___________________________1011
10______________________LGLG___________________________1010
09______________________LGGL__________________________1001
08______________________LGGG__________________________1000
07______________________GLLL___________________________0111
06______________________GLLG___________________________0110
05______________________GLGL___________________________0101
04______________________GLGG___________________________0100
03______________________GGLL___________________________0011
02______________________GGLG___________________________0010
01 ______________________LLLG___________________________0001
দশমিক সংখ্যা 0 এর বাইনারি ডিজিট হলো 0000, 1 এর বাইনারি Digit 0001, 2 এর বাইনারি ডিজিট 0010… এভাবেই স্বাভাবিক সংখ্যার বাইনারি ডিজিট হিসেব করা হয় কম্পিউটারে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, একটি বাইনারি সংখ্যায় প্রতিটি 0 ও 1 কে বিট বলা হয়। এবং এর বেস/ভিত্তি হলো 2। n সংখ্যক বাইনারি ডিজিটের জন্য 2n সংখ্যক সম্ভাব্য মান পাওয়া যায়। যেমনঃ ১ বিট বাইনারি সংখ্যার জন্য 2^1 সংখ্যক সম্ভাব্য মান থাকে। যা হয় 0 অথবা 1। আবার ২ বিট বাইনারি ডিজিটের জন্য 2^2= 4 টি সম্ভাব্য মান পাওয়া যায়, যা হলো যথাক্রমে 00,01,10,11 ইত্যাদি ।
একইভাবে আমরা পিঙ্গালাচার্যের সূত্রেও দেখতে পাই, n সংখ্যক বর্ণের কোন পদ/শব্দকে সাজানোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লঘু ও গুরুর কম্বিনেশন হবে 2^n সংখ্যক। উদাহারণস্বরুপ উপরে পিঙ্গালার সূত্র গুলো দেখুন। প্রথম ক্ষেত্রে ১ টি বর্ণ সেটি হয় লঘু বা গুরু, এই দুইটি সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ, ১ টি বর্ণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মান আসে 2^1= ২টি, এভাবেই ক্রমান্ব‌য়ে ২টি বর্ণযুক্ত শব্দের জন্য সম্ভাব্য লগু/গুরুর কম্বিনেশন পাবো 2^2 অর্থাৎ, চার টি।
পিঙ্গালাচার্যের শাস্ত্রে বাইনারি কাউন্টিং এর পাশাপাশি প্যকসকেলের সূত্রের অনুরুপ সূত্র-সহ অন্যন্য Combinatory mathmetics তথা এলগরিদমেরও উল্লেখ পাওয়া যায় ।
পরবর্তী পর্বে সেই বিষয়ে বিস্তারিত লিখব...
✍️বিজয় ধর (বাঁধন)
এসপিএস শাস্ত্র গবেষণা কমিটি

No comments:

Post a Comment

ধন্যবাদ

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

যজুর্বেদ অধ্যায় ১২

  ॥ ও৩ম্ ॥ অথ দ্বাদশাऽধ্যায়ারম্ভঃ ও৩ম্ বিশ্বা॑নি দেব সবিতর্দুরি॒তানি॒ পরা॑ সুব । য়দ্ভ॒দ্রং তন্ন॒ऽআ সু॑ব ॥ য়জুঃ৩০.৩ ॥ তত্রাদৌ বিদ্বদ্গুণানাহ ...

Post Top Ad

ধন্যবাদ